এশিয়া কাপের সুপার ফোরে ফাইনালের লড়াইয়ে ক্রিকেটের দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত-পাকিস্তানের দ্বৈরথ আরও একবার দেখার অপেক্ষায় ক্রিকেট বিশ্ব। মঞ্চ যাই হোক, এ দুই দলের ম্যাচ মানে খেলার চেয়ে বেশিকিছু। যেখানে নিজেদের সেরাটা দিতে মুখিয়ে থাকেন দুই দলের খেলোয়াড়রা। এবারের প্রেক্ষাপট বরং অন্য সময়ের চেয়ে বেশি উত্তপ্ত। আসর শুরুর আগে আয়োজন নিয়ে মাঠের বাইরে দুই দেশের লড়াইয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছিল পুরো এশিয়া কাপ।
ক্রিকেটে ভারত-পাকিস্তানের দ্বৈরথ পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে। প্রতিবেশী এই দুই দেশ মাঠে মুখোমুখি হওয়া মানে উত্তেজনা যেন পৌঁছে যায় অন্য পর্যায়ে। শুধু মাঠেই নয়, মাঠের বাইরেও এই দুই দেশের সম্পর্ক এমনই। সঙ্গে তো রয়েছে রাজনৈতিক বৈরিতাও। তাই বেশ কয়েক বছর ধরেই দ্বিপক্ষীয় সিরিজ হয় না এই দুই দেশের মধ্যে; কিন্তু তাতে কী? বড় কোনো টুর্নামেন্ট অর্থাৎ এশিয়া কাপ কিংবা বিশ্বকাপের সূচি এমনভাবেই করা হয় যেন এই আসরগুলোতে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী এই দুই দেশ মুখোমুখি হতে পারে আর দর্শকরা এই হাইভোল্টেজ ম্যাচ উপভোগ করতে পারে। সেই হিসাব আজ শ্রীলঙ্কার কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় বিকাল ৩টা ৩০ মিনিটে ফাইনালের দৌড়ে নামছে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দেশ।
ওয়ান ডে ক্রিকেটে ভারত-পাক দ্বৈরথের ইতিহাস ৫৫ বছরের পুরোনো। ওয়ানডেতে এখন পর্যন্ত ১৩৩ বার মুখোমুখি হয়েছে ভারত ও পাকিস্তান। এর মধ্যে ভারতের জয় ৫৫টিতে, পাকিস্তানের জয় ৭৩টিতে। ৫টি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়, অর্থাৎ এই পরিসংখ্যানে পাকিস্তান বেশ এগিয়ে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারত এখন পর্যন্ত যে ৫৫টি ওয়ান ডে জিতেছে, তার মধ্যে ২৬টি ম্যাচে প্রথমে ব্যাটিং করেছে ভারতীয় দল। ২৯টি ম্যাচে রান তাড়া করে জিতেছে ভারত। অর্থাৎ শুরুতে ফিল্ডিং করলে জেতার হার বেশি। ওয়ানডে ক্রিকেটে পাকিস্তানের বিপক্ষে সর্বশেষ ১০ ম্যাচের মাত্র ৩টিতে হেরেছে ভারত।
সর্বশেষ ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপে পরস্পর দেখা হয়েছিল তাদের। সেই ম্যাচে ভারতের কাছে বৃষ্টি আইনে ৮৯ রানে হেরেছিল পাকিস্তান। তবে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে হওয়া গত এশিয়া কাপে ভারতকে হারিয়ে পাঁচ উইকেটে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছিল পাকিস্তান। এরপর ওয়ানডে ফরম্যাটে না হলেও এ সময়ে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে চারবার মুখোমুখি হয়েছে ভারত-পাকিস্তান। দু’বার করে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ও এশিয়া কাপের মঞ্চে। এর মধ্যে সমান দু’বার করে জয় ও হারের স্বাদ পেয়েছে দল দুটি।
ওয়ানডেতে দুই দলের লড়াইয়ে সর্বোচ্চ সংগ্রহ ভারতের। ৯ উইকেটে ৩৫৬। অন্যদিকে পাকিস্তানের সর্বোচ্চ ৮ উইকেটে ৩৪৪। সর্বনিম্ন দলীয় রান ভারতের ৭৯, পাকিস্তানের সর্বনিম্ন ৮৭। ২০২২ টি-টোয়েন্টি এশিয়া কাপে দুইবার মুখোমুখি হয়ে ভারত ও পাকিস্তান। গ্রুপ পর্বে পাকিস্তানকে ৫ উইকেট হারায় ভারত। আর সুপার ফোরে ভারতকে ৫ উইকেটে হারিয়ে ফাইনাল খেলে পাকিস্তান। তবে এশিয়া কাপের সর্বোচ্চ ৭টি শিরোপা আছে ভারতের, শেষটি ২০১৮ সালে। পাকিস্তান এশিয়া কাপ জিতেছে দুইবার, ২০০০ এবং ২০১২ সালে। কারেন্ট প্লেয়ারদের মধ্যে এশিয়া কাপে সবচেয়ে বেশি রান রোহিত শর্মার। হবারই কথা, সেই ২০০৮ থেকে খেলছেন। ২২ ম্যাচে ৭৪৫ রান। সেঞ্চুরি ১টি, ফিফটি ৬টি। বিপরীতে ২০১৮ এশিয়া কাপে পা রাখা বাবর আজম ওই এক আসরেই ৩৫১ রান তুলে রীতিমতো হইচই ফেলে দেন।
এদিকে আজ এমন একটি লড়াইয়ের আগে কী ভাবছেন দুই দলের খেলোয়াড়রা? কোন দল এগিয়ে- এমন এক প্রশ্নের উত্তরে ম্যাচ-পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে গতকাল পাকিস্তানের অধিনায়ক বাবর আজম ভারতের চেয়ে নিজেদেরই একটু এগিয়ে রেখেছেন। কেননা এ মাঠে সর্বশেষ ২০০৪ সালে দেখা হয়েছিল দুই দলের। এতে পাকিস্তান জিতেছিল ৫৯ রানে।
বাবর নিজেদের কেন এগিয়ে রাখছেন, সেই ব্যাখ্যাও দিয়েছেন। অনেকেই মনে করতে পারেন, ভারতের চেয়ে নিজেদের বোলিং আক্রমণকে শক্তিশালী মনে করেন বলেই বাবর পাকিস্তানকে এগিয়ে রাখছেন। ব্যাপারটা আসলে তা নয়। ভারত-পাকিস্তান সুপার ফোরের ম্যাচটি হচ্ছে শ্রীলঙ্কায়। এখানে পাকিস্তান টানা অনেক দিন খেলেছে সম্প্রতি। সেই থেকে এখানকার কন্ডিশনের সঙ্গে খুব ভালোভাবেই পাকিস্তানের খেলোয়াড়রা মানিয়ে নিয়েছেন বলে মনে করেন বাবর। সেটাই তাদের কিছুটা হলেও এগিয়ে রাখবে বলে বিশ্বাস তার।
সুপার ফোরে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের দিনে আবহাওয়া কেমন থাকবে, সে বিষয়ে ‘আকুওয়েদার’ জানিয়েছে, বৃষ্টির সম্ভাবনা ৭৫ শতাংশ। দিনের শেষভাগে বজ্রঝড় হতে পারে এবং রাতে বৃষ্টির সম্ভাবনা ৭৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ৯৬ শতাংশ হতে পারে। ওয়েদার ডটকম জানিয়েছে, আগামীকাল কলম্বোয় বৃষ্টির সম্ভাবনা ৯০ শতাংশ। প্রথম ম্যাচ বৃষ্টির কারণে পরিত্যক্ত হওয়ায় মাঠের লড়াই উপভোগ করতে পারেননি দর্শকরা। সে ম্যাচে ভারত আগে ব্যাট করে ৪৮.৫ ওভারে ২৬৬ রান তুললেও বৃষ্টির কারণে পাকিস্তান ব্যাটিংয়ে নামতে না পারায় ম্যাচটি পরিত্যক্ত ঘোষিত হয়। পাল্লেকেলেতে যেটুকু খেলা হয়েছিল, তাতে পাক পেসারদের সঙ্গে ভারতীয় ব্যাটিংয়ের লড়াই জমে উঠেছিল।
সুপার ফোরে ইতিমধ্যেই নিজেদের প্রথম ম্যাচ জিতেছে পাকিস্তান। বাংলাদেশকে হারিয়েছেন বাবর আজমরা। রোববার ভারতের বিরুদ্ধে জিতলে ফাইনালের দরজা কার্যত খুলে যাবে তাদের সামনে। অন্যদিকে ভারত চাইবে পাকিস্তানের পথের কাঁটা হয়ে উঠতে। শেষ হাসি তোলা থাকবে কার জন্য? আর তাইতো কলম্বোতে আবার টানটান এক লড়াইয়ের অপেক্ষা।
নানান নাটকীয়তার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে ওয়ানডে বিশ্বকাপের দল ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। মঙ্গলবার রাত সোয়া ৮টায় ১৫ সদস্যের এই স্কোয়াড ঘোষণা করা হয়। একইসঙ্গে উন্মোচন করা হয় টাইগারদের বিশ্বকাপ জার্সি।
১৫ সদস্যের ঘোষিত এই স্কোয়াডে নেই অভিজ্ঞ ওপেনার তামিম ইকবাল। তাকে ছাড়াই ভারতে অনুষ্ঠেয় টুর্নামেন্টটি খেলতে যাচ্ছে সাকিব বাহিনী। সাকিবকে অধিনায়ক রেখে ঘোষিত দলে রয়েছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
আগামী ৫ অক্টোবর ভারতের মাটিতে শুরু হচ্ছে বিশ্বক্রিকেটের মর্যাদাপূর্ণ এই আসর। বিশ্বকাপের জন্য দল ঘোষণার শেষ সময় আজ। অন্য দেশগুলো আগেই তাদের দল ঘোষণা করে ইতোমধ্যে তাতে কিছু পরিবর্তনও এনেছে। বিপরীতে শেষ মুহূর্তে এসে ঘোষণা করা হয়েছে সাকিব আল হাসানের দল।
এদিন নিজেদের অফিসিয়াল ফেসবুক পোস্টে একটি ভিডিও পোস্ট করে বিশ্বকাপের দল দিয়েছে বিসিবি। মাহমুদউল্লাহ ছাড়াও বিশ্বকাপের দলে আরও আছেন তরুণ ক্রিকেটার তানজিদ হাসান তামিম ও তানজিম হাসান সাকিব।
দলে রাখা হয়েছে পাঁচ পেসার। তাসকিন আহমেদ, শরীফুল ইসলাম, হাসান মাহমুদ, মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে আছেন তানজিম হাসান সাকিবকে। সাকিব ও মেহেদী হাসান মিরাজের পাশাপাশি স্পিন বোলিং আক্রমণে আছেন নাসুম আহমেদ ও শেখ মেহেদী হাসান। ১৫ সদস্যের দলে আটজনই প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছেন। মিডল অর্ডারের মেরুদণ্ড হিসেবে আছেন সাকিব, আছেন মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। টপ অর্ডারে তানজিদ তামিম, লিটন দাস ও শান্তর ওপর আস্থা রেখেছে টিম ম্যানেজমেন্ট।
