'ওভারথিঙ্কিং' বা খামোকা চিন্তা করার জন্য পেপ গার্দিওলার যথেষ্ট সুনাম আছে।
দেখা গেল দলকে পুরো মৌসুম যে ছকে খেলিয়েছেন, বড় ম্যাচের আগে হুট করে সেই পরীক্ষিত ফর্মূলা আর একাদশ থেকে সরে এসেছেন। খামোকা চিন্তা করতে গিয়ে এমন এমনভাবে দল সাজিয়েছেন, বিশ্বজোড়া দর্শক ভেবে কূল পাননি, হুট করে এমন চিন্তা করার কারণ কী হতে পারে!
আর গার্দিওলার এই বাড়তি চিন্তার খেসারত দিয়েছে কখনও বার্সেলোনা, কখনও বায়ার্ন। সবচেয়ে বেশি দিয়েছে ম্যানচেস্টার সিটি। চেলসির বিপক্ষে চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালের আগে প্রথাগত ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার ছাড়াই নেমে গিয়েছেন - ইলকায় গুন্দোগানকে বলেছেন রদ্রি বা ফের্নান্দিনিওর ভূমিকা পালন করতে। আবার ২০১৯-২০ মৌসুমে লিওঁর বিপক্ষে এত বেশি ডিফেন্ডার নামিয়ে দিয়েছিলেন, যে দলটা পেপ গার্দিওলার না অতিরক্ষণাত্মক জোসে মরিনিওর - বোঝা যায়নি।
সেই পেপ গার্দিওলা এবারও খামোকা চিন্তা করতে যাবেন না, তা কি হয়?
ইন্তার মিলানের বিপক্ষে গত রাতে চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে পেপ গার্দিওলা তাঁর ‘কাজ’টা ঠিকই করেছেন। তবে অন্যান্য বারের মতো সে বাড়তি চিন্তার প্রতিফলন মূল একাদশে দেখা যায়নি, এই যা। গার্দিওলার যত বাড়তি চিন্তা এবার ছিল মাঠে একজন বিশেষ খেলোয়াড়ের অবস্থান ঘিরে।
খেলোয়াড়টির নাম? জন স্টোনস।
২০১৬ সালে গার্দিওলা যখন প্রথম ইংল্যান্ডে এলেন, সিটি তেমন সুবিধে করতে পারেনি। নড়বড়ে রক্ষণের মাশুল দিচ্ছিল নিয়মিত। আর সবচেয়ে বেশি সমালোচনা হচ্ছিল দলে নতুন আসা ইংলিশ ডিফেন্ডার জন স্টোনসকে নিয়ে। পাঁচ কোটি পাউন্ড দিয়ে আনা ডিফেন্ডার যদি একের পর এক শিশুতোষ ভুল করে, কারই বা ভালো লাগে?
সিটিভক্তদেরও লাগেনি। তবে গার্দিওলা ওসব সমালোচনা গায়ে মাখেননি। ভরা মজলিশে বাঘা বাঘা সাংবাদিকদের সামনে নির্ভয়ে বলেছিলেন, ‘এই কক্ষে এখন আমরা যতগুলো মানুষ আছি, প্রত্যেকের চেয়ে জন স্টোনসের সাহস বেশি। ক্ষমতা বেশি। বেশি দৃঢ়চেতা। আমি এমন ডিফেন্ডারদের ভালোবাসি যারা দলের জন্য ঝুঁকি নিতে পছন্দ করে। এমন ডিফেন্ডাররা হাজার ভুল করলেও মানা যায়।’
পেপ গার্দিওলা কি বুঝেছিলেন যে এই জন স্টোনসের হাত ধরেই আসবে পরম আরাধ্য চ্যাম্পিয়নস লিগ? পাওয়া যাবে অধরা ট্রেবলের স্বাদ?
হয়তো। হাজার হোক, একজন তরুণ খেলোয়াড়ের প্রতিভাকে পূর্ণতা দেওয়ার মতো কোচ তাঁর মত কজনই বা আছেন? সাত বছর পর এই স্টোনসই গার্দিওলাকে নিদান দিলেন। মেসি ছাড়া গার্দিওলা চ্যাম্পিয়নস লিগ জিততে পারেন না - এই দুর্নাম থেকে দিলেন মুক্তি।
মৌসুমের শুরুতে বল পায়ে পারদর্শী ফরোয়ার্ড গাব্রিয়েল জেসুস-রহিম স্টার্লিং ও মিডফিল্ডার ফের্নান্দিনিও-জিনচেঙ্কোর বিদায়ের সঙ্গে জোড়া ‘নাম্বার নাইন’ আর্লিং হলান্ড আর হুলিয়ান আলভারেসের আসা নিশ্চিত করেছিল - এবার চেনা পথে হাঁটছেন না গার্দিওলা। সে নিশ্চয়তা আরও পোক্ত হয় গত মৌসুমের অন্যতম সেরা ফুলব্যাক জোয়াও কানসেলোর বিদায়ে।
সিটি ধুঁকছিল। ট্রেবল তো দূর, গত জানুয়ারিতেও যদি বলা হতো যে গার্দিওলা এই দল নিয়েই ট্রেবল জিততে চলেছেন - হাসির রোল পড়ে যেত। সেই অবিশ্বাস্য ঘটনাটাই আজ সত্যি স্টোনসের কারণে।
বলের দখল থাকা অবস্থায় ডিফেন্ডারদের ছদ্ম-মিডফিল্ডার বা ‘হাফব্যাক’ বানিয়ে দেওয়ার কাজ গার্দিওলা আজ থেকে করছেন না। বায়ার্নের ম্যানেজার থাকার সময় থেকেই এই কাজ করছেন। জার্মান প্রেসিং আর প্রতিআক্রমণের তোড়ে হাঁসফাঁস করতে থাকা গার্দিওলা ফিলিপ লাম, ডেভিড আলাবা আর ইয়োসুয়া কিমিখের মতো ফুলব্যাকদের হাফব্যাক বানিয়ে ফুটবল বিশ্বকে দেখিয়েছিলেন, কীভাবে দ্রুত প্রতিআক্রমণ থেকে নিস্তার পাওয়া যায়।
একই কাজ করেছেন সিটিতেও। গত মৌসুমে যে কৌশলের পূর্ণ বাস্তবায়ন করেছিলেন কানসেলো আর জিনচেঙ্কো। দুজনের কেউই তো এই মৌসুমে নেই। এখন?
