ফিলিস্তিনের গাজায় আক্রমণ ও গণহত্যার মাধ্যমে ইসরায়েল ফিফার উদ্দেশ্যগুলো ক্ষুণ্ন করেছে বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ আইনজীবীদের একটি দল। যে কারণে ইসরায়েলকে ফুটবলসংক্রান্ত যেকোনো কর্মকাণ্ড থেকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছে তারা।
ইসরায়েলকে নিষিদ্ধ করার একটি প্রস্তাব গত মে মাসে দেয় ফিলিস্তিন ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (পিএফএ)। এ মাসে ফিফা তাদের কাউন্সিলের এক সভায় এ বিষয়ে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে একটি জরুরি আইনি মূল্যায়নের আদেশ দেয়।
এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সমর্থন দিয়েছিল। পিএফএ সভাপতি জিব্রিল আল-রাজউব বলেছেন, ফিলিস্তিনে চলমান গণহত্যা অথবা আইন লঙ্ঘন নিয়ে ফিফা উদাসীন থাকতে পারে না।
ফিলিস্তিনের প্রস্তাবে ইসরায়েল ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের (আইএফএ) বিরুদ্ধে ইসরায়েলি সরকারের আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত থাকার এবং আরব খেলোয়াড়দের প্রতি বৈষম্যের অভিযোগ আনা হয়েছে। যদিও আইএফএ তা প্রত্যাখ্যান করেছে।
জেলা ক্রিকেটের উন্নয়ন ও ক্রিকেটারদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিসহ আরও ১৭টি দাবি নিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সামনে সমাবেশ করেছন দেশের ৬৪ জেলার ক্রিকেটাররা। মিরপুরের হোম অব ক্রিকেটে অ্যাকাডেমি ভবনের সামনে আজ রোববার তারা ব্যানার নিয়ে তাদের অবস্থান কর্মসূচী পালন করেন।
মূল দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, জেলা পর্যায়ে ক্রিকেটারদের ম্যাচ ফি বৃদ্ধি, ঢাকার প্রথম শ্রেণির লিগে টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি তিন সংস্করণেই টুর্নামেন্ট আয়োজন করা এবং প্রত্যেক জেলার ক্রিকেটারদের জন্য আধুনিক অনুশীলনের সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা।
তাদের ১৭টি দাবি হল:
১. জেলা পর্যায়ে ক্রিকেট লিগের জন্য স্থায়ী বাজেট বরাদ্দ করতে হবে এবং খেলা চালিয়ে যাওয়ার জন্য ক্রিকেটারদের আর্থিক সহায়তা দিতে হবে। এতে করে ক্রিকেটারদের আর্থিক সমস্যা কমবে এবং তাদের পারফরম্যান্সের মান বৃদ্ধি পাবে।
২. ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে (ডিপিএল) প্রথম শ্রেণির, ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি—তিন সংস্করণের টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে হবে। এর মাধ্যমে খেলোয়াড়দের সব ফরম্যাটে খেলার সুযোগ তৈরি করা হবে এবং তাদের পারফরম্যান্স উন্নত হবে।
৩. প্রতিটি বিভাগে টেস্ট, ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি খেলার সুযোগ তৈরি করতে হবে এবং ঢাকার বাইরেও প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলার আয়োজন নিশ্চিত করতে হবে। এতে করে দেশের অন্যান্য জেলার ক্রিকেটারদের সুযোগ বৃদ্ধি পাবে।
৪. প্রতিটি জেলায় ক্রিকেটারদের অনুশীলনের জন্য পর্যাপ্ত অবকাঠামো ও সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করতে হবে। বিশেষ করে মাঠ, নেট প্র্যাকটিস এবং কোচিং সুবিধা বৃদ্ধি করা জরুরি।
৫. কোয়াব স্বাধীনভাবে পরিচালিত হতে হবে, যেন এটি খেলোয়াড়দের সঠিকভাবে প্রতিনিধিত্ব করতে পারে এবং তাদের স্বার্থ রক্ষা করতে পারে।
৬. ঢাকার প্রথম বিভাগ, দ্বিতীয় বিভাগ এবং তৃতীয় বিভাগের ক্রিকেট লিগে টেস্ট, ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি তিন সংস্করণেই খেলার ব্যবস্থা করতে হবে।
৭. জাতীয় ক্রিকেটারদের জন্য টিভি সম্প্রচার এবং ডিজিটাল মিডিয়ায় আরও ম্যাচ প্রচার করতে হবে, যাতে দর্শকদের মধ্যে ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায়।
৮. ঢাকার দ্বিতীয় বিভাগ এবং তৃতীয় বিভাগে নিয়মিত টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে হবে, যা তরুণ ক্রিকেটারদের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে।
৯. সব জেলায় ক্রিকেট অ্যাকাডেমি তৈরি করতে হবে এবং সেখানকার ক্রিকেটারদের উন্নত প্রশিক্ষণ ও কোচিং দেওয়া হবে, যাতে তাদের দক্ষতা আরও উন্নত হয়।
১০. জেলা পর্যায়ের ক্রিকেটারদের জন্য উন্নত ম্যাচ ফি নিশ্চিত করতে হবে এবং এই ফি পর্যায়ক্রমে বৃদ্ধি করতে হবে, যেন তারা আর্থিকভাবে সমৃদ্ধ হতে পারে।
১১. প্রত্যেক বিভাগে স্থায়ীভাবে অনুশীলনের সুবিধা বাড়াতে হবে এবং সেই সঙ্গে কোচদের সংখ্যা বাড়াতে হবে। এতে তরুণ ক্রিকেটাররা পেশাদার স্তরে পৌঁছাতে পারবে।
১২. ঢাকায় ক্রিকেট একাডেমির পাশাপাশি জেলাতেও অনুশীলন ও কোচিং সুবিধা উন্নত করতে হবে।
১৩. বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) আয়োজনে বিভিন্ন স্থানে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে হবে এবং বাংলাদেশের স্থানীয় খেলোয়াড়দের সেসব টুর্নামেন্টে খেলার সুযোগ দিতে হবে।
১৪. জেলাভিত্তিক এবং বিভাগভিত্তিক টুর্নামেন্টে পুরস্কারের ব্যবস্থা করতে হবে, যা তরুণ ক্রিকেটারদের মনোবল বাড়াবে এবং তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করবে।
