‘মানুষকে বোঝাতেই পারি না, আমরা জিতি বা হারি, পরদিন সূর্য ঠিকই উঠবে…’
একটা ফুটবল ম্যাচকে ঘিরে এত আবেগ, এত কান্নাকাটির কী আছে - বুঝতেই পারেন না আর্জেন্টিনার কোচ লিওনেল স্কালোনি।
ভাই মাউরো স্কালোনি নাকি ভয়ের চোটে গ্রামে চলে গিয়েছেন, যাতে ম্যাচ না দেখতে হয়। সেখান থেকেই কাঁদতে কাঁদতে লিওনেলকে জানিয়েছেন এ কথা। তাতে লিওনেলের বিরক্তি বেড়েছে বই কমেনি।
আরে, একটা ম্যাচই তো! এর জন্য জীবন-যৌবন শ্রাদ্ধ করার দরকার আছে কোনো? ফুটবল কী জীবনের চেয়ে বড় কিছু? কাঁদতে কেন হবে?
অবশ্য স্কালোনি মানতে না চাইলেও, ম্যাচটার গুরুত্ব ছিল আকাশ-সমান। আগের ম্যাচেই সৌদি আরবের বিপক্ষে হেরেছে আর্জেন্টিনা। মেক্সিকোর বিপক্ষে হারলে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিশ্চিত। নিশ্চিত হবে বিশ্বমঞ্চ থেকে আরেকবার লিওনেল মেসির ফেরত যাওয়া। একদম চূড়ান্তবারের মতো।
সেটা হতে দেননি মেসি। আর্জেন্টিনাকে জিতিয়েই মাঠ ছেড়েছেন। যেভাবে জিতিয়েছেন, ওই সাহসিকতা দেখে আবেগের বাঁধ ভেঙেছে ‘আইডল’ পাবলো আইমারের। ডাগআউটে বসেই কেঁদেছেন। যে কান্না স্বস্তির। আনন্দের।
সহকারী আইমারের কান্না দেখেও বিরক্ত স্কালোনি। ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনেও জানালেন সে কথা, ‘আমাদের মাথায় রাখতে হবে এটা শুধুই একটা ফুটবল ম্যাচ। এরপর জীবন চলবে জীবনের মতো। আমরা জিতি বা হারি, পরদিন সূর্য ঠিকই উঠবে…’
নির্মোহ, ভাবলেশহীন কণ্ঠস্বর। যাতে আবেগ নেই বিন্দুমাত্রও। তবে স্কালোনি কি সবসময়ই এমন আবেগহীন ছিলেন? ফুটবল ম্যাচের জয়-পরাজয় কি কখনই তাঁর ভেতরের সত্ত্বাকে নাড়িয়ে দিত না?
দিত। যার একটা প্রমাণ পাওয়া যায় ওয়েস্ট হ্যাম-সতীর্থদের কথায়। সেবার সদ্যই ইংল্যান্ডে পা রেখেছেন স্কালোনি, দেপোর্তিভো লা করুনিয়া থেকে ছয় মাসের ধারে ওয়েস্ট হ্যামে খেলার জন্য। ওই বছর এফএ কাপের ফাইনালে ওঠে ওয়েস্টহ্যাম, কাপের বেশিরভাগ ম্যাচে বেশ ভালোই খেলছিলেন রাইটব্যাক স্কালোনি। লিভারপুলের বিপক্ষে ফাইনালেও তাঁর ওপর ভরসা রাখলেন কোচ অ্যালান পার্ড্যু।
লাভ হয়নি। ‘স্টিভেন জেরার্ড ফাইনাল’ নামে পরিচিত ম্যাচটায় লিভারপুল অধিনায়ক শেষ মুহূর্তে অবিশ্বাস্য এক গোল করে ম্যাচটা শুটআউটে নিয়ে যান। শুটআউট জিতে শিরোপাটা নিজের করে নেয় অল রেডরা। ওই শেষ মূহুর্তের গোলটা হত না, যদি স্কালোনি একটা ছোট্ট ভুল না করে বসতেন। যে ভুলের সুবাদে দুই-একজন ঘুরে বল পেয়ে যান জেরার্ড, সমতায় ফেরে লিভারপুল। আজীবন ওয়েস্ট হ্যাম সতীর্থরা স্কালোনিকে শূলে চড়িয়েছেন এ কারণে। ম্যাচ শেষে অঝোরে কেঁদেছিলেন স্কালোনি, সবাই ভুলে গিয়েছিলেন স্কালোনি ওদিন মাপা ক্রস না দিলে প্রথম গোলটাই হয় না ওয়েস্ট হ্যামের। সে কান্নায় লাভ হয়নি। তাঁর সঙ্গে চুক্তি পাকা করেনি ওয়েস্ট হ্যাম। ধার শেষে ফেরত পাঠিয়েছে দেপোর্তিভোয়।
চুপচাপ সহ্য করেছেন সব অবহেলা, গঞ্জনা। খেলোয়াড়ি জীবন শেষে কোচিংয়ের পাঠটাও নিয়ে রেখেছেন। খেলাটাকে ভালোবাসতেন, যে কারণে এত গঞ্জনার পরও ফুটবল থেকে দূরে থাকতে পারেননি। খেলা ছাড়ার পর পরিবার নিয়ে স্পেনের মায়োর্কায় থাকা শুরু করেন, বাচ্চাদের এক দলে কোচিং করাতেন টুকটাক। অনেকটা হুট করেই হোর্হে সাম্পাওলির কোচিং দলে সুযোগ ২০১৮ বিশ্বকাপের আগে আগে।
সেবার পারেননি সাম্পাওলি। উদ্ভাবনী কৌশলের ছোঁয়ায় চিলিকে কোপা আমেরিকার স্বাদ দেওয়া এই কোচ নিজ দেশের দায়িত্ব পেয়েই কেন যেন ভড়কে গেলেন। চড়া মূল্য চোকালেন মেসিরা। বিশ্বকাপে সাম্পাওলি-ব্যর্থতার পর দিয়েগো সিমিওনে, মরিসিও পচেত্তিনো, রিকার্দো গারেকা, এদুয়ার্দো বেরিৎসো থেকে শুরু করে মার্সেলো গ্যাশার্দো - কেউই আর্জেন্টিনার দায়িত্ব নিতে চাইলেন না। অবশ্য তাঁদের মতো ‘হাই-প্রোফাইল’ কোচ নিয়োগ দেওয়ার টাকাও ছিল না আর্জেন্টাইন ফেডারেশনের। এখন উপায়?
শেষমেশ আনকোরা স্কালোনির কাঁধে মেসিদের টেনে তোলার দায়িত্ব। দেশজুড়ে শুরু হলো বিদ্রোহ। দেশের অধিকাংশ মানুষই যাকে চেনে না, চিনলেও গুরুত্ব দেয় না - এমন একজনকে জাতীয় দলের দায়িত্ব দেওয়া কতটুকু যুক্তিসঙ্গত - প্রশ্ন উঠলই। তোপ দাগলেন খোদ দিয়েগো মারাদোনা, ‘ও ভালো ছেলে, কিন্তু ও কোচিং কী করাবে? ওকে তো ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করতে দিলেও পারবে ন!’
