গত বুধবার ১৫ মার্চ দুবাইয়ে জাতীয় ক্রিকেট দলের টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক সাকিব আল হাসান সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে আরাভ জুয়েলার্স নামের একটি দোকান উদ্বোধন করেন। বাংলাদেশের মিডিয়া জগতের আরও অনেক তারকায় সমৃদ্ধ সে অনুষ্ঠানের আগেই খবর এসেছে, এই দোকান খুনের মামলার পলাতক আসামি রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খানের।
এ নিয়ে তোলপাড় পড়ে গেছে। অনুষ্ঠানে দেশি ও বিদেশি আরও অনেক তারকা যুক্ত হলেও তারকাখ্যাতিতে বাংলাদেশি অলরাউন্ডার এগিয়ে বলে আলোচনাটাও বেশি হচ্ছে সাকিবকে নিয়ে। এ নিয়ে তার পক্ষ থেকে কিছু জানা না গেলেও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) তাদের অবস্থান জানিয়েছে কাল।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে বিসিবির ক্রিকেট অপারেশনস বিভাগের চেয়ারম্যান ও বিসিবি পরিচালক জালাল ইউনুস বলেছেন, বোর্ডের নিয়ম পর্যবেক্ষণ করে তবেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে- ‘আমরা ক্রিকেট অপারেশনস বিভাগ থেকে দেখব এটা কেন্দ্রীয় চুক্তির কোনো শর্ত ভঙ্গ করছে কি না। তেমন কিছু হলে আমরা শৃঙ্খলা কমিটিকে দায়িত্ব দিতে পারি। কোনো কিছু না জেনে, সবাইকে জিজ্ঞেস না করে, ব্যাপারটা পুরোপুরি তদন্ত না করে আমরা কোনো মন্তব্য করতে পারছি না।’
ইউনুস অবশ্য জানিয়ে দিয়েছেন, যা-ই হোক না কেন, বোর্ডের সহযোগিতা পাচ্ছেন দেশসেরা অলরাউন্ডার। নিয়মানুযায়ী ভুল করে থাকলেও সাকিবকে সমর্থন করার ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি, ‘এমন একটা পরিস্থিতিই (সাকিবকে ভিলেন বানানো) তো তৈরি হচ্ছে। এটা নিয়ে না জেনে বেশি মাতামাতি করলে পারফরম্যান্সেও তো সমস্যা হবে। আগে সবাই ব্যাপারটা জানি। তার জন্য সবার সমর্থন দরকার। যদি না জেনে থাকে তাহলে তাকে যেসব পরামর্শ বা উপদেশ দেয়া দরকার, সেসব বিষয়ে আলোচনা করব।’
দেশের স্বার্থেই সাকিবকে রক্ষার আহ্বান বিসিবি কর্মকর্তার, ‘অবশ্যই। সাকিব শুধু বিসিবির না, সে দেশের গর্ব। তার খেয়াল রাখা আমাদের দায়িত্ব।’
প্রতিপক্ষ র্যাঙ্কিংয়ে ৮৬তম কুরাকাও, নিজেদের মাঠ সান্তিয়াগো দেল এস্তেরোতে আর্জেন্টিনা যে তাদের নিয়ে ছেলেখেলা করবে, তা অনুমিতই ছিল। মেসির ১০০ গোল নিয়েও সংশয় সম্ভবত ছিল না – মাত্র ১ গোলই তো দরকার ছিল।
মেসি গোল করলেন তিনটি, আর্জেন্টিনা কুরাকাওকে উড়িয়ে দিল ৭-০ গোলের বিশাল ব্যবধানে। মেসির আর্জেন্টিনা ক্যারিয়ারে দলের হয়ে যৌথভাবে সবচেয়ে বড় ব্যবধানের জয় এটি। এর আগে বলিভিয়া (২০১৫) ও হংকংয়ের (২০১৪) বিপক্ষেও আর্জেন্টিনাকে ৭-০ ব্যবধানে জিতিয়েছেন মেসি।
আজ প্রথম ২০ মিনিট তবু আর্জেন্টিনাকে আটকে রেখেছিল কুরাকাও। কিন্তু ২১তম মিনিটে মেসির গোলে সেই যে বাধ ভাঙল, ১৭ মিনিটের মধ্যে হলো আরও ৫ গোল। মেসির হ্যাটট্রিক হয়ে গেল ততক্ষণেই, তার ফাঁকে দুই গোল করলেন নিকোলাস গনসালেস ও এনসো ফের্নান্দেস। দ্বিতীয়ার্ধেও প্রথম ৩০ মিনিট গোলহীন, শেষ ১৫ মিনিটে আর্জেন্টিনার দুই গোল আনহেল দি মারিয়া ও গনসালো মন্তিয়েলের।
তৃতীয় মিনিটেই এগিয়ে যেতে পারত আর্জেন্টিনা, কিন্তু মেসির দারুণ পাসে একেবারে ফাঁকা পোস্টেও শট নিতে ব্যর্থ লওতারো মার্তিনেস। পানামার পর কুরাকাওয়ের বিপক্ষে এই ম্যাচ দুটি তো আসলে ম্যাচ ছাপিয়ে আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপের উদ্যাপন, সেখানে কাতার বিশ্বকাপের অনেক স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়ারই যেন ইচ্ছে হলো মার্তিনেসের!
এরপর মেসির ডান পায়ের একটা শট ফিরিয়ে দেন কুরাকাও গোলকিপার। কিন্তু ওই পর্যন্তই। ২১ মিনিটে মাঝমাঠ থেকে জিওভানি লো সেলসোর পাস ধরে দুই ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে দারুণ গোল মেসির। যেন বাঁধ ভাঙল তাতে!
