চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে এক পোশাক শ্রমিককে বেঁধে রেখে তার স্ত্রীকে কয়েকজন মিলে ধর্ষণের অভিযোগে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য জাহেদ সুলতান চৌধুরী রবিনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত শনিবার রাতে সীতাকুণ্ডের সোনাছড়ি ইউনিয়নে রবিনের নিজ কার্যালয়ে ওই ঘটনা ঘটে। পরে মামলা হলে সোমবার ভোরে উপজেলার ছোট দারোগারহাট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হয়েছেন ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য রবিন।
সীতাকুণ্ড মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘স্বামীকে জিম্মি করে স্ত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত মেম্বারকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে আগামীকাল (আজ) আদালতে আবেদন করা হবে।’
ঘটনাটি নিয়ে সোনাছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনির আহমেদ বলেন, ‘আমি ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলতে পারিনি। তবে যতটুকু জেনেছি, কর্মস্থলে যাওয়ার পথে ওই শ্রমিক ও তার স্ত্রীকে নিজের অফিসে নিয়ে যায় মেম্বার রবিন। সেখানে তাকে বেঁধে রেখে তার স্ত্রীকে মেম্বারসহ কয়েকজন মিলে ধর্ষণ করে। পরে ভুক্তভোগীরা জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল করলে পুলিশ গিয়ে ওই নারীকে উদ্ধার করে। তবে অভিযুক্তরা সবাই পালিয়ে যায়।’
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মাস্টারপ্ল্যানের কাজ ৫৫ শতাংশ শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিটির ভারপ্রাপ্ত মেয়র মো. আসাদুর রহমান কিরণ।
তিনি বলেন, গাজীপুর সিটির মাস্টারপ্ল্যানের কাজ চলছে। এর আগে অ্যাকসেস এশিয়া নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মাস্টারপ্ল্যানের জন্য চুক্তি হয়েছিল। চুক্তি অনুযায়ী কাজ করতে না পারায় গত বছরের ২৮ জুলাই ঢাকা প্রযুক্তি ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ডুয়েট) সঙ্গে এ প্রকল্পের সংশোধিত চুক্তি হয়। এ পর্যন্ত মাস্টারপ্ল্যানের কাজ প্রায় ৫৫ শতাংশ শেষ হয়েছে।
সোমবার দিনভর ডুয়েট ক্যাম্পাসের শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার অডিটোরিয়ামে নগর উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন প্রকল্প স্টেকহোল্ডার কনসালটেশন এবং ফোকাস গ্রুপ ডিসকাসন ওয়ার্কশপের প্রথম পর্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ভারপ্রাপ্ত মেয়র এসব কথা বলেন। এ সময় নগরের মাস্টারপ্ল্যানের কাজকে পরিপূর্ণ করতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নাগরিকদের মতামত নেয়া হয়।
এ সময় মেয়র কিরণ বলেন, এরই মধ্যে ইনসেপশন রিপোর্ট প্রণয়ন, বেজ পার্ক স্থাপন, মৌজা ম্যাপ সংগ্রহ এবং ডিজিটাল ম্যাপ প্রস্তুতকরণ, ফিজিক্যাল ফিচার ম্যাপ প্রণয়ণ ও তথ্য সংগ্রহের কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে। আর্থ-সামাজিক, কৃষি, ট্যুরিজম, ইন্ডাস্ট্রি, ট্রাফিক, পরিবশে ও ভূমি ব্যবহার জরিপও ৯০ শতাংশ শেষ। এ ছাড়া সার্ভেয়ার প্রজেক্টের কাজ, স্ট্রাকচার প্ল্যানের প্রস্তুতি ও চূড়ান্ত মাস্টারপ্ল্যানের কাজ চলমান রয়েছে। সব মিলিয়ে গাজীপুর সিটির মাস্টারপ্ল্যানের প্রায় ৫৫ শতাংশ কার্যক্রম সমাপ্ত করা সম্ভব হয়েছে।
