মিরপুরে চলছে বৃষ্টির লুকোচুরি। প্রথম ধাপে প্রায় দুই ঘণ্টা বৃষ্টি নামার পর দ্বিতীয় ধাপে এক ঘণ্টা ৪০ মিনিটের মতো। মধ্যখানে বৃষ্টি বন্ধ হয়ে একবার খেলা শুরুর কথা থাকলেও বেরসিক বৃষ্টি আবার অপেক্ষা বাড়ায়। এতে আর মাঠে নামা হয়নি ক্রিকেটারদের। তবে শেষ পর্যন্ত বৃষ্টির কাছে হার মানে বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড প্রথম ওয়ানডে ম্যাচ। ম্যাচটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে রেফারি। রাত ৮টা ২৬ মিনিটের দিকে আসে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা। বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ডের প্রথম কোনো ম্যাচ পরিত্যক্ত হলো। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে পরিত্যক্ত হওয়া মাত্র দ্বিতীয় ওয়ানডে এটি।
ক্রিকেটের চিরচেনা শত্রু বৃষ্টির শঙ্কা মাথায় নিয়েই আজ শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে বেলা ২টায় দ্বিতীয় ওয়ানডেতে নিউজিল্যান্ডের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। বরাবরের মতো টসের দিকে চোখ থাকবে দুই দলের। দুই দলই চায় আজকের ম্যাচটা জিতে সিরিজ জয়ের দিকে এগিয়ে যেতে। সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে টস জিতে আগে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক লিটন কুমার দাস।
বাংলাদেশ এবং নিউজিল্যান্ড উভয় দল তিন ম্যাচের এই সিরিজটিকে রিজার্ভ বেঞ্চ পরখ করে দেখার মিশন হিসেবে নিয়েছে। উভয় দলই নিজেদের সেরা খেলোয়াড়দের বিশ্রামে রেখে নামছে ম্যাচে। নিউজিল্যান্ড দলের বেশির ভাগ ক্রিকেটার অপরিচিত হলেও বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তা নয়। ১৫ জনের সবারই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে।
এদিক থেকে বাংলাদেশ দলকে এগিয়ে রাখতে হবে। এই সিরিজ দিয়ে তামিম ইকবাল ফিরছেন। আফগানিস্তান সিরিজে হঠাৎ অবসর ঘোষণা, প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার, কোমরের চোটের কারণে এশিয়া কাপ থেকে ছুটি নেয়া এবং পুনর্বাসন সম্পন্ন করে নিউজিল্যান্ড সিরিজ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরেছেন বাঁহাতি এ ওপেনার। নিউজিল্যান্ড সিরিজের জন্য বাংলাদেশ স্কোয়াডে ফিরে এসেছেন অলরাউন্ডার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও। মাহমুদউল্লাহ দীর্ঘ অফ ফর্মের কারণে দলের বাইরে ছিলেন।
নিউজিল্যান্ড সিরিজে বিশ্রাম দেয়া হয়েছে নিয়মিত অধিনায়ক সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, মেহেদি হাসান মিরাজ এবং তিন পেসার তাসকিন আহমেদ, হাসান মাহমুদ ও শরিফুল ইসলামকে। সাকিবের অনুপুস্থিতিতে প্রথম ওয়ানডের মতো দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও বাংলাদেশ দলের নেতৃত্ব ব্যাটার লিটন দাস। বাংলাদেশ দল এবং তাঁর জন্য এ সিরিজটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, টাইগার রিজার্ভ বেঞ্চে একজনও ভালো মানের বিকল্প ওপেনার নেই। নাঈম শেখ টানা ম্যাচ খেলে রান করতে পারেননি। এনামুল হক বিজয় টিম ম্যানেজমেন্টের পরিকল্পনায় নেই।
প্রথম ম্যাচ যেহেতু বৃষ্টিতে ভেসে গেছে। তাই আজকের ম্যাচ দিয়ে এশিয়া কাপের ব্যর্থতা ভুলে ঘুরে দাঁড়াতে চায় বাংলাদেশ। আর সে লক্ষ্যে ব্যাটসম্যানদেরকেই দায়িত্বটা নিতে হবে। উইকেট কামড়ে পড়ে থাকলে রান আসবেই এই উইকেটে- আগের দিন তা দেখিয়েছেন ইয়াং-নিকোলস। পরিকল্পনা হয়ে গেছে, এখন প্রয়োগ করতে হবে মাঠে। বড় পার্টনারশিপ গড়ে তুলতে পারলে হয়তো যেকোনো কিছুই সম্ভব।
এবার একটু পরিসংখ্যানের দিকে মনোযোগ দেয়া যাক। বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড এ পর্যন্ত ৩৯টি এক দিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের জয় ১০টিতে অন্যদিকে ব্ল্যাক ক্যাপসদের জয় ২৮টিতে। আর এই সিরিজের প্রথম ম্যাচটি পরিত্যক্ত হয়েছে। বাংলাদেশের ১০ জয়ের মধ্যে ৮ জয় দেশের মাটিতে। আর দুটি জয় নিরপেক্ষ ভেন্যুতে। অ্যাওয়েতে বাংলাদেশ কোনো ম্যাচ জয়লাভ করতে পারেনি।
নিউজিল্যান্ড বাংলাদেশের এই কন্ডিশনে ধাতস্থ হওয়ার পর্যাপ্ত সুযোগ পায়নি। এ কন্ডিশনে খেলাটা বরাবরই কঠিন তাদের জন্য। প্রথম ওয়ানডেতে কোনো প্রতিরোধই গড়তে পারেনি তারা। তাই নজর থাকবে আজকের ম্যাচে। ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয়ে। তবে কন্ডিশন যাই হোক না কেন, কিউই ফাস্ট বোলাররা কতটা ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে, সেটি সবসময় হাড়ে হাড়েই টের পেয়েছেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। ১৫০ কিলোমিটার গতিবেগের বল ও সুইং সামলাতে তালগোল পাকিয়ে হিমশিম খেয়েছেন সবাই।
যদিও মিরপুরে শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে খেলা হওয়ায় কিউইদের বিপক্ষে ‘হোম অ্যাডভান্টেজ’ নেওয়ার চেষ্টা থাকবে বাংলাদেশের। তিনজন স্পিনার আর দুই পেসার রেখে একাদশ সাজাতে পারেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান কোচ নিক পোথাস। ডান ও বাঁহাতি অফ স্পিনারের সঙ্গে রাখা হতে পারে লেগি রিশাদ হোসেনকে। কারণ, তাঁকেও ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করতে হবে। বিশ্বকাপেও বিকল্প বোলার কোটায় রাখা হতে পারে তাঁকে। বৃষ্টিভেজা কন্ডিশনে তিন পেসার নিয়েও খেলতে পারেন স্বাগতিকরা। পরীক্ষা আর পরখ করে দেখার সিরিজ হলেও ফলাফল কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। বিশেষ করে বাংলাদেশের জয় চাই-ই চাই।
আর প্রেডিকশনের কথা যদিও বলতেই হয়, তাহলে আমি বাংলাদেশের জয় দেখছি। যদিও মাঠের কাজটা টাইগারদের করে দেখাতে হবে। মাঠে সব বিভাগ ঠিকঠাক পারফর্ম না করলে অতীত পরিসংখ্যান, চেনা দর্শক আর কন্ডিশনের কিছুই যায়-আসে না।
আসলে দেশের মাটিতে নিউজিল্যান্ডের কাছে গত ১৩ বছরে কোনো ওয়ানডে ম্যাচে হারেনি বাংলাদেশ। কিংবদন্তি ড্যানিয়েল ভেট্টরিকে দিয়ে হোয়াইটওয়াশের শুরু, পরে কাইল মিলসেকে একই ফল উপহার দিয়েছেন মুশফিকুর রহিমরা। বিশ্বকাপ দলের আট ক্রিকেটারকে বিশ্রামে রেখে খেলতে আসা নিউজিল্যান্ড দলের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক লকি ফার্গুসনকেও কি সেই ঐতিহ্যের স্বাদ দিতে চলেছে বাংলাদেশ? সেটি আজ দেখার পালা।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচে টস জিতে আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ।
