‘মানুষকে বোঝাতেই পারি না, আমরা জিতি বা হারি, পরদিন সূর্য ঠিকই উঠবে…’
একটা ফুটবল ম্যাচকে ঘিরে এত আবেগ, এত কান্নাকাটির কী আছে - বুঝতেই পারেন না আর্জেন্টিনার কোচ লিওনেল স্কালোনি।
ভাই মাউরো স্কালোনি নাকি ভয়ের চোটে গ্রামে চলে গিয়েছেন, যাতে ম্যাচ না দেখতে হয়। সেখান থেকেই কাঁদতে কাঁদতে লিওনেলকে জানিয়েছেন এ কথা। তাতে লিওনেলের বিরক্তি বেড়েছে বই কমেনি।
আরে, একটা ম্যাচই তো! এর জন্য জীবন-যৌবন শ্রাদ্ধ করার দরকার আছে কোনো? ফুটবল কী জীবনের চেয়ে বড় কিছু? কাঁদতে কেন হবে?
অবশ্য স্কালোনি মানতে না চাইলেও, ম্যাচটার গুরুত্ব ছিল আকাশ-সমান। আগের ম্যাচেই সৌদি আরবের বিপক্ষে হেরেছে আর্জেন্টিনা। মেক্সিকোর বিপক্ষে হারলে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিশ্চিত। নিশ্চিত হবে বিশ্বমঞ্চ থেকে আরেকবার লিওনেল মেসির ফেরত যাওয়া। একদম চূড়ান্তবারের মতো।
সেটা হতে দেননি মেসি। আর্জেন্টিনাকে জিতিয়েই মাঠ ছেড়েছেন। যেভাবে জিতিয়েছেন, ওই সাহসিকতা দেখে আবেগের বাঁধ ভেঙেছে ‘আইডল’ পাবলো আইমারের। ডাগআউটে বসেই কেঁদেছেন। যে কান্না স্বস্তির। আনন্দের।
সহকারী আইমারের কান্না দেখেও বিরক্ত স্কালোনি। ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনেও জানালেন সে কথা, ‘আমাদের মাথায় রাখতে হবে এটা শুধুই একটা ফুটবল ম্যাচ। এরপর জীবন চলবে জীবনের মতো। আমরা জিতি বা হারি, পরদিন সূর্য ঠিকই উঠবে…’
নির্মোহ, ভাবলেশহীন কণ্ঠস্বর। যাতে আবেগ নেই বিন্দুমাত্রও। তবে স্কালোনি কি সবসময়ই এমন আবেগহীন ছিলেন? ফুটবল ম্যাচের জয়-পরাজয় কি কখনই তাঁর ভেতরের সত্ত্বাকে নাড়িয়ে দিত না?
দিত। যার একটা প্রমাণ পাওয়া যায় ওয়েস্ট হ্যাম-সতীর্থদের কথায়। সেবার সদ্যই ইংল্যান্ডে পা রেখেছেন স্কালোনি, দেপোর্তিভো লা করুনিয়া থেকে ছয় মাসের ধারে ওয়েস্ট হ্যামে খেলার জন্য। ওই বছর এফএ কাপের ফাইনালে ওঠে ওয়েস্টহ্যাম, কাপের বেশিরভাগ ম্যাচে বেশ ভালোই খেলছিলেন রাইটব্যাক স্কালোনি। লিভারপুলের বিপক্ষে ফাইনালেও তাঁর ওপর ভরসা রাখলেন কোচ অ্যালান পার্ড্যু।
লাভ হয়নি। ‘স্টিভেন জেরার্ড ফাইনাল’ নামে পরিচিত ম্যাচটায় লিভারপুল অধিনায়ক শেষ মুহূর্তে অবিশ্বাস্য এক গোল করে ম্যাচটা শুটআউটে নিয়ে যান। শুটআউট জিতে শিরোপাটা নিজের করে নেয় অল রেডরা। ওই শেষ মূহুর্তের গোলটা হত না, যদি স্কালোনি একটা ছোট্ট ভুল না করে বসতেন। যে ভুলের সুবাদে দুই-একজন ঘুরে বল পেয়ে যান জেরার্ড, সমতায় ফেরে লিভারপুল। আজীবন ওয়েস্ট হ্যাম সতীর্থরা স্কালোনিকে শূলে চড়িয়েছেন এ কারণে। ম্যাচ শেষে অঝোরে কেঁদেছিলেন স্কালোনি, সবাই ভুলে গিয়েছিলেন স্কালোনি ওদিন মাপা ক্রস না দিলে প্রথম গোলটাই হয় না ওয়েস্ট হ্যামের। সে কান্নায় লাভ হয়নি। তাঁর সঙ্গে চুক্তি পাকা করেনি ওয়েস্ট হ্যাম। ধার শেষে ফেরত পাঠিয়েছে দেপোর্তিভোয়।
চুপচাপ সহ্য করেছেন সব অবহেলা, গঞ্জনা। খেলোয়াড়ি জীবন শেষে কোচিংয়ের পাঠটাও নিয়ে রেখেছেন। খেলাটাকে ভালোবাসতেন, যে কারণে এত গঞ্জনার পরও ফুটবল থেকে দূরে থাকতে পারেননি। খেলা ছাড়ার পর পরিবার নিয়ে স্পেনের মায়োর্কায় থাকা শুরু করেন, বাচ্চাদের এক দলে কোচিং করাতেন টুকটাক। অনেকটা হুট করেই হোর্হে সাম্পাওলির কোচিং দলে সুযোগ ২০১৮ বিশ্বকাপের আগে আগে।
সেবার পারেননি সাম্পাওলি। উদ্ভাবনী কৌশলের ছোঁয়ায় চিলিকে কোপা আমেরিকার স্বাদ দেওয়া এই কোচ নিজ দেশের দায়িত্ব পেয়েই কেন যেন ভড়কে গেলেন। চড়া মূল্য চোকালেন মেসিরা। বিশ্বকাপে সাম্পাওলি-ব্যর্থতার পর দিয়েগো সিমিওনে, মরিসিও পচেত্তিনো, রিকার্দো গারেকা, এদুয়ার্দো বেরিৎসো থেকে শুরু করে মার্সেলো গ্যাশার্দো - কেউই আর্জেন্টিনার দায়িত্ব নিতে চাইলেন না। অবশ্য তাঁদের মতো ‘হাই-প্রোফাইল’ কোচ নিয়োগ দেওয়ার টাকাও ছিল না আর্জেন্টাইন ফেডারেশনের। এখন উপায়?
শেষমেশ আনকোরা স্কালোনির কাঁধে মেসিদের টেনে তোলার দায়িত্ব। দেশজুড়ে শুরু হলো বিদ্রোহ। দেশের অধিকাংশ মানুষই যাকে চেনে না, চিনলেও গুরুত্ব দেয় না - এমন একজনকে জাতীয় দলের দায়িত্ব দেওয়া কতটুকু যুক্তিসঙ্গত - প্রশ্ন উঠলই। তোপ দাগলেন খোদ দিয়েগো মারাদোনা, ‘ও ভালো ছেলে, কিন্তু ও কোচিং কী করাবে? ওকে তো ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করতে দিলেও পারবে ন!’
