সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে ২০১৮ সালে জারিকৃত পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে’-এর ব্যানারে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা গতকাল সোমবার কোটা বাতিলে সরকারকে তিন দিনের আলটিমেটাম দিয়েছে।
এদিকে আজ মঙ্গলবার অনলাইন-অফলাইনে গণসংযোগ কর্মসূচি ঘোষণা করে দীর্ঘ চার ঘণ্টা পর শাহবাগ মোড় ছেড়েছে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। ফলে আজ কোন মাঠের কর্মসূচি থাকছে না।
রাত সাড়ে আটটায় কর্মসূচি ঘোষণা করে আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা এখন অর্ধ বেলা ব্লকেড কর্মসূচি পালন করছি। কিন্তু আমরা সারা দেশে সর্বাত্মক ব্লকেড কর্মসূচির পরিকল্পনা করছি। তাই আগামীকাল (মঙ্গলবার) ঢাকাসহ সারা দেশের শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের সাথে আমরা সমন্বয় করবো এবং গণসংযোগ করব এরপর বুধবার কঠোর কর্মসূচি পালন করা হবে। আর সেই কর্মসূচি কী সেটা মঙ্গলবার বিকেলে অনলাইনে সংবাদ সম্মেলন করে জানানো হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের চলমান ছাত্র ধর্মঘট এবং ক্লাস পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি চলবে।’ এ সময় শিক্ষার্থীরা মেট্রোরেল ব্লকের দাবি জানালে নাহিদ ইসলাম শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য বলেন, ‘আমরা ব্লকেড কর্মসূচি থেকে সরে আসছি না। সর্বাত্মক ব্লকেডে যেতে প্রস্তুতি নিচ্ছি। আপনারা সারাদেশ ব্লকেডের প্রস্তুতি নিন।’
কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীদের ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে সড়ক অবরোধের কারণে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো গতকাল বিকেল থেকে অচল হয়ে পড়ে রাজধানীর বড় অংশ। তারা শাহবাগ মোড় ছাড়াও চানখারপুল, সায়েন্সল্যাব, পল্টন মোড়, গুলিস্তান, নীলক্ষেত, বাংলামোটর, কারওয়ান বাজার, মৎস ভবন, ফার্মগেট, আগারগাঁও, রামপুরা-বাড্ডা সড়ক অবরোধ করেন। এতে পুরো রাজধানী কার্যত স্থবির হয়ে পড়ে, সৃষ্টি হয় তীব্র যানজটের।এতে যানবাহনকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা। নারী এবং অসুস্থ ও বয়স্ক ব্যক্তিদের পড়তে হয়ে সীমাহীন ভোগান্তিতে।
কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিকেল চারটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার থেকে শিক্ষার্থীরা মিছিল শুরু করেন। আর এই মিছির শিক্ষার্থীরা শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন। এরপর এই মিছিলের শিক্ষার্থীদের একটি অংশ মিন্টো রোড, মৎসভবন বাংলামোটর এবং কাওরান বাজার মোড় অবরোধ করেন।
এ ছাড়া একই সময়ে ইডেন মহিলা কলেজ আর গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের শিক্ষার্থীরা নীলক্ষেত মোড়, ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা সায়েনসল্যাব মোড়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অমর একুশে হল ও শেখ বোরহান উদ্দিন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কলেজের শিক্ষার্থীরা চাঁনখারপুল মোড় ও মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার সংলগ্ন র্যাম্প অবরোধ করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হল ও ফজলুল হক মুসলিম হলের শিক্ষার্থীরা অবরোধ করেন পল্টন মোড়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, কবি নজরুল ইসলাম কলেজ এবং সোহরাওয়ার্দী শিক্ষার্থীরা গুলিস্তান মোড় অবরোধ করেন।
আর ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা রামপুরা-বাড্ডা সড়ক অবরোধ করলে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়।
এ ছাড়া সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা ফার্মগেট মোড় অবরোধ করে এবং আগারগাঁও মোড় অবরোধ করে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
গত ১ জুলাই থেকে টানা আন্দোলন করে আসছে চাকরিতে কোটা বাতিলের পরিপত্র পুনর্বহালসহ চার দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী এবং চাকরি প্রত্যাশীরা।
এ ছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, ঢাকা খুলনা মহাসড়কসহ দেশের বিভিন্ন সড়ক ও মহাসড়ক অবরোধ করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
শুরুতে তাদের দাবি চারটা থাকলেও গতকাল থেকে তারা এক দাবিতে আন্দোলন করছেন। সেই এক দাবি হলো ‘সকল গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লিখিত অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য কোটাকে ন্যূনতম মাত্রায় এনে সংসদে আইন পাশ করে কোটাপদ্ধতিকে সংশোধন করতে হবে।’
গতকাল বেলা চারটা ২৫ মিনিটে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের’ ব্যানারে শিক্ষার্থীরা শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন। এসময় পুলিশ আন্দোলনকারীদের শাহবাগ মোড় ছেড়ে বাংলা মটরের দিকে যেতে বাধা দিলে পুলিশ বাধা উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড় এবং বাংলামোটরের দিকে দৌড়ে যান সেসব রাস্তা অবরোধ করতে।
এর আগে পূর্ব ঘোষিত ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে অবস্থান নেন।
এতে শিক্ষার্থীরা নিজেদের বিভাগ, হল এবং ইনিস্টিটিউটের ব্যানারে অবস্থানে যোগ দেন। এরপর এই মিছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি চত্বর টিএসসি হয়ে শাহবাগ এসে মোড় অবরোধ করেন।
এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘একাত্তরের পথ ধরো, বাংলা ব্লকেড সফল করো’; কোটা ছেড়ে কলম ধরো, বাংলা ব্লকেড সফল করো’; ‘দফা এক দাবি এক, কোটা নট কামব্যাক’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
এদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, কোটাবিরোধী আন্দোলনের মতো জনদুর্ভোগ ডেকে আনে এমন কর্মসূচি পরিহার করা উচিত।
গতকাল এক সংবাদ সম্মেলন তিনি বলেন, ‘শিক্ষকদের পেনশন ও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের বিষয়ে গতকাল কথা বলেছি। আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রীও এ বিষয়ে কথা বলেছেন।’
তিনি বলেন, ‘২০১৮ সালে পরিপত্র জারি করে সব কোটা বিলুপ্ত করে সরকার। পরে কোটা পুনর্বহালের জন্য উচ্চ আদালতে আপিল করে সাতজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। দেশের সর্বোচ্চ আদালতে বিষয়টি বিচারাধীন অবস্থায় রয়েছে। উচ্চ আদালতের রায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। আমরা মনে করি উচ্চ আদালত বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনা করে রায় দেবেন।’
এ ছাড়া, দেশের সর্বোচ্চ আদালতে যে বিষয়টা বিচারাধীন সেটা রাজপথে নেয়া উচিত নয় বলে কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনকারীদের ধৈর্য্য ধরার অনুরোধ জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।
সুপ্রিম কোর্টে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আদালত রায় দিয়েছে সেই রায়ের বিরুদ্ধে সরকার আপিল বিভাগে গেছে। তাই এই মুহূর্তে এই ধরনের আন্দোলনটা আমি মনে করি তাদের না করাই উচিত হবে। আন্দোলনকারীদের বলব আদালতে যে বিষয়টা বিচারাধীন, সেই বিষয়টা রাজপথে না আনতে। কারণ, এটা আদালতে তো আছেই, বিচারটা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে তাদের আমি একটু ধৈর্য ধরার অনুরোধ করব। আমি জানি না আন্দোলনটা তারা কেন করছেন? আমি মনে করি আন্দোলনটা না করাই ভালো।’ এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, আগামী বৃহস্পতিবার বিষয়টি আবার শুনানির জন্য আসবে। কাল বুধবারও যদি পূর্ণাঙ্গ রায় পাই তাহলেও আমরা সিপি (নিয়মিত আপিল) করব।
অবরোধের কারণে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় বিকল্প হিসেবে অনেকে মেট্রোরেল ব্যবহার করেন। শাহবাগ ও কারওয়ান বাজার মেট্রো স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় মেট্রো স্টেশনগুলোতে অনেক বেশি মানুষের ভিড়। স্টেশনেও টিকিটের জন্য ছিল দীর্ঘ লাইন। টিকিট কেটে ট্রেনের জন্য প্ল্যাটফর্মেও ছিল মানুষের ভিড়। সাধারণত ট্রেন এলে একবারেই স্টেশনে থাকা সব যাত্রী উঠতে পারলেও আজ বিকেলে যাত্রীদের লাইনে দাঁড়িয়ে দু–তিনটি ট্রেন যাওয়ার পর ওঠা সম্ভব হয়েছে। ট্রেনের ভেতরেও দেখা যায় মানুষের উপচে পড়া ভিড়।
রাজশাহীতে সাড়ে ৪ ঘণ্টার অবরোধে ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়
রাজশাহীতে সাড়ে চার ঘণ্টা রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এ সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) সংলগ্ন রেলপথ অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা।
এতে রাজশাহীর সঙ্গে সারা দেশের ট্রেন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। আটকে যায় তিনটি ট্রেন। সাড়ে চার ঘণ্টার রেলপথ অবরোধে তিন ট্রেনের শিডিউল তছনছ হয়ে যায়। ঘটে গেছে শিডিউল বিপর্যয়।
গতকাল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কৃষি অনুষদ সংলগ্ন ফ্লাইওভার এলাকায় বেলা সাড়ে ১১টা থেকে শুরু হওয়া রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। এরপর রেলপথ থেকে অবরোধ তুলে নিয়ে ঘটনাস্থল ছাড়েন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন ম্যানেজার আব্দুল করিম জানান, রাবি শিক্ষার্থীদের আন্দোলন কর্মসূচি ও বিক্ষোভের কারণে হরিয়ান রেলওয়ে স্টেশনে আন্তঃনগর ট্রেন কপোতাক্ষ এক্সপ্রেসের স্টপেজ দিতে হয়েছে। সেখান থেকেই যাত্রী তুলে আবার ফেরত পাঠাতে হয়েছে।
ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে জাবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
বিকাল তিনটায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক (ডেইরি গেইট) সংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা।
এর আগে, বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’র ব্যানারে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে প্রধান ফটক সংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে গিয়ে শেষ হয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে ‘ফজলুর রহমান মুহুরী স্মৃতি বৃত্তি–২০২৫’ উপলক্ষে বৃত্তি পরীক্ষা ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় উপজেলার আলমনগর দক্ষিণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এ আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, আলমনগর ঐক্য ফোরামের সভাপতি এইচ. এম. শান্তি। সভাপতিত্ব করেন আলমনগর ঐক্য ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ও স্মৃতি বৃত্তি কমিটির সভাপতি শরিফুল ইসলাম। বৃত্তি পরীক্ষার নিয়ন্ত্রকের দায়িত্ব পালন করেন সহকারী অধ্যাপক আক্তার হোসেন। কেন্দ্র সচিব ছিলেন আলমনগর দক্ষিণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. কামাল হোসেন। এছাড়া অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বানিয়াচং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম। সহকারী কেন্দ্র সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মো. খালিলুর রহমান।
