দীর্ঘ ৩৬ বছর পর অনুষ্ঠিত হচ্ছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচন, হল ও হোস্টেল সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনকে ঘিরে বুধবার সকাল থেকেই চবিতে ঈদের উৎসব বিরাজমান। শিক্ষার্থীরা দলে দলে শাটলে ও বাসে এসে সবুজের রাজ্য খ্যাত চবি ক্যাম্পাসে নামছেন। সকাল নয়টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে এখনো চলমান রয়েছে। ভোট প্রদানের পর শিক্ষার্থীরা স্মার্টফোন হাতে ছবি, ভিডিও নিয়ে উল্লাসে মেতে ওঠেছেন। তবে এসব আনন্দের অংশ হতে পারেনি ২৪২ জন ভোটার।
দীর্ঘ ৩৬ বছর পর অনুষ্ঠিত হচ্ছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচন এবং হল ও হোস্টেল সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনের কারণে বুধবার সকাল থেকেই চবি ক্যাম্পাসে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়ে। শাটল ট্রেন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে করে দলে দলে শিক্ষার্থীরা ছুটে আসেন সবুজে ঘেরা ক্যাম্পাসে।
সকাল ৯টা থেকে শুরু হওয়া ভোটগ্রহণ দুপুর পর্যন্ত উৎসবমুখর পরিবেশে চলতে থাকে। ভোট প্রদান শেষে শিক্ষার্থীরা স্মার্টফোনে ছবি ও ভিডিও ধারণ করে আনন্দ-উচ্ছ্বাস ভাগাভাগি করেন।
তবে এই আনন্দের অংশ হতে পারেননি ২৪২ জন শিক্ষার্থী, যারা বৈধ ছাত্র হয়েও ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।
চাকসু নির্বাচনে এবার ২৭ হাজার ৫০০ ভোটারের মধ্যে ২৪২ জন ভোটার রয়েছে পিএইচডি ও এমফিল গবেষক শিক্ষার্থী। যারা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ায় নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গেও তারা যুক্ত আছেন। এতে নৈতিকতার দিক থেকে ভোট প্রদান করতে পারবেন না তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক জানান, “চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ২৭ হাজার ৫০০ ভোটারের মধ্যে ২৪২ জন পিএইচডি ও এমফিল পর্যায়ের শিক্ষার্থী। নিয়ম অনুযায়ী তারাও এবার ভোটার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। ফলে এসব শিক্ষকদেরও ভোটার হিসেবে ধরা হয়েছে, যেহেতু তারা এখনো শিক্ষার্থী হিসেবে নিবন্ধিত।
তবে আমি নিজেও নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত রয়েছি। ভোটকেন্দ্রের বাইরে নিরাপত্তা, হোস্টেল, হল ও প্রবেশপথসহ বিভিন্ন পয়েন্টে শিক্ষকরা দায়িত্ব পালন করছেন। তাই আমি মনে করি, ভোটার তালিকায় নাম থাকলেও আমাদের ভোট প্রদান করা নৈতিক হবে না। এ কারণেই সংশ্লিষ্ট সবাই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে আমি বিশ্বাস করি।”
চলতি বছর এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় গজারিয়া উপজেলায় সবচেয়ে খারাপ ফলাফল করেছে বালুয়াকান্দি ডা.আব্দুল গাফফার স্কুল এন্ড কলেজ। ভয়াবহ ফলাফল বিপর্যয়ে পড়া এই প্রতিষ্ঠানটি থেকে পাশ করেছে মাত্র একজন শিক্ষার্থী।
খবর নিয়ে জানা যায়, বালুয়াকান্দিতে অবস্থিত ডা. আব্দুল গাফফার স্কুল এন্ড কলেজ থেকে চলতি বছর এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ১৭জন শিক্ষার্থী। প্রকাশিত ফলাফলে প্রতিষ্ঠানটি থেকে শুধুমাত্র একজন শিক্ষার্থী পাশ করেছে। পাসের হার মাত্র ৫.৮৮ শতাংশ। প্রতিষ্ঠানটির এমন ফলাফলে সমালোচনামুখর অভিভাবক শ্রেণি।
স্থানীয় বাসিন্দা সোলায়মান জানান, চলতি বছর ১৭জন শিক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলেও তাদের মধ্যে ১৪ জনই অনিয়মিত শিক্ষার্থী। নিয়মিত শিক্ষার্থীর সংখ্যা মাত্র ৩ জন। মাত্র ৪জন জনবল নিয়ে কোনরকমে কার্যক্রম চালাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। মানবিক বিভাগের অনিয়মিত শিক্ষার্থী ইয়াসিন ব্যতীত এই প্রতিষ্ঠানটি থেকে কেউ পাশ করতে পারেননি।
স্থানীয় বাসিন্দা হোসেন আলী বলেন, ' প্রতিষ্ঠানটির স্কুল শাখা অত্যন্ত ভালো। তবে কলেজ শাখা এমপিওভুক্ত নয় সেজন্য কলেজ পরিচালনা করার ক্ষেত্রে অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এসব সীমাবদ্ধতার সাথে লড়াই করে কোনো রকমের টিকে আছে প্রতিষ্ঠানটি। তবে শিক্ষার মান উন্নয়ন করতে না পারলে প্রতিষ্ঠানটি অস্তিত্ব সংকটে পড়বে'।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ বশির উল্লাহর মোবাইলে কল করা হলে তিনি বলেন, ' আমি এখন ব্যস্ত আছি এ বিষয় নিয়ে কয়েকদিন পরে আপনাদের সাথে কথা বলব'।
