মনোবিদ-সমাজবিজ্ঞানীরা প্রায়ই বলে থাকেন, স্বামী-স্ত্রীর কলহ বা বিচ্ছেদের সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী হয় তাদের সন্তানেরা। বিশেষ করে সন্তান যদি হয় শিশু। এমনই এক পরিণতির শিকার জামালপুরের শিশু সুমির। বিচ্ছেদের পর আলাদা সংসার করছেন তার মা-বাবা। সুমির থাকছিল তার নানির কাছে। কিন্তু এখন নানিও রাখছেন না শিশুটিকে। শেষ পর্যন্ত তার দায়িত্ব নিয়েছেন জামালপুর পৌরসভার মেয়র ছানুয়ার হোসেন ছানু।
জামালপুর শহরের পশ্চিম ফুলবাড়িয়া এলাকায় নানার বাড়ি থেকে গত ১১ জানুয়ারি ‘হারিয়ে যায়’ সুমির। পরে তাকে খুঁজে পান শহরের ভ্যানগাড়ি চালক জুয়েল মিয়া। তিনি শিশু সুমিরকে ৯ দিন তার কাছে রেখে ঠিকানা খোঁজ করেন। এরপর মঙ্গলবার সকালে নানি ফরিদা বেওয়ার কাছে সুমিরকে ফিরিয়ে দিতে যান। কিন্তু ‘অভাবের সংসারে’ নাতিকে নিতে অস্বীকার করেন ফরিদা।
এ বিষয়ে ভ্যানগাড়ি চালক জুয়েল মিয়া দৈনিক বাংলাকে বলেন, অনেক খোঁজাখুজির পর নানা-নানির সন্ধান পেয়ে তাদের কাছে দিতে গেলেও তারা নিতে অস্বীকার করেন।
জুয়েল মিয়ার ভাষ্য, তার কাছে শিশুটির নানি ফরিদা বেওয়া বলেন, সুমিরের বাবা আক্কাস অটোবাইক চালক। মায়ের নাম সুফিয়া। তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ হয় বেশ কয়েক বছর আগে। আক্কাস আলাদা সংসার পাতেন এবং কোনোদিন সন্তানের খোঁজ নেননি। সুফিয়াকেও আরেক জায়গায় বিয়ে দেয়া হয়। এরপর থেকে আমি সুমিরকে লালন-পালন করে আসছিলাম।
শিশুটিকে ঘরে ফেরত না নেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, অভাবের সংসারে নিজের খাওনই জোগাড় করতে পারি না, নাতিকে পালবো ক্যামনে?
আক্কাসের ঠিকানা বা পরিচয় জানতে চাইলেও ফরিদা বেওয়ার কাছে নেই বলে জানান।
পরে ভ্যানচালক জুয়েল মিয়া শিশুটিকে নিয়ে পৌর মেয়র ছানুয়ার হোসেন ছানুর কাছে যান। শিশু সুমিরের এই পরিণতি শুনে মর্মাহত হন মেয়র। ছানু নিজেই শিশুটির দায়িত্ব নেন।
এ বিষয়ে মানবাধিকারকর্মী জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, শিশুটির দায়িত্ব নিয়ে মেয়র ছানুয়ার হোসেন ছানু মানবতার উজ্জ্বল নজির গড়েছেন। মেয়রের মতো এভাবে দায়িত্বশীল লোকজন যদি কুড়িয়ে পাওয়া বা হারিয়ে যাওয়া পথশিশুদের পাশে দাঁড়ান, সেটা সুন্দর সমাজ বিনির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
এ বিষয়ে জামালপুর পৌরসভার মেয়র ছানুয়ার হোসেন ছানু দৈনিক বাংলাকে বলেন, আমি সুমিরের জীবন কাহিনি শুনে দায়িত্ব নেয়ার সিদ্ধান্ত নেই। তাকে লেখাপড়া শিখিয়ে মানবিক মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবো। একদিন বড় হয়ে শিশু সুমিরই অবহেলিত শিশুদের পাশে দাঁড়াবে, সামাজিক ও মানবিক কাজ করে সমাজে আলো ছড়াবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
বিশ্বের দীর্ঘতম কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টর বালিয়াড়িতে দাঁড়িয়ে আছে এক বৃহদাকার দৈত্য! আকস্মিক দেখায় অনেকে বিভ্রম হতে পারে- এটা আসল নাকি নকল দৈত্য! পরিবেশ দূষণকারী ক্ষতিকর প্লাস্টিক বর্জ্য দিয়ে তৈরি করা হয়েছে কৃত্রিম এই দৈত্যটি। দৈত্যটি নজর কেড়েছে পর্যটকদের। মূলত পরিবেশে প্লাস্টিক বর্জ্যর দূষণ সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করতে প্রতীকী হিসেবে এ প্লাস্টিক দৈত্যটি তৈরি করা হয়েছে।
গত বুধবার সন্ধ্যায় পর্যটকসহ জনসাধারণকে প্রদর্শনের জন্য এই কৃত্রিম দৈত্যটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক মো. আ. মান্নান এটির উন্মোচন করেন। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জনাব মোহাম্মদ শহীদুল আলম, বিচ ম্যাজিস্ট্রেট আজিম উদ্দিন, বিদ্যানন্দের গভর্নিং বডির সদস্য জামাল উদ্দিন প্রমুখ।
জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন এই প্লাস্টিক বর্জ্যের দৈত্যটি তৈরি করেছে। ইতোমধ্যে বিগত কয়েক বছর ধরে পর্যটন মৌসুমে এই প্লাস্টিক দানবটি তৈরি করেছে সংস্থাটি।
বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তারা জানান, সমুদ্রে প্লাস্টিক দূষণের ভয়াবহতা সমন্ধে মানুষকে সচেতন করতে সমুদ্র সৈকতে তৈরি করা হয়েছে প্লাস্টিকের দৈত্যটি। যে দানবটি রক্ত-মাংসহীন প্রতীকী হলেও যার হিংস্র থাবায় প্রতিনিয়ত ক্ষত-বিক্ষত মানবদেহ, প্রকৃতি ও প্রাণবৈচিত্র্য। এই দানব প্লাস্টিক দূষণে প্রাণ-প্রকৃতির বিরূপতার সাক্ষ্য দিচ্ছে। দানবটির দেহে বয়ে বেড়ানো প্লাস্টিক দূষণে প্রাণ-প্রকৃতির ক্ষতির মাত্রা দেখানো এবং পরিবেশে ক্ষতির এই বোধটি মানুষের মনে জাগাতে এই উদ্যোগ। এটি প্রদর্শনের সাথে আগামী তিন মাসব্যাপী একটা চিত্র প্রদর্শনীও থাকবে।
দৈত্যটির অবয়বে দেখানো হয়েছে, দেখা গেছে, একটা অতি বিশাল দৈত্য পৃথিবীকে দুভাগ করে ফেলেছে। পৃথিবীর বুক চিরে প্লাস্টিক বের হয়ে যাচ্ছে। বোঝা যাচ্ছে, পৃথিবী এক বুক প্লাস্টিক নিয়ে জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে আছে।
আয়োজক সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন ও কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের অপার সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিনই সমাগম ঘটে লাখো পর্যটকের। যারা সৈকতের বালিয়াড়ি ও সাগরের পানিতে ফেলছে প্লাস্টিক পণ্যসামগ্রীর বর্জ্য। এতে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে দূষণ এবং হুমকির মুখে পড়ছে সামুদ্রিক জীব ও মানবজীবন। আর প্রাণ-প্রকৃতির দূষণ রোধে এবং সচেতনতা সৃষ্টিতে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন নিয়েছে প্লাস্টিক বর্জ্যে তৈরি দানব ভাস্কর্যের প্রদর্শনীর মতো ভিন্নধর্মী এ উদ্যোগের।
বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবক মুহাম্মদ মুবারক জানান, প্রায় চার মাস ধরে কক্সবাজার, ইনানী ও টেকনাফের সমুদ্র সৈকত থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে অন্তত ৮০ মেট্রিক টন সামুদ্রিক প্লাস্টিক বর্জ্য। এসব বর্জ্যের একটা অংশ দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিল্পী এই ভাস্কর্যটি তৈরি করেন। আর এটি পুরো পর্যটন মৌসুম সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। এটাকে কেন্দ্র করে এখানে প্লাস্টিক দূষণবিরোধী সচেতনতামূলক পথ নাটক ও সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে।
বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের গভর্নিং বডির সদস্য জামাল উদ্দিন বলেন, সরকারের পরিবেশ মন্ত্রণালয় প্লাস্টিক দূষণের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছে। সরকারের পলিসির সাথে সমন্বয় করে আমরা সারাদেশ থেকে স্বেচ্ছাশ্রমে ৫০০ মেট্রিক টন পরিত্যক্ত প্লাস্টিক রিসাইকেল করেছি। এতে করে প্লাস্টিক বর্জ্য ম্যানেজমেন্টে সরকারি খরচ যেমন কমবে তেমনি মানুষও জানতে পারবে কীভাবে রিসাইকেলের মাধ্যমে বর্জ্যকে সম্পদে রূপান্তর করা যায়।
দেশব্যাপী এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে কক্সবাজারে আমরা জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় ছয় মাসব্যাপী প্লাস্টিক দূষণ প্রতিরোধে কাজ করে যাব। প্লাস্টিক বর্জ্য রিসাইকেলের পাশাপাশি এখানে সচেতনতামূলক ভাস্কর্য প্রদর্শনীর আয়োজনও করছি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের ভাস্কর ও শিল্পী আবীর কর্মকার জানান, বিদ্যানন্দের ভিন্নধর্মী উদ্যোগ প্লাস্টিক দানবটি তৈরি করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের একদল শিল্পী। এতে তারা প্লাস্টিক বর্জ্যের পাশাপাশি ব্যবহার করেছেন কাঠ, পেরেক ও আঁটা (গাম)-সহ আরও কয়েকটি উপকরণ। ভাস্কর্য শিল্পীদের দাবি, এটি ওসান প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি বিশ্বের সর্ব বৃহৎ ‘প্লাস্টিক দৈত্য’। এটি বানাতে প্রায় ৬ মেট্রিক টন প্লাস্টিক ব্যবহৃত হয়েছে।
উন্মোচনকালে জেলা প্রশাসক মো. আ. মান্নান বলেন, সমুদ্র সৈকতকে প্লাস্টিক দূষণের হাত থেকে বাঁচাতে এই উদ্যোগ খুবই কার্যকর ও টেকসই। সমুদ্র বিচরণ করা পর্যটককে সচেতন করতে ভাস্কর্য ও চিত্র প্রদর্শনী অবদান রাখবে। তাতেই উদ্যোগের সফলতা আসবে।
প্লাস্টিক বর্জ্যে নির্মিত এই দানবটি দেখতে ভিড় করেছেন সৈকতে ঘুরতে আসা পর্যটকরা। তারা বলছেন, এটি দেখতে এসে মানুষ দৈত্য-দানবের ভয়ংকর রূপের মতো প্লাস্টিক বর্জ্যের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সচেতন হবেন। পাশাপাশি নিজেরাও প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহারে সজাগ থাকবেন।
এই প্লাস্টিক দৈত্য নিয়ে পরিবেশকর্মী ইসলাম মাহমুদ বলেন, বর্তমান সময়ে নদী ও সমুদ্র দূষণের প্রধান নিয়ামক প্লাস্টিক। অপচনশীল এই বর্জ্য মানবজাতিকে এক ভয়াবহ পরিণতির দিকে ধাবিত করছে। এই প্রেক্ষাপটে মানুষকে এ ব্যাপারে গুরুত্বের সাথে সচেতন হতে হবে। সমুদ্র সৈকতে তৈরি করা প্লাস্টিক দৈত্যটি মানুষকে সচেতনতা সৃষ্টিতে অবদান রাখতে পারে।
নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলায় মাদকাসক্ত ভাতিজা ও চাচাতো ভাইয়ের নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে এক বৃদ্ধ দম্পতি প্রায় ১৫ দিন নিজ বাড়িতেই গৃহবন্দী অবস্থায় জীবন কাটিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার ১ নম্বর জোয়ারী ইউনিয়নের কুমরুল গ্রামের বাসিন্দা আলহাজ্ব মোসলেম উদ্দিন ও তাঁর স্ত্রী খাদিজা বেগম এই নির্যাতনের শিকার হন।
বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দীর্ঘদিনের ভয় ও আতঙ্কে তাঁরা ঘরের ভেতরেই অস্থির অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, গত ২২ নভেম্বর সকালে বাড়িতে একা পেয়ে মাদকাসক্ত দুই ভাতিজা তৌকির ও তারেক এবং চাচাতো ভাই ফিরোজ পরিকল্পিতভাবে মোসলেম উদ্দিনকে গাছের সঙ্গে বেঁধে লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারধর করে। তার চিৎকারে খাদিজা বেগম এগিয়ে এলে তাকেও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়। পরে স্থানীয়দের হস্তক্ষেপে তাঁরা প্রাণে রক্ষা পান।
এরপর থেকেই অভিযুক্তরা তাদের প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে আসছিলেন বলে দাবি করেন বৃদ্ধ দম্পতি। এতে ভয়ে তারা ঘর থেকে বের হতে পারেননি। গুরুতর অসুস্থ হয়েও চিকিৎসা নিতে পারেননি তারা।
ঘটনার পর ২৪ নভেম্বর বৃদ্ধ দম্পতির জামাতা, অবসরপ্রাপ্ত নৌ-বাহিনীর এক কর্মকর্তা, বড়াইগ্রাম থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। পরবর্তীতে তাঁদের একমাত্র ছেলে মাসুম আহমেদও একই থানায় পৃথকভাবে অভিযোগ জমা দিয়েছেন।
এ বিষয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, অভিযোগ গ্রহণ করা হয়েছে এবং বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। ভুক্তভোগীরা সিনিয়র সিটিজেন হওয়ায় আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ সহায়তা নিশ্চিত করা হবে, বলেনও জানান তিনি।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া অংশের বাউশিয়া পাখির মোড় এলাকা থেকে ৮ হাজার পিস ইয়াবাসহ এক মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করেছে পুলিশ। এ সময় মাদক পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত একটি নোহা স্কয়ার গাড়ি জব্দ করা হয়।
বুধবার ( ৩ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত তিনটায় পরিচালিত এই অভিযানের নেতৃত্বে ছিলেন গজারিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আনোয়ার আলম আজাদ।
আটককৃত মাদক ব্যবসায়ীর নাম মোঃ ইব্রাহিম (৩৫)। সে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার লম্বাবিল হোয়াইকং গ্রামের আব্দুল খালেকের ছেলে বলে জানা গেছে।
