শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪

প্রধানমন্ত্রীর কাছে খোলা চিঠিতে যা লিখলেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা

ছবি: দৈনিক বাংলা
ঢাবি প্রতিনিধি
প্রকাশিত
ঢাবি প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ২ এপ্রিল, ২০২৪ ২৩:০৫

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি চলমান থাকবে কি থাকবে না, এ বিষয়টিকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগ এবং বুয়েট শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি অবস্থানের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে খোলা চিঠি লিখেছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা।

মঙ্গলবার এই খোলা চিঠি প্রকাশ করা হয়েছে।

খোলা চিঠি

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,

আমরা বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমানে স্নাতক পর্যায়ে অধ্যয়নরত পাঁচ হাজারেরও অধিক শিক্ষার্থী আপনার প্রতি যথাযথ সম্মান ও শ্রদ্ধা রেখে সবিনয়ে আমাদের দু-চারটি কথা এবং আর্জি আপনার কাছে নিবেদন করছি।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি আমাদের স্বপ্নসারথি, বঙ্গবন্ধুর দর্শন অনুসরণ করে আপনি দৃঢ় পায়ে এগিয়ে চলেছেন। আপনি দেশকে জ্ঞানে-বিজ্ঞানে এগিয়ে যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে নিরলস শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন, সেই একই স্বপ্ন বুকে ধারণ করে নিজেদের শ্রম-মেধা-মনন কাজে লাগিয়ে নিরঙ্কুশ অধ্যবসায়ের পর আপনার গর্বের এই দেশসেরা প্রতিষ্ঠানে আমরা পড়ার সুযোগ করে নিয়েছি।

আমরা করোনার সেই বিপদ মুহূর্তে বানিয়েছি লো কষ্ট ভ্যান্টিলেটর, ক্লিন সিটির আশায় পরিত্যক্ত মাস্ক থেকে বানাচ্ছি কনক্রিট, আরও খুঁজছি বিদ্যুতের সহজ উপায়, বানাচ্ছি আর্টিফিশিয়াল আর্মস, সার্জিক্যাল টুলস, পদ্মা সেতু নির্মাণে আমাদের শিক্ষক এবং সাবেক শিক্ষার্থীদের অবদান অনবদ্য।

শুধু দেশেই না, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অন্য দেশের দলগুলো- যাদের জন্য বরাদ্দ থাকে আমাদের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি অর্থ এবং গবেষণাগারের সুবিধা- তাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আমরা ছিনিয়ে আনছি বিজয়। আপনি নিঃশর্তভাবে আমাদের অর্থ সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন এসব গবেষণা খাতে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি আমাদের অভিভাবক। আমরা নিজেদের মেধা ও শ্রমের সবটুকু দিয়ে বিজ্ঞানের অবাক করা দুনিয়ার একটা অংশের নেতৃত্বে বাংলাদেশকে দেখতে চাই। আমরা ত্রাসের রাজনীতির মারপ্যাঁচ বুঝি না। আমরা শুধু দেশকে, দেশের মানুষকে ভালোবাসতে জানি। নিজেদের কাজ দিয়ে তা আমরা প্রমাণ করতে বদ্ধপরিকর।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি মানবকল্যাণব্রতী। আপনি আমাদের সবার অভিভাবক, দেশের অভিভাবক। আমরা জানি দেশের কোথাও কোনো দুঃখজনক পরিস্থিতি চললে, দেশের কোথাও সংকট চললে, আপনার হৃদয়ে গভীর রক্তক্ষরণ হয়।

বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, আশির দশকে স্বৈরাচার পতন আন্দোলনে এ দেশের আপামর জনগোষ্ঠীর মধ্যে জনমত গঠনে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। অথচ বিগত বছরগুলোতে আমরা বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির নামে ক্ষমতার নেতিবাচক দিকগুলোই প্রত্যক্ষ করেছি। ছাত্ররাজনীতির মাধ্যমেই শিক্ষার্থীদের মাঝে সূচনা ঘটেছে আধিপত্য, দাপট, র‌্যাগিং, শিক্ষকদের অপমান, চাঁদাবাজি, শিক্ষার্থী নিপীড়ন, খুনোখুনিতে মেতে ওঠার মতো ঘটনা এবং এর ব্যাপ্তি এতটাই ভয়াবহ ছিল যে, এর চরমতম মূল্য হিসেবে আমরা আমাদের কেমিকৌশল ৯৯-এর সাবেকুন্নাহার সনি আপু, যন্ত্রকৌশল ০৯-এর আরিফ রায়হান দ্বীপ ভাই এবং সর্বশেষ তড়িৎকৌশল ১৭-এর আবরার ফাহাদ ভাইকে হারিয়েছি।

শুধু আবরার ফাহাদ ভাইয়ের হত্যাকাণ্ডই নয়, এর আগেও অসংখ্য শিক্ষার্থীকে র‌্যাগিংয়ের দ্বারা কিংবা ছাত্ররাজনৈতিক দাপটের দ্বারা অমানুষিকভাবে নিপীড়িত হওয়ার ঘটনা রয়েছে, যা আমাদের বুয়েটের র‌্যাগিং স্টোরি আর্কাইভে সারি সারি আকারে লিপিবদ্ধ আছে।

বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার শাহরিয়ারকে স্ট্যাম্প দিয়ে রাতভর বেধড়ক মারধর করা হয়। ১৭ ব্যাচের মেহজাদ গালিবকে নগ্ন করে সোহরাওয়ার্দী হলের ছাদে তুলে স্ট্যাম্প দিয়ে সারারাত মারা হয়। ১৫ ব্যাচের সামিউত তৌসিফকে মেরে হাত-পা ভেঙে দেয়। মারতে মারতে তিনটা স্ট্যাম্প ভেঙে ফেলা হয়। সামিউত তৌসিফ ছিলেন এক মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান, তার চাচা ছিলেন মুক্তিযুদ্ধে শহীদ। তার লিগামেন্ট ছিঁড়ে পায়ে ফ্র্যাকচার হয়ে যায়।
সালাম না দেওয়ায় সাখাওয়াত অভির হাত ভেঙে ফেলে আবরার ফাহাদের হত্যাকারী অমিত সাহা। সৌমিত্র লাহিড়ী থাপ্পড় দিয়ে কানের পর্দা ফাটিয়ে ফেলে একজনের। এ রকম আছে আরও অসংখ্য কাহিনি।

দাপটের আড়ালে ছাত্ররাজনীতি আমাদের ক্যাম্পাসে উন্মুক্তভাবে বিচরণের অধিকার, ক্যাম্পাসের সুস্থ একাডেমিক পরিবেশ, আমাদের স্বাধীনতা, হলের মেসের টাকার সৎ ব্যবহার, ক্যাম্পাস মাদকমুক্ত থাকা, নবীন আগত বুয়েটিয়ানদের একটি সুন্দর বিশ্ববিদ্যালয় জীবন উপভোগের অধিকার-সবকিছুই হারিয়ে গিয়েছিল। ছাত্ররাজনীতিবিহীন বুয়েটের পরিবেশ ছিল সর্বোচ্চ নিরাপদ ও শিক্ষাবান্ধব। মৌলবাদী শক্তিকেও রুখে দিতে আমরা ঐক্যবদ্ধ।