১৫. বিসিবির রেজিস্ট্রেশন সিস্টেমের মাধ্যমে সব ক্রিকেটারদের সম্পূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করতে হবে, যাতে তাদের দক্ষতা ও কার্যক্রম মূল্যায়ন করা যায়।
১৬. বিপিএল এবং অন্যান্য ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টে স্থানীয় ক্রিকেটারদের আরও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে এবং তাদের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।
১৭. সব ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের আওতায় স্থানীয় ক্রিকেট উন্নয়নের জন্য বিশেষ প্রোগ্রাম চালু করতে হবে, যাতে দেশের ক্রিকেট অবকাঠামো আরও উন্নত হয়।
পরে গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে ক্রিকেটাররা জানান তাদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে বিসিবি। ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক নাজমূল আবেদীন ক্রিকেটাদের বেশির ভাগ দাবিকে যৌক্তিক মনে করেন।
ক্রিকেটারদের প্রতি তার কথা, ক্রিকেট বোর্ড কী করলে আমার লাভ হবে বা তোমার লাভ হবে, সেটা নয়…কী করলে ক্রিকেটের লাভ হবে, এখন সেটা দেখা দরকার। সেটার জন্য যা যা করা দরকার, ক্রিকেট বোর্ড সামর্থ্য অনুযায়ী সেই জিনিসটা করবে।
সব প্রতিকূলতাকে দূরে সরিয়ে, সব শঙ্কার কবর রচনা করে ভুটানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে জয় দিয়ে শুরু করেছে বাংলাদেশ। এই জয়ে ফুটবলারদের আত্মবিশ্বাসের প্যারামিটার বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। সেটার প্রমাণ পাওয়া গেল বাংলাদেশের ডিফেন্সের অন্তদ্র প্রহরী তপু বর্মণের কণ্ঠেও। দ্বিতীয় ম্যাচেও জয় ছাড়া বিকল্প কিছুই দেখছেন না অভিজ্ঞ এই ডিফেন্ডার।
দ্বিতীয় ম্যাচকে সামনে রেখে অনুশীলন করছেন ফুটবলাররা। কিন্তু অস্বস্তির কথা হলো- প্রথম ম্যাচে ইনজুরি নিয়ে মাঠ ছাড়া রাকিব হোসেনের দ্বিতীয় ম্যাচে খেলা নিয়ে তৈরি হয়েছে শঙ্কা। টিম ম্যানেজার আমের খানও দিতে পারলেন না স্পষ্ট বার্তা। তিনি বলেন, ‘আজ ১০-১২টা পর্যন্ত রিকভারি সেশন ছিল। ফান, গেমস, যেগুলো করলে মানসিকভাবে ছেলেরা ভালো বোধ করে, সেগুলো করা হয়েছে। রাকিব গতকাল চোট পেয়েছে, তার চিকিৎসা চলছে।’
ভুটানের চ্যাংলিমিথাংয়ে আছে বাংলাদেশের একটি বাজে অভিজ্ঞতা। ২০১৬ সালে এই মাঠেই প্রথমবার ভুটানের বিপক্ষে হেরেছিল লাল-সবুজের জার্সিধারীরা। এরপর প্রায় দুই বছর আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে দূরে ছিল বাংলাদেশ। তবে প্রথম ম্যাচ জিতে সেই ভয় কেটে গেছে বলেই জানালেন আমের খান। তিনি বলেন, ‘সবার মধ্যে একটা টেনশন কাজ করছিল, প্রথম ম্যাচ, অনেক দিন পর খেলা, ভুটানের এ মাঠে আগের একটা অভিজ্ঞতা ছিল। সেখান থেকে সব দুশ্চিন্তা দূর করে একটা গোল দিয়ে যে ধরে রাখতে পেরেছি, সেই আত্মবিশ্বাস নিয়ে দ্বিতীয় ম্যাচের প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
পঞ্চম মিনিটে করা মোরসালিনের গোলটি আগলে রেখে প্রথম প্রীতি ম্যাচে জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ। ওই জয়ে খেলোয়াড়দের মানসিক শক্তির সঙ্গে আত্মবিশ্বাসও বেড়েছে বলে মনে করেন তপু। তিনি বলেন, ‘আমাদের যে লক্ষ্য ছিল, কোচের যে দর্শন ছিল, আমার মনে হয় আমাদের টিম ওয়ার্ক ভালো ছিল এবং সেটা আমরা প্রয়োগ করতে পেরেছি (প্রথম প্রীতি ম্যাচে)।’
‘আমরা সবচেয়ে বেশি উপকার পেয়েছি এখানে সাত দিন আগে আসায়। আবহাওয়ার সঙ্গে পুরোপুরি মানিয়ে নিতে পেরেছি। পরিকল্পনা মোতাবেক খেলতে পেরেছি। আমার মনে হয়, কাল আমাদের জয়ের জন্য এটা বড় ভূমিকা রেখেছিল।’- যোগ করেন তপু।
দ্বিতীয় প্রীতি ম্যাচেও জয়ের ধারায় থাকতে চান অভিজ্ঞ এই ডিফেন্ডার। প্রতিকূলতা লক্ষ্য পূরণের পথে বাধা হতে পারবে না বলেই জানালেন তিনি, ‘আমাদের এখন জয় ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। এরই মধ্যে এখানে আমরা মানিয়ে নিয়েছি। মানসিকভাবেও আমরা এখন চাঙ্গা। প্রতিটি খেলোয়াড় আত্মবিশ্বাসী। এটা পরের ম্যাচের জন্য জরুরি। আমার মনে হয়, আমরা যদি একই কাজ করতে পারি, একই নিবেদন নিয়ে মাঠে নামি, তাহলে নিশ্চিতভাবেই আমরা জিতব।’
বয়স একটা সংখ্যা মাত্র! অন্তত পর্তুগিজ তারকা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর কাছে। সেটা না হলে কি আর এই বয়সেও এমন ফুটবল খেলা যায়। চল্লিশ ছুঁই ছুঁই বয়সেও যেন এক তরুণ রোনালদো। এখনো গোলের ক্ষুধায় ক্ষুধার্ত সিআরসেভেন; মাঠে প্রতিপক্ষের জন্য এক আতঙ্কের নাম। ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে পাফরম্যান্সে কিছুটা ভাটা পড়লেও আবারও ফিরে আসলেন নেশনস লিগে। ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে গোল করে নিজেকে নিয়ে গেছেন অন্যন্য উচ্চতায়। বিশ্বের প্রথম ফুটবলার হিসেবে আন্তর্জাতিক ফুটবলে ৯০০ গোলের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন রোনালদো। সিআরসেভেনের এমন ইতিহাসগড়া রাতে পর্তুগালও স্বস্তির জয়ে নেশসন লিগের শিরোপা পুনরুদ্ধারের মিশন শুরু করল।
