বগুড়ার জেলা প্রশাসকের (ডিসি) সরকারি মোবাইল ফোন নম্বর ক্লোন করে উপনির্বাচনে অংশ নেয়া এক প্রার্থীর কাছে অর্থ দাবি করার অভিযোগ উঠেছে।
শনিবার রাতে জেলা প্রশাসকের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘DC Bogura’ নামে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে এ বিষয়ে সতর্কীকরণ পোস্ট দেয়া হয়।
ওই পোস্টে বলা হয়, সম্প্রতি বগুড়া জেলা প্রশাসক ও উপনির্বাচনের রিটার্নিং অফিসারের অফিসিয়াল নম্বর ক্লোন করে বিভিন্ন প্রার্থীর কাছে অর্থ দাবি করা হয়েছে। এজন্য সবাইকে এ বিষয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান করা হচ্ছে, কেউ অর্থ দাবি করলে যাচাই-বাছাই ও তাৎক্ষণিকভাবে বগুড়া জেলা প্রশাসককে জানাতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘শনিবার উপনির্বাচনে এক প্রার্থীকে ফোন দেয় চক্রটি। তার সন্দেহ হলে তিনি আমাকে ফোন দেন, তখন বিষয়টি জানাজানি হয়। সঙ্গে সঙ্গে প্রতারক চক্রের বিষয়ে ফেসবুকে পোস্টসহ আর্থিক লেনদেন না করতে নিষেধ করা হয়েছে।’
জেলা প্রশাসক আরও বলেন, ‘একটি প্রতারক চক্র প্রশাসনের নাম করে অবৈধভাবে টাকা হাতিয়ে নেয়ার জন্য নম্বরটি ক্লোন করে। এ বিষয়ে আগামীকাল আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
তবে প্রার্থীর নাম ও কী পরিমাণ টাকা দাবি করা হয়েছে তা প্রকাশ করেননি সাইফুল ইসলাম।
নওগাঁর মান্দায় দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অদূরে গড়ে তোলা হয়েছে ইটভাটা। ইতোমধ্যে ভাটায় নতুন ইট পোড়ানোর জন্য দেওয়া হয়েছে আগুন। কয়লার সাথে ভাটায় মজুত করা হচ্ছে কাঠের খড়ি। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়বে দুটি বিদ্যালয়ের প্রায় ৫ শতাধিক শিক্ষার্থী। প্রভাবখাটিয়ে ও প্রশাসনের কিছু কর্তাদের ম্যানেজ করে চলেছে এই ইটভাটা এমন অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই ফিক্সট চিমনির সাহায্যে দীর্ঘদিন ধরে এ ভাটায় ইট পোড়ানো হলেও কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। গত রোববার স্কুলের পাশেই ভাটায় ইট পোড়াতে দেখা গেছে।
সরেজমিনে গেলে দেখা গেছে, নওগাঁ-রাজশাহী মহাসড়কের পাশে মান্দা উপজেলার সাবাইহাট এলাকায় ঝাঁঝরের মোড়ে ভাটাটি স্থাপন করেছেন গোসাইপুর গ্রামের কার্তিক চন্দ্র মণ্ডল নামে প্রভাবশালী এক ব্যক্তি। ভাটাটির নাম দেওয়া হয়েছে যমুনা ব্রিকস। এ ভাটার মাত্র ২৫০ মিটার দূরে রয়েছে একরুখী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একরুখী উচ্চবিদ্যালয়। রয়েছে দুটি আম বাগান ও আবাসিক এলাকা। ভাটায় ইট পোড়ানো শুরু হলেই এ দুটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা মাঝে মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়ে। এবারও স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে শিক্ষার্থীরা।
একরুখী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম প্রকাশ না শর্তে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী জানায়, ‘গত বছর ইটভাটা চালু হওয়ার পর হঠাৎ একদিন আমার বন্ধু অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে তাকে ডাক্তারের নিকট গিয়ে চিকিৎসা নিতে হয়েছে।
একরুখী উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানায়, ইট পোড়ানো শুরু হলে শ্বাসকষ্টের সমস্যায় ভুগতে থাকে তাদের অনেক বন্ধু। ভাটা চললে আমাদের ক্লাস করতে সমস্যা হয়। মাথা ব্যথা করে। এ ছাড়া স্কুল মাঠের আমগাছগুলোর ফল নষ্ট হয়ে যায়। পরিপক্ব হওয়ার আগেই পচন ধরে গাছ থেকে ঝরে পড়ে আম।
ইট প্রস্তুত ও পোড়ানো পরিবেশ অধিদপ্তর আইনে (২০১৩-এর সংশোধনী) উল্লেখ রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বাগান ও আবাসিক এলাকার ১ কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। এ আইনের তোয়াক্কা না করেই দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাত্র ২৫০ মিটার দূরে ভাটাটি স্থাপন ও দীর্ঘ ২০ বছর ধরে ইটপোড়ানোর কাজ করে আসছেন কার্তিক চন্দ্র। কোন খুঁটির জোরে ভাটা মালিক আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে ইটপোড়ানোর কাজ করে আসছেন এনিয়ে স্থানীয়দের মাঝে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।
তেঁতুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুল ইসলাম বলেন, ‘ইটভাটার বিষয়ে তেমন কোনো অভিযোগ পাইনি । কিছুদিন আগে যমুনা ব্রিকস নামের ইটভাটার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে গেছে।’
ভাটামালিক কার্তিক চন্দ্র মণ্ডল জানান, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিয়েই ভাটার কার্যক্রম পরিচালনা করছি। এ ছাড়া সবাই যেভাবে অফিস ম্যানেজ করে চলছে সেভাবেই আমিও ভাটা চালাচ্ছি। তিনি বলেন, ‘থুতু উপরে ফেললে নিজের গায়ে পড়বে। সামনে বছর থেকে আর ব্যবসা করব না।’ এ বছর নিউজ না করার জন্য বলেন তিনি।
একরুখী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেজাউল ইসলাম জানান, ৭ বছর হয়েছে আমি এ প্রতিষ্ঠানে যোগদান করেছি। এর অনেক আগে থেকেই বিদ্যালয়ের পাশে ইটভাটাটি রয়েছে। ইটভাটা থেকে যে কালো ধোঁয়া নির্গত হয় তা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক। এতে বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা মাঝে মধ্যেই শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়।