স্কালোনি চুপচাপ শুনে গেলেন। সমালোচনার জবাব মুখের কথা হয়ে নয়, বরং খেলার কৌশলে বাঙময় হয়ে উঠল। কেউ বিশ্বাস না করলেও, আর্জেন্টিনাকে আটাত্তরের বিশ্বকাপ জেতানো কোচ সেজারে লুই মেনোত্তি ঠিকই বুঝেছিলেন, স্কালোনি ছেলেটার মধ্যে কিছু একটা আছে। এমন কিছু, যা মেসিদের এনে দিতে পারে ওই অধরা সাফল্যের স্বাদ।
ভারপ্রাপ্ত কোচের দায়িত্ব পেয়ে দুই ম্যাচ দুই ম্যাচ করে আর্জেন্টিনাকে পথ দেখাতে শুরু করলেন স্কালোনি। মেসিরা ধীরে ধীরে খেলার নিজস্ব ‘স্টাইল’ খুঁজে পেলেন, যা সাম্পাওলির সময়ে একরকম উধাওই ছিল বলা চলে। স্কালোনি বুঝলেন, পুরো স্কোয়াডের খোলনলচে বদলাতে হবে। বছরের পর বছর ধরে আর্জেন্টিনাকে শিরোপাহীনতার আগলে বেঁধে রাখা বয়স্ক তারকাদের সরিয়ে দলকে শোনাতে হবে তারুণ্যের কলতান। গাব্রিয়েল মের্কাদো, লুকাস বিলিয়া, ফেদেরিকো ফাজিও, এভার বানেগা, গনসালো হিগুয়েইন, এনসো পেরেস, মার্কোস রোহো, ফ্রাঙ্কো আরমানিদের জায়গায় একে একে মূল একাদশে সুযোগ পেতে শুরু করলেন জিওভান্নি লো সেলসো, লিয়ান্দ্রো পারেদেস, ক্রিস্তিয়ান রোমেরো, এজেকিয়েল পালাসিওস, অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার, এমিলিয়ানো মার্তিনেস, লাওতারো মার্তিনেস, লিসান্দ্রো মার্তিনেস, নিকোলাস গনসালেস, হুলিয়ান আলভারেস, হোয়াকিন কোরেয়া, রদ্রিগো দি পল, নাহুয়েল মলিনা, গনসালো মন্তিয়েলরা। দল আরও ঐক্যবদ্ধ হলো। সফল একটা দল গঠনের জন্য স্কোয়াডের প্রত্যেক সদস্যের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক উন্নয়নের বিকল্প নেই। স্কালোনি সেটাই করলেন। পাওলো দিবালার মতো খেলোয়াড় দলে এখনও কেন সুযোগ পাচ্ছেন না, সরব হল মিডিয়া। এক সাংবাদিক তো স্কালোনিকে পেয়ে সরাসরি ‘আপনার সঙ্গে দিবালার মনোমালিন্য আছে কি না,’ - জিজ্ঞেসই করে বসলেন!
পাশে হেঁটে যাওয়া দিবালাকে ডাকলেন সাংবাদিকের সামনেই, জিজ্ঞেস করলেন, ‘এই, তোমার সঙ্গে নাকি আমার শত্রুতা?’ দিবালার চেহারা দেখে মনে হলো, অনেক মজার একটা কৌতুক বলেছেন কোচ! দিবালার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন, তাতে যা বোঝার বোঝা হয়ে গেল সেই সাংবাদিকের!
২০১৯ কোপা আমেরিকার সেমিফাইনালে উঠল আর্জেন্টিনা। শিরোপা না জিতলেও, দলটা বোঝাল, ঠিক পথেই আছে তারা। দরকার একটু ধৈর্য্যর, অপেক্ষার। উন্নতি পূর্ণতা পেল কোপা-ফিনালিসিমা জয়ে, ২৮ বছরের ট্রফিখরা ঘোচানোয়।
কাজ তখনও শেষ হয়নি, স্কালোনি জানতেন। বিশ্বকাপ যে ডাকছে হাতছানি দিয়ে! পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকলেও কৌশলগত দিক দিয়ে স্কালোনি যে কতটা দুর্দান্ত, আগে আর্জেন্টাইন সমর্থকেরা বুঝেছিলেন। কাতার বিশ্বকাপে বুঝল সবাই। প্রতি ম্যাচে নিজের ক্ষুরধার মস্তিষ্কের প্রমাণ দিয়ে গেলেন।
লো সেলসো, দি পল আর পারেদেসকে নিয়ে গড়া পরীক্ষিত মিডফিল্ড ধাক্কা খায় লো সেলসোর চোটে। একই পথে হাঁটেন নিকোলাস গনসালেসও। বিশ্বকাপের আগেই আস্থার দুই সৈনিক হারিয়ে চিন্তার ভাঁজ স্কালোনির কপালে। কী হবে এখন?
প্রথম ম্যাচে মাঝমাঠে লো সেলসোর অভাব পূরণ করতে চাইলেন আজীবন ফরোয়ার্ড হিসেবে খেলা আলেহান্দ্রো গোমেসকে দিয়ে। লাভ হল না। মেসির জায়গায় দি পল উঠে যাচ্ছিলেন বারবার, মাঝমাঠে খেলার অনভিজ্ঞতার কারণে বাঁ দিকে উঠে যাচ্ছিলেন গোমেসও। চোটে ভোগা মার্কাস আকুনিয়ার জায়গায় খেলা নিকোলাস তালিয়াফিকোর সঙ্গে বাঁ উইংয়ের রসায়নটা একদমই জমছিল না গোমেসের। ফলে মাঝমাঠে একা পড়ে যাচ্ছিলেন পারেদেস। আবার পারেদেস উঠে গেলে মাঝমাঠে একে পড়ে যাচ্ছিলেন হয় দি পল, নয়তো খোদ মেসি। রক্ষণের সঙ্গে আক্রমণের সংযোগই হচ্ছিল না। সৌদি আরবের একাধিক খেলোয়াড় মাঝমাঠের দখল নিয়ে নিয়েছিলেন। একাধিক ফলাফল? এশিয়ার দেশটার অবিস্মরণীয় বিজয়গাথা।
মেক্সিকোর বিপক্ষে ওই ভুল শোধরালেন পারেদেসের জায়গায় গিদো রদ্রিগেস (পরে এনসো ফের্নান্দেস), আর গোমেসের জায়গায় অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টারকে নামিয়ে। দি পলকে সাফ সাফ জানিয়ে দিলেন, কোনোভাবেই যেন মেসির খেলার জায়গাগুলোতে উঠে গিয়ে অধিনায়কের খেলায় বিঘ্ন না ঘটান। দি পল বুঝলেন সেটা। ডান উইং আর হাফস্পেসগুলো মিলিয়ে মেসির যেসব জায়গায় বিচরণ, সেসব জায়গায় বাড়তি রক্ষণ নিরাপত্তার দায়িত্ব নিলেন দি পল। মাঝমাঠ এবার বাড়তি নিয়ন্ত্রণ পেল। ফলাফল? মেসি-এনসোর গোলে স্বস্তির জয় আর্জেন্টিনার।