আয়োজকরা জানান, এলাকার মেধাবী শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করা এবং শিক্ষার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে এ স্মৃতি বৃত্তির আয়োজন করা হয়েছে। বৃত্তি পরীক্ষায় পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়। শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খল পরিবেশে পরীক্ষা সম্পন্ন হয়।
উপস্থিত অভিভাবকরা বলেন, বৃত্তি পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মেধা যাচাইয়ের পাশাপাশি পড়াশোনায় আগ্রহ ও প্রতিযোগিতামূলক মানসিকতা তৈরি হয়, যা ভবিষ্যতে তাদের শিক্ষাজীবনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ছিল ভাটা নদীর বাঁকে সমাজকল্যাণ সংঘ, আলমনগর। আয়োজকরা ভবিষ্যতেও এ ধরনের শিক্ষাবান্ধব উদ্যোগ অব্যাহত রাখার প্রত্যাশা জানান।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের একজন সিনিয়র শিক্ষকের বিরুদ্ধে পিএইচডি ডিগ্রি প্রদান প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। তিনি ৬ মাসের ছুটিতে যাওয়ার আগে নিজের প্রভাব খাটিয়ে ছাত্রকে পিএইচডি ডিগ্রি প্রদান নিশ্চিত করতে নিয়মবিরোধী তৎপরতা চালিয়েছেন বলে জানা গেছে।
জানা যায়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক পিএইচডি গবেষণারত মোহাম্মদ শামছিল আরেফিন (রেজিস্ট্রেশন নং: ৩৫, রোল নং: ২০১৯-০১, শিক্ষাবর্ষ ২০১৮-১৯) পিএইচডি থিসিস মূল্যায়ন ও মৌখিক পরীক্ষার কমিটি ২০২৩ সালের ৫ মার্চ অনুষ্ঠিত হয়। যা বিভাগীয় একাডেমিক কমিটির ৭৮৫তম সভায় (বিষয়-৯, বিবিধ-৬), ৪ জুন অনুষ্ঠিত ৪৯তম ফ্যাকাল্টি সভায় (৫নং সিদ্ধান্ত) এবং পরবর্তীতে ২৫ জুলাই অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৪৪তম একাডেমিক কাউন্সিলে (বিষয়-২) অনুমোদিত হয়। তবে এ বছর ২০২৫ সালের শেষপান্তে এসে প্রাণিবিদ্যা বিভাগের একজন সিনিয়র শিক্ষক ও থিসিস সুপারভাইজার এই পিএইচডি ডিগ্রি প্রদান প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত দ্রুততার সাথে সম্পন্ন করার জন্য তৎপর হয়ে ওঠেন। গত ১৮ নভেম্বর থিসিস মূল্যায়নের জন্য ৩ জন মূল পরীক্ষকের মধ্যে তৃতীয় মূল পরীক্ষককে থিসিস না পাঠিয়ে বিকল্প সদস্য পরীক্ষককে পাঠানো হয়। যা একাডেমিক নিয়মের সম্পূর্ণ লঙ্ঘন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে অভিযোগ পাওয়া যায়, পিএইচডি প্রার্থীকে অনৈতিক সুবিধা দেওয়ার জন্য তড়িঘড়ি করে মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে ২৬ নভেম্বর, ২০২৫ তারিখে থিসিস পাঠানোসহ অনলাইনে রিপোর্ট চলে আসে। ২৭ নভেম্বরে মৌখিক পরীক্ষার তারিখ ৩০ নভেম্বর, ২০২৫ তারিখে নেওয়ার জন্য ঘোষণা করা হয়। থিসিস পাঠানোর দিন থেকে ১২ দিনের মাথায় অর্থাৎ ৩০ নভেম্বর, ২০২৫ তারিখ পিএইচডি থিসিসের মৌখিক পরীক্ষা সম্পন্ন হয়। এভাবে মাত্র ১২ দিনে দেশের প্রথমসারির একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষককে পিএইচডি ডিগ্রি দেওয়ার ব্যবস্থা করা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে অকল্পনীয় ঘটনা বলে অনেকেই মন্তব্য করেছেন।
জানা যায়, নির্ধারিত ৩ জন মূল পরীক্ষকের মধ্যে তৃতীয় মূল পরীক্ষক ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপউপাচার্য বর্তমানে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. আশিষ কুমার পাণিগ্রাহীকে থিসিস না পাঠিয়ে বিকল্প সদস্যকে থিসিস পাঠানো হয়েছে। এতে মূল্যায়ন কমিটির নিরপেক্ষতা ও উচ্চশিক্ষার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কারণ বর্তমানে থিসিস সুপারভাইজার ছাড়াও বাকি দুজন পরীক্ষকই একই বিশ্ববিদ্যালয় এবং একই বিভাগের (প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়) যা রহস্যজনক বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে।
যথাযথভাবে থিসিস মূল্যায়ন না করেই তড়িঘড়ি করে অনলাইনে রিপোর্ট পাঠিয়ে দিয়েছেন বিষয়টি স্বীকার করে চবি প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মোসাসম্মৎ রাশেদা চৌধুরী দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘২-৩ দিনে একটি পিএইচডি থিসিস অধ্যয়ন করে মূল্যায়ন করা ও রিপোর্ট তৈরি করা একেবারেই অসম্ভব। কমপক্ষে তিন থেকে চার সপ্তাহ সময় লাগে। এ ক্ষেত্রে তড়িঘড়ি করে অনলাইনে রিপোর্ট পাঠিয়ে দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট পরীক্ষকদয়।’
জানা যায়, পরীক্ষকদয় যথাযথভাবে থিসিস মূল্যায়ন না করেই তড়িঘড়ি করে অনলাইনে রিপোর্ট পাঠিয়ে দিয়েছেন যা হয়তো আগে থেকেই তৈরি করে রাখার নির্দেশনা ছিল, নতুবা মাত্র ২-৩ দিনে একটি পিএইচডি থিসিস অধ্যয়ন করে মূল্যায়ন করা ও রিপোর্ট তৈরি করা একেবারেই অসম্ভব। সাধারণত কোনো মূল পরীক্ষককে থিসিস পাঠানোর পর তিনি লিখিতভাবে ওই থিসিস মূল্যায়নে অপারগতা প্রকাশ করলে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পরামর্শে বা অনুমতি নিয়ে মূল পরীক্ষকের পরিবর্তে বিকল্প সদস্যকে পাঠানো হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সে নিয়ম না মেনে মূল পরীক্ষককে থিসিস না পাঠিয়েই বিকল্প একজনকে থিসিস পাঠানো হয়েছে। এর ফলে পুরো প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
এই সমগ্র অনিয়মের পেছনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের একজন সিনিয়র শিক্ষকের ব্যক্তিস্বার্থই প্রাধান্য পেয়েছে। মোহাম্মদ শামছিল আরেফিনের পিএইচডি থিসিসটির তত্ত্বাবধায়ক অন্যত্র পদায়িত হবেন বিধায় তিনি গত ১ ডিসেম্বর ২০২৫ তারিখে ছয় মাসের লিয়েন ছুটিতে যান। তাই তার ছাত্রকে দ্রুততম সময়ে নিজের প্রভাব খাটিয়ে পিএইচডি ডিগ্রি প্রদান নিশ্চিত করতেই নিয়মবিরোধী এই ব্যতিক্রমী দ্রুততা ও তৎপরতা দেখানো হয়েছে। এতে পিএইচডি থিসিসের মানের সাথে আপস করে করা হয়েছে, যা পিএইচডি থিসিস মূল্যায়নের নিয়মবিরোধী ও অগ্রহণযোগ্য। পিএইচডির মতো উচ্চতর ডিগ্রির ক্ষেত্রে এই ধরনের অনিয়ম ভবিষ্যতে খারাপ দৃষ্টান্ত তৈরি করবে যা পুরো একাডেমিক কাঠামোর উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
