সাত ঘণ্টারও বেশি সময় পর নিয়ন্ত্রণে এসেছে মোংলা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকার (ইপিজেড) ভিআইপি লাগেজ ফ্যাক্টরির আগুন। নৌবাহিনী, খুলনা, বাগেরহাট ও মোংলা ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল সার্ভিসের ১১টি ইউনিট কাজ করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে রাতেই নিয়ন্ত্রণে এলেও আগুন লাগার ২৪ ঘণ্টা পরও মাঝে মাঝে আগুনের স্ফুলিঙ্গ দেখা গেছে ওই কারখানা এলাকায়।
ফায়ার সার্ভিস ও কারখানা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মঙ্গলবার বিকেল ৩টার দিকে ওই কারখানায় আগুন লাগে। পরে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে রাত ১০টার দিকে। পুরোপুরি নিভতে সময় লাগে আরও কয়েক ঘণ্টা। এ ঘটনায় চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে মোংলা ইপিজেড কর্তৃপক্ষ।
বাগেরহাট ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক গোলাম সরোয়ার বলেন, ‘নৌবাহিনীসহ ফায়ার সার্ভিসের ১১টি ইউনিট আগুন নেভাতে কাজ করে। ফ্যাক্টরিতে কাপড়, পলিথিনসহ নানা ধরনের পেট্রোলিয়াম পণ্য রয়েছে। এ কারণে আগুন নেভাতে সময় লাগে। আগুনে হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।’
মোংলা ইপিজেডের এই কারখানায় আগুন লাগার কারণ প্রাথমিকভাবে জানা যায়নি। বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট কিংবা ওই ফ্লোরে গ্যাস দিয়ে কাটার ওয়েল্ডিংয়ের মাধ্যমে আগুনের সূত্রপাত হয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন কারখানা-সংশ্লিষ্টরা।
মোংলা ইপিজেড ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সিনিয়র স্টেশন কর্মকর্তা আরবেজ আলী বুধবার দুপুরের দিকে বলেন, ‘গত মঙ্গলবার বিকেলে লাগা আগুন রাতেই নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তবে এখনো মাঝে মাঝে আগুনের স্ফুলিঙ্গ দেখা যাচ্ছে। তাই সেখানে এখনো ছয়টি পাম্প দিয়ে আগুন পুরোপুরি নেভানো ও ডাম্পিংয়ের কাজ চলছে। বৃহস্পতিবার সকালের মধ্যে আগুন পুরোপুরি নেভানো যাবে বলে আশা করছি।
মোংলা ইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক মাহাবুব আহম্মেদ সিদ্দিক বলেন, ‘দুপুরে হঠাৎ আগুন লাগে। এ কারখানায় কোম্পানিটির ফোম ও ব্যাগ ছিল। অগ্নিকাণ্ডের সময় দ্রুত সেখানকার কর্মরত শ্রমিকরা বেরিয়ে আসেন।’
তদন্ত কমিটির তথ্য জানিয়ে ইপিজেডের এ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘আগুনে ওই কারখানার কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে আগুনে এখন পর্যন্ত হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। পাশাপাশি ইপিজেডের অতিরিক্ত নির্বাহী প্রকৌশলী (হিসাব) আবুল হাসান মুন্সীকে প্রধান করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।’
যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে মারপিট করে হত্যার দায়ে সুনামগঞ্জে এক যুবককে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত। বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক (দায়রা জজ) মো. জাকির হোসেন এই রায় দেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ওই যুবকের নাম মো. রাসেল মিয়া (২৫)। তিনি সুনামগঞ্জ জেলার জামালগঞ্জ উপজেলার লক্ষীপুর গ্রামের সফিক মিয়ার ছেলে।
আদালত সূত্র জানায়, ২০১৫ সালের ২৯ নভেম্বর জামালগঞ্জ উপজেলার লক্ষীপুর গ্রামের মহনমালা বেগম ও মো. রাসেল মিয়ার বিয়ে হয়। বিয়ের পর যৌতুকের দাবিতে প্রায়ই স্ত্রীকে নির্যাতন করতেন রাসেল। এ নিয়ে মহনমালা জামালগঞ্জ আমল গ্রহণকারী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন। পরে রাসেল আর যৌতুক দাবি করবেন না এবং নির্যাতন করবেন না মর্মে অঙ্গীকার করেন। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই তিনি আবারও ৫০ হাজার টাকা যৌতুক দাবি করে স্ত্রীর ওপর নির্যাতন শুরু করেন। ২০১৮ সালের ২৯ জুন মহনমালাকে ঘর থেকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। এ সময় তার গলায় ও ঠোঁটে জখমের চিহ্ন, নাক-মুখে রক্ত ও ফেনা পাওয়া যায়। খবর পেয়ে মহনমালার মা রেছনা বেগমসহ অন্যান্যরা রাসেলের বাড়িতে গেলে ওই বাড়ির সবাই পালিয়ে যান। পরে রেছনা বেগম বাদী হয়ে ওই বছরের ৮ জুলাই জামালগঞ্জ থানায় মামলা করেন। মামলায় আটক আসামি মো. রাসেল মিয়া ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
