একজন খেলোয়াড়ের কিংবদন্তি হওয়ার পেছনে অনেকাংশেই নির্ভর করে দেশের হয়ে একটি বিশ্বকাপ ট্রফি জয়। লম্বা ক্যারিয়ারে কেউ কেউ দেখা পান এক বা একাধিক শিরোপার। আবার কারও ক্যারিয়ার শেষ হয় খালি হাতেই। শোকেসে একাধিক শিরোপা রাখা কিংবদন্তিদের সংখ্যা খুব একটা বেশি না। কিন্তু এরপরও থামতে চান না তারা।
সেই দলেই আছেন ইংল্যান্ডের দুইবারে বিশ্বকাপজয়ী তারকা আদিল রশিদ। ইংলিশদের জার্সিতে এ লেগ স্পিনার স্বাদ নিয়েছেন ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপ এবং ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের। তিনি স্বপ্ন দেখেন তিনটি, চারটি কিংবা পাঁচটি বিশ্বকাপ জয়ের!
সম্প্রতি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘ডেইলি মেইল’কে একান্ত সাক্ষাৎকার দিয়েছেন সাদা বলে ইংল্যান্ডের সবচেয়ে সফল (ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে ৩০৭ উইকেট) স্পিনার। সাক্ষাৎকারে আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিজের লক্ষ্যের কথা জানিয়েছেন রশিদ।
আদিল রশিদ বলেন, ‘যত দিন আমি ফিট ও (উইকেটের জন্য) ক্ষুধার্ত থাকব, তত দিন খেলা চালিয়ে যাব। আমি শুধু দুটি বিশ্বকাপ নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে চাই না। আমার স্বপ্ন ও লক্ষ্য তিনটি, চারটি কিংবা পাঁচটি বিশ্বকাপ জেতা।’
বয়সটা ৩৬ পেরিয়ে ৩৭ ছুঁই ছুঁই। রশিদের ক্যারিয়ারও তাই দাঁড়িয়েছে সায়াহ্নে এসে। ইংল্যান্ডের মতো দলে যে খুব বেশি সুযোগ আসবে না, সেটা ভালো করেই জানে রশিদ। তবে দলের জন্য সবসময়ই তৈরি আছেন তিনি। এ লেগস্পিনার বলেন, ‘মনে রাখতে হবে, ক্যারিয়ারে এমন সুযোগ বারবার আসে না। তাই ইংল্যান্ড যদি মনে করে দলে আমাকে প্রয়োজন, আমি তৈরি আছি। আমার (আন্তর্জাতিক) ক্যারিয়ার আরও পাঁচ বছর লম্বা হতে পারে আবার এক বছরও হতে পারে। তবে আমার লক্ষ্য যত দিন সম্ভব খেলা চালিয়ে যাওয়া।’
গত বছর ভারতে ওয়ানডে বিশ্বকাপ ধরে রাখার অভিযানে গিয়ে ভরাডুবি হয়েছিল ইংল্যান্ডের। ৯ ম্যাচের ৬টিতেই হেরে প্রথম পর্ব থেকে বাদ পড়ে ইংলিশরা। ওয়ানডে বিশ্বকাপের ব্যর্থতা নিয়ে রশিদ বলেছেন, ‘এ নিয়ে কারও কোনো অভিযোগ নেই। সত্যি কথা, আমরা ভালো ক্রিকেট খেলিনি এবং আমাদের আত্মবিশ্বাসে ঘাটতি ছিল।’
টি-টোয়েন্টির বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড। শিরোপা ধরে রাখার মিশনেই ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্চে উড়াল দেবে তারা। সংস্করণ আলাদা হওয়ার কারণেই এবার ভালো করার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী রশিদ, ‘দেখুন, এটা সম্পূর্ণ ভিন্ন সংস্করণ, দুই বছরের কম সময় আগে আমরা যেটিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। আমার বিশ্বাস, এবারের দলটা ২০২২ বিশ্বকাপজয়ী দলের চেয়েও শক্তিশালী। এই দলের ১৫ জনই ম্যাচ জেতানো খেলোয়াড়। জফরা আর্চারের ফেরাটা বড় ব্যাপার।’
ক্রীড়া ডেস্ক
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আসন্ন তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের জন্য ১৬ সদস্যের দল ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। তবে জায়গা পাননি সাবেক টি-টোয়েন্টির অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত।
সাম্প্রতিক সময়ে ছোট ফরম্যাটে শান্তর ব্যাটিং ফর্ম নিয়ে সমালোচনা চলছিল। পারফরম্যান্সে ধারাবাহিকতা না থাকায় আগেই টি-টোয়েন্টির নেতৃত্ব ছেড়ে দেন তিনি। এবার বাদ পড়লেন দল থেকেও।
দীর্ঘ ১ বছর পর টি-টোয়েন্টি দলে ফিরেছেন অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। তার সঙ্গে দলে ফিরেছেন তাসকিন আহমেদ, শরিফুল ইসলাম, মোস্তাফিজুর রহমান এবং নাসুম আহমেদ।
অন্যদিকে, শান্ত ছাড়াও গত পাকিস্তান সিরিজের দলে থাকা সৌম্য সরকার, হাসান মাহমুদ, তানভীর ইসলাম, নাহিদ রানা ও খালেদ আহমেদকে এই দফায় স্কোয়াডে রাখা হয়নি।
আগামী ১০ জুলাই তিন ম্যাচের সিরিজটি শুরু হবে ক্যান্ডিতে। বাকি দুই ম্যাচ হবে ১৩ ও ১৬ জুলাই, যথাক্রমে ডাম্বুলা ও কলম্বোয়।
বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি স্কোয়াড (শ্রীলঙ্কা সিরিজ):
লিটন কুমার দাস (অধিনায়ক), তানজিদ হাসান তামিম, পারভেজ হোসেন ইমন, মোহাম্মদ নাইম শেখ, তাওহিদ হৃদয়, জাকের আলী অনিক, শামিম হোসেন পাটোয়ারি, মেহেদী হাসান মিরাজ, রিশাদ হোসেন, শেখ মাহেদী হাসান, নাসুম আহমেদ, তাসকিন আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমান, শরিফুল ইসলাম, তানজিম হাসান সাকিব, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন।
ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাংলাদেশের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং ওয়ার্ল্ড এথনোস্পোর্টস ইউনিয়নের (ডব্লিউইইউ) মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সাক্ষর হয়েছে। আজ শুক্রবার তুরস্কের ইস্তাম্বুলে ওয়ার্ল্ড এথনোস্পোর্টস ইউনিয়নের প্রধান কার্যালয়ে এই এমওইউ সাক্ষরিত হয়।
যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং ওয়ার্ল্ড এথনোস্পোর্টস ইউনিয়নের সভাপতি নেজমেদ্দিন বিলাল এরদোয়ান নিজ নিজ পক্ষে চুক্তিতে সই করেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এমওইউ স্বাক্ষরের আগে, উভয় নেতা অত্যন্ত আন্তরিক পরিবেশে এক দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠকে তারা সভ্যতা ও সংস্কৃতি সমৃদ্ধকরণে ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলার গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেন এবং দেশীয় খেলাধুলা প্রচারে পারস্পরিক সহযোগিতার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।