আসাদুর রহমান কিরণ আরও বলেন, গাজীপুর সিটি করপোরেশনকে প্রথম স্মার্ট নগরী করার জন্য সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে সব কার্যক্রম (অ্যাকাউন্টস, ট্রেড লাইসেন্স, হোল্ডিং ট্যাক্স, রিকশা লাইসেন্স) অটোমোশনের আওতায় নিয়ে আসছি। এ কাজগুলো চলমান রয়েছে। এ কর্যক্রমগুলো বাস্তবায়ন করা গেলে গাজীপুর সিটি করপোরেশন একটি স্বচ্ছ প্রতিষ্ঠান হিসেবে রূপ লাভ করবে।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে প্রধান অতিথির বক্তব্যে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল বলেন, আজ স্টেকহোল্ডাররা যে মতামত দিয়েছেন তা গাজীপুর সিটি করপোরেশনের জন্য কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। একটি সঠিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে পারলে গাজীপুর সিটি করপোরেশন পরিকল্পিত ও বাসযোগ্য নগরে রূপান্তরিত হবে।
ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ডুয়েট) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রকল্পের টিম লিডার ও ডুয়েটের প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মোজাম্মেল হক। প্রকল্প পরিচিতি উপস্থাপন করেন ডেপুটি টিম লিডার ও ডুয়েটের প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক সামাউন আল নূর।
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় এক গৃহবধুকে তার স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন নির্যাতন করে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। নিহতের পরিবারের দাবি, ওই গৃহবধুকে এসিড দিয়ে ঝলসে হত্যা করা হয়েছে।
রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্ল্যাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত রোববার দুপুরে তার মৃত্যু হয়। তবে ঘটনার জানাজানি হয় সোমবার সন্ধ্যায় নিহতের বাড়িতে মরদেহ আনার পর।
নিহত ফাতেমা বেগম (৩১) নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা ফতুল্লার পোস্ট অফিস এলাকার মৃত মোসলেহ উদ্দিন সরদারের মেয়ে।
নিহতের স্বজন ও এলাকাবাসী জানান, ২০০৮ সালে ফতুল্লার লালপুর এলাকার আলী আহাম্মদের ছেলে আরিফ হোসেনের সঙ্গে বিয়ে হয় ফাতেমার। তাদের ১২ বছরের এক ছেলে এবং ৬ বছরের একটি মেয়ে আছে। ফাতেমার স্বামী আরিফ পিকআপ ভ্যান চালক।
সোমবার রাতে ঘটনার বর্ণনায় নিহতের বড়ভাই মো. মুন্না জানান, রোববার দুপুরে ফাতেমার শ্বশুর আলী আহাম্মদ মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জানান, টয়লেটে পড়ে গিয়ে ফাতেমা আঘাত পেয়েছিল, তাই তাকে হাসপাতালে আনা হয়েছে। দুপুর তিনটার দিকে সে মারা গেছে। সন্ধ্যায় বার্ন ইউনিটে গিয়ে ফাতেমার মরদেহ পান স্বজনরা।
মো. মুন্না বলেন, ‘‘টয়লেটে পড়ে বোন মারা গেলে বার্ন ইউনিটে তার লাশ কেন’, এই প্রশ্ন করলে তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন প্রসঙ্গ এড়িয়ে যান। তারপর কৌশলে তারা হাসপাতাল থেকে চলে যান। আমরা ভেবেছিলাম ওরা ফাতেমাকে কেরোসিন ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে হত্যা করেছে। কিন্তু না। নারায়ণগঞ্জে লাশ আনার পর এলাকার যারাই দেখেছে সবাই বলেছে এসিড দিয়ে ঝলসে দেয়া হয়েছে। ফাতেমা মারা যাওয়ার পর রাতেই ফতুল্লা থানায় আমরা অভিযোগ করেছি। পুলিশ ময়নাতদন্তের কাগজ চেয়েছে। লাশ দাফনের পর থানায় গিয়ে মামলা করবো।’
মুন্না দাবি করেন, ‘ফাতেমার স্বামী আরিফ অটোরিকশা কিনতে গত দুই মাস ধরে ২ লাখ টাকা চাচ্ছিল। সেই টাকা নিয়ে পারিবারিক কলহ চলছিল। আমরা ধারণা করতেছি, যৌতুকের টাকা না দেয়ায় এসিড দিয়ে ঝলসে মেরেছে ফাতেমার স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন।’
ফাতেমার মা নাসিমা বেগম জানান, কাগজপত্রে দেখা যায়, গত ৯ মার্চ থেকে ফাতেমা বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি। তবে তাদের জানানো হয় মারা যাওয়ার পর। আমার মেয়ের লাশ দাফনের জন্য গোসল করাতে গেলে দেখি গলা থেকে পুরো বুক ঝলসানো।
