সব সময় টুর্নামেন্টের শেষ দিকে ক্ষিপ্র গতির লড়াই জমে ওঠে। চলতি বিশ্বকাপও শেষ দিকে চলে এসেছে। এখন পর্যন্ত সেমিফাইনালের দৌড়ে যে কয়টি দল টিকে আছে, তারা নিজেদের সবকিছু নিংড়ে দিয়ে সেমিফাইনালে জায়গা করে নেয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করবে। এই দলগুলোর মধ্যে একটি হলো আফগানিস্তান। টুর্নামেন্টের শুরুর আগে এই দলটিকে অতটা হিসাবে ধরা হয়নি। না ধরার পেছনে কিছু যুক্তিও ছিল। মাত্র তৃতীয় বিশ্বকাপ খেলছে তারা। চলতি আসরে দুটি কিংবা তিনটি জয় পেলেই তো দলটির জন্য বিশাল অর্জন হওয়ার কথা! তবে ক্রিকেট বিশ্লেষকদের গতানুগতিক চিন্তা-ভাবনার বাইরে গিয়ে একের পর এক রূপকথার জন্ম দিয়ে যাচ্ছে আফগানিস্তান। দাপুটে ক্রিকেট খেলছে উঠতি শক্তির এই দলটিও। বেশ ভালোভাবেই বিশ্বকাপ মঞ্চ মাতাচ্ছে তারা। তিন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন দল- ইংল্যান্ড, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কাকে হারানোর বীরত্ব দেখিয়েছে আফগান-যোদ্ধারা। এরপর নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে সেমিফাইনালে খেলার জোরালো সম্ভাবনা তৈরি করেছে তারা। তাদের বিস্ময়কর এই পারফরম্যান্সের কিন্তু উচ্চ প্রশংসা করতেই হবে। আজ যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির প্রতিপক্ষ পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া। তাদের সেমিফাইনালে ওঠার জন্য এই ম্যাচটি মহাগুরুত্বপূর্ণ। সেমিফাইনালের দৌড়ে টিকে থাকতে হলে জয়ের বিকল্প নেই। আমি মনে করি, নিঃসন্দেহে সর্বশক্তি দিয়ে উড়তে থাকা অস্ট্রেলিয়াকেও মাটিতে নামিয়ে দেয়ার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা নিয়েই মাঠে নামবে রশিদ, মুজিবরা।
অন্যদিকে, বিশ্বকাপ শুরুর আগে থেকেই অস্ট্রেলিয়ার নামটি ফেভারিটের তালিকায় ছিল জোরালোভাবে। যদিও টুর্নামেন্টের শুরুর দিকে তাদের প্রতাপশালী ক্রিকেট দেখা যায়নি। ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে যেভাবে হেরেছিল অজিরা- এ দলটি বেশিদূর যাবে না বলে গুঞ্জন শুরু হয়ে গিয়েছিল। তবে সেই হতাশা কাটিয়ে বেশ ভালোভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে এখন সেমিফাইনালের দ্বারপ্রান্তে দলটি। টানা পাঁচ ম্যাচ জিতে তারা যে ছন্দে আছে- এই অস্ট্রেলিয়াকে আটকানো মুশকিল হবে। তারাও সেমিফাইনালে খেলা নিশ্চিত করতেই মাঠে নামবে। আমার মতে, দুই দলের জন্যই আজকের ম্যাচটির মর্যাদা ও গুরুত্ব অনেক। কেউ কাউকে ছেড়ে কথা বলবে না। যেকোনো মূল্যে জয় তুলে নেয়ার চেষ্টায় থাকবে। ম্যাচটিকে নকআউট ম্যাচ মনে করেই খেলবে দুই দল। উত্তাপ-উত্তেজনা ও তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ম্যাচে যেসব উপাদান থাকা দরকার- এই ম্যাচে কোনো কিছুরই কমতি থাকবে না বলে আশা করি।
যদি দুই দলের শক্তি-সামর্থ্যের কথা বলি- স্বাভাবিক হিসাবে আফগানদের চেয়ে যোজন-যোজন এগিয়ে অস্ট্রেলিয়া দল। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ফেভারিট হিসেবে খেলবে তারা। তাদের যেমন শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপ রয়েছে, তেমনি বোলিং লাইনআপও বিধ্বংসী এবং খুবই বৈচিত্র্যময়। পাওয়ার ব্যাটিং কাকে বলে, আগের ম্যাচগুলোয় দেখিয়েছে অস্ট্রেলিয়ানরা। টানা জয় পাওয়া পাঁচ ম্যাচের মধ্যে বেশির ভাগ ম্যাচেই সাড়ে তিনশ, চারশর কাছাকাছি রান করেছে দলটি। ডেভিড ওয়ার্নার, ট্রাভিস হেডরা দারুণ ফর্মে আছেন। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার পাওয়ার ব্যাটিংয়ের মূল অস্ত্র গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে তারা পাচ্ছে না। জানা গেছে, গলফ খেলতে গিয়ে কার্ট থেকে পড়ে নাকি আহত হয়েছেন এই বিস্ফোরক অলরাউন্ডার। পরিবার-সংকটে বিশ্বকাপ ছেড়ে দেশে ফিরে গেছেন মিচেল মার্শও। ফলে এই দুই গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়কে যদি না পায় অস্ট্রেলিয়া, তাহলে তাদের ব্যাটিং শক্তি অনেকটাই কমে যাবে। তবে যারা দলে আছেন, তারাও কিন্তু ভালো পারফর্মার। ম্যাচ ঘুরিয়ে দেয়ার ক্ষমতা রাখেন। সুযোগ পেলে জ্বলে উঠছেন সাইড বেঞ্চে থাকা খেলোয়াড়রাও। আমি মনে করি, এই ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার পাওয়ার ব্যাটিংয়ের বিরুদ্ধে আফগানিস্তানের ধারালো বোলিংয়ের বড় লড়াই জমে উঠবে। কেননা ঐতিহ্যগতভাবেই স্পিনে খেলায় দুর্বল অজিরা। তাদের এই দুর্বলতার সুযোগ কাজে লাগাতে পারেন আফগানরা। বিশ্বখ্যাত লেগ স্পিনার রশিদ খান, মুজিব উর রহমান ও মোহাম্মদ নবির সমন্বয়ে যে স্পিন শক্তি গড়ে উঠেছে তাদের- এই শক্তি দিয়েই শক্তিশালী প্রতিপক্ষকে মাটিতে নামিয়ে দিচ্ছে তারা। গত ম্যাচগুলোতে আমরা দেখেছি, তাদের স্পিনের বিরুদ্ধে অসহায় আত্মসমর্পণ করেছে প্রতিপক্ষ ব্যাটাররা। শুধু স্পিনই নয়, ফজল হক ফারুকিদের দ্রুতগতির বল খেলতে গিয়েও খাবি খেয়েছে অনেক নামি ব্যাটার। পেস শক্তিও তাদের অনেক ধারালো। ফলে আফগানিস্তান এখনো বড় দলের তালিকায় নাম ওঠাতে না পারলেও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অনেক বড় প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়াতে পারে তারা। মাঠের লড়াইয়ে অনেক বিপজ্জনক হতে পারে আফগানরা। আমার মতে, বড় দলগুলোকে হারিয়ে যে আত্মবিশ্বাস জমা করেছে হাশমতউল্লাহ শহিদীরা- সেটি জ্বালানি হিসেবে কাজে লাগিয়ে তারা আরেকটি নতুন রূপকথার জন্ম দিতে পারে আজ।
অন্যদিকে, টুর্নামেন্টের শুরুর দিকে বেশ কিছু ভুল চোখে পড়েছিল অস্ট্রেলিয়া দলের। তবে সময়ের পরিক্রমায় সেগুলো শুধরে পূর্ণ রূপে ফিরে আগ্রাসী ক্রিকেট খেলছে দলটি। তাদের ক্রিকেটাররা ভারতের কন্ডিশনের সঙ্গে বেশ মানিয়ে নিয়েছে। কীভাবে ভারতের উইকেটে রান তুলতে হবে- সেই রিদম পেয়ে গেছে তারা। আফগানিস্তানের বিপক্ষেও ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামের ব্যাটিং-স্বর্গ উইকেটে বড় স্কোর গড়তে পারেন অস্ট্রেলিয়ানরা। অবশ্য মাঠে জবাব দেবে আফগানরাও। তাদের জয়ের ক্ষুধা অনেক। মাঠে তাদের শরীরী ভাষাই বলে দেয় যে, তাদের মধ্যে ভালো করার কতটা তাড়না। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ আফগানিস্তানের ক্রিকেটই একমাত্র সম্বল। এই ক্রিকেটের মাধ্যমে দেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য জান-প্রাণ দিয়ে সব কিছু উজাড় করে মাঠে লড়াই করেন রশিদ, নবিরা। এটি তাদের দলের জন্য খুবই ইতিবাচক একটি দিক।
এদিকে অস্ট্রেলিয়া ও আফগানিস্তানের ক্রিকেট-যুদ্ধ মাঠের বাইরেও রং ছড়িয়েছে। কেননা চলতি বছরের শুরুর দিকে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আফগানিস্তানের দ্বিপক্ষীয় ক্রিকেট সিরিজ খেলার কথা ছিল। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া খেলতে চায়নি। এ নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। এবার বিশ্বকাপের মঞ্চে দুই দল মুখোমুখি হচ্ছে। তাই স্বাভাবিকভাবেই দুই দলের লড়াইটা যুদ্ধংদেহী একটা রূপ নিয়েছে। প্রত্যাশা করি, এই ম্যাচটি বিশ্বকাপের অন্য সব আকর্ষণীয় ম্যাচের মতো খুবই উপভোগ্য এবং বাড়তি আমেজ ছড়াবে সবার মাঝে।
স্প্যানিশ জায়ান্ট এফসি বার্সেলোনার দীর্ঘদিনের আর্থিক সংকট ও ঋণের বোঝা কাটাতে এক অভাবনীয় প্রস্তাবের গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। ক্লাবের মালিকানা পেতে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান প্রায় ১০০০ কোটি ইউরো বা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১ লাখ ৪৩ হাজার ৩১০ কোটি টাকার প্রস্তাব দেওয়ার কথা বিবেচনা করছেন। স্প্যানিশ টেলিভিশন শো ‘এল চিরিংগিতো’-তে ফ্রাঁসোয়া গার্লেদো নামের এক সাংবাদিক দাবি করেছেন, বার্সেলোনার অংশীদারিত্ব কিনতে সৌদি যুবরাজ এই বিপুল অর্থ বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছেন।
বার্সেলোনা বর্তমানে প্রায় ২৫০ কোটি ইউরোর ঋণে জর্জরিত, যার প্রভাবে লিওনেল মেসির মতো তারকাকে হারাতে হয়েছে এবং লা লিগার বেতন সীমা নীতির কারণে খেলোয়াড় নিবন্ধনে নিয়মিত জটিলতায় পড়তে হচ্ছে। অন্যদিকে, সৌদি আরব তাদের ‘ভিশন ২০৩০’ ও ২০৩৪ বিশ্বকাপ আয়োজনকে সামনে রেখে বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে ব্যাপক বিনিয়োগ করছে। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে লিগে ভেড়ানোসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ক্লাবে বিনিয়োগের অংশ হিসেবে সৌদি পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড (পিআইএফ) বার্সেলোনার দিকে নজর দিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে বার্সেলোনা এক নিমেষেই ঋণমুক্ত হয়ে নতুন প্রকল্প হাতে নেওয়ার সক্ষমতা অর্জন করবে।
