রোববার মিরপুরে অতীত ফিরিয়ে আনলেন নির্বাচক আবদুর রাজ্জাক। একসময় বাংলাদেশের মাটিতে টেস্ট মানেই সফরকারী দলগুলোর দাপট। তিন বা চার দিনে মীমাংসা হওয়া ম্যাচগুলোর অধিকাংশেই দুবার বল করার সুযোগ মিলত না বাংলাদেশের। প্রতিপক্ষের দাপট দেখেই মাঠ ছাড়তে হতো বাংলাদেশকে।
দিন বদলেছে। ২০১৫ সালের পর থেকে ঘরের মাঠকে ব্যবহার করতে শিখেছে বাংলাদেশ। স্পিনসহায়ক উইকেটে অতিথি দলকে এখন নাকানিচুবানি প্রায়ই খাওয়ায় বাংলাদেশ। কয়েক দিন আগে ভারতের মতো দল সিরিজ জিতলেও তাদেরও চেপে ধরেছিল বাংলাদেশ।
ক্রিকেটার রাজ্জাক বদলে যাওয়ার এমন স্বাদ পাননি। তবে নির্বাচক হিসেবে তার চাওয়া, ক্যারিয়ারের শুরুতে তারা যেমন অসহায় বোধ করতেন, এবার প্রতিপক্ষকে সে স্বাদ উপহার দিক সাকিব-মিরাজরা।
মঙ্গলবার শুরু হতে যাওয়া আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টে দলের কাছে তার প্রত্যাশা জানাতে গিয়ে কোনো রাখঢাক রাখেননি নির্বাচক কমিটির সদস্য, ‘আমার সোজা হিসাব, খুব ভালোভাবে জিততে চাই। একদম শুরুতে আমাদের বিপক্ষে দলগুলো খুব দাপট দেখিয়ে টেস্ট জিতত। আমরাও চাই সেভাবে খেলতে। যেন বোঝা যায় আমাদেরও উন্নতি হচ্ছে, নতুনদের সঙ্গে আমাদের পার্থক্য থাকছে।’
নতুনদের সঙ্গে পার্থক্য ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজে এক প্রকার বুঝিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। শেষ টি-টোয়েন্টির আগে মনে হচ্ছিল, আয়ারল্যান্ড সিরিজকে অনুশীলন বলে ভাবছেন লিটন দাস-তাসকিন আহমেদরা।
এমন এক দলের বিপক্ষে কেন পূর্ণ শক্তির দলকেই খেলাচ্ছেন সে ব্যাখ্যাতেই অতীতে ফিরেছেন রাজ্জাক, ‘আমরাও প্রথম দিকে যখন টেস্ট খেলতাম; ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকার মূল দলই খেলত। ভারতের প্রতিবার মূল দলই খেলতে আসে। হয়তো এ ম্যাচ চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ না। কিন্তু টেস্ট জিতে রাখা ভিন্ন ব্যাপার, কেউ নিজেকে বঞ্চিত রাখতে চায় না।’
তবে নতুন দলগুলোর সঙ্গে যতই পার্থক্য বোঝাতে চান না কেন রাজ্জাক, বাস্তবতা হলো আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে সর্বশেষ টেস্ট স্ট্যাটাসপ্রাপ্ত দল আফগানিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টটিতে ঘরের মাঠে হেরেছিল বাংলাদেশ।
সে কারণেই দুর্বল আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষেও পূর্ণ শক্তির বাংলাদেশ দলকে নামানো হচ্ছে। আইপিএলের জন্য অনাপত্তিপত্র মেলেনি লিটন-সাকিবের। রাজ্জাক অবশ্য অনাপত্তি না দেয়ার পেছনে একে কারণ হিসেবে দেখতে নারাজ, ‘আয়ারল্যান্ডের কাছে হেরে যেতে পারি বা আফগানিস্তানের কাছে হেরে গেছি এসব চিন্তা করিনি। আমরা এই ম্যাচ খুব দাপট দেখিয়ে জিততে চাই, খুব ভালোভাবে- এটাই চিন্তা আমাদের। টেস্টে আমরা কোন অবস্থায় আছি, পার্থক্যটা কী এটা তো জানা দরকার।’
টেস্টে নিজেদের অবস্থান জানতে চাওয়ার এই ব্যাখ্যাটাই বারবার উঠে এসেছে নির্বাচকের কণ্ঠে। তবে সে ব্যাখ্যায় এটাও স্পষ্ট, সাকিব-লিটন ছাড়া বাংলাদেশ দলের স্কোয়াডে খুব বেশি ভরসা পান না তারা, ‘সেরা দলটাই খেলুক, যেহেতু এটা টেস্ট ম্যাচ। আমার মনে হয় না কখনো কোনো টেস্ট ম্যাচকে বা দলকে হালকাভাবে নেওয়া উচিত। টেস্ট ম্যাচ জিতে রাখাই ভালো। আরেক দিক থেকে যদি বলেন... দলে চার-পাঁচজন খেলোয়াড় না থাকলে সমস্যা হবে না; এখনো ওই পর্যায়ে যাইনি, সময় লাগবে।’
রাজ্জাকের ধারণা, সাদা বলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়তে না পারলেও টেস্টে ভিন্ন এক আয়ারল্যান্ডের দেখা মিলতেও পারে, ‘আয়ারল্যান্ডের প্রচুর খেলোয়াড় আছে যারা কাউন্টি খেলে। ওদের হালকা করে দেখার সুযোগ নেই। ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি দেখে যদি মনে হয় ওরা ভালো দল না, ভুল হচ্ছে। ওরা যেভাবে খেলেছে এর চেয়ে অনেক ভালো দল। হয়তো এখানে এসে ভালো করতে পারেনি।’
টেস্টে ভিন্ন আয়ারল্যান্ডের দেখা মিললেই ভালো। না হলে উন্নতি আসলেই হচ্ছে কি না, সেটা তো বুঝতে পারবেন না নির্বাচকরা।
বিপিএলের ১২তম আসরের পর্দা উঠেছে আজ সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। তবে এবারের আয়োজনের শুরুটা ছিল কিছুটা আবেগঘন ও ভিন্নধর্মী। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সম্মুখসারির যোদ্ধা এবং ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শহীদ ওসমান হাদির স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ম্যাচের শুরুতে বিশেষ সম্মান প্রদর্শন করা হয়।