মঙ্গলবার সিলেটের লাক্কাতুরায় অবস্থিত আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে নতুন অধিনায়কের অধীনে শুরু হচ্ছে বাংলাদেশের নতুন চ্যালেঞ্জ।
নতুন টেস্ট অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত হোসেনের নেতৃত্বে এই ম্যাচে নতুন এক ক্রিকেটারের অভিষেকও দেখছে বাংলাদেশ। সিনিয়র ক্রিকেটারদের অনুপস্থিতিতে এই টেস্টে জায়গা পাচ্ছেন শাহাদাৎ হোসেন দিপু। দলে ওপেনার হিসেবে আছেন মাহমুদুল হাসান জয় এবং জাকির হোসেন। আর লিটন দাসের স্থলে উইকেটরক্ষকের দায়িত্ব পালন করবেন নুরুল হাসান সোহান।
বাংলাদেশ একাদশে আরও রয়েছেন— মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাইজুল ইসলাম, শরীফুল ইসলাম ও নাঈম হাসান।
এদিকে নিউজিল্যান্ড একাদশে রয়েছেন— টিম সাউদি (অধিনায়ক), ডেভন কনওয়ে, টম ল্যাথাম, কেইন উইলিয়ামসন, হেনরি নিকোলস, ড্যারিল মিচেল, টম ব্লান্ডেল (উইকেটকিপার), গ্লেন ফিলিপস, কাইল জেমিসন, ইশ সোধি ও এজাজ প্যাটেল।
রাজধানীর শ্যামলীতে সড়ক ও জনপথ এলাকায় বৈশাখী পরিবহনের একটি বাসে অগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। সোমবার বিকেল পৌনে ৪টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। পরে স্থানীয় জনতা গিয়ে আগুন নির্বাপণ করে।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের গণমাধ্যম কর্মকর্তা শাহজাহান শিকদার বলেন, ‘বিকেল পৌনে ৪টার দিকে শ্যামলী সড়ক ও জনপথ এলাকায় দুর্বৃত্তরা একটি বাসে আগুন দিয়েছে বলে ফায়ার সার্ভিসে সংবাদ দেয়া হয়। খবর পেয়ে খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কল্যাণপুর স্টেশনের দুটি ইউনিট পুলিশ প্রটেকশনে ঘটনাস্থলে ৩টা ৫১ মিনিটের সময় পৌঁছে। তবে এর আগেই স্থানীয় জনতা আগুন নিভিয়ে ফেলে।’
এদিকে নির্বাচনের তফসিল বাতিল, সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় সরকার গঠন এবং কারাবন্দি নেতাদের মুক্তির দাবিতে আরও দুই দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। কর্মসূচি অনুযায়ী, আগামী বুধবার সকাল ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত অবরোধ কর্মসূচি পালিত হবে। এছাড়া, বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত হরতাল পালিত হবে।
মিয়ানমার ও অস্ট্রেলিয়ার দুই দলের মধ্যকার এএফসি কাপের একটি ম্যাচ নিরপেক্ষ ভেন্যু থাইল্যান্ডে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। মিয়ানমারের ফুটবল দলকে ক্যানরেরার ভিসা না দেওয়ায় ম্যাচটির পুর্ব নির্ধারিত ভেন্যু সরিয়ে নেয়া হয়েছে বলে সোমবার জানিয়েছে ফুটবল অস্ট্রেলিয়া। খবর এএফপির।
অস্ট্রেলিয়ান ক্লাব ম্যাকার্থারের সঙ্গে দ্বিতীয় সারির আঞ্চলিক টুর্নামেন্টে বৃহস্পতিবার শান ইউনাইটেডের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কথা সিডনিতে।
তবে ফুটবল অস্ট্রেলিয়া বলেছে, কর্মকর্তারা সফরকারী মিয়ানমার দলকে ভিসা দিতে অস্বীকার করায় ‘অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ম্যাচটি আয়োজনের কোন কার্যকর উপায় নেই।’ তারা জানায়, ম্যাচটি থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককের বিজি স্টেডিয়ামে স্থানান্তর করা হয়েছে।
তবে ভিসা না দেয়ার কারণ ব্যাখ্যা করেনি ফুটবল অস্ট্রেলিয়া। এ বিষয়ে অস্ট্রেলিয়ার হোম অ্যাফেয়ার্সের মন্তব্য চাওয়া হলেও এতে সাড়া দেয়নি। এর আগে মানবাধিকার সংগঠনগুলো শান ইউনাইটেড এবং মিয়ানমারের সামরিক জান্তার মধ্যে কথিত সম্পর্ক নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল।
এদিকে গত অক্টোবরে সরকারি পরামর্শ উপেক্ষা করে মিয়ানমারে খেলতে যাওয়ায় ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছিল ম্যাকার্থার।
তিন ফরম্যাটের ক্রিকেটে টি-টোয়েন্টিই এখন বেশি জনপ্রিয়। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট। যে কারণে ওয়ানডে ফরম্যাটে ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা চলছিও ওয়ানডে বিশ্বকাপ চলাকালে। ফরম্যাটটিকে বাঁচিয়ে রাখতে এবার নতুন তত্ত্ব নিয়ে এসেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার কিংবদন্তি তারকা এবি ডি ভিলিয়ার্স। তিনি দুটি টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে, অর্থাৎ ৪০ ওভারে ওয়ানডে ম্যাচ নামিয়ে আনার পরামর্শ দিয়েছেন।
নিজের ইউটিউব চ্যানেলে এ প্রসঙ্গে মিস্টার থ্রি-সিক্সটি ডিগ্রি খ্যাত তারকা বলেন, ‘আমি (এবারের) বিশ্বকাপে অনুভব করেছি- খেলাটা আমার কাছে ধীরগতির লেগেছে। ৫০ ওভারের খেলাটাকে ৪০ ওভারের খেলায় রূপান্তর করা যেতে পারে। শুধু খেলাটা একটু ছোট করা আরকি। হয়তো দুটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ হতে পারে, যেখানে প্রথম টি-টোয়েন্টির পর বিরতি থাকবে। প্রথম ম্যাচ শেষে রানগুলো যোগ হবে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচে।’
একই সঙ্গে বিরতির পর একাদশ পরিবর্তনের সুযোগ রাখারও পরামর্শ ভিলিয়ার্সের, ‘দ্বিতীয় ম্যাচে দলগুলো সুযোগ পাবে দলে বদল আনার। তো আপনি ১৫ জনের স্কোয়াড বাছাই করবেন। সেখান থেকে দ্বিতীয় ম্যাচে ধরুন, বাড়তি স্পিনার নামালেন। প্রথম ম্যাচ শেষে ৩০ রান পিছিয়ে থাকলে আপনি হয়তো অতিরিক্ত ব্যাটার নামিয়ে আগ্রাসী হলেন। আমার মনে হয়, এটা চমৎকার দৃশ্য হতে পারে।’
মোটকথা ওয়ানডে ফরম্যাটে অবশ্যই পরিবর্তন দরকার বলে মত সাবেক প্রোটিয়া অধিনায়কের, ‘এমনকি দ্বিতীয় ম্যাচের জন্য আরেকটা টসও হতে পারে। অথবা এভাবে হতে পারে যে, যারা প্রথমে ব্যাট করেছে, তাদের দ্বিতীয় ম্যাচে পরে ব্যাট করতেই হবে। আমার মনে হয়, এটার মধ্যে ভালো রোমাঞ্চ আছে। আমি অনুভব করি, আইসিসির কিছু না কিছু বদল আনা দরকার ৫০ ওভারের ক্রিকেটে। আমি মনে করি, ফরম্যাটটা বড় চাপের মধ্যে আছে। ২০ ওভারের খেলা বিনোদনদায়ক। সবাই টি-টোয়েন্টি ভালোবাসে। ৫০ ওভারের বদলে দুইটা টি-টোয়েন্টির জায়গা আছে তাই। ৫০ ওভারের ফরম্যাট থাকবে, ওয়ানডে বিশ্বকাপও থাকবে, কিন্তু এভাবে কিছু বিনোদন আনা গেল। আমি মনে করি, এটা দর্শকদের জন্য খুবই বিনোদনদায়ক হবে। দুই টি-টোয়েন্টির মাধ্যমে সময় কিছুটা কমিয়েও আনা যাবে। সৃজনশীল হোন, ক্রিকেটবিশ্বে এখন সৃজনশীল হওয়ার সময়।’
এর আগে ওয়ানডে ফরম্যাটকে দুভাগে ভাগ করার পরামর্শ দিয়েছিলেন ভারতীয় কিংবদন্তি শচীন টেন্ডুলকার, রবি শাস্ত্রী সহ আরও অনেকে।