তবে অর্থের অংক আকাশচুম্বী হলেও ফুটবল বিষয়ক সংবাদমাধ্যম গোল ডটকমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বার্সেলোনার পূর্ণাঙ্গ মালিকানা কেনা আইনগত ও গঠনতান্ত্রিকভাবে প্রায় অসম্ভব। কারণ, বার্সেলোনা একটি সদস্য বা ‘সোসিও’ মালিকানাধীন ক্লাব, যেখানে বোর্ড নির্বাচন থেকে শুরু করে কৌশলগত সব সিদ্ধান্তে সদস্যদের ভেটো দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে। সামাজিকভাবে ক্লাবের ঐতিহ্য বিসর্জন দিয়ে মালিকানা বিক্রি করা সদস্যদের কাছে গ্রহণযোগ্য নাও হতে পারে। ফলে সৌদি যুবরাজ চাইলেও এককভাবে ক্লাবটি কিনে নিতে পারবেন না, তবে ক্লাবের নির্দিষ্ট কোনো বাণিজ্যিক শাখায় বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি হতে পারে।
আগামী বছরের মার্চ-এপ্রিলে পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলতে পাকিস্তানের বাংলাদেশ সফরে আসার কথা থাকলেও তা পিছিয়ে যাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ফিউচার ট্যুর প্রোগ্রাম (এফটিপি) অনুযায়ী, বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের দুটি টেস্ট এবং তিনটি করে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলার কথা ছিল। তবে পাকিস্তান সুপার লিগের (পিএসএল) ১১তম আসরের সূচির সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ায় এই সফরটি অন্য সময়ে আয়োজনের বিষয়ে আলোচনা চলছে।
পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) চেয়ারম্যান মহসিন নাকভি গতকাল পিএসএলের সূচি ঘোষণা করেছেন, যেখানে আগামী ২৬ মার্চ থেকে ৩ মে পর্যন্ত টুর্নামেন্টটি অনুষ্ঠিত হবে। ফ্র্যাঞ্চাইজি এই টুর্নামেন্টের কারণেই মূলত বাংলাদেশ সফরটি পেছানো হচ্ছে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) একটি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছে, দুই দেশের ক্রিকেট বোর্ড আলোচনার মাধ্যমে সফরের জন্য নতুন একটি সময় বের করার চেষ্টা করছে।
বিসিবির পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়েছে, সিরিজের সময় পরিবর্তন হলেও কোনোভাবেই ম্যাচের সংখ্যা কমানো হবে না। ওয়ানডে বা টি-টোয়েন্টি ম্যাচের সূচি নতুন করে সমন্বয় করে শীঘ্রই আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হবে। উল্লেখ্য, গত জুলাইয়ে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত তিন ম্যাচের সিরিজে পাকিস্তানকে ২-১ ব্যবধানে হারিয়েছিল স্বাগতিকরা।
চলমান ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যকার টি-টোয়েন্টি সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে বল হাতে দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তনের পাশাপাশি ব্যক্তিগত এক অনন্য মাইলফলক স্পর্শ করেছেন ভারতীয় পেসার আর্শদীপ সিং। ধর্মশালায় অনুষ্ঠিত এই ম্যাচে তিনি শ্রীলঙ্কার কিংবদন্তি পেসার লাসিথ মালিঙ্গাকে পেছনে ফেলে টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারিদের তালিকায় নিজের অবস্থান আরও সুসংহত করেছেন।
ম্যাচের শুরুতেই ইনিংসের প্রথম ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকার ওপেনার রিজা হেনড্রিকসকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে সাজঘরে পাঠান আর্শদীপ। এই উইকেটের মাধ্যমেই তিনি মালিঙ্গার ১০৭ উইকেটের রেকর্ড টপকে যান। মালিঙ্গা যেখানে ৮৪ ম্যাচে ১০৭ উইকেট নিয়েছিলেন, সেখানে আর্শদীপ মাত্র ৭১ ম্যাচেই ১০৮টি উইকেট শিকারের কৃতিত্ব দেখালেন।
আগের ম্যাচে উইকেটশূন্য থাকলেও এই ম্যাচে শুরু থেকেই ছন্দে ছিলেন এই বাঁহাতি পেসার। নতুন বলের পাশাপাশি ডেথ ওভারেও নিজের কার্যকারিতা প্রমাণ করেছেন তিনি। ম্যাচের শেষদিকে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে সর্বোচ্চ রান করা এইডেন মারক্রামকে উইকেটের পেছনে জিতেশ শর্মার গ্লাভসবন্দি করে নিজের দ্বিতীয় উইকেটটি তুলে নেন আর্শদীপ।
