প্রথম লেগ ১-১ সমতায়। চ্যাম্পিয়নস লিগ এখন আর ঘরের মাঠ-পরের মাঠ নিয়ে ভাবে না, ‘অ্যাওয়ে গোল’-এর নিয়ম তো এখন আর নেই। ঘর আর পরের মাঠের ব্যবধান এখন শুধু মাঠে থাকা দর্শকের গলার আওয়াজে।
তা ইতিহাদে আজ রেয়াল মাদ্রিদকে ভয় ধরানোর মতো গলার আওয়াজ ম্যানচেস্টার সিটির সমর্থকদের থাকবে?
ঘরের মাঠে ম্যাচ বলে ম্যান সিটির কিছুটা আশার জোর বাড়তে পারে ঘরের মাঠে তাদের সাম্প্রতিক ফর্মের কারণে। সব টুর্নামেন্ট মিলিয়ে সর্বশেষ ১৪ ম্যাচে ইতিহাদে হারেনি পেপ গার্দিওলার দল, এই ১৪ ম্যাচে ৪৯ গোল করার বিপরীতে খেয়েছে মাত্র ৭টি।
আর হিসাবটা যদি হয় পরের মাঠে রেয়াল মাদ্রিদের রেকর্ডের, তা হলে ম্যান সিটির জন্য আশাও জোগাবে, শঙ্কাও জাগাবে। প্রথম লেগে ঘরের মাঠে ড্র করে দ্বিতীয় লেগে পরের মাঠে নেমেছে- চ্যাম্পিয়নস লিগে মাদ্রিদের এমন অভিজ্ঞতা ৯ বারের। তার মধ্যে ৭ বারই অভিজ্ঞতাটা সুখকর নয়, বাদ পড়েছে মাদ্রিদ- এটা ম্যান সিটির জন্য আশার বাণী।
আর শঙ্কা- বাকি যে দুবার মাদ্রিদ পরের লেগে গেছে, দুবারই দ্বিতীয় লেগটা ছিল ম্যানচেস্টারে, ২০০০ ও ২০০৩ সালে। ম্যান সিটি তো তখন ইউরোপে অচ্ছুত ছিল, মাদ্রিদের ওই দুবারের উদযাপনের ঘটনা তাদের প্রতিবেশী ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মাঠে।
অবশ্য এত রেকর্ড-টেকর্ড ঘাঁটার কী দরকার! ম্যান সিটি শুধু একটা তথ্যেই স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে পারে- এবার দ্বিতীয় লেগটা তো আর মাদ্রিদের সান্তিয়াগো বের্নাব্যুতে খেলতে হচ্ছে না। কারণ? আরে, গত মৌসুমের কথা ভুলে গেলে চলবে? সেটাও তো সেমিফাইনালই ছিল। সেবার দ্বিতীয় লেগের ৮৯ মিনিটেও ৫-৪ গোলে এগিয়ে ছিল ম্যান সিটি, কিন্তু ফাইনালে উঠে শিরোপাও জিতে যায় মাদ্রিদই। বের্নাব্যু সেদিন রেঙেছিল রদ্রিগোর ছোঁয়ায়!
এবার ইতিহাদ রাঙাবে কে?
রদ্রিগো নাজারিও
রোনালদো নাজারিওকে তিনি আদর্শ মানেন। গতকাল প্রস্তুতির সময়ও রোনালদো লেখা ব্রাজিলের ৯ নম্বর জার্সি পরেই জিম করেছেন রদ্রিগো। আর এই ‘রদ্রিগো নাজারিও’কেই চাইবে মাদ্রিদ। অবশ্য চ্যাম্পিয়নস লিগে গোলের হিসাবে তো রোনালদোকে ছাড়িয়েই গেছেন রদ্রিগো। রোনালদোর চ্যাম্পিয়নস লিগ গোল ছিল ১৪টি, রদ্রিগোর এরই মধ্যে ১৫ গোল হয়ে গেছে!
ভয় দেখাও
প্রথম লেগে আর্লিং হলান্ডকে বোতলবন্দি করেই রেখেছিল রেয়াল মাদ্রিদ। দ্বিতীয় লেগেও নিশ্চয়ই ম্যান সিটি স্ট্রাইকারের জন্য আলাদা পরিকল্পনা আছে তাদের। এর মধ্যেও বাড়তি একটা পরামর্শ মাদ্রিদের জন্য দিয়ে রেখেছেন আর্সেনালের সাবেক ডিফেন্ডার মার্টিন কিওন, ‘ওদের জার্মান ডিফেন্ডারকে (রুডিগার) দাপট দেখাতে হবে। হলান্ডের এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে ও যে কাউকে টেক্কা দিতে পারবে, কিন্তু আপনাকে ওর মনে সংশয় ঢোকাতে হবে। সে ক্ষেত্রে এভারটনের ইয়েরাই মিনার মতো দরকারে ডার্ক আর্টের আশ্রয়ও নিতে হতে পারে। সেটা গুঁতো দিয়ে হোক, ‘ইচ্ছাকৃত দুর্ঘটনায়’ ওর পা মাড়িয়ে হোক। আপনাকে ওর মাথার ভেতরে ঢুকে যেতে হবে। ওকে ভয় দেখাতে হবে।’
ভিনিকে আলিঙ্গনের কারণ...
প্রথম লেগে ম্যাচের পর ভিনিসিয়ুস জুনিয়রকে আলিঙ্গনে বেঁধেছিলেন ম্যাচজুড়ে প্রায় পুরোটা সময় তাকে চোখে-চোখে রাখা ম্যান সিটি ডিফেন্ডার কাইল ওয়াকার। কারণটা ওয়াকার জানালেন কাল সংবাদ সম্মেলনে, ‘ও আমার ওপর রেইনবো (পেছনে থাকা বলকে পায়ের নাচনে প্রতিপক্ষের মাথার ওপর দিয়ে নিয়ে যাওয়া) করার চেষ্টা করেছিল। আমি বলতে চেয়েছিলাম যে, ‘এমনটা আর কোরো না প্লিজ।’
অবশ্য ভিনিকে হুঁশিয়ারও করে দিলেন ওয়াকার, ‘আগামীকাল খেলার সুযোগ পেলে ম্যাচ শেষে ওকে আবার এই সম্মানটা আমি দেখাব। তবে এর আগে ম্যাচে... কুকুরের মাংস কুকুরে খাবে!’