চবির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. মমতাজ উদ্দিন আহমদ দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘ফাইলটি আমাদের উপাচার্য্য মহোদয়ের অফিসে। এখনো আমার কাছে আসেনি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না।’
পিএইচডি গবেষণারত চবির প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক মোহাম্মদ শামছিল আরেফিন বলেন, ‘আমার সরাসরি সুপারভাইজার হচ্ছেন অধ্যাপক ড. মঞ্জুরুল কিবরিয়া। উনার সাথে কথা বললে ভালো হয়।’ পরে নিজে কথা বলে, (প্রতিবেদকের সাথে) এরপর কথা বলবেন বললেও আর যোগাযোগ করেননি।
বৃটিশ কাউন্সিলের ডেপুটি ডিরেক্টর মারিয়া রেহমান বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ-এর সঙ্গে উপাচার্যের সভাকক্ষে সাক্ষাৎ করেছেন। এসময় ব্রিটিশ কাউন্সিলের শিক্ষা বিভাগের প্রধান তৌফিক হাসান তাঁর সঙ্গে ছিলেন।
সাক্ষাৎকালে তাঁরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ব্রিটিশ কাউন্সিলের মধ্যে চলমান শিক্ষা ও গবেষণা সহযোগিতা আরও জোরদার করার বিষয়ে আলোচনা করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং গবেষক বিনিময় নিয়েও বৈঠকে আলোচনা করা হয়।
এসময় প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে যৌথ গবেষণা কার্যক্রম গ্রহণ এবং যৌথভাবে জার্নাল প্রকাশের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে আন্তর্জাতিকীকরণের জন্য ব্রিটিশ কাউন্সিলের উপ-পরিচালকের সহযোগিতা কামনা করেন। ব্রিটিশ কাউন্সিলের সহযোগিতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য কর্মশালা এবং প্রশিক্ষণ কর্মসূচি আয়োজনের বিষয়েও তাঁরা আলোচনা করেন।
দীর্ঘ পাঁচ বছর পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) হয়েছে দ্বাদশ সমাবর্তন। বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেডিয়াম মাঠে এই সমাবর্তন অনুষ্ঠানের আয়োজন শুরু হয়। সমাবর্তনে বিভিন্ন শিক্ষা বর্ষের অন্তত পাঁচ হাজার নিবন্ধিত গ্র্যাজুয়েট অংশ নিয়েছেন। গাউন ও টুপি পরে পুরোনো শিক্ষার্থীরা বন্ধুদের সঙ্গে মিলিত হয়ে স্মৃতিচারণায় মেতে ওঠেন, ফিরে যান শিক্ষাজীবনের ফেলে আসা দিনগুলোতে। ক্যাম্পাসজুড়ে ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ ও আনন্দঘন আবহ।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা প্রফেসর ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার। বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা প্রফেসর ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ। দুপুরে সমাবর্তন বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এস এম এ ফায়েজ।
এ সমাবর্তনে জ্ঞান কেবল ব্যক্তিগত উন্নয়নের জন্য নয়, বরং এটি দায়িত্বের সৃষ্টি করে আহ্বান জানিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার বলেছেন, সমাজ ও রাষ্ট্রের কল্যাণে আত্মনিয়োগ করাই শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য।
সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ৬০, ৬১ ও ৬২তম ব্যাচের মোট ৫ হাজার ৯৬৯ জন শিক্ষার্থী অংশ নেন।
বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) সকাল থেকেই শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকরা পদযাত্রার মাধ্যমে সমাবর্তনস্থলে যোগ দেন। গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করায় শিক্ষার্থীদের মাঝে উচ্ছ্বাস ও গর্বের অনুভূতি ছড়িয়ে পড়ে পুরো ক্যাম্পাসজুড়ে।
অনুষ্ঠানে গ্র্যাজুয়েটদের উদ্দেশ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সালেহ হাসান নকীব বলেন, ‘ন্যায়ের পক্ষে বলিষ্ঠ কণ্ঠে কথা বলা এবং নিজেদের অর্জন দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজে লাগানোই একজন গ্র্যাজুয়েটের মূল দায়িত্ব।’
বক্তারা আরও বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া, সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে থাকা এবং ন্যায্যতাকে গুরুত্ব দেওয়ার মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে। একই সঙ্গে জুলাই যোদ্ধাদের আদর্শ স্মরণ করে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানানো হয়। পাশাপাশি গণতান্ত্রিক উত্তরণ যেন সঠিক পথে এগিয়ে যায়, সে বিষয়ে সবার সহযোগিতা কামনা করা হয়।
ভৈরবে বেসরকারি স্কুলের আয়োজনে বৃত্তি পরীক্ষায় বসেছে ৬৩ স্কুলের ৫৩৩ শিক্ষার্থী। সরকারিভাবে বৃত্তি পরীক্ষায় সুযোগ না থাকায় বেসরকারি আয়োজনে বৃত্তি পরীক্ষা দিতে পেরে আনন্দিত শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) সকাল ১০ টায় ভৈরব পৌর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় স্কুলে পরীক্ষা শুরু হয়েছে৷
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই বছর বর্তমান সরকার সারাদেশে অনুষ্ঠিতব্য মেধা যাচাই নামকরণে বৃত্তি পরীক্ষায় বেসরকারি স্কুলগুলোকে সরকারি প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়নি। এই কারণে কিশোরগঞ্জ ভৈরবের বেসরকারি স্কুল সমূহের উদ্যোগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য বেসরকারি প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষার আয়োজন করা হয়েছে। পরীক্ষা সকাল ১০টা থেকে শুরু হয়ে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত চলে। পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন ভৈরবের ৬৩টি স্কুলের ৫৩৩ জন শিক্ষার্থী। এছাড়াও আয়োজিত বৃত্তি পরীক্ষার পরবর্তী পরীক্ষাগুলো হবে ১৭, ১৮ ও ২০ ডিসেম্বর হবে।
পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পঞ্চম শ্রেণি শিক্ষার্থী নাফিজা আক্তার শসী বলেন, ‘আমাদের সরকারি বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ হয়নি তবে আজকে (গতাকাল সোমবার) বেসরকারি স্কুলের আয়োজিত বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে খুব আনন্দ লাগছে। কারণ আমরা আমাদের নিজেদের মেধা যাচাইয়ের একটি সুযোগ পেয়েছি।
এ সময় শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা বলেন, সরকার দেশের বেসরকারি স্কুলের শিক্ষার্থীদের সরকারি বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ দেয়নি। সেজন্যই আমাদের সন্তানদের মেধা যাচাইয়ের জন্য বেসরকারি বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে নিয়ে এসেছি। আমাদের দাবি সরকারি বৃত্তি পরীক্ষায় বেসরকারি স্কুলের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ করতে পারে সেই দাবি জানান।
ভৈরব উদয় স্কুল পরিচালক মতিউর রহমান সাগর বলেন, সরকারের সিন্ধান্ত অনুযায়ী শুধু মাত্র সরকারি স্কুলের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে সরকারি বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। সেজন্যই আমরা বেসরকারি স্কুলের উদ্যোগে ৬৩টি স্কুলের শিক্ষার্থীদের নিয়ে বেসরকারিভাবে বৃত্তি পরীক্ষার আয়োজন করা হয়েছে। এতে উপজেলার সকল বেসরকারি স্কুলের ৫৩৩ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছেন। এতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবক খুবই আনন্দিত।
এ বিষয়ে ভৈরব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কে.এম মামুনুর রশীদ জানান, ‘সরকারি বা বেসরকারি দুটিই একে-অপরের পরিপূরক। যেখানে সরকারিভাবে সম্ভব নয় সেখানেই বেসরকারি সংস্থা গুলি কার্যক্রম সম্পাদন করে থাকে। তেমনিভাবে ভৈরবে আজকে অত্যন্ত সুশৃঙ্খল পরিবেশে বেসরকারিভাবে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার নেতৃত্বে একটি কমিটির মাধ্যমে ভৈরবের ৬৩টি স্কুলের ৫৩৩ জন শিক্ষার্থী বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে। আমি পরীক্ষার বিভিন্ন হল রুম পরিদর্শন করেছি। সেখানে শিক্ষার্থীরা সুষ্ঠু পরিবেশে বৃত্তি পরীক্ষা দিচ্ছেন।
বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় (বাউবি) পুনরায় চালু করেছে বহু প্রতীক্ষিত ‘স্কুল অব ল’। বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান, মানবিক ও ভাষা স্কুলের আইন বিষয়ের অধ্যাপক ড. নাহিদ ফেরদৌসীকে বাউবি আইন-১৯৯২ এবং সংশোধনী-২০০৯ এর ৬(৩) ধারা অনুযায়ী স্কুলটির ডিন হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তিনি গত মঙ্গলবার পূর্বাহ্নে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
উল্লেখ্য, সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম. এরশাদুল বারী ২০০৫ সালের ১১ অক্টোবর ‘স্কুল অব ল’ প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আর. আই. এম. আমিনুর রশীদ-এর দায়িত্বকালীন সময়ে ৩ সেপ্টেম্বর ২০০৯ তারিখে বোর্ড অব গভর্নরসের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এক অফিস আদেশের মাধ্যমে স্কুলটির সকল কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। একইসঙ্গে এলএলবি প্রোগ্রাম এবং শিক্ষকদের দায়িত্ব ন্যস্ত করা হয় সামাজিক বিজ্ঞান, মানবিক ও ভাষা স্কুলে এবং স্থাবর–অস্থাবর সম্পত্তি ও জনবল ন্যস্ত করা হয় প্রশাসন বিভাগে। এতদিন এলএলবি (অনার্স) ও এলএলএম প্রোগ্রাম দুটি সামাজিক বিজ্ঞান, মানবিক ও ভাষা স্কুলের অধীনে পরিচালিত হয়ে আসছিল।
বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম যুগোপযোগী আইন শিক্ষা নিশ্চিতকরণ এবং চলমান এলএলবি (অনার্স) ও এলএলএম প্রোগ্রামকে আরও মানসম্মত ও গতিশীল করতে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেন। শিক্ষার্থীদের ক্রমবর্ধমান আগ্রহ ও ভর্তি চাহিদার প্রেক্ষিতে বোর্ড অব গভর্নরসের অনুমোদনক্রমে পুনরায় পৃথকভাবে ‘স্কুল অব ল’ চালু করা হয়। স্কুলটি পুনরায় চালুর মাধ্যমে বাউবি দেশে আইন শিক্ষার সম্প্রসারণ ও মানোন্নয়নে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে এবং উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলামের দূরদর্শী নেতৃত্ব ও শিক্ষাবান্ধব উদ্যোগ সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বিভিন্ন আবাসিক হলের সংস্কার কাজের অগ্রগতি পর্যালোচনা এবং পরবর্তী করণীয় নির্ধারণে এক গুরুত্বপূর্ণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার (১০ ডিসেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আব্দুল মতিন চৌধুরী ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে আয়োজিত এই সভায় সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ এবং বিভিন্ন আবাসিক হল ও ভবনের কারিগরি নিরীক্ষণ, মূল্যায়ন ও মনিটরিং বিষয়ক সেন্ট্রাল কো-অর্ডিনেশন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. এম. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