শেষ হয়েছে ওয়ানডে বিশ্বকাপের ১৩তম আসর। এবারের আসরে স্বাগতিক ভারতকে হারিয়ে ষষ্ঠবারের মতো শিরোপা ঘরে তুলেছে অস্ট্রেলিয়া। বিশ্বকাপ শেষে প্রতিবারের মতো সেরা ক্রিকেটারদের নিয়ে এমন একাদশ ঘোষণা করেছে আইসিসি। সাবেক ও বর্তমান অনেক ক্রিকেটারই নিজের পছন্দের একাদশ ঘোষণা করেছেন। সেগুলোর মধ্যে কোনো একাদশেই জায়গা হয়নি বাংলাদেশের কোনো ক্রিকেটারের। তবে ইংল্যান্ডের পেসার জেমস অ্যান্ডারসনের পছন্দের একাদশে জায়গা পেয়েছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
আইসিসির একাদশের অধিনায়কত্ব ছিল রোহিত শর্মার কাঁধে। সেই একাদশে রোহিতসহ ভারতের ক্রিকেটার ছিলেন ছয়জন। অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটার ছিলেন কেবল দুজন। তবে ইংলিশ পেসার অ্যান্ডারসন স্কোয়াড তৈরি করেছেন ভিন্ন উপায়ে।
বিশ্বকাপে খেলা দশ দলের দশ ক্রিকেটারকে একাদশে রেখেছেন তিনি। কেবল ফাইনালে ওঠা ভারত থেকেই দুজনকে রেখেছেন নিজের একাদশে। আসরের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ও ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট নির্বাচিত হওয়া বিরাট কোহলির পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি উইকেট নেয়া মোহাম্মদ শামিকেও দলে নিয়েছেন তিনি।
এদিকে বাংলাদেশ থেকে মাহমুদউল্লাহকেই বেছে নিয়েছেন এই পেসার। চলতি বিশ্বকাপে ব্যাট হাতে অসাধারণ ফর্মে ছিলেন মাহমুদউল্লাহ। বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দল ব্যর্থ হলেও নিজের পারফরম্যান্সে আলোচনায় ছিলেন এই অভিজ্ঞ ক্রিকেটার। সাত ইনিংসে প্রায় ৫৫ গড়ে তার ব্যাট থেকে আসে ৩২৮ রান। এবারের আসরে বাংলাদেশের হয়ে একমাত্র সেঞ্চুরিটিও করেন তিনি।
এ ছাড়াও আছেন মোহাম্মদ রিজওয়ান, ডেভিড মালানের মতো ক্রিকেটাররাও। অস্ট্রেলিয়া থেকে আছেন শুধু অ্যাডাম জাম্পা।
অ্যান্ডারসনের বিশ্বকাপ সেরা একাদশ: ডেভিড মালান (ইংল্যান্ড), রাচিন রবীন্দ্র (নিউজিল্যান্ড), বিরাট কোহলি (ভারত), মোহাম্মদ রিজওয়ান (পাকিস্তান), হাশমতউল্লাহ শহীদি (আফগানিস্তান), মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (বাংলাদেশ), স্কট এডওয়ার্ডস (নেদারল্যান্ডস), দিলশান মাদুশাঙ্কা (শ্রীলঙ্কা), জেরাল্ড কোয়েটজে (সাউথ আফ্রিকা), অ্যাডাম জাম্পা (অস্ট্রেলিয়া) ও মোহাম্মদ শামি (ভারত)।
স্বাগতিক বাংলাদেশের বিপক্ষে দুই টেস্ট সিরিজ খেলতে গত সোমবার ঢাকা এসে পৌঁছে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট দল। ঢাকায় একটি হোটেলে অবস্থান করে গতকাল সিলেটের বিমান ধরে কিউইরা। বর্তমানে প্রথম টেস্টের ভেন্যু সিলেটে অবস্থান করছে নিউজিল্যান্ড দল। আজ বৃহস্পতিবার থেকে অনুশীলন শুরু করবে নিউজিল্যান্ড দল। প্রথম টেস্ট ম্যাচের আগে একটি দুই দিনের প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার কথা ছিল কিউইদের। কিন্তু নিউজিল্যান্ড বোর্ডের অনুরোধে সেই প্রস্তুতি ম্যাচটি বাতিল করা হয়। কারণ দীর্ঘ সময় ধরে বিশ্বকাপে অংশ নেয়া খেলোয়াড়দের বিশ্রাম দিতে চায় তারা। আগামী ২৮ নভেম্বর সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্রথম টেস্ট এবং ৬ ডিসেম্বর মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শুরু হবে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট ম্যাচ।
বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ দিয়ে ২০২৩-২০২৫ আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন চক্র শুরু হবে। শক্তিশালী দল নিয়ে বাংলাদেশে এসেছে নিউজিল্যান্ড। টিম সাউদির নেতৃত্বাধীন ১৫ সদস্যের দলে স্পিনার এজাজ প্যাটেল, ইশ সোদি, মিচেল স্যান্টনার, রাচিন রবীন্দ্র ও গ্লেন ফিলিপসকে রাখা হয়েছে। মূলত কন্ডশিন বিবেচনায় তাদের দলে নেয়া হয়েছে। বাঁহাতি স্যান্টনার বিশ্বকাপে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখান। ২০২১ সালে শেষ টেস্ট ম্যাচ খেলেছিলেন তিনি। অপরদিকে, রাচিন রবীন্দ্রের জন্য অবিস্মরণীয় বিশ্বকাপ ছিল। ২০২১ সালে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক হওয়ার পর আবার দলে ফিরলেন রাচিন। তবে ট্রেন্ট বোল্টকে পায়নি নিউজিল্যান্ড। তাদের পেস ইউনিটের নেতৃত্বে থাকবেন লুক রঞ্চি। বাংলাদেশের বিপক্ষে নিউজিল্যান্ডের শেষ টেস্ট সিরিজ ১-১ তে ড্র হয়েছিল।
এদিকে, বিশ্বকাপ চলাকালীন ইনজুরিতে পড়ায় নিয়মিত অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের অনুপস্থিতিতে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেবেন নাজমুল হোসেন শান্ত। এক মাসের জন্য পিতৃত্বকালীন ছুটি পেয়েছেন গত জুনে আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের শেষ টেস্টে নেতৃত্ব দেয়া লিটন দাস। সিরিজে খেলছেন না অভিজ্ঞ ওপেনার তামিম ইকবাল। ইনজুরির কারণে সিরিজ থেকে ছিটকে গেছেন দুই পেসার তাসকিন আহমেদ এবং এবাদত হোসেন। অন্যদিকে, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের জন্য পুনরায় বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের টিম ম্যানেজার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন তামিমের বড় ভাই নাফিস ইকবাল। গত সেপ্টেম্বরে বিশ্বকাপের আগে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের শেষ ওয়ানডে দ্বিপাক্ষিক সিরিজে টিম ম্যানেজার হিসেবে কাজ করেছিলেন টাইগারদের সাবেক ওপেনার নাফিস। ঐ সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে চলাকালীন হঠাৎ ড্রেসিংরুম ছেড়ে চলে যান নাফিস। পরে জানা যায়, বিশ্বকাপের জন্য বাংলাদেশ দলের অংশ থেকে বাদ দেয়া হয় তাকে।
নিউজিল্যান্ড দল: টিম সাউদি (অধিনায়ক), টম ব্লাডেল (উইকেটরক্ষক), ডেভন কনওয়ে, কাইল জেমিসন, টম লাথাম, ড্যারিল মিচেল, হেনরি নিকোলস, আজাজ প্যাটেল, গ্লেন ফিলিপস, রাচিন রবীন্দ্র, মিচেল স্যান্টনার, ইশ সোধি, কেন উইলিয়ামসন, উইল ইয়ং ও নিল ওয়াগনার।
বিশ্বকাপের ফাইনালে হারের ক্ষত ভুলতে না ভুলতেই আবারও সেই অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হচ্ছে ভারত। যদিও ওয়ানডে নয়, হবে পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ। এই সিরিজের জন্য ঘোষিত দুই দলের স্কোয়াডেই রয়েছে চমক। ভারতে নেতৃত্ব দেবেন সুরিয়াকুমার যাদব। আর অস্ট্রেলিয়ার নেতৃত্ব দেবেন ম্যাথু ওয়েড।
বোর্ড অব কন্ট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়া (বিসিসিআই) জানিয়েছে, সব ম্যাচেই নেতৃত্বে দেবেন যাদব। তবে প্রথম তিন ম্যাচে ভারতের সহঅধিনায়কত্বের দায়িত্ব পালন করবেন রুতুরাজ গায়কোয়াড়কে। সিরিজের সেই তিনটি ম্যাচে বিশ্রামে থাকলেও শেষ দুই ম্যাচে দলের সঙ্গে যোগ দেবেন শ্রেয়াস আইয়ার। একই সঙ্গে শেষ দুটি ম্যাচে ভারতের সহঅধিনায়কের দায়িত্ব পালন করবেন তিনি।