দীর্ঘ শুনানি শেষে স্ত্রী হত্যার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আদালত বৃহস্পতিবার মো. রাসেল মিয়াকে মৃত্যুদণ্ড দেন। রায় ঘোষণার সময় রাসেল আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
রাষ্ট্রপক্ষে মামলা এ পরিচালনা করেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর নান্টু রায় এবং আসামি পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট নাসিরুল হক আফিন্দি।
ঐতিহ্যবাহী নাটোরের কাঁচাগোল্লার ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) নিবন্ধনের উদ্যোগ নিয়েছে নাটোরের জেলা প্রশাসন। সংশ্লিষ্ট দপ্তরে নিবন্ধনের আবেদন এরই মধ্যে পাঠানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানান জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ।
এফিডেভিটের মাধ্যমে শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি) বরাবর নাটোরের কাঁচাগোল্লার আবেদন-প্রক্রিয়া পাঠানো হয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় সহায়তা করেছে নাটোরের ই-কমার্স ডেভেলপমেন্ট সেন্টার।
নাটোরের কাঁচাগোল্লা সৃষ্টির পেছনে আছে মজাদার এক ইতিহাস। অর্ধবঙ্গেশ্বরী খ্যাত নাটোরের রানী ভবানীর প্রিয় খাদ্যের তালিকায় ছিল মিষ্টি। তার রাজপ্রাসাদে নিয়মিত মিষ্টি সরবরাহ করতেন শহরের লালবাজারের মিষ্টি-বিক্রেতা মধুসূদন পাল। এক দিন মধুসূদন পালের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সব কর্মচারী অসুস্থ হয়ে যায়। কিন্তু মিষ্টি তৈরির জন্যে দুই মণ ছানা সংগ্রহ করা ছিল। ছানাগুলো নষ্ট হয়ে যাবে ভেবে মধুসূদন ছানার সঙ্গে চিনি মিশিয়ে উনুনে তাপ দেন। কারিগর ছাড়াই এলোমেলো এই আয়োজনে তৈরি হয় নতুন এক মিষ্টি। স্বাদে অতুলনীয় হওয়ায় নতুন এই মিষ্টিই পাঠিয়ে দেন রানী ভবানীর রাজবাড়িতে।
রানী ভবানী এই মিষ্টি খেয়ে প্রশংসা করেন এবং এর নাম জানতে চান। মধুসূদন পাল তখন কাঁচা ছানা থেকে তৈরি বলে এর নাম দেন কাঁচাগোল্লা। এই হচ্ছে কাঁচাগোল্লা সৃষ্টির ইতিহাস। এই গল্প বেঁচে আছে শত শত বছর ধরে মানুষের মুখে-মুখে। নাম গোল্লা হলেও এটি দেখতে গোল নয়। এর মূল উপাদান ছানা আর চিনির সংমিশ্রণে একপ্রকার সন্দেশ। কাঁচাগোল্লার সঙ্গে জড়িয়ে আছে নাটোরবাসীর আবেগ ও ভালোবাসা। তাই আজ থেকে ২৫০ বছর আগে কাঁচাগোল্লা আবিষ্কৃত হয়ে আজও সুনাম বজায় রেখেছে। নাটোরের বিয়ে, বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও অতিথি আপ্যায়নে সরবরাহ করা হয় কাঁচাগোল্লা। শুধু দেশে নয়, সারা বিশ্বেই নাটোরের কাঁচাগোল্লা প্রসিদ্ধ।
জেলা প্রশাসক জানান, নাটোরে সৃষ্টি কাঁচাগোল্লা সারা দেশে প্রসিদ্ধ। ইতিহাস সমৃদ্ধ হওয়ার কারণে জিআই নিবন্ধনের কাজ শুরু করেছি আমরা। আশা করছি অল্প দিনের মধ্যে জিআই পণ্যের মর্যাদা লাভ করবে নাটোরের কাঁচাগোল্লা।
জিআই তালিকাভুক্তির মধ্য দিয়ে নাটোরের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সংরক্ষণের পাশাপাশি দেশ-বিদেশে কাঁচাগোল্লার ব্র্যান্ডিং ও চাহিদা আরও বৃদ্ধি পাবে বলে উল্লেখ করেন জেলা প্রশাসক। বাসস
মেহেরপুরে ছেলের মৃত্যুর পরদিনই আমগাছ থেকে মায়ের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার সকাল ৬টার দিকে জেলার মুজিবনগর উপজেলার ভবরপাড়া গ্রামের একটি আমগাছ থেকে মরদেহটি উদ্ধার করে পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয়দের ধারণা, ছেলের মৃত্যুর শোক সইতে না পেরে মা বছিরন খাতুন আত্মহত্যা করেছেন।
তিন সন্তানের জননী ৫০ বছর বয়সী বছিরন খাতুন ওই এলাকার মাছ ব্যবসায়ী রমজান আলীর স্ত্রী।