এ বিষয়ে ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি রিজাউল হক জানান, আমরা প্রাথমিকভাবে জেনেছি ওই গৃহবধূ দগ্ধ হয়ে রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্ল্যাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। তবে এসিডে ঝলসানোর কোনো তথ্য হাসপাতাল থেকে এখনও পাওয়া যায়নি। পুরো ঘটনা নিয়ে পুলিশ তদন্ত করছে। ওই নারীকে যদি হত্যা করা হয় তাহলে যারা ঘটনায় জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।
আর নিহতের ভাই মুন্নার করা অভিযোগের বিষয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা ফতুল্লা মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শাহাদাত হোসেন জানান, পরিবারের অভিযোগ, ফাতেমাকে হত্যা করা হয়েছে। তবে এসিডে ঝলসানোর বিষয়টি এখনও পরিষ্কার নয়। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পেলে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে। আর নিহতের শ্বশুরবাড়ির লোকজন পলাতক। তাদের খোঁজ চলছে।
রমজানে শিল্পাঞ্চল নারায়ণগঞ্জের নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শতাধিক পরিবারের সহায়তায় এগিয়ে এসেছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘সংযোগ’। মাত্র ১০০ টাকায় তারা শতাধিক পরিবারের মধ্যে বিতরণ করেছে ইফতার, যে গুলোর দাম হাজার টাকা।
নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাব ভবনের নিচে সোমবার দিনব্যাপী এ কার্যক্রম পরিচালনা করেন ‘সংযোগ: কানেক্টিং পিপল ফাউন্ডেশনে’র স্বেচ্ছাসেবীরা। এ সময় প্রতিটি পরিবারকে পাঁচ কেজি চাল, এক কেজি মাছ, এক কেজি ডাল, এক ডজন মুরগির ডিম, এক কেজি দুধসহ তৈরি করা ফুড প্যাকেজ দেয়া হয়।
সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা প্রকৌশলী আহমেদ জাভেদ জামাল বলেন, শতাধিক পরিবারকে এসব খাদ্যসামগ্রী দেয়া হয়েছে। ঢাকাসহ সারা দেশে পাঁচ হাজার পরিবারের কাছে আমরা এটি নিয়ে পৌঁছাতে চাই।
আসরের নামাজ শেষ হতেই দুই পাশে মুখোমুখি হয়ে লম্বা সারিতে বসে পড়েন মুসল্লিরা। এরপর নানা বয়স ও শ্রেণি-পেশার হাজারও মানুষ মসজিদের মাইক থেকে ভেসে আসা বয়ান শোনেন। এরই মধ্যে চলে ইফতার বিতরণ। মাগরিবের আজান পড়তেই সবাই একসঙ্গে শুরু করেন ইফতার। সোমবার বিকেলে এই চিত্র দেখা গেল চট্টগ্রাম নগরের আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদের খোলা বারান্দায়।
মসজিদ সূত্রে জানা যায়, প্রতিবছর রমজানে এখানে ইফতারের বড় আয়োজন করা হয়। রোজার শুরুর দিকে দুই থেকে আড়াই হাজার মানুষ এখানে নিয়মিত ইফতার করেন। রমজানের শেষ দিকে সেই সংখ্যা চার হাজারে পৌঁছায়। এখানে ছোট ছোট প্লেটে দেয়া হয় ইফতারি। আবার বড় একটি প্লেটের চারপাশে বসেও ইফতার করেন কয়েকজন মিলে। ধনী-গরিবের ভেদাভেদ ভুলে সবাই শামিল হন সেই ইফতার আয়োজনে।
মসজিদের মুসল্লি পরিষদ জানায়, মসজিদের খতিব সাইয়্যিদ মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন তাহের জাবেরী আল-মাদানী প্রথম এখানে ভিন্ন রকমের এই ইফতার আয়োজনের চিন্তা করেন। সৌদি আরবের মক্কা-মদিনার আদলে সবার জন্য একসঙ্গে ইফতারের রেওয়াজ চালুর উদ্যোগ নেন তিনি। ২০০৫ সালে সীমিত পরিসরে একসঙ্গে কয়েক শ মানুষের ইফতারের আয়োজন করেন। ২০০৭ সালে ছোট সেই উদ্যোগ বড় আকার লাভ করে। ওই বছর থেকে এখানে রমজানে প্রতিদিন হাজারও মানুষ ইফতারে অংশ নিচ্ছেন। গত দেড় দশকের মধ্যে কেবল করোনার সময় এই আয়োজনে ব্যাঘাত ঘটে।
প্রতিবছরই ইফতারের জন্য চার-পাঁচজন বিত্তবান সহযোগিতা করে আসছেন বলে জানান খতিবের একান্ত সহকারী মো. হাসান মুরাদ। তিনি বলেন, এসব বিত্তবান নাম প্রকাশে আগ্রহী নন। পাশাপাশি আরও অনেকে প্রতিবছর সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। তাদের সহযোগিতা ও খতিবের একান্ত উদ্যোগে প্রতিবছর ইফতার বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। আর এই উদ্যোগে পাশে থাকে শাহী জামে মসজিদ মুসল্লি পরিষদ।