বিশ্বকাপ দলের তিন ক্রিকেটার আছেন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এই সিরিজে। সুরিয়াকুমার ছাড়া বাকি দুইজন হলেন ইশান কিশান এবং প্রসিধ কৃষ্ণা। কিশান বিশ্বকাপে ম্যাচ খেললেও এবারের বিশ্বকাপে হার্দিক পান্ডিয়ার ইনজুরিতে স্কোয়াডে জায়গা করে নেয়া কৃষ্ণা একটি ম্যাচও খেলেননি। তাদের সঙ্গে যোগ দিচ্ছেন চোটের কারণে বিশ্বকাপ না খেলা অক্ষর প্যাটেল। বিশ্রামে আছেন রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলিরা। চোটের কারণে নেই হার্দিক পান্ডিয়া।
অন্যদিকে বিশ্বকাপ খেলা নিয়মিত কয়েকজন তারকাকে বিশ্রাম দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। তারা হলেন নিয়মিত অধিনায়ক প্যাট কামিন্স, জশ হ্যাজেলউড, ক্যামেরন গ্রিন ও মিচেল মার্শ। ছুটি নিয়েছেন ডেভিড ওয়ার্নার। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া একটি বিবৃতিতে জানিয়েছে, সদ্য বিশ্বকাপ জেতা ওয়ার্নাররা দেশে ফিরে ছুটি কাটাবেন।
এই সিরিজে অস্ট্রেলিয়াকে নেতৃত্ব দেবেন ম্যাথু ওয়েড। স্কোয়াডে অবশ্য রাখা হয়েছে ফাইনালের নায়ক ট্রাভিস হেডকে। গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, স্টিভেন স্মিথ, মার্কাস স্টইনিস, অ্যাডাম জাম্পারাও আছেন এই সিরিজে। শেষ মুহূর্তে ওয়ার্নার ছুটি চাওয়ায় দলে নেয়া হয়েছে ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার পেস বোলিং অলরাউন্ডার অ্যারন হার্ডিকে।
আগামী ২৩ নভেম্বর বিশাখাপত্তমে প্রথম টি-টোয়েন্টি খেলতে নামবে ভারত-অস্ট্রেলিয়া। ২৬ নভেম্বর থ্রিবান্দামে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি, ২৮ নভেম্বর গৌহাটিতে তৃতীয়, ১ ডিসেম্বর রায়পুরে চতুর্থ এবং ৩ ডিসেম্বর বেঙ্গালুরুতে পঞ্চম ও শেষ টি-টোয়েন্টি খেলবে দল দুটি।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজে ভারতের টি-টোয়েন্টি স্কোয়াড: সুরিয়াকুমার যাদব (অধিনায়ক), রুতুরাজ গায়কোয়াড়, ইশান কিশান, ইয়াশভি জায়সাওয়াল, তিলক ভার্মা, রিংকু সিং, জিতেশ শর্মা, ওয়াশিংটন সুন্দর, অক্ষর প্যাটেল, শিভম দুবে, রবি বিষ্ণয়, আর্শদিপ সিং, প্রসিধ কৃষ্ণা, আভেশ খান, মুকেশ কুমার ও শ্রেয়াস আইয়ার (শেষ দুই ম্যাচ)।
ভারতের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার টি-টোয়েন্টি স্কোয়াড: ম্যাথু ওয়েড (অধিনায়ক), অ্যারন হার্ডি, জেসন বেহরেনডর্ফ, শন অ্যাবট, টিম ডেভিড, ন্যাথান এলিস, ট্রেভিস হেড, জস ইংলিস, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, তানবীর সাঙ্ঘা, ম্যাট শর্ট, স্টিভেন স্মিথ, মার্কাস স্টইনিস, কেইন রিচার্ডসন, অ্যাডাম জাম্পা।
বহুল প্রচলিত একটি কথা আছে- শেষ ভালো যার, সব ভালো তার। অর্থাৎ শুরুটা কেমন হলো না হলো সেটি কিন্তু বড় বিষয় নয়। শ্রেষ্ঠত্বের মঞ্চে দাঁড়িয়ে আপনার শেষের পারফরম্যান্সই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তুলির শেষ আঁচড়টি ঠিকমতো দিতে পারলেন কি না- সেটাই আসল। আর ঠিক সেই কাজটিই করে দেখাল অস্ট্রেলিয়া। ফাইনালের সেরা মঞ্চ মাতিয়ে আবারও বিশ্বকাপের শিরোপা ঘরে তুলল তারা। কিন্তু এই শিরোপা জয়ের পথ অতটা বন্ধুর ছিল না তাদের জন্য। ১০ দলের লম্বা টুর্নামেন্টে প্রত্যেক দল প্রত্যেকের বিপক্ষেই খেলেছে। ভারতবর্ষের ১০টি আলাদা শহরে টুর্নামেন্টের খেলা অনুষ্ঠিত হয়। ফলে ভ্রমণ-ক্লান্তি, কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নেয়া, ইনজুরি সমস্যাসহ নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে অস্ট্রেলিয়া। আগামী চার বছরের জন্য বিশ্ব ক্রিকেটের শ্রেষ্ঠত্বের রাজমুকুট পরল তারা। আমি মনে করি, যোগ্য দল হিসেবেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে এই দলটি।
ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় ভেন্যু নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে লাখো দর্শকের সামনে ফাইনাল ম্যাচে সেরা পারফরম্যান্স করাটা খুবই কঠিন ছিল অজি ক্রিকেটারদের জন্য। স্বাভাবিকভাবেই স্নায়ু চাপে ভুগেছে তারা। সেই চাপ কাটিয়ে সফলতার মুখ দেখেছে চ্যাম্পিয়ন দল। দুই ফাইনালিস্ট স্বাগতিক ভারত ও অস্ট্রেলিয়া সেমিফাইনালে খেলা একাদশ নিয়েই ফাইনালের মহাযুদ্ধে নামে। মূলত জয়ের যে মোমেন্টাম ছিল, সেটি দুদলের কেউই হারাতে চায়নি। টানা জয়ের আত্মবিশ্বাস কাজে লাগিয়ে সফলতার লক্ষ্য ছিল দুদলেরই। তবে আমি শুরুতেই বলব, টস ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ফাইনালের দিন টস ভাগ্য ভারতের পক্ষে ছিল না। অস্ট্রেলিয়া টস জিতে আগে ভারতকে ব্যাটিংয়ে পাঠায়। যদিও ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মা বলেছেন, টস জিতলে তিনিও আগে ব্যাটিংয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতেন। কেননা ফাইনালের বড় ম্যাচে স্কোর বোর্ডে বেশি রান জমা করতে পারলেই তো জয়ের সম্ভাবনার দরজা খুলে যায়।
ম্যাচের শুরুতেই আমরা দেখলাম, টস জিতে বোলিং করে ভারতকে বেশ চাপে ফেলে দেয় অস্ট্রেলিয়ানরা। কিন্তু পাওয়ার প্লেতে যে রোহিত শর্মার ব্যাটিং-বিস্ফোরণ, সেটি কিন্তু থামানো যায়নি। ফাইনালেও তার মারমুখী ব্যাটিংয়ের প্রদর্শনী দেখা গেছে। ৩১ বল খেলে ৪৭ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে পাওয়ার প্লেতে অস্ট্রেলিয়াকে চাপে ফেলার চেষ্টা করেছেন ভারতীয় অধিনায়ক। অস্ট্রেলিয়ার ফিল্ডিং ভালো হওয়ায় বেশ কিছু রান সেভ হয়েছে। তারপরও ইনিংসের প্রথম ১০ ওভারে ৮০ রান তোলে ভারত। কিন্তু পাওয়ার প্লেতে ২ উইকেট পতনের পর উল্টো চাপে পড়ে যায় স্বাগতিকরা। এক প্রান্তে রোহিত আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করলেও অপর প্রান্তে উইকেট ধরে রাখতে পারেননি শুভমান গিল। মিচেল স্টার্কের বলে জাম্পার হাতে সহজ ক্যাচ দেন এই ওপেনার। যার ব্যাটের দিকে তাকিয়ে ছিল পুরো ভারতবাসী। বিশ্বকাপের শুরুর দিকে জ্বরে ভুগে বেশ কিছু ম্যাচ মিস করেছেন। ধারণা করা হয়েছিল, ফাইনালের মঞ্চের জন্য সেরা খেলাটা জমিয়ে রেখেছেন গিল! কিন্তু তা হলো না। অন্যদিকে, অজি পার্ট-টাইমার ম্যাক্সওয়েলের স্পিনে যে রোহিত ধরা খাবেন, সেটিও কিন্তু ধারণার বাইরে ছিল। অবশ্য এ জন্য প্রশংসা প্রাপ্ত ট্রাভিস হেডের। অসাধারণ দক্ষতায় কাভার থেকে দৌড়ে গিয়ে রোহিতের যে ক্যাচ ধরলেন, তা ছিল মুগ্ধতা ছড়ানোর মতো ব্যাপার। প্রথম পাওয়ার প্লেতে ২ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়া ভারত আরও চাপে পড়ে যায় যখন শ্রেয়াস আইয়ার কামিন্সের বলে কিপারের হাতে ক্যাচ দেন। গুরুত্বপূর্ণ তিন উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়া ভারতের স্কোর বোর্ডে রান তোলার গতি খুবই শ্লথ হয়ে যায়। আর এখানেই পিছিয়ে পড়ে দলটি। ১৫.