সর্বজনীন পেনশনের প্রত্যয় স্কিম থেকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি বাতিলের দাবিতে সরকারকে সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন।
আজ সোমবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন থেকে এই ঘোষণা দেওয়া হয়। এই বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়া হলে সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে একযোগে মানববন্ধন এবং কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দিয়েছে সংগঠনটি। সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি বাতিলের দাবিতে তিনটি কর্মসূচি ঘোষণা করেন ফেডারেশনের মহাসচিব অধ্যাপক নিজামুল হক ভূঁইয়া।
তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রথম কর্মসূচী হলো, আগামী ২৫ মে তারিখের মধ্যে এ বিষয়ে কোনো ধরনের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা না হলে ২৬ মে রোববার থেকে সারা দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের শিক্ষকরা একযোগে সকাল সাড়ে ১১ থেকে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করবেন। দ্বিতীয় কর্মসূচি, আগামী ২৮শে মে মঙ্গলবার সারা দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালসমূহের শিক্ষকরা একযোগে সকাল ১০টা থেকে ১২ পর্যন্ত কর্মবিরতি পালন করবেন।’
নিজামুল হক ভুঁইয়া বলেন, ‘এই সময়ের মধ্যে দাবি না মানা হলে আমাদের তৃতীয় কর্মসূচি, আগামী ৪ঠা জুন, মঙ্গলবার সারা দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালসমূহের শিক্ষকরা একযোগে অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করবেন। তবে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষাসমূহ এসব কর্মসূচির আওতামুক্ত থাকবে।’
এক লিখিত বক্তব্যে থেকে জানা যায়, সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার ধারণা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একটি কল্যাণমুখী চিন্তার ফসল। বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি একটি যুগান্তকারী ঘটনা। সর্বজনীন পেনশন স্কিম প্রবর্তনের মাধ্যমে সরকারি চাকরির বাইরে থাকা নাগরিকদের পেনশন স্কিমের আওতায় আনায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। কিন্তু সরকারের এমন মহৎ উদ্যোগ যখন প্রশংসিত হচ্ছে, ঠিক সেই মুহূর্তে শিক্ষকদের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা না করে গত ১৩ই মার্চ অর্থমন্ত্রণালয়ের জারি করা প্রজ্ঞাপনে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেওয়া স্বায়ত্তশাসনকে অবজ্ঞার শামিল।
আরও জানা যায়, প্রত্যয় স্কিমে অন্তর্ভুক্তি ১লা জুলাই তারিখের আগে যোগ দেওয়া এবং ১লা জুলাই এবং তার পরে যোগ দেওয়াদের মধ্যে দুটি শ্রেণির জন্ম দেবে। একই কর্মক্ষেত্রে অবস্থানরত সহকর্মীদের মধ্যে এই বিভাজন শিক্ষা ও গবেষণার পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে; এই ব্যবস্থা সরকারি অন্যান্য চাকরিজীবী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বৈষম্য তৈরি করবে, যা সংবিধানের সমতার নীতির পরিপন্থী। বিদ্যমান পেনশন ব্যবস্থায় পেনশনের ওপর বৎসরিক ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট প্রদান করা হয় কিন্তু সর্বজনীন পেনশন স্কিমে বিষয়টি সুস্পষ্ট নয়; বিদ্যমান ব্যবস্থায় অর্জিত ছুটি নগদায়নের ব্যবস্থা রয়েছে কিন্তু প্রস্তাবিত স্কিমে সে সুবিধা নেই; বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদকাল ৬৫ বছর। প্রত্যয় স্কিমে অবসরকালীন বয়স স্থির করা হয়েছে ৬০ বছর; বিদ্যমান ব্যবস্থায় পেনশনের সাথে মাসিক চিকিৎসাভাতা, বছরে দুটি উৎসবভাতা ও একটি বৈশাখীভাতা প্রদান করা হয়। প্রস্তাবিত স্কিমে বিষয়টি উল্লেখ নেই। বর্তমান ব্যবস্থায় পেনশন বাবদ কোনো অর্থ কর্তন করা হয় না। 'প্রত্যয়' স্কিমে মূল বেতনের ১০ শতাংশ কেটে নেওয়ার বিধান আছে; বিদ্যমান পেনশন ব্যবস্থায় এককালীন আনুতোষিক প্রাপ্য হন। 'প্রত্যয়' স্কিমে আনুতোষিক শূন্য; বিদ্যমান ব্যবস্থায় পেনশনার ও নমিনি আজীবন পেনশন প্রাপ্ত হন কিন্তু 'প্রত্যয়' স্কিমে পেনশনারের মৃত্যু হলে নমিনি পেনশনারের বয়স ৭৫ বছর পূর্তি হওয়া পর্যন্ত পেনশন প্রাপ্ত হবেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেদিন সর্বজনীন পেনশন স্কিমের উদ্বোধন করেন সেদিন এই 'প্রত্যয়' স্কিমটি ছিল না। হঠাৎ করেই একটি মহল নিজেদের সুযোগ সুবিধা অক্ষুণ্ণ রেখে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের উপর এ ধরনের একটি বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা চাপিয়ে দিয়েছেন। আমরা আশা করব, অনতিবিলম্বে এই প্রজ্ঞাপনটি প্রত্যাহার করে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদ্যমান সেশনজটমুক্ত শিক্ষার পরিবেশ অব্যাহত রাখতে সহায়তা করবেন।