বিষয়টি সম্পর্কে গজারিয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটির কলেজ শাখা এমপিওভুক্ত নয় সেজন্য শিক্ষক ও শিক্ষার্থী স্বল্পতাসহ নানা সীমাবদ্ধতা রয়েছে। ফলাফল খারাপের বিষয়টি নিয়ে আমরা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের সাথে বসব’।
চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় দিনাজপুর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের অধীনে নীলফামারী জেলার ১০টি কলেজের কোনো শিক্ষার্থীই পাস করতে পারেনি। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ফলাফলে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মহা. তৌহিদুল ইসলাম।
তিনি জানান, বোর্ডের অধীনে নীলফামারীর ১০টি কলেজের ৪০ জন শিক্ষার্থীর কেউই উত্তীর্ণ হয়নি।
কলেজগুলো হলো, নীলফামারী সদর উপজেলার লক্ষ্মীচাপ সৃজনশীল কলেজের মানবিক বিভাগের ১ জন, সৈয়দপুর উপজেলার সাতপাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের মানবিক বিভাগের ১ জন, কিশোরগঞ্জ উপজেলার নয়নখাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের মানবিক বিভাগের ৮ জনের মধ্যে ৫ জন ফেল ও ৩ জন অনুপস্থিত, জলঢাকা উপজেলার বগুলাগাড়ী স্কুল অ্যান্ড কলেজের মানবিক বিভাগের ১৮ জনের মধ্যে ১৫ জন ফেল ও ৩ জন অনুপস্থিত, একই উপজেলার চেওড়াডাঙ্গী স্কুল অ্যান্ড কলেজের মানবিক বিভাগের ৯ জনের মধ্যে ৬ জন ফেল ও ৩ জন অনুপস্থিত, গোলমুন্ডা আদর্শ কলেজের মানবিক বিভাগের ৩ জন, ডিমলা উপজেলার জেলা পরিষদ স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের ১ জন ও মানবিক বিভাগের ১ জন,একই উপজেলার নাউতারা বালিকা স্কুল অ্যান্ড কলেজের মানবিক বিভাগের ৩ জন,ডিমলা সীমান্ত কলেজের মানবিক বিভাগের ২ জন এবং গয়াখড়িবাড়ি মহিলা কলেজের মানবিক বিভাগের ৩ জনের মধ্যে ২ জন ফেল ও ১ জন অনুপস্থিত।
নীলফামারী জেলা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর (২০২৫) জেলায় ৯৩টি কলেজের ১২ হাজার ১৮৯ জন শিক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। এর মধ্যে পাস করেছে ৭ হাজার ৫২৪ জন এবং জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯৮১ জন।
চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে এবারের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় (এইচএসসি) পাসের হার বিগত ৬ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। এবারের পাসের হার ৫২ দশমিক ৫৭ শতাংশ। যা গত বছরের তুলানায় ১৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ কম। গতবছর পাসের হার ছিল ৭০ দশমিক ৩২ শতাংশ।
এছাড়া এবার জিপিএ-৫ কমেছে অর্ধেকেরও বেশি। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৬ হাজার ৯৭ জন। যা গতবার পেয়েছিল ১০ হাজার ২৬৯ জন শিক্ষার্থী। ২০২০ সাল থেকে প্রতিবছর গড়ে এইচএসসি পরীক্ষায় পাসের হার কমেছে।
বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড মিলনায়তনে ফল ঘোষণা করেন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক পারভেজ সাজ্জাদ চৌধুরী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বোর্ডের চেয়ারম্যান ইলিয়াছ উদ্দিন আহাম্মদ এবং সচিব এ কে এম সামছু উদ্দিন আজাদ।
চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এবার পরীক্ষার্থী ছিলেন ১ লাখ ২ হাজার ৯৭০ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে পাস করেছেন ৫৩ হাজার ৫৬০ জন। ছাত্রদের পাসের হার ৪৮ দশমিক ৯৫ শতাংশ; ছাত্রীদের পাসের হার ৫৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ। এর মধ্যে চট্টগ্রাম নগরীতে পাসের হার ৭০ দশমিক ৯০ শতাংশ। জেলায় পাসের হার ৪৩ দশমিক ৬৩ শতাংশ।
এছাড়া তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে রাঙামাটিতে পাসের হার ৪১ দশমিক ২৪ শতাংশ, খাগড়াছড়িতে ৩৫ দশমিক ৫৩ এবং বান্দরবানে ৩৬ দশমিক ৩৮ শতাংশ। কক্সবাজার জেলায় পাসের হার ৪৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ। বিজ্ঞান বিভাগে পাসের হার সবচেয়ে বেশি ৭৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ। ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে পাসের হার ৫৫ দশমিক ৩০ শতাংশ ও মানবিক বিভাগে পাসের হার ৩৭ দশমিক শূন্য ৮০ শতাংশ।
চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর ড. পারভেজ সাজ্জাদ চৌধুরী ফলাফলের বিষয়ে বলেন, এবার মন্ত্রনালয়ের নির্দেশনা ছিল খাতার মূল্যায়ন যেন মেধার ভিত্তিতে হয়। শিক্ষার্থী খাতায় লিখে যে নম্বরটি পাবে, সেটাই যেন মারকিং করা হয়। অতি মূল্যায়নের সুযোগ ছিল না। আমি পরীক্ষার পর সব প্রধান নিরীক্ষকদেও ডেকে এটাই বুঝিয়েছিলাম; রুব্রিক্স পদ্ধতিতে যেন খাতা কাটা হয়। তাছাড়াও জুলাই আন্দোলনের জন্য শিক্ষার্থীদের পড়াশুনায় বিঘ্ন ঘটেছিল। যা সার্বিক ফলাফলে প্রভাব পড়েছে বলেন তিনি।
ঢাকা বিশ্বদ্যালয়ের আরবি বিভাগ থেকে মাস্টার্সের ফলাফলে ৩.৯৭ সিজিপিএ পেয়ে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অর্জন করলেন ইমরান হোসেন। একই সাথে অসামান্য সাফল্যের জন্য ডিনস অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন ইমরান হোসেন।
মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে ডিনস অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খানের হাত থেকে ইমরান হোসেন ডিনস অ্যাওয়ার্ড অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করেন।
ইমরান হোসেন গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার ডহরপাড়া গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে।
ইমরান হোসেন ঢাবির আররি বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী। স্নাতকে তিনি ৩.৮৫ সিজিপিএ পেয়ে প্রথম শ্রেণিতে পঞ্চম হন। এবার মাস্টার্সের ফলাফলেও তিনি ৩.৯৭ সিজিপিএ পেয়ে যৌথভাবে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়েছেন।
ইমরান হোসেন ২০১৬ সালে বলুহার ইসলামীয়া দাখিল মাদ্রাসা থেকে দাখিল ও ২০১৮ সালে ঢাকা মাদ্রাসা ই আলিয়া থেকে আলিম পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আরবি বিভাগে ভর্তি হন।
এছাড়া তিনি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া বাঁশবাড়িয়া মাদ্রাসা থেকে ২০০৯ সালে কুরআনের হিফজ সম্পন্ন করেন। এসময় গওহরডাঙ্গা আঞ্চলিক বোর্ড ১০ম স্থান অর্জণ করেন।
ঢাকার ফরিদাবাদ মাদ্রাসা থেকে দাওরা হাদিস সম্পন্ন করেন। এছাড়া ঢাকার মাদ্রাসাতুস সালমান থেকে মুফতি ডিগ্রি অর্জন করেন।
ইমরান হোসেন বলেন, ১৪ বছর আগে বাবা পক্ষাঘাতগ্রস্থ হয়ে পড়ায় ভেবেছিলাম লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাবে। তখন ছোট ভাই রেজোয়ান ইসলাম পরিবারের হাল ধরে আগলে রাখেন। পরিবারের সকলের সহযোগিতার জন্য আমার লেখাপড়া অব্যাহত থাকে এবং এই ফলাফল অর্জনে সক্ষম হই।
কোটালীপাড়া সাংবাদিক ফোরামের আহবায়ক মনিরুজ্জামান শেখ জুয়েল বলেন, একটি কৃষক পরিবার থেকে উঠে আসা ইমরান হোসেনের এই ফলাফল সত্যিই আমাদের জন্য গর্বের। ইমরান হোসেন কোটালীপাড়ার মুখ উজ্জ্বল করেছে। পরবর্তী প্রজন্ম ইমরান হোসেনের এই ফলাফলে অনুপ্রাণিত হবে।
টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলায় এবার এইচএসসি পরীক্ষায় ফলাফল বিপর্যয় ঘটেছে। হাদিরা-ভাদুড়িচর কলেজ ও নারুচি স্কুল এন্ড কলেজের কারিগরি শাখায় একজনও পাস করেনি। এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ঢাকা বোর্ডের পাশের হার ৬৪.৬২%, কিন্তু গোপালপুর উপজেলায় এ হার আরো কম। জিপিএ-৫ পেয়েছেন জেনারেল শাখায় মাত্র ৩ জন ও কারিগরি শাখায় ১জন। অকৃতকার্য হন ৬১২জন। গোপালপুর সরকারি কলেজে জেনারেল শাখায় পাস ২৪৮, ফেল ২৭৫ ও কারিগরি শাখায় পাস ১৩৭ ফেল জন। খন্দকার ফজলুল হক কলেজে জেনারেল শাখায় পাস ৩৯, ফেল ৩১ ও কারিগরি শাখায় পাস ২৫, ফেল ৪০ জন।
নারুচি স্কুল এন্ড কলেজের কারিগরি শাখায় ৬৯ পরীক্ষার্থীর সবাই ফেল, জেনারেল শাখায় পাস ১২ ও ফেল ৫৭ জন। হেমনগর ডিগ্রি কলেজে জেনারেল শাখায় ২১৬ পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস ৬৭ জন এবং কারিগরি শাখায় পাস ৩৪ ও ফেল ৫৫ জন।
মেহেরুন্নেসা মহিলা কলেজে জেনারেল শাখায় ১৯৩ জনের মধ্যে পাস ১০৪ জন এবং কারিগরি শাখায় পাস ২০, ফেল ১৯জন। খন্দকার আসাদুজ্জামান একাডেমির জেনারেল শাখায় ১ জনের মধ্যে ১ জন পাস এবং কারিগরি শাখায় পাস ৮, ফেল ৫৫ জন। শিমলা পাবলিক মাধ্যমিক উচ্চ বিদ্যালয়ে ২ জনে ১জন পাস। হাদিরা-ভাদুড়িচর কলেজে জেনারেল শাখায় ১২ শিক্ষার্থীর কেউ পাস করেনি এবং কারিগরি শাখায় ৭জন সবাই ফেল। গোপালপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার নজরুল ইসলাম ফলাফল বিপর্যয়ের জন্য মোবাইল আসক্তিকে দায়ী করেন।
বিপর্যস্ত প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ক ব্যবস্থা নিবেন জানতে চাইলে বলেন, আমাদের কিছু করনীয় নেই।
গোপালপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. তুহিন হোসেন জানান, গোপালপুর সরকারি, বেসরকারি সব কলেজে ঠিকমতো ক্লাস হয়না। শিক্ষকরা নিয়মিত কলেজে আসেন না। এজন্য ফলাফল বিপর্যয় ঘটে।
উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে বৃহস্পতিবার। এবার নওগাঁ জেলায় ফলাফল কিছুটা হতাশাজনক। গতবারের তুলনায় কমেছে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা এবং সামগ্রিক পাসের হার।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এবছর জেলার ৮৬টি কলেজ থেকে মোট ১৪ হাজার ৫৭৮ জন শিক্ষার্থী এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশ নেয়। এর মধ্যে ৪৩৯ জন পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিলেন। সবচেয়ে হতাশাজনক দিক হলো- জেলার পাঁচটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কেউই উত্তীর্ণ হতে পারেনি।
ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, বদলগাছী উপজেলার বালুভরা আর.বি. হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের চারজন পরীক্ষার্থীর সবাই ফেল করেছে। মান্দা উপজেলার দুটি প্রতিষ্ঠান- মান্দা এস.সি. পাইলট স্কুল অ্যান্ড কলেজের নয়জন পরীক্ষার্থী এবং ভারশো হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের একমাত্র পরীক্ষার্থীও উত্তীর্ণ হতে পারেনি।
এছাড়া আত্রাই উপজেলার সাহেবগঞ্জ টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজের চারজন পরীক্ষার্থীর মধ্যে দুইজন অনুপস্থিত ছিলেন, আর উপস্থিত দুইজনই ফেল করেছেন। নিয়ামতপুর উপজেলার শাংসইল আদিবাসী স্কুল অ্যান্ড কলেজের ২৩ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে তিনজন অনুপস্থিত, আর বাকি ২০ জনই ফেল করেছেন।
জেলা শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মো. শাহাদৎ হোসেন বলেন, এসব প্রতিষ্ঠানের ফলাফল গভীরভাবে বিশ্লেষণ করা হবে এবং শিক্ষার মান উন্নয়নে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হবে। তারা বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠানে ধারাবাহিকভাবে খারাপ ফল হচ্ছে, সেখানে শিক্ষকদের উপস্থিতি, পাঠদানের মান ও শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার পরিবেশ নিয়ে তদন্ত করা হবে।
দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের অধীনে অনুষ্ঠিত ২০২৫ সালের এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। এইচএসসি পরীক্ষায় গড় পাশের হার ৫৭ দশমিক ৪৯ শতাংশ। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় দিনাজপুর শিক্ষাবোর্ড মিলনায়তনে সাংবাদিকদের নিকট ফলাফল হস্তান্তর করেন শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মহাঃ তৌহিদুল ইসলাম।
শিক্ষা বোর্ডের প্রফেসর মহা. তৌহিদুল ইসলাম জানান, ২০২৫ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় ১ লাখ ৮ হাজার ৬৫৯ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে অংশগ্রহন করে ১ লাখ ৫ হাজার ৮৯১ জন। এদের মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ৬০ হাজার ৮৮২ জন পরীক্ষার্থী। গড় পাশের হার ৫৭ দশমিক ৪৯ শতাংশ। জিপিএ ৫ পেয়েছে ৬ হাজার ২৬০ জন। পাশের হার জিপিএ ৫ প্রাপ্তদের মধ্যে মেয়েরা এগিয়ে রয়েছে।
উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে জিপিএ ৫ পেয়েছে ৬ হাজার ২৬০ জন। জিপিএ ৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্র ২ হাজার ৭৭৪ জন ও ছাত্রী ৩ হাজার ৪৮৬ জন। দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মহা. তৌহিদুল ইসলাম আরো জানান, ২০২৫ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় শতভাগ অকৃতকার্য কলেজের সংখ্যা ৪৩টি ও
শতভাগ পাসকৃত কলেজের সংখ্যা ১১টি।
তিনি জানান, এবারে ইংরেজিতে সবচেয়ে বেশী পরীক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছে। এ ব্যাপারে শিক্ষক ডেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া শতভাগ অকৃতকার্য হওয়া কলেজগুলোর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান দিনাজপুর শিক্ষাবোর্ডের প্রফেসর তৌহিদুল ইসলাম।
ফলাফল ঘোষণার সময় দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের সচিব নূর মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মীর সাজ্জাদ আলী, সহকারি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মোঃ রেজাউল করিম চৌধুরী, শিক্ষাবোর্ডের কর্মচারীদের মধ্যে মো. মুজাহিদুল ইসলামসহ বোর্ডের অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন।
