রোববার, ২ নভেম্বর ২০২৫
১৭ কার্তিক ১৪৩২

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়: শিক্ষা, গবেষণা, উন্নয়ন

বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন একাডেমিক ভবন
মো. আশিকুর রহমান
প্রকাশিত
মো. আশিকুর রহমান
প্রকাশিত : ২৬ আগস্ট, ২০২৩ ০৯:৩৯

‘আমি চিরতরে দূরে চলে যাব, তবু আমারে দেব না ভুলিতে’- গানে এ কথা বলে গিয়েছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম। প্রেম ও দ্রোহের কবি হয়ে তিনি তাঁর গানের চরণের মতোই বাংলা ভাষাভাষীর হৃদয়ে বেঁচে আছেন, থাকবেন। বিদ্রোহী, প্রতিবাদী, সুন্দরের উপাসক, জাতীয় জাগরণের প্রতিভূ এবং বহুমাত্রিক ঔজ্জ্বল্যে ঋদ্ধ নজরুল ভারত থেকে প্রথমবার বাংলাদেশের ত্রিশালে আগমন করেন। খুব শৈশবে তিনি এই ত্রিশালে এসেছিলেন। তার বর্ণাঢ্য কৈশোরকে আগলে ময়মনসিংহের ত্রিশালে প্রতিষ্ঠা করা হয় তার নামে বিশ্ববিদ্যালয়। ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত দেশের ২১তম সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়টি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় নামেই সমধিক পরিচিত।

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ষষ্ঠ উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করে অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর শিক্ষা, গবেষণা ও উন্নয়ন- এই তিনটি শব্দকে মোটো হিসেবে নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিযাত্রা আমরা শিক্ষা, গবেষণা ও উন্নয়ন- এই তিনটি উদ্দেশ্য নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে কাজ করে যাচ্ছি। শিক্ষা বলতে বর্তমান সময়ের যুগোপযোগী শিক্ষা, দ্বিতীয় হচ্ছে গবেষণা। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকরা গবেষণা করবেন, প্রত্যেকের নিজস্ব ক্ষেত্রে নতুন নতুন আবিষ্কার করবেন এবং শিক্ষার্থীদের গবেষণামনস্ক করে গড়ে তুলবেন- যাতে তারা ভবিষ্যতে গবেষণার সঙ্গে যুক্ত থাকেন।’

কাজী নজরুল ইসলাম বলেছিলেন, ‘ভেঙে যে গড়তে জানে, সে চিরসুন্দর।’ এখানে সব ভেঙে গড়তে হচ্ছে। যারা গবেষণার ক্ষেত্রে বিমুখ ছিলেন, তাদের গবেষণায় আনতে হচ্ছে। তবে আশাব্যঞ্জক বিষয় হচ্ছে, আমরা গবেষণায় শিক্ষকদের যথেষ্ট সমর্থন পাচ্ছি। প্রথমবারের মতো আমরা আয়োজন করেছি গবেষণা মেলা। ইতোমধ্যে আমরা দুটো আন্তর্জাতিক কনফারেন্সের আয়োজন করেছি, যেখানে দেশ-বিদেশের বিদগ্ধ গবেষকরা অংশগ্রহণ করেছেন। নতুন জ্ঞান সৃষ্টির জন্য আমাদের এই অগ্রযাত্রা আগামীতেও অব্যাহত থাকবে। শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও গবেষকদের জন্য প্রতিবছর এ ধরনের আন্তর্জাতিক কনফারেন্স আয়োজনের উদ্যোগ নেয়া হবে। আমাদের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী সবাইকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ক্যাম্পাসকে ধারণ করতে হবে। আমরা প্রত্যেকে শুধু যার যার যে কাজ, সেই কাজটুকু ঠিকভাবে করলে আমরা অনেক দূর এগিয়ে যাব, যোগ করেন উপাচার্য।

তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জার্নাল যেটা দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল, সেটা ছাপার দোরগোড়ায়। বিভিন্ন অনুষদ থেকে জার্নাল প্রকাশিত হচ্ছে, শিগগিরই প্রকাশিত হচ্ছে আইন অনুষদের জার্নাল। কিছুদিন আগেই প্রকাশিত হয়েছে কলা অনুষদের জার্নাল ‘মানববিদ্যা’। এ ছাড়া আমাদের বিভাগগুলো থেকে জার্নাল প্রকাশ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ, নাট্যকলা ও পরিবেশনা বিদ্যা বিভাগ, লোকপ্রশাসন ও সরকার পরিচালনা বিদ্যা বিভাগ, ফোকলোর বিভাগসহ বিভিন্ন বিভাগ নিজস্ব জার্নাল প্রকাশ করছে।

সৌমিত্র শেখর বলেন, ‘কুম্ভীলব বৃত্তি বা প্লেগারজিম চেকার সফটওয়্যার সংযোজন করা হচ্ছে শিগগিরই। আইকিইউসি নানাবিধ গবেষণামূলক কাজ বিশেষত ট্রেনিংয়ের আয়োজন করছে। ইনস্টিটিউট অব নজরুল স্টাডিজ নজরুলকে নিয়ে গবেষণার কাজ করছে। গবেষণা ও সম্প্রসারণ দপ্তর গবেষণা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। তারা সবাই বহুবিধ কাজে ব্যস্ত।’

তিনি বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডার তৈরির মাধ্যমে সেশনজট দূর করতে পেরেছি। আমরা বিভাগগুলোতে এমন কিছু বিষয় যুক্ত করার কথা ভাবছি যেগুলো যুক্ত হলে পরিবর্তিত বিশ্বের সঙ্গে শিক্ষার্থীরা নিজেদের খাপ খাওয়াতে পারবে। ত্রিশাল থেকে যেন একজন শিক্ষার্থী জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে যুক্ত হতে পারে, সে ব্যবস্থা ধীরে ধীরে করা হবে। এখানকার আইটি সেকশনকে গুরুত্ব দিয়ে এখানে একটা ইনস্টিটিউটের কথা প্রশাসন ভাবছে। আশা করা যায়, ভবিষ্যতে সে ইনস্টিটিউট আমরা স্থাপন করতে পারব। আইসিটির মধ্য দিয়ে এখানকার প্রত্যেকটি ছেলেমেয়ে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরিত হবে।’

তিনি জানান, নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিলক্ষ্য হচ্ছে সাংস্কৃতিক শিক্ষার পাশাপাশি সাধারণ শিক্ষা, বিজ্ঞান ও প্রকৌশল, সামাজিক বিজ্ঞান ও ব্যবসায় প্রশাসনবিষয়ক পঠন-পাঠনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের উদ্ভাবনী শক্তির বিকাশ ঘটানো। দেশের আধুনিক ও টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে গবেষণা এবং লাগসই প্রযুক্তি উদ্ভাবনের দ্বারা জাতীয় উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে অবদান রাখা।

চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ

বর্তমান সময়ে ক্যাম্পাসে চলছে উন্নয়নের সুবিশাল কর্মযজ্ঞ। ক্যাম্পাসের যেদিকে তাকানো যায় সেদিকেই অবকাঠামোর নির্মাণকাজ চলমান। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য একনেকে অনুমোদিত ৮৪০ কোটি ৫৬ লাখ টাকার প্রকল্পের আওতায় বর্তমানে ২৪টি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। নির্মাণাধীন ভবনগুলোর উল্লেখযোগ্য হলো- ২ হাজার ৯৩২ বর্গমিটার আয়তনে ২য় প্রশাসনিক ভবন, ৯ হাজার ৯৬০ বর্গমিটার আয়তনের ১০ তলা ভবন যেখানে পাঁচটি ইনস্টিটিউট, আন্তর্জাতিক ছাত্রছাত্রীদের শ্রেণিকক্ষ এবং আইটি স্পেস থাকবে, ৮২১ বর্গমিটার আয়তনের ৫ তলা অতিথি ভবন নির্মাণ, ৪২ হাজার ২৯৫ বর্গমিটার আয়তনের ১০ তলা একাডেমিক ভবন, ৫ হাজার ৩৩৬ বর্গমিটার আয়তনের স্কুল ও কলেজ ভবন নির্মাণ (নার্সারি হতে দ্বাদশ পর্যন্ত), ১৩ হাজার ৪৯৮ বর্গমিটার আয়তনের শিক্ষক-কর্মকর্তার জন্য ১০ তলা ইউটিলিটি ভবন নির্মাণ, ৬ হাজার ৩৪৭ বর্গমিটার আয়তনের শিক্ষক-কর্মকর্তার জন্য ১০ তলা আবাসিক ভবন নির্মাণ, ১ হাজার ৫৭৩ বর্গমিটার আয়তনের পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের জন্য ৬ তলা আবাস ভবন নির্মাণ, ৭ হাজার ৮১১ বর্গমিটার আয়তনের ৩ তলা মাল্টিপারপাস হল-কাম টিএসসি-কাম জিমনেসিয়াম ভবন নির্মাণ, ১ হাজার ০১৯ বর্গমিটার আয়তনের চিকিৎসা কেন্দ্রের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ (অফিস, হাসপাতাল ও আবাসিক সুবিধা সংবলিত), ২ হাজার ২৫২ বর্গমিটার আয়তনের ইমাম ও মুয়াজ্জিনের আবাসনসহ ৩ তলা মসজিদ নির্মাণ উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া রয়েছে ক্যাম্পাসের চারিদিকে নিরাপত্তার জন্য সবুজবেষ্টনী নির্মাণ, খেলার মাঠ উন্নয়ন- (ফুটবল, ক্রিকেট, টেনিস, বাস্কেট বল কোর্ট, শিশুপার্ক ও বৃক্ষরোপণ), জলাশয়ে রিটেইনিং স্ট্রাকচার নির্মাণসহ সৌন্দর্যবর্ধন কাজ, সমগ্র ক্যাম্পাসে অভ্যন্তরীণ আরসিসি রাস্তা নির্মাণ, ময়লা পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেইন ও কালভার্ট নির্মাণ ভূমি উন্নয়ন ইত্যাদি। নতুন অ্যাকাডেমিক বিল্ডিংয়ের নিচ তলায় নানারকম সেমিনার, ওয়ার্কশপ, ট্রেনিং আয়োজনের জন্য একটি অডিটোরিয়াম নির্মাণ করা হচ্ছে। জয়ধ্বনি মঞ্চ ছাড়াও আরও বেশ কিছু মঞ্চ করা হবে।