ততদিনে মূল স্ট্রাইকার লাওতারো মার্তিনেস স্কালোনিকে বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন, মেসির রক্ষণচেরা বলগুলো সময়মতো সামনে দৌড়ে ধরার মতো কাজটা ঠিকঠাক করতে পারছেন না, বারবার পড়ছেন অফসাইডের খড়গে। ব্যস, একাদশে প্রবেশ হুলিয়ান আলভারেসের। পোল্যান্ডের রক্ষণ সেভাবে ওপরে উঠে প্রেস করে না, জানতেন স্কালোনি। আগের দুই ম্যাচের ৪-৪-২ ছক বদলে আক্রমণভাগে একজন খেলোয়াড় বাড়িয়ে ৪-৩-৩ ছকে দলকে খেলাতে শুরু করলেন। যা আক্রমণে ৩-১-৬ হয়ে যাচ্ছিল, দুই সেন্টারব্যাকের পাশে তৃতীয় সেন্টারব্যাক হিসেবে খেলা শুরু করলেন রাইটব্যাক (নাহুয়েল মলিনা, উনি না থাকলে গনসালো মন্তিয়েল), তিনজনের একটু ওপরে একক রক্ষণাত্মক মিডফিল্ডার হিসেবে এনসো ফের্নান্দেস - আর বাকি সবাই ওপরে। আক্রমণে এই অতি-আগ্রাসী আর্জেন্টিনাকে সামলাতে পারেনি পোল্যান্ড, আলভারেস ও ম্যাক অ্যালিস্টারের গোলে হেরে বসে ২-০ স্কোরলাইনে।
দ্বিতীয় রাউন্ডের প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়ার খেলার ধরণ বেশ শরীরনির্ভর, বুঝে আবারও মাঝমাঠে একজন বাড়িয়ে ছকটা ৪-৪-২ করে ফেলেন স্কালোনি। আগের দুই ম্যাচে পোল্যান্ড আর মেক্সিকো যা ঠিকঠাক করে উঠতে পারেনি, সেটাই করে আর্জেন্টিনাকে চমকে দিল অস্ট্রেলিয়া। নব্বই মিনিট জুড়ে মেসিদের দুর্দান্তভাবে প্রেস করে গেল সকারুরা। অস্ট্রেলিয়ার আঁটসাঁট ৪-৪-২ ছকে মাঝখান দিয়ে আক্রমণভাগে বলই পাঠাতে পারছিল না আর্জেন্টিনা। স্কালোনি বুঝলেন, ম্যাচ বের করে আনতে হলে মেসিকে একটু পেছনে খেলতে হবে, দি পল-ম্যাক অ্যালিস্টার আর ফের্নান্দেসের পাশাপাশি মাঝমাঠের দখল বাড়ানোর জন্য মেসিকেও একটু নিচে নামতে হবে। আর্জেন্টিনার নিদান সে কৌশলেই। মেসি-ম্যাজিকে কোয়ার্টারে আলবিসেলেস্তিরা।
কোয়ার্টারে ইতিহাসের অন্যতম সেরা ম্যানেজার লুই ফন গালের মুখোমুখি স্কালোনি। ৩-৪-১-২ ছকে নেদারল্যান্ডসকে খেলিয়ে এবারও যিনি মুগ্ধ করছিলেন দর্শকদের। তবে ডাচদের তিন সেন্টারব্যাক আর দুই উইংব্যাকভিত্তিক কৌশলের সঙ্গে লড়তে একজন মিডফিল্ডার বসিয়ে বাড়তি একজন সেন্টারব্যাক খেলালে যে সাফল্য আসবে, প্রথম রাউন্ডেই দেখিয়েছিল ইকুয়েডর। একই কাজ করলেন স্কালোনিও। মিডফিল্ডার গোমেসকে বসিয়ে বাড়তি একজন সেন্টারব্যাক (লিসান্দ্রো মার্তিনেস) খেলালেন, দুই ফুলব্যাক মলিনা আর আকুনিয়া উইংব্যাকের স্বাধীনতা নিয়ে দুই ডাচ উইংব্যাক দেনজেল দুমফ্রাইজ আর ডেলেই ব্লিন্ডকে শক্তিহীন করে দিলেন। মেসির পাসে প্রথম গোল করলেন মলিনা, দ্বিতীয় গোলটা এল আকুনিয়ার আনা পেনাল্টিতে।
ব্রাজিলকে হারিয়ে সেমিতে আর্জেন্টিনার সামনে পড়ে ক্রোয়েশিয়া। লুকা মদরিচ, মাতেও কোভাচিচ আর মার্সেলো ব্রোজোভিচ যাদের মাঝমাঠকে বিশ্বকাপেরই অন্যতম সেরা বানিয়েছেন। অতি আক্রমণ করতে গিয়ে ক্রোয়েশিয়ার মাঝমাঠ-শক্তিতে হেলাফেলা করেছিল সেলেসাওরা। স্কালোনি সে ভুল থেকে শিক্ষা নিয়েছেন। ৪-৪-২ ছকে এমন চারজন মিডফিল্ডারকে খেলালেন, যারা আদতে কেউই প্রথাগত উইঙ্গার বা ফরোয়ার্ড নন আনহেল দি মারিয়া বা আলেহান্দ্রো গোমেসের মতো। দি পল, ফের্নান্দেস, পারেদেস ও ম্যাক অ্যালিস্টার একদম মাঝমাঠে আঠার মতো লেগে থাকলেন ক্রোয়েশিয়ার মিডফিল্ডারদের সঙ্গে। আবার প্রথম ম্যাচে মরক্কো দেখিয়েছিল, স্ট্রাইকার ইউসুফ এন-নেসেরি যদি ব্রোজোভিচকে ঠিকঠাক ‘মার্ক’ করতে পারেন, ক্রোয়েশিয়ার মাঝমাঠ আরও হাঁসফাস করতে শুরু করে।
স্কালোনি সেটাও করলেন। স্ট্রাইকার হুলিয়ান আলভারেস প্রায় সময়ই উপরে মেসিকে রেখে নেমে আসছিলেন ব্রোজোভিচ পর্যন্ত। ম্যাচ শুরুর আধঘন্টা পর্যন্ত আর্জেন্টিনার সঙ্গে সমানে-সমান টক্কর দিলেও পেরে ওঠেনি ক্রোয়েশিয়া, হেরে বসে ৩-০ গোলে। ২০১৮ বিশ্বকাপে দুই দলের মধ্যকার ম্যাচের স্কোরলাইন যা ছিল আরকি! শুধু সেবার জিতেছিল ক্রোয়েশিয়া, এবার জয়ীর কলামে আর্জেন্টিনার নাম!
ফাইনালে আসার পথে আর্জেন্টিনার প্রত্যেক প্রতিপক্ষের কিছু না কিছু দুর্বলতা ছিলই, ম্যাচজয়ী কৌশলে যার সুফল নিয়েছেন স্কালোনি। কিন্তু ফাইনালের প্রতিপক্ষ ফ্রান্সের দুর্বলতা কোথায়? ফাইনালে ওঠার আগ পর্যন্ত কোনো ম্যাচেই কৌশলগত সেরকম দুর্বলতা দেখায়নি গতবারের বিশ্বজয়ীরা!
ফ্রান্সের বাঁ পাশে উইঙ্গার কিলিয়ান এমবাপ্পে আর ফুলব্যাক থিও এর্নান্দেস আক্রমণে দুর্দান্ত হলেও, এমবাপ্পে রক্ষণে সাহায্য করতে নিচে নেমে আসেন না, ভাইয়ের চোটের কারণে একাদশে জায়গা পাওয়া থিও-ও রক্ষণে অতটা পটু নন। যে কারণে কোয়ার্টারে ইংল্যান্ড আর সেমিতে মরক্কো - দুই দলই এমবাপ্পে-এর্নান্দেসের পেছনের ফেলে আসা ফাঁকা জায়গাতে আক্রমণ করতে চেয়েছে বেশিরভাগ সময় - ইংল্যান্ড বুকায়ো সাকা-জর্ডান হেন্ডারসনকে দিয়ে, মরক্কো আশরাফ হাকিমি আর হাকিম জিয়েশকে দিয়ে। তবে সে কৌশলও শতভাগ কার্যকরী নয়, না হয় ফ্রান্স ফাইনালে ওঠে কী করে?