গজারিয়া থানা সূত্রে জানা যায়, ইয়াবার বড় একটি চালান কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে রাজধানী ঢাকায় যাচ্ছে এরকম একটি খবরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া অংশের বাউশিয়া পাখির মোড় এলাকায় অবস্থান নেয় পুলিশ। বুধবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে টেকনাফ থেকে ঢাকাগামী কালো রংয়ের একটি নোহা স্কয়ার গাড়ি তল্লাশি করে ৮ হাজার পিস ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী ইব্রাহিমকে আটক করা হয়। এ সময় মাদক পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত গাড়িটিও জব্দ করা হয়।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে গজারিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আনোয়ার আলম আজাদ বলেন, ' একটি সফল অভিযানে ৮ হাজার পিস ইয়াবাসহ এক মাদক ব্যবসায়ী আটক হয়েছে। তার বিরুদ্ধে মাদক আইনে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
টেলিগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপে পরিকল্পনা করে ঢাকায় অগ্নিসন্ত্রাস ও ককটেল বিস্ফোরণের মাধ্যমে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা করে আসছিল কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বাসে অগ্নিসংযোগসহ একাধিক নাশকতার ঘটনায় তাদের সম্পৃক্ততা শনাক্ত করার পর বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হয়। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের রমনা বিভাগের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অভিযান চালিয়ে মঙ্গলবার চারজনকে গ্রেপ্তার করেছেন।
গতকাল বুধবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের রমনা বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার ডিসি মো. মাসুদ আলম গণমাধ্যমকে এসব তথ্য জানান।
গত ৩০ অক্টোবর বিকেলে ধানমন্ডিতে ২৮ নম্বর সড়কের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইনস্টিটিউটের গলির মুখে নিষিদ্ধ সংগঠনের ব্যানারে মিছিলের প্রস্তুতি চলছিল। ওই সময় ধানমন্ডি থানা পুলিশ আকস্মিক অভিযান চালিয়ে দুজনকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন— হাজারীবাগ-ধানমন্ডি এলাকার পরিচিত যুবলীগ নেতা শওকত ওসমান বাবু ও মিলন খান। গ্রেপ্তার বাবু ধানমন্ডি ২২ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং মিলন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি।
পুলিশ জানায়, শওকত ওসমান বাবু দীর্ঘদিন ধরে এলাকাবাসীর ওপর দমন-পীড়ন চালানোর অভিযোগে কুখ্যাত। ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনে ছাত্রদের ওপর সশস্ত্র হামলাকারীদের অন্যতম ছিলেন তিনি। পরবর্তীতে সরকার পতনের সময় বিদেশে পালিয়ে গেলেও সম্প্রতি মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফিরে আসেন বহু মামলার এই আসামি। দেশে ফিরে তিনি নতুন করে নাশকতার পরিকল্পনা করেন। এ সংক্রান্ত বিভিন্ন ভিডিও, ককটেল বিস্ফোরণের ছবি, বাসে অগ্নিসংযোগের লাইভ ফুটেজসহ নাশকতার নির্দেশনা তার মোবাইল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
হাজারীবাগ বেড়িবাঁধ এলাকায় ১৬ নভেম্বর বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনাও শওকত ওসমান বাবুর প্রত্যক্ষ নির্দেশনা ও অর্থায়নে সংঘটিত হয়েছে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।
গ্রেপ্তার হওয়া আরেক আসামি মিলন খান নড়াইলের জয়নগর ইউনিয়নের বাসিন্দা এবং ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় নাশকতা সংগঠনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন বলে তদন্তে জানা গেছে। তিনি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি স্বপন ও যুগ্ম আহ্বায়ক সাব্বির শেখের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। মিলন নড়াইল ও গোপালগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলা থেকে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের এনে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা এলাকার লায়ন টাওয়ারের পেছনের একটি টিনশেড বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা করে দিতেন আর সেখান থেকেই তারা ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় নাশকতা ও ঝটিকা মিছিল পরিচালনা করতেন।
গ্রেপ্তার হওয়া আরেক ব্যক্তি সাব্বির শেখ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক। সাব্বির মহানগর যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি স্বপনের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত। সাব্বির শেখ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যুবলীগ-ছাত্রলীগ কর্মীদের ডেকে এনে ঢাকায় নাশকতায় যুক্ত করতেন। বিভিন্ন টেলিগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে সক্রিয় থেকে বাসে অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণের নির্দেশনা দিতেন। গত ২৮ নভেম্বর ধানমন্ডিতে নিষিদ্ধ সংগঠনের ব্যানারে মিছিলের প্রস্তুতিতেও তিনি নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। যদিও সেদিন পালিয়ে যান। পরে পুলিশ ও রমনা বিভাগের টেকনিক্যাল টিম যৌথ অভিযান চালিয়ে কামরাঙ্গীরচর কোম্পানি ঘাট ব্রিজ এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মোবাইল ফোন বিশ্লেষণ করে পুলিশ ‘আস্থায় শেখ হাসিনার যুবলীগ ঢাকা দক্ষিণ’, ‘দরবার হল গ্রুপ’, ‘বাঙালি বাংলাদেশ’, ‘২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ’সহ বিভিন্ন অনলাইন গ্রুপে নাশকতার পরিকল্পনা, ককটেলের ছবি, বিস্ফোরকের তথ্য, অর্থ লেনদেনের প্রমাণ এবং ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় বাসে আগুন দেওয়ার ভিডিও উদ্ধার করেছে। রাজধানীর রূপনগর, হাজারীবাগ, ধানমন্ডিসহ কয়েকটি এলাকায় অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাতেও তাদের সরাসরি সম্পৃক্ততার তথ্য মিলেছে।
আট বছর আগে ১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত যশোরের বেনাপোল পৌরবাস টার্মিনালটি কোন কাজে আসছে না। সেখানে যাত্রীবাহী কোন বাস না থাকায় টার্মিনালটি খাঁখাঁ করছে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকার ২০১৭ সালে বাস টার্মিনালটি নির্মাণের পর ২ বার উদ্বোধন করা হলেও এখান থেকে কোন বাস ছাড়া হয় না, কোন বাস দাঁড়ায়ও না। যে কারণে কাজে আসছে না মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে নির্মিত এই টার্মিনাল।
