দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের মঞ্চ কোপা আমেরিকা শেষ হয়েছে দুই সপ্তাহ হলো। এতদিন পরে এসে সেই টুর্নামেন্টের সেরা একাদশ ঘোষণা করল আয়োজকরা। সেখানে জয়জয়কার অবস্থা টানা দুইবারের চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনার। অবশ্য হওয়ার কথাও ছিল সেটিই। তবে এবার সুবিধা করতে পারেনি ব্রাজিলের ফুটবলাররা।
কোপার আয়োজকদের ঘোষিত স্কোয়াডে আর্জেন্টিনা থেকে জায়গা পেয়েছে সর্বোচ্চ পাঁচজন। রানার্সআপ কলম্বিয়া থেকে স্কোয়াডে আছেন দুইজন। এ ছাড়া ব্রাজিল, কানাডা, উরুগুয়ে ও ইকুয়েডর থেকে আছেন একজন করে।
গত ২০ জুন থেকে শুরু হয়ে ১৪ জুলাই পর্যন্ত চলে এবারের কোপা আমেরিকা। দক্ষিণ আমেরিকার আঞ্চলিক এ টুর্নামেন্টের ৪৮তম আসরে অংশ নেয় ১৬টি দল। ৩২ ম্যাচের টুর্নামেন্টে ফাইনালে কলম্বিয়াকে ১-০ গোলে হারিয়ে ১৬তম বারের মতো মহাদেশসেরার ট্রফি জেতে আর্জেন্টিনা।
স্বাভাবিকভাবেই ২০২৪ কোপা আমেরিকার সেরা একাদশের গোলকিপার হিসেবে জায়গা করে নিয়েছেন আর্জেন্টিনার গোলবারের অতন্দ্র প্রহরী এমিলিয়ানো মার্তিনেজ। আলবিসেলেস্তেদের আস্থার প্রতীক মার্টিনেজ পুরো টুর্নামেন্টে মাত্র একটি গোল হজম করেছেন। এ ছাড়া কোয়ার্টার ফাইনালে ইকুয়েডরের বিপক্ষে টাইব্রেকারে সেভ করেন দুটি শট। এমন পারফরম্যান্সের পর টুর্নামেন্টসেরা গোলকিপারের স্বীকৃতিও উঠেছিল তাঁর হাতে।
রক্ষণে জায়গা পেয়েছে চার দেশের চার সলিড ডিফেন্ডার। সেই তালিকায় জায়গা হয়েছে কলম্বিয়ার ডেভিনসন সানচেজ, ইকুয়েডরের পিয়েরো হিনকাপি, কানাডার অ্যালিস্টার জনস্টন ও আর্জেন্টিনার ক্রিস্টিয়ান রোমেরোর।
মাঝমাঠ দখল করেছেন চ্যাম্পিয়ন আর রানার্সআপ দলের একজন করে। তাদের সঙ্গে জায়গা পেয়েছেন উরুগুয়ের একজন। আর্জেন্টিনা থেকে আছেন রদ্রিগো দি পল, কলম্বিয়া থেকে হামেস রদ্রিগেজ আর উরুগুয়ে থেকে মানুয়েল উগার্তে। এদের মধ্যে রদ্রিগেজ পুরো টুর্নামেন্টেই ছিলেন দুর্দান্ত। ১টি গোলের সঙ্গে ৬টি অ্যাসিস্ট করে টুর্নামেন্টসেরা খেলোয়াড় হয়েছিলেন তিনি।
আক্রমণভাগের তিনজনের মধ্যে দুজনই চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনার। এখানে অবশ্য জায়গা হয়নি রানার্স দলের কোনো ফুটবলারের। এই একটি জায়গাতেই সুযোগ পেয়েছে কোনো ব্রাজিলিয়ান ফুটবলার। আর্জেন্টাইন দুই ফুটবলার হলেন- লিওনেল মেসি ও লাওতারো মার্তিনেজ। মেসি গোল করেছেন একটি, মার্তিনেজ ফাইনালের গোলসহ মোট ৫টি। আর একমাত্র ব্রাজিলিয়ান হিসেবে আছেন রাফিনিয়া, যিনি কলম্বিয়ার বিপক্ষে ফ্রি কিকে দুর্দান্ত গোল করেছিলেন।
কোপা আমেরিকার একাদশ: এমিলিয়ানো মার্তিনেজ (আর্জেন্টিনা), ক্রিস্টিয়ান রোমেরো (আর্জেন্টিনা), অ্যালিস্টার জনস্টন (কানাডা), ডেভিনসন সানচেজ (কলম্বিয়া), পিয়েরো হিনকাপি (ইকুয়েডর), হামেস রদ্রিগেজ (কলম্বিয়া), মানুয়েল উগার্তে (উরুগুয়ে), রদ্রিগো দি পল (আর্জেন্টিনা), রাফিনিয়া (ব্রাজিল), লিওনেল মেসি (আর্জেন্টিনা) ও লাওতারো মার্তিনেজ (আর্জেন্টিনা)।
উৎসবের আনন্দ যে মুহূর্তের মধ্যে বিষাদে রূপ নিতে পারে, তার এক করুণ দৃষ্টান্ত হয়ে রইল জার্মান ফুটবলার সেবাস্তিয়ান হার্টনারের আকস্মিক মৃত্যু। কোনো ম্যাচ না থাকায় বড়দিনের ছুটি কাটাতে গিয়ে মাত্র ৩৪ বছর বয়সেই না-ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন এই ডিফেন্ডার। মূলত নিজের প্রিয় শখ স্কি করতে গিয়েই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার শিকার হন তিনি। এই অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুতে জার্মানির ফুটবল অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে নর্দার্ন মন্তেনেগ্রোর সান কুক রিসোর্টে। ছুটির অবসরে সেখানে স্কিইং করতে গিয়েছিলেন হার্টনার। জার্মান সংবাদমাধ্যম ‘বিল্ড’-এর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, একটি চেয়ারলিফটে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে দুটি গন্ডোলার মধ্যে ধাক্কা লাগে এবং লিফটটি কেবল থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে হেলে পড়ে। এর ফলে লিফটে থাকা হার্টনার প্রায় ৭০ মিটার ওপর থেকে নিচে পড়ে গিয়ে প্রাণ হারান। একই দুর্ঘটনায় তার স্ত্রী গুরুতর আহত হয়েছেন; চেয়ারের সাথে কোনোমতে আটকে থাকলেও তার পা ভেঙে গেছে।