দুই মিনিট পর বক্সে জটলার মধ্যে হেডে গোল নিকোলাস গনসালেসের। তারপর আবার মেসি-শো। ৩৩ মিনিটে গনসালেসের পাস ধরে বক্সের ডান দিক থেকে বাঁ পায়ের শটে গোল মেসির। দুই মিনিট পর মেসির আলতো বাড়িয়ে দেয়া পাস থেকেই বক্সের বাইরে থেকে দারুণ শটে আর্জেন্টিনার চতুর্থ গোলটি করেন এনসো ফের্নান্দেস।
কিন্তু মেসির হ্যাটট্রিকের তো তখনো বাকি! ৩৭ মিনিটে তা-ও হয়ে গেল! নিজেদের অর্ধ থেকে লো সেলসোর দারুণ লব, দৌড়ে গায়ের সঙ্গে লেগে থাকা ডিফেন্ডারকে ছিটকে বেরিয়ে গেলেন মেসি। এরপর কাজটা তো সহজই – বুদ্ধিদীপ্ত শটে গোলকিপারকে বোকা বানানো।
বিশ্বকাপ নিয়ে উদ্যাপন হলো, মেসির ১০০ গোল হলো, সে পথে হ্যাটট্রিকও হলো, দলের হয়ে গেল ৫ গোল – এই ম্যাচ থেকে যা পাওয়ার ছিল, তা প্রথমার্ধেই তো পেয়ে গেছে আর্জেন্টিনা! দ্বিতীয়ার্ধে একটু ঢিমেতালেই চলল প্রথম ৩০ মিনিট। কিন্তু শেষদিকে আবার গোলের পথ খুঁজে পেল আর্জেন্টিনা।
৭৮ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল দি মারিয়ার, শেষদিকে দিবালার পাস থেকে বক্সের মধ্য থেকে শটে বল জালে জড়ালেন মন্তিয়েল।
মেসির হ্যাটট্রিক, ১০০তম গোল উদ্যাপনে মেসিকে ‘১০০’ খচিত আর্জেন্টিনার জার্সি ও স্মারক উপহার আর সবশেষে বিশ্বকাপ নিয়ে উদ্যাপনে সঙ্গী পুরো স্টেডিয়াম... স্বপ্নের মতো কয়েকটা দিনের শেষটাও সুন্দর হলো আর্জেন্টিনার।
ভারতের টি-টোয়োন্টি ক্রিকেটের জমজমাট টুর্নামেন্ট ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) মোবাইল ফোনে দেখার সুযোগ করে দিচ্ছে টি-স্পোর্টস। এই টুর্নামেন্ট দিয়েই বাণিজ্যিকভাবে পথচলা শুরু হচ্ছে টি-স্পোর্টসের ওটিটি প্ল্যাটফর্ম টি-স্পোর্টস অ্যাপের।
ইন্টারন্যাশনাল লিগ টি-টোয়েন্টি, পাকিস্তান সুপার লিগ (পিএসএল), নারীদের আইপিএল ওমেন্স প্রিমিয়ার লিগ সফলভাবে সম্প্রচারিত হয়েছে টি-স্পোর্টসের অ্যাপে। ৩১ মার্চ থেকে শুরু হতে যাওয়া আইপিএলের ১৬তম আসরও থাকছে এই অ্যাপে।
এই অ্যাপের দূত হয়েছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান ও জাতীয় দলের ওপেনার লিটন দাস। বিজ্ঞপ্তি
ওই মুহূর্তে সাদউদ্দিন ওখানে কী করছিলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। ৬০ মিনিটে প্রতিআক্রমণে উঠেছিল সিশেলস। বক্সের ওপর বল বাতাসে, তা দেখে ড্যারিল লুইস হেড করতে গিয়েছিলেন। আশপাশে শুধু ডিফেন্ডার বলতে তারিক কাজী, আর ফরোয়ার্ড সাদ। বিপজ্জনকভাবে বল ক্লিয়ার করতে গেলেন সাদ। তার বুট গিয়ে লাগল লুইসের মাথায়। পেনাল্টি!