গত ১২ ডিসেম্বর সন্ত্রাসীদের গুলিতে গুরুতর আহত হওয়ার পর সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৮ ডিসেম্বর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ওসমান হাদি। তার এই আত্মত্যাগকে সম্মান জানাতে বিসিবি আগেই শোকবার্তা প্রকাশ করেছিল। আজ বিপিএলের উদ্বোধনী দিনে সিলেট টাইটান্স ও রাজশাহী ওয়ারিয়র্সের মধ্যকার ম্যাচ শুরুর আগে তার স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
মাঠে উপস্থিত বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুলসহ সকল দর্শক ও খেলোয়াড় যখন নীরবতা পালন করছিলেন, তখন এক অনন্য দৃশ্যের অবতারণা করেন রাজশাহী ওয়ারিয়র্সের তারকা ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম। নীরবতা পালনের সেই মুহূর্তে তাকে অত্যন্ত নিবিষ্ট চিত্তে হাত তুলে মোনাজাত করতে দেখা যায়। শহীদ হাদির বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনায় তার এই প্রার্থনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ প্রশংসিত হচ্ছে।
দিনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছিল পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত ও জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে। এরপর বেলুন উড়িয়ে টুর্নামেন্টের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন বিসিবি সভাপতি। উদ্বোধনী দিনে আজ দুটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে এবং প্রথম ম্যাচ শেষে দর্শকদের বিনোদনের জন্য একটি সংক্ষিপ্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন রাখা হয়েছে।
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) দ্বাদশ আসরের পর্দা ওঠার ঠিক এক দিন আগে বড় ধরনের সংকটে পড়েছে চট্টগ্রাম রয়্যালস ফ্র্যাঞ্চাইজি। আর্থিক ও ব্যবস্থাপনাগত জটিলতার কারণে অনেকটা আকস্মিকভাবেই আজ বৃহস্পতিবার সকালে দলটির মালিকানা ছেড়ে দিয়েছে বর্তমান কর্তৃপক্ষ। টুর্নামেন্টের ঠিক আগমুহূর্তে এমন উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দলটির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে এবং বিপিএলের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সরাসরি দলটির পরিচালনার দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছে। বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্যসচিব ইফতেখার রহমান মিঠু এবং বিসিবির মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বিসিবির অধীনে যাওয়ার পরপরই দ্রুততম সময়ের মধ্যে চট্টগ্রাম রয়্যালসের জন্য নতুন কোচিং ও ম্যানেজমেন্ট স্টাফ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। জাতীয় দলের সাবেক কিংবদন্তি অধিনায়ক হাবিবুল বাশার সুমনকে দলটির টিম ডিরেক্টর হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে এবং প্রধান কোচের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে অভিজ্ঞ কোচ মিজানুর রহমান বাবুলকে। কাল শুক্রবার থেকেই মাঠের লড়াই শুরু হতে যাওয়ায় বিসিবি এখন তড়িঘড়ি করে দলটির আনুষঙ্গিক সব প্রস্তুতি গুছিয়ে নিচ্ছে।
উল্লেখ্য, এবারের বিপিএল নিলামে চট্টগ্রাম রয়্যালস বেশ দাপটের সঙ্গেই দল গড়েছিল। বিশেষ করে ওপেনার নাঈম শেখকে ১ কোটি ১০ লাখ টাকার রেকর্ড দামে দলে ভিড়িয়ে তারা ক্রিকেট মহলে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছিল। নিলামে সবচেয়ে বেশি দামে ক্রিকেটার কেনার কৃতিত্ব দেখালেও শেষ পর্যন্ত আর্থিক ও প্রশাসনিক জটিলতা কাটিয়ে ফ্র্যাঞ্চাইজিটি তাদের কার্যক্রম সচল রাখতে ব্যর্থ হলো। মূলত বিসিবির এই দ্রুত হস্তক্ষেপের ফলে আসরে সাতটি দলের অংশগ্রহণ ও টুর্নামেন্টের সিডিউল নিশ্চিত থাকল। তবে মালিকানা পরিবর্তনের এই আকস্মিক ঘটনাটি বিপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজি ব্যবস্থাপনার সীমাবদ্ধতাকে আবারও সামনে নিয়ে এল।
সংযুক্ত আরব আমিরাতে চলমান ইন্টারন্যাশনাল লিগ টি-টোয়েন্টিতে (আইএল টি-টোয়েন্টি) দুর্দান্ত নৈপুণ্য প্রদর্শনের পর দেশের টানে এবং আসন্ন বিপিএলে অংশ নিতে আজ বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) দেশে ফিরছেন দুই তারকা পেসার তাসকিন আহমেদ ও মোস্তাফিজুর রহমান। বুধবার রাতে দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে লিগ পর্বের ম্যাচে মোস্তাফিজের দল দুবাই ক্যাপিটালস এবং তাসকিনের শারজা ওয়ারিয়র্স একে অপরের মুখোমুখি হয়েছিল। সেই ম্যাচটি শেষ করেই এই দুই কৃতি ক্রিকেটার বাংলাদেশের বিমানের পথ ধরেন। বিমানে ফেরার পথে মোস্তাফিজের সঙ্গে একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করে তাসকিন আহমেদ জানিয়েছেন যে, এখন তাঁদের লক্ষ্য শুধুই বিপিএল এবং সেখানে নিজেদের সেরাটা উজাড় করে দিতে তাঁরা উন্মুখ হয়ে আছেন।