তবে দল ঘোষণার আগমুহূর্তে তামিম ইকবালের ফিটনেস ইস্যুতে গত পরশু রাত থেকে শুরু হয়েছিল নতুন নাটকীয়তা। কারণ, দীর্ঘদিন পর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচ দিয়ে মাঠে ফিরেছিলেন তামিম। কিন্তু ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে তামিম জানিয়েছিলেন, এখনো কিছুটা চোটের অস্বস্তি আছে তাঁর। আর ‘আনফিট’ ক্রিকেটার নিয়ে বিশ্বকাপে নিয়ে যেতে চান না বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ও কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে।
ফিটনেস ইস্যু নিয়ে গতপরশু অস্ট্রেলিয়া থেকে ফিরেই হাথুরু ও সাকিব রাতে আলোচনায় বসেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের সঙ্গে। মধ্য রাতে হওয়া বিসিবি সভাপতির বাসভবনে এই আলোচনাও কতটা ফলপ্রসূ হয়েছে তা অস্পষ্ট ছিল। একই ব্যাপার নিয়ে আজ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ ওয়ানডে চলাকালীন আবারও বৈঠকে বসেন বিসিবির নীতিনির্ধারকেরা, মধ্যস্থতার জন্য নিয়ে এলেন মাশরাফি বিন মুর্তজাকেও। সবাই মিলে তামিমের ব্যাপারে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বিকেল ৫টা ৪৫ মিনেটে একবার দল ঘোষণার কথা থাকলেও পরে সেই সময় পরিবর্তন করে ম্যাচ শেষে জানানো হয়।
বুধবার বিকেল ৪টায় ভাড়া করা বিমানে গুহাটিতে রওনা দেবে বাংলাদেশ। ২৯ সেপ্টেম্বর সেখানেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। একই ভেন্যুতে ৩ অক্টোবর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আরেকটি প্রস্তুতি ম্যাচ। ৭ অক্টোবর ধর্মশালায় আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে বিশ্বকাপ অভিযান শুরু বাংলাদেশের।
বাংলাদেশ দল: সাকিব আল হাসান (অধিনায়ক), লিটন দাস, নাজমুল হোসেন শান্ত, তাওহীদ হৃদয়, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মেহেদী হাসান মিরাজ, তানজিদ হাসান তামিম, শেখ মেহেদি, নাসুম আহমেদ, তাসকিন আহমেদ, হাসান মাহমুদ, তানজিম হাসান সাকিব, শরীফুল ইসলাম ও মুস্তাফিজুর রহমান।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচে সোমবার ৭ উইকেটে হেরেছে বাংলাদেশ। শুরুতে ব্যাটিং ব্যর্থতার পর বল হাতেও কিউই ব্যাটরদের বিপক্ষে প্রতিরোধ গড়তে পারেনি টাইগাররা। ফলে টানা দুই ম্যাচ হেরে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ খুইয়েছে বাংলাদেশ।
প্রথম ম্যাচ বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়ার পর দ্বিতীয় ম্যাচে ৮৬ রানে হেরেছিল স্বাগতিকরা। আর গতকাল মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে টস জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে ৩৪.৩ ওভারে মাত্র ১৭১ রানেই অলআউট হয় বাংলাদেশ। স্বল্প লক্ষ্য তাড়ায় নেমে এদিন উইল ইয়াং ও হেনরি নিকোলসের দাপুটে ব্যাটিংয়ে ৩৪.৫ ওভারে মাত্র ৩ উইকেট হারিয়ে সহজ জয় তুলে নেয় নিউজিল্যান্ড।
অল্প রান তাড়া করতে নেমে সাবধানী শুরু করে নিউজিল্যান্ড। দলটির দুই উদ্বোধনী ব্যাটার গড়েন ৪৯ রানের জুটি। তাদের এই জুটি ভাঙেন শরিফুল ইসলাম। ৬ চারে ২৬ বলে ২৮ রান করা ফিন অ্যালেন তার বলে ডিপ ফাইন লেগে দাঁড়ানো উইল ইয়ংয়ের হাতে ক্যাচ দেন তিনি। ঠিক তার পরের বলেই দুর্দান্ত একটি ডেলেভারিতে অভিষিক্ত ডিন ফক্সক্রফটকে বোল্ড করে গ্যালারিতে উচ্ছ্বাস ফেরান শরিফুল।
তার ভেতরে ঢোকা বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে লাইন মিস করে বোল্ড হন ফক্সক্রফট। জাগিয়ে তোলেন হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনাও। যদিও সেটি করতে পারেননি তিনি। তবে ওই স্পেলে দুর্দান্ত বল করেন শরিফুল। তবে ম্যাচের মোড় এরপর হেনরি নিকোলসকে নিয়ে ঘুরাতে থাকান উইল ইয়ং। এই ব্যাটার মুখোমুখি হওয়া নবম বলে গিয়ে পেয়েছিলেন প্রথম রানের দেখা। নাসুম আহমেদের বলে বোল্ড হওয়ার আগে ১০ চারে ৮০ বলে ৭০ রান করেন তিনি। ততক্ষণে অবশ্য নিকোলসের সঙ্গে ৭৯ রানের জুটিতে ম্যাচ বের করে ফেলেছেন তিনি। বাকি কাজটা সারেন নিকোলস ও ব্লান্ডেল। ৮৬ বলে ৫০ রানে নিকোলস ও ১৫ বলে ১৯ রানে অপরাজিত থাকেন ব্লান্ডেল।
নাজমুল হোসেন শান্তর নেতৃত্বে চার পরিবর্তন নিয়ে প্রথমে ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ। সিরিজ বাঁচাতে মরিয়া টাইগাররা এদিন শান্তর পাশাপাশি দলে ফেরায় মুশফিকুর রহিমকেও। এছাড়া এদিন অভিষেক হয় উইকেটকিপার-ব্যাটার জাকির হাসানের। তাতেও ব্যাটিংটা সুবিধার হয়নি। শুরুটা ভালো হয়নি টাইগারদের। অভিষেক রাঙাতে পারেননি জাকির হাসান। দলীয় ৬ রানে ফেরেন জাকির। অ্যাডাম মিলনের বলে আউট হওয়ার আগে করেন ১ রান। ৮ রানের মাথায় ফেরেন আরেক ওপেনার তানজিদ তামিম। বোল্টের বলে আউট হওয়ার আগে করেন ৫ রান। ভালো শুরু করেছিলেন তাওহীদ হৃদয়। কিন্তু দলীয় ৩৫ রানে বাজে শট খেলে বিদায় নেন তিনিও। ১৭ বলে ১৮ রান করা হৃদয়কেও ফেরান মিলনে।
দ্রুত ৩ উইকেট হারানোর পর ৫৩ রানের জুটিতে টাইগারদের ভরসা দেখাচ্ছিলেন এই ম্যাচ দিয়ে দলে ফেরা মুশফিক-শান্ত। কিন্তু ১৮ রান করে মুশফিকও দুর্ভাগ্যজনকভাবে আউট হয়ে যান। পঞ্চম উইকেটে শান্ত আরেকটি জুটি গড়েন মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে। ৪৯ রানের এই জুটিতে শতরান পূর্ণ হয় বাংলাদেশের। তার আগে ব্যক্তিগত ১ রানের মাথায় চতুর্থ বাংলাদেশি হিসেবে পাঁচ হাজার রান পূর্ণ করেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
এদিন রিয়াদ অবশ্য ইনিংস বড় করতে পারেননি। ভালো শুরুর পরও ২৭ বলে ২১ রান করে মিলনের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন। বাংলাদেশের রান তখন ১৩৭। এরপর ১৫৬ রানে বোল্টের শিকার হন শেখ মেহেদী। তার ব্যাট থেকে আসে ১৩ রান।
এতক্ষণ পর্যন্ত দারুণ ব্যাটিং করছিলেন ওয়ান ডাউনে নামা শান্ত। এগিয়ে যাচ্ছিলেন ক্যারিয়ারের তৃতীয় শতকের দিকে। কিন্তু ম্যাককঞ্চিয়েকে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে এলবিডব্লিউ হয়ে যান তিনি। রিভিউ নিয়েছিলেন, অবশ্য তাতে লাভ হয়নি। ৮৪ বলে ৭৬ রান করেন শান্ত। তার ইনিংসে ১০টি চারের মার ছিল। শান্ত যখন বিদায় নেন তখন দলের স্কোর ছিল ১৬৮। বাকি তিন উইকেট বাংলাদেশ হারিয়েছে আর ৩ রান যোগ করতেই।
নিউজিল্যান্ডের পক্ষে সফলতম বোলার অ্যাডাম মিলনে। ৬.৩ ওভারে ৩৪ রানে ৪ উইকেট শিকার করেন এই পেসার। ৫ ওভারে ১৮ রান দিয়ে ২ উইকেট নিয়েছেন ম্যাককঞ্চিয়ে। ট্রেন্ট বোল্টও ২ উইকেট নিয়েছেন ৩৩ রানের বিনিময়ে। এছাড়া ১টি করে উইকেট নিয়েছেন লকি ফার্গুসন, রাচিন রবীন্দ্র।
বিশ্বকাপের আগে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজটি নানা কারণেই গুরুত্বপূর্ণ। তবে গুরুত্বপূর্ণ এ সিরিজের প্রথম ওয়ানডে ইতোমধ্যে পরিত্যক্ত হয়েছে বৃষ্টির বাধায়। তবে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে মুস্তাফিজ-মেহেদীদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে সফরকারীরা সবগুলো উইকেট হারিয়ে ২৫৪ রান করে।
জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা বেশ সতর্কভাবেই করেছিলেন তামিম ইকবাল ও লিটন দাস। প্রথম ৫ ওভারে দুজনই খেলেছেন সতর্কভাবে। ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারে কাইল জেমিসনের অফ স্টাম্পের বাইরের শর্ট বল কাট করতে গেলে থার্ডম্যানে সহজ ক্যাচ পেয়ে যান রাচিন রবীন্দ্র। যদিও দীর্ঘদিন পর দলে ফিরে ৫৭ বলে ৪৪ রান করেন তামিম ও মাহমুদউল্লাহ করে ৭৬ বলে ৪৯ রান। শেষ দিকে নাসুম ২১ রান করেন। এ ছাড়া আর কোনো ব্যাটসম্যান বলার মতো কোনো রান করতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত ৮৬ রানের বড় ব্যবধানে হেরেছে টিম টাইগার্স।
নিউজিল্যান্ডের পক্ষে কাইল জেমিসন নেন ২টি এবং স্পিনার ইশ সোধি একাই নেন ৬ উইকেট। সোধিই মূলত বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনকে গুঁড়িয়ে দেন। এমন ম্যাচের পর প্রশ্ন উঠেছে- মিরপুরের কন্ডিশনে বিশ্বকাপের প্রস্তুতি আদৌ হবে কি?
এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে স্বাগতিকদের বোলিং তোপের মুখে পড়ে ব্লাক ক্যাপসরা। নিউজিল্যান্ডের হয়ে টম ব্লান্ডেল সর্বোচ্চ ৬৮ রান করেন। টাইগারদের হয়ে খালেদ আহমেদ ও শেখ মেহেদী নেন তিনটি করে উইকেট।
প্রথম ওয়ানডের মতো গতকালও নতুন বলে দুর্দান্ত শুরু করেন মুস্তাফিজুর রহমান। আরেক প্রান্তে খালেদও ভালো বোলিং করেছেন। এই দুই পেসার মিলেই কিউইদের টপ অর্ডার ভেঙে দেন। টপ অর্ডার ব্যর্থতার পর আরও একবার সফরকারীদের হাল ধরেন হেনরি নিকোলস। নিউজিল্যান্ড ইনিংসের তৃতীয় ওভারে উইল ইয়াংকে সাজঘরে পাঠিয়েছেন মুস্তাফিজুর রহমান। ওভারের তৃতীয় বলে মুস্তাফিজের করা শর্ট ডেলিভারিতে কাটা পড়েন ইয়াং, ক্যাচ দেন উইকেটরক্ষক লিটনের হাতে। প্রথম ওয়ানডেতে দারুণ ব্যাট করা ইয়াং এই ম্যাচে করেছেন ৮ বলে শূন্য রান। এর পরের ওভারেই দ্য ফিজ তুলে নেন আরেক ওপেনার ফিন অ্যালনের উইকেট। মোস্তাফিজের বলে স্লিপে সৌম্য সরকারের দারুণ ক্যাচে আউট ফিন অ্যালেন। আউট হন ১৫ বলে ১২ রান করে।
বাংলাদেশের ১৪৬তম ওয়ানডে ক্রিকেটার হিসেবে অভিষেক হয়েছে পেসার খালেদ আহমেদের। মুস্তাফিজের সঙ্গে এবার উইকেট নেয়ার দৌড়ে যোগ দেন খালেদ। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে প্রথম উইকেটটি পেতে খুব একটা অপেক্ষা করতে হয়নি। অষ্টম ওভারে এসে তৃতীয় উইকেট হারিয়েছে নিউজিল্যান্ড।
দ্রুত তিন উইকেট পড়ার পর উইকেটে এসে এক প্রান্ত আগলে রাখার চেষ্টা করেছেন হেনরি নিকোলস। টম ব্লান্ডেলকে সঙ্গে নিয়ে চতুর্থ উইকেট জুটিতে দলের হাল ধরেন নিকোলস। এ দুজনের ব্যাটে ভর দিয়ে ম্যাচে ফিরেছে কিউইরা। প্রথম ৫০ রান তুলতে নিউজিল্যান্ড খরচ করেছিল ৭১ বল। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রানের গতি বাড়িয়েছে তারা। পরের ৫০ রান তুলেছে মাত্র ৫০ বলে। ২৬তম ওভারের শেষ বলে নাসুম আহমেদের ওভার পিচ ডেলিভারি লং অনে ঠেলে দিয়ে ফিফটি স্পর্শ করেন ব্লান্ডেল। পরের ওভারে একই মাইলফলকের সামনে ছিলেন নিকোলস। কিন্তু গত ম্যাচের মতো এবারও ফিফটি না পাওয়ার আক্ষেপ নিয়ে সাজঘরে ফেরেন তিনি।
উইকেটে এসেই রানের গতি বাড়ানোয় মনোযোগ দিয়েছিলেন রাচিন রবীন্দ্র। তবে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। বাকি ব্যাটারদের আসা-যাওয়ার মাঝে এক প্রান্ত আগলে রেখে ব্যাটিং করছিলেন ব্লান্ডেল। তবে ৩৪তম ওভারে হাসানের ইয়র্কার সামলাতে পারেননি। ৬৬ বলে ৬৮ রান করে হাসানের দুর্দান্ত ডেলিভারিতে বোল্ড হয়েছেন তিনি।
শেষ দিকের ব্যাটসম্যানদের ছোট ছোট জুটি বাংলাদেশের বিপক্ষে লড়াকু এক স্কোর দাঁড় করায় নিউজিল্যান্ড। অষ্টম উইকেটে কাইল জেমিসন ও ইশ সোধি যোগ করেন ৪০ বলে ৩২ রান। এরপর ২০ রান করা জেমিসনকে কট অ্যান্ড বোল্ড করেন শেখ মেহেদী। এরপর অধিনায়ক লকি ফার্গুসনের সঙ্গে ২১ রানের জুটি গড়েন স্পিনার সোধি। পরে অবশ্য আরও কয়েক ওভার স্থায়ী হয়েছে নিউজিল্যান্ডের ইনিংস। কিন্তু অলআউট থেকে রেহাই পায়নি। ৮ বলের ব্যবধানে শেষের দুই ব্যাটারকে ফিরিয়ে ২৫৪ রানে কিউইদের আটকে দেয় বাংলাদেশ।
যদিও ছোট এই লক্ষ্য তাড়া করে জিততে পারেনি টাইগাররা। বলা যায় নিজেদের পাতানো ফাঁদে নিজেরাই ধরা খেয়েছে।
মিরপুরে চলছে বৃষ্টির লুকোচুরি। প্রথম ধাপে প্রায় দুই ঘণ্টা বৃষ্টি নামার পর দ্বিতীয় ধাপে এক ঘণ্টা ৪০ মিনিটের মতো। মধ্যখানে বৃষ্টি বন্ধ হয়ে একবার খেলা শুরুর কথা থাকলেও বেরসিক বৃষ্টি আবার অপেক্ষা বাড়ায়। এতে আর মাঠে নামা হয়নি ক্রিকেটারদের। তবে শেষ পর্যন্ত বৃষ্টির কাছে হার মানে বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড প্রথম ওয়ানডে ম্যাচ। ম্যাচটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে রেফারি। রাত ৮টা ২৬ মিনিটের দিকে আসে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা। বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ডের প্রথম কোনো ম্যাচ পরিত্যক্ত হলো। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে পরিত্যক্ত হওয়া মাত্র দ্বিতীয় ওয়ানডে এটি।
ক্রিকেটের চিরচেনা শত্রু বৃষ্টির শঙ্কা মাথায় নিয়েই আজ শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে বেলা ২টায় দ্বিতীয় ওয়ানডেতে নিউজিল্যান্ডের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। বরাবরের মতো টসের দিকে চোখ থাকবে দুই দলের। দুই দলই চায় আজকের ম্যাচটা জিতে সিরিজ জয়ের দিকে এগিয়ে যেতে। সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে টস জিতে আগে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক লিটন কুমার দাস।
বাংলাদেশ এবং নিউজিল্যান্ড উভয় দল তিন ম্যাচের এই সিরিজটিকে রিজার্ভ বেঞ্চ পরখ করে দেখার মিশন হিসেবে নিয়েছে। উভয় দলই নিজেদের সেরা খেলোয়াড়দের বিশ্রামে রেখে নামছে ম্যাচে। নিউজিল্যান্ড দলের বেশির ভাগ ক্রিকেটার অপরিচিত হলেও বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তা নয়। ১৫ জনের সবারই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে।
এদিক থেকে বাংলাদেশ দলকে এগিয়ে রাখতে হবে। এই সিরিজ দিয়ে তামিম ইকবাল ফিরছেন। আফগানিস্তান সিরিজে হঠাৎ অবসর ঘোষণা, প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার, কোমরের চোটের কারণে এশিয়া কাপ থেকে ছুটি নেয়া এবং পুনর্বাসন সম্পন্ন করে নিউজিল্যান্ড সিরিজ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরেছেন বাঁহাতি এ ওপেনার। নিউজিল্যান্ড সিরিজের জন্য বাংলাদেশ স্কোয়াডে ফিরে এসেছেন অলরাউন্ডার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও। মাহমুদউল্লাহ দীর্ঘ অফ ফর্মের কারণে দলের বাইরে ছিলেন।
নিউজিল্যান্ড সিরিজে বিশ্রাম দেয়া হয়েছে নিয়মিত অধিনায়ক সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, মেহেদি হাসান মিরাজ এবং তিন পেসার তাসকিন আহমেদ, হাসান মাহমুদ ও শরিফুল ইসলামকে। সাকিবের অনুপুস্থিতিতে প্রথম ওয়ানডের মতো দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও বাংলাদেশ দলের নেতৃত্ব ব্যাটার লিটন দাস। বাংলাদেশ দল এবং তাঁর জন্য এ সিরিজটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, টাইগার রিজার্ভ বেঞ্চে একজনও ভালো মানের বিকল্প ওপেনার নেই। নাঈম শেখ টানা ম্যাচ খেলে রান করতে পারেননি। এনামুল হক বিজয় টিম ম্যানেজমেন্টের পরিকল্পনায় নেই।
