বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে প্রায় ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থীই হতাশায় কাটান বলে আঁচল ফাউন্ডেশনের এক জরিপে জানা গেছে। জরিপের তথ্যে জানা যায়, এই শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন বিভিন্ন সময়ে যেতে হয়েছে হতাশার মধ্য দিয়ে। ক্লান্তি, ওজন কমে যাওয়া, কোনো কিছু উপভোগ না করা, ঘুমের ধরনের পরিবর্তন, আত্মহত্যার চিন্তা, কাজে মনোযোগ দিতে না পারা ইত্যাদি অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে তাদের যেতে হয়েছে বলে জরিপে উল্লেখ করা হয়েছে।
আজ শুক্রবার ‘বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতির কারণ’ শীর্ষক সমীক্ষা নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়ায় ফাউন্ডেশনটি। জরিপটি গত ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়ে চলে ৩০ মে পর্যন্ত। এতে সারা দেশের ৮৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ১ হাজার ৫৭০ জন শিক্ষার্থী অংশ নেন।
ফাউন্ডেশনের তথ্য-উপাত্ত থেকে আরও জানা যায়, ৭৯.৯ শতাংশ শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে হতাশার মধ্য দিয়ে গেছেন। মাত্র ২০.১ শতাংশ শিক্ষার্থী এ ধরনের অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাননি। অতীতের সঙ্গে হতাশার উপসর্গ তুলনা করে দেখা গেছে, ৬৬.১ শতাংশ শিক্ষার্থীদের আগের চেয়ে বেশি হতাশার উপসর্গ নিয়ে আছেন। এর মধ্যে ৮৩.৪ শতাংশ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বিষণ্নতার মুখোমুখি হয়েছেন বলে জানা গেছে। বাকি ১৬.৬ শতাংশ শিক্ষার্থীর ভেতর হতাশার উপসর্গ দেখা যায়নি। অপরদিকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে ৭৯.৯ শতাংশ হতাশার উপসর্গগুলো দেখা গেছে। অন্যদিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ৬১.৩ শতাংশ গেছেন হতাশার মধ্য দিয়ে।
জরিপে শিক্ষার্থীদের থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে দেখা যায়, ৫৫ শতাংশ শিক্ষার্থী ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভুগছেন। বিভিন্ন কারণে নিজেকে অন্যদের সঙ্গে তুলনা করার কারণে হতাশায় ভুগছেন বলেও জানা গেছে। এ ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা নিয়ে ৯.৪ শতাংশ, হল বা আবাসিক পরিবেশ নিয়ে ৯.০০ শতাংশ, সহপাঠী বা শিক্ষক কর্তৃক বুলিংয়ের কারণে ৫.৩ শতাংশ এবং ওপরের সবগুলো কারণের জন্য ১.৬ শতাংশ শিক্ষার্থী হতাশাগ্রস্ত হয়েছেন বলে জানা যায়। এছাড়া অন্যান্য কারণে হতাশায় ভুগছেন ৩.৫ শতাংশ শিক্ষার্থী।
সহপাঠী, সিনিয়র কিংবা শিক্ষকের দ্বারা শারীরিক-মানসিক হয়রানির শিকার হয়েছেন ৩১.১ শতাংশ শিক্ষার্থী। বুলিংয়ের শিকার হয়েছেন ১৫.৯ শতাংশ, র্যাগিংয়ের শিকার হয়েছেন ১৩.৪ শতাংশ, যৌন হয়রানি শিকার হয়েছেন ১.৮ শতাংশ এবং স্টাফ কর্তৃক ১.২ শতাংশ এবং অন্যান্যদের দ্বারা ৫.৭ শতাংশ শিক্ষার্থী হয়রানির শিকার হয়েছেন। কোনো ধরনের হয়রানির শিকার হননি ৬৮.৯ শতাংশ।
হয়রানির ফলে মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব পড়েছে ৪২.৬ শতাংশ শিক্ষার্থীর, মোটামুটি প্রভাব পড়েছে ৪৮.৬ শতাংশ শিক্ষার্থীর এবং কোনোরূপ প্রভাব পড়েনি ৮.৮ শতাংশ শিক্ষার্থীর। এ ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ নিয়ে পুরোপুরি অসন্তুষ্ট ৩৩.৫ শতাংশ শিক্ষার্থী, মোটামুটি সন্তুষ্ট ৫৮.১ শতাংশ এবং পুরোপুরি সন্তুষ্ট মাত্র ৮.৪ শতাংশ।
জরিপে ৫৯.৪ শতাংশ শিক্ষার্থী জানিয়েছেন তারা মন খুলে কথা বলার মতো কোনো শিক্ষক পাননি। এর মাঝে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৬২.৯ শতাংশ শিক্ষার্থী নিজ শিক্ষকদের সামনে নিজেকে প্রকাশ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না। ৩৭.১ শতাংশ শিক্ষার্থী জানিয়েছেন তারা নিজ বিভাগের শিক্ষকদের সামনে নিজেকে মেলে ধরতে পারেন। অন্যদিকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৫৮.৮ শতাংশ শিক্ষার্থী স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন এবং ৪১.২ শতাংশ শিক্ষার্থী ফ্যাকাল্টির অন্যান্য মেম্বারদের সামনে নিজেকে প্রকাশ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেননি।
এ ছাড়া হলের পরিবেশ নিয়ে সন্তুষ্টি-অসন্তুষ্টির ক্ষেত্রে ৩৯.৩ শতাংশ জানিয়েছেন তারা পুরোপুরি অসন্তুষ্ট। সন্তুষ্টির জানিয়েছেন ১০.০০ শতাংশ শিক্ষার্থী। বাকিরা জানিয়েছেন তারা মোটামুটি সন্তুষ্ট।
অসন্তুষ্টির কারণ হিসেবে ৯.৯ শতাংশ শিক্ষার্থী থাকার পরিবেশকে দায়ি করেছেন। অনুন্নত খাবারকে দায়ি করেছেন ৭.৮ শতাংশ শিক্ষার্থী। গ্রন্থাগার সংকট মনে করছেন ৩.৭ শতাংশ শিক্ষার্থী এবং সবগুলো কারণকেই দায়ি করছেন ৬৮.২ শতাংশ শিক্ষার্থী। ১০.৪ শতাংশ শিক্ষার্থী জানিয়েছেন তারা অন্যান্য কারণকে অসন্তুষ্ট। ৭০.১ শতাংশ শিক্ষার্থী জানিয়েছেন হলের পরিবেশ তাদের মানসিক স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
জরিপের তথ্য অনুসারে, ৩১.৭ শতাংশ শিক্ষার্থী উচ্চ শিক্ষার জন্য দেশের বাইরে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন। ২৯.৭ শতাংশ শিক্ষার্থী ক্যারিয়ার হিসেবে সরকারি চাকরি করতে চান। ৯.৫ শতাংশ শিক্ষার্থী ব্যবসা বা উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। মাত্র ৭.১ শতাংশ শিক্ষার্থী বেসরকারি চাকরি করতে চান। বাকি শিক্ষার্থীরা এখনো কোনোরূপ ক্যারিয়ার ভাবনা ঠিক করেনি যা মোট শিক্ষার্থীর প্রায় ২২ শতাংশ।
এদিকে জরিপে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীর মধ্যে আত্মহত্যার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন ৫.৯ শতাংশ। আত্মহত্যা চিন্তায় এসেছে কিন্তু আত্মহত্যা চেষ্টা করেননি ৩৯.২ শতাংশ। আত্মহত্যা চিন্তা এসেছে এবং আত্মহত্যার উপকরণও জোগাড় করেছেন ৭.৩ শতাংশ শিক্ষার্থী। কখনো আত্মহত্যা চিন্তা আসেনি ৪৭.৬ শতাংশ শিক্ষার্থীর। এছাড়াও জরিপে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৫২.৪ শতাংশ শিক্ষার্থী জানিয়েছেন তাদের আত্মহত্যা কথা মাথায়ও আসেনি।