৬২ মিনিটে পেনাল্টি থেকে জিকোকে বোকা বানিয়ে মাইকেল ম্যানচিয়েনে গোল করলেন। ম্যাচের বাকি সময়ে সে গোল আর ফেরত দিতে পারেনি বাংলাদেশ। র্যাঙ্কিংয়ে সাত ধাপ পিছিয়ে থাকা সিশেলসের কাছে ১-০ গোলে হেরে গেছে বাংলাদেশ। ঘরের মাঠে তিন বছর পর হারলেন জামাল ভূঁইয়ারা।
মেয়েদের সাফ অনূর্ধ্ব-১৭ চ্যাম্পিয়নশিপে শিরোপার সুক্ষ্ম সম্ভাবনা টিকিয়ে রাখতে নেপালকে হারাতেই হতো বাংলাদেশের। গোল ব্যবধানের জটিল হিসাব-নিকাশের কারণে হয়ত বড় জয়ের প্রত্যাশা ছিল বাংলাদেশের। তবে বাংলাদেশকে ১-১ গোলে আটকে সেসব হিসাব-নিকাশের অবকাশই দেয়নি নেপাল।
কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে প্রথম বাঁশি থেকে বাংলাদেশের উপর চড়াও হয়ে খেলে নেপাল। যার ফল পেতে দেরি হয়নি তাদের। ম্যাচের অষ্টম মিনিটে নিজেদের অর্ধে বল পেয়ে বাংলাদেশের রক্ষণভাগকে ঘোল খাইয়ে একক নৈপুণ্যে ডান প্রান্ত দিয়ে বক্সে প্রবেশ করেন নেপালের সেনু পারিয়ার। এরপর সুযোগ বুঝে বাংলাদেশ গোলকিপার সঙ্গীতা রানি দাসের মাথার উপর দিয়ে বল জালে জড়িয়ে দেন এই নেপালি ফরোয়ার্ড।
ম্যাচের শুরুর দিকে হজম করা সে গোল শোধ দিতে বাংলাদেশকে অপেক্ষা করতে হয়েছে ৭৫ মিনিট পর্যন্ত। নেপালের গোলমুখে দুর্ভেদ্য দেয়ালে পরিণত হওয়া দলটির অধিনায়ক এবং গোলকিপার সুজাতা তামাংকে সে যাত্রায় পরাস্ত করেন এই টুর্নামেন্ট দিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পা রাখা সাগরিকা। বক্সের ডান প্রান্ত থেকে তৃষ্ণার ক্রস পেয়ে প্রথম প্রচেষ্টায় ডান পায়ের শটে লক্ষ্যভেদ করেন তিনি।
যোগ করা সময়ের তৃতীয় মিনিটে পূর্ণ তিন পয়েন্ট নিজেদের করে নেয়ার সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ। নেপালের গোলকিপার সুজাতা বক্সের ভেতর ফ্রি-কিক থেকে উড়ে আসা বল ঠিকঠাক ফিস্ট করতে না পারায় তা গিয়ে পড়ে গোলের বাঁ দিকে থাকা কানম আক্তারের মাথায়। দ্রুত প্রতিক্রিয়ায় হেডও করেছিলেন তিনি, তবে অল্পের জন্য ক্রসবারে লেগে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয় সে প্রচেষ্টা।
টুর্নামেন্টে নিজেদের চার ম্যাচের সবকটি খেলা বাংলাদেশের পয়েন্ট এখন ৭। এই মুহূর্তে টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে গোলাম রব্বানি ছোটনের শিষ্যরা। আজ সন্ধ্যার ম্যাচে রাশিয়ার সঙ্গে ভারত ড্র করলে বা হেরে গেলে দ্বিতীয় সেরা হিসেবেই টুর্নামেন্ট শেষ করবে বাংলাদেশ। তবে ভারত বড় অঘটনের জন্ম দিয়ে রাশিয়াকে হারিয়ে দিলে সেক্ষেত্রে তৃতীয় স্থান নিয়ে টুর্নামেন্ট শেষ করবে স্বাগতিকরা।
সিশেলসের বিপক্ষে দ্বিতীয় প্রীতি ম্যাচে শুরুর একাদশে নেই বাংলাদেশ ফুটবল দলের নিয়মিত অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া। তিনি না থাকায় অধিনায়কের আর্মব্যান্ড পরবেন তপু বর্মণ। প্রথম ম্যাচে শুরু থেকেই মাঠে ছিলেন জামাল।
নিয়মিত অধিনায়কের জায়গায় একাদশে ঢুকেছেন মিডফিল্ডার রবিউল হাসান। লম্বা একটা সময় পর জাতীয় দলে ফিরেই প্রথম ম্যাচে শুরুর একাদশে ছিলেন আমিনুর রহমান সজীব। তার পরিবর্তে আজকের ম্যাচে একাদশভুক্ত হয়েছেন সুমন রেজা।
সিশেলসের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে ১-০ গোলে জিতে দুই ম্যাচের ফুটবল সিরিজে এগিয়ে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের খেলা দেখুন এখানে...
প্রথম দুই ম্যাচ হেরে ৩ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ আগেই খুইয়েছিল পাকিস্তান। শেষ ম্যাচটা তাই তাদের জন্য হয়ে দাঁড়িয়েছিল হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর লড়াই। সে লড়াইয়ে নিজেদের মেলে ধরে সান্ত্বনার জয় তুলে নিয়েছে পাকিস্তান। ৬৬ রানে জিতে হোয়াইটওয়াশ হওয়া থেকে বাঁচিয়েছে নিজেদের।
আগের দুই ম্যাচে ব্যাট হাতে ব্যর্থ ছিল পাকিস্তান। করেছিল ৯২ ও ১৩০ রান। তবে এদিন গা ঝাড়া দিয়ে উঠে পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইনআপ। ৭ উইকেটে তোলে ১৮২ রান। ফিফটিশূণ্য পাকিস্তান ইনিংসে সর্বোচ্চ ৪৯ রান করে সাইম আইয়ুব। ৪টি চার ও ২টি ছয়ে ৪০ বলে এই রান করেছেন তিনি।
রান তাড়াই প্রথম দুই ম্যাচের আফগানিস্তানকে দেখা যায়নি। রহমানউল্লাহ গুরবাজ ও সেদিকউল্লাহ অতল উদ্বোধনী জুটিতে ৩৫ করলেও এরপর দ্রুত ৩ উইকেট হারায় আফগানরা। ইনিংস সর্বোচ্চ ২১ রান করেন আজমাতুল্লাহ ওমরজাই।