স্কালোনি চুপচাপ শুনে গেলেন। সমালোচনার জবাব মুখের কথা হয়ে নয়, বরং খেলার কৌশলে বাঙময় হয়ে উঠল। কেউ বিশ্বাস না করলেও, আর্জেন্টিনাকে আটাত্তরের বিশ্বকাপ জেতানো কোচ সেজারে লুই মেনোত্তি ঠিকই বুঝেছিলেন, স্কালোনি ছেলেটার মধ্যে কিছু একটা আছে। এমন কিছু, যা মেসিদের এনে দিতে পারে ওই অধরা সাফল্যের স্বাদ।
ভারপ্রাপ্ত কোচের দায়িত্ব পেয়ে দুই ম্যাচ দুই ম্যাচ করে আর্জেন্টিনাকে পথ দেখাতে শুরু করলেন স্কালোনি। মেসিরা ধীরে ধীরে খেলার নিজস্ব ‘স্টাইল’ খুঁজে পেলেন, যা সাম্পাওলির সময়ে একরকম উধাওই ছিল বলা চলে। স্কালোনি বুঝলেন, পুরো স্কোয়াডের খোলনলচে বদলাতে হবে। বছরের পর বছর ধরে আর্জেন্টিনাকে শিরোপাহীনতার আগলে বেঁধে রাখা বয়স্ক তারকাদের সরিয়ে দলকে শোনাতে হবে তারুণ্যের কলতান। গাব্রিয়েল মের্কাদো, লুকাস বিলিয়া, ফেদেরিকো ফাজিও, এভার বানেগা, গনসালো হিগুয়েইন, এনসো পেরেস, মার্কোস রোহো, ফ্রাঙ্কো আরমানিদের জায়গায় একে একে মূল একাদশে সুযোগ পেতে শুরু করলেন জিওভান্নি লো সেলসো, লিয়ান্দ্রো পারেদেস, ক্রিস্তিয়ান রোমেরো, এজেকিয়েল পালাসিওস, অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার, এমিলিয়ানো মার্তিনেস, লাওতারো মার্তিনেস, লিসান্দ্রো মার্তিনেস, নিকোলাস গনসালেস, হুলিয়ান আলভারেস, হোয়াকিন কোরেয়া, রদ্রিগো দি পল, নাহুয়েল মলিনা, গনসালো মন্তিয়েলরা। দল আরও ঐক্যবদ্ধ হলো। সফল একটা দল গঠনের জন্য স্কোয়াডের প্রত্যেক সদস্যের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক উন্নয়নের বিকল্প নেই। স্কালোনি সেটাই করলেন। পাওলো দিবালার মতো খেলোয়াড় দলে এখনও কেন সুযোগ পাচ্ছেন না, সরব হল মিডিয়া। এক সাংবাদিক তো স্কালোনিকে পেয়ে সরাসরি ‘আপনার সঙ্গে দিবালার মনোমালিন্য আছে কি না,’ - জিজ্ঞেসই করে বসলেন!
পাশে হেঁটে যাওয়া দিবালাকে ডাকলেন সাংবাদিকের সামনেই, জিজ্ঞেস করলেন, ‘এই, তোমার সঙ্গে নাকি আমার শত্রুতা?’ দিবালার চেহারা দেখে মনে হলো, অনেক মজার একটা কৌতুক বলেছেন কোচ! দিবালার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন, তাতে যা বোঝার বোঝা হয়ে গেল সেই সাংবাদিকের!
২০১৯ কোপা আমেরিকার সেমিফাইনালে উঠল আর্জেন্টিনা। শিরোপা না জিতলেও, দলটা বোঝাল, ঠিক পথেই আছে তারা। দরকার একটু ধৈর্য্যর, অপেক্ষার। উন্নতি পূর্ণতা পেল কোপা-ফিনালিসিমা জয়ে, ২৮ বছরের ট্রফিখরা ঘোচানোয়।
কাজ তখনও শেষ হয়নি, স্কালোনি জানতেন। বিশ্বকাপ যে ডাকছে হাতছানি দিয়ে! পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকলেও কৌশলগত দিক দিয়ে স্কালোনি যে কতটা দুর্দান্ত, আগে আর্জেন্টাইন সমর্থকেরা বুঝেছিলেন। কাতার বিশ্বকাপে বুঝল সবাই। প্রতি ম্যাচে নিজের ক্ষুরধার মস্তিষ্কের প্রমাণ দিয়ে গেলেন।
লো সেলসো, দি পল আর পারেদেসকে নিয়ে গড়া পরীক্ষিত মিডফিল্ড ধাক্কা খায় লো সেলসোর চোটে। একই পথে হাঁটেন নিকোলাস গনসালেসও। বিশ্বকাপের আগেই আস্থার দুই সৈনিক হারিয়ে চিন্তার ভাঁজ স্কালোনির কপালে। কী হবে এখন?
প্রথম ম্যাচে মাঝমাঠে লো সেলসোর অভাব পূরণ করতে চাইলেন আজীবন ফরোয়ার্ড হিসেবে খেলা আলেহান্দ্রো গোমেসকে দিয়ে। লাভ হল না। মেসির জায়গায় দি পল উঠে যাচ্ছিলেন বারবার, মাঝমাঠে খেলার অনভিজ্ঞতার কারণে বাঁ দিকে উঠে যাচ্ছিলেন গোমেসও। চোটে ভোগা মার্কাস আকুনিয়ার জায়গায় খেলা নিকোলাস তালিয়াফিকোর সঙ্গে বাঁ উইংয়ের রসায়নটা একদমই জমছিল না গোমেসের। ফলে মাঝমাঠে একা পড়ে যাচ্ছিলেন পারেদেস। আবার পারেদেস উঠে গেলে মাঝমাঠে একে পড়ে যাচ্ছিলেন হয় দি পল, নয়তো খোদ মেসি। রক্ষণের সঙ্গে আক্রমণের সংযোগই হচ্ছিল না। সৌদি আরবের একাধিক খেলোয়াড় মাঝমাঠের দখল নিয়ে নিয়েছিলেন। একাধিক ফলাফল? এশিয়ার দেশটার অবিস্মরণীয় বিজয়গাথা।
মেক্সিকোর বিপক্ষে ওই ভুল শোধরালেন পারেদেসের জায়গায় গিদো রদ্রিগেস (পরে এনসো ফের্নান্দেস), আর গোমেসের জায়গায় অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টারকে নামিয়ে। দি পলকে সাফ সাফ জানিয়ে দিলেন, কোনোভাবেই যেন মেসির খেলার জায়গাগুলোতে উঠে গিয়ে অধিনায়কের খেলায় বিঘ্ন না ঘটান। দি পল বুঝলেন সেটা। ডান উইং আর হাফস্পেসগুলো মিলিয়ে মেসির যেসব জায়গায় বিচরণ, সেসব জায়গায় বাড়তি রক্ষণ নিরাপত্তার দায়িত্ব নিলেন দি পল। মাঝমাঠ এবার বাড়তি নিয়ন্ত্রণ পেল। ফলাফল? মেসি-এনসোর গোলে স্বস্তির জয় আর্জেন্টিনার।