মান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আখতার জাহান সাথী বলেন, ‘যমুনা ব্রিকসের মালিক কার্তিক চন্দ্রের ইটপ্রস্তুত ও পোড়ানোসহ পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র রয়েছে কি না সেটি আমার জানা নেই। এ বিষয়ে তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ ছাড়া লাইসেন্সবিহীন প্রত্যেকটি ইটভাটার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
শত বছরেও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মতো ব্যক্তিত্ববান নারীর জন্ম হবে না। তার মৃত্যুতে দেশের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল। আপসহীন নেত্রী খালেদা জিয়া বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও ঐক্যের প্রতীক বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু।
মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) সকালে দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মৃত্যু সংবাদ শুনে নাটোরের আলাইপুরে জেলা বিএনপি কার্যালয়ের সামনে জমায়েত হন নেতা-কর্মীরা। এ সময় বিএনপির কেন্দ্রীয় এই নেতা আরও বলেন, খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বিএনপি নেতা-কর্মীরা শুধু তাদের অভিভাবককেই হারায়নি। দেশের মানুষ তাদের ঐক্য আর ভরসার প্রতীককে হারিয়েছেন। শত বছরেরও তার এই শূন্যস্থান পূরণ সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, যারা বিনাচিকিৎসায় খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে তাদের নামও ইতিহাসে ঘৃণাভরে লেখা থাকবে। খালেদা জিয়ার আত্মার মাগফিরাত কামনায় দেশবাসীর কাছে দোয়া চান বিএনপির এই নেতা।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচন স্থগিতের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আজ মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) সকাল থেকেই উত্তাল হয়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। প্রশাসনের আকস্মিক এই ঘোষণার প্রতিবাদে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন এবং সকাল নয়টার দিকে উপাচার্য ভবন ঘেরাও করেন। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা নির্বাচনের দাবিতে বিভিন্ন প্রতিবাদী স্লোগান দিতে থাকেন এবং প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তকে ‘অবৈধ’ আখ্যা দিয়ে তা দ্রুত প্রত্যাহারের দাবি জানান।
জানা গেছে, আজ সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জরুরি সিন্ডিকেট সভায় জকসু নির্বাচন স্থগিত করার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম সিন্ডিকেটের এই সিদ্ধান্তের কথা নিশ্চিত করার পরপরই ক্যাম্পাসে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা উপাচার্য ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় তাঁরা ‘প্রশাসনের কালো হাত, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’ এবং ‘অবৈধ সিদ্ধান্ত মানি না, মানবো না’—এমন সব স্লোগান দিয়ে পুরো এলাকা প্রকম্পিত করে তোলেন।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর নির্বাচনের প্রস্তুতি যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে ছিল, ঠিক সেই মুহূর্তে কোনো স্পষ্ট কারণ ছাড়াই নির্বাচন স্থগিত করা সাধারণ শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক অধিকার ক্ষুণ্ন করার শামিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ক্যাম্পাস ও এর আশপাশের এলাকায় অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তবে শিক্ষার্থীরা তাঁদের দাবিতে অনড় রয়েছেন এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে গ্রহণযোগ্য কোনো ব্যাখ্যা বা আশ্বাস না পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসজুড়ে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে।
সারাদেশে জেঁকে বসেছে শীত। তাপমাত্রা কমে যাওয়ার পাশাপাশি ঘন কুয়াশা ও হিমেল বাতাসে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে কিশোরগঞ্জের নিকলীতে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। একই সময়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ঘন কুয়াশা ও শুষ্ক আবহাওয়া বিরাজ করছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত;
ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি জানান: ঠাকুরগাঁওয়ে জেঁকে বসেছে শীত। দুদিন ধরে সূর্যের দেখা মিলছে না। ঘন কুয়াশা ও হিমেল হাওয়ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে স্বাভাবিক জনজীবন। গতকাল সোমবার সকালে জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।
টানা শীতে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ। দিনমজুর ও নিম্ন আয়ের শ্রমজীবীরা। শীতের কারণে কাজের সুযোগ কমে যাওয়ায় অনেকে পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে। শীত থেকে বাঁচতে আগুন জ্বালিয়ে কিংবা মোটা কাপড় পরে কোনোরকমে দিন কাটাচ্ছেন তারা। এদিকে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। চিকিৎসকরা শিশু ও বয়স্কদের বিশেষ সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) মো. আলমগীর কবীর জানান, আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী ঠাকুরগাঁওয়ে ভোরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে মাত্র ১০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বোচ্চ ২৪ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