আলোচনায় বিলাল এরদোয়ান বাংলাদেশের কাবাডি, কুস্তি, বলিখেলা ও নৌকা বাইচের মতো ঐতিহ্যবাহী খেলাগুলোর বিশাল সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে এসব খেলাধুলা বিশ্বব্যাপী প্রচারে গভীর আগ্রহ প্রকাশ করেন।বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী ক্রীড়া ফেডারেশনগুলোকে ওয়ার্ল্ড এথনোস্পোর্টস ইউনিয়নের সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে তিনি আগ্রহী বলে জানান।
তুরস্কে শিক্ষামূলক কার্যক্রমে তার সম্পৃক্ততার কথা উল্লেখ করে এরদোয়ান বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি, শিক্ষা বিনিময় কর্মসূচি এবং বিষয় ভিত্তিক প্রতিযোগিতার প্রস্তাব দেন। একই সঙ্গে তিনি তার সংস্থার একটি স্কুল বাংলাদেশে স্থাপনের আগ্রহও ব্যক্ত করেন। কক্সবাজারে তার মায়ের সঙ্গে করা সফরের স্মৃতিচারণ করে তিনি রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা আয়োজনে সহায়তার আগ্রহ প্রকাশ করেন, যাতে খেলাধুলার মাধ্যমে শরণার্থীদের কষ্ট কিছুটা লাঘব করা যায়।
বাংলাদেশের জনগণের প্রতি তুরস্কের অবিচল সমর্থনের কথা পুনরায় উল্লেখ করে তিনি ২০২৪ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশের গণঅভ্যুত্থানে তরুণ সমাজ ও সাধারণ জনগণের অংশগ্রহণের প্রশংসা করেন এবং সাংস্কৃতিক ও জাতীয় পরিচয়ের গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের নেতৃত্বে তুরস্ক তার সাংস্কৃতিক মর্যাদা ও বৈশ্বিক অবস্থান পুনরুদ্ধারে কাজ করছে।
যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন যে, ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে বাংলাদেশ তার প্রকৃত ও বিশ্বস্ত অংশীদারদের সঙ্গে সম্পর্ক আরও জোরদারে অগ্রাধিকার দিচ্ছে, যেখানে তুরস্ক একটি গুরুত্বপূর্ণ মিত্র। তিনি স্মরণ করিয়ে দেন যে, ইতিহাসে বিভিন্ন সংকটময় মুহূর্তে তুরস্ক সব সময় বঙ্গোপসাগরীয় জনপদের জনগণের পাশে থেকেছে। তিনি আরও বলেন, এই অভ্যুত্থান বাংলাদেশের তরুণদের রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি করেছে এবং সভ্যতাগত রূপান্তরের প্রতি আগ্রহ জাগিয়েছে, যা অনেকটা তুরস্কের নিজস্ব গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্যের পুনরুজ্জীবনের মতো।
উপদেষ্টা গাজায় চলমান গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের নৈতিক অবস্থান এবং বিশ্বের নিপীড়িত মুসলিম জনগণের প্রতি তার সমর্থনের প্রশংসা করেন। তিনি এই নির্যাতনের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী ও কার্যকর আন্তর্জাতিক জোট গঠনের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন এবং এ বিষয়ে বাংলাদেশের সমর্থন ও সক্রিয় অংশগ্রহণের আশ্বাস দেন।
আসিফ মাহমুদ বাংলাদেশের কাবাডি, দাঁড়িয়াবান্ধা, বলিখেলা, কুস্তি ও নৌকা বাইচসহ ঐতিহ্যবাহী খেলাগুলোর আন্তর্জাতিকীকরণে ওয়ার্ল্ড এথনোস্পোর্টস ইউনিয়নের সহযোগিতা কামনা করেন।
বৈঠকের শেষে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ, বিলাল এরদোয়ানকে আনুষ্ঠানিকভাবে ২০২৫ সালের গ্লোবাল ইয়ুথ সামিটে অংশ নিতে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, এই সফর যুব ও ক্রীড়া খাতসহ উভয় দেশের কৌশলগত অংশীদারিত্ব আরও জোরদার ও গতিশীল করবে।
‘যে কোনো পরিস্থিতিতে সঠিক কাজটা করো। যেটি সবার জন্য ভালো।’ বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলের সূত্র মতে, এটিই কোচ পিটার বাটলারের সিগনেচার ট্যাগ লাইন!
দলীয় সভা বা ঋতুপর্ণা চাকমা, আফেইদাদের সঙ্গে ব্যক্তিগত আলোচনায় কথাটি বারবার স্মরণ করিয়ে দেন ইংলিশ এই কোচ। তার সিগনেচার টাইপ বাক্যে ‘সবাই’ কারা? আর ‘সবার জন্য ভালো’ বলতেই বা কী বোঝায়? দুটি প্রশ্নের উত্তরই তো আমার-আপনার জানার কথা!
পিটার বাটলারের কাছে ‘সবার’ হলো বাংলাদেশ দল আর ‘সবার জন্য ভালো’ মানে বাংলাদেশ দলের জন্য ভালো। হয়তো এই দুটি বিষয়ের সঙ্গে আপস করেন নাই বলেই বাটলার আর বাটলারের বাংলাদেশ নিয়ে লিখতে বাধ্য হওয়া।
টানা দুটি সাফ টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ। চ্যাম্পিয়ন নারী ফুটবলারদের জয়গান সবার মুখে মুখে। কিন্তু সারা জীবন কি ফুটবল মানচিত্রে তলানিতে থাকা দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের গর্ব নিয়েই বুক ফুলিয়ে হাঁটবে বাংলাদেশ? সেই গণ্ডি পার হওয়ার তরিকাটাই বা কী? তাই নিজের চাকরির মায়া না করে সাফের বাইরে শক্তিশালী দলগুলোর বিপক্ষে খেলতে চাইলেন বেশি করে ম্যাচ। দ্রুতই ধরা দিল ফলাফল।
গত বুধবার সন্ধ্যায় দক্ষিণের সেই মানচিত্র থেকে বের হয়ে প্রথমবারের মতো এশিয়ার বুকে লাল-সবুজ পতাকা উড়িয়ে দিল বাটলারের বাংলাদেশ।
কত অবলীলায় বলে ফেললাম বাটলারের বাংলাদেশ! হ্যাঁ, এই মেয়েরা আগেও চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এশিয়ান মঞ্চে গিয়ে এমন দাপুটে বাংলাদেশকে কি আগে কখনও দেখা গিয়েছে? অবশ্যই না।
আগে দুবার বাছাইপর্বে অংশ নিয়েও ন্যূনতম ড্র ছিল না। এবার ৩৬ ধাপ এগিয়ে থাকা বাহরাইনকে বড় ব্যবধানে হারিয়ে বাংলাদেশের শুরু। দ্বিতীয় ম্যাচে ৭৩ ধাপ এগিয়ে থাকা স্বাগতিক মিয়ানমারকে হারিয়ে এশিয়ান কাপ খেলার ছাড়পত্র আদায় করে নেওয়া। রক্ষণভাগ, মিডফিল্ড, আক্রমণভাগ– প্রতিটি ডিপার্টমেন্টই এখন পরবর্তী স্টেজের জন্য তৈরি। এই সাহসী ও দুর্দান্ত বাংলাদেশকে আলাদা করে বাটলারের বাংলাদেশ না বলে উপায় আছে!