আত্মহত্যাপ্রবণ এ সকল শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৩০ শতাংশ ক্যারিয়ার নিয়ে হতাশা। ১৬.২ শতাংশ বাবা-মায়ের সঙ্গে অভিমানের কারণে হতাশ। ৯.৭ শতাংশ হতাশ প্রেমঘটিত বিষয়ে। আর ৯ শতাংশ শিক্ষার্থী হতাশ অর্থনৈতিক কারণে। অন্যরা তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করায় হতাশ ৪.৩ শতাংশ। ৩০.৮ শতাংশ শিক্ষার্থী অন্যান্য বিভিন্ন কারণে আত্মহত্যা করার চিন্তা এসেছে বলে জানিয়েছেন।
এছাড়াও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে সন্তুষ্ট ৩৮.৩ শতাংশ শিক্ষার্থী। এবং ৩৫.৫ শতাংশ শিক্ষার্থী অসন্তুষ্ট।
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতির দূর করতে সংগঠনটি বেশকিছু প্রস্তাবনা পেশ করেছে। এগুলো হলো, ক্যাম্পাসে কাউন্সেলিং ইউনিটের ব্যবস্থা করা। ক্যাম্পাসে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক কর্মশালার আয়োজন করা। ক্যাম্পাসে যেন কেউ বুলিংয়ের শিকার না হন তা মনিটরিং করা। নিরাপদ বাসস্থান ও উন্নতমানের খাবারের ব্যবস্থা করা। প্রয়োজনে বৃত্তি ও প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা প্রদান করা। শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের সম্মান ও আস্থার সম্পর্ক উন্নয়ন করা, প্রয়োজনে কাউন্সেলিং করানো। মানসিক স্বাস্থ্যসেবাকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত করা। সেমিনার ও মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক কর্মশালার আয়োজন করা। বিশিষ্ট মনোবিজ্ঞানী বা বিশেষজ্ঞদের এসব সেশনে বিভিন্ন সমস্যা ও এগুলোর সমাধান নিয়ে লেকচার দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো। দেশের সকল স্কুল, কলেজ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট (মনোবিদ) এডুকেশনাল কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট নিয়োগ দেওয়া।
জরিপে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন ২৫১ জন, দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন ২৫৪ জন, তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন ৩৬৯ জন, চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন ৩৪০ জন, মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ছিলেন ৩৪১ জন, এবং সদ্য গ্র্যাজুয়েট ছিলেন ১৫ জন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি বাতিল করে ঢাকা মহানগরের সরকারি সাত কলেজের সমন্বয়ে (ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি তিতুমীর কলেজ, মিরপুর সরকারি বাংলা কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল সরকারি কলেজ) ‘ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়’ নামে একটি স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য সরকার নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। গতকাল মঙ্গলবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের খসড়া অধ্যাদেশের ওপর শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং সুধীজনের কাছ থেকে পাঁচ হাজারেরও বেশি মতামত পাওয়া গেছে। অনলাইনে প্রাপ্ত ও প্রত্যক্ষ মতামত পর্যালোচনা করে খসড়াটি পুনর্মূল্যায়ন ও পরিমার্জনের কাজ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ।
মানসম্মত শিক্ষা, সময়মতো পরীক্ষা গ্রহণ ও ফল প্রকাশ-এ সব বিষয়ে সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক চাহিদাকে সামনে রেখে প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রস্তুতির অংশ হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) কর্তৃক ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অধ্যাদেশ ২০২৫’-এর খসড়া প্রণয়ন করে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগে পাঠানো হয়।
খসড়া অধ্যাদেশটি গত ২৪ সেপ্টেম্বর মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে অংশীজন/সর্বসাধারণের মতামত আহ্বান করা হয়। এ বিষয়ে শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং সুধীজনের কাছ থেকে পাঁচ হাজারেরও বেশি মতামত পাওয়া যায়। অনলাইন ও সরাসরি মতামত গ্রহণের পাশাপাশি শিক্ষক, শিক্ষার্থী, শিক্ষাবিদ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এ পর্যন্ত মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের উদ্যোগে তিনটি মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এছাড়া, খসড়া অধ্যাদেশের উপর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগের মতামত গ্রহণ করে মতামত সংগ্রহ কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ প্রাপ্ত প্রতিটি মতামত আইনগত ও বাস্তবতার নিরিখে গুরুত্ব সহকারে পর্যালোচনা করছে। অনলাইনে প্রাপ্ত ও প্রত্যক্ষ মতামত পর্যালোচনা করে খসড়াটি পুনর্মূল্যায়ন ও পরিমার্জনের কাজ শুরু হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অধ্যাদেশ চূড়ান্তকরণসহ সামগ্রিক প্রক্রিয়া সম্পন্নকরণ কিছুটা সময়সাপেক্ষ। প্রস্তুতিকালীন শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা কোনোভাবেই যেন ব্যাহত না হয় সে বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ সচেতন ও সক্রিয় রয়েছে। প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের পূর্ব পর্যন্ত শিক্ষা ও প্রশাসনিক কাজ পরিচালনার জন্য ইতোমধ্যে একজন অন্তর্বর্তী প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের ভর্তি, রেজিস্ট্রেশন, ক্লাস পরিচালনা ইত্যাদি বিষয়ে অন্তর্বর্তী প্রশাসন, সাত কলেজের অধ্যক্ষ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অংশগ্রহণে ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত সভায় করণীয় নির্ধারণ করা হয়েছে। অন্তর্বর্তী প্রশাসন পরিচালনা এবং ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের ভর্তি, রেজিস্ট্রেশন ও পাঠদানের জন্য অন্তর্বর্তী প্রশাসনের অপারেশন ম্যানুয়েলও অনুমোদন করা হয়েছে। এর ভিত্তিতে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করে ক্লাস শুরুর তারিখ আগামী ২৩ নভেম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে।
