অস্ট্রেলিয়া অনেক বড় প্রতিপক্ষ। তাদের বিপক্ষে খেলা সব সময় চ্যালেঞ্জের। তাদের বিপক্ষে ম্যাচটি যে বাংলাদেশের জন্য অনেক কঠিন হতে যাচ্ছে- তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। বাংলাদেশের সামনে যে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি টুর্নামেন্টে খেলার যোগ্যতা অর্জন করার নতুন লক্ষ্য দাঁড়িয়েছে, সেই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য স্বাভাবিকভাবেই দল বেশি চাপে থাকবে। সেই স্নায়ু চাপ কাটিয়ে লড়াইয়ে এগিয়ে যেতে হবে টাইগারদের। আমি মনে করি, আজ অস্ট্রেলিয়ার মতো পরাশক্তি দলের রাশ টানতে হলে দলের সর্বশক্তি বিনিয়োগ করতে হবে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি টুর্নামেন্টে খেলার টিকিট নিশ্চিত করে সম্মানজনকভাবে বিশ্বকাপ সমাপ্ত করার জন্য দলের সবাইকে একযোগে জ্বলে ওঠা ছাড়া বিকল্প দেখছি না।
অস্ট্রেলিয়া ম্যাচের আগে দলের সবচেয়ে মেধাবী খেলোয়াড় ও অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের চোটে পড়ার ঘটনা দলের জন্য বড় একটি ধাক্কা। কেননা সাকিবকে ছাড়া দলের কম্বিনেশন গঠন করা কঠিন। গত ম্যাচে ব্যাটিং ও বোলিংয়ে সাকিব স্বরূপেই ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। কিন্তু তাকে ছাড়া যেমন বোলিংয়ে নতুন করে চিন্তা করতে হবে দলকে, ঠিক তেমনি ব্যাটিংয়েও তার অভাববোধ করবে দল। যদিও তার জায়গায় দলে নেয়া হয়েছে উইকেটরক্ষক-ব্যাটার এনামুল হক বিজয়কে। স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় সাকিববিহীন অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে আবারও ব্যাটিং অর্ডারে রদবদল হবে। যেহেতু বিশ্বকাপে পুরোপুরি অফ ফর্মে রয়েছেন লিটন দাস, তাকে নিচে নামিয়ে খেলানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বুদ্ধিমানের কাজ। নতুন তানজিদ তামিমের সঙ্গে বিজয়কে উদ্বোধনী জুটিতে ভরসা করা যেতে পারে। যে আশায় বিশ্বকাপে নেয়া হয়েছিল তানজিদ তামিমকে, তা কিন্তু পূরণ হয়নি। তার শট সিলেকশনে গলদ আছে। ব্যাটিংয়ের সময় টেম্পারমেন্ট ধরে রাখতে পারছে না। বেশ কিছু জায়গায় এই তামিমকে আরও উন্নতি করতে হবে। অন্যদিকে, বিজয় পরীক্ষিত ওপেনার। তবে টুর্নামেন্টের শেষ দিকে হঠাৎ দলে যোগ দিয়ে কতটা ব্যাটিংয়ে নিজেকে মেলে ধরতে পারেন বিজয়- সেটি দেখার বিষয়। তিন ও চারে লিটন ও শান্তকে ব্যাটিংয়ে দেখা যাওয়াটাই স্বাভাবিক। বিশ্বকাপে মাহমুদউল্লাহ ও মেহেদী হাসান মিরাজ কিন্তু খুবই আত্মবিশ্বাসী ব্যাটিং করেছেন। তাদের কাছ থেকে অস্ট্রেলিয়া ম্যাচেও রান চাই। মুশফিক আড়ালে পড়ে গেলেও তার ব্যাটে আলোর দেখা মিলতে পারে। আরেকটি বিষয় হলো- ক্যারিয়ারের যে গোধূলি লগ্নে দাঁড়িয়ে আছেন মাহমুদউল্লাহ ও মুশফিক, আজ বিশ্বকাপে এই দুজনের শেষ ম্যাচ হতে পারে। তাই ব্যাটিং নৈপুণ্য দেখিয়ে এই ম্যাচটি স্মরণীয় করে রাখার দারুণ সুযোগ তাদের সামনে। দলের অন্যরাও সেরাটা নিংড়ে দেয়ার চেষ্টা করবেন। চেষ্টার কোনো ক্রটি থাকবে না। তবে অস্ট্রেলিয়ার যে বিশ্বমানের বিধ্বংসী বোলিং লাইনআপ, তাদের সামনে বড় পরীক্ষা দিতে হবে বাংলাদেশের ব্যাটারদের। মিচেল স্টার্ক, হ্যাজলউড, প্যাট কামিন্সদের দ্রুতগতির বল সামলানো কঠিন হবে। নতুন বলে খুবই ভয়ংকর তারা। তাদের বিরুদ্ধে ভালো করতে হলে ব্যাটিংয়ে নিপুণ দক্ষতা দেখাতে হবে। রান বের করতে হলে ঝুঁকিমুক্ত শট খেলতে হবে। শট সিলেকশনে গরমিল হলেই বিপদ হবে। বিশেষ করে অজি লেগ স্পিনার অ্যাডাম জাম্পা টুর্নামেন্টে খুবই ভালো বোলিং করছেন। তার বোলিং যেমন বৈচিত্র্যময়, তেমনি ধারালো ও কার্যকর। তাকে দেখে-শুনে খেলতে হবে। এখন পর্যন্ত টুর্নামেন্টে ব্যাটিংয়ে নিজেদের সামর্থ্যের পুরোটা প্রমাণ করতে পারেনি বাংলাদেশ। আজ যদি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ব্যাটিং শক্তির সেরা প্রদর্শনীটা দেখানো যায়, তাহলে ভালো কিছুর আশা করছি।
গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ইতিহাসের সেরা ব্যাটিং করে দেখালেন গত ম্যাচে। তার ব্যাটিং-বিস্ফোরণে অসহায় আত্মসমর্পণ করেছেন আফগান-যোদ্ধারা। শারীরিকভাবে পুরোপুরি ফিট না হয়েও যে ব্যাটিং কীর্তি দেখালেন ম্যাক্সওয়েল, তা অতিমানবীয়, অবিশ্বাস্য এবং এককথায় অসাধারণ। অপরাজিত ডাবল সেঞ্চুরির ইনিংস উপহার দিয়ে দলকে যে জয় উপহার দিলেন- তাতে প্রমাণ করলেন যে, সঠিক সঙ্গ পেলে সব প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে গিয়েও একা একা ব্যাটিং করে ম্যাচ জেতানো যায়। আজকের ম্যাচে ম্যাক্সওয়েলের খেলা নিয়ে শঙ্কা আছে। তবে এই বিস্ফোরক অলরাউন্ডারকে আলাদাভাবে না ভেবে সার্বিক অস্ট্রেলিয়া দলকে নিয়ে রণকৌশল সাজাতে হবে। স্পিন দিয়ে অস্ট্রেলিয়ানদের ঘায়েল করা যেতে পারে। তবে তাদের হতাশ করতে হলে বোলিংয়ে নতুনত্ব আনা জরুরি। মাথা খাটিয়ে বোলিং করতে হবে। অবশ্য এ ক্ষেত্রে উইকেটের সহযোগিতাও প্রয়োজন। তবে বাংলাদেশের পেস ইউনিট কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। গত ম্যাচে নবীন পেসার তানজীম হাসান সাকিব অনেক রান খরচ করলেও ভালো বোলিং করেছেন। আজকের ম্যাচে তাকে একাদশে রাখা যেতে পারে। উইকেট বিবেচনায় একাদশে ফেরানো যেতে পারে মোস্তাফিজকেও। তবে তাসকিনের নেতৃত্বাধীন পেস ইউনিট স্বরূপে জ্বলে উঠতে পারলে অস্ট্রেলিয়া বিপাকে পড়তে পারে। তবে তাদের যে ব্যাটিং লাইনআপ, তা খুবই শক্তিশালী। তাদের ব্যর্থ করা কঠিন হবে। তবে আশা ছেড়ে দিলে হবে না। লড়াই জমিয়ে তুলতে হবে।
পুনের যে মাঠে খেলা হবে আজ, সেখানে আগেও ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। বলা হচ্ছে, পুনের উইকেট ব্যাটিং-স্বর্গই হবে। বেশ ভালোভাবেই বল ব্যাটে আসবে। রান হবে প্রচুর। হাই-স্কোরিং ম্যাচ হবে। মাঠের বাউন্ডারি লাইন ছোট হওয়ায় চার-ছক্কার ফুলঝুরি ছুটবে। এ ক্ষেত্রে টস জিতে আগে ব্যাটিং করা দল বেশি সুবিধা আদায় করে নিতে পারবে। টস জিততে পারলে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে ভুল করা যাবে না। মোট কথা, আফগানিস্তানকে হারিয়ে টুর্নামেন্টের শুরুর ম্যাচটি যেভাবে রাঙিয়েছিল বাংলাদেশ, একইভাবে আজ জয় দিয়ে বিশ্বকাপের শেষটা রাঙাতে হলে মাঠে টাইগারদের ভয়ংকর রূপ ধারণ করতে হবে। যদি তা করা যায়, তাহলে ২০০৫ সালে কার্ডিফে অস্ট্রেলিয়াকে হারানোর সুখস্মৃতি ফিরিয়ে আনবে বাংলাদেশ। পুনের মাঠে রচিত হবে মহাকাব্যিক একটি জয়। বাংলাদেশ নতুন শক্তিতে জেগে উঠুক, জয়ের সূর্য উদিত হয়ে আলো ছড়িয়ে পড়ুক চারদিকে, আনন্দে-উচ্ছ্বাসে মেতে উঠুক সবাই- এটাই প্রত্যাশা করছি।
২০২৬ সালের ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকো। আগামী ১১ জুন থেকে শুরু হতে যাওয়া এই আসরের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে একটি হতে চলেছে ভেন্যুগুলোর বিশাল দূরত্বজনিত 'ভ্রমণ ক্লান্তি'। কাতার বিশ্বকাপের মতো স্টেডিয়ামগুলো কাছাকাছি না থাকায় এবার দলগুলোকে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে, তবে এই ভ্রমণ ক্লান্তির সমীকরণে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলের চেয়ে অনেক বেশি সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে।
গ্রুপ পর্বের সূচি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ব্রাজিলকে প্রায় ১ হাজার ৯৪ মাইল পথ ভ্রমণ করতে হবে। অন্যদিকে, লিওনেল মেসি নেতৃত্বাধীন আর্জেন্টিনার ভ্রমণ দূরত্ব তুলনামূলকভাবে অনেক কম, মাত্র ৪৬১ মাইল। আর্জেন্টিনা তাদের তিনটি গ্রুপ পর্বের ম্যাচ যুক্তরাষ্ট্রের ডালাস এবং কানসাস সিটিতে খেলবে, যা এই ভ্রমণ সুবিধা এনে দিয়েছে।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২২ সালের কাতার বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বের দলগুলোর গড় ভ্রমণ ছিল মাত্র ৮৬ মাইল। কিন্তু উত্তর আমেরিকার বিশাল এলাকায় অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ২০২৬ বিশ্বকাপে দলগুলোর গড় ভ্রমণ বেড়ে দাঁড়াবে প্রায় ৫ হাজার ১৬৭ মাইলে। তবে এই সংখ্যাটি ২০১৪ সালের ব্রাজিল বিশ্বকাপের চেয়ে কম, যেখানে দলগুলোকে গড়ে ৭ হাজার ৫৪ মাইল ভ্রমণ করতে হয়েছিল।
ক্রীড়া বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন যে দীর্ঘ বিমান ভ্রমণ এবং সময়ের পার্থক্যের কারণে খেলোয়াড়দের ঘুম ও বিশ্রামে ব্যাঘাত ঘটতে পারে, যা মাংসপেশির আঘাতের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ভ্রমণজনিত ধকল মোকাবিলায় শারীরিক প্রস্তুতির পাশাপাশি খেলোয়াড়দের মানসিক দৃঢ়তাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