৮৯৯ গোল নিয়ে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে মাঠে নেমেছিল রোনালদো। তার ৯০০ গোল পূরণের অপেক্ষায় ছিল ভক্ত-সমর্থকেরা; গ্যালারিতে নিয়ে এসেছিলেন ‘৯০০ রোনালদো’ লেখা প্ল্যাকার্ড। ইতিহাস গড়তে খুব একটা সময় লাগেনি পর্তুগিজ তারকার। ব্যবধান দ্বিগুণ করা গোলে নিখুঁত এক ভলিতে প্রথম ফুটবলার হিসেবে ক্যারিয়ারে ৯০০ গোলের মাইলফলক স্পর্শ করলেন পর্তুগিজ মহাতারকা।
লিসবনে গতকাল রাতে ‘এ’ লিগের এক নম্বর গ্রুপের ম্যাচে ক্রোয়েশিয়াকে ২-১ গোলে হারিয়েছে রবের্তো মার্তিনেসের শিষ্যরা। ম্যাচের শুরুতেই দলকে এগিয়ে নিয়ে যান দিয়োগো দালোত। এরপর ব্যবধান দ্বিগুণ করেন রোনালদো।
ম্যাচের শুরুতেই এগিয়ে যায় পর্তুগাল। সপ্তম মিনিটেই দলকে লিড এনে দেন দিয়োগো দালোত। প্রতিপক্ষের চ্যালেঞ্জের মুখে ফার্নান্দেসের থ্রু বল বক্সে নিয়ন্ত্রণে নেন দালোত। এরপর ডিফেন্ডার বোর্না সোসাকে বাধা দেওয়ার কোনো সুযোগ না দিয়ে, জায়গা বানিয়ে কোনাকুনি শটে জালে বল পাঠান ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ফুল-ব্যাক দালোত।
মাঝখানে দুই দলই কয়েকটি সুযোগ তৈরি করলেও কাঙ্ক্ষিত গোলের দেখা পায়নি। ম্যাচের ৩৪তম মিনিটে এসে ঐতিহাসিক গোলটি করেন রোনালদো। দূর থেকে ছয় গজ বক্সে ক্রস বাড়ান নুনো মেন্দেস, বলের ওপর তীক্ষ্ণ নজর রেখে, প্রতিপক্ষের দুই খেলোয়াড়ের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে ভলিতে ঠিকানা খুঁজে নেন পর্তুগাল অধিনায়ক।
আগে থেকেই আন্তর্জাতিক ফুটবলের রেকর্ড গোলদাতা রোনালদো। আর এই গোল দিয়ে জাতীয় দলের হয়ে তার মোট গোল হলো ১৩১টি। বাকি ৭৬৯টি গোল তিনি করেছেন পাঁচ ক্লাবের হয়ে; স্পোর্তিং (৫), ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড (১৪৫), রিয়াল মাদ্রিদ (৪৫০), ইউভেন্তুস (১০১) ও আল নাস্রের (৬৮) হয়ে।
বিরতির আগেই ঘুরে দাঁড়ানোর উপলক্ষ পেয়ে যায় ক্রোয়াটরা। প্রতিপক্ষের আক্রমণ রুখতে গিয়ে নিজেদের জালেই বল ঠেলে দেন দালোত। তবে সেটি শেষ পর্যন্ত আর কষ্টের কারণ হয়নি। কারণ দ্বিতীয়ার্ধে কোনো দলই জাল খুঁজে পায়নি। ফলে ২-১ গোলের হয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে পর্তুগাল।
ঘরের মাটিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে রীতিমতো উড়ছেন ইংলিশ ব্যাটার জো রুট। তার ব্যাটে বইছে রান বন্যা। লর্ডসে তো রুটের ব্যাট ছিল সুক্ষ্ম তলোয়ারের মতো। তাকে থামাতে শ্রীলঙ্কার কোনো পরিকল্পনাই কাজে আসছে না। নানা পরিকল্পনা কিংবা ছক একেও ব্যর্থ লঙ্কান শিবির। রুটের সামনে যে কোনো পরিকল্পনাই কাজে আসছে না সেটা অকপটে স্বীকার করে নিলেন না। শ্রীলঙ্কার অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান দিমুথ কারুনারাত্নে।
ইংল্যান্ড সফরে দুই টেস্ট খেলে এখনো জয়ের মুখ দেখেনি শ্রীলঙ্কা। তিন ম্যাচের সিরিজে দুই ম্যাচ হেরে হোয়াইটওয়াশের অপেক্ষায় আছে এখন শ্রীলঙ্কা। এর পেছনের অন্যতম নায়ক সেই জো রুট। দুই ম্যাচেই বড় পার্থক্য গড়ে দিয়েছেন তিনি। ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে প্রথম টেস্টে প্রথম ইনিংসে ৪২ রানে আউট হওয়ার পর দ্বিতীয় ইনিংসে ৬২ রান করেছিলেন। লর্ডসে দ্বিতীয় টেস্ট ছিল তো পুরোপুরিই রুটময়। জোড়া সেঞ্চুরিতে অনেক রেকর্ডে নিজের নাম লেখান তিনি। ইংল্যান্ডের হয়ে সবচেয়ে বেশি শতরানের রেকর্ডে পেছন ফেলে দেন অ্যালেস্টার কুককে।
চার ইনিংসে ১১৬.৬৬ গড়ে রুটের রান এখন ৩৫০। সিরিজে রানের তালিকায় তার পেছনে থাকা কামিন্দু মেন্ডিসের রান কেবল ২০৩। এ সিরিজেই প্রথম নয়, গত কয়েক বছরে বরাবরই শ্রীলঙ্কাকে পেলে রুট হয়ে ওঠেন অপ্রতিরোধ্য। সবশেষ ১১ ইনিংসেই লঙ্কানদের চোখের জল নাকের জল এক করে তিনি সেঞ্চুরি করেছেন ৫টি। তার ক্যারিয়ারে সবচেয়ে বেশি ব্যাটিং গড় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেই, ১২ টেস্টে ৬৭.৫৫। সব দেশের মধ্যে সবচেয়ে ভালো ব্যাটিং গড় তার শ্রীলঙ্কাতেই। সেখানে তার গড় ৬৫.৫০, অথচ নিজ দেশে গড় ৫৫.৬৪। সব মিলিয়ে রুট যে লঙ্কানদের জন্য ভয়ঙ্কর এক মাথাব্যথার নাম, সেটি ফুটে উঠল তৃতীয় টেস্টের আগে কারুনারাত্নের কথায়। তিনি বলেন, ‘জো রুটেক থামাতে বেশ কিছু চেষ্টা আমরা করেছি, কিন্তু সবকটিই ব্যর্থ হয়েছে। এই ম্যাচগুলির টার্নিং পয়েন্ট ছিল জো রুটের ইনিংসগুলোই। এমনকি গলে যখন আমরা খেলেছি, তখনও সে বড় ইনিংস খেলেছে। অন্য ব্যাটাররা এত বড় ইনিংস খেলতে পারেননি। তার রান যতটা সম্ভব কমাতেই হবে আমাদের।’
রুটকে থামানোর সম্ভাব্য একটি পথ বাতলে দিলেন ৯৩ টেস্ট খেলা ব্যাটসম্যান করুনারাত্নে। তিনি বলেন, ‘তার অতীতের পারফরম্যান্স আরও নিবিড়ভাবে দেখতে হবে আমাদের। খেয়াল করতে হবে কীভাবে সে আউট হয়েছে, ক্রিজে সে কোন ধরনের কাজ করে। এসবের ওপর ভিত্তি করে পরিকল্পনা গড়তে হবে আমাদের।’ ‘কখনো কখনো আমরা হয়তো তাকে একটু বেশি আক্রমণ করি, সে সেটার ফায়দা নেয়। অনেক ব্যাটসম্যানই মাঝেমধ্যে কম আগ্রাসী হতে পছন্দ করে না। কখনও কখনও ব্যাটসম্যানদের বিরক্ত করে তোলাও একটি কার্যকর কৌশল।’- যোগ করেন করুণারাত্নে।
এ মাসেই ইংল্যান্ড সফরে যাবে অস্ট্রেলিয়া। তার আগে নিজেদের কিছুটা ঝালিয়ে নিতে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে স্কটল্যান্ড সফরে গেছে অজিরা। গতকাল সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচেই ‘মহাপ্রলয়’ বইয়ে দিয়েছে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটাররা। রীতিমতো তুলোধুনো করেছে স্কটল্যান্ডের বোলারদের। ট্রাভিস হেড-মিচেল মার্শদের ব্যাটিং তাণ্ডবে বিশ্বরেকর্ড গড়ে ১৫০ রানের ওপরের ম্যাচও জিতেছে ১০ ওভারের আগেই।