ফাইনালে স্কালোনি এমন এক কৌশলের আশ্রয় নিলেন, যা কেউ কল্পনাও করেনি। এমবাপ্পে-থিও এর্নান্দেসের উইং নয়, বরং ফ্রান্সের ডানদিকের উইংয়ে আক্রমণ করার পরিকল্পনা সাজালেন - নিজেদের বাঁ উইং দিয়ে। আর্জেন্টিনার আক্রমণের ডানদিকটা যেহেতু মেসিই নিয়ন্ত্রণ করেন, তাই ওখানে আক্রমণ করার জন্য বাড়তি খেলোয়াড় রাখেননি। খেলোয়াড়ি জীবনে নিজে রাইটব্যাক ছিলেন বলেই কি না, বুঝেছিলেন, বারবার বাঁ দিক থেকে ছুটে আসা একজন গতিশীল উইঙ্গারের মুখোমুখি হওয়ার বিষয়টা ঠিক পছন্দ করবেন না ফ্রান্সের রাইটব্যাক জুলস কুন্দে - যিনি আদতে সেন্টারব্যাক হওয়ার কারণে তুলনামূলকভাবে রক্ষণাত্মক। তার ওপরে কুন্দের ওপরে থাকা উইঙ্গার ওসমান দেম্বেলেও রক্ষণে সাহায্য করেন না একদম। আগের তিন ম্যাচ না খেলা, খেললেও রাইট উইঙ্গার হিসেবে খেলা আনহেল দি মারিয়াকে দিলেন লেফট উইঙ্গারের ভূমিকা। মাঝমাঠ থেকে দি মারিয়াকে ‘উড়তে’ সাহায্য করলেন ওই দিকে খেলা মিডফিল্ডার অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার।
ওই এক কৌশলেই স্তব্ধ ফ্রান্সের কোচ দিদিয়ের দেশোঁ। ৭০ মিনিট ধরে এমবাপ্পের পায়ে বল গেল না সেভাবে, গ্রিজমান মাঝমাঠ নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেন না, অলিভিয়ের জিরু আর্জেন্টিনার ডিবক্সে দাঁড়িয়ে থাকলেন পথহারা পথিকের মতো। ৪০ মিনিটের মধ্যে দুই গোল হজম করার পর জিরু আর দেম্বেলেকে মাঠ থেকে তুলে নিয়ে দেশোঁ প্রকারান্তরে স্বীকার করলেন, স্কালোনির বুদ্ধিতে কুলিয়ে উঠতে পারছেন না। পরে ফ্রান্স ম্যাচে ফিরলেও, তাতে দেশঁর কৌশলের চেয়ে এমবাপ্পে নামক ‘দানবে’র ভূমিকা ছিল ঢের বেশি। শেষমেশ টাইব্রেক লড়াইয়ে ফ্রান্সকে হারিয়ে ৩৬ বছর পর বিশ্বজয় করল আর্জেন্টিনা।
এবার আর নিজের আবেগে বাঁধ দিতে পারলেন না স্কালোনি। মুখে কাঠিন্য এনে নিরাবেগ থাকার চেষ্টা করেছিলেন। কান্নার দমক তাতে আরও বাড়ল। আজীবন পাওয়া সকল লাঞ্ছনা-গঞ্জনা মুক্তোদানার মতো অশ্রুবিন্দু হয়ে ঝরল অবিরত। হাউমাউ কান্নায় বোঝালেন, তিনিও রক্তমাংসের আবেগী মানুষ। ভাই মাউরো স্কালোনি আর পাবলো আইমারের মতো।
আর দশজন আর্জেন্টাইনের মতো।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে নতুন এক মাইলফলকে পৌঁছেছেন বাঁহাতি পেসার মুস্তাফিজুর রহমান। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি উইকেট নেওয়ার রেকর্ড এখন তার দখলে।
এশিয়া কাপে ভারতের বিপক্ষে সুপার ফোরের ম্যাচে অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদবকে আউট করার মধ্য দিয়ে নিজের ১৫০তম টি-টোয়েন্টি উইকেট শিকার করেন মুস্তাফিজ। এদিনই তিনি পেছনে ফেলেন দীর্ঘদিন ধরে শীর্ষে থাকা সাকিব আল হাসানকে, তার উইকেট সংখ্যা ছিল ১৪৯।
এর আগে সুপার ফোরে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচে ৩ উইকেট নিয়ে সাকিবকে স্পর্শ করেছিলেন মুস্তাফিজ। ভারতের বিপক্ষে উইকেট নিয়েই গড়ে ফেললেন নতুন রেকর্ড।
মুস্তাফিজের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের পরিসংখ্যানও চমকপ্রদ। ১১৮ ম্যাচে ১৫০ উইকেট, গড় ২০.৬৫ এবং সেরা বোলিং ফিগার ১০ রানে ৬ উইকেট। ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে এই ১০ রানের ৬ উইকেটের রেকর্ডটি এখনো টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে পেস বোলারদের সেরা বোলিং ফিগার হিসেবে রয়ে গেছে।
আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে চতুর্থ বোলার হিসেবে ১৫০ উইকেটের মাইলফলক ছুঁলেন মুস্তাফিজ। তার আগে এই মাইলফলক অর্জন করেছেন নিউজিল্যান্ডের টিম সাউদি, ইশ সোধি এবং আফগানিস্তানের রশিদ খান।
১৭৩ উইকেটে নিয়ে সবচেয়ে বেশি উইকেটের রেকর্ডটি এখনো আফগান লেগ স্পিনার রশিদ খানের। সামনের দিনে এই তালিকাতেও আরও ওপরে উঠে আসার সুযোগ রয়েছে মুস্তাফিজের সামনে।
যুক্তরাষ্ট্র ক্রিকেট বোর্ডের (ইউএসএসির) ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি)। গত মঙ্গলবার এক ভার্চুয়াল বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেয় ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
এর আগে চলতি বছরের জুলাইয়ে বার্ষিক সাধারণ সভায় ইউএসএসিকে তিন মাস সময় দেওয়া হয়েছিল। শর্ত ছিল, ‘স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন’ আয়োজন করতে হবে এবং ‘শাসন কাঠামোয় বড় পরিবর্তন’ আনতে হবে। তা না হলে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
শেষ পর্যন্ত শর্ত পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় ইউএসএসির সদস্যপদ স্থগিত করা হয়েছে। তবে এতে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় দলগুলো আইসিসির কোনো টুর্নামেন্ট খেলতে পারবে না এমনটা নয়। তারা আগের মতোই আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারবে। আসন্ন টি-২০ বিশ্বকাপে অংশগ্রহণেও এর কোনো প্রভাব ফেলবে না। এছাড়া ২০২৮ লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিকের প্রস্তুতিতেও কোনো বাধা থাকছে না। এ সময়ে জাতীয় দলের উন্নয়ন ও হাই-পারফরম্যান্স কার্যক্রম সরাসরি তদারকি করবে আইসিসি এবং তাদের নিযুক্ত প্রতিনিধিরা।
এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ক্রিকেটের জন্য একটি নরমালাইজেশন কমিটি গঠন করা হবে। এই কমিটি শাসন কাঠামো, কার্যক্রম ও সংগঠনের সংস্কার পরিকল্পনা তৈরি করবে এবং পুরো প্রক্রিয়ায় নজরদারি করবে।
আইসিসির মতে, এই পদক্ষেপ ক্রিকেটের দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থে নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে নিশ্চিত করা হবে, খেলোয়াড়দের ক্যারিয়ার বা যুক্তরাষ্ট্রে ক্রিকেটের বিকাশ কোনোভাবেই বাধাগ্রস্ত না হয়।
মাত্র ১৩ বছর বয়সেই আইপিএলে দল পেয়ে ইতিহাস গড়েছিলেন ভারতের বিস্ময় বালক বৈভব সূর্যবংশী। এরপর ১৪ বছর ৩২ দিন বয়সে সেঞ্চুরি করে হৈ-চৈ ফেলে দেন এই ব্যাটার। এবার অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়ের ওয়ানডে ক্রিকেটে সর্বোচ্চ ছক্কা হাঁকানোর রেকর্ড গড়েছেন তিনি।