এবারের আইএল টি-টোয়েন্টিতে মোস্তাফিজুর রহমান তাঁর চিরচেনা ‘ফিজ’ জাদুতে ক্রিকেট বিশ্বকে মুগ্ধ করেছেন। টুর্নামেন্টের ৮টি ম্যাচে অংশ নিয়ে তিনি শিকার করেছেন ১৫টি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট, যা তাঁকে আসরের দ্বিতীয় শীর্ষ উইকেট শিকারির তালিকায় তুলে এনেছে। বিশেষ করে গালফ জায়ান্টসের বিপক্ষে এক ওভারে ৩ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরার পুরস্কার জেতা ছিল এই আসরে তাঁর অন্যতম সেরা মুহূর্ত। তাঁর মাপা স্লোয়ার আর কাটার মোকাবিলা করতে বিশ্বের বড় বড় ব্যাটারদের বেশ বেগ পেতে হয়েছে। শুরুতে কিছুটা ছন্দহীন মনে হলেও মোস্তাফিজ দ্রুতই নিজেকে ফিরে পেয়ে দুবাই ক্যাপিটালসকে প্লে-অফে তুলতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন।
অন্যদিকে, তাসকিন আহমেদও শারজা ওয়ারিয়র্সের বোলিং আক্রমণে ছিলেন অন্যতম প্রধান সেনানী। যদিও পরিসংখ্যানের বিচারে তিনি মোস্তাফিজের চেয়ে কিছুটা পিছিয়ে আছেন, তবে ৬ ম্যাচে ৯ উইকেট নিয়ে তাঁর বোলিংয়ের ধার বজায় রেখেছেন। বিশেষ করে নিজের ক্যারিয়ারের ২০০তম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ডেজার্ট ভাইপার্সের বিপক্ষে মাত্র ২০ রান দিয়ে ২ উইকেট নেওয়া ছিল তাসকিনের জন্য এক বিশেষ মাইলফলক। পাওয়ার প্লেতে তাঁর বিধ্বংসী বোলিং প্রতিপক্ষকে শুরুতেই চাপে ফেলে দিচ্ছিল। যদিও ডেথ ওভারে কিছুটা রান খরচ করার কারণে তাঁর ইকোনমি রেট ৮.৭৬-এ দাঁড়িয়েছে, তবুও শারজার বোলিং শক্তির মূল ভিত্তি ছিলেন তিনিই।
টুর্নামেন্টের পয়েন্ট টেবিলের সমীকরণ অনুযায়ী, মোস্তাফিজের দুবাই ক্যাপিটালস প্লে-অফ নিশ্চিত করলেও তাসকিনের শারজা ওয়ারিয়র্সের ভাগ্য এখনো অনিশ্চিত। বর্তমানে ৯ ম্যাচে মাত্র ৬ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের তলানিতে থাকা শারজাকে শেষ চারে জায়গা করে নিতে হলে পরবর্তী ম্যাচে বড় ব্যবধানে জয়ের পাশাপাশি অন্য দলগুলোর ফলের দিকেও তাকিয়ে থাকতে হবে। তবে আপাতত আমিরাত পর্ব শেষ করে এই দুই পেসার এখন দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় আসর বিপিএল কাঁপাতে পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে ফিরছেন, যা দেশের ক্রিকেট ভক্তদের মাঝে নতুন উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে। তাসকিন ও মোস্তাফিজের এমন ছন্দময় প্রত্যাবর্তন আসন্ন বিপিএলের উত্তেজনাকে আরও বহুগুণ বাড়িয়ে দেবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
রিয়াল মাদ্রিদে অনিয়মিত হয়ে পড়া ব্রাজিলিয়ান তরুণ স্ট্রাইকার এনড্রিক অবশেষে তাঁর নতুন গন্তব্য খুঁজে পেয়েছেন। আগামী ছয় মাসের জন্য ধারে তিনি ফরাসি ক্লাব অলিম্পিক লিঁওতে যোগ দিয়েছেন। গত সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার পর আজ বৃহস্পতিবার তিনি ফ্রান্সে পৌঁছেছেন তাঁর মেডিকেল পরীক্ষা ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে। লিঁওতে এনড্রিক ঐতিহ্যবাহী ৯ নম্বর জার্সি পরে মাঠে নামবেন বলে জানা গেছে। মূলত নিয়মিত খেলার সুযোগ পেয়ে নিজেকে পুনরায় প্রমাণের লক্ষ্যেই তিনি স্পেনের পাঠ চুকিয়ে ফ্রান্সে পাড়ি জমিয়েছেন।
রিয়াল মাদ্রিদে পর্যাপ্ত খেলার সুযোগ না পাওয়ায় জাতীয় দলে এনড্রিকের অবস্থানও নড়বড়ে হয়ে পড়েছিল। ব্রাজিল কোচ কার্লো আনচেলত্তির বিশেষ নজরে থাকতে এবং ২০২৬ বিশ্বকাপের দলে নিজের জায়গা পাকাপোক্ত করতে হলে তাঁর জন্য নিয়মিত মাঠে নামা এখন বাধ্যতামূলক। রিয়ালে নতুন কোচ জাবি আলোনসোর পরিকল্পনায় জায়গা না পাওয়ায় এনড্রিকের জন্য এই শীতকালীন দলবদলটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ইউরোপের বেশ কয়েকটি বড় ক্লাব তাঁকে পেতে আগ্রহী হলেও তিনি শেষ পর্যন্ত লিঁওকেই বেছে নিয়েছেন, যেখানে তিনি লিগ ওয়ান ও ইউরোপা লিগের মঞ্চে নিজেকে মেলে ধরার সুযোগ পাবেন।