অধ্যাপক নিজামুল হক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বর্তমানে বিদ্যমান পেনশন স্কিমের আওতায় রয়েছেন এবং তা নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে কোনো অসন্তুষ্টি নেই। কী কারণে তাদের নতুন স্কিমের আওতায় আনার প্রয়োজন হলো, তা স্পষ্ট নয়। আমরা মনে করি এই পদক্ষেপ শিক্ষক ও শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি অসম্মান ও অবজ্ঞা প্রদর্শনের জন্য করা হয়েছে। রাষ্ট্রের স্বার্থে কোনো ব্যবস্থার পরিবর্তন করার প্রয়োজন হলে তা সকলের জন্য প্রযোজ্য হওয়া বাঞ্ছনীয়। খণ্ডিতভাবে করায় এই পদক্ষেপটি প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। এই ব্যবস্থা কার্যকর হলে আগামী দিনে মেধাবীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতায় আসার আগ্রহ হারাবে।
এর আগে গত ১৩ই মার্চ অর্থমন্ত্রণালয়ের জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে স্ব-শাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা বা তাদের অধীন অঙ্গপ্রতিষ্ঠানসমূহকে 'প্রত্যয়' স্কিমের অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যা চলতি বছরের ১লা জুলাই এবং তার পরবর্তী সময়ে যাঁরা চাকরিতে নতুন যোগদান করবেন তাঁদের জন্য প্রযোজ্য হবে।
সম্মেলনে ৩৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) প্রায় ৩০০টি কক্ষ ভাঙচুর করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল। আজ শুক্রবার সকালে ঢাবির ক্ষতিগ্রস্ত রোকেয়া হল এবং স্যার এ এফ রহমান হল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য দেন তিনি।
উপাচার্য বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইতিমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হলসমূহের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করেছে। ইঞ্জিনিয়ারিং ডিভিশন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত রুমগুলোর অ্যাসেসমেন্ট করেছি। কারণ এই অ্যাসেসমেন্ট ছাড়া মঞ্জুরি কমিশন থেকে আর্থিক বরাদ্দ পাওয়া সম্ভব নয়। এই অ্যাসেসমেন্টের ওপর ভিত্তি করে আমরা মঞ্জুরি কমিশন থেকে আর্থিক বরাদ্দ চাইব। সেই বরাদ্দ দিয়ে আমরা ৩০০টি রুম সংস্কার করব। এ ছাড়া আরও বহু স্থাপনায় আঘাত করা হয়েছে। সেগুলোও রিপেয়ার করার পরিকল্পনা আছে আমাদের। রুমগুলোকে যখন আমরা সংস্কার করে শেষ করব, দেশব্যাপী যখন একটা স্থিতিশীলতা আসবে, শিক্ষার্থীদের যখন আমরা আশ্বস্ত করতে পারব পাশাপাশি হলগুলো যখন প্রস্তুত হবে তখন আমরা খোলার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেব।
কতদিনের হল খোলা হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মঞ্জুরি কমিশন থেকে আমাদের অর্থপ্রাপ্তির বিষয় রয়েছে। তাদের আবার মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদনের প্রয়োজন রয়েছে। অর্থ পেলে সেটি আবার টেন্ডার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। টেন্ডার প্রাপ্তির পরে সুনির্দিষ্টভাবে বলা সম্ভব কবে নাগাদ আমাদের এই কাজ শেষ হবে এবং কবে নাগাদ হলগুলো খোলা হবে।
ঘটনার দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা আর প্রস্তুতি নিয়ে উপাচার্য বলেন, সেদিন সংস্কারপন্থি শিক্ষার্থীদের প্রোগ্রাম ছিল দুপুর ১২টার সময় আর ছাত্রলীগের প্রোগ্রাম ছিল তিনটার সময়। আমাদের প্রক্টরিয়াল টিম শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য প্রস্তুত ছিল। বিকেল ৩টার দিকে সংস্কারপন্থি শিক্ষার্থীদের একটি অংশ যখন হল পাড়ার দিকে আসে সেই দুপুরের সময় আমাদের প্রভোস্টরাও হলে ছিল না। প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যদেরও বিষয়টি জানা ছিল না। আমি খবর পাওয়ার পর প্রক্টরিয়াল টিম এবং প্রভোস্ট মহোদয়দের বিষয়টি অবহিত করি। ততক্ষণে মারামারি শুরু হয়ে যায়। তখন দেখি দুই পক্ষের হাতেই লাঠি। এই সময় প্রক্টোরিয়াল টিমও সেখানে পৌঁছাতে পারেনি। আর প্রভোস্টরাও আটকা পড়েছে বিভিন্ন জায়গায়। তার ওপর শিক্ষার্থীরা বেশিরভাগই অপরিচিত। তাদের অনেকেই প্রক্টোরিয়াল টিমকে চেনে না।
তিনি বলেন, আমাদের প্রস্তুতির কোনো ঘাটতি ছিল না। সংস্কারপন্থি শিক্ষার্থীদের প্রোগ্রাম শেষে অন্যরা তাদের প্রোগ্রাম করবে সেজন্য আমাদের প্রক্টরিয়াল টিম প্রস্তুত ছিল। কিন্তু আমাদের যদি জানা থাকতো যে, সেখানকার একটি মিছিল এদিকে আসবে তখন আমাদের সেই প্রস্তুতিটাও থাকত। আকস্মিকভাবে এটি ঘটেছে। এই ধরনের অবস্থা কন্ট্রোল করা- যখন সবার হাতে লাঠি তখন আমাদের প্রচেষ্টা স্বত্বেও এইটি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এই অবস্থায় আমাদের যতটুকু করণীয় ছিল আমরা আমাদের দায়িত্বটুকু পালন করেছি।