বিশ্ব রেসলিংয়ের কিংবদন্তি এবং ডব্লিউডব্লিউই সুপারস্টার জন সিনা তাঁর বর্ণময় কুস্তি জীবনকে বিদায় জানিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটাল ওয়ান অ্যারেনায় অনুষ্ঠিত স্যাটারডে নাইটস মেইন ইভেন্টে গুন্থারের কাছে হেরে যাওয়ার মাধ্যমে তাঁর রেসলিং অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটে। ১৭ বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন সিনা এবং গুন্থারের মধ্যকার শেষ ম্যাচটি ছিল অত্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। ম্যাচের বেশিরভাগ সময় সিনা প্রতিপক্ষকে চাপে রেখে তিনটি অ্যাটিটিউড অ্যাডজাস্টমেন্ট দেন এবং কমেন্ট্রি টেবিলের ওপর দিয়ে ছুড়েও ফেলেন, কিন্তু পিনফল আদায় করতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত সিনা স্লিপার হোল্ডে ট্যাপ আউট করতে বাধ্য হন, যা তাঁর রেসলিং ক্যারিয়ারের ইতি টানে।
ডব্লিউডব্লিউই এই রাতটিকে এক বিশাল আয়োজনে পরিণত করেছিল। দর্শক সারিতে কার্ট অ্যাঙ্গেল, রব ফন ড্যাম, ট্রিশ স্ট্রস এবং ইভ তরেসের মতো কিংবদন্তিরা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও ভিডিও বার্তার মাধ্যমে শ্রদ্ধা জানান আন্ডারটেকার এবং ‘রক’।
রিংয়ে প্রথমে গুন্থার প্রবেশ করেন এবং এরপর জন সিনার নাম ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই দর্শকরা করতালি ও চিৎকারে পুরো অঙ্গন মুখরিত করে তোলে। সিনা নিজেও রিংয়ের দিকে দৌড়ে গিয়ে রিংসাইডে বসা কিংবদন্তিদের অভিবাদন জানান।
ম্যাচ শেষে পরিবেশ ছিল আবেগঘন। লকার রুম থেকে অন্যান্য রেসলাররা রিং ঘিরে ধরেন এবং সিএম পাঙ্ক ও কোডি রোডস তাঁর কাঁধে চ্যাম্পিয়নশিপ বেল্ট রাখেন। দর্শকরা একটানা ‘থ্যাঙ্ক ইউ সিনা’ ধ্বনি দিতে থাকেন। সিনা এরপর ট্রিপল এইচকে জড়িয়ে ধরেন এবং শেষবারের মতো একটি ট্রিবিউট ভিডিও প্রদর্শিত হয়। সবশেষে, সিনা র্যাম্প বেয়ে উঠে দর্শকদের স্যালুট জানিয়ে চিরতরে অঙ্গন ত্যাগ করেন।
কাতারের আল-রাইয়ানের আহমাদ বিন আলী স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ফিফা চ্যালেঞ্জার কাপ ২০২৫-এর ফাইনালে মিশরের ক্লাব পিরামিডস এফসিকে ২-০ গোলে হারিয়ে শিরোপা জিতেছে ব্রাজিলের ঐতিহ্যবাহী ক্লাব ফ্লামেঙ্গো। এই দাপুটে জয়ের ফলে ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপের ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে ব্রাজিলিয়ান জায়ান্টরা। আগামী ১৭ ডিসেম্বর একই ভেন্যুতে শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে ফ্লামেঙ্গো লড়বে বর্তমান উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ী ও ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ ২০২৫-এর রানার্সআপ প্যারিস সেন্ট-জার্মেইর (পিএসজি) বিপক্ষে।
ম্যাচের শুরু থেকেই বলের দখল ও পাসিংয়ে আধিপত্য বিস্তার করে খেলতে থাকে ফ্লামেঙ্গো। খেলার ২৪তম মিনিটে জর্জিয়ান মিডফিল্ডার আরাসকায়েতার নেওয়া নিখুঁত ফ্রি-কিক থেকে হেডে গোল করে দলকে এগিয়ে দেন লিও পেরেইরা। প্রথমার্ধে একাধিকবার সমতায় ফেরার চেষ্টা করে পিরামিডস এফসি, কিন্তু তাদের ফরোয়ার্ড ফিস্টন মায়েলের প্রচেষ্টাগুলো ফ্লামেঙ্গোর গোলরক্ষক আগুস্তিন রোসির দৃঢ়তায় ব্যর্থ হয়।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেও আক্রমণের ধার বজায় রাখে ফ্লামেঙ্গো। ম্যাচের ৫২তম মিনিটে আরাসকায়েতার আরেকটি ফ্রি-কিক থেকে হেডে গোল করে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন দানিলো। দুই গোলে পিছিয়ে পড়ার পর মিশরীয় ক্লাবটি ম্যাচে ফেরার চেষ্টা করলেও ফ্লামেঙ্গোর রক্ষণ ভাঙতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত ২-০ গোলের জয়ে চ্যালেঞ্জার কাপের ট্রফি নিশ্চিত করে ফ্লামেঙ্গো। এখন ফুটবলপ্রেমীদের চোখ ১৭ ডিসেম্বরের হাইভোল্টেজ ফাইনালের দিকে, যেখানে লাতিন আমেরিকার শৈল্পিক ফুটবলের মুখোমুখি হবে পিএসজির ইউরোপীয় শক্তি।