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা দৌড়ে আর্সেনালকে চাপে রেখেছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটি। সেলহার্স্ট পার্কে স্বাগতিক ক্রিস্টাল প্যালেসের বিপক্ষে ৩-০ গোলের বড় জয় তুলে নিয়ে লিগ টেবিলের শীর্ষস্থানের সঙ্গে ব্যবধান কমিয়ে এনেছে পেপ গার্দিওলার দল। এই জয়ে ১৬ ম্যাচে ৩৪ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে অবস্থান করছে সিটিজেনরা, যেখানে শীর্ষে থাকা আর্সেনালের সঙ্গে তাদের ব্যবধান এখন মাত্র দুই পয়েন্ট।
ম্যাচের শুরুতে ক্রিস্টাল প্যালেস বেশ আক্রমণাত্মক ফুটবল খেললেও ফিনিশিংয়ের অভাবে গোল পায়নি। ইয়েরেমি পিনোর শট ক্রসবারে এবং বিরতির পর অ্যাডাম হোয়ার্টনের শট পোস্টে লেগে ফিরে আসলে ভাগ্য বিড়ম্বনায় পড়ে স্বাগতিকরা। অন্যদিকে, ম্যানচেস্টার সিটি তাদের সুযোগগুলো দারুণভাবে কাজে লাগায়। ম্যাচের ৪১তম মিনিটে মাথিউস নুনেসের ক্রস থেকে দুর্দান্ত হেডে দলকে লিড এনে দেন আর্লিং হালান্ড।
দ্বিতীয়ার্ধের ৬৯তম মিনিটে রায়ান শেরকির দুর্দান্ত অ্যাসিস্ট থেকে নিচু শটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন ইংলিশ তারকা ফিল ফোডেন। ম্যাচের শেষদিকে সাভিনিয়ো ডি-বক্সে ফাউলের শিকার হলে পেনাল্টি পায় সিটি। পেনাল্টি থেকে নিজের দ্বিতীয় ও দলের তৃতীয় গোলটি করে দলের বড় জয় নিশ্চিত করেন নরওয়েজিয়ান স্ট্রাইকার হালান্ড। এই হারে শীর্ষ চারে ওঠার সুযোগ হাতছাড়া করল ক্রিস্টাল প্যালেস।
কলকাতার সফরের অব্যবস্থাপনা ও তিক্ত অভিজ্ঞতা ভুলে মুম্বাইয়ে এক ভিন্ন আমেজ পেলেন ফুটবল জাদুকর লিওনেল মেসি। ঐতিহাসিক ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে রচিত হলো এক অবিস্মরণীয় মুহূর্ত, যেখানে একই মঞ্চে দাঁড়িয়েছিলেন ক্রিকেটের ঈশ্বর শচীন টেন্ডুলকার এবং বিশ্বফুটবলের মহাতারকা লিওনেল মেসি। ‘জিওএটি (GOAT) ইন্ডিয়া ট্যুর’-এর অংশ হিসেবে আয়োজিত এই ইভেন্টটি ভারতীয় ক্রীড়াপ্রেমীদের জন্য হয়ে ওঠে এক আনন্দঘন উৎসব, আর গ্যালারি মুখরিত হয়ে ওঠে ‘মেসি, মেসি’ ও ‘শচীন, শচীন’ স্লোগানে।
ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে ভক্তদের জন্য দিনটি ছিল ‘সুপার সানডে’। একটি সেলিব্রেটি ফুটবল ম্যাচ শেষে মঞ্চে উপস্থিত হন মেসি এবং তার দুই সতীর্থ লুইস সুয়ারেজ ও রদ্রিগো ডি পল। সেখানেই যোগ দেন শচীন টেন্ডুলকার। শচীন মঞ্চে উঠে হাসিমুখে মেসিকে বরণ করে নেন। এ সময় তিনি মেসিকে ভারতীয় ক্রিকেট দলের ১০ নম্বর জার্সি উপহার দেন, যে জার্সি নম্বরটি মেসিরও। বিনিময়ে মেসি শচীনকে একটি বিশ্বকাপ বল উপহার দেন। স্টেডিয়ামের হাজার হাজার দর্শক ক্রিকেট ও ফুটবলের দুই মহাতারকাকে এক ফ্রেমে দেখে উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে শচীন এই মুহূর্তটি নিয়ে লিখেছেন, ‘বলতেই হবে, আজকের দিনটা ছিল ১০/১০ লিও মেসি’।
শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে শচীন টেন্ডুলকার নিজের আবেগের কথা জানান। তিনি বলেন, মুম্বাই স্বপ্নের শহর এবং ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে ২০১১ সালের বিশ্বকাপ জয়সহ তার জীবনের অনেক স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। মেসি, সুয়ারেজ এবং ডি পলকে মুম্বাইয়ে পাওয়া ভারতের জন্য একটি সোনালি মুহূর্ত বলে উল্লেখ করেন তিনি। মেসির ভূয়সী প্রশংসা করে শচীন বলেন, লিও সব কিছুই অর্জন করেছেন। তার নিষ্ঠা, প্রতিশ্রুতি এবং বিশেষ করে তার নম্রতার জন্য সবাই তাকে ভালোবাসে। তিনি মেসির পরিবারের সুস্বাস্থ্য কামনা করেন এবং আশা প্রকাশ করেন যে, এই সফরের অনুপ্রেরণায় ভারতীয় ফুটবল একদিন কাঙ্ক্ষিত উচ্চতায় পৌঁছাবে।
উল্লেখ্য, ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামটি ভারতীয় ক্রিকেটের অনেক ইতিহাসের সাক্ষী, যেখানে ২০১১ সালের বিশ্বকাপ জয় এবং বিরাট কোহলির ৫০তম ওয়ানডে সেঞ্চুরির মতো ঘটনা ঘটেছে। সেখানেই এবার যুক্ত হলো ফুটবল ও ক্রিকেটের দুই কিংবদন্তির মিলনমেলা, যা ক্রীড়াপ্রেমীদের হৃদয়ে দীর্ঘকাল গেঁথে থাকবে।
সেল্টা ভিগো এবং চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ম্যানচেস্টার সিটির কাছে হারের পর টানা ব্যর্থতায় রিয়াল মাদ্রিদের কোচ জাভি আলোনসো যেন এক কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি ছিলেন, যার ফলে তাঁর চাকরি নিয়েও গুঞ্জন শুরু হয়েছিল। তবে অবশেষে রিয়াল মাদ্রিদ জয়ের ধারায় ফিরেছে। গতকাল রাতে লা লিগার ম্যাচে আলাভেসকে তাদেরই মাঠে ২-১ গোলে পরাজিত করে আলোনসো স্বস্তির নিশ্বাস ফেললেন।