স্থানীয়রা জানান, বছিরনের ছোট ছেলে রাসেল ১০ দিন আগে বাড়ির কাজ-কর্ম নিয়ে মায়ের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়ায়। এক পর্যায়ে অভিমানে নিজ বাড়িতে থাকা আগাছানাশক কীটনাশক পান করে। পরে পরিবারের লোকজন ও প্রতিবেশীরা উদ্ধার করে তাকে মুজিবনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। এ সময় তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে মেহেরপুর ও পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখান থেকে চিকিৎসা নিয়ে ফেরার পথে বুধবার তার মৃত্যু হয়। পরে রাত ১০টার দিকে তার দাফন সম্পন্ন হয়।
ছেলের দাফনের পর বছিরন খাতুন বাড়ির বাইরে চলে আসেন। এরপর রাতে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও পরিবারের লোকজন তাকে আর খুঁজে পাননি। পরে স্থানীয়রা বৃহস্পতিবার ভোরে একটি আমগাছে বছিরনের ঝুলন্ত মরদেহ দেখে পরিবারের লোকজনকে খবর দেন।
মুজিবনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী হাসান রাসেল বলেন, মরদেহটি একটি আমগাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি, ছেলের মৃত্যুর শোক সইতে না পেরে হয়তো বছিরন খাতুন গলায় শাড়ি পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।
সিলেটে মা-বাবাকে হত্যার দায়ে আতিক হোসেন খান নামে এক ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার সকালে সিলেটের জ্যেষ্ঠ দায়রা জজ মশিউর রহমান চৌধুরী এ রায় দেন।
রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট নিজাম উদ্দিন আহমদ জানান, সব সাক্ষ্যপ্রমাণে আতিকুর রহমান দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় আদালত মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন। তবে রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন বলে জানান আসামি পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালের ২৭ মার্চ সকালে গোলাপগঞ্জ উপজেলার ঢাকা দক্ষিণ ইউনিয়নের সুনামপুর গ্রামে বাড়ির সামনের গাছ কাটা নিয়ে আতিক হোসেন খানের সঙ্গে ঝগড়া হয় তার বাবা করিম খান ও মা মিনারা বেগমের। বাকবিতণ্ডা হলে একপর্যায়ে আতিক উত্তেজিত হয়ে হাতে থাকা কোদাল ও দা দিয়ে বাবা ও মায়ের ওপর হামলা করে।
তাদের চিৎকারে স্থানীয়রা এগিয়ে এলে আতিক পালিয়ে যান। এ সময় ঘটনাস্থলেই করিম খান মারা যান। পরে মা-মিনারা বেগমকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানে তিনিও মারা যান।
এ ঘটনায় আতিকের ভাই দেলোয়ার হোসেন বাদী হয়ে গোলাপগঞ্জ থানায় মামলা করেন। পরে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।
গাজীপুরের শ্রীপুরে বহুতল ভবনের নির্মাণের কাজ করতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে তিন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া ৮টার দিকে শ্রীপুর পৌরসভার কেওয়াপূর্ব খণ্ড এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের চরকচ্ছপিয়া গ্রামের আজাদ হোসেনের ছেলে পিয়াস (২০) ও বেলাল সওদাগরের ছেলে পাভেল (২৩) এবং জামালপুরের মনোয়ার (২৫)।
গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ্ আল আরেফিন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
স্থানীয়দের বরাতে আরেফিন জানান, সকালে কেওয়াপূর্ব খণ্ড এলাকায় স্কাইনিস পাওয়ার কোম্পানি নামের বহুতল ভবনে কাজ করছিল নির্মাণ শ্রমিকরা। এ সময় অসাবধানতাবশত নির্মাণাধীন ভবনের রডের সঙ্গে পাশের বৈদ্যুতিক তারের সংস্পর্শ হলে দীর্ঘ সময় আগুন জ্বলতে থাকে। এতে কয়েকজন শ্রমিক তারে আটকে পুড়ে যান। খবর পেয়ে শ্রীপুর ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে তিনটি মরদেহ উদ্ধার করে। মরদেহগুলো পুলিশের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।
বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) ক্যাম্পাসে নতুন শিক্ষার্থীদের নিজ দলে ভেড়ানো নিয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত আট নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন।