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী গোলকিপার এমিলিয়ানো মার্তিনেস বাংলাদেশে এসেছেন।
সোমবার ভোরে রাজধানীর হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান তিনি। আজ বিকেল পর্যন্তই ঢাকায় থাকার কথা তার। এরপর কলকাতার উদ্দেশে ঢাকা ছাড়বেন মার্তিনেস।
ঢাকায় এসে এদিন সকালেই ইনস্টাগ্রামের স্টোরিতে দুটি ছবি পোস্ট করে ভক্তদের জানান দেন মার্তিনেস।
মার্তিনেসের পোস্ট করা ছবি দুটির একটিতে ঢাকার সড়ক দেখা যায়। ছবির ওপরের দিকে লেখা, ‘বাংলাদেশ।’ আরেকটি ছবিতে দেখা যায় একটি কেক। যাতে একটি হোটেলের পক্ষ থেকে তাকে স্বাগত জানানো হচ্ছে।
সোমবার বেলা ২টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে মার্তিনেস সাক্ষাৎ করবেন বলে জানা গেছে। ভক্তদের সঙ্গে দেখা করার প্রাথমিক পরিকল্পনা থাকলেও তা বাতিল হয়েছে। তাকে বাংলাদেশে আনার ব্যবস্থা করা সংস্থার নির্বাচিত কিছু ভক্তই শুধু তার দেখা পেয়েছেন। ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা তার দুই সন্তানকে নিয়ে দেখা করেছেন মার্তিনেসের সাথে।
কাতারে আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ে মার্তিনেসের অবদান অনেক। কোয়ার্টার ফাইনালে নেদারল্যান্ডস ও ফাইনালে ফ্রান্সের বিপক্ষে টাইব্রেকারে দলকে জিতিয়ে বিশ্বকাপের গোল্ডেন গ্লাভস পুরস্কার জিতেছেন মার্তিনেস।
বিশ্বকাপজুড়ে বাংলাদেশে আর্জেন্টাইন সমর্থকদের উন্মাদনা ছিল চোখে পড়ার মতো, যা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে খবর হওয়ার পর বাংলাদেশকে আর্জেন্টিনায় ব্যাপকভাবে পরিচিত করে তোলে। বাংলাদেশের সমর্থকদের কথা লিওনেল মেসি-মার্তিনেসদের কানেও যায়। শুধু কলকাতা সফরে আসার কথা থাকলেও মার্তিনেস নিজ থেকেই বাংলাদেশে আসতে চেয়েছেন।
১৪ বছর পর সাফের সেমিফাইনালে বাংলাদেশ – টুর্নামেন্টের আগে এটাই ছিল বাংলাদেশের বড় স্বপ্ন। কিন্তু গ্রুপ পর্বে মালদ্বীপ ও ভুটানকে হারিয়ে যখন সে স্বপ্ন ছোঁয়া হয়ে গেল, ফাইনালের স্বপ্ন তো উঁকিঝুঁকি মারারই কথা।
বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জটাও ছিল স্বপ্নের সমান বড় – প্রতিপক্ষ যে অতিথি দুই দলের একটি কুয়েত! ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ১৯২তম বাংলাদেশের চেয়ে ৫১ ধাপ এগিয়ে থাকা কুয়েত! বাস্তবতা বলছিল, এশিয়ান কাপে নিয়মিত কুয়েতের বিপক্ষে বাংলাদেশের জয়ের সম্ভাবনা ক্ষীণ।
বাংলাদেশ জেতেনি, বেঙ্গালুরুতে আজ প্রথম সেমিফাইনালে শেষ পর্যন্ত জিকো-ইসা-মোরসালিনরা হেরে গেছেন ১-০ গোলে। সেমিফাইনালেই শেষ হয়ে গেল এবারের সাফে বাংলাদেশের দুর্দান্ত যাত্রা।
কিন্তু হারের আগে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত কী অবিশ্বাস্য লড়াই-ই না করল বাংলাদেশ!
স্কোরলাইনই কিছুটা বলে দেয় বাংলাদেশের লড়াইয়ের গল্প – বাংলাদেশের মন ভেঙে দেয়া গোলটা হয়েছে অতিরিক্ত সময়েরও যোগ করা সময়ে। নির্ধারিত ৯০ মিনিটে কুয়েতকে রুখে দেয়ার পর অতিরিক্ত সময়েও কুয়েতের সঙ্গে লড়ে গেছে বাংলাদেশ। লড়াইটা সমানে-সমান হওয়ার কথা ছিল না, হয়ওনি – বাংলাদেশ রক্ষণ ১২০ মিনিটের প্রায় পুরোটাজুড়েই চাপে ছিল, গোলকিপার জিকো চার-পাঁচবার বাজপাখির ক্ষীপ্রতায় দারুণ সেইভ করেছেন। কিন্তু উল্টো প্রান্তে বাংলাদেশও দারুণ কয়েকটি সুযোগ পেয়েছে, শেষ পর্যন্ত যে সুযোগগুলো দীর্ঘশ্বাসই হয়ে থাকছে।
দুই মিনিটে মোরসালিনের অবিশ্বাস্য সুযোগ মিসে শুরু আক্ষেপের গল্প ১২০ মিনিটের পর যোগ করা সময়ে একজনকে কাটিয়ে বক্সে ঢুকে সুমনের তাড়াহুড়ো করে নেয়া শটেও শেষ হলো না। দ্বিতীয়ার্ধে রাকিবের জোরাল শট বার কাঁপিয়ে ফিরে এলে আক্ষেপ বাড়ে বাংলাদেশের।
প্রথমার্ধে বল পায়ে পেলে পাসিং ফুটবল খেলার চেষ্টা করেছে বাংলাদেশ। ৪-১-২-১-২ ছকে দুই ফরোয়ার্ড রাকিব ও মোরসালিনের পেছনে সুযোগ পাওয়া জামাল ভুঁইয়া বেশ কয়েকবার পাস বাড়িয়েছিলেন দুই ফরোয়ার্ডের দিকে। কিন্তু শক্তিতে-উচ্চতায়-দক্ষতায় বেশ এগিয়ে থাকা কুয়েতি রক্ষণ সেসব সামলে নিয়েছে ভালোভাবেই।