বাফুফের এলিট একাডেমির দায়িত্ব নিয়ে গত বছরের শুরুতে বাংলাদেশে আসেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলা এই কোচ। একই বছর চায়নিজ তাইপের বিপক্ষে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচকে সামনে রেখে মে মাসে তার হাতে তুলে দেওয়া হয় নারী দলের দায়িত্ব। অতীতে আফ্রিকার লাইবেরিয়া ও বতসোয়ানার দায়িত্ব পালন করার অভিজ্ঞতা থাকায় জাতীয় দলকে হ্যান্ডেল করার পাঠটা তার ভালোই জানা। বাংলাদেশ দলেও নিজের প্রসেসের ওপর আস্থা রাখলেন ইংলিশ মাস্টারক্লাস।
শুরুতেই বুঝিয়ে দেন দলে কারো জায়গা নিশ্চিত নয় আর পুরো ৯০ মিনিট সমান তালে খেলতে না পারলে তার তো জায়গায় নেই। তার বিপক্ষে বিদ্রোহ করা খেলোয়াড়দের সঙ্গে আপস করলেন না। আবার ঠেলে দিলেন না দূরেও। ব্রিটিশ মানেই নাক উঁচু বলে যে একটা আপ্ত বাক্য আছে, তার ছিঁটেফোঁটাও বাটলারের মধ্যে নেই বলে বিদ্রোহীদের মধ্যে থেকে প্রয়োজনীয় খেলোয়াড়দের দলে টেনে নিলেন। পরে শৃঙ্খলা ও পারফরম্যান্সের মানদণ্ডের ওপর ভর করেই গড়ে তুললেন এশিয়ান মঞ্চের দল।
বাটলার নিজে ব্রিটিশ হলেও তার দলের খেলায় প্রথাগত ‘ডিরেক্ট স্টাইলে’ ব্রিটিশ ফুটবলের ছাপ নেই। ‘হাই প্রেসিং’ করে প্রতিপক্ষকে চাপে রাখে, বল দখলে এলে বিল্ডআপ, কখনও ‘ওয়ান টু ওয়ান’, আবার কখনও ‘উইং প্লে’ করে ঝড়ের গতিতে আক্রমণে ওঠেন ঋতুপর্ণা, শামসুন্নাহার জুনিয়ররা। বাটলারযুগের আগে থেকেই বাংলাদেশের ফুটবলাররা টেকনিক্যালি ভালো।
এখন যোগ হয়েছে ট্যাকটিক্যাল আর ফিজিক্যালি সক্ষমতা। ফুটবলে ‘থ্রি এস’ বলে একটা মৌলিক বিষয় আছে- স্পিড (গতি), স্ট্রেংথ (শক্তি) ও স্ট্যামিনা (দম)। তারুণ্যনির্ভর বাটলারের দলের খেলোয়াড়দের ‘থ্রি এস’ তুঙ্গে। তবে উন্নতির জায়গাও আছে অনেক। প্রত্যাশামাফিক উন্নতি করতে পারলে এশিয়ান মঞ্চ ছাপিয়ে ধরা দিতে পারে বিশ্বকাপে খেলার স্বপ্নও।
লেখক: রাশেদুল ইসলাম, সাবেক ফুটবলার, জাতীয় দল
তিন ওয়ানডে সিরিজে টিকে থাকার লক্ষ্য নিয়ে আগামীকাল শনিবার কলম্বোর আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় ম্যাচে শ্রীলংকার মুখোমুখি হবে সফরকারী বাংলাদেশ। ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় বিকেল ৩টায়।
একই ভেন্যুতে শ্রীলংকার কাছে প্রথম ম্যাচে ৭৭ রানে হেরেছে বাংলাদেশ। নিজেদের ইনিংসে ২৬ বলে ৫ রানের মধ্যে ৭ উইকেট হারিয়ে লজ্জার হার নিয়ে মাঠ ছেড়েছে টাইগাররা। দলের এমন অবিশ্বাস্য ব্যাটিং ধস ক্রিকেটারদের পাশাপাশি ভক্তদেরও হতাশ করেছে।
ব্যাটিং ধসের ঘটনা নিয়ে বাংলাদেশ পেসার তাসকিন আহমেদ বলেন, ‘আমি ড্রেসিংরুমে কফি খাচ্ছিলাম এবং হঠাৎ করেই পাঁচ উইকেট পড়ে গেল। আশা করি, পরের ম্যাচেই আমরা ঘুরে দাঁড়াব এবং সবাই ভুল থেকে শিক্ষা নেবে।’
শ্রীলংকার ছুঁড়ে দেওয়া ২৪৫ রানের টার্গেটে ১ উইকেটে ১০০ রান তুলে ভালো অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ। এরপর ২৬ বলে ৫ রানের মধ্যে ৭ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ হারে বাংলাদেশ। নাজমুল হোসেন শান্তর রান আউট দিয়ে টাইগাদের ব্যাটির ধস শুরু হয়।
এরপর নিজের প্রথম ওভারে দুই উইকেট শিকার করেন শ্রীলংকার স্পিনার হাসারাঙ্গা ডি সিলভা। লিটন দাসকে শূন্য হাতে এবং বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ রান করা তানজিদ হাসান তামিমকে(৬২) থামান ডি সিলভা।
হাসারাঙ্গার সাথে অন্য প্রান্ত দিয়ে কামিন্দু মেন্ডিসের ঘূর্ণিতে হারের মুখে ছিটকে পড়ে বাংলাদেশ। তানজিদের আউটের পরই বাংলাদেশ আতঙ্কিত হয়ে পড়ে বলে জানান তাসকিন।
৪৭ রানে ৪ উইকেট নিয়ে শ্রীলংকাকে ২৪৪ রানে গুটিয়ে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা তাসকিন বলেন, ‘দুর্দান্ত শুরুর পর, আমরা কিছুটা স্বস্তিতে ছিলাম। সবকিছু আমাদের পক্ষেই চলছিল। কিন্তু হঠাৎ সেই রান আউট এবং ক্রিজে সেট ব্যাটার তানজিদ আউট হয়ে গেল। এরপর আমরা কিছুটা আতঙ্কিত হয়ে পড়ি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আমাদের স্বাভাবিক খেলা খেলতে পারিনি এবং চাপের মুখে ভেঙে পড়েছিলাম। পরিসংখ্যান মতে এটি লো স্কোরিং মাঠ। বিশেষ করে দ্বিতীয় ইনিংসে এবং ম্যাচ হারার সম্ভাবনাও বেশি থাকে। তারপরও ম্যাচটি আমাদের হাতে ছিল এবং আমরা আরও ভাল করতে পারতাম।’
সিরিজে সমতা ফেরাতে হলে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে বাংলাদেশের খেলায় উন্নতি দরকার বলে মনে করেন তাসকিন। তিনি বলেন, ‘আমাদের পারফরমেন্সের উন্নতি ঘটানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সিরিজে টিকে থাকতে হলে এটি অপরিহার্য।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সেরা ১৫-২০ জন খেলোয়াড় নিয়ে দল গঠিত। বোলিং-ব্যাটিং মিলিয়ে ও খেলার সচেতনতার অভাবে আমরা শীর্ষ দলগুলোর থেকে কিছুটা পিছিয়ে আছি। আমরা একটি ভালো পরিবেশ এবং সংস্কৃতির মাধ্যমে এটি উন্নত করার চেষ্টা করছি।’
এখন পর্যন্ত শ্রীলংকার বিপক্ষে ৫৮ ম্যাচ খেলে মাত্র ১২টি জিতেছে বাংলাদেশ। ৪৪টিতে হার ও দু’টি ম্যাচ বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হয়।