উপাচার্য বলেন, ১৫ তারিখ যে সংঘর্ষটি হয়েছে সেটি পূর্ব থেকেই আমাদের প্রক্টরিয়াল টিমের জানা ছিল না। প্রক্টরিয়াল টিমকে অবহিত করা হয়নি। দুপুরে আমাদের প্রভোস্টরা যখন খেতে গিয়েছে সেই সময় এই ঘটনাটি ঘটে যায়।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের কাছ থেকে আর্থিক বরাদ্দ পাওয়া সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া সম্পন্নের মাধ্যমে হলসমূহ সংস্কার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা হবে বলে উপাচার্য আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
পরিদর্শনের সময় ঢাবি প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূইয়া, সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক আবু হোসেন মুহম্মদ আহসান এবং সংশ্লিষ্ট হলের প্রাধ্যক্ষরা উপস্থিত ছিলেন।
৬ ঘণ্টা অবস্থানের পরও পুলিশকে হলে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি
উপাচার্য বলেন, ১৫ জুলাই বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত শহীদুল্লাহ হলের সামনে যেই ঘটনা ঘটেছে সেসময়ও আমরা পুলিশকে শহীদুল্লাহ হলে প্রবেশ করতে বারণ করেছি। এই হলের সামনে পুলিশ ৬ ঘণ্টা অবস্থান করেছে তারপরও কিন্তু আমরা তাদের ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দেইনি। পরের দিন আমরা যখন হলগুলো বন্ধ করে দিয়েছি সেদিনও পুলিশ হলগুলোতে প্রবেশ করার জন্য চেয়েছিল আমরা তাদের সেই অনুমতিও দেইনি। পুলিশ তাদের নিজস্ব কোর্স অফ অ্যাকশন হিসেবে যা করেছে তা তারা নিজেরাই করেছে।
শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্যই ক্যাম্পাসে পুলিশের অবস্থান
উপাচার্য বলেন, পুলিশ যে ক্যাম্পাসে এসেছে সেটি আমাদের সংস্কারপন্থি শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা ভেবেই তাদের আসতে হয়েছে। কখনো কখনো এটি তারাও চেয়েছে। তিনি বলেন, ১৬ তারিখ সংস্কারপন্থি শিক্ষার্থীদের প্রোগ্রাম ছিল শহীদ মিনারে আর ছাত্রলীগের প্রোগ্রাম ছিল রাজু ভাস্কর্যে। দু’পক্ষই সংঘর্ষে লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা থেকে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্যই শেখ রাসেল টাওয়ারের সামনে আমরা পুলিশকে অবস্থান নিতে বলেছি। তাদেরকে এও বলেছি তারা যেন কোন টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ না করে।
উপাচার্য বলেন, ক্যাম্পাসের নিরাপত্তার জন্যই পুলিশ ক্যাম্পাস অবস্থা নিয়েছে। কখনো কখনো আমরা শুনেছি বাহির থেকে হলগুলোকে আক্রমণ করা হবে, কখনো শুনেছি বহিরাগতরা আক্রমণ করবে আবার কখনো শুনেছি প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্র সংগঠনের কর্মীরা আক্রমণ করবে। সেই মুহূর্তে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টি ছিল আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তাকে প্রাধান্য দিয়েই আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদক্ষেপগুলো নিয়েছি।
সংঘর্ষ শুরুর দিন হতে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের পরের দিন পর্যন্ত প্রক্টরিয়াল টিম এবং হলগুলোর প্রাধ্যক্ষ এবং হাউজ টিউটরবৃন্দ সারারাত জাগ্রত ছিলেন দাবি করে উপাচার্য বলেন, ১৫ থেকে ১৮ জুলাই পর্যন্ত আমাদের প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যরা সারারাত জাগ্রত ছিল আর দিনভর কাজ করেছে। হলগুলোর প্রভোস্ট এবং হাউস টিউটররাও সারা রাত জাগ্রত ছিল। কখনো কখনো আমরা রাতের বেলা জুমে মিটিং করে প্রভোস্টদের ইনস্ট্রাকশন দিয়েছি। আমাদের যতটুকু ক্যাপাসিটি ছিল সেই ক্যাপাসিটি থেকেই শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি।
উপাচার্য বলেন, শিক্ষার্থীদের এই সংস্কার আন্দোলন যখন শুরু হয় তখন থেকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধি দল সরকারের বিভিন্ন ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা করেছে আর সেই আলোচনার সুযোগ করে দিয়েছি আমরা। আমার পাশের রুমেই প্রায় ছয়/সাত দিন অর্থাৎ ৮ থেকে ১৪ জুলাই পর্যন্ত তারা সেই আলোচনাটি করেছে। আমরাও চেয়েছি এই বিষয়টির যেন দ্রুত গতিতে সমাধান হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলাকালীন সময় অর্থাৎ ১৬ জুলাই রাত থেকে পরদিন দুপুর পর্যন্ত বিভিন্ন হল থেকে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বের করে দিয়ে হলসমূহে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা হবে মর্মে একাধিক বিজ্ঞপ্তিতে হল প্রাধ্যক্ষের স্বাক্ষর নেয় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। পরে আজ ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি চলবে’ মর্মে উপাচার্য বক্তব্য দিয়েছেন দাবি করে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে দেশের বেসরকারি একটি টিভি চ্যানেল।