শজিমেক ছাত্রাবাসে বুধবার রাত ১০টা থেকে দিবাগত রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় ছাত্রাবাসের নিচতলার অন্তত পাঁচটি কক্ষ ভাঙচুর করা হয়।
পুলিশ জানায়, সম্প্রতি মেডিকেল কলেজটিতে ভর্তির সুযোগ পাওয়া নবাগত ছাত্রদের নিজ গ্রুপে ভেড়ানোকে কেন্দ্র করে শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীদের মধ্যে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
আহতরা হলেন শজিমেক শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকুর রহমান আসিফের অনুসারী ধ্রুব, অনিক, শুভ ও হৃদয়। এ ছাড়া সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন রনির অনুসারী ইমতিয়াজ, রেজা, ফুয়াদ ও অমি। বর্তমানে তারা শজিমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
শজিমেক ছাত্রাবাসে থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষার্থীরা জানান, ২০২৩ সালে মেডিকেলে সুযোগ পাওয়া (৩২ ব্যাচের) শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ভর্তি হতে এসেছে। তাদের নিজ নিজ গ্রুপে ভেড়ানোকে কেন্দ্র করে শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীদের মধ্যে বুধবার সন্ধ্যা থেকে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। দ্বন্দ্বে জড়ানো সবাই ৩১ ব্যাচের শিক্ষার্থী। সংঘর্ষের সময় ছাত্রবাসের নিচতলার অন্তত পাঁচটি কক্ষ ভাঙচুর করা হয়৷
শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকুর আসিফ বলেন, ‘জুনিয়ররা ক্যাম্পাসে আসার পর তাদের থাকা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব। তবে সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীরা আমার কর্মীদের ওপর অস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়েছে। এতে চারজন আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এদের মধ্যে তিনজন গুরুতর জখম হয়েছেন। সংঘর্ষের সময় আমি ক্যাম্পাসে ছিলাম না৷
অন্যদিকে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন রনির ভাষ্য, ‘সভাপতির গ্রুপের নেতা-কর্মীরা প্রথমে তার নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালায়। পরে শিক্ষকরা এসে উভয় পক্ষকে নিয়ে মীমাংসা করে দেন। এ নিয়ে দ্বন্দ্বের কিছু নেই। জুনিয়রদের মধ্যে ভুল-বোঝাবুঝি থেকে এর সূত্রপাত হয়েছে। ঘটনার সময় আমি সেখানে ছিলাম না। আমার চার কর্মী আহত হয়ে হাসপাতালে আছেন।’
বগুড়া ছিলিমপুর মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) আনিছার রহমান জানান, ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে বুধবার রাতে সংঘর্ষ হয়েছিল। এখন ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি শান্ত আছে৷ এই ঘটনায় আহতরা শজিমেক হাসপাতালেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। এ বিষয়ে কেউ অভিযোগ করলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মোংলার সুন্দরবনের ডলফিন অভয়ারণ্যে মাছ ধরতে বাধা দেয়ায় বন বিভাগের সাত কর্মকর্তা-কর্মচারীকে মারধর করে আহত করেছেন জেলেরা। এ ঘটনায় এক জেলেকে আটক করেছে বন বিভাগ।
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের (মোংলা) সহকারী বনসংরক্ষক শেখ মাহবুব হাসান জানান, বুধবার বিকেলে তিনিসহ সাতজন স্টাফ স্পিডবোট নিয়ে মোংলার পশুর নদীর নন্দবালা, শ্যালা নদী ও আন্ধারমানিক এলাকায় টহলে যান। সেসময় নিষিদ্ধ ডলফিন অভয়ারণ্যে কারেন্টজাল দিয়ে অবৈধভাবে মাছ শিকার করছিল জেলেরা। বিকেল ৫টার দিকে অভয়ারণ্যে ওই জেলেদের মাছ ধরতে বাধা দিলে তারা সংঘবদ্ধ হয়ে বন বিভাগের অভিযানকারীদের ওপর হামলা চালায়।
জেলেদের নৌকায় থাকা দা, লাঠি ও বৈঠা দিয়ে অভিযানকারীদের ওপর হামলা চালালে তাতে আহত হন চাঁদপাই রেঞ্জ কর্মকর্তা সহকারী বনসংরক্ষক শেখ মাহবুব হাসান, স্টেশন অফিসার খলিলুর রহমান, বোটম্যান শেখ মোতালেব হোসেন, মো. তুহিন, সুলতান মাহমুদ টিপু, সেলিম সরদার ও স্পিডবোট ড্রাইভার মনজু রাজা। আহতদের স্থানীয়ভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