ততদিনে মূল স্ট্রাইকার লাওতারো মার্তিনেস স্কালোনিকে বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন, মেসির রক্ষণচেরা বলগুলো সময়মতো সামনে দৌড়ে ধরার মতো কাজটা ঠিকঠাক করতে পারছেন না, বারবার পড়ছেন অফসাইডের খড়গে। ব্যস, একাদশে প্রবেশ হুলিয়ান আলভারেসের। পোল্যান্ডের রক্ষণ সেভাবে ওপরে উঠে প্রেস করে না, জানতেন স্কালোনি। আগের দুই ম্যাচের ৪-৪-২ ছক বদলে আক্রমণভাগে একজন খেলোয়াড় বাড়িয়ে ৪-৩-৩ ছকে দলকে খেলাতে শুরু করলেন। যা আক্রমণে ৩-১-৬ হয়ে যাচ্ছিল, দুই সেন্টারব্যাকের পাশে তৃতীয় সেন্টারব্যাক হিসেবে খেলা শুরু করলেন রাইটব্যাক (নাহুয়েল মলিনা, উনি না থাকলে গনসালো মন্তিয়েল), তিনজনের একটু ওপরে একক রক্ষণাত্মক মিডফিল্ডার হিসেবে এনসো ফের্নান্দেস - আর বাকি সবাই ওপরে। আক্রমণে এই অতি-আগ্রাসী আর্জেন্টিনাকে সামলাতে পারেনি পোল্যান্ড, আলভারেস ও ম্যাক অ্যালিস্টারের গোলে হেরে বসে ২-০ স্কোরলাইনে।
দ্বিতীয় রাউন্ডের প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়ার খেলার ধরণ বেশ শরীরনির্ভর, বুঝে আবারও মাঝমাঠে একজন বাড়িয়ে ছকটা ৪-৪-২ করে ফেলেন স্কালোনি। আগের দুই ম্যাচে পোল্যান্ড আর মেক্সিকো যা ঠিকঠাক করে উঠতে পারেনি, সেটাই করে আর্জেন্টিনাকে চমকে দিল অস্ট্রেলিয়া। নব্বই মিনিট জুড়ে মেসিদের দুর্দান্তভাবে প্রেস করে গেল সকারুরা। অস্ট্রেলিয়ার আঁটসাঁট ৪-৪-২ ছকে মাঝখান দিয়ে আক্রমণভাগে বলই পাঠাতে পারছিল না আর্জেন্টিনা। স্কালোনি বুঝলেন, ম্যাচ বের করে আনতে হলে মেসিকে একটু পেছনে খেলতে হবে, দি পল-ম্যাক অ্যালিস্টার আর ফের্নান্দেসের পাশাপাশি মাঝমাঠের দখল বাড়ানোর জন্য মেসিকেও একটু নিচে নামতে হবে। আর্জেন্টিনার নিদান সে কৌশলেই। মেসি-ম্যাজিকে কোয়ার্টারে আলবিসেলেস্তিরা।
কোয়ার্টারে ইতিহাসের অন্যতম সেরা ম্যানেজার লুই ফন গালের মুখোমুখি স্কালোনি। ৩-৪-১-২ ছকে নেদারল্যান্ডসকে খেলিয়ে এবারও যিনি মুগ্ধ করছিলেন দর্শকদের। তবে ডাচদের তিন সেন্টারব্যাক আর দুই উইংব্যাকভিত্তিক কৌশলের সঙ্গে লড়তে একজন মিডফিল্ডার বসিয়ে বাড়তি একজন সেন্টারব্যাক খেলালে যে সাফল্য আসবে, প্রথম রাউন্ডেই দেখিয়েছিল ইকুয়েডর। একই কাজ করলেন স্কালোনিও। মিডফিল্ডার গোমেসকে বসিয়ে বাড়তি একজন সেন্টারব্যাক (লিসান্দ্রো মার্তিনেস) খেলালেন, দুই ফুলব্যাক মলিনা আর আকুনিয়া উইংব্যাকের স্বাধীনতা নিয়ে দুই ডাচ উইংব্যাক দেনজেল দুমফ্রাইজ আর ডেলেই ব্লিন্ডকে শক্তিহীন করে দিলেন। মেসির পাসে প্রথম গোল করলেন মলিনা, দ্বিতীয় গোলটা এল আকুনিয়ার আনা পেনাল্টিতে।
ব্রাজিলকে হারিয়ে সেমিতে আর্জেন্টিনার সামনে পড়ে ক্রোয়েশিয়া। লুকা মদরিচ, মাতেও কোভাচিচ আর মার্সেলো ব্রোজোভিচ যাদের মাঝমাঠকে বিশ্বকাপেরই অন্যতম সেরা বানিয়েছেন। অতি আক্রমণ করতে গিয়ে ক্রোয়েশিয়ার মাঝমাঠ-শক্তিতে হেলাফেলা করেছিল সেলেসাওরা। স্কালোনি সে ভুল থেকে শিক্ষা নিয়েছেন। ৪-৪-২ ছকে এমন চারজন মিডফিল্ডারকে খেলালেন, যারা আদতে কেউই প্রথাগত উইঙ্গার বা ফরোয়ার্ড নন আনহেল দি মারিয়া বা আলেহান্দ্রো গোমেসের মতো। দি পল, ফের্নান্দেস, পারেদেস ও ম্যাক অ্যালিস্টার একদম মাঝমাঠে আঠার মতো লেগে থাকলেন ক্রোয়েশিয়ার মিডফিল্ডারদের সঙ্গে। আবার প্রথম ম্যাচে মরক্কো দেখিয়েছিল, স্ট্রাইকার ইউসুফ এন-নেসেরি যদি ব্রোজোভিচকে ঠিকঠাক ‘মার্ক’ করতে পারেন, ক্রোয়েশিয়ার মাঝমাঠ আরও হাঁসফাস করতে শুরু করে।
স্কালোনি সেটাও করলেন। স্ট্রাইকার হুলিয়ান আলভারেস প্রায় সময়ই উপরে মেসিকে রেখে নেমে আসছিলেন ব্রোজোভিচ পর্যন্ত। ম্যাচ শুরুর আধঘন্টা পর্যন্ত আর্জেন্টিনার সঙ্গে সমানে-সমান টক্কর দিলেও পেরে ওঠেনি ক্রোয়েশিয়া, হেরে বসে ৩-০ গোলে। ২০১৮ বিশ্বকাপে দুই দলের মধ্যকার ম্যাচের স্কোরলাইন যা ছিল আরকি! শুধু সেবার জিতেছিল ক্রোয়েশিয়া, এবার জয়ীর কলামে আর্জেন্টিনার নাম!
ফাইনালে আসার পথে আর্জেন্টিনার প্রত্যেক প্রতিপক্ষের কিছু না কিছু দুর্বলতা ছিলই, ম্যাচজয়ী কৌশলে যার সুফল নিয়েছেন স্কালোনি। কিন্তু ফাইনালের প্রতিপক্ষ ফ্রান্সের দুর্বলতা কোথায়? ফাইনালে ওঠার আগ পর্যন্ত কোনো ম্যাচেই কৌশলগত সেরকম দুর্বলতা দেখায়নি গতবারের বিশ্বজয়ীরা!
ফ্রান্সের বাঁ পাশে উইঙ্গার কিলিয়ান এমবাপ্পে আর ফুলব্যাক থিও এর্নান্দেস আক্রমণে দুর্দান্ত হলেও, এমবাপ্পে রক্ষণে সাহায্য করতে নিচে নেমে আসেন না, ভাইয়ের চোটের কারণে একাদশে জায়গা পাওয়া থিও-ও রক্ষণে অতটা পটু নন। যে কারণে কোয়ার্টারে ইংল্যান্ড আর সেমিতে মরক্কো - দুই দলই এমবাপ্পে-এর্নান্দেসের পেছনের ফেলে আসা ফাঁকা জায়গাতে আক্রমণ করতে চেয়েছে বেশিরভাগ সময় - ইংল্যান্ড বুকায়ো সাকা-জর্ডান হেন্ডারসনকে দিয়ে, মরক্কো আশরাফ হাকিমি আর হাকিম জিয়েশকে দিয়ে। তবে সে কৌশলও শতভাগ কার্যকরী নয়, না হয় ফ্রান্স ফাইনালে ওঠে কী করে?