ইংল্যান্ডের মাটিতে দুর্দান্ত সফর কাটিয়ে ভারতীয় অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট দল এখন অস্ট্রেলিয়ায়। ২১ সেপ্টেম্বর প্রথম ওয়ানডেতে স্বাগতিক অজিদের ৭ উইকেটে হারায় ভারতীয় যুবারা। বুধবার দ্বিতীয় ওয়ানডেতে মুখোমুখি হয়েছে এই দুই দল।
অস্ট্রেলিয়ার যুবাদের বিপক্ষে তিন ফিফটিতে ৩০০ রানের বড় সংগ্রহ পেয়েছে সফরকারী ভারত। তাদের পক্ষে অভিজ্ঞান কুন্ডু সর্বোচ্চ ৭১, বৈভব সূর্যবংশী ও ভিহান মালহোত্রা সমান ৭০ রান করেছেন।
৬৮ বলে ৭০ রানের ইনিংসটি খেলার পথে ৫টি চার ও ৬টি ছক্কা হাঁকায় বৈভব। এর মধ্য দিয়ে যুব ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ ছক্কার রেকর্ড হয়ে গেল ১৪ বছর বয়সি এই ভারতীয় ব্যাটারের। মাত্র ১০ ওয়ানডেতে বৈভব ৪১টি ছক্কা হাঁকিয়েছেন বৈভব।
এতদিন ৩৮টি ছয় নিয়ে রেকর্ডটি দখলে ছিল আরেক ভারতীয় উন্মুক্ত চাঁদের। ওই কীর্তি গড়তে ২০১১-১২ সালে তিনি ২১টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন। এই তালিকায় এরপর যথাক্রমে আছেন- বাংলাদেশের জাওয়াদ আবরার (৩৫), পাকিস্তানের শাহজাইব খান (৩১), বাংলাদেশের তাওহীদ হৃদয় (৩০) ও ভারতের যশস্বী জয়সওয়াল (৩০)।
সমস্ত জল্পনা-কল্পনা শেষে উসমান দেম্বেলের হাতেই উঠল ব্যালন ডিঅর ট্রফি। ষষ্ঠ ফরাসি ফুটবলার হিসেবে ব্যালন ডিঅর ট্রফি জিতলেন এই পিএসজি তারকা। দেম্বেলের আগে ফরাসিদের মধ্যে ব্যালন ডিঅর জিতেছেন রাইমন্ড কোপা, মিশেল প্লাতিনি, জ্যাঁ পিয়েরে পাপিন, জিনেদিন জিদান এবং করিম বেনজেমা। এই ছয়জন মিলে সব মিলিয়ে ব্যালন ডিঅর জিতেছেন ৮ বার। যেখানে মিশেল প্লাতিনি একাই জিতেছেন ৩ বার এবং বাকিরা একবার করে।
আর ৮ বার ব্যালন ডিঅর জেতার মধ্য দিয়ে দেশ হিসেবে সর্বোচ্চ ব্যালন ডিঅর জয়ে ফ্রান্স ছুঁয়ে ফেলল আর্জেন্টিনাকে। ফ্রান্স ও আর্জেন্টিনা সমান ব্যালন ডিঅর জিতলেও, দুই দেশের জেতার মধ্যে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য আছে।
ফ্রান্সের হয়ে ৬ জন মিলে যেখানে আটবার জিতেছেন, সেখানে আর্জেন্টিনার হয়ে লিওনেল মেসি একাই জিতেছেন আটবার। যা এককভাবে কোনো ফুটবলারের সর্বোচ্চ ব্যালন ডিঅর জয়ের রেকর্ডও বটে।
মেসি প্রথম ব্যালন ডিঅর জেতেন ২০০৯ সালে। এরপর ২০১০ থেকে ২০১২ পর্যন্ত টানা আরও তিনটি ব্যালন ডিঅর জেতেন তিনি। মাঝে তিন বছরের বিরতি দিয়ে ব্যক্তিগত শ্রেষ্ঠত্বের ট্রফিটি মেসি জেতেন ২০১৫ সালে। পরবর্তী তিনটি ব্যালন ডিঅর মেসি জেতেন ২০১৯, ২০২১ ও ২০২৩ সালে।
অন্য দিকে ফ্রান্সের হয়ে প্রথম ব্যালন ডিঅর জেতেন রাইমন্ড কোপা। এরপর ১৯৮৩, ১৯৮৪ ও ১৯৮৫ সালে হ্যাটট্রিক ট্রফি জেতেন মিশেল প্লাতিনি। জ্যাঁ পিয়েরে পাপিন জেতেন ১৯৯১ সালে।
কিংবদন্তি জিনেদিন জিদানের হাতে ট্রফিটি ওঠে ১৯৯৮ সালে বিশ্বকাপ জেতার পর। এরপর লম্বা বিরতি দিয়ে ২০২২ সালে এই ট্রফি জেতেন করিম বেনজেমা। আর এবার জিতলেন দেম্বেলে।
দেশ হিসেবে ফ্রান্স ও আর্জেন্টিনার পর যৌথভাবে দ্বিতীয় স্থানে আছে জার্মানি, নেদারল্যান্ডস ও পর্তুগাল। পর্তুগালের হয়ে অবশ্য ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো একাই জিতেছেন ৫ বার। অন্যদের মধ্যে জিতেছেন ইউসেবিও এবং লুইস ফিগো। এ ছাড়া ৫ বার করে এই ট্রফিটি জিতে ৩ নম্বরে আছে ইতালি ও ব্রাজিল। ব্রাজিলের হয়ে ২ বার জিতেছেন রোনালদো নাজারিও।
ছয় বছর পর আবারও বাংলার ক্রিকেট প্রশাসনে ফিরলেন সৌরভ গাঙ্গুলী। ভারতের সাবেক অধিনায়ককে ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গলের (সিএবি) সভাপতি হিসেবে পুনর্নির্বাচিত করা হয়েছে। গত শনিবার সিএবির ৯৪তম বার্ষিক সাধারণ সভায় তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
এর আগে ২০১৫ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত একই পদে ছিলেন গাঙ্গুলী। এবার তিনি দায়িত্ব নিয়েছেন বড় ভাই স্নেহাশিস গাঙ্গুলীর স্থলাভিষিক্ত হয়ে। টানা ছয় বছরের মেয়াদ শেষ হওয়ায় স্নেহাশিসকে পদ ছাড়তে হয়েছে।
পুনর্নির্বাচিত হওয়ার পর সংবাদ সংস্থা ভারতীয় সংবাদ সংস্থা এএনআইকে সৌরভ গাঙ্গুলী বলেন, ‘এর আগেও আমি পাঁচ বছর সভাপতি হিসেবে কাজ করেছি। এবারও আমরা সেরাটাই করার চেষ্টা করব। ভারতে ক্রিকেটের বিপুল উন্মাদনা আছে। প্রচুর প্রতিভা আছে। সেই প্রতিভাকে দিকনির্দেশনা দেওয়াটাই আমাদের কাজ হবে।’
সিএবির দায়িত্ব শেষ করার পর ২০১৯ সালে বিসিসিআইয়ের সভাপতির দায়িত্ব নিয়েছিলেন গাঙ্গুলী। সেই দায়িত্বে ছিলেন ২০২২ সাল পর্যন্ত। চলতি বছরের শুরুর দিকেই গাঙ্গুলীকে আবারও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে আইসিসি পুরুষদের ক্রিকেট কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে। ২০২১ সালে প্রথমবার এই পদে দায়িত্ব নিয়েছিলেন তিনি।
চলমান এশিয়া কাপে সুপার ফোরের ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে ভারতের জয়ের পরও প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন গাঙ্গুলী। অভিষেক শর্মার ৭৪ আর সহঅধিনায়ক শুবমান গিলের ৪৭ রানে ভর করে ভারত ১৭২ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জিতেছে। এ নিয়ে তিনি বলেন, ‘ভারত খুব ভালো দল। আমাদের হাতে এশিয়া কাপ জেতার ভালো সুযোগ আছে। আশা করি আমরা ভালো খেলব।’
বিসিসিআই সভাপতি পদে মনোনয়ন জমা দেওয়া সাবেক দিল্লি তারকা মিঠুন মানহাসকেও অভিনন্দন জানিয়েছেন গাঙ্গুলী। তিনি বলেন, ‘আমি তাকে অভিনন্দন জানাই। এটা অনেক বড় পদ। বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ও দক্ষ বোর্ডের সভাপতি হওয়া মানে বিশাল দায়িত্ব। ভারতের হয়ে খেলা ক্রিকেটাররা অবিশ্বাস্য প্রতিভাবান। তাদের সামলানো আর পথ দেখানো কঠিন দায়িত্ব। আমি আশা করি, ও এবং তার টিম খুব ভালোভাবে কাজ করবে।’
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) কোষাগারে কত টাকা আছে তা নিয়ে বিভিন্ন সময় নানা অঙ্কের কথা শোনা গেলেও এবার আনুষ্ঠানিকভাবে জানা গেল সেই সংখ্যা। বিদায়ী পরিচালনা পর্ষদ ১৩৯৮ কোটি টাকা কোষাগারে রেখে দায়িত্ব ছাড়ছে।
২০২১ সালের নির্বাচনে দায়িত্ব পাওয়া এই বোর্ড তিনজন সভাপতির নেতৃত্বে কাজ করেছে। প্রথমে ছিলেন নাজমুল হাসান, যিনি টানা তিন মেয়াদে সভাপতি ছিলেন।