উচ্চতা কাজে লাগিয়ে বারবার লম্বা পাসে আক্রমণে উঠেছে কুয়েত, দ্বিতীয়ার্ধে তাদের আক্রমণের তোড় সামলাতে বেশ কয়েকবার বাজপাখি হতে হয়েছে বাংলাদেশ গোলকিপার জিকোকে। বাংলাদেশ যে ৯০ মিনিট ছাড়িয়ে অতিরিক্ত সময়ে নিয়ে যেতে পেরেছে ম্যাচটা, সে কৃতিত্ব জিকোরই।
অতিরিক্ত সময়েও একই চিত্রনাট্য মেনে এগোচ্ছিল ম্যাচ, তবে আস্তে আস্তে দম হারাতে থাকা বাংলাদেশ এ সময়ে ধীরে ধীরে পিছু হটতে শুরু করেছে। তবু অতিরিক্ত ৩০ মিনিটের প্রথমার্ধও প্রায় শেষের পথে চলে এসেছিল। প্রথমার্ধের শেষে রেফারি যোগ করা সময় ঘোষণা করেন ২ মিনিট। বাংলাদেশের কপাল পুড়েছে তখনই।
কুয়েতের মাঝমাঠ থেকে পাস আসে বাংলাদেশ বক্সের বাঁ দিকে কিছুটা ফাঁকা জায়গা পেয়ে যাওয়া ফরোয়ার্ড আবদুল্লাহর কাছে। বাংলাদেশ ডিফেন্ডার তপু বর্মন দ্রুত দৌড়ে গিয়ে তার সামনে দাঁড়ান, এরপর চার্জে না গিয়ে বলের সঙ্গে সঙ্গে পিছুও হটছিলেন। কিন্তু এর মধ্যেই সেকেন্ডের ভগ্নাংশ সময়ে তপুর দুপায়ের ফাঁক গলে শট নিয়ে নেন আবদুল্লাহ। মাটি কামড়ানো শটটা দূরের পোস্ট দিয়ে জড়িয়ে যায় জালে। জিকোর কিছু করারই ছিল না, তপু যে তার ‘দৃষ্টিপথ’ আটকে ছিলেন! শট কখন হয়েছে, সেটা ঠিকমতো বোঝারই সাধ্য ছিল না জিকোর। যতক্ষণে বলটা দেখতে পেলেন জিকো, ততক্ষণে বল জালের খুব কাছে।
আগের দুই ম্যাচে মালদ্বীপ আর ভুটানের বিপক্ষেও আগে গোল খেয়ে বাংলাদেশ পরে ঝাঁপিয়েছে। তিনটি করে গোলও পেয়েছে। আজ প্রতিপক্ষ আরও শক্তিশালী, সময়ও ছিল কম। তবু বাংলাদেশ ঝাঁপিয়েছে। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চেষ্টা করেছে। চাপের মুখে কিছু সহজ পাসে ভুল হয়েছে, যা হতাশা বাড়িয়েছে। তবে বাংলাদেশ যে চেষ্টা করছে, সেটি একই মাঠে দ্বিতীয় সেমিফাইনালে স্বাগতিক ভারতের ম্যাচ দেখতে আসা ভারতীয় দর্শকেরও করতালি কুড়িয়েছে।
সাফে বাংলাদেশের প্রাপ্তি হয়তো এটাও।
দিনের প্রথম ম্যাচে লেবাননের কাছে মালদ্বীপের হারেই বাংলাদেশের কাজটা একেবারে সহজ হয়ে গেল। সমীকরণ তখন এই - ভুটানের বিপক্ষে ড্র করলেও সেমিফাইনালে বাংলাদেশ।
সে পথে প্রথমেই ধাক্কা খেল বাংলাদেশ! ১২ মিনিটে ভুটানের গোল! কিন্তু আগের ম্যাচে মালদ্বীপকে দেখে বোধহয় কিছু শেখেনি ভুটান! সেদিন মালদ্বীপ আগে গোল করে এরপর খেয়েছে তিন গোল, আজ ভুটানেরও একই পরিণতি! ৩-১ গোলে জিতে সাফের সেমিফাইনালে উঠে গেছে জামাল ভুঁইয়া, মোরসালিন, রাকিবদের বাংলাদেশ।
সাফের সেমিফাইনাল - বাংলাদেশের স্বপ্নের গণ্ডিটা ছোট হতে হতে এতটুকুতেই এসে থেমেছিল। ২০০৯ সাফের পর টানা পাঁচ সাফে যে গ্রুপ পর্বই পেরোতে পারেনি! ১৪ বছর আর ৫ সাফ পর সে স্বপ্নের দেখা পেয়েছে বাংলাদেশ।
সেমিফাইনাল আগামী শনিবার, বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ সেখানে শক্তিশালী কুয়েত। অন্য সেমিফাইনালে ভারতের প্রতিপক্ষ লেবানন।
একাদশে দুই বদল নিয়ে নামে বাংলাদেশ। চোটে পড়া ডিফেন্ডার তারিক কাজীর বদলে রহমত মিয়া, আর আগের দুই ম্যাচে গোলের কিছু সুযোগ হারানো প্রতিভাবান ফরোয়ার্ড ফাহিমের জায়গায় তরুণ অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার মোরসালিন - প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের শুরুর একাদশে তিনি।
সুযোগটা কী দারুণভাবেই না কাজে লাগিয়েছেন মোরসালিন! ১২ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে দারুণ শটে টিসেন্দা দর্জির গোলে এগিয়ে যায় ভুটান, কিছুক্ষণ পর আবার ভুটানের শট ফেরে পোস্টে লেগে। প্রমাদ গুনছিল বাংলাদেশ, এই দলটার বারে বারে শেষে গিয়ে পথ হারানোর উদাহরণ তো কম নেই!
এন্টার মোরসালিন!
২১ মিনিটে দারুণ গোলে বাংলাদেশকে সমতায় ফেরালেন তরুণ মিডফিল্ডার। আগের ম্যাচে জাতীয় দলের জার্সিতে প্রথম গোল পাওয়া মোরসালিনের পায়ে গোলের দেখা মিলল টানা দুই ম্যাচে। ৩০ মিনিটে বাংলাদেশের দ্বিতীয় গোলের উৎসেও মোরসালিন।
গোলটা ভুটানের ডিফেন্ডার জিগমের আত্মঘাতী। তবে মোরসালিনের দারুণ ক্রস বক্সে রাকিবের পায়ে আসে। রাকিবের রিসিভ করা বলই জগমের গায়ে লেগে ঢোকে জালে।
রাকিবের গোলের অপেক্ষাও অবশ্য বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। ৬ মিনিট পর তার অপেক্ষার শেষ টেনে দেয়া গোলটাও হলো দুর্দান্ত! প্রায় শূন্য ডিগ্রি কোণ থেকে বল জালে জড়ালেন রাকিব - তারও টানা দুই ম্যাচে গোল হলো!