ফাইনালে স্কালোনি এমন এক কৌশলের আশ্রয় নিলেন, যা কেউ কল্পনাও করেনি। এমবাপ্পে-থিও এর্নান্দেসের উইং নয়, বরং ফ্রান্সের ডানদিকের উইংয়ে আক্রমণ করার পরিকল্পনা সাজালেন - নিজেদের বাঁ উইং দিয়ে। আর্জেন্টিনার আক্রমণের ডানদিকটা যেহেতু মেসিই নিয়ন্ত্রণ করেন, তাই ওখানে আক্রমণ করার জন্য বাড়তি খেলোয়াড় রাখেননি। খেলোয়াড়ি জীবনে নিজে রাইটব্যাক ছিলেন বলেই কি না, বুঝেছিলেন, বারবার বাঁ দিক থেকে ছুটে আসা একজন গতিশীল উইঙ্গারের মুখোমুখি হওয়ার বিষয়টা ঠিক পছন্দ করবেন না ফ্রান্সের রাইটব্যাক জুলস কুন্দে - যিনি আদতে সেন্টারব্যাক হওয়ার কারণে তুলনামূলকভাবে রক্ষণাত্মক। তার ওপরে কুন্দের ওপরে থাকা উইঙ্গার ওসমান দেম্বেলেও রক্ষণে সাহায্য করেন না একদম। আগের তিন ম্যাচ না খেলা, খেললেও রাইট উইঙ্গার হিসেবে খেলা আনহেল দি মারিয়াকে দিলেন লেফট উইঙ্গারের ভূমিকা। মাঝমাঠ থেকে দি মারিয়াকে ‘উড়তে’ সাহায্য করলেন ওই দিকে খেলা মিডফিল্ডার অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার।
ওই এক কৌশলেই স্তব্ধ ফ্রান্সের কোচ দিদিয়ের দেশোঁ। ৭০ মিনিট ধরে এমবাপ্পের পায়ে বল গেল না সেভাবে, গ্রিজমান মাঝমাঠ নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেন না, অলিভিয়ের জিরু আর্জেন্টিনার ডিবক্সে দাঁড়িয়ে থাকলেন পথহারা পথিকের মতো। ৪০ মিনিটের মধ্যে দুই গোল হজম করার পর জিরু আর দেম্বেলেকে মাঠ থেকে তুলে নিয়ে দেশোঁ প্রকারান্তরে স্বীকার করলেন, স্কালোনির বুদ্ধিতে কুলিয়ে উঠতে পারছেন না। পরে ফ্রান্স ম্যাচে ফিরলেও, তাতে দেশঁর কৌশলের চেয়ে এমবাপ্পে নামক ‘দানবে’র ভূমিকা ছিল ঢের বেশি। শেষমেশ টাইব্রেক লড়াইয়ে ফ্রান্সকে হারিয়ে ৩৬ বছর পর বিশ্বজয় করল আর্জেন্টিনা।
এবার আর নিজের আবেগে বাঁধ দিতে পারলেন না স্কালোনি। মুখে কাঠিন্য এনে নিরাবেগ থাকার চেষ্টা করেছিলেন। কান্নার দমক তাতে আরও বাড়ল। আজীবন পাওয়া সকল লাঞ্ছনা-গঞ্জনা মুক্তোদানার মতো অশ্রুবিন্দু হয়ে ঝরল অবিরত। হাউমাউ কান্নায় বোঝালেন, তিনিও রক্তমাংসের আবেগী মানুষ। ভাই মাউরো স্কালোনি আর পাবলো আইমারের মতো।
আর দশজন আর্জেন্টাইনের মতো।
ইংলিশ চ্যাম্পিয়নশিপ ক্লাব লেস্টার সিটিতে থেমে গেল রুড ফন নিস্টেলরয়ের কোচিং অধ্যায়। হতাশাজনক পারফরম্যান্সের কারণে ‘পারস্পরিক সমঝোতায়’ চুক্তি বাতিল করেছে ক্লাবটি। ফলে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ফুটবলার হামজা চৌধুরীর ক্লাবটি আবারও নতুন কোচের সন্ধানে। ডাচ কিংবদন্তি ফন নিস্টেলরয় মাত্র ২৭ ম্যাচে দায়িত্ব পালন করেন লেস্টারে থেকে। তার অধীনে প্রিমিয়ার লিগ থেকে অবনমন নিশ্চিত হয় ক্লাবটির। সেই সঙ্গে চ্যাম্পিয়নশিপেও খুব একটা উন্নতি করতে পারেনি দলটি। গত বছরের নভেম্বরে স্টিভ কুপারকে বরখাস্ত করে ২০২৭ সাল পর্যন্ত চুক্তিতে নিস্টেলরয়কে দায়িত্ব দিয়েছিল লেস্টার। তখন ক্লাবটি প্রিমিয়ার লিগ টেবিলের ১৬ নম্বরে থাকলেও তার অধীনে পারফরম্যান্স আরও খারাপের দিকে যায়। অবশেষে গত ২০ এপ্রিল লিভারপুলের বিপক্ষে ১-০ গোলে হারের মধ্য দিয়ে লেস্টারের অবনমন নিশ্চিত হয়ে যায়। বিদায়বার্তায় ভ্যান নিস্টেলরয় ক্লাবের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, ‘আমি লেস্টার সিটির খেলোয়াড়, কোচিং স্টাফ, অ্যাকাডেমি ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানাই তাদের পেশাদারিত্ব ও সহযোগিতার জন্য। সমর্থকদের প্রতিও কৃতজ্ঞ তাদের অকুণ্ঠ সমর্থনের জন্য। ক্লাবের ভবিষ্যতের জন্য রইল শুভকামনা।’
নিস্টেলরয়ের অধীনে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে লেস্টার জিতেছে মাত্র ৫ ম্যাচ। এর মধ্যে একটি ছিল এফএ কাপের ম্যাচ কুইন্স পার্ক রেঞ্জার্সের (কিউপিআর) বিপক্ষে, বাকি চারটি চ্যাম্পিয়নশিপে, যার দুটি এসেছে ইতোমধ্যেই অবনমিত সাউথ্যাম্পটন ও ইপ্সউইচ টাউনের বিপক্ষে। নতুন কোচ নিয়োগের দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন ইংলিশ কোচ শন ডাইচ, যিনি বার্নলি ও এভারটনের দায়িত্বে ছিলেন। শেফিল্ড ওয়েডনেসডের বর্তমান কোচ ড্যানি রোলও রয়েছেন এই দৌড়ে।
ক্লাব বিশ্বকাপ থেকে বোকা জুনিয়র্স আগে থেকেই বিদায় নিয়েছিল। ক্ষীণ একটা আশা ছিল তাদেরই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিভারপ্লেটের। তবে সে আশাটাকে বাস্তবতায় রূপ দিতে পারেনি দলটা। ইন্টার মিলানের কাছে ২-০ গোলে হেরে বসেছে তারা। আর তার ফলে বিশ্বকাপ থেকে দলটা বিদায় নিল প্রথম রাউন্ড থেকেই। আর্জেন্টিনা থেকে আসা দুই দলেরই বিদায়ঘণ্টা বেজে গেল তাতে।
ওদিকে ক্লাব বিশ্বকাপে ব্রাজিলের পোয়াবারো চলছেই। আফ্রিকান মামেলোদি সানডাউনসের সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করে ফ্লুমিনেন্স চলে গেছে শেষ ষোলোয়। এর ফলে ব্রাজিলের সব দলই চলে গেছে নকআউটে।
শেষ ষোলোয় যেতে হলে রিভারপ্লেটকে হারাতে হতো ইন্টার মিলানকে। দলটা আগের ম্যাচে মন্তেরের সঙ্গে ড্র করেই বিপদটা বাধিয়েছিল। সে কারণে শেষ ম্যাচটা জিততে হতো তাদেরকে। তা হলে কোনো হিসেব ছাড়াই দ্বিতীয় রাউন্ডে পা রাখতে পারত তারা।
কিন্তু তা আর হয়নি। দলটা বিপদে পড়েছে ম্যাচের ৬৬ মিনিটে। এর আগ পর্যন্ত গোল না পেলেও ইন্টারকে ঠিকই রুখে দিতে পেরেছিল তারা। ৬৬ মিনিটে লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন লুকাস মার্তিনেজ। ১০ জনের দলে পরিণত হয় রিভারপ্লেট। এরপরই কাজটা সহজ হয়ে যায় ইন্টারের। ৭০ মিনিটে গোল করেন ফ্রান্সেসকো পিও এসপোসিতো। যোগ করা সময়ে আলেসান্দ্রো বাস্তোনি গোল করে দলের জয় নিশ্চিত করেন। এরপর লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন গনজালো মন্তিয়েল। ২-০ গোলে হার নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় রিভারপ্লেটকে। দিনের অন্য ম্যাচে মন্তেরে ৪-০ গোলে হারিয়েছে উরাওয়া রেড ডায়মন্ডসকে। তাতেই ইন্টার আর উরাওয়া চলে যায় শেষ ষোলোয়, বিদায় নেয় রিভারপ্লেট।
