বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি চলমান থাকবে কি থাকবে না, এ বিষয়টিকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগ এবং বুয়েট শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি অবস্থানের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে খোলা চিঠি লিখেছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার এই খোলা চিঠি প্রকাশ করা হয়েছে।
খোলা চিঠি
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
আমরা বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমানে স্নাতক পর্যায়ে অধ্যয়নরত পাঁচ হাজারেরও অধিক শিক্ষার্থী আপনার প্রতি যথাযথ সম্মান ও শ্রদ্ধা রেখে সবিনয়ে আমাদের দু-চারটি কথা এবং আর্জি আপনার কাছে নিবেদন করছি।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি আমাদের স্বপ্নসারথি, বঙ্গবন্ধুর দর্শন অনুসরণ করে আপনি দৃঢ় পায়ে এগিয়ে চলেছেন। আপনি দেশকে জ্ঞানে-বিজ্ঞানে এগিয়ে যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে নিরলস শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন, সেই একই স্বপ্ন বুকে ধারণ করে নিজেদের শ্রম-মেধা-মনন কাজে লাগিয়ে নিরঙ্কুশ অধ্যবসায়ের পর আপনার গর্বের এই দেশসেরা প্রতিষ্ঠানে আমরা পড়ার সুযোগ করে নিয়েছি।
আমরা করোনার সেই বিপদ মুহূর্তে বানিয়েছি লো কষ্ট ভ্যান্টিলেটর, ক্লিন সিটির আশায় পরিত্যক্ত মাস্ক থেকে বানাচ্ছি কনক্রিট, আরও খুঁজছি বিদ্যুতের সহজ উপায়, বানাচ্ছি আর্টিফিশিয়াল আর্মস, সার্জিক্যাল টুলস, পদ্মা সেতু নির্মাণে আমাদের শিক্ষক এবং সাবেক শিক্ষার্থীদের অবদান অনবদ্য।
শুধু দেশেই না, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অন্য দেশের দলগুলো- যাদের জন্য বরাদ্দ থাকে আমাদের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি অর্থ এবং গবেষণাগারের সুবিধা- তাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আমরা ছিনিয়ে আনছি বিজয়। আপনি নিঃশর্তভাবে আমাদের অর্থ সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন এসব গবেষণা খাতে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি আমাদের অভিভাবক। আমরা নিজেদের মেধা ও শ্রমের সবটুকু দিয়ে বিজ্ঞানের অবাক করা দুনিয়ার একটা অংশের নেতৃত্বে বাংলাদেশকে দেখতে চাই। আমরা ত্রাসের রাজনীতির মারপ্যাঁচ বুঝি না। আমরা শুধু দেশকে, দেশের মানুষকে ভালোবাসতে জানি। নিজেদের কাজ দিয়ে তা আমরা প্রমাণ করতে বদ্ধপরিকর।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি মানবকল্যাণব্রতী। আপনি আমাদের সবার অভিভাবক, দেশের অভিভাবক। আমরা জানি দেশের কোথাও কোনো দুঃখজনক পরিস্থিতি চললে, দেশের কোথাও সংকট চললে, আপনার হৃদয়ে গভীর রক্তক্ষরণ হয়।
বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, আশির দশকে স্বৈরাচার পতন আন্দোলনে এ দেশের আপামর জনগোষ্ঠীর মধ্যে জনমত গঠনে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। অথচ বিগত বছরগুলোতে আমরা বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির নামে ক্ষমতার নেতিবাচক দিকগুলোই প্রত্যক্ষ করেছি। ছাত্ররাজনীতির মাধ্যমেই শিক্ষার্থীদের মাঝে সূচনা ঘটেছে আধিপত্য, দাপট, র্যাগিং, শিক্ষকদের অপমান, চাঁদাবাজি, শিক্ষার্থী নিপীড়ন, খুনোখুনিতে মেতে ওঠার মতো ঘটনা এবং এর ব্যাপ্তি এতটাই ভয়াবহ ছিল যে, এর চরমতম মূল্য হিসেবে আমরা আমাদের কেমিকৌশল ৯৯-এর সাবেকুন্নাহার সনি আপু, যন্ত্রকৌশল ০৯-এর আরিফ রায়হান দ্বীপ ভাই এবং সর্বশেষ তড়িৎকৌশল ১৭-এর আবরার ফাহাদ ভাইকে হারিয়েছি।
শুধু আবরার ফাহাদ ভাইয়ের হত্যাকাণ্ডই নয়, এর আগেও অসংখ্য শিক্ষার্থীকে র্যাগিংয়ের দ্বারা কিংবা ছাত্ররাজনৈতিক দাপটের দ্বারা অমানুষিকভাবে নিপীড়িত হওয়ার ঘটনা রয়েছে, যা আমাদের বুয়েটের র্যাগিং স্টোরি আর্কাইভে সারি সারি আকারে লিপিবদ্ধ আছে।
বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার শাহরিয়ারকে স্ট্যাম্প দিয়ে রাতভর বেধড়ক মারধর করা হয়। ১৭ ব্যাচের মেহজাদ গালিবকে নগ্ন করে সোহরাওয়ার্দী হলের ছাদে তুলে স্ট্যাম্প দিয়ে সারারাত মারা হয়। ১৫ ব্যাচের সামিউত তৌসিফকে মেরে হাত-পা ভেঙে দেয়। মারতে মারতে তিনটা স্ট্যাম্প ভেঙে ফেলা হয়। সামিউত তৌসিফ ছিলেন এক মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান, তার চাচা ছিলেন মুক্তিযুদ্ধে শহীদ। তার লিগামেন্ট ছিঁড়ে পায়ে ফ্র্যাকচার হয়ে যায়।
সালাম না দেওয়ায় সাখাওয়াত অভির হাত ভেঙে ফেলে আবরার ফাহাদের হত্যাকারী অমিত সাহা। সৌমিত্র লাহিড়ী থাপ্পড় দিয়ে কানের পর্দা ফাটিয়ে ফেলে একজনের। এ রকম আছে আরও অসংখ্য কাহিনি।
দাপটের আড়ালে ছাত্ররাজনীতি আমাদের ক্যাম্পাসে উন্মুক্তভাবে বিচরণের অধিকার, ক্যাম্পাসের সুস্থ একাডেমিক পরিবেশ, আমাদের স্বাধীনতা, হলের মেসের টাকার সৎ ব্যবহার, ক্যাম্পাস মাদকমুক্ত থাকা, নবীন আগত বুয়েটিয়ানদের একটি সুন্দর বিশ্ববিদ্যালয় জীবন উপভোগের অধিকার-সবকিছুই হারিয়ে গিয়েছিল। ছাত্ররাজনীতিবিহীন বুয়েটের পরিবেশ ছিল সর্বোচ্চ নিরাপদ ও শিক্ষাবান্ধব। মৌলবাদী শক্তিকেও রুখে দিতে আমরা ঐক্যবদ্ধ।
বুয়েট শিক্ষার্থীরা বরাবরই একটি নিরাপদ এবং সুস্থ ক্যাম্পাস চেয়ে এসেছে, যেখানে ক্ষমতা-চর্চার লোভ-লালসার শিকলে আবারও জিম্মি হয়ে যাবে না সবার নিরাপত্তা, শিক্ষাঙ্গনের উপযুক্ত পরিবেশ।
সুস্থ নেতৃত্ব এবং নৈতিকতা বিকাশের সব উপাদান ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির উপস্থিতি ছাড়াও গত কয়েক বছরে উপস্থিত ছিল এবং এতে সুস্থ নেতৃত্বের চর্চায় শিক্ষার্থীরা তাদের উপযুক্ত পরিবেশ পেয়েছে।
প্রতিটি ডিপার্টমেন্টের বার্ষিক উৎসব আয়োজন, প্রতিটি ডিপার্টেমেন্টের নিজস্ব সহশিক্ষা কার্যক্রম এবং একাডেমিক অর্গানাইজেশন, সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজ, বিভিন্ন ক্লাবের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে আনন্দের সঙ্গে সম্পন্ন হচ্ছে।
আবাসিক হল এবং ক্যাম্পাসে কোনো প্রকার রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং ক্ষমতা-চর্চা ছাড়াই বিভিন্ন জাতীয় দিবসে সভা-সেমিনার আয়োজন, জাতীয় সহশিক্ষা কার্যক্রমের বিভিন্ন প্রতিযোগিতা আয়োজন, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহশিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ এবং গুরুত্বপূর্ণ অর্জনসহ ক্যাম্পাসের ভেতরে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সফলভাবেই আয়োজিত হয়েছে।
বর্তমান বুয়েটে শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশ থাকায় নিজ নিজ প্রকৌশল ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি গবেষণামুখী কাজে মনোনিবেশ করতে অনুপ্রাণিত হওয়ার হার উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