তিনি জানান, এ অবস্থায় শীতজনিত ক্ষতি এড়াতে কৃষকদের প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে বোরো বীজতলা, শাক-সবজি ও আলু খেত কুয়াশা ও ঠাণ্ডা বাতাস থেকে রক্ষায় নিয়মিত সেচ, খেত পরিষ্কার রাখা এবং প্রয়োজনে খড় বা পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি জানান: গতকাল সোমবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে কিশোরগঞ্জে। গতকাল সোমবার সকালে জেলার হাওর উপজেলা নিকলীতে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসে। এর আগের দিন রোববার এখানে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
নিকলী প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জাহেদুল ইসলাম মাসুদ বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, গতকাল সোমবার সকাল ৯টায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয় নিকলীতে। তিনি আরও জানান, গত বছরও শীত মৌসুমে দুদিন দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নিকলীতে রেকর্ড হয়েছিল। চলতি বছরও টানা দুদিন ধরে এখানেই দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হচ্ছে।
তাপমাত্রা কমে যাওয়ার পাশাপাশি কিশোরগঞ্জ জেলায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। কয়েকদিন ধরে সূর্যের দেখা মিলছে না। টানা শৈত্যপ্রবাহে জনজীবন কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে। অতিরিক্ত ঠাণ্ডায় সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। দৈনন্দিন কাজে বের হতে না পেরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা।
এদিকে শৈত্যপ্রবাহের প্রভাব পড়েছে কৃষি খাতেও। বোরো মৌসুমের শুরুতেই অতিরিক্ত ঠাণ্ডায় ধানের চারা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় দুশ্চিন্তায় রয়েছেন কৃষকরা।
তিনি বলেন, ‘শীত যদি আরও বাড়তে থাকে, তাহলে আমাদের জন্য রোগীদের সেবা দেওয়া চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠবে।’
ইউসুফ হোসেন অনিক, ভোলা থেকে জানান: ভোলায় জেঁকে বসেছে তীব্র শীত। গত কয়েকদিন ধরে জেলাজুড়ে হাড়কাঁপানো শীত ও ঘন কুয়াশা বিরাজ করছে। বিশেষ করে মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীবেষ্টিত এই জেলায় উত্তরীয় হিমেল হাওয়ার কারণে কনকনে শীত অনুভূত হচ্ছে।
ঘন কুয়াশার চাদরে আকাশ ঢাকা থাকায় গত দুদিন ধরে দিনের অধিকাংশ সময় সূর্যের দেখা মিলছে না। ফলে দিনের তাপমাত্রাও উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। দুদিন ধরে সূর্যের দেখা না মেলায় স্থবির হয়ে পড়েছে স্বাভাবিক জনজীবন। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন নিম্নআয়ের মানুষ, যারা জীবিকার তাগিদে শীত উপেক্ষা করেই বাইরে বের হতে বাধ্য হচ্ছেন। তীব্র শীতে সাধারণ মানুষ অনেকটা গৃহবন্দি হয়ে পড়েছেন। বিশেষ করে ভোলা সদর, দৌলতখান, বোরহানউদ্দিন, তজুমদ্দিন, মনপুরা ও চরফ্যাশনসহ উপকূলীয় এলাকার খেটে খাওয়া মানুষ, জেলে এবং দিনমজুররা চরম বিপাকে পড়েছেন। প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া কেউ ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন না।
ঘন কুয়াশার কারণে ভোলা-লক্ষ্মীপুর ও ভোলা-বরিশাল রুটে ফেরি ও লঞ্চ চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। মহাসড়কে হেডলাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল করতে দেখা যাচ্ছে। শীত থেকে বাঁচতে ফুটপাত ও মার্কেটে গরম পোশাকের দোকানে ভিড় বাড়লেও সুযোগ বুঝে দাম বাড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে।
আবহাওয়া অফিস সূত্র জানায়, গতকাল সোমবার সকাল থেকে জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। যা গত রোববার ছিল ১৪ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
স্থানীয়রা জানান, তিন থেকে চার দিন ধরে জেলায় শীতের দাপট বেড়েছে। সকালে কুয়াশা কিছুটা কমলেও বেড়েছে ঠাণ্ডা। তাপমাত্রা কমার চেয়েও বেশি অসুবিধা হচ্ছে হিমশীতল বাতাসে। হিমেল বাতাসে দিনভর অনুভূত হয় হাড় কাঁপানো শীত।
এদিকে কয়েকদিন ধরে শীতের তীব্রতা হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় রাস্তাঘাটে শ্রমজীবী মানুষের দেখা মিললেও সংখ্যায় ছিল স্বাভাবিক। সময়ের চেয়ে ছিল অনেক কম। হঠাৎ করেই জেলায় শীতের প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেন না কেউ। শীতের তীব্রতা বাড়ায় হাসপাতালেও বেড়েছে রোগীর চাপ। ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন শিশু ও বয়স্করা।
সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকায় বরিশালে সব ধরনের সবজির দাম কমলেও বেড়েছে কাঁচামরিচ ও শসার দাম। গত সপ্তাহের তুলনায় পাইকারি বাজারে অন্যান্য সবজির দাম স্থিতিশীল থাকলেও ২০-৩০ টাকা বেড়েছে কাঁচামরিচ ও শসার দাম। সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) সকালে বরিশাল নগরীর একমাত্র পাইকারি সবজির বাজার বহুমুখী সিটি মার্কেট ও কয়েকটি খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।