ওয়ানডেতে নিজেদের সর্বশেষ সাত ম্যাচের সবগুলোতেই হেরেছে বাংলাদেশ। গত বছর আফগানিস্তানের কাছে ২-১ ব্যবধানে হারা সিরিজে সর্বশেষ জয় পেয়েছিল টাইগাররা। ঐ সিরিজের শেষ ম্যাচে হারের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে টানা তিন ওয়ানডে এবং এ বছর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভারত এবং নিউজিল্যান্ডের কাছে হারে তারা।
টুর্নামেন্টে পাকিস্তানের বিপক্ষে গ্রুপের শেষ ম্যাচ বৃষ্টিতে ভেস্তে যাবার পর শ্রীলংকার কাছে হারে বাংলাদেশ।
শ্রীলংকার মাটিতে বাংলাদেশের ওয়ানডে রেকর্ড হতাশাজনক। ২৫ ম্যাচ খেলে মাত্র ২টিতে জয়, ২১টিতে হার ও ২টি পরিত্যক্ত হয়েছে। সর্বশেষ ২০১৯ সালে শ্রীলংকার মাটিতে দ্বিপাক্ষিক সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়েছিল টাইগাররা।
পক্ষান্তরে, সর্বশেষ পাঁচ সিরিজের চারটিতেই জিতেছে শ্রীলংকা। বাংলাদেশের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচ জিতে আরও একটি সিরিজ জয় নিশ্চিত করার লক্ষ্য থাকবে লংকানদের।
বাংলাদেশ দল : মেহেদি হাসান মিরাজ (অধিনায়ক), তানজিদ হাসান তামিম, পারভেজ হোসেন ইমন, মোহাম্মদ নাইম, নাজমুল হোসেন শান্ত, তাওহিদ হৃদয়, লিটন দাস, জাকের আলী, শামীম পাটোয়ারি, রিশাদ হোসেন, তানভীর ইসলাম, মুস্তাফিজুর রহমান, তানজিম হাসান, তাসকিন আহমেদ, নাহিদ রানা ও হাসান মাহমুদ।
শ্রীলংকা দল : চারিথ আসালাঙ্কা (অধিনায়ক), পাথুম নিশাঙ্কা, আভিস্কা ফার্নান্দো, নিশান মাধুশকা, কুশল মেন্ডিস, সাদিরা সামারাবিক্রমা, কামিন্দু মেন্ডিস, জেনিথ লিয়ানাগে, দুনিথ ওয়েলালাগে, হাসারাঙ্গা ডি সিলভা, মহেশ থিকশানা, জেফরি ভান্ডারসে, মিলান রত্নায়েকে (ফিট থাকা সাপেক্ষে), দিলশান মাধুশঙ্কা, আসিথা ফার্নান্দো ও ইশান মালিঙ্গা।
নারী ফুটবলে বুধবার (০২ জুলাই) বড় এক সুখবর পেয়েছে বাংলাদেশ। প্রথম বারের মতো নিশ্চিত হয়ে গেছে এশিয়া কাপে অংশগ্রহণ। এবার বাংলাদেশ সুখবর পেল হকি থেকেও। অনূর্ধ্ব-১৮ এশিয়া কাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই হারিয়ে দিয়েছে হংকংকে। শুরু থেকে দাপট ধরে রেখে ৩-০ গোলের জয় তুলে নিয়েছে কোচ মউদুদুর রহমানের শিষ্যরা।
চীনের দাজু হকি ট্রেইনিং সেন্টারে বুধবার (০২ জুলাই) বাংলাদেশ সময় সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে বাংলাদেশ মুখোমুখি হয় হংকংয়ের। শুরু থেকেই প্রতিপক্ষের ওপর ছড়ি ঘুরিয়েছে বাংলাদেশ। প্রথম কোয়ার্টারে অবশ্য গোলের দেখা পায়নি দলটা।
গোলের দেখা মিলেছে ম্যাচের দ্বিতীয় কোয়ার্টারে। ২০ মিনিটে দ্বীন ইসলাম পেয়ে যান ফিল্ড গোল। ম্যাচে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। পরের দুটি গোলই এসেছে পেনাল্টি কর্নার থেকে। ২৬ মিনিটে আবারও গোলের খাতায় নাম লেখান দ্বীন ইসলাম।
৪৩ মিনিটে ওই পেনাল্টি কর্নার থেকেই আবারও গোল পায় বাংলাদেশ। এবার লক্ষ্যভেদ করেন হাসান অমিত। তাতেই হংকংয়ের কফিনে শেষ পেরেকটা ঠুকে যায়। বাংলাদেশ শেষে মাঠ ছাড়ে ৩-০ গোলের জয় নিয়ে। দুই গোল করে ও দারুণ খেলে ম্যাচসেরার পুরস্কারটা জেতেন দ্বীন ইসলাম।
বাংলাদেশ এই টুর্নামেন্টে আছে পুল ‘এ’-তে। এই পুলে বাংলাদেশের গ্রুপসঙ্গী হংকং ছাড়াও আছে স্বাগতিক চীন ও বাংলাদেশের দুই প্রতিবেশী পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা। দ্বীন ইসলামদের পরবর্তী ম্যাচ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। আগামী ৫ জুলাই বাংলাদেশ সময় বিকাল ৩-৩০ মিনিটে এই লড়াইয়ে নামবে বাংলাদেশ।
চীনে একই সময়ে মাঠে গড়াচ্ছে নারী অনূর্ধ্ব-১৮ এশিয়া কাপও। সেখানেও বাংলাদেশ খেলছে। আগামী শুক্রবার বাংলাদেশ সময় সকাল ৬টায় জাপানের মুখোমুখি হবে দলটি।
এএফসি উইমেন্স এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে দ্বিতীয় জয় তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দল। এবার ঋতুপর্ণাদের শিকার ফিফা র্যাংকিংয়ে ৭৩ ধাপ এগিয়ে থাকা মিয়ানমার।
ইয়াঙ্গুনের থুউন্না স্টেডিয়ামে আজ ম্যাচের প্রথমার্ধে ঋতুপর্ণা চাকমার গোলে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। ৭১ মিনিটে অসাধারণ এক গোল করে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন সেই ঋতুপর্ণাই। মিয়ানমার যদিও শেষ দিকে ১ গোল শোধ করেছে, তাতে বাংলাদেশের জয় আটকায়নি। ম্যাচটা ২-১ গোলে জিতে এশিয়ান কাপের পথে অনেকটাই এগিয়ে গেল মেয়েরা। ৫ জুলাই গ্রুপ পর্বের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে তুর্কমেনিস্তানের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। সেই ম্যাচে না হারলেই প্রথমবারের মতো এশিয়ান কাপের চূড়ান্ত পর্বে ওঠে যাবে পিটার বাটলারের দল।
মিয়ানমারের ঘরের মাঠে ম্যাচের প্রথম মিনিট থেকে স্বাগতিক দর্শকদের গর্জনে প্রকম্পিত থাকে থুউন্নার গ্যালারি। কিন্তু সেই গর্জনও থামাতে পারেনি বাংলাদেশকে। ১৮ মিনিটে পুরো স্টেডিয়ামকে স্তব্ধ করে দেন ঋতুপর্ণা, বাংলাদেশ এগিয়ে যায় ১-০ গোলে। বিরতিতে যাওয়ার আগপর্যন্ত স্কোরলাইন সমান করার অনেক চেষ্টা করেও পারেনি মিয়ানমার, উল্টো বিরতির পর ঋতুপর্ণার চোখধাঁধানো শটে ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় স্বাগতিকরা।