আর এই টার্মিনালটি চালু না হওয়ায় মাদকসেবীরা ও মাদক ব্যবসায়িরা এই ভবনটিকে নিরাপদ স্থান করে নিয়েছে। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছে সন্ধ্যার পর পর চলে এই টার্মিনালের মধ্যে চলে মাদক সেবন ও মাদক বিক্রি। এখানে দূর-দূরান্ত থেকে মাদকসেবীরা এসে সেবন করে যায়। এর সাথে স্থানীয় অনেক উঠতি বয়সের তরুণরাও ঝুঁকে বসেছে মাদক সেবনে। বাস চালু হলে এখানে রাত-দিন লোক সমাগম থাকলে মাদকসেবীরা ও মাদক ব্যবসায়িরা হয়ত আর আড্ডা দিতে পারত না।
বেনাপোল চেকপোস্ট থেকে কাগজপুকুর পর্যন্ত ভয়াবহ যানজট মুক্ত রাখতে টার্মিনালটি নির্মাণ করেছিল বেনাপোল পৌরসভা। কিন্তু বাস মালিক ও শ্রমিকসহ স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির সার্থের কারণে সফল হচ্ছে না। ফলে যাত্রী ও সাধারণ নাগরিকের সীমাহীন ভোগান্তি রয়েই গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দেশের প্রধান স্থলবন্দর ও ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট বেনাপোলে অবস্থিত। এই ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে দিনে হাজার হাজার মানুষ বাংলাদেশ-ভারত যাতায়াত করে। প্রধান সড়কের শেষ প্রান্তে নোম্যান্সল্যান্ড-সংলগ্ন স্থানে ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট হওয়ায় যাত্রী ও পরিবহনের চাপে সেখানে এবং যশোর রোডের বেনাপোল বাজার পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার জুড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি মোকাবিলায় বেনাপোল পৌরসভা শহরের প্রবেশমুখে কাগজপুকুর এলাকায় মহাসড়কের ধারে নতুন টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। প্রায় ১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত নতুন টার্মিনালটি ২০১৭ সালে উদ্বোধন করেন তখনকার সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। কিন্তু সেই থেকে এখনও পর্যন্ত টার্মিনালটি ব্যবহৃত হয়নি।
মালিক-শ্রমিকরা তাদের যানবাহন আগের মতোই নোম্যান্সল্যান্ডের কাছাকাছি চেকপোস্ট বাস টার্মিনাল পর্যন্ত নিয়ে যাচ্ছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বেনাপোল পৌরসভার প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব নেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ডা. কাজী নাজিব হাসান। যশোর জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. আজাহারুল ইসলামের নির্দেশনায় তিনি গত বছর ৭ নভেম্বর টার্মিনালটি নতুন করে চালুর উদ্যোগ নেন। কিন্তু এ দফায়ও মাত্র ৭ দিনের মতো সচল ছিল টার্মিনালটি। পরে যানবাহন মালিক-শ্রমিকরা টার্মিনালে গাড়ি না ঢুকিয়ে আগের মতো ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট এলাকায় নিয়ে যান। মালিক-শ্রমিকরা কৌশলের আশ্রয় নিয়ে সবসময় টার্মিনালে দু-একটি বাস রাখছেন।
অভিযোগ রয়েছে, নতুন টার্মিনালটি যাতে ব্যবহৃত না হয়, ‘তার পেছন থেকে যারা কলকাঠি নাড়েন, তাদের শীর্ষে আছেন বেনাপোল এর এক শ্রেণির প্রভাবশালী ব্যবসায়ি সংগঠন’। এসব সংগঠন কারণ দেখিয়ে বলছে পৃথিবীর কোন দেশের সীমান্তের চেকপোস্ট থেকে তিন-চার কিলোমিটার দূরে টার্মিনাল নেই। এত দূরে টার্মিনাল নির্মাণ করা অবাস্তব চিন্তা। সে কারণে টার্মিনালটি ব্যবহৃত হচ্ছে না।’
স্থানীয় অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চেকপোস্ট থেকে দূরবর্তী স্থানে টার্মিনাল করার সিদ্ধান্তটি কতটা যুক্তিপূর্ণ ছিল- তা নিয়ে তাদের মধ্যে সন্দেহ আছে।
শার্শা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও বেনাপোল পৌরসভার প্রশাসক ডা. কাজী নাজিব হাসান বলেন, ‘গত বছর এর ৭ নভেম্বর জেলা প্রশাসকের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা নতুন বাসটার্মিনালটি চালু করেছি। সেখানে নামাজের স্থান, ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার, আনসারদের থাকার ব্যবস্থাসহ আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও বাসমালিকরা এই টার্মিনাল ব্যবহার না করে নোম্যান্সল্যান্ডের কাছে বেনাপোল স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ পরিচালিত টার্মিনালে বাস নিয়ে যাচ্ছেন। অথচ ওই টার্মিনালটি শুধু আন্তঃদেশীয় বাস প্রবেশের জন্য নির্ধারিত।’
নওগাঁয় প্রশাসনের কোন ধরনের অনুমোদন ছাড়াই স্কুল মাঠ দখল করে শীতবস্ত্র ও শিল্পপণ্যের মেলা চালু করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার থেকে শহরের আবাসিক এলাকা হাট-নওগাঁ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এই মেলার কার্যক্রম শুরু হয়। স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা চলমান থাকা সত্ত্বেও আবাসিক এলাকায় মেলা বসানোয় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্থানীয়রা। ইতোমধ্যে এ মেলা ঘিরে নানা ধরনের বিতর্কও দেখা দিয়েছে। মেলার কাজে জেলা পুলিশের নাম ব্যবহার করা হলেও পুলিশ প্রশাসন এ সম্পর্কে কিছুই জানে না।
জানা যায়, আবাসিক এলাকা হওয়ায় হাট-নওগাঁ স্কুল মাঠটি দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা, পরীক্ষা ও ক্রীড়া কার্যক্রমের মূল জায়গা। দুই সপ্তাহ আগে থেকেই মেলার অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শুরু হয়। পুরো মাঠ টিনের বেড়া দিয়ে ঘিরে ফেলায় স্কুলের প্রধান গেট বন্ধ হয়ে যায়। এতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিকল্প দরজা ব্যবহার করতে হচ্ছে। চলমান পরীক্ষার সময় বাড়তি শব্দ ও ভিড়ের কারণে শিক্ষার্থীরা মনোযোগ হারাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বুধবার দুপুরে দেখা যায়, বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার ফাঁকে মেলায় ঘুরতে এসেছে।