একটি রাজনীতিবিহীন নিরাপদ ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য দেশব্যাপী জনগণের কাছে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত এবং সমাদৃত হয়েছে। রাজনীতিমুক্ত বুয়েট ক্যাম্পাসের গত চার বছরেরও বেশি সময় ধরে আমাদের এসব সফলতা আমাদের জানান দেয়, আমরা আমাদের বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি ছাড়াও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য যে প্রযুক্তিজ্ঞানসম্পন্ন নেতৃত্ব গঠন এবং বিকাশ প্রয়োজন, তা করতে পারি। স্মার্ট বাংলাদেশ এর লক্ষ্য অর্জনে আমরা নিরন্তর কাজ করে যেতে পারি।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি জেনে খুশি হবেন যে বাকি সব প্রকৌশল-প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বুয়েটেও থিসিসের জন্য রিসার্চ টাস্ক চতুর্থ বর্ষে আবশ্যক হলেও আমাদের প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা আগে থেকে বিভিন্ন রিসার্চ প্রজেক্টে নিজ ইচ্ছায় অংশগ্রহণ করছে।
এ ছাড়া, দেশে-বিদেশে বিভিন্ন প্রকৌশল প্রতিযোগিতায়, বিতর্ক প্রতিযোগিতায়, কুইজ প্রতিযোগিতায়, সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় বুয়েটিয়ানদের সাফল্য গত সাড়ে চার বছরে সুস্পষ্টভাবে বেড়েছে।
আপনি জেনে আরও খুশি হবেন যে, তথ্য-প্রযুক্তিতে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি-আন্তর্জাতিক কম্পিউটার প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় আমাদের অর্জন স্বর্ণপদক। ইয়ং ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সাইন্টিস্ট অ্যাওয়ার্ডের মতো বিশ্ব সমাদৃত অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে বুয়েটের ছয়জন এবং শুধু গত বছরেই চার শিক্ষার্থী।
জন হপকিন্স রাইস ইউনিভার্সিটির মতো বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠানের হেলথকেয়ার চ্যালেঞ্জে আমাদের উপস্থিতি এবং পুরস্কার প্রাপ্তি এখন নিয়মিত। থাইল্যান্ড-মালয়েশিয়ার আইইইই কম্পিটিশনে আমাদের বুয়েটিয়ানদের বানানো ড্রোন একের পর এক পুরস্কার জিতেছে। মার্স রোভার চ্যালেঞ্জেও আমাদের দলের সাফল্য নিয়মিত। শুধু প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নয়, সর্বশেষ বঙ্গবন্ধু ইনোভেশন গ্রান্টে উদ্যোক্তা হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে বুয়েটের এক স্টার্টআপ।
একইসঙ্গে সিনিয়র-জুনিয়র কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নামিয়েছে বিভিন্ন ইঞ্জিনিয়ারিং ফেস্ট, ডিপার্টমেন্টাল ডে- যেখানে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসা আমাদের সহপাঠীরাও যথেষ্ট খুশি হয়েছে আমাদের আয়োজনে।
এ আয়োজন ও অংশগ্রহণ সম্ভব হয়েছে শুধু একটি নিরাপদ ছাত্ররাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসের কারণে। যেখানে হল রেসিডেন্ট কোনো শিক্ষার্থীকে চিন্তায় থাকতে হয়নি যে হলে তাকে র্যাগের সম্মুখীন হতে হবে বা এটাচড কোনো শিক্ষার্থীরও উদ্বেগ ছিল না যে ক্যাম্পাসে আসলে তাকে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সম্মুখীন হতে হবে।
ছাত্ররাজনীতি বন্ধ হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত প্রতিটি জাতীয় দিবস সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শনপূর্বক আমরা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে স্বতঃস্ফূর্তভাবে পালন করে আসছি। আমরা শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ অবস্থান থেকে দেশের জাতীয় মূল্যবোধ ও ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মনে-প্রাণে ধারণ করি।
দেশের গৌরবময় ইতিহাস, ত্যাগ-তিতিক্ষা আমরা অন্তরে লালন করি, ভবিষ্যতে পথচলায় অনুপ্রেরণা নেই। আমরা বিশ্বাস করি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতীয় মূল্যবোধ, দেশের প্রতি দায়িত্ববোধ আমাদের সবার জন্যই প্রযোজ্য এবং একান্ত পালনীয়। আমরা সাংগঠনিক রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে এসেই এই সচেতনতা রাখি।
অথচ, অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে কতিপয় ব্যক্তি বা গণমাধ্যমের তৎপরতায় ছাত্ররাজনীতিবিহীন বুয়েট ক্যাম্পাসকে জাতীয় চেতনার বিরোধী মতাদর্শের স্থান হিসেবে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। বিষয়টিতে আমরা অত্যন্ত ব্যথিত।
আমরা বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে দেশের সংবিধান ও প্রচলিত আইনের ব্যাপারে যথেষ্ট শ্রদ্ধাশীল। তাই দেশের যেকোনো স্থানের মতো আমাদের ক্যাম্পাসকে আমরা অবশ্যই যেকোনো প্রকারের সন্ত্রাস, মৌলবাদ বা নিষিদ্ধ গোষ্ঠী থেকে নিরাপদ রাখতে সর্বদা তৎপর।
সাম্প্রতিক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অনেক মহল থেকেই বলা হচ্ছে, ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ মৌলবাদী বা সন্ত্রাসী সংগঠনের কার্যক্রম বিদ্যমান এবং এর ফলশ্রুতিতেই তারা বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির চর্চার পক্ষে যুক্তি দিয়ে যাচ্ছেন। আমরা আপনাকে নির্দ্বিধায় বলতে চাই, আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা যদি যেকোনো মুহূর্তে এসব নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর যেকোনো কার্যকলাপ ক্যাম্পাসে চলমান দেখি, শিগগির তার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেব এবং প্রশাসনকে অবহিত করব।
এমনকি ভবিষ্যতে যদি ক্যাম্পাসে এ ধরনের কর্মকাণ্ডের প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে সেটার বিরুদ্ধেও আমাদের অবস্থান দৃঢ়।
বুয়েট ক্যাম্পাসে এই চার বছর আমরা নির্বিঘ্নে কাটিয়েছি, সেখানে ছায়া হয়ে ছিলেন আমাদের শিক্ষকরা। আমাদের মতো দেশজুড়ে লাখো শিক্ষার্থী এমন একটা ক্যাম্পাসের স্বপ্ন নিয়েই বাড়ি ছাড়ে, যেখানে তাদের ওপর অকারণে জুলুম হবে না, নির্যাতিত হতে হবে না, দিন-রাত কারও ভয়ে তটস্থ থাকতে হবে না, বাবা-মাকে দুশ্চিন্তায় চোখের পানি ফেলতে হবে না।
চার বছর আগে আপনার দৃঢ় এবং দ্রুত হস্তক্ষেপে আমরা নতুন করে এই ক্যাম্পাসে বাঁচতে শিখেছি। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস এই ছোট্ট একটা চাওয়ার কারণে আমরা প্রতিনিয়ত পাচ্ছি হুমকি, হচ্ছি লাঞ্ছিত, অপদস্থ।
আমরা, আমাদের ছোট ভাই-বোনেরা আরও একবার সেই অন্ধকার দিনগুলোর সাক্ষী হতে চাই না। মাননীয় উপাচার্য এবং সব শিক্ষকের প্রতি আমাদের পূর্ণ আস্থা আছে। আমরা জানি তারা তাদের সন্তানদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তায় সর্বদা সচেষ্ট আছেন এবং থাকবেন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার কাছে সবিনয়ে অনুরোধ, আপনি আমাদের পাশে দাঁড়ান। আপনি সব সময় শিক্ষার্থীদের পাশে থেকেছেন। আমরা জানি, এই দুর্দিনে আপনি আমাদের ছেড়ে যাবেন না।