সেবাস্তিয়ান হার্টনার তার ক্যারিয়ারে জার্মানির অনূর্ধ্ব-১৯ জাতীয় দলের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করার গৌরব অর্জন করেছিলেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি জার্মান ক্লাব ইটিএসভি হামবুর্গের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করছিলেন। প্রিয় অধিনায়কের এমন অকাল প্রয়াণে ক্লাব কর্তৃপক্ষ গভীর শোক প্রকাশ করেছে। এক বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে, ছুটির অবসরে তাদের অধিনায়ক এমন ভয়াবহ দুর্ঘটনার শিকার হবেন, তা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। বড়দিনের খুশির মাঝেই হার্টনারের এই চলে যাওয়া তার পরিবার, সতীর্থ এবং ভক্তদের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে রইল।
আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে বিদায় নিলেও মাঠের নৈপুণ্যে এখনও উজ্জ্বল আনহেল ডি মারিয়া। ২০২৫ সালে আর্জেন্টিনার সেরা ফুটবলারের গৌরব অর্জন করেছেন এই অভিজ্ঞ উইঙ্গার। সোমবার (২২ ডিসেম্বর) রাতে আর্জেন্টিনার ক্রীড়া সাংবাদিকদের ভোটে বর্ষসেরা খেলোয়াড় হিসেবে তাকে নির্বাচিত করা হয়। মর্যাদাপূর্ণ এই লড়াইয়ে তিনি পেছনে ফেলেছেন জাতীয় দলের অন্যতম দুই তারকা সতীর্থ লাউতারো মার্টিনেজ ও লেয়ান্দ্রো পারদেসকে।
ডি মারিয়ার দীর্ঘ ও বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে এটি দ্বিতীয়বার বর্ষসেরা ফুটবলারের খেতাব জয়। এর আগে ২০১৪ সালে রিয়াল মাদ্রিদের জার্সিতে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের সুবাদে প্রথমবারের মতো এই সম্মাননা অর্জন করেছিলেন তিনি। দীর্ঘ ১১ বছরের ব্যবধানে পুনরায় এই স্বীকৃতি পাওয়া তার অদম্য মনোবল এবং মাঠের লড়াইয়ে অবিশ্বাস্য ধারাবাহিকতারই এক অনন্য প্রমাণ।
জাতীয় দল থেকে অবসর নিলেও ক্লাব ফুটবলে ডি মারিয়ার জন্য ২০২৫ সালটি ছিল অত্যন্ত স্মরণীয়। পর্তুগিজ ক্লাব বেনফিকা ছেড়ে চলতি বছরেই তিনি ফিরে এসেছেন তার শৈশবের প্রিয় ক্লাব রোজারিও সেন্ট্রালে। সেখানে যোগ দেওয়ার পর থেকেই নিজের চেনা ছন্দে রয়েছেন এই তারকা। লিগের মাত্র ১৬ ম্যাচে ৭টি গুরুত্বপূর্ণ গোল করার পাশাপাশি দলের শিরোপা জয়ের পথে তিনি অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করেছেন। মূলত তার এই অসাধারণ ফর্মই তাকে বছরের সেরা ফুটবলারের দৌড়ে এগিয়ে রেখেছে।
উল্লেখ্য, গত বছর আর্জেন্টিনার বর্ষসেরার এই পুরস্কারটি জিতেছিলেন গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। তবে এই ক্যাটাগরিতে সব মিলিয়ে সর্বোচ্চ ১৬ বার জয়ী হওয়ার অবিশ্বাস্য রেকর্ডটি এখনও রয়েছে ফুটবল জাদুকর লিওনেল মেসির দখলে। ১১ বছর পর ডি মারিয়ার এই প্রত্যাবর্তন আর্জেন্টিনার ফুটবলে নতুন এক গল্পের জন্ম দিল।
নানা জল্পনা-কল্পনা, বিতর্ক আর অব্যবস্থাপনার ছাপ নিয়েই সিলেটে পর্দা উঠল বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) ১২তম আসরের। শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে রাজশাহী ওয়ারিয়র্স ও সিলেট টাইটান্সের মধ্যকার ম্যাচ দিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু হলেও উদ্বোধনী দিনে দেখা মেলেনি কাঙ্ক্ষিত চ্যাম্পিয়ন ট্রফির। মূলত বিদেশ থেকে ট্রফি সময়মতো এসে না পৌঁছানোর ফলে ট্রফি ছাড়াই বিপিএলের উদ্বোধন করতে হয়েছে আয়োজকদের। এই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির কারণেই টুর্নামেন্টের আগের দিন ঐতিহ্যবাহী ‘ক্যাপ্টেন্স ডে’ আয়োজন করাও সম্ভব হয়নি।
বিপিএলের এই আসরটি শুরুর আগে থেকেই নানা নেতিবাচক খবরের শিরোনাম হয়েছে। টুর্নামেন্ট শুরুর মাত্র একদিন আগে চট্টগ্রাম রয়্যালসের মালিকানা নিয়ে জটিলতা তৈরি হওয়ায় শেষ মুহূর্তে বিসিবিকে দলটির দায়িত্ব নিতে হয়। এছাড়া নবাগত নোয়াখালী এক্সপ্রেস দলেও দেখা দেয় অস্থিরতা; অব্যবস্থাপনার অভিযোগে কোচ খালেদ মাহমুদ সুজন ও তালহা জুবায়ের দল ছেড়ে গেলেও পরে তারা পুনরায় দায়িত্ব ফিরে আসেন। নিরাপত্তার অজুহাতে ঢাকার বড় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বাতিল করা হলেও সিলেটের মাঠে সংক্ষিপ্ত পরিসরে আসরের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়। জাতীয় সংগীত পরিবেশন, পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত এবং শহীদ ওসমান হাদীর স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালনের পর বেলুন উড়িয়ে টুর্নামেন্টের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল।