ডাক পড়ল স্টোনসের। কিন্তু স্টোনস তো কিমিখ, আলাবা, লাম, কানসেলো বা জিনচেঙ্কোর মতো ফুলব্যাক নন - সেন্টারব্যাক। তবে বল পায়ে কুশলী এই ডিফেন্ডারকে দিয়ে যে রক্ষণাত্মক মিডফিল্ডারের কাজ চালানো যায়, ২০১৮ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের কোচ গ্যারেথ সাউথগেটই সেটা দেখিয়েছিলেন।
সাউথগেটের কাছ থেকে সে কৌশল ‘ধার’ নিলেন গার্দিওলা। ফুলব্যাকদের হাফব্যাক বানানো গার্দিওলা এবার সেন্টারব্যাককে বানালেন হাফব্যাক। আর তাতেই বাজিমাত। পকেটে ঢুকল একটা লিগ শিরোপা, একটা এফএ কাপ।
বাকি ছিল চ্যাম্পিয়নস লিগ। স্টোনস যে গত তিন মাসের মতো ফাইনালেও রদ্রির পাশে ছদ্ম-সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার হয়ে খেলা শুরু করবেন - সবাই জানতেন। হয়তো জানতেন ইন্তারের কোচ সিমোনে ইনজাঘিও। সিটিকে ঘায়েল করার কৌশলও হয়তো সাজিয়েছেন সে ব্যাপারটা মাথায় রেখে।
কিন্তু ফাইনালের মতো গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে গার্দিওলার মাথায় বাড়তি চিন্তা করার ভূত সওয়ার হবে না, তা কি করে হয়? হলও সেটা।
একাদশ দেখে যদিও বোঝার উপায় ছিল না যে গার্দিওলা ঠিক কোন জায়গায় বাড়তি চিন্তা করেছেন। সব স্পষ্ট হওয়া শুরু করল ম্যাচ শুরুর সঙ্গে সঙ্গে। সেন্টারব্যাক হিসেবে খেলা শুরু করা স্টোনস উঠতে উঠতে সেন্ট্রাল মিডে থাকা রদ্রিকে পেরিয়ে কখনও আক্রমণাত্মক মিডফিল্ড (মাঠের যে জায়গাটাকে গালভরে অনেকে ‘জোন ১৪’ বলে থাকেন), কখনও ডান উইং বা কখনও বাম উইংয়ে উঠে যাচ্ছিলেন। বোঝাই যাচ্ছিল, আজীবন মেসির মতো অতি-প্রতিভাবান খেলোয়াড়কে স্বাধীনভাবে খেলার লাইসেন্স দেওয়া গার্দিওলা এ ম্যাচে সে লাইসেন্স দিয়েছেন একজন ডিফেন্ডারকে! ভাবা যায়!
কখনও কখনও এমনও দেখা যাচ্ছিল, মাঠের যে জায়গায় কেভিন ডি ব্রুইনা বিচরণ করেন, স্টোনস সে জায়গাতেও উঠে যাচ্ছেন। ফলে ডি ব্রুইনার খেলতে একটু হলেও সমস্যা হচ্ছিল। সে ক্ষেত্রে ৩০ মিনিটের মাথায় চোটের কারণে ডি ব্রুইনার মাঠ থেকে উঠে যাওয়া এক অর্থে শাপেবর হয়েছে সিটির জন্য। ডি ব্রুইনার জায়গায় নামা ফিল ফোডেন স্টোনসকে উঠে আসার যথেষ্ট সুযোগ দিয়েছেন। পেছন থেকে আক্রমণ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ইন্তার তাঁদের বাঁ দিকের সেন্টারব্যাক আলেসসান্দ্রো বাস্তোনির ওপর অনেক নির্ভর করে। বাস্তোনি যেন বল পায়ে খেলার জন্য বেশি জায়গা না পান, ম্যাচের আগে এটা নিশ্চিত করা গার্দিওলার অন্যতম প্রধান ‘এজেন্ডা’ ছিল। সবাই ভেবেছিলেন, হয় বের্নার্দো সিলভা, নয় ডি ব্রুইনাকে দিয়ে বাস্তোনিকে প্রেস করার কাজ করাবেন গার্দিওলা। স্টোনস ওভাবে উপরে উঠে বাস্তোনিকে প্রেস করা শুরু করবেন, কে ভেবেছিল!
ইনজাঘির অধীনে বেদবাক্যের মতো ৩-৫-২ ছকে খেলা ইন্তার রক্ষণে ৫-৩-২ রূপ ধারণ করে। অর্থাৎ, প্রতিপক্ষ আক্রমণ করলে রক্ষণে পাঁচজনকে নামিয়ে দেয় নেরাজ্জুরিরা। ওদিকে কাগজে-কলমে ৪-৩-৩ ছকে খেলা সিটিও আক্রমণ করে ৩-২-৫ ছকে। অর্থাৎ, ইন্তার চাইলে সিটির আক্রমণে উঠে যাওয়া পাঁচজন খেলোয়াড়কে পাঁচজন দিয়ে নিশ্চিন্তে রক্ষণ করতে পারে, আক্রমণে সিটির কোনো বাড়তি খেলোয়াড় (spare man) থাকে না। ইন্তারকে হারাতে হলে আক্রমণে বাড়তি আরেকজন খেলোয়াড় লাগতই। ইন্তার যেহেতু জোড়া স্ট্রাইকার-বিশিষ্ট ছকে খেলে, তাই রক্ষণে থাকা তিনজনের মধ্যে কোনো একজনকে উপরে উঠতে বলাটা যৌক্তিক হতো না। মাঝমাঠে থাকা রদ্রি আর স্টোনসের মধ্যে একজনই এ কাজটা করতে হতো।
রদ্রি যেহেতু জাত মিডফিল্ডার, বল দখলে থাকার সময়ে ওই বাড়তি খেলোয়াড় হয়ে ডি ব্রুইনা, হলান্ড, গ্রিলিশ, বের্নার্দো, গুন্দোয়ানের পাশে উঠে যাবেন আক্রমণ করতে - এমনটাই ভাবা হচ্ছিল।
কিন্তু আর দশজনের মতো চিন্তা করলে কোচের নাম গার্দিওলা কেন!