আমাদের স্বনামধন্য অ্যালামনাই, বুয়েটের অধ্যাপক ইমেরিটাস, প্রফেসর ড. আইনুন নিশাত বলেছেন যে, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নতুন অধ্যাদেশ করে শিক্ষকদের রাজনীতি, রাজনৈতিক কার্যকলাপ ইত্যাদির অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও বুয়েটের জন্য অধ্যাদেশের খসড়া যখন বঙ্গবন্ধুর সামনে উপস্থাপন করা হয়, তখন তিনি বলেছিলেন যে এই দুটো বিশ্ববিদ্যালয় নষ্ট করা চলবে না। খসড়া অর্ডিন্যান্স বঙ্গবন্ধু ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। বুয়েটের শিক্ষকরা তার সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করেছিলেন। এই এজেন্ডাতে তিনি দেখা করতে রাজি হননি। তখন শিক্ষকরা কথা বলতেন তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী ইউসুফ আলীর সঙ্গে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বুয়েটের পড়াশোনার পরিবেশের গুরুত্ব, দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নে বুয়েটের প্রকৌশলী এবং দক্ষ প্রযুক্তিবিদের গুরুত্ব বঙ্গবন্ধুর চিন্তায় প্রাধান্য পেয়েছে সবসময়। আপনারা সবাই জানেন, দেশের জন্য এই সময়ে মেধাবী ও দক্ষ প্রকৌশলীর গুরুত্ব কতটা।
আমরা উন্নত বিশ্বের দিকে তাকিয়ে দেখি, তারা তাদের জ্ঞান বিজ্ঞানের প্রসার, কাঠামোগত উন্নয়নকে নিরবচ্ছিন্ন করার লক্ষ্যে বিশেষভাবে তাদের প্রকৌশলীদের সমৃদ্ধ করার ব্যবস্থা করছে। কিন্তু বলতে ভীষণ কষ্ট হয়, অনেক কষ্টে পাওয়া সেই আকাঙ্ক্ষিত পরিবেশ এবং ভবিষ্যৎ প্রকৌশলীরা আজ ছাত্ররাজনীতির করাল গ্রাসের থাবা থেকে নিজেকে রক্ষার যুদ্ধ করতে করতে জর্জরিত।
এই বিদ্যাপীঠে ঠিকমতো রুটিনমাফিক পড়াশোনা ও গবেষণায় মনোনিবেশ করার পর কোনো শিক্ষার্থীর পক্ষে রাজনৈতিক কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার সময় দেওয়া সম্ভব নয়। অত্যন্ত ভারাক্রান্ত মন নিয়ে বলছি, বঙ্গবন্ধুর ভালবাসার মাটিতে দাঁড়িয়ে আজ এই ভবিষ্যৎ প্রকৌশলীদের দিনের পর দিন রাস্তায় থাকার কথা নয়।
আমাদের চাওয়া, বুয়েটকে ঘিরে আমাদের জাতির জনকের যে ভিশন ছিল, তাকে বাস্তবায়ন করা হোক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বুঝতে পেরেছিলেন যে বুয়েটের প্রকৃতি ভিন্ন। তাই তিনি নিজে রাজনীতির আওতা থেকে এই বিশ্ববিদ্যালয়কে বাইরে রেখেছিলেন। আজ যখন তারই গড়ে তোলা রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা বুয়েটের মতো বিশেষায়িত একটি বিশ্ববিদ্যালয়কে যেকোনো মূল্যে রাজনীতির আওতায় আনার কথা বলে, আমরা বিশ্বাস করি তখন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ ও সিদ্ধান্তকে অপমান করা হয়।
দেশমাতা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার প্রতি আমাদের আকুল আবেদন, বুয়েটকে নিয়ে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, যে পলিসি গ্রহণ করেছিলেন, তার বাস্তবায়ন করুন। বুয়েটকে ছাত্র রাজনীতির বাইরে রাখুন, প্রয়োজনে আইন সংস্কার করে হলেও। কারণ সুবিচারের জন্যই আইনের সৃষ্টি।
আমাদের অনুরোধ, আপনি দয়া করে আমাদের ক্যাম্পাসে আসুন। ছাত্ররাজনীতিহীন বুয়েট গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষার্থীদের জন্য যে আদর্শ ক্যাম্পাস হয়ে উঠেছে, সেটা আমরা আপনাকে দেখাতে চাই। আমরা আপনাকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, আমরা প্রযুক্তিবিদ্যায় বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে পেছনে ফেলে দেব খুব শিগগির।
আহসান উল্লাহ হল আয়োজিত নবীনবরণ ও সমাপনী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপ-উপাচার্য মহোদয় বলেছিলেন, ‘ছাত্ররাজনীতিবিহীন ক্যাম্পাসে আমরা ভালো আছি, সৃজনশীল কাজ করছি, আমরা র্যাঙ্কিংয়ে ফোকাস করছি।
সেই অনুষ্ঠানে স্যার আরও বলেন, ‘ইউনিভার্সিটি শুড গো হায়ার। আমি ইন্টারভিউ দিয়েছি প্রথম আলোতে, আমরা কিছু পলিসি রোল আউট করেছি। যদি পলিসিগুলো বাস্তবায়িত হয়, তাহলে ডাউন দ্য রোড মেবি উইদিন ফাইভ-সিক্স ইয়ার্স, তোমরা এই বুয়েটের র্যাঙ্কিং ৫০-এর মধ্যে দেখতে পারবা।’
শেষ কয়েক বছর এই প্রত্যয় নিয়েই প্রতিটি প্রকৌশল বিভাগে আমরা অক্লান্ত পরিশ্রম করছি, ইতোমধ্যে যার ফলও পেতে শুরু করেছি। আমাদের এই পথচলা আপনিই নির্বিঘ্ন রাখতে পারেন। সেই আশাতেই এই চিঠি। আমরা আপনার হাজারো সন্তান-আপনার সহযোগিতার প্রতীক্ষায় আছি।
নিবেদক
বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেছেন, স্যার ইকবাল ছিলেন মেধা ও প্রতিভায় অনন্য। তিনি একাধারে একজন দার্শনিক, চিন্তাবিদ ও কবি, যিনি সমকালীন বিশ্বের রাজনৈতিক, সামাজিক ও আধ্যাত্মিক প্রবণতাকে গভীরভাবে বিশ্লেষণ করেছেন। তিনি কেবল তাত্ত্বিক চিন্তায় সীমাবদ্ধ ছিলেন না; তার লেখনিতে এবং দর্শনে মানবরাজ্য, স্বাধীনতা, আত্মমর্যাদা ও সাম্যের মূল্যবোধ প্রতিফলিত হয়। স্যার ইকবালের চিন্তাধারা আজও শিক্ষাবিদ, গবেষক এবং সাধারণ মানুষকে প্রেরণা জোগাচ্ছে।
সোমবার বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান মিলনায়তনে ‘Allama Iqbal’s Theory of ‘Khudi’—শীর্ষক আন্তর্জাতিক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন তিনি। আরবী ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের আয়োজনে সেমিনারে অতিথি বক্তারা আল্লামা ইকবালের ‘শাহীন’ (ঈগল) এবং ’খুদি’ এর ধারনা বিশ্লেষণ করেন।
সেমিনারে আলোচক ছিলেন পাকিস্তানের পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্দু ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক ড. বাশিরা আম্ব্রিন এবং লাহোরের ইউনিভার্সিটি অব এডুকেশনের পরিচালক অধ্যাপক ড. ওহীদ উর রহমান খান। সেমিনার আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তোজাম্মেল হোসেন স্বাগত বক্তব্য দেন।
সেমিনারে অধ্যাপক ড. বাশিরা আম্ব্রিন বলেন, ‘খুদি’ হলো মানুষের আত্মচেতনা, শক্তি, মর্যাদা ও আলোকিত সত্তা, যা ব্যক্তিকে কর্মঠ, সাহসী, সৃজনশীল ও ঈমানী শক্তিতে উজ্জীবিত করে। এটি কোনো স্বার্থপরতা নয়, বরং কর্ম, সংগ্রাম ও লক্ষ্য স্থির করার মাধ্যমে ভাগ্যের নির্মাতা হওয়ার অনুপ্রেরণা। খুদি মানুষকে নিয়তি-নির্ভরতা থেকে মুক্ত করে এবং আত্মমর্যাদা বা ‘খুদ্দারি’ দ্বারা স্বাবলম্বী হতে শেখায়, কারণ ভিক্ষা ও দুর্বলতা খুদিকে নষ্ট করে। ইকবালের মতে, খুদির পূর্ণ বিকাশের তিনটি ধাপ হলো— ইতা’আত (অনুগত্য), জব্তে-নফ্স (আত্মসংযম) এবং নিয়াবত-ই-ইলাহি (খলিফাতুল্লাহ) হওয়া। ইকবালের মূল বক্তব্য হলো, খুদির জাগরণেই ব্যক্তিগত উন্নতি এবং মুসলিম উম্মাহর শক্তি, মর্যাদা ও নবজাগরণের পথ নিহিত।
অধ্যাপক ড. ওহীদ উর রহমান খান বলেন, আল্লামা ইকবালের দর্শনে শাহীন (ঈগল) হলো তার খুদি (আত্মসত্তা) ধারণার মূর্ত প্রতীক এবং আদর্শ মুসলিম ব্যক্তির রূপরেখা, যা উচ্চাকাঙ্ক্ষা, জাগতিক প্রলোভনমুক্ত জীবন, সম্পূর্ণ আত্মনির্ভরশীলতা, তীক্ষ্ণ আধ্যাত্মিক দূরদৃষ্টি এবং সাধারণের থেকে স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখে একাকীত্বে থাকার গুণাবলীকে নির্দেশ করে। শাহীনের জীবন হলো অবিরাম সংগ্রাম (জিহাদ-এ-আকবর), যা তাকে আত্ম-উপলব্ধি এবং উন্নতির পথে চালিত করে। মূলত, ইকবাল এই শক্তিশালী প্রতীকটি ব্যবহার করেছেন মুসলিম যুবসমাজকে তাদের হারানো গৌরব পুনরুদ্ধারে অনুপ্রাণিত করতে এবং জড়তা ত্যাগ করে স্বাধীনতা, ক্ষমতা ও চেতনার নবজাগরণ ঘটাতে উৎসাহিত করার জন্য।