এডিনবরার গ্রেঞ্জ ক্রিকেট ক্লাব মাঠে স্কটল্যান্ডের দেওয়া ১৫৫ রানের লক্ষ্য ৩ উইকেট হারিয়ে মাত্র ৯.৪ ওভারেই তাড়া করে ফেলেছে অস্ট্রেলিয়া! আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ১৫০ রানের বেশি লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে সবচেয়ে বেশি বল বাকি রেখে জয়ের রেকর্ড এখন এটাই। লক্ষ্য তাড়ায় নেমে ৩২০ স্ট্রাইকরেটে তাণ্ডব চালালেন ট্রাভিস হেড। সেটাও চলল বেশ খানিকটা সময় ধরে। ততক্ষনে ট্রাভিস হেড ২৪ বল থেকেই করে ফেলেছেন ৮০ রান। পরের বলেই আউট হন তিনি। হেডের এমন মহাপ্রলয়ঙ্করী ইনিংসটি গড়া ছিল ৫ ছক্কা ও ১২ চারে। ইনিংসটি খেলার পথে হেড ১৭ বলে ফিফটি পূরণ করেছেন, যা টি-টোয়েন্টিতে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে যৌথভাবে দ্রুততম। ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মার্কাস স্টয়নিসও ১৭ বলে ফিফটি ছুঁয়েছিলেন।
অন্যদিকে হেডকে অনুসরন করেই খেলতে থাকেন মিচেল মার্শ। তার ব্যাট থেকে আসে ১২ বলে ৩৯, ছক্কা ৩টি ও চার ৫টি। জশ ইংলিস অপরাজিত থাকেন ১৩ বলে ২৭ রান করে। একপেশে এই জয়ের পথে পাওয়ার প্লেতে বিশ্ব রেকর্ডও গড়েছে অস্ট্রেলিয়া। দলটি ৬ ওভারেই তুলেছে ১১৩ রান। আগের সর্বোচ্চ ছিল ১০২ রান; যা গত বছরের ২৬ মার্চ সেঞ্চুরিয়নে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। রান তাড়ায় তৃতীয় বলেই জেইক ফ্রেজার-ম্যাকগার্ককে হারায় অস্ট্রেলিয়া। টি-টোয়েন্টি অভিষেকে রানের খাতাই খুলতে পারেননি আলোচিত এই তরুণ সেনসেশন। তবে সেটাকে বিপদের কারণ হতে দেননি ট্রাভিস হেড। এরপরই ঝড় শুরু করেন তিনি।
পাওয়ার-প্লের মধ্যে আর কোনো উইকেটই তুলে নিতে পারেনি স্কটল্যান্ড। এরপর সপ্তম ওভারে এসে জোড়া আঘাত হানে স্বাগতিকরা; কিন্তু ততক্ষনে ম্যাচ অজিদের নিয়ন্ত্রণে। স্টয়নিসকে নিয়ে বাকি পথ সহজেই পাড়ি দেন ইংলিস। এর আগে প্রথম ৬ ওভারে ১১৩ রান তুলে ফেলে অজিরা। এর আগে টস জিতে স্কটল্যান্ডকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় অস্ট্রেলিয়া। এই সিরিজে নেই তাদের অভিজ্ঞ পেসত্রয়ী জশ হেইজেলউড, মিচেল স্টার্ক ও প্যাট কামিন্স। তাদের অনুপস্থিতিতে সুযোগ কাজে লাগিয়ে দারুণ বোলিং করেন জাভিয়ার বার্টলেট, শন অ্যাবটরা। স্কটল্যান্ডের ইনিংসে প্রথম পাঁচ ব্যাটসম্যানের চারজনই পান ভালো শুরু। কিন্তু কেউ বড় ইনিংস খেলতে পারেননি। স্কটল্যান্ডের ইনিংসে কেউ ছুঁতে পারেননি ৩০ রানও। সর্বোচ্চ ২৮ রান আসে ওপেনার জর্জ মানজির ব্যাট থেকে। তাতে কোনোমতে দেড়শ পার করে দলটি।
চলতি বছরে দেশের ফুটবলে অর্জনের খাতাটা শুণ্যই রয়ে গেছে। চারটি ম্যাচ খেলে সব ম্যাচেই হেরেছে লাল-সবুজের জার্সিধারীরা। সেই তিক্ত গল্প থেকে বের হয়ে আসার সুযোগ জামাল-তপুদের সামনে। আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে আজ স্বাগতিক ভুটানের বিপক্ষে মাঠে নামবে বাংলাদেশ। ভুটানের চ্যাংলিমিথাং স্টেডিয়ামে সন্ধ্যা ৬টায় শুরু হবে ম্যাচটি।
ভুটানের বিপক্ষে এ ম্যাচে প্রতিপক্ষের চেয়েও বাংলাদেশের জন্য বড় সমস্যা কন্ডিশন। সমুদ্রপৃষ্ট থেকে ভুটানের অনেক উচ্চতার কারণে কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে বেশ ভুগছেন ফুটবলাররা। উচ্চতা বেশি হওয়ার কারণে শুরু থেকে শ্বাস নিতে সমস্যা হচ্ছিল জামালদের। তবে কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে চেষ্টা করছেন ফুটবলাররা।
বাংলাদেশ ফুটবলের বড় দুর্বলতা ফিনিশিং নিয়ে। ৯০ মিনিট প্রতিপক্ষকে আটকে রাখার মহা চেষ্টার মাঝে ফিকে থাকে গোল করার চেষ্টা। যার একটি উদাহরণ দেখা যায় এবছরের ম্যাচগুলোতে। এ বছর খেলা চার ম্যাচে প্রতিপক্ষের জালের নাগালই পায়নি বাংলাদেশ। সবশেষ গোলের দেখা মিলেছিল গত বছর, বিশ্বকাপ বাছাইয়ে লেবাননের বিপক্ষে।
ভুটানে ম্যাচেও সেই গোল দুর্ভাবনার কথাই শোনালেন ফরোয়ার্ড মোরসালিন। বললেন, ডিফেন্ডার, মিডফিল্ডার কিংবা ফরোয়ার্ড- কে গোলদাতা, সেটা তার কাছে মুখ্য নয়, গুরুত্বপূর্ণ শুধু গোল পাওয়া।
বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব থেকে বাদ পড়ার পর প্রায় দীর্ঘ তিন মাস পরে মাঠে নামবে বাংলাদেশ। দীর্ঘ সময় বন্ধ ছিল দেশের ঘরোয়া ফুটবলও। সুতরাং এক রকম খেলার বাইরেই ছিল ফুটবলাররা। তার ওপর ভুটানে খেলা হবে টার্ফে। যেখানে মানিয়ে নেওয়ায় বড় একটা চ্যালেঞ্জ ফুটবলারদের জন্য। তবে নানা প্রতিকুলতার মাঝেও জয়ের আশা করছেন মোরসালিন।
তিনি বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন খেলার বাইরে ছিলাম, ছুটিতে ছিলাম। তবে কিছুদিন আগে আমাদের জুনিয়র টিম (অনূর্ধ্ব-২০ দল) চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। তো আমাদের কাছেও দেশের মানুষের একটা প্রত্যাশা আছে। আমরা চেষ্টা করব তাদের আশাহত না করতে।’