ম্যাচে রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে গোল দুটি করেন কিলিয়ান এমবাপ্পে এবং রদ্রিগো। এই জয়ের ফলে লিগ টেবিলে শীর্ষে থাকা বার্সেলোনার সাথে রিয়ালের পয়েন্ট ব্যবধান চারে নেমে এসেছে।
অক্টোবরের শেষে এল ক্লাসিকো জয়ের পর ৫ পয়েন্টের লিড নিয়ে শীর্ষে ছিল রিয়াল মাদ্রিদ। কিন্তু এরপর এলচে ও রায়ো ভায়েকানোর সাথে ড্র এবং সাম্প্রতিক পরাজয়ের কারণে তারা শীর্ষস্থান হারায় এবং হ্যান্সি ফ্লিকের বার্সেলোনা শীর্ষে উঠে আসে। এমন কঠিন পরিস্থিতিতে আলাভেসের বিপক্ষে এই জয়টি আলোনসোর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
ম্যাচের ২৪ মিনিটে জুড বেলিংহামের চমৎকার পাস থেকে গোল করে রিয়ালকে এগিয়ে দেন এমবাপ্পে, যা চলতি মৌসুমে তাঁর ১৭তম এবং রিয়ালের জার্সিতে ৭০তম গোল। তবে দ্বিতীয়ার্ধে ঘুরে দাঁড়ায় স্বাগতিক আলাভেস। ম্যাচের ৬৮ মিনিটে বদলি হিসেবে নামার এক মিনিটের মধ্যেই আন্তোনিও ব্লাঙ্কোর পাসে গোল করে কার্লোস ভিসেন্তে আলাভেসকে সমতায় ফেরান। খেলা যখন ড্রয়ের দিকে যাচ্ছিল, তখন ৭৬ মিনিটে ত্রাতা হিসেবে আবির্ভূত হন রদ্রিগো। তিনি স্বদেশী সতীর্থ ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের পাস পেয়ে বক্সে ঢুকে ঠান্ডা মাথায় গোল করে দলের ২-১ ব্যবধানের জয় নিশ্চিত করেন।
বসুন্ধরা স্পোর্টস সিটিতে সফলভাবে পর্দা নামলো ‘আহসান গ্রুপ প্রেজেন্টস প্যাডেল স্ল্যাম ২.০, পাওয়ার্ড বাই অ্যাসেট ডেভেলপমেন্টস’ টুর্নামেন্টের। শনিবার অনুষ্ঠিত ফাইনাল ম্যাচগুলোর মধ্য দিয়ে শেষ হয় তিন দিনব্যাপী এই জমকালো প্রতিযোগিতা। ফাইনাল ম্যাচ উপভোগ করতে প্রতিযোগীদের পাশাপাশি বসুন্ধরা গ্রুপ ও বিভিন্ন স্পন্সর প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
মেন্স অ্যাডভান্সড ক্যাটাগরির ফাইনালে রোমাঞ্চকর লড়াই শেষে ৬-৪, ২-৬ ও ৬-২ সেটে চ্যাম্পিয়ন হন জিউসেপে ও ম্যাশ জুটি। রানারআপ হন রাকিন ও সাদমান।
মেন্স ইন্টারমিডিয়েট ক্যাটাগরিতে ৭-৫, ৬-৩ সেটে শিরোপা জয় করেন তাইসির ও পলক। এই বিভাগে রানারআপ হন ফারহান ও নাবিল। উইমেন্স ডাবলসে ৬-০, ৬-১ সেটে একপেশে ফাইনালে চ্যাম্পিয়ন হন ব্রিয়ানা ও ফারিহা। রানারআপ হন নাভেরা ও তাশফিয়া।
খেলা শেষে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন বসুন্ধরা স্পোর্টস সিটির হেড অফ অপারেশনস মাসুদুর রহমান মান্না। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের শুরুতে স্পন্সর প্রতিষ্ঠান অ্যাসেট ডেভেলপমেন্টসের ডিরেক্টর নাভেরা খান এবং আহসান গ্রুপের প্রতিনিধির হাতে ক্রেস্ট তুলে দেওয়া হয়। আয়োজকরা জানান, ক্রীড়া আয়োজন সফল করতে স্পন্সরদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং তাদের সহযোগিতা ছাড়া এমন বড় পরিসরের টুর্নামেন্ট আয়োজন সম্ভব নয়। এরপর পর্যায়ক্রমে উইমেন্স, মেন্স ইন্টারমিডিয়েট ও মেন্স অ্যাডভান্সড ক্যাটাগরির রানারআপ ও চ্যাম্পিয়ন দলগুলোর হাতে ট্রফি, মেডেল ও আর্থিক পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।
স্থানীয় প্যাডেল ইভেন্টগুলোর মধ্যে অন্যতম বৃহৎ আকর্ষণ হিসেবে এবারের আসরে মোট প্রাইজপুল রাখা হয় ২ লাখ ২৫ হাজার টাকা। তিনটি ক্যাটাগরিতেই চ্যাম্পিয়ন দল পেয়েছে ৫০ হাজার টাকা করে এবং রানার্সআপ দল পেয়েছে ২৫ হাজার টাকা। আকর্ষণীয় এই প্রাইজমানির কারণে প্রতিযোগিতার উত্তেজনার পাশাপাশি খেলোয়াড়দের অংশগ্রহণও উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়।
এছাড়া ফাইনালে অংশগ্রহণকারী খেলোয়াড়দের জন্য আর্থিক পুরস্কারের পাশাপাশি বিভিন্ন স্পন্সর প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বিশেষ উপহার প্রদান করা হয়। শেয়ারট্রিপের পক্ষ থেকে দেওয়া হয় ঢাকা–কক্সবাজার–ঢাকা বিমান টিকিট, লোটোর তরফ থেকে পাঁচ হাজার টাকার গিফট ভাউচার এবং গোল্ডস জিমের পক্ষ থেকে মেম্বারশিপ কার্ড।