আরবী ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আব্দুস সালামের সভাপতিত্বে এতে প্রাধান অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ, বিশেষ অতিথি ছিলেন উপউপাচার্য অধ্যাপক ড. এম এয়াকুব আলী, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম, কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. এমতাজ হোসেন। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সেমিনার বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মো. তোজাম্মেল হোসেন, থিওলজি ও ইসলামিক স্টাডিজ অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সেকান্দার আলী, আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান, দাওয়াহ এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. গোলাম মাওলা, IQAC এর পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. নাজিমউদ্দিন, আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের প্রফেসর ড. এ কে এম শামসুল হক সিদ্দিকী।
প্রাইম ব্যাংক পিএলসি. সম্প্রতি বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রোফেশনালস (বিইউপি)-এর সহযোগিতায় “ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন: এনগেজিং অ্যান্ড ইনস্পায়ারিং ইয়ুথ ইন ব্যাংকিং” শীর্ষক এক সেমিনারের আয়োজন করে। প্রাইম ব্যাংকের ফ্ল্যাগশিপ উদ্যোগ প্রাইমঅ্যাকাডেমিয়া-এর আওতায় আয়োজিত এই সেমিনারে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনারেল ফ্যাকাল্টি অব বিজনেস স্ট্যাডিজের ডিপার্টমেন্ট অব বিজনেস অ্যাডমিনিসট্রেশনের চেয়ারম্যান লেফটেন্যান্ট কর্নেল এস এম জোবায়ের আলম-পিএসসি। আরও উপস্থিত ছিলেন একই বিভাগের লেকচারার ইশরাত জাহান দিনা। এসময় তারা শিক্ষার্থীদের আর্থিক সাক্ষরতা ও নেতৃত্ব দক্ষতা অর্জনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
প্রাইম ব্যাংকের পক্ষ থেকে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন- এম. নাজিম এ. চৌধুরী, ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর, যিনি তার মূল প্রবন্ধে ব্যাংকে তরুণদের ক্যারিয়ার উন্নয়ন, নারী ক্ষমতায়ন ও আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বিষয়ক নানা উদ্ভাবনী উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন। এছাড়া ব্যাংকের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ও হেড অব লাইয়াবিলিটি শায়লা আবেদিন। এ সময় তিনি ব্যাংকের তরুণ্য নির্ভর কর্মকাণ্ড ও প্রাইমঅ্যাকাডেমিয়া-এর অগ্রযাত্রা নিয়ে আলোচনা করেন। আরও উপস্থিত ছিলেন ব্যাংকের হেড অব ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন অ্যান্ড স্কুল ব্যাংকিং এম এম মাহবুব হাসান।
সেমিনারে ইন্ডাস্ট্রি ও একাডেমিয়ার সমন্বিত সহযোগিতার গুরুত্বের ওপর জোর দেওয়া হয়। উভয় প্রতিষ্ঠানই তরুণ শিক্ষার্থীদের দক্ষতা উন্নয়ন, গবেষণা ও ক্যারিয়ারমুখী উদ্যোগে যৌথভাবে কাজ করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে।
প্রাইমঅ্যাকাডেমিয়া-এর উদ্যোগের মাধ্যমে প্রাইম ব্যাংক সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সমন্বিত আর্থিক সেবার আওতায় আনছে, যার মধ্যে রয়েছে- ইনস্টিটিউশনাল ব্যাংকিং, ডিজিটাল ফি সংগ্রহ ব্যবস্থা, পেরোল সেবা, স্কুল ব্যাংকিং এবং শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষায়িত অ্যাকাউন্ট- সবকিছু এক ছাতার নিচে।
উদ্যোগটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকবৃন্দের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলে, যা তরুণ প্রজন্মকে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ও জাতীয় উন্নয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে অনুপ্রাণিত করে।
কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মানহানিকর কনটেন্ট প্রচারের প্রতিকারে আবেদন করেছে শিক্ষার্থীরা। স্ট্যান্ড এগেইনস্ট সাইবার বুলিং প্রজেক্টের প্যাডে এ আবেদন দেয়া হয়। রোববার নাগাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওবায়দুল ইসলাম ও রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. মো. মনজুরুল হককে এ আবেদন পত্র দেন শিক্ষার্থীরা।
আবেদনে বলা হয়, বিগত এক বছর ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে (ফেসবুকে) বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন শিক্ষার্থীদের নিয়ে মনগড়া, মানহানিকর ও সংবেদনশীল তথ্য-যেমন ছবি, লেখনী ও ভিডিও-ছড়ানো হচ্ছে। এসব ছবি বা ভিডিও অনেক সময় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ব্যবহার করে তৈরি, আবার অনেক ক্ষেত্রে সম্পাদিত (edited) বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মানহানিকর লেখনীর মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
আবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, এইসব কর্মকাণ্ডে বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হচ্ছেন এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যেও নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি হচ্ছে। ইতোমধ্যে আমরা ব্যাপারটির বিভিন্ন প্রমাণ সংগ্রহ করেছি এবং ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি দাখিল করেছি। কিন্তু এরপরও এ ধরনের মানহানিকর কার্যক্রম তথা সাইবার বুলিং-এর পরিমাণ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। উল্লেখ্য: বিভিন্ন ফেসবুক পেজসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থীও এসব কাজে সংশ্লিষ্ট রয়েছে-এর প্রমাণাদি সংযুক্তি-০৩-এ প্রদান করা হলো।
এ সময় তারা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি এন্টি-সাইবার বুলিং কমিটি গঠন করে সচেতনতা সৃষ্টি, পোস্টারিং, কর্মশালা এবং আইনবিষয়ক প্রচারণার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়-সম্প্রদায়কে অবহিত করার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করার দাবি জানান।
প্রসঙ্গত, এ বিষয়ে গত ৯ নভেম্বর ইবির ইংরেজি বিভাগের ২০২২-২০২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রিদয় আহম্মেদ ইবি থানায় একটি সাধারাণ ডায়েরি (জিডি) করেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, গত ৩ নভেম্বর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক পেইজ যাহার নাম IU Crush and Confession, যাহার লিংক
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওবায়দুল ইসলাম বলেন, ছাত্রদের এ দাবির সাথে আমিও নিঃসন্দেহে একমত। মত প্রকাশের স্বাধীনতার অবশ্যই দরকার আছে। কিন্তু তা করতে গিয়ে যেন অন্য কারোর স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করতে না হয় সে বিষয়েও নিশ্চিত হওয়া দরকার। আমরা এর জন্য যা যা দরকার তা করব।