হাসান মুরাদ আরও বলেন, ইফতারে রোজাদারদের জন্য থাকে আট পদ। এর মধ্যে জিলাপি, মুড়ি, খেজুর ও শরবত বাইরে থেকে আনা হয়। ছোলা, সমুচা, পেঁয়াজু, আলুর চপ নিজস্ব পাচক (বাবুর্চি) দিয়ে মসজিদের পাশেই বড় বড় পাতিলে রান্না করা হয়।
দীর্ঘদিন ধরে এই মসজিদে পাচকের দায়িত্ব পালন করছেন কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার ইয়াছিন বাবুর্চি। তার আরও পাঁচজন সহযোগী রয়েছেন। ইয়াছিন বাবুর্চি বলেন, ‘সকাল ৬টা থেকেই আমরা ইফতারি তৈরি শুরু করি। একনাগাড়ে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলতে থাকে রান্না। বিরতিহীনভাবে ছোলা, সমুচা, পেঁয়াজু, আলুর চপ পাকানো হয় এখানে।’
মসজিদে ইফতার করতে এসেছিলেন নগরের রিয়াজুদ্দিন বাজার এলাকার জুতার ব্যবসায়ী আবুল মনছুর। তিনি বলেন, প্রতিদিন আসরের নামাজের পরপরই এখানে চলে আসি ইফতার করতে। এত মানুষের সঙ্গে ইফতার করলে ভালো লাগে, সওয়াবও বেশি।
ছয় বছর ধরে এই মসজিদে ইফতার করছেন রিকশাচালক খোরশেদ আলম। তিনি বলেন, এখানে আসলে মনটা জুড়িয়ে যায়। সে জন্য দিনভর নানা জায়গায় রিকশা চালালেও আসরের সময় এখানে চলে আসি। এখানে যে সম্মান পাই, অন্য কোথাও পাই না।
ভিজিডি কর্মসূচির চাল আত্মসাতের অভিযোগে হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার নুরপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. মুখলিছ মিয়াকে (৪৫) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার সুরাবই গ্রামের মৃত রফিক উল্লার ছেলে।
সোমবার দুপুরে শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সামনে থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে শায়েস্তাগঞ্জ থানা পুলিশ। এর আগে গত ২ মার্চ শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) রুমানা আক্তার বাদী হয়ে তার বিরুদ্ধে শায়েস্তাগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, মুখলিছ মিয়া নুরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান থাকাকালীন গত ১৫ নভেম্বর ও ২৪ ডিসেম্বর ভিজিডি কর্মসূচির চাল সরবরাহের আদেশ প্রদান ও বিতরণের তারিখ নির্ধারণ করে দেয়া হয়। কিন্তু নির্ধারিত তারিখে সেই চাল কার্ডধারীদের মাঝে বিতরণ করেননি তিনি। চাল বিতরণ না করার কারণ জানতে চেয়ে মুখলিছ মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি নির্বাচনি ঝামেলায় আছেন বলে জানান। এর কিছুদিন পর আবারও যোগাযোগ করা হলে তিনি চাল উত্তোলন করেননি বলে জানান।
এদিকে, শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা ২৪ নভেম্বর ও ২৬ ডিসেম্বর দু’দফায় ৬ দশমিক ৯৬ মেট্রিকটন চাল উত্তোলন করার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এতে স্পষ্ট হয়, মুখলিছ মিয়া চাল বিতরণ না করে আত্মসাৎ করেছেন।
এ বিষয়ে শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) রুমানা আক্তারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘ভিজিডি কর্মসূচির চাল বিতরণ না করায় আমি নিজে অনেকেবার মুখলিছ মিয়াকে সতর্ক করেছি, তদন্ত করেছি। তদন্ত করে ইউএনও স্যারকে জানিয়েছি। তিনি প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছেন। পরে আমি মামলা করেছি।’
একই বিষয়ে শায়েস্তাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নাজমুল হক কামাল জানান, মামলা হওয়ার পর থেকে তিনি (মুখলিছ মিয়া) পলাতক ছিলেন। আজকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে আশ্রয়ন প্রকল্পের রড চুরি, মানুষের টাকা আত্মসাৎসহ একাধিক মামলা রয়েছে।
হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে স্বপন মিয়া (১০) নামে এক শিশুকে গলা কেটে হত্যা চেষ্টায় অভিযুক্ত যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সোমবার সকালে উপজেলার দক্ষিণাচরণ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের পেছনে পুকুর পাড়ে জঙ্গলে এ ঘটনা ঘটে।