বুয়েট শিক্ষার্থীরা বরাবরই একটি নিরাপদ এবং সুস্থ ক্যাম্পাস চেয়ে এসেছে, যেখানে ক্ষমতা-চর্চার লোভ-লালসার শিকলে আবারও জিম্মি হয়ে যাবে না সবার নিরাপত্তা, শিক্ষাঙ্গনের উপযুক্ত পরিবেশ।

সুস্থ নেতৃত্ব এবং নৈতিকতা বিকাশের সব উপাদান ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির উপস্থিতি ছাড়াও গত কয়েক বছরে উপস্থিত ছিল এবং এতে সুস্থ নেতৃত্বের চর্চায় শিক্ষার্থীরা তাদের উপযুক্ত পরিবেশ পেয়েছে।

প্রতিটি ডিপার্টমেন্টের বার্ষিক উৎসব আয়োজন, প্রতিটি ডিপার্টেমেন্টের নিজস্ব সহশিক্ষা কার্যক্রম এবং একাডেমিক অর্গানাইজেশন, সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজ, বিভিন্ন ক্লাবের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে আনন্দের সঙ্গে সম্পন্ন হচ্ছে।

আবাসিক হল এবং ক্যাম্পাসে কোনো প্রকার রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং ক্ষমতা-চর্চা ছাড়াই বিভিন্ন জাতীয় দিবসে সভা-সেমিনার আয়োজন, জাতীয় সহশিক্ষা কার্যক্রমের বিভিন্ন প্রতিযোগিতা আয়োজন, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহশিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ এবং গুরুত্বপূর্ণ অর্জনসহ ক্যাম্পাসের ভেতরে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সফলভাবেই আয়োজিত হয়েছে।

বর্তমান বুয়েটে শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশ থাকায় নিজ নিজ প্রকৌশল ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি গবেষণামুখী কাজে মনোনিবেশ করতে অনুপ্রাণিত হওয়ার হার উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

একটি রাজনীতিবিহীন নিরাপদ ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য দেশব্যাপী জনগণের কাছে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত এবং সমাদৃত হয়েছে। রাজনীতিমুক্ত বুয়েট ক্যাম্পাসের গত চার বছরেরও বেশি সময় ধরে আমাদের এসব সফলতা আমাদের জানান দেয়, আমরা আমাদের বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি ছাড়াও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য যে প্রযুক্তিজ্ঞানসম্পন্ন নেতৃত্ব গঠন এবং বিকাশ প্রয়োজন, তা করতে পারি। স্মার্ট বাংলাদেশ এর লক্ষ্য অর্জনে আমরা নিরন্তর কাজ করে যেতে পারি।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি জেনে খুশি হবেন যে বাকি সব প্রকৌশল-প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বুয়েটেও থিসিসের জন্য রিসার্চ টাস্ক চতুর্থ বর্ষে আবশ্যক হলেও আমাদের প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা আগে থেকে বিভিন্ন রিসার্চ প্রজেক্টে নিজ ইচ্ছায় অংশগ্রহণ করছে।
এ ছাড়া, দেশে-বিদেশে বিভিন্ন প্রকৌশল প্রতিযোগিতায়, বিতর্ক প্রতিযোগিতায়, কুইজ প্রতিযোগিতায়, সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় বুয়েটিয়ানদের সাফল্য গত সাড়ে চার বছরে সুস্পষ্টভাবে বেড়েছে।

আপনি জেনে আরও খুশি হবেন যে, তথ্য-প্রযুক্তিতে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি-আন্তর্জাতিক কম্পিউটার প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় আমাদের অর্জন স্বর্ণপদক। ইয়ং ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সাইন্টিস্ট অ্যাওয়ার্ডের মতো বিশ্ব সমাদৃত অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে বুয়েটের ছয়জন এবং শুধু গত বছরেই চার শিক্ষার্থী।

জন হপকিন্স রাইস ইউনিভার্সিটির মতো বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠানের হেলথকেয়ার চ্যালেঞ্জে আমাদের উপস্থিতি এবং পুরস্কার প্রাপ্তি এখন নিয়মিত। থাইল্যান্ড-মালয়েশিয়ার আইইইই কম্পিটিশনে আমাদের বুয়েটিয়ানদের বানানো ড্রোন একের পর এক পুরস্কার জিতেছে। মার্স রোভার চ্যালেঞ্জেও আমাদের দলের সাফল্য নিয়মিত। শুধু প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নয়, সর্বশেষ বঙ্গবন্ধু ইনোভেশন গ্রান্টে উদ্যোক্তা হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে বুয়েটের এক স্টার্টআপ।

একইসঙ্গে সিনিয়র-জুনিয়র কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নামিয়েছে বিভিন্ন ইঞ্জিনিয়ারিং ফেস্ট, ডিপার্টমেন্টাল ডে- যেখানে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসা আমাদের সহপাঠীরাও যথেষ্ট খুশি হয়েছে আমাদের আয়োজনে।

এ আয়োজন ও অংশগ্রহণ সম্ভব হয়েছে শুধু একটি নিরাপদ ছাত্ররাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসের কারণে। যেখানে হল রেসিডেন্ট কোনো শিক্ষার্থীকে চিন্তায় থাকতে হয়নি যে হলে তাকে র‌্যাগের সম্মুখীন হতে হবে বা এটাচড কোনো শিক্ষার্থীরও উদ্বেগ ছিল না যে ক্যাম্পাসে আসলে তাকে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সম্মুখীন হতে হবে।

ছাত্ররাজনীতি বন্ধ হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত প্রতিটি জাতীয় দিবস সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শনপূর্বক আমরা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে স্বতঃস্ফূর্তভাবে পালন করে আসছি। আমরা শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ অবস্থান থেকে দেশের জাতীয় মূল্যবোধ ও ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মনে-প্রাণে ধারণ করি।

দেশের গৌরবময় ইতিহাস, ত্যাগ-তিতিক্ষা আমরা অন্তরে লালন করি, ভবিষ্যতে পথচলায় অনুপ্রেরণা নেই। আমরা বিশ্বাস করি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতীয় মূল্যবোধ, দেশের প্রতি দায়িত্ববোধ আমাদের সবার জন্যই প্রযোজ্য এবং একান্ত পালনীয়। আমরা সাংগঠনিক রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে এসেই এই সচেতনতা রাখি।

অথচ, অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে কতিপয় ব্যক্তি বা গণমাধ্যমের তৎপরতায় ছাত্ররাজনীতিবিহীন বুয়েট ক্যাম্পাসকে জাতীয় চেতনার বিরোধী মতাদর্শের স্থান হিসেবে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। বিষয়টিতে আমরা অত্যন্ত ব্যথিত।

আমরা বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে দেশের সংবিধান ও প্রচলিত আইনের ব্যাপারে যথেষ্ট শ্রদ্ধাশীল। তাই দেশের যেকোনো স্থানের মতো আমাদের ক্যাম্পাসকে আমরা অবশ্যই যেকোনো প্রকারের সন্ত্রাস, মৌলবাদ বা নিষিদ্ধ গোষ্ঠী থেকে নিরাপদ রাখতে সর্বদা তৎপর।