টার্ফে খেলা নিয়ে মোরসালিন বলেন, ‘শুরুর দিকে টার্ফে খেলতে একটু সমস্যা হচ্ছিল। তবে আস্তে আস্তে অনেকটা মানিয়ে নিয়েছি। খুব একটা সমস্যা… আসলে এখানে কোনো অজুহাত দেওয়া যাবে না। ওরাও খেলবে, আমরাও খেলব। আমাদের ৯০ মিনিট খেলতে হবে।’ নিজেদের লক্ষ্য নিয়ে তিনি বলেছেন, যেকোনোভাবে আমাদের ম্যাচ দুটো জেতাটাই গুরুত্বপূর্ণ।
একই সুরে কথা বলেছেন অধিনায়ক জামাল ভুঁইয়াও। তিনি বলেন, ‘আমার ধারণা, দুটি ম্যাচই ভীষণ কঠিন হবে। কেননা, আমরা তিন মাস কোনো ম্যাচ খেলি না। আমরা ক্যাম্প করেছি, কিন্তু ভুটানের খেলোয়াড়দের মতো একই পর্যায়ে নেই। আমার ধারণা দুটি কঠিন এবং দারুণ ম্যাচ হবে।’
প্রতিবন্ধকতা থাকলেও ভুটানের মুখোমুখি হতে যে প্রস্তুত বাংলাদেশ সেটাও জানিয়েছেন জামাল।
পাকিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টে ২৬ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে যখন লজ্জার অপেক্ষায় বাংলাদেশ। তখনই দলের হাল ধরেন লিটন কুমার দাস। প্রতিরোধ গড়ে তুলে নেন চোখধাঁধানো এক সেঞ্চুরি। সেটার পুরস্কার পেলেন এবার ডানহাতি এ ব্যাটার। টেস্ট ব্যাটসম্যানদের র্যাঙ্কিংয়ে বড় লাফ দিয়েছেন উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান। দুর্দান্ত বোলিংয়ের পুরস্কারও পেয়েছেন দুই পেসার হাসান মাহমুদ আর নাহিদ রানা। বোলারদের র্যাঙ্কিংয়ে এগিয়েছেন তারা।
পুরুষ ক্রিকেটারদের র্যাঙ্কিংয়ের সাপ্তাহিক হালনাগাদে টেস্ট ব্যাটসম্যানদের মধ্যে লিটনের অবস্থান এখন ১৫তম। ক্যারিয়ার সেরা ১২ নম্বরের আরও কাছে পৌঁছে গেলেন তিনি। ২০২২ মে ও ডিসেম্বরে দুবার ১২তে ওঠেন তিনি। অন্যদিকে দুই টেস্ট মিলিয়ে ১৩৭ রান করা মেহেদী হাসান মিরাজ ১০ ধাপ এগিয়ে তার অবস্থান এখন ৭৫তম।
বোলারদের মধ্যে ১৬ ধাপ এগিয়ে ৫৭তম স্থানে উঠে এসেছেন হাসান মাহমুদ। অন্যদিকে গতির ঝড় তোলা নাহিদ রানা এগিয়েছেন ২৩ ধাপ। ঢুকে পড়েছেন শতকের ঘরে; ৯৭তম অবস্থানে।
বাংলাদেশের আর কারও উন্নতি হয়নি ব্যাটসম্যানদের র্যাঙ্কিংয়ে। মুশফিকুর রহিম আগের মতো ১৭তম স্থানে। মুমিনুল হক (৪৯) ও নাজমুল হোসেন শান্তর (৬৬) অবনতি ৩ ধাপ করে।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে লর্ডসে জোড়া সেঞ্চুরি করা জো রুট শীর্ষস্থান আরও মজবুত করেছেন। তার রেটিং পয়েন্ট এখন ৯২২। পরের দুই স্থানে আগের মতোই আছেন নিউজিল্যান্ডের কেন উইলিয়ামসন ও ড্যারেল মিচেল।
ইতিহাসের কঠিনতম সময় পার করছে পাকিস্তানের ক্রিকেট। একের পর একের হতাশাজনক পারফরম্যান্সে লজ্জার সব রেকর্ডে নাম লেখাচ্ছে বাবর-রিজওয়ানরা। টি-টোয়েন্টি, ওয়ানেড, টেস্ট; কোনো সংস্করণেই ছন্দ খুঁজে পাচ্ছে না ম্যান ইন গ্রিনরা। ৩ বছরের মধ্যে ঘরের মাটিতে দুইবার টেস্টে হোয়াইটওয়াশের লজ্জা পেল পাকিস্তান। ২০২২ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৩-০ তে সিরিজ হারের পর এবার বাংলাদেশের কাছে ২-০ ব্যবধানে হারল বাবর আজমরা। ৬৮ বছরের ইতিহাসে যা ছিল না। এ ছাড়াও গত বছর ভারতে ওয়ানডে বিশ্বকাপে ভরাডুবির পর হতাশাজনক পারফরম্যান্স ছিল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও।
এমন হতাশার পারফরম্যান্স নিয়ে এবার সরব হয়েছেন দেশটির সাবেক তারকারা। জাভেদ মিয়াঁদাদ, ইনজামাম উল হক, ইউনিস খানের মতো তারকারা শঙ্কা প্রকাশ করেছেন পাকিস্তানের ক্রিকেট নিয়ে। এমন হারকে বাজে লক্ষণ হিসেবে দেখছেন মিয়াঁদাদ।
সাবেক অধিনায়ক মিয়াঁদাদ পিটিআইকে বলেছেন, ‘এটা কষ্টের যে, আমাদের ক্রিকেট এই পর্যায়ে এসেছে। বাংলাদেশকে কৃতিত্ব দিতেই হবে তাদের গোছানো পারফরম্যান্সের জন্য। কিন্তু এই সিরিজে যেভাবে আমাদের ব্যাটিং ভেঙে পড়েছে, তা খুব বাজে লক্ষণ।’
পিসিবির প্রধান হয়ে আসার পরেই একের পর এক রদবদল এনেছেন মহসিন নাকভি। পাক ক্রিকেটের বড় মিয়া খ্যাত মিয়াঁদাদ বিশ্বাস করেন এর প্রভাবও পড়ছে দলের খেলায়, ‘আমি শুধু খেলোয়াড়দের দোষ দেব না, কারণ গত দেড় বছরে বোর্ডে (পিসিবি) যা কিছু হয়েছে এবং অধিনায়কত্ব ও ম্যানেজমেন্টের পরিবর্তন দলকে প্রভাবিত করেছে।’
পাকিস্তানের এমন হারকে মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে দেশটির সাবেক অধিনায়ক ইনজামাম উল হকের। হারের কারণ হিসেবে তিনি ব্যাটারদের ব্যর্থতাকেই দায়ী করছেন। তার ভাষ্যমতে, ‘অতীতে সেরা দলগুলোকে হারানোর জন্য হোম সিরিজকে সবসময় আমাদের সেরা সুযোগ হিসেবে বিবেচনা করা হতো। কিন্তু এর জন্য তো ব্যাটসম্যানদের রান পেতে হবে। আমাদের ব্যাটাররা অতীতে রান পেয়েছে, কিন্তু এ মুহূর্তে আমি মনে করি, এই সংকট কাটিয়ে উঠতে তাদের মানসিক দৃঢ়তা দরকার।’
তার সঙ্গে সুর মিলিয়েছেন ইউনিস খান। তিনি বলেন, ‘আমাদের ব্যাটসম্যানরা অতীতে রান পেয়েছে। কিন্তু এ মুহূর্তে আমার মনে হয় এই বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে তাদের মানসিকভাবে শক্ত হতে হবে এবং পরিষ্কার চিন্তা-ভাবনা করতে হবে।’
তবে বোলিং নিয়েও কথা বলেছেন আরেক সাবেক টেস্ট অধিনায়ক ইকবাল কাসিম। নতুন প্রজন্মের বোলারদের গড়ে তোলার দিকেই মনোযোগ দেওয়ার আহ্বান তার। তিনি বলেন, ‘আমাদের এখন সরফরাজ নেওয়াজ, ইমরান খান, ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার বা শোয়েবের সক্ষমতার বোলার নেই। তাই আমাদের এখন ঘরের মাঠে টেস্ট জেতার জন্য স্পিনারদের ওপর ভরসা করা উচিত।’