পাইকারি সবজির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ফুলকপি গত সপ্তাহের দামে ১০-১২ টাকা, বাঁধাকপি ১০ টাকা, শিম গত সপ্তাহে ২৫ টাকা, এ ছাড়া কাঁচামরিচ গত সপ্তাহে ৪০-৪৫ টাকা বিক্রি হলেও এ সপ্তাহে বেড়ে ৬৫ টাকা, ও শসা গত সপ্তাহে ৪০-৪৫ টাকা বিক্রি হলেও এ সপ্তাহে ৬০ টাকা বিক্রি হচ্ছে, বেগুন ৩০ টাকা, করলা ৩০ টাকা, বরবটি ৩৫ টাকা, পেঁপে গত সপ্তাহে ১৫ টাকা, লাউ ২০-২৫ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ২৫ টাকা, টমেটো ৬০ টাকা, গাজর ৩০-৩৫ টাকা, কাঁচকলা ২০ টাকা ও লেবু ১৫ টাকা হালি বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে পোর্ট রোড বাজার, বাংলাবাজার, সাগরদী বাজারসহ বেশ কিছু খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ফুলকপি ১৫-২০ টাকা, বাঁধাকপি ১৫-২০ টাকা, শিম ৪০-৪৫ টাকা, কাঁচামরিচ ৮০ টাকা, শসা ৮০ টাকা, বেগুন ৩৫-৪০ টাকা, করলা ৩৫ টাকা, বরবটি ৪০ টাকা, পেঁপে ২০ টাকা, লাউ ৩০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৩০ টাকা, টমেটো ৮০ টাকা, গাজর ৪০ টাকা, কাঁচকলা ২৫ টাকা ও লেবু ২০ টাকা হালি বিক্রি হচ্ছে।
এ ছাড়া মাংসের বাজারে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে কেজি ১৫০-১৬০ টাকা, সোনালি মুরগি ২৬০-২৭০ টাকা, লেয়ার মুরগি ২৫০-২৭০ টাকা দরে। গরুর মাংস ৭৫০ টাকা ও খাসির মাংস ১,১৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
অপরদিকে বিভিন্ন মাছ গত সপ্তাহের দামেই বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে রুই মাছ ৩০০-৪৫০ টাকা, টেংরা মাছ ৫০০-৬০০ টাকা, ঘেরের তেলাপিয়া ১২০-১৪০ টাকা, পাঙাশ মাছ ১৮০-২২০ টাকা, চিংড়ি প্রকারভেদে ৫৫০-৮৫০ টাকা, পাবদা ২৫০-৪০০ টাকা, মাঝারি ভেটকি ৪০০ টাকা।
নগরীর বাংলাবাজারের খুচরা সবজি বিক্রেতা তৌহিদ জানান, এখন সব সবজির সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে তাই দামও নাগালের মধ্যে। তবে পাইকারি বাজারের তুলনায় খুচরা সবজির দাম কিছুটা বেশি হবে। কারণ পাইকারি বাজার থেকে সবজি কিনে লেবার খরচ, ভ্যান ভাড়া দিয়ে সবজি আনতে হয়। পরে বাজারে বিক্রি করতে হলে ইজারা, বিদ্যুৎ বিল দিতে হয়।
নতুন বছরের আগম উপলক্ষে গত দুই সপ্তাহ ধরে পর্যটককে মুখরিত মৌলভীবাজারের পর্যটনকেন্দ্রগুলো। পৌষের কনকনে শীতে সবুজের সান্নিধ্য নিতে প্রতি বছর এমন সময় পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত থাকে চায়ের রাজ্য মৌলভীবাজার। এ বছরেও জেলার বিশেষ পর্যটনকেন্দ্রেগুলোতে দেশের নানা প্রান্ত থেকে ভিড় জমান পর্যটকরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, জেলার উল্লেখযোগ্য পর্যটনকেন্দ্র কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, নয়নাভিরাম মাধবপুর লেক, মাধবকুণ্ড জল প্রভাত, হামহাম জল প্রভাত, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস-ঐতিহ্যের বাহক বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ-সিপাহী হামিদুর রহমান স্মৃতিসৌধ, শ্রীমঙ্গলের চা-বাগান, বধ্যভূমি, মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত ও শমশেরনগর গল্ফ মাঠে পর্যটকরা ভিড় করছেন। দেশি পর্যটকের পাশাপাশি বিদেশি পর্যটক রয়েছেন। শীত মৌসুমের ডিসেম্বর মাসে সবচেয়ে বেশি পর্যটক আসেন এই জেলায়। পর্যটকরা জিপ গাড়ি যা স্থানীয়ভাবে নাম দেওয়া হয়েছে চান্দের গাড়ি দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের টিকিট কাউন্টার থেকে জানা গেছে, গত দুই সপ্তাহে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে প্রায় ১০ হাজার পর্যটক প্রবেশ করেছেন এর মধ্যে বিদেশি পর্যটক রয়েছেন। জানুয়ারি ২০২৬ সালের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত পর্যটকদের চাপ থাকবে।
এদিকে পর্যটকদের নিরাপত্তায় পর্যটক পুলিশের পাশাপাশি জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা। গত দুই সপ্তাহ ধরে ট্যুরিস্ট পুলিশ পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য ব্যাপক কাজ করে যাচ্ছে। প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটনকেন্দ্রে পুলিশের বিশেষ টহল টিম রয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই পর্যটকরা ভ্রমণ করে যাচ্ছেন এ জেলা।
পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, বিশেষ করে শীতের এই সময়ে সব ধরনের পর্যটন ব্যবসা আশানোরূপ ভালো হয়েছে। প্রতি বছর ডিসেম্বর ও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে প্রচুর পর্যটক আসেন এই অঞ্চলে।
চট্টগ্রাম থেকে নিজ পরিবারে আগত পর্যটক নজমুল ইসলাম বলেন, ‘আমি মৌলভীবাজার কয়েকবার এসেছি। এ বছর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এসেছি। এখানকার সবুজ পরিবেশ মনোমুগ্ধকর। এ জেলায় একসাথে অনেকগুলো পর্যটনকেন্দ্র দেখা যায়। তবে সরকারিভাবে পর্যটনশিল্পের উন্নতির জন্য ব্যাপক উন্নয়ন প্রয়োজন। বিশেষ করে স্থানীয়ভাবে একটি পর্যটনকেন্দ্র থেকে অন্য পর্যটনকেন্দ্রে যাওয়ার জন্য ট্যুরিস্ট যাতায়াত ব্যবস্থার প্রয়োজন।’
শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ জোনের ট্যুরিস্ট পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুল হাসান চৌধুরী বলেন, ‘নিরাপদে পর্যটকরা যাতে চলাচল করতে পারেন এ জন্য সারা জেলায় ট্যুরিস্ট পুলিশ কাজ করছে। বিশেষ করে জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি পর্যটক আসেন শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জে। পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য সব পর্যটন স্পটগুলোতে নজরদারি বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।’
স্বাস্থ্যসেবায় অবদান রাখায় সেরা স্বাস্থ্য কর্মকতা নির্বাচিত হয়েছেন নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকতা ডা ইশরাত জাহান। সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) দুপুরে নোয়াখালী জেলা স্বাস্থ্য বিভাগী সম্মেলনে সিভিল সার্জন ডা মরিয়ম সিমি সেরাদের মাঝে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন।
২০২৫ সালে নোয়াখালী জেলা সেরা মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ইপিআই) ইলিয়াছ মামুন এ বিভাগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় তাকেও সেরা নির্বাচিত করা হয়। সে সোনাইমুড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্মরত রয়েছেন।
জানা গেছে, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা ইশরাত জাহান যোগদানের পর থেকে হাসপাতালটিকে দালালমুক্ত করাসহ সেবার মান বেড়েছে। তার প্রচেষ্টায় এ হাসপাতালে অত্যাধুনিক এক্স-রে মেশিন সংযোজন করা হয়।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা ইশরাত জাহান বলেন, ‘আমি এখানে যোগদানের পর থেকে হাসপাতালকে দালাল মুক্ত রাখতে চেষ্টা করছি। পরীক্ষা-নিরীক্ষার মেশিনগুলো সচল করেছি।’
কবিতা আবৃতি, সাহিত্য আলোচনা, মেধাবী শিক্ষার্থীদের সম্মাননা, প্রবন্ধ ও মানপত্র পাঠসহ নানা আয়োজনে নড়াইলের কৃতিসন্তান কবি বিপুল বিশ্বাসের ৫৬তম জন্মদিন পালন করা হয়েছে। সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) বিকেলে সদর উপজেলার নলদীরচর গ্রামের চন্দ্রাকুঞ্জ রিসোর্টে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
গায়ের কবি নামে খ্যাত বিপুল বিশ্বাসের বাড়ি নড়াইল সদর উপজেলার কলোড়া ইউনিয়নের শিমুলিয়া গামে। বিপুল বিশ্বাস ১৯৬৯ সালের ৫ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তার এ পর্যন্ত তিনটি কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে।
জন্মদিন উপলক্ষে কবি বিপুল বিশ্বাসকে নিয়ে প্রবন্ধ রচনা ও পাঠ করেন, মাগুরা বেরইল নাজির আহম্মেদ ডিগ্রি কলেজের সহকারি অধ্যাপক ধ্রুব কুমার দাম। মানপত্র পাঠ করেন মাবিয়া খানম।
জানা যায়, কবির জন্মদিনকে স্মরণীয় করে রাখতে এলাকার আটটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নবম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকারী মেধাবী শিক্ষার্থীদের সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়। এ ছাড়া বেসরকারি সংস্থা সেতুবন্ধন ফাউন্ডেশন কবিকে সম্মাননা স্মারক প্রদান করে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন, নড়াইল জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (উপসচিব) মো. আছাদুজ্জামান। বিশেষ অতিথি ছিলেন, জেলা কালচারাল কর্মকর্তা আবদুল রাকিবিল বারী, চিত্রশিল্পী বলদেব অধিকারী, অ্যাডভোকেট রমা রানী রায়, এস,এম সুলতান স্মৃতি সংগ্রহশালার কিউরেটর চিত্রশিল্পী তন্দ্রা মুখার্জি, জেলা শিক্ষা অফিসের গবেষণা কর্মকর্তা বিকাশ কুসুম চক্রবর্তী, গোবরা মিত্র মহাবিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রবীন্দ্রনাথ অধিকারী, নড়াইল কালেক্টরেট স্কুলের প্রধান শিক্ষক কবিউজির আলী।
সভাপতিত্ব করেন, খুলনা সরকারি ব্রজলাল কলেজের (বিএল) ইংরেজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান (অব) অধ্যাপক ইকবাল হোসেন। নড়াইল কবিতা আসরের প্রচার সম্পাদক এসকে সরকারের সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য দেন, আগদিয়া-শিমুলিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আহাদ আলী মোল্যা। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন কবি বিপুল বিশ্বাস।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি নড়াইল জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (উপসচিব) আছাদুজ্জামান বলেন, ‘অপরকে দেখে হিংসা নয়, বরং প্রতিযোগীর জায়গা থেকে নিজেকে ভাবতে হবে। নিজেকে তৈরি করতে হবে।’ তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘বর্তমানে ছেলে-মেয়েরা বই থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা তারা মুঠোফোনে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকে। খাওয়া-দাওয়ার কথাও ভুলে যায়।’
বরগুনার উপকূলীয় শুঁটকি পল্লীগুলোতে কর্মচাঞ্চল্য ফিরলেও টানা শৈত্যপ্রবাহ ও দীর্ঘদিন সূর্যের দেখা না মেলায় শুঁটকি উৎপাদনে মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটছে। তালতলী উপজেলার আশারচর, নিদ্রারচরসহ বিভিন্ন চরাঞ্চলে হাজারো জেলে, শ্রমিক ও ব্যবসায়ী মৌসুমের শুরুতেই কাজে নেমেছেন; তবে আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাবে কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে না।