তবে এই ধরনের কোনো বক্তব্য দেননি উল্লেখ করে উপাচার্য বলেন, চ্যানেলটির সেই প্রতিবেদক উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে এই তথ্যটি ছড়িয়েছে।
উপাচার্য দৈনিক বাংলাকে বলেন, ছাত্ররাজনীতি সংক্রান্ত কোনো বক্তব্য আমি দেইনি। কোনো সাংবাদিক আমাকে এটি নিয়ে কোনো প্রশ্নও করেনি। আমার সম্পূর্ণ ভিডিও ইউটিউবে আছে। যমুনা টিভির সাংবাদিক উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে এই তথ্যটি ছড়িয়েছে। এখন সেটি তাদের ফেসবুক এবং ইউটিউব থেকে সরিয়ে দেবে বলেছে।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সারা দেশে সহিংস কর্মকাণ্ডের কারণে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিবেচনায় চলমান এইচএসসির আগামী সপ্তাহের আরও চারটি পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। পরীক্ষাগুলো আগামী ২৮, ২৯, ৩১ জুলাই ও ১ আগস্ট হওয়ার তারিখ ছিল। এ নিয়ে চলমান এইচএসসি পরীক্ষার ৮টি পরীক্ষা স্থগিত করা হলো।
আজ বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানিয়েছে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার। তিনি জানান, দেশের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পরীক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
নতুন করে চারটি পরীক্ষা স্থগিত হওয়ার আগে এসব পরীক্ষার বিষয়ে তপন কুমার সরকার জানান, আগামী ১১ আগস্টের পর এসব পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। তবে তারিখ জানানো হয়নি।
এর আগে, কোটা সংস্কার নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিবেচনায় প্রথমে ১৮ জুলাইয়ের, পরে ২১, ২৩ ও ২৫ জুলাইয়ের এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিত করে আন্তঃশিক্ষাবোর্ড সমন্বয় কমিটি।
শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিবেচনায় কোটা সংস্কারের আন্দোলন ঘিরে দেশব্যাপী সহিংসতার কারণে ২১, ২৩ ও ২৫ জুলাইয়ের সব বোর্ডের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। স্থগিত হওয়া পরীক্ষাগুলো আগামী ১১ আগস্টের পর অনুষ্ঠিত হবে।
আজ বৃহস্পতিবার আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার গণমাধ্যমকে বলেন, স্থগিত হওয়া সব পরীক্ষা ১১ আগস্টের পর অনুষ্ঠিত হবে।
চলমান এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার সূচি অনুযায়ী পরবর্তী পরীক্ষা আগামী ২৮ জুলাই যথারীতি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। তবে বিদ্যমান পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ায় আর কোনো পরীক্ষা স্থগিত হতে পারে কিনা জানতে চাইলে অধ্যাপক তপন বলেন, এখনও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। কোনো সিদ্ধান্ত নিলে জানানো হবে।
গত ৩০ জুন থেকে সিলেট বোর্ড ছাড়া সারা দেশে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়। তবে বন্যার কারণে সিলেট বোর্ডের পরীক্ষা ৯ জুলাই শুরু করা হয়।
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে দেশের চলমান পরিস্থিতিতে চলতি ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। আগামী ২৮ জুলাই থেকে আবারও শুরু হবে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির কার্যক্রম। এ প্রক্রিয়া চলবে ১ আগস্ট পর্যন্ত।
আজ বুধবার আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক তপন কুমার সরকারের সই করা জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে অনলাইনের মাধ্যমে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের কলেজে ভর্তি কার্যক্রম অনিবার্য কারণে বন্ধ আছে। দেশের সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহে ভর্তি কার্যক্রমের সময়সীমা আগামী ২৮ জুলাই থেকে ১ আগস্ট পর্যন্ত পুনঃনির্ধারণ করা হলো। একই সঙ্গে চলতি শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে অনলাইনের মাধ্যমে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের ক্লাস আগামী ৬ আগস্ট মঙ্গলবার শুরু হবে।
ভর্তি নীতিমালা অনুযায়ী, গত ১৫ জুলাই থেকে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়। এ ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার কথা ছিল ২৫ জুলাই। তবে ১৮ জুলাই থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করায় বন্ধ রয়েছে একাদশে ভর্তি কার্যক্রম।
চলতি বছর এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় ১১ শিক্ষা বোর্ডে পাস করেন ১৬ লাখ ৭২ হাজার ১৫৩ জন। ফল পুনঃনিরীক্ষণে আরও প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থী ফেল থেকে পাস করেন। তবে সারাদেশে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তিযোগ্য আসন রয়েছে ২৫ লাখের মতো। সব শিক্ষার্থী ভর্তি হলেও একাদশ শ্রেণিতে ৮ লাখের বেশি আসন ফাঁকা থাকার কথা।