ওদিকে ব্রাজিলের দল ফ্লুমিনেন্স রুখে দিয়েছে মামেলোদি সানডাউনসকে। বলের দখল থেকে শুরু করে লক্ষ্যে শট, সব কিছুতে আফ্রিকান মামেলোদির আধিপত্য ছিল ম্যাচে। তবে এতকিছুর পরও ব্রাজিলের দলটা মাথা নোয়ায়নি। দারুণভাবে রুখে দিয়েছে প্রতিপক্ষকে। এফ গ্রুপ থেকে দ্বিতীয় সেরা দল হয়ে তাই তারা চলে গেছে শেষ ষোলোয়। সেরা দল হয়েছে বরুসিয়া ডর্টমুন্ড, শেষ ম্যাচে তারা হারিয়েছে উলসান হুন্দাইকে।
ফ্লুমিনেন্সের এই ম্যাচের পর ব্রাজিলের সব দলের শেষ ষোলো নিশ্চিত হয়ে গেল। পালমেইরাস, বোতাফোগো আর ফ্লামেঙ্গো আগেই নক আউটের টিকিট কেটেছিল।
শেষ ষোলোয় চার দল আছে ব্রাজিলের। শেষ আটেও যে একটা থাকবে, তাও নিশ্চিত হয়ে গেছে। নক আউটের প্রথম ম্যাচেই মুখোমুখি হবে পালমেইরাস আর বোতাফোগো। ওদিকে ফ্লামেঙ্গো খেলবে বায়ার্ন মিউনিখের বিপক্ষে। ফ্লুমিনেন্স প্রতিপক্ষ হিসেবে পেয়েছে ইন্টার মিলানকে।
প্রায় প্রতিটি খেলায় খেলোয়াড়দের উৎসাহ দিতে গ্যালারিতে হাজির হন ভক্তরা। প্রিয় খেলোয়াড়কে ঘিরে বিশেষ কিছু বার্তা লিখে প্ল্যাকার্ড হাতে দেখা যায় ভক্তদের। সেই প্ল্যাকার্ডে পছন্দের খেলোয়াড়কে বিয়ের প্রস্তাব দিতে দেখা যায় হরহামেশায়। এমনই এক ঘটনা ঘটেছে চলমান ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপে।
লিওনেল মেসিকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছেন এক নারী। যা রীতিমতো ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ঘটনাটি ঘটে গত পরশু মায়ামির হার্ড রক স্টেডিয়ামে পালমেইরাসের বিপক্ষে ইন্টার মায়ামির ম্যাচে। ২-২ গোলে ড্র করে মাঠ ছাড়ে মেসির মায়ামি।
এই ম্যাচে গ্যালারিতে ৯৮ বছর বয়সি এক বৃদ্ধা মেসিকে প্ল্যাকার্ডে বিয়ের প্রস্তাব দেন। প্ল্যাকার্ডে লিখে আনেন, ‘মেসি উইল ইউ ম্যারি মি?’ ম্যাচের বিরতির সময় মাঠে ছিলেন মেসি। তখন সেই বৃদ্ধা গ্যালারি থেকে মেসির প্রতি প্ল্যাকার্ডটি উঁচিয়ে ধরে তাকে ডেকেছেন এবং বিয়ের কথাও বলেছেন। আর্জেন্টাইন কিংবদন্তিও দূর থেকে ইতিবাচকভাবে মিষ্টি হাসিতে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে হাতের ইশারায় তাকে প্ল্যাকার্ডটি নামিয়ে নেওয়ার ইঙ্গিত করেন।
আন্তোনেল্লা রোকুজ্জো মেসির স্ত্রী। প্রেমের পরিণতি হিসেবে ২০১৭ সালে বিয়ে করেন দুজন। তাদের তিনটি সন্তান আছে। মেসিকে এই বৃদ্ধার বিয়ের প্রস্তাবের ছবি ভাইরাল হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই মজার সব মন্তব্য করেছেন। ইনস্টাগ্রামে একজন লিখেছেন, ‘তার প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আন্তোনেল্লাও পারবে না।’
সংবাদমাধ্যমের তথ্য মতে, ৯৮ বছর বয়সী ওই বৃদ্ধার নাম পলিন কানা। যুক্তরাষ্ট্রের এই ক্রীড়াপ্রেমী নারী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যক্তিত্ব। খেলাধুলার বড় ইভেন্টে নাতি রস স্মিথের ভিডিওতে দেখা যায় তাকে।
রস সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইনফ্লুয়েন্সার, তার মজার সব টিকটক ভিডিওতেও পলিনকে অংশ নিতে দেখা যায়। টিকটকে ২ কোটি ৩০ লাখ অনুসারী রয়েছে রস স্মিথের। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পলিনকে অনেকেই ‘গ্রানি স্মিথ’ নামে ডাকেন। এনএফএল এবং ডব্লুডব্লুইর ম্যাচেও দুজনকে ভিডিওতে অংশ নিতে দেখা গেছে।
টেস্ট ক্রিকেটের মর্যাদা অর্জনের ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বিশেষ সংবর্ধনার আয়োজন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।
বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের এ মাইলফলক স্মরণে বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) বিকাল ৪টা থেকে ৬টা পর্যন্ত স্টেডিয়ামের মিডিয়া প্লাজায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সাজিব ভূঁইয়া। বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল এতে সূচনা বক্তব্য দেবেন।
এদিনের অন্যতম আকর্ষণ থাকবে বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট খেলা দলের সদস্যদের সম্মাননা প্রদান। ২০০০ সালের নভেম্বরে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টের ওই স্কোয়াডের জীবিত সদস্যদের স্মারক ব্লেজার ও ক্যাপ পরিয়ে সম্মান জানানো হবে।
প্রথম টেস্ট দলের সদস্যরা সেদিনের স্মৃতিচারণও করবেন সংক্ষিপ্ত এক পর্বে।
আয়োজনে থাকবে কেক কাটার আনুষ্ঠানিকতা এবং সাবেক খেলোয়াড় ও অতিথিদের সঙ্গে দলগত ছবি তোলার আয়োজন।
বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট একাদশ ছিল— শাহরিয়ার হোসেন, মেহরাব হোসেন, হাবিবুল বাশার, আমিনুল ইসলাম, আকরাম খান, আল সাহারিয়ার, নাইমুর রহমান (অধিনায়ক), খালেদ মাসুদ (উইকেটকিপার), মোহাম্মদ রফিক, হাসিবুল হোসেন ও রঞ্জন দাস।