মাঠের লড়াইয়ের পাশাপাশি দর্শকদের বিনোদনের জন্য থাকছে বিশেষ সাংস্কৃতিক আয়োজন। প্রথম ম্যাচ শেষে ফুয়াদ মুক্তাদিরের কোরিওগ্রাফিতে ছয় ফ্র্যাঞ্চাইজির জার্সি পরে নৃত্য ও গানের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় ভাগ সম্পন্ন করার কথা রয়েছে। এর পরপরই দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে মুখোমুখি হবে নোয়াখালী এক্সপ্রেস ও চট্টগ্রাম রয়্যালস। এবারের বিপিএলকে প্রাণবন্ত করতে কমেন্ট্রি বক্সে থাকছেন ক্রিকেট বিশ্বের একঝাঁক কিংবদন্তি ও জনপ্রিয় ধারাভাষ্যকার। ওয়াকার ইউনুস, ড্যানি মরিসন, ড্যারেন গফ, রমিজ রাজা ও ফারভেজ মাহরুফদের মতো তারকারা মাঠের লড়াইয়ের বিশ্লেষণ দেবেন। সব মিলিয়ে নানা সীমাবদ্ধতা আর বিতর্কের মধ্যেই শুরু হলো দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের সবচেয়ে জমকালো এই আসর।
মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে অ্যাশেজের বক্সিং ডে টেস্টের প্রথম দিনটি ব্যাটারদের জন্য এক দুঃস্বপ্নে পরিণত হলো। বোলারদের একাধিপত্যে মাত্র ৭৫.১ ওভারের লড়াইয়েই দুই দলের ২০টি উইকেটের পতন ঘটেছে, যা ক্রিকেট ইতিহাসের পাতায় এই দিনটিকে বিশেষভাবে স্মরণীয় করে রাখল। ১৯০৯ সালের পর অ্যাশেজ টেস্টের প্রথম দিনে এত বেশি উইকেট পড়ার ঘটনা আর ঘটেনি।
ম্যাচের শুরুতে টসে হেরে ব্যাটিং করতে নেমে জশ টাংয়ের বিধ্বংসী বোলিংয়ের মুখে পড়ে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া। টাংয়ের ৪৫ রানে ৫ উইকেটের তোপে অজিরা মাত্র ১৫২ রানেই তাদের প্রথম ইনিংস গুটিয়ে ফেলে। একবিংশ শতাব্দীতে প্রথম ইংলিশ বোলার হিসেবে মেলবোর্নে ৫ উইকেট নেওয়ার কৃতিত্ব দেখান জশ টাং। ঘরের মাঠে অ্যাশেজে ২০০০ সালের পর এটি অস্ট্রেলিয়ার চতুর্থ সর্বনিম্ন সংগ্রহের একটি। মাত্র ৫০ ওভারের মধ্যেই অজিরা প্যাভিলিয়নে ফিরে যায়।
তবে অস্ট্রেলিয়ার অল্প রানে অলআউট হওয়ার আনন্দ বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি ইংল্যান্ড শিবিরে। ক্যামেরন গ্রিনের দুর্দান্ত বোলিংয়ে ইংলিশরা মাত্র ১১০ রানেই অলআউট হয়ে যায়। ফলে প্রথম ইনিংসে ১৭৫ রানের কম সংগ্রহ করেও ৪২ রানের লিড পায় অস্ট্রেলিয়া, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে এক অনন্য নজির। ২০০০ সালের পর অ্যাওয়ে অ্যাশেজে এটি ইংল্যান্ডের তৃতীয় সর্বনিম্ন রানের রেকর্ড।
পরিসংখ্যান বলছে, দুই দল মিলিয়ে এই দিনে মাত্র ৪৫১ বল (৭৫.১ ওভার) খেলতে সক্ষম হয়েছে, যা অ্যাশেজ ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন স্থায়ী ইনিংসের রেকর্ড। এর আগে ১৯০১/০২ মৌসুমে মেলবোর্নেই সর্বনিম্ন ২৮৭ বল খেলার রেকর্ড হয়েছিল। মেলবোর্নের এই উইকেটে ব্যাটাররা কোনোভাবেই থিতু হতে পারেননি, যার ফলে ১৯৩১/৩২ মৌসুমের পর আবারও অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে প্রথম দিনে ২০ উইকেট পড়ার বিরল দৃশ্য দেখল ক্রিকেট বিশ্ব।
উত্তাল এই দিনে ব্যক্তিগত এক মাইলফলক স্পর্শ করেছেন স্টিভ স্মিথ। রাহুল দ্রাবিড়ের ২১০টি ক্যাচের রেকর্ড টপকে টেস্ট ক্রিকেটে ফিল্ডার হিসেবে ২১২টি ক্যাচ তালুবন্দি করার গৌরব অর্জন করেছেন তিনি। বর্তমানে তার ওপরে কেবল ২১৪টি ক্যাচ নিয়ে অবস্থান করছেন জো রুট। সব মিলিয়ে বক্সিং ডে টেস্টের প্রথম দিনটি বোলারদের উৎসব আর রেকর্ডের ভাঙা-গড়ার খেলায় ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নিল।
বিপিএলের ১২তম আসরের পর্দা উঠেছে আজ সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। তবে এবারের আয়োজনের শুরুটা ছিল কিছুটা আবেগঘন ও ভিন্নধর্মী। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সম্মুখসারির যোদ্ধা এবং ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শহীদ ওসমান হাদির স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ম্যাচের শুরুতে বিশেষ সম্মান প্রদর্শন করা হয়।