৫ ওভারে দলীয় শত রানে পৌঁছায় তারা। তিন নম্বরে নামা বিরাট কোহলি বিপর্যয়ের মুহূর্তে ধৈর্যশীল ব্যাটিং করে দলের হাল ধরার চেষ্টা করেন। কোনো বাউন্ডারির দিকে নজর না দিয়ে সিঙ্গেল-ডাবলসে দলকে এগিয়ে নেন। টানা ৬১ বল পর্যন্ত কোনো বাউন্ডারি কিংবা ওভার বাউন্ডারি হাঁকাতে পারেনি ভারত। তাতেই স্পষ্ট বোঝা যায়, কতটা চাপের মুখে ছিল দলটি। কোহলিদের এই সংগ্রাম করার পেছনে বড় কারণ ওই তিন উইকেটের পতন। অবশ্য ৫৬ বলে ফিফটি পূরণ করে আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠেন ভারতের ব্যাটিংয়ের মহাতারকা। কিন্তু তার ইনিংসও আর লম্বা হয়নি। কামিন্সের বলে বোল্ড হয়ে সাজঘরমুখী হন। তারপর জাদেজাও ব্যাটিং পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারলেন না। ১৭৮ রানে ৫ উইকেট হারানোর পরই পুরোপুরি ব্যাকফুটে চলে যায় ভারত। আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি তাদের ব্যাটিং। এরপর রাহুল আউট হওয়ার পর বিষয়টি এমন দাঁড়ায় যে কত রানে গিয়ে থামে ভারত, সেটি দেখার বিষয় ছিল।
বিশ্বকাপের শুরু থেকে দুর্দান্ত ক্রিকেটের প্রদর্শনী দেখিয়ে আসা ভারত ফাইনালের মঞ্চে এসে দিক-ভ্রান্ত হয়েছে। ব্যাটিংয়ে তাদের অতটা দুর্গতি হবে ভাবা যায়নি। আমি মনে করি, লিগ পর্ব ও সেমিফাইনালে টপ অর্ডার ব্যাটার ভালো করায় ভারতের লোয়ার মিডল অর্ডার ব্যাটারদের পরীক্ষা দিতে হয়নি। তাই তারাও গতকাল চাপে পড়ে উইকেট হারান। স্কোর বোর্ডে যে রান তোলে ভারত, অত অল্প পুঁজি নিয়ে শিরোপা জয় করা সত্যিই অনেক কঠিন কাজ। ফাইনালে সেই অস্ট্রেলিয়া রাজত্ব করেছে। প্রথম দিকে ৩ উইকেট হারিয়ে বিপর্যয়ে পড়লেও ট্রাভিস হেডের অসাধারণ ব্যাটিং নৈপুণ্যে ষষ্ঠ বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় অস্ট্রেলিয়া। ফাইনালের মতো বড় মঞ্চের বড় দল অস্ট্রেলিয়া বোলিংয়েও তাদের শক্তি দেখিয়েছে। ফাইনালের আগে কামিন্স যে ঘোষণা দিয়েছিলেন, গ্যালারির লাখো ভারতীয় দর্শকদের চুপ করিয়ে দিতে চান- বল হাতে সেই কথা রেখেছেন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক। বোলিংয়ে খুবই ডিসিপ্লিন ছিলেন কামিন্স। আরেকটি বিষয় খেলার শুরু থেকেই খেয়াল করেছি, অনেক চাপ অনুভব করছিলেন রোহিত শর্মারা। সেটি লুকানোর কোনো সুযোগ ছিল না। অন্যদিকে, মাঠে শরীরী ভাষা খুবই আত্মবিশ্বাসী ছিল অস্ট্রেলিয়ানদের। তারা চনমনে ও ফুরফুরে মেজাজে থাকায় ফাইনালের যে চাপ, সেটি বেশ ভালোভাবেই কাটিয়ে উঠেছে। আর সেটি প্রভাব ফেলেছে পারফরম্যান্সেও। ফলে আরেকটি বিশ্বকাপ শিরোপা জিতল অস্ট্রেলিয়া। তাদের অভিনন্দন জানাই।
এবারের বিশ্বকাপে প্রায় অজেয় হয়ে উঠা ভারতকে বিশ্বকাপ ফাইনালে উড়িয়ে দিয়েই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে অস্ট্রেলিয়া। একতরফা খেলে তারা ম্যাচটি জিতেছে ৬ উইকেট আর ৪২ বল হাতে রেখে।
ওয়ানডে ক্রিকেটের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে অস্ট্রেলিয়ার কাছে পাত্তাই পায়নি ভারত। ট্রাভিস হেডের ঝড়ো সেঞ্চুরিতে ফাইনাল ম্যাচে স্বাগতিকদের ৬ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারিয়ে রেকর্ড ষষ্ঠবারের মতো বিশ্বকাপ শিরোপা ঘরে তুলেছে অজিরা।
আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে এদিন টসে হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে সবকটি উইকেট হারিয়ে ২৪০ রান তোলে ভারত। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ৪৩ ওভারে মাত্র ৪ উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে নোঙর করে প্যাট কামিন্স বাহিনী। দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে ম্যাচসেরা হয়েছেন ট্রাভিস হেড।
লক্ষ্য তাড়ায় প্রথম ওভারেই ১৫ রান তোলেন দুই অজি ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার ও ট্রাভিস হেড। তবে দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলেই ৩ বলে ৭ রান করে সাজঘরে ফেরেন ওয়ার্নার।
এরপর ওয়ানডাউনে নেমে ঝোড়ো শুরু করলেও টিকতে পারেননি মিচেল মার্শ। ফেরেন ১৫ বলে ১৫ রান করে। আরেক অভিজ্ঞ ব্যাটার স্টিভেন স্মিথ আউট হন ৯ বলে ৪ রান করে। ৪৭ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে অজিরা।
তবে একপ্রান্ত আগলে রেখে এই চাপ সামাল দিতে থাকেন ট্রাভিস হেড। চতুর্থ উইকেটে তাকে যোগ্য সঙ্গ দেন মার্নাশ লাবুশেন। সাবলীল ব্যাটিংয়ে দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন তারা। এর মাঝে ফিফটি তুলে নেন হেড। ফিফটি তুলে নিয়ে সেঞ্চুরির দিকে ছুটাতে থাকেন তিনি।
অপরদিকে ধীরগতিতে ব্যাটিং করে ফিফটির দিকে এগুতে থাকেন লাবুশেন। ৯৯ বলে ফিফটি পূরণ করেন তিনি। এর আগে তিন অংকের ম্যাজিক ফিগারের দেখা পান হেড। ৯৫ বলে পূর্ণ করেন আসরের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি।
ভারতের বিপক্ষে যা তার প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরি। একই সঙ্গে রিকি পন্টিং ও অ্যাডাম গিলক্রিস্টের পর তৃতীয় অস্ট্রেলিয়ান হিসেবে বিশ্বকাপ ফাইনালে সেঞ্চুরির মাইলফলক স্পর্শ করেন হেড। তবে দলের জয়ের জন্য ২ রান বাকি থাকতে ১২০ বলে ১৩৭ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে আউট হন এই ওপেনার।
এরপর উইকেটে এসে প্রথম বলে ২ রান নিয়ে দলের জয় নিশ্চিত করেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। আর অপর প্রান্তে লাবুশেন অপরাজিত থাকেন ১১০ বলে ৫৮ রান করে।
ভারতের হয়ে ২টি উইকেট নেন জাসপ্রিত বুমরাহ। আর ১টি করে উইকেট শিকার করেন মোহাম্মদ শামি ও মোহাম্মদ সিরাজ।
এর আগে ব্যাটিং করতে নেমে শুরুটা ভালোই করেন ওপেনার ও অধিনায়ক রোহিত শর্মা। তবে তাকে সঙ্গ দিতে পারেননি আরেক ওপেনার শুভমান গিল। দলীয় পঞ্চম ওভারে ৩০ রানের মাথায় আউট হন তিনি। ফেরার আগে ৭ বলে ৪ রান করেন গিল।
এরপর ওয়ানডাউনে নামা বিরাট কোহলিকে সঙ্গে নিয়ে এগুতে থাকেন রোহিত। শুরু থেকেই মারমুখী ছিলেন তিনি। তবে তাকে থামতে হয় ফিফটির আগেই। সাজঘরে ফেরার আগে খেলেন ৩১ বলে ৪৭ রানের ইনিংস।