দেশে উচ্চশিক্ষার গুরুত্ব, সংশ্লিষ্ট অংশীজনের ব্যাপকতা এবং সাত কলেজের শিক্ষক-কর্মকর্তাদের পদ সংরক্ষণ, কলেজগুলোর স্বাতন্ত্র্য, সম্পদ ব্যবস্থাপনা এবং উচ্চমাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা ও সংশ্লিষ্ট অন্য বিষয় সমন্বয়ের জটিলতা বিবেচনায় বস্তুনিষ্ঠভাবে এবং বিধিবদ্ধ পদ্ধতি অনুসরণ করে অধ্যাদেশের খসড়া চূড়ান্ত করা হবে। প্রক্রিয়াটি সময়সাপেক্ষ হলেও এর মাধ্যমে সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য ও সমন্বিত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব হবে বলে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ বিশ্বাস করে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠা কার্যক্রমকে দেশের উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে বিবেচনা করছে। শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং অভিভাবকসহ সকল অংশীজনের ন্যায্য স্বার্থ রক্ষা এবং দেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার মানোন্নয়নে ইতিবাচক একাডেমিক পরিবেশ প্রতিষ্ঠা করা এ বিভাগের প্রধান লক্ষ্য। ব্যক্তিগত ধারণা, অসম্পূর্ণ তথ্য বা গুজবের ভিত্তিতে বিভ্রান্তি বা পারস্পরিক দ্বন্দ্বের সৃষ্টি না করে সবাই দায়িত্বশীল আচরণ করবেন-মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ এ প্রত্যাশা করে।
এছাড়া শিক্ষার্থীদের মূল্যবান শিক্ষা জীবন এবং সামগ্রিক শিক্ষা কার্যক্রম যাতে কোনোভাবেই ব্যাহত না হয়, সে বিষয়ে সকলকে সচেতন থাকতে বিশেষভাবে আহ্বান জানানো হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) ২০২৬ শিক্ষাবর্ষের বিনামূল্যের পাঠ্যপুস্তক সরবরাহ কার্যক্রম শুরু করেছে। শিক্ষার্থীদের হাতে নির্ধারিত সময়ে বই পৌঁছে দিতে এবং সময় বাঁচাতে এবার অনলাইন পদ্ধতিতে চালান নিষ্পত্তি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
সম্প্রতি এনসিটিবির সচিব প্রফেসর মো. সাহতাব উদ্দিনের সই করা এক স্মারকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ২০২৬ শিক্ষাবর্ষের ইবতেদায়ি, মাধ্যমিক (বাংলা ও ইংরেজি ভার্সন), দাখিল, এসএসসি ও দাখিল ভোকেশনাল এবং কারিগরি স্তরের বই মুদ্রণ ও সরবরাহ কাজ শুরু করেছে।
স্মারকে জেলা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের জন্য নতুন কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে এনসিটিবির নির্ধারিত টেকনিক্যাল স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান থেকে পাঠ্যপুস্তক বুঝে নেওয়া এবং সরবরাহ করা বই গ্রহণের পর দ্রুততম সময়ের মধ্যে অনলাইনে চালানের অনুমোদন দেওয়ার কথা বলা বলা হয়েছে।
এতে আরও জানানো হয়েছে, সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতেও পাঠ্যপুস্তক সরবরাহ ও গ্রহণ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। এছাড়া প্রত্যেক জেলা ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে নিজ নিজ ইউজার অ্যাকাউন্টে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের নাম, মোবাইল নম্বর ও স্বাক্ষর হালনাগাদ করে আপলোড করতে হবে।
অনলাইন চালান ব্যবস্থাপনা প্রসঙ্গে স্মারকে বলা হয়েছে, জেলা/উপজেলা/থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের https://nctb.ihealthscreen.org ঠিকানায় প্রবেশ করে 'Chalan Management'-এ গিয়ে বিদ্যমান ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে অনলাইনে পাঠ্যপুস্তকের চালানের অনুমোদন দিতে হবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেছেন, স্যার ইকবাল ছিলেন মেধা ও প্রতিভায় অনন্য। তিনি একাধারে একজন দার্শনিক, চিন্তাবিদ ও কবি, যিনি সমকালীন বিশ্বের রাজনৈতিক, সামাজিক ও আধ্যাত্মিক প্রবণতাকে গভীরভাবে বিশ্লেষণ করেছেন। তিনি কেবল তাত্ত্বিক চিন্তায় সীমাবদ্ধ ছিলেন না; তার লেখনিতে এবং দর্শনে মানবরাজ্য, স্বাধীনতা, আত্মমর্যাদা ও সাম্যের মূল্যবোধ প্রতিফলিত হয়। স্যার ইকবালের চিন্তাধারা আজও শিক্ষাবিদ, গবেষক এবং সাধারণ মানুষকে প্রেরণা জোগাচ্ছে।
সোমবার বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান মিলনায়তনে ‘Allama Iqbal’s Theory of ‘Khudi’—শীর্ষক আন্তর্জাতিক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন তিনি। আরবী ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের আয়োজনে সেমিনারে অতিথি বক্তারা আল্লামা ইকবালের ‘শাহীন’ (ঈগল) এবং ’খুদি’ এর ধারনা বিশ্লেষণ করেন।
সেমিনারে আলোচক ছিলেন পাকিস্তানের পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্দু ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক ড. বাশিরা আম্ব্রিন এবং লাহোরের ইউনিভার্সিটি অব এডুকেশনের পরিচালক অধ্যাপক ড. ওহীদ উর রহমান খান। সেমিনার আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তোজাম্মেল হোসেন স্বাগত বক্তব্য দেন।
সেমিনারে অধ্যাপক ড. বাশিরা আম্ব্রিন বলেন, ‘খুদি’ হলো মানুষের আত্মচেতনা, শক্তি, মর্যাদা ও আলোকিত সত্তা, যা ব্যক্তিকে কর্মঠ, সাহসী, সৃজনশীল ও ঈমানী শক্তিতে উজ্জীবিত করে। এটি কোনো স্বার্থপরতা নয়, বরং কর্ম, সংগ্রাম ও লক্ষ্য স্থির করার মাধ্যমে ভাগ্যের নির্মাতা হওয়ার অনুপ্রেরণা। খুদি মানুষকে নিয়তি-নির্ভরতা থেকে মুক্ত করে এবং আত্মমর্যাদা বা ‘খুদ্দারি’ দ্বারা স্বাবলম্বী হতে শেখায়, কারণ ভিক্ষা ও দুর্বলতা খুদিকে নষ্ট করে। ইকবালের মতে, খুদির পূর্ণ বিকাশের তিনটি ধাপ হলো— ইতা’আত (অনুগত্য), জব্তে-নফ্স (আত্মসংযম) এবং নিয়াবত-ই-ইলাহি (খলিফাতুল্লাহ) হওয়া। ইকবালের মূল বক্তব্য হলো, খুদির জাগরণেই ব্যক্তিগত উন্নতি এবং মুসলিম উম্মাহর শক্তি, মর্যাদা ও নবজাগরণের পথ নিহিত।
অধ্যাপক ড. ওহীদ উর রহমান খান বলেন, আল্লামা ইকবালের দর্শনে শাহীন (ঈগল) হলো তার খুদি (আত্মসত্তা) ধারণার মূর্ত প্রতীক এবং আদর্শ মুসলিম ব্যক্তির রূপরেখা, যা উচ্চাকাঙ্ক্ষা, জাগতিক প্রলোভনমুক্ত জীবন, সম্পূর্ণ আত্মনির্ভরশীলতা, তীক্ষ্ণ আধ্যাত্মিক দূরদৃষ্টি এবং সাধারণের থেকে স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখে একাকীত্বে থাকার গুণাবলীকে নির্দেশ করে। শাহীনের জীবন হলো অবিরাম সংগ্রাম (জিহাদ-এ-আকবর), যা তাকে আত্ম-উপলব্ধি এবং উন্নতির পথে চালিত করে। মূলত, ইকবাল এই শক্তিশালী প্রতীকটি ব্যবহার করেছেন মুসলিম যুবসমাজকে তাদের হারানো গৌরব পুনরুদ্ধারে অনুপ্রাণিত করতে এবং জড়তা ত্যাগ করে স্বাধীনতা, ক্ষমতা ও চেতনার নবজাগরণ ঘটাতে উৎসাহিত করার জন্য।