আগামী মাসে দ্বিপক্ষীয় সিরিজে অংশ বাংলাদেশ সফরে আসবে পাকিস্তান ক্রিকেট দল। আসন্ন এই সিরিজের সূচি গত বুধবার প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ১৬ জুলাই বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখবে পাকিস্তান। সিরিজের প্রথম ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২০ জুলাই। সিরিজের বাকি দুই টি-টোয়েন্টি যথাক্রমে ২২ ও ২৪ জুলাই। এই সিরিজের সব ম্যাচই হবে মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে। সিরিজ শেষে ২৫ জুলাই দেশে ফিরে যাবে পাকিস্তান দল। বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬টায় শুরু হবে ম্যাচগুলো। সবশেষ আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি চলাকালীন এই দ্বিপক্ষীয় সিরিজ আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বিসিবি ও পিসিবির শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকে। বাংলাদেশ সফর শেষ করেই ক্যারিবিয়ান দীপপুঞ্জ সফরে যাবে পাকিস্তান দল। সেই সফরে তিনটি ওয়ানডে ও তিনটি টি-টোয়েন্টি খেলবে পাকিস্তান।
বার্সেলোনার মূল দলের হয়ে ১৭ বছর খেলেছেন লিওনেল মেসি। ২০ বছর আগে পেশাদার ফুটবলে অভিষেক হয়েছিল এক কিংবদন্তি- লিওনেল মেসির। তখন কে জানত, ছোটখাটো গড়নের এই আর্জেন্টিনার তরুণ একদিন হয়ে উঠবেন ইতিহাসের সেরা ফুটবলার। দুই দশক পেরিয়ে আজ মেসি শুধু ফুটবল ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ নামই নয়- রেকর্ড, পুরস্কার আর সাফল্যের যে পাহাড় তিনি গড়েছেন, তা তুলনাহীন। আর্জেন্টিনার হয়ে টানা চারটি শিরোপা জয় করেছেন মেসি- কোপা আমেরিকা (২০২১, ২০২৪), ফিনালিসিমা (২০২২), এবং স্বপ্নের বিশ্বকাপ (২০২২)। জাতীয় দলের হয়ে এটি ছিল এক অবিশ্বাস্য ঘুরে দাঁড়ানো অধ্যায়। তবে মেসিকে আজও সবচেয়ে বেশি মনে রাখা হয় বার্সেলোনার ‘নম্বর ১০’ হিসেবেই। ক্লাবটির হয়ে ১৭ বছরে সর্বোচ্চ ৭৭৮টি ম্যাচ খেলেছেন, করেছেন রেকর্ড ৬৭২টি গোল, ৩০৩টি অ্যাসিস্ট এবং জিতেছেন ৩৫টি ট্রফি- যা ক্লাব ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এক ক্লাবের হয়ে সর্বোচ্চ গোল করার ক্ষেত্রে তিনি ছাড়িয়ে গেছেন পেলের রেকর্ডও। শুধু তাই নয়, ২০১২ সালে একটি পঞ্জিকা বর্ষে সর্বোচ্চ ৯১ গোল করে গড়েছেন আরেক অনন্য রেকর্ড। চ্যাম্পিয়নস লিগে ছয়বার সর্বোচ্চ গোলদাতা, ইউরোপিয়ান গোল্ডেন ‘শু’ জিতেছেন ছয়বার, আর লা লিগায় আটবার পেয়েছেন ‘পিচিচি’ ট্রফি। জাতীয় দলের হয়ে বিশ্বকাপ ও কোপা আমেরিকার মঞ্চেও মেসি রেখেছেন তার প্রতিভার ছাপ। ২০১৪ বিশ্বকাপে হয়েছিলেন সেরা খেলোয়াড়, আর বহু কাঙ্ক্ষিত আন্তর্জাতিক শিরোপা পেয়েছেন ২০২১ কোপা আমেরিকায় ব্রাজিলকে হারিয়ে। ২০২২ সালে স্বপ্নের বিশ্বকাপ জিতে সব অপূর্ণতাকে পূর্ণতা দিয়েছেন তিনি। এর আগে ২০০৮ সালে বেইজিং অলিম্পিকে জিতেছেন সোনার পদক। ২০২১ সালে দীর্ঘ ২১ বছরের বার্সেলোনা অধ্যায়ের ইতি ঘটে। কিন্তু ‘নম্বর ১০’ জার্সি গায়ে মেসির প্রতিটি পদক্ষেপই আজ ইতিহাসের অংশ। গোল, অ্যাসিস্ট, রেকর্ড আর ট্রফির বাইরে- বার্সার ‘নম্বর ১০’ হিসেবে মেসি হয়ে থাকবেন ক্লাব ইতিহাসের চিরস্মরণীয় কিংবদন্তি।
বহুমাত্রিক চরিত্রে সাবলীলভাবে অভিনয় করে বলিউডে নিজের শক্ত অবস্থান গড়ে তুলেছেন রাজকুমার রাও। দর্শকের ভালোবাসা আর একের পর এক ব্যবসাসফল ছবিই এর প্রমাণ। ভারতীয় শিল্পপতি শ্রীকান্ত বোল্লার চরিত্রে অসাধারণ পারফরম্যান্স অভিনেতা হিসেবে তাকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যায়। এবার রাজকুমারকে দেখা যাবে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে, ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলীর বায়োপিকে সৌরভের চরিত্রে অভিনয় করতে চলেছেন তিনি। এত দিন মুখ না খুললেও এবার আনুষ্ঠানিকভাবে জানালেন এ অভিনেতা।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সৌরভ গাঙ্গুলীর ভূমিকায় অভিনয়ের কথা নিশ্চিত করেছেন রাজকুমার রাও। তিনি বলেন, ‘এখন যেহেতু দাদা (গাঙ্গুলী) নিজেই বলে দিয়েছেন, আমিও জানাচ্ছি, হ্যাঁ, আমি তার বায়োপিকে কাজ করছি।’ অভিনেতা জানিয়েছেন, এই চরিত্র নিয়ে বেশ নার্ভাস তিনি। কারণ, এটি বিশাল দায়িত্ব বলে মনে করছেন তিনি।
এই বায়োপিকের জন্য রাজকুমার রাওকে শিখতে হচ্ছে বাংলা ভাষা, যেখানে তার স্ত্রী পত্রলেখা তাকে সাহায্য করেছেন। ছবিটি পরিচালনা করবেন বিক্রমাদিত্য মোটওয়ানে; এটি প্রযোজনা করছে লাভ ফিল্মস।
রাজকুমার রাওয়ের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে সৌরভ গাঙ্গুলী বলেন, রাজকুমার রাও একজন দারুণ অভিনেতা এবং এই চরিত্রের জন্য উপযুক্ত পছন্দ। তিনি আরও জানান, ২০২৬ সালের জানুয়ারিতে ছবির শুটিং শুরু হবে এবং মুক্তি পাবে ডিসেম্বর ২০২৬-এ। গাঙ্গুলী নিজেও ছবির সৃজনশীল দিকগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত থাকবেন।
এর পাশাপাশি রাজকুমার রাওয়ের পরবর্তী ছবি ‘মালিক’। পুলকিত পরিচালিত এই অ্যাকশন-ড্রামা ছবিটি এলাহাবাদ শহরকে পটভূমি করে গড়ে উঠেছে। এক গ্যাংস্টারের অপরাধজগতের শীর্ষে পৌঁছানোর গল্প নিয়ে তৈরি ‘মালিক’ মুক্তি পাবে আগামী ১১ জুলাই ২০২৫–এ।
বাংলাদেশ জাতীয় দলের মিডফিল্ডার হামজা চৌধুরীকে নিয়ে ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলে শুরু হয়েছে জোর আলোচনা। গত মার্চে ভারতের বিপক্ষে এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বে বাংলাদেশের হয়ে অভিষেক হয় বাংলাদেশি এই ফুটবলারের। জুনে ভুটানের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচে জাতীয় দলের জার্সিতে নিজের প্রথম গোলটিও করেন তিনি। এখন আন্তর্জাতিক ফুটবলের বিরতি চলায় হামজার মনোযোগ পুরোপুরি আগামী মৌসুমের দিকেই। হামজা তার ফুটবল ক্যারিয়ার শুরু করেন লিস্টার সিটির অ্যাকাডেমি দিয়ে। ২০১৭ সালে ক্লাবটির সিনিয়র দলে অভিষেক হয় তার। সাবেক প্রিমিয়ার লিগ চ্যাম্পিয়ন লেস্টার সিটির হয়ে ১০০টিরও বেশি ম্যাচ খেলেছেন এই মিডফিল্ডার। তবে তার ক্যারিয়ারে বার্টন আলবিয়ন ও ওয়াটফোর্ডের মতো ক্লাবে খেলার অভিজ্ঞতাও রয়েছে। সর্বশেষ, ২০২৪-২৫ মৌসুমের দ্বিতীয়ার্ধে হামজা ধারে যোগ দেন শেফিল্ড ইউনাইটেডে। চ্যাম্পিয়নশিপে তৃতীয় স্থানে থেকে মৌসুম শেষ করলেও প্লে-অফ ফাইনালে সান্ডারল্যান্ডের কাছে হেরে প্রিমিয়ার লিগে উঠতে ব্যর্থ হয় দলটি।