লা লিগায় রাফিনিয়ার দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে ওসাসুনাকে ২-০ গোলে হারিয়ে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষস্থান আরও মজবুত করেছে বার্সেলোনা। এই জয়ের ফলে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদের চেয়ে ৭ পয়েন্টের ব্যবধানে এগিয়ে গেল হান্সি ফ্লিকের দল। ক্যাম্প ন্যুতে অনুষ্ঠিত এই ম্যাচে প্রথমার্ধে একাধিক সুযোগ তৈরি করেও গোলের দেখা পায়নি স্বাগতিকরা। ম্যাচের ২৩ মিনিটে মার্কাস রাশফোর্ডের ক্রস থেকে ফেরান তোরেস বল জালে জড়ালেও ভিএআরের হস্তক্ষেপে গোলটি বাতিল হয়ে যায়।
দ্বিতীয়ার্ধে আক্রমণের ধার বাড়ায় বার্সেলোনা। লামিনে ইয়ামাল ও রাশফোর্ড বারবার প্রতিপক্ষের রক্ষণে হানা দিলেও ওসাসুনার রক্ষণ ভাঙতে বেশ সময় লাগে। অবশেষে ম্যাচের ৭০ মিনিটে পেদ্রির পাস থেকে নিচু ডান কোণ দিয়ে দর্শনীয় শটে দলকে কাঙ্ক্ষিত লিড এনে দেন ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড রাফিনিয়া। এরপর ম্যাচের ৮৬ মিনিটে জুলস কুন্দের ক্রস থেকে নিজের ও দলের দ্বিতীয় গোলটি করে জয় নিশ্চিত করেন তিনি। এই জয়ের মাধ্যমে ২০১৭ সালের পর আবারও লা লিগায টানা সাত ম্যাচে অন্তত দুই গোলের ব্যবধানে জয়ের কৃতিত্ব দেখাল বার্সেলোনা।
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে ইতিহাস গড়েছেন মোহামেদ সালাহ। তার রেকর্ড গড়া রাতে ব্রাইটনকে ২-০ গোলে হারিয়েছে লিভারপুল। একই রাতে আত্মঘাতী গোলের নাটকীয়তায় জয় পেয়েছে লিগ লিডার আর্সেনাল এবং দীর্ঘ খরা কাটিয়ে জয়ে ফিরেছে চেলসি।
কোচ আর্নে স্লটের সঙ্গে মতবিরোধ মিটিয়ে শনিবার অ্যানফিল্ডে বেঞ্চ থেকে শুরু করেছিলেন সালাহ। ম্যাচের ২৬ মিনিটে ইনজুরি আক্রান্ত জো গোমেজের বদলি হিসেবে মাঠে নামেন তিনি। ম্যাচে লিভারপুলের হয়ে জোড়া গোল করেন হুগো একিটিকে, যার দ্বিতীয় গোলটিতে অ্যাসিস্ট করেন সালাহ। এই অ্যাসিস্টের মাধ্যমেই প্রিমিয়ার লিগে এক ক্লাবের হয়ে সর্বোচ্চ ২৭৭টি গোল ও অ্যাসিস্টের (১৮৮ গোল ও ৮৯ অ্যাসিস্ট) মালিক হলেন এই মিশরীয় ফরোয়ার্ড। এর মাধ্যমে তিনি ভেঙেছেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড কিংবদন্তি ওয়েইন রুনির (২৭৬) দীর্ঘদিনের রেকর্ড।
এদিকে, উলভসের বিপক্ষে ভাগ্যের সহায়তায় ২-১ গোলের নাটকীয় জয় পেয়েছে আর্সেনাল। ম্যাচের ৬৭ মিনিটে বুকায়ো সাকার কর্নার থেকে এবং শেষ মুহূর্তে আবারও সাকার ক্রস ক্লিয়ার করতে গিয়ে উলভসের স্যাম জনস্টোন ও ইয়ারসন মোসকেরা নিজেদের জালে বল জড়ালে দুটি আত্মঘাতী গোল উপহার পায় গানাররা। এই জয়ে লিগ টেবিলে ৫ পয়েন্টের লিড নিয়ে শীর্ষস্থান আরও মজবুত করল আর্সেনাল, অন্যদিকে টানা নবম হারের তিক্ত স্বাদ পেল উলভস।
দিনের অন্য ম্যাচে স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে এভারটনকে ২-০ গোলে হারিয়ে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে টানা চার ম্যাচ পর জয়ে ফিরেছে চেলসি। দলের হয়ে গোল করেন কোল পালমার ও মালো গুস্তো। চেলসির জয়ে স্বস্তি ফিরলেও হতাশা বেড়েছে এভারটনের। ডেভিড ময়েসের দল এ নিয়ে চেলসির মাঠে টানা ৩১ ম্যাচ জয়হীন থাকার লজ্জার রেকর্ড বহাল রাখল।
ফুটবলের শীর্ষ পর্যায়ে দীর্ঘদিন দাপটের সঙ্গে টিকে থাকার জন্য ম্যানচেস্টার সিটির তারকা স্ট্রাইকার আর্লিং হালান্ড অনুপ্রেরণা খোঁজেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো ও লিওনেল মেসির মধ্যে। টিএনটি ব্রাজিলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নরওয়েজিয়ান এই গোলমেশিন জানান, বিশ্বের সেরা লিগগুলোতে টানা ১৫ বছর ধরে সর্বোচ্চ মানের পারফর্ম করার যে উদাহরণ এই দুই মহাতারকা সৃষ্টি করেছেন, তা প্রতিটি ফুটবলারের জন্যই শিক্ষণীয়।
সাক্ষাৎকারে হালান্ড বিশেষ করে ৪০ বছর বয়সী ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর ফিটনেস ও শৃঙ্খলার ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, রোনালদো যেভাবে নিজের শরীরের যত্ন নেন এবং জীবনযাপন নিয়ন্ত্রণ করেন, তা অবিশ্বাস্য। ইতোমধ্যে ৯৫০টির বেশি গোল করা এবং ২০২৭ সাল পর্যন্ত আল নাসরের সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করা রোনালদোর এই দীর্ঘস্থায়ী পারফরম্যান্স হালান্ডকে মুগ্ধ করে। একইসঙ্গে, ৩৮ বছর বয়সেও লিওনেল মেসির ইন্টার মায়ামিতে এমএলএস কাপ জয় এবং টানা দ্বিতীয়বারের মতো সেরা খেলোয়াড় ও গোল্ডেন বুট জেতার বিষয়টিকেও তিনি বড় অনুপ্রেরণা হিসেবে দেখেন।