আরবী ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আব্দুস সালামের সভাপতিত্বে এতে প্রাধান অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ, বিশেষ অতিথি ছিলেন উপউপাচার্য অধ্যাপক ড. এম এয়াকুব আলী, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম, কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. এমতাজ হোসেন। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সেমিনার বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মো. তোজাম্মেল হোসেন, থিওলজি ও ইসলামিক স্টাডিজ অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সেকান্দার আলী, আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান, দাওয়াহ এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. গোলাম মাওলা, IQAC এর পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. নাজিমউদ্দিন, আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের প্রফেসর ড. এ কে এম শামসুল হক সিদ্দিকী।
প্রাইম ব্যাংক পিএলসি. সম্প্রতি বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রোফেশনালস (বিইউপি)-এর সহযোগিতায় “ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন: এনগেজিং অ্যান্ড ইনস্পায়ারিং ইয়ুথ ইন ব্যাংকিং” শীর্ষক এক সেমিনারের আয়োজন করে। প্রাইম ব্যাংকের ফ্ল্যাগশিপ উদ্যোগ প্রাইমঅ্যাকাডেমিয়া-এর আওতায় আয়োজিত এই সেমিনারে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনারেল ফ্যাকাল্টি অব বিজনেস স্ট্যাডিজের ডিপার্টমেন্ট অব বিজনেস অ্যাডমিনিসট্রেশনের চেয়ারম্যান লেফটেন্যান্ট কর্নেল এস এম জোবায়ের আলম-পিএসসি। আরও উপস্থিত ছিলেন একই বিভাগের লেকচারার ইশরাত জাহান দিনা। এসময় তারা শিক্ষার্থীদের আর্থিক সাক্ষরতা ও নেতৃত্ব দক্ষতা অর্জনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
প্রাইম ব্যাংকের পক্ষ থেকে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন- এম. নাজিম এ. চৌধুরী, ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর, যিনি তার মূল প্রবন্ধে ব্যাংকে তরুণদের ক্যারিয়ার উন্নয়ন, নারী ক্ষমতায়ন ও আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বিষয়ক নানা উদ্ভাবনী উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন। এছাড়া ব্যাংকের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ও হেড অব লাইয়াবিলিটি শায়লা আবেদিন। এ সময় তিনি ব্যাংকের তরুণ্য নির্ভর কর্মকাণ্ড ও প্রাইমঅ্যাকাডেমিয়া-এর অগ্রযাত্রা নিয়ে আলোচনা করেন। আরও উপস্থিত ছিলেন ব্যাংকের হেড অব ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন অ্যান্ড স্কুল ব্যাংকিং এম এম মাহবুব হাসান।
সেমিনারে ইন্ডাস্ট্রি ও একাডেমিয়ার সমন্বিত সহযোগিতার গুরুত্বের ওপর জোর দেওয়া হয়। উভয় প্রতিষ্ঠানই তরুণ শিক্ষার্থীদের দক্ষতা উন্নয়ন, গবেষণা ও ক্যারিয়ারমুখী উদ্যোগে যৌথভাবে কাজ করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে।
প্রাইমঅ্যাকাডেমিয়া-এর উদ্যোগের মাধ্যমে প্রাইম ব্যাংক সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সমন্বিত আর্থিক সেবার আওতায় আনছে, যার মধ্যে রয়েছে- ইনস্টিটিউশনাল ব্যাংকিং, ডিজিটাল ফি সংগ্রহ ব্যবস্থা, পেরোল সেবা, স্কুল ব্যাংকিং এবং শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষায়িত অ্যাকাউন্ট- সবকিছু এক ছাতার নিচে।
উদ্যোগটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকবৃন্দের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলে, যা তরুণ প্রজন্মকে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ও জাতীয় উন্নয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে অনুপ্রাণিত করে।
কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মানহানিকর কনটেন্ট প্রচারের প্রতিকারে আবেদন করেছে শিক্ষার্থীরা। স্ট্যান্ড এগেইনস্ট সাইবার বুলিং প্রজেক্টের প্যাডে এ আবেদন দেয়া হয়। রোববার নাগাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওবায়দুল ইসলাম ও রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. মো. মনজুরুল হককে এ আবেদন পত্র দেন শিক্ষার্থীরা।
আবেদনে বলা হয়, বিগত এক বছর ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে (ফেসবুকে) বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন শিক্ষার্থীদের নিয়ে মনগড়া, মানহানিকর ও সংবেদনশীল তথ্য-যেমন ছবি, লেখনী ও ভিডিও-ছড়ানো হচ্ছে। এসব ছবি বা ভিডিও অনেক সময় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ব্যবহার করে তৈরি, আবার অনেক ক্ষেত্রে সম্পাদিত (edited) বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মানহানিকর লেখনীর মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
আবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, এইসব কর্মকাণ্ডে বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হচ্ছেন এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যেও নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি হচ্ছে। ইতোমধ্যে আমরা ব্যাপারটির বিভিন্ন প্রমাণ সংগ্রহ করেছি এবং ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি দাখিল করেছি। কিন্তু এরপরও এ ধরনের মানহানিকর কার্যক্রম তথা সাইবার বুলিং-এর পরিমাণ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। উল্লেখ্য: বিভিন্ন ফেসবুক পেজসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থীও এসব কাজে সংশ্লিষ্ট রয়েছে-এর প্রমাণাদি সংযুক্তি-০৩-এ প্রদান করা হলো।
এ সময় তারা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি এন্টি-সাইবার বুলিং কমিটি গঠন করে সচেতনতা সৃষ্টি, পোস্টারিং, কর্মশালা এবং আইনবিষয়ক প্রচারণার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়-সম্প্রদায়কে অবহিত করার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করার দাবি জানান।