ভর্তি নীতিমালা অনুযায়ী, গত ২৬ মে সকাল ১০টায় একাদশ শ্রেণিতে ভর্তিতে অনলাইনে আবেদন শুরুর কথা ছিল। তবে সার্ভারে ত্রুটির কারণে একদিন পর আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হয়। প্রথম ধাপে ১৩ জুন পর্যন্ত আবেদন করার সুযোগ পান শিক্ষার্থীরা। ২৩ জুন রাতে প্রথম ধাপের ফল প্রকাশ করা হয়। এরপর ৩০ জুন থেকে ২ জুলাই পর্যন্ত দ্বিতীয় ধাপে এবং ৯-১০ জুলাই তৃতীয় ধাপে আবেদন নেওয়া হয়।
সাম্প্রতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বন্ধ রয়েছে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ধীরে ধীরে জনজীবন স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। এর মধ্যই সবার মনে প্রশ্ন জেগেছে— কবে খুলবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান?
এ প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হবে না। আজ বুধবার সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা জানান।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এখনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার পরিবেশ তৈরি হয়নি। এই মুহূর্তে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তাই আমাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে পারছি না। চলমান এইচএসসি পরীক্ষা শেষ করা সরকারের মূল অগ্রাধিকার বলেও উল্লেখ করেন মন্ত্রী।
প্রসঙ্গত, কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ‘ইঙ্গিতপূর্ণ’ বক্তব্যকে ঘিরে গত রোববার মধ্যরাত থেকে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশের ছাত্রসমাজ। এরপর সোম, মঙ্গল ও বুধবার টানা তিনদিন সারা দেশে ছাত্র আন্দোলন জোরালো হয়ে ওঠে। আন্দোলন দমাতে পুলিশের পাশাপাশি ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ ক্ষমতাসীনরা মাঠে নামে। এতে সারা দেশে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গত ১৬ জুলাই সারা দেশে স্কুল-কলেজ-মাদরাসা-পলিটেকনিকসহ সব পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। একই সঙ্গে বন্ধ ঘোষণা করা হয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত মেডিক্যাল কলেজ, টেক্সটাইল, ইঞ্জিনিয়ারিংসহ অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
এ ছাড়া, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সব কলেজও বন্ধ রয়েছে। পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে প্রাথমিক স্কুলও।
আগামী ৩১ জুলাই পর্যন্ত অনুষ্ঠিতব্য ৪৪তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষাসহ বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সব পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।
গত সোমবার (২২ জুলাই) পিএসসির জনসংযোগ কর্মকর্তা এস এম মতিউর রহমান এক ক্ষুদে বার্তায় গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন। সারা দেশে ইন্টারনেট সংযোগ না থাকায় সেদিন এ খবর প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি।
ক্ষুদে বার্তায় জানানো হয়, ৩১ জুলাই পর্যন্ত অনুষ্ঠেয় ৪৪তম বিসিএস মৌখিক পরীক্ষা, অর্ধবার্ষিক বিভাগীয় পরীক্ষা (জুন-২০২৪), নন-ক্যাডারের স্ট্যান্ডার্ড অ্যাপটিচুড টেস্ট, এমসিকিউ বা বাছাই পরীক্ষা, ব্যবহারিক বা সাঁটলিপি পরীক্ষা, লিখিত পরীক্ষা, মৌখিক পরীক্ষাসহ বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সব পরীক্ষা অনিবার্য কারণে স্থগিত করা হয়েছে।
এসব পরীক্ষার তারিখ ও সময় পরে পিএসসির ওয়েবসাইট এবং মিডিয়ার মাধ্যমে জানানো হবে।
চলমান এইচএসসি ও সমমানের আগামী ২১, ২৩ ও ২৫ জুলাইয়ের পরীক্ষা স্থগিত করেছে বাংলাদেশ আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি। আজ বৃহস্পতিবার আন্তঃশিক্ষাবোর্ড সমন্বয় কমিটির এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এর আগে অনিবার্য কারণে আগামী ১৮ জুলাই বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিতব্য সব শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। স্থগিত হওয়া পরীক্ষার পরিবর্তিত সময়সূচি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে পরে জানিয়ে দেওয়া হবে।
কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের পূর্বঘোষিত কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ উত্তরা-আজমপুর এলাকায় সড়ক অবরোধ করতে গেলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
এসময় গুলিতে শিক্ষার্থী-পথচারীসহ চারজন নিহত হয়েছেন। তাদের মরদেহ কুয়েতমৈত্রী হাসপাতালে রাখা হয়েছে। একইসঙ্গে হাসপাতালটিতে আহত হয়ে আরও শতাধিক ব্যক্তি চিকিৎসা নিতে এসেছেন।