সম্প্রতি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে প্রথমবারের মতো গোল করে আলোচনায় এসেছেন ২৫ বছর বয়সী হালান্ড। তার পেনাল্টি গোলে ম্যানচেস্টার সিটি ২-১ ব্যবধানে জয় পায়। ঐতিহাসিক এই স্টেডিয়ামে প্রথম গোল ও জয়কে তিনি নিজের ক্যারিয়ারের স্মরণীয় মুহূর্ত হিসেবে অভিহিত করেন। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে এখন পর্যন্ত ৫৪ ম্যাচে তার গোলসংখ্যা ৫৫।
অন্যদিকে, জাতীয় দলের হয়েও স্বপ্নের ফর্মে আছেন হালান্ড। তার দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের ওপর ভর করে দীর্ঘ ২৮ বছর পর বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে নরওয়ে। বাছাইপর্বে প্রতি ম্যাচে গড়ে দুটি করে গোল করেছেন তিনি। আগামী বছর প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ খেলতে মুখিয়ে থাকা এই তারকা জানান, বিশ্বকাপ নিশ্চিত হওয়ার খুশিতে তিনি নিজের অভ্যাসের বিপরীতে গিয়ে বিয়ার পান করে উদযাপন করেছিলেন, যা তার জন্য ছিল এক বিশেষ মুহূর্ত।
চলতি বছর আইপিএল ট্রফি জয় উদযাপনের সময় মর্মান্তিক পদদলিত হওয়ার ঘটনায় ১১ জনের মৃত্যুর পর বেঙ্গালুরুর এম চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের নিরাপত্তা নিয়ে বড়সড় প্রশ্নচিহ্ন উঠেছিল। এই ঘটনার জেরে আন্তর্জাতিক ও ঘরোয়া ক্রিকেট আয়োজন থেকে কার্যত নির্বাসিত ছিল এই ভেন্যু। তবে আগামী আইপিএলে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু (আরসিবি) তাদের ঘরের মাঠে খেলতে পারবে কি না, তা নিয়ে চলা জল্পনার অবসান ঘটতে যাচ্ছে। কর্ণাটক রাজ্য মন্ত্রিসভা নীতিগতভাবে এখানে আইপিএল ম্যাচ আয়োজনের অনুমোদন দিয়েছে, তবে জুড়ে দেওয়া হয়েছে বেশ কিছু কঠোর শর্ত।
নিরাপত্তা শঙ্কায় সম্প্রতি নারী বিশ্বকাপের ম্যাচ এই স্টেডিয়াম থেকে সরিয়ে মুম্বাইয়ে নেওয়া হয় এবং আগামী বছরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ভেন্যু তালিকা থেকেও চিন্নাস্বামীকে বাদ দেওয়া হয়েছে। গত জুলাইয়ে বিচারপতি জন মাইকেল ডি’কুনহার নেতৃত্বাধীন স্বাধীন কমিশন তাদের রিপোর্টে স্পষ্টভাবে জানিয়েছিল, বড় মাপের ইভেন্ট আয়োজনের সক্ষমতা বা পর্যাপ্ত জননিরাপত্তা ব্যবস্থা এই মুহূর্তে চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে নেই।
তবে আইপিএলকে সামনে রেখে নমনীয় হয়েছে কর্ণাটক সরকার। রাজ্যের উপমুখ্যমন্ত্রী ডি কে শিবকুমার জানিয়েছেন, তারা আইপিএল আয়োজনের বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ বিষয়ে কর্ণাটক রাজ্য ক্রিকেট সংস্থার (কেএসসিএ) সঙ্গে বৈঠক করার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জি পরমেশ্বরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে শিবকুমার স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, ম্যাচ আয়োজন করতে হলে ডি’কুনহা কমিশনের সব সুপারিশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে হবে।
ইতিমধ্যেই কর্ণাটক সরকারের পূর্ত দপ্তরের পক্ষ থেকে রাজ্য ক্রিকেট সংস্থাকে জানানো হয়েছে, স্টেডিয়ামে খেলা ফেরাতে হলে পূর্ণাঙ্গ পরিকাঠামোগত ফিটনেস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। ন্যাশনাল অ্যাক্রেডিটেশন বোর্ড ফর টেস্টিং অ্যান্ড ক্যালিব্রেশন ল্যাবরেটরিজ (এনএবিএল)-এর বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে এই পরীক্ষা চালানো হবে। তাদের দেওয়া নিরাপত্তা ও ফিটনেস রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। অর্থাৎ, ডি’কুনহা কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন এবং কঠোর নিরাপত্তা মানদণ্ড নিশ্চিত হলেই কেবল কোহলিদের ডেরায় ফিরবে আইপিএলের রোমাঞ্চ।
লা লিগায় দেপোর্তিভো আলাভেসের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে বড়সড় সংকটে পড়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। দলের প্রধান কোচ জাবি আলোনসোর দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে চোট ও নিষেধাজ্ঞার কারণে নিয়মিত একাদশের অন্তত ১২ জন খেলোয়াড়ের অংশগ্রহণ নিয়ে প্রবল শঙ্কা দেখা দিয়েছে। শিরোপার দৌড়ে টিকে থাকার লড়াইয়ে যখন জয়টা খুব জরুরি, ঠিক তখনই এমন কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়তে হলো লস ব্লাঙ্কোসদের।