ধারের মেয়াদ শেষে হামজা ২০২৫-২৬ মৌসুমের জন্য ফিরছেন তার মূল ক্লাব লিস্টার সিটিতেই। বর্তমানে ক্লাবটির সঙ্গে হামজার আরও দুই বছরের চুক্তি রয়েছে।
লিস্টার প্রিমিয়ার লিগ থেকে চ্যাম্পিয়নশিপে নেমে যাওয়ায় হামজাকে আগামী মৌসুমে ক্লাবটির হয়েই খেলতে হতে পারে। তবে গ্রীসের নামকরা ক্রীড়া গণমাধ্যম স্পোর্টস এফএস জানিয়েছে, গ্রিক সুপার লিগের ২০২৪-২৫ মৌসুমের চ্যাম্পিয়ন অলিম্পিয়াকোস বাংলাদেশের এই মিডফিল্ডারকে দলে ভেড়ানোর আগ্রহ দেখাচ্ছে। যদি হামজার সঙ্গে অলিম্পিয়াকোসের চুক্তি হয় তাহলে আগামী মৌসুমে তাকে দেখা যাবে চ্যাম্পিয়নস লিগে। তবে আগামী ২০২৫-২৬ মৌসুমে কোথায় দেখা যাবে বাংলাদেশের এই তারকা ফুটবলারকে- তা এখনো নিশ্চিত নয়। তবে ইউরোপিয়ান বড় মঞ্চে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করার সম্ভাবনা দেশের ফুটবলের জন্য নিঃসন্দেহে বড় সুখবর। এখন দেখার বিষয়, হামজা কি লিস্টারে থেকে দলকে আবার প্রিমিয়ার লিগে তুলবেন, নাকি নতুন চ্যালেঞ্জ নিতে পাড়ি জমাবেন গ্রীসে।
শ্রীলঙ্কার মাটিতে এনামুল হক বিজয়ের ব্যাট থেকে রান আসছেই না। গল টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে আবারও শূন্য রানে ফিরেছেন তিনি। আসিথা ফার্নান্ডোর বাউন্সার বলটিকে ব্যাটের ভেতরের ধার লাগিয়ে স্টাম্পে পাঠান এনামুল, যা যেন তার চলমান দুর্দশারই প্রতীক।
মজার বিষয় হলো, এই আউট হওয়ার আগে দুইবার জীবন পেয়েও কাজে লাগাতে পারেননি তিনি। ফার্নান্ডোরই একটি বল স্লিপে ক্যাচ তুলে দিলেও উইকেটকিপার তা হাতছাড়া করেন। পরের বলেও একই অঞ্চলে ক্যাচের সুযোগ তৈরি হয়, কিন্তু বলটি নিচু হওয়ায় ফিল্ডাররা ধরতে ব্যর্থ হন।
এনামুলের এই সফরটা যেন ভাগ্যের সাথে লুকোচুরির খেলা। গল টেস্টের প্রথম ইনিংসে শূন্য, দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ রানের পর এবার আবার শূন্য। ক্রিজে দাঁড়ালেই কীভাবে যেন রান না পাওয়ার অভিশাপ তাকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে। ব্যাট হাতে আত্মবিশ্বাসের অভাব স্পষ্ট, প্রতিটি বলই যেন তার জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
এমন সময়ে প্রশ্ন উঠছে, দলের ওপেনিং জুটিতে এনামুলের স্থান কতটা যৌক্তিক? নাকি দ্রুত কোনো বিকল্প খুঁজে বের করার সময় এসেছে? শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পরের ইনিংসটিই হয়তো তার জন্য শেষ সুযোগ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
হামজা চৌধুরী বাংলাদেশি হওয়ার পর প্রবাসী ফুটবলারে মনোযোগ বাফুফের। শমিত সোম, কিউবা মিচেলের পর আলোচনায় জায়ান হাকিম। এর মধ্যে প্রবাসী ফুটবলারের বড় একটি বাজার বসতে যাচ্ছে ঢাকার জাতীয় স্টেডিয়ামে। ২৮, ২৯ ও ৩০ জুন জাতীয় স্টেডিয়ামে ১৪ দেশের ৫১ প্রবাসী ফুটবলারের ট্রায়াল অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন ট্রায়ালে আগ্রহী খেলোয়াড়দের একটি তালিকা তৈরি করেছে। তিন দিন এ ট্রায়াল পরিচালনা করবে বাফুফের টেকনিক্যাল কমিটি। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, সুইডেন, কানাডা, ফিনল্যান্ড, বেলজিয়াম, ওয়েলস, ইতালি, মালয়েশিয়া, এস্তোনিয়া, স্পেন, অস্ট্রেলিয়া, আয়ারল্যান্ড ও অস্ট্রিয়ায় থাকা প্রবাসীরা ট্রায়ালে অংশ নেবেন।
ট্রায়ালে সাড়া পড়েছে যুক্তরাজ্য থেকে বেশি। সেখান থেকে নিবন্ধন করেছেন ২০ ফুটবলার। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৪ ফুটবলার নাম লিখিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র থেকে। সুইডেন থেকে ৫ ও কানাডা থেকে ২ ফুটবলার দেবেন ট্রায়াল। বাকি দেশগুলো থেকে একজন করে ট্রায়ালে অংশ নেবেন। দেশের ফুটবল ইতিহাসে এই প্রথম পঞ্চাশোর্ধ্ব বিদেশি ট্রায়াল দিচ্ছেন। তাই আয়োজনে কোনো রকমের ত্রুটি রাখতে চাইছে না বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন। কোন দেশের কতজন- ২০ যুক্তরাজ্য, ১৪ যুক্তরাষ্ট্র, ৫ সুইডেন, ২ কানাডা, ১ ফিনল্যান্ড, বেলজিয়াম, ওয়েলস, ইতালি, মালয়েশিয়া, এস্তোনিয়া, স্পেন, অস্ট্রেলিয়া, আয়ারল্যান্ড, অস্ট্রিয়া
ট্রায়ালের জন্য ২৭ জুন রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। বয়সসীমা সর্বকনিষ্ঠ ১৫ থেকে সর্বোচ্চ ২৭ পর্যন্ত। তবে মূল ফোকাসটা থাকবে অনূর্ধ্ব-১৭, অনূর্ধ্ব-১৯ ও অনূর্ধ্ব-২৩ বয়সি ফুটবলারদের ওপরে। ট্রায়ালে থাকবে পাঁচ সদস্যের অভিজ্ঞ কোচিং প্যানেল। নেতৃত্বে থাকবেন বাফুফের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর সাইফুল বারী টিটু। থাকবেন দেশের শীর্ষ ক্লাবের কোচ এবং বাফুফের নির্বাহী কমিটিতে থাকা জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলাররাও। এই ট্রায়ালে থাকার কথা আছে জাতীয় দলের কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরার। তিনি থাকেন, ট্রায়ালে পর্যবেক্ষকের ভূমিকায় থাকবেন। বিশেষজ্ঞরা প্লেয়ার পারফরম্যান্সের স্বতন্ত্র মূল্যায়ন করবেন। তিন দিনের ট্রায়ালে প্রতিদিন ফুটবলারদের দুটি গ্রুপে ভাগ করে ২ ঘণ্টার সেশন হবে। শেষ দিন প্রবাসী ফুটবলারদের মধ্যে একটি প্রীতি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। ট্রায়ালে অংশ নেওয়া ফুটবলাররা ব্যক্তিগত খরচে ঢাকায় আসছেন। বাফুফে শুধু তাদের জার্সি, শর্টস ও মোজা দেবে। ব্যক্তিগত ইকুইপমেন্টগুলো ট্রায়ালে অংশ নিতে আসা খেলোয়াড়দের জোগাড় করে নিতে হবে।