গত ১২ ডিসেম্বর সন্ত্রাসীদের গুলিতে গুরুতর আহত হওয়ার পর সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৮ ডিসেম্বর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ওসমান হাদি। তার এই আত্মত্যাগকে সম্মান জানাতে বিসিবি আগেই শোকবার্তা প্রকাশ করেছিল। আজ বিপিএলের উদ্বোধনী দিনে সিলেট টাইটান্স ও রাজশাহী ওয়ারিয়র্সের মধ্যকার ম্যাচ শুরুর আগে তার স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
মাঠে উপস্থিত বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুলসহ সকল দর্শক ও খেলোয়াড় যখন নীরবতা পালন করছিলেন, তখন এক অনন্য দৃশ্যের অবতারণা করেন রাজশাহী ওয়ারিয়র্সের তারকা ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম। নীরবতা পালনের সেই মুহূর্তে তাকে অত্যন্ত নিবিষ্ট চিত্তে হাত তুলে মোনাজাত করতে দেখা যায়। শহীদ হাদির বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনায় তার এই প্রার্থনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ প্রশংসিত হচ্ছে।
দিনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছিল পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত ও জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে। এরপর বেলুন উড়িয়ে টুর্নামেন্টের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন বিসিবি সভাপতি। উদ্বোধনী দিনে আজ দুটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে এবং প্রথম ম্যাচ শেষে দর্শকদের বিনোদনের জন্য একটি সংক্ষিপ্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন রাখা হয়েছে।
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) দ্বাদশ আসরের পর্দা ওঠার ঠিক এক দিন আগে বড় ধরনের সংকটে পড়েছে চট্টগ্রাম রয়্যালস ফ্র্যাঞ্চাইজি। আর্থিক ও ব্যবস্থাপনাগত জটিলতার কারণে অনেকটা আকস্মিকভাবেই আজ বৃহস্পতিবার সকালে দলটির মালিকানা ছেড়ে দিয়েছে বর্তমান কর্তৃপক্ষ। টুর্নামেন্টের ঠিক আগমুহূর্তে এমন উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দলটির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে এবং বিপিএলের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সরাসরি দলটির পরিচালনার দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছে। বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্যসচিব ইফতেখার রহমান মিঠু এবং বিসিবির মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বিসিবির অধীনে যাওয়ার পরপরই দ্রুততম সময়ের মধ্যে চট্টগ্রাম রয়্যালসের জন্য নতুন কোচিং ও ম্যানেজমেন্ট স্টাফ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। জাতীয় দলের সাবেক কিংবদন্তি অধিনায়ক হাবিবুল বাশার সুমনকে দলটির টিম ডিরেক্টর হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে এবং প্রধান কোচের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে অভিজ্ঞ কোচ মিজানুর রহমান বাবুলকে। কাল শুক্রবার থেকেই মাঠের লড়াই শুরু হতে যাওয়ায় বিসিবি এখন তড়িঘড়ি করে দলটির আনুষঙ্গিক সব প্রস্তুতি গুছিয়ে নিচ্ছে।
উল্লেখ্য, এবারের বিপিএল নিলামে চট্টগ্রাম রয়্যালস বেশ দাপটের সঙ্গেই দল গড়েছিল। বিশেষ করে ওপেনার নাঈম শেখকে ১ কোটি ১০ লাখ টাকার রেকর্ড দামে দলে ভিড়িয়ে তারা ক্রিকেট মহলে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছিল। নিলামে সবচেয়ে বেশি দামে ক্রিকেটার কেনার কৃতিত্ব দেখালেও শেষ পর্যন্ত আর্থিক ও প্রশাসনিক জটিলতা কাটিয়ে ফ্র্যাঞ্চাইজিটি তাদের কার্যক্রম সচল রাখতে ব্যর্থ হলো। মূলত বিসিবির এই দ্রুত হস্তক্ষেপের ফলে আসরে সাতটি দলের অংশগ্রহণ ও টুর্নামেন্টের সিডিউল নিশ্চিত থাকল। তবে মালিকানা পরিবর্তনের এই আকস্মিক ঘটনাটি বিপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজি ব্যবস্থাপনার সীমাবদ্ধতাকে আবারও সামনে নিয়ে এল।
সংযুক্ত আরব আমিরাতে চলমান ইন্টারন্যাশনাল লিগ টি-টোয়েন্টিতে (আইএল টি-টোয়েন্টি) দুর্দান্ত নৈপুণ্য প্রদর্শনের পর দেশের টানে এবং আসন্ন বিপিএলে অংশ নিতে আজ বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) দেশে ফিরছেন দুই তারকা পেসার তাসকিন আহমেদ ও মোস্তাফিজুর রহমান। বুধবার রাতে দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে লিগ পর্বের ম্যাচে মোস্তাফিজের দল দুবাই ক্যাপিটালস এবং তাসকিনের শারজা ওয়ারিয়র্স একে অপরের মুখোমুখি হয়েছিল। সেই ম্যাচটি শেষ করেই এই দুই কৃতি ক্রিকেটার বাংলাদেশের বিমানের পথ ধরেন। বিমানে ফেরার পথে মোস্তাফিজের সঙ্গে একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করে তাসকিন আহমেদ জানিয়েছেন যে, এখন তাঁদের লক্ষ্য শুধুই বিপিএল এবং সেখানে নিজেদের সেরাটা উজাড় করে দিতে তাঁরা উন্মুখ হয়ে আছেন।