দলের অন্যতম সেরা তারকা কিলিয়ান এমবাপ্পে অনুশীলনে ফিরলেও এই ম্যাচে তার মাঠে নামার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। হাঁটুর চোটের পাশাপাশি হাতের একটি আঙুল ভেঙে যাওয়ায় ফরাসি ফরোয়ার্ডের খেলা এখনো নিশ্চিত নয়। ইএসপিএনের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, গত কয়েকদিন সতীর্থদের সঙ্গে অনুশীলন না করলেও হাঁটুর অবস্থার উন্নতি হলে হয়তো দলের সঙ্গে সফর করতে পারেন তিনি, তবে খেলার নিশ্চয়তা নেই।
রিয়ালের রক্ষণভাগেই আঘাতটা সবচেয়ে বেশি লেগেছে। চোটের কারণে এই ম্যাচে মাঠের বাইরে থাকছেন ট্রেন্ট আলেক্সান্ডার-আর্নল্ড, দানি কার্ভাহাল, ডাভিড আলাবা, ফেরলঁ মেন্ডি ও এদের মিলিতাও। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে নিষেধাজ্ঞার খড়গ; ফ্রান গার্সিয়া ও আলভারো কারেরাসও এই ম্যাচে খেলতে পারবেন না। ফলে মূল দলের সাতজন ডিফেন্ডারের অনুপস্থিতিতে একাদশ সাজাতে রিজার্ভ দলের খেলোয়াড়দের ওপরই ভরসা করতে হতে পারে কোচ আলোনসোকে।
দুঃসংবাদ এখানেই শেষ নয়। ডিফেন্ডার আন্তোনিও রুডিগার ও ডিন হাউসেনের পাশাপাশি মিডফিল্ডার এদুয়ার্দো কামাভিঙ্গা ও ফেদে ভালভের্দের খেলা নিয়েও অনিশ্চয়তা রয়েছে, যা দলের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে।
পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে থাকা বার্সেলোনার চেয়ে বর্তমানে চার পয়েন্ট পিছিয়ে রয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। লিগে নিজেদের শেষ পাঁচ ম্যাচে জয় পেয়েছে মাত্র একটিতে। এমন নাজুক পরিস্থিতিতে রোববার আলাভেসের বিপক্ষে চোট-নিষেধাজ্ঞায় জর্জরিত দল নিয়ে মাঠে নেমে কাঙ্ক্ষিত ফল বের করে আনাটা কোচ জাবি আলোনসোর জন্য এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
রিয়াল মাদ্রিদের ডাগআউটে জাবি আলোনসোর ভবিষ্যৎ এখন চরম অনিশ্চয়তার মুখে। ২০২৫-২৬ মৌসুম শুরুর মাত্র পাঁচ মাসের মধ্যেই চাকরি হারানোর শঙ্কায় পড়েছেন বায়ার লেভারকুসেন থেকে আসা ৪৪ বছর বয়সী এই স্প্যানিশ কোচ। কার্লো আনচেলত্তির মতো কিংবদন্তি কোচের উত্তরসূরি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়া আলোনসো শুরুটা দুর্দান্ত করলেও বর্তমানে ছন্দপতন ঘটেছে তার দলের। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে শেষ আট ম্যাচে রিয়াল মাদ্রিদ জয় পেয়েছে মাত্র দুটিতে, যা ক্লাবটির আকাশছোঁয়া প্রত্যাশার সঙ্গে একেবারেই বেমানান।
পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, ক্লাব সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজকে এখন বিকল্প ভাবতেই হচ্ছে। বিশ্বের অন্যতম সেরা এই ক্লাবের দায়িত্ব নিতে সম্ভাব্য তালিকায় উঠে এসেছে পাঁচজন হাই-প্রোফাইল কোচের নাম। এর মধ্যে সবচেয়ে বাস্তবসম্মত ও জোরালো অবস্থানে রয়েছেন আলভারো আরবেলোয়া। বর্তমানে রিয়াল মাদ্রিদ কাস্তিয়ার দায়িত্বে থাকা সাবেক এই ডিফেন্ডার ক্লাবের অভ্যন্তরীণ কাঠামো সম্পর্কে অভিজ্ঞ এবং অন্তর্বর্তীকালীন কোচ হিসেবে লজিস্টিক ও আর্থিক দিক থেকে তাকেই সবচেয়ে সহজ সমাধান মনে করা হচ্ছে।
তালিকায় রয়েছেন রিয়াল মাদ্রিদের ইতিহাসের অন্যতম সফল কোচ জিনেদিন জিদানও। হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ী এই ফরাসি কিংবদন্তি ২০২১ সালের পর থেকে কোনো দলের দায়িত্বে নেই। যদিও ধারণা করা হয় তিনি ২০২৬ বিশ্বকাপের পর ফ্রান্স জাতীয় দলের দায়িত্ব নিতে পারেন, তবে সম্প্রতি ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে ম্যাচে তাকে গ্যালারিতে দেখা যাওয়ায় রিয়ালে ফেরার গুঞ্জন নতুন করে ডালপালা মেলেছে। এছাড়া ক্লাবের আরেক কিংবদন্তি রাউল গঞ্জালেসের নামও আলোচনায় রয়েছে। দীর্ঘ ছয় বছর কাস্তিয়ার দায়িত্বে থাকার পর গত মৌসুমে ক্লাব ছাড়লেও, বর্তমান সংকটময় মুহূর্তে মৌসুম বাঁচাতে তাকেও বিবেচনা করা হতে পারে।
তালিকায় চমক হিসেবে আছেন সাবেক বার্সেলোনা তারকা সেস ফ্যাব্রিগাস। ইতালিয়ান ক্লাব কোমো ১৯০৭-কে ২১ বছর পর সিরি আ-তে তুলে এনে এবং বর্তমানে পয়েন্ট টেবিলের ষষ্ঠ স্থানে রেখে কোচ হিসেবে নিজের জাত চিনিয়েছেন তিনি। তবে মৌসুমের মাঝপথে তিনি ইতালিয়ান ক্লাবটি ছাড়বেন কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। অন্যদিকে, রিয়ালের স্বপ্নের পছন্দ হিসেবে রয়েছেন ইয়ুর্গেন ক্লপ। লিভারপুল ছাড়ার পর বর্তমানে তিনি রেড বুলের ‘হেড অব গ্লোবাল সকার’ পদে আছেন। তবে রেড বুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আপাতত ডাগআউটে ফেরার কোনো পরিকল্পনা ক্লপের নেই।