এইচএসসি পরীক্ষায় একটি বিষয়ে অকৃতকার্য হওয়াতে আত্মহত্যা করেছে নুসরাত জাহান নাজনীন (১৮) নামে এক শিক্ষার্থী। বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) সকালে বরিশাল নগরীর বাংলা বাজার এলাকার ভাড়া বাসায় এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে।
নুসরাত বরগুনার আমতলী উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের উত্তর রাওঘা গ্রামের মৃত বশির মৃধার মেঝ মেয়ে। তিনি বরিশালের বাংলা বাজার এলাকায় বড় বোন রাহাত আনোয়ারের (একজন নার্স) সঙ্গে ভাড়া বাসায় থাকতেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. আশিষ কুমার সাহা। তিনি বলেন, দুপুর ১২টার দিকে নুসরাতকে হাসপাতালে আনা হলে আমরা তাকে মৃত ঘোষণা করি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, সে আত্মহত্যা করেছে।
বরিশাল সদর মডেল থানার ওসি (তদন্ত) মো. মিজানুর রহমান বলেন, প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, গলায় রশি পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছেন নুসরাত। সুরতহাল শেষে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য শেরে বাংলা মেডিকেল (শেবাচিম ) হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, নুসরাত বরিশাল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। বৃহস্পতিবার এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর তিনি গণিতের এমসিকিউ অংশে অকৃতকার্য হন। এ ঘটনায় তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে আত্মহত্যা করেন বলে জানান।
সহপাঠীরা জানান, নুসরাত মেধাবী ছাত্রী ছিলেন, তার এমন মৃত্যু কেউই মেনে নিতে পারছেন না।
বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. ইউনুস আলী সিদ্দিকী বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। নুসরাত আসলে ভালো ফল করেছে, শুধু একটি বিষয়ে (হাফ-ইয়ারলি মেথ) এমসিকিউ অংশে অকৃতকার্য হয়েছিল। রেজাল্ট পুনঃনিরীক্ষণের সুযোগ ছিল। এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া খুবই বেদনাদায়ক।
এবারের উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষায় যশোর বোর্ডের অধীন ৫টি কলেজ থেকে শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করেছেন। অন্যদিকে ২০টি কলেজ থেকে কোনো শিক্ষার্থীই পাস করতে পারেননি।
বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় যশোর শিক্ষা বোর্ড মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে ফলাফল ঘোষণা করেন বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আসমা বেগম।
যশোর শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ জানায়, শতভাগ ফেল করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো হলো মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার বিএন কলেজ, খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার মডেল কলেজ, খুলনা সদরের হোম ইকোনোমিক্স কলেজ, পাইকগাছার কপিলমুনি সহচারী বিদ্যা মন্দির, তেরখানা উপজেলার আদর্শ শিক্ষা নিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মাগুরা সদর উপজেলার বুজরুক শ্রীকুণ্ডি কলেজ, রাওতারা এইচএন সেকেন্ডারি স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মোহাম্মদপুর উপজেলার কানাইনগর টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস কলেজ, বিরেন সিকদার আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ উপজেলার সিংজোর গোপালপুর কলেজ, সাতক্ষীরা সদরের ইসলামীয়া মহিলা কলেজ, আখড়াখোলা আদর্শ কলেজ, সাতক্ষীরা কমার্স কলেজ, যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বাঁকড়া হাজিরবাগ আইডিয়াল গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ, চৌগাছা উপজেলার মারুয়া ইউসুফ খান স্কুল অ্যান্ড কলেজ, অভয়নগর উপজেলার শ্রীধরপুর ইউনিয়ন কলেজ, কেশবপুর উপজেলার বুরুলী স্কুল অ্যান্ড কলেজ, কুষ্টিয়া সদরের আলহাজ আব্দুল গণি কলেজ, ঝিনাইদহ সদরের মুনুরিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার মাকরাইল করিম খালেক সোলায়মান ইনস্টিটিউট।