প্রথমার্ধে একটু এলমেল ছিল বাংলাদেশের রক্ষণভাগ। ম্যাচের ১১ ও ১২ মিনিটে দুবার বাংলাদেশি ডিফেন্ডারদের ফাঁকি দিয়ে আক্রমণ শাণায় মিয়ানমার। দুটি আক্রমণই পোস্ট ছেড়ে রুখে দেন গোলকিপার রুপনা চাকমা। এর মধ্যে ১৭ মিনিটে ড্রিবল করে ডি-বক্সে ঢোকার পথে ফাউলের শিকার হন শামসুন্নাহার জুনিয়র। তাতেই ফ্রি-কিক পায় বাংলাদেশ। ১৮ মিনিটে সেই ফ্রি-কিক থেকে বাঁপায়ের নিখুঁত শটে মিয়ানমারের জালে বল জড়ান ঋতুপর্ণা। প্রথম দফায় ঋতুপর্ণার শট প্রতিপক্ষের রক্ষণে লেগে ফিরে আসে, ফিরতি শটে পোস্টের কোনাকুনি দিয়ে বল জালে পাঠান এই ফরোয়ার্ড।
১ গোলে এগিয়ে থাকার পর আক্রমণের ধার আরও বাড়িয়ে দেয় বাংলাদেশ। ২৩ মিনিটে পেয়ে যায় গোলের আরেকটি সুযোগ। কিন্তু বাঁ-প্রান্ত ধরে আক্রমণে ওঠার পর ঋতুপর্ণার ক্রসে শট নিলেও বল পোস্টে রাখতে পারেননি শামসুন্নাহার জুনিয়র। মিয়ানমারও থেমে ছিল না। সমতায় ফিরতে মরিয়া হয়ে আক্রমণ করে। ৩৫ মিনিটে অফসাইডের ফাঁদে না পড়লে স্কোর সমান হয়ে যেত। এর এক মিনিট পর বাংলাদেশের ছেঁড়া রক্ষণের সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয় মিয়ানমার। আর ৪২ মিনিটে ফ্রি-কিক পাওয়া মিয়ানমার তিন-তিনবার বাংলাদেশের গোলমুখে শট নিয়েও লক্ষ্যে বল পৌঁছাতে পারেনি।
বিরতির পর আরও তেড়েফুঁড়ে আক্রমণ করে মিয়ানমার। ৫৭ ও ৫৮ মিনিটে স্বাগতিক দলের দুই আক্রমণ রুখে দেন বাংলাদেশের ডিফেন্ডাররা। ৬০ মিনিটে পাল্টা আক্রমণে আশা জাগালেও গোলদাতা ঋতুপর্ণার শট খুঁজে পায়নি কাঙ্ক্ষিত নিশানা। এরপর ৬৫ মিনিটে কর্ণার পায় বাংলাদেশ, তবে সেই কর্ণার থেকে আশানুরূপ সম্ভাবনা তৈরি করতে পারেনি অতিথিরা। ৭১ মিনিটে আরও একবার মিয়ানমার দেখে ঋতুপর্ণার ঝলক। এবার প্রতিপক্ষ এক খেলোয়াড়ের কাছ থেকে বল ছিনিয়ে নিয়ে পেনাল্টি বক্সের বাঁ-প্রান্ত থেকে বাঁপায়ের শটে দারুণ এক গোল পেয়ে যান ঋতুপর্ণা। বাঁক খেয়ে জালে ঢুকে যাওয়া সেই শট চেয়ে দেখা ছাড়া কিছুই করার ছিল না প্রতিপক্ষ গোলকিপার মিয়ো মায়ার। দেরিতে হলেও ১ গোল শোধ করে মিয়ানমার। ৮৯ মিনিটে বাংলাদেশের রক্ষণের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে গোলটা করেন উইন উইন।
আগামী ১৩ আগস্ট বাংলাদেশ সফরে আসার কথা ছিল ভারতীয় ক্রিকেট দলের। সূচি অনুযায়ী খেলার কথা ছিল তিনটি ওয়ানডে ও তিনটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ।
প্রায় দুই মাস আগেই ঘোষণা করা হয়েছিল এই দ্বিপক্ষীয় সিরিজের দিনক্ষণ। কিন্তু সব পরিকল্পনা আপাতত অনিশ্চয়তার মুখে। কারণ, এখনো ভারত সরকারের পক্ষ থেকে সফরের জন্য চূড়ান্ত অনুমোদন পায়নি বিসিসিআই।
দিল্লির একাধিক সরকারি সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, রাজনৈতিক কারণেই বাংলাদেশ সফর নিয়ে ইতস্তত করছে ভারত সরকার। ভারতীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্রের দাবি, বর্তমান কূটনৈতিক বাস্তবতায় বাংলাদেশ সফর কোনো ইতিবাচক বার্তা দেবে না, এমন ভাবনা থেকেই সফরে সম্মতি দিচ্ছে না দিল্লি।
এই অবস্থায় নির্ধারিত সময়ে, অর্থাৎ ১৭ আগস্ট থেকে মিরপুরে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও, সিরিজটি আয়োজন হওয়া নিয়ে তৈরি হয়েছে শঙ্কা। সূচি অনুযায়ী সিরিজটি শেষ হওয়ার কথা ৩১ আগস্ট, আর ১ সেপ্টেম্বর ভারত দলের বাংলাদেশ ত্যাগের কথা। কিন্তু ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার মতে, সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা, বিশেষ করে ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা ঘিরে বাংলাদেশের এক সাবেক সামরিক কর্মকর্তার বিতর্কিত মন্তব্য, সফর অনিশ্চয়তার পেছনে ভূমিকা রেখেছে।
উল্লেখযোগ্যভাবে, ওই মন্তব্যের বিষয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দ্রুত সাড়া দিয়েছিল। তারা স্পষ্ট জানায়, সাবেক কর্মকর্তার বক্তব্যের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। তবু ভারতীয় প্রশাসনের অনীহা কাটেনি।
ভারতের আরেকটি গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ সফর নিয়ে বিসিসিআই শুরু থেকেই অনাগ্রহী ছিল। নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের কথাও জানিয়েছে তারা। আর সেই উদ্বেগের কারণে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের ‘সবুজ সংকেত’ ছাড়া বিসিসিআই এককভাবে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে না।
এই প্রসঙ্গে বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা সিরিজটি পূর্ব নির্ধারিত সময়েই আয়োজন করতে চাইছি। তবে ভারত যদি আগস্টে সফরে না আসে, তাহলে ভবিষ্যতের ফাঁকা সময়ে সিরিজটি আয়োজনের চেষ্টা করা হবে। ’ তিনি আরও জানান, ‘সফর নিয়ে বিসিসিআইয়ের সঙ্গে আলোচনা চলছে এবং শুধু বাংলাদেশ নয়, আরও কয়েকটি সফরের ক্ষেত্রেও ভারত সরকার বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। ’
তবে বাস্তবতা বলছে, সফর পিছিয়ে গেলে ২০২৫ সালের মধ্যে আর সিরিজ আয়োজনের সুযোগ পাওয়া কঠিন। কারণ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হবে এশিয়া কাপের প্রস্তুতি। এরপর অক্টোবর-নভেম্বরে বাংলাদেশের রয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও আয়ারল্যান্ড সিরিজ। ডিসেম্বরে বিপিএল, আর ফেব্রুয়ারি-মার্চে অনুষ্ঠিত হবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ।