এবারের আসরে স্পন্সর হিসেবে ছিল আহসান গ্রুপ, অ্যাসেট ডেভেলপমেন্টস, দৌড়, ব্রুভানা, শেয়ারট্রিপ, লোটো, এম.এইচ.সি, গোল্ডস জিম ও জুলকানসহ আরও কয়েকটি পরিচিত ব্র্যান্ড। আসরের ব্রডকাস্ট পার্টনার হিসেবে ছিল দেশের একমাত্র স্পোর্টস চ্যানেল টি-স্পোর্টস। আসরের খেলাগুলো টি স্পোর্টস চ্যানেল ও তাদের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোতে সম্প্রচার করেছে। যা মাঠের বাইরেও প্যাডেলপ্রেমীদের মাঝে এই খেলার পরিচিতি ছড়িয়ে দিচ্ছে। আয়োজকদের আশা, এ ধরনের আয়োজন প্যাডেলকে বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মের কাছে আরও জনপ্রিয় করে তুলবে এবং দেশের ক্রীড়াঙ্গনে যোগ করবে নতুন মাত্রা।
প্যাডেল স্ল্যামের এটি দ্বিতীয় আসর। আমেরিকা ও ইউরোপে জনপ্রিয় র্যাকেটভিত্তিক এই খেলাটি টেনিসের মতো দেখতে হলেও নিয়ম ও কৌশলে ভিন্ন। তুলনামূলক ছোট, ঘেরা কোর্টে ডাবলসে খেলা হয় প্যাডেল। বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে প্যাডেল খেলাটির ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা বাড়ছে এবং এর পেছনে বসুন্ধরা গ্রুপের নিয়মিত আয়োজন ও অবকাঠামোগত সহায়তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বসুন্ধরা স্পোর্টস সিটিতে ধারাবাহিক আয়োজনের ফলে নতুন প্রজন্মের ক্রীড়াপ্রেমীদের মাঝে এই খেলার প্রতি আগ্রহ বাড়ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
২০২৬ সালের ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকো। আগামী ১১ জুন থেকে শুরু হতে যাওয়া এই আসরের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে একটি হতে চলেছে ভেন্যুগুলোর বিশাল দূরত্বজনিত 'ভ্রমণ ক্লান্তি'। কাতার বিশ্বকাপের মতো স্টেডিয়ামগুলো কাছাকাছি না থাকায় এবার দলগুলোকে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে, তবে এই ভ্রমণ ক্লান্তির সমীকরণে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলের চেয়ে অনেক বেশি সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে।
গ্রুপ পর্বের সূচি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ব্রাজিলকে প্রায় ১ হাজার ৯৪ মাইল পথ ভ্রমণ করতে হবে। অন্যদিকে, লিওনেল মেসি নেতৃত্বাধীন আর্জেন্টিনার ভ্রমণ দূরত্ব তুলনামূলকভাবে অনেক কম, মাত্র ৪৬১ মাইল। আর্জেন্টিনা তাদের তিনটি গ্রুপ পর্বের ম্যাচ যুক্তরাষ্ট্রের ডালাস এবং কানসাস সিটিতে খেলবে, যা এই ভ্রমণ সুবিধা এনে দিয়েছে।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২২ সালের কাতার বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বের দলগুলোর গড় ভ্রমণ ছিল মাত্র ৮৬ মাইল। কিন্তু উত্তর আমেরিকার বিশাল এলাকায় অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ২০২৬ বিশ্বকাপে দলগুলোর গড় ভ্রমণ বেড়ে দাঁড়াবে প্রায় ৫ হাজার ১৬৭ মাইলে। তবে এই সংখ্যাটি ২০১৪ সালের ব্রাজিল বিশ্বকাপের চেয়ে কম, যেখানে দলগুলোকে গড়ে ৭ হাজার ৫৪ মাইল ভ্রমণ করতে হয়েছিল।
ক্রীড়া বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন যে দীর্ঘ বিমান ভ্রমণ এবং সময়ের পার্থক্যের কারণে খেলোয়াড়দের ঘুম ও বিশ্রামে ব্যাঘাত ঘটতে পারে, যা মাংসপেশির আঘাতের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ভ্রমণজনিত ধকল মোকাবিলায় শারীরিক প্রস্তুতির পাশাপাশি খেলোয়াড়দের মানসিক দৃঢ়তাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
বিশ্ব রেসলিংয়ের কিংবদন্তি এবং ডব্লিউডব্লিউই সুপারস্টার জন সিনা তাঁর বর্ণময় কুস্তি জীবনকে বিদায় জানিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটাল ওয়ান অ্যারেনায় অনুষ্ঠিত স্যাটারডে নাইটস মেইন ইভেন্টে গুন্থারের কাছে হেরে যাওয়ার মাধ্যমে তাঁর রেসলিং অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটে। ১৭ বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন সিনা এবং গুন্থারের মধ্যকার শেষ ম্যাচটি ছিল অত্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। ম্যাচের বেশিরভাগ সময় সিনা প্রতিপক্ষকে চাপে রেখে তিনটি অ্যাটিটিউড অ্যাডজাস্টমেন্ট দেন এবং কমেন্ট্রি টেবিলের ওপর দিয়ে ছুড়েও ফেলেন, কিন্তু পিনফল আদায় করতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত সিনা স্লিপার হোল্ডে ট্যাপ আউট করতে বাধ্য হন, যা তাঁর রেসলিং ক্যারিয়ারের ইতি টানে।