এর মধ্যে বিএন কলেজ থেকে ১১ জন, মডেল কলেজ খুলনা থেকে একজন, খুলনা হোম ইকোনোমিক্স কলেজ থেকে একজন, কপিলমুনি সহচারী বিদ্যা মন্দির থেকে ৫ জন, তেরখাদা আদর্শ শিক্ষা নিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ৮ জন, মাগুরার বুজরুক শ্রীকুণ্ডি কলেজ থেকে ৮ জন, রাওতারা এইচএন সেকেন্ডারি স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ৪ জন, মোহাম্মদপুর কানাইনগর টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস কলেজ থেকে ৯ জন, মোহাম্মদপুর বিরেন সিকদার আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ১১ জন, বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ সিংজোর গোপালপুর কলেজ থেকে ১৮ জন, সাতক্ষীরা ইসলামীয়া মহিলা কলেজ থেকে ৯ জন, আখড়াখোলা আদর্শ কলেজ থেকে ৯ জন, সাতক্ষীরা কমার্স কলেজ থেকে ২ জন, যশোরের বাঁকড়া হাজিরবাগ আইডিয়াল গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ৭ জন, চৌগাছা মারুয়া ইউসুফ খান স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ২৬ জন, অভয়নগর শ্রীধরপুর ইউনিয়ন কলেজ থেকে ৭ জন, কেশবপুর বুরুলি স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ১০ জন, কুষ্টিয়ার আলহাজ আব্দুল গণি কলেজ থেকে ৪ জন, ঝিনাইদহের মুনুরিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ১৫ জন, নড়াইলের লোহাগড়া মাকরাইল করিম খালেক সুলাইমান ইনস্টিটিউট থেকে ৩৫ জন শিক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন। এসব পরীক্ষার্থীর সবাই অকৃতকার্য হয়েছেন।
যশোর শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক আব্দুল মতিন বলেন, জুলাই আন্দোলনে রাজপথে থাকায় শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতিতে কিছু ঘাটতি ছিল। তাছাড়া এবার অসুস্থ প্রতিযোগিতা থেকে বের হয়ে নকলমুক্ত পরিবেশে পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়েছে এবং পরীক্ষার্থীদের খাতার যথার্থ মূল্যায়ণ হয়েছে। সে কারণে পাসের হার কমেছে বলে তিনি মনে করেন।
পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বলেন, যেসব কলেজ থেকে কোনো শিক্ষার্থীই পাস করতে পারেননি, সেসব কলেজের বিষয়ে তদন্ত কমিটি করে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
যশোর শিক্ষা বোর্ডের তথ্য মতে, এ বছর এইচএসসি পরীক্ষায় এক লাখ ১২ হাজার ৫৭৪ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। যার মধ্যে পাস করেছেন ৫৬ হাজার ৫০৯ জন। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পাস করেছেন ১৫ হাজার ৯৩১ পরীক্ষার্থী। মানবিক বিভাগ থেকে ৩৪ হাজার তিনজন ও বাণিজ্য বিভাগ থেকে ৬ হাজার ৬৭৫ জন পরীক্ষার্থী পাস করেছেন। জিপিএ-৫ পাওয়াদের মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগে ছেলে এক হাজার ৭৭২ ও মেয়ে এক হাজার ৬০৯, মানবিক বিভাগে ছেলে ৫৪৪ জন ও মেয়ে এক হাজার ৬৩৫ এবং বাণিজ্য বিভাগে ছেলে ১৬৪ জন ও মেয়ে ২৭১ জন।
গত বছরের তুলনায় এ বছর পাসের হার ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তির সংখ্যা কমেছে। গত বছর গড় পাসের হার ছিল ৬৪.২৮ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন ৯ হাজার ৭৪৯ জন। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫ হাজার ৯৯৫ জন।
আড়ম্বরপূর্ণ পরিবেশে কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডের মিলনায়তনে প্রকাশ করা হয়েছে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল। গেলো ১৫ বছরের তুলনায় এ বছর ফলাফলের গড় নিম্নমুখী। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. শামছুল ইসলাম আনুষ্ঠানিকভাবে জানান চলতি বছর পাসের হার ৪৮ দশমিক ৮৬ শতাংশ। পাস এবং জিপিএ-৫ এর হারে ছেলেদের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে মেয়েরা। জিপিএ- ৫ পেয়েছে ২ হাজার ৭০৭ জন। এরমধ্যে মেয়ে পরীক্ষার্থী জিপিএ- ৫ পেয়েছে ১ হাজার ৭৪৯, ছেলেরা জিপিএ- ৫ পেয়েছে ৯৫৮ জন।
প্রফেসর শামছুল আলম আরো জানান, কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ড থেকে ৯৯ হাজার ৫৭৬ জন পরীক্ষা দেয়। এদের মধ্যে মেয়ে পরীক্ষার্থী ৫৭ হাজার ৫২৪ জন এবং ছেলে পরীক্ষার্থী ৪২ হাজার ৫২। পাশ করে মোট ৪৮ হাজার ৬৫৭ জন। মেয়ে পরীক্ষার্থী পাশ করে ৩০ হাজার ৭০১, ছেলে পরীক্ষার্থী পাস করে ১৭ হাজার ৯৫৬ জন। মেয়েদের পাশের হার ৫৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ, ছেলেদের পাশ ৪২ দশমিক ৭০ শতাংশ।
কুমিল্লা বোর্ডের অধিভুক্ত ছয় জেলার মধ্যে সবেচেয়ে বেশি ফল খারাপ করেছে নোয়াখালী জেলা। এ জেলায় পাসের হার ৪০ দশমিক ৪৩ শতাংশ। পাসের হার সর্বোচ্চ কুমিলল্লা জেলায়, হার ৫২ দশমিক ১৫ শতাংশ। এবার শূন্য শতাংশ পাস করেছে নয়টি প্রতিষ্ঠানে, শতভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠান পাঁচটি। শূন্যভাগ পাস করা নয়টি প্রতিষ্ঠানের ছয়টিতেই শিক্ষার্থী সংখ্যা দশের নিচে।
ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, এ বছর কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডে বেশি অকৃতকার্য হয়েছে ইংরেজি ও আইসিটিতে। এছাড়াও উচ্চতর গণিতেও পাসের হার কম। এছাড়া ইংরেজিতে পাসের হার ৬৫ দশমিক ২৮ শতাংশ।
কেন এই তিন বিষয়ে অকৃতকার্য শিক্ষার্থীর বেশি সে প্রশ্নই ছিলো দিনজুড়ে। কুমিল্লা জেলার কয়েকটি কলেজের আইসিটি বিষয়ের শিক্ষকরা জানান, বেশির ভাগ কলেজে আইসিটি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ শিক্ষক নেই। যে কারনে হাতে কলমে শিক্ষা দেয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছে শিক্ষার্থীরা। নাম না প্রকাশ করার শর্তে এক শিক্ষক বলেন, আইসটি বিষয়টি যুক্ত করার আগে এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ শিক্ষক নিয়োগ দেযা হয়নি। ফলে জোড়াতালি দিয়েই চলে ক্লাশ। আর তাতেই আইসিটি বিষয়ে অকৃতকার্য বেশি।
গেলো কয়েক বছরের তুলনায় অকৃতকার্য শিক্ষার্থীর সংখ্যা এত বেশি এ বিষয়ে কথা বলেন, কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর রুনা নাছরীন। তিনি জানান, এছাড়াও এবার ১৬২টি ভেন্যুকেন্দ্র বাতিল করা হয়েছে। যার ফলে এবার আর ভ্যানুর সুবিধা নিতে পারেনি কলেজগুলো। এছাড়াও নকলমুক্ত পরিবেশে পরীক্ষা গ্রহণ, সঠিকভাবে উত্তরপত্র মূল্যায়ন, উত্তরপত্র মূর্যায়নে কোন প্রকার চাপ ছিলো না। এসব কারণে ফলাফল নিম্নগামী হয়েছে।
এদিকে টানা ১৪ বার বোর্ড সেরা ফলাফল করার গৌরব অর্জণ করা সোনার বাংলা কলেজের অধ্যক্ষ আবু ছালেক মো. সেলিম রেজা সৌরভ জানান, বছরজুড়ে নিয়মিত পাড়াশোনা, নমুনা পরীক্ষা নেয়া হলে যে কোন পরিবেশে ফলাফল ভালো হয়। আমাদের কেন্দ্র ভ্যানু পরিবর্তন করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের ফলাফল ভালো ছিলো। এছাড়াও সোনার বাংলা কলেজে রয়েছে আইসিটি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ শিক্ষক। সব মিলিয়ে ভালো ফলাফলে বছরজুড়ে লেখাপড়া, শিক্ষার্থীদের মনিটরিং করা, পরীক্ষা নিলে ফলাফল ভালো হবেই। এবং আমরা তাই করি।
ঐতিহ্যবাহী ঝালকাঠি এনএস কামিল (নেছারাবাদ) মাদরাসায় বিগত বছরের সাফল্যের ধারাবাহিকতায় এবারও বজায় রয়েছে। আলিম পরীক্ষার ফলাফলে মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডে তৃতীয় স্থান দখল করে শীর্ষস্থানে রয়েছে ঝালকাঠির সনামধন্য এই বিদ্যাপিঠ।
এবারের ফলাফলে এই মাদরাসায় পাসের হার শতকরা ৯৮.৫০ শতাংশ। এবছর এই প্রতিষ্ঠান থেকে আলিম আলিম পরীক্ষায় বিজ্ঞান ও সাধারণ বিভাগে মোট ২৬৬ জন ছাত্র অংশগ্রহণ করে ২৬২ জন কৃতকার্য হয়েছে। উত্তীর্ণদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১০৭ জন। এছাড়া ১০৩ জন এ গ্রেড সহ বাকীরা সফলতার সাথে উত্তীর্ণ হয়েছে।
মাদরাসার ভাইস প্রিসিপ্যাল আব্দুল কাদের বলেন, 'যুগশ্রেষ্ঠ দার্শনিক হযরত কায়েদ সাহেব হুজুর ১৯৫৬ সালে মাদরাসাটি প্রতিষ্ঠা করে সময়ের ব্যবধানে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার ছাত্রের পদচারণায় মুখরিত এ মাদরাসাটি অনার্স-মাস্টার্সসহ দাখিল, আলিম, ফাজিল ও কামিল পরীক্ষার ফলাফলে শীর্ষ স্থান অর্জনকারী দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিগণিত হয়েছে।
পরীক্ষার ফলাফলে সন্তুষ্ট প্রকাশ করে আল্লাহর শুকরিয়া জ্ঞাপন করেন মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা গাজী মুহাম্মদ শহিদুল ইসলাম।
প্রতিষ্ঠানটির সংশ্লিষ্টরা এ সাফল্যের কারণ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, মুসলিম ঐক্যের প্রতীক আমীরুল মুছলিহীন হযরত মাওলানা মুহাম্মদ খলিলুর রহমান নেছারাবাদী হুজুরের পৃষ্ঠপোষকতা ও দলীয় রাজনীতিমুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হওয়ায় পড়ালেখায় কোনো সমস্যা হয় না। পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের জন্য সেমিস্টার পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেওয়া, ক্লাস টেস্ট, দুর্বল ছাত্রদের জন্য আলাদা ক্লাস, শিক্ষা সহায়ক কার্যক্রমের সফল বাস্তবায়ন, আবাসিক ছাত্রদের ঘণ্টাওয়ারি তদারকি, টিউটর শিক্ষকের ব্যবস্থা থাকা, সময়োপযোগী ও নিয়মিত অভিভাবক সম্মেলনের ব্যবস্থা করা হয়।