সব মিলিয়ে ভারত সফর না করলে, ঘরের মাঠে ভারতকে পাওয়া বাংলাদেশের জন্য এ বছর আর সম্ভব হচ্ছে না বললেই চলে। এখন দেখার বিষয়, কূটনৈতিক টানাপড়েনের এই আবহে বিসিসিআই আদৌ সরকারের অনুমোদন আদায় করে সফরের দিনক্ষণ ঠিক রাখতে পারে কি না।
বাংলাদেশের ৩২তম ওয়ানডে ক্রিকেটার হিসেবে ৫০ ম্যাচ খেলার মাইলফলক স্পর্শ করেছেন সাবেক অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত।
শ্রীলংকার বিপক্ষে তিন ওয়ানডে সিরিজে আজ কলম্বোর আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে প্রথম ম্যাচে ক্যারিয়ারের ৫০তম ম্যাচ খেলতে নামেন শান্ত।
২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে আবু ধাবিতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে ওয়ানডে অভিষেক হয় শান্তর। এরপর ৪৯ ম্যাচের ৪৮ ইনিংসে ৩ সেঞ্চুরি ও ১০ হাফ-সেঞ্চুরিতে ৩৪ দশমিক ৭৭ গড়ে ১,৫৬৫ রান করেছেন তিনি। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে আয়ারল্যান্ড-আফগানিস্তান ও শ্রীলংকার বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছেন এই বাঁ-হাতি ব্যাটার।
২০২৪ সালের মার্চে চট্টগ্রামে শ্রীলংকার বিপক্ষে অপরাজিত ১২২ রানের নান্দনিক ইনিংস খেলেছিলেন তিনি। শান্তর ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসের উপর ভর করে ৬ উইকেটে ম্যাচটি জিতেছিল বাংলাদেশ।
শান্তর আগে বাংলাদেশের হয়ে ৩১জন ক্রিকেটার ৫০ বা তার বেশি ওয়ানডে খেলেছেন। দেশের হয়ে ওয়ানডেতে সবচেয়ে বেশি ২৭৪ ম্যাচ খেলেছেন মুশফিকুর রহিম। গত আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর ওয়ানডে থেকে অবসর নেন মুশি।
২০২৫ সালের টপ অ্যান্ড টি-টোয়েন্টি সিরিজে এবারও অংশ নেবে বাংলাদেশ দল। বাংলাদেশ ছাড়াও এশিয়া থেকে নেপাল জাতীয় দল, পাকিস্তান শাহীন্স টুর্নামেন্টটিতে খেলবে। এছাড়া বিগ ব্যাশের কয়েকটি দলসহ মোট ১১টি দল খেলবে এই টুর্নামেন্টে। বাকি দলগুলোর নাম পরে ঘোষণা করা হবে।
অস্ট্রেলিয়ার নর্দার্ন টেরিটরির ডারউইনে অনুষ্ঠিতব্য এই জনপ্রিয় টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে তৃতীয়বারের মতো খেলতে যাচ্ছে পাকিস্তান শাহীন্স (এ দল)। অন্যদিকে বাংলাদেশ ‘এ’ দল ২০২৪ সালের ফাইনালে অ্যাডিলেইড স্ট্রাইকার্স অ্যাকাডেমির কাছে হেরে যায়। আগামী ১৪ আগস্ট সিরিজের উদ্বোধনী ম্যাচেই মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান ‘এ’ দল।
নর্দান টেরিটরি ক্রিকেটের সিইও গ্যাভিন ডোভি বলেন, ‘পিসিবি ও বিসিবিকে আবার ডারউইনে স্বাগত জানাতে পেরে আমরা গর্বিত। এই টুর্নামেন্ট শুধুই খেলাধুলার নয়, বরং নর্দান টেরিটরিকে ভ্রমণ, বসবাস, কাজ কিংবা পড়াশোনার জন্য জনপ্রিয় করে তোলার একটি উদ্যোগও বটে। পাকিস্তান ও বাংলাদেশ- বিশ্বের অন্যতম জনবহুল দেশ- এবং নেপালের অংশগ্রহণে এই আসর আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।’
বিসিবির সিইও নিজামউদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘ডারউইনে ফিরে আসতে পারায় আমরা আনন্দিত। অস্ট্রেলিয়ার কন্ডিশনে খেলা উদীয়মান খেলোয়াড়দের জন্য দুর্দান্ত অভিজ্ঞতা। ১৪ আগস্টের উদ্বোধনী ম্যাচটিকে আমরা বিশেষভাবে দেখছি, যেখানে আমাদের তরুণ প্রতিভার ঝলক দেখানোর সুযোগ থাকবে।’
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) আসন্ন আসর চলতি বছরের ডিসেম্বরে আয়োজনের কথা ছিল। নির্ধারিত সময়েই তা অনুষ্ঠিত হবে। সোমবার (৩০ জুন) বিসিবির বোর্ড সভা শেষে এ তথ্য জানিয়েছেন পরিচালক ইফতেখার রহমান মিঠু।
মূলত এবারের বিপিএল শুরু হবে আগামী ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে। পাঁচ বছরের জন্য দেওয়া হবে দলের মালিকানা। নতুন করে বিপিএলের গভর্নিং কাউন্সিলে থাকবেন বাইরের সদস্যরাও।
বিদেশি ফ্র্যাঞ্চাইজি যুক্ত করার প্রসঙ্গে ইফতেখার মিঠু বলেন, ‘(বিপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজি) সবার জন্য উন্মুক্ত। ক্রাইটেরিয়া আমরা ঠিক করিনি, আমাদের যে অভিজ্ঞতা আছে এবং যারা (এজেন্সি) এসব আগে সফলভাবে করেছে, তাদের পরামর্শ সহকারে একটা ক্রাইটেরিয়া ঠিক করা হবে। তারপর বোর্ড সিদ্ধান্ত নেবে। ওই ক্রাইটেরিয়া পূরণ করলে, আমাদের সরকারের নীতিমালা সব কিছু ঠিক থাকলে তারা (বিদেশি ফ্র্যাঞ্চাইজি) দল নিতে পারবে।’
বিপিএলের ৬ মাস বাকি থাকলেও এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি কয়টি ফ্র্যাঞ্চাইজি এই টুর্নামেন্টে অংশ নেবে। এমনকি কোন ফ্র্যাঞ্চাইজি থাকছে তাও নিশ্চিত নয়। তবে বিসিবির সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল নিশ্চিত করেছেন নতুন ও পুরোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি যারাই আগামী আসরে অংশ নেবে তাদের সঙ্গে ৫ বছরের চুক্তি করবে বিসিবি।
বিপিএলের বিভিন্ন বিভাগে বিসিবির বাইরে থেকেও বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন মিঠু, ‘বিপিএল নিয়ে সবচেয়ে বড় যে সিদ্ধান্ত, আগে কখনো হয়নি। বিপিএল নিয়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিতের জন্য (বোর্ডের) বাইরের লোককে দায়িত্ব দেওয়া হবে। আমরা যেন একদম ক্লিন ইমেজ নিয়ে শেষ করতে পারি, স্বচ্ছতা যেন থাকে। তাই বিপিএল কমিটিতে নানা ডিসিপ্লিনের বিশেষজ্ঞ হিসেবে বাইরের লোকও নেওয়া হবে।’