প্রসঙ্গত, এ বিষয়ে গত ৯ নভেম্বর ইবির ইংরেজি বিভাগের ২০২২-২০২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রিদয় আহম্মেদ ইবি থানায় একটি সাধারাণ ডায়েরি (জিডি) করেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, গত ৩ নভেম্বর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক পেইজ যাহার নাম IU Crush and Confession, যাহার লিংক
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওবায়দুল ইসলাম বলেন, ছাত্রদের এ দাবির সাথে আমিও নিঃসন্দেহে একমত। মত প্রকাশের স্বাধীনতার অবশ্যই দরকার আছে। কিন্তু তা করতে গিয়ে যেন অন্য কারোর স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করতে না হয় সে বিষয়েও নিশ্চিত হওয়া দরকার। আমরা এর জন্য যা যা দরকার তা করব।
বাঙালির ইতিহাস, ঐতিহ্য ও গ্রামীণ সংস্কৃতিকে বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরার লক্ষ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদে অনুষ্ঠিত হলো নবান্ন উৎসব। রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় অনুষদের প্রদর্শনী প্লটে ধানকাটার মধ্য দিয়ে উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়।
ধানকাটা শেষে শিক্ষার্থীরা আনন্দ-উচ্ছ্বাসে নেচে-গেয়ে শোভাযাত্রা নিয়ে অনুষদের প্রধান ফটকের সামনে আসেন। সেখানে ফিতা কেটে পিঠা মেলার উদ্বোধন করা হয়। এরপর বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রাটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন এলাকা প্রদক্ষিণ করে কৃষি অনুষদে এসে শেষ হয়।
দিনব্যাপী আয়োজনে ছিল পিঠা উৎসব, খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা জানান, বাঙালির ইতিহাস ও গ্রামীণ ঐতিহ্যের সমৃদ্ধ সংস্কৃতিকে নতুন প্রজন্মের কাছে পরিচিত করাই তাদের এই আয়োজনের মূল লক্ষ্য।
নবান্ন উৎসব উপলক্ষে্য ১৫টি স্টলে শিক্ষার্থীরা প্রদর্শন করছেন প্রায় দেড় শতাধিক ঐতিহ্যবাহী পিঠা—দুধপুলি, চন্দ্রপুলি, নারকেল পুলি, খোলা চিতই, তেল পিঠা, নকশী পিঠা, মালাই বিহার, সুজির বড়া, জামাই পিঠা, গোলাপ ফুল পিঠা, ডাবের পিঠা, লবঙ্গ পিঠা, শামুক পিঠা, রুপালি পিঠাসহ নানা বাহারি খাবার। সকাল থেকেই এসব পিঠার স্বাদ নিতে শিক্ষার্থীদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যায়। উৎসবমুখর পরিবেশে পুরো কৃষি অনুষদে নবান্নের আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে।
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার হাড়াভাঙ্গা এইচ বি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাজু আহমেদের সঙ্গে দশম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর ভিডিও কলে ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়াই ওই শিক্ষকের স্থায়ী পদত্যাগের দাবিতে মানববন্ধন করেছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
বিদ্যালয়ের দায়িত্বশীল পদে থাকা একজন শিক্ষা কর্মকর্তার এ ধরনের আচরণের ভিডিও ছড়িয়ে পড়তেই জেলাজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র প্রতিক্রিয়া, নিন্দা ও ক্ষোভের ঝড়।
গত শুক্রবার বিকেল থেকে ইমোতে চুম্বন ও অশ্লীল কথাবার্তার ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। তারই ধারাবাহিকতায় রোববার সকাল দশটার দিকে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা বিদ্যালয়টির সামনে মানববন্ধন করে।
জেলা জুড়ে ভাইরাল হওয়া সেই ভিডিওতে দেখা যায়, কথাবার্তার এক পর্যায়ে ওই ছাত্রী তার ঠোঁটে চুম্বন চাইছেন। এ সময় রাজু আহমেদ অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করে চুম্বন দেন। ভিডিওটি কয়েকটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে আপলোড হওয়ার পর দ্রুত ভাইরাল হয়ে যায়।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, বলা হয়ে থাকে শিক্ষা জাতীর মেরুদণ্ড আর সেখানে শিক্ষকের চরিত্র যদি এমন হয়। তাহলে জাতির মেরুদণ্ড কেমন হবে আপনারই বলুন?
একজন প্রধান শিক্ষক কর্তৃক শিক্ষার্থীর সঙ্গে এমন অনৈতিক আচরণ শুধু নিন্দনীয়ই নয়, তা গোটা শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য লজ্জাজনক।
অভিভাবকরা বলছেন, ‘আমাদের সন্তানদের শিক্ষাদানের জন্য স্কুলে পাঠাই, আর শিক্ষকরা হচ্ছে শিক্ষার্থীদের পিতার মতো। আর সেই শিক্ষককের এমন আচরণ মেনে নেওয়া যায় না। তাই তাকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার চাই।
দশম শ্রেণি পড়ুয়া শিক্ষার্থী জীবন বলেন, রাজু স্যার আমাদের বন্ধুর বাবা। আর আমাদের বান্ধবীর সাথে প্রেম করা, আবার তার সাথে অনৈতিক কাজ করা মানে নিজের মেয়ের সাথে এমনটি করার সমান।
আরেক শিক্ষার্থী বলেন, রাজু স্যারের সাথে আমাদের বান্ধবির বিয়ে দিতে হবে, আর কাবিন করে দিতে হবে ১ কোটি টাকা। যাতে করে দুদিন বাদে মেয়েটিকে তালাক দিতে না পারে।
শিক্ষার্থীর অভিভাবক স্থানীয় বাসিন্দা মজিবুল বলেন, আমাদের এইচ বি স্কুলের রাজু স্যার বেশ কয়েক বছর আগে এক এনজিও কর্মীর স্ত্রীর সাথে অনৈতিক কাজে লিপ্ত থাকাকালীন স্থানীয়দের হাতে ধরা পড়ে। আবার এলাকায় আদম ব্যাবসা করে অনেককেই নিঃশ্ব করেছে। এবার শুরু করেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি নষ্ট করতে। এই শিক্ষককের আজীবন নিষিদ্ধের দাবি জানাচ্ছি।
রাজু আহমেদের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। তার হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো বার্তা ও কলও গ্রহণ হয়নি।
কাজিপুর ইউপি চেয়ারম্যান আলম হুসাইন বলেন, শিক্ষক রাজু আহমেদের অনেক অভিযোগ শুনছি। এমন শিক্ষক যে প্রতিষ্ঠানে থাকবে সেখানে শিক্ষার্থীরা নিরাপদ নেই। তাই আমরা এই বিষয়ে সব্বোর্চ দপ্তর পযর্ন্ত জানাব। এবং তার স্থায়ী বহিষ্কারের জন্য আবেদন জানাচ্ছি। শিক্ষক রাজু স্কুলের অফিসে বসে মোবাইল এই ধরনের কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেত।
গাংনী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মনিরুল ইসলাম বলেন, ঘটনার বিষয়টি শুনেছি। বিষয়টি অভিযোগ পেলে অবশ্যই তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আনোয়ার হোসেন জানান, বিষয়টি আমরা শুনেছি ভুক্তভোগী ছাত্রীর পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তারা চাইলে আদালতেও যেতে পারবেন।