বাঙালির ইতিহাস, ঐতিহ্য ও গ্রামীণ সংস্কৃতিকে বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরার লক্ষ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদে অনুষ্ঠিত হলো নবান্ন উৎসব। রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় অনুষদের প্রদর্শনী প্লটে ধানকাটার মধ্য দিয়ে উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়।
ধানকাটা শেষে শিক্ষার্থীরা আনন্দ-উচ্ছ্বাসে নেচে-গেয়ে শোভাযাত্রা নিয়ে অনুষদের প্রধান ফটকের সামনে আসেন। সেখানে ফিতা কেটে পিঠা মেলার উদ্বোধন করা হয়। এরপর বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রাটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন এলাকা প্রদক্ষিণ করে কৃষি অনুষদে এসে শেষ হয়।
দিনব্যাপী আয়োজনে ছিল পিঠা উৎসব, খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা জানান, বাঙালির ইতিহাস ও গ্রামীণ ঐতিহ্যের সমৃদ্ধ সংস্কৃতিকে নতুন প্রজন্মের কাছে পরিচিত করাই তাদের এই আয়োজনের মূল লক্ষ্য।
নবান্ন উৎসব উপলক্ষে্য ১৫টি স্টলে শিক্ষার্থীরা প্রদর্শন করছেন প্রায় দেড় শতাধিক ঐতিহ্যবাহী পিঠা—দুধপুলি, চন্দ্রপুলি, নারকেল পুলি, খোলা চিতই, তেল পিঠা, নকশী পিঠা, মালাই বিহার, সুজির বড়া, জামাই পিঠা, গোলাপ ফুল পিঠা, ডাবের পিঠা, লবঙ্গ পিঠা, শামুক পিঠা, রুপালি পিঠাসহ নানা বাহারি খাবার। সকাল থেকেই এসব পিঠার স্বাদ নিতে শিক্ষার্থীদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যায়। উৎসবমুখর পরিবেশে পুরো কৃষি অনুষদে নবান্নের আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে।
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার হাড়াভাঙ্গা এইচ বি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাজু আহমেদের সঙ্গে দশম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর ভিডিও কলে ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়াই ওই শিক্ষকের স্থায়ী পদত্যাগের দাবিতে মানববন্ধন করেছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
বিদ্যালয়ের দায়িত্বশীল পদে থাকা একজন শিক্ষা কর্মকর্তার এ ধরনের আচরণের ভিডিও ছড়িয়ে পড়তেই জেলাজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র প্রতিক্রিয়া, নিন্দা ও ক্ষোভের ঝড়।
গত শুক্রবার বিকেল থেকে ইমোতে চুম্বন ও অশ্লীল কথাবার্তার ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। তারই ধারাবাহিকতায় রোববার সকাল দশটার দিকে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা বিদ্যালয়টির সামনে মানববন্ধন করে।
জেলা জুড়ে ভাইরাল হওয়া সেই ভিডিওতে দেখা যায়, কথাবার্তার এক পর্যায়ে ওই ছাত্রী তার ঠোঁটে চুম্বন চাইছেন। এ সময় রাজু আহমেদ অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করে চুম্বন দেন। ভিডিওটি কয়েকটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে আপলোড হওয়ার পর দ্রুত ভাইরাল হয়ে যায়।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, বলা হয়ে থাকে শিক্ষা জাতীর মেরুদণ্ড আর সেখানে শিক্ষকের চরিত্র যদি এমন হয়। তাহলে জাতির মেরুদণ্ড কেমন হবে আপনারই বলুন?
একজন প্রধান শিক্ষক কর্তৃক শিক্ষার্থীর সঙ্গে এমন অনৈতিক আচরণ শুধু নিন্দনীয়ই নয়, তা গোটা শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য লজ্জাজনক।
অভিভাবকরা বলছেন, ‘আমাদের সন্তানদের শিক্ষাদানের জন্য স্কুলে পাঠাই, আর শিক্ষকরা হচ্ছে শিক্ষার্থীদের পিতার মতো। আর সেই শিক্ষককের এমন আচরণ মেনে নেওয়া যায় না। তাই তাকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার চাই।
দশম শ্রেণি পড়ুয়া শিক্ষার্থী জীবন বলেন, রাজু স্যার আমাদের বন্ধুর বাবা। আর আমাদের বান্ধবীর সাথে প্রেম করা, আবার তার সাথে অনৈতিক কাজ করা মানে নিজের মেয়ের সাথে এমনটি করার সমান।
আরেক শিক্ষার্থী বলেন, রাজু স্যারের সাথে আমাদের বান্ধবির বিয়ে দিতে হবে, আর কাবিন করে দিতে হবে ১ কোটি টাকা। যাতে করে দুদিন বাদে মেয়েটিকে তালাক দিতে না পারে।
শিক্ষার্থীর অভিভাবক স্থানীয় বাসিন্দা মজিবুল বলেন, আমাদের এইচ বি স্কুলের রাজু স্যার বেশ কয়েক বছর আগে এক এনজিও কর্মীর স্ত্রীর সাথে অনৈতিক কাজে লিপ্ত থাকাকালীন স্থানীয়দের হাতে ধরা পড়ে। আবার এলাকায় আদম ব্যাবসা করে অনেককেই নিঃশ্ব করেছে। এবার শুরু করেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি নষ্ট করতে। এই শিক্ষককের আজীবন নিষিদ্ধের দাবি জানাচ্ছি।
রাজু আহমেদের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। তার হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো বার্তা ও কলও গ্রহণ হয়নি।
কাজিপুর ইউপি চেয়ারম্যান আলম হুসাইন বলেন, শিক্ষক রাজু আহমেদের অনেক অভিযোগ শুনছি। এমন শিক্ষক যে প্রতিষ্ঠানে থাকবে সেখানে শিক্ষার্থীরা নিরাপদ নেই। তাই আমরা এই বিষয়ে সব্বোর্চ দপ্তর পযর্ন্ত জানাব। এবং তার স্থায়ী বহিষ্কারের জন্য আবেদন জানাচ্ছি। শিক্ষক রাজু স্কুলের অফিসে বসে মোবাইল এই ধরনের কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেত।
গাংনী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মনিরুল ইসলাম বলেন, ঘটনার বিষয়টি শুনেছি। বিষয়টি অভিযোগ পেলে অবশ্যই তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আনোয়ার হোসেন জানান, বিষয়টি আমরা শুনেছি ভুক্তভোগী ছাত্রীর পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তারা চাইলে আদালতেও যেতে পারবেন।
২০২৫ সালের এইচএসসি পরীক্ষার ফল পুনঃনিরীক্ষণে কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে। নতুনভাবে জিপিএ-৫ পেয়েছে আরও ২৩ জন শিক্ষার্থী এবং ফেল থেকে পাশ করেছে ১০৮ জন শিক্ষার্থী।
রোববার দুপুরে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে পুনঃনিরীক্ষণের ফল প্রকাশের পর এ তথ্য জানা যায়।
বোর্ড সূত্র জানায়, এ বছর পুনঃনিরীক্ষণের জন্য আবেদন করেছে ২৭ হাজার ১৮১ জন পরীক্ষার্থী। পুনঃনিরীক্ষণ করা হয়েছে ৯৪ হাজার ৬৫টি উত্তরপত্র। এর মধ্যে ২ হাজার ৫৮৯টি উত্তরপত্রে নম্বর পরিবর্তন হয়। নম্বর আপগ্রেড হয়েছে ২ হাজার ২১৩টি এবং গ্রেড পরিবর্তন হয়েছে ৫৮৭ পরীক্ষার্থীর।
ফল পরিবর্তনের মাধ্যমে মোট উত্তীর্ণ বেড়েছে ১০৮ জন এবং জিপিএ-৫ বেড়েছে ২৩টি।
কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর রুনা নাছরীন বলেন, বোর্ডের নিয়ম অনুযায়ী আবেদন গ্রহণ ও খাতা পুনঃনিরীক্ষণ সম্পন্ন করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের খাতা পুনঃমূল্যায়নের পর রোববার ফলাফল ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার খাতা চ্যালেঞ্জ বা উত্তরপত্র পুনর্নিরীক্ষণের ফল প্রকাশ করা হয়েছে। এতে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ২০১ জন। এছাড়া ফেল থেকে পাস করেছেন ৩০৮ জন।
রোববার সকাল ১০টার দিকে এ ফল প্রকাশ করা হয়।