লিডস টেস্টে যেন সেঞ্চুরির উৎসব বসেছে ভারতের ড্রেসিংরুমে। এক টেস্টেই পাঁচটি সেঞ্চুরি করে ইতিহাস গড়েছে ভারতীয় দল। টেস্ট ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এক ম্যাচে ভারতের পাঁচ ব্যাটার পেয়েছেন শতরান। এই কীর্তির সুবাদে এক বিব্রতকর রেকর্ড থেকে অবশেষে মুক্তি পেল বাংলাদেশ, দক্ষিণ আফ্রিকা ও শ্রীলঙ্কা। এতদিন এই তিন দেশের বিপক্ষেই এক টেস্টে ভারতের সর্বোচ্চ চারটি করে সেঞ্চুরির রেকর্ড ছিল। এবার সেই রেকর্ড পেছনে ফেলে নতুন উচ্চতায় উঠল রোহিত শর্মার দল।
লিডসের এই টেস্টে দুই ইনিংসে মিলিয়ে সেঞ্চুরি করেছেন যশস্বী জয়সওয়াল (১০১), শুবমান গিল (১৪৭), লোকেশ রাহুল (১৩৭) এবং ঋষভ পন্ত (১৩৪ ও ১১৮)। জোড়া শতরান করা পন্ত গড়েছেন আরও একটি অনন্য রেকর্ড। ১৪৮ বছরের টেস্ট ইতিহাসে প্রথম এশিয়ান উইকেটরক্ষক হিসেবে দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরি পাওয়ার কৃতিত্ব দেখিয়েছেন তিনি। বিশ্বের দ্বিতীয় উইকেটরক্ষক হিসেবে এই কীর্তি গড়লেন তিনি। এর আগে শুধু জিম্বাবুয়ের অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারই (২০০১) এই কীর্তি গড়েছিলেন। ভারতের হয়ে এক টেস্টে চার সেঞ্চুরির নজির ছিল আগেও। ২০০৭ সালে মিরপুরে বাংলাদেশের বিপক্ষে, ২০১০ সালে ইডেন গার্ডেন্সে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এবং ২০১৭ সালে নাগপুরে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এক ইনিংসেই চার সেঞ্চুরি করেছিল ভারত। এবার সেই রেকর্ড ছাপিয়ে গেলেন পন্তরা।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হেডিংলি টেস্টের তৃতীয় দিন আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত নিয়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করায় ভারতের উইকেটরক্ষক-ব্যাটার ঋষভ পান্তকে আনুষ্ঠানিকভাবে তিরস্কার করেছে ক্রিকেটের প্রধান নিয়ন্ত্রক সংস্থা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি)।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আইসিসি জানিয়েছে, হেডিংলি টেস্টের তৃতীয় দিন লেভেল ওয়ান নিয়ম ভঙ্গ করেছেন পান্ত।
আইসিসি আরও জানিয়েছে, ‘প্লেয়ার্স এন্ড প্লেয়ার্স সাপোর্ট পার্সোনেল’ আচরণবিধির ২.৮ অনুচ্ছেদ ভঙ্গ করেন পান্ত। যা আন্তর্জাতিক ম্যাচ আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে অসন্তোষ প্রকাশ করা।’
ইংল্যান্ডের ব্যাটিং ইনিংসের ৬১তম ওভার শেষে নিয়ম ভঙ্গ করেন পান্ত। ঐ ওভার শেষে বল পরিবর্তনের কথা দুই অনফিল্ড আম্পায়ারকে জানায় ভারতীয়রা। এরপর বল গজ দিয়ে বলের আকৃতি পরীক্ষা করার পর বল পরিবর্তন না করার সিদ্ধান্ত নেন আম্পায়াররা। কিন্তু আম্পায়াদের সিদ্ধান্ত পছন্দ হয়নি পান্তের। তাই মেজাজ হারিয়ে আম্পায়ারদের সামনে মাটিতে বল ছুঁড়ে মারেন ভারতের সহ-অধিনায়ক। যা আচরণবিধির ২.৮ অনুচ্ছেদ ভঙ্গের পর্যায়ে পড়ে।
তিরস্কারের পাশাপাশি ১টি ডিমেরিট পয়েন্টও যোগ হয়েছে পান্তের নামের পাশে। গত ২৪ মাসে এই প্রথম মাঠে নিয়ম ভঙ্গ করলেন পান্ত।
পান্তের এমন আচরণ ভালভাবে নেননি দুই অনফিল্ড আম্পায়ার ক্রিস গাফানি ও পল রাইফেল। তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে শাস্তি দেন ম্যাচ রেফারি রিচি রিচার্ডসন। নিজের দোষ স্বীকার করে নেওয়ায় শাস্তি মেনে নিয়েছেন পান্ত। তাই আর শুনানির প্রয়োজন পড়েনি।
হেডিংলি টেস্টের দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরি করেছেন পান্ত। দুই ইনিংসে যথাক্রমে- ১৩৪ ও ১১৮ রানের ইনিংস খেলেছেন তিনি।
বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) উদ্যোগ এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সার্বিক সহযোগিতায় আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষ্যে ঢাকায় বর্ণাঢ্য র্যালির আয়োজন করা হয়।
মঙ্গলবার র্যালির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।
‘লেটস মুভ’ প্রতিপাদ্যে আয়োজিত এ র্যালির মূল উদ্দেশ্য ছিল ক্রীড়াবিদ ও সাধারণ জনগণকে শরীরচর্চা এবং ক্রীড়া কার্যক্রমে উদ্বুদ্ধ করা। পাশপাশি অন্যদেরকেও ক্রীড়াচর্চায় আগ্রহী করে তোলা।
দেশের সাতটি বিভাগীয় শহরেও ক্রীড়া সংস্থাসমূহের সহায়তায় একযোগে র্যালিগুলো অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকার কেন্দ্রীয় র্যালিটি ভোর সাড়ে ৬টায় বাংলাদেশ শিশু একাডেমি থেকে শুরু হয়ে শিক্ষা ভবন, বাংলাদেশ সচিবালয়, জিরো পয়েন্ট ও জিপিও অতিক্রম করে জাতীয় স্টেডিয়ামের ১ নম্বর গেটে এসে শেষ হয়।
এই র্যালিতে জাতীয় পর্যায়ের ক্রীড়াবিদ, প্রশিক্ষক, সংগঠক, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কর্মকর্তা, সামরিক ও বেসামরিক বিভিন্ন সংস্থা এবং দুই হাজারেরও বেশি ক্রীড়াপ্রেমী অংশগ্রহণ করেন।
র্যালি শেষে জাতীয় স্টেডিয়ামে সেনাবাহিনীর অর্কেস্ট্রা দল মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এ সময় সেনাপ্রধান উপস্থিত অলিম্পিয়ানদের বিশেষ সম্মাননা ও সনদপত্র প্রদান করেন।
অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীরা এই আয়োজনকে প্রাণবন্ত ও উৎসবমুখর বলে মন্তব্য করেন। সঙ্গে বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।