বরগুনা জেলায় শুঁটকি উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ১২ থেকে ১৫ হাজার নারী-পুরুষ। নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চার মাসই শুঁটকির প্রধান মৌসুম। সাধারণত তিন থেকে চার দিনের টানা রোদে মাছ ভালোভাবে শুকিয়ে ওঠে। কিন্তু চলতি মৌসুমে একাধিক দফা শৈত্যপ্রবাহ ও ঘন কুয়াশার কারণে সূর্যের দেখা না মেলায় শুকানোর প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে।
মিঠাপানির দেশি মাছের শুঁটকির জন্য পরিচিত আশারচর ও নিদ্রারচরে এ মৌসুমে সহস্রাধিক শ্রমিক কাজ করছেন। প্রতিদিন বিভিন্ন প্রজাতির মাছ শুকানোর চেষ্টা করা হলেও রোদ না থাকায় মাছ ঠিকমতো শক্ত হচ্ছে না। এতে নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে, পাশাপাশি উৎপাদন খরচও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
শুঁটকিপল্লীতে কাজ করা শ্রমিক হালিম মিয়া বলেন, ‘নদীতে মাছ ধরা পড়লেও রোদ না থাকায় ঠিকমতো শুঁটকি করা যাচ্ছে না। অনেক সময় মাছ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এতে আমাদের আয় কমে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।’
সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রায় ৫০টি অস্থায়ী টংঘরে জেলে ও শ্রমিকরা বসবাস করছেন। নারী ও শিশু শ্রমিকরা নদী থেকে আনা কাঁচা মাছ পরিষ্কার করে মাচায় সাজাচ্ছেন। কিন্তু দিনের পর দিন সূর্য না ওঠায় শুকানোর সময় দ্বিগুণেরও বেশি লাগছে।
শুঁটকি ব্যবসায়ী আশরাফ আলী জানান, ‘এ বছর আমরা কোনো রাসায়নিক বা অতিরিক্ত লবণ ছাড়াই শুঁটকি উৎপাদনের চেষ্টা করছি। কিন্তু রোদ না থাকলে ভালো মানের শুঁটকি করা কঠিন হয়ে পড়ে। স্থায়ী শুকানোর অবকাঠামো থাকলে এই সমস্যার অনেকটাই সমাধান হতো।’
ব্যবসায়ীদের তথ্য অনুযায়ী, এসব পল্লীতে ২৫ থেকে ৩০ প্রজাতির মাছের শুঁটকি তৈরি হয়। বর্তমানে ছুরি মাছের শুঁটকি প্রতি কেজি ৭০০–৮০০ টাকা, রূপচাঁদা ১,০০০–১,৫০০ টাকা এবং লইট্টা ৬০০–১,০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় বাজারে সরবরাহ অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে।
শুঁটকি পল্লীর আরেক বড় সংকট যোগাযোগ ব্যবস্থা। প্রধান সড়ক থেকে প্রায় এক কিলোমিটার ভাঙাচোরা রাস্তার কারণে ট্রাক প্রবেশ করতে পারে না। এতে পরিবহন ব্যয় বাড়ছে এবং ক্ষতির পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
শুঁটকি ব্যবসায়ী হানিফ হাওলাদার বলেন, ‘আমরা নিয়মিত রাজস্ব দিচ্ছি, কিন্তু অবকাঠামোগত কোনো উন্নয়ন নেই। টানা শীত আর রাস্তাঘাটের সমস্যায় ব্যবসা টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে যাচ্ছে।’
নারী শ্রমিকদের দুর্ভোগও কম নয়। দুই যুগ ধরে শুঁটকি পল্লীতে কাজ করা পিয়ারা বেগম বলেন, ‘নারীদের জন্য কোনো স্থায়ী টয়লেট বা স্যানিটেশন ব্যবস্থা নেই। শীতের মধ্যে এসব কষ্ট আরও বেড়ে যায়।’
তালতলীর সোনাকাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফরাজি মো. ইউনুছ বলেন, ‘শুঁটকি শিল্প এক সময় এই অঞ্চলের অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি ছিল। কিন্তু অবকাঠামো সংকট, পরিবেশ দূষণ ও প্রাকৃতিক প্রতিকূলতায় শিল্পটি হুমকির মুখে পড়েছে।’
বরগুনার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ জিয়া উদ্দিন বলেন, ‘শুঁটকি শিল্প একটি সম্ভাবনাময় খাত। আবহাওয়া জনিত সমস্যা ও অবকাঠামোগত সংকট নিরসনে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে।
তালতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.জাহিদুল ইসলাম জানান, ‘শুঁটকি পল্লীর সমস্যাগুলো গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। শিল্পটিকে টিকিয়ে রাখতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সম্ভাব্য সব উদ্যোগ নেওয়া হবে।’
সংশ্লিষ্টদের মতে, টানা শৈত্যপ্রবাহে সূর্যের অভাবে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় দ্রুত বিকল্প শুকানোর ব্যবস্থা, উন্নত যোগাযোগ অবকাঠামো, শ্রমিকদের মানবিক সুযোগ-সুবিধা এবং সরকারি ব্যবস্থাপনায় রপ্তানির সুযোগ নিশ্চিত না হলে উপকূলের এই ঐতিহ্যবাহী শিল্প অচিরেই অস্তিত্ব সংকটে পড়বে।
কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ৫০টি বসতঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এতে শতাধিক রোহিঙ্গা পরিবার নিঃস্ব হয়ে পড়েছে।
সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) ১৬ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মুহাম্মদ কাউছার সিকদার বলেন, ‘গত রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে লেদা ২৪ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। প্রায় ২ ঘণ্টার চেষ্টায় রাত ১টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।’
১৬ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মুহাম্মদ কাউছার সিকদার আগুনের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে গ্যাস সিলিন্ডার থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। তবে ঘটনাটি দুর্ঘটনা নাকি পরিকল্পিত- তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
ক্যাম্পের বাসিন্দা ছৈয়দ আলম জানান, অগ্নিকাণ্ডে ৫০টির বেশি ঘর পুড়ে গেছে। অসহায় রোহিঙ্গারা সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। তাদের দ্রুত মানবিক সহায়তা প্রয়োজন।