‘দেখব এবার জগৎটাকে’

উচ্চশিক্ষার বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রসরমান বিশ্বের সঙ্গে সংগতি রক্ষা ও সমতা অর্জন এবং জাতীয় পর্যায়ে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা, বিশেষ করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে আধুনিক জ্ঞানচর্চা ও পঠন-পাঠনের সুযোগ সৃষ্টি ও সম্প্রসারণের নিমিত্ত প্রতিষ্ঠা লাভ করে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে জাত্যাভিমানের প্রাচীর ডিঙিয়ে সাম্য-মৈত্রী, ভ্রাতৃত্ব এবং মানবতার বলিষ্ঠ প্রত্যয়ের নাম কাজী নজরুল ইসলাম। একইভাবে তাঁর নামে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও একই প্রত্যয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীরা ছাত্রাবস্থায় ও পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন অর্জনের মাধ্যমে আলোকিত করছে এই নজরুলতীর্থকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যেন জ্ঞানার্জনের জন্য বিশ্বের অন্যান্য দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে, সে জন্য নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় দেশে এবং দেশের বাইরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়েছে। এর আওতায় নিজেদের মধ্যে শিক্ষক-শিক্ষার্থী বিনিময়, তরুণ গ্র্যাজুয়েটদের ইন্টার্নশিপের ব্যবস্থা, গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য প্রশিক্ষণ-কর্মশালা আয়োজনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে একে অন্যকে সহযোগিতা করতে পারবেন। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে ইরানের ফেরদৌসী বিশ্ববিদ্যালয়, ভারতের কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়, কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়, আসাম ডাউনটাউন বিশ্ববিদ্যালয়, সিধু-কানহো-বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশের রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং টেকনোলজি, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও দ্য ইনফিনিটি মেরিটাইম রিসার্চ অ্যান্ড রোবোটিক টেকনোলজি লিমিটেড।

এ ছাড়া সংগীত, নাট্যকলা বিভাগের প্রতিনিধিদল দেশের বাইরে নান্দনিক পরিবেশনার মাধ্যমে প্রশংসা কুড়িয়েছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে তাদের চলচ্চিত্র প্রদর্শনী হয়েছে এবং পুরস্কৃত হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ক্লাবের কার্যক্রমও উল্লেখ করার মতো। ন্যাশনাল ক্যাম্পাস জার্নালিজম ফেস্ট, আন্তবিশ্ববিদ্যালয় বিজনেস কেইস কম্পিটিশন, আন্তবিশ্ববিদ্যালয় শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভাল, ন্যাশনাল সফট স্কিল ফেস্ট, জব ফেয়ার, ক্যারিয়ার ফেস্ট, আন্তবিশ্ববিদ্যালয় আইডিয়া জেনারেশন কনটেস্টের মতো জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন আয়োজন করে থাকে সংগঠনগুলো। ক্যারিয়ার ও আত্মোন্নয়নের জন্য রয়েছে ক্যারিয়ার ক্লাব, স্কিল ডেভেলপমেন্ট ক্লাব, রিসার্চ সোসাইটি, ডিবেটিং সোসাইটি, নৃ-তার্কিক সংঘ, ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফি ক্লাব, বিজনেস ক্লাব প্রমুখ। একইভাবে রয়েছে গ্রিন ক্যাম্পাস, রংধনু, সেভ দ্য টুমরো, নির্ভয় ফাউন্ডেশন, অরণ্য, ইনলেপ্ট, রোটারেক্ট ক্লাবের মতো স্বেচ্ছাসেবী ও পরিবেশবাদী সংগঠন। নারী ক্ষমতায়ন নিয়ে কাজ করে উইম্যান পিস ক্যাফে, উইমেন লিডার্সের মতো উদ্যোগ। আরও রয়েছে বিভিন্ন আঞ্চলিক সংগঠন।

সাংস্কৃতিক মননে পরিচালিত বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবছর উদযাপিত হয় নজরুলজয়ন্তী, রবীন্দ্রজয়ন্তী, বারামখানার উদ্যোগে লালন স্মরণোৎসবের মতো আয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয়ের উৎসবমুখর আরও একটি অনবদ্য আয়োজন হচ্ছে ‘কুয়াশা উৎসব’। সংগীত, নাট্যকলা, ফিল্ম কিংবা চারুকলার মতো বিভাগগুলো এসব আয়োজনে বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে।

‘তবু আমারে দেব না ভুলিতে’

জীবনের মাত্র অর্ধেকের মতো সময়কালে কাজী নজরুল ইসলামের তুঙ্গস্পর্শী জনপ্রিয়তা ও বিপুলায়তন সৃষ্টি-সম্ভার বাংলা সাহিত্যে তো বটেই, বিশ্বের বিস্ময়। যে কারণে নজরুল অতুলনীয়, একক এবং সবার চেয়ে আলাদা বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল। তিনি আমাদের মাঝে নেই, তবে তাঁর স্মৃতিকে চির জাগরুক রাখতে বিভিন্ন স্থাপনার নামকরণ করা হয়েছে কবির সাহিত্যকর্ম ও কবিপরিবারের সদস্যদের নামানুসারে। নজরুলের আদর্শ, চেতনা, ভাবনা, সাহিত্য, সংগীত ও নাটক ছড়িয়ে দিতে প্রতিটি বিভাগে ১০০ নম্বরের ‘নজরুল অধ্যয়ন’ কোর্স বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। নজরুলের সাহিত্যকর্মের ওপরে গবেষণার জন্য রয়েছে ‘ইনস্টিটিউট অব নজরুল স্টাডিজ’ নামে একটি ইনস্টিটিউট। জাতীয় কবির বিভিন্ন গান, কবিতা, উপন্যাস, নাটক সর্বোপরি তাঁর জীবনী এবং জীবনকর্মের ওপর গবেষণা চলমান রাখার জন্য বিভিন্ন শাখায় পিএইচডি এবং এমফিল প্রোগ্রাম কোর্স চালু রয়েছে। শিক্ষার্থীদের জন্য প্রচলিত বৃত্তিগুলোর নামকরণ হয়েছে কবির পরিজনদের নামে ‘প্রমিলা বৃত্তি’, ‘বুলবুল বৃত্তি’, ‘কাজী অনিরুদ্ধ বৃত্তি’, ‘উমা কাজী বৃত্তি’।

নজরুলের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘অগ্নিবীণা’ ও দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘দোলনচাঁপা’, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম দুটি হলের নাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের নামকরণ করা হয়েছে গল্পগ্রন্থ ‘ব্যথার দান' এর নামানুসারে। নজরুলের ছোটবেলার ডাকনাম অনুযায়ী নামকরণ করা হয় উপাচার্যের বাসভবনের, ‘দুখু মিয়ার বাংলো’। বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে মোট তিনটি মঞ্চ। সবচেয়ে পুরোনো মঞ্চটির নাম নজরুলের জন্মস্থান চুরুলিয়ার নামে, ‘চুরুলিয়া মঞ্চ’। বাকি দুটো কবিতার নামে, ‘গাহি সাম্যের গান মঞ্চ’, ‘জয়ধ্বনি মঞ্চ’। প্রায় ছয় বছর আগে উদ্বোধন করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় স্মৃতিসৌধের, বিদ্রোহী কবিতার অমর এই চারটি শব্দে, ‘চির উন্নত মম শির’। বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে দুটি ক্যাফেটেরিয়া; যা ‘চক্রবাক’ ও ‘চন্দ্রবিন্দু’র নামে দুটো গ্রন্থের নামে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র গেস্ট হাউসের নামকরণ করা হয়েছে নজরুলের লেখা একটি একাঙ্ক নাটক ‘সেতু-বন্ধ’-এর নামানুসারে। পরিবহনের জন্য রয়েছে নজরুল সাহিত্যকর্মের নামে নামাঙ্কিত সাম্যবাদী, ধূমকেতু, প্রভাতী, নতুন পথিক রণভেরী, প্রলয় শিখা, দূরের বন্ধু, আগমনী, ঝিলিমিলি, ঝিঙেফুল, বাঁধনহারা, অগ্রপথিক, বিদ্রোহী, কাণ্ডারি ও দুরন্ত পথিক নামের বাসগুলো। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের ঠিক পাশেই রয়েছে সুউচ্চ নজরুল ভাস্কর্য। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে একাধিক ম্যুরাল। লাইব্রেরিতে রয়েছে নজরুল কর্নার।

এক নবীনবরণে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল নবীন শিক্ষার্থীদের বলেছিলেন, ‘কী চমৎকার একটা বিশ্ববিদ্যালয়। এটা সেই জায়গা, যেখানে বিদ্রোহী কবি হেঁটে গিয়েছেন। আমি মঞ্চ থেকে দেখে ভাবছিলাম, কবি নিজেই হয়তো এই পথে দিয়ে হেঁটে গেছেন। আমি এখন সে পথ দিয়ে হাঁটছি। ভাবতে পার এটা কত বড় সৌভাগ্য।’

বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিতে অম্লান

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু নজরুলকে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থাপনার নামকরণে কবিপরিবার ও তার সৃষ্টিকর্মের নামের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের সম্মানার্থে বিভিন্ন স্থাপনার নামকরণ করা হয়। ২০২২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি প্রায় আড়াই হাজার আবাসন সক্ষমতাসম্পন্ন দুটি নতুন হল উদ্বোধন করা হয়। হল দুটির নামকরণ করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সহধর্মিণীর নামে; জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ও বঙ্গমাতা শেখ বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব হল। কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের নামকরণ করা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেলের নামে। রয়েছে বঙ্গবন্ধুর সুউচ্চ ভাস্কর্য, যা নির্মাণ করেছেন ভাস্কর শ্যামল চৌধুরী। প্রশাসনিক ভবন, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ও বঙ্গবন্ধু হলে রয়েছে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল। বঙ্গমাতা হলে রয়েছে বঙ্গমাতার ম্যুরাল। কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার, বঙ্গবন্ধু হল, লোকপ্রশাসন ও সরকার পরিচালনাবিদ্যা বিভাগ, থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগ এবং ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগসহ বিভিন্ন স্থানে রয়েছে বঙ্গবন্ধু কর্নার। বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি প্রস্তাবিত গেটের নাম জয় বাংলা গেট ও জয় বঙ্গবন্ধু গেট।