দ্বিতীয়ার্ধে ফুটবলটা ম্যাড়মেড়েই হয়েছে। তবে বাংলাদেশের তা নিয়ে ভাবার সুযোগ কই! ঈদ-উল-আযহা আগামীকাল, তবে বেঙ্গালুরুতে বাংলাদেশের ড্রেসিংরুমে ঈদের আনন্দ আজই শুরু হয়ে গেছে।
ম্যাচটা যে বাংলাদেশের কাছে ‘ফাইনাল’-এর মর্যাদা পাচ্ছে, সেটা না বললেও হতো। বাংলাদেশ দলের কোচ-অধিনায়ক ও অন্য খেলোয়াড়েরা ঘটা করেই জানিয়েছেন, মালদ্বীপের বিপক্ষে ম্যাচটা তাদের কাছে ফাইনালের মর্যাদাই পাচ্ছে।
না পাওয়ার কারণও নেই। হেরে গেলে বাংলাদেশের বাড়ি ফেরা নিশ্চিত, জিতলে বেঁচে থাকবে সেমিফাইনালের আশা– এমন সমীকরণ নিয়েই আজ বেঙ্গালুরুর শ্রী কান্তাভিরা স্টেডিয়ামে গ্রুপে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে নেমেছে বাংলাদেশ। এবং বাংলাদেশ ‘ফাইনাল’টা জিতেও গেছে!
১৭ মিনিটে পিছিয়ে পড়লেও ম্যাচজুড়ে দারুণ পাসিং ফুটবল উপহার দেয়া বাংলাদেশ রাকিব ও তারিক কাজীর পর শেষ মুহূর্তে মোরসালিনের গোলে জিতেছে ৩-১ ব্যবধানে। এ জয়ে গ্রুপে নিজেদের শেষ ম্যাচে ভুটানের বিপক্ষে জিতলেই বাংলাদেশের সেমিফাইনালে ওঠার সম্ভাবনা আরও বেড়ে গেল।
লেবানন র্যাঙ্কিংয়ে ৯৩ ধাপ এগিয়ে। তাদের বিপক্ষে বাংলাদেশ জিতবে, এমন আশা সম্ভবত কেউই করেননি। তবে ড্রয়ের আশার কথা তো বাংলাদেশ কোচ হাভিয়ের কাবরেরা ও অধিনায়ক জামাল ভুঁইয়া দুজনই কাল জানিয়েছেন। এবারের সাফে নিজেদের প্রথম ম্যাচে সে ড্রয়ের পথে ৭৮ মিনিট পর্যন্ত কী দারুণই না লড়েছিল বাংলাদেশ!
কিন্তু গত কয়েক বছরে আরও অনেক ম্যাচের মতো আরেকবার তীরে এসে তরি ডুবেছে বাংলাদেশের। ৭৯ মিনিটে নিজেদের ভুলে প্রথম গোল খাওয়া বাংলাদেশ দল বেঙ্গালুরুতে আজ শেষ পর্যন্ত হেরে গেছে ২-০ গোলে।
৭৯ মিনিটে নিজেদের বক্সের সামনে বল দেয়া-নেয়া করতে গিয়ে ভুল হলো বাংলাদেশ ডিফেন্ডার তারিক কাজীর। বল কেড়ে নিয়ে বক্সে ঢুকে যান লেবানিজ দুই স্ট্রাইকার, বাংলাদেশ গোলকিপার আনিসুর রহমান জিকো এগিয়ে এলেও হাসান মারতুকের শটটা ঠেকানো তার পক্ষে সম্ভব ছিল না।
যোগ করা সময়ের ষষ্ঠ মিনিটে বাংলাদেশ গোলের দারুণ সুযোগ পেয়েছিল, কিন্তু গোল হয়নি। উল্টো গোল খেয়ে গেল কয়েক সেকেন্ড পর। পালটা আক্রমণে উঠে গোল করে যান লেবানুনের খালিল বাদের।
গ্রুপে বাংলাদেশের পরের ম্যাচ মালদ্বীপের বিপক্ষে, আগামী রোববার বিকেল ৪টায়।
রেয়াল মাদ্রিদ যেন সুইচ গেট খুলে দিয়েছে। আর তা দিয়ে বানের জলের মতো করে বেরিয়ে আসছেন একের পর এক খেলোয়াড়। গতকাল মার্কো আসেনসিও, এদেন অ্যাঁজা, মারিয়ানো ও নাচো এরনান্দেস সবাই একে একে মাদ্রিদকে বিদায় জানিয়েছেন। এমন খবরে মাদ্রিদ সমর্থকেরা একটু আশা ফিরে পেয়েছিলেন, আক্রমণভাগের তিনজন খেলোয়াড় যেহেতু বিদায় নিয়েছে, তাহলে সম্ভব করিম বেনজেমা আর দল ছাড়ছেন না। কিন্তু একটু আগেই মাদ্রিদ আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে জানিয়েছে ক্লাব ছেড়ে যাচ্ছেন বর্তমান বালন দ'র জয়ী স্ট্রাইকারও।
এক বিবৃতিতে মাদ্রিদ জানিয়েছে, 'রেয়াল মাদ্রিদ ও আমাদের অধিনায়ক করিম বেনজেমা এ ক্লাবে খেলোয়াড় হিসেবে তার দুর্দান্ত এবং অবিস্মরণীয় সময়টার ইতি টানতে একমত হয়েছেন। আমাদের সর্বকালের সেরা কিংবদন্তিদের একজনকে ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতা জানাতে চায় মাদ্রিদ।'
২০০৯ সালে মাদ্রিদে যোগ দিয়ে ১৪ বছরে ক্লাবের সবচেয়ে বেশি ২৫টি শিরোপা জেতার রেকর্ড গড়েছেন বেনজেমা। এ মৌসুমেই তার চুক্তি শেষ হয়ে গেলেও নতুন চুক্তি নবায়নের কথা শোনা যাচ্ছিল। তবে তাকে সৌদি আরব থেকে লোভনীয় এক প্রস্তাব দেয়া হয়েছে বলে গুঞ্জন উঠেছে। ওদিকে মাদ্রিদও চুক্তিনবায়নের ক্ষেত্রে বেনজেমার পছন্দের বেতন দিতে রাজি হচ্ছিল না বলে জানা গেছে।
গত মৌসুমে মোহামেডানে ধারে খেলে নজর কেড়েছিলেন বসুন্ধরা কিংসের তরুণ মিডফিল্ডার শেখ মোরসালিন। এ মৌসুমে নিজ দলে ওভাবে সুযোগ পাচ্ছিলেন না। সাফের জন্য ঘোষিত প্রাথমিক দলেও ডাক মেলেনি তার। তবে ভাগ্যক্রমে ডাক পেয়ে দ্রুতই জাতীয় দলের কোচ হাভিয়ের কাবরেরার ‘গুডবুকে’ নাম তুলে ফেলেছেন। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য গতকাল ঘোষিত ৩০ জনের প্রাথমিক দলে জায়গা পেয়েছেন মোরসালিন।