লিঁওতে যোগ দেওয়ার পেছনে ভাষাগত সুবিধা ও পরিচিত পরিবেশ এনড্রিকের জন্য বড় সহায়ক হবে। ক্লাবটির ম্যানেজার পাউলো ফনসেকার মাতৃভাষা পর্তুগিজ হওয়ায় যোগাযোগে কোনো সমস্যা হবে না। এছাড়া সেখানে আগে থেকেই ব্রাজিলের এমারসন ও আবনের থাকায় তিনি দ্রুত দলের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারবেন বলে আশা করা হচ্ছে। ঐতিহাসিকভাবেও লিঁও ব্রাজিলিয়ান ফুটবলারদের জন্য অত্যন্ত পয়া একটি ক্লাব হিসেবে পরিচিত। অতীতে লুকাস পাকেতা, ব্রুনো গুইমারেস, জুনিনহো এবং ফ্রেডের মতো তারকারা এই ক্লাবের হয়েই বিশ্ব ফুটবলে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করেছিলেন। এনড্রিক এখন তাঁদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে নিজের হারিয়ে যাওয়া জৌলুস ফিরে পেতে মরিয়া।
উল্লেখ্য যে, ২০২৪ সালে অনেক বড় আশা ও জাঁকজমকের মধ্য দিয়ে পালমেইরাস থেকে এনড্রিককে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে উড়িয়ে এনেছিল রিয়াল মাদ্রিদ। কিন্তু স্পেনের এই ক্লাবে তাঁর সময়টা একদমই ভালো কাটেনি। চলতি মৌসুমে লা লিগা ও চ্যাম্পিয়ন্স লিগ মিলিয়ে তিনি মাত্র ২০ মিনিটের মতো মাঠে থাকার সুযোগ পেয়েছেন। এমন করুণ পরিস্থিতির পর নিজের ক্যারিয়ার বাঁচাতে এনড্রিকের এই সাহসী সিদ্ধান্ত কতটুকু ফলপ্রসূ হয়, এখন সেটিই দেখার বিষয়। আপাতত ফুটবল বিশ্বের নজর থাকবে ফ্রান্সের দিকে, যেখানে রিয়ালের এই ব্রাত্য ফুটবলার লিঁওর জার্সিতে নতুন করে জ্বলে ওঠার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
বার্সেলোনার এক সময়ের অত্যন্ত সম্ভাবনাময় ফুটবলার রাফিনহা আলকান্তারা মাত্র ৩২ বছর বয়সেই পেশাদার ফুটবলকে বিদায় জানালেন। অসাধারণ কারিগরি দক্ষতা, নিখুঁত পাসিং এবং টেকনিক্যাল মুন্সিয়ানার জন্য ক্যারিয়ারের শুরুতেই বিশ্ব ফুটবলের নজর কেড়েছিলেন এই ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার। তবে বারংবার ইনজুরির কবলে পড়ে তাঁর ফুটবল ক্যারিয়ারে বড় ছন্দপতন ঘটে, যার ফলশ্রুতিতে অকালেই মাঠের লড়াই থেকে সরে দাঁড়ানোর কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হলেন তিনি। গত ২২ ডিসেম্বর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে অবসরের ঘোষণা দেন এই তারকা। এর আগে ২০২৪ সালের গ্রীষ্মে কাতারের ক্লাব আল-আরাবি ছাড়ার পর প্রায় এক বছরেরও বেশি সময় তিনি কোনো ক্লাবের সাথে যুক্ত ছিলেন না।
বার্সেলোনার বিখ্যাত ‘লা মাসিয়া’ একাডেমি থেকে উঠে আসা রাফিনহা এক সময় ক্লাবটির মধ্যমাঠের অন্যতম ভরসা হিসেবে বিবেচিত হতেন। তাঁর ক্যারিয়ারের সোনালী সময় ছিল ২০১৪-১৫ মৌসুম, যখন লুইস এনরিকের অধীনে বার্সেলোনা লা লিগা, কোপা দেল রে এবং চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতে ঐতিহাসিক ট্রেবল জয় করেছিল। সেই শক্তিশালী স্কোয়াডের একজন নির্ভরযোগ্য সদস্য হিসেবে তিনি সব কটি শিরোপা জয়ের গৌরব অর্জন করেন। তবে তাঁর ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায় ২০১৭ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যবর্তী সময়টি। অ্যান্টিরিয়র ক্রুসিয়েট লিগামেন্ট (ACL) এবং মেনিস্কাসের গুরুতর চোটের কারণে তাঁকে প্রায় ৫০০ দিন মাঠের বাইরে থাকতে হয়, যা মূলত তাঁর গতি ও ফিটনেসকে স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
ইনজুরি কাটিয়ে ফেরার পর রাফিনহা ইন্টার মিলান ও সেল্টা ভিগোর মতো ক্লাবে ধারে খেলে নিজেকে প্রমাণের চেষ্টা চালিয়েছিলেন। ২০২০ সালে তিনি স্থায়ীভাবে বার্সেলোনা ছেড়ে ফরাসি জায়ান্ট প্যারিস সেন্ট-জার্মেইনে (পিএসজি) যোগ দেন, কিন্তু সেখানেও থিতু হতে পারেননি। পরবর্তীতে রিয়াল সোসিয়াদাদ হয়ে ক্যারিয়ারের শেষ অধ্যায়ে তিনি পাড়ি জমান কাতারের ক্লাব আল-আরাবি দোহাতে। দীর্ঘ পেশাদার ক্যারিয়ারে রাফিনহা মোট ৩৮৬টি ম্যাচ খেলে ৫৫টি গোল এবং ৪৬টি অ্যাসিস্ট করেছেন। অর্জনের ঝুলিতে একটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, তিনটি লা লিগা, তিনটি কোপা দেল রে, লিগ ওয়ান এবং ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপের মতো মর্যাদাপূর্ণ শিরোপা থাকলেও, ইনজুরির কারণে তাঁর পূর্ণ প্রতিভার বিকাশ না ঘটা ফুটবল প্রেমীদের মনে এক বিশাল আক্ষেপ হয়ে থাকবে।
এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ-২ এর ম্যাচে ইরাকি ক্লাব আল জাওরাকে ৫-১ গোলের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে দাপুটে জয় পেয়েছে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর ক্লাব আল নাসর। নিজেদের ঘরের মাঠ কিং ফাহাদ ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এই ম্যাচে শুরু থেকেই সফরকারীদের ওপর চড়াও হয় সৌদি ক্লাবটি। প্রায় এক মাস পর প্রতিযোগিতামূলক ফুটবলে ফিরে এবং এই টুর্নামেন্টে নিজের প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমে রোনালদো নিজে গোলের দেখা না পেলেও দলের বড় জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। প্রথমার্ধে হোয়াও ফেলিক্সের করা একটি গোলে চমৎকার সহায়তা করার পাশাপাশি মাঠের আক্রমণে নেতৃত্ব দেন তিনি।