হামলাকারী জেলেরা হলেন নয়ন খা, শয়ন খা, আমিরুল খা, এনামুল, লিটন, আল মামুন, রিয়াজুল খা, মারুফ খা, তিতুমীর খা ও শহীদ। এ সময় হামলাকারীদের সঙ্গে অজ্ঞাত আরও ২০-২২ জন জেলে ছিলেন। এসব জেলেদের বাড়ি মোংলার চিলা ইউনিয়নের জয়মনি এলাকায়।
হামলাকারীদের নেতৃত্বে থাকা মাসুম বিল্লাহকে রাতেই আটক করেছে বন বিভাগ। বাকিদের আটক করতে অভিযান চালাচ্ছে বন বিভাগ। এদিকে এ ঘটনায় শনাক্ত হওয়া জেলেসহ অজ্ঞাত আরও ২২ জনকে আসামি করে পিওআর মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানান সহকারী বনসংরক্ষক মাহবুব হাসান।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের শহীদনগর বাজার থেকে শরিষতলা পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার সড়কটি এখন মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। দুই-তৃতীয়াংশ সড়কের পিচ উঠে মূল রাস্তার চেয়ে অনেক নিচু হয়ে গেছে। ফলে সড়কে ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে।
স্থানীয়রা বলছেন, দুই বছর ধরে শহীদনগর বাজার-শরিষতলা সড়কটি বেহাল অবস্থায় পড়ে আছে। এ সড়ক দিয়ে কমলগঞ্জ ও কুলাউড়া উপজেলার কয়েক হাজার মানুষ যাতায়াত করেন। প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে সড়ক দিয়ে ট্রাক, পিকআপ, সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ ছোট-বড় কয়েক হাজার যানবাহন চলাচল করে। বৃষ্টির দিনে সড়কের গর্তগুলো পানিতে ঢাকা পড়ায় বেশির ভাগ গাড়ি দুর্ঘটনার শিকার হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, সড়কের প্রায় দেড় কিলোমিটার অংশের পিচঢালাই উঠে চার-পাঁচ ফুট গভীর গর্ত হয়েছে। শুকনা মৌসুমে এসব গর্ত পেরিয়ে গাড়ি চলাচল করলেও একটু বৃষ্টি হলেই সড়ক মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়।
এলাকাবাসী জানান, সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচলের কারণে পিচঢালাই উঠে মাটি বেরিয়ে কয়েক ফুট গর্ত হয়েছে। প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫টি দুর্ঘটনা ঘটে। অথচ সড়কটি মেরামতের জন্য দুই বছর ধরে কেউ কোনো পদক্ষেপ নেননি। সড়কটি দ্রুত সংস্কার করা না হলে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
স্থানীয় মাওলানা মুস্তাফিজুর রহমান ও ওলিউর রহমান বলেন, দুই বছর ধরে কষ্ট করে আমরা আসা-যাওয়া করি। এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন কয়েক শ শিক্ষার্থী স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসায় যাতায়াত করে। সড়কের অবস্থা এতই বেহাল যে, মানুষ গাড়ি ব্যবহার না করে এখন হেঁটেই চলাচল করে।
এ বিষয়ে পতনঊষা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অলি আহমদ খান বলেন, সড়কটি মেরামতের জন্য উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা হয়েছে। আশা করছি, কিছুদিনের মধ্যে কাজ শুরু হবে।
কমলগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘শহীদনগর বাজার থেকে শরিষতলা পর্যন্ত সড়কটি দ্রুত সময়ের মধ্যে মেরামত করা হবে।’
সংবাদ প্রকাশের জেরে দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার এক সাংবাদিকের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছেন যুবলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় উপ-অর্থ বিষয়ক সম্পাদক হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর।
বুধবার সাংবাদিক মাহবুব আলম লাবলুর বিরুদ্ধে এই মামলা করা হয়। আদালত মামলাটি গ্রহণ করে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটকে তদন্তের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাইবার ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট মেজবাহ উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।’