গত মাসে ৩৫ সদস্যের প্রাথমিক তালিকা সাফের কাছে জমা দেয়া হয়েছিল। তবে সাদ উদ্দিন ও মতিন মিয়া চোটের কারণে বাদ পড়ায় নেয়া হয় মোরসালিন ও মোহামেডানের স্ট্রাইকার সাজ্জাদ হোসেনকে। গতকাল ঘোষিত ৩০ জনের দলে আছেন সাজ্জাদও। বাদ পড়েছেন আবাহনীর মিডফিল্ডার মেহেদি হাসান রয়েল, শেখ রাসেলের মিডফিল্ডার হেমন্ত ভিনসেন্ট বিশ্বাস, শেখ জামালের মিডফিল্ডার আবু সাইদ, কিংসের ডিফেন্ডার ইয়াসিন আরাফাত ও মোহামেডানের ডিফেন্ডার মুরাদ হোসেন।
কাবরেরার ৩০ জনের দলে তাই নতুন মুখ এখন দুজন- ফর্টিস এফসির ফরোয়ার্ড রফিকুল ইসলাম আর মোরসালিন। ডাক পেয়েছেন বাংলাদেশি নাগরিকত্ব পাওয়া এলিটা কিংসলিও।
৩০ জনের প্রাথমিক দল
গোলরক্ষক: আনিসুর রহমান জিকু, মিতুল মারমা, শহিদুল আলম সোহেল ও মেহেদী হাসান শ্রাবণ।
ডিফেন্ডার: কাজী তারিক রায়হান, রিমন হোসেন, বিশ্বনাথ ঘোষ, টুটুল হোসেন, তপু বর্মণ, ইশা ফয়সাল, রহমত মিয়া, আলমগীর মোল্লা ও মেহেদি হাসান।
মিডফিল্ডার: মাশুক মিয়া, সোহেল রানা, মজিবুর রহমান জনি, সোহেল রানা, শাহরিয়ার ইমন, রবিউল হাসান, জামাল ভূঁইয়া, মোহাম্মদ হৃদয়, শেখ মোরসালিন।
ফরোয়ার্ড: রাকিব হোসেন, সুমন রেজা, ফয়সাল আহমেদ, এলিটা কিংসলিও, মোহাম্মদ ইব্রাহিম, রফিকুল ইসলাম ও আমিনুর রহমান সজীব, সাজ্জাদ হোসেন।
আর্জেন্টিনার ৩৬ বছরের হাহাকার ঘুচিয়েছেন। হতাশার স্রোতে ভাসা এক দলকে জাগিয়ে তোলেন লিওনেল স্কালোনি। বিশ্বকাপজয়ী কোচের মন জিতে নেয়ার কাজটা গত ডিসেম্বরেই সম্পন্ন। তার প্রতি মুগ্ধতা আর বাড়ানো অসম্ভব বলেই মনে হতো। ভুল প্রমাণিত হলো সেটা।
আর্জেন্টিনায় একটি ফ্লাইটের বিমানে চড়ার উদ্দেশে শাটল বাসে উঠেছিলেন স্কালোনি। সে বাসে স্কালোনির সঙ্গে ছিলেন এক দম্পতিও। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবিতে দেখা গেছে, বাসে দাঁড়িয়ে থাকা বৃদ্ধার জুতার ফিতা বেঁধে দিচ্ছেন স্কালোনি। আর্জেন্টাইন সংবাদমাধ্যম ‘মুন্দো আলবিসেলেস্তে’ স্কালোনির সঙ্গে সেই বৃদ্ধার কথোপকথনও প্রকাশ করেছে। স্কালোনি সেই বৃদ্ধাকে বলেছেন, ‘আমি আপনার জুতার ফিতা বেঁধে দিচ্ছি, আপনি যেন পড়ে না যান।’
স্কালোনিকে শুরুতে বৃদ্ধ মহিলা চিনতে পারেননি। পরে আর্জেন্টাইন কোচ যখন ফিতা বেঁধে দিয়ে সোজা হন, তখন মহিলার স্বামী চিনে ফেলেন স্কালোনিকে। এরপর তারা এগিয়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরেন স্কালোনিকে।
ইউরোপা লিগের ফাইনালে সেভিয়া কখনও হারে না। এটাই সত্য হয়ে উঠল আরেকবার। রোমার বিপক্ষে গতকাল নির্ধারিত ৯০ ও পরের ৩০ মিনিট ১-১ গোলে ড্র থাকা ফাইনাল গড়াল টাইব্রেকারে। যেখানে হোসে মরিনিওর রোমাকে ৪-১ গোলে হারিয়ে ইউরোপা লিগ জিতেছে সেভিয়া। ইউরোপা লিগের এটি সপ্তম শিরোপা সেভিয়ার। এর আগে তার ইউরোপা লিগ জিতেছিল ২০০৬, ২০০৭, ২০১৪, ২০১৫, ২০১৬ ও ২০২০ সালে।
হাঙ্গেরির পুসকাস অ্যারেনায় গতকাল ফাইনালের ৩৫তম মিনিটে দারুণ এক পাল্টা আক্রমণ থেকে দিবালার গোলেই এগিয়ে গিয়েছিল রোমা। সেভিয়ার ইভান রাকিতিচের কাছ থেকে বল কেড়ে নিয়ে মানচিনি দারুণ পাস দেন দিবালাকে। দুই ডিফেন্ডারের মধ্য দিয়ে ক্ষিপ্র গতিতে বক্সে ঢুকে কোনাকুনি শটে দলকে এগিয়ে দেল পাওলো দিবালা। তবে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই সমতায় ফেরে সেভিয়া। এর দায় অবশ্য রোমার ডিফেন্ডার মানচিনিরও। প্রতিপক্ষের হেসুস নাভাসের একটি বিপজ্জনক ক্রস হেডে ক্লিয়ার করতে গিয়ে নিজেদের জালে বল জড়িয়ে দেন তিনি।
এরপর ১-১ গোলের সমতায় শেষ হয় ৯০ মিনিটের খেলা। পরের ৩০ মিনিটও। শিরোপার নিষ্পত্তির জন্য শেষমেষ আশ্রয় নিতে হয় টাইব্রেকারের। যেখানে সেভিয়ার চার জন শট নিয়ে চারজনই সফল। লুকাস ওকাম্পোস, এরিক লামেলা ও ইভান রাকিতিচের পর সফল শট নেন মন্তিয়েল। স্পট কিকে রোমার গোলটি এসেছে ব্রায়ান ক্রিস্তান্তের শটে। হোসে মরিনিওর দলের দ্বিতীয় শট অসমান্য তৎপরতায় রুখে দেন সেভিয়া গোলরক্ষক ইয়াসিন বোনু।
ইউরোপা লিগের ফাইনালে সেভিয়া যেমন ছিল অজেয়, তেমনি ইউরোপীয় কোনো টুর্নামেন্টের ফাইনালেও হারেননি কোচ হোসে মরিনিও। গতকাল আর জেতা হলো না তার। সেই দুঃখেই কি না, রানার্সআপ মেডেলটি গ্যালারির এক ক্ষুদে দর্শকের হাতে দিয়ে মাঠ ছাড়েন মরিনিও।
মার্চে যখন ধুঁকতে থাকা দলটার দায়িত্ব তাকে দেয়া হচ্ছিল, এতটা বোধ হয় মোহামেডানের কর্মকর্তারাও আশা করেননি। আলফাজ আহমেদ নিজেও আশা করেছিলেন কি না, কে জানে!