প্রথম ম্যাচ যেহেতু বৃষ্টিতে ভেসে গেছে। তাই আজকের ম্যাচ দিয়ে এশিয়া কাপের ব্যর্থতা ভুলে ঘুরে দাঁড়াতে চায় বাংলাদেশ। আর সে লক্ষ্যে ব্যাটসম্যানদেরকেই দায়িত্বটা নিতে হবে। উইকেট কামড়ে পড়ে থাকলে রান আসবেই এই উইকেটে- আগের দিন তা দেখিয়েছেন ইয়াং-নিকোলস। পরিকল্পনা হয়ে গেছে, এখন প্রয়োগ করতে হবে মাঠে। বড় পার্টনারশিপ গড়ে তুলতে পারলে হয়তো যেকোনো কিছুই সম্ভব।
এবার একটু পরিসংখ্যানের দিকে মনোযোগ দেয়া যাক। বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড এ পর্যন্ত ৩৯টি এক দিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের জয় ১০টিতে অন্যদিকে ব্ল্যাক ক্যাপসদের জয় ২৮টিতে। আর এই সিরিজের প্রথম ম্যাচটি পরিত্যক্ত হয়েছে। বাংলাদেশের ১০ জয়ের মধ্যে ৮ জয় দেশের মাটিতে। আর দুটি জয় নিরপেক্ষ ভেন্যুতে। অ্যাওয়েতে বাংলাদেশ কোনো ম্যাচ জয়লাভ করতে পারেনি।
নিউজিল্যান্ড বাংলাদেশের এই কন্ডিশনে ধাতস্থ হওয়ার পর্যাপ্ত সুযোগ পায়নি। এ কন্ডিশনে খেলাটা বরাবরই কঠিন তাদের জন্য। প্রথম ওয়ানডেতে কোনো প্রতিরোধই গড়তে পারেনি তারা। তাই নজর থাকবে আজকের ম্যাচে। ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয়ে। তবে কন্ডিশন যাই হোক না কেন, কিউই ফাস্ট বোলাররা কতটা ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে, সেটি সবসময় হাড়ে হাড়েই টের পেয়েছেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। ১৫০ কিলোমিটার গতিবেগের বল ও সুইং সামলাতে তালগোল পাকিয়ে হিমশিম খেয়েছেন সবাই।
যদিও মিরপুরে শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে খেলা হওয়ায় কিউইদের বিপক্ষে ‘হোম অ্যাডভান্টেজ’ নেওয়ার চেষ্টা থাকবে বাংলাদেশের। তিনজন স্পিনার আর দুই পেসার রেখে একাদশ সাজাতে পারেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান কোচ নিক পোথাস। ডান ও বাঁহাতি অফ স্পিনারের সঙ্গে রাখা হতে পারে লেগি রিশাদ হোসেনকে। কারণ, তাঁকেও ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করতে হবে। বিশ্বকাপেও বিকল্প বোলার কোটায় রাখা হতে পারে তাঁকে। বৃষ্টিভেজা কন্ডিশনে তিন পেসার নিয়েও খেলতে পারেন স্বাগতিকরা। পরীক্ষা আর পরখ করে দেখার সিরিজ হলেও ফলাফল কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। বিশেষ করে বাংলাদেশের জয় চাই-ই চাই।
আর প্রেডিকশনের কথা যদিও বলতেই হয়, তাহলে আমি বাংলাদেশের জয় দেখছি। যদিও মাঠের কাজটা টাইগারদের করে দেখাতে হবে। মাঠে সব বিভাগ ঠিকঠাক পারফর্ম না করলে অতীত পরিসংখ্যান, চেনা দর্শক আর কন্ডিশনের কিছুই যায়-আসে না।
আসলে দেশের মাটিতে নিউজিল্যান্ডের কাছে গত ১৩ বছরে কোনো ওয়ানডে ম্যাচে হারেনি বাংলাদেশ। কিংবদন্তি ড্যানিয়েল ভেট্টরিকে দিয়ে হোয়াইটওয়াশের শুরু, পরে কাইল মিলসেকে একই ফল উপহার দিয়েছেন মুশফিকুর রহিমরা। বিশ্বকাপ দলের আট ক্রিকেটারকে বিশ্রামে রেখে খেলতে আসা নিউজিল্যান্ড দলের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক লকি ফার্গুসনকেও কি সেই ঐতিহ্যের স্বাদ দিতে চলেছে বাংলাদেশ? সেটি আজ দেখার পালা।
বাংলাদেশের ক্রিকেটার নাসির হোসেনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনেছে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি)। ২০২১ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবি টি-টেন লিগ চলাকালে দুর্নীতিবিরোধী নিয়মের বিভিন্ন ধারা ভঙ্গের কারণে নাসির হোসেন ছাড়াও সাতজন খেলোয়াড়-কর্মকর্তা এবং দলের মালিককে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
আমিরাত ক্রিকেট বোর্ডের (ইসিবি) পক্ষ থেকে আনা এ অভিযোগ মঙ্গলবার নিশ্চিত করেছে আইসিসি। ছয়টি দল নিয়ে ২০২১ সালের ১৯ নভেম্বর থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত আবুধাবি টি-টেন লিগ অনুষ্ঠিত হয়।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আইসিসি জানিয়েছে, ‘দুর্নীতিবিরোধী বিভিন্ন ধারা লঙ্ঘনের জন্য ইসিবির পক্ষ থেকে টি-টেন লিগে অংশ নেওয়া আটজন খেলোয়াড় ও কর্মকর্তাকে অভিযুক্ত করেছে আইসিসি।’
নাসিরের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের একটি হচ্ছে, ৭৫০ মার্কিন ডলারের বেশি অর্থমূল্যের উপহারের রসিদ সম্পর্কে দুর্নীতি দমন কর্মকর্তাকে (ডিএসিও) বিস্তারিত জানাতে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন।
এছাড়া দুর্নীতির প্রস্তাবের বিস্তারিত তথ্য দুর্নীতিবিরোধী কর্মকর্তাকে জানাননি নাসির। কোনো ধরনের কারণ ছাড়াই দুর্নীতির তদন্তে সহায়তা করতে অস্বীকৃতি বা প্রত্যাখ্যান করার অভিযোগও আনা হয়েছে নাসিরের বিরুদ্ধে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, ২০২১ সালে আবুধাবি টি-টেন লিগের সঙ্গে সম্পর্কিত অভিযোগ এবং সেই টুর্নামেন্টে বেশ কয়েকটি ম্যাচে দুর্নীতি করার চেষ্টা হয়েছিল।
অভিযুক্ত অন্যরা হলেন: কৃষাণ কুমার (একটি দলের সহ-স্বত্বাধিকারী), পরাগ সাঙ্গভি (একটি দলের সহ-স্বত্বাধিকারী), আশার জাইদি (ব্যাটিং কোচ), রিজওয়ান জাভেদ (স্থানীয় খেলোয়াড়), সালিয়া সামান (স্থানীয় খেলোয়াড়), সানি ধিলন (সহকারী কোচ), শাদাব আহমেদ (টিম ম্যানেজার)।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিতর্কিত পোস্টের কারণে পেসার তানজিম হাসান সাকিবকে সতর্ক করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে স্বপ্নের মত অভিষেকের একদিন পর তার পুরানো পোস্টগুলো ভাইরাল হয়।
সদ্য শেষ হওয়া এশিয়া কাপের সুপার ফোরের শেষ ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে অভিষেক হয় তানজিম সাকিবের। অভিষেকের দ্বিতীয় বলেই ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মাকে শূন্য হাতে প্যাভিলিয়নে ফেরত পাঠান তিনি। ৩২ রানে ২ উইকেট নিয়ে ভারতের বিপক্ষে ৬ রানের জয়ে বড় অবদান রাখেন তানজিম।
মঙ্গলবার বিসিবির ক্রিকেট অপারেশন্সের চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস সাংবাদিকদের বলেন, ‘ফেসবুকে তানজিমের দেয়া বির্তকিত পোস্টগুলোর বিষয়ে আমরা তার সঙ্গে আলোচনা করেছি। তিনি বলেছেন, অন্য কাউকে আঘাত করার জন্য এমন পোস্ট করেননি, নিজ থেকেই এমন পোস্ট করেছেন এবং যদি এটি কাউকে আঘাত করে তাহলে তার জন্য দুঃখিত তানজিম।’
ইউনসু আরও বলেন, ‘বিতর্কিত পোস্টের জন্য তানজিম দুঃখ প্রকাশ করায় আমরা তাকে সতর্ক করেছি। তিনি বলেছেন, ভবিষ্যতে এই ধরনের পোস্ট দেবেন না এবং এই ধরনের সমস্যা তৈরি করা থেকে দূরে থাকবেন।’
ইউনুস জানিয়েছেন, ফেসবুক দেওয়া সব পোস্ট ইতোমধ্যে মুছে ফেলেছেন তানজিম। এটিও স্পষ্ট করা হয়েছে, তার আচরণ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করবে বিসিবি।