সাম্প্রতিক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অনেক মহল থেকেই বলা হচ্ছে, ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ মৌলবাদী বা সন্ত্রাসী সংগঠনের কার্যক্রম বিদ্যমান এবং এর ফলশ্রুতিতেই তারা বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির চর্চার পক্ষে যুক্তি দিয়ে যাচ্ছেন। আমরা আপনাকে নির্দ্বিধায় বলতে চাই, আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা যদি যেকোনো মুহূর্তে এসব নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর যেকোনো কার্যকলাপ ক্যাম্পাসে চলমান দেখি, শিগগির তার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেব এবং প্রশাসনকে অবহিত করব।

এমনকি ভবিষ্যতে যদি ক্যাম্পাসে এ ধরনের কর্মকাণ্ডের প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে সেটার বিরুদ্ধেও আমাদের অবস্থান দৃঢ়।

বুয়েট ক্যাম্পাসে এই চার বছর আমরা নির্বিঘ্নে কাটিয়েছি, সেখানে ছায়া হয়ে ছিলেন আমাদের শিক্ষকরা। আমাদের মতো দেশজুড়ে লাখো শিক্ষার্থী এমন একটা ক্যাম্পাসের স্বপ্ন নিয়েই বাড়ি ছাড়ে, যেখানে তাদের ওপর অকারণে জুলুম হবে না, নির্যাতিত হতে হবে না, দিন-রাত কারও ভয়ে তটস্থ থাকতে হবে না, বাবা-মাকে দুশ্চিন্তায় চোখের পানি ফেলতে হবে না।

চার বছর আগে আপনার দৃঢ় এবং দ্রুত হস্তক্ষেপে আমরা নতুন করে এই ক্যাম্পাসে বাঁচতে শিখেছি। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস এই ছোট্ট একটা চাওয়ার কারণে আমরা প্রতিনিয়ত পাচ্ছি হুমকি, হচ্ছি লাঞ্ছিত, অপদস্থ।

আমরা, আমাদের ছোট ভাই-বোনেরা আরও একবার সেই অন্ধকার দিনগুলোর সাক্ষী হতে চাই না। মাননীয় উপাচার্য এবং সব শিক্ষকের প্রতি আমাদের পূর্ণ আস্থা আছে। আমরা জানি তারা তাদের সন্তানদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তায় সর্বদা সচেষ্ট আছেন এবং থাকবেন।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার কাছে সবিনয়ে অনুরোধ, আপনি আমাদের পাশে দাঁড়ান। আপনি সব সময় শিক্ষার্থীদের পাশে থেকেছেন। আমরা জানি, এই দুর্দিনে আপনি আমাদের ছেড়ে যাবেন না।

আমাদের স্বনামধন্য অ্যালামনাই, বুয়েটের অধ্যাপক ইমেরিটাস, প্রফেসর ড. আইনুন নিশাত বলেছেন যে, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নতুন অধ্যাদেশ করে শিক্ষকদের রাজনীতি, রাজনৈতিক কার্যকলাপ ইত্যাদির অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও বুয়েটের জন্য অধ্যাদেশের খসড়া যখন বঙ্গবন্ধুর সামনে উপস্থাপন করা হয়, তখন তিনি বলেছিলেন যে এই দুটো বিশ্ববিদ্যালয় নষ্ট করা চলবে না। খসড়া অর্ডিন্যান্স বঙ্গবন্ধু ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। বুয়েটের শিক্ষকরা তার সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করেছিলেন। এই এজেন্ডাতে তিনি দেখা করতে রাজি হননি। তখন শিক্ষকরা কথা বলতেন তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী ইউসুফ আলীর সঙ্গে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বুয়েটের পড়াশোনার পরিবেশের গুরুত্ব, দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নে বুয়েটের প্রকৌশলী এবং দক্ষ প্রযুক্তিবিদের গুরুত্ব বঙ্গবন্ধুর চিন্তায় প্রাধান্য পেয়েছে সবসময়। আপনারা সবাই জানেন, দেশের জন্য এই সময়ে মেধাবী ও দক্ষ প্রকৌশলীর গুরুত্ব কতটা।

আমরা উন্নত বিশ্বের দিকে তাকিয়ে দেখি, তারা তাদের জ্ঞান বিজ্ঞানের প্রসার, কাঠামোগত উন্নয়নকে নিরবচ্ছিন্ন করার লক্ষ্যে বিশেষভাবে তাদের প্রকৌশলীদের সমৃদ্ধ করার ব্যবস্থা করছে। কিন্তু বলতে ভীষণ কষ্ট হয়, অনেক কষ্টে পাওয়া সেই আকাঙ্ক্ষিত পরিবেশ এবং ভবিষ্যৎ প্রকৌশলীরা আজ ছাত্ররাজনীতির করাল গ্রাসের থাবা থেকে নিজেকে রক্ষার যুদ্ধ করতে করতে জর্জরিত।

এই বিদ্যাপীঠে ঠিকমতো রুটিনমাফিক পড়াশোনা ও গবেষণায় মনোনিবেশ করার পর কোনো শিক্ষার্থীর পক্ষে রাজনৈতিক কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার সময় দেওয়া সম্ভব নয়। অত্যন্ত ভারাক্রান্ত মন নিয়ে বলছি, বঙ্গবন্ধুর ভালবাসার মাটিতে দাঁড়িয়ে আজ এই ভবিষ্যৎ প্রকৌশলীদের দিনের পর দিন রাস্তায় থাকার কথা নয়।

আমাদের চাওয়া, বুয়েটকে ঘিরে আমাদের জাতির জনকের যে ভিশন ছিল, তাকে বাস্তবায়ন করা হোক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বুঝতে পেরেছিলেন যে বুয়েটের প্রকৃতি ভিন্ন। তাই তিনি নিজে রাজনীতির আওতা থেকে এই বিশ্ববিদ্যালয়কে বাইরে রেখেছিলেন। আজ যখন তারই গড়ে তোলা রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা বুয়েটের মতো বিশেষায়িত একটি বিশ্ববিদ্যালয়কে যেকোনো মূল্যে রাজনীতির আওতায় আনার কথা বলে, আমরা বিশ্বাস করি তখন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ ও সিদ্ধান্তকে অপমান করা হয়।

দেশমাতা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার প্রতি আমাদের আকুল আবেদন, বুয়েটকে নিয়ে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, যে পলিসি গ্রহণ করেছিলেন, তার বাস্তবায়ন করুন। বুয়েটকে ছাত্র রাজনীতির বাইরে রাখুন, প্রয়োজনে আইন সংস্কার করে হলেও। কারণ সুবিচারের জন্যই আইনের সৃষ্টি।

আমাদের অনুরোধ, আপনি দয়া করে আমাদের ক্যাম্পাসে আসুন। ছাত্ররাজনীতিহীন বুয়েট গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষার্থীদের জন্য যে আদর্শ ক্যাম্পাস হয়ে উঠেছে, সেটা আমরা আপনাকে দেখাতে চাই। আমরা আপনাকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, আমরা প্রযুক্তিবিদ্যায় বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে পেছনে ফেলে দেব খুব শিগগির।

আহসান উল্লাহ হল আয়োজিত নবীনবরণ ও সমাপনী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপ-উপাচার্য মহোদয় বলেছিলেন, ‘ছাত্ররাজনীতিবিহীন ক্যাম্পাসে আমরা ভালো আছি, সৃজনশীল কাজ করছি, আমরা র‌্যাঙ্কিংয়ে ফোকাস করছি।