ম্যাচটিতে আল নাসরের হয়ে দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখিয়ে জোড়া গোল করেন কিংসলে কোম্যান। এছাড়া ওয়েসলি রিবেইরো, আবদুলেলাহ আল আমারি এবং হোয়াও ফেলিক্স একটি করে গোল করে দলের বিশাল জয় নিশ্চিত করেন। বিপরীতে আল জাওরার হয়ে একমাত্র সান্ত্বনাদায়ক গোলটি করেন ইবরাহিম। আল নাসরের কোচ রোনালদোকে শুরুর একাদশে রেখেছিলেন এবং তিনি মাঠে থাকাকালীনই দল ৪-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়। তবে খেলোয়াড়দের ওপর চাপের কথা মাথায় রেখে বিরতির পরই সিআর সেভেনকে মাঠ থেকে তুলে নিয়ে বিশ্রাম দেন কোচ।
এই জয়ের ফলে এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে নিজেদের শতভাগ জয়ের রেকর্ড অক্ষুণ্ণ রাখল আল নাসর। গ্রুপ পর্বের ছয়টি ম্যাচের সবকটিতেই জয় তুলে নিয়ে পূর্ণ ১৮ পয়েন্ট নিয়ে সবার আগে নকআউট পর্ব নিশ্চিত করেছে তারা। অন্যদিকে ৯ পয়েন্ট নিয়ে এই গ্রুপের দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে আল জাওরা। এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ-২ এ নিজের অভিষেক ম্যাচে ব্যক্তিগতভাবে স্কোরশিটে নাম তুলতে না পারলেও রোনালদোর উপস্থিতিতে দলের এমন আধিপত্যমূলক পারফরম্যান্স ফুটবল ভক্তদের মাঝে ব্যাপক উদ্দীপনার সৃষ্টি করেছে। মূলত একটি সুশৃঙ্খল ও আক্রমণাত্মক খেলার মাধ্যমেই এশিয়ান ফুটবলের এই মঞ্চে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখল আল নাসর।
প্রথমবারের মতো আয়োজিত হতে যাওয়া সাফ নারী ফুটসাল চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য ১৫ সদস্যের শক্তিশালী চূড়ান্ত দল ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। ইনডোর ফুটবলের এই নতুন মিশনে বাংলাদেশ দলকে নেতৃত্ব দেবেন অভিজ্ঞ ও সাফজয়ী অধিনায়ক সাবিনা খাতুন। বাফুফে ঘোষিত এই দলে সাবিনাকে অধিনায়ক করার পাশাপাশি দলের শক্তি বৃদ্ধিতে অভিজ্ঞ ও তরুণ খেলোয়াড়দের এক চমৎকার সমন্বয় ঘটানো হয়েছে।
ঘোষিত স্কোয়াডে সাবিনার সহকারী হিসেবে রাখা হয়েছে সুমাইয়া মাতসুশিমা, মাসুরা পারভীন এবং কৃষ্ণারানী সরকারকে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, প্রধান কোচের সাথে মান-অভিমানের জেরে মূল ফুটবল দল থেকে ছিটকে পড়া মাসুরা, কৃষ্ণা ও সুমাইয়া আবারও ফুটসালের মাধ্যমে জাতীয় দলে ফেরার সুযোগ পেলেন। এছাড়া দীর্ঘ বিরতির পর অভিজ্ঞ মিশরাত জাহান মৌসুমীকেও দলে রাখা হয়েছে। ইরানি কোচ সাঈদ খোদারাহমির অধীনে দলটি এই টুর্নামেন্টে অংশ নেবে।
আগামী ২০২৬ সালের ১৩ জানুয়ারি থেকে ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত দক্ষিণ এশিয়ার সাতটি দেশ নিয়ে এই মর্যাদাপূর্ণ টুর্নামেন্টটি অনুষ্ঠিত হবে। এতে বাংলাদেশ ছাড়াও অংশ নেবে ভারত, ভুটান, নেপাল, মালদ্বীপ, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা। সাবিনাদের মিশন শুরু হবে শক্তিশালী ভারতের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচের মাধ্যমে। এরপর পর্যায়ক্রমে তাঁরা ভুটান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের মুখোমুখি হবেন এবং গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে মালদ্বীপের বিরুদ্ধে মাঠে নামবেন।
বাংলাদেশ ফুটসাল দলের চূড়ান্ত সদস্যরা হলেন—সাবিনা খাতুন, সুমাইয়া মাতসুশিমা, মাসুরা পারভীন, কৃষ্ণারানী সরকার, লিপি আক্তার, মেহেনুর আক্তার, নওশন জাহান, নিলুফা ইয়াসমিন নিলা, মারজিয়া, রাত্রি মনি, সুমি খাতুন, মিশরাত জাহান মৌসুমি, ইতি রানী, সাথী বিশ্বাস এবং স্বপ্না আক্তার জিলি। ফুটবলের পর এবার ফুটসালের মঞ্চেও বাংলাদেশের নারীরা সাফল্যের স্বাক্ষর রাখবেন বলে ক্রীড়াপ্রেমীরা আশা প্রকাশ করছেন।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে চলমান অ্যাশেজ সিরিজে ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের পারফরম্যান্স যখন চরম বিপর্যয়ের মুখে, ঠিক তখনই মাঠের বাইরের এক নতুন বিতর্ক নিয়ে বিপাকে পড়েছে ইংলিশ শিবির। কুইন্সল্যান্ডের নুসা সৈকতে চার দিনের বিরতি কাটানোর সময় ক্রিকেটারদের বিরুদ্ধে মাত্রাতিরিক্ত মদ্যপানের অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনার সত্যতা যাচাই এবং ক্রিকেটারদের এমন অপেশাদার আচরণের বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি)। মাত্র ১১ দিনের ক্রিকেটে সিরিজের প্রথম তিন টেস্ট হেরে ইতোমধ্যে অ্যাশেজ হাতছাড়া হওয়া ইংল্যান্ডের জন্য এই ঘটনাটি চরম অস্বস্তি ও ভাবমূর্তির সংকট তৈরি করেছে।
বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছেন ইংল্যান্ডের ওপেনার বেন ডাকেট। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে তাঁকে অত্যন্ত মদ্যপ অবস্থায় দেখা গেছে, যেখানে তিনি অসংলগ্ন ভাষায় কথা বলছিলেন এবং বাড়ি ফেরার পথও সঠিকভাবে চিনতে পারছিলেন না। যদিও ভিডিওটির নির্ভরযোগ্যতা এখনও পুরোপুরি নিশ্চিত করা যায়নি, তবে ইসিবি বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। ইংল্যান্ড ক্রিকেটের পরিচালক রব কি জানিয়েছেন, তারা পুরো বিষয়টি নিবিড়ভাবে খতিয়ে দেখছেন এবং টানা ছয় দিন মদ্যপানের তথ্য যদি সত্য প্রমাণিত হয়, তবে তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হবে না। উল্লেখ্য, বেন ডাকেট এর আগেও ২০১৭-১৮ সালের অস্ট্রেলিয়া সফরে সতীর্থ জেমস অ্যান্ডারসনের মাথায় পানীয় ঢেলে দিয়ে বড় ধরনের শাস্তির মুখে পড়েছিলেন।
ক্রিকেটারদের এমন লাগামহীন আচরণের খবরে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমগুলোতেও কড়া সমালোচনা চলছে। তবে সাবেক অস্ট্রেলীয় কোচ ড্যারেন লেম্যান ইংলিশ ক্রিকেটারদের পক্ষ নিয়ে জানিয়েছেন যে, তাঁর চোখে ক্রিকেটাররা কোনো অসভ্যতা করেননি। তিনি দাবি করেছেন, নুসায় থাকাকালীন ইংলিশ ক্রিকেটাররা স্থানীয়দের সঙ্গে মিশেছেন এবং গলফ ও ফুটবল খেলে সুন্দরভাবে ছুটি কাটিয়েছেন। অন্যদিকে, ইসিবি সাফ জানিয়ে দিয়েছে যে ভিডিওটির পেছনের প্রকৃত ঘটনা এবং এর গুরুত্ব যাচাই করার পর দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মাঠের লড়াইয়ে নাস্তানাবুদ একটি দলের সদস্যদের এমন কাণ্ডজ্ঞানহীন আচরণ বোর্ড কোনোভাবেই হালকাভাবে নিচ্ছে না।
ক্রিকেটের বরপুত্র বিরাট কোহলি আবারও প্রমাণ করলেন কেন তাকে বর্তমান বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটার বলা হয়। ভারতীয় কিংবদন্তি শচিন টেন্ডুলকারের আরও একটি রেকর্ড নিজের করে নিলেন তিনি। আজ বুধবার ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেট টুর্নামেন্ট বিজয় হাজারে ট্রফিতে অন্ধ্র প্রদেশের বিপক্ষে খেলতে নেমে লিস্ট-এ ক্রিকেটে দ্রুততম ১৬ হাজার রানের অবিস্মরণীয় বিশ্বরেকর্ড গড়েছেন কোহলি। দিল্লির হয়ে দীর্ঘ ১৫ বছর পর এই ঘরোয়া টুর্নামেন্টে খেলতে নেমে তিনি এই অনন্য মাইলফলক স্পর্শ করেন।
পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, লিস্ট-এ ক্রিকেটে ১৬ হাজার রানের মাইলফলকে পৌঁছাতে বিরাটের লেগেছে মাত্র ৩৩০ ইনিংস। যেখানে ক্রিকেট ইতিহাসের মহানায়ক শচিন টেন্ডুলকারের লেগেছিল ৩৯১ ইনিংস। অর্থাৎ শচিনের চেয়ে ৬১ ইনিংস কম খেলেই কোহলি এই চূড়ায় পা রাখলেন। ওয়ানডে ও ঘরোয়া লিস্ট-এ মিলিয়ে কোহলির এমন দাপট ক্রিকেট বিশ্বে পুনরায় তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করল।
শুধু ১৬ হাজার রানের রেকর্ডই নয়, এর আগে লিস্ট-এ ক্রিকেটে দ্রুততম ১০ হাজার থেকে শুরু করে ১৫ হাজার পর্যন্ত প্রতিটি হাজারি রানের রেকর্ডও কোহলির দখলে ছিল। দীর্ঘ বিরতির পর ঘরোয়া ক্রিকেটে ফিরে এমন বিধ্বংসী ফর্মে থাকা কোহলি বুঝিয়ে দিলেন তাঁর রানের ক্ষুধা এখনো বিন্দুমাত্র কমেনি। তাঁর এই ঐতিহাসিক অর্জন ভারতীয় ক্রিকেট তো বটেই, বিশ্ব ক্রিকেটের ইতিহাসেও এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। মূলত শচিনের রেকর্ড ভাঙার এই ধারা বজায় রেখে কোহলি নিজেকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেলেন, যা সমসাময়িক যেকোনো ক্রিকেটারের জন্য এক বিশাল অনুপ্রেরণা।
বিজয় হাজারে ট্রফিতে ব্যাট হাতে তাণ্ডব চালিয়ে নতুন ইতিহাস গড়লেন বিহারের উদীয়মান বাঁহাতি ব্যাটার বৈভব সূর্যবংশী। আজ বুধবার রাঁচির জেএসসিএ ওভাল গ্রাউন্ডে অরুণাচল প্রদেশের বিপক্ষে মাত্র ৩৬ বলে বিধ্বংসী এক সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে ক্রিকেট বিশ্বকে চমকে দিয়েছেন এই তরুণ তুর্কি। সিনিয়র পর্যায়ের লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে এটি সূর্যবংশীর প্রথম শতক হলেও এর মাধ্যমেই তিনি বেশ কিছু বড় রেকর্ড নিজের নামে করে নিয়েছেন।