এশিয়া কাপের ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কার কাছে সুযোগ ছিল শিরোপা ধরে রাখার। পুরো টুর্নামেন্টে আন্ডারডগ হিসেবে খেলে চমক দেখানো দলটি ফাইনালে ভারতের কাছে পাত্তাই পেলো না। আর তাইতো চার বছর পর আবারও এশিয়া কাপ শিরোপা নিজেদের করে নিলো ভারত। শ্রীলঙ্কাকে ১০ উইকেটে হারিয়ে অষ্টমবারের মতো এই শিরোপা জিতলো রোহিত শর্মার দল।
রোববার কলম্বোর আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন লঙ্কান অধিনায়ক দাসুন শানাকা। তার এমন সিদ্ধান্ত ভুল প্রমাণ করতে খুব বেশি সময় নেয়নি ভারতীয় বোলাররা। আগে ব্যাট করতে নেমে লঙ্কানরা খেলতে পেরেছে কেবল ৯২ বল। এই সময়ে সবকটি উইকেট হারিয়ে তারা স্কোরবোর্ডে তুলতে পেরেছে ৫০ রান। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ১৭ রান এসেছে কুশল মেন্ডিসের ব্যাট থেকে। দলের ৯ ব্যাটারই এদিন দুই অঙ্ক ছুঁতে পারেননি। ভারতের হয়ে ২১ রানে ৬ উইকেট শিকার করে সেরা বোলার মোহাম্মদ সিরাজ।
ফাইনালে পা রাখা পর্যন্ত দারুণ ক্রিকেট খেলেছে শ্রীলঙ্কা। বাংলাদেশ-পাকিস্তানকে হারানোর পর ভারতের বিপক্ষে সুপার ফোরের ম্যাচে দুর্দান্ত লড়াই করেছে। সেটাই এশিয়া কাপের ফাইনালের লড়াই জমার আভাস দিয়েছিল। কিন্তু শুরুর আগে শেষ হয়ে কলম্বোর গ্যালারিতে বসা ও টিভি পর্দার দর্শকদের হতাশ করলো তারা।
এশিয়া কাপের ফাইনালে বড় প্রত্যাশা নিয়ে শুরুতে ব্যাটিং নিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। কিন্তু ম্যাচের এক ওভারের গতিঝড়ে লন্ডভন্ড হয়ে পড়েছে লঙ্কানদের ব্যাটিং। পেসার মোহাম্মদ সিরাজ চতুর্থ ওভারে ৪ উইকেট নিয়ে শুরুতেই স্বাগতিকদের ব্যাটিংয়ে ধস নামিয়েছেন। ষষ্ঠ ওভারে আবার আঘাত করে তুলে নিয়েছেন ম্যাচের পঞ্চম উইকেট। তাতে ১২ রানে পড়ে শ্রীলঙ্কার ৬ উইকেট! মাঝে কুশল মেন্ডিস প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করলে তাকেও বোল্ড করেছেন তিনি। ১৫.২ ওভারে ৫০ রানে অলআউট স্বাগতিকরা, যা ভারতের বিপক্ষে তাদের সর্বনিম্ন ওয়ানডে স্কোর। সিরাজের আগুন ঝড়ানোর দিনে জ্বলে ওঠেছিলেন হার্দিক পান্ডিয়াও। তার ঝুলিতে গেছে ৩ উইকেট। তাছাড়া জাসপ্রিত বুমরাহ পেয়েছেন এক উইকেট।
জয়ের জন্য ভারতের প্রয়োজন ছিল মাত্র ৫১ রান। সেই রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ৬.১ ওভারে অনায়েসেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় রোহিত শর্মার দল। দলের হয়ে ১৯ বলে অপরাজিত ২৭ রান করেন শুভমান গিল। এছাড়াও ঈশান কিষান অপরাজিত ছিলেন ১৮ বলে ২৩ রান করে।
এদিন ৫০ রানে অলআউট হয়ে এশিয়া কাপেরই সর্বনিম্ন দলীয় স্কোরেও নাম উঠেছে তাদের। আর এমন লজ্জার দিনে বাংলাদেশকেও যেন কিছুটা রেহাই দিল লঙ্কানরা। আজকের ফাইনালের আগ পর্যন্ত এশিয়া কাপে দলীয় সর্বনিম্ন স্কোর ছিল বাংলাদেশের। ২০০০ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মাত্র ৮৭ রানে অলআউট হয়েছিল বাংলাদেশ। এবার সে রেকর্ড ভাঙল শ্রীলঙ্কা।
অন্যদিকে এশিয়া কাপের ফাইনালে ওয়ানডে নিজেদের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন রানে অলআউট হয়েছে শ্রীলঙ্কা। এর আগে ২০১২ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে পার্লে ২১তম ওভারে ৪৩ রানে ধসে গিয়েছিল তারা। শ্রীলঙ্কা অল্পের জন্য ওই লজ্জাসহ ওয়ানডের সর্বনিম্ন ৩৫ রানে অলআউটের লজ্জা থেকে রেহাই পেয়েছে।
পরিসংখ্যান এবং দলীয় শক্তির বিবেচনায় ভারত ফেভারিট হিসেবেই শিরোপার লড়াইয়ে মাঠে নেমেছিল ভারত। দলটি সব বিভাগেই স্বয়ংসম্পূর্ণ। যা আবারও প্রমাণিত হলো। বিশ্বসেরা ব্যাটিং লাইনআপের পাশাপাশি আক্রমণাত্বক বোলিং। তবে এশিয়ার ফাইনালে মঞ্চে শ্রীলঙ্কার শেষটা আরও ভালো হতেও পারতো।
জাতীয় দলের পেসার রুবেল হোসেনের বাবা সিদ্দিকুর রহমান মারা গেছেন।
রোববার সকাল সাড়ে ৮টায় বাগেরহাট জেলা শহরের পূর্ব বাসাবাটি এলাকায় নিজ বাড়িতে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন সিদ্দিকুর রহমান। তার মৃত্যুর বিষয়টি রুবেল নিজেই জানিয়েছেন।
রোববার সকালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়ে বিষয়টি জানান রুবেল হোসেন। ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, ‘আমার বাবা আর নেই … সবাই আমার বাবার জন্য দোয়া কইরেন।’
রুবেল হোসেনের বাবা ব্যবসায়ী সিদ্দিকুর রহমানের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন, বাগেরহাট জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খালিদ হোসেন, সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র খান হাবিবুর রহমান।
দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় দলের বাইরে রয়েছেন টাইগার পেসার রুবেল। ২০০৯ সালে বাংলাদেশ জাতীয় দলে অভিষেক হয় তার।
দেখতে দেখতে এশিয়া কাপের মেগা ফাইনাল চলে এল। শিরোপার লড়াইয়ে আজ কলম্বোর আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় বেলা সাড়ে ৩টায় মুখোমুখি হবে রোহিত শর্মার ভারত ও দাসুন শানাকার শ্রীলঙ্কা। টুর্নামেন্টের ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে সব থেকে সফলতম দুই দলই ফের একবার কাপ জয়ের লড়াইয়ে মুখোমুখি হচ্ছে। যদিও অপরাজিতভাবে চলতি বছরের টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠতে পারেনি কোনো দলই। তবে দুটি দলই দিয়েছে যোগ্যতার পরিচয়। টুর্নামেন্ট শুরুতে যা কেউ ভাবেনি তাই করে দেখিয়েছে লঙ্কানরা। আর ভারত বরাবরের মতো ফেবারিট হয়েই ফাইনালে পৌঁছেছে।
তবে স্বস্তিতে নেই ফাইনালে ওঠা দুই দলের কেউ-ই। চোটে জর্জরিত উভয় দল। ভারত-শ্রীলঙ্কা দুই দলই হারিয়েছে নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ দুই বোলারকে। চোট সমস্যা যেন পিছুই ছাড়ছে না শ্রীলঙ্কার। এশিয়া কাপ শুরুর আগেই দলের একাধিক নিয়মিত মুখকে হারায় লঙ্কানরা। সেই ধাক্কা বেশ ভালোভাবে সামলে উঠেছিল, দারুণ পারফরম্যান্সে জায়গা করে নিয়েছে এশিয়া কাপের ফাইনালে। যদিও গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচের আগে আবারও দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে দলটির কপালে। তারকা স্পিনার মাহিশ থিকশানার খেলা হচ্ছে না এশিয়া কাপ ফাইনালে। চোটের কারণে আসর থেকে ছিটকে গেছেন তিনি। ২০০৮ এশিয়া কাপ ফাইনালে রহস্যময় স্পিনার অজন্তা মেন্ডিসের জাদুতে ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল শ্রীলঙ্কা। আগামীকালের ফাইনালে আরেক রহস্যময় থিকশানার না থাকাটা তাই ভারতের জন্য আশীর্বাদস্বরূপই বলা যায়।