টেস্ট সিরিজের হতাশা পেছনে ফেলে শ্রীলংকার বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ দিয়ে নতুন করে শুরু করতে চায় সফরকারী বাংলাদেশ। আগামীকাল কলম্বোর আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে সিরিজের প্রথম ওয়ানডে শুরু হবে বাংলাদেশ সময় বিকেল ৩টায়।
শ্রীলংকার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ দিয়ে স্থায়ী অধিনায়ক হিসেবে যাত্রা শুরু করবেন মেহেদি হাসান মিরাজ। লংকানদের বিপক্ষে সিরিজের ঠিক আগে এক বছরের জন্য ওয়ানডে অধিনায়ক হিসেবে নাজমুল হোসেন শান্তর স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন মিরাজ।
ওয়ানডের আগে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ ১-০ ব্যবধানে হারে বাংলাদেশ। প্রথম টেস্ট ড্র হলেও দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট ইনিংস ও ৭৮ রানে হারে টাইগাররা।
প্রথম টেস্টে ব্যাট-বল হাতে দারুণ পারফরমেন্সে আধিপত্য বিস্তার করে ম্যাচ ড্র করে বাংলাদেশ। কিন্তু দ্বিতীয় টেস্টে ব্যাটিং ব্যর্থতায় ম্যাচ হারে টাইগাররা। সফরের শুরুতে হওয়া টেস্ট সিরিজে হারের লজ্জা পায় বাংলাদেশ। তাই টেস্ট সিরিজের ব্যর্থতা ওয়ানডে সিরিজে প্রভাব ফেলতে পারে বলে অনেকেই ধারণা করছেন।
তবে ওয়ানডে সিরিজে ভাল করার ব্যাপারে আশাবাদী বাংলাদেশ অধিনায়ক মিরাজ। তিনি জানান, ওয়ানডে সিরিজে লড়াই হবে।
এখন পর্যন্ত শ্রীলংকার বিপক্ষে ৫৭ ম্যাচ খেলে মাত্র ১২টি জিতেছে বাংলাদেশ। ৪৩টিতে হার ও দু’টি ম্যাচ বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হয়। তবে, দু’দলের শেষ পাঁচ দেখায় বাংলাদেশ তিনটিতে জিতেছে এবং দু’টিতে হেরেছে।
২০২৪ সালের মার্চে সর্বশেষ ওয়ানডে সিরিজে মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ- শ্রীলংকা। তিন ম্যাচের সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতেছিল টাইগাররা। এরপর আফগানিস্তান এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দু’টি তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলে বাংলাদেশ। আফগানিস্তানের কাছে ২-১ ব্যবধানে হারের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে হোয়াইটওয়াশ হয়েছিল টাইগাররা। শান্ত অনুপস্থিতিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মিরাজ।
এরপর গত ফেব্রুয়ারিতে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে অংশ নেয় বাংলাদেশ। ‘এ’ গ্রুপে তিন ম্যাচের মধ্যে প্রথম দুই ম্যাচে ভারত ও নিউজিল্যান্ডের কাছে পরাজিত হয়ে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিশ্চিত হয়ে যায় টাইগারদের। গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশ- পাকিস্তান ম্যাচটি পরিত্যক্ত হয়। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আর কোন ওয়ানডে খেলেনি টাইগাররা।
শ্রীলংকার মাটিতে বাংলাদেশের ওয়ানডে রেকর্ডও হতাশাজনক। ২৪ ম্যাচ খেলে মাত্র ২টিতে জয়, ২০টিতে হার ও ২টি পরিত্যক্ত হয়েছে।
২০১৯ সালে শ্রীলংকার মাটিতে সর্বশেষ তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়েছিল বাংলাদেশ। এরপর ২০২৩ সালে এশিয়া কাপ খেলতে আবারও শ্রীলংকা সফর করে টাইগাররা। লংকার মাটিতে দুই ম্যাচ খেলে দু’টিতেই হেরেছে তারা। শ্রীলংকার মাটিতে সর্বশেষ ছয় ম্যাচের একটিতেও জয় নেই বাংলাদেশের।
ইনজুরি থেকে সুস্থ হয়ে শ্রীলংকা সিরিজ দিয়ে দলে ফিরেছেন পেসার তাসকিন আহমেদ। ফলে টাইগারদের পেস আক্রমণকে আরও শক্তিশালী করে তুলেছে। ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিক পারফরমেন্সের সুবাদে আড়াই বছর পর ওয়ানডে দলে ফিরেছেন মোহাম্মদ নাইম। আরও ফিরেছেন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দলে সুযোগ না পাওয়া উইকেটরক্ষক-ব্যাটার লিটন দাস, মিডল অর্ডার ব্যাটার শামীম পাটোয়ারী এবং বাঁ-হাতি স্পিনার তানভীর ইসলাম।
বাদ পড়েছেন সৌম্য সরকার এবং নাসুম আহমেদ। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পরই ওয়ানডে ফরম্যাট থেকে অবসর নেন দলের দুই অভিজ্ঞ খেলোয়াড় মুশফিকুর রহিম এবং মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ।
বাংলাদেশ দল : মেহেদি হাসান মিরাজ (অধিনায়ক), তানজিদ হাসান তামিম, পারভেজ হোসেন ইমন, মোহাম্মদ নাইম, নাজমুল হোসেন শান্ত, তাওহিদ হৃদয়, লিটন দাস, জাকের আলী, শামীম পাটোয়ারি, রিশাদ হোসেন, তানভীর ইসলাম, মুস্তাফিজুর রহমান, তানজিম হাসান, তাসকিন আহমেদ, নাহিদ রানা ও হাসান মাহমুদ।
শ্রীলংকা দল : চারিথ আসালাঙ্কা (অধিনায়ক), পাথুম নিশাঙ্কা, আভিস্কা ফার্নান্দো, নিশান মাধুশকা, কুশল মেন্ডিস, সাদিরা সামারাবিক্রমা, কামিন্দু মেন্ডিস, জেনিথ লিয়ানাগে, দুনিথ ওয়েলালাগে, হাসারাঙ্গা ডি সিলভা, মহেশ থিকশানা, জেফরি ভান্ডারসে, মিলান রত্নায়েকে (ফিট থাকা সাপেক্ষে), দিলশান মাধুশঙ্কা, আসিথা ফার্নান্দো ও ইশান মালিঙ্গা।