দলের প্রয়োজনে হাল ধরতে পারেননি দুর্দান্ত ফর্মে থাকা ব্যাটার শ্রেয়াশ আইয়ার। চারে নেমে ৩ বলে ৪ রান করে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন তিনি। মাত্র ৫ বলের ব্যবধানে ২ উইকেট হারানোর পর থেমে যায় ভারতের রান তোলার গতি।
এরপর সাবধানী ব্যাটিংয়ে ভারতকে এগিয়ে নিয়ে যেতে কোহলি। আর তাকে সঙ্গ দিতে থাকেন উইকেটরক্ষক ব্যাটার লোকেশ রাহুল। বাউন্ডারি না পেলেও নিয়মিত সিঙ্গেল নিতে থাকেন তারা দুজন। এদিকে ৫৬ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন কোহলি। তবে হাফ সেঞ্চুরির পর বেশিক্ষণ টিকতে পারেন তিনি। ৬৩ বলে ৫৪ রান করে বোল্ড আউট হন কোহলি। তাতেই নতুন এক মাইলফলক স্পর্শ করেন ভারতীয় এই ব্যাটার৷ ৭৬৫ রান করে বিশ্বকাপের ইতিহাসে এক আসরে সর্বোচ্চ রানের মালিক হন কোহলি।
এরপর রাহুলকে সঙ্গ দিতে আসেন রবীন্দ্র জাদেজা। তবে এই জুটিও থিতু হতে পারেনি বেশিক্ষণ। ২২ বলে ৯ রান করে ফিরে যান জাদেজা। রাহুলও টিকতে পারেননি বেশিক্ষণ। হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেয়ার পর ১০৭ বল মোকাবিলায়৬৬ রান করে ফিরেছে তিনি।
দলের হাল ধরতে পারেননি মিডল অর্ডার ব্যাটার সূর্যকুমার যাদব। তিনি আউট হন ২৮ বলে মাত্র ১৮ রান করে। এর আগে ৬ রানে আউট হন মোহাম্মদ শামি। জাসপ্রিত বুমরাহ ফেরেন ১ রানে। শেষ দিকে কুলদ্বীপ যাদবের ১০ ও মোহাম্মদ সিরাজের ৯ রানের সুবাদে কোনরকমে ২৪০ রানের সংগ্রহ পায় ভারত।
অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ৫৫ রা খরচায় সর্বোচ্চ ৩টি উইকেট নেন মিচেল স্টার্ক। ২টি করে উইকেটের দেখা পান প্যাট কামিন্স ও জস হ্যাজলেউড। আর ১টি করে উইকেট শিকার করেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ও অ্যাডাম জাম্পা।
চলমান বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ফাইনাল ম্যাচে টস জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে অস্ট্রেলিয়া।
গুজরাটের আহমেদাবাদের এক শ ৩২ হাজার দর্শক ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে রোববার বেলা আড়াইটায় শুরু হচ্ছে এই ম্যাচ।
বিশ্বকাপ শিরোপা জয় করে আবার বিশ্ব ক্রিকেটের শ্রেষ্ঠত্বের খেতাব অর্জন করার জন্য মুখিয়ে আছে দুই ফাইনালিস্ট স্বাগতিক ভারত ও অস্ট্রেলিয়া।
পাঁচবারের সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া। এ নিয়ে অষ্টম বারের মতো ফাইনাল খেলছে দলটি। অন্যদিকে দুবারের সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ভারত। এ নিয়ে চতুর্থবারের মতো ফাইনাল খেলছে তারা।
এর মধ্যে ২০০৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে হৃদয় ভেঙে ছিল ভারতের। সেবার ভারত দলের অধিনায়ক ছিলেন সৌরভ গাঙ্গুলি। দলে ছিলেন রাহুল দ্রাবিড়ও। ঠিক দুই দশক পর আবার বিশ্বকাপের ফাইনালে দেখা দুদলের।
ভারতীয়দের মতে, গত ২০ বছর আগে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বিশ্বকাপে ফাইনালে হারের শোধটা নেয়ার সময় এসেছে। ক্রিকেট বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ের নিশ্বাস দূরত্বে আছে ভারত। যেভাবে টুর্নামেন্টের শুরু থেকে দুর্দান্ত খেলে আসছে টিম ইন্ডিয়া, সেভাবে খেললে ফাইনালের মঞ্চে তাদের হাতেই উঠবে শিরোপা।
আবার অনেকের বিপরীত মত, ফাইনালে কিন্তু বিশ্বকাপ ইতিহাসের সবচেয়ে সফল দল অস্ট্রেলিয়া। কীভাবে বড় ম্যাচে ভালো খেলে জয় ছিনিয়ে আনতে হয়, তা তাদের চেয়ে কারও বেশি জানা নেই।
ফলে পরাশক্তি এই দুই দলের মধ্যে ক্রিকেট মহাযুদ্ধের রুদ্ধশ্বাস শ্বাসরুদ্ধকর রোমাঞ্চকর ইতিহাসের সেরা একটি ফাইনাল দেখা যেতে পারে। ষষ্ঠবারের মতো অস্ট্রেলিয়া নাকি তৃতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ শিরোপা ঘরে তুলবে ভারত— সেটিই এখন দেখার বিষয়।
অনুমিতভাবেই ক্রিকেট বিশ্বের দুই শক্তিমান দল- ভারত ও অস্ট্রেলিয়া খুবই দাপুটে ক্রিকেট খেলে ফাইনালের মঞ্চে এসেছে। টুর্নামেন্টে স্বাগতিক ভারতকে হারাতে পারেনি কেউই। টানা ১০ ম্যাচ জিতেছে তারা। অন্যদিকে, জোড়া হারে বিশ্বকাপ অভিযান শুরু হলেও টানা ৮টি ম্যাচে অপরাজেয় অস্ট্রেলিয়া। আজ দুর্ধর্ষ ও তুখোড় দুটি দল শিরোপা জয়ের মঞ্চে অবতীর্ণ হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই ফাইনাল ম্যাচটিকে ঘিরে বাড়তি উত্তাপ-উত্তেজনা ছড়াচ্ছে সবার মধ্যে। বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচ সব সময় আকর্ষণীয় হয়ে থাকে। তবে এই দুদলের ইতিহাস, ঐতিহ্য, শক্তি ও সামর্থ্য বিবেচনায় আজ আমরা রুদ্ধশ্বাস শ্বাসরুদ্ধকর রোমাঞ্চকর ক্রিকেট মহাযুদ্ধের একটি বারুদ ছড়ানো ম্যাচ দেখতে পারব বলে আশা করি।
অনেক সময় দেখা যায়, একটি দল প্রাথমিক পর্বে খুবই ভালো খেলে। কিন্তু নকআউট পর্বে এসে তাদের চরিত্র বদলে যায়। এ পর্যন্ত এসব ধারণা ভুল প্রমাণ করেছে ভারত দলটি। যতই সামনের দিকে এগিয়েছে টুর্নামেন্ট- ততই যেন অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে দলটি। আমরা দেখেছি, সেমিফাইনালে কিছুটা চাপে পড়লেও কীভাবে ঘুরে দাঁড়ায় তারা। টুর্নামেন্টজুড়ে যে দুরন্ত পারফরম্যান্স দেখাল টিম ইন্ডিয়া, তাদের সেই প্রতিচ্ছবিটা ফাইনালের মঞ্চেও দেখতে চাইবে ভারতবাসী। তবে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে রোহিত শর্মার দলকে বড় পরীক্ষা দিতে হবে। এই পরীক্ষায় পাস করলেই তাদের অপরাজিত থাকাটা পরিপূর্ণ রূপ পাবে। অপরদিকে, লিগ পর্বে ভারত ও সাউথ আফ্রিকার কাছে হেরেছিল অস্ট্রেলিয়া। অবশ্য এরপর আর কোনো ম্যাচেই তাদের কেউ হারাতে পারেনি। ফেভারিট দলের মতো খেলে শিরোপা নির্ধারণী মঞ্চে হাজির হয়েছে পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। ভারতের মতো টুর্নামেন্টব্যাপী জয় অব্যাহত না থাকলেও বড় ম্যাচের জন্য খুবই ভয়ংকর দল অস্ট্রেলিয়া। কীভাবে ফাইনালের মতো মঞ্চে পারফর্ম করতে হয়, সেটি তাদের চেয়ে ভালো আর কেউ জানে না। আমি মনে করি, বড় ম্যাচের জন্য সবচেয়ে দক্ষ দল অস্ট্রেলিয়া। এখান থেকে তারা কোনোভাবেই খালি হাতে ফেরত যেতে চাইবে না।