দুঃসংবাদ আছে ভারতের জন্যও। ফাইনালে অনিশ্চিত তাদের বাঁহাতি স্পিন অলরাউন্ডার অক্ষর প্যাটেল। চোটে পড়েছেন ভারত দলের এই গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। ইতোমধ্যে তার বদলি খুঁজে নিয়েছে দল, আরেক স্পিনার ওয়াশিংটন সুন্দরকে উড়িয়ে এনেছে ভারত।
দুই দলের পরিসংখ্যান চোখ রাঙায়
এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে ভারত সর্বোচ্চ সাতবার ও শ্রীলঙ্কা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ছয়বার শিরোপা জিতেছে। এর মধ্যে ভারত একদিনের ফরম্যাটে ছয়বার ও টি-টোয়েন্টিতে একবার ট্রফি জিতেছে। শ্রীলঙ্কা ওয়ানডেতে পাঁচবার ও টি-টোয়েন্টিতে একবার শিরোপার স্বাদ পেয়েছে।
পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখা গেছে, এশিয়া কাপ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ফাইনালে মোট আটবার মুখোমুখি হয়েছে ভারত-শ্রীলঙ্কা। তাতে ভারত জিতেছে পাঁচবার এবং শ্রীলঙ্কা জিতেছে তিনবার। একদিনের ও টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে ভারত এশিয়া কাপ জয় পেয়েছে সাতবার। ১৯৮৪, ১৯৮৮, ১৯৯০-৯১, ১৯৯৫, ২০১০, ২০১৬ ও ২০১৮ সালে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ভারত। এ ছাড়া আরও তিনবার এশিয়া কাপের ফাইনালে ওঠে টিম ইন্ডিয়া। ১৯৯৭, ২০০৪ ও ২০০৮ সালে খেতাবি লড়াইয়ে হেরে রানার্সআপ হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় টিম ইন্ডিয়াকে। সুতরাং সব মিলিয়ে ভারত মোট ১০ বার এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠেছে, চলতি বছরে সংখ্যাটা হলো ১১।
চ্যাম্পিয়ন হওয়ার নিরিখে ভারতের থেকে খুব বেশি পিছিয়ে নেই শ্রীলঙ্কা। তারা মোট ছয়বার এই আন্তমহাদেশীয় টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। দ্বীপরাষ্ট্রের দলটি এশিয়া চ্যাম্পিয়ন হয় ১৯৮৬, ১৯৯৭, ২০০৪, ২০০৮, ২০১৪ ও ২০২২ সালে। এ ছাড়া আরও ছয়বার এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠে হেরে যায় শ্রীলঙ্কা। তারা রানার্সআপ হয়ে সন্তুষ্ট থাকে ১৯৮৪, ১৯৮৮, ১৯৯০-৯১, ১৯৯৫, ২০০০ ও ২০১০ সালে। সুতরাং মোট ১২ বার এশিয়া কাপের ফাইনালে ওঠে শ্রীলঙ্কা। চলতি বছরে এই সংখ্যাটা পৌঁছেছে ১৩-তে।
অন্যদিকে শুধু একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ বিচার করা হলে দেখা যাবে সেখানে এগিয়ে টিম ইন্ডিয়া। দুই দেশের মধ্যে মোট ১৬৬টি ওডিআই ম্যাচ হয়েছে। যার মধ্যে ভারত জিতেছে ৯৭টি এবং শ্রীলঙ্কা জিতেছে ৫৭টি। একটি ড্র এবং বাকি ১১টি ম্যাচ বাতিল হয়েছে।
হেড টু হেডে নজর রাখলে দেখা যাবে, এর আগে এশিয়া কাপে ভারত ও শ্রীলঙ্কা মোট ২২ বার মুখোমুখি হয়েছে। যার মধ্যে ১১ বার জিতেছে ভারত এবং শ্রীলঙ্কার জয়ও ১১ ম্যাচে। গত বছরের এশিয়া কাপের সুপার ফোরে ভারতকে হারিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। এ বছর সেই হারের বদলা নিয়েছে আকাশি জার্সিধারীরা।
তাই সার্বিক পরিসংখ্যান এবং দলীয় শক্তির বিবেচনায় ভারত ফেবারিট হিসেবে মাঠে নামছে আজ। দলটি সব বিভাগেই স্বয়ংসম্পূর্ণ। বিশ্বসেরা ব্যাটিং লাইনআপের পাশাপাশি আক্রমণাত্মক বোলিং। তবে এশিয়ার মঞ্চে শ্রীলঙ্কা বরাবরই অসাধারণ খেলে। গত এশিয়া কাপ তারা যেখান থেকে শেষ করেছে এবার যেন ঠিক সে জায়গা থেকেই শুরু করেছে। শিরোপার লক্ষ্যে উঠেছে ফাইনালেও। দ্বিতীয় সারির এই বোলিং অ্যাটাক নিয়ে টুর্নামেন্টে অনেকটা পথ অতিক্রম করেছে তারা। অধিনায়ক দাসুন শানাকা, কুশল মেন্ডিস, চারিথ আসালঙ্কা, সাদিরা সামারাবিক্রমা আর বোলিংয়ে লেগ স্পিনার মাহিশ থিকশানা, মাহিশা পাথিরানাদের দুর্দান্ত পারফরম্যান্স তাহলে কি আরও একবার চ্যাম্পিয়ন হচ্ছে তারা। কে জানে? গতবারের মতোই হয় কি না। গতবারও আসর শুরুতে তাদের হিসাবের খাতায় রাখেনি কেউ। এখন দেখার অপেক্ষা শ্রীলঙ্কা হারের বদলা নিতে পারে কি না, নাকি রোহিত অ্যান্ড কোম্পানি অষ্টম এশিয়া কাপ শিরোপা শ্রীলঙ্কার মাটি থেকেই ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
নানা নাটকীয়তায় ভরা এশিয়া কাপের ১৬তম আসরের ফাইনাল থেকে আর মাত্র ১ দিন বাকি। শিরোপা ঘরে তোলা লড়াইয়ে আগামীকাল ফাইনালে ভারতের মুখোমুখি হবে শ্রীলঙ্কা। বলতে গেলে ফাইনাল নিয়ে ক্রিকেটপ্রেমীদের যে উচ্ছ্বাস ছিল তা অনেকটাই কমে গেছে পাকিস্তান ফাইনালে না ওঠায়।
এশিয়া কাপের ৩৯ বছরের ইতিহাসে যা হয়নি তা এবার দেখতে চেয়েছিল পুরো ক্রিকেট বিশ্ব। সেটি হলো ভারত-পাকিস্তান ফাইনাল। এক ম্যাচ হাতে রেখে ভারত ফাইনাল নিশ্চিত করতে পারলেও অঘোষিত সেমিফাইনালে শ্রীলঙ্কার কাছে আবার ফাইনালে ওঠা হয়নি পাকিস্তানের। তবে ফাইনাল যে ফাইনালের মতোই হবে সেটা নিশ্চয়ই দেখতে পারবেন দর্শকরা। কেননা লড়াইটা হবে এশিয়া কাপের সর্বোচ্চ চ্যাম্পিয়ন ভারত ও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কার মধ্যে।
এশিয়া কাপে সবসময় ফেভারিট হিসেবে খেলতে নামা ভারত এবারও শিরোপার অন্যতম দাবিদার। তাদের আছে বিশ্বমানের ব্যাটিং লাইন। আইসিসির সর্বশেষ হালনাগাদকৃত র্যাঙ্কিংয়ে সেরা দশে আছে ভারতের তিন ব্যাটার। দুই নম্বরে শুভমান গিল, আটে বিরাট কোহলি আর নয় নম্বরে রোহিত শর্মা। তাছাড়া দারুণ ছন্দে আছেন চোট থেকে ফেরা উইকেটরক্ষক ব্যাটার লোকেশ রাহুল। আছেন মারমুখী ব্যাটার ইশান কিশান। তাদের কেউ একজন দাঁড়াতে পারলে প্রতিপক্ষের জন্য তা হবে ভয়ংকর।
মিডল অর্ডারে আছেন অভিজ্ঞ দুই অলরাউন্ডার হার্দিক পান্ডিয়া ও রবীন্দ্র জাদেজা। তারা ব্যাট কিংবা বল হাতে জ্বলে উঠতে পারেন যে কোনো ম্যাচে। তাদের সঙ্গে বোলিং লাইন সামলাবেন জাসপ্রিত বুমরাহ, মোহাম্মদ সিরাজ, কুলদ্বীপ যাদবের মতো বিশ্বমানের বোলার। তাই সবদিক দিয়েই ফাইনালে এগিয়ে থাকবে ভারত।
অন্যদিকে শ্রীলঙ্কাকেও কোনোভাবে পিছিয়ে রাখা যাবে না। কেননা গত আসরের চ্যাম্পিয়ন তারা। এ ফরম্যাটে সর্বশেষ ১৩ ম্যাচের একটিতে হেরেছে তারা। গত আসরের প্রথম ম্যাচ হারলেও বাকি ম্যাচগুলোতে জিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল তারা। এবারের এশিয়া কাপে তাদের একমাত্র হার সুপার ফোরে ভারতের বিপক্ষে। তাই তারা চাইবে ফাইনালে এই হারের প্রতিশোধ নিতে।