অবশেষে দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান হতে যাচ্ছে নোয়াখালীবাসীর। আসন্ন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএলে) দেখা যেতে পারে বাংলাদেশের আলোচিত এই জেলাটিকে। এর আগে কখনোই বিপিএলে অংশ নেয়নি তারা। নতুন দল হিসেবে বিপিএলে আসতে যাচ্ছে নোয়াখালী রয়্যালস। বিপিএলে অংশ নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবির) কাছে আবেদন জমা দিয়েছে নোয়াখালী রয়্যালস। গত ২৪ জুন ফ্র্যাঞ্চাইজিটির সত্ত্বাধিকারের অনুমতি চেয়ে বিসিবির কাছে আবেদন করেছে শায়ানস গ্লোবাল নামের একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান।
আজ সোমবার বিসিবির সভায় বিপিএলে নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। তার আগেই আলোড়ন ফেলে দিয়েছে সায়ানস গ্লোবাল নামের প্রতিষ্ঠান। আগামী বিপিএলে নোয়াখালী থেকে দল কেনার জন্য বেশ ভালোভাবেই মাঠে নেমেছে প্রতিষ্ঠানটি।
গত ২৪ জুন বিসিবির সভাপতি বরাবর দেওয়া এক চিঠিতে সায়ানস গ্লোবাল জানায়, বিপিএলে দল নেওয়ার পাশাপাশি নোয়াখালী অঞ্চলে ক্রিকেটের উন্নয়নে কাজ করতে চায় তারা। এছাড়া, বিপিএলের সকল প্রক্রিয়া মেনে অংশ হওয়ার আবেদন জানিয়েছে তারা।
প্রতিটি উপজেলার ক্রিকেটারদের ডাটাবেজের আওতায় নিয়ে আসার পরিকল্পনা চলছে। যেখানে ব্যাটসম্যান-বলার থেকে শুরু করে প্রতিটি খেলোয়াড়ের তথ্য থাকবে বলে জানিয়েছেন- বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি আমিনুল ইসলাম।
তিনি বলেছেন, আমরা চাই বরিশালের প্রতিটি খেলোয়াড় বরিশালের সিস্টেমের মাধ্যমেই বরিশালকে রিপ্রেজেন্টেশন করুক। সব জেলা মিলিয়ে যখন একটি শক্তিশালী বিভাগীয় দল হবে, তখন আর কাউকে ঢাকার দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে না। রোববার বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটে ২৫ বছর (রজত জয়ন্তী) উপলক্ষে বরিশাল জীবনানন্দ দাস স্টেডিয়ামে (বরিশাল স্টেডিয়াম) আয়োজিত অনুষ্ঠানের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এমনটি জানিয়েছেন।
এর আগে বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেটের ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে বরিশাল কবি জীবনানন্দ দাশ স্টেডিয়ামে অনূর্ধ্ব ১২, বালক-বালিকাদের সিক্স এ সাইড, পেস হান্টার, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন ইভেন্টের প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয়। যেখানে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্রিকেট অনুরাগী শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন। গতকাল বিকালে প্রতিযোতায় অংশগ্রহণকারীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। দুপুর ১২টার দিকে বেলুন-ফেস্টুন উড়িয়ে প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার রায়হান কাওছার। এছাড়া অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) সোহরাব হোসেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) লুসিকান্ত হাজং, বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার মেহেরাব হোসেন অপি, শাহরিয়ার নাফিস ও সোহাগ গাজীসহ সাবেক খেলোয়াড়বৃন্দ, জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে দুই বারের বিপিএল চ্যাম্পিয়ন ফরচুন বরিশালের কর্ণধার মিজানুর রহমান, এবং বরিশাল বিভাগও জেলা ক্রীড়া সংস্থাসহ খেলোয়াড়রা ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত করেন বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলামকে।
বিসিবি সভাপতি আরও বলেন, আমরা চেষ্টা করছি বাংলাদেশের প্রতিটি উপজেলার খেলোয়াড়দের ডাটাবেজ বোর্ডের সিস্টেমের কাছে থাকবে। জেলার কোচরা প্রতিটি উপজেলার খেলোয়াড়দের চিনবে, কতজন লেগ স্পিনার রয়েছে, কতজন পেসার রয়েছে, কতজন ব্যাটস্ ম্যান রয়েছে তা তারা জানবে। জেলা কোচ সবকিছু বিভাগের কাছে রিপোর্ট করবে, যে তার কোন উপজেলাতে কতজন ক্রিকেটার খেলছে।
তিনি বলেন, বিভাগীয় পর্যায়ের হেডকোয়ার্টারে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের ছোট একটি অফিস থাকবে, যেখানে একজন ক্রিকেটের প্রধান থাকবেন এবং তার অধীনে একজন হাই পারফরমেন্স কোচ থাকবে। এখানে যত ধরনের ক্রিকেট হবে সব তার তত্ত্বাবধায়নে হবে। তবে আমরা নরমাল ক্রিকেট গ্রোথকে ডিস্টার্ব করবো না।
হুট করেই কোনো প্রতিশ্রুতি দিতে পারবেন না জানিয়ে বিসিসি সভাপতি আরও বলেন, আমি মাত্র ২৯ দিন হয়েছে ক্রিকেট বোর্ডে এসেছি। তাই হুট করেই কোনো প্রতিশ্রুতি দেব না। তবে এখানে বিপিএল হলে যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে এ স্টেডিয়ামের গ্যালারি ফুল হয়ে যাবে এটা বলতে পারি। এজন্য আমি ক্রিকেট বোর্ডকে স্ট্রংলি বলতে পারবো। এ মাঠ উন্নয়ন করে বরিশালকে কীভাবে আরও অ্যাকটিভ ক্রিকেট বিভাগ হিসেবে পরিচালনা করতে পারি সে জন্য খুব চেষ্টা করছি আমরা।
বরিশালে গত ১০-১৫ বছর লীগ না হওয়ায় আক্ষেপ প্রকাশ করে বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বলেন, লীগ না হলে একটি ছেলের সঙ্গে আপনি অবিচার করছেন। সোহাগ গাজী, কামরুলসহ এখানকার প্লেয়ারদের নিয়ে আমরা গর্ব করি। কিন্তু খেলা না হওয়ায় কত হাজার ক্রিকেটার আমরা নষ্ট করে ফেলেছি সেটা ভেবে আমরা লজ্জা পাই না! এখানে ক্রিকেট কোচিং কোর্স হয় না, আম্পায়ারিং কোচিং কোর্স, কিউরেটর কোচিং কোর্স হয় না। ছোট ক্রিকেট বোর্ডের যে অফিস হবে সেটার মাধ্যমে এ কাজগুলো ইনশ্আল্লাহ করা হবে। এজন্য বরিশালবাসীর সহযোগিতা চান তিনি।