তবে ফাইনালের মহারণে ভারতকেই ফেভারিট বলতে হবে। অস্ট্রেলিয়ার জন্য তাদের আটকানো কঠিন হবে। ব্যাটিং বলেন, বোলিং বলেন কিংবা ফিল্ডিং- সব দিক থেকেই ভারত দলটি দুরন্ত। তাদের দলে ফাঁকফোকর নেই। ভারতীয় ব্যাটিং রাজত্বের মধ্যমণি বিরাট কোহলি সেরা পারফর্মার। ফাইনাল ম্যাচটিও স্মরণীয় করে রাখতে চাইবেন এই তারকা ব্যাটার। এ ছাড়া ভারতের প্রত্যেক ব্যাটার প্রত্যেকের যার যার জায়গায় দুর্দান্ত ফর্মে আছেন। বোলিংয়েও বিধ্বংসী দলটি। ভারতের মূল অস্ত্র এখন মোহাম্মদ শামি। তার সঙ্গে বুমরাহ ও সিরাজও বিপজ্জনক। তাদের বল খেলা কঠিন। তবে অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে বেশি ভয়ের কারণ হতে পারে ভারতীয় বিষাক্ত স্পিন। কুলদীপ, জাদেজার সঙ্গে অশ্বিন যদি খেলেন, তাহলে তো মহাবিপদে পড়তে পারে অজি ব্যাটাররা। তাদের স্পিন খেলার দুর্বলতা সবার জানা। স্পিন শক্তিতেই এগিয়ে যেতে পারে ভারত। আমি মনে করি, ফাইনালে দুই দলের শক্তির পার্থক্যটা হলো মূল স্পিন বোলিংয়ে। স্পিনেই ম্যাচে বড় পার্থক্য তৈরি হতে পারে।
ফাইনালে ভারত অনেক এগিয়ে থাকলেও আমি মনে করি, তাদের হারানোর সক্ষমতা আছে অস্ট্রেলিয়ার। ফাইনাল ম্যাচে বেশি চাপে থাকবে ভারত। টুর্নামেন্টজুড়ে যে ক্রিকেট খেলল দলটি, ফাইনালেও দাপুটে জয় দেখতে চাইবে দর্শক-সমর্থকরা। এই যে প্রত্যাশার চাপ- সেটি ভারতের খেলায় প্রভাব ফেলতে পারে। স্নায়ু চাপে ভুগলেও ভারতের মতো অতটা চাপে থাকবে না অস্ট্রেলিয়া দল। শুধু তাই নয়, আরও বেশ কিছু জায়গায় ভারতের চেয়ে ফাইনাল ম্যাচে এগিয়ে যেতে পারে তারা। শুরুতেই ব্যাটিংয়ের কথা বলব। ভারতের ব্যাটাররা ফর্মের তুঙ্গে থাকলেও তাদের লোয়ার মিডল অর্ডার কিন্তু কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়নি। কোনো ম্যাচে চাপ নিয়ে ব্যাটিং করতে দেখা যায়নি সুরিয়া কুমার, অশ্বিনদের। যদি ফাইনালে এমন পরিস্থিতি দাঁড়ায় যে লোয়ার অর্ডার ব্যাটারদের হাল ধরতে হবে, তাহলে সেখানে অস্ট্রেলিয়ানরা এগিয়ে থাকবে। এরপর বোলিংয়ের কথা যদি বলি, অস্ট্রেলিয়ার পেস ইউনিট ভয়ংকর হয়ে উঠেছে। সেমিফাইনালে তাদের আরও বিধ্বংসী রূপ আমরা দেখেছি। ভারতের পেস বোলিং ইউনিট সেরা পারফরম্যান্স দেখালেও ফাইনালে যদি তাদের কোনো পেসার ভালো করতে না পারেন তাহলে বিপদ হতে পারে ভারতের। ধারাবাহিকভাবে ভালো করা একজন যদি হঠাৎ অফ ফর্মে চলে যান তাহলে দলের শক্তি কমে যায় অনেকাংশে। আর এখানেই এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে অস্ট্রেলিয়ার। ভারতের তিন পেসার ও দুই স্পিনারের সঙ্গে ষষ্ঠ বোলারের অভাব রয়েছে। আর এ জায়গায়ও এগিয়ে যেতে পারে অজিরা।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- ফিল্ডিং। সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ক্যাচ মিস, ওভার থ্রোয়ে রান দিয়েছে ভারত। ফাইনালের মতো মঞ্চে যদি ফিল্ডিংয়ে কোনো দুর্বলতা থাকে, তাহলে বড় মাশুল গুনতে হবে তাদের। গ্রাউন্ড ফিল্ডিংয়ে অনেক ভালো অস্ট্রেলিয়া দল। এ ছাড়া বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচে খেলোয়াড়দের মধ্যে ক্লান্তি গ্রাস করে কি না- সেটিই দেখার বিষয় থাকবে। দীর্ঘ টুর্নামেন্টে অস্ট্রেলিয়া দলের চেয়ে বেশি ভ্রমণ-ক্লান্তি ভারত দলের। সেই ধকল কাটিয়ে ফাইনালে পারফর্ম করতে হবে স্বাগতিকদের।
ফাইনাল ম্যাচের উইকেট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামের যে ১১টি উইকেট রয়েছে, এর মধ্যে ষষ্ঠ উইকেটে খেলার সম্ভাবনাই প্রবল। ঐতিহ্যগতভাবেই উইকেট ব্যাটিং ফ্রেন্ডলি হয়ে থাকে। পেসার ও স্পিনারদের জন্যও সহায়ক হয়। বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচ যেহেতু, উইকেটও ভালো হবে আশা করি। আগে ব্যাটিং করলে বড় স্কোর দাঁড় করানোর চেষ্টা করবে দুদলই। এ ক্ষেত্রে টসটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়াবে। টস জেতা দল বেশি সুবিধা আদায় করে নিতে পারবে। কেননা রাতের শিশিরও খেলায় প্রভাব ফেলতে পারে। আমি মনে করি, কন্ডিশন বড় ফ্যাক্টর হলেও ভারতের মাটিতে অনেক ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা আছে অস্ট্রেলিয়ার। কীভাবে সফল হতে হয়, সেই কৌশল বেশ ভালো করেই জানা তাদের। অন্যদিকে, ভারত হোম অ্যাডাভেন্টজ কাজে লাগানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে। ঘরের মাঠে লাখো দর্শকের সামনে খেলবে তারা। দর্শক-সমর্থন তাদের পক্ষে থাকবে। সব মিলিয়ে পরিশেষে বলব, ফাইনাল ম্যাচের যে স্নায়ু চাপ থাকবে, সেটি কাটিয়ে যারা মাঠের যুদ্ধে এগিয়ে যাবে, তারাই আগামী চার বছর বিশ্বকাপ ট্রফি উঁচিয়ে ধরার গৌরব অর্জন করতে পারে।
অপেক্ষার পালা শেষে বহু প্রতীক্ষিত ও আকাঙ্ক্ষিত বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই ম্যাচের জন্য গুজরাটের আহমেদাবাদের একশ ৩২ হাজার দর্শক ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রিকেট স্টেডিয়াম প্রস্তুত। বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচকে ঘিরে কোনো প্রকারের প্রস্তুতির কমতি রাখেনি ভারত। টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান না হলেও শেষটা বর্ণিলভাবে রাঙানোর জন্য, স্মরণীয় করে রাখার জন্য জমকালো আয়োজনের ব্যবস্থা করেছে স্বাগতিকরা। বিশ্বকাপ শিরোপা জয় করে আবার বিশ্ব ক্রিকেটের শ্রেষ্ঠত্বের খেতাব অর্জন করার জন্য মুখিয়ে আছে দুই ফাইনালিস্ট স্বাগতিক ভারত ও অস্ট্রেলিয়া। দুদলের ফাইনাল ম্যাচটি বাংলাদেশ সময় বেলা আড়াইটায় শুরু হবে। এই ম্যাচের চলতি ধারাবিবরণী সরাসরি সম্প্রচার করবে বাংলাদেশ বেতার।
পাঁচবারের সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া। এ নিয়ে অষ্টম বারের মতো ফাইনাল খেলছে দলটি। অন্যদিকে দুবারের সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ভারত। এ নিয়ে চতুর্থবারের মতো ফাইনাল খেলছে তারা। এর মধ্যে ২০০৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে হৃদয় ভেঙে ছিল ভারতের। সেবার ভারত দলের অধিনায়ক ছিলেন সৌরভ গাঙ্গুলি। দলে ছিলেন রাহুল দ্রাবিড়ও। ঠিক দুই দশক পর আবার বিশ্বকাপের ফাইনালে দেখা দুদলের। সম্প্রতি ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতির দায়িত্ব পালন করে দেশের ক্রিকেটকে একটা ধারায় দিয়ে যান গাঙ্গুলি। আর দ্রাবিড় তো বর্তমান দলের প্রধান কোচই। সাবেক অধিনায়ক গাঙ্গুলি-দ্রাবিড়রা যা করে দেখাতে পারেননি, আজ আহমেদাবাদে বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন হয়ে তা দেখানোর সুযোগ রোহিত শর্মাদের সামনে। এরই মধ্যে ‘বদল’, ‘প্রতিশোধ’ নানা ধরনের শব্দ উচ্চারিত হচ্ছে। ভারতীয়দের মতে, গত ২০ বছর আগে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বিশ্বকাপে ফাইনালে হারের শোধটা নেয়ার সময় এসেছে। ক্রিকেট বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ের নিশ্বাস দূরত্বে আছে ভারত। যেভাবে টুর্নামেন্টের শুরু থেকে দুর্দান্ত খেলে আসছে টিম ইন্ডিয়া, সেভাবে খেললে ফাইনালের মঞ্চে তাদের হাতেই উঠবে শিরোপা। আবার অনেকের বিপরীত মত যে, ফাইনালে কিন্তু বিশ্বকাপ ইতিহাসের সবচেয়ে সফল দল অস্ট্রেলিয়া। কীভাবে বড় ম্যাচে ভালো খেলে জয় ছিনিয়ে আনতে হয়, তা তাদের চেয়ে কারও বেশি জানা নেই। ফলে আজ পরাশক্তি এই দুই দলের মধ্যে ক্রিকেট মহাযুদ্ধের রুদ্ধশ্বাস শ্বাসরুদ্ধকর রোমাঞ্চকর ইতিহাসের সেরা একটি ফাইনাল দেখা যেতে পারে। ষষ্ঠবারের মতো অস্ট্রেলিয়া নাকি তৃতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ শিরোপা ঘরে তুলবে ভারত- সেটিই এখন দেখার বিষয়।