ম্যাচের শেষ দিকে লুকাকুর হেড, কিংবা গোটা ম্যাচে এদেরসনকে ফাঁকা পেয়েও লাওতারো মার্তিনেস দুবার গোল করার সুযোগ নষ্ট না করলে হয়তো এ ম্যাচটাও গার্দিওলার খামোকা চিন্তার বলি হতো। কিন্তু যে কোচ ফুটবলকে এত কিছু দিয়েছেন, এবারও তাঁর আরেকটা অভিনব কৌশল রিক্ত হাতে ফিরে এলে হয়তো বড্ড বেশি অবিচার হতো।
বিধাতা সে অবিচার মানবেন কেন?
নারী ফুটসাল বিশ্বকাপের ইতিহাসের পাতায় নাম লিখল ব্রাজিল। ফিলিপাইনের ম্যানিলায় অনুষ্ঠিত টুর্নামেন্টের প্রথম আসরেই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করল সেলেসাও নারীরা। ফাইনালে শক্তিশালী পর্তুগালকে ৩-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে শিরোপা নিজেদের করে নিয়েছে তারা।
ম্যানিলার ফিলস্পোর্টস এরেনায় গ্যালারিভর্তি দর্শকের সামনে পুরো ম্যাচজুড়েই ব্রাজিলের আধিপত্য ছিল স্পষ্ট। পর্তুগালের গোলরক্ষক আনা কাতারিনা পেরেইরা বেশ কিছু দুর্দান্ত সেভ করে দলকে ম্যাচে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু ব্রাজিলের চমৎকার টেকনিক, সৃজনশীলতা আর স্কোয়াডের গভীরতার সামনে শেষ পর্যন্ত টিকতে পারেনি লুইস কনসেইসাওয়ের দল। ৪০ মিনিটের লড়াই শেষে ৩-০ ব্যবধানের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে ব্রাজিল।
ব্রাজিলের ফুটবলে ফুটসালের প্রভাব নতুন কিছু নয়। সাবেক বিশ্বসেরা তারকা রোনালদিনহো নিজেও স্বীকার করেছেন যে, তার জাদুকরী স্কিল ও ছোট জায়গায় দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতার ভিত্তি গড়ে দিয়েছে এই ফুটসাল। ফাইনালে ব্রাজিল নারী দলের খেলাতেও সেই ঐতিহ্যবাহী ছন্দ ও আত্মবিশ্বাসের ছাপ ছিল স্পষ্ট।
ঐতিহাসিক এই জয়ে উচ্ছ্বসিত ব্রাজিল কোচ উইলসন সাবাইয়া। তার মতে, এই ট্রফি শুধু একটি জয় নয়, বরং এটি ব্রাজিলের স্কুল, কলেজ ও ক্লাব পর্যায়ে ফুটসালকে আরও জনপ্রিয় করবে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ভালো খেলোয়াড় ও কোচ তৈরিতে ভূমিকা রাখবে। অন্যদিকে, হারলেও নিজেদের পারফরম্যান্স নিয়ে গর্বিত পর্তুগাল কোচ কনসেইসাও। তিনি ব্রাজিলকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘ব্রাজিল অত্যন্ত শক্তিশালী দল। তবে আমরাও পর্তুগালের সম্মান বজায় রেখেই লড়াই করেছি এবং ফাইনালে পৌঁছাতে পেরে আমরা গর্বিত।’
অবশেষে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল সান্তোস। ব্রাজিলিয়ান সিরি ‘এ’ লিগের শেষ রাউন্ডে ক্রুজেইরোকে ৩-০ গোলের বড় ব্যবধানে হারিয়ে অবনমন বা রেলিগেশন এড়াল ঐতিহাসিক এই ক্লাবটি। আর দলের এই অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিলেন ঘরের ছেলে নেইমার। চোটের অস্বস্তি নিয়েও মাঠে নেমে দলকে খাদের কিনারা থেকে টেনে তুলতে বড় ভূমিকা রাখলেন এই ব্রাজিলিয়ান সুপারস্টার।
ফুটবল সম্রাট পেলের নাম জড়িয়ে থাকা সান্তোস ২০২৩ সালে, পেলের মৃত্যুর মাত্র এক বছর পরই ক্লাবের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো দ্বিতীয় বিভাগে নেমে গিয়েছিল। এবার যেন সেই দুঃস্বপ্ন ফিরে না আসে, সেটাই ছিল ক্লাবের মূল লক্ষ্য। আর এই কঠিন মিশনে নেতৃত্ব দিতেই গত জানুয়ারিতে নিজের পুরনো ঠিকানায় ফিরেছিলেন নেইমার। লিগের শেষ তিন ম্যাচেই তিনি নিজের জাত চিনিয়েছেন। স্পোর্ট রেসিফের বিপক্ষে গোল এবং জুভেন্তুদের বিপক্ষে দুর্দান্ত হ্যাটট্রিকের পর, শেষ ম্যাচেও তিনি ছিলেন দলের মূল চালিকাশক্তি।
রোববার ঘরের মাঠ ভিলা বেলমিরো স্টেডিয়ামে নেইমারের প্লেমেকিং জাদুর দিনে ক্রুজেইরোর জালে প্রথমার্ধের ২৬ ও ২৮ মিনিটে জোড়া গোল করেন থাসিয়ানো। দ্বিতীয়ার্ধের ৬০ মিনিটে দলের হয়ে তৃতীয় গোলটি করেন জোয়াও শ্মিট। এই দাপুটে জয়ের ফলে ৪৭ পয়েন্ট নিয়ে লিগ টেবিলের ১২তম স্থানে থেকে মৌসুম শেষ করল সান্তোস।
পুরো মৌসুমে চোটের সঙ্গে লড়াই করা নেইমার মাত্র ১৯টি ম্যাচ খেলতে পারলেও তার অবদান ছিল ৮ গোল। ম্যাচ শেষে আবেগাপ্লুত কণ্ঠে নেইমার বলেন, ‘আমি ফিরে এসেছি দলকে যতটা সম্ভব সাহায্য করার জন্যই। গত কয়েক সপ্তাহ আমার জন্য খুব কঠিন ছিল। বিশেষ করে হাঁটুর চোটের কারণে খেলাটাই অনিশ্চিত ছিল। যারা আমাকে এই সময়ে সাহস জুগিয়ে উঠে দাঁড়াতে সাহায্য করেছেন, তাদের সবার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।’