ডব্লিউডব্লিউই এই রাতটিকে এক বিশাল আয়োজনে পরিণত করেছিল। দর্শক সারিতে কার্ট অ্যাঙ্গেল, রব ফন ড্যাম, ট্রিশ স্ট্রস এবং ইভ তরেসের মতো কিংবদন্তিরা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও ভিডিও বার্তার মাধ্যমে শ্রদ্ধা জানান আন্ডারটেকার এবং ‘রক’।
রিংয়ে প্রথমে গুন্থার প্রবেশ করেন এবং এরপর জন সিনার নাম ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই দর্শকরা করতালি ও চিৎকারে পুরো অঙ্গন মুখরিত করে তোলে। সিনা নিজেও রিংয়ের দিকে দৌড়ে গিয়ে রিংসাইডে বসা কিংবদন্তিদের অভিবাদন জানান।
ম্যাচ শেষে পরিবেশ ছিল আবেগঘন। লকার রুম থেকে অন্যান্য রেসলাররা রিং ঘিরে ধরেন এবং সিএম পাঙ্ক ও কোডি রোডস তাঁর কাঁধে চ্যাম্পিয়নশিপ বেল্ট রাখেন। দর্শকরা একটানা ‘থ্যাঙ্ক ইউ সিনা’ ধ্বনি দিতে থাকেন। সিনা এরপর ট্রিপল এইচকে জড়িয়ে ধরেন এবং শেষবারের মতো একটি ট্রিবিউট ভিডিও প্রদর্শিত হয়। সবশেষে, সিনা র্যাম্প বেয়ে উঠে দর্শকদের স্যালুট জানিয়ে চিরতরে অঙ্গন ত্যাগ করেন।
কাতারের আল-রাইয়ানের আহমাদ বিন আলী স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ফিফা চ্যালেঞ্জার কাপ ২০২৫-এর ফাইনালে মিশরের ক্লাব পিরামিডস এফসিকে ২-০ গোলে হারিয়ে শিরোপা জিতেছে ব্রাজিলের ঐতিহ্যবাহী ক্লাব ফ্লামেঙ্গো। এই দাপুটে জয়ের ফলে ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপের ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে ব্রাজিলিয়ান জায়ান্টরা। আগামী ১৭ ডিসেম্বর একই ভেন্যুতে শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে ফ্লামেঙ্গো লড়বে বর্তমান উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ী ও ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ ২০২৫-এর রানার্সআপ প্যারিস সেন্ট-জার্মেইর (পিএসজি) বিপক্ষে।
ম্যাচের শুরু থেকেই বলের দখল ও পাসিংয়ে আধিপত্য বিস্তার করে খেলতে থাকে ফ্লামেঙ্গো। খেলার ২৪তম মিনিটে জর্জিয়ান মিডফিল্ডার আরাসকায়েতার নেওয়া নিখুঁত ফ্রি-কিক থেকে হেডে গোল করে দলকে এগিয়ে দেন লিও পেরেইরা। প্রথমার্ধে একাধিকবার সমতায় ফেরার চেষ্টা করে পিরামিডস এফসি, কিন্তু তাদের ফরোয়ার্ড ফিস্টন মায়েলের প্রচেষ্টাগুলো ফ্লামেঙ্গোর গোলরক্ষক আগুস্তিন রোসির দৃঢ়তায় ব্যর্থ হয়।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেও আক্রমণের ধার বজায় রাখে ফ্লামেঙ্গো। ম্যাচের ৫২তম মিনিটে আরাসকায়েতার আরেকটি ফ্রি-কিক থেকে হেডে গোল করে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন দানিলো। দুই গোলে পিছিয়ে পড়ার পর মিশরীয় ক্লাবটি ম্যাচে ফেরার চেষ্টা করলেও ফ্লামেঙ্গোর রক্ষণ ভাঙতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত ২-০ গোলের জয়ে চ্যালেঞ্জার কাপের ট্রফি নিশ্চিত করে ফ্লামেঙ্গো। এখন ফুটবলপ্রেমীদের চোখ ১৭ ডিসেম্বরের হাইভোল্টেজ ফাইনালের দিকে, যেখানে লাতিন আমেরিকার শৈল্পিক ফুটবলের মুখোমুখি হবে পিএসজির ইউরোপীয় শক্তি।
লা লিগায় রাফিনিয়ার দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে ওসাসুনাকে ২-০ গোলে হারিয়ে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষস্থান আরও মজবুত করেছে বার্সেলোনা। এই জয়ের ফলে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদের চেয়ে ৭ পয়েন্টের ব্যবধানে এগিয়ে গেল হান্সি ফ্লিকের দল। ক্যাম্প ন্যুতে অনুষ্ঠিত এই ম্যাচে প্রথমার্ধে একাধিক সুযোগ তৈরি করেও গোলের দেখা পায়নি স্বাগতিকরা। ম্যাচের ২৩ মিনিটে মার্কাস রাশফোর্ডের ক্রস থেকে ফেরান তোরেস বল জালে জড়ালেও ভিএআরের হস্তক্ষেপে গোলটি বাতিল হয়ে যায়।
দ্বিতীয়ার্ধে আক্রমণের ধার বাড়ায় বার্সেলোনা। লামিনে ইয়ামাল ও রাশফোর্ড বারবার প্রতিপক্ষের রক্ষণে হানা দিলেও ওসাসুনার রক্ষণ ভাঙতে বেশ সময় লাগে। অবশেষে ম্যাচের ৭০ মিনিটে পেদ্রির পাস থেকে নিচু ডান কোণ দিয়ে দর্শনীয় শটে দলকে কাঙ্ক্ষিত লিড এনে দেন ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড রাফিনিয়া। এরপর ম্যাচের ৮৬ মিনিটে জুলস কুন্দের ক্রস থেকে নিজের ও দলের দ্বিতীয় গোলটি করে জয় নিশ্চিত করেন তিনি। এই জয়ের মাধ্যমে ২০১৭ সালের পর আবারও লা লিগায টানা সাত ম্যাচে অন্তত দুই গোলের ব্যবধানে জয়ের কৃতিত্ব দেখাল বার্সেলোনা।