বল হাতে ১৭ বলে ২৮ রান এবং বল হাতে ১৩ রানে ৩ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হয়েছেন পাকিস্তান অধিনায়ক শাদাব খান।
তিন মাসেরও বেশি হয়ে গেল বিশ্বকাপ জিতেছেন। এর মধ্যে ক্লাব পিএসজির হয়ে আরেকবার চ্যাম্পিয়নস লিগে ব্যর্থতায় পুড়েছেন। বিশ্বকাপ জয়ের পরপরই সেটির উদ্যাপন তো হয়ে গেছে, বুয়েনস এইরেসের রাস্তায় নেমেছিল লাখো আর্জেন্টাইনের ঢল।
তবে গতকাল দক্ষিণ আমেরিকান ফুটবল নিয়ন্ত্রক সংস্থা কনমেবলের প্রধান কার্যালয়ে যে সম্মানে-উদ্যাপনে ভেসেছেন মেসি, সেটি অনন্য। কোপা আমেরিকা, লা ফিনালিসিমা ও বিশ্বকাপ – মহাদেশীয়, আন্তঃমহাদেশীয় ও বিশ্বশিরোপা জেতায় পুরো আর্জেন্টিনা দলকে সংবর্ধনা দিয়েছে কনমেবল। কোপা আমেরিকার স্মারক ট্রফি তো দেয়া হয়েছেই, ফিনালিসিমা ও বিশ্বকাপের স্মারক ট্রফিও কাল তুলে দেয়া হয় মেসিদের হাতে।
আর মেসি পেয়েছেন বিশেষ সম্মাননা। তার উচ্চতার সমান ভাস্কর্য উন্মোচিত হয়েছে, আর্জেন্টিনা দল ও তাকে নিয়ে গান গেয়েছেন আর্জেন্টাইন গায়িকা সোলেদাদ পাস্তোরুত্তি। এমন সম্মানে ভেসে গিয়ে মেসির অনুভূতি, বিশ্বকাপ জিতে তিনি পূর্ণ। তবে বিশ্বকাপ জেতার আনন্দটা কতটা, সেটা সম্ভবত এখনো বুঝতে পারছে না সবাই।
সম্মাননা অনুষ্ঠানে মেসি বলেছেন, ‘আলেহান্দ্রোকে (কনমেবল সভাপতি আলেহান্দ্রো দমিঙ্গেস) অনেক ধন্যবাদ এই দুটি ট্রফির জন্য, (বিশ্বকাপ ট্রফিতে হাত বুলিয়ে) বিশেষ করে এটির জন্য। এই কাপটা আমি কনমেবলের জাদুঘরে রাখতে চাই।’
এরপর আর্জেন্টাইন গায়িকা সোলেদাদকে ধন্যবাদ জানানোর বিশেষ কারণও বললেন মেসি, ‘সোল আমাকে যে উপহার দিয়েছে, সেটি হৃদয় ছুঁয়ে গেছে। ড্রেসিংরুমে আমাদের সবার জন্য গানটা খুব তাৎপর্যপূর্ণ। বিশেষ এই গানটা আমরা সব সময় শুনি। সোল যে আজ এখানে এসে গানটা গাইল, সেটা আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছে – যেটা সোল নিজেও বলল – যে দিয়েগোর (মারাদোনা) জন্যও সে এই গানটা গেয়েছিল। সেই একই গান এখন আমার জন্যও সে গেয়েছে, আমাদের সবার জন্য গেয়েছে, এটা আমাদের সবার জন্যই বিশেষ পাওয়া। তোমাকে অনেক ধন্যবাদ।’
বিশ্বকাপ জয়ের মুহূর্ত নিয়েও এখনো আবেগ যে একই আছে, সেটি মেসির কণ্ঠে সব সময়ই ফুটে ওঠে। গত কদিনে আর্জেন্টিনায় এবং গতকাল কনমেবলে যে আবেগঘন সম্মাননা পেলেন, সেটি যে তাকে কতটা ছুঁয়ে গেছে, তা-ও ফুটে উঠেছে মেসির কথায়, ‘এর আগে যেটা বলেছি, আমরা অনেক বিশেষ একটা সময় কাটাচ্ছি। বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর আর্জেন্টিনায় যে এভাবে খেলতে পারলাম, এমন ভালোবাসায় সিক্ত হলাম, সে জন্য আমরা নিজেদের সৌভাগ্যবান ভাবি। দক্ষিণ আমেরিকার একটা দলের বিশ্বকাপ জেতাটা জরুরি হয়ে পড়েছিল।’
শেষে এসে মেসির কথা, ‘বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর থেকে যে ভালোবাসায় ভেসে যাচ্ছি আমরা, সেটির পরও বলি, আমরা হয়তো এখনো পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারছি না আমরা কী পেয়েছি। আমরা সব সময় এর পর কী হবে তা নিয়ে চিন্তা করছি, কী করেছি সেটা নিয়ে ভাবার সময়ই যেন নেই। জীবনই হয়তো এমন। এখানে অনেক বিশ্বচ্যাম্পিয়নই আমাদের বলেছেন যে এমনটা তাদের সঙ্গেও হয়েছে। (বিশ্বকাপে আরেকবার হাত বুলিয়ে) এই ট্রফিটা নিয়ে আমি সম্পূর্ণ। এটাই বাকি ছিল।’
তাসকিন আহমেদের ইয়র্কারে উড়ে গেল উইকেটের বেল। লরকান টাকার পেছনে না তাকিয়ে সোজা হাঁটা ধরলেন ড্রেসিংরুমের দিকে। বাংলাদেশ দলের পেস বোলিং কোচ অ্যালান ডোনাল্ডের দিকে ঘুরে গেল সম্প্রচার ক্যামেরা, নিজের চেয়ারে নড়েচড়ে বসলেন ডোনাল্ড। কোচের এই নড়েচড়ে বসার কারণ বোঝা গেল খানিক পর। তাসকিন সে ওভারে ফেরালেন পল স্টার্লিং ও জর্জ ডকরেলকে। এরপর নেন হ্যারি টেক্টরের উইকেট।
ডানা মেলে উড়লেন তাসকিন, ওড়ালেন বাংলাদেশকে। ২ ওভারে মাত্র ১৬ রান দিয়ে ৪ উইকেট। টি-টোয়েন্টিতে ক্যারিয়ার সেরা বোলিং তার। তাতে আয়ারল্যান্ডকে সহজেই হারানো গেল কাল চট্টগ্রামে।
বৃষ্টি নামার আগে রনি তালুকদারের ঝোড়ো ফিফটিতে ২০৭ রান করেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু বৃষ্টিতে ৮ ওভারে নেমে আসা ইনিংসে আইরিশদের লক্ষ্য দাঁড়ায় ১০৪ রান। চট্টগ্রামের মরা উইকেটে রান আটকানো সহজ নয়, তার মধ্যে প্রথম দুই ওভারে ৩২ রান তুলে ফেলে আয়ারল্যান্ড।
কিন্তু তাসকিন আহমেদের তখনো বোলিংয়ে আসা বাকি!