টুর্নামেন্টজুড়েই ভালো ক্রিকেট খেলেছে দুটি দলই। লিগ পর্ব ও সেমিফাইনালে কোনো ম্যাচে হারেনি ভারত। টানা ১০ ম্যাচে অপরাজেয় দলটি। তবে জোড়া হারে বিশ্বকাপ অভিযান শুরু করে অস্ট্রেলিয়া। অবশ্য প্রথম দুই ম্যাচের পর টানা ৮টি ম্যাচে অপ্রতিরোধ্য তারা। শক্তির বিচারে দুদলই সমানে সমান। কিন্তু ফর্মের বিচারে অজিদের চেয়ে এগিয়ে রোহিতরা। প্রতি ম্যাচেই দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলেছে তারা। তাদের ব্যাটিং লাইনআপ খুবই শক্ত। বিশেষ করে পাওয়ার প্লেতে ভারতীয় ওপেনাররা যে আগ্রাসী ব্যাটিং করে যাচ্ছেন, তা অসাধারণ। ব্যাটিংয়ের মধ্যমণি বিরাট কোহলি টুর্নামেন্টে সাত শতাধিক রান সংগ্রহ করে বুঝিয়ে দিলেন যে, কতটা ভালো ফর্মে আছেন তিনি। শ্রেয়াস আইয়ার, রাহুল মিলে তাদের মিডল অর্ডারও দারুণ খেলছে। যে ছয় ব্যাটার নিয়ে খেলছে ভারত, তাদের প্রত্যেকে ফর্মের তুঙ্গে আছেন। হার্দিক পান্ডিয়া বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে পড়ায় ভারতের একাদশ গঠন করতে গিয়ে কিছুটা অসুবিধা হলেও সফলতার মুখ দেখছে দল। পান্ডিয়ার জায়গায় একাদশে সুযোগ পেয়ে ভারত দলে সবচেয়ে বেশি আলো পড়ছে এখন মোহাম্মদ শামির ওপর। এই ডানহাতি পেসার আগুনে ফর্মে আছেন। সর্বশেষ সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৭ উইকেট শিকার করে ভারতের জয় সুনিশ্চিত করেন। মাত্র ৬টি ম্যাচ খেলে তার নামের পাশে যোগ হয়েছে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ ২৩টি উইকেট। শামির মতো ভারতীয় পেস ইউনিট টুর্নামেন্টজুড়ে ধারালো বোলিং উপহার দিয়েছে। জাসপ্রিত বুমরাহর বল খেলতেই পারছেন না প্রতিপক্ষের ব্যাটাররা। মোহাম্মদ সিরাজ কিছুটা খরচে হলেও সফল তিনিও। ফলে পেস ইউনিট ছন্দ ধরে রাখলে ফাইনালেও এগিয়ে যাবে ভারত। স্পিনেও দলটি সমৃদ্ধ। কুলদীপ ও জাদেজার ঘূর্ণিতে দিশাহারা হতে পারে অস্ট্রেলিয়ানরা। স্পিন খেলার যে ঐতিহ্যগত সমস্যা তাদের, সেই দুর্বলতার সুযোগ নিতে পরিকল্পনা করবে স্বাগতিকরা। এজন্য স্পিনে শক্তি বাড়াতে অশ্বিনকে একাদশে রাখা হতে পারে। তবে কাকে একাদশের বাইরে রেখে অশ্বিনকে সুযোগ দেয়া হবে- সেটি চিন্তার বিষয় রয়েছে তাদের। উইনিং একাদশ নাও ভাঙতে পারে ভারত। সেমিফাইনালে ফিল্ডিংয়ে রোহিতদের কিছু দুর্বলতা ফুটে উঠেছে। সেগুলো শোধরে মাঠে নামবে তারা। ফাইনালে ঐক্যবদ্ধ হয়ে অলআউট ক্রিকেট খেলে আরেকটি বিজয় ছিনিয়ে বিশ্বকাপ শিরোপা ঘরে তুলতে চাইবে মেন ইন ব্লু।
অন্যদিকে, অস্ট্রেলিয়ারও শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপ রয়েছে। ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার ভালো খেলছেন। মিচেল মার্শও বড় ইনিংস খেলে ভালো ছন্দে রয়েছেন। স্টিভেন স্মিথ হয়তো তার সেরা খেলাটা ফাইনালের জন্য জমিয়ে রেখেছেন। লাবুশেন ও ট্রাভিস হেড উইকেটে থিতু হয়ে গেলে দলকে বড় সংগ্রহের দিকে নিয়ে যেতে পারেন। গ্লেন ম্যাক্সওয়েল তো এই বিশ্বকাপের বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ের সেরা বিজ্ঞাপন। আফগানিস্তানের বিপক্ষে অপরাজিত ২০১ রানের ইনিংস খেলে যেভাবে দলের জয় নিশ্চিত করেছেন, ফাইনালের মঞ্চেও নিজেকে সবচেয়ে বেশি নিবেদন করবেন এই অলরাউন্ডার। তাদের লেজের দিকে ব্যাটাররাও ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে সক্ষম। ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি বোলিংয়ে দারুণ বৈচিত্র্যময় অস্ট্রেলিয়া। সেমিফাইনালে মিচেল স্টার্ক, হ্যাজলউডরা দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখান। অস্ট্রেলিয়ার বোলিংয়ের সেরা অস্ত্র লেগ স্পিনার অ্যাডাম জাম্পা। টুর্নামেন্টে স্পিনে সবচেয়ে সফল বোলার তিনি। তার সামনে বেশ ভালো পরীক্ষা দিতে হতে পারে ভারতীয়দের। স্পিনে পার্ট টাইমার হিসেবে ম্যাক্সওয়েলও দক্ষ। সেমিফাইনালে অফস্পিনে ২ উইকেট পেয়েছেন ট্রাভিস হেড। বোলিংয়ের পাশাপাশি ফিল্ডিংয়েও এগিয়ে অস্ট্রেলিয়া। সব মিলিয়ে ভারতের মাটিতে আরেকটি বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ের লক্ষ্য নিয়েই আজ মাঠে নামবে প্যাট কামিন্সরা।
অতীত রেকর্ডও অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে। এ পর্যন্ত মোট ১৩টি ম্যাচে দুদল পরস্পরের মুখোমুখি হয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৮টি ম্যাচে জয় পেয়েছে অস্ট্রেলিয়া। ৫টি ম্যাচে জিতেছে ভারত। তবে গত বিশ্বকাপে ৩৬ রানে ও চলতি বিশ্বকাপের লিগ পর্বের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ানদের ৬ উইকেটে হারিয়েছে তারা। এই দুটি জয় ভারতীয়দের উজ্জীবিত রাখছে।
জাতীয় দলের ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান তিনটি আসন থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন বলে জানা যায়। আসন তিনটি হল- মাগুরা-১ ও মাগুরা-২ এবং ঢাকা- ১০।
সূত্র জানায়, সাকিব আল হাসানের পক্ষে তার একজন প্রতিনিধি মনোনয়ন ফরমগুলো সংগ্রহ করেন। ঢাকা-১০ থেকে সাকিবের নৌকার টিকিট পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও সূত্র নিশ্চিত করেছে।
সাকিব ভক্তদের জন্য এটি অবশ্যই একটি আনন্দ সংবাদ। ক্রিকেট মাঠের মতো রাজনৈতিক মাঠে এবার সাকিব কেমন খেলা খেলে তা হয়তো আগামী নির্বাচনে দেখা যাবে। ভক্তরা তাকে রাজনীতের মাঠে কিভাবে নেয় সেটিও দেখবেন দেশবাসী।
সংসদ নির্বাচনের মনোনয়পত্র দাখিলের শেষ সময় ৩০ নভেম্বর। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৭ ডিসেম্বর। প্রতীক বরাদ্দ ১৮ ডিসেম্বর। আর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ করা হবে আগামী ৭ জানুয়ারি।