পাকিস্তানের বিপক্ষে ঐতিহাসিক সিরিজ জয়ের পর আজ বুধবার রাতে দেশে ফিরবে বাংলাদেশ দল। তবে দলের সঙ্গে দেশে না ফিরে যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান।
ক্রিকেটারদের দেশে ফেরার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ক্রিকেটারদের একাংশ রাত ১১টায় দেশে পৌঁছাবে, অন্য অংশ আসবে রাত ২টার দিকে।
সাকিবের ঘনিষ্ঠ সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, পরিবারের কাছে ফিরতে যুক্তরাষ্ট্রে যাবেন তিনি। তবে আসন্ন ভারত সিরিজে তাকে দলে রাখা হলে সেখান থেকেই ভারত সফরে যাবেন তিনি।
দুটি টেস্ট ও তিনটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলতে চলতি মাসেই ভারত সফর করবে বাংলাদেশ। তাই দেশে ফিরলেও বেশি দিন বিশ্রাম পাচ্ছেন না ক্রিকেটাররা। আগামী সপ্তাহের মাঝামাঝি অনুশীলন শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। টেস্ট দলের ক্রিকেটারদের নিয়ে ৮ সেপ্টেম্বর থেকে অনুশীলন শুরু হতে পারে।
প্রসঙ্গত, আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর চেন্নাই টেস্ট দিয়ে ভারত সিরিজ শুরু করবে বাংলাদেশ। ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে কানপুরে হবে দ্বিতীয় টেস্ট ম্যাচটিটি। এরপর ৬, ৯ ও ১২ অক্টোবর যথাক্রমে গোয়ালিওর, দিল্লি ও হায়দ্রাবাদে অনুষ্ঠিত হবে তিনটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ।
স্বপ্নটা বোনা হয়েছিল টেস্টের চতুর্থ দিনেই। শেষ দিনের সকালে সেটা অঙ্কুরিত হলো আর সুবাস ছড়াল লাঞ্চের পরে। রাওয়ালপিন্ডিতে বোলারদের উইকেট-ক্ষুধা আর লিটন-মিরাজের হারার আগেই না হারার মানসিকতায় পর্যদুস্ত হয়েছে পাকিস্তান। ২৪ বছরের ইতিহাসে পাকিস্তানের সঙ্গে কোনো ম্যাচ জিততে না পারা বাংলাদেশ এবার নতুন এক ইতিহাস রচনা করেছে। পাকিস্তানের মাটিতেই তাদের ‘বাংলাওয়াশ’ করেছে নাজমুল শান্তর দল। এর আগে ঘরের মাঠে এমন লজ্জায় পড়েছিল পাকিস্তান একবারই; ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। প্রথম টেস্টে ১০ উইকেটের বড় ব্যবধানে জয়ের পর দ্বিতীয় টেস্টেও ৬ উইকেটের জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। এতে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে ২-০ ব্যবধানে জিতেছে টাইগাররা।
এ নিয়ে বিদেশের মাটিতে দ্বিতীয়বার টেস্ট সিরিজ জিতল বাংলাদেশ। এর আগে ২০০৯ সালে খর্বশক্তির ওয়েস্ট ইন্ডিজকে তাদের দেশেই সিরিজ হারিয়েছিল বাংলাদেশ। সেটাই ছিল বাংলাদেশের বিদেশের মাটি তো বটেই প্রথম কোনো সিরিজ জয়। তবে টাইগারদের এবারের সিরিজ জয়টা বিশেষ কিছু। কারণ এবার কোনো খর্বশক্তি নয়, পূর্ণশক্তির পাকিস্তানকে হারিয়েছে টাইগাররা। এর আগে জিম্বাবুয়েকেও সিরিজ হারানোর অভিজ্ঞতা আছে বাংলাদেশের।
রাওয়ালপিন্ডিতে টাইগারদের আগ্রাসন কিংবা জয়ের ক্ষুধা দেখে বলার অপেক্ষা রাখে না- নতুন বাংলাদেশে নতুনত্ব এসেছে দেশের জনপ্রিয় খেলা ক্রিকেটেও। কিছুদিন আগেও ধুঁকতে থাকা ক্রিকেট জাদুর কাঠির ছোঁয়ার মতোই বদলে গেছে। নিকট অতীতে এমন ক্রিকেটের দেখা মেলেনি টাইগারদের কাছ থেকে। পাকিস্তানে যেন জয়ের ক্ষুধা পেয়ে বসেছিল বাংলাদেশকে। ইতিহাসের পর ইতিহাস রচনা করেছে টাইগাররা। দলের বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়েছে অগ্রসেনানীর মতো।
রাওয়ালপিন্ডিতে বাংলাদেশ পাকিস্তানের ওপর কতটা ছড়ি ঘুরিয়েছে সেটার প্রমাণ পাওয়া যায় একটি পরিসংখ্যান থেকেই। ৫ উইকেট নিয়ে টেস্টের দ্বিতীয় দিন রাওয়ালপিন্ডির অনার্স বোর্ডে নাম লিখিয়েছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। সেঞ্চুরি করে তৃতীয় দিনে একই বোর্ডে নাম তোলেন লিটন দাস। এরপর চতুর্থ দিনে ক্যারিয়ারের প্রথম ৫ উইকেট নিয়ে একইভাবে অনার্স বোর্ডে নাম তুলেছেন পেসার হাসান মাহমুদ।
পাকিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টে দীর্ঘদিনের ইতিহাসের ছোঁয়াও আছে। রাওয়ালপিন্ডিতে প্রথম ইনিংসে মাত্র ২৬ রানেই ৬ উইকেট হারিয়ে বসে বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে এত কম রানে ৬ উইকেট হারিয়েও টেস্ট ক্রিকেটে জয় দেখা গেল ১৩৭ বছর পর! সেই ১৮৮৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ১৭ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ও পরে ৪৫ রানে অলআউট হয়েও শেষ পর্যন্ত ১৩ রানে ম্যাচ জিতেছিল ইংল্যান্ড। এবার বাংলাদেশও এই রেকর্ডে তাদের সঙ্গী।
শেষ দিনে জয়ের জন্য বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ১৪৩ রান। হাতে উইকেট ছিল দশটি। কিন্তু শেষ দিনে বাংলাদেশের সামনে বাধা হওয়ার অপেক্ষায় ছিল বৃষ্টি। তবে রাওয়ালপিন্ডির আকাশ এ দিন বাংলাদেশের পক্ষেই ছিল। শঙ্কা কাটিয়ে নির্দিষ্ট সময়েই জাকির-সাদমান শুরু করে নতুন উপাখ্যান লেখার কাজ। সেটা শেষ করেন মুশফিক আর সাকিব। মাঝে এসে সেখানে ছাপ রেখে যান নাজমুল হোসেন শান্ত আর মুমিনুল হক।
রাওয়ালপিন্ডিতে দ্বিতীয় টেস্টের শুরু থেকেই চোখ রাঙানি দিচ্ছিল বৃষ্টি। প্রথম দিন তো ভেস্তে যায় বৃষ্টিতেই। এরপর প্রথম ইনিংসে ২৭৪ রান সংগ্রহ করে পাকিস্তান। সেই লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ধ্বংস্তূপের মধ্যে পড়ে যায় বাংলাদেশ। ২৬ রান তুলতেই হারিয়ে বসে ৬ উইকেট। সেখান থেকে দলকে টেনে তুলেন লিটন দাস আর মেহেদী হাসান মিরাজ। ১৬৫ রানের জুটিতে পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তুলেন তারা। মিরাজ ৭৮ রানে ফিরলেও সেঞ্চুরি তুলে নেন লিটন দাস। বাংলাদেশ দল ২৬২ রানের সংগ্রহ দাঁড় করায়।