তৃতীয় ওভারে হাসান মাহমুদ ভাঙলেন আইরিশ ওপেনিং জুটি। চতুর্থ ওভারে এসে তাসকিন বোঝালেন, তিনি কেন বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের পেস বোলিংয়ের নেতা। ম্যাচ হারলেও তাসকিনকে প্রাপ্ত প্রশংসা দিতে ভুল করেননি আইরিশ অধিনায়ক স্টার্লিং, ‘আমি অনেক দিন ধরে তাসকিনকে দেখছি। প্রতিবারই তাসকিনকে যখন দেখেছি, দেখেছি যে সে আগের চেয়ে অনেক অনেক উন্নতি করেছে। তার গতি বেড়েছে। আগ্রাসী মনোভাব বেড়েছে। তার বিপক্ষে খেলা সত্যিই কঠিন।’
এর পেছনের কারণ কী? তাসকিন কৃতিত্বটা বিলিয়ে দিলেন পেস বোলিং কোচ অ্যালান ডোনাল্ড আর সতীর্থ পেসারদের মধ্যে, ‘আমাদের স্বাধীনভাবে ক্রিকেট খেলতে বলা হচ্ছে। সবাই সবাইকে সমর্থন দিচ্ছে। সব সংস্করণেই আমাদের ভুলগুলো আগের চেয়ে কমে আসছে। আমাদের শেখার পাঠটা খুব দারুণ যাচ্ছে এবং আমরাও শিখতে আগ্রহী।’
তাসকিনের এক ওভারে বদলে যায় ম্যাচের গতিপথ। যদিও হ্যাটট্রিকের সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেননি তিনি। সে নিয়ে ছিটেফোঁটা আক্ষেপ দেখা গেল না তাসকিনের। তার স্বপ্ন অনেক উঁচুতে। তবে একা নন, সতীর্থদের সঙ্গে নিয়েই যেতে চান তিনি।
তাসকিন বলেন, ‘যেহেতু আমাদেরও স্বপ্ন বিশ্বকাপে আমরা সেরা দল হব, সেই পদ্ধতি অনুযায়ীই আমরা ক্রিকেট খেলছি ও এগোচ্ছি। ইউনিট হিসেবে যদি সবাই বিশ্বমানের বোলার হতে পারি, তাহলে এই ইউনিটকে সামলাতে একটু সমস্যা হবেই। বড় বড় দলগুলোতে কিন্তু একজন না, চার-পাঁচজন বিশ্বমানের বোলার থাকে। আমরাও চাচ্ছি আমাদের ওরকম হোক।’
সে কারণেই মোস্তাফিজ-হাসান-ইবাদতদের সঙ্গে তাসকিনের সম্পর্কটাও অন্যরকম আন্তরিকতার। তাসকিনের কণ্ঠেই যা বোঝা গেল, ‘আমার প্রতিদ্বন্দ্বী আমিই। আমরা ফাস্ট বোলাররা সবাই ভাই-ভাই, পরিবারের মতো, একে অপরকে সাহায্য করি। আমরা সবাই সবার ভালো চাই।’
৩২ বছর বয়সে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের প্রথম অর্ধশতক, প্রথম ম্যাচসেরাও। তবে স্বীকৃতির পুরস্কার নিজ হাতে নিতে পারেননি রনি তালুকদার। ফিল্ডিং করার সময় কাঁধে পাওয়া চোটের কারণে থাকতে পারেননি পুরস্কার বিতরণীর সময়। রনির হয়ে ম্যাচসেরার পুরস্কার গ্রহণ করেন সাকিব আল হাসান। নিজ হাতে পুরস্কার নিতে না পারার আক্ষেপ ভুলে অর্জনের দিনে প্রয়াত বাবাকে স্মরণ করেন রনি। ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘বাবা তোমাকে অনেক মনে পড়ছে। আমি জানি তুমি ওপর থেকে আমাদের দেখছ।’
আয়ারল্যান্ডের বোলারদের ওপর কাল একদমই নির্দয় ছিলেন রনি। মার্ক এডেয়ার, ক্রেইগ ইয়াংদের ব্যাট হাতে কচুকাটা করেছেন, ২৪ বলে তুলে নিয়েছেন অর্ধশতক। যেটি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে যৌথভাবে বাংলাদেশের পক্ষে তৃতীয় দ্রুততম অর্ধশতক।
একসময় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের পথ ভুলে যাওয়া রনি বিপিএল দিয়ে আবার আলোচনায় এসেছেন। প্রায় আট বছর পর ইংল্যান্ড সিরিজ দিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রত্যাবর্তন। তবে ইংল্যান্ড সিরিজে সুযোগ পেয়ে উল্লেখ করার মতো ইনিংস খেলতে পারেননি। তিন ম্যাচে ওপেন করে ১০৮ স্ট্রাইক রেটে ৫৪ রান। তবু রনির ব্যাটিং ধরন নিয়ে হেড কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে বলেছিলেন, ‘আমাকে ও দারুণভাবে মুগ্ধ করেছে।’
কাল চট্টগ্রামে সবাইকে মুগ্ধ করার মতোই ইনিংস খেললেন রনি। পঞ্চম টি-টোয়েন্টি ইনিংস পেয়ে গেলেন ফিফটি। আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে লিটনের সঙ্গে ৯১ রানের জুটিতে বাংলাদেশকে বড় সংগ্রহের ভিত গড়ে দেন রনি। সেটাও স্রেফ ৪৩ বলে। রনি যখন আউট হন, তখন ১৭৬.৩২ স্ট্রাইক রেটে ৩৮ বলে নামের পাশে ৬৭ রান। যেখানে সাতটি চারের সঙ্গে তিনটি ছয়।