ম্যাচ শুরুর পর থেকেই অরুণাচল প্রদেশের বোলারদের ওপর চড়াও হন বৈভব। মাঠের চারদিকে চার-ছক্কার বন্যায় ভাসিয়ে মাত্র ৩৬ বলেই তিনি তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগার স্পর্শ করেন। এর মাধ্যমে ভারতীয় পুরুষ ক্রিকেটারদের মধ্যে লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে দ্বিতীয় দ্রুততম সেঞ্চুরির কীর্তি গড়লেন তিনি। ভারতের হয়ে এর চেয়ে দ্রুত সেঞ্চুরির রেকর্ড রয়েছে শুধু অমলপ্রীত সিংয়ের দখলে, যিনি ২০২৪ সালে ৩৫ বলে শতক করেছিলেন। বিশ্ব ক্রিকেটের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বৈভবের ৩৬ বলের এই সেঞ্চুরিটি এখন যৌথভাবে চতুর্থ দ্রুততম লিস্ট ‘এ’ সেঞ্চুরি।
বৈভবের ব্যাটিং এতটাই বিধ্বংসী ছিল যে মাত্র ৫৪ বলেই তিনি দেড়শ রান পূর্ণ করেন। তাঁর এমন ঝোড়ো ইনিংসের ওপর ভর করে বিহার দল মাত্র ১৮ ওভারের মধ্যেই ২০০ রানের গণ্ডি পেরিয়ে যায়। এই পথে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার কিংবদন্তি এবি ডিভিলিয়ার্সের লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে থাকা ৬৪ বলের দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ডটি ভেঙে চুরমার করে দিয়েছেন। তবে ওয়ানডে ক্রিকেটে ডি ভিলিয়ার্সের ৩১ বলের দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ডটি এখনও অক্ষুণ্ণ রয়েছে।
প্রতিবেদনটি লেখা পর্যন্ত বৈভব সূর্যবংশী ৭০ বলে ১৬৫ রানে অপরাজিত ছিলেন, যেখানে তাঁর ইনিংসে ছিল ১৩টি বিশাল ছক্কা এবং ১৫টি দর্শনীয় চারের মার। মাত্র সপ্তম লিস্ট ‘এ’ ম্যাচ খেলতে নেমেই সিনিয়র পর্যায়ে এমন দানবীয় ব্যাটিং প্রদর্শন করে তিনি প্রমাণ করলেন যে অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায় পেরিয়ে বড় মঞ্চেও তিনি রাজত্ব করতে প্রস্তুত। এই ঐতিহাসিক ইনিংসটি ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেটে দীর্ঘকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
আসন্ন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) ঘিরে নিজের পরিকল্পনা ও বড় দুটি লক্ষ্যের কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নবনিযুক্ত সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল। অতীতের নানা বিতর্ক ও চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে এবারের আসরটিকে একটি সুশৃঙ্খল ও পরিচ্ছন্ন টুর্নামেন্ট হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করাই তাঁর প্রধান লক্ষ্য। সভাপতির মতে, বিপিএলের এবারের আসরটি শুধু একটি ঘরোয়া প্রতিযোগিতাই নয়, বরং এটি জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তুতির মঞ্চ। বিশেষ করে বিপিএলের পরপরই অনুষ্ঠেয় আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের কথা মাথায় রেখে তিনি বলেন, সরাসরি প্রস্তুতি না হলেও এই টুর্নামেন্টের মাধ্যমে খেলোয়াড়রা টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা ও আত্মবিশ্বাস অর্জন করতে পারবেন।
বিপিএল সফলভাবে আয়োজনে মাঠের খেলার পাশাপাশি আনুষঙ্গিক ব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তার ওপরও বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে বিসিবি। সভাপতি বুলবুল জানান, খেলাটি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার জন্য তাঁরা বিভিন্ন অংশীজন বা স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে সমন্বয় করছেন। বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নির্দেশনাগুলো বোর্ড শ্রদ্ধার সাথে অনুসরণ করছে এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য তারা সব সময় সতর্ক দৃষ্টি রাখছে। বিসিবির মূল কাজ হলো একটি সুন্দর খেলার পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং সেই লক্ষ্যেই প্রশাসনের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করছে ক্রিকেট বোর্ড।
টুর্নামেন্টের পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি ও ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর ভূমিকা নিয়েও কথা বলেছেন বিসিবি প্রধান। তিনি উল্লেখ করেন যে, বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল নিয়মিত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই ফ্র্যাঞ্চাইজিদের তাদের নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে মনোযোগী হওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বোর্ড তার নিজস্ব ভূমিকা পালনের পাশাপাশি ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর কাজের দিকেও সূক্ষ্ম নজর রাখছে। সব মিলিয়ে একটি বিতর্কমুক্ত ও সফল বিপিএল আয়োজনের মাধ্যমে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে এক ধাপ এগিয়ে নিতে চায় বিসিবির বর্তমান নেতৃত্ব।