সম্প্রতি দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার অনলাইন ও প্রিন্টে ‘দুবাই ফেরত শাহ আলম সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি রেল’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটিতে বাদীকে জড়িয়ে মানহানিকর, বিব্রতকর ও অসত্য তথ্য প্রকাশ করার অভিযোগ তোলা হয়েছে মামলায়।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, অভিযোগকারী একজন সহজ-সরল, শান্তিপ্রিয় এবং দেশের প্রচলিত আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ব্যক্তি। তিনি একজন ব্যবসায়ী, সমাজসেবক এবং শিক্ষানুরাগী হন। তিনি চট্টগ্রাম শহরের একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং সমাজসেবক। পাশাপাশি বাংলাদেশ যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক উপ অর্থ সম্পাদকসহ নানা পদে থাকার সময় সক্রিয়ভাবে বিভিন্ন সমাজ উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত ছিলেন। দেশে করোনাকালীন তিনি সর্বপ্রথম করোনা প্রতিরোধক বুথের চালু করেন এবং দেশব্যাপী করোনা প্রতিরোধক বুথ স্থাপনপূর্বক বিনামূল্যে মাস্ক, স্যানিটাইজার এবং অক্সিজেনসহ বিভিন্ন চিকিৎসা সামগ্রী ও বিনামূল্যে খাবার সরবরাহ করে দেশের সর্বমহলে প্রশংসিত হয়। আসামি বিভিন্ন অজুহাতে টাকা দাবি করে আসছিলেন এবং টাকা না দিলে ভুয়া সংবাদ প্রচার করার অভিযোগও তোলা হয় মামলায়।
মামলার বিষয়ে হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘আমি একজন রাজনীতিক হিসেবে মানুষের সেবায় কাজ করে যাচ্ছি। সর্বমহলে আমার সুনাম রয়েছে। আমার সেই সুনাম ক্ষুণ্ণ করতে চক্রান্ত করে ভুয়া সংবাদ প্রচার করা হয়েছে। আইনের প্রতি একজন শ্রদ্ধাশীল ব্যক্তি হিসবে আমি আইনের আশ্রয় নিয়েছি। সঠিক বিচার পাব বলে আমি আশাবাদী।’
তবে অভিযোগের ভিত্তিতেই সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মামলার আসামি সাংবাদিক মাহবুব আলম লাবলু। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রতিবেদনে লেখা সব তথ্যের প্রমাণ আমার কাছে আছে।’
কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় পুলিশের বুটের লাথি ও লাঠিপেটায় এক কৃষকের পা ভাঙার অভিযোগ এনে মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী। বুধবার বিকেলে উপজেলার পাটুয়াভাঙ্গা ইউনিয়নের কুমরী বাজারে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। এতে কুমরী গ্রামের শতাধিক বাসিন্দা অংশ নেন।
মানববন্ধনে বলা হয়, গত রোববার রাত ১১টার দিকে উপজেলার পাটুয়াভাঙ্গা ইউনিয়নের মহিষবেড় এলাকায় নলা বিল থেকে বাড়ি ফেরার পথে অতর্কিত পুলিশি হামলা-নির্যাতনের শিকার হন কৃষক সিরাজ উদ্দিন। পুলিশের বেধড়ক বুটের লাথি ও লাঠিপেটায় তার বাম পায়ের উরুর হাড় ভেঙে যায়। এ ছাড়া শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম হয়। এক পর্যায়ে সিরাজের চিৎকার শুনে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেন স্থানীয়রা।
গুরুতর আহত সিরাজ উদ্দিন (৪৫) পাকুন্দিয়া উপজেলার পাটুয়াভাঙ্গা ইউনিয়নের বাসিন্দা। তার বাবা আশ্রাব আলী ওই ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি।
সিরাজের ছোট ভাই রিয়াজ উদ্দিন বলেন, নলা বিলে মাছের খাদ পাহাড়া দিতে যান সিরাজ। সেখান থেকে বাড়ি ফেরার পথে এএসআই নুরুল হকসহ অন্য পুলিশ সদস্যরা পথরোধ করেন। সিরাজকে জুয়ারি অপবাদ দিয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন। সিরাজ প্রতিবাদ করায় এএসআই নুরুল হক ক্ষিপ্ত হয়ে বাম ঊরু লক্ষ্য করে বুট দিয়া লাথি মারেন। এ লাথিতে সিরাজের বাম ঊরুর হাড় ভেঙে যায়। এ সময় অন্য পুলিশ সদস্যরাও সিরাজকে মারধর করেন। সিরাজের চিৎকার শুনে স্থানীয় বাসিন্দারা এগিয়ে গেলে তারা সটকে পরেন।
রিয়াজ উদ্দিন আরও বলেন, এ বিষয়ে পাকুন্দিয়া থানায় গিয়ে অভিযোগ করেও প্রতিকার পাননি। পরে বুধবার দুপুরে তিনি বাদী হয়ে আদালতে মামলা করেছেন।
সিরাজ উদ্দিনের স্ত্রী জেসমিন আক্তার বলেন, তার স্বামীকে ভাগলপুর জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। কর্তব্যরত চিকিৎসক জানিয়েছেন সিরাজের আঘাতগুলো গুরুতর।
জেসমিন বলেন, সংসারে তিন কন্যাসন্তান আছে। যে মানুষটার উপার্জনে সংসার চলে, পুলিশ মেরে সে মানুষটার পা ভেঙে দিয়েছে।