তখন মোহামেডান লিগে ছয়-সাতে ঘোরাঘুরি করছে, ফেডারেশন কাপে অবশ্য গ্রুপপর্ব পার হয়েছে। কিন্তু সে তো আগের ১৩ বারও অনেকবার পেরিয়েছে, শেষ পর্যন্ত যেতে তো আর পারেনি!
এবার পেরেছে, এবং সে পথে মাস্টারমাইন্ড আলফাজ আহমেদ!
লিগে এই মুহূর্তে চার নম্বরে আছে মোহামেডান, পরের ম্যাচটা জিতলেই উঠে যাবে তিন নম্বরে। এতটুকুই গত কয়েক মৌসুম ধরে ধুঁকতে থাকা– মাঝে ২০১৮-১৯ মৌসুমে একপর্যায়ে অবনমন এড়ানোরও শঙ্কায় পড়ে যাওয়া– মোহামেডানের জন্য স্বস্তির হতে পারত। কিন্তু আলফাজের মোহামেডান অতটুকু নিয়েই পড়ে থাকলে তো!
ফেডারেশন কাপের সেমিফাইনালে যখন বসুন্ধরা কিংস সামনে পড়েছিল, মোহামেডানের হারই ধরে নিয়েছিলেন বেশির ভাগ ফুটবলপ্রেমী। কিন্তু সবাইকে চমকে দিয়ে বসুন্ধরাকে বাড়ি পাঠিয়ে ১৪ বছর পর যখন ফেডারেশন কাপের ফাইনালে ওঠে মোহামেডান, নড়েচড়ে বসতে হয়। এরপর ফাইনালে কাল চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনীর বিপক্ষে রুদ্ধশ্বাস ফাইনালে লিখেছে ইতিহাস।
তার পুরোভাগে তিনিই ছিলেন। প্রথমার্ধে দল ২-০ গোলে পিছিয়ে পড়ার পর কাউন্টার অ্যাটাক ছেড়ে আক্রমণনির্ভর কৌশলে গেছেন আলফাজ, তাতেই তো দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে দুই গোল পেল মোহামেডান। কিন্তু কৃতিত্বটুকু সব খেলোয়াড়দের বিলিয়ে দিয়েছেন আলফাজ। দিয়াবাতের চার গোল তো প্রশংসা পাচ্ছেই, হাত ভেঙেও মুজাফফরভের খেলে যাওয়া, বদলি নামা গোলকিপার আহসান হাবিব দিপুর টাইব্রেকার-বীরত্ব...বললেন সবকিছুর কথাই। এরপর থাকল মোহামেডানের জন্য প্রেরণার বাণী, ‘এই ট্রফির মাধ্যমে মোহামেডান এগিয়ে যাবে ইনশা আল্লাহ।’
তবে এমন রুদ্ধশ্বাস ম্যাচ তো শুধু মোহামেডানেরই আনন্দের কারণ হয়নি, ফুটবলানন্দে ভাসিয়েছে সবাইকেই। আলফাজও সে তৃপ্তি নিয়েই বাড়ি ফিরছেন, ‘এই ম্যাচে শুধু মোহামেডান জেতেনি, জয় হয়েছে বাংলাদেশের ফুটবলেরও। অবশ্যই এটা আমার জীবনের স্মরণীয় দিন হয়ে থাকবে। খেলোয়াড় হিসেবে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলাম, কোচ হিসেবেও চ্যাম্পিয়ন হলাম। এটা স্মৃতিতে গেঁথে থাকবে।’
তৃপ্তির সে স্মৃতি বারবার আলফাজকে এটাও মনে করিয়ে দেবে, এমন অসাধারণ ম্যাচে জয়ী দল ছিল মোহামেডান, আর সে দলের কোচ ছিলেন আলফাজ।
সোনালি অতীত বলে, বাংলাদেশের ফুটবল মানে আবাহনী আর মোহামেডান। কুমিল্লা স্টেডিয়ামের রুদ্ধশ্বাস ফাইনাল গতকাল জানিয়ে গেল, বাংলাদেশের ফুটবলের বিবর্ণ বর্তমানেও রঙের ছোঁয়া আবাহনী আর মোহামেডানের মতো করে কেউ দিতে পারে না।
১৪ বছর পর মোহামেডান যখন ফেডারেশন কাপের ফাইনালে ওঠে, তাতে মোহামেডান সমর্থকদের স্মৃতিমেদুরতা জেগেছে। কিন্তু আবার ঘরোয়া কোনো টুর্নামেন্টের ফাইনালে যে যুযুধান আবাহনী আর মোহামেডান, তা রোমাঞ্চ আর উচ্ছ্বাসে ভাসিয়েছে ফুটবলের সঙ্গে বিন্দুমাত্রও সংশ্রব রাখা যে কাউকেই।
সে উত্তেজনা, রোমাঞ্চ আর স্মৃতিমেদুরতা মিলিয়ে তৈরি হওয়া প্রত্যাশাকেও ছাপিয়ে যাওয়া রুদ্ধশ্বাস এক ফাইনাল কাল দেখেছে কুমিল্লা স্টেডিয়াম! নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময়ে ৮ গোল শেষেও দুই দলে ৪-৪ সমতা, এরপর টাইব্রেকারে বদলি গোলকিপারের বীরত্বে ৪-২ ব্যবধানে জিতে মোহামেডানের ৯ বছরের শিরোপাখরা ঘোচানো... শুধু এতটুকু হয়তো ম্যাচটাকে আলাদা করে রাখা বিশেষত্বের কথা বলে না।
শুধু এতটুকু বলে না, এই ম্যাচই তর্কসাপেক্ষে বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসেরই সেরা ফাইনাল!
এতটুকুতে যে বলা হয় না, ফাহিম ও কলিনদ্রেসের গোলে বিরতিতে আবাহনী ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে যাওয়ার পরও মোহামেডান সমতা ফিরিয়েছে দ্বিতীয়ার্ধে চার মিনিটের ব্যবধানে দুই গোল করে, এরপর আবার এমেকার গোলে আবাহনী এগিয়ে গেলে মোহামেডান সমতা ফিরিয়েছে দ্বিতীয় দফায়। এতটুকু বলে না যে অতিরিক্ত সময়ে মোহামেডান চতুর্থ গোলে প্রথমবার ম্যাচে এগিয়ে যায়, কিন্তু ১১৮ মিনিটে আবাহনী সমতায় ফেরে বক্সের বাইরে থেকে রহমতের অবিশ্বাস্য শটে।
এটুকু এটাও বলে না যে, ম্যাচে মোহামেডানের চার গোলের সবই করেছেন সুলেমান দিয়াবাতে- যেখানে ফেডারেশন কাপের ফাইনালে আগে কারও হ্যাটট্রিকই ছিল না!