২০২৫ সালের এইচএসসি পরীক্ষার ফল পুনঃনিরীক্ষণে কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে। নতুনভাবে জিপিএ-৫ পেয়েছে আরও ২৩ জন শিক্ষার্থী এবং ফেল থেকে পাশ করেছে ১০৮ জন শিক্ষার্থী।
রোববার দুপুরে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে পুনঃনিরীক্ষণের ফল প্রকাশের পর এ তথ্য জানা যায়।
বোর্ড সূত্র জানায়, এ বছর পুনঃনিরীক্ষণের জন্য আবেদন করেছে ২৭ হাজার ১৮১ জন পরীক্ষার্থী। পুনঃনিরীক্ষণ করা হয়েছে ৯৪ হাজার ৬৫টি উত্তরপত্র। এর মধ্যে ২ হাজার ৫৮৯টি উত্তরপত্রে নম্বর পরিবর্তন হয়। নম্বর আপগ্রেড হয়েছে ২ হাজার ২১৩টি এবং গ্রেড পরিবর্তন হয়েছে ৫৮৭ পরীক্ষার্থীর।
ফল পরিবর্তনের মাধ্যমে মোট উত্তীর্ণ বেড়েছে ১০৮ জন এবং জিপিএ-৫ বেড়েছে ২৩টি।
কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর রুনা নাছরীন বলেন, বোর্ডের নিয়ম অনুযায়ী আবেদন গ্রহণ ও খাতা পুনঃনিরীক্ষণ সম্পন্ন করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের খাতা পুনঃমূল্যায়নের পর রোববার ফলাফল ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার খাতা চ্যালেঞ্জ বা উত্তরপত্র পুনর্নিরীক্ষণের ফল প্রকাশ করা হয়েছে। এতে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ২০১ জন। এছাড়া ফেল থেকে পাস করেছেন ৩০৮ জন।
রোববার সকাল ১০টার দিকে এ ফল প্রকাশ করা হয়।
জানা গেছে, ঢাকা বোর্ডে উত্তরপত্র পুনর্নিরীক্ষণের ফলের জন্য আবেদন করেন ৮৯ হাজার ৬৭১ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ২ হাজার ৩৩১ জনের ফল এবং গ্রেড পরিবর্তন হয়েছে ২ হাজার ৩৭৩ জনের।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) বাঁধনের ২৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে্য ‘২৮-এর আহ্বান, নিঃস্বার্থ হোক রক্তদান’ স্লোগানকে সামনে রেখে আনন্দ র্যালি ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।
গত শুক্রবার বিকেল ৫টায় বাকৃবি জোনাল পরিষদের কার্যালয়ের সামনে থেকে বিভিন্ন হলের কার্যকরী কমিটির সদস্য, বাঁধন রক্তদাতা সদস্য এবং শিক্ষকদের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে র্যালিটি শুরু হয়। র্যালিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কে. আর. মার্কেট প্রদক্ষিণ করে পুনরায় সৈয়দ নজরুল ইসলাম অডিটোরিয়ামের সামনে এসে শেষ হয়।
ওই আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল হক, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আব্দুল আলীম, শিক্ষক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মাহবুবুল প্রতীক সিদ্দিক এবং বাঁধনের বিভিন্ন হল কমিটির সদস্য ও জোনাল প্রতিনিধিরা। বাকৃবি জোনাল পরিষদের সহ সাধারণ সম্পাদক আলিমুল ইসলামের সঞ্চালনায় সভাটি পরিচালিত হয়।
সভার শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন উপকমিটির সদস্য সচিব মাহমুদুল হাসান রনি। অতপর উপস্থিত শিক্ষকরা তাদের শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন। ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শহীদুল হক বলেন, আমাদের ক্যাম্পাসে বাঁধনের মতো একটি সংগঠনের সক্রিয় উপস্থিতি অত্যন্ত গর্বের। রক্তদান একটি মহৎ কাজ, এবং আমি সকল ছাত্রছাত্রীকে আহ্বান জানাই তারা যেন নিঃস্বার্থভাবে এই মানবিক কাজে এগিয়ে আসে।
সভা শেষে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে্য কেক কাটা হয় এবং উপদেষ্টামণ্ডলী বাঁধনকর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। সভায় উপস্থিত সকলের মধ্যে বাঁধন বিষয়ক একটি কুইজেরও আয়োজন করা হয়।
সভার সমাপনী বক্তব্যে বাকৃবি জোনাল পরিষদের সভাপতি, বাঁধনের বাকৃবি জোনের অন্তর্গত সকল হল ইউনিটের সদস্য এবং শুভাকাঙ্ক্ষীদের বাঁধন কেন্দ্রীয় পরিষদের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।
নেত্রকোনার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষায় মারাত্মক জনবল সংকট দেখা দিয়েছে। জেলার ১০টি উপজেলায় ৭৬৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য পড়ে আছে। একই সঙ্গে উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তার ঘাটতিও তীব্র। অনুমোদিত ৪৬টি পদের মধ্যে ২২টি দীর্ঘদিন ধরে খালি। এতে বিদ্যালয়গুলোর প্রশাসনিক কার্যক্রম ও পাঠদানের মান গুরুতরভাবে ব্যাহত হচ্ছে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহীদুল আজম বলেন, ‘বর্তমানে ৭৬৪টি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই এবং ২২ জন সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার পদ শূন্য। এ ছাড়া অফিস সহকারী ও হিসাবরক্ষক পদেও ঘাটতি আছে। বিষয়টি বিভাগীয় উপপরিচালক, অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে। আশা করছি দ্রুতই এ সংকটের সমাধান হবে।’জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২ হাজার ৮১০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের নেত্রকোনায় রয়েছে ৮৬টি ইউনিয়ন ও ২ হাজার ২৯৯টি গ্রাম। জেলার মোট ১ হাজার ৩১৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ছে ৩ লাখ ৩৭ হাজার ৩৭১ শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ছাত্রী ১ লাখ ৭২ হাজার ৬২৫ জন এবং ছাত্র ১ লাখ ৬৪ হাজার ৭৪৬ জন। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে প্রধান ও সহকারী শিক্ষক মিলে অনুমোদিত পদ রয়েছে ৮ হাজার ২৩৫টি। বর্তমানে কর্মরত আছেন ৭ হাজার ৩৬৯ জন। প্রধান শিক্ষকের ১ হাজার ৩১৩টি অনুমোদিত পদের বিপরীতে দায়িত্বে আছেন মাত্র ৫৪৯ জন। ফলে ৭৬৪টি বিদ্যালয় চালাতে হচ্ছে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকদের হাতে। উপজেলাভিত্তিক হিসাব অনুযায়ী, কলমাকান্দায় ১৭২টির মধ্যে ১৩৩টি, আটপাড়ায় ১০৩টির মধ্যে ৬০টি, কেন্দুয়ায় ১৮২টির মধ্যে ৯৮টি, দুর্গাপুরে ১২৬টির মধ্যে ৭৩টি, নেত্রকোনা সদর উপজেলায় ২০১টির মধ্যে ৯৩টি, পূর্বধলায় ১৭৫টির মধ্যে ১০৮টি, বারহাট্টায় ১০৯টির মধ্যে ৬৭টি, মদনে ৯৩টির মধ্যে ৬২টি, মোহনগঞ্জে ৮৯টির মধ্যে ৪১টি এবং খালিয়াজুরিতে ৬৩টির মধ্যে ২৯টি প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে।শিক্ষা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে থাকা উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তার পরিস্থিতিও সংকটপূর্ণ। জেলার ৪৬টি অনুমোদিত পদের মধ্যে ২২টি দীর্ঘদিন ধরে খালি পড়ে আছে। আটপাড়া, কলমাকান্দা, কেন্দুয়া, দুর্গাপুর, নেত্রকোনা সদর, পূর্বধলা, মদন ও মোহনগঞ্জ উপজেলায় এসব পদে কর্মকর্তার অভাব প্রকট। পূর্বধলা, মদন, কেন্দুয়া ও কলমাকান্দার কয়েকজন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জানান, তারা একই সঙ্গে সহকারী শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন। প্রশাসনিক কাজের পাশাপাশি প্রতিদিন ছয়-সাতটি ক্লাস নিতে হচ্ছে, এতে তারা প্রচণ্ড কর্মচাপে রয়েছেন।