পাটুয়াভাঙ্গা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. মস্তুফা বলেন, কেউ অপরাধ করলে পুলিশ তাকে আটক করতে পারে। কিন্তু তার শরীরে এভাবে আঘাত করতে পারে না। তিনি এ ঘটনাটি শুনেই ওই পুলিশ সদস্যের মোবাইল নম্বরে কল করেন। ঘটনার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতেই তিনি কল কেটে দেন।
এ বিষয়ে কথা বলতে মোবাইল ফোনে আহুতিয়া তদন্ত কেন্দ্রের সহকারী উপপরিদর্শক নুরুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। নুরুল দাবি করেন, তিনি সেখানে যাননি।
পাকুন্দিয়া থানার ওসি সারোয়ার জাহান বলেন, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কেউ অভিযোগ নিয়ে থানায় আসেনি। অভিযোগ পাওয়া গেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ জানান, এ ব্যাপারে আদালতে মামলা হওয়ার পরই বিষয়টি তিনি জেনেছেন। এর আগে কেউ কোনো অভিযোগ দেয়নি। এখন আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।
মাদারীপুরের শিবচরে প্রাইভেটকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে এক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। এতে আহত হয়েছেন আরও একজন। বুধবার দুপুরে উপজেলার উত্তর বহেরাতলা ইউনিয়নের সাহেবেরহাট এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত মুমিনুর রহমান (৫৫) শিবচর পৌরসভার নলগোড়া গ্রামের ওয়াজ আলী খানের ছেলে। তিনি একটি ট্রাভেল এজেন্সির মালিক। দুর্ঘটনায় আহত অপর ব্যক্তি হলেন শাহাদাত হোসেন।
স্থানীয়রা জানান, বুধবার দুপুর পৌনে দুইটার দিকে একটি প্রাইভেটকার নিয়ে মমিনুর রহমান মাদারীপুর থেকে শিবচর আসছিলেন। পথে মাদারীপুর-শিবচর আঞ্চলিক সড়কে উত্তর বহেরাতলা ইউনিয়নের সাহেবেরহাট এলাকায় প্রাইভেটকারটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এতে প্রাইভেটকারে থাকা দুইজন আহত হন। পরে তাদের উদ্ধার করে শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হলে চিকিৎসক মুমিনুর রহমানকে মৃত ঘোষণা করেন। আহত শাহাদাতকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় রেফার্ড করেন চিকিৎসকরা।
শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে, ক্ষতিগ্রস্ত মাইক্রোবাসটি উদ্ধার করা হয়েছে।
জন্মের পর বাবাকে দেখেনি আমেনা। সৌদি প্রবাসী বাবা একটি বারের জন্য কোলে তুলে দেননি আদর। কথা ছিল আসছে শনিবার দেশে ফিরবেন বাবা গিয়াস উদ্দিন। তখন আমেনা তার প্রাপ্য সব আদর আদায় করবে সুদে আসলে। সৌদি থেকে হয়তো গিয়াস উদ্দিন আসবেন তার প্রাণহীন নিথর দেহ নিয়ে। কিন্তু আমেনার সেই অপেক্ষা আর কোনদিনও ফুরাবে কি?
কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার গিয়াস উদ্দিন (৫৫) ২০০১ সাল থেকে সৌদি আরব প্রবাসী। ৬ বছর আগে দেশে এসেছিলেন শেষবার। গত সোমবার ওমরাহ করতে যাওয়ার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১৩ বাংলাদেশির একজন তিনি ।
ওমরাহ করতে যাওয়ার পথে স্ত্রী রাবেয়ার সাথে মোবাইলে শেষ কথা হয় গিয়াস উদ্দিনের। বলেছিলেন, আগামী ২ এপ্রিল দেশের বাড়িতে ফিরে আসবেন। একসঙ্গে ঈদ করবেন।
তার মৃত্যু সংবাদ বাড়িতে পৌঁছার পর থেকেই চলছে শোকের মাতম। পাগলপ্রায় স্ত্রী রাবেয়ায় বিলাপ থামাতে পারছে না কেউ। গিয়াস উদ্দিনের এক ছেলে ও দুই অবুঝ মেয়ে নিষ্পলক তাকিয়ে মায়ের আহাজারির দিকে।
একই অবস্থা গাজীপুরের রনির অবুঝ ছেলে, লক্ষ্মীপুরের সবুজ হোসাইনের মা-বাবা, নোয়াখালীর হেলাল ও শহীদুলের স্বজনের। এভাবে প্রিয়জন হারানোর ব্যথা সইতে পারছেন না তারা।
ইমাম হোসাইন রনির ছেলে দাদার কাছে বার বার জিজ্ঞেস করছিল, ‘আব্বু না বলছিল ভিডিও কলে কাবাঘর দেখাবে। আব্বু কি ভিডিও কল দিছে?’ প্রতিবারই নাতির এ প্রশ্নে হুহু করে কেঁদে উঠছেন রনির বাবা ইমাম আব্দুল লতিফ। একই অবস্থা পরিবারের অন্য সদস্যদেরও। পুরো পরিবারে নেমে এসেছে শোকের ছায়া, বাকরুদ্ধ এলাকাবাসীও।
রনি (৪০) গাজীপুরের টঙ্গীর বড় দেওড়া এলাকার আব্দুল লতিফের ছেলে। পাঁচ বছর ধরে তিনি সৌদিপ্রবাসী। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে দেশে এসেছিলেন। এরপর ২৫ মার্চ আবার কর্মস্থলে ফিরে যান তিনি।