লঙ্কানদের ব্যাটিং লাইনকেও খুব একটা মন্দ বলা যায় না। তাদের আছে কুশল মেন্ডিস, পাথুম নিশাঙ্কা, সাদিরা সামারবিক্রমা, চারিথ আশালাঙ্কার মতো টপ অর্ডার। মিডল অর্ডারে অধিনায়ক দাসুন শানাকা, ধনঞ্জয়া ডি সিলভা কিংবা দুনিথ ওয়েলালাগের মতো অলরাউন্ডার। তারাও যে কোনো ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে সক্ষম।
শ্রীলঙ্কার বোলিং লাইন সব সময়ই প্রতিপক্ষের জন্য ভয়ংকর। তবে চোটের কারণে এবার নেই অভিজ্ঞ ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গাসহ আরও দুই পেসার। তাদের অবর্তমানে মহেশ থিকশিনা, মাথিশা পাথিরানা, প্রোমদ মাদুশানরা যেভাবে লঙ্কানদের এগিয়ে নিয়েছে তা সত্যিই প্রশংসনীয়। তাই ভারতের বিপক্ষে তারাও যে কোনো অঘটন ঘটিয়ে দিতে পারে।
পরিসংখ্যানও সে কথাই বলে। এ পর্যন্ত এশিয়া কাপে ২২টি ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছে ভারত ও শ্রীলঙ্কা। যেখানে ভারতের ১১ জয়ের বিপরীতে শ্রীলঙ্কাও জিতেছে ১১টি ম্যাচে। অর্থাৎ এবারের আসরের ফাইনাল যারা জিতবে তারাই এগিয়ে যাবে।
তাই বলা যায়, এই ফাইনাল দর্শকদের আনন্দ বাড়িয়ে দেবে। দুই দলই চাইবে তাদের সেরা খেলাটা উপহার দিতে। এখন যারা বেশি ভালো খেলবে তারাই জিতবে।
অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ও তাওহিদ হৃদয়ের জোড়া হাফ-সেঞ্চুরির পর টেল-এন্ডারদের দৃঢ়তায় এশিয়া কাপ সুপার ফোর পর্বের শেষ ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে প্রথমে ব্যাট করে ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ২৬৫ রান করেছে বাংলাদেশ। মিডল অর্ডারে সাকিব ৮০ ও হৃদয় ৫৪ রান করেন। ব্যাটিং অর্ডারে নিচের দিকে নাসুম আহমেদ ৪৪, মাহেদি হাসান অপরাজিত ২৯ ও অভিষিক্ত তানজিম হাসান অপরাজিত ১৪ রান করেন। এখন ২৬৬ রানের টার্গেটে ব্যাটিং করছে ভারত।
কলম্বোর আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে শুক্রবার নিয়মরক্ষার ম্যাচে টসে ভারতের বিপক্ষে হেরে প্রথমে ব্যাটিংয়ের সুযোগ পায় বাংলাদেশ। পাঁচটি পরিবর্তন নিয়ে সাজানো একাদশে দলের হয়ে ইনিংস শুরু করেন টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচে অভিষেক হওয়া তানজিদ হাসান ও লিটন দাস।
প্রথম দুই ওভারে তিনটি চার মেরে ইনিংসের যাত্রা করেন তানজিদ। তৃতীয় ওভারের প্রথম বলে পেসার মোহাম্মদ সামির বলে বোল্ড হন ওপেনিংয়ে ফেরা লিটন। ২ বল খেলেও রানের খাতা খুলতে পারেননি তিনি।
পরের ওভারের প্রথম বলে শারদুলের বলে ইনসাইড এজ বোল্ড হয়ে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন অভিষেক ম্যাচে গোল্ডেন ডাকের মালিক তানজিদ। ১২ বলে ১৩ রান করেন তিনি।
তিন নম্বরে নেমে সুবিধা করতে পারেননি এনামুল হক। শারদুলের বলে পুল করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ১১ রানে ৪ রান করা এনামুল হক বিজয় ক্যাচ দিলে দলীয় ২৮ রানে ৩ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
পাঁচ নম্বরে নামেন আগের তিন ম্যাচে ওপেনার হিসেবে নামা মেহেদি হাসান মিরাজ। শারদুলের করা দশম ওভারে দু’বার জীবন পান তিনি। জীবন পেয়েও প্যাটেলের শিকার হয়ে ২৮ বলে ১৩ রানের বেশি করতে পারেননি তিনি।
দলীয় ৫৯ রানে মিরাজের বিদায়ের পর বড় জুটির চেষ্টা করেন অধিনায়ক সাকিব ও তাওহিদ হৃদয়। উইকেটে সেট হতে সাবধানে খেলতে থাকেন তারা। ২৪তম ওভারে বাংলাদেশের স্কোর ১০০ স্পর্শ করে । ২৬তম ওভারে প্যাটেলের চতুর্থ ডেলিভারিতে ছক্কা মেরে ওয়ানডেতে ৫৫তম হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ৬৫ বল খেলা সাকিব।
হাফ-সেঞ্চুরির পরও বেশ ভালোই খেলছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। কিন্তু ৩৪তম ওভারে শারদুলের বলে ইনসাইড এজ হয়ে বোল্ড হন ৬টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৮৫ বলে ৮০ রান করা সাকিব। পঞ্চম উইকেটে হৃদয়ের সঙ্গে ১১৫ বলে ১০১ রানের জুটি গড়েন ২৮ রানে উইকেটরক্ষক লোকেশ রাহুলের হাতে জীবন পাওয়া সাকিব।
সাকিব ফেরার পরের ওভারে জাদেজার বলে লেগ বিফোর আউট হন সাত নম্বরে নামা শামীম হোসেন (১)। এতে দলীয় ১৬১ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারিয়ে আবারও চাপে পড়ে বাংলাদেশ।
সপ্তম উইকেটে নাসুমের সাথে ৩২ রানের জুটি গড়ার পথে ওয়ানডেতে পঞ্চম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন হৃদয়। অর্ধশতকের পর সামির বলে পুল করে ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন ৫টি চার ও ২টি ছক্কায় ৮১ বলে ৫৪ রান করা হৃদয়।
হৃদয় ফেরার পর বাংলাদেশকে সম্মানজনক জায়গায় নিয়ে গেছেন তিন টেল এন্ডার নাসুম, মাহেদি ও তানজিম। অষ্টম উইকেটে মাহেদি-নাসুম ৩৬ বলে ৪৫ এবং নবম উইকেটে ১৬ বলে অবিচ্ছিন্ন ২৭ রান তুলেন মাহেদি-তানজিম। এতে ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ২৬৫ রানের চ্যালেঞ্জিং সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ।
৬টি চার ও ১টি ছক্কায় নাসুম ৪৫ বলে ৪৪, ৩টি চারে ২৩ বলে মাহেদি অপরাজিত ২৯ এবং ১টি করে চার-ছক্কায় ৮ বলে অপরাজিত ১৪ রান করেন তানজিম। ভারতের শারদুল ৩টি ও সামি ২টি উইকেট নেন।
এশিয়ার বিশ্বকাপখ্যাত ‘এশিয়া কাপ’ প্রায় শেষ পর্যায়ে চলে এসেছে। টুর্নামেন্ট ভারত সব সময়ই ফেভারিটের তকমাটা নিজের করে রেখেছে। এবারও তার ব্যত্যয় ঘটেনি। ইতিমধ্যেই টুর্নামেন্টের ফাইনালে গিয়ে বসে রয়েছে সাতবারের চ্যাম্পিয়নরা। অন্যদিকে সুপার ফোরে বাংলাদেশ দুটি ম্যাচই হেরে লড়াই থেকে ছিটকে গেছে সাকিব বাহিনী। ভারতের বিরুদ্ধে শুক্রবারের ম্যাচটি শুধুই নিয়মরক্ষার।
তবে বাংলাদেশ বিদায় নিলেও তুলনামূলক খর্ব শক্তির দল নিয়ে আলোচনা কিংবা হিসাবের বাইরে থেকেও ফাইনালের দৌড়ে টিকে রয়েছে পাকিস্তানের সঙ্গে সহ-আয়োজক শ্রীলঙ্কা। মনে করে দেখুনতো, এশিয়া কাপ শুরুর আগে একবারের জন্যও কেউ কি ভেবেছিল শ্রীলঙ্কাকে নিয়ে। উত্তরটাও সবার জানা। অবশ্যই না, কেননা শ্রীঙ্কার এই দলটা যেভাবে টুর্নামেন্ট শুরু করেছে তাতে এমন ভাবাটাও দোষের কিছু নয়।
তবে আপনার-আমার ভাবনা-চিন্তায় যা-ই থাকুক না কেন শ্রীলঙ্কা টিকে আছে। শুধু টিকে আছেই নয়, ফাইনালে ওঠার যথেষ্ট সম্ভাবনাও রয়েছে ছয়বারের চ্যাম্পিয়নদের। সে লক্ষ্যেই আজ লঙ্কায় হতে চলেছে লঙ্কাকাণ্ড। ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে গত আসরের চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আজ মাঠে নামছে পাক ফাইটাররা। শ্রীলঙ্কা-পাকিস্তান ম্যাচটি অঘোষিত সেমিফাইনালে পরিণত হয়েছে। কেননা ম্যাচের বিজয়ী দল ফাইনালে উঠবে। তবে যদি বৃষ্টি বা অন্য কোনো কারণে ম্যাচ বাতিল হয়ে যায়, তাহলে অঙ্কটা কী দাঁড়াবে?