সেই অনুষ্ঠানে স্যার আরও বলেন, ‘ইউনিভার্সিটি শুড গো হায়ার। আমি ইন্টারভিউ দিয়েছি প্রথম আলোতে, আমরা কিছু পলিসি রোল আউট করেছি। যদি পলিসিগুলো বাস্তবায়িত হয়, তাহলে ডাউন দ্য রোড মেবি উইদিন ফাইভ-সিক্স ইয়ার্স, তোমরা এই বুয়েটের র‌্যাঙ্কিং ৫০-এর মধ্যে দেখতে পারবা।’
শেষ কয়েক বছর এই প্রত্যয় নিয়েই প্রতিটি প্রকৌশল বিভাগে আমরা অক্লান্ত পরিশ্রম করছি, ইতোমধ্যে যার ফলও পেতে শুরু করেছি। আমাদের এই পথচলা আপনিই নির্বিঘ্ন রাখতে পারেন। সেই আশাতেই এই চিঠি। আমরা আপনার হাজারো সন্তান-আপনার সহযোগিতার প্রতীক্ষায় আছি।

নিবেদক

বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা


প্রায় তিনশটি কক্ষে ভাঙচুর করা হয়েছে: ঢাবি উপাচার্য

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ঢাবির ক্ষতিগ্রস্ত হলগুলো শুক্রবার পরিদর্শন করেন ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
ঢাবি প্রতিনিধি

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) প্রায় ৩০০টি কক্ষ ভাঙচুর করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল। আজ শুক্রবার সকালে ঢাবির ক্ষতিগ্রস্ত রোকেয়া হল এবং স্যার এ এফ রহমান হল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য দেন তিনি।

উপাচার্য বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইতিমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হলসমূহের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করেছে। ইঞ্জিনিয়ারিং ডিভিশন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত রুমগুলোর অ্যাসেসমেন্ট করেছি। কারণ এই অ্যাসেসমেন্ট ছাড়া মঞ্জুরি কমিশন থেকে আর্থিক বরাদ্দ পাওয়া সম্ভব নয়। এই অ্যাসেসমেন্টের ওপর ভিত্তি করে আমরা মঞ্জুরি কমিশন থেকে আর্থিক বরাদ্দ চাইব। সেই বরাদ্দ দিয়ে আমরা ৩০০টি রুম সংস্কার করব। এ ছাড়া আরও বহু স্থাপনায় আঘাত করা হয়েছে। সেগুলোও রিপেয়ার করার পরিকল্পনা আছে আমাদের। রুমগুলোকে যখন আমরা সংস্কার করে শেষ করব, দেশব্যাপী যখন একটা স্থিতিশীলতা আসবে, শিক্ষার্থীদের যখন আমরা আশ্বস্ত করতে পারব পাশাপাশি হলগুলো যখন প্রস্তুত হবে তখন আমরা খোলার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেব।

কতদিনের হল খোলা হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মঞ্জুরি কমিশন থেকে আমাদের অর্থপ্রাপ্তির বিষয় রয়েছে। তাদের আবার মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদনের প্রয়োজন রয়েছে। অর্থ পেলে সেটি আবার টেন্ডার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। টেন্ডার প্রাপ্তির পরে সুনির্দিষ্টভাবে বলা সম্ভব কবে নাগাদ আমাদের এই কাজ শেষ হবে এবং কবে নাগাদ হলগুলো খোলা হবে।

ঘটনার দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা আর প্রস্তুতি নিয়ে উপাচার্য বলেন, সেদিন সংস্কারপন্থি শিক্ষার্থীদের প্রোগ্রাম ছিল দুপুর ১২টার সময় আর ছাত্রলীগের প্রোগ্রাম ছিল তিনটার সময়। আমাদের প্রক্টরিয়াল টিম শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য প্রস্তুত ছিল। বিকেল ৩টার দিকে সংস্কারপন্থি শিক্ষার্থীদের একটি অংশ যখন হল পাড়ার দিকে আসে সেই দুপুরের সময় আমাদের প্রভোস্টরাও হলে ছিল না। প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যদেরও বিষয়টি জানা ছিল না। আমি খবর পাওয়ার পর প্রক্টরিয়াল টিম এবং প্রভোস্ট মহোদয়দের বিষয়টি অবহিত করি। ততক্ষণে মারামারি শুরু হয়ে যায়। তখন দেখি দুই পক্ষের হাতেই লাঠি। এই সময় প্রক্টোরিয়াল টিমও সেখানে পৌঁছাতে পারেনি। আর প্রভোস্টরাও আটকা পড়েছে বিভিন্ন জায়গায়। তার ওপর শিক্ষার্থীরা বেশিরভাগই অপরিচিত। তাদের অনেকেই প্রক্টোরিয়াল টিমকে চেনে না।

তিনি বলেন, আমাদের প্রস্তুতির কোনো ঘাটতি ছিল না। সংস্কারপন্থি শিক্ষার্থীদের প্রোগ্রাম শেষে অন্যরা তাদের প্রোগ্রাম করবে সেজন্য আমাদের প্রক্টরিয়াল টিম প্রস্তুত ছিল। কিন্তু আমাদের যদি জানা থাকতো যে, সেখানকার একটি মিছিল এদিকে আসবে তখন আমাদের সেই প্রস্তুতিটাও থাকত। আকস্মিকভাবে এটি ঘটেছে। এই ধরনের অবস্থা কন্ট্রোল করা- যখন সবার হাতে লাঠি তখন আমাদের প্রচেষ্টা স্বত্বেও এইটি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এই অবস্থায় আমাদের যতটুকু করণীয় ছিল আমরা আমাদের দায়িত্বটুকু পালন করেছি।

উপাচার্য বলেন, ১৫ তারিখ যে সংঘর্ষটি হয়েছে সেটি পূর্ব থেকেই আমাদের প্রক্টরিয়াল টিমের জানা ছিল না। প্রক্টরিয়াল টিমকে অবহিত করা হয়নি। দুপুরে আমাদের প্রভোস্টরা যখন খেতে গিয়েছে সেই সময় এই ঘটনাটি ঘটে যায়।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের কাছ থেকে আর্থিক বরাদ্দ পাওয়া সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া সম্পন্নের মাধ্যমে হলসমূহ সংস্কার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা হবে বলে উপাচার্য আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

পরিদর্শনের সময় ঢাবি প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূইয়া, সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক আবু হোসেন মুহম্মদ আহসান এবং সংশ্লিষ্ট হলের প্রাধ্যক্ষরা উপস্থিত ছিলেন।

৬ ঘণ্টা অবস্থানের পরও পুলিশকে হলে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি

উপাচার্য বলেন, ১৫ জুলাই বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত শহীদুল্লাহ হলের সামনে যেই ঘটনা ঘটেছে সেসময়ও আমরা পুলিশকে শহীদুল্লাহ হলে প্রবেশ করতে বারণ করেছি। এই হলের সামনে পুলিশ ৬ ঘণ্টা অবস্থান করেছে তারপরও কিন্তু আমরা তাদের ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দেইনি। পরের দিন আমরা যখন হলগুলো বন্ধ করে দিয়েছি সেদিনও পুলিশ হলগুলোতে প্রবেশ করার জন্য চেয়েছিল আমরা তাদের সেই অনুমতিও দেইনি। পুলিশ তাদের নিজস্ব কোর্স অফ অ্যাকশন হিসেবে যা করেছে তা তারা নিজেরাই করেছে।

শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্যই ক্যাম্পাসে পুলিশের অবস্থান

উপাচার্য বলেন, পুলিশ যে ক্যাম্পাসে এসেছে সেটি আমাদের সংস্কারপন্থি শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা ভেবেই তাদের আসতে হয়েছে। কখনো কখনো এটি তারাও চেয়েছে। তিনি বলেন, ১৬ তারিখ সংস্কারপন্থি শিক্ষার্থীদের প্রোগ্রাম ছিল শহীদ মিনারে আর ছাত্রলীগের প্রোগ্রাম ছিল রাজু ভাস্কর্যে। দু’পক্ষই সংঘর্ষে লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা থেকে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্যই শেখ রাসেল টাওয়ারের সামনে আমরা পুলিশকে অবস্থান নিতে বলেছি। তাদেরকে এও বলেছি তারা যেন কোন টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ না করে।

উপাচার্য বলেন, ক্যাম্পাসের নিরাপত্তার জন্যই পুলিশ ক্যাম্পাস অবস্থা নিয়েছে। কখনো কখনো আমরা শুনেছি বাহির থেকে হলগুলোকে আক্রমণ করা হবে, কখনো শুনেছি বহিরাগতরা আক্রমণ করবে আবার কখনো শুনেছি প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্র সংগঠনের কর্মীরা আক্রমণ করবে। সেই মুহূর্তে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টি ছিল আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তাকে প্রাধান্য দিয়েই আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদক্ষেপগুলো নিয়েছি।

সংঘর্ষ শুরুর দিন হতে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের পরের দিন পর্যন্ত প্রক্টরিয়াল টিম এবং হলগুলোর প্রাধ্যক্ষ এবং হাউজ টিউটরবৃন্দ সারারাত জাগ্রত ছিলেন দাবি করে উপাচার্য বলেন, ১৫ থেকে ১৮ জুলাই পর্যন্ত আমাদের প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যরা সারারাত জাগ্রত ছিল আর দিনভর কাজ করেছে। হলগুলোর প্রভোস্ট এবং হাউস টিউটররাও সারা রাত জাগ্রত ছিল। কখনো কখনো আমরা রাতের বেলা জুমে মিটিং করে প্রভোস্টদের ইনস্ট্রাকশন দিয়েছি। আমাদের যতটুকু ক্যাপাসিটি ছিল সেই ক্যাপাসিটি থেকেই শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি।

উপাচার্য বলেন, শিক্ষার্থীদের এই সংস্কার আন্দোলন যখন শুরু হয় তখন থেকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধি দল সরকারের বিভিন্ন ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা করেছে আর সেই আলোচনার সুযোগ করে দিয়েছি আমরা। আমার পাশের রুমেই প্রায় ছয়/সাত দিন অর্থাৎ ৮ থেকে ১৪ জুলাই পর্যন্ত তারা সেই আলোচনাটি করেছে। আমরাও চেয়েছি এই বিষয়টির যেন দ্রুত গতিতে সমাধান হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলাকালীন সময় অর্থাৎ ১৬ জুলাই রাত থেকে পরদিন দুপুর পর্যন্ত বিভিন্ন হল থেকে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বের করে দিয়ে হলসমূহে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা হবে মর্মে একাধিক বিজ্ঞপ্তিতে হল প্রাধ্যক্ষের স্বাক্ষর নেয় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। পরে আজ ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি চলবে’ মর্মে উপাচার্য বক্তব্য দিয়েছেন দাবি করে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে দেশের বেসরকারি একটি টিভি চ্যানেল।

তবে এই ধরনের কোনো বক্তব্য দেননি উল্লেখ করে উপাচার্য বলেন, চ্যানেলটির সেই প্রতিবেদক উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে এই তথ্যটি ছড়িয়েছে।

উপাচার্য দৈনিক বাংলাকে বলেন, ছাত্ররাজনীতি সংক্রান্ত কোনো বক্তব্য আমি দেইনি। কোনো সাংবাদিক আমাকে এটি নিয়ে কোনো প্রশ্নও করেনি। আমার সম্পূর্ণ ভিডিও ইউটিউবে আছে। যমুনা টিভির সাংবাদিক উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে এই তথ্যটি ছড়িয়েছে। এখন সেটি তাদের ফেসবুক এবং ইউটিউব থেকে সরিয়ে দেবে বলেছে।


নতুন করে এইচএসসির আরও চার পরীক্ষা স্থগিত

ফাইল ছবি
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সারা দেশে সহিংস কর্মকাণ্ডের কারণে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিবেচনায় চলমান এইচএসসির আগামী সপ্তাহের আরও চারটি পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। পরীক্ষাগুলো আগামী ২৮, ২৯, ৩১ জুলাই ও ১ আগস্ট হওয়ার তারিখ ছিল। এ নিয়ে চলমান এইচএসসি পরীক্ষার ৮টি পরীক্ষা স্থগিত করা হলো।

আজ বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানিয়েছে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার। তিনি জানান, দেশের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পরীক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

নতুন করে চারটি পরীক্ষা স্থগিত হওয়ার আগে এসব পরীক্ষার বিষয়ে তপন কুমার সরকার জানান, আগামী ১১ আগস্টের পর এসব পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। তবে তারিখ জানানো হয়নি।

এর আগে, কোটা সংস্কার নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিবেচনায় প্রথমে ১৮ জুলাইয়ের, পরে ২১, ২৩ ও ২৫ জুলাইয়ের এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিত করে আন্তঃশিক্ষাবোর্ড সমন্বয় কমিটি।


স্থগিত হওয়া এইচএসসি ও সমমানের সব পরীক্ষা ১১ আগস্টের পর

ফাইল ছবি
আপডেটেড ২৫ জুলাই, ২০২৪ ১৪:৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদক

শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিবেচনায় কোটা সংস্কারের আন্দোলন ঘিরে দেশব্যাপী সহিংসতার কারণে ২১, ২৩ ও ২৫ জুলাইয়ের সব বোর্ডের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। স্থগিত হওয়া পরীক্ষাগুলো আগামী ১১ আগস্টের পর অনুষ্ঠিত হবে।

আজ বৃহস্পতিবার আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার গণমাধ্যমকে বলেন, স্থগিত হওয়া সব পরীক্ষা ১১ আগস্টের পর অনুষ্ঠিত হবে।

চলমান এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার সূচি অনুযায়ী পরবর্তী পরীক্ষা আগামী ২৮ জুলাই যথারীতি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। তবে বিদ্যমান পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ায় আর কোনো পরীক্ষা স্থগিত হতে পারে কিনা জানতে চাইলে অধ্যাপক তপন বলেন, এখনও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। কোনো সিদ্ধান্ত নিলে জানানো হবে।

গত ৩০ জুন থেকে সিলেট বোর্ড ছাড়া সারা দেশে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়। তবে বন্যার কারণে সিলেট বোর্ডের পরীক্ষা ৯ জুলাই শুরু করা হয়।


২৮ জুলাই থেকে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি শুরু

প্রতীকী ছবি
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে দেশের চলমান পরিস্থিতিতে চলতি ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। আগামী ২৮ জুলাই থেকে আবারও শুরু হবে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির কার্যক্রম। এ প্রক্রিয়া চলবে ১ আগস্ট পর্যন্ত।