১২ রানে এগিয়ে থেকে পাকিস্তান তাদের দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করলেও বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি স্বাগতিকদের ইনিংস। বাংলাদেশের তিন পেসারের বোলিং তোপে অলআউট হয় ১৭২ রানে। সফরকারীরা পায় ১৮৫ রানের লক্ষ্য।
দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে জাকির হাসানের টি-টোয়েন্টি সুলভ ব্যাটিংয়ে চতুর্থ দিনেই জয়ের সুবাস পাচ্ছিল বাংলাদেশ। শেষ দিনে বেশি দূর এগোতে পারেনি জাকির হাসান (৪০) আর সাদমান ইসলাম (২৪)। জোড়া উইকেট পতনের পর নাজমুল ও মুমিনুলের জুটি গড়েন। কিন্তু মধ্যাহ্নবিরতির পর ভুল শট খেলতে গিয়ে আউট হয়েছেন দুজনই। এরপর উইকেটে নেমে আর কোনো ভুল করেননি দুই অভিজ্ঞ ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম আর সাকিব আল হাসান।
এর আগে বোলারদের দুর্দান্ত বোলিং আর মুশফিকুর রহিমের বীরোচিত ব্যাটিংয়ে প্রথম টেস্টে ১০ উইকেটের বড় জয় পায় বাংলাদেশ। যেটা ছিল পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট জয়।
আগে কখনো পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ না জেতা বাংলাদেশ এবার হোয়াইটওয়াশ করেছে পাকিস্তানকে। নাম লিখিয়েছে ইতিহাসের পাতায়। ঘরের মাঠে দুই ম্যাচের সিরিজে টাইগারদের কাছে পাত্তা পায়নি পাকিস্তান। বাংলাদেশের এমন জয়ের পেছনে ব্যাট-বল হাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজ। দুই টেস্টেই বলের পাশাপাশি দলের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ব্যাট হাতেও দায়িত্ব নিয়েছেন তিনি। ফলাফল হিসেবে তার হাতেই উঠেছে সিরিজ সেরার পুরষ্কার।
বাংলাদেশের জয়ের পেছনের নায়ক সেই পুরস্কারটা উৎসর্গ করেছেন আরেক নায়ককে। যিনি নিজের জীবন দিয়ে লিখেছেন বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্বাধীনতা। সিরিজ সেরার পুরস্কার নিতে এসে মিরাজ স্মরণ করেছেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় নিহত হন এক রিকশাচালক। পুরস্কারের অর্থও তার পরিবারকে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন জাতীয় দলের এ অলরাউন্ডার।
পাকিস্তানের বিপক্ষে দুই টেস্টে সব মিলিয়ে ১৫৫ রান করেছেন মিরাজ। পাশাপাশি বল হাতেও শিকার করেছেন ১০ উইকেট। প্রথম টেস্টে বাংলাদেশ জয় পায় ১০ উইকেটের বড় ব্যবধানে। সেই ম্যাচে শেষদিনে বল হাতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখেন মিরাজ। তুলে নেন গুরুত্বপূর্ণ চারটি উইকেট। ব্যাট হাতেও খেলেছিলেন ৭৭ রানের ইনিংস।
দ্বিতীয় টেস্টে বল-ব্যাট উভয় হাতেই ত্রাতার ভূমিকা নেন তিনি। প্রথম ইনিংসে ডানহাতি এই অফস্পিনার শিকার করেন ৫ উইকেট, এরপর ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ যখন মাত্র ২৬ রানেই ৬ উইকেট হারিয়ে বসে, তখন লিটন দাসের সঙ্গে ১৬৫ রানের রেকর্ডগড়া জুটি গড়েন।
সেই জুটিই বাংলাদেশকে বিপর্যয় থেকে টেনে তোলে। দ্বিতীয় টেস্টে বাংলাদেশের ৬ উইকেটে জয়েও তার ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। লিটন ১৩৪ রানের অনবদ্য ইনিংস তো খেলেছেনই, তাকে সঙ্গ দেওয়া মিরাজও করেন ৭৮ রান।
পরে সিরিজ সেরার পুরস্কার জিতে মিরাজ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, ‘আমি সত্যিই খুব খুশি, প্রথমবার দেশের বাইরের সিরিজে এই পুরস্কার পেলাম। অলরাউন্ডার হিসেবে খেলা অনেক কঠিন কাজ, আমি শুধুমাত্র স্ট্রাইক বাড়াতে চেয়েছি এবং মুশি (মুশফিকুর রহিম) ও লিটন দাসের সঙ্গে ব্যাটিংটা উপভোগ করেছি। পাঁচ উইকেট পেয়ে অবশ্যই আনন্দিত, তবে এরচেয়েও ভালো করার চেষ্টা ছিল। আমি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলিনি, ফলে ঘরে কাটানোর মতো কিছু সময় পেয়েছি এবং ওই সময়েও আমার প্রতি ম্যানেজমেন্টের প্রচেষ্টার জন্য অনেক কৃতজ্ঞতা।’
সিরিজসেরা হয়ে টাইগার এই অলরাউন্ডার ৫ লাখ পাকিস্তানি রুপি অর্থ পুরস্কার পেয়েছেন। সেই অর্থ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত রিকশাচালকের পরিবারকে দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে মিরাজ বলেন, ‘ছাত্রদের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে এক রিকশাচালক আহত হয়েছিলেন, পরে তিনি মারা যান। পুরস্কার হিসেবে পাওয়া অর্থ তার পরিবারকে দেব।’
ধারণা করা হচ্ছিল কখন যেন বিদায়ের করুণ সূর বাজান লুইজ সুয়ারেজ। সেই অপেক্ষার প্রহর বেশি দীর্ঘ হলো না, অবশেষে জাতীয় দলকে বিদায় জানিয়ে দিলেন উরুগুয়ের স্ট্রাইকার লুইস সুয়ারেজ। বিদায়ী অনুষ্ঠানে ছলছল করা চোখ আর কান্নাভেজা কণ্ঠে জানালেন, কোপা আমেরিকার বাছাইয়ে শুক্রবার প্যারাগুয়ের বিপক্ষে ম্যাচেই দেশের জার্সিতে শেষবার মাঠে নামবেন তিনি।
সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে অবসরের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে সুয়ারেজ বলেন, ‘হৃদয় ভেঙে যাচ্ছে। তবু জানাচ্ছি, আগামী শুক্রবারই জাতীয় দলের হয়ে শেষ ম্যাচটি খেলব আমি।’