বুধবার সকালে সরেজমিন টঙ্গীর বড় দেওড়া ফকির মার্কেট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, শোকে স্তব্ধ নিহত রনির পরিবার ও প্রতিবেশীরা। রনির মৃত্যুর খবরে বাড়িতে ছুটে আসছেন স্বজন ও এলাকাবাসী। গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর সদরে হলেও ফকির মার্কেট এলাকায় জমি কিনে বাড়ি করেছেন রনির বাবা আব্দুল লতিফ। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে রনি দ্বিতীয়।
রনির ভাই হোসেন আলী জসিম জানান, ‘২৫ মার্চ ওমরাহ পালনের জন্য ভাইকে বিমানবন্দর দিয়ে আসি। ওমরাহ পালন শেষে ১ এপ্রিল কাজে যোগদানের কথা ছিল তার।’
ছেলেকে হারিয়ে পাগলপ্রায় রনির বাবা আব্দুল লতিফ সরকারের কাছে আকুতি জানান, স্বল্প সময়ে ছেলের লাশটা যেন দেশে আনার ব্যবস্থা করা হয়। রনির অবুঝ শিশুটি এখনো বুঝে উঠতে পারছে না তার বাবা নেই।
সবুজের বাবা হারুন মাছ বিক্রি করে সংসার চালান। একটু সচ্ছলতার আশায় তিন বছর আগে বড় ছেলে সবুজকে চাকরির উদ্দেশ্যে সৌদি আরবে পাঠানো হয়। তার পাঠানো টাকাতেই পরিবার সচ্ছলতার মুখ দেখেছে। শিগগিরই সবুজের দেশে ফেরার কথা ছিল। এর আগে তিনি ওমরাহ করবেন বলেছিলেন। কিন্তু তার আর ওমরাহ করা হলো না। মা-বাবার সঙ্গে শেষ দেখাও হলো না।
সবুজ লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার চরমোহনা ইউনিয়নের বাবুরহাট এলাকার রাঢ়ী বাড়ির মো. হারুনের বড় ছেলে। তারা চার ভাইবোন। এর মধ্যে সবুজ পরিবারের দ্বিতীয় সন্তান।
এদিকে নোয়াখালীর শহীদুল এবং হেলালের পরিবার ও স্বজনদের কান্না ও মাতমে ভারী হয়ে উঠেছে গ্রামের বাড়ি।
নিহত মো. হেলাল উদ্দিন (৩৪) চাটখিল উপজেলার নাহারখিল ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম রামনারায়ণপুর গ্রামের ভূঁইয়াজি বাড়ির মৃত মো. হুমায়ুন কবিরের ছেলে এবং মো. শহীদুল ইসলাম শাহেদ (২৭) সেনবাগ উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ মোহাম্মদপুর মালেক মোল্লার বাড়ির শরিয়ত উল্লাহর ছেলে।
নিহত হেলালের ছোট ভাই রিপন জানান, এক বছর আগে জীবিকার সন্ধানে বড় ভাই হেলাল উদ্দিন সৌদি আরবে পাড়ি জমান। এরপর তিনি একটি রেস্তোরাঁয় চাকরি নেন। তার হাজাবি নামে তিন বছর বয়সী একটি মেয়ে রয়েছে।
অন্যদিকে গত বছরের এপ্রিলে পরিবারের বড় ছেলে শহীদুল ইসলাম শাহেদ জীবিকার তাগিদে সৌদি আরব যান। সেখানে তিনি একটি দোকানে কর্মরত ছিলেন। গতকাল ওমরাহ পালনের উদ্দেশ্যে কর্মস্থল থেকে রওনা হয়েছিলেন মক্কা নগরীর দিকে। কিন্তু সে যাত্রাই ছিল তার ইহলৌকিক শেষ যাত্রা।
(প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন কুমিল্লা, গাজীপুর, লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালী প্রতিনিধি।)
ময়মনসিংহের ফুলপুরে নিখোঁজ হওয়ার তিনদিন পর রাশিদা বেগম (৪৫) নামের এক নারীর অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বুধবার দুপুরে উপজেলার বাঁশাটি গ্রামের একটি ভুট্টাখেত থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।
নিহত রাশিদা বেগম পার্শ্ববর্তী হরিনাদী গ্রামের মৃত কফিল উদ্দিনের মেয়ে। বিষয়টি দৈনিক বাংলাকে জানিয়েছেন ফুলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন।
ওসি জানান, স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর র্দীঘদিন ধরে বাবার বাড়িতে বসবাস করে আসছিলেন রাশিদা। তিনি গত ২৬ মার্চ সন্ধ্যা থেকে নিখোঁজ ছিলেন। পরে পরিবারের লোকজন বিভিন্ন এলাকায় খোঁজাখুঁজি করলেও সন্ধান মেলেনি। বুধবার দুপুরে বাঁশাটি গ্রামের লোকজন ভুট্টাখেতে নারীর মরদেহ পড়ে আছে বলে থানায় খবর দেয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।
ওসি বলেন, ‘কীভাবে বা কী কারণে এই নারীর মৃত্যু হয়েছে, তা এখনও জানা যায়নি। ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত চলছে। দ্রুত মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন করা হবে।’