এদিকে, লিগের অন্য ম্যাচে সিয়ারার বিপক্ষে ১-০ গোলে জিতে নিজেদের নবম লিগ শিরোপা নিশ্চিত করেছে ফ্ল্যামেঙ্গো। গত মাসেই কোপা লিবার্তাদোরেস জয়ী দলটি এবার ঘরোয়া লিগেও নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখল।
সান্তিয়াগো বার্নাব্যু যেন রিয়াল মাদ্রিদের জন্য এক দুঃস্বপ্নের মঞ্চ হয়ে উঠল। নিজেদের দুর্গেই মৌসুমের প্রথম হারের স্বাদ পেল লস ব্লাঙ্কোসরা। তবে শুধু হারই নয়, ম্যাচের পুরো আলো কেড়ে নিল মাঠের বিশৃঙ্খলা—তিনজন খেলোয়াড় দেখলেন লাল কার্ড। শেষ পর্যন্ত ৯ জনের দলে পরিণত হওয়া রিয়াল মাদ্রিদ ২-০ গোলে নতি স্বীকার করল সেল্টা ভিগোর কাছে।
ম্যাচের প্রথমার্ধে অবশ্য এমন ঝড়ের কোনো আভাস ছিল না। বেশ কিছু সুযোগ তৈরি করলেও ফিনিশিংয়ের অভাবে গোল পায়নি স্বাগতিকরা, ফলে গোলশূন্যভাবেই বিরতিতে যায় দুই দল। তবে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই দৃশ্যপট বদলে যায়। ৫৪ মিনিটে পেনাল্টি বক্সের ভেতর থেকে উইলিয়ট সোয়েডবার্গের দারুণ এক ফ্লিক শটে লিড নেয় সেল্টা। এরপরই শুরু হয় রিয়ালের বিপর্যয়। ৬৪ মিনিটে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন ফ্রান গার্সিয়া।
পিছিয়ে পড়ে মেজাজ হারায় রিয়াল শিবির। ইনজুরি সময়ে লাল কার্ড দেখেন আলভারো কারেরাস। এমনকি মাঠে না নেমেও বেঞ্চে বসে রেফারির সাথে তর্কে জড়িয়ে লাল কার্ড দেখতে হয় ব্রাজিলিয়ান তরুণ এনদ্রিককে। ডাগআউটে থাকা কোচ জাভি আলেনসোও হলুদ কার্ডের হাত থেকে রেহাই পাননি। রিয়াল যখন জনবল হারিয়ে কোণঠাসা, ঠিক তখনই প্রতি-আক্রমণে নিজের ও দলের দ্বিতীয় গোলটি করে সেল্টার জয় নিশ্চিত করেন সোয়েডবার্গ।
লা লিগার শিরোপা দৌড়ে এই হার রিয়ালকে বেশ বড় ধাক্কাই দিল। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বার্সেলোনা তাদের সবশেষ ম্যাচে রিয়াল বেতিসকে ৫-৩ গোলে হারিয়েছে, ফলে শীর্ষস্থানে থাকা বার্সার সঙ্গে রিয়ালের পয়েন্ট ব্যবধান বেড়ে দাঁড়াল চারে। এছাড়া ঘাড়ের ওপর নিঃশ্বাস ফেলছে ভিয়ারিয়াল; এক ম্যাচ কম খেলে তারা রিয়ালের চেয়ে মাত্র এক পয়েন্ট পিছিয়ে তৃতীয় স্থানে আছে। সব মিলিয়ে আতলেতিকো মাদ্রিদ ও লিভারপুলের পর ঘরের মাঠে এই হারে বেশ চাপেই পড়ল জাভি আলেনসোর শিষ্যরা।
ক্রিকেট
জাতীয় ক্রিকেট লিগ
সিলেট-বরিশাল
ময়মনসিংহ-রাজশাহী
ঢাকা-চট্টগ্রাম
রংপুর-খুলনা
সরাসরি, সকাল ৯-৩০ মি.,
ইউটিউব/বিসিবি
আইএল টি-টোয়েন্টি
ভাইপার্স-জায়ান্টস
সরাসরি, রাত ৮-৩০ মি.,
টি স্পোর্টস
হকি
জুনিয়র হকি বিশ্বকাপ
নামিবিয়া-ওমান
সরাসরি, সকাল ৯-৩০ মি.,
কানাডা-মিসর
সরাসরি, দুপুর ১২টা,
চীন-দক্ষিণ কোরিয়া
সরাসরি, দুপুর ২-৩০ মি.,
বাংলাদেশ-অস্ট্রিয়া
সরাসরি, বিকাল ৫টা,
স্টার স্পোর্টস সিলেক্ট ১
ফুটবল
সিরি আ
তুরিনো-এসি মিলান
সরাসরি, রাত ১-৪৫ মি.,
ডিএজেডএন
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ
উলভারহ্যাম্পটন-ম্যান ইউনাইটেড
সরাসরি, রাত ২টা,
স্টার স্পোর্টস সিলেক্ট ১
ব্রিসবেন টেস্টে ইংল্যান্ডকে ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারিয়ে পাঁচ ম্যাচের অ্যাশেজ সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া। চতুর্থ ইনিংসে জয়ের জন্য ৬৫ রানের মামুলি লক্ষ্য তাড়ায় খুব একটা ঘাম ঝরাতে হয়নি স্টিভ স্মিথের দলকে।
ম্যাচের চতুর্থ দিনে ব্যাট করতে নেমে মাইকেল নেসারের বোলিং তোপে পড়ে ইংল্যান্ড। সফরকারীদের দ্বিতীয় ইনিংসে বেন স্টোকস ও উইল জ্যাকস ৯৬ রানের জুটি গড়ে কিছুটা প্রতিরোধের আভাস দিয়েছিলেন। কিন্তু পেসার মাইকেল নেসার জ্বলে উঠলে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে ইংলিশ ব্যাটিং লাইনআপ। জ্যাকস ৪১ এবং ফিফটি করা স্টোকসকে সাজঘরে ফেরানোর পাশাপাশি ইনিংসে ৫ উইকেট শিকার করেন নেসার। শেষ পর্যন্ত ২৪১ রানেই গুটিয়ে যায় ইংল্যান্ড।
ইনিংস পরাজয় এড়ালেও অস্ট্রেলিয়ার সামনে জয়ের লক্ষ্য দাঁড়ায় মাত্র ৬৫ রান। ছোট এই লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে গাস অ্যাটকিনসনের বলে ট্রাভিস হেড (২২) ও মার্নাস লাবুশেন (৩) দ্রুত বিদায় নিলেও জয়ে তা কোনো বাধা হতে পারেনি। অধিনায়ক স্টিভ স্মিথ ৯ বলে ঝড়ো ২৩ রান এবং জ্যাক ওয়েদারাল্ড ১৭ রানে অপরাজিত থেকে দলকে সহজেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন।