এদিকে উত্তরা-আজমপুর এলাকায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও একজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানিয়েছে, সংঘর্ষে প্রায় ২০০ জনের বেশি গুলিবিদ্ধ হয়ে সেখানে গেছে এবং একজনের মৃত্যু হয়েছে। আহতদের মধ্যে যারা গুরুতর, তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে (ঢাবি) একাত্তর হল, কবি জসিম উদ্দীন হল, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলসহ আরও কিছু হল থেকে শিক্ষার্থীদের বের করে খালি করা হচ্ছে।
এর আগে পুলিশ হল পাড়ার দিকে রাবার বুলেট ছুড়লে এক শিক্ষার্থী আহত হন। আহত শিক্ষার্থীর নাম আব্দুল হান্নান মাসউদ। তিনি কোটা আন্দোলনের একজন অন্যতম সমন্বয়ক। পরে পুলিশের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের বের হয়ে আসতে বললে শিক্ষার্থীরা নিজেদের ব্যাগপত্র গুছিয়ে হলগুলো থেকে একে একে বের হয়ে আসেন।
এর আগে আজ বুধবার বিকেল থেকে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের মধ্যে হওয়া সংঘর্ষে শিক্ষার্থীরা হল পাড়া, মল চত্বরের দিকে অবস্থান নিলে পুলিশ তাদের লক্ষ্য করে রাবার বুলেট, টিয়ারগ্যাস আর সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করেন। এতে কোনো শিক্ষার্থী আহত হয়েছে কিনা সেটি জানা যায়নি। পুলিশের চতুর্দিক থেকে সাঁড়াশি অভিযানে শিক্ষার্থীরা হল পাড়ার দিকে এগিয়ে আসে।
কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে নিহতের ঘটনায় গায়েবানা জানাজা ও কফিন মিছিল আয়োজনকে কেন্দ্র করে দুপুর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মুহুর্মুহু সাউন্ড গ্রেনেড এবং টিয়ারশেল নিক্ষেপ করছে পুলিশ।
দুপুর ২টার দিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের এই কর্মসূচি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাষ্কর্যে শুরু হওয়ার কথা ছিলো। এর একটু পর আড়াইটার দিকে রাজু ভাষ্কর্যে আসেন গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির আহবায়ক এবং ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেনসহ আরও তিনজন। আর তাদের পিছু পিছু আসেন একদল সমাজকর্মী। এসময় পুলিশ তাদের বাঁশি দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করানোর চেষ্টা করলে মাটিতে শুয়ে পড়েন আখতার এবং তার সঙ্গে থাকা আরও কয়েকজন।
এসময় তিনি বলেন, এটা আমাদের ক্যাম্পাস। আমি এখান থেকে কোথায় যাবো না। প্রয়োজনে আমার লাশ যাবে। এর কিছুক্ষণ পর পুলিশ আরও সামনে আগানোর চেষ্টা করলে আখতারকে রক্ষা করতে ঘিরে ধরেন আরও কয়েকজন যুবক।
এসময় পরপর কয়েকটি সাউন্ড গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটনায় পুলিশ। এতে সবাই ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলে পুলিশ আখতারকে আটক করে শাহবাগ থানায় নিয়ে যায়।
অন্যদিকে আজ বিকেল ৩টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি চত্বরে জড়ো হতে থাকেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। বেলা ৪টার দিকে নিহতদের গায়েবানা জানাজা পড়া হয়।
পরে এই নামাজ শেষে শিক্ষার্থীরা টিএসসির দিকে এগুতে চাইলে টিএসসিতে অবস্থান করা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাদের দিকে মুহুর্মুহু সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারগ্যাস ছুঁড়েন।
তবে এসময় রাবার বুলেট ছোঁড়া হয়েছে কিনা সেটি বুঝা যায়নি। প্রায় এক ঘণ্টা যাবত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের এই সংঘর্ষ চলে।
পরে বেলা ৫টার দিকে পুলিশ ফোর্স নিয় হল পাড়ার দিকে এগিয়ে যান। এসময় তাদের রাবার বুলেট টিয়ারগ্যাস আর সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করতে দেখা যায়।
অনির্দিষ্টকালের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সকল আবাসিক হল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আজ সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল ছেড়ে যেতে হবে। এই সম্পূর্ণ সময় কোনো ক্লাস-পরীক্ষাও হবে না। আজ বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেট সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক সীতেশ চন্দ্র বাছার বলেন, উদ্ভুদ্ধ পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে আমরা আবাসিক হল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল ছাড়তে আহ্বান জানানো হয়েছে।
শিক্ষার্থীরা হল না ছাড়লে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপাতত আমরা তাদের আহ্বান জানিয়েছি। সন্ধ্যা ছয়টার পর যদি তারা না ছাড়ে তখন সেটা নিয়ে চিন্তা করা যাবে।
এদিকে আজ বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে সামনে অবস্থান নিয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বে একদল শিক্ষার্থী হল বন্ধ না রাখার জন্য বিভিন্ন স্লোগান দেন। এসময় তারা হল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত মানি না মানবো না ইত্যাদি স্লোগান দেন।