২০২৫ সালের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ড মিলিয়ে গড় পাসের হার ৫৮.৮৩ শতাংশ। এবার গত বছরের তুলনায় পাসের হার কমেছে ১৮ দশমিক ৯৫ শতাংশ। এ বছর জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৬৯ হাজার ৯৭ জন শিক্ষার্থী। সে হিসেবে এবার জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে ৭৬ হাজার ৮১৪ জন।
বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) সকাল ১০টায় সব শিক্ষা বোর্ড থেকে একযোগে এইচএসির ফলাফল প্রকাশ করা হয়।
প্রকাশিত ফলাফল বিশ্লেষণে ঢাকার সেরা ১০ কলেজের মধ্যে ১ম স্থানে রয়েছে রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ। এখানে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ১৬৯৩ জন। পাস করেছে ১৬৯২ জন। পাসের হার ৯৯.৯৮ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১২১৮ জন।
২য় স্থানে রয়েছে মাইলস্টোন কলেজ। প্রতিষ্ঠানটি থেকে পরীক্ষার্থী ছিল ২৯৮১ জন, পাস করেছে ২৯৭৬ জন। পাসের হার ৯৯.৮৩ শতাংশ এবং জিপিএ-৫ পেয়েছে ৮৫১ জন।
৩য় স্থানে রয়েছে ঢাকা রেসিডিয়ান্সশিল মডেল কলেজে, পরীক্ষার্থী ছিল ১০১৬ জন। পাসের হার ৯৯.৮০ শতাংশ। আর প্রতিষ্ঠানটি মোট জিপিএ-৫ পেয়েছে ৮৫১ জন।
৪র্থ স্থানে নটরডেম কলেজ। এখানে পরীক্ষার্থী ছিল ৩২৩৯ জন এবং পাস করেছে ৩২২৬ জন। পাসের হার ৯৯.৬০ শতাংশ এবং জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৪৫৪ জন।
৫ম স্থানে রয়েছে শহীদ বীর উত্তম এল টি আনোয়ার গালর্স কলেজ। এখানে পরীক্ষার্থী ছিল ১২৮৬ জন, পাস করেছে ১২৭৯ জন। পাসের হার ৯৯.৪৬ শতাংশ এবং জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩৭৭ জন।
৬ষ্ঠ স্থানে রয়েছে ঢাকা কলেজ। প্রতিষ্ঠানটিতে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ১৪৪২ জন। পাস করেছে ১২১৭ জন এবং পাসের হার ৯৮.৭৭ শতাংশ। এছাড়া ৮৫৭ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে।
৭ম স্থানে রয়েছে ঢাকা সিটি কলেজ। এখানে পরীক্ষার্থী ৩৪৪১ জন, পাস করেছে ৩৩৬৯ জন। পাসের হার ৯৭.৯১ শতাংশ।
৮ম স্থানে রয়েছে আদমজী ক্যান্টমেন্ট কলেজ। এখানে পরীক্ষার্থী ছিল ২৩৬৭ জন, পাস করেছে ২৩১৫ জন। পাসের হার ৯৭.৮ শতাংশ এবং জিপিএ-৫ পেয়েছে ১২২৯ জন।
৯ম স্থানে রয়েছে বিএএফ শাহিন কলেজ (কুর্মিটোলা)। প্রতিষ্ঠানটিতে পরীক্ষার্থী ছিল ১১৬৬ জন, পাস করেছে ১১৪০ জন। পাসের হার ৯৭.৭৭ এবং জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৮৪ জন।
১০ স্থানে রয়েছে বীর শ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজ। এখানে পরীক্ষার্থী ছিল ১৭৭৮ জন যার মধ্যে পাস করেছে ১৭৭১ জন। প্রতিষ্ঠানটির পাসের হার ৯৭ .৬০ শতাংশ এবং জিপিএ-৫ পেয়ছে ৮৭৪ জন।
২০২৫ সালের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ড মিলিয়ে গড় পাসের হার ৫৮.৮৩ শতাংশ। এবার গত বছরের তুলনায় পাসের হার কমেছে ১৮ দশমিক ৯৫ শতাংশ। এ বছর জিপিএ৫ পেয়েছেন ৬৯ হাজার ৯৭ জন শিক্ষার্থী। সে হিসাবে এবার জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে ৭৬ হাজার ৮১৪ জন।
এবারের ফলাফলে বিশ্লেষণে দেখা যায়, এইচএসসি পরীক্ষায় এবার শিক্ষার্থীর তিন বিষয়ে বেশি ফেল করেছেন। এইচএসসি পরীক্ষায় এবার বেশি ফেল করেছেন হিসাব বিজ্ঞান বিষয়ে। এবার এই বিষয়ে ফেল করেছেন ৪১ দশমিক ৪৬ শতাংশ। আর ইংরেজিতে ফেল করেছেন ৩৮ দশমিক ৮ শতাংশ। আইসিটিতে ২৭ দশমিক ২৮ শতাংশ শিক্ষার্থী।
বুধবার (১৬ অক্টোবর) মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, ঢাকার সভাকক্ষে বাংলাদেশ আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি ও ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. খন্দোকার এহসানুল কবির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ফলাফল বিশ্লেষণে আরও দেখা যায়, এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফলে এ বছর বরাবরই এগিয়ে রয়েছেন ছাত্রীরা। মোট পাস এবং জিপিএ-৫ এর দিক দিয়ে এগিয়ে রয়েছেন তারা। ১১টি শিক্ষা বোর্ডে মোট ছাত্রের চেয়ে ৮৭ হাজার ৮১৪ জন বেশি ছাত্রী উত্তীর্ণ হয়েছেন। ছাত্রের চেয়ে ৫ হাজার ৯৭ জন বেশি ছাত্রী জিপিএ-৫ পেয়েছেন। ১২ লাখ ৩৫ হাজার ৬৬১ জন অংশ নেন। উত্তীর্ণ হন ৭ লাখ ২৬ হাজার ৯৬০ জন। ছাত্র উত্তীর্ণ হয়েছেন ৩ লাখ ৩৩ হাজার ৮৬৪ জন। ছাত্রী উত্তীর্ণ হয়েছেন ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৯৬ জন। ছাত্রদের পাসের হার ৫৪ দশমিক ৬০ শতাংশ। ছাত্রীদের পাসের হার ৬২ দশমিক ৯৭ শতাংশ। ৩২ হাজার ৫৩ জন ছাত্র জিপিএ-৫ পেয়ছেন, আর ৩৭ হাজার ৪৪ জন ছাত্রী জিপিএ-৫ পেয়ছেন।