এক মাসব্যাপী এই মেলার আয়োজন করেছে রাজশাহী শিল্ক অ্যান্ড বেনারসি জামদানি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি। বিনোদনের জন্য বসানো হয়েছে নাগরদোলা, নৌকা ও ড্রাগন রাইড। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত মেলা খোলা থাকে এবং প্রবেশ মূল্য রাখা হয়েছে ২০ টাকা।
হাট-নওগাঁ উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম ও নবম শ্রেণির একাধিক শিক্ষার্থী জানান, গেট বন্ধ থাকায় প্রবেশে সমস্যা হচ্ছে এবং পরীক্ষায় মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। মাঠে খেলাধুলাও বন্ধ হয়ে গেছে।
হাট নওগাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, তাদের পরীক্ষায় তেমন সমস্যা হয়নি, তবে অবকাঠামো নির্মাণের সময় কিছু অসুবিধা হয়েছে।
ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির স্বত্বাধিকারী রহিদুল ইসলাম জানান, এখনও আনুষ্ঠানিক অনুমতি মেলেনি। আগামী ১২ ডিসেম্বর পরীক্ষার পর মেলা পুরোপুরি চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে।
এ নিয়ে নওগাঁর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রশাসক এবং হাট-নওগাঁ উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি জান্নাত আরা তিথি বলেন, প্রধান শিক্ষক স্কুল মাঠে মেলা চালানোর অনুমতি দেওয়ার অধিকার রাখেন না। আমাকে বিষয়টি জানানোও হয়নি। একটি আবেদন পেয়েছি।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম বলেন, নওগাঁয় অনুষ্ঠিতব্য শিল্প এবং বাণিজ্যিক মেলার সাথে জেলা পুলিশের কোন সম্পর্ক নেই। এই মেলায় জেলা পুলিশ, অথবা পুলিশ নারী কল্যাণ সংঘের কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। কতিপয় মহল বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।
নওগাঁর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, মেলা সংক্রান্ত একটি আবেদন পাওয়া গেছে, অনুমোদনের প্রক্রিয়া চলছে।
ফেনী সদর উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও ক্রীড়া সামগ্রী এবং মাছের পোনা ও কীটনাশক বিতরণ করা হয়েছে। বুধবার দুপুরে উপজেলা মিলনায়তনে বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মনিরা হক।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক বলেন, উপজেলা পর্যায়ে রাজস্ব উদ্বৃত্ত উন্নয়ন তহবিলের অর্থায়নে সকল সেক্টরের মাঝে প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিতরণ করা হয়। এটা প্রশংসনীয় উদ্যোগ। রাজস্ব আয় বাড়লে এ বিতরণ কার্যক্রম আরও বাড়ানো সম্ভব।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) ফাতিমা সুলতানা, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ফেনী সদরের উপজেলা প্রকৌশলী দীপ্ত দাশ গুপ্ত । সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার নুরুল আমিন, সদর উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাইফুল ইসলাম, জেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি শামসুল ইসলাম চৌধুরী।
সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুলতানা নাসরিন কান্তার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান অনগ্রসর ১৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৬০ টি মাধ্যমিক স্কুল ও মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষা সামগ্রী, স্বাস্থ্য বিভাগের স্বাস্থ্য পরিদর্শকদের মাঝে ৮০টি ছাতা, কমিউনিটি ক্লিনিক এর জন্য ৩৫টি বিপি মেশিন, মৎস্য চাষিদের মাঝে ২ লাখ টাকার মাছের পোনা, কৃষকদের মাঝে কিছুই উপকরণ হিসেবে ৮০টি স্প্রে মেশিন, প্রাণিসম্পদের জন্য ২ লাখ টাকার, প্রজনন বীজ, কৃমিনাশক ওষুধ ও ভিটামিন ওষুধ বিতরণ করা হয়। জানা গেছে, বিতরণকৃত এসব মালামালের আনুমানিক মূল্য ২৩ লাখ টাকা।
শিশুসহ অপহৃত ব্যক্তিদের দ্রুত উদ্ধারের দাবিতে কক্সবাজারের টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের শামলাপুর এলাকায় সড়ক অবরোধ করে মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী। বুধবার বিকেলে বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর মেজর সিনহা চত্বরে অনুষ্ঠিত কর্মসূচিতে ছাত্র, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, শ্রমিকসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ প্ল্যাকার্ড-ফেস্টুন হাতে অংশ নেন। এ সময় পর্যটকবাহী ও যাত্রীবাহী যান চলাচল কিছু সময় বন্ধ থাকে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, রোহিঙ্গা অধ্যুষিত বাহারছড়া এলাকায় সাম্প্রতিক সময়ে অপহরণ বেড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। সর্বশেষ গত রোববার শিশুসহ ৪ জনকে পাহাড়ি সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্যরা অপহরণ করে। তাদের দাবি, গত এক বছরে টেকনাফে ২৬৪ জন অপহৃত হয়েছেন, যাদের বেশির ভাগই মুক্তিপণের বিনিময়ে ফিরে এসেছেন।
মানববন্ধনে উপস্থিত টেকনাফ মডেল থানার ওসি আবু জায়েদ মো. নাজমুন নূর বলেন, ‘অপহরণ বন্ধের দাবিতে এ কর্মসূচির যৌক্তিকতা রয়েছে, আমরা একে সমর্থন করি। পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চলছে। তবে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক অবরোধ না করার জন্য স্থানীয়দের অনুরোধ জানাই।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন অব উখিয়া–টেকনাফ (ডুসাট) সভাপতি জয়নাল উদ্দিন বলেন, ‘আমরা আর কোন অপহরণ চাই না। আমাদের ভাইদের ফিরিয়ে দিন। দিন দিন এ এলাকায় বসবাস অনিরাপদ হয়ে উঠছে। আমরা সেনাবাহিনীর চৌকি স্থাপন ও বিশেষ অভিযানের দাবি জানাই; না হলে এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হবো।
শামলাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও টেকনাফ উপজেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি এম এ মন্জুর বলেন, একদিকে পাহাড়, অন্যদিকে সাগর- বাহারছড়া একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন এলাকা। কিন্তু অপহরণকারীদের তৎপরতায় এখন পর্যটকরাও আসতে ভয় পায়। পাহাড়পাদে থাকা মানুষ নিদ্রাহীন রাত কাটাচ্ছে, কেউ কেউ স্কুল–মাদ্রাসায় রাতযাপন করছে। ছাত্র-ছাত্রীরাও আতঙ্কে স্বাভাবিক পড়াশোনা করতে পারছে না। সব বাহিনীর নিয়মিত অভিযান ছাড়া আমরা মুক্তি পাব না।’
বাহারছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন খোকন বলেন, ‘২৫ কিলোমিটারের এ ইউনিয়নে প্রায় ৫০ হাজার মানুষের বসবাস। অথচ অপহরণকারী সর্বোচ্চ ১০০ জন। জনগণ সচেতন হলে তারা কোনোভাবেই রাষ্ট্রবিরোধী কার্যক্রম চালাতে পারবে না। আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতা করলে কেউ অপহরণের সাহস দেখাতে পারবে না।’
এলাকাবাসীর ৬ দফা দাবি:
১. আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অপহৃত ৪ জনকে অক্ষত অবস্থায় বিনা মুক্তিপণে ফিরিয়ে দিতে হবে। ২. অপহরণচক্রের সহযোগী স্থানীয় এজেন্টদের দ্রুত গ্রেপ্তার করতে হবে।
৩. অপহরণে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি- ‘আমৃত্যু কারাদণ্ড’ নিশ্চিত করতে হবে। ৪. পাহাড়ে সপ্তাহব্যাপী সাঁড়াশি অভিযান ও সার্বক্ষণিক সেনাবাহিনীর টহল জোরদার করতে হবে।
৫. নাটকীয় অভিযান ও মুক্তিপণের বিনিময়ে উদ্ধার পরবর্তী ভিকটিম নির্যাতন বন্ধ করতে হবে। ৬. নির্দিষ্ট সময়ে ভিকটিম উদ্ধার করতে ব্যর্থ হলে দায়িত্বরত কর্মকর্তা ও টেকনাফ থানার পুরো টিমকে অপসারণ করে দক্ষ বাহিনী নিয়োগ দিতে হবে।
অবশেষে চট্টগ্রাম বন্দরের অকশন শেডে পড়ে থাকা শত কোটি টাকার ড্রেজিং পাইপ উঠল নিলামে। ২ হাজার ৭৮৩ টন ড্রেজিং পাইপ ও অন্যান্য সরঞ্জাম দুই লটে বিশেষ নিলামে তুলেছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। তবে ড্রজিং পাইপ ও অন্যান্য সরঞ্জাম বিক্রির জন্য কোনো ধরনের সংরক্ষিত মূল্য নির্ধারণ করেনি কাস্টমস। গত ২০ নভেম্বর থেকে বিডারদের (নিলামে অংশগ্রহণকারী) কাছ থেকে অনলাইনে প্রস্তাবিত দরপত্র গ্রহণ শুরু হয়েছে। দরপত্র নেয়া হবে আগামী ১৫ ডিসেম্বর বিকাল ৪টা পর্যন্ত। আগ্রহী বিডাররা পণ্য পরিদর্শন করতে পারবেন ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, ড্রেজিং কাজে ব্যবহারের জন্য ২০১৯ সালের ৯ ডিসেম্বর ২০ ফুট এবং ৪০ ফুট সাইজের ১ হাজার ৯০০টি পাইপ আমদানি করেছিল চ্যাঞ্জিং ড্রেজিং প্রাইভেট লিমিটেড নামে ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠান। একই চালানে ছিল পাইপ ফিটিংসের নানা উপকরণসহ আরও ৮ কনটেইনার পণ্য। কিন্তু নতুনের পরিবর্তে ব্যবহৃত পাইপ আমদানি করায় পাইপগুলোর ডেলিভারি আটকে দেয় চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজ। পাইপগুলো থাকার কারণে বন্দরে অন্যান্য মালামাল রাখতে অসুবিধা হচ্ছিল। এ অবস্থায় ২০২০ সালেই নিলামে বিক্রি করতে এসব পাইপ বাই পেপার চট্টগ্রাম কাস্টমসের কাছে হস্তান্তর করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। এ অবস্থায় গত ৬ বছর ধরে চট্টগ্রাম বন্দরের শেডে পড়ে থাকে বিশাল আকৃতির এসব পাইপের লট। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনাপত্তি সনদ (এনওসি) না পাওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে নিলাম প্রক্রিয়া আটকে থাকে। অবশেষে গত ১০ নভেম্বর মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় এনওসি ইস্যু করে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. সাইফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত ওই অনাপত্তিপত্রে সরকারের রাজস্ব আদায়ের স্বার্থে এসব পণ্য দুই লটে নিলামের মাধ্যমে নিষ্পত্তির অনুমোদন দেওয়া হয়। অনাপত্তিপত্রে আমদানি নীতি মেনে চলা, প্রযোজ্য শুল্ক-কর পরিশোধ ও পণ্যগুলো ব্যবহারযোগ্য কি না, তা নিশ্চিত করার শর্ত দেওয়া হয়েছে। এ অনুমোদন কেবল নির্দিষ্ট এই চালানের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
কাস্টমসের কর্মকর্তারা জানান, চীন থেকে আমদানিকৃত ২ হাজার ৭০০ টন ওজনের পাইপের আমদানিমূল্য ছিল ৮০ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এছাড়া ৮৩টন ওজনের অন্যান্য পণ্যের দাম ৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা উল্লেখ করা হয় চালানে। গত ২০২০ সালেই নিলামে বিক্রি করতে এসব পাইপ চট্টগ্রাম কাস্টমসের কাছে হস্তান্তর করেছিল চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।
চট্টগ্রাাম কাস্টমসের অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনা মো. রাসেল আহমেদ দৈনিক বাংলাকে বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের কন্টেনারের জট নিরসনে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ নিয়মিত বিরতিতে নিলাম কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তবে এবার বিশেষ নিলামে দুই লট ড্রেজিং পাইপ ও সরঞ্জাম তোলা হয়েছে। আগ্রহী বিডারদের কাছে অনলাইনে প্রস্তাবিত দর মূল্যে নেয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, যেহেতু ২০১৯ সালের পণ্য, তাই কাস্টমস বিধি অনুযায়ী এসব পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করা হয়নি। বিডারদের (নিলামে অংশগ্রহণকারী) মধ্যে যিনি সর্বোচ্চ দরদাতা হবেন। তিনি পণ্যগুলো পাবেন।
এদিকে চট্টগ্রাম কাস্টমস নিলাম ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. এয়াকুব চৌধুরী বলেন, এসব পাইপ এতদিন চট্টগ্রাম কাস্টমসের জন্য এক প্রকার বোঝা ছিল। অবশেষে নিলামে তোলার কারণে সরকার এসব পাইপ বিক্রি করে রাজস্ব আয় করতে পারবে। তবে একটি ট্রলিতে তিনটির বেশি পাইপ উঠানো যাবে না। চট্টগ্রামের বাইরের বিডারদের জন্য অনেক ব্যয়বহুল হয়ে যাবে। ফলে এটি স্ক্র্যাপ হিসেবেও দর উঠতে পারে।
প্রসঙ্গত; আমদানিকৃত পণ্য জাহাজ থেকে বন্দর ইয়ার্ডে নামার ৩০ দিনের মধ্যে সরবরাহ নিতে হয়। এই সময়ের মধ্যে কোনো আমদানিকারক পণ্য সরবরাহ না নিলে তাকে নোটিশ দেয় কাস্টমস। নোটিশ দেওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে পণ্য সরবরাহ না নিলে তা নিলামে তুলতে পারে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এছাড়া মিথ্যা ঘোষণায় জব্দ পণ্যও নিলামে তোলা যায়। ফলে আমদানিকৃত পণ্য যথাসময়ে খালাস না নেওয়ায় বন্দরে প্রায়ই কন্টেনার জট লেগে থাকে। এদিকে দিনের পর দিন কন্টেনার পড়ে থাকলেও বন্দর কর্তৃপক্ষ কোনো চার্জ পায় না। তবে ৪৫ দিনের মধ্যে নিলামে তোলার যে নিয়ম তা নানা জটিলতায় দীর্ঘদিন ধরে কার্যকর করতে পারেনি বন্দর ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।