তবে গত বছর আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তিনি দায়িত্ব হারান। এরপর ফারুক আহমেদ মাত্র ৯ মাস সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। সর্বশেষ প্রায় চার মাস ধরে বিসিবির সভাপতি ছিলেন সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বুলবুল। তার সভাপতিত্বেই গত সোমবার অনুষ্ঠিত হয় বিদায়ী বোর্ডের শেষ সভা।
নির্ধারিত সময়ের আড়াই ঘণ্টা পর রাত ৯টায় সভা শুরু হয়ে শেষ পর্যন্ত মধ্যরাত পর্যন্ত চলে। সভা দীর্ঘ হওয়ার মূল কারণ ছিল বিসিবি নির্বাচনের কাউন্সিলর অনুমোদনকে ঘিরে জটিলতা। দেশের ক্রিকেটে এই মুহূর্তে সবচেয়ে আলোচিত বিষয়ও এটিই।
সভা শেষে মধ্যরাতে সংবাদ সম্মেলনে বিসিবি পরিচালক ইফতেখার রহমান আর্থিক অবস্থার হালনাগাদ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘১৩৯৮ কোটি টাকা আমরা রেখে যাচ্ছি। এফডিআর, হাতে থাকা নগদ অর্থ, ব্যাংক ব্যালেন্স- সব মিলিয়েই এই প্রায় ১৪০০ কোটি টাকা রাখা হচ্ছে।’
সভায় বিপিএল নিয়েও আলোচনা হয়। ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে বিপিএল হওয়ার কথা থাকলেও বিসিবি নির্বাচনের ব্যস্ততায় প্রক্রিয়া আটকে আছে। এখনো চূড়ান্ত হয়নি ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো।
সামনে জাতীয় নির্বাচন ঘিরেও পরিস্থিতি অনিশ্চিত।
ইফতেখার রহমান বলেন, ‘আমরা টার্গেট করছি, ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে বিপিএল হবে। তবে দায়িত্বটা পরবর্তী বোর্ডের। আমরা কিছু কাজ এগিয়ে রেখে যাচ্ছি। পরের বোর্ড এসে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।’
ক্রিকেট ইতিহাসে অন্যতম জনপ্রিয় ও বিখ্যাত আম্পায়ার হ্যারল্ড ‘ডিকি’ বার্ড মারা গেছেন। ৯২ বছর বয়সে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছেন। মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে ইয়র্কশায়ার কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাব তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে।
ইংল্যান্ডের ইয়র্কশায়ারের বার্নসলিতে জন্ম বার্ডের। সেখানকার কাউন্টি দল ইয়র্কশায়ারের হয়ে ১৯৫৬ সালে ব্যাটসম্যান হিসেবে ক্রিকেট ক্যারিয়ার শুরু করেন তিনি। ২০১৪ সালে ইয়র্কশায়ারের সভাপতিও হন। ক্লাবটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে করা পোস্টে বার্ডের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে। ইয়র্কশায়ার ক্লাব শোকবার্তায় জানিয়েছে, ‘ডিকি বার্ড শুধু একজন আম্পায়ার নন, তিনি ছিলেন ক্রিকেটের এক অনন্য চরিত্র। তার সততা, রসবোধ আর খেলাধুলার প্রতি নিবেদন তাকে ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা ব্যক্তিত্বে পরিণত করেছে। ইয়র্কশায়ার পরিবারের সকলেই তাকে গভীরভাবে স্মরণ করবে।’
১৯৭৩ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আম্পায়ারিং করেছেন বার্ড। এ সময়ে ৬৬টি টেস্ট ও ৬৯টি ওয়ানডে ম্যাচ পরিচালনা করেন তিনি। এর মধ্যে তিনটি বিশ্বকাপ ফাইনালও ছিল তার দায়িত্বে। খেলোয়াড় ও দর্শকদের কাছে সৎ, রসিক ও স্বতন্ত্র আম্পায়ার হিসেবে তিনি সমানভাবে সমাদৃত ছিলেন। ক্রিকেটে অসামান্য অবদানের জন্য ১৯৮৬ সালে ‘এমবিই’ ও ২০১২ সালে ‘ওবিই’ সম্মান পান তিনি।
অবসর ভেঙে আবারও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার ঘোষণা দিয়েছেন কুইন্টন ডি কক। আগামী মাসে পাকিস্তান সফরের টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডে সিরিজের জন্য এই উইকেটরক্ষক ব্যাটারকে স্কোয়াডে অন্তর্ভুক্ত করেছে ক্রিকেট দক্ষিণ আফ্রিকা (সিএসএ)।
গত বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলার পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন ডি কক। এর আগে ২০২১ সালে টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নেন তিনি। আর ২০২৩ বিশ্বকাপের পর ওয়ানডে ক্রিকেট থেকেও বিদায় জানান।
আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ সামনে রেখে ডি ককের ফেরা দলে বাড়তি আত্মবিশ্বাস জোগাবে বলে মনে করছেন দক্ষিণ আফ্রিকার কোচ শুকরি কনরাড। তিনি বলেন, ‘এসএ২০ লিগ থেকেই আমরা খেলোয়াড়দের প্রস্তুতি দেখব। আর ডি ককের মতো অভিজ্ঞ কেউ দলে ফিরলে, তা আমাদের জন্য বাড়তি সুবিধা।’
দক্ষিণ আফ্রিকার জার্সিতে ১৫৫ ওয়ানডে, ৯২ টি-টোয়েন্টি ও ৫৪ টেস্ট খেলেছেন ডি কক। জাতীয় দল থেকে বিদায় নিলেও ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলোতে তিনি ছিলেন নিয়মিত মুখ। এ বছর খেলেছেন এসএ-২০, আইপিএল, মেজর লিগ ক্রিকেট এবং ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগে।
শ্রীলঙ্কায় চলমান সাফ অনূর্ধ্ব-১৭ টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ। সেই সঙ্গে চীনের লিজাং শহরে তিয়ানইউ লিওফাং আমন্ত্রিত টুর্নামেন্টে খেলছে বাফুফে একাডেমির আরেকটি অনূর্ধ্ব-১৭ দল। প্রতিযোগিতার প্রথম ম্যাচেই গোলের ঝড় তুলে বড় জয় নিয়ে নিজেদের সামর্থ্য জানান দিল কিশোররা।
গত রোববার গ্রুপ পর্বের ম্যাচে সেনইয়াং অনূর্ধ্ব-১৭ দলকে ৪-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে বাফুফে একাডেমি দলটি। ৮০ মিনিটের ম্যাচে প্রথমার্ধেই আশিকের গোলে লিড নেয় বাংলাদেশ। বিরতির পর আরও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে তারা। ৫৪ মিনিটে তাহসান গোল করে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন। এর পরের মিনিটেই আশিক নিজের দ্বিতীয় গোল করেন। ৫৯ মিনিটে হেদায়েতের গোল দলের বড় জয় নিশ্চিত করে। চীন-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তিকে কেন্দ্র করে আয়োজন করা হচ্ছে নানা ক্রীড়া কার্যক্রম। গেল পরশু ঢাকায়ে জাতীয় স্টেডিয়ামে চীনের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের একটি নারী দল বাংলাদেশ নারী ফুটবল একাডেমির সঙ্গে প্রীতি ম্যাচ খেলেছে। একই উদ্যোগের ধারাবাহিকতায় চীনের এই আমন্ত্রিত টুর্নামেন্টে খেলছে বাফুফে একাডেমি দল।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নির্বাচনে জেলা ও বিভাগের এডহক কমিটি থেকে কাউন্সিলর চেয়ে বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুলের চিঠির কার্যক্রম স্থগিত করে হাইকোর্ট। হাইকোর্টের সেই আদেশ স্থগিত করেছেন চেম্বার আদালত।