এবারের আইএল টি-টোয়েন্টিতে মোস্তাফিজুর রহমান তাঁর চিরচেনা ‘ফিজ’ জাদুতে ক্রিকেট বিশ্বকে মুগ্ধ করেছেন। টুর্নামেন্টের ৮টি ম্যাচে অংশ নিয়ে তিনি শিকার করেছেন ১৫টি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট, যা তাঁকে আসরের দ্বিতীয় শীর্ষ উইকেট শিকারির তালিকায় তুলে এনেছে। বিশেষ করে গালফ জায়ান্টসের বিপক্ষে এক ওভারে ৩ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরার পুরস্কার জেতা ছিল এই আসরে তাঁর অন্যতম সেরা মুহূর্ত। তাঁর মাপা স্লোয়ার আর কাটার মোকাবিলা করতে বিশ্বের বড় বড় ব্যাটারদের বেশ বেগ পেতে হয়েছে। শুরুতে কিছুটা ছন্দহীন মনে হলেও মোস্তাফিজ দ্রুতই নিজেকে ফিরে পেয়ে দুবাই ক্যাপিটালসকে প্লে-অফে তুলতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন।
অন্যদিকে, তাসকিন আহমেদও শারজা ওয়ারিয়র্সের বোলিং আক্রমণে ছিলেন অন্যতম প্রধান সেনানী। যদিও পরিসংখ্যানের বিচারে তিনি মোস্তাফিজের চেয়ে কিছুটা পিছিয়ে আছেন, তবে ৬ ম্যাচে ৯ উইকেট নিয়ে তাঁর বোলিংয়ের ধার বজায় রেখেছেন। বিশেষ করে নিজের ক্যারিয়ারের ২০০তম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ডেজার্ট ভাইপার্সের বিপক্ষে মাত্র ২০ রান দিয়ে ২ উইকেট নেওয়া ছিল তাসকিনের জন্য এক বিশেষ মাইলফলক। পাওয়ার প্লেতে তাঁর বিধ্বংসী বোলিং প্রতিপক্ষকে শুরুতেই চাপে ফেলে দিচ্ছিল। যদিও ডেথ ওভারে কিছুটা রান খরচ করার কারণে তাঁর ইকোনমি রেট ৮.৭৬-এ দাঁড়িয়েছে, তবুও শারজার বোলিং শক্তির মূল ভিত্তি ছিলেন তিনিই।
টুর্নামেন্টের পয়েন্ট টেবিলের সমীকরণ অনুযায়ী, মোস্তাফিজের দুবাই ক্যাপিটালস প্লে-অফ নিশ্চিত করলেও তাসকিনের শারজা ওয়ারিয়র্সের ভাগ্য এখনো অনিশ্চিত। বর্তমানে ৯ ম্যাচে মাত্র ৬ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের তলানিতে থাকা শারজাকে শেষ চারে জায়গা করে নিতে হলে পরবর্তী ম্যাচে বড় ব্যবধানে জয়ের পাশাপাশি অন্য দলগুলোর ফলের দিকেও তাকিয়ে থাকতে হবে। তবে আপাতত আমিরাত পর্ব শেষ করে এই দুই পেসার এখন দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় আসর বিপিএল কাঁপাতে পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে ফিরছেন, যা দেশের ক্রিকেট ভক্তদের মাঝে নতুন উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে। তাসকিন ও মোস্তাফিজের এমন ছন্দময় প্রত্যাবর্তন আসন্ন বিপিএলের উত্তেজনাকে আরও বহুগুণ বাড়িয়ে দেবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
রিয়াল মাদ্রিদে অনিয়মিত হয়ে পড়া ব্রাজিলিয়ান তরুণ স্ট্রাইকার এনড্রিক অবশেষে তাঁর নতুন গন্তব্য খুঁজে পেয়েছেন। আগামী ছয় মাসের জন্য ধারে তিনি ফরাসি ক্লাব অলিম্পিক লিঁওতে যোগ দিয়েছেন। গত সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার পর আজ বৃহস্পতিবার তিনি ফ্রান্সে পৌঁছেছেন তাঁর মেডিকেল পরীক্ষা ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে। লিঁওতে এনড্রিক ঐতিহ্যবাহী ৯ নম্বর জার্সি পরে মাঠে নামবেন বলে জানা গেছে। মূলত নিয়মিত খেলার সুযোগ পেয়ে নিজেকে পুনরায় প্রমাণের লক্ষ্যেই তিনি স্পেনের পাঠ চুকিয়ে ফ্রান্সে পাড়ি জমিয়েছেন।
রিয়াল মাদ্রিদে পর্যাপ্ত খেলার সুযোগ না পাওয়ায় জাতীয় দলে এনড্রিকের অবস্থানও নড়বড়ে হয়ে পড়েছিল। ব্রাজিল কোচ কার্লো আনচেলত্তির বিশেষ নজরে থাকতে এবং ২০২৬ বিশ্বকাপের দলে নিজের জায়গা পাকাপোক্ত করতে হলে তাঁর জন্য নিয়মিত মাঠে নামা এখন বাধ্যতামূলক। রিয়ালে নতুন কোচ জাবি আলোনসোর পরিকল্পনায় জায়গা না পাওয়ায় এনড্রিকের জন্য এই শীতকালীন দলবদলটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ইউরোপের বেশ কয়েকটি বড় ক্লাব তাঁকে পেতে আগ্রহী হলেও তিনি শেষ পর্যন্ত লিঁওকেই বেছে নিয়েছেন, যেখানে তিনি লিগ ওয়ান ও ইউরোপা লিগের মঞ্চে নিজেকে মেলে ধরার সুযোগ পাবেন।