সভায় আবাসিক হলগুলোর চলমান সংস্কার কাজের সার্বিক অগ্রগতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। এ সময় সংস্কার কাজগুলো সুষ্ঠু ও যথাযথভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি—তিন স্তরের কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। পাশাপাশি সংস্কার কাজ সঠিকভাবে তদারকি করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তরকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
গুরুত্বপূর্ণ এই সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন অফিসের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক, ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী, হিসাব পরিচালক এবং প্রকৌশল দপ্তরের সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ‘বেগম রোকেয়া দিবস’ পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষ্যে মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. এম. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, রোকেয়া হল প্রাঙ্গণে বেগম রোকেয়ার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
এসময় রোকেয়া হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. হোসনে আরা বেগমসহ হলের আবাসিক শিক্ষক এবং হল সংসদের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. এম. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী পুষ্পস্তবক অর্পণকালে বেগম রোকেয়ার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেন, পিছিয়ে পড়া নারীদের ভাগ্যোন্নয়নে তিনি কাজ করে গেছেন।
বেগম রোকেয়ার আদর্শ অনুসরণ করে একটি বৈষম্যহীন ও সমতাভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে এগিয়ে আসার জন্য তিনি সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি চট্টগ্রাম ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অটাম―২০২৫ সেশনে বিদায়ী ছাত্রছাত্রীদের 'ফেয়ারওয়েল প্রোগ্রাম ২০২৫' আবেগঘন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হয়েছে।
৮ ডিসেম্বর (সোমবার) বিভাগীয় প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক মুহাম্মদ তাহের হোসাইন সেলিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রোগ্রামে বিদায়ী ছাত্রছাত্রীদের পাশাপাশি বিভাগের শিক্ষক তাসমিয়া ফাতিমাকেও বিদায় জানানো হয়। অনুষ্ঠানে বিভাগের শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের শুভকামনায় সিক্ত হয় বিদায়ী শিক্ষার্থীরা।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ ওসমান তাঁর বক্তব্যে বিদায়ী শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা ও কর্মজীবনে সফলতার জন্য দিকনির্দেশনা দেন। তিনি শৃঙ্খলা, আন্তরিকতা এবং মানবিক মূল্যবোধ ধরে রেখে এগিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের অর্জন ভবিষ্যৎ জীবনের ভিত্তি তৈরি করে, তাই শেখা বিষয়গুলো বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করার আহবান জানান।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রফেসর সালাহউদ্দিন আহমেদ বিভাগের শিক্ষার মান, শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্ক এবং ক্যাম্পাসে ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের ভূমিকা তুলে ধরে নতুন প্রজন্মকে সৃজনশীল ও দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে উৎসাহিত করেন।
এছাড়া গেস্ট অনার হিসেবে উপস্থিত থাকা অক্সফোর্ড গ্র্যাজুয়েট মি. এলেন কাজেনস জ্ঞানচর্চায় ইংরেজি ভাষা শিক্ষার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
অনুষ্ঠানে বিদায়ী ব্যাচের শিক্ষার্থীরা তাদের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের স্মৃতি, শিক্ষকদের সহায়তা এবং সহপাঠীদের সাথে পথচলার অভিজ্ঞতা শেয়ার করে।
তাদের প্রতি শুভকামনা জানিয়ে বিভাগীয় শিক্ষকরা বলেন, শিক্ষা শুধু ডিগ্রিতে সীমাবদ্ধ নয়, এটি চরিত্র গঠনের মাধ্যম। শিক্ষার্থী ও সহকর্মীরা মিস তাসমিয়া ফাতিমার কর্মজীবনের স্মৃতিচারণ করেন। সকল সহকর্মী ও শিক্ষার্থীরা এই শিক্ষককে শ্রদ্ধাবনত চিত্তে বিদায় জানান।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে ইংরেজি বিভাগের কালচারাল ক্লাবের উদ্যোগে বর্ণিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
বিভাগীয় প্রধান মুহাম্মদ তাহের হোসাইন সেলিম সকল বিদায়ী শিক্ষার্থীর হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন। এসময় তিনি সকলের উদ্দেশ্যে বলেন, এই ডিপার্টমেন্ট তোমাদের, সুতরাং ডিপার্টমেন্টের সার্বিক উন্নয়নে তোমাদের ভূমিকা ও সহযোগিতা কামনা করি।
অনুষ্ঠানে বিভাগীয় শিক্ষিকগণের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জিয়াউল হক, মাইমুনা খাতুন, বিপাশা বড়ুয়া, তাসমিয়া ফাতিমা, প্রজ্ঞা মজুমদার, নাঈমা আক্তার, আয়েশা আক্তার, সানজিদা সুলতানা, ইলিয়াছ শাহরিয়ার প্রমুখ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের উদ্যোগে ‘A Study on the Foreign Policy of Bangladesh to Address the Challenges of Globalization in the Domains of National Security, Climate Change and Labor Migration’ শীর্ষক এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
৮ ডিসেম্বর (সোমবার) সৈয়দ ইমতিয়াজ আহমেদ কনফারেন্স রুমে এই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের Higher Education Acceleration and Transformation (HEAT) Project -এর আয়োজনে এই অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, হিট প্রজেক্টের এসপিএম অধ্যাপক ড. এ এস এম আলী আশরাফ। এছাড়া হিট প্রজেক্টের এএসপিএম অধ্যাপক ড. সৈয়দা রোযানা রশীদ অনুষ্ঠানের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
সেমিনারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান জাতীয় নিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তন ও শ্রম অভিবাসনের মতো বিষয়গুলোর উপর বিশেষ নজর দেওয়ার উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, এক্ষেত্রে সরকারি, বেসরকারি এবং প্রাইভেট সেক্টরসহ সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন সেক্টরের মধ্যে বিভাজন দূর করে জাতীয় স্বার্থে পরস্পরের হাত ধরে চলতে হবে। জাতীয় নিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তন ও শ্রম অভিবাসন বিষয়ে আমাদের সংলাপ চালিয়ে যেতে হবে। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ এক্ষেত্রে সহায়তা করবে বলেও তিনি তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন।
সমাবর্তন প্রত্যাশী অধিকাংশ গ্র্যাজুয়েটের দাবি উপেক্ষা করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আসন্ন দ্বাদশ সমাবর্তন অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রতিবাদে রাজধানীতে মানববন্ধন ও সমাবেশ হয়েছে।
রোববার (৭ ডিসেম্বর) বেলা ৩টার দিকে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এই প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেন গ্র্যাজুয়েটরা।
মানববন্ধন থেকে বক্তারা রাবি প্রশাসনকে গ্র্যাজুয়েটদের অসন্তোষ নিয়ে সমাবর্তন আয়োজন থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান।
রাবির ৬২ ব্যাচের শিক্ষার্থী আলী ইউনুস হৃদয়ের সঞ্চালনায় শুরুতে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি আব্দুল মজিদ অন্তর।
আব্দুল মজিদ বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চরম অবহেলার সঙ্গে এই দায়সারা সমাবর্তন আয়োজন করতে যাচ্ছে। সমাবর্তন প্রত্যাশীরা যে ৩ দফা দাবি জানিয়েছেন, তার প্রতি সংহতি জানাচ্ছি। আশা করি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দাবিগুলো ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করবে।
সঞ্চালনায় আলী ইউনুস হৃদয় বলেন, গ্র্যাজুয়েটদের মাঝে যে চরম অসন্তোষ তৈরি হয়েছে তা দিন দিন ক্ষোভে রূপান্তর হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের আবেগ ও অনুভূতি প্রশাসনকে অবশ্যই মূল্যায়ন করতে হবে। তাহলেই এই মহতী আয়োজন সফল হবে। কাউকে বঞ্চিত করে এই আয়োজন সফল হতে পারে না।
৬২ ব্যাচের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী অর্বাক আদিত্য বলেন, আমরা দাবি জানিয়ে যাচ্ছি কিন্তু প্রশাসনের কোনো পদক্ষেপ নেই। তারা কাদের জন্য তাড়াহুড়ো করে এই আয়োজন করছে আমরা বুঝছি না, এখানে কার কোন স্বার্থ রয়েছে? ইতোমধ্যে সমাবর্তন আয়োজনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়ার ক্ষেত্রে অনিয়মের অভিযোগ উঠছে। দায়সারা সমাবর্তন নিবন্ধিত গ্র্যাজুয়েটরা কখনও মানবে না। প্রশাসনকে অবিলম্বে তিন দফা দাবি মেনে নিতে হবে।
সমাবেশে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী সাইদুল ইসলাম বলেন, যে দায়সারা আয়োজন করতে যাওয়া হচ্ছে তা লজ্জাজনক। নিবন্ধিত গ্র্যাজুয়েটদের প্রতি এই অবজ্ঞা কোনোভাবে সমর্থনযোগ্য হতে পারে না। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ও মর্যাদার কথা বিবেচনা করে প্রশাসনকে ৩ দফা দাবির ব্যাপারে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানাই।
একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও রাবির ইতিহাস বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী রাসিব নাহিদ বলেন, কর্মব্যস্ত ডিসেম্বর মাসে সপ্তাহের মাঝামাঝি সময় আয়োজিত সমাবর্তনে উপস্থিত হওয়া আমাদের জন্য অত্যন্ত কঠিন। দায়সারা এই আয়োজন ইতোমধ্যে বয়কটের ডাক দেওয়া হয়েছে। যদি প্রশাসন কোনো ইতিবাচক পদক্ষেপ না নেয় তাহলে ধারাবাহিক কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়া হবে।
মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা ছিলেন। এর আগে, শনিবার ( ৬ ডিসেম্বর) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেট চত্বরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সমাবর্তন নিয়ে ৩ দফা জানান গ্র্যাজুয়েটরা। সেখানে দাবি মানা না হলে সমাবর্তন বর্জনের ডাক দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৫৩ সালে প্রতিষ্ঠার পর দীর্ঘ ৭২ বছরের ইতিহাসে মাত্র ১১টি সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে। একাদশ সমাবর্তনটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১৯ সালে। অনুষ্ঠিতব্য দ্বাদশ সমাবর্তনের তারিখ বার বার পেছানোর কারণে ব্যাপক সমালোচনা চলছে। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি দ্বাদশ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও তা একই বছরের ১৩ জানুয়ারি স্থগিত ঘোষণা করা হয়। এর আগে ২০২৩ ও ২০২৪ সালে কয়েকবার তারিখ দিয়েও পরে অনিবার্য কারণবশত সমাবর্তন স্থগিত করা হয়েছিল।
সম্প্রতি প্রকাশিত হল ও’ এন্ড এ’ লেভেল এর জুন ২০২৫ সিরিজ পরীক্ষার ফলাফল। উক্ত ফলাফলে রাজধানীর সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের (ইংরেজি মাধ্যম), মালিবাগ শাখার এ লেভেলের শিক্ষার্থী আরিজ আনাস গণিতে বিশ্বে সর্বোচ্চ নম্বর অর্জনের মাধ্যমে ‘টপ ইন দ্য ওয়ার্ল্ড’ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।