আহত স্বপন মিয়া মাধবপুর উপজেলার ছাতিয়ান গ্রামের ভাঙ্গারী ব্যবসায়ী কবির মিয়ার ছেলে। অভিযুক্ত শান্ত (১৯) মাধবপুর উপজেলার পাকুরিয়া গ্রামের চাঁন মিয়ার ছেলে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, সোমবার সকালে শান্ত ডিসিপি স্কুলের মাঠের পাশে স্বপনকে নিয়ে খেলতে যায়। কিছুক্ষণ পর স্বপনকে গলায় রক্তাক্ত জখম অবস্থায় ফেলে রেখে পালিয়ে যায় শান্ত। এসময় স্থানীয়রা স্বপনকে চুনারুঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায় ও পুলিশে খবর দেয়। সেখান থেকে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে তাকে চিকিৎসা দেয়া হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসকরা শিশু স্বপনকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। এঘটনায় চুনারুঘাট থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সনজিত ও লিটন রায় অভিযান চালিয়ে উপজেলার মিরাশি ইউনিয়নের চমলতলা থেকে অভিযুক্ত শান্তকে গ্রেপ্তার করে।
চুনারুঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাশেদুল হক জানান, শিশুকে গলা কেটে হত্যা চেষ্টায় অভিযুক্ত শান্তকে গ্রেপ্তার করছে পুলিশ। এ ঘটনায় পরবতীয় আইনি পদক্ষেপ প্রক্রিয়াধীন।
মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনে (মসিক) বসবাসরত শহীদ মুক্তিযোদ্ধার পরিবার ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা দেয়া হয়েছে।
সোমবার বেলা ১১টায় নগরীর টাউন হলের অ্যাডভোকেট তারেক স্মৃতি অডিটোরিয়ামে সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. ইকরামুল হক টিটুর উদ্যোগে এ সংবর্ধনা দেয়া হয়।
অনুষ্ঠানে মেয়র ইকরামুল হক টিটু বলেন, ‘বীর মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। আমাদের সব সাফল্যের দাবিদার বীর মুক্তিযোদ্ধারা। তারা যদি রক্ত দিয়ে দেশ স্বাধীন না করতেন তবে এর কিছুই সম্ভব হতো না। তৃতীয় শ্রেণির নাগরিক হয়ে আমাদের বসবাস করতে হতো। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ, দায়িত্ববোধ এবং কৃতজ্ঞতাবোধ থেকেই আমরা প্রতিবছর এ সংবর্ধনার আয়োজন করে থাকি।’
মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সিটি করপোরেশনের সুবিধা তুলে ধরে মেয়র বলেন, ‘আজ ৮৯৯ জন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার ও বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সংবর্ধনা দেয়া হয়েছে। সিটির বীর মুক্তিযোদ্ধাদের একটি হোল্ডিং ও পানির কর মওকুফের সিদ্ধান্ত আমাদের রয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় আজ ১৮০ বীর মুক্তিযোদ্ধার কর মওকুফ সনদ প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়া সিটি এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধারা দ্বিতীয় তলা পর্যন্ত ভবনের নকশা অনুমোদনে বিনামূল্যে আবেদন করতে পারছেন।’
সিটি করপোরেশনের সড়কগুলো মুক্তিযোদ্ধাদের নামে করা হবে উল্লেখ করে মেয়র বলেন, ‘সিটির বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সাবমার্সিবল পাম্প স্থাপনের ফি মওকুফ করা হয়েছে। নতুন সড়কগুলো বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ভাষা সৈনিকের নামে নামকরণ করা হবে। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য পৃথক করবস্থান নির্মাণের ব্যবস্থা করা হবে।’
মুক্তিযুদ্ধে নিজ অভিজ্ঞতা, ইতিহাস, ছবি সিটি করপোরেশনে পৌঁছানোর জন্য বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অনুরোধ জানিয়ে মেয়র বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান ও আত্মত্যাগের কথা আমরা পরবর্তী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে চাই। এসব তথ্য-উপাত্ত নিয়ে পরে একটি সংকলন প্রকাশ করা হবে।’
বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল উল্লেখ করে ইকরামুল হক টিটু বলেন, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে পরিচালনা করছে বলেই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এ উন্নয়নকে অব্যাহত রাখতে আওয়ামী লীগকে আবারও রাষ্ট্র ক্ষমতায় আনতে হবে। এ জন্য বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।’
অনুষ্ঠানে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইউসুফ আলী, সচিব অন্নপূর্ণা দেবনাথ, প্যানেল মেয়র ও অন্যান্য কাউন্সিলর, জেলা আইনজীবী সমিতির পিপি কবির উদ্দিন ভূইয়া, সাবেক জেলা কমান্ডার সেলিম সাজ্জাদ ও মো. আব্দুর রব, জেলা নাগরিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক নূরুল আমিন কালাম, ময়মনসিংহ সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের সভাপতি সৈয়দ রফিকুজ্জামান, মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক সদস্য সচিব সেলিম সরকার, সাবেক উপজেলা কমান্ডার আবুল কালাম আজাদ ও মো. খালেক শিকদার, রেলওয়ে প্রাতিষ্ঠানিক কমান্ডার মোজাম্মেল হকসহ অনেকে বক্তব্য রাখেন।
পাবনার রূপপুর পারমাণবিক বিদুৎ কেন্দ্রের গাড়িচালক সম্রাট হোসেন হত্যা মামলার মূল আসামি আব্দুল মমিনকে রাজধানীর বাংলা মোটর থেকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। সম্রাট রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্রের নিকিম কোম্পানির পরিচালকের গাড়ি চালাতেন। পরকীয়ার কারণে তিনি হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়ে থাকতে পারেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে র্যাব।
সোমবার দুপুরে সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুলে র্যাব-১২ এর হেডকোয়ার্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক মো. মারুফ হোসেন আসামি মমিনকে গ্রেপ্তারের তথ্য তুলে ধরেন।
মারুফ হোসেন বলেন, পাবনার রূপপুর পারমাণবিক বিদুৎ কেন্দ্রের গাড়ির চালক সম্রাট প্রতিদিন ডিউটি শেষ করে রাতে বাড়ি ফিরতেন। গত ২৩ মার্চ ডিউটি শেষে বাসায় না ফেরায় পরিবারের লোকজন তাকে খুঁজতে শুরু করেন। এক পর্যায়ে তারা জানতে পারেন, ডিউটি শেষ করে সম্রাট রাতে বন্ধু আব্দুল মমিনের বাড়িতে গিয়েছিলেন। পরে তারা মমিনের বাড়িতে খোঁজ করতে গেলে তার স্ত্রী উত্তেজিত হয়ে তাদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেন।
সম্রাট ও তার গাড়ি খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে ২৫ মার্চ কুষ্টিয়ার শিলাইদহ ঘাট থেকে নিখোঁজ এই গাড়িচালকের বস্তাবন্দি মরদেহ এবং তার জিপ গাড়িটি উদ্ধার করে পুলিশ। এই ঘটনায় সম্রাটের বাবা ঈশ্বরদী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই আত্মগোপনে ছিলেন আব্দুল মমিন।
মারুফ হোসেন জানান, চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের ছায়া তদন্ত করে র্যাব ১২ এর একটি দল গত রোববার রাতে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে অভিযান চালিয়ে ঢাকার বাংলা মোটর থেকে মূল আসামি মমিনকে গ্রেপ্তার করে।
এর আগে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মমিনের স্ত্রী সীমা খাতুনকেও আটক করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, মমিনের স্ত্রীর সঙ্গে তার বন্ধু সম্রাটের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। পরকীয়ার কারণে এই হত্যাকাণ্ড হয়েছে বলে প্রথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
তবে কীভাবে কোন পরিকল্পনায় সম্রাটকে হত্যা করা হয়েছে, মমিনের সঙ্গে হত্যাকাণ্ডে আরও কেউ জড়িত ছিলেন কি না, সে বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।