নিজের অবসরকে সৌভাগ্য মনে করে সুয়ারেজ বলেন, ‘সৌভাগ্যবশত, আমি আত্মবিশ্বাসী যে, জাতীয় দল থেকে অবসর নিচ্ছি। কারণ, আমি একটি নতুন কোনো জায়গায় যেতে চাই। আমার বয়স ৩৭ বছর। আমি জানি যে পরের বিশ্বকাপে যাওয়া খুব কঠিন। এটা আমাকে অনেক সান্ত্বনা দেয় যে, আমি নিজের ইচ্ছায় অবসর নিতে পারছি। ইনজুরির কারণে আমাকে অবসর নিতে হচ্ছে না। অথবা দল থেকে বাদ পড়ার কারণে অবসর নিতে হচ্ছে না। শেষ ম্যাচ পর্যন্ত আমি নিজের ১০০ শতাংশ দেব।’
গত জুলাইয়ে কোপা আমেরিকায় কানাডার বিপক্ষে গোল করেছিলেন সুয়ারেজ। তিনি বলেন, ‘চেয়েছিলাম আমার সন্তানরা দেখুক আমি দেশের জার্সিতে বড় কিছু করেছি। শেষ গোলটা ওদের কাছে খুব আনন্দের ছিল। আমরা ট্রফি জিততে পারিনি। কিন্তু আমার সন্তানেরা খুশি হয়েছিল আমার গোলে।’
ঘরের মাঠে খেলে অবসর নিতে চেয়েছিলেন সুয়ারেজ। সে কারণেই প্যারাগুয়ের বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচটি বেছে নিয়েছেন।
২০০৭ সালে জাতীয় দলে তার অভিষেক হয়েছিল। ২০১৪ বিশ্বকাপে ইতালির গিওর্গিও চিয়েলিনিকে কামড় দিয়ে চার ম্যাচ নিষিদ্ধ হয়েছিলেন সুয়ারেজ যা তার ক্যারিয়ারের একটি কালো অধ্যায়। ২০১১ কোপা আমেরিকা জয়ী উরুগুয়ে দলের সদস্য ছিলেন ইন্টার মিয়ামির এই ফরোয়ার্ড। এই টুর্নামেন্টে সেরা খেলোয়াড়ও নির্বাচিত হয়েছিলেন। নয়টি বড় টুর্নামেন্টে তিনি দক্ষিণ আমেরিকার প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
নিজের ক্যারিয়ারের সেরা সাফল্য নিয়ে সুয়ারেজ বলেন, ‘ক্যারিয়ারে অনেক শিরোপা জিততে পেরে আমি সৌভাগ্যবান। তবে কোপা আমেরিকার শিরোপার সঙ্গে দুনিয়ার কিছু্ বদল করতে রাজি নই। পেশাদার ফুটবলার হিসেবে আমার ক্যারিয়ারের সুন্দরতম মুহূর্ত ছিল ২০১১ কোপা আমেরিকার ট্রফি জয় করা। অনেক কিছুই জিতেছি, কিন্তু এটা কোনো কিছুর বিনিময়েই বদল করব না।’
অভিষেকের পর থেকে উরুগুয়ের জার্সিতে এখন পর্যন্ত তিনি খেলেছেন ১৪২টি ম্যাচ। জাতীয় দলের জার্সিতে সর্বাধিক ৬৯টি গোলের রেকর্ডও তার নামের পাশে। ক্লাব ফুটবলে বর্তমানে বন্ধু লিওনেল মেসির সঙ্গে খেলছেন আমেরিকার ক্লাব ইন্টার মায়ামিতে। এর আগে বার্সেলোনাতেও একসঙ্গে খেলেছেন তারা।
ইংলিশ ক্লাব লিভারপুলের অগ্রনায়ক মিসরীয় তারকা মোহামেদ সালাহ। ক্লাবটির ইতিহাসের অনবদ্য এক চরিত্র তিনি। ‘অল রেড’ শিবিরে যোগ দেওয়ার পর থেকেই দক্ষ নাবিকের মতো টেনে নিয়ে যাচ্ছে লিভারপুলকে। নানা শিরোপা জয়ের উচ্ছ্বাসে ভাসিয়েছে দলকে। তবে এবার বোধহয় প্রকৃতির নিয়মেই শেষের পথে সালাহর সেই যাত্রা। প্রিমিয়ার লিগের আগামী মৌসুমেই শেষ হতে পারে লিভারপুলে সালাহ অধ্যায়। নতুন ঠিকানায় পাড়ি জমাবেন মিসরীয় স্ট্রাইকার। অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে, সেই ঠিকানাটা হতে পারে সৌদি আরব।
নতুন মৌসুমে দারুণ শুরু করেছেন মোহামেদ সালাহ। ধারাবাহিক পারফরম্যান্স উপহার দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। সেই ধারা ধরে রাখলেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে হাইভোল্টেজ ম্যাচেও। দলের জয়ে সেনাপতির ভূমিকা পালন করলেন তিনি। নিজে গোল করলেন, সতীর্থদের দিয়ে করালেনও। সালাহর এমন জাদুকরি রাতে নিশ্চিতভাবেই খুশি লিভারপুল সমর্থকরা। কিন্তু তাদের হতাশ হতে হয়েছে ম্যাচ শেষে। সালাহ জানান দিয়েছেন, আগামী মৌসুমে এই ঠিকানায় তাকে নাও দেখা যেতে পারে।
প্রিমিয়ার লিগে গতকাল রাতে লিভারপুলের ৩-০ গোলে জয়ের ম্যাচে প্রথমার্ধে লুইস দিয়াসের দুটি গোলে অ্যাসিস্ট করেন সালাহ, পরে দ্বিতীয়ার্ধে নিজেই দলের শেষ গোলটি করেন তিনি।
ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে দাপুটে এই জয়ের পর স্কাই স্পোর্টসকে নিজের ভবিষ্যৎ ভাবনা জানান মিসরের স্ট্রাইকার। সেখানে তিনি বলেন, ‘খুব ভালো একটা গ্রীষ্ম কেটেছে আমার, লম্বা একটা সময় ধরে নিজেকে নিয়ে এবং ইতিবাচকভাবে ভাবতে পেরেছি। আপনারা জানেন, এই ক্লাবে এটাই আমার শেষ বছর। আমি শুধু সময়টা উপভোগ করতে চাই। এসব নিয়ে ভাবতে চাই না…মনে হচ্ছে, আমার ফুটবল খেলায় কোনো বাধা নেই এবং আগামী বছর কী হয়, দেখা যাবে।’
সেই সাক্ষাৎকারে অবশ্য সালাহর কণ্ঠে মিলল অভিমানের সুরও। তিনি বলেন, ‘ক্লাবের কেউ এখনো আমার সঙ্গে চুক্তি নিয়ে কথা বলেনি। তাহলে ঠিক আছে, আমি এখানে আমার শেষ মৌসুম খেলব এবং মৌসুম শেষে দেখা যাবে, কী হয়। বিষয়টি আমার ওপর নির্ভর করছে না।’
এবারের লিগে এখন পর্যন্ত তিন ম্যাচ খেলে প্রতিটিতেই জালের দেখা পেয়েছেন সালাহ। তার দলও জিতেছে সব ম্যাচ। ম্যানচেস্টার সিটির সমান ৯ পয়েন্ট নিয়ে আছে লিগ টেবিলের দুইয়ে।
২০১৭ সালে রোমা থেকে লিভারপুলে যোগ দেওয়ার পর, ‘অল রেড’ খ্যাত দলটির হয়ে ৩৫২টি ম্যাচ খেলে ২১৪টি গোল করেছেন সালাহ, সঙ্গে অ্যাসিস্ট করেছেন ৯২টি। একটি করে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, প্রিমিয়ার লিগসহ জিতেছেন আরও কয়েকটি শিরোপা।
সূত্রের বরাত দিয়ে ইএসপিএন তাদের প্রতিবেদনে লিখেছে, সৌদি প্রো লিগের কয়েকটি ক্লাব সালাহকে পেতে আগ্রহী। তবে এ নিয়ে বেশি কিছু জানায়নি সংবাদমাধ্যমটি।