আজ বুধবার আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক তপন কুমার সরকারের সই করা জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

এতে বলা হয়, ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে অনলাইনের মাধ্যমে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের কলেজে ভর্তি কার্যক্রম অনিবার্য কারণে বন্ধ আছে। দেশের সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহে ভর্তি কার্যক্রমের সময়সীমা আগামী ২৮ জুলাই থেকে ১ আগস্ট পর্যন্ত পুনঃনির্ধারণ করা হলো। একই সঙ্গে চলতি শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে অনলাইনের মাধ্যমে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের ক্লাস আগামী ৬ আগস্ট মঙ্গলবার শুরু হবে।

ভর্তি নীতিমালা অনুযায়ী, গত ১৫ জুলাই থেকে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়। এ ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার কথা ছিল ২৫ জুলাই। তবে ১৮ জুলাই থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করায় বন্ধ রয়েছে একাদশে ভর্তি কার্যক্রম।

চলতি বছর এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় ১১ শিক্ষা বোর্ডে পাস করেন ১৬ লাখ ৭২ হাজার ১৫৩ জন। ফল পুনঃনিরীক্ষণে আরও প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থী ফেল থেকে পাস করেন। তবে সারাদেশে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তিযোগ্য আসন রয়েছে ২৫ লাখের মতো। সব শিক্ষার্থী ভর্তি হলেও একাদশ শ্রেণিতে ৮ লাখের বেশি আসন ফাঁকা থাকার কথা।

ভর্তি নীতিমালা অনুযায়ী, গত ২৬ মে সকাল ১০টায় একাদশ শ্রেণিতে ভর্তিতে অনলাইনে আবেদন শুরুর কথা ছিল। তবে সার্ভারে ত্রুটির কারণে একদিন পর আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হয়। প্রথম ধাপে ১৩ জুন পর্যন্ত আবেদন করার সুযোগ পান শিক্ষার্থীরা। ২৩ জুন রাতে প্রথম ধাপের ফল প্রকাশ করা হয়। এরপর ৩০ জুন থেকে ২ জুলাই পর্যন্ত দ্বিতীয় ধাপে এবং ৯-১০ জুলাই তৃতীয় ধাপে আবেদন নেওয়া হয়।


এখনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার পরিবেশ তৈরি হয়নি: শিক্ষামন্ত্রী

শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। ফাইল ছবি
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

সাম্প্রতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বন্ধ রয়েছে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ধীরে ধীরে জনজীবন স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। এর মধ্যই সবার মনে প্রশ্ন জেগেছে— কবে খুলবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান?

এ প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হবে না। আজ বুধবার সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা জানান।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এখনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার পরিবেশ তৈরি হয়নি। এই মুহূর্তে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তাই আমাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে পারছি না। চলমান এইচএসসি পরীক্ষা শেষ করা সরকারের মূল অগ্রাধিকার বলেও উল্লেখ করেন মন্ত্রী।

প্রসঙ্গত, কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ‘ইঙ্গিতপূর্ণ’ বক্তব্যকে ঘিরে গত রোববার মধ্যরাত থেকে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশের ছাত্রসমাজ। এরপর সোম, মঙ্গল ও বুধবার টানা তিনদিন সারা দেশে ছাত্র আন্দোলন জোরালো হয়ে ওঠে। আন্দোলন দমাতে পুলিশের পাশাপাশি ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ ক্ষমতাসীনরা মাঠে নামে। এতে সারা দেশে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গত ১৬ জুলাই সারা দেশে স্কুল-কলেজ-মাদরাসা-পলিটেকনিকসহ সব পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। একই সঙ্গে বন্ধ ঘোষণা করা হয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত মেডিক্যাল কলেজ, টেক্সটাইল, ইঞ্জিনিয়ারিংসহ অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

এ ছাড়া, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সব কলেজও বন্ধ রয়েছে। পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে প্রাথমিক স্কুলও।


৩১ জুলাই পর্যন্ত পিএসসির সব পরীক্ষা স্থগিত

ফাইল ছবি
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

আগামী ৩১ জুলাই পর্যন্ত অনুষ্ঠিতব্য ৪৪তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষাসহ বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সব পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।

গত সোমবার (২২ জুলাই) পিএসসির জনসংযোগ কর্মকর্তা এস এম মতিউর রহমান এক ক্ষুদে বার্তায় গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন। সারা দেশে ইন্টারনেট সংযোগ না থাকায় সেদিন এ খবর প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি।

ক্ষুদে বার্তায় জানানো হয়, ৩১ জুলাই পর্যন্ত অনুষ্ঠেয় ৪৪তম বিসিএস মৌখিক পরীক্ষা, অর্ধবার্ষিক বিভাগীয় পরীক্ষা (জুন-২০২৪), নন-ক্যাডারের স্ট্যান্ডার্ড অ্যাপটিচুড টেস্ট, এমসিকিউ বা বাছাই পরীক্ষা, ব্যবহারিক বা সাঁটলিপি পরীক্ষা, লিখিত পরীক্ষা, মৌখিক পরীক্ষাসহ বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সব পরীক্ষা অনিবার্য কারণে স্থগিত করা হয়েছে।

এসব পরীক্ষার তারিখ ও সময় পরে পিএসসির ওয়েবসাইট এবং মিডিয়ার মাধ্যমে জানানো হবে।

বিষয়:

২১, ২৩ ও ২৫ জুলাইয়ের এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিত

ফাইল ছবি
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

চলমান এইচএসসি ও সমমানের আগামী ২১, ২৩ ও ২৫ জুলাইয়ের পরীক্ষা স্থগিত করেছে বাংলাদেশ আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি। আজ বৃহস্পতিবার আন্তঃশিক্ষাবোর্ড সমন্বয় কমিটির এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এর আগে অনিবার্য কারণে আগামী ১৮ জুলাই বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিতব্য সব শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। স্থগিত হওয়া পরীক্ষার পরিবর্তিত সময়সূচি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে পরে জানিয়ে দেওয়া হবে।

কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের পূর্বঘোষিত কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ উত্তরা-আজমপুর এলাকায় সড়ক অবরোধ করতে গেলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

এসময় গুলিতে শিক্ষার্থী-পথচারীসহ চারজন নিহত হয়েছেন। তাদের মরদেহ কুয়েতমৈত্রী হাসপাতালে রাখা হয়েছে। একইসঙ্গে হাসপাতালটিতে আহত হয়ে আরও শতাধিক ব্যক্তি চিকিৎসা নিতে এসেছেন।

এদিকে উত্তরা-আজমপুর এলাকায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও একজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানিয়েছে, সংঘর্ষে প্রায় ২০০ জনের বেশি গুলিবিদ্ধ হয়ে সেখানে গেছে এবং একজনের মৃত্যু হয়েছে। আহতদের মধ্যে যারা গুরুতর, তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।


নির্দেশনা থাকার পরও ঢাবিতে হল ছাড়তে চাইছেন না শিক্ষার্থীরা

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
ঢাবি প্রতিনিধি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে (ঢাবি) একাত্তর হল, কবি জসিম উদ্দীন হল, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলসহ আরও কিছু হল থেকে শিক্ষার্থীদের বের করে খালি করা হচ্ছে।