দশম গ্রেডে বেতনসহ তিন দফা দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ফরিদপুর সদর উপজেলা শিক্ষক সমিত ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে। বুধবার বেলা ১২টায় ফরিদপুর সদর উপজেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি সুশান্ত কুমার সরকারের সভাপতিত্বে এবং শিক্ষকদের দাবি বাস্তবায়ন কমিটির সমন্বয়ক ও উপজেলা শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেনের সঞ্চালনায় ফরিদপুর সদর উপজেলা পরিষদ চত্বরে এ অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়।
অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন ফুসরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হাসান আহমেদ, ডোমরাকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সেলিনা জানান, সহকারী শিক্ষক মলি আক্তার, গোলাপবাগ লতিফুন্নেসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক, মধ্য চরটেপাখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক দেবাশীষ ব্যানার্জি।
এছাড়াও এ সময় বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক নাহিদুল ইসলাম, দয়ারামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ ফরহাদ শেখ, মুরারীদাহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আমি হায়দার, মোতালেব হোসেন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শামীম ইকবাল, খালিশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারি শিক্ষক মোহাম্মদ ফরিদ শেখ, টেপাখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নাজমুল হোসেনসহ ফরিদপুর সদর উপজেলার বিভিন্ন বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন।
অবস্থান কর্মসূচি থেকে শিক্ষকরা জানান তাদের ন্যায্য দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত এই কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। এবং কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তীতে আরও কঠোর কর্মসূচি পালন করা হবে।
‘প্রতিবন্ধিতা অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গড়ি’ সামাজিক অগ্রগতি তরান্বিত করি’ প্রতিপাদ্যে বুধবার নীলফামারীতে জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবস পালিত হয়েছে। জেলা প্রশাসন ও জেলা সমাজ সেবা কার্যালয় এবং প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রের উদ্যোগে দিবসটি পালন করা হয়।
কর্মসূচির মধ্যে ছিল র্যালি, আলোচনা সভা, ঋণের চেক ও কম্বল বিতরণ।
এছাড়া জেলা পরিষদের উদ্যোগে সেলাই মেশিন, হুইল চেয়ার, ট্রাই সাইকেল বিতরণ করা হয়।
সকালে জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে শুরু করে একটি র্যালি বের হয়ে জেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামে গিয়ে আলোচনা সভায় মিলিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান।
সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক আবু বকর সিদ্দিকীকের সভাপতিত্বে আলোচনা অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সহকারী পরিচালক নুসরাত ফাতেমা।
বিশেষ অতিথি হিসেবে জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা দীপঙ্কর রায়, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ, সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিকেল অফিসার আতিউর রহমান শেখ বক্তব্য দেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান বলেন, প্রতিবন্ধীরা আমাদের বোঝা নয়। আমাদের সম্পদ। তাদের কাজে লাগাতে হবে। তাদের মূল স্রোতে টানতে হবে। তাদের মেধা ও শ্রম দিয়ে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটতে পারে।
সরকার প্রতিবন্ধীদের কাজে লাগাতে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। আমরা চাই তারাও সমাজে ভূমিকা রাখুক।
অনুষ্ঠানে জেলা পরিষদের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির অংশ হিসেবে সেলাই মেশিন, হুইল চেয়ার, ট্রাই সাইকেল ও জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে কম্বল বিতরণ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান।
জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা দীপঙ্কর রায় জানান, ৯৬জনকে সেলাই মেশিন, ৯০জনকে হুইল চেয়ার, ২০জনকে ট্রাই সাইকেল ও ১’শ জনকে কম্বল প্রদান করা হচ্ছে।
নিয়োগবিধি ২০২৪ বাস্তবায়নের দাবি, বেতন বৈষম্য নিরসন এবং টেকনিক্যাল পদমর্যাদা প্রদানসহ ৬ দফা দাবিতে সারাদেশের ন্যায় যশোরের শার্শা উপজেলা হাসপাতালে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন স্বাস্থ্য সহকারীরা। বুধবার সকালে শার্শা উপজেলা হাসপাতালের সামনে তারা এ অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন।
স্বাস্থ্য সহকারীরা জানিয়েছেন, জনগণকে স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত করে তারা কর্মবিরতিতে যেতে চাননি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের উদাসীনতা এবং বারবার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের কারণেই তারা বাধ্য হয়ে অবস্থান কর্মসূচিতে নেমেছেন। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি ও প্রস্তাব অনুযায়ী দাবিগুলো প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করেন, তবে তারা অবিলম্বে কর্মস্থলে ফিরে যাবেন।
কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া স্বাস্থ্য সহকারীরা জানান, তারা মূলত প্রান্তিক পর্যায়ে টিকাদান কর্মসূচিসহ জনস্বাস্থ্যের সেবায় সম্মুখসারির কর্মী হিসেবে কাজ করেন। জন্মের পর শিশুর সুস্বাস্থ্য ও সুরক্ষার জন্য ১০টি মারাত্মক রোগের প্রতিষেধক টিকা প্রদান করাও তাদের দায়িত্ব।