নেত্রকোনা সদর উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকতা মো| আসাদুজ্জামান ও মোহনগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক না থাকায় বিদ্যালয় পরিচালনায় বড় ধরনের সমস্যা দেখা দিয়েছে। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকদের ওপর চাপ ক্রমেই বাড়ছে।’
কেন্দুয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আফতাব উদ্দিন বলেন, ‘পদ শূন্য থাকায় প্রশাসনিক কার্যক্রমে ধীরগতি দেখা দিয়েছে। বিষয়টি আমরা ইতোমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।
দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় এক গভীর পরিবর্তন নীরবে ঘটছে। একসময়ের গর্ব-সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো- এখন ক্রমে হারাচ্ছে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ ও অভিভাবকদের আস্থা। অন্যদিকে গ্রামের পর গ্রামে, শহরের অলিতে-গলিতে নতুন করে গড়ে উঠছে মাদ্রাসা, যেখানে শিক্ষার্থী ভর্তি হচ্ছে দ্রুতহারে। বিশেষ করে অন্তর্বর্তী সরকারের সময় দেশজুড়ে বেসরকারি মাদ্রাসা স্থাপন, পাঠদান অনুমোদন এবং অ্যাকাডেমিক স্বীকৃতির হার বেড়েছে। শুধু তাই নয়, মাদ্রাসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা শিথিলের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। নীতিমালা সংশোধন করে এই সুযোগ দেওয়া হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি ‘বেসরকারি মাদ্রাসা (দাখিল ও আলিম) স্থাপন, পাঠদান ও একাডেমিক স্বীকৃতি প্রদান নীতিমালা-২০২৫’ জারির পর এ সুযোগ পাচ্ছে মাদ্রাসাগুলো। ফলে যেসব মাদ্রাসা আগে অনুমোদন পায়নি, তারা এখন অনুমোদন পাচ্ছে এবং ভাড়াবাড়িতে পরিচালিত মাদ্রাসাও অনুমোদন পাবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, যেসব মাদ্রাসা শর্ত পূরণ করতে না পারায় আগে অনুমোদন পায়নি, সেসব মাদ্রাসার জন্য নতুন করে আদেশ জারি করা হচ্ছে। বিগত সরকারের সময় ২০২৩ ও ২০২৪ সালের আটকে যাওয়া আদেশগুলোও এখন জারি করা হচ্ছে নতুন করে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের গত ১ অক্টোবরের একটি আদেশে ১১টি দাখিল মাদ্রাসাকে একাডেমিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়। শর্ত পূরণ না করায় তিনটি দাখিল মাদ্রাসার একাডেমিক স্বীকৃতি বাতিল হয় চলতি বছরের ৬ অক্টোবর জারি করা একটি আদেশে। পরে বাতিল আদেশ প্রত্যাহার করে ওই মাদ্রাসাগুলোকে নতুন করে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।
চলতি বছরের ৬ অক্টোবরে জারি করা অপর আদেশে আলিম স্তরে পাঠদানের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে ২০২৩ সালের ৩১ অক্টোবর! চলতি বছরের একই দিনে জারি করা অপর আদেশে ছয়টি দাখিল মাদ্রাসার প্রাথমিক পাঠদানের অনুমোদন দেওয়া হয়। অফিস আদেশে সই রয়েছে ২০২৩ সালের ৩১ অক্টোবর। চলতি বছরের অপর আরও একটি আদেশে একটি মাদ্রাসার প্রাথমিক পাঠদান অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আদেশে সই করা আছে ৩১ অক্টোবর।
চলতি বছরের ৬ অক্টোবর জারি করা আলাদা আদেশে আরও ছয়টি দাখিল মাদ্রাসার একাডেমিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এর মধ্যে কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার ফুলতলী দাখিল মাদ্রাসার শর্ত শিথিল করে একাডেমিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। অখণ্ড ৬০ শতাংশ জমির পরিবর্তে এই মাদ্রাসার রয়েছে ৫৪ শতাংশ অখণ্ড জমি। জমির অখণ্ডতা পূরণের শর্ত দিয়ে একাডেমিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাটের ঝাউবোনা মহিলা মাদ্রাসাকেও একই শর্তে একাডেমিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
চলতি বছরের ৬ আগস্ট জারি করা আরও একটি আদেশে পাবনা ও টাঙ্গাইলের দুটি মাদ্রাসার বাতিল আদেশ প্রত্যাহার করে একাডেমিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের এসব অফিস আদেশে দেখা যাচ্ছে, ২০২৩ সালের ৩১ অক্টোবর আদেশগুলো সই করেছেন কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের মাদ্রাসা অনুবিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব (মাদ্রাসা-২) একেএম লুৎফর রহমান। বর্তমানে তিনি এই মন্ত্রণালয়ে কর্মরত নেই। মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে উল্লেখ করেন, লুৎফর রহমান বর্তমানে মন্ত্রণালয়ে নেই। তিনি আগেই বদলি হয়েছেন অন্য মন্ত্রণালয়ে।
এদিকে চলতি বছরের ১৯ মার্চ জারি করা একটি আদেশে সাতটি দাখিল মাদ্রাসার প্রাথমিক পাঠদানের অনুমোদন দেওয়া হয়। তবে অফিস আদেশে তারিখ দেখানো হয়েছে ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি। সই করেছেন একই কর্মকর্তা, মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব একেএম লুৎফর রহমান।
চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি জারি করা অফিস আদেশে সিলেটের বিশ্বনাথ ও ভোলার চরফ্যাশন দাখিল মাদ্রাসায় আলিম স্তরের পাঠদান অনুমোদন দেওয়া হয়। অফিস আদেশে দেখানো হয়েছে ২০২৪ সালে ১ জানুয়ারি সই করা। একই কর্মকর্তা অফিস আদেশে সই করেছেন।
চলতি বছরের ২২ জানুয়ারি জারি করা অফিস আদেশে কক্সবাজারের চকরিয়া ও চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের দাখিল মাদ্রাসা দুটির একাডেমিক স্বীকৃতির বাতিল আদেশ প্রত্যাহার করে একাডেমিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়। অফিস আদেশে দেখানো হয়েছে ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি। সই করেছেন একই কর্মকর্তা।