এসময় আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী শাহিন রেজা বলেন, আমরা হল ছাড়ব না। আমাদের ছয়জন ভাই মারা গেছে। তাদের রক্ত আমরা বৃথা যেতে দিবো না। আমাদের ওপর যত হামলা হোক আমরা কোনোমতেই হল ছাড়ছি না।
পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপিঠ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আজ বুধবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিমের সভাপতিত্বে এক জরুরি সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র ছাত্রী হল বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের শিক্ষার্থীদের বিকেল চারটার মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে এ বিষয়ে জবি উপাচার্য দৈনিক বাংলাকে বলেন, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। বিকেল চারটার মধ্যে ছাত্রীদের হল ত্যাগ করতে হবে। ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রম চলবে।
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার রাতে ইউজিসির সচিব ড. ফেরদৌস জামান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সরকারের সিদ্ধান্ত মোতাবেক দেশের সকল পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত মেডিকেল, টেক্সটাইল, ইঞ্জিনিয়ারিং ও অন্যান্য কলেজসহ সব কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে আবাসিক হল ত্যাগের নির্দেশনা দিয়ে নিরাপদ আবাসস্থলে অবস্থানের নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার করা মন্তব্যের প্রতি প্রতিবাদ জানিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শাখা ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগ করেছেন দলটির ছয়জন নেতা। আজ মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে নিজেদের পদত্যাগের কথা জানান তারা।
পদত্যাগ করা ছাত্রলীগ নেতারা হলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ শাখার সহ-সভাপতি মাহমুদুল হাসান সামি ও রসায়ন বিভাগ শাখার সহ-সভাপতি তাওসিফ কবির, মনোবিজ্ঞান বিভাগ শাখার সহ-সভাপতি রনি সরকার ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আশিকুর রহমান, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ শাখার সহ সভাপতি মাহমুদুল হাসান নোমান এবং শিঞ্জন বসাক।
মাহমুদুল হাসান নোমান ফেসবুকে লিখেন, ‘আমি নিজ ইচ্ছায় ও স্বজ্ঞানে ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ শাখা ছাত্রলীগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-সভাপতি পদ থেকে পদত্যাগ করলাম। সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে ট্যাগ লাইনে বাকি দিন কাটাতে চাই।’
প্রধানমন্ত্রী তার সম্প্রতি চীন সফর থেকে দেশে ফিরে গত ১৪ জুলাই সংবাদ সম্মেলন করেন। ওই সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর একটি বক্তব্যকে ভুলভাবে নিয়ে এদিন রাতেই ঢাবিতে প্রতিবাদ জানায় কোটা আন্দোলনকারীরা। তার পরদিনও সারা দেশে বিক্ষোভ করেন কোটা আন্দোলনকারীরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) বহিরাগত প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আজ মঙ্গলবার দুপুরে প্রক্টরিয়াল কমিটির জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ঢাবির জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আজ মঙ্গলবার উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামালের সভাপতিত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল কমিটির এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ এবং প্রক্টরিয়াল কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তিপূর্ণ শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখার জন্য কয়েকটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সেগুলো হলো-
১. আজ (১৬ জুলাই) থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বহিরাগত প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং শিক্ষার্থীদের বৈধ পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখার নির্দেশ দেওয়া যাচ্ছে।
২. ক্যাম্পাসে সন্দেহজনক কাউকে চিহ্নিত করা গেলে সে ব্যাপারে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবহিত করার পরামর্শ দেওয়া হলো।
৩. শিক্ষার্থীদের সমাবেশে কোনো ধরনের অস্ত্রশস্ত্র; যেমন- লাঠিসোঁটা, ইট, আগ্নেয়াস্ত্র ইত্যাদি বহন নিষিদ্ধ।
৪. সবাইকে নাশকতামূলক কাজ থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে এবং কেউ নাশকতামূলক কাজে জড়িত হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