গণিতের পাশাপাশি জীববিজ্ঞানসহ অন্যান্য বিষয়েও আরিজের বিশেষ আগ্রহ রয়েছে। তিনি দুইবার ন্যাশনাল বায়োলজি অলিম্পিয়াডে ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্য চ্যাম্পিয়নস’ ট্রফি অর্জন করেছেন। ২০২৩ সালে তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল বায়োলজি অলিম্পিয়াডে সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রতিনিধিত্ব করে মেরিট অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেন। এছাড়া ২০২৫ সালে তিনি ফিলিপাইনে অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল বায়োলজি অলিম্পিয়াডে অংশ নিয়ে ব্রোঞ্জ পদক অর্জন করেন। আন্তর্জাতিক পুরস্কার জয়ের পর তিনি বাংলাদেশের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা মহোদয়ের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
দেশের অন্যতম সেরা এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মালিবাগ ক্যাম্পাসের অধ্যক্ষ কর্নেল মোঃ শামসুল আলম, পি এস সি (অবঃ) বলেন, হাস্যোজ্জ্বল সুন্দর আচার-আচরণ ও ইতিবাচক মনোভাবের আরিজ জুনিয়রদের জন্য এক অনন্য অনুপ্রেরণার উৎস। আমরা আরিজ আনাসের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ ও সর্বাঙ্গীন সাফল্য কামনা করি।
শুধু একজন শিক্ষার্থীই নয়, প্রতিষ্ঠানটির সার্বিক ফলাফলও ঈর্ষণীয়। উল্লেখ্য, ক্যামব্রিজ লার্নার অ্যাওয়ার্ডস (Cambridge Learner Awards), যা আউটস্ট্যান্ডিং ক্যামব্রিজ লার্নার অ্যাওয়ার্ডস নামেও পরিচিত। এর মাধ্যমে ক্যামব্রিজের বিভিন্ন যোগ্যতা পরীক্ষায় অসাধারণ সাফল্য অর্জনকারী শিক্ষার্থীদের স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। বিশ্বব্যাপী কোনো বিষয়ে সর্বোচ্চ নম্বর অর্জনসহ শিক্ষার্থীদের অনন্য কৃতিত্ব, পরীক্ষায় দক্ষতা এবং সমাজ ও সম্প্রদায়ের প্রতি তাদের অঙ্গীকারকেও এই পুরস্কারের মাধ্যমে সম্মানিত করা হয়।
এসব পুরস্কারের মধ্যে ‘টপ ইন দ্য ওয়ার্ল্ড’ ক্যাটেগরি বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ। বিশ্বব্যাপী সকল ক্যামব্রিজ স্কুলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে নির্দিষ্ট বিষয়ে সর্বোচ্চ নম্বর অর্জনকারীদের এ সম্মান প্রদান করা হয়।
২০০২ সালে রাজধানীর গুলশানে মাত্র ২০০ শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করা সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজে এখন পড়ালেখা করছে ১৮০০০ শিক্ষার্থী। কর্ণফুলী শিপবিল্ডার্সের কর্ণধার, বিশিষ্ট শিল্পপতি প্রকৌশলী এম. এ. রশিদের পৃষ্ঠপোষকতা ও ভিকারুননিসা নূন কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মিসেস হামিদা আলীর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে এই প্রতিষ্ঠান।
বরগুনার আমতলী উপজেলার অনুদানপ্রাপ্ত পাঁচটিসহ ৭৬টি স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসায় নেই কোন প্রকৃত শিক্ষার্থী। কাগজে-কলমে হাজারো শিক্ষার্থী দেখিয়ে অনুদান গ্রহণ করা হলেও বাস্তবে এসব মাদ্রাসা ফাঁকা পড়ে আছে। পরীক্ষার সময় ধার করা শিক্ষার্থী এনে দেখানো পরীক্ষা চালানোর অভিযোগ উঠেছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে স্থানীয়রা।
জানা গেছে, আমতলী উপজেলায় অনুদানভুক্ত পাঁচটিসহ মোট ৭৬টি স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা রয়েছে। অনুদান পাওয়া পাঁচটি মাদ্রাসা হলো, পূর্ব চিলা হাসানিয়া, মধ্য পাতাকাটা আমানদিয়া, উত্তর ঘোপখালী, মোহাম্মদপুর মাহমুদিয়া নাচনাপাড়া এবং কুতুবপুর ইসরাইলিয়া ইবতেদায়ি মাদ্রাসা। তবে গত দুই-তিন বছর ধরে এসব মাদ্রাসায় কোন শিক্ষার্থী পাওয়া যায়নি। শিক্ষকরা কাগজে-কলমে শিক্ষার্থীর তালিকা দেখিয়ে অনুদান পাচ্ছেন, কিন্তু বাস্তবে ক্লাসরুম ফাঁকা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, মাদ্রাসার দরজায় প্রায়ই তালা ঝুলতে দেখা যায়। শিক্ষকরা কখনো কখনো এসে উপস্থিতি খাতায় স্বাক্ষর করে চলে যান। গত ২০ নভেম্বর থেকে পরীক্ষা শুরু হলেও বেশিরভাগ মাদ্রাসায় কোনো শিক্ষার্থী অংশ নেয়নি। কেবল কয়েকটি মাদ্রাসায় দুই-একজন শিক্ষার্থীকে বসিয়ে পরীক্ষা নেওয়ার চেষ্টা চলছে।
জানা গেছে, কাগজে-কলমে এসব মাদ্রাসায় মোট ৯ হাজার ৫০০ জন শিক্ষার্থী দেখানো হয়েছে। কিন্তু মাঠপর্যায়ে তদন্তে দেখা গেছে, বেশিরভাগ মাদ্রাসায় একজন শিক্ষার্থীও নেই।
দেখা যায়, মাত্র দুইজন শিক্ষার্থী, আয়শা আক্তার জুই চতুর্থ শ্রেণি ও সিয়াম তৃতীয় শ্রেণি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। তবে তারা আসলে কুকুয়া গোজখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তাদের ধার করে এনে মাদ্রাসার বেঞ্চে বসিয়ে পরীক্ষা চালানো হচ্ছে।
অন্যদিকে মধ্য পাতাকাটা আমানদিয়া মাদ্রাসায় কোন শিক্ষার্থীই পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। ওই মাদ্রাসার প্রধান মাওলানা বশির আহম্মেদ বলেন, আমার মাদ্রাসায় কোনো শিক্ষার্থী নেই, তাই কেউ পরীক্ষায় অংশ নেয়নি।
কুতুবপুর ইসরাইলিয়া মাদ্রাসার প্রধান গোলাম কিবরিয়া বলেন, বেতনভাতা না পাওয়ায় কোনো মতে মাদ্রাসা চালিয়ে রাখছি। তবে কতজন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে-এ বিষয়ে তিনি কোনো জবাব দিতে পারেননি।
আমতলী উপজেলা স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতির সভাপতি মাওলানা আলাউদ্দিন বলেন, অনুদানভুক্ত পাঁচটি মাদ্রাসায় ছয় মাস ধরে বেতন-ভাতা বন্ধ। সরকার কীভাবে দেশ চালাচ্ছে, বুঝে উঠতে পারছি না।
আমতলী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জিয়াদুল হাসান বলেন, উপজেলায় পাঁচটি অনুদানপ্রাপ্ত স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা রয়েছে। সেখানে শিক্ষার্থী আছে কি না, আমি নিশ্চিত নই। তবে পাঁচটি ছাড়া বাকি মাদ্রাসাগুলো কাগজে-কলমে আছে, বাস্তবে নেই।