এর আগে ম্যাচের প্রথম ইনিংসে জো রুটের সেঞ্চুরিতে ভর করে ৩৩৪ রান করেছিল ইংল্যান্ড। জবাবে মিচেল স্টার্কের ৭৭ রান ও টপ অর্ডারের পাঁচ ব্যাটারের ফিফটিতে ৫১১ রানের পাহাড় গড়ে অস্ট্রেলিয়া। প্রথম ইনিংসে ১৭৭ রানের বড় লিড এবং ইংলিশ ফিল্ডারদের ৫টি গুরুত্বপূর্ণ ক্যাচ মিসই মূলত ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দেয়। বল হাতে দুই ইনিংস মিলিয়ে ৮ উইকেট এবং ব্যাট হাতে ৭৭ রান করে ম্যাচজুড়ে আলো ছড়িয়েছেন অজি পেসার মিচেল স্টার্ক।
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) মাঠে গড়ানোর আগেই বড়সড় প্রশ্নের মুখে পড়েছে চট্টগ্রাম রয়্যালস। ফ্র্যাঞ্চাইজিটির কোচিং স্টাফ, সাপোর্ট স্টাফ নিয়োগ এবং মালিকানার নেপথ্য কুশীলবদের নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ধোঁয়াশা। দলের মেন্টর ও ম্যানেজারের পদ থেকে হাবিবুল বাশারের আকস্মিক সরে দাঁড়ানোয় এই গুঞ্জন আরও ডালপালা মেলেছে, যা নিয়ে খোদ বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) কর্মকর্তাদের মধ্যেই গভীর উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
বিসিবি সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম ফ্র্যাঞ্চাইজির কার্যক্রম এবং এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের স্বচ্ছতা নিয়ে সন্দেহের যথেষ্ট কারণ রয়েছে। বিশেষ করে, ব্রাদার্স ইউনিয়নের কর্মকর্তা আমিন খানের সম্পৃক্ততা নিয়ে জোরালো প্রশ্ন উঠেছে। এর আগে দুর্বার রাজশাহীর সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে বিসিবির দুর্নীতি দমন বিভাগের ‘লাল তালিকায়’ আমিন খানের নাম রয়েছে বলে জানা যায়। বিসিবির এক পরিচালক জানিয়েছেন, তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী আমিন খান সন্দেহের তালিকায় আছেন এবং পরোক্ষভাবে তিনি চট্টগ্রাম দলের সঙ্গে যুক্ত বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম ফ্র্যাঞ্চাইজির কোচিং স্টাফ, কর্মকর্তা ও সাপোর্ট স্টাফদের তালিকা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) দুর্নীতি দমন বিভাগে পাঠানো হয়েছে। তাদের ‘ব্যাকগ্রাউন্ড’ বা অতীত ইতিহাস খতিয়ে দেখার পরই পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে বিসিবি।
সন্দেহের তীর আরও জোরালো হয়েছে দলটির কোচ নিয়োগের প্রক্রিয়া নিয়ে। যেখানে রংপুর রাইডার্স, ঢাকা ক্যাপিটালস, নোয়াখালী এক্সপ্রেস কিংবা সিলেট টাইটান্সের মতো দলগুলো জাতীয় পর্যায়ের কোচ নিয়োগ দিয়েছে, সেখানে চট্টগ্রাম রয়্যালস নিয়োগ দিয়েছে বিভাগীয় কোচ মমিনুল হককে। মমিনুল হক পূর্বে ব্রাদার্স ইউনিয়নের কোচ ছিলেন, যা আমিন খানের সঙ্গে দলটির সংযোগের জল্পনা বাড়িয়ে দিয়েছে।
যদিও আমিন খান এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি দাবি করেন, চট্টগ্রাম ফ্র্যাঞ্চাইজির সঙ্গে তাঁর বা তাঁর কোনো আত্মীয়ের সম্পৃক্ততা নেই। ব্রাদার্সের কোচ মমিনুল হক সেখানে থাকায় হয়তো কেউ কেউ তাঁকে জড়াচ্ছেন বলে তিনি মন্তব্য করেন। তবে হাবিবুল বাশারের মতো ব্যক্তিত্বের সরে যাওয়া এবং কোচ নিয়োগ নিয়ে ফিসফাস থামছে না ক্রিকেট ভক্তদের।
বিপিএলে পাঁচ বছরের জন্য এই ফ্র্যাঞ্চাইজিটি নেওয়া হলেও শুরু থেকেই তাদের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন ছিল। ফ্র্যাঞ্চাইজি ফি এবং ব্যাংক জামানত ইস্যুতে দুর্বলতা থাকায় বিসিবি শুরুতে এটি বাতিল করে নিজেরা চালানোর কথা ভেবেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এতসব দুর্বলতা সত্ত্বেও চট্টগ্রামকে ফ্র্যাঞ্চাইজি দেওয়ায় বিসিবির সিদ্ধান্তই এখন প্রশ্নবিদ্ধ। টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই ইনটিগ্রিটি বা স্বচ্ছতা নিয়ে সংকটে পড়া একটি দলের পক্ষে আগামী পাঁচ বছর বিপিএলে টিকে থাকা কতটা সম্ভব হবে, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। পরিস্থিতি বিবেচনায় বিসিবি দলটির ওপর কড়া নজরদারি রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