গত রোববার হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের শুনানি নিয়ে চেম্বার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব এ আদেশ দেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল আরশাদুর রউফ। বিসিবির আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহিন এম রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে, বিসিবি নির্বাচনে জেলা ও বিভাগের এডহক কমিটি থেকে কাউন্সিলর চেয়ে বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুলের চিঠির কার্যক্রম স্থগিত করেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে বিসিবি নির্বাচনে জেলা ও বিভাগের এডহক কমিটি থেকে কাউন্সিলর চেয়ে বিসিবি সভাপতির চিঠি কেন অবৈধ নয়, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি বিশ্বজিৎ দেবনাথের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালত রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর বিসিবি নির্বাচনে জেলা ও বিভাগের এডহক কমিটি থেকে কাউন্সিলর চেয়ে চিঠি দেন বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল।
চিঠিতে বলা হয়, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ কর্তৃক অনুমোদিত বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের গঠনতন্ত্র (২০২৪ সালে সংশোধিত) অনুযায়ী একটি সাধারণ পরিষদ গঠন এবং পরিচালনা পরিষদ নির্বাচন-২০২৫ অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সাধারণ পরিষদে বিভিন্ন বিভাগীয় ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার (ক্যাটাগরী-১) ‘কাউন্সিলরের’ নাম মনোনয়নের জন্য বোর্ড কর্তৃক সূত্রে উল্লিখিত গত ১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ তারিখ রেজিস্ট্রার্ড ডাকযোগে বিজ্ঞপ্তি এবং গত ২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ তারিখে কুরিয়ারযোগে একটি পত্র, কাউন্সিলর মনোনয়ন মূল ফরম এবং গঠনতন্ত্রের কপি বিভাগীয়/জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি/আহ্বায়ক বরাবর প্রেরণ করা হয়েছে। পরবর্তীতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকেও গত ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ তারিখে বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসককে কাউন্সিলর মনোনয়ন প্রদানের ক্ষেত্রে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ কর্তৃক অনুমোদিত বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের গঠনতন্ত্র (২০২৪ সালে সংশোধিতের) আওতায় বিশেষ করে অনুচ্ছেদ ৯.১ এর (ক) এবং (খ) আবশ্যিকভাবে অনুসরণের জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
প্রথম বাংলাদেশি নারী আম্পায়ার হিসেবে ক্রিকেট বিশ্বকাপে দায়িত্ব নিয়ে ইতিহাস গড়তে যাচ্ছেন জেসি। নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপে ৯ ম্যাচে আম্পায়ারিং করবেন বাংলাদেশের সাথিরা জাকির জেসি। ভারতে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর শুরু হবে ৮ দলের এই টুর্নামেন্ট। এবারের বিশ্বকাপে সব ম্যাচেই আম্পায়ারিং করবেন নারী অফিসিয়ালরা। জেসিসহ ১৪ জন নারী আম্পায়ার পরিচালনা করবেন বিশ্বকাপের ৩১ ম্যাচ। জেসি ৫ ম্যাচে থাকবেন অনফিল্ড আম্পায়ার। আর ২টি করে ম্যাচে টিভি আম্পায়ার এবং চতুর্থ আম্পায়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন তিনি। আপাতত প্রাথমিক পর্বের ম্যাচগুলোর আম্পায়ারদের তালিকা প্রকাশ করেছে আইসিসি। সেমিফাইনাল ও ফাইনালের আম্পায়ারদের নাম পরে জানানো হবে।
আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর গুয়াহাটিতে ভারত-শ্রীলঙ্কার মধ্যকার বিশ্বকাপের পর্দা উঠবে। এই ম্যাচে চতুর্থ আম্পায়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন জেসি। মাঠের আম্পায়ার হিসেবে পাঁচ ম্যাচে আম্পায়ারিং করবে তিনি।
গুয়াহাটিতে আগামী ৩ অক্টোবর ইংল্যান্ড-দক্ষিণ আফ্রিকা, ৬ অক্টোবর ইন্দোরে নিউজিল্যান্ড-দক্ষিণ আফ্রিকা, ১৫ অক্টোবর কলম্বোতে ইংল্যান্ড-পাকিস্তান ও ২৬ অক্টোবর বিশাখাপত্তনমে ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ড লড়াইয়ে মাঠে থাকবেন জেসি। উদ্বোধনী ম্যাচের পর ১১ অক্টোবর কলম্বোতে শ্রীলঙ্কা-ইংল্যান্ড ম্যাচে চতুর্থ আম্পায়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন তিনি। আর টিভি আম্পায়ারের ভূমিকায় তাকে দেখা যাবে ১৯ অক্টোবর ইন্দোরে ভারত-ইংল্যান্ড ও ২৩ অক্টোবর মুম্বাইয়ে ভারত-নিউজিল্যান্ড লড়াইয়ে। গত বছর আইসিসি ডেভেলপমেন্ট প্যানেলে আম্পায়ার হিসেবে তালিকাভুক্ত জেসি। এরপর নারী এশিয়া কাপ, অনূর্ধ্ব-১৯ নারী এশিয়া কাপ ও অনূর্ধ্ব-১৯ নারী বিশ্বকাপে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। কিছুদিন আগে বাংলাদেশের প্রথম নারী আম্পায়ার হিসেবে পুরুষদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও ম্যাচ পরিচালনা করেছেন। এবার বিশ্বকাপে আম্পায়ারিং করে আরেকটি ইতিহাসে ‘প্রথম’ হতে যাচ্ছেন এই আম্পায়ার। বাংলাদেশের হয়ে একটি টি-টোয়েন্টি ও দুটি ওয়ানডে খেলেছেন জেসি। ২০১৩ সালে শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা জেসি খেলোয়াড়ি ক্যারিয়ার ছাড়ার পরই আম্পায়ারিং শুরু করেন। এরই মধ্যে ঢাকা প্রিমিয়ার লীগে ছেলেদের টুর্নামেন্টে বড় ম্যাচেও আম্পায়ারিং করেছেন তিনি।
আগামী সেপ্টেম্বর-নভেম্বরে ভারত ও শ্রীলঙ্কায় যৌথভাবে অনুষ্ঠিত হবে নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপের ১৩তম আসর। টুর্নামেন্টে ৩৩ দিনে মোট ৩১টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে বাংলাদেশসহ মোট আটটি দল বিশ্বসেরার মুকুট জয়ের লড়াইয়ে নামবে।
অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের নারী দল মুখোমুখি হয় এক ওয়ানডে ম্যাচে। ম্যাচটি শুধু জয়-পরাজয়ের জন্য নয়, বরং ছিল নিখাদ ব্যাটিং বিনোদনের। অস্ট্রেলিয়ার মেয়েরা ৪৩ রানের ব্যবধানে জয় পেলেও, ক্রিকেটপ্রেমীদের দৃষ্টি আটকে রেখেছে দুই দলের দারুণ ব্যাটিং।
অস্ট্রেলিয়া আগে ব্যাট করে ৪১২ রান সংগ্রহ করে। ভারতের মেয়েরাও জবাবে দারুণ লড়াই দেখায় এবং ৩৬৯ রানে অলআউট হয়। ফলে দুই দল মিলিয়ে মোট রান হয়েছে ৭৮১, যা নারী ওয়ানডেতে এক ম্যাচে সর্বোচ্চ।