এর আগে পুলিশ হল পাড়ার দিকে রাবার বুলেট ছুড়লে এক শিক্ষার্থী আহত হন। আহত শিক্ষার্থীর নাম আব্দুল হান্নান মাসউদ। তিনি কোটা আন্দোলনের একজন অন্যতম সমন্বয়ক। পরে পুলিশের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের বের হয়ে আসতে বললে শিক্ষার্থীরা নিজেদের ব্যাগপত্র গুছিয়ে হলগুলো থেকে একে একে বের হয়ে আসেন।

এর আগে আজ বুধবার বিকেল থেকে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের মধ্যে হওয়া সংঘর্ষে শিক্ষার্থীরা হল পাড়া, মল চত্বরের দিকে অবস্থান নিলে পুলিশ তাদের লক্ষ্য করে রাবার বুলেট, টিয়ারগ্যাস আর সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করেন। এতে কোনো শিক্ষার্থী আহত হয়েছে কিনা সেটি জানা যায়নি। পুলিশের চতুর্দিক থেকে সাঁড়াশি অভিযানে শিক্ষার্থীরা হল পাড়ার দিকে এগিয়ে আসে।

কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে নিহতের ঘটনায় গায়েবানা জানাজা ও কফিন মিছিল আয়োজনকে কেন্দ্র করে দুপুর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মুহুর্মুহু সাউন্ড গ্রেনেড এবং টিয়ারশেল নিক্ষেপ করছে পুলিশ।

দুপুর ২টার দিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের এই কর্মসূচি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাষ্কর্যে শুরু হওয়ার কথা ছিলো। এর একটু পর আড়াইটার দিকে রাজু ভাষ্কর্যে আসেন গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির আহবায়ক এবং ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেনসহ আরও তিনজন। আর তাদের পিছু পিছু আসেন একদল সমাজকর্মী। এসময় পুলিশ তাদের বাঁশি দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করানোর চেষ্টা করলে মাটিতে শুয়ে পড়েন আখতার এবং তার সঙ্গে থাকা আরও কয়েকজন।

এসময় তিনি বলেন, এটা আমাদের ক্যাম্পাস। আমি এখান থেকে কোথায় যাবো না। প্রয়োজনে আমার লাশ যাবে। এর কিছুক্ষণ পর পুলিশ আরও সামনে আগানোর চেষ্টা করলে আখতারকে রক্ষা করতে ঘিরে ধরেন আরও কয়েকজন যুবক।

এসময় পরপর কয়েকটি সাউন্ড গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটনায় পুলিশ। এতে সবাই ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলে পুলিশ আখতারকে আটক করে শাহবাগ থানায় নিয়ে যায়।

অন্যদিকে আজ বিকেল ৩টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি চত্বরে জড়ো হতে থাকেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। বেলা ৪টার দিকে নিহতদের গায়েবানা জানাজা পড়া হয়।

পরে এই নামাজ শেষে শিক্ষার্থীরা টিএসসির দিকে এগুতে চাইলে টিএসসিতে অবস্থান করা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাদের দিকে মুহুর্মুহু সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারগ্যাস ছুঁড়েন।

তবে এসময় রাবার বুলেট ছোঁড়া হয়েছে কিনা সেটি বুঝা যায়নি। প্রায় এক ঘণ্টা যাবত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের এই সংঘর্ষ চলে।

পরে বেলা ৫টার দিকে পুলিশ ফোর্স নিয় হল পাড়ার দিকে এগিয়ে যান। এসময় তাদের রাবার বুলেট টিয়ারগ্যাস আর সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করতে দেখা যায়।


সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে ঢাবি শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ 

পুরোনো ছবি
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
ঢাবি প্রতিনিধি

অনির্দিষ্টকালের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সকল আবাসিক হল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আজ সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল ছেড়ে যেতে হবে। এই সম্পূর্ণ সময় কোনো ক্লাস-পরীক্ষাও হবে না। আজ বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেট সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক সীতেশ চন্দ্র বাছার বলেন, উদ্ভুদ্ধ পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে আমরা আবাসিক হল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল ছাড়তে আহ্বান জানানো হয়েছে।

শিক্ষার্থীরা হল না ছাড়লে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপাতত আমরা তাদের আহ্বান জানিয়েছি। সন্ধ্যা ছয়টার পর যদি তারা না ছাড়ে তখন সেটা নিয়ে চিন্তা করা যাবে।

এদিকে আজ বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে সামনে অবস্থান নিয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বে একদল শিক্ষার্থী হল বন্ধ না রাখার জন্য বিভিন্ন স্লোগান দেন। এসময় তারা হল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত মানি না মানবো না ইত্যাদি স্লোগান দেন।

এসময় আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী শাহিন রেজা বলেন, আমরা হল ছাড়ব না। আমাদের ছয়জন ভাই মারা গেছে। তাদের রক্ত আমরা বৃথা যেতে দিবো না। আমাদের ওপর যত হামলা হোক আমরা কোনোমতেই হল ছাড়ছি না।


জবি শিক্ষার্থীদের দ্রুত হল ত্যাগের নির্দেশ

ছবি: দৈনিক বাংলা
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
জবি প্রতিনিধি

পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপিঠ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

আজ বুধবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিমের সভাপতিত্বে এক জরুরি সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র ছাত্রী হল বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের শিক্ষার্থীদের বিকেল চারটার মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে এ বিষয়ে জবি উপাচার্য দৈনিক বাংলাকে বলেন, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। বিকেল চারটার মধ্যে ছাত্রীদের হল ত্যাগ করতে হবে। ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রম চলবে।

এর আগে গতকাল মঙ্গলবার রাতে ইউজিসির সচিব ড. ফেরদৌস জামান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সরকারের সিদ্ধান্ত মোতাবেক দেশের সকল পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত মেডিকেল, টেক্সটাইল, ইঞ্জিনিয়ারিং ও অন্যান্য কলেজসহ সব কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে আবাসিক হল ত্যাগের নির্দেশনা দিয়ে নিরাপদ আবাসস্থলে অবস্থানের নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।


জবি শাখা ছাত্রলীগের ছয় নেতার পদত্যাগ

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
জবি প্রতিনিধি

কোটা সংস্কার আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার করা মন্তব্যের প্রতি প্রতিবাদ জানিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শাখা ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগ করেছেন দলটির ছয়জন নেতা। আজ মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে নিজেদের পদত্যাগের কথা জানান তারা।

পদত্যাগ করা ছাত্রলীগ নেতারা হলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ শাখার সহ-সভাপতি মাহমুদুল হাসান সামি ও রসায়ন বিভাগ শাখার সহ-সভাপতি তাওসিফ কবির, মনোবিজ্ঞান বিভাগ শাখার সহ-সভাপতি রনি সরকার ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আশিকুর রহমান, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ শাখার সহ সভাপতি মাহমুদুল হাসান নোমান এবং শিঞ্জন বসাক।

মাহমুদুল হাসান নোমান ফেসবুকে লিখেন, ‘আমি নিজ ইচ্ছায় ও স্বজ্ঞানে ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ শাখা ছাত্রলীগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-সভাপতি পদ থেকে পদত্যাগ করলাম। সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে ট্যাগ লাইনে বাকি দিন কাটাতে চাই।’