সব মিলিয়ে জাবি আলোনসোর বিদায় ঘণ্টা বাজলে পরবর্তী কাণ্ডারি কে হবেন, তা সময়ই বলে দেবে। তবে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুর হটসিটে বসার দৌড়ে আরবেলোয়া এবং জিদানই আপাতত এগিয়ে আছেন।
ফুটবলের রাজপুত্র লিওনেল মেসির কলকাতা সফর ঘিরে চরম বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। শনিবার সল্টলেকের যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে মেসিকে একনজর দেখার জন্য হাজারো ভক্ত ভিড় জমালেও, অব্যবস্থাপনা ও বিশৃঙ্খলার কারণে তাদের স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠায় বলিউড বাদশা শাহরুখ খানকেও কড়া নিরাপত্তার মধ্যে দ্রুত কলকাতা ত্যাগ করতে হয়েছে।
এদিন ভোররাত থেকেই স্টেডিয়ামের সামনে ভিড় জমিয়েছিলেন অগণিত মেসিভক্ত। হাজার হাজার টাকা খরচ করে টিকিট কাটলেও মাঠে গিয়ে তারা চরম হতাশ হন। নির্ধারিত সময়ে মেসি স্টেডিয়ামে পৌঁছালেও আয়োজক ও বিভিন্ন মানুষের ভিড়ে তিনি কার্যত ঢাকা পড়ে যান। গ্যালারির দর্শকদের উদ্দেশে তিনি হাসিমুখে হাত নাড়লেও, তাকে ঘিরে রাখা প্রায় ৫০ জন মানুষের জটলার কারণে সাধারণ দর্শকরা তাকে দেখতে পাননি। এতেই ক্ষোভে ফেটে পড়ে উপস্থিত জনতা।
ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে দর্শকরা মাঠে বোতল ছোড়া, চেয়ার ও ব্যারিকেড ভাঙচুর এবং পোস্টার পোড়ানো শুরু করেন। অনেক ভক্তকে কান্নাজড়িত কণ্ঠে অভিযোগ করতে দেখা যায় যে, চড়া দামে টিকিট কেটেও প্রিয় তারকাকে দেখার সুযোগ থেকে তারা বঞ্চিত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার উপক্রম হলে আয়োজকরা নির্ধারিত সময়ের আগেই মেসিকে মাঠ থেকে বের করে নিয়ে যান।
এদিকে, এই সফরে মেসির সঙ্গে বলিউড সুপারস্টার শাহরুখ খানেরও স্টেডিয়ামে উপস্থিত থাকার কথা ছিল। এর আগে তিনি হোটেল থেকে ভার্চুয়ালি মেসির ৭০ ফুট উচ্চতার একটি মূর্তি উন্মোচন করেন। কিন্তু স্টেডিয়ামের পরিস্থিতি দ্রুত অবনতি হওয়ায় এবং দর্শকদের ক্ষোভের মুখে শাহরুখ বা তার ছেলে আব্রামকে আর মাঠে দেখা যায়নি। সূত্রের খবর, বিশৃঙ্খলার আঁচ পেয়েই তড়িঘড়ি করে কড়া নিরাপত্তার ঘেরাটোপে শাহরুখ খানকে বিমানবন্দরে পৌঁছে দেওয়া হয় এবং তিনি সেখান থেকে সোজা মুম্বাইয়ের উদ্দেশে রওনা হন। সব মিলিয়ে, বিশ্বজয়ী ফুটবলারকে ঘিরে উৎসবের আমেজ থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা ভাঙচুর ও ভক্তদের হাহাকারে বিষাদময় পরিস্থিতিতে রূপ নেয়।
বসুন্ধরা স্পোর্টস সিটিতে জমকালো আয়োজনে পর্দা উঠেছে ‘আহসান গ্রুপ প্রেজেন্টস প্যাডেল স্ল্যাম ২.০, পাওয়ার্ড বাই অ্যাসেট ডেভেলপমেন্টস’ টুর্নামেন্টের। বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) বিকেলে প্যাডেল গ্রাউন্ডে শুরু হওয়া এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছেন ৩৬ দল ও ১২০ জনেরও বেশি প্যাডেল খেলোয়াড়।
আমেরিকা ও ইউরোপের জনপ্রিয় র্যাকেটভিত্তিক এই খেলাকে বাংলাদেশে ছড়িয়ে দিতে গত আসরের মতো এবারও বসুন্ধরা স্পোর্টস সিটি উৎসবমুখর পরিবেশে আয়োজন করেছে বড় পরিসরের এই টুর্নামেন্ট।
আকর্ষণীয় প্রাইজপুল, সমান সুযোগ এবং তিনটি পৃথক প্রতিযোগিতা ক্যাটাগরি নিয়ে এবারের আসরকে সাজানো হয়েছে আরও বর্ণিলভাবে। খেলোয়াড়দের দক্ষতা অনুযায়ী রাখা হয়েছে- পুরুষদের অ্যাডভান্সড, পুরুষদের ইন্টারমিডিয়েট এবং নারীদের ডাবলস ক্যাটাগরি। প্রতিটি দলে দুজন করে খেলোয়াড় অংশ নেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন এবং দলপ্রতি রেজিস্ট্রেশন ফি নির্ধারিত ছিল ১২ হাজার টাকা।
স্থানীয় প্যাডেল ইভেন্টগুলোর মধ্যে অন্যতম বৃহৎ আকর্ষণ হিসেবে এবারে মোট প্রাইজপুল রাখা হয়েছে ২ লাখ ২৫ হাজার টাকা। তিনটি ক্যাটাগরিতেই চ্যাম্পিয়ন দল পাবে ৫০ হাজার টাকা করে, আর রানার-আপ দল পাবে ২৫ হাজার টাকা। এতে প্রতিযোগিতার উত্তেজনা যেমন বেড়েছে, তেমনি খেলোয়াড়দের অংশগ্রহণও উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