লিঁওতে যোগ দেওয়ার পেছনে ভাষাগত সুবিধা ও পরিচিত পরিবেশ এনড্রিকের জন্য বড় সহায়ক হবে। ক্লাবটির ম্যানেজার পাউলো ফনসেকার মাতৃভাষা পর্তুগিজ হওয়ায় যোগাযোগে কোনো সমস্যা হবে না। এছাড়া সেখানে আগে থেকেই ব্রাজিলের এমারসন ও আবনের থাকায় তিনি দ্রুত দলের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারবেন বলে আশা করা হচ্ছে। ঐতিহাসিকভাবেও লিঁও ব্রাজিলিয়ান ফুটবলারদের জন্য অত্যন্ত পয়া একটি ক্লাব হিসেবে পরিচিত। অতীতে লুকাস পাকেতা, ব্রুনো গুইমারেস, জুনিনহো এবং ফ্রেডের মতো তারকারা এই ক্লাবের হয়েই বিশ্ব ফুটবলে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করেছিলেন। এনড্রিক এখন তাঁদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে নিজের হারিয়ে যাওয়া জৌলুস ফিরে পেতে মরিয়া।
উল্লেখ্য যে, ২০২৪ সালে অনেক বড় আশা ও জাঁকজমকের মধ্য দিয়ে পালমেইরাস থেকে এনড্রিককে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে উড়িয়ে এনেছিল রিয়াল মাদ্রিদ। কিন্তু স্পেনের এই ক্লাবে তাঁর সময়টা একদমই ভালো কাটেনি। চলতি মৌসুমে লা লিগা ও চ্যাম্পিয়ন্স লিগ মিলিয়ে তিনি মাত্র ২০ মিনিটের মতো মাঠে থাকার সুযোগ পেয়েছেন। এমন করুণ পরিস্থিতির পর নিজের ক্যারিয়ার বাঁচাতে এনড্রিকের এই সাহসী সিদ্ধান্ত কতটুকু ফলপ্রসূ হয়, এখন সেটিই দেখার বিষয়। আপাতত ফুটবল বিশ্বের নজর থাকবে ফ্রান্সের দিকে, যেখানে রিয়ালের এই ব্রাত্য ফুটবলার লিঁওর জার্সিতে নতুন করে জ্বলে ওঠার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
বার্সেলোনার এক সময়ের অত্যন্ত সম্ভাবনাময় ফুটবলার রাফিনহা আলকান্তারা মাত্র ৩২ বছর বয়সেই পেশাদার ফুটবলকে বিদায় জানালেন। অসাধারণ কারিগরি দক্ষতা, নিখুঁত পাসিং এবং টেকনিক্যাল মুন্সিয়ানার জন্য ক্যারিয়ারের শুরুতেই বিশ্ব ফুটবলের নজর কেড়েছিলেন এই ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার। তবে বারংবার ইনজুরির কবলে পড়ে তাঁর ফুটবল ক্যারিয়ারে বড় ছন্দপতন ঘটে, যার ফলশ্রুতিতে অকালেই মাঠের লড়াই থেকে সরে দাঁড়ানোর কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হলেন তিনি। গত ২২ ডিসেম্বর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে অবসরের ঘোষণা দেন এই তারকা। এর আগে ২০২৪ সালের গ্রীষ্মে কাতারের ক্লাব আল-আরাবি ছাড়ার পর প্রায় এক বছরেরও বেশি সময় তিনি কোনো ক্লাবের সাথে যুক্ত ছিলেন না।
বার্সেলোনার বিখ্যাত ‘লা মাসিয়া’ একাডেমি থেকে উঠে আসা রাফিনহা এক সময় ক্লাবটির মধ্যমাঠের অন্যতম ভরসা হিসেবে বিবেচিত হতেন। তাঁর ক্যারিয়ারের সোনালী সময় ছিল ২০১৪-১৫ মৌসুম, যখন লুইস এনরিকের অধীনে বার্সেলোনা লা লিগা, কোপা দেল রে এবং চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতে ঐতিহাসিক ট্রেবল জয় করেছিল। সেই শক্তিশালী স্কোয়াডের একজন নির্ভরযোগ্য সদস্য হিসেবে তিনি সব কটি শিরোপা জয়ের গৌরব অর্জন করেন। তবে তাঁর ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায় ২০১৭ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যবর্তী সময়টি। অ্যান্টিরিয়র ক্রুসিয়েট লিগামেন্ট (ACL) এবং মেনিস্কাসের গুরুতর চোটের কারণে তাঁকে প্রায় ৫০০ দিন মাঠের বাইরে থাকতে হয়, যা মূলত তাঁর গতি ও ফিটনেসকে স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
ইনজুরি কাটিয়ে ফেরার পর রাফিনহা ইন্টার মিলান ও সেল্টা ভিগোর মতো ক্লাবে ধারে খেলে নিজেকে প্রমাণের চেষ্টা চালিয়েছিলেন। ২০২০ সালে তিনি স্থায়ীভাবে বার্সেলোনা ছেড়ে ফরাসি জায়ান্ট প্যারিস সেন্ট-জার্মেইনে (পিএসজি) যোগ দেন, কিন্তু সেখানেও থিতু হতে পারেননি। পরবর্তীতে রিয়াল সোসিয়াদাদ হয়ে ক্যারিয়ারের শেষ অধ্যায়ে তিনি পাড়ি জমান কাতারের ক্লাব আল-আরাবি দোহাতে। দীর্ঘ পেশাদার ক্যারিয়ারে রাফিনহা মোট ৩৮৬টি ম্যাচ খেলে ৫৫টি গোল এবং ৪৬টি অ্যাসিস্ট করেছেন। অর্জনের ঝুলিতে একটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, তিনটি লা লিগা, তিনটি কোপা দেল রে, লিগ ওয়ান এবং ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপের মতো মর্যাদাপূর্ণ শিরোপা থাকলেও, ইনজুরির কারণে তাঁর পূর্ণ প্রতিভার বিকাশ না ঘটা ফুটবল প্রেমীদের মনে এক বিশাল আক্ষেপ হয়ে থাকবে।
এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ-২ এর ম্যাচে ইরাকি ক্লাব আল জাওরাকে ৫-১ গোলের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে দাপুটে জয় পেয়েছে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর ক্লাব আল নাসর। নিজেদের ঘরের মাঠ কিং ফাহাদ ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এই ম্যাচে শুরু থেকেই সফরকারীদের ওপর চড়াও হয় সৌদি ক্লাবটি। প্রায় এক মাস পর প্রতিযোগিতামূলক ফুটবলে ফিরে এবং এই টুর্নামেন্টে নিজের প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমে রোনালদো নিজে গোলের দেখা না পেলেও দলের বড় জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। প্রথমার্ধে হোয়াও ফেলিক্সের করা একটি গোলে চমৎকার সহায়তা করার পাশাপাশি মাঠের আক্রমণে নেতৃত্ব দেন তিনি।
ম্যাচটিতে আল নাসরের হয়ে দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখিয়ে জোড়া গোল করেন কিংসলে কোম্যান। এছাড়া ওয়েসলি রিবেইরো, আবদুলেলাহ আল আমারি এবং হোয়াও ফেলিক্স একটি করে গোল করে দলের বিশাল জয় নিশ্চিত করেন। বিপরীতে আল জাওরার হয়ে একমাত্র সান্ত্বনাদায়ক গোলটি করেন ইবরাহিম। আল নাসরের কোচ রোনালদোকে শুরুর একাদশে রেখেছিলেন এবং তিনি মাঠে থাকাকালীনই দল ৪-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়। তবে খেলোয়াড়দের ওপর চাপের কথা মাথায় রেখে বিরতির পরই সিআর সেভেনকে মাঠ থেকে তুলে নিয়ে বিশ্রাম দেন কোচ।
এই জয়ের ফলে এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে নিজেদের শতভাগ জয়ের রেকর্ড অক্ষুণ্ণ রাখল আল নাসর। গ্রুপ পর্বের ছয়টি ম্যাচের সবকটিতেই জয় তুলে নিয়ে পূর্ণ ১৮ পয়েন্ট নিয়ে সবার আগে নকআউট পর্ব নিশ্চিত করেছে তারা। অন্যদিকে ৯ পয়েন্ট নিয়ে এই গ্রুপের দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে আল জাওরা। এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ-২ এ নিজের অভিষেক ম্যাচে ব্যক্তিগতভাবে স্কোরশিটে নাম তুলতে না পারলেও রোনালদোর উপস্থিতিতে দলের এমন আধিপত্যমূলক পারফরম্যান্স ফুটবল ভক্তদের মাঝে ব্যাপক উদ্দীপনার সৃষ্টি করেছে। মূলত একটি সুশৃঙ্খল ও আক্রমণাত্মক খেলার মাধ্যমেই এশিয়ান ফুটবলের এই মঞ্চে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখল আল নাসর।
প্রথমবারের মতো আয়োজিত হতে যাওয়া সাফ নারী ফুটসাল চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য ১৫ সদস্যের শক্তিশালী চূড়ান্ত দল ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। ইনডোর ফুটবলের এই নতুন মিশনে বাংলাদেশ দলকে নেতৃত্ব দেবেন অভিজ্ঞ ও সাফজয়ী অধিনায়ক সাবিনা খাতুন। বাফুফে ঘোষিত এই দলে সাবিনাকে অধিনায়ক করার পাশাপাশি দলের শক্তি বৃদ্ধিতে অভিজ্ঞ ও তরুণ খেলোয়াড়দের এক চমৎকার সমন্বয় ঘটানো হয়েছে।
ঘোষিত স্কোয়াডে সাবিনার সহকারী হিসেবে রাখা হয়েছে সুমাইয়া মাতসুশিমা, মাসুরা পারভীন এবং কৃষ্ণারানী সরকারকে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, প্রধান কোচের সাথে মান-অভিমানের জেরে মূল ফুটবল দল থেকে ছিটকে পড়া মাসুরা, কৃষ্ণা ও সুমাইয়া আবারও ফুটসালের মাধ্যমে জাতীয় দলে ফেরার সুযোগ পেলেন। এছাড়া দীর্ঘ বিরতির পর অভিজ্ঞ মিশরাত জাহান মৌসুমীকেও দলে রাখা হয়েছে। ইরানি কোচ সাঈদ খোদারাহমির অধীনে দলটি এই টুর্নামেন্টে অংশ নেবে।
আগামী ২০২৬ সালের ১৩ জানুয়ারি থেকে ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত দক্ষিণ এশিয়ার সাতটি দেশ নিয়ে এই মর্যাদাপূর্ণ টুর্নামেন্টটি অনুষ্ঠিত হবে। এতে বাংলাদেশ ছাড়াও অংশ নেবে ভারত, ভুটান, নেপাল, মালদ্বীপ, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা। সাবিনাদের মিশন শুরু হবে শক্তিশালী ভারতের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচের মাধ্যমে। এরপর পর্যায়ক্রমে তাঁরা ভুটান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের মুখোমুখি হবেন এবং গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে মালদ্বীপের বিরুদ্ধে মাঠে নামবেন।