এ প্রসঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের যুগ্ম সচিব (মাদ্রাসা অনুবিভাগ) এসএম মাসুদুল হক বলেন, এটি (আদেশ) টিএমইডি (কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ) থেকে করেছে। টিএমইডি এটি অনুমোদনের জন্য অর্থ বিভাগে পাঠায়, জনপ্রশাসনে পাঠায়, এটার প্রক্রিয়া হতে সময় লাগে। এক বছর আগে শুরু হয়েছিল। একেএম লুৎফর রহমানের স্বাক্ষরে অনুমোদন দিতে দেরি করেছে। এ জন্য এখন করা হয়েছে (আদেশ জারি)।
এদিকে ২০২২ সালে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন ও পাঠদান অনুমোদন এবং একাডেমিক স্বীকৃতি দেওয়ার দায়িত্ব পায় দেশের শিক্ষা বোর্ডগুলো। তবে চলমান আবেদন নিষ্পত্তির দায়িত্ব ছিল মন্ত্রণালয়ের হাতেই। নতুন আবেদনের ক্ষেত্রে শিক্ষা বোর্ডগুলো দায়িত্ব পায়।
এর ধারাবাহিকতায় ১৯৯৭ সালের ‘বেসরকারি উদ্যোগে মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক আওতাধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা) স্থাপন, চালুকরণ ও স্বীকৃতি প্রদানের ক্ষেত্রে অনুসরণীয় নীতিমালা, ১৯৯৭’ সংশোধন করে নতুন করে ভাড়া বাড়িতে পরিচালিত মাদ্রাসার অনুমোদন দেওয়ার বিধান যুক্ত করে ‘বেসরকারি মাদ্রাসা (দাখিল ও আলিম) স্থাপন, পাঠদান ও একাডেমিক স্বীকৃতি প্রদান নীতিমালা-২০২৫’ সম্প্রতি নতুন নীতিমালা জারি করে বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড।
এই নীতিমালার আওতায় ভাড়াবাড়িতে পরিচালিত মাদ্রাসাগুলো অনুমোদনের স্বীকৃতি পাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়। নীতিমালা জারির পর মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিঞা মো. নূরুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে সম্প্রতি বলেছিলেন, প্রাইভেট অনেক মাদ্রাসা আছে, যারা অন্য মাদ্রাসার (অনুমোদিত) নামে পরীক্ষা দিতো। এখন তারা স্বনামে পরীক্ষা দিতে পারবে (অনুমোদন পাওয়ার পর)। যেহেতু তারা কন্ট্রিবিউট করেছে, সেখানে সরকারের আর্থিক ব্যয় নেই। অথচ তারা ভালো পারফর্ম করছে, সে জন্য দেওয়া।
শর্ত শিথিল করে এমপিওভুক্তির সুযোগ পাবে স্বীকৃতি পাওয়া মাদ্রাসা
নতুন করে শর্ত শিথিল করে বেসরকারি মাদ্রাসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ। ফলে নতুন করে স্বীকৃতি পাওয়া এবং ভাড়া বাড়িতে গড়ে ওঠা মাদ্রাসাও এমপিওভুক্তির সুযোগ পাবে।
এ প্রসঙ্গে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের যুগ্মসচিব (মাদ্রাসা অনুবিভাগ) এস এম মাসুদুল হক বলেন, জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা সংশোধন চলমান আছে। দাখিল আলিম ও ফাজিল মাদ্রাসাগুলোর এমপিও নীতিমালা ২০২৪ সালের নভেম্বর থেকে শুরু হয়েছে।
এমপিও পেতে নীতিমালা শিথিলের বিষয় জানতে চাইলে মাসুদুল হক উদাহরণ দিয়ে বলেন, ২০১৮ সালের নীতিমালায় ইবতেদায়ি মাদ্রাসার জন্য জমির পরিমাণ ছিল ৩৩ শতাংশ। জনসংখ্যা বাড়ার কারণে সবার সঙ্গে আলোচনা করে ২৫ শতাংশের প্রস্তাব করা হয়েছে। এমপিও পেতে আগে ছাত্র সংখ্যা ছিল ১৫০ জন। এখন ন্যূনতম ১২৫ জন করা হয়েছে।
মাগুরা মহম্মদপুর উপজেলার গোপালনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৯৪১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। প্রতিষ্ঠানটির বয়স ৮৪ বছর পেরিয়ে গেলেও শিক্ষার্থীদের ভাগ্যে জোটেনি একটি ভবন।
চরম কষ্টে টিনশেডে ক্লাস করছেন শিক্ষার্থীরা। ফলে দিনদিন কমে যাচ্ছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা।
জানা যায়, বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন হাজী মোহাম্মাদ বাবু মোল্লা। বিদ্যালয়টির আগের ভবনটি পরিত্যাক্ত হওয়ার পর থেকে আর কোনো নতুন ভবন হয়নি। অর্থ বরাদ্দ আসার পর গত ২০১০-১১, ২০১২-১৩ ও ২০১৬-১৭ অর্থবছরে মাটি পরীক্ষা হওয়ার পরেও অজ্ঞাত কারণে ভবননি আর হয়নি।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের পূর্বপাশে মধুমতি নদী এবং চারপাশে নানা ধরনের ঘরবাড়ি ও মসজিদ বা স্থাপনা থাকলেও পুরোনো টিনশেড ঘরে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম। জানা যায়, জরাজীর্ণ টিনশেড ঘরে পর্যাপ্ত ফ্যানের অভাবে গরমে চরম কষ্টে দিনাতিপাত করছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষকরা বলছেন, একটু ঝড়ো হাওয়া আর সাথে বৃষ্টি হলে কক্ষের ভেতরে ক্লাস নেওয়ার মতো কোনো পরিবেশই থাকে না। প্রচণ্ড গরমে চাহিদামতো বৈদ্যুতিক ফ্যান না থাকায় কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জীবন হয়ে উঠছে দুর্বিসহ।
নানা সমস্যায় জর্জরিত হলেও সুনাম ধরে রেখেছে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি। বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে ৭০ জন শিক্ষার্থীর পাঠদানের শিক্ষিকা রয়েছেন ৫ জন।
বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা হাজী মোহাম্মদ বাবু মোল্যার ছেলে বিশিষ্ট সমাজসেবক মো. জিয়াউল হক বাচ্চু বলেন, বিদ্যালয়টি দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। ফলে এ বিদ্যালয়ে এখনো নতুন কোনো ভবন গড়ে ওঠেন। শিক্ষার মান উন্নয়নে শিক্ষার্থীদের মান উপযোগী করে গড়ে তুলতে দ্রুত বিদ্যালয়ের নতুন একটি একাডেমিক ভবন নির্মাণ ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি জোর দাবি জানান।
প্রধান শিক্ষিকা সুলতানা বিউটি বলেন, ভবন না থাকায় বাধ্য হয়েই পুরোনো টিনশেড ভবনে চরম কষ্টে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করাতে হচ্ছে। এতে যেকোনো সময় প্রাণহানিসহ বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কার রয়েছে। এ পর্যন্ত ৩-বার সয়েল টেষ্ট হওয়ার পর বরাদ্দও এসেছিল কিন্ত ভবন নির্মাণ না করে কেন টাকা ফেরত গেছে জানি না। পড়ালেখার মান উন্নয়ন ও অনুকূল পরিবেশের জন্য বিদ্যালয়ে একটি নতুন ভবন নির্মাণ খুবই জরুরি।
মহম্মদপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সুব্রত কুমার সাহা বলেন, নদী নিকটবর্তী হওয়ায় সম্ভবত প্রকল্প ফেরত গেছে। খোঁজ-খবর নিয়ে নতুন ভবন নির্মাণসহ নানা সমস্যা নিরসনে গ্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।