আগুন লাগার পর প্রাণ বাঁচাতে পরিবার-পরিজন নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটে যান ক্যাম্পের বাসিন্দারা। বসতঘরের সঙ্গে পুড়ে গেছে কাপড়চোপড়, আসবাবপত্র ও খাদ্যসামগ্রী। আগুনে সব হারিয়ে অনেকের পুড়ে যাওয়া ঘরের ভস্মস্তূপে কিছু পাওয়ার আশায় খুঁজতে দেখা গেছে। তবে দাঁড়িয়ে আছে শুধু বসতঘরের পিলারগুলো।
রোহিঙ্গা নারী আলমরজান বলেন, ‘হঠাৎ ঘরের ছাউনিতে আগুন দেখে দিশাহারা হয়ে পড়ি। আগে পরিবারের লোকজনকে সরিয়ে নেই। এরপর আগুন নেভানোর চেষ্টা করি। কিন্তু আগুন দ্রুত চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। পরে ফায়ার সার্ভিস এসে আগুন নেভায়।’
টেকনাফ মডেল থানার ওসি মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, খবর পেয়ে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় প্রায় ২ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। এতে ৫০ থেকে ৬০টি ঘর পুড়ে গেছে।
সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) সকালে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন এনজিও প্রতিনিধি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাতাবরণ ছাড়া দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়।
সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) সকালে রংপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে ‘টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জন এবং নৈতিক শিক্ষার প্রসারে মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় আয়োজিত রংপুর জেলা কর্মশালা-২০২৫-এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম ৬ষ্ঠ পর্যায় প্রকল্পের অধীনে হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট এ কর্মশালা আয়োজন করে।
ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সহিষ্ণুতা একটি রাষ্ট্রের উন্নয়নের পূর্বশর্ত। সামাজিক স্থিতিশীলতা নির্ভর করে সাম্প্রদায়িক সৌহার্দ্যের ওপর। এ দেশে নানা ধর্মের মানুষের বসবাস। সবাইকে নিয়েই আমাদের উন্নয়নের পথে এগিয়ে যেতে হবে। এখানে যদি অস্থিরতা কিংবা অসন্তোষ থাকে তাহলে বৈদেশিক বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে। তিনি সকলের মনকে উদার ও দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রসারিত করার অনুরোধ জানান।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক মেহেদী হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ কর্মশালায় হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান শ্রী তপন চন্দ্র মজুমদার, উপদেষ্টার একান্ত সচিব (যুগ্ম সচিব) ছাদেক আহমদ, প্রকল্প পরিচালক নিত্য প্রকাশ বিশ্বাস, হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের সচিব দেবেন্দ্র নাথ উরাঁও, পুলিশ সুপার মো. মারুফাত হোসেন ও হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টি পরিতোষ চক্রবর্তী বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন।
এ প্রকল্পের অধীনে দেশের ৭,৪০০টি মন্দিরভিত্তিক শিক্ষাকেন্দ্র পরিচালিত হচ্ছে। এর মধ্যে ৫ হাজার প্রাক-প্রাথমিক, ১ হাজার ৪০০ ধর্মীয় বয়স্ক ও ১ হাজার ধর্মীয় শিশুশিক্ষাকেন্দ্র রয়েছে। এ সকল শিক্ষাকেন্দ্রের মাধ্যমে প্রতি বছর ২ লাখ ২২ হাজার শিক্ষার্থী প্রাক-প্রাথমিক ও ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাচ্ছে। এ প্রকল্পের আওতায় রংপুর জেলায় ১৪৯টি শিক্ষাকেন্দ্র রয়েছে। এ প্রকল্প শিক্ষা প্রসারের পাশাপাশি নারীর ক্ষমতায়ন ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি তথা দেশের বেকারত্ব দূরীকরণে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।
দিনব্যাপী এ কর্মশালায় রংপুর জেলার প্রকল্পের অধীনে পরিচালিত শিক্ষাকেন্দ্রগুলোর শিক্ষক, প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং জেলা প্রশাসন, জেলা ও উপজেলা মনিটরিং কমিটির সদস্য, শিক্ষার্থী অভিভাবক, শিক্ষাকেন্দ্র রয়েছে এরূপ মন্দিরের সভাপতি বা সম্পাদক, সনাতন ধর্মীয় প্রতিনিধি, ট্রাস্টি ও সাংবাদিকদের অংশগ্রহণ করেন।
পিরোজপুর জেলা সরকারি চাকুরীজীবী কল্যাণ পরিষদ (১১–২০ গ্রেড) এর নবনির্বাচিত কার্যনির্বাহী পরিষদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবিবার (২৮ ডিসেম্বর) সকালে জেলা প্রশাসকের শহীদ আব্দুর রাজ্জাক-সাইফ মিজান স্মৃতি সভাকক্ষে এ শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. আলাউদ্দীন ভূঞা জনী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. ইকবাল কবির। অনুষ্ঠানে নবনির্বাচিত কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্যদের শপথ বাক্য পাঠ করান জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. ইকবাল কবির।
শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে সভাপতি মোঃ শামসুদ্দোহা বলেন, নবনির্বাচিত কার্যনির্বাহী পরিষদ সরকারি চাকুরীজীবীদের যৌক্তিক দাবি আদায়, পেশাগত মর্যাদা রক্ষা এবং কল্যাণমূলক কার্যক্রম জোরদারে কাজ করবে। সংগঠনের সকল সদস্যকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