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সদস্যদের শিশুদের চিত্তবিনোদনের জন্য নির্মাণ করা হচ্ছে শেখ রাসেল শিশুপার্ক। বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা হলের পাশে কবি নজরুল স্কুল প্রাঙ্গণের সামনের মাঠে এই পার্ক নির্মাণ করা হচ্ছে। পার্কে শেখ রাসেলের আবক্ষ মূর্তি বসানো হবে। থাকবে শিশুদের জন্য নানারকম রাইড এবং অনুষ্ঠানের জন্য একটা অনুষ্ঠানস্থল থাকবে। একই সঙ্গে বঙ্গবন্ধু ভাস্কর্যকে ঘিরে নির্মাণ করা হচ্ছে বঙ্গবন্ধু স্কয়ার। সৌমিত্র শেখর জানান, ভাস্কর্য ও বঙ্গবন্ধু স্কয়ারকে দৃষ্টিনন্দন করে গড়ে তোলার জন্য আমরা প্রশাসনিকভাবে কাজ করে যাচ্ছি। এই স্কয়ার আমাদের তরুণ সমাজকে বিশেষভাবে আলোকিত করবে। স্কয়ারে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ লাগানো হবে, যা ভাস্কর্যকে আরও বেশি গ্লোরিফাই করবে। আর ভাস্কর্যের ঠিক পেছনেই থাকবে প্রাকৃতিক জলাধার। মূলত বঙ্গবন্ধু স্কয়ার হবে একটি প্রশান্তির বাতায়ন। বঙ্গবন্ধুর জীবন-ইতিহাস নিয়ে ছোট ছোট কিছু স্মারক রাখা হবে। কোথাও কোথাও বঙ্গবন্ধুর বই রাখা হবে, থাকবে বই পড়ার ব্যবস্থাও।

ক্যাম্পাস হবে নন্দনকানন

আমাদের ক্যাম্পাসটিকে একটি নন্দনকানন হিসেবে গড়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে সুপরিকল্পিতভাবে রক্তন, বুদ্ধ নারিকেল, সুলতানচাঁপা, উদাল, সুপারি, অশোক, নাগলিঙ্গম, কুরচি, লোহা, গর্জন, শিমুল, পলাশ, আমলকী, বহেরা, হরতকী, নাগেশ্বর, পুত্রঞ্জীব, ঢাকিজাম, লাল সোনাইল, টিকোমা, সিভিটসহ নানা প্রজাতির গাছ রোপণ করা হয়েছে। উপাচার্য বলেন, ‘এখন আমাদের লড়াই হচ্ছে গাছকে রক্ষা করা। আমরা প্রতিনিয়ত গাছের ওখানে যাচ্ছি, কোথাও জলাবদ্ধতা তৈরি হলে তার সমাধান করছি, কোথাও জলের স্বল্পতা হলে জল দিচ্ছি। অর্থাৎ একটি গাছকে বড় করার জন্য যে পরিচর্যা দরকার, ইট দিয়ে বেষ্টনী বানিয়েছি। ইতোমধ্যে সর্বসম্মতভাবে জয় বাংলা ভাস্কর্য সরানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। জয় বাংলার মোড় হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার পয়েন্ট। ইতোমধ্যে সীমানাপ্রাচীর দৃশ্যমান। এই প্রাচীরের চারপাশ দিয়ে রাস্তা হবে। এখানে জো বাইক সিস্টেম চালু করা হবে। এই সিস্টেমে শিক্ষার্থীরা সাইকেলে নিমিষেই ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে যাতায়াত করতে পারবে। আমাদের ইতোমধ্যেই এ ধরনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘ক্যাম্পাসকে একটা নতুন বিশ্বরূপে গড়ে তুলতে চাই। যেটি হবে নজরুল বিশ্ব। এখানে পা রাখলেই মানুষ আরেকটা জগতে ঢুকবে। একজনের সঙ্গে আরেকজনের সম্পর্ক হবে- তাঁরা হবেন নজরুল বিশ্বের সদস্য। একটি বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সদস্য। এখানে ২৪ ঘণ্টা কাজের মতো পরিবেশ আমরা গড়ে তুলতে চাই। সেই পরিবেশ যদি গড়ে তুলতে পারি, তাহলে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম আরও বাড়বে বলে বিশ্বাস করি।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরোনো তিনটি ভবন কলা, বিজ্ঞান আর প্রশাসনিক। এর মাঝখানে মজা অবস্থায় থাকা পুকুর সংস্কার করে কাজ চলছে দৃষ্টিনন্দন আর আকর্ষণীয় সরোবর করার। পরিকল্পনা অনুযায়ী, পার্শ্ববর্তী জমিন থেকে পুকুরের জলে উঠে আসবে একটি হাত, অঞ্জলি দেয়ার ভঙ্গিতে। যার নামকরণ করা হয়েছে, কাজী নজরুল ইসলামের গান থেকে ‘অঞ্জলি লহ মোর’। সরোবরটির চারিদিকে চমৎকার করে বাঁধাই করা হবে। তিনটে ভবনকে বাঁধবে একই সুতোয়। বিকেল পাঁচটা থেকে যন্ত্রে চলবে গান, মৃদুস্বরে, রাত ১০টা অবধি। মূলত নজরুল সংগীতই হবে, ক্লাসিকও কিছু হতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সবার গমনাগমনের জন্য থাকবে এই সরোবরকেন্দ্র উন্মুক্ত।

স্মার্ট ক্যাম্পাস গড়ে তোলার প্রত্যয়

উপাচার্য হিসেবে যোগদানের পরপরই বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ রক্ষাথে ‘স্মার্ট ক্যাম্পাস’ গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর। তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের পর যে কথাটি বলেছিলাম, স্মার্ট ক্যাম্পাস চাই। পরবর্তী সময়ে জননেত্রী শেখ হাসিনা যে স্মার্ট বাংলাদেশের ধারণা দিয়েছেন, আমাদের চিন্তার সঙ্গে মিলে যায় সেটা। তাই স্মার্ট বাংলাদেশের অভিমুখে স্মার্ট ক্যাম্পাস। আর স্মার্ট ক্যাম্পাস গড়ার ক্ষেত্রে আমি শিক্ষা, গবেষণা, উন্নয়ন- এই তিনটি মোটোকে ধারণ করে কাজ করে যাচ্ছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই স্মার্ট ক্যাম্পাসের অবকাঠামো ও একাডেমিক- উভয় দিক থেকে আমরা এমন অবকাঠামো গড়ে তুলব, যা হবে দৃষ্টিনন্দন। এখানে ভবনগুলো থাকবে সুসজ্জিত। ভবনগুলোর পাশাপাশি বৃক্ষ, লতাগুল্ম, পাখিসমৃদ্ধ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য থাকবে। পাশাপাশি থাকবে রাস্তার নিরাপত্তা। আমি স্বপ্ন দেখি, শিক্ষার্থীরা নিজস্ব সাইকেলে চলাফেরা করবে। এখানে বাইরের অনাকাঙ্ক্ষিত বা অপ্রত্যাশিত যানবাহন ঢুকবে না। ক্যাম্পাস সম্পূর্ণভাবে সিসিটিভির আওতায় থাকবে। এগুলো হচ্ছে অবকাঠামোগত দিক। আমরা একই সঙ্গে অ্যাকাডেমিক দিক থেকে এখানে এমন শিক্ষার্থী তৈরি করব, যারা লেখাপড়া শেষ করে বাইরে গিয়ে আলো ছড়াবে। এগুলো নিয়ে আমরা ভেতরে-ভেতরে অনেক পরিকল্পনা করছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চাইছি আমাদের শিক্ষার্থীরা এই প্রতিযোগিতার বাজারে নিজেদের দক্ষতার পরিচয় দেবে। এ বিষয়ের প্রতি লক্ষ রেখে ইতোমধ্যে আমাদের যে কারিকুলাম, তা আলোচনা-পর্যালোচনা করেছি ঢেলে সাজানোর জন্য। আমাদের স্মার্ট ক্যাম্পাস হবে স্মার্ট এডুকেশন। একটা দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য।’

ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের দাপ্তরিক নথি ব্যবস্থাপনা ও রেকর্ড সংরক্ষণে ডিজিটাল নথি (ডি-নথি) কার্যক্রমে যুক্ত হয়েছে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়। নথির এ প্রক্রিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ফাইলের কাজ ডিজিটাল পদ্ধতি অনুসরণ করে সম্পাদিত হবে। উপাচার্যসহ সব পর্যায়ের অনুমোদনকারীরা যেকোনো জায়গা থেকে যেকোনো সময় ফাইল অনুমোদন করতে পারবেন। এতে তাদের সময় সাশ্রয় হবে, কাগজ সাশ্রয়, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার জায়গাটিও নিশ্চিত হবে। এ ছাড়া প্রশাসন ও অ্যাকাডেমিক ক্ষেত্রে গতিশীলতা বাড়বে।


বিএমইউতে “প্রমাণভিত্তিক প্রিসিশন অনকোলজি: শিক্ষা, গবেষণা ও ক্লিনিক্যাল প্র্যাকটিসের সমন্বয়” শীর্ষক ফায়ারসাইড আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