এমন শুরু এনে দেয়া ওপেনারকেই তো চেয়েছিল বাংলাদেশ।
একের পর এক বিশেষ সম্মানে ভেসেই চলেছেন লিওনেল মেসি। দুদিন আগে আর্জেন্টাইন ফেডারেশন তাদের অনুশীলন গ্রাউন্ডে খেলোয়াড়দের বাসভবনের নাম দিয়েছে মেসির নামে। কাল মেসি আরও অনন্য এক সম্মান পেলেন দক্ষিণ আমেরিকান ফুটবল নিয়ন্ত্রক সংস্থা কনমেবলের কাছ থেকে।
মেসির সমান উচ্চতার এক ভাস্কর্য গড়েছে কনমেবল, ‘বিশ্বের সেরা’ মেসিকে সম্মান জানাতেই এই উদ্যোগ। গতকাল সেটির উন্মোচনের ক্ষণে পুরো আর্জেন্টিনা দল এবং আর্জেন্টাইন ফেডারেশনের (এএফএ) সভাপতি ক্লদিও তাপিয়া ছিলেন অনুষ্ঠানে। ভাস্কর্যের পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলেছেন মেসি নিজে। এই ভাস্কর্যের জায়গা হচ্ছে কনমেবলের জাদুঘরে দুই কিংবদন্তি পেলে ও মারাদোনার ভাস্কর্যের পাশে!
অনুষ্ঠানে পুরো আর্জেন্টিনা দলকেই বিশেষ সম্মান জানিয়েছে কনমেবল। বিশ্বকাপের সময় ভাইরাল হয়ে পড়া ১২ বছর বয়সী আর্জেন্টিনা ভক্ত হোসে আনদ্রাদার কথায় চোখ ভিজেছে আর্জেন্টিনা কোচ লিওনেল স্কালোনি, মিডফিল্ডার এনসো ফের্নান্দেসসহ অনেকের। মারাদোনাকে নিয়ে এক সময়ে বিশেষ গান গাওয়া আর্জেন্টাইন গায়িকা সোলেদাদ পাস্তোরুত্তি বিশেষ গান গেয়েছেন মেসিকে নিয়ে, আর্জেন্টিনা দলকে নিয়ে।
বিশ্বকাপ জেতার পর এই প্রথম আর্জেন্টিনার তিন তারকা খচিত জার্সিটা পরে খেলতে গেছেন মেসি-দি মারিয়া-মার্তিনেসরা। কিন্তু এ যে শুধুই খেলার উদ্দেশ্যে আর্জেন্টিনায় যাওয়া নয়, তা আগে থেকেই অনুমিত ছিল। পানামা আর কুরাকাওয়ের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচগুলো আসলে ম্যাচ ছাপিয়ে ছিল আর্জেন্টিনার বিশ্বজয়ের উদ্যাপন।
তা উদ্যাপন হচ্ছে বটে! পানামার বিপক্ষে ম্যাচে নিজেদের বিশ্বজয়ীদের সামনে পেয়ে রিভারপ্লেটের মনুমেন্তাল স্টেডিয়ামের গ্যালারি ভেসেছে উচ্ছ্বাসে। এরপর আর্জেন্টিনার অনুশীলন গ্রাউন্ডের বাসভবনের নামকরণের পর গতকাল কনমেবলের এমন অনন্য সম্মাননা – স্বপ্নের মতো সময়ই কাটছে মেসিদের।
গতকাল ভাস্কর্য উন্মোচনের পর মেসিও তা-ই বললেন, ‘এটা আসলেই অনেক বিশেষ কিছু। কখনো স্বপ্নেও ভাবিনি এমন কিছু হবে। আমার স্বপ্ন তো ছিল শুধুই আশৈশব যেটা পছন্দ করতাম, সেটা করতে পারা – পেশাদার ফুটবলার হওয়া, ফুটবল খেলে যাওয়া।’
আর্জেন্টিনার জার্সিতে এই সোনালি দিনগুলো পেয়েও এর আগের ব্যর্থতায় ধূসর অতীতের কথা মেসি কখনো ভোলেননি। যে কারণে যে কোনো সাফল্যেই তার আগের সতীর্থদেরও ভাগিদার করে নেন। কাল বিশেষ এমন সম্মাননার দিনেও অতীতের কথা থাকল মেসির মুখে, ‘অনেক হতাশা সয়েছি, অনেক হার দেখেছি। কিন্তু সব সময় সামনে তাকিয়েছি। সব সময় এই একটা জয়ের খোঁজে থেকেছি। এটাই গুরুত্বপূর্ণ। নিজের স্বপ্নের পেছনে ছোটা, এটা মনে গেঁথে নেয়া যে জীবনে যেকোনো কিছুই সম্ভব। আর ফুটবলটাকে উপভোগ করে যাওয়া, যেটা আমার জন্য, আমাদের সবার জন্য সবচেয়ে সুন্দর বস্তু।’
‘প্রাপ্তি কোনো জাদুবলে হয় না। হয় পরিশ্রমের কারণে, আপনার কী পছন্দ এবং তার পেছনে আপনি কতটা লেগে থাকছেন- তার কারণে।’
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামার কথার সঙ্গে মেলাতে পারেন বর্তমানে বদলে যাওয়া বাংলাদেশ দলকে। বিশেষ করে পেস বোলিং বিভাগ। তাসকিন আহমেদ, হাসান মাহমুদ, ইবাদত হোসেনরা সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠছেন, প্রতিদিন নতুন করে চেনাচ্ছেন নিজেদের, স্বপ্ন দেখাচ্ছেন বাংলাদেশকে।
কিন্তু এই বদলের পেছনের কারিগর কারা? তাদের চেনাও তো জরুরি!