প্রধানমন্ত্রী তার সম্প্রতি চীন সফর থেকে দেশে ফিরে গত ১৪ জুলাই সংবাদ সম্মেলন করেন। ওই সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর একটি বক্তব্যকে ভুলভাবে নিয়ে এদিন রাতেই ঢাবিতে প্রতিবাদ জানায় কোটা আন্দোলনকারীরা। তার পরদিনও সারা দেশে বিক্ষোভ করেন কোটা আন্দোলনকারীরা।


ঢাবিতে বহিরাগত প্রবেশে নিষেধাজ্ঞাসহ ৫ সিদ্ধান্ত

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) বহিরাগত প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আজ মঙ্গলবার দুপুরে প্রক্টরিয়াল কমিটির জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ঢাবির জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আজ মঙ্গলবার উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামালের সভাপতিত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল কমিটির এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ এবং প্রক্টরিয়াল কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তিপূর্ণ শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখার জন্য কয়েকটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সেগুলো হলো-

১. আজ (১৬ জুলাই) থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বহিরাগত প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং শিক্ষার্থীদের বৈধ পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখার নির্দেশ দেওয়া যাচ্ছে।

২. ক্যাম্পাসে সন্দেহজনক কাউকে চিহ্নিত করা গেলে সে ব্যাপারে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবহিত করার পরামর্শ দেওয়া হলো।

৩. শিক্ষার্থীদের সমাবেশে কোনো ধরনের অস্ত্রশস্ত্র; যেমন- লাঠিসোঁটা, ইট, আগ্নেয়াস্ত্র ইত্যাদি বহন নিষিদ্ধ।

৪. সবাইকে নাশকতামূলক কাজ থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে এবং কেউ নাশকতামূলক কাজে জড়িত হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

৫. চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে যেকোনও ধরনের গুজব ছড়ানো এবং উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান থেকে বিরত থাকার জন্য সবাইকে অনুরোধ করা হলো।

এছাড়াও সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিধানে সংশ্লিষ্ট সবাইকে দায়িত্বশীল আচরণ করার আহ্বান জানানো হয়।


ঢাবির প্রক্টরকে মারধর করল আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা

ছবি: দৈনিক বাংলা
আপডেটেড ১৬ জুলাই, ২০২৪ ১৭:৩৩
ঢাবি প্রতিনিধি

কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের হাতে মারধরের শিকার হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল মুহিত। এময় তার সঙ্গে থাকা সহকারী প্রক্টর বদরুল ইসলামকেও ধাওয়া দেন শিক্ষার্থীরা।

আজ মঙ্গলবার বিকেলে সহকারী প্রক্টররা শহিদ মিনারে আসলে তাদের ‘দালাল’ ও ‘ভুয়া ভুয়া’ বলে স্লোগান দিয়ে তোপের মুখে ফেলন আন্দোলনকারীরা। এক পর্যায়ে তাদের ধাওয়া দিলে শিক্ষকরা দ্রুত স্থান ত্যাগ করতে চাইলে আন্দোলনকারীরা তাদের দিকে বিভিন্ন বস্তু এবং কাঠ ছুড়ে মারেন।

একটু পর পিছন থেকে কয়েকজন আন্দোলনকারী এসে অধ্যাপক মুহিতকে লাঠি দিয়ে আঘাত করেন। কয়েকটি আঘাতের পর মাটিতে পড়ে যান অধ্যাপক মুহিত। শুরু থেকেই শিক্ষকদের উপর আক্রমণ না করতে বাধা দেন কিছু আন্দোলনকারীরা। অধ্যাপক মুহিত যখন মাটিতে পড়ে যায় তখন একজন শিক্ষার্থী তাকে রিকশায় তুলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান।

জানা যায়, বহিরাগত তাড়াতে সেখানে গিয়েছিলেন সহকারী প্রক্টরবৃন্দ। বহিরাগতদের ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে যাওয়ার অনুরোধ করলে শিক্ষার্থীরা প্রশ্ন করেন গতকাল কই ছিলেন যখন আমাদের বোনদের উপর হামলা করা হয়েছে? এরপর থেকে ক্ষিপ্ত হয়ে যান আন্দোলনকারীরা। এর আগে প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাকসুদুর রহমানের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের বহিরাগত নেতাকর্মীদেরও চলে যেতে মাইকিং করেন সহকারী প্রক্টরবৃন্দ।

এদিকে ঢাবিতে থেমে থেমে চলছে ছাত্রলীগ আর আন্দোলনকারীদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে অবস্থান নিয়েছে ছাত্রলীগ আর কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়েছে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে। এই অবস্থানের মধ্যে দুই পক্ষের মধ্যে কয়েক দফায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

আন্দোলনকারীরা এবং ছাত্রলীগ দুইজনই তাদের পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি পালনের লক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জমায়েত হয়েছেন। ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে ঢাকা মহানগরের নেতাকর্মীরাও আছেন আর আন্দোলনকারীদের মধ্যে আশেপাশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও আছেন।

এসময় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, আমরা গতকাল পর্যন্ত কোন লাঠিসোঁটা হাতে নেইনি। কিন্তু আমাদের বোনদের উপর হামলা করা হয়েছে। আমরা নিজেদের আত্মরক্ষার জন্য আজকে লাঠিসোঁটা হাতে নিয়েছি। আমরা যত কিছুই হয়ে যাক এসো শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ ছাড়বো না।

এসময় তিনি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ওয়াদা নেন এবং বলেন, গতকাল আমাদের বোনদের উপর যখন হামলা করা হয়েছে আমরা অনেক ভাই পালিয়ে গিয়েছি আজকেও কি আমরা পালিয়ে যাবো? এসময় সবাই সমস্বরে না না বলে উঠেন।

নাহিদ বলেন, আমাদের বোনেরা হলে হলে অবস্থান নিয়েছে আমরা যদি তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার অঙ্গীকার করতে পারি তাহলে আমাদের বোনেরা হল থেকে সবাই চলে আসবে।

এদিকে রাজু ভাষ্কর্যে প্রতিবাদ সমাবেশ করছে ছাত্রলীগও। বক্তব্য রাখছেন ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন। তিনি বলেন, এতদিন পর্যন্ত আমরা আন্দোলনকারীদের কোন বাধা দেইনি। কিন্তু এখন এই আন্দোলন শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নেই। এটি বিএনপি জামাত-শিবিরের সরকার পতন পতনের আন্দোলন হয়ে গেছে। আমরা এগুলো বরদাস্ত করবো না।

এর আগে বেলা সাড়ে ৩টায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুহসিন হল থেকে বের হয়ে শহীদ মিনারের দিকে যাওয়ার পথে ভিসি চত্বরে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকটি বাস ভাঙচুর করেন।

শিক্ষার্থীদের দাবি, এসব বাসে করে ছাত্রলীগের বহিরাগত নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাসে এসেছেন তাই এসব বাস ভাঙচুর করা হয়েছে। বাস ভাঙচুরের শব্দ পেয়ে ভিসি চত্বরে আগে থেকেই অবস্থান নেওয়া ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের ধাওয়া করেন।

এসময় দুই গ্রুপের মধ্যে কিছুক্ষণ ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটার কিছু পরে আন্দোলনকারীরা ফুলার রোডে হয়ে চলে যান। এসময় সেখানে ককটেল বিস্ফোরণেরও শব্দ পাওয়া গেছে।


banner close