প্রিসিশন অনকোলজির ভবিষ্যৎ, এআই-নির্ভর ক্যান্সার চিকিৎসার উপর গুরুত্বারোপ
আপডেটেড ২ নভেম্বর, ২০২৫ ০১:৪৩
নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশ মেডিকেল ইউনিভার্সিটির ক্লিনিক্যাল অনকোলজি বিভাগে আজ শনিবার ১ নভেম্বর ২০২৫ইং তারিখে অনুষ্ঠিত হলো “প্রমাণভিত্তিক প্রিসিশন অনকোলজি: শিক্ষা, গবেষণা ও ক্লিনিক্যাল প্র্যাকটিসের সমন্বয়” শীর্ষক ফায়ারসাইড আলোচনা সভা। অনুষ্ঠানের মূল আলোচনায় প্রিসিশন অনকোলজির ভবিষ্যৎ, এআই-নির্ভর ক্যান্সার চিকিৎসা, আধুনিক প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা এবং গবেষণাভিত্তিক চিকিৎসার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়।

ফায়ারসাইড আলোচনা সভা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাননীয় ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ডা. মো. শাহিনুল আলম। তিনি বলেন, এ ধরনের অনুষ্ঠান ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য অত্যন্ত শিক্ষণীয়। অনকোলজি বিভাগে এআই-ভিত্তিক অত্যাধুনিক রেডিওথেরাপি মেশিন কেনার জন্য ৩৮ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। প্রয়োজনে আরো বরাদ্দ দেয়া হবে। বিএমইউ-তে একটি ক্যান্সার গবেষণা ও চিকিৎসা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা হবে, যাতে রোগীরা আধুনিক সেবা পান এবং শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ নিতে পারেন। এ বিষয়ে শিগগিরই ন্যাশনাল ক্যান্সার সেন্টার সিঙ্গাপুরের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি (এমওইউ) হবে।

অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ছিলেন বাংলাদেশ মেডিকেল ইউনিভার্সিটির ক্লিনিক্যাল অনকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা. সৈয়দ মো. আকরাম হুসাইন।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রফেসর ডা. হান চং তোহ, ডেপুটি সিইও (স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপস), ন্যাশনাল ক্যান্সার সেন্টার সিঙ্গাপুর এবং প্রফেসর, ডিউক-এনইউএস মেডিকেল স্কুল। তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রিসিশন অনকোলজির অগ্রগতি এবং বাংলাদেশে উচ্চমানের ক্যান্সার চিকিৎসা ও গবেষণার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেন। শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরও দেন তিনি।

অনুষ্ঠানে অনকোলজি বিভাগের এমডি ও এফসিপিএস রেসিডেন্টরা তাঁদের কারিকুলাম শেয়ার করেন এবং কেস প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন। ছাত্র-ছাত্রীদের সক্রিয় অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি প্রাণবন্ত ও শিক্ষণীয় পরিবেশ তৈরি করে।
অনুষ্ঠানে ‘এআই ইন রেডিওথেরাপি কনটোউরিং (AI in Radiotherapy Contouring)’ বিষয়ে উপস্থাপনা করেন ডা. মাহমুদ হাসান, নওরিন এম ভিশন টিম।


দেশের উন্নয়নের স্বার্থে আরও প্রযুক্তিনির্ভর হতে হবে: চুয়েটে সিনিয়র সচিব

চুয়েটে বক্তব্য রাখছেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এ এস এম সালেহ আহমেদ। ছবি দৈনিক বাংলা।
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
চট্টগ্রাম ব্যুরো

ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এ.এস.এম সালেহ আহমেদ বলেছেন, বিশ্ব আজ নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি, যার মধ্যে অন্যতম হলো প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের দ্রুত গতি। এই পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মেলানো এখন বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রকৌশলী ও প্রযুক্তিবিদদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির স্বার্থে আমাদের আরও প্রযুক্তিনির্ভর হতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, আপনাদের মাধ্যমেই এই চ্যালেঞ্জগুলো সফলভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব। আপনারা শুধু দক্ষ প্রকৌশলী বা প্রযুক্তিবিদ হিসেবেই নয় বরং সৎ, পেশাদার, দেশপ্রেমিক ও মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন নাগরিক হিসেবেও দেশের সেবা করবেন এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

বৃহস্পতিবার চুয়েটের কেন্দ্রীয় অডিটোরিয়ামে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এতে গেস্টস অব অনার ছিলেন চুয়েটের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মাহমুদ আব্দুল মতিন ভূইয়া ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. সালেহ হাসান নকীব। সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. জিয়াউদ্দীন, তড়িৎ ও কম্পিউটার কৌশল অনুষদের ডীন অধ্যাপক ড. কাজী দেলোয়ার হোসেন, পুর ও পরিবেশ কৌশল অনুষদের ডীন অধ্যাপক ড. আসিফুল হক, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুষদের ডীন অধ্যাপক ড. এ.এইচ. রাশেদুল হোসেন, মেকানিক্যাল অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডীন অধ্যাপক ড. কাজী আফজালুর রহমান এবং শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন পুরকৌশল বিভাগের ২০ ব্যাচের ছাত্র আসহাব লাবিব ও ইইই বিভাগের ২০ ব্যাচের ছাত্রী উম্মে মাবরুরা উমামা।

বেলুন ও শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন করেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এ এস এম সালেহ আহমেদ। এর পরপরই ২৩তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে এক আনন্দ র্যালি রেব করা হয়। র্যালিতে রং-বেরঙের প্ল্যাকার্ড ও ফেস্টুন সহকারে চুয়েটের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও ছাত্র-ছাত্রীরা অংশগ্রহণ করেন। পরে কেন্দ্রীয় অডিটোরিয়াম-সংলগ্ন এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের স্মারক বৃক্ষরোপণ করা হয়। চুয়েটের সাবেক শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ১২৬ জন মেধাবী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ২৩ লাখ ৩৪ হাজার টাকার বৃত্তি প্রদান করা হয়।

গেস্টস অব অনারের বক্তব্যে চুয়েটের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মাহমুদ আব্দুল মতিন ভূইয়া বলেন, বর্তমানে চুয়েট খুব দ্রুত আধুনিকায়নের পথে অগ্রসর হচ্ছে। আমাদের অনেক বাধা রয়েছে কিন্তু এরপরেও আমরা চুয়েটে আধুনিক গবেষণাগার নির্মাণ ও ডিজিটাল সেবাকে সমুন্নত করছি যাতে স্মার্ট ক্যাম্পাস গঠনের উদ্যোগের মাধ্যমে আমরা ভবিষ্যতে চুয়েটকে বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বিনির্মাণ করতে পারি। আমরা এমন এক শিক্ষার পরিবেশ গড়ে তুলতে চাই যেখানে জ্ঞান, উদ্ভাবন এবং মানবিকতা একসূত্রে গাঁথা থাকবে।


৫ বছর ধরে জরাজীর্ণ টিনশেড ঘরে চলছে বিদ্যালয়ের পাঠদান

আনোয়ারায় স্কুল ভবন নির্মাণকাজ বন্ধ করে পালিয়েছে ঠিকাদার
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
আনোয়ারা (চট্রগ্রাম) সংবাদদাতা

আনোয়ারা উপজেলার দক্ষিণ তৈলারদ্বীপ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থার সুবিধা তো দূরের কথা, মৌলিক নিরাপদ শ্রেণিকক্ষের সুযোগ থেকেও বঞ্চিত। বিগত পাঁচ বছর ধরে জরাজীর্ণ টিনশেড ঘরে চলছে এই বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম।
গত ৫ বছর আগে পুরোনো সেমিপাকা স্কুলটি ভেঙে নতুন স্কুল ভবন তৈরির কাজ শুরু করে। সেই ভবনের কাজ শুরুর কিছুদিন পরই কাজ বন্ধ করে পালিয়ে যায় ঠিকাদার।
সরেজমিনে ভবন নির্মাণকাজ পরিদর্শন করে দেখা যায়, বিল্ডিংয়ের স্তম্ভের কয়েকটি জায়গায় পাইলিং শেষ করা হয়েছে। তবে এই লোহাগুলো পরিত্যক্ত অবস্থায় রাখা হয়েছে। জম ধরেছে ফেলে রাখা এসব লোহাগুলোতে। এছাড়া আর কোনো কাজ করা হয়নি। স্কুলের পাশে জায়গা না থাকায় প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে গিয়ে বেড়িবাঁধের পাশে টিন দিয়ে কয়েকটি রুম করে চালানো হচ্ছে স্কুলের কার্যক্রম।
স্কুল পরিচালনা কমিটির সদস্য আবুল হোসেন বলেন, ‘এই এলাকার গণজনবসতিপূর্ণ এলাকা, প্রায় ৫ হাজার বাসিন্দাদের এই একটিই স্কুল। আশেপাশে আর স্কুল নেই, বিভিন্ন রাজনৈতিক এবং স্থানীয় সমস্যার কারণে স্কুলের কাজটি সম্পন্ন হয়নি। যার কারণে এই এলাকার ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটছে।
জানা যায়, ২০২১ সালে দিকে মাল্টিপারপাস ডিজাস্টার শেল্টার প্রজেক্ট (এমডিএসপির) আওতায় দক্ষিণ তৈলারদ্বীপ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নির্মাণকাজ শুরু করা হয়। প্রকল্পটির বরাদ্দ দেওয়া হয় ৪ কোটি ২৭ লাখ টাকা। কাজ শুরু হওয়ার পর সংশ্লিষ্টরা পাইলিংয়ের কাজ করে যাতে ব্যয় হয় ৯০ লাখ টাকার মতো। এরপর কাজটি বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে প্রকল্পটি বাতিল করা হয়েছে। তামান্না আক্তার নামের স্কুলের ৫ম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী বলে, ক্লাসে বর্ষাকালে বৃষ্টি পড়ে, গ্রীষ্মে টিনের গরমে পড়তে পারি না। আমাদের আশেপাশের বন্ধুরা সুন্দর সুন্দর স্কুলে পড়ে আমরাও চাই টিনের স্কুলের পরিবর্তে নতুন একটা স্কুল হোক, যাতে আমরা ভালো করে পড়তে পারি।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক জয়নাব বেগম বলেন, এই স্কুলে বর্তমানে প্রায় ২০০ শিক্ষার্থী এবং ৬ জন শিক্ষক রয়েছে। ১৯৯৬ সালে স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ২০১৩ সালে এটি জাতীয়করণ করা হয়। আগে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি ছিল ২০২১ সালে স্কুল স্থানান্তরের পর থেকে শিক্ষার্থী কমে যাচ্ছে। জরাজীর্ণ এই টিনের শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার পরিবেশ না থাকায় আমাদের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে। এ সময় তিনি দ্রুত স্কুলের নির্মাণকাজ শুরু করার দাবি জানান।