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে ইতিহাস গড়েছেন মোহামেদ সালাহ। তার রেকর্ড গড়া রাতে ব্রাইটনকে ২-০ গোলে হারিয়েছে লিভারপুল। একই রাতে আত্মঘাতী গোলের নাটকীয়তায় জয় পেয়েছে লিগ লিডার আর্সেনাল এবং দীর্ঘ খরা কাটিয়ে জয়ে ফিরেছে চেলসি।
কোচ আর্নে স্লটের সঙ্গে মতবিরোধ মিটিয়ে শনিবার অ্যানফিল্ডে বেঞ্চ থেকে শুরু করেছিলেন সালাহ। ম্যাচের ২৬ মিনিটে ইনজুরি আক্রান্ত জো গোমেজের বদলি হিসেবে মাঠে নামেন তিনি। ম্যাচে লিভারপুলের হয়ে জোড়া গোল করেন হুগো একিটিকে, যার দ্বিতীয় গোলটিতে অ্যাসিস্ট করেন সালাহ। এই অ্যাসিস্টের মাধ্যমেই প্রিমিয়ার লিগে এক ক্লাবের হয়ে সর্বোচ্চ ২৭৭টি গোল ও অ্যাসিস্টের (১৮৮ গোল ও ৮৯ অ্যাসিস্ট) মালিক হলেন এই মিশরীয় ফরোয়ার্ড। এর মাধ্যমে তিনি ভেঙেছেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড কিংবদন্তি ওয়েইন রুনির (২৭৬) দীর্ঘদিনের রেকর্ড।
এদিকে, উলভসের বিপক্ষে ভাগ্যের সহায়তায় ২-১ গোলের নাটকীয় জয় পেয়েছে আর্সেনাল। ম্যাচের ৬৭ মিনিটে বুকায়ো সাকার কর্নার থেকে এবং শেষ মুহূর্তে আবারও সাকার ক্রস ক্লিয়ার করতে গিয়ে উলভসের স্যাম জনস্টোন ও ইয়ারসন মোসকেরা নিজেদের জালে বল জড়ালে দুটি আত্মঘাতী গোল উপহার পায় গানাররা। এই জয়ে লিগ টেবিলে ৫ পয়েন্টের লিড নিয়ে শীর্ষস্থান আরও মজবুত করল আর্সেনাল, অন্যদিকে টানা নবম হারের তিক্ত স্বাদ পেল উলভস।
দিনের অন্য ম্যাচে স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে এভারটনকে ২-০ গোলে হারিয়ে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে টানা চার ম্যাচ পর জয়ে ফিরেছে চেলসি। দলের হয়ে গোল করেন কোল পালমার ও মালো গুস্তো। চেলসির জয়ে স্বস্তি ফিরলেও হতাশা বেড়েছে এভারটনের। ডেভিড ময়েসের দল এ নিয়ে চেলসির মাঠে টানা ৩১ ম্যাচ জয়হীন থাকার লজ্জার রেকর্ড বহাল রাখল।
ফুটবলের শীর্ষ পর্যায়ে দীর্ঘদিন দাপটের সঙ্গে টিকে থাকার জন্য ম্যানচেস্টার সিটির তারকা স্ট্রাইকার আর্লিং হালান্ড অনুপ্রেরণা খোঁজেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো ও লিওনেল মেসির মধ্যে। টিএনটি ব্রাজিলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নরওয়েজিয়ান এই গোলমেশিন জানান, বিশ্বের সেরা লিগগুলোতে টানা ১৫ বছর ধরে সর্বোচ্চ মানের পারফর্ম করার যে উদাহরণ এই দুই মহাতারকা সৃষ্টি করেছেন, তা প্রতিটি ফুটবলারের জন্যই শিক্ষণীয়।
সাক্ষাৎকারে হালান্ড বিশেষ করে ৪০ বছর বয়সী ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর ফিটনেস ও শৃঙ্খলার ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, রোনালদো যেভাবে নিজের শরীরের যত্ন নেন এবং জীবনযাপন নিয়ন্ত্রণ করেন, তা অবিশ্বাস্য। ইতোমধ্যে ৯৫০টির বেশি গোল করা এবং ২০২৭ সাল পর্যন্ত আল নাসরের সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করা রোনালদোর এই দীর্ঘস্থায়ী পারফরম্যান্স হালান্ডকে মুগ্ধ করে। একইসঙ্গে, ৩৮ বছর বয়সেও লিওনেল মেসির ইন্টার মায়ামিতে এমএলএস কাপ জয় এবং টানা দ্বিতীয়বারের মতো সেরা খেলোয়াড় ও গোল্ডেন বুট জেতার বিষয়টিকেও তিনি বড় অনুপ্রেরণা হিসেবে দেখেন।
সম্প্রতি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে প্রথমবারের মতো গোল করে আলোচনায় এসেছেন ২৫ বছর বয়সী হালান্ড। তার পেনাল্টি গোলে ম্যানচেস্টার সিটি ২-১ ব্যবধানে জয় পায়। ঐতিহাসিক এই স্টেডিয়ামে প্রথম গোল ও জয়কে তিনি নিজের ক্যারিয়ারের স্মরণীয় মুহূর্ত হিসেবে অভিহিত করেন। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে এখন পর্যন্ত ৫৪ ম্যাচে তার গোলসংখ্যা ৫৫।
অন্যদিকে, জাতীয় দলের হয়েও স্বপ্নের ফর্মে আছেন হালান্ড। তার দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের ওপর ভর করে দীর্ঘ ২৮ বছর পর বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে নরওয়ে। বাছাইপর্বে প্রতি ম্যাচে গড়ে দুটি করে গোল করেছেন তিনি। আগামী বছর প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ খেলতে মুখিয়ে থাকা এই তারকা জানান, বিশ্বকাপ নিশ্চিত হওয়ার খুশিতে তিনি নিজের অভ্যাসের বিপরীতে গিয়ে বিয়ার পান করে উদযাপন করেছিলেন, যা তার জন্য ছিল এক বিশেষ মুহূর্ত।