৫. চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে যেকোনও ধরনের গুজব ছড়ানো এবং উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান থেকে বিরত থাকার জন্য সবাইকে অনুরোধ করা হলো।
এছাড়াও সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিধানে সংশ্লিষ্ট সবাইকে দায়িত্বশীল আচরণ করার আহ্বান জানানো হয়।
কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের হাতে মারধরের শিকার হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল মুহিত। এময় তার সঙ্গে থাকা সহকারী প্রক্টর বদরুল ইসলামকেও ধাওয়া দেন শিক্ষার্থীরা।
আজ মঙ্গলবার বিকেলে সহকারী প্রক্টররা শহিদ মিনারে আসলে তাদের ‘দালাল’ ও ‘ভুয়া ভুয়া’ বলে স্লোগান দিয়ে তোপের মুখে ফেলন আন্দোলনকারীরা। এক পর্যায়ে তাদের ধাওয়া দিলে শিক্ষকরা দ্রুত স্থান ত্যাগ করতে চাইলে আন্দোলনকারীরা তাদের দিকে বিভিন্ন বস্তু এবং কাঠ ছুড়ে মারেন।
একটু পর পিছন থেকে কয়েকজন আন্দোলনকারী এসে অধ্যাপক মুহিতকে লাঠি দিয়ে আঘাত করেন। কয়েকটি আঘাতের পর মাটিতে পড়ে যান অধ্যাপক মুহিত। শুরু থেকেই শিক্ষকদের উপর আক্রমণ না করতে বাধা দেন কিছু আন্দোলনকারীরা। অধ্যাপক মুহিত যখন মাটিতে পড়ে যায় তখন একজন শিক্ষার্থী তাকে রিকশায় তুলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান।
জানা যায়, বহিরাগত তাড়াতে সেখানে গিয়েছিলেন সহকারী প্রক্টরবৃন্দ। বহিরাগতদের ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে যাওয়ার অনুরোধ করলে শিক্ষার্থীরা প্রশ্ন করেন গতকাল কই ছিলেন যখন আমাদের বোনদের উপর হামলা করা হয়েছে? এরপর থেকে ক্ষিপ্ত হয়ে যান আন্দোলনকারীরা। এর আগে প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাকসুদুর রহমানের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের বহিরাগত নেতাকর্মীদেরও চলে যেতে মাইকিং করেন সহকারী প্রক্টরবৃন্দ।
এদিকে ঢাবিতে থেমে থেমে চলছে ছাত্রলীগ আর আন্দোলনকারীদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে অবস্থান নিয়েছে ছাত্রলীগ আর কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়েছে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে। এই অবস্থানের মধ্যে দুই পক্ষের মধ্যে কয়েক দফায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
আন্দোলনকারীরা এবং ছাত্রলীগ দুইজনই তাদের পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি পালনের লক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জমায়েত হয়েছেন। ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে ঢাকা মহানগরের নেতাকর্মীরাও আছেন আর আন্দোলনকারীদের মধ্যে আশেপাশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও আছেন।
এসময় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, আমরা গতকাল পর্যন্ত কোন লাঠিসোঁটা হাতে নেইনি। কিন্তু আমাদের বোনদের উপর হামলা করা হয়েছে। আমরা নিজেদের আত্মরক্ষার জন্য আজকে লাঠিসোঁটা হাতে নিয়েছি। আমরা যত কিছুই হয়ে যাক এসো শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ ছাড়বো না।
এসময় তিনি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ওয়াদা নেন এবং বলেন, গতকাল আমাদের বোনদের উপর যখন হামলা করা হয়েছে আমরা অনেক ভাই পালিয়ে গিয়েছি আজকেও কি আমরা পালিয়ে যাবো? এসময় সবাই সমস্বরে না না বলে উঠেন।
নাহিদ বলেন, আমাদের বোনেরা হলে হলে অবস্থান নিয়েছে আমরা যদি তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার অঙ্গীকার করতে পারি তাহলে আমাদের বোনেরা হল থেকে সবাই চলে আসবে।
এদিকে রাজু ভাষ্কর্যে প্রতিবাদ সমাবেশ করছে ছাত্রলীগও। বক্তব্য রাখছেন ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন। তিনি বলেন, এতদিন পর্যন্ত আমরা আন্দোলনকারীদের কোন বাধা দেইনি। কিন্তু এখন এই আন্দোলন শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নেই। এটি বিএনপি জামাত-শিবিরের সরকার পতন পতনের আন্দোলন হয়ে গেছে। আমরা এগুলো বরদাস্ত করবো না।
এর আগে বেলা সাড়ে ৩টায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুহসিন হল থেকে বের হয়ে শহীদ মিনারের দিকে যাওয়ার পথে ভিসি চত্বরে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকটি বাস ভাঙচুর করেন।
শিক্ষার্থীদের দাবি, এসব বাসে করে ছাত্রলীগের বহিরাগত নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাসে এসেছেন তাই এসব বাস ভাঙচুর করা হয়েছে। বাস ভাঙচুরের শব্দ পেয়ে ভিসি চত্বরে আগে থেকেই অবস্থান নেওয়া ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের ধাওয়া করেন।
এসময় দুই গ্রুপের মধ্যে কিছুক্ষণ ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটার কিছু পরে আন্দোলনকারীরা ফুলার রোডে হয়ে চলে যান। এসময় সেখানে ককটেল বিস্ফোরণেরও শব্দ পাওয়া গেছে।