এ বিষয়ে আনোয়ারা উপজেলা প্রকৌশলী জাহেদুল আলম চৌধুরী বলেন, প্রকল্পটি বাতিল করা হয়েছে। বিস্ট্রিম প্রকল্পের আওতায় আরেকটি প্রকল্পের মাধ্যমে কাজটি সম্পন্ন করা হবে। আপাতত অস্থায়ী স্কুলটি সংস্কার করে শিক্ষার পরিবেশ তৈরি করা হবে।


মাভাবিপ্রবিতে ৭ম বার্ষিক অ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতা- ২০২৫  সফলভাবে  সম্পন্ন 

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০

মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শরীরচর্চা শিক্ষা বিভাগের আয়োজনে দুই দিনব্যাপী ৭ম বার্ষিক অ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতা- ২০২৫, গতকাল বিকেলে সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে অনুষ্ঠিত এ প্রতিযোগিতায় মোট ৩৬টি ইভেন্টে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা অংশগ্রহণ করেন। গতকাল বিকেলে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল আজীম আখন্দ। তিনি শিক্ষার্থীদের খেলাধুলায় পারদর্শিতা ও সক্রিয় অংশগ্রহণের প্রশংসা করে বলেন, “সুস্থ ও সুন্দর জীবন গড়ে তুলতে হলে খেলাধুলার চর্চা অব্যাহত রাখতে হবে।”।

২৭ অক্টোবর প্রথম দিনের সকালে ছাত্রদের দীর্ঘ লাফ ও ছাত্রীদের চাকতি নিক্ষেপ ইভেন্টের মধ্য দিয়ে প্রতিযোগিতার সূচনা হয়। সকাল ১০টায় আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন ও অ্যাথলেটিক্স পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মতিউর রহমান। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল অনুষদের ডিন, শিক্ষার্থী কল্যাণ ও পরামর্শদান কেন্দ্রের পরিচালক, প্রক্টর, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও অতিথিবৃন্দ। জাতীয় সঙ্গীত ও পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে বর্ণাঢ্য এ আয়োজনের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়।

অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন শরীরচর্চা শিক্ষা বিভাগের পরিচালক জনাব মো. মাহফুজ রেজা।

দুই দিনের প্রতিযোগিতায় ছাত্রদের মধ্যে সর্বোচ্চ পদক অর্জন করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল চ্যাম্পিয়ন হয়, এবং রানার্স আপ হয় শেখ রাসেল হল। অপরদিকে ছাত্রীদের মধ্যে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল চ্যাম্পিয়ন এবং আলেমা খাতুন ভাসানী হল রানার্স আপ হওয়ার গৌরব অর্জন করে।

ব্যক্তিগত ইভেন্টে দ্রুততম মানব হয়েছেন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র মো. ফেরদাউস, এবং দ্রুততম মানবী হয়েছেন এফটিএনএস বিভাগের ছাত্রী সমাপ্তী খান। সেরা খেলোয়াড় (ছাত্র) নির্বাচিত হয়েছেন মো. ফেরদাউস (টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ) এবং রানার্স আপ হয়েছেন মো. শাকিল আহমেদ (ফার্মেসি বিভাগ)। সেরা খেলোয়াড় (ছাত্রী) নির্বাচিত হয়েছেন তাবাচ্ছুমা আক্তার (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ) এবং রানার্স আপ হয়েছেন সমাপ্তী খান (এফটিএনএস বিভাগ)।

এছাড়া শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অংশগ্রহণে ১০০ মিটার দৌড় ও গোলক নিক্ষেপ ইভেন্টও অনুষ্ঠিত হয়। ছাত্রদের ৪×১০০ মিটার রিলে ইভেন্টের মাধ্যমে দুই দিনব্যাপী এ প্রতিযোগিতার সকল ইভেন্টের সফল সমাপ্তি হয়।


স্কুল ভর্তিতে লটারি না পরীক্ষা, সিদ্ধান্ত আজ

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

আগামী ২০২৬ শিক্ষাবর্ষ সরকারি ও বেসরকারি বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি লটারির মাধ্যমে হবে নাকি ভর্তি পরীক্ষার ভিত্তিতে এ নিয়ে শুরু হয়েছে তীব্র আলোচনা। এদিকে অভিভাবক ঐক্য ফোরাম সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডিজিটাল লটারি চালু রাখার দাবি জানিয়েছে।

অন্যদিকে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ভর্তি পরীক্ষার পক্ষে মত এ নিয়ে চলমান বিভ্রান্তি ও অনিশ্চয়তার মধ্যে বুধবার (২৯ অক্টোবর) বৈঠকে বসতে যাচ্ছে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) মাধ্যমিক শাখার পরিচালক ড. খান মইনুদ্দিন আল মাহমুদ সোহেল বলেন, আগামী শিক্ষাবর্ষে স্কুল ভর্তি নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। লটারি পদ্ধতি থাকবে নাকি ভর্তি পরীক্ষা ফিরবে সে বিষয়ে আজ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সেখানেই আলোচনার মাধ্যমে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এর আগে, এবার সরকারি মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষকরা ভর্তির সময় পরীক্ষা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। সোমবার (২৭ অক্টোবর) দেশের সরকারি স্কুলের শিক্ষকদের সংগঠন বাংলাদেশ সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি (বাসমাশিস) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব রেহেনা পারভীনের কাছে লিখিতভাবে এ বিষয়ে আবেদন করেন।

আবেদনে শিক্ষকরা বলেছেন, শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ ও অভিভাবকের উৎকণ্ঠা লাঘবে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সব শ্রেণিতে লটারির পরিবর্তে প্রতিযোগিতামূলক ভর্তি পরীক্ষা পুনর্বহাল করা জরুরি। অন্যথায়, দেশের বিভিন্ন স্থানে অস্থিতিশীল বা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।

এছাড়াও সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সব শ্রেণিতে লটারির মাধ্যমে ভর্তি ও সব ধরনের কোটা বাতিলের দাবি জানিয়েছে অভিভাবক ঐক্য ফোরাম।

এক বিবৃতিতে তারা বলেন, লটারির মাধ্যমে ভর্তি ব্যবস্থা চালু করা হলে ভর্তি প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতার আওতায় আসবে। পাশাপাশি কোমলমতি শিক্ষার্থীরা ভর্তি কোচিংয়ের চাপ থেকে রেহাই পাবে।


নরসিংদীতে কৃতী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা ও ক্রেস্ট প্রদান

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নরসিংদী প্রতিনিধি

নরসিংদীতে বালিকা উচ্চ বিদ্যানিকতনে ২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ কৃতি ছাত্রীদের সংবর্ধনা ও ক্রেস্ট প্রদান অনুষ্ঠান মঙ্গলবার দুপুরে নরসিংদী বালিকা উচ্চ বিদ্যানিকতন মাঠে আয়োজন করা হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নরসিংদী বালিকা উচ্চ বিদ্যানিকেতন ম্যানেজি কমিটির সভাপতি, নরসিংদী সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি, নরসিংদী জেলা বিএনপির সহসভাপতি খবিরুল ইসলাম বাবুল।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাটিরপাড়া কালীকুমার ইনস্টিটিউশন স্কুল অ্যান্ড কলেজ এর গভর্নিং বডির সভাপতি মোহাম্মদ ইলিয়াস আলী ভূইয়া, বিশিষ্ট শিল্পপতি ও সমাজসেবক মো. ইলিয়াস মিয়া, নরসিংদী বালিকা উচ্চ বিদ্যানিকেতন পিটিএ শিক্ষক-অভিভাবক কমিটির সভাপতি মো. মুকুল হোসেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন নরসিংদী বালিকা উচ্চ বিদ্যানিকেতন এর প্রধান শিক্ষক তুষার কান্তি ঘোষ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে খবিরুল ইসলাম বাবুল শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, আজকের কৃতিত্ব ভবিষ্যতের দ্বার উন্মোচনের একটি ধাপ মাত্র। শিক্ষা শুধু সার্টিফিকেট অর্জনের বিষয় নয়, বরং নৈতিকতা, দেশপ্রেম, সময়ের মূল্য দেওয়া এবং মানুষ হয়ে ওঠার এক নিরবিচার প্রস্তুতি। তোমাদের মধ্যে থেকেই আগামী দিনের শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, প্রশাসক ও সমাজ সংস্কারক গড়ে উঠবে। তাই আজ থেকেই লক্ষ্য স্থির করে এগিয়ে যেতে হবে।

অনুষ্ঠানে অভিভাবকরা, সুশীল সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা এবং ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে কৃতি শিক্ষার্থীদের হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেওয়া হয়।


নানা কারণে বাড়ছে না সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী

*জেলায় ১১০টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ৬৬টির প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য *মধুপুরের পাড়া মহল্লায় ব্যাঙের ছাতার মত গড়ে উঠছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
হাবিবুর রহমান, মধুপুর (টাঙ্গাইল)