জানা গেছে, ঢাকা বোর্ডে উত্তরপত্র পুনর্নিরীক্ষণের ফলের জন্য আবেদন করেন ৮৯ হাজার ৬৭১ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ২ হাজার ৩৩১ জনের ফল এবং গ্রেড পরিবর্তন হয়েছে ২ হাজার ৩৭৩ জনের।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) বাঁধনের ২৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে্য ‘২৮-এর আহ্বান, নিঃস্বার্থ হোক রক্তদান’ স্লোগানকে সামনে রেখে আনন্দ র্যালি ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।
গত শুক্রবার বিকেল ৫টায় বাকৃবি জোনাল পরিষদের কার্যালয়ের সামনে থেকে বিভিন্ন হলের কার্যকরী কমিটির সদস্য, বাঁধন রক্তদাতা সদস্য এবং শিক্ষকদের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে র্যালিটি শুরু হয়। র্যালিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কে. আর. মার্কেট প্রদক্ষিণ করে পুনরায় সৈয়দ নজরুল ইসলাম অডিটোরিয়ামের সামনে এসে শেষ হয়।
ওই আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল হক, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আব্দুল আলীম, শিক্ষক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মাহবুবুল প্রতীক সিদ্দিক এবং বাঁধনের বিভিন্ন হল কমিটির সদস্য ও জোনাল প্রতিনিধিরা। বাকৃবি জোনাল পরিষদের সহ সাধারণ সম্পাদক আলিমুল ইসলামের সঞ্চালনায় সভাটি পরিচালিত হয়।
সভার শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন উপকমিটির সদস্য সচিব মাহমুদুল হাসান রনি। অতপর উপস্থিত শিক্ষকরা তাদের শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন। ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শহীদুল হক বলেন, আমাদের ক্যাম্পাসে বাঁধনের মতো একটি সংগঠনের সক্রিয় উপস্থিতি অত্যন্ত গর্বের। রক্তদান একটি মহৎ কাজ, এবং আমি সকল ছাত্রছাত্রীকে আহ্বান জানাই তারা যেন নিঃস্বার্থভাবে এই মানবিক কাজে এগিয়ে আসে।
সভা শেষে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে্য কেক কাটা হয় এবং উপদেষ্টামণ্ডলী বাঁধনকর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। সভায় উপস্থিত সকলের মধ্যে বাঁধন বিষয়ক একটি কুইজেরও আয়োজন করা হয়।
সভার সমাপনী বক্তব্যে বাকৃবি জোনাল পরিষদের সভাপতি, বাঁধনের বাকৃবি জোনের অন্তর্গত সকল হল ইউনিটের সদস্য এবং শুভাকাঙ্ক্ষীদের বাঁধন কেন্দ্রীয় পরিষদের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।
নেত্রকোনার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষায় মারাত্মক জনবল সংকট দেখা দিয়েছে। জেলার ১০টি উপজেলায় ৭৬৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য পড়ে আছে। একই সঙ্গে উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তার ঘাটতিও তীব্র। অনুমোদিত ৪৬টি পদের মধ্যে ২২টি দীর্ঘদিন ধরে খালি। এতে বিদ্যালয়গুলোর প্রশাসনিক কার্যক্রম ও পাঠদানের মান গুরুতরভাবে ব্যাহত হচ্ছে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহীদুল আজম বলেন, ‘বর্তমানে ৭৬৪টি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই এবং ২২ জন সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার পদ শূন্য। এ ছাড়া অফিস সহকারী ও হিসাবরক্ষক পদেও ঘাটতি আছে। বিষয়টি বিভাগীয় উপপরিচালক, অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে। আশা করছি দ্রুতই এ সংকটের সমাধান হবে।’জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২ হাজার ৮১০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের নেত্রকোনায় রয়েছে ৮৬টি ইউনিয়ন ও ২ হাজার ২৯৯টি গ্রাম। জেলার মোট ১ হাজার ৩১৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ছে ৩ লাখ ৩৭ হাজার ৩৭১ শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ছাত্রী ১ লাখ ৭২ হাজার ৬২৫ জন এবং ছাত্র ১ লাখ ৬৪ হাজার ৭৪৬ জন। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে প্রধান ও সহকারী শিক্ষক মিলে অনুমোদিত পদ রয়েছে ৮ হাজার ২৩৫টি। বর্তমানে কর্মরত আছেন ৭ হাজার ৩৬৯ জন। প্রধান শিক্ষকের ১ হাজার ৩১৩টি অনুমোদিত পদের বিপরীতে দায়িত্বে আছেন মাত্র ৫৪৯ জন। ফলে ৭৬৪টি বিদ্যালয় চালাতে হচ্ছে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকদের হাতে। উপজেলাভিত্তিক হিসাব অনুযায়ী, কলমাকান্দায় ১৭২টির মধ্যে ১৩৩টি, আটপাড়ায় ১০৩টির মধ্যে ৬০টি, কেন্দুয়ায় ১৮২টির মধ্যে ৯৮টি, দুর্গাপুরে ১২৬টির মধ্যে ৭৩টি, নেত্রকোনা সদর উপজেলায় ২০১টির মধ্যে ৯৩টি, পূর্বধলায় ১৭৫টির মধ্যে ১০৮টি, বারহাট্টায় ১০৯টির মধ্যে ৬৭টি, মদনে ৯৩টির মধ্যে ৬২টি, মোহনগঞ্জে ৮৯টির মধ্যে ৪১টি এবং খালিয়াজুরিতে ৬৩টির মধ্যে ২৯টি প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে।শিক্ষা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে থাকা উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তার পরিস্থিতিও সংকটপূর্ণ। জেলার ৪৬টি অনুমোদিত পদের মধ্যে ২২টি দীর্ঘদিন ধরে খালি পড়ে আছে। আটপাড়া, কলমাকান্দা, কেন্দুয়া, দুর্গাপুর, নেত্রকোনা সদর, পূর্বধলা, মদন ও মোহনগঞ্জ উপজেলায় এসব পদে কর্মকর্তার অভাব প্রকট। পূর্বধলা, মদন, কেন্দুয়া ও কলমাকান্দার কয়েকজন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জানান, তারা একই সঙ্গে সহকারী শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন। প্রশাসনিক কাজের পাশাপাশি প্রতিদিন ছয়-সাতটি ক্লাস নিতে হচ্ছে, এতে তারা প্রচণ্ড কর্মচাপে রয়েছেন।
নেত্রকোনা সদর উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকতা মো| আসাদুজ্জামান ও মোহনগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক না থাকায় বিদ্যালয় পরিচালনায় বড় ধরনের সমস্যা দেখা দিয়েছে। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকদের ওপর চাপ ক্রমেই বাড়ছে।’
কেন্দুয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আফতাব উদ্দিন বলেন, ‘পদ শূন্য থাকায় প্রশাসনিক কার্যক্রমে ধীরগতি দেখা দিয়েছে। বিষয়টি আমরা ইতোমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।
দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় এক গভীর পরিবর্তন নীরবে ঘটছে। একসময়ের গর্ব-সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো- এখন ক্রমে হারাচ্ছে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ ও অভিভাবকদের আস্থা। অন্যদিকে গ্রামের পর গ্রামে, শহরের অলিতে-গলিতে নতুন করে গড়ে উঠছে মাদ্রাসা, যেখানে শিক্ষার্থী ভর্তি হচ্ছে দ্রুতহারে। বিশেষ করে অন্তর্বর্তী সরকারের সময় দেশজুড়ে বেসরকারি মাদ্রাসা স্থাপন, পাঠদান অনুমোদন এবং অ্যাকাডেমিক স্বীকৃতির হার বেড়েছে। শুধু তাই নয়, মাদ্রাসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা শিথিলের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। নীতিমালা সংশোধন করে এই সুযোগ দেওয়া হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি ‘বেসরকারি মাদ্রাসা (দাখিল ও আলিম) স্থাপন, পাঠদান ও একাডেমিক স্বীকৃতি প্রদান নীতিমালা-২০২৫’ জারির পর এ সুযোগ পাচ্ছে মাদ্রাসাগুলো। ফলে যেসব মাদ্রাসা আগে অনুমোদন পায়নি, তারা এখন অনুমোদন পাচ্ছে এবং ভাড়াবাড়িতে পরিচালিত মাদ্রাসাও অনুমোদন পাবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, যেসব মাদ্রাসা শর্ত পূরণ করতে না পারায় আগে অনুমোদন পায়নি, সেসব মাদ্রাসার জন্য নতুন করে আদেশ জারি করা হচ্ছে। বিগত সরকারের সময় ২০২৩ ও ২০২৪ সালের আটকে যাওয়া আদেশগুলোও এখন জারি করা হচ্ছে নতুন করে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের গত ১ অক্টোবরের একটি আদেশে ১১টি দাখিল মাদ্রাসাকে একাডেমিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়। শর্ত পূরণ না করায় তিনটি দাখিল মাদ্রাসার একাডেমিক স্বীকৃতি বাতিল হয় চলতি বছরের ৬ অক্টোবর জারি করা একটি আদেশে। পরে বাতিল আদেশ প্রত্যাহার করে ওই মাদ্রাসাগুলোকে নতুন করে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।