তাদের কাজের ফলে বাংলাদেশ বিশ্বে টিকাদানের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। দেশ থেকে গুটি বসন্ত দূর হয়েছে, মাতৃ ও শিশুমৃত্যু হ্রাস পেয়েছে এবং পোলিও মুক্ত দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া গেছে। এছাড়া হাম, রুবেলা, করোনা, জরায়ূমুখের ক্যান্সার (এইটপিভি) এবং সর্বশেষ প্রায় পাঁচ কোটি শিশুকে টাইফয়েড (টিসিভি) টিকা সাফল্যের সঙ্গে তারা প্রদান করেছেন।
পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক আকলিমা খাতুন বলেন, আমাদের কাজের ফলে দেশে গড় আয়ু বৃদ্ধি হয়েছে এবং আন্তজার্তিক অঙ্গনে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাত সুপিরচিতি লাভ করেছে। আমাদের কাজের বিনিময়ে স্বাস্থ্য বিভাগ গর্বিত। আজ আমরাই অবহেলা ও বৈষম্যের শিকার।
অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন, এফপিআই আবুল খায়ের, আলাউদ্দিন আল আজাদ, এফডব্লিভি মিতা খাতুন, শিরিন সুলতানা, নাসিমা খাতুন, এফডব্লিএ সাফিয়া খাতুন, নাজমা খাতুনসহ আরও অনেকে।
ময়মনসিংহ-নেত্রকোনা হাইওয়ে রোড থেকে নেমে মিনিট দুয়েক হাঁটার পরই শোনা যেতে থাকে পাখির কিচিরমিচির শব্দ। এরপর সামনের দিকে আরও এগোনোর সঙ্গে সঙ্গে কমতে থাকে ব্যস্ততা শহর, আর বাড়তে থাকে পাখির কিচিরমিচির শব্দ। কাঁচা সড়কটির দুই পাশে একটু পরপর বড় বড় জাম গাছ। গাছগুলোতে ঝুলানো আছে মাটির পাত্র। ওইসব পাত্রে বাসা বেঁধে বাস করে অসংখ্য পাখি।
গ্রামের বাসিন্দারা জানান, ভোরে আর আর সন্ধ্যায় সবচেয়ে বেশি পাখি চোখে পড়ে। পাখির কিচিরমিচির শব্দে তাদের বেলা করে ঘুম থেকে ওঠার সুযোগ নেই। ভোরে পুরো গ্রামের মানুষদের ঘুম ভাঙে কিচিরমিটির শব্দে।
এটি ময়মনসিংহ জেলার তারাকান্দা উপজেলার সাধুপাড়া গ্রামের কথা। ২০১৩ সাল থেকে এ গ্রামটি যেন পাখির অভয় আশ্রম হিসেবে গড়ে ওঠেছে। গ্রামের যুবকরা পরিকল্পিতভাবেই সড়কটির দুই পাশে এবং অনেকের বাড়ির সীমানায় জামগাছ লাগিয়েছিল, যেন পাখি বাস করতে পারে।
এখানেই শেষ হয় সাধুপাড়া গ্রাম নিয়ে পুলকিত হওয়ার গল্প। গ্রামটি যেন গল্পের মতো। সব কিছুই পরিকল্পিত আর গোছানো। হাঁটতে হাঁটতে পথচারীর চোখ আটকে যাবে সাধুপাড়া কৃষক সংগঠনের ঘরটি দেখে। জামগাছের ছায়ায় ছোট আধাপাকা ঘর। সাইনবোর্ডে লেখা ‘ফসলের হাসপাতাল।’ লেখা পড়ে মনে কৌতূহল জাগে। কৌতূহল মেটাতে কথা হয় গ্রামের কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে।
জানা যায়, সাধুপাড়া গ্রামের কৃষকদের নানা কৃতিত্বপূর্ণ গল্পের কথা। এ গ্রামে চাষ হয় বিষমুক্ত সবজি। বেশির ভাগ কৃষক নিজেদের বাড়ির সামনে তৈরি করে কেঁচো কম্পোস্ট সার। আর তাদের গর্ব করার মতো বিষয় হচ্ছে ‘হেকিম ধান’। ধানের জাতের নাম শোনে বিষ্ময় জাগে।
পরে জানা যায়, সাধুপাড়া গ্রামের কৃষক আব্দুল হেকিমের নামে এ ধান। হেকিম ধানের গল্প শোনা যায় স্বয়ং কৃষক আব্দুল হেকিমের মুখ থেকে। তিনি জানান, ১৫ বছর আগে আব্দুল হেকিমের চাচাতো ভাই আব্দুল জব্বার নেত্রকোনা জেলা থেকে ২০ জাতের ধান সংগ্রহ করে আনেন। সেসব ধান চাষ করে তিনি সবচেয়ে উচ্চফলনশীল ধানের জাত চিহ্নিত করার কাজ শুরু করেন। কিন্তু কয়েক বছর পর জব্বার মারা যান। আব্দুল জব্বার মারা যাওয়ার পর ধানের জাত বাছাইয়ের কাজটি শুরু করেন আব্দুল হেকিম। হেকিম একটি এনজিওর সহায়তায় এ কাজ শুরু করেন।
টানা কয়েক বছর ধরে ওইসব জাতের ধান নিজের জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে আবাদ করতে থাকেন। এভাবে তিনি একটি জাতকে সবচেয়ে বেশি ফলনশীল ধান হিসেবে চিহ্নিত করেন। কিন্তু ততদিনে ধানটির জাতের নাম ভুলে যান। হেকিমের বাছাই করা ওই জাতটি পরের বছর অনেকেই চাষ করেন। ফলনও পান ভালো। কয়েক বছরে ওই জাতটি আশাপাশের কয়েকটি গ্রামেও ছড়িয়ে পরে। কিন্তু ধানটির নাম কেউ বলতে পারে না। ওই সময় একদিন গ্রামের কৃষকরা মিলে নাম দেন হেকিম ধান। গত চার বছর ধরে প্রতি বছর আনুষ্ঠাকিভাবে হেকিম ধানের মাঠ দিবস পালন করেন গ্রামের কৃষকরা। ওইদিন বেশ ধুমধাম করে খাওয়া-দাওয়া হয়।
হেকিম ধানের গল্প শোনার পর জানতে চাওয়া হয় ফসলের হাসপাতালের কথা। কৃষক আব্দুল বারিসহ আরও কয়েকজন মিলে জানায়, গ্রামের কোনো কৃষকের ধান খেতে রোগবালাই বা পোকার আক্রমণ দেখা দিলে শুরুতেই গ্রামের সব কৃষক মিলে সংগঠনের কার্যালয়ে পরামর্শ সভা করে। সেখানে ধানের রোগ বা পোকার আক্রমণ নিয়ে কথা বলে সমাধানের চেষ্টা করা হয়। বিশেষ পরামর্শ দেন কৃষক আব্দুল বারি।
কারণ তিনি এ বিষয়ে বিভিন্ন সময় তিনটি প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। যদি কখনো নিজেদের চেষ্টায় সমস্যার সমাধান না মেলে তাহলে উপজেলা কৃষি কার্যালয়ে যান।
আরও জানা যায়, ফসলের মাঠে পোকার আক্রমণ ঠেকানোর জন্যই গ্রামে প্রচুর জামগাছ লাগানো হয়েছে। জামের মৌসুমে জাম খেতে আসে নানা ধরনের পাখি। সেসব পাখি জাম গাছে যাতে বাসা বাঁধতে পারে, সে জন্য গাছে উঁচু ডালে মাটির ছোট ছোট পাত্র ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। ঝুলানো পাত্রে পাখি বাসা বাঁধে। এভাবে গ্রামটি এখন পাখির গ্রাম হয়ে গেছে।
সাধুপাড়া গ্রামের কৃষকরা নিজেদের সবজি চাষে কেনা সার ব্যবহার করেন না। প্রত্যেক কৃষকের বাড়ির সামনে নিজেরাই তৈরি করছেন কেঁচো কম্পোস্ট। এ সার ব্যবহার করছেন নিজেদের প্রয়োজনে। প্রয়োজনের অতিরিক্ত সার বিক্রিও করছেন অনেক কৃষক। তবে কৃষকরা জানায়, পর্যাপ্ত গোবর না থাকায় চাহিদার সমানুপাতে সার তৈরি করা যাচ্ছে না। যে কারণে ধান চাষে রাসায়নিক সার ব্যবহার করতে হচ্ছে।
সাধুপাড়া কৃষক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক নরুল হক বলেন, ‘২০০৯ সালে আমাদের সংগঠন প্রতিষ্ঠা করা হয়। এ সংগঠন কৃষকদের সব ধরনের সমস্যায় পাশে দাঁড়ায়। আমাদের সংগঠন দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে আশপাশের অনেক গ্রামেই এখন কৃষকরা একত্রিত হচ্ছে। গ্রামের তরুণরা সংগঠন করছে।’