টাঙ্গাইলের মধুপুরে বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় পর্যাপ্ত অবকাঠামো ও শ্রেণি কক্ষ সজ্জিত প্রাথমিকের জন্য পৃথক শিক্ষক নিয়োগ থাকা সত্ত্বেও আনুপাতিক হারে বাড়ছে না শিক্ষার গুণগত মান। আশানূরৃপ বাড়ছে না শিক্ষার্থী। শিক্ষকদের নানামুখী প্রশিক্ষণ কোর্স করিয়েও শুধুমাত্র আন্তরিক পাঠদানের কারণে কাঙ্ক্ষিত হারে বাড়ছে না কোমলমতি শিক্ষার্থীর সংখ্যা। অনুন্নত অবকাঠামো ভাঙা চূড়া টিনের ঝাপের বেড়া দিয়ে গড়া বেসরকারি কিন্ডারগার্টেন ও নূরানী মাদ্রাসাগুলোতে হুহু করে বাড়ছে ছাত্র-ছাত্রী। অথচ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারি প্রাথমিকের চেয়ে অপেক্ষাকৃত দক্ষ-প্রশিক্ষণহীন শিক্ষকরা মেধা নয় শ্রম দিয়ে এগিয়ে নিচ্ছে, অভিভাবকদের আকৃষ্ট করছে শিখন লিখনে । যে কারণে অনুপাতিক শিক্ষার্থী পাচ্ছে তারা। অপরদিকে, আধুনিক অবকাঠামো শিক্ষা উপকরণ সরকারি সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত চাকরি ভাবাপন্নতা বেতন প্রাপ্তি বিভাগীয় প্রশিক্ষণ থাকা সত্ত্বেও দায়বদ্ধতা, জবাবদিহিতার অভাব, পাঠদানে কিছু কিছু শিক্ষকের অবহেলা, আন্তরিকতার অভাব, অভিভাবকদের সাথে যোগাযোগের দীর্ঘ সূত্রতা, নূরানী মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠার সরকারি নীতিমালার অভাব, শিক্ষার্থী ভর্তির টার্গেট না থাকা, অনেকগুলো প্রধান শিক্ষকের পদ খালী, অনেক গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয় না থাকা, রেকর্ডকৃত জমি না পাওয়া, ধর্মীয় শিক্ষার প্রতি অভিভাবকদের দুর্বলতা, মাদ্রাসাগুলো অধিক সময় যত্নসহকারে পাঠদানসহ নানা কারণে আশানুরূপ বাড়ছে না সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়োর শিক্ষার্থী। এসব তথ্য স্থানীয় অভিভাবক শিক্ষক ম্যানেজিং কমিটিসহ সংশ্লিষ্টদের কথা বলে জানা গেছে। তবে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বলছে, সব স্কুলই এক রকম নয় তবে কিছু শিক্ষক অসল টাইপের থাকতে পারে।

তারমতে, ১১০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৬৬টির প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য। ভারপ্রাপ্ত ও চলতি দায়িত্ব দিয়ে চালাতে গিয়ে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। তিনি বলেন, অন্যান্য চাকরি জীবনের স্কেলের সাথে পার্থক্য থাকায় শিক্ষকদের বিকল্প কর্মের চিন্তা করতে গিয়ে তারা হতাশায় ভোগে। করোনাকালীন সময়ে স্কুল বন্ধ থাকায় মাদ্রাসাগুলোতে ছাত্র চলে যাওয়ায় প্রভাব পড়ার কথা জানান তিনি। অপরদিকে, জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে প্রান্তিক পর্যায়ে আগামী প্রজন্মকে একটি আনন্দময় শৈশব উপহার দিতে প্রাথমিক স্তরে মধুপুরে ১৫টি বিদ্যালয়ে মিনি পার্ক করার পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে পরিধি আরো বাড়বে বলে জানিয়েছে উপজেলা নির্বাহী অফিসার। সংশ্লিষ্টরা মনে করছে শিশু বান্ধব পরিবেশ পড়াশোনার পাশাপাশি তাদের মানসিক বিকাশ ঘটবে পাঠদানে মনযোগী হবে এগিয়ে যাবে বাধ্যতামূলক শিক্ষা। এমনটাই মনে করছে স্থানীয়রা।

সরজমিনে পাহাড়িয়া এলাকার আমলিতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় পঞ্চম শ্রেনীতে ১০ জন উপস্থিত। চতুর্থতে ১৪, দ্বিতীয় ও তৃতীয়তে ১২, প্রথমে ২১ ও প্রাক প্রাথমিকে ১৩ জন শিক্ষার্থীর উপস্থিতি। এ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক খায়রুল জানালেন, ১০৮ জন শিক্ষার্থী তাদের। উপস্থিতি হার ৮০% এর মতো। স্থানীয় মানুষের সচেতন না থাকায় ধর্মীয় মাদ্রাসার প্রতি অভিভাবকদের আগ্রহ ঝুঁক বেশি। স্কুলে তাদের সন্তানদের পড়াতে অনিহার কারণে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কম বলে তিনি জানান।

এভাবে পিরোজপুর কুড়াগাছা অরনখোলা ভুটিয়া গাছাবাড়িসহ বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, গ্রামে গ্রামে পাড়া মহল্লায় ব্যাঙের ছাতার মত গড়ে উঠেছে নূরানী ও হাফিজিয়া মাদ্রাসার মতো অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। যে কারণে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে বাড়ছে না আনুপাতিকহারে শিক্ষার্থী, বরং কমে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। তবে মাদ্রাসাগুলোতে শিক্ষকদের পড়ার মান পছন্দসই, ধর্মীয় শিক্ষার প্রতি আগ্রহ, অভিভাবকদের সাথে নিবিড় যোগাযোগ, আন্তরিকতার সাথে পাঠদান বাড়ির কাজ নিয়মিত পড়া আদায় নামাজ কোরআন শিক্ষার কারণে বিনা মূল্যে বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষার ব্যবস্থা, উপবৃত্তির মতো সুযোগ সুবিধা গ্রহণ না করে উল্টো মাদ্রাসাগুলো বই খাতা কলম উপকরণ কিনে বেতন দিয়ে পড়াচ্ছে অভিভাবকরা। এমনটাই মনে করছে স্থানীয়রা।

মহিষমারা কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ও দেশসেরা পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রভাষক ছানোয়ার হোসেন বলেন, দায়বদ্ধতা না থাকার কারণে এমনটি হচ্ছে। তারমতে, সরকারি স্কুলের কিছু কিছু শিক্ষকদের সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনে অবহেলা। ধর্মীয় চিন্তা, মানবিক মূল্যবোধের অভাব ও দায়বদ্ধতার অভাবে এমনটি হচ্ছে বলে তিনি মনে করেন ।

টিআইবির সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) মধুপুরের সভাপতি বজলুর রশিদ খান চুন্নু বলেন, শিক্ষকদের আন্তরিকতার অভাবে সরকারি ভাবে অনেক প্রশিক্ষণ দিয়েও এগোচ্ছে না, গুণগত পরির্বতন হচ্ছে না। হোম ভিজিট সঠিকভাবে না করায় প্রাথমিক শিক্ষায় ব্যবস্থার চিত্র কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁচ্ছে না। তিনি বৈষম্যহীন অভিন্ন শিক্ষাব্যবস্থার কথা জানান তিনি।

নূরে মদিনা নূরানী মাদ্রাসা কুঠালপাড়ার মোহতামীম নূরুল আমিন বলেন, তাদেরকে পড়াশোনা দেখিয়ে অভিভাবকদের কাছ থেকে বেতন নিতে হয় তাদের। ফাঁকি দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তাদের পড়াশোনার মান অভিভাবকদের পছন্দসই যে কারণে শিক্ষার্থী বাড়ছে।

প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি পিরোজপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু ছাইদ বলেন, শিক্ষকরাই হলো প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নের চাবি কাঠি। তারা আন্তরিক হলে, চেষ্টা করলে মান উন্নয়ন কোন ব্যাপার না।

মধুপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শফিকুল ইসলাম খান বলেন, করোনা কালিন সময় থেকে বিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থী কমছে। সে ধকল কাটিয়ে উঠতে সময় লাগতেছে। তবে কিছু কিছু শিক্ষকের আন্তরিকতারও অভাব রয়েছে তবে সীমাদ্ধতাও রয়েছে।

মধুপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার জুবায়ের হোসেন বলেন, প্রাথমিক শিক্ষায় জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে শিশু শিক্ষা বান্ধব পরিবেশ গড়ার জন্য মিনি পার্ক করা হচ্ছে। এতে শিশুরা বিনোদন পাবে পাঠে মনোযোগ বাড়বে। তবে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শিক্ষকদের যখন চাকরির নিশ্চিয়তা পায় তখন তাদের মধ্যে অনেকেই সঠিক দায়িত্ব পালন করতে চায় না। যে কারণে এমনটি হতে পারে বলে তার ধারণা।


রাবি শিক্ষকের হিজাব নিয়ে কটাক্ষের প্রতিবাদে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে মানববন্ধন

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
চবি প্রতিনিধি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক আবদুল্লাহ আল মামুন কর্তৃক হিজাব নিয়ে কটাক্ষের প্রতিবাদ ও বিচার দাবিতে মানববন্ধন করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) নারী শিক্ষার্থীবৃন্দ।

মঙ্গলবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে 'চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বস্তরের নারী শিক্ষার্থী' ব্যানারে এই মানববন্ধন আয়োজিত হয়।

মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (চাকসু) ছাত্রীকল্যাণ সম্পাদক নাহিমা আক্তার দ্বীপা, সহ ছাত্রী কল্যাণ সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদাউস রিতা এবং সহ দপ্তর সম্পাদক জান্নাতুল আদন নুসরাত। আরো বক্তব্য রাখেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া হল সংসদের জিএস নাজিফা তাসফিয়াহ, বিজ্ঞান ,গবেষণা ও তথ্যপ্রযুক্তি সম্পাদক নিশাত সালসাবিল শিকদার এবং ম্যানেজমেন্ট বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী তাওফিকা রহমান। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন হলের প্রতিনিধি ও অন্যান্য নারী শিক্ষার্থীবৃন্দ।

চাকসুর ছাত্রীকল্যাণ সম্পাদক নাহিমা আক্তার দ্বীপা বলেন, "রাকসুতে বিজয়ী হিজাব পরিহিত বোনদের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক আবদুল্লাহ আল মামুন কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। সেই সাথে তিনি ক্লাসে হিজাবীদের কটাক্ষ করে থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট এবং মদ হাতে ক্লাসে আসতে চেয়েছেন। তার এই বক্তব্য ধর্মীয় অনুশাসন ও দেশের আইনের পরিপন্থী। আমরা তার বক্তব্যের প্রতিবাদ জানাচ্ছি। একই সাথে প্রতিবাদ জানাচ্ছি এরকম মানসিকতার সেইসব শিক্ষকের কাজকে, যারা অনবরত হিজাবকে কটাক্ষ করে আসছেন।"