চন্ডিকা হাথুরুসিংহে দ্বিতীয় মেয়াদে বাংলাদেশ দলের কোচ হয়ে আসার পর থেকে বদলের হাওয়া বাংলাদেশ ক্রিকেটে। পরিবর্তনটা সবচেয়ে বেশি দৃশ্যমান যে দুটি ক্ষেত্রে- আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের বাইরে অন্যটি পেস বোলিং বিভাগে। রাসেল ডমিঙ্গো যেখানে শুধু জাতীয় দলের আশপাশে থাকা পেসারদের খোঁজখবর রাখতেন, সেখানে হাথুরুসিংহে গোটা পেস বিভাগের ‘পুল’ নিয়ে ভাবছেন।
বাংলাদেশের পেস বিভাগের এমন সাফল্য আর পরিবর্তনের পেছনে পরিশ্রম যে আছে, তার প্রমাণ তো তাসকিনের এমন দুর্দান্ত ছন্দে এবং তার চেয়েও বড় কথা- দুর্দান্ত ফিটনেসে ফেরা। পেসাররা এখন আগের থেকে বেশি ফিটনেস-সচেতন। বাড়তি কাজ করতে গিয়ে এখানে-সেখানে চোটের সংখ্যা বাড়ছে, যে জন্য সবচেয়ে বেশি সচেতন থাকতে হচ্ছে ফিজিও-ট্রেনার ও বিশেষ করে বিসিবির মেডিকেল বিভাগকে। তবু বদলে যাওয়া বাংলাদেশের আড়ালে রয়ে যান তারা।
৭-৪-২। আইসিসির বেঁধে দেয়া নিয়মে সপ্তাহে একজন পেসার চার দিনের বেশি বল করতে পারবেন না। যেখানে সর্বোচ্চ টানা দুই দিন হাত ঘোরানো যাবে। ম্যাচ-অনুশীলন মিলিয়ে পেসাররা বল করতে পারবেন ৩২-৩৪ ওভার। বাংলাদেশের পেসারদের ‘ওয়ার্কলোড’ নিয়ন্ত্রণে রাখার এই দায়িত্ব মেডিকেল বিভাগের।
বিসিবির মেডিকেল বিভাগের চিকিৎসক মনজুর হোসাইন চৌধুরী বলেন, ‘ওয়ার্কলোড ম্যানেজ করা না গেলে পেসারদের ইনজুরির প্রবণতা বেড়ে যায়। আমরা ধরে নিচ্ছি, একজন পেসার সপ্তাহে তিনটি ওয়ানডেতে ৩০ ওভার বল করলেন। বাকি অনুশীলনে সে বোলার সর্বোচ্চ ৩-৪ ওভার বল করতে পারবেন। যদি কোনো কারণে সেটা সম্ভব না হয়, তাহলে পরের সপ্তাহে তাকে বিশ্রাম দেয়া হয়।’
পেসারদের ওয়ার্কলোড কতটা হচ্ছে, সে হিসাব বের করার জন্য বিশেষ এক ধরনের সফটওয়্যার ব্যবহার করে মেডিকেল বিভাগ। যেখানে লাল, হলুদ ও সবুজ রং দিয়ে পেসারদের ফিটনেসের পরিমাপ করা হয়। ফিজিও-ট্রেনারদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী কোনো পেসারের নাম লাল ঘরে এসে গেলেই তাকে নিয়ে আলাদা কাজ করে মেডিকেল বিভাগ।
পেস বোলিং বিভাগে পেসারদের তালিকা এখন বেশ লম্বা। কেউই নিজের জায়গা ছাড়তে চান না। সে কারণেই সংশয় জাগে, এখানে চোট লুকিয়ে খেলার প্রশ্ন আসে না তো! মনজুর বলেন, ‘জাতীয় দলে চোট লুকিয়ে খেলার সুযোগ নেই। কাউকে নিয়ে সংশয় থাকলে তাকে ফিটনেস টেস্ট দিয়ে তারপর খেলতে হয়।’
বিসিবি পেসারদের ফিটনেস নিয়ে কতটা সচেতন তার একটি মজার তথ্য দিলেন মনজুর, ‘কোনো ক্রিকেটার যদি ভুল করেও কোল্ড ড্রিংকস খেয়ে ফেলেন, সেটার শান্তি হিসেবে তাকে কয়েক রাউন্ড দৌড়াতে হয়।’ ফিটনেস-সচেতন পেসাররা এখন ভুল করেও ভুল খাবারে মুখ তোলেন না বলেই জানালেন এই চিকিৎসক। সঙ্গে চলে কঠোর পরিশ্রম।
ব্যস, সাফল্যের রেসিপি তো হয়েই গেল!