ভারতের বিপক্ষে ৪১২ রানের ইনিংসটি অস্ট্রেলিয়ার মেয়েদের ওয়ানডেতে যৌথভাবে সর্বোচ্চ ইনিংস। ১৯৯৭ সালের বিশ্বকাপে ডেনমার্কের বিপক্ষে তারা সমান রান করেছিল। ম্যাচে মোট ৯৯টি চার ও ১২টি ছক্কা হয়েছে, অর্থাৎ দর্শকরা এক ম্যাচে ১১১টি বাউন্ডারি দেখেছেন। এটি নারী ওয়ানডেতে প্রথম বারের মতো বাউন্ডারির সেঞ্চুরি।
এই ম্যাচে নারী ওয়ানডেতে প্রথমবার ভারত ৪০০ রান হজম করেছে। এর আগে তারা অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৩৭১ রান হজম করেছিল। রান তাড়ায় সব দল মিলিয়ে ভারতের ৩৬৯ রানের ইনিংস এখন সর্বোচ্চ। আগের সর্বোচ্চ ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার, যা গত বছর বেঙ্গালুরুতে ভারতের ৩২৫ রানের জবাবে ৩২১ রান।
কথা খুব কম বলেন। মৃদুভাষী মোস্তাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের কাছেও আরাধ্য। যে কয়েকবার তিনি তাদের মুখোমুখি হয়েছেন- তার কাছে যাওয়া প্রায় সব প্রশ্নেরই উত্তর ছিল ছোট। কখনো এক বাক্যে, কখনো এক-দুই শব্দেই থমকে গেছেন মোস্তাফিজ।
অথচ জাতীয় দলে তার সতীর্থ কাউকে জিজ্ঞেস করে দেখুন, তাদের দলের সবচেয়ে বেশি মজা করেন কে? সবার তালিকারই ওপরের একটা জায়গা থাকবে মোস্তাফিজের জন্য। ক্রিকেটারদের মুখের সেই কথা বিশ্বাস করা কঠিনই হওয়ার কথা বাইরের অন্যদের জন্য।
তবে একটা দৃশ্যের বর্ণনায় হয়তো কিছুটা বোঝানো যাবে মাঠের বাইরের মোস্তাফিজকে।
আরও দিন তিনেক আগে আবুধাবি থেকে দুবাইয়ে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা। সবার লাগেজ গুছিয়ে তারা তোলে দিয়েছিলেন টিম বাসে। মোস্তাফিজ এলেন শেষের দিকে, এসে হোটেলের গেটে নয়- তিনি ছুটে গেলেন পেস বোলিং কোচ টেইটের দিকে।
মোস্তাফিজ তার লাগেজটা একবার টেইটের গা ছুঁইয়ে দেন, তিনি তাকালেই আবার সরিয়ে নেন। মিনিট কয়েকের সেই দুষ্টুমিতে দুজনের কারও মুখেই কথা নেই, তবে মুখে ছিল চওড়া হাসি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষের ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনে এসে টেইট বলে গেছেন, এটাই নাকি তার কাজ।
‘এটা’ মানে মোস্তাফিজকে খুশি রাখা- তাতে দলের মঙ্গল বলে মনে করেন অস্ট্রেলিয়ার সাবেক এই পেসার। টেইটের মুখে কথাটা ছিল এমন, ‘আমার কাজ হচ্ছে তাকে খুশি ও আত্মবিশ্বাসী রাখা। বাকিটা সে নিজেই করে ফেলবে।’
সেই কাজটা মোস্তাফিজ কতটা ভালো করতে পারেন, তা দেখা গেছে এক দিন পরই। গত শনিবার রাতে দুবাইয়ে এশিয়া কাপের সুপার ফোরের ম্যাচে তাসকিন আহমেদ শ্রীলঙ্কার পাওয়ারপ্লেতে একটা উইকেট নিতে পেরেছিলেন বটে, কিন্তু ৬ ওভারে শ্রীলঙ্কা তুলে ফেলেছিল ৫৩ রান।
তখন দল চাপে। অধিনায়ক লিটন দাস বোলিংয়ে নিয়ে আসেন মোস্তাফিজকে। ৩ রান দিয়ে ওভারটা তিনি শেষ করেন। পরের ওভারে এসে মেহেদী তুলে নেন পাওয়ারপ্লেজুড়ে আক্রমণাত্মক থাকা কুশল মেন্ডিসের উইকেট।
দলের দরকারের সময়ে উইকেট এনে দিয়েছেন মোস্তাফিজ। গত শনিবার দুবাইয়ে এশিয়া কাপের ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দলের দরকারের সময়ে উইকেট এনে দিয়েছেন মোস্তাফিজ। গত শনিবার দুবাইয়ে এশিয়া কাপের ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এসিসি ১৪তম ওভার। উইকেটে থিতু হয়ে গেছে দাসুন শানাকা আর কুশল পেরেরার জুটি। বোলিংয়ে আবার এলেন মোস্তাফিজ। তৃতীয় বলে চার হজম করলেন। অফ স্টাম্পের বাইরে নিচু হওয়া পরের বলটাই কুশল পেরেরার ব্যাট ছুঁয়ে চলে যায় লিটন দাসের হাতে। ভাঙল জমে যাওয়া ২৭ বলে ৩২ রানের জুটি।
১৭তম ওভার। ততক্ষণে শানাকা বিধ্বংসী হয়ে গেছেন। তাকে চমৎকার সঙ্গ দিচ্ছেন লঙ্কান অধিনায়ক চারিত আসালাঙ্কা। বাংলাদেশ দল আবারও চাপে। আবার হাজির মোস্তাফিজ। প্রথম চার বলে বাউন্ডারি এলো না। পঞ্চম বলে ক্যাচ তুলে দিলেন শানাকা- কিন্তু ধরতে পারলে তো! কোনো বাউন্ডারি হজম না করেই মোস্তাফিজ শেষ করলেন ওভারটা।
এক ওভার পর আবার হাজির মোস্তাফিজ। তিনি ওভারটা শুরু করলেন এমন একটা পরিস্থিতিতে, যখন আগের দুটি বলেই ছক্কা খেয়েছেন শরীফুল ইসলাম। এবারও দল চাপে। শেষ দিকে রান বাড়ার তাড়া ও উইকেট- দুটিই আছে শ্রীলঙ্কার হাতে।
প্রথম বলে ক্যাচ ছাড়লেন হৃদয়, তবে বলটাতে রান আউট হলেন আসালাঙ্কা। চতুর্থটিতে ক্যাচ দিলেন কামিন্দু মেন্ডিস, শেষটিতে ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গাও। সব মিলিয়ে ওভার থেকে এল ৫ রান। আবার ত্রাতা মোস্তাফিজ। শ্রীলঙ্কা ২০ ওভারে ১৬৮ রান তুললেও চার ওভারে মোস্তাফিজ ২০ রান দিয়ে পেলেন ৩ উইকেট। বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত রানটা ৪ উইকেট আর ১ বল হাতে রেখে জিতেছে।
এ তো শুধু গত শনিবারের গল্প। মোস্তাফিজ বাংলাদেশের জন্য ত্রাতা হয়েছেন বারবারই। ডেথ ওভার, মানে ইনিংসের শেষ চার ওভারে তার পরিসংখ্যানটাই দেখুন- আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে এই সময়ে ওভারপ্রতি ৭.৯২ গড়ে রান দিয়েছেন মোস্তাফিজ।
বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি (৫৭) টি-টোয়েন্টি জয়ের সাক্ষীও মোস্তাফিজ। কিন্তু এই ম্যাচগুলোতে তার অবদান কেমন? ওভারপ্রতি ৬.২০ গড়ে রান দিয়ে এই পেসার নিয়েছেন ১০৩ উইকেট। সামগ্রিক এই অবস্থাটা আরও বেশি করে পোক্ত হয়েছে এ বছর এসে।
কীভাবে তা বলার আগে একটা বিশেষ দ্রষ্টব্য দিয়ে রাখা জরুরি- বাংলাদেশ শুধু মোস্তাফিজের জন্যই জিতেনি। তবে তাকে ছাড়া খেলা এ বছর ৮টি-টোয়েন্টির সবগুলোতেই হেরেছে বাংলাদেশ। মোস্তাফিজের খেলা ১১টি-টোয়েন্টির যে একটি হার, তাও এবারের এই এশিয়া কাপেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে।
সুপার ফোরে এসে সেই শ্রীলঙ্কাকে হারানোর জয়ের নায়ক হয়েছেন সাইফ হাসান। তবে সেই পথটা গড়ে দিতে মোস্তাফিজও ইট-বালু দিয়েছেন ঠিকঠাক। তাকে হয়তো সবচেয়ে ভালো ব্যাখ্যা করতে পারবে ম্যাচের শেষে সংবাদ সম্মেলনে বলা সাইফের কথাটাই, ‘তিনি যখনই বল করে, দল একটা সংকটময় পরিস্থিতিতে থাকে। তিনি বিপদের সময় বোলিংয়ে আসেন। বেশির ভাগ সময় ডেলিভারও করে।’
সত্যিই তো, মোস্তাফিজ তো বাংলাদেশের বিপদের বন্ধুই। ত্রাতা হন সংকটের সময়ে। তিনি ‘খুশি’ থাকলে জিতে যায় বাংলাদেশও!