চাকসুর সহ-দপ্তর সম্পাদক জান্নাতুল আদন নুসরাত বলেন "একজন শিক্ষক, যিনি সমাজের পথপ্রদর্শক হওয়ার কথা, তিনি যখন নারীদের পোশাক নিয়ে বিদ্রূপ করেন, তখন তা একটি পুরো শ্রেণিকে, একটি পরিচয়কে, একটি বিশ্বাসকে অপমানিত করে। আজকের এই প্রতিবাদ কেবল একজন শিক্ষকের শাস্তির দাবিতে নয়। আমাদের প্রতিবাদ সেই মানসিকতার বিরুদ্ধে, যা একজন শিক্ষকের কণ্ঠে বিদ্বেষ জাগায়, একজন নারীর পোশাক নিয়ে উপহাস করতে শেখায় এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতো জায়গাকে বৈষম্যের জায়গায় পরিণত করে। আমরা চাই, আমাদের হিজাবী বোনেরা হোক গর্বিত, নিরাপদ ও মর্যাদাবান। আমরা ন্যায়ের পক্ষে, সম্মানের পক্ষে, মর্যাদার পক্ষে দাঁড়িয়েছি।"

চাকসুর সহ-ছাত্রী কল্যাণ সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদাউস রিতা বলেন, "রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গনযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষকের মন্তব্য নারীর প্রতি অবমাননা এবং নারীর মর্যাদাকে ক্ষুণ্ন করে। তিনি পোশাকের স্বাধীনতা চেয়েছেন অথচ একজন শিক্ষার্থীর বোরকা পড়ার যে স্বাধীনতা, তা তিনি মানতে পারছেন না। আমরা মনে করি এরকম দ্বি-চারিতামূলক আচরণ শিক্ষাঙ্গনে ভারসাম্য নষ্ট করে।"

দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া হল সংসদের বিজ্ঞান ,গবেষণা ও তথ্যপ্রযুক্তি সম্পাদক নিশাত সালসাবিল শিকদার বলেন, "আমাদের নির্বাচিত হিজাব ও নিকাব পরা বোনেরা ডাকসু, জাকসু, রাকসু এবং চাকসুতে নিজেদের যোগ্যতা, দক্ষতা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁরা প্রমাণ করেছেন -হিজাব কখনও কাজের সক্ষমতায় বাধা নয়। হিজাব আমাদের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত, সম্মান ও বিশ্বাসের প্রতীক। একজন শিক্ষকের কাছ থেকে এ নিয়ে কটাক্ষ শুধু হতাশাজনকই নয়, গভীরভাবে উদ্বেগজনকও। আরও দুঃখজনক যে, তিনি মদ্যপানকেও স্বাভাবিক করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন যা সামাজিক অবক্ষয়ের অন্যতম কারণ। আমরা এই অগ্রহণযোগ্য কাজের জন্য তাঁর উপযুক্ত শাস্তির দাবি জানাচ্ছি, যাতে ভবিষ্যতে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আর এধরনের হীন মানসিকতা প্রকাশের সাহস না পান।"

ম্যানেজমেন্ট বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী তাওফিকা রহমান বলেন, "চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অনিন্দিতা সরকার প্রথা হিজাব নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। আমরা তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু, আদৌ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করবে কিনা এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছি।"

দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া হল সংসদের জিএস নাজিফা তাসফিয়াহ বলেন, "ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৮ ধারায়, কেউ কোনো ইলেক্ট্রনিক মাধ্যমে ধর্মীয় অবমাননামূলক বক্তব্য দিলে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের শাস্তব এবং অর্থদন্ডের কথা উল্লেখ আছে। আমরা কী এই আইনগুলো কী শুধু লিখিত আইনই রয়ে যাবে? এগুলোর বাস্তবায়ন কী আমরা কখনোই দেখবো না?"


শিক্ষকের ‘বিতর্কিত’ মন্তব্য, রাবিতে মধ্যরাতে বিক্ষোভ

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
রাবি প্রতিনিধি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আ আল মামুনের বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে মধ্যরাতে বিক্ষোভ করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

সোমবার (২৭ অক্টোবর) দিবাগত রাত ১১টায় বিশ্বিবদ্যালয়ের জোহা চত্বর থেকে তারা এই বিক্ষোভ শুরু করেন।

অধ্যাপক মামুন তার ফেসবুকে রাকসু হল সংসদের নারীদের শপথ গ্রহণের ছবি দিয়ে লেখেন ‘এই ব্যক্তিগত স্বাধীনতা আমি এন্ডর্স করছি। কাল আমি এরকম ব্যক্তিগত স্বাধীনতা পরে ও হাতে নিয়ে ক্লাসে যাবো। পরবো টু-কোয়াটার, আর হাতে থাকবে মদের বোতল। মদ তো ড্রাগ না! মদ পান করার লাইসেন্সও আমার আছে! শিবির আইসেন, সাংবাদিকরাও আইসেন!’

তার এই পোস্টের পরেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুরু হয় ব্যাপক সমালোচনা। পরবর্তীতে তিনি পোস্টটি ডিলিট করে দেন। এরপরই শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভের ডাক দেন। হল থেকে শিক্ষার্থীরা জোহা চত্বরে জড়ো হন। তারপর সেখান থেকে পশ্চিমপাড়ায় মেয়েদের হলগুলোর সামনে দিয়ে বিক্ষোভ নিয়ে যান তারা। এ সময় হল থেকে অন্য মেয়েরাও যুক্ত হন বিক্ষোভে।

এ সময় তারা ‘মামুনের দুই গালে, জুতা মারো তালে তালে’, ‘মামুনের ঠিকানা, এই ক্যাম্পাসে হবে না, ‘মদখোরের ঠিকানা, এই ক্যাম্পাসে হবে না’, ‘তোমার আমার পরিচয়, হিজাব হিজাব’, ‘রাবিয়ানদের অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘জ্বালোরে জ্বালো, আগুন জ্বালো’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।


জরাজীর্ণ বিদ্যালয়ের ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণা, গাছতলায় ক্লাস করছে শিক্ষার্থীরা

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
কেশবপুর (যশোর) প্রতিনিধি

যশোরের কেশবপুর উপজেলার গোপসেনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জরাজীর্ণ ভবন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস পরিত্যক্ত ঘোষণা করায় শিক্ষার্থীরা গাছতলায় ও খোলা আকাশের নিচে ক্লাস করছে। প্রতিষ্ঠানটি ১৯৫৮ সালে প্রতিষ্ঠিত। স্থানীয় শিক্ষা অনুরাগীদের সহায়তায় মাটি দিয়ে গেথে টিন দিয়ে ছাওয়া একটা রুমে ক্লাস নেওয়া হতো। পরবর্তীতে ১৯৯০ সালে তিন রুমবিশিষ্ট সরকারিভাবে একটি ভবন নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে ভবনটি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস পরিত্যক্ত ঘোষণা করেন। ফলে প্রায় দুই শত শিশু খোলা আকাশের নিচে ও গাছতলায় পাঠদান করছেন। এছাড়া ছেলে-মেয়েদের ব্যবহারের জন্য নেই প্রয়োজনীয় ওয়াসরুম। ফলে নানা সমস্যার মধ্যে পাঠদান চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষকরা। প্রকৃতির ইচ্ছায় যেদিন ঝড়-বৃষ্টি হয়, সেদিন আর ঠিকমতো ক্লাস করা হয় না তাদের। নিরুপায় শিক্ষকরাও। লেখাপড়ায়ও ভালো অবস্থানে প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠানটির ব্যাপারে খোঁজ-খবরসহ তথ্য জানতে সেখানে গেলে শিক্ষার্থীসহ স্থানীয় জনতা এই প্রতিনিধিকে ঘিরে ধরে এবং সাংবাদিকদের মাধ্যমে সরকারের কাছে বহুতল ভবন দাবি করেন শিক্ষার্থী-শিক্ষক ও এলাকাবাসী। ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী সোহেল ও জান্নাতুল বলে, বিদ্যালয়ে ক্লাসরুম না থাকায় তারা গাছতলায় ও খোলা আকাশের নিচে ক্লাস করে। যেদিন দুর্যোগ দেখা দেয়, সেদিন আর ক্লাস করা হয় না। এছাড়া প্রয়োজনীয় বাথরুম ও কমনরুম না থাকায় অনেক সমস্যায় পড়তে হয় তাদের। অভিভাবক নজরুল ইসলাম ডালি এবং হাসান আলী খান বলে, প্রতিষ্ঠানটির বিল্ডিং জরাজীর্ণ হওয়ায় প্রাথমিক শিক্ষা অফিস পরিত্যক্ত ঘোষণা করেন আমাদের সন্তানরা খুব কষ্টে ক্লাস করে, আমরা সব সময় আতঙ্কে থাকি কোন সময় কী হয়ে যায়। এরপর এখানে ছেলে-মেয়েদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই তিনি সরকারের কাছে দ্রুত সময়ের মধ্যে শিক্ষার্থীদের জন্য একটি বহুতল ভবন বরাদ্দের দাবি জানান।

প্রতিষ্ঠানের (ভারপ্রাপ্ত) প্রধান শিক্ষক মো. আবুল খালেক বলেন, প্রতিষ্ঠানের জরাজীর্ণ ভবনে ঝুঁকির কারণে পরিত্যাক্ত ঘোষণা করেন যার ফলে শিক্ষার্থীদের গাছতলায় ও খোলা আকাশের নিচে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। আপাতত নিজেদের অর্থায়নে কোনো রকমে একটা টিন সেট করে, খোলা আকাশের নিচে গাছতলায় ক্লাস চালিয়ে যাচ্ছি। এরপর এখানে ছেলে-মেয়েদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই তিনি সরকারের কাছে দ্রুত সময়ের মধ্যে শিক্ষার্থীদের জন্য একটি বহুতল ভবন বরাদ্দের জন্য জোর দাবি জানান।

ভারপ্রাপ্ত সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. জহির উদ্দিন বলেন, আমরা প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে বিদ্যালয়ের ছবি দিয়ে একটি আবেদন পাঠানো হয়েছে। বর্তামনে শিক্ষকদের ক্লাস নিতে খুব সমস্যা হচ্ছে। তিনি ছেলে-মেয়েদের জন্য একটি বহুতল ভবন বরাদ্দ দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করছি।