রিয়াল মাদ্রিদে আসার পর থেকেই কিলিয়ান এমবাপ্পে যেন থামতেই জানেন না। এবার ক্লাবের ইতিহাসের দরজায় কড়া নাড়ছেন ফরাসি সুপারস্টার। আর মাত্র চারটি গোল করলেই ছুঁয়ে ফেলবেন ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর এক বর্ষপঞ্জিকার সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড।
গেল বুধবার অ্যাথলেটিক বিলবাওয়ের মাঠে লা লিগায় রিয়ালের ৩-০ গোলের জয়ে জোড়া গোল করেছেন এমবাপ্পে।
এ নিয়ে ২০২৫ সালে তার মোট গোলসংখ্যা এখন ৫৫। রোনালদো ২০১৩ সালে করেছিলেন ক্লাব রেকর্ড ৫৯ গোল।
রবিবার (৭ ডিসেম্বর) সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে সেল্টা ভিগোর বিপক্ষে ম্যাচসহ রিয়ালের হাতে আছে আরো চারটি ম্যাচ। তাই রেকর্ড ভাঙা সময়ের ব্যাপার বলেই মনে করছেন কোচ জাভি আলোনসো।
সংবাদ সম্মেলনে আলোনসো বলেন, ‘কিলিয়ান রিয়াল মাদ্রিদে ইতিহাস গড়ার পথে। ঠিক যেমন রোনালদো করেছিলেন। তার উচ্চাকাঙ্ক্ষা, তার পরিসংখ্যান… সব মিলিয়ে সে বিশেষ খেলোয়াড়দের দলে।’
তিনি আরো বলেন, ‘তার মধ্যে যে শক্তি, সতীর্থদের উজ্জীবিত করার সেই ক্ষমতা—এগুলো রোনালদোর সঙ্গে মিল খুঁজে পাই।’
তবে রোনালদো আর এমবাপের মধ্যে কাউকে বেছে নিতে নারাজ আলোনসো।
‘রোনালদো হল রোনালদো, আর কিলিয়ান হল কিলিয়ান। দুজনই অসাধারণ। কিলিয়ানকে পেয়ে আমরা ভাগ্যবান,’ বলেন জাভি আলোনসো।
ভারতীয় ক্রিকেটের উদীয়মান তারকা অভিষেক শর্মা আবারও রেকর্ডবইয়ে নিজের নাম লিখলেন। শনিবার (৬ ডিসেম্বর) হায়দরাবাদে সৈয়দ মুশতাক আলি ট্রফির এলিট গ্রুপ ‘সি’-ম্যাচে সার্ভিসেসের বিপক্ষে ব্যাট হাতে ঝড় তুলে এক ক্যালেন্ডার বছরে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ১০০ ছক্কা হাঁকানো প্রথম ভারতীয় ক্রিকেটার হিসেবে ইতিহাস গড়লেন এই ২৩ বছর বয়সী ব্যাটার।
ম্যাচের শুরু থেকেই আগ্রাসী ব্যাটিং করতে থাকা অভিষেক তার দ্বিতীয় ছক্কাটিই তাকে পৌঁছে দেয় অনন্য এক উচ্চতায়। সেই মুহূর্তেই নিশ্চিত হয় নতুন রেকর্ডের জন্ম।
তিনি শেষ পর্যন্ত ৩৪ বলে ৮ চার ও ৩ ছক্কায় ৬২ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন।
চলতি বছর অভিষেকের ছক্কা-ঝড়ের হিসাবটা আরো বিস্ময়কর। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ১৭ ম্যাচে ৪৭ ছক্কা, আইপিএল ২০২৫-এ সানরাইজার্স হায়দরাবাদের হয়ে ১৪ ম্যাচে ২৮ ছক্কা এবং সৈয়দ মুশতাক আলি ট্রফিতে মাত্র ৬ ম্যাচেই ২৬ ছক্কা। মোট মিলিয়ে ২০২৫ সালে ৩৭ ম্যাচে অভিষেকের ছক্কার সংখ্যা ১০১।
ভারতের পূর্ববর্তী রেকর্ডটিও ছিল অভিষেকের। ২০২৪ সালে তিনি মেরেছিলেন ৮৭ ছক্কা। তার আগ পর্যন্ত জাতীয় রেকর্ড ছিল সূর্যকুমার যাদবের (৮৫ ছক্কা, ২০২২)।
বিশ্বজুড়ে এক বছরে টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ ছক্কার রেকর্ড নিকোলাস পুরানের।
২০২৪ সালে ১৭০ ছক্কা (৭৬ ম্যাচ) মেরেছিলেন তিনি। টি-টোয়েন্টির কিং ক্রিস গেইলই প্রথম ছুঁয়েছিলেন এই ১০০ ছক্কার ম্যাজিক ফিগার (২০১১ সালে)। এরপর আরো ছয়বার এ কীর্তি গড়েন তিনি।
চলতি বছর বিশ্বব্যাপী শীর্ষে আছেন অস্ট্রিয়ার করণবীর সিং, ৩২ ম্যাচে ১২২ ছক্কা। তবে ভারতের সামনে আছে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ।
সেখানে মাত্র ৩টি ছক্কা মারতে পারলেই অভিষেক হতে পারেন টেস্ট খেলুড়ে দেশের মাত্র দ্বিতীয় ক্রিকেটার, যিনি এক বছরে ৫০ আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ছক্কা হাঁকাবেন।
গত সপ্তাহেই কনফারেন্স শিরোপা জিতেছিলেন, আর এবার ইন্টার মায়ামির শোকেসে তুললেন মেজর লিগ সকারের (এমএলএস) সবচেয়ে বড় ট্রফিটি। ফাইনালে নিজে গোল না পেলেও সতীর্থদের দিয়ে গোল করিয়ে ভ্যানকুভার হোয়াইটক্যাপসকে ৩-১ ব্যবধানে হারিয়েছে তার দল।
ঘরের মাঠ চেজ স্টেডিয়ামে ম্যাচের শুরুতেই ভাগ্যের সহায়তা পায় মায়ামি। ৮ মিনিটে প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডার ওকাম্পোর আত্মঘাতী গোলে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায় টাটা মার্টিনোর শিষ্যরা। প্রথমার্ধে আর কোনো গোল না হওয়ায় এই লিড নিয়েই বিরতিতে যায় স্বাগতিকরা।