পুরুষদের জন্য দুটি স্তর—অ্যাডভান্সড ও ইন্টারমিডিয়েট—রাখায় বিভিন্ন দক্ষতার খেলোয়াড়েরা নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ পাচ্ছেন। একইসঙ্গে নারীদের জন্য আলাদা ক্যাটাগরি রাখাকে আয়োজকরা দেখছেন বাংলাদেশের প্যাডেল খেলায় নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে। আসরে স্পন্সর হিসেবে রয়েছে দৌড়, ব্রুভানা, শেয়ারট্রিপ, লোটো, গোল্ডস জিম ও জুলকানসহ আরও কয়েকটি পরিচিত ব্র্যান্ড।
উৎসবমুখর প্রথম দিনের খেলা শেষে আয়োজকরা জানিয়েছেন, আরও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ম্যাচ সামনে অপেক্ষা করছে। আজ শনিবার ফাইনাল ম্যাচের মধ্যদিয়ে শেষ হবে এ বছরের প্যাডেল স্ল্যাম ২.০।
ব্রডকাস্ট পার্টনার হিসেবে রয়েছে টি-স্পোর্টস চ্যানেল ও তাদের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলো, যা মাঠের বাইরেও প্যাডেলপ্রেমীদের মাঝে এই খেলার পরিচিতি ছড়িয়ে দিচ্ছে। আয়োজকদের আশা, এ ধরনের আয়োজন প্যাডেলকে বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মের কাছে আরও জনপ্রিয় করে তুলবে এবং দেশের ক্রীড়াঙ্গনে যোগ করবে নতুন মাত্রা।
ওসাসুনার বিপক্ষে ম্যাচের আগের দিন বার্সেলোনার অনুশীলনে ফিরলেন জেরার্দ মার্তিন। অসুস্থতার জন্য আগের দিন অনুশীলনে ছিলেন না এই তরুণ ডিফেন্ডার।
সুস্থ হয়ে যাওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই স্কোয়াডে থাকবেন মার্তিন। লা লিগার ম্যাচে একাদশে জন্যও হান্সি ফ্লিকের বিবেচনায় ভালোভাবেই থাকতে পারেন তিনি। শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ সময় রাত ১১টায় ওসাসুনার মুখোমুখি হবে বার্সেলোনা। সাম্প্রতিক সময়ে বাম দিকের সেন্টার ব্যাক হিসেবে খেলছেন মার্তিন। ওসাসুনার বিপক্ষে সেই পজিশনেই দেখা যেতে পারে তাকে।
প্রাক মৌসুমে এশিয়া সফরে দিয়ে বাম দিকের সেন্টার ব্যাক হিসেবে খেলা শুরু করেন মার্তিন। নভেম্বরের আন্তর্জাতিক বিরতির পর পাও কুবার্সির সঙ্গে রক্ষণে শুরুর একাদশে জায়গা পাকা করে ফেলেছেন তিনি। অনুশীলনে ফেরার পর ছয় ম্যাচের পাঁচটিতেই শুরুর একাদশে ছিলেন মার্তিন। একমাত্র যে ম্যাচে ছিলেন না, সেটায় চেলসির বিপক্ষে ৩-০ গোলে হারে বার্সেলোনা। স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে তিনি মাঠে নামেন ৭৯তম মিনিটে।
অবশেষে জয়খরা কাটাল আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ। ব্রাদার্স ইউনিয়নকে ২-০ গোলে হারিয়ে বাংলাদেশ ফুটবল লিগে নিজেদের প্রথম জয় তুলে নিয়েছে তারা। মানিকগঞ্জের শহীদ মিরাজ-তপন স্টেডিয়ামে ১৬ মিনিটে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিল ব্রাদার্স। কিন্তু পেনাল্টি মিস করে বসেন মার্কোস রুদওয়েরে জেনার সিলভা।
৩২ মিনিটে কাজী রাহাদ মিয়ার লং থ্রো মোহাম্মদ শাওনের গায়ে লেগে সরাসরি খুঁজে নেয় জাল। যোগ করা সময়ের দ্বিতীয় মিনিটে আবারও লং থ্রোয়ে গোল পায় আরামবাগ। এবারও থ্রো নেন রাহাদ। তা ঠেকাতে গিয়ে উল্টো নিজেদের জালেই বল ফেলে দেন ব্রাদার্স গোলরক্ষক ইশাক আলী। বিরতির পর কোনো দলই আর গোলের দেখা পায়নি।
মুন্সীগঞ্জের ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস সোসাইটিকে ১-০ গোলে হারিয়েছে ফর্টিস এফসি।
৫০ মিনিটে বা প্রান্ত দিয়ে বক্সে ঢুকে ফর্টিসের ওকাফরের শট যায় পোস্টের উপর দিয়ে। খানিক পর অন্য প্রান্ত দিয়ে বিপদসীমায় ঢুকে পড়েন পা ওমর বাবু। তবে তাকে আটকে দেন রহমতগঞ্জের গোলকিপার। ৫৭ মিনিটে গোললাইন ক্লিয়ার করে এ যাত্রায় বেঁচে যায় রহমতগঞ্জ।
৭০ মিনিটে প্রতিপক্ষের বক্সে ওকাফরের হেডে ফিরতি শট নেন মুরশেদ আলী। তার নিচু শট গোলকিপার মামুন আলিফ নিয়ন্ত্রণে নেন। পরের মিনিটে আরও একবার গোলপোস্টের সামনে দারুণ সেভ করেছেন এই গোলকিপার।
৮২ মিনিটে ম্যাচে সবচেয়ে ভালো একটি আক্রমণ শানায় রহমতগঞ্জ, সেখান থেকে গোলেরও সুযোগ ছিল। তবে প্রতি আক্রমণে ওঠা আদু ক্লেমেন্তো শট নেওয়ার আগে বক্সে মাটিতে পড়ে যান। উঠে শট নেওয়ার আগে ফর্টিসের রক্ষণভাগের খেলোয়াড়েরা ঘানার ফরোয়ার্ডকে রুখে দেন।
শেষ বাশি বাজির আগে পা ওমরের পাস থেকে বক্সে ঢুকেই ডান পায়ের শটে নেন ওকাফর। তার শট লাফিয়ে আটকানোর চেষ্টা করেন রহমতগঞ্জের গোলকিপার। তবে তিনি নাগাল পাননি, বল পোস্টে লেগে সরাসরি জাল কাঁপায়।