অতটুকু বলেও পুরোপুরি বোঝানো যায় না দুই দলের দারুণ সব আক্রমণ আর সেসবকেও ছাপিয়ে যাওয়া দুর্দান্ত কিছু সেইভের গল্প। আর সেইভের প্রসঙ্গ যখন আসে, মোহামেডানের বদলি গোলকিপার আহসান হাবিব বিপু ক্লাবটার ইতিহাসেই আলাদা জায়গা করে নেয়ার কথা। প্রথম পছন্দের গোলকিপার সুজন অতিরিক্ত সময়ে একটা শট ঠেকাতে ঝাঁপিয়ে পড়ে ব্যথা পেলেন কাঁধে, এরপর বিপু নামতেই চতুর্থ গোলটা পেয়ে যায় আবাহনী। ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। এরপর? মোহামেডানের পাঁচ শটের চতুর্থটিতে শুধু শাহরিয়ার ইমনের শট ঠেকিয়ে দিয়েছেন আবাহনী গোলকিপার সোহেল, উল্টোদিকে আবাহনীর দুঃস্বপ্ন হয়ে দেখা দিয়েছেন বিপু।
আবাহনীর প্রথম শটে রাফায়েল অগুস্তো আর চতুর্থ শটে- সোহেল যখন ইমনের শট ঠেকিয়ে আবাহনীকে আশা দেখিয়েছেন, তার ঠিক পরের শটেই- কলিনদ্রেসের শটও ঠেকিয়ে দিয়েছেন বিপু। প্রসঙ্গত, কলিনদ্রেস আর রাফায়েল- আবাহনীর সবচেয়ে বড় ভরসার দুই বিদেশি!
একটা ম্যাচে পরতে পরতে আর কত গল্প, কত সাব-প্লট থাকতে পারে!
গল্পের তো অনুষঙ্গও লাগে, কুমিল্লায় কাল অনুষঙ্গ হয়ে ছিলেন দুই দলের গ্যালারি রাঙানো হাজার দশেক সমর্থক। আবাহনীর গ্যালারির সৌজন্যে বাংলাদেশের ফুটবলে ইউরোপের ছোঁয়া হয়ে ‘পাইরো’র দেখাও মিলেছে!
সব মিলেই কুমিল্লা স্টেডিয়ামের ফাইনাল কাল অনুচ্চারে জানিয়ে গেল, বাংলাদেশের ফুটবলের বিজ্ঞাপন হতে পারে আবাহনী আর মোহামেডানের এমন চোখধাঁধানো ম্যাচ। ম্যাচে আবাহনীই ফেবারিট ছিল। কিন্তু চিরপ্রতিদ্বন্দ্বিতার ঝাঁঝেই হয়তো মোহামেডান লড়েছে চোখে চোখ রেখে! মার্চে মো. আলফাজ আহমেদ দায়িত্ব নেয়ার পর বদলে যাওয়া মোহামেডান প্রথমার্ধে কাউন্টার অ্যাটাকে খেললেও দ্বিতীয়ার্ধে শুরু থেকেই ঝাঁপিয়েছে আক্রমণে। তাতে ম্যাচটা পেয়েছে ইতিহাসে ঠাঁই পাওয়ার মতো সব গল্প, বাংলাদেশের ফুটবলের বিজ্ঞাপন হওয়ার দাবি।
বসুন্ধরা বাংলাদেশের ফুটবলে পেশাদারত্বের বিজ্ঞাপন, নবাগত ফর্টিসও সে পথে হাঁটার স্বপ্ন দেখে। সাইফ তেমন কিছুর স্বপ্ন দেখিয়েও হারিয়ে গেছে। ব্রাদার্স আর মুক্তিযোদ্ধা তো এখন ফুটবলে দাপটের গল্পেই অপ্রাসঙ্গিক। আবাহনী তবু বসুন্ধরার সঙ্গে যা কিছুটা শিরোপার লড়াইয়ে থাকে, মোহামেডানের সাদা-কালো তো দিনে দিনে ধূসর হওয়ার পথেই ছিল। তাদের জাগিয়ে তুলতে হয়তো এমন একটা শিরোপার দরকার ছিল।
আর বাংলাদেশের ফুটবলের দরকার ছিল এমন একটা ম্যাচের।
গত রোববার মেস্তায়ায় ভ্যালেন্সিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে স্বাগতিক সমর্থকদের বর্ণবিদ্বেষী চরণের শিকার হয়েছিলেন রেয়াল মাদ্রিদের ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। মাঠেই প্রতিবাদ করা ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও নিজের ক্ষোভ জানিয়েছিলেন এবং সে সুবাদে লা লিগা সভাপতির সঙ্গে তর্কযুদ্ধে জড়িয়ে এরই মধ্যে প্রমাণ দিয়ে দিয়েছেন, লা লিগা বর্ণবিদ্বেষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
এরই মধ্যে ব্যাপারটি মাঠ ছাপিয়ে বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। গতকাল পর্যন্ত বর্ণবিদ্বেষী আচরণের জন্য সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে চারজন আগের ঘটনায় ও তিনজন ভ্যালেন্সিয়া ম্যাচের ঘটনায় অভিযুক্ত। বিশ্বজুড়ে স্পেনের ভাবমূর্তি খারাপ হওয়ার শঙ্কা জাগতেই এমন পদক্ষেপ পুলিশের। অথচ গত রোববারের আগেও বর্ণবাদী আচরণের অভিযোগগুলো কর্তৃপক্ষ খারিজ করে দিত। গত জানুয়ারিতে ভিনিসিয়ুসের এমনই এক অভিযোগে ‘মাত্র কয়েকজন সমর্থক’, ‘মাত্র কয়েক সেকেন্ড’ তাকে ‘বানর’ ডেকেছে বলে অভিযোগ বাতিল করা হয়েছিল। আগের মৌসুমে মাত্র তিনটি অভিযোগ গ্রহণ করেছিল স্প্যানিশ কর্তৃপক্ষ।
ভিনিসিয়ুস অবশ্য আর লা লিগা বা স্প্যানিশ কর্তৃপক্ষের অপেক্ষায় বসে না থেকে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। মাদ্রিদের সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজও অবশেষে মুখ খুলেছেন, ‘আমি ঘোষণা করছি, রেয়াল মাদ্রিদ আমাদের খেলোয়াড়দের সঙ্গে আর কোনো বর্ণবাদী আচরণ সহ্য করবে না।’ তবে যেই এল চিরিঙ্গিতো অনুষ্ঠানের কারণে ভিনিসিয়ুসের বিরুদ্ধে বর্ণবাদী আচরণ আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে, সে অনুষ্ঠানের সঙ্গে তার সম্পর্কের ব্যাখ্যা বা সে অনুষ্ঠানের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়ার কোনো ঘোষণা এখনো দেননি পেরেজ।