একটি নয়, বাংলাদেশের ফুটবলে আজ দুটি ম্যাচ। কমলাপুরে বাংলাদেশের মেয়েদের অনূর্ধ্ব-১৭ দল নামবে নেপালের মেয়েদের বিপক্ষে, এর কিছুক্ষণ পরই সিলেটে বাংলাদেশের ছেলেদের জাতীয় দল নামবে সিশেলসের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে। এর মধ্যে মেয়েদের ম্যাচটি দেখা যাবে ইউটিউবে, ছেলেদের ম্যাচটি টি-স্পোর্টসের টিভির পাশাপাশি ইউটিউবেও।
এর বাইরে ইউরো বাছাইপর্বের ম্যাচ তো আছেই, ক্রিকেটে আছে দক্ষিণ আফ্রিকা আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের তৃতীয় টি-টোয়েন্টি। সেঞ্চুরিয়নে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে দুই দলের অমন বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ের পর সিরিজটা নিয়েও যে বাড়তি আকর্ষণ থাকবে, তা আর বলতে!
সব মিলিয়ে আজ টিভিতে কিংবা ইউটিউবে কোন চ্যানেলে কোন খেলা, তা একবার চোখ বুলিয়ে নিন...
ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট
আবাহনী-রূপগঞ্জ টাইগার্স
ব্রাদার্স-অগ্রণী ব্যাংক
সিটি ক্লাব-ঢাকা লেপার্ডস
সকাল ৯টা, ইউটিউব/bcbtigercricket
দক্ষিণ আফ্রিকা-ওয়েস্ট ইন্ডিজ
তৃতীয় টি-টোয়েন্টি
রাত ১০টা, স্টার স্পোর্টস সিলেক্ট ১
অ-১৭ মেয়েদের সাফ
বাংলাদেশ-নেপাল
বেলা ৩টা ১৫মি, ইউটিউব/Sportzworkz
রাশিয়া-ভারত
সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মি., ইউটিউব/Sportzworkz
প্রীতি ম্যাচ
বাংলাদেশ-সিশেলস
বেলা ৩টা ৪৫মি., টি স্পোর্টস, ইউটিউব/@bff.football
ইউরো ২০২৪ বাছাই
জর্জিয়া-নরওয়ে
রাত ১০টা, সনি স্পোর্টস টেন ২
স্কটল্যান্ড-স্পেন
রাত ১২টা ৪৫ মি., সনি স্পোর্টস টেন ২
তুরস্ক-ক্রোয়েশিয়া
রাত ১২টা ৪৫ মি., সনি স্পোর্টস টেন ১
সুইজারল্যান্ড-ইসরায়েল
রাত ১২টা ৪৫ মি., সনি স্পোর্টস টেন ৫
প্রীতি ম্যাচ
জার্মানি-বেলজিয়াম
রাত ১২টা ৪৫ মি., সনি স্পোর্টস টেন ৩
সেঞ্চুরিয়নে কাল যা হলো, সেটাকে কী বলবেন? পাগলামি? সম্ভবত তা-ই বলতে হয়।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ আগে ব্যাট করে ৫ উইকেটে করল ২৫৮ রান, দক্ষিণ আফ্রিকা তা পেরিয়ে গেল ৭ বল আর ৬ উইকেট হাতে রেখে। প্রসঙ্গত, ম্যাচটা টি-টোয়েন্টি! একের পর এক রেকর্ড চুরমার যে হয়ে গেছে, তা আর বলতে!
তা আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে আজ বাংলাদেশকেও নাকি অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার অমন ইনিংস। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে তা-ই বললেন তাসকিন।
বৃষ্টি বাধা হয়ে না দাঁড়ালে টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি রানের দেখা হয়েই যেত বলে ধারণা সম্ভবত দেশের সকল ক্রিকেটপ্রেমীর। তবে তা না হলেও চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টি-টোয়েন্টিতে ২০০ রান করা প্রথম দল ঠিকই বনে গেল বাংলাদেশ।
সে পথে সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব দুই ওপেনার লিটন দাস আর রনি তালুকদারের। ৪৩ বলে ৯১ রানের জুটির পথে পাওয়ার প্লে-তেই বাংলাদেশ তোলে ৮১ রান। টি-টোয়েন্টিতে পাওয়ার প্লেতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি রানের রেকর্ড এটি।
তা নিয়ে তাসকিন ম্যাচ শেষে বললেন, ‘খুবই ভালো লাগছিল (ব্যাটিং দেখে)। গতকাল দক্ষিণ আফ্রিকার খেলায় ৬ ওভারে ১০০ রান দেখে আমরা ভাবছিলাম, এ রকম কিছু হতে যাচ্ছে নাকি! লিটন আউট হয়ে আসার পর ওকে বললাম, ‘কিরে তুই কি কালকের ম্যাচ দেখে এরকম পিটাচ্ছিলি?’ ও বলে, ‘হ্যাঁ, ওরা পারলে আমিও পারব।’
এমন ব্যাটিং নিয়ে তাসকিনের তৃপ্তি, ‘এটাই ইতিবাচক দিক, আমরা সবাই উপভোগ করছিলাম। এরকম ব্র্যান্ড অব ক্রিকেট খেলতে থাকলে অনেক ভালো হবে।’