চলতি বছরের ৬ অক্টোবরে জারি করা অপর আদেশে আলিম স্তরে পাঠদানের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে ২০২৩ সালের ৩১ অক্টোবর! চলতি বছরের একই দিনে জারি করা অপর আদেশে ছয়টি দাখিল মাদ্রাসার প্রাথমিক পাঠদানের অনুমোদন দেওয়া হয়। অফিস আদেশে সই রয়েছে ২০২৩ সালের ৩১ অক্টোবর। চলতি বছরের অপর আরও একটি আদেশে একটি মাদ্রাসার প্রাথমিক পাঠদান অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আদেশে সই করা আছে ৩১ অক্টোবর।
চলতি বছরের ৬ অক্টোবর জারি করা আলাদা আদেশে আরও ছয়টি দাখিল মাদ্রাসার একাডেমিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এর মধ্যে কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার ফুলতলী দাখিল মাদ্রাসার শর্ত শিথিল করে একাডেমিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। অখণ্ড ৬০ শতাংশ জমির পরিবর্তে এই মাদ্রাসার রয়েছে ৫৪ শতাংশ অখণ্ড জমি। জমির অখণ্ডতা পূরণের শর্ত দিয়ে একাডেমিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাটের ঝাউবোনা মহিলা মাদ্রাসাকেও একই শর্তে একাডেমিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
চলতি বছরের ৬ আগস্ট জারি করা আরও একটি আদেশে পাবনা ও টাঙ্গাইলের দুটি মাদ্রাসার বাতিল আদেশ প্রত্যাহার করে একাডেমিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের এসব অফিস আদেশে দেখা যাচ্ছে, ২০২৩ সালের ৩১ অক্টোবর আদেশগুলো সই করেছেন কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের মাদ্রাসা অনুবিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব (মাদ্রাসা-২) একেএম লুৎফর রহমান। বর্তমানে তিনি এই মন্ত্রণালয়ে কর্মরত নেই। মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে উল্লেখ করেন, লুৎফর রহমান বর্তমানে মন্ত্রণালয়ে নেই। তিনি আগেই বদলি হয়েছেন অন্য মন্ত্রণালয়ে।
এদিকে চলতি বছরের ১৯ মার্চ জারি করা একটি আদেশে সাতটি দাখিল মাদ্রাসার প্রাথমিক পাঠদানের অনুমোদন দেওয়া হয়। তবে অফিস আদেশে তারিখ দেখানো হয়েছে ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি। সই করেছেন একই কর্মকর্তা, মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব একেএম লুৎফর রহমান।
চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি জারি করা অফিস আদেশে সিলেটের বিশ্বনাথ ও ভোলার চরফ্যাশন দাখিল মাদ্রাসায় আলিম স্তরের পাঠদান অনুমোদন দেওয়া হয়। অফিস আদেশে দেখানো হয়েছে ২০২৪ সালে ১ জানুয়ারি সই করা। একই কর্মকর্তা অফিস আদেশে সই করেছেন।
চলতি বছরের ২২ জানুয়ারি জারি করা অফিস আদেশে কক্সবাজারের চকরিয়া ও চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের দাখিল মাদ্রাসা দুটির একাডেমিক স্বীকৃতির বাতিল আদেশ প্রত্যাহার করে একাডেমিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়। অফিস আদেশে দেখানো হয়েছে ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি। সই করেছেন একই কর্মকর্তা।
এ প্রসঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের যুগ্ম সচিব (মাদ্রাসা অনুবিভাগ) এসএম মাসুদুল হক বলেন, এটি (আদেশ) টিএমইডি (কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ) থেকে করেছে। টিএমইডি এটি অনুমোদনের জন্য অর্থ বিভাগে পাঠায়, জনপ্রশাসনে পাঠায়, এটার প্রক্রিয়া হতে সময় লাগে। এক বছর আগে শুরু হয়েছিল। একেএম লুৎফর রহমানের স্বাক্ষরে অনুমোদন দিতে দেরি করেছে। এ জন্য এখন করা হয়েছে (আদেশ জারি)।
এদিকে ২০২২ সালে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন ও পাঠদান অনুমোদন এবং একাডেমিক স্বীকৃতি দেওয়ার দায়িত্ব পায় দেশের শিক্ষা বোর্ডগুলো। তবে চলমান আবেদন নিষ্পত্তির দায়িত্ব ছিল মন্ত্রণালয়ের হাতেই। নতুন আবেদনের ক্ষেত্রে শিক্ষা বোর্ডগুলো দায়িত্ব পায়।
এর ধারাবাহিকতায় ১৯৯৭ সালের ‘বেসরকারি উদ্যোগে মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক আওতাধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা) স্থাপন, চালুকরণ ও স্বীকৃতি প্রদানের ক্ষেত্রে অনুসরণীয় নীতিমালা, ১৯৯৭’ সংশোধন করে নতুন করে ভাড়া বাড়িতে পরিচালিত মাদ্রাসার অনুমোদন দেওয়ার বিধান যুক্ত করে ‘বেসরকারি মাদ্রাসা (দাখিল ও আলিম) স্থাপন, পাঠদান ও একাডেমিক স্বীকৃতি প্রদান নীতিমালা-২০২৫’ সম্প্রতি নতুন নীতিমালা জারি করে বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড।
এই নীতিমালার আওতায় ভাড়াবাড়িতে পরিচালিত মাদ্রাসাগুলো অনুমোদনের স্বীকৃতি পাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়। নীতিমালা জারির পর মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিঞা মো. নূরুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে সম্প্রতি বলেছিলেন, প্রাইভেট অনেক মাদ্রাসা আছে, যারা অন্য মাদ্রাসার (অনুমোদিত) নামে পরীক্ষা দিতো। এখন তারা স্বনামে পরীক্ষা দিতে পারবে (অনুমোদন পাওয়ার পর)। যেহেতু তারা কন্ট্রিবিউট করেছে, সেখানে সরকারের আর্থিক ব্যয় নেই। অথচ তারা ভালো পারফর্ম করছে, সে জন্য দেওয়া।
শর্ত শিথিল করে এমপিওভুক্তির সুযোগ পাবে স্বীকৃতি পাওয়া মাদ্রাসা
নতুন করে শর্ত শিথিল করে বেসরকারি মাদ্রাসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ। ফলে নতুন করে স্বীকৃতি পাওয়া এবং ভাড়া বাড়িতে গড়ে ওঠা মাদ্রাসাও এমপিওভুক্তির সুযোগ পাবে।
এ প্রসঙ্গে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের যুগ্মসচিব (মাদ্রাসা অনুবিভাগ) এস এম মাসুদুল হক বলেন, জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা সংশোধন চলমান আছে। দাখিল আলিম ও ফাজিল মাদ্রাসাগুলোর এমপিও নীতিমালা ২০২৪ সালের নভেম্বর থেকে শুরু হয়েছে।
এমপিও পেতে নীতিমালা শিথিলের বিষয় জানতে চাইলে মাসুদুল হক উদাহরণ দিয়ে বলেন, ২০১৮ সালের নীতিমালায় ইবতেদায়ি মাদ্রাসার জন্য জমির পরিমাণ ছিল ৩৩ শতাংশ। জনসংখ্যা বাড়ার কারণে সবার সঙ্গে আলোচনা করে ২৫ শতাংশের প্রস্তাব করা হয়েছে। এমপিও পেতে আগে ছাত্র সংখ্যা ছিল ১৫০ জন। এখন ন্যূনতম ১২৫ জন করা হয়েছে।