বাংলাদেশ ফুটসাল দলের চূড়ান্ত সদস্যরা হলেন—সাবিনা খাতুন, সুমাইয়া মাতসুশিমা, মাসুরা পারভীন, কৃষ্ণারানী সরকার, লিপি আক্তার, মেহেনুর আক্তার, নওশন জাহান, নিলুফা ইয়াসমিন নিলা, মারজিয়া, রাত্রি মনি, সুমি খাতুন, মিশরাত জাহান মৌসুমি, ইতি রানী, সাথী বিশ্বাস এবং স্বপ্না আক্তার জিলি। ফুটবলের পর এবার ফুটসালের মঞ্চেও বাংলাদেশের নারীরা সাফল্যের স্বাক্ষর রাখবেন বলে ক্রীড়াপ্রেমীরা আশা প্রকাশ করছেন।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে চলমান অ্যাশেজ সিরিজে ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের পারফরম্যান্স যখন চরম বিপর্যয়ের মুখে, ঠিক তখনই মাঠের বাইরের এক নতুন বিতর্ক নিয়ে বিপাকে পড়েছে ইংলিশ শিবির। কুইন্সল্যান্ডের নুসা সৈকতে চার দিনের বিরতি কাটানোর সময় ক্রিকেটারদের বিরুদ্ধে মাত্রাতিরিক্ত মদ্যপানের অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনার সত্যতা যাচাই এবং ক্রিকেটারদের এমন অপেশাদার আচরণের বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি)। মাত্র ১১ দিনের ক্রিকেটে সিরিজের প্রথম তিন টেস্ট হেরে ইতোমধ্যে অ্যাশেজ হাতছাড়া হওয়া ইংল্যান্ডের জন্য এই ঘটনাটি চরম অস্বস্তি ও ভাবমূর্তির সংকট তৈরি করেছে।
বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছেন ইংল্যান্ডের ওপেনার বেন ডাকেট। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে তাঁকে অত্যন্ত মদ্যপ অবস্থায় দেখা গেছে, যেখানে তিনি অসংলগ্ন ভাষায় কথা বলছিলেন এবং বাড়ি ফেরার পথও সঠিকভাবে চিনতে পারছিলেন না। যদিও ভিডিওটির নির্ভরযোগ্যতা এখনও পুরোপুরি নিশ্চিত করা যায়নি, তবে ইসিবি বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। ইংল্যান্ড ক্রিকেটের পরিচালক রব কি জানিয়েছেন, তারা পুরো বিষয়টি নিবিড়ভাবে খতিয়ে দেখছেন এবং টানা ছয় দিন মদ্যপানের তথ্য যদি সত্য প্রমাণিত হয়, তবে তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হবে না। উল্লেখ্য, বেন ডাকেট এর আগেও ২০১৭-১৮ সালের অস্ট্রেলিয়া সফরে সতীর্থ জেমস অ্যান্ডারসনের মাথায় পানীয় ঢেলে দিয়ে বড় ধরনের শাস্তির মুখে পড়েছিলেন।
ক্রিকেটারদের এমন লাগামহীন আচরণের খবরে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমগুলোতেও কড়া সমালোচনা চলছে। তবে সাবেক অস্ট্রেলীয় কোচ ড্যারেন লেম্যান ইংলিশ ক্রিকেটারদের পক্ষ নিয়ে জানিয়েছেন যে, তাঁর চোখে ক্রিকেটাররা কোনো অসভ্যতা করেননি। তিনি দাবি করেছেন, নুসায় থাকাকালীন ইংলিশ ক্রিকেটাররা স্থানীয়দের সঙ্গে মিশেছেন এবং গলফ ও ফুটবল খেলে সুন্দরভাবে ছুটি কাটিয়েছেন। অন্যদিকে, ইসিবি সাফ জানিয়ে দিয়েছে যে ভিডিওটির পেছনের প্রকৃত ঘটনা এবং এর গুরুত্ব যাচাই করার পর দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মাঠের লড়াইয়ে নাস্তানাবুদ একটি দলের সদস্যদের এমন কাণ্ডজ্ঞানহীন আচরণ বোর্ড কোনোভাবেই হালকাভাবে নিচ্ছে না।
ক্রিকেটের বরপুত্র বিরাট কোহলি আবারও প্রমাণ করলেন কেন তাকে বর্তমান বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটার বলা হয়। ভারতীয় কিংবদন্তি শচিন টেন্ডুলকারের আরও একটি রেকর্ড নিজের করে নিলেন তিনি। আজ বুধবার ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেট টুর্নামেন্ট বিজয় হাজারে ট্রফিতে অন্ধ্র প্রদেশের বিপক্ষে খেলতে নেমে লিস্ট-এ ক্রিকেটে দ্রুততম ১৬ হাজার রানের অবিস্মরণীয় বিশ্বরেকর্ড গড়েছেন কোহলি। দিল্লির হয়ে দীর্ঘ ১৫ বছর পর এই ঘরোয়া টুর্নামেন্টে খেলতে নেমে তিনি এই অনন্য মাইলফলক স্পর্শ করেন।
পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, লিস্ট-এ ক্রিকেটে ১৬ হাজার রানের মাইলফলকে পৌঁছাতে বিরাটের লেগেছে মাত্র ৩৩০ ইনিংস। যেখানে ক্রিকেট ইতিহাসের মহানায়ক শচিন টেন্ডুলকারের লেগেছিল ৩৯১ ইনিংস। অর্থাৎ শচিনের চেয়ে ৬১ ইনিংস কম খেলেই কোহলি এই চূড়ায় পা রাখলেন। ওয়ানডে ও ঘরোয়া লিস্ট-এ মিলিয়ে কোহলির এমন দাপট ক্রিকেট বিশ্বে পুনরায় তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করল।
শুধু ১৬ হাজার রানের রেকর্ডই নয়, এর আগে লিস্ট-এ ক্রিকেটে দ্রুততম ১০ হাজার থেকে শুরু করে ১৫ হাজার পর্যন্ত প্রতিটি হাজারি রানের রেকর্ডও কোহলির দখলে ছিল। দীর্ঘ বিরতির পর ঘরোয়া ক্রিকেটে ফিরে এমন বিধ্বংসী ফর্মে থাকা কোহলি বুঝিয়ে দিলেন তাঁর রানের ক্ষুধা এখনো বিন্দুমাত্র কমেনি। তাঁর এই ঐতিহাসিক অর্জন ভারতীয় ক্রিকেট তো বটেই, বিশ্ব ক্রিকেটের ইতিহাসেও এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। মূলত শচিনের রেকর্ড ভাঙার এই ধারা বজায় রেখে কোহলি নিজেকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেলেন, যা সমসাময়িক যেকোনো ক্রিকেটারের জন্য এক বিশাল অনুপ্রেরণা।