সংযুক্ত আরব আমিরাতে চলমান ইন্টারন্যাশনাল টি-টোয়েন্টি লিগে বল হাতে দুর্দান্ত ছন্দে রয়েছেন বাংলাদেশি পেসার তাসকিন আহমেদ। গত সোমবার আবুধাবি নাইট রাইডার্সের বিপক্ষে ম্যাচে এই টাইগার পেসার জোড়া উইকেট শিকার করে তাঁর দল শারজাহ ওয়ারিয়ার্সের জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। দিনের শুরুতেই তাসকিন তাঁর সামর্থ্যের প্রমাণ দেন। ইনিংসের প্রথম ওভারেই তিনি প্রতিপক্ষের বিপজ্জনক ওপেনার ফিল সল্টকে সাজঘরে ফেরান। নিজের পরের ওভারে আক্রমণ অব্যাহত রেখে তিনি তুলে নেন আরেক তারকা ব্যাটার অ্যালেক্স হেলসের উইকেট। পাওয়ার প্লেতে অধিনায়ক সিকান্দার রাজা তাসকিনকে দিয়ে তিন ওভার করিয়ে নেন, যেখানে তিনি মাত্র ১৬ রান খরচায় দুই উইকেট নিয়ে প্রতিপক্ষকে শুরুতেই চাপে ফেলে দেন।
তবে ইনিংসের ১৯তম ওভারে নিজের কোটার শেষ ওভার করতে এসে তাসকিন কিছুটা খরুচে প্রমাণিত হন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ তারকা আন্দ্রে রাসেল ও জেসন হোল্ডারের ঝোড়ো ব্যাটিংয়ের মুখে সেই ওভারে তিনি চারটি ছক্কাসহ ২৫ রান দেন। শেষ পর্যন্ত ৪ ওভারে ৪১ রান দিয়ে ২ উইকেট শিকার করে দিন শেষ করেন এই পেসার। টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত ৫টি ম্যাচ খেলে তাসকিন মোট ৮টি উইকেট শিকার করেছেন।
নাইট রাইডার্সের দেওয়া ১৩৪ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শারজাহ ওয়ারিয়ার্সকে শেষ বল পর্যন্ত লড়াই করতে হয়েছে। চরম উত্তেজনার মাঝে শেষ বলে ৪ উইকেটের রোমাঞ্চকর জয় তুলে নেয় তাসকিনের দল। শারজাহর এই জয়ে তাসকিনের শুরুর ধাক্কাটি বড় নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে। দেশের বাইরে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে তাসকিনের এমন ধারাবাহিক পারফরম্যান্স ক্রিকেট ভক্তদের মাঝে নতুন আশার সঞ্চার করছে।
ক্যারিয়ারের নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ৩৩ বছর বয়সী ব্রাজিলিয়ান তারকা নেইমার জুনিয়র এখন নতুন করে স্বপ্ন বুনছেন ২০২৬ বিশ্বকাপকে ঘিরে। সম্প্রতি তাঁর শৈশবের ক্লাব সান্তোসকে অবনমনের হাত থেকে রক্ষা করে তিনি প্রমাণ করেছেন যে, বয়সের ভারে তিনি এখনো ফুরিয়ে যাননি। বার্সেলোনা, পিএসজি ও আল-হিলালের মতো বড় ক্লাবগুলো ঘুরে আবার নিজের ঘরোয়া আঙিনায় ফিরে নেইমার এখন নিজেকে আগের চেয়েও বেশি আত্মবিশ্বাসী মনে করছেন। তবে সান্তোসের হয়ে লড়াই শেষ হলেও নেইমারের মূল লক্ষ্য এখন অনেক গভীরে, যা মূলত ২০২৬ সালের বিশ্বমঞ্চে ব্রাজিলের ষষ্ঠ শিরোপা জয়কে কেন্দ্র করে আবর্তিত হচ্ছে।
সম্প্রতি সাও পাওলোতে এক অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে নেইমার তাঁর এই স্বপ্নের কথা খোলাখুলিভাবে জানান। সেখানে তিনি বলেন, ২০২৬ বিশ্বকাপ ব্রাজিলে ফিরিয়ে আনতে তিনি তাঁর শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত লড়াই করবেন এবং দেশের জন্য অসম্ভবকেও সম্ভব করতে পিছপা হবেন না। আবেগঘন কণ্ঠে তিনি প্রতিশ্রুতি দেন যে, যদি ব্রাজিল ফাইনালে ওঠে তবে তিনি অবশ্যই গোল করবেন। তবে জাতীয় দলে ফেরার পথটা এখনো পুরোপুরি মসৃণ হয়নি তাঁর জন্য, কারণ বর্তমান কোচ কার্লো আনচেলত্তির কাছ থেকে তিনি এখনো ডাক পাননি। এই অনুষ্ঠানে তাই সরাসরি কোচের উদ্দেশ্যে তিনি সাহায্যের আবেদন জানিয়ে বলেন, দেশের স্বপ্ন পূরণে যেন তাঁকে সুযোগ দেওয়া হয়।
ফুটবল বিশ্লেষকদের মতে, নেইমার যদি সত্যিই বিশ্বকাপে অংশ নিতে চান তবে তাঁর জন্য নিয়মিত উচ্চমানের ও প্রতিযোগিতামূলক ফুটবলে থাকা অত্যন্ত জরুরি। সান্তোস তাঁর জন্য আবেগের জায়গা হলেও বিশ্বকাপের প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য ক্লাবটির বর্তমান মান যথেষ্ট নয় বলে অনেকেই মনে করছেন। এই কারণেই ব্রাজিলিয়ান ক্লাব ফ্ল্যামেঙ্গোতে তাঁর যোগ দেওয়ার গুঞ্জন জোরালো হচ্ছে, যেখানে কোপা লিবার্তাদোরেসের মতো দক্ষিণ আমেরিকার সর্বোচ্চ পর্যায়ের লড়াইয়ে নিজেকে পরখ করে নেওয়ার সুযোগ পাবেন তিনি। মূলত ২০২৩ সালের অক্টোবরে উরুগুয়ের বিপক্ষে মারাত্মক চোট পাওয়ার পর দীর্ঘ সময় মাঠের বাইরে ছিলেন নেইমার। সেই কঠিন চোট কাটিয়ে এখন তিনি সম্পূর্ণ ফিট এবং আবারও ইতিহাসের পাতায় নিজের নাম নতুন করে লিখতে প্রস্তুত হচ্ছেন। তাঁর এই অদম্য ইচ্ছা এবং মাঠের পারফরম্যান্সই বলে দেবে ২০২৬ সালের বিশ্বকাপে তিনি ব্রাজিলের হলুদ জার্সি গায়ে আবারও জাদুকরী কোনো মুহূর্ত তৈরি করতে পারবেন কি না।