মাগুরা মহম্মদপুর উপজেলার গোপালনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৯৪১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। প্রতিষ্ঠানটির বয়স ৮৪ বছর পেরিয়ে গেলেও শিক্ষার্থীদের ভাগ্যে জোটেনি একটি ভবন।
চরম কষ্টে টিনশেডে ক্লাস করছেন শিক্ষার্থীরা। ফলে দিনদিন কমে যাচ্ছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা।
জানা যায়, বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন হাজী মোহাম্মাদ বাবু মোল্লা। বিদ্যালয়টির আগের ভবনটি পরিত্যাক্ত হওয়ার পর থেকে আর কোনো নতুন ভবন হয়নি। অর্থ বরাদ্দ আসার পর গত ২০১০-১১, ২০১২-১৩ ও ২০১৬-১৭ অর্থবছরে মাটি পরীক্ষা হওয়ার পরেও অজ্ঞাত কারণে ভবননি আর হয়নি।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের পূর্বপাশে মধুমতি নদী এবং চারপাশে নানা ধরনের ঘরবাড়ি ও মসজিদ বা স্থাপনা থাকলেও পুরোনো টিনশেড ঘরে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম। জানা যায়, জরাজীর্ণ টিনশেড ঘরে পর্যাপ্ত ফ্যানের অভাবে গরমে চরম কষ্টে দিনাতিপাত করছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষকরা বলছেন, একটু ঝড়ো হাওয়া আর সাথে বৃষ্টি হলে কক্ষের ভেতরে ক্লাস নেওয়ার মতো কোনো পরিবেশই থাকে না। প্রচণ্ড গরমে চাহিদামতো বৈদ্যুতিক ফ্যান না থাকায় কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জীবন হয়ে উঠছে দুর্বিসহ।
নানা সমস্যায় জর্জরিত হলেও সুনাম ধরে রেখেছে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি। বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে ৭০ জন শিক্ষার্থীর পাঠদানের শিক্ষিকা রয়েছেন ৫ জন।
বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা হাজী মোহাম্মদ বাবু মোল্যার ছেলে বিশিষ্ট সমাজসেবক মো. জিয়াউল হক বাচ্চু বলেন, বিদ্যালয়টি দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। ফলে এ বিদ্যালয়ে এখনো নতুন কোনো ভবন গড়ে ওঠেন। শিক্ষার মান উন্নয়নে শিক্ষার্থীদের মান উপযোগী করে গড়ে তুলতে দ্রুত বিদ্যালয়ের নতুন একটি একাডেমিক ভবন নির্মাণ ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি জোর দাবি জানান।
প্রধান শিক্ষিকা সুলতানা বিউটি বলেন, ভবন না থাকায় বাধ্য হয়েই পুরোনো টিনশেড ভবনে চরম কষ্টে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করাতে হচ্ছে। এতে যেকোনো সময় প্রাণহানিসহ বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কার রয়েছে। এ পর্যন্ত ৩-বার সয়েল টেষ্ট হওয়ার পর বরাদ্দও এসেছিল কিন্ত ভবন নির্মাণ না করে কেন টাকা ফেরত গেছে জানি না। পড়ালেখার মান উন্নয়ন ও অনুকূল পরিবেশের জন্য বিদ্যালয়ে একটি নতুন ভবন নির্মাণ খুবই জরুরি।
মহম্মদপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সুব্রত কুমার সাহা বলেন, নদী নিকটবর্তী হওয়ায় সম্ভবত প্রকল্প ফেরত গেছে। খোঁজ-খবর নিয়ে নতুন ভবন নির্মাণসহ নানা সমস্যা নিরসনে গ্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
৪৯তম বিসিএস (বিশেষ) পরীক্ষা-২০২৫ এর চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। সাময়িকভাবে ৬৬৮ জনকে মনোনয়ন প্রদান করা হয়েছে।
ফলাফল কমিশন www.bpsc.gov.bd bpsc. ও টেলিটলকের teletalk.com.bd এই ওয়েবসাইট পাওয়া যাবে।
মঙ্গলবার রাত সোয়া ১০টার দিকে পিএসসির জনসংযোগ কর্মকর্তা এস এম মতিউর রহমান ফল প্রকাশের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
পিএসসির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘৪৯তম বিসিএস (বিশেষ) পরীক্ষা-২০২৫ এ মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মধ্যে বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারের বিভিন্ন পদে ৬৮৩ (ছয়শত তিরাশি) টি শূন্য পদের মধ্যে ৬৬৮ (ছয়শত আটষট্টি) জনকে নিয়োগের জন্য বাংলাদেশ সরকারী কর্ম কমিশনের পক্ষ থেকে মেধাক্রম অনুযায়ী সাময়িকভাবে মনোনয়ন প্রদান করা হলো। কয়েকটি ক্যাডার পদে যোগ্য প্রার্থী না পাওয়ায় ১৫টি পদে প্রার্থী মনোনয়ন করা সম্ভব হয়নি।’
এই বিসিএসে সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের শূন্য পদ পূরণের জন্য প্রার্থী বাছাইয়ের ফল প্রকাশ করা হলো। পিএসসি সূত্রে জানা গেছে, এ বিসিএসে মোট ৩ লাখ ১২ হাজারের বেশি প্রার্থী আবেদন করেছেন। এমসিকিউ টাইপ লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন ১ হাজার ২১৯ জন। শিক্ষা ক্যাডারের জন্য বিশেষভাবে আয়োজিত এই বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছিল ২১ জুলাই এবং লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ১০ অক্টোবর।
‘Evidence-Based Clinical Oncology Lecture Series’–এর অংশ হিসেবে ‘Advances in Multiple Myeloma’ শীর্ষক এক আন্তর্জাতিক একাডেমিক সেশন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয় ১১ নভেম্বর ২০২৫ সকাল ৮টায়, বিএমইউ কনফারেন্স হলে।
সেশনে মূল বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুল ও ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতালের (এমজিএইচ) হেমাটোলজিস্ট ও মেডিক্যাল অনকোলজিস্ট প্রফেসর ডা. অ্যান্ড্রু রবার্ট ব্রানাগান, এমডি, পিএইচডি।
তিনি মাল্টিপল মাইলোমার সর্বাধুনিক চিকিৎসা, ইমিউনোথেরাপি, টার্গেটেড থেরাপি, CAR-T সেল থেরাপি, টক্সিসিটি ম্যানেজমেন্ট এবং সারভাইভারশিপ কেয়ার বিষয়ে সাম্প্রতিক বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি তুলে ধরেন।
✅ প্রধান অতিথির বক্তব্য
অনুষ্ঠানে বিএমইউ-এর মাননীয় কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক নাহরীন আখতার প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন— “বাংলাদেশে ক্যান্সার দ্রুত বেড়ে যাচ্ছে। আধুনিক চিকিৎসা নিশ্চিত করতে জেনোমিক্স, বায়ো-ব্যাংক, ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল, প্যালিয়েটিভ কেয়ার এবং নিউক্লিয়ার মেডিসিন অত্যন্ত প্রয়োজন। তাই বিএমইউতে পূর্ণাঙ্গ Cancer Research Institute প্রতিষ্ঠা সময়ের দাবি।”
তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাবনা প্রস্তুত করে কর্তৃপক্ষের কাছে দ্রুত উপস্থাপন করার নির্দেশ দেন।
✅ ক্যান্সার গবেষণায় নতুন দিগন্ত
অনুষ্ঠানে বক্তৃতা ও আলোচনায় একটি জাতীয় মানের ‘BMU Cancer Research Institute’ প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়।
প্রস্তাবিত ইনস্টিটিউটের আওতায় থাকবে—
Molecular & Genomic Research
Cancer Bio-bank ও National Cancer Registry
Clinical Trial Unit
AI & Digital Oncology
INMAS–BMU Nuclear Medicine Branch (PET-CT, SPECT, Radionuclide Therapy)
গাইনী অনকোলজি, পেডিয়াট্রিক হেমাটো-অনকোলজি, হেমাটোলজি, হেড–নেক সার্জারি, নিউরো-অনকোলজি, প্যালিয়েটিভ মেডিসিন, রেডিওলজি ও প্যাথলজির সমন্বিত গবেষণা
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা হলে দেশে আধুনিক, সাশ্রয়ী এবং গবেষণানির্ভর ক্যান্সার চিকিৎসায় বড় ধরনের অগ্রগতি আসবে।