দ্বিতীয়ার্ধে ঘুরে দাঁড়ায় ভ্যানকুভার। ৬০ মিনিটে আলী আহমেদের গোলে সমতায় ফেরে তারা। তবে মায়ামির জাদুকর তখনো যে আসল চমক বাকি রেখেছিলেন! ৭১ মিনিটে মেসির দুর্দান্ত পাসে জালের দেখা পান রদ্রিগো ডি পল, মায়ামি ফিরে পায় লিড।
ম্যাচের একদম শেষ মুহূর্তে (৯৬ মিনিট) আর্জেন্টাইন অধিনায়কের আরেকটি নিখুঁত অ্যাসিস্টে দলের জয় ও শিরোপা নিশ্চিত করেন তাদেও আলেন্দে।
এই জয়ে নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এমএলএস চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করল ইন্টার মায়ামি। আর ব্যক্তিগত অর্জনে নিজেকে ধরাছোঁয়ার বাইরে নিয়ে গেলেন মেসি। এটি তার পেশাদার ক্যারিয়ারের রেকর্ড ৪৮তম শিরোপা।
এমএলএস কাপ জয়ী এই ম্যাচটি অন্য আরেক কারণে বিশেষ ছিল, কারণ এটি ছিল বার্সেলোনার দুই কিংবদন্তি জর্ডি আলবা ও সার্জিও বুসকেটসের ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ। বার্সার হয়ে ১১ মৌসুমে ছয়টি লা লিগা, একটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ এবং স্পেনের হয়ে ইউরো ২০১২ জিতেছেন আলবা। তিনি বিদায় নিলেন ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা লেফট-ব্যাক হিসেবেই।
অন্যদিকে বুসকেটস, যিনি বার্সেলোনার হয়ে ৭২২ ম্যাচ খেলে ৩২টি ট্রফি জিতেছেন। স্পেনের হয়ে বিশ্বকাপ ও ইউরো শিরোপাও তুলেছেন তিনি। তার ক্যারিয়ারেরও সুন্দর সমাপ্তি ঘটল এমএলএসে শিরোপা জিতে।
ফুটবলের মহাকাশে বর্তমানে দুই উজ্জ্বল তারকা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো ও লিওনেল মেসি। মাঠের বাইরে তাদের নিয়ে চলে তুমুল চর্চা, আর মাঠে মুখোমুখি হলে তো কথাই নেই! ক্লাব ফুটবলে দুজনের দেখা হয়েছে বহুবার। ২০১৪ সালের নভেম্বরে এক প্রীতি ম্যাচে জাতীয় দলের জার্সিতে তারা একে-অন্যের বিপক্ষে খেলেছিলেন। কিন্তু বিশ্বকাপে তারা পাঁচবার অংশ নিলেও মাঠে তাদের মুখোমুখি লড়াই দেখা হয়নি। ২০২৬ সালে ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ বিশ্বকাপ খেলতে চলেছেন মেসি-রোনালদো। এটাই তাদের শেষ বিশ্বকাপ। আর এই বিদায়ী আসরে সেমিফাইনালের আগে দেখা হতে পারে তাদের দল পর্তুগাল ও আর্জেন্টিনার।
আর্জেন্টিনা ও পর্তুগালকে গ্রুপ পর্বে বড় কোনো পরীক্ষা দিতে হবে না বলেই ধারণা। তিনটি সম্ভাব্য পথে তাদের মুখোমুখি লড়াই হতে পারে। প্রথমবার তাদের দেখা হতে পারে ১১ জুলাই কানসাস সিটিতে কোয়ার্টার ফাইনালে। সে ক্ষেত্রে দক্ষিণ আমেরিকান ও ইউরোপিয়ান দলকে তাদের গ্রুপ পর্বের শীর্ষে থাকতে হবে এবং শেষ ৩২ ও ১৬-এর বাধা পার করতে হবে। আর্জেন্টিনার গ্রুপে রয়েছে আলজেরিয়া, অস্ট্রিয়া ও জর্ডান। পর্তুগালের গ্রুপ প্রতিপক্ষ উজবেকিস্তান, কলম্বিয়া ও আন্তঃমহাদেশীয় প্লে অব জয়ী দল (নিউ ক্যালেডনিয়া, জ্যামাইকা কিংবা কঙ্গো)।
দুই দলই যদি নিজেদের গ্রুপে রানার্সআপ হয় এবং শেষ ৩২ টপকে গেলে শেষ ষোলোতে হবে তাদের লড়াই। আগামী ৬ জুলাই ডালাসে হবে ম্যাচটি। আরেক উপায়ে পর্তুগাল ও আর্জেন্টিনা মুখোমুখি হতে পারে। পর্তুগাল যদি তাদের গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন হয় এবং আর্জেন্টিনা তিনে থেকে গ্রুপের খেলা শেষ করে, তাহলে শেষ ষোলোতে ওঠার ম্যাচে দুই দলের দেখা হবে ৩ জুলাই কানসাস সিটিতে।
২০০৬ সাল থেকে মেসি ও রোনালদো বিশ্বকাপে খেলছেন। কিন্তু একবারই তারা মুখোমুখি হওয়ার বেশ কাছে ছিলেন। ২০১৮ সালের রাশিয়া বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে দেখা হতে পারত দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর; কিন্তু উরুগুয়ে পর্তুগিজদের ছিটকে দেয় এবং আর্জেন্টিনা ফ্রান্সের কাছে হেরে গিয়েছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে গতরাতে অনুষ্ঠিত হয়েছে ফিফা বিশ্বকাপের ড্র। সেই আয়োজনে ফিফা শান্তি পুরস্কারে পুরস্কৃত করা হয়েছে দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে। নতুন করে এই পুরস্কারটি চালু করেছে ফিফা।
এমন কিছু হতে যাচ্ছে তার সম্ভাবনা অনেকদিন ধরেই ছিল। অবশেষে তা সত্যি হলো ফিফা বিশ্বকাপের ড্র অনুষ্ঠানে। এই পুরস্কার পেয়ে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ফিফাকে। তিনি বলেন, ‘এটি আমার জীবনের অন্যতম সেরা সম্মাননা।’