সাধারণ সম্পাদক মোঃ সাদ্দাম হোসেন বলেন, পরিষদের কার্যক্রমকে আরও গতিশীল ও আধুনিক করতে পরিকল্পিত উদ্যোগ নেওয়া হবে। সদস্যদের বিভিন্ন সমস্যা নিরসনে প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করার অঙ্গীকার করেন তিনি। পাশাপাশি সকল সদস্যের সহযোগিতা কামনা করেন।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে আসন সমঝোতা করতে গিয়ে গভীর সংকটে পড়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলে দেখা দিয়েছে অস্থিরতা। পদত্যাগের মিছিলও বড় হচ্ছে। এতে বড় ধরনের ভাঙনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে দলটিতে। ইতোমধ্যে জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতার বিরোধিতা করে দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের কাছে ৩০ জন নেতা স্মারকলিপি দিয়েছেন।
এনসিপি সূত্র জানায়, জামায়াতের সঙ্গে জোট গঠনের বিরোধিতা করে গত শনিবার ৩০ নেতার চিঠি দেওয়ার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর জোটের সমর্থনে প্রচারণা শুরু হয়। এরপর থেকেই একের পর এনসিপিতে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। ইতোমধ্যে দলটি থেকে পদত্যাগ করেছেন বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা। গতকাল রোববার পদত্যাগ করেন দলটির যুগ্ম আহ্বায়ক তাজনূভা জাবীন। তাকে ঢাকা-১৭ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছিল এনসিপি। একইদিন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন। রোববার সন্ধ্যায় ফেসবুকে এ ঘোষণা দেন তিনি।
মনিরা শারমিন লিখেছেন, ‘নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের আকাঙ্ক্ষায় গড়া দল জাতীয় নাগরিক পার্টি গণ অভ্যুত্থান পরবর্তী একমাত্র মধ্যপন্থি রাজনীতির ভরসাস্থল ছিল। এই দল থেকে ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনে নওগাঁ ৫ থেকে আমি মনোনীত প্রার্থী। তবে মনোনয়ন পাওয়ার আগে আমি জানতাম না, এই দল জামায়াতের সাথে ৩০ সিটের আসন সমঝোতা করবে। আমি জানতাম, ৩০০ আসনে প্রার্থী দিয়ে একক নির্বাচনের সিদ্ধান্ত ছিল। যেহেতু এখন দলের পজিশন পরিবর্তন হয়েছে, তাই আমি নিজেকে নির্বাচন থেকে প্রত্যাহার করছি। নির্বাচনে আমি অংশগ্রহণ করছি না। আমি এনসিপির স্বতন্ত্র শক্তিতে বিশ্বাসী। দলের প্রতি আমার কমিটমেন্ট আমি ভাঙি নাই। কিন্তু এই মুহূর্তে দলের প্রতি কমিটমেন্ট এর চেয়ে আমার গণ অভ্যুত্থানের প্রতি কমিটমেন্ট ও দেশের মানুষের প্রতি কমিটমেন্ট বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
এর আগে শনিবার সন্ধ্যায় দল থেকে সরে দাঁড়ান তাসনিম জারা। তিনি দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব ও রাজনৈতিক পর্ষদের সদস্য ছিলেন। এরও আগে বৃহস্পতিবার পদত্যাগ করেন দলটিতে জামায়াতবিরোধী অংশের নেতা হিসেবে পরিচিত মীর আরশাদুল হক।
গত বৃহস্পতিবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক আবদুল কাদের ফেসবুক পোস্টে লেখেন, তারুণ্যের রাজনীতির কবর রচিত হতে যাচ্ছে। এনসিপি অবশেষে জামায়াতের সঙ্গেই সরাসরি জোট বাঁধছে। সারাদেশে মানুষের, নেতাকর্মীদের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে জলাঞ্জলি দিয়ে গুটিকয়েক নেতার স্বার্থ হাসিল করতেই এমন আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। আর এর মধ্য দিয়ে কার্যত এনসিপি জামায়াতের গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।
এনসিপির শীর্ষ এ নেতা আরও বলেন, যখনই জামায়াতের সঙ্গে এনসিপির জোটের ঘোষণা আসবে, সঙ্গে সঙ্গেই প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে পদত্যাগ করব। পদত্যাগ করেই সবার জন্য সব কিছু ওপেনভাবেই বলব। এখন চুপ করে আছি। আমরা শেষ পর্যন্ত আশা করছিলাম পার্টির (এনসিপি) টনক নড়বে। তারা সঠিক পথে ফেরত আসবে। যেদিন জোটের ঘোষণা হবে-সেদিন থেকে মিডিয়াও আমাদের নিয়মিত পাবে।
এ প্রসঙ্গে এনসিপির এক শীর্ষ নেতা বলেন, জামায়াত-এনসিপি জোট হবে এমনটা দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনায় ছিল। কিন্তু গত ১ সপ্তাহে দল দুটির মধ্যে আলোচনা-বৈঠক, এক প্রকার দিন-রাতই চলছিল। দুই দলের শীর্ষ নেতাদের সমন্বয়ে আসন ভাগাভাগির বিষয়টি ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। শুক্রবার রাতেই আসন ভাগাভাগির বিষয়টি এক প্রকার চূড়ান্ত হয়।
এদিকে ফেসবুক পোস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি রিফাত রশিদ লেখেন, ৩০ আসনে এনসিপি জামায়াতের সঙ্গে জোটে গেলে ব্যাপারটা ‘আত্মঘাতী’ হবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, গণঅভ্যুত্থানের স্টেকহোল্ডার হিসেবে এনসিপিকে জোটে নিলে জামায়াত কৌশলগতভাবে লাভবান হতে পারে। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে এনসিপির ভেতরে আরও বড় বিভাজন তৈরি হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. শামিম রেজা বলেন, ‘জামায়াতের অতীত ভূমিকা নিয়ে যে রাজনৈতিক বিতর্ক আছে, এনসিপিকে সঙ্গে নিয়ে তারা সেটি আড়াল করার চেষ্টা করবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো—এনসিপি আদর্শিকভাবে কোথায়? তারা যে মধ্যপন্থার দল হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিল, এমন জোটের পর সেই ভাবমূর্তি বজায় রাখা নিকট ভবিষ্যতে কঠিন হয়ে পড়বে।’
জামায়াতের সঙ্গে জোট এনসিপির জন্য নির্বাচনী কৌশল নাকি রাজনৈতিক আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত—সেই প্রশ্নে এখন তোলপাড় চলছে রাজনীতির মাঠে।