সুইমিংপুলে ছাত্রীর মৃত্যু, উত্তাল রাবি ক্যাম্পাস

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
রাবি প্রতিনিধি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সুইমিংপুলে সাঁতার কাটতে গিয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সায়মা হোসেনের মৃত্যু হয়েছে। রোববার (২৬ অক্টোবর) বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

ঘটনার পরপরই ক্যাম্পাসে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এবং রাতে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন শিক্ষার্থীরা। তাদের অভিযোগ, এটি নিছক কোনো দুর্ঘটনা নয়; বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, শারীরিক শিক্ষা বিভাগ ও মেডিকেল সেন্টারের অবহেলা এবং দায়িত্বহীনতার কারণেই সায়মার মৃত্যু হয়েছে।

অন্যদিকে, শারীরিক শিক্ষা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মোসা. রোখসানা বেগম প্রাথমিকভাবে দাবি করেছেন, সায়মার মৃত্যু ‘হার্ট অ্যাটাক’-এর কারণে হয়েছে। তবে শিক্ষার্থীরা এই দাবি প্রত্যাখ্যান করে তাৎক্ষণিকভাবে বিক্ষোভ শুরু করেন।

রাত ৯টার পর বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ জানিয়ে তারা ঘটনার সঠিক কারণ উদঘাটন, দায়ীদের বিচারের আওতায় আনা এবং সুইমিংপুল ও চিকিৎসা সেবার নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানান।

এসময় রাকসুর নবনির্বাচিত ভিপি (সহসভাপতি) মোস্তাকুর রহমান জাহিদ বলেন, আমরা এতক্ষণ ধরে আন্দোলন করতেছি, কিন্তু প্রশাসন থেকে প্রতিনিধি আসতে এত সময় লাগে কেন জানি না। প্রশাসন মনে করে ওরা আন্দোলন করতেছে করুক, তারপর যখন ক্লান্ত হয়ে যাবে তখন আমরা যাবো৷ প্রত্যেকটা আন্দোলনেই তারা এমন করেছে। আমাদের ভাই-বোনদের ইচ্ছে করে কষ্ট দিচ্ছে। শুধু মন্নুজান হল না, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেকটা হলের শিক্ষার্থীরা সঠিক তদন্ত ও বিচার চাই। আমরা এখান থেকে বিচার নিশ্চিত করে যাবো ইনশাআল্লাহ।

রাকসুর জিএস (সাধারণ সম্পাদক) সালাহউদ্দিন আম্মার বলেন, কয়েকটা বিষয় প্রশাসনকে অবশ্যই জবাব দিতে হবে। একজন শিক্ষার্থী সাঁতার প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করবে, তাহলে তার ফিটনেস কেন চেক করা হয়নি? ফিটনেস চেক ছাড়া শরীরচর্চা বিভাগ শ্বাসকষ্টের সমস্যা থাকা একজন শিক্ষার্থীকে কীভাবে সাঁতারের প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে অনুমতি দিলো? এটার জবাব তাদের দিতে হবে। সুইমিংপুলে স্বচ্ছ পানি কেন ছিল না এবং আধা ঘণ্টা ধরে একজন শিক্ষার্থী সুইমিংপুলে থাকলেও সেখানে দায়িত্বরত কর্মকর্তারা কেন দেখতে পেলেন না— তারও জবাব দিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, এছাড়াও রাবি মেডিকেল সেন্টারে আগেও বাংলা বিভাগের এক ভাইকে নিয়ে গেলে আধমরা অবস্থায় রামেকে পাঠানো হয়। আজও তারা আমার বোন সায়মাকে সঠিকভাবে কোনো চিকিৎসা দিতে পারেনি কেন? এবং অবশ্যই সায়মা হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত অনতিবিলম্বে নিশ্চিত করতে হবে।


ড্যাফোডিল ও সিটি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

সাভারের আশুলিয়ার খাগান এলাকায় ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে সিটি ইউনিভার্সিটির কিছু শিক্ষার্থীর হামলার অভিযোগকে কেন্দ্র করে দুই ইউনিভার্সিটির মধ‍্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটেছে।

রোববার (২৬ অক্টোবর) দিবাগত রাতে সংঘর্ষের ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শত শত শিক্ষার্থী রাতে ঘটনাস্থলে জড়ো হন। উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা সিটি ইউনিভার্সিটির দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম ও পুলিশ তাদের শান্ত করার চেষ্টা করেন।

পরে প্রক্টর ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনুরোধে শিক্ষার্থীরা ব্যাচেলর প্যারাডাইসের সামনে অবস্থান নেন। এসময় সিটি ইউনিভার্সিটির হামলাকারী শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সন্ধ্যায় ড্যাফোডিলের এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে অশোভনমূলক আচরণ থেকে ঘটনাটির সূত্রপাত। ঘটনাটি ব্যাচেলর প্যারাডাইস নামক একটি ভবনের সামনে। এ নিয়ে দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে তর্কাতর্কি শুরু হয়। পরে রাত ৯টার দিকে সিটি ইউনিভার্সিটির প্রায় অর্ধশত শিক্ষার্থী দেশীয় অস্ত্র ও ইট-পাটকেল নিয়ে ড্যাফোডিল শিক্ষার্থীদের ওই বাসায় হামলা ও ভাঙচুর করলে পরিস্থিতি অশান্ত হয়ে ওঠে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সাভার থানার দু’টি টিম ঘটনাস্থলে মোতায়েন করা হয়।

সংঘর্ষের পর সিটি ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে আগুন জ্বলতে দেখা গেছে। এরআগে রাত ১২টার পর ড্যাফোডিলের শিক্ষার্থীরা সিটি ইউনিভার্সিটির ভেতরে ঢুকে প্রশাসনিক ভবনসহ বিভিন্ন স্থাপনায় ভাঙচুর চালায়। লুট করা হয় কম্পিউটারসহ গুরুত্বপূর্ণ মালামাল, পুড়িয়ে ফেলা হয় তিনটি বাস ও একটি প্রাইভেটকার। আরও পাঁচটি যানবাহন ভাঙচুর হয়।

সংঘর্ষের সময় আতঙ্ক সৃষ্টি করতে একাধিক ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটে। ভোররাত পর্যন্ত চলা এ সংঘর্ষে উভয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। অভিযোগ উঠেছে, দীর্ঘ চার ঘণ্টা ধরে সংঘর্ষ চললেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সহায়তা পাননি শিক্ষার্থীরা। ঘটনাস্থলে এখনো টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে।

তবে সাভার থানার ডিউটি অফিসার এসআই হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে আছেন। পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ঘটনা যেন নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকে সেই চেষ্টা করা হচ্ছে।’


দুর্নীতির অভিযোগে কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন অফিস ঘেরাও, তালা

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নাব্বির আল নাফিজ, কুষ্টিয়া

কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন অফিসের নিয়োগ পরীক্ষায় ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এ অভিযোগের প্রতিবাদে শনিবার দুপুরে ‘ছাত্র জনতা’ ব্যানারে বিক্ষুব্ধ জনতা ওই অফিস ঘেরাও করে বিক্ষোভ মিছিল করেন। পরে তারা কার্যালয়ের প্রধান ফটকে তালা লাগিয়ে দেন।

জানা যায়, গত শুক্রবার সকালে কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন কার্যালয়ের অধীন ৭ ক্যাটাগরিতে বিভিন্ন পদে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। তবে এর আগের রাতে এবং পরীক্ষার দিন সকালে ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. হোসেন ইমামের নিজস্ব বাসা থেকে বেশ কয়েকজন নারী-পুরুষকে ফাইল হাতে বের হতে দেখা যায়।

এ সময় উপস্থিত সাংবাদিকরা তাদের ছবি ও বক্তব্য সংগ্রহের চেষ্টা করলে তারা দ্রুত সরে যান। পরে ঘটনাটির একাধিক ভিডিও ও স্থিরচিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়। তারই ধারাবাহিকতায় বিক্ষুব্ধ জনতা শনিবার দুপুরে সিভিল সার্জন অফিস ঘেরাও করে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। তারা দাবি জানান, নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল করতে হবে এবং ঘটনার সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে হবে।

বিক্ষোভে অংশ নেন চাকরি প্রার্থী ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক নেতা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘এই নিয়োগ পরীক্ষা সম্পূর্ণভাবে ত্রুটিপূর্ণ ও অনৈতিকভাবে পরিচালিত হয়েছে। আমরা শুনেছি আজকেই ফল প্রকাশের পরিকল্পনা আছে। তাই তড়িঘড়ি করে আমরা এই কর্মসূচি দিয়েছি। আজকের মধ্যেই পরীক্ষা বাতিল ও নতুন পরীক্ষার ঘোষণা দিতে হবে, না হলে কাল পুরো কুষ্টিয়া অচল করে দেবো।’

অভিযোগের বিষয়ে কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন ডা. শেখ মোহাম্মদ কামাল হোসেন জানান, বিষয়টি তিনি লিখিতভাবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর জানিয়েছেন।

তার ভাষায়, ‘২৪ অক্টোবর সুষ্ঠু পরিবেশে ১৪টি কেন্দ্রে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিও জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে। বিষয়টি তদন্তের জন্য আমরা মন্ত্রণালয়ে জানিয়েছি।’

অন্যদিকে অভিযুক্ত আরএমও ডা. হোসেন ইমাম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘ভোররাতের ঘটনাটি সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। আমার পৈত্রিক বাড়িতে তিনটি ফ্লোরে আলাদা আলাদা মেস রয়েছে। পরীক্ষার্থীরা সেখানে অবস্থান করছিল, তবে তারা কেনো সাংবাদিকদের দেখে পালিয়েছে, তা আমার জানা নেই।’

বিক্ষোভের সময় কার্যালয়ের ভেতরে অবস্থান করছিলেন সিভিল সার্জন। অফিসের প্রধান ফটকে তালা ঝুলে থাকায় কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। বিকেল পর্যন্ত বিক্ষোভ অব্যাহত ছিল।

এ ঘটনায় এখনো জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের অভ্যন্তরে বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে।


banner close