মাদ্রিদের বিবৃতি
গত পরশু প্রাথমিক এক বিবৃতিতে ভিনিসিয়ুসের সঙ্গে ‘হেট ক্রাইম’ কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করার কথা জানিয়েছিল রেয়াল মাদ্রিদ। তবে সে বিবৃতি অনেক সমর্থকেরই পছন্দ হয়নি। কয়েক ঘণ্টা পরই নতুন বিবৃতিতে আরও কড়া অবস্থানের কথা জানিয়েছে মাদ্রিদ।
বিবৃতিতে এ ঘটনায় ভিনিসিয়ুসকে সমর্থন করায় ফিফা সভাপতি, ব্রাজিল প্রেসিডেন্ট, রোনালদো নাজারিও, এমবাপ্পে, নেইমার, কাকা, রিও ফার্ডিনান্ড, জাডোন সাঞ্চ, লিনেকার এবং কাসেমিরোকে ধন্যবাদ জানানো হয়েছে।
এ ঘটনায় স্প্যানিশ ফুটবলের সমস্যা তুলে ধরায় বিদেশি সংবাদমাধ্যমকে ধন্যবাদ জানিয়েছে মাদ্রিদ। আবার কড়া অবস্থান না নেয়ায় স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশন সভাপতি লুইস রুবিয়াসের সমালোচনা করা হয়েছে। বারবার এমন ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি না দিয়ে ভিনিসিয়ুসের ঘাড়ে দোষ চাপানোয় শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। এবং যেকোনো ধরনের ‘হেট ক্রাইম’-এর ক্ষেত্রে অতি দ্রুত শাস্তি দেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
শাক দিয়ে মাছ ঢাকা
স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশন ও রেফারি কমিটি ছয় ভিএআর রেফারিকে বরখাস্ত করেছে। ভ্যালেন্সিয়ার বিপক্ষে বর্ণবাদের শিকার ভিনিসিয়ুস ম্যাচের শেষ দিকে মারামারিতে জড়ালে লাল কার্ড দেখানো হয় তাকে। ভিএআরে শুধু মাদ্রিদ ফরোয়ার্ডের অপরাধের অংশ দেখানো হলেও তাকে গলা চেপে ধরা ভ্যালেন্সিয়া ফুটবলারের অংশ দেখানো হয়নি।
সে ম্যাচে ভিএআরের দায়িত্বে থাকা ইগলেসিয়ায় ভিয়ানুভাকে বরখাস্ত করার বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘উগো দুরোর মুখে ভিনিসিয়ুসের আঘাতের ঘটনাই শুধু দেখানো হয়েছে, বাকিটা কেন দেখানো হয়নি তার কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।’
বাস্তবতা হলো, এই ছয় রেফারিকে এই মৌসুম শেষে এমনিতেও চাকরিচ্যুত করা হতো। লা লিগা বর্ণবাদের বিরুদ্ধে কিছু করে না- ভিনিসিয়ুসের এমন দাবির মুখে স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশন তাই একটু আগেই এদের বরখাস্ত করে মানুষের সমর্থন পাওয়ার চেষ্টা করছে।
ঘুম ভেঙেছে কুম্ভকর্ণের
গতকাল স্প্যানিশ পুলিশ চার সমর্থককে আটক করেছে। গত জানুয়ারিতে মাদ্রিদ ডার্বির আগে ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের জার্সি পরা এক পুতুলে ফাঁস পরিয়ে একটি ব্রিজ থেকে ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছিল। সে ঘটনায় জড়িত থাকার সন্দেহে এই চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশ নাম নির্দিষ্ট না করে বলেছে এরা মাদ্রিদভিত্তিক একটি দলের ‘খ্যাপাটে সমর্থক’। তবে স্প্যানিশ মিডিয়াগুলো সরাসরি তাদের আতলেতিকো মাদ্রিদের সমর্থক বলে জানিয়ে দিয়েছে।
ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ও বায়ার্ন মিউনিখকে ঘিরে দলবদলের গুঞ্জন এই প্রথম নয়। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড যখন ছাড়তে চেয়েছিলেন, তখন রোনালদোর পছন্দের তালিকার ওপরের দিকেই ছিল জার্মান পরাশক্তিরা। কিন্তু ৩৭ পেরিয়ে যাওয়া রোনালদোর প্রতি আগ্রহ দেখায়নি বায়ার্ন।
এরই মধ্যে পর্তুগিজ মহাতারকা সৌদি আরবে গেছেন। সেখান আল-নাসরের জার্সিতে ১৪ ম্যাচে ১৩ গোল করেছেন। হ্যাটট্রিক করে প্রশংসা জুটিয়েছেন, আবার হতাশা প্রকাশ করে সমালোচনাও কুড়িয়েছেন। তার দলও সম্ভাব্য দুটি শিরোপা জিততে ব্যর্থ হয়েছে। লিগেও আছে দুইয়ে।
এরই মধ্যে আবার রোনালদোর বায়ার্নে যাওয়ার গুঞ্জন উঠেছে। সে গুঞ্জন তুলেছে জার্মান সংবাদমাধ্যম আবেনসাইটং। এ সংবাদমাধ্যমের দাবি, মার্কাস শোন নামের এক জার্মান ধনকুবের চান রোনালদো বায়ার্নে যোগ দিন। রোনালদোকে টানার যাবতীয় খরচও দিতে চান এই জার্মান ব্যবসায়ী।
রোনালদোকে কেনার জন্য ক্লাবের প্রধান নির্বাহী অলিভার কানকে নাকি মেইল দিয়েছেন শোন, যদি আমাদের প্রতিষ্ঠানকে এই দলবদলের অর্থদাতা হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়, তবে আমরা দলবদলের পুরো অর্থ বা স্বাভাবিক বেতনের বাকিটা দিয়ে দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকব।
এর বিনিময়ে রোনালদোর জার্সি বিক্রির অর্থের ভাগ দাবি করেছেন শোন। সৌদি আরবে বার্ষিক ২০ কোটি ইউরো বেতন পাওয়া রোনালদোকে কি জার্মানিতে টানতে পারবেন শোন?