এই ম্যাচের জন্য কোনো রিজার্ভ ডে নেই। আজ কলম্বোতে আবার বৃষ্টির সম্ভাবনাও রয়েছে। পূর্বাভাস অনুযায়ী, বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের ৭৩ শতাংশ সম্ভাবনা রয়েছে। বৃষ্টির কারণে কোনো ফলাফল না হলে কী হবে তখন? সেক্ষেত্রে দুই দলের মধ্যে পয়েন্ট ভাগাভাগি হবে এবং সমান পয়েন্টই থাকবে পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কার। তখন দেখা হবে নিট রানরেট আর সেটা হলে পাকিস্তানের কপাল পুড়বে। কারণ বাবর আজমদের (-১.৮৯২) চেয়ে ভালো নিট রান রেট (-০.২০০) রয়েছে শ্রীলঙ্কার। তাই তারা ফাইনালে উঠে যাবে। আসলে ভারতের কাছে ২২৮ রানের বিশাল ব্যবধানে হারের পর পাকিস্তানের নিট রানরেট কমে গেছে। যেটা বড় ধাক্কা হয়েছে বাবরদের জন্য। পাকিস্তান তাই চাইবে, যে কোনো পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার যেন পুরো খেলাটাই হয়। খেলা না হলে লাভবান হবে শ্রীলঙ্কা। তাই আজ পাকিস্তানের প্রতিপক্ষ শুধু শ্রীলঙ্কাই নয়, তার সঙ্গে বৃষ্টিও তাদের তৃতীয় এবং সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ।
যদিও ক্রিকেট বিশ্ব চাইবে ম্যাচটা পাকিস্তান জিতে আরও একবার পাক-ভারত যুদ্ধের দামামা বেজে উঠুক; কিন্তু আপনার-আমার চাওয়াতে কী আসে যায়। ভুলে গেলে চলবে না যে, গত আসরেও এই শ্রীলঙ্কা হিসাবের বাইরে থেকে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। কেননা এই আসর এলেই নিভু নিভু প্রদীপ শিখা থেকে দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে ভারত মহাসাগরের দ্বীপ দেশটি।
কলম্বোর আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় দুপুর ৩টা ৩০ মিনিটে শুরু হবে ম্যাচটি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলতে নামার আগে ইনজুরি আক্রান্ত দুই পেসার হারিস রউফ ও নাসিম শাহকে নিয়ে চিন্তায় পাকিস্তান। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে রউফ কোমর এবং নাসিম ডান কাঁধের ইনজুরিতে পড়েন। তাদের ব্যাকআপ হিসেবে দলে ডাকা হয়েছে অনভিজ্ঞ দুই পেসার শাহনাওয়াজ দাহানি ও জামান খানকে। ফলে আসরের শুরুতে পাকিস্তান যে বিধ্বংসী পেস অ্যাটাক নিয়ে যাত্রা করেছিল সেই বর্শা খানিকটা হলেও ভোঁতা হয়েছে।
যদিও পাকিস্তান স্বয়ংসম্পূর্ণ দল। তাদের যেমন আছে ব্যাটিং লাইন, তেমনি আছে বিশ্বমানের বোলিং লাইনও। ব্যাটিংয়ের অন্যতম ভরসা বাবর আজম। তাকে সঙ্গ দেয়ার জন্য আছেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। অন্যদিকে দুই ওপেনার ফাখার জামান ও ইমাম-উল-হক যদি শুরুটা ভালো করতে পারেন তাহলে রেজাল্ট তাদের পক্ষেও আসতে পারে।
এবার তাকাতে চাই দু’দলের পরিসংখ্যানের দিকে। পরিসংখ্যানে শ্রীলঙ্কার চেয়ে বেশ এগিয়ে পাকিস্তান। এখন পর্যন্ত ১৫৫ বার ৫০ ওভারের ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছে দু’দল। এতে এগিয়ে রয়েছে অবশ্য মেন ইন গ্রিনরাই। ১৫৫ ম্যাচের মধ্যে ৯২টিতে জয় পেয়েছে পাক ইউনিট। অন্যদিকে ৫৮ ম্যাচে জয় সাঙ্গাকারার উত্তরসূরিদের। লঙ্কানদের নিয়ে প্রতিটি লেখায় একটা কথা আমি সব সময়ই বলি আর সেটি হলো- এশিয়ার বিশ্বকাপের মঞ্চটা বেশ পছন্দের শ্রীলঙ্কার। দেখুন না তাদের পাকিস্তানের বিপক্ষে এশিয়া কাপের পরিসংখ্যান। দু’দল এখন পর্যন্ত ১৭ ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছে। এর মধ্যে শ্রীলঙ্কা ১২টিতে জিতেছে আর হেরেছে মাত্র ৫টিতে! কি, চোখ কপালে উঠে গেল। ওঠারই কথা। ব্যবধানটা কিন্তু কম নয়।
গুরুত্বপূর্ণ এ লড়াইটাও আবার লঙ্কানদের ঘরের মাঠে। চেনা কন্ডিশনে এবং আপন মানুষজনের উপস্থিতিতে। তাই বাড়তি সুবিধাও পাবে নিঃসন্দেহে। কলম্বোর গত কয়েকদিনের বৃষ্টির কারণে পিচ কন্ডিশন নিয়ে দু-চার কথা না বললেই নয়। যেহেতু টানা বৃষ্টির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে স্বাভাবিকভাবে আউটফিল্ড স্লো থাকবেই। আর এই পিচে ভারত-শ্রীলঙ্কার ম্যাচের মতো স্পিনাররাই থাকবেন চালকের আসনে। যদিও কলম্বোর পিচ আগে থেকেই স্পিন স্বর্গ। তবে বৃষ্টি সেটিকে আরও প্রকট করেছে। এই দিক থেকে দু’দলই সমানে সমানে। পাকিস্তান যখন পেসারদের ইনজুরি নিয়ে মাথায় হাত দিয়েছিল তখন এমন খবর তাদের জন্য স্বস্তিরই বটে। অন্যদিকে ভারতের বিপক্ষে লঙ্কার স্পিনাররা যেভাবে ম্যাচে ছড়ি ঘুরিয়েছে তাতে লড়াই জমে উঠবে বলার অপেক্ষায় রাখে না। তাই আজ হয়তো দু’দল বাড়তি স্পিনার নিয়েই মাঠে নামবে। এছাড়া মাঠে রান তাড়া করে জেতাটা কঠিন হবে, যা এবারের এশিয়া কাপে শতভাগ প্রমাণিত। বাংলাদেশ বলেন কিংবা পাকিস্তান অথবা শ্রীলঙ্কা- নিজেই ছোট লক্ষ্যও তাড়া করে জিততে পারেনি। তাই লক্ষ্য থাকবে টসের ওপরও। টস জেতাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, এর ওপর নির্ভর করছে ম্যাচের পরিণতি।
গত এশিয়া কাপ শ্রীলঙ্কা যেখান থেকে শেষ করেছে। এবার যেন ঠিক সে জায়গা থেকেই শুরু করেছে। শিরোপার লক্ষ্যে বেশ ভালোভাবে এগোচ্ছে দলটি। দ্বিতীয় সারির এই বোলিং অ্যাটাক নিয়ে টুর্নামেন্টে অনেকটা পথ অতিক্রম করেছে তারা। এখন দেখার পালা, গতবারের প্রতিশোধ নিয়ে পাকিস্তান ফাইনালে ভারতের মুখোমুখি হতে পারে কি না?
রিজার্ভ ডেতে নেমে খেই হারাল পাকিস্তান। আগের দিনের দুই অপরাজিত ব্যাটার যেখানে শেষ করেছিলেন সেই ছন্দেই শুরু করেন কোহলি-রাহুল। এ দুজনের সামনে কোনো প্রতিরোধই গড়তে পারেননি নাসিম শাহ-শাহিন আফ্রিদিরা। শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থেকে অবিচ্ছিন্ন ২৩৩ রানের জুটি গড়েই দলকে বড় পুঁজি এনে দেন এ দুই ব্যাটার।
গতকাল সোমবার নির্ধারিত ৫০ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে ৩৫৬ রান সংগ্রহ করেছে ভারত। রাহুল ১০৬ বল খেলে ১২ চার ও ২ ছক্কায় ১১১ এবং কোহলি ৯৪ বলে ৬টি চার ও ২ ছক্কায় ১২২ রান করেন। জিততে হলে পাকিস্তানকে করতে হবে ৩৫৭ রান।
উইকেট কিছুটা ভেজা থাকলে পেসাররা বাড়তি সুবিধা পায়, তবে কলম্বোতে আজ সেটার সিকি ভাগও কাজে লাগাতে পারেননি পাকিস্তানি পেসাররা। উল্টো লাইন-লেন্থ হারিয়ে নিজেদের খুঁজেছেন শাহিন আফ্রিদি-নাসিম শাহরা। সেই সুযোগ দুই হাত ভরে নিয়েছেন বিরাট কোহলি-লোকেশ রাহুল।
এর আগে গত রোববার কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে বজ্রসহ বৃষ্টির শঙ্কা মাথায় রেখেই টস জিতে ভারতকে আগে ব্যাটিংয়ে পাঠান পাক অধিনায়ক বাবর। সেদিন ব্যাট করতে নেমে দুর্দান্ত শুরু পেয়েছিল ভারত। প্রথম পাওয়ার প্লেতে কোনো উইকেট না হারিয়েই ৬১ রান সংগ্রহ করে তারা। এশিয়া কাপের এবারের আসরে পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম দেখায় ব্যর্থ ছিল ভারতের টপ অর্ডার। গ্রুপ পর্বের সেই ম্যাচে পাত্তাই পাননি রোহিত শর্মা-বিরাট কোহলিরা। সেই প্রতিশোধের পণ করেই যেন আজ মাঠে নেমেছিলেন দুই ওপেনার শুভমান গিল ও রোহিত! দুই ওপেনার ঝোড়ো ফিফটিও করেন। এর পেছনে পাকিস্তানের বাজে ফিল্ডিংও কম দায়ী নয়। শুরু থেকে মিস ফিল্ডিং আর ক্যাচ মিসের কারণে এমন উড়ন্ত সূচনা পায় রোহিত বাহিনী।
উড়ন্ত সূচনার পরও ম্যাচের একপর্যায়ে স্বরূপে ফেরেন পাক পেসাররা। দ্রুত দুই ওপেনারকে তুলে নেন। পাক পেসাররা ছন্দে ফেরার পর ২৫তম ওভারের প্রথম বলের পরই হানা দেয় বেরসিক বৃষ্টি। এই সময়ে ২৪.১ ওভার শেষে ভারতের সংগ্রহ ২ উইকেট হারিয়ে ১৪৭ রান। ৮ রান নিয়ে উইকেটে ছিলেন বিরাট কোহলি। অপর অপরাজিত ব্যাটার লোকেশ রাহুলের সংগ্রহ ১৭ রান। এরপর আর খেলা মাঠে গড়ায়নি।
রিজার্ভ ডেতে খেলতে নেমে মারমুখী ব্যাটিং করতে থাকেন আগের দিনের দুই অপরাজিত ব্যাটার রাহুল ও কোহলি। বলা যায় এই ব্যাটারের কাছে অসহায় আত্মসর্মপণ করে পাক বোলিং ইউনিট। এদিন দ্রুততম ১৩ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন বিরাট কোহলি। এই রেকর্ড গড়ার পর পরই ওয়ানডেতে নিজেদের ৪৭তম সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন তিনি। এর আগে ক্যারিয়ারের ৬ষ্ঠ সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন লোকেশ রাহুল।
পাকিস্তানের পক্ষে শাহিন আফ্রিদি ও শাদাব খান ১টি করে উইকেট পান। দুই দলের মুখোমুখি লড়াইয়ে এটাই সর্বোচ্চ স্কোর। এর আগে ২০০৫ সালে নিজেদের মাঠে ৯ উইকেটে ৩৫৬ রান করেছিল ভারত।