ফিফা আগেই জানিয়েছিল, ফুটবল বিশ্বজুড়ে শান্তি ও একতার প্রতীক, আর মানুষের মধ্যে সম্প্রীতি গড়ে তুলতে যারা ভূমিকা রাখেন, তাদেরই সম্মান জানাতে এই উদ্যোগ। ফিফা প্রেসিডেন্ট জিয়ান্নি ইনফান্তিনো বলেন, ‘পৃথিবী যখন নানা অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তখন মানুষকে আরও কাছে টেনে আনতে যারা কাজ করছেন, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
পুরস্কার প্রদানের মঞ্চে ট্রাম্পকে ইনফান্তিনো বলেন, ‘এটা তোমার পুরস্কার, এটা তোমার শান্তি পুরস্কার।’
বিশ্বকাপ ড্রয়ে তুলনামূলক সহজ গ্রুপেই পড়েছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা। গ্রুপ ‘জে’-তে আর্জেন্টিনার প্রতিপক্ষ আলজেরিয়া, অস্ট্রিয়া ও জর্ডানের মতো দল। বুয়েন্স এইরেসে সমর্থকদের অনেকে এই ড্রকে অনুকূল বললেও আর্জেন্টিনা কোচ লিওনেল স্ক্যালোনি অবশ্য সবাইকে সতর্ক করে বলেছেন, ‘সহজ প্রতিপক্ষ বলে কিছু নেই।’
স্কালোনি জানিয়েছেন, আগামী বিশ্বকাপেও তারা একই পরীক্ষিত ছকে খেলবে। গতবার কাতারে শিরোপা ঘরে তুলেছিল আলবিসেলেস্তেরা। স্ক্যালোনি বলেছেন, ‘আমরা সর্বোচ্চটুকু দেব এবং আগের বিশ্বকাপে যেমন করেছি, ঠিক সেভাবে প্রতি বলের জন্য লড়াই করবে।’ শিরোপাধারী দলের কোচ হিসেবে ট্রফি হাতে নিয়েই ড্র মঞ্চে প্রবেশ করেছিলেন স্ক্যালোনি।
গ্রুপিং যেভাবে হয়েছে, তাতে করে ফাইনালে পৌঁছানোর পথটা আর্জেন্টিনার জন্য চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। শেষ ৩২-এ তাদের অপেক্ষায় গ্রুপ ‘এইচ’-এর কোনো দল। যে গ্রুপে রয়েছে স্পেন, উরুগুয়ে, সৌদি আরব ও কেপ ভার্দে। স্ক্যালোনিও মানছেন সেটা, ‘২০২২ সালেও বলেছিলাম সহজ প্রতিপক্ষ বলে কিছু নেই। ম্যাচ খেলতে হবে। যদি (এইচ গ্রুপের) কারও সঙ্গে মুখোমুখি হতে হয়, সেটা কঠিনই হবে। তবে আগে তো আমাদের গ্রুপ পার হতে হবে, তারপর দেখা যাবে।’
আলজেরিয়াকে নিয়ে স্ক্যালোনি বলেছেন, ‘চমৎকার খেলোয়াড়দের নিয়ে গড়া ভালো দল।’ তাদের কোচ ভ্লাদিমির পেটকোভিচ আবার স্ক্যালোনির সাবেক হেড কোচ। ইতালিয়ান ক্লাব লাৎজিওতে একসঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা আছে তাদের।
অস্ট্রিয়ারও প্রশংসা করেছেন তিনি, ‘বাছাইপর্বে দারুণ খেলেছে।’ গ্রুপসেরা হয়েই বিশ্বকাপে এসেছে দলটি। আর প্রথম বিশ্বকাপ খেলতে আসা জর্ডানকে নিয়ে তথ্য কম থাকলেও স্ক্যালোনি ভীষণ সতর্ক। দলটাকে তারা হালকাভাবে নিচ্ছেন না। কারণ, কাতারে সৌদি আরবের কাছে প্রথম ম্যাচে ২-১ গোলে হারের স্মৃতি যে এখনো তাজা। স্ক্যালানি বলেছেন, ‘সেই অভিজ্ঞতা আমাদের আছে। তাই খেলতে হবে, লড়তে হবে।’
টস জেতার পর আবেগ লুকাতে পারেননি ভারতের অধিনায়ক লোকেশ রাহুল। টানা ২০ ম্যাচ টস হারা ভারতের অবশেষে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের শেষ ও তৃতীয় ওয়ানডেতে ভাগ্য ফিরল। বিশাখাপত্তমে টস জেতার পরই রাহুলকে বেশ উচ্ছ্বসিত দেখা যায়। টসের পর ক্যামেরায় ধরা পড়ে- তিনি উচ্ছ্বাস ভরা ভঙ্গিতে ‘ইয়েস!’ বলে মুষ্টিবদ্ধ হাত তুলে উদযাপন করছেন। এর আগে ভারত শেষ টস জিতেছিল ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে, ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে।
টস জিতে ফিল্ডিং নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন রাহুল। সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে বিরাট কোহলির ১৩৫ রানের উপর ভর করে ভারত তুলেছিল ৩৪৯ রান। বড় সংগ্রহ দাঁড় করালেও স্বাগতিকদের জিততে হয়েছিল মাত্র ১৭ রানের ব্যবধানে।
দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও সেঞ্চুরি তুলে নেন কোহলি- ১০২ রান। সেঞ্চুরি করেন ঋতুরাজ গায়কোয়াড়ও, খেলেন ১০৫ রানের ইনিংস। ৩৫৮ রানের বড় সংগ্রহ গড়েও ভারত থামাতে পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকাকে; প্রোটিয়ারা জিতে যায় ৪ উইকেট হাতে রেখে। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ১১০ রান করেন এইডেন মার্করাম।
অবশেষে টানা ২০ ম্যাচ পর সিরিজ নির্ধারণী ওয়ানডেতে টস জিতল ভারত। এখন দেখার বিষয়- টস জয়ের পর সিরিজটাও নিজেদের করে নিতে পারে কি না স্বাগতিকরা।