কুমিল্লার সদর দক্ষিণে দুই ভাইকে হত্যার দায়ে তাদের সৎ ভাইয়ের ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত। সোমবার কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ৫ নম্বর আদালতের বিচারক জাহাঙ্গীর হোসেন এ রায় দেন।
দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি সদর দক্ষিণ উপজেলার দক্ষিণ রসুলপুর গ্রামের আবুল কালাম প্রকাশ আবুলের ছেলে আল শফিউল ইসলাম ছোটন (২৩)।
রায়ের বিষয়টি জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এপিপি অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম। অপরদিকে আসামিপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট মো. কাইমুল হক রিংকু।
আইনজীবী নজরুল ইসলাম বলেন, ২০১৬ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি ছোটন তার দুই সৎ ভাই মেহেদী হাসান জয় (৮) ও মেজবাউল হক মনিকে (৬) শ্বাসরোধ করে হত্যা করে দরজা-জানালা বন্ধ করে পালিয়ে যান।
ওই দিনই নিহতের মা রেখা বেগম বাদী হয়ে ছোটনকে আসামি করে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানায় মামলা করেন। ওই বছরের ১ মার্চ পুলিশ ছোটনকে গ্রেপ্তার করে। পরে তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
এরপর মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ ও যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি পর্যালোচনাক্রমে আসামির বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে মৃত্যুদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেন আদালত।
সাতক্ষীরার তালা উপজেলায় স্ত্রী হত্যা মামলায় মোস্তফা বিশ্বাস নামের এক ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। সোমবার জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম জি আযম এ আদেশ দেন। রায় ঘোষণার সময় আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মোস্তফা বিশ্বাস উপজেলার চাঁদকাটি গ্রামের আমজেদ বিশ্বাসের ছেলে।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর অ্যাড. জহুরুল হায়দার বাবু জানান, বিয়ের সময় মেয়ের জামাই মোস্তফাকে সাধ্যমতো যৌতুক দেন আব্দুস সবুর। কিন্তু এতে খুশি হননি মোস্তফা। পরে নগদ পঞ্চাশ হাজার টাকা ও তিন ভরি সোনা দাবি করে স্ত্রী শিউলীকে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন মোস্তফা। বেশ কিছুদিন শিউলি তার বাবার বাড়ি থাকায় যৌতুকের টাকাসহ তাকে আনতে শ্বশুরবাড়ি রঘুনাথপুরে যান তিনি। যৌতুকের টাকা পূরণ করতে ব্যর্থ হওয়ায় শ্বশুরবাড়িতে ২০০৯ সালের ১৭ আগস্ট রাতে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে পিটিয়ে ও শ্বাসরোধে শিউলীকে হত্যা করে মোস্তফা।
এ ঘটনার পরদিন মোস্তফা ও তার বাবা আমজেদ বিশ্বাসকে আসামি করে তালা থানায় একটি হত্যা মামলা করেন আব্দুস সবুর। ওই বছরে ৪ সেপ্টেম্বর তালা থানার তৎকালীন তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই লুৎফর রহমান আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ১০ জনের সাক্ষ্য ও পুলিশের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বিচারক এম জি আযম মোস্তফা বিশ্বাসকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। মামলায় অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় মোস্তফার বাবা আমজেদ হোসেনকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়।
আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাড. বশির আহমেদ বলেন, আমরা এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করব।
একাধিক শিক্ষানবিশ আইনজীবীর কাছ থেকে প্রতারণা করে অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ায় ভুয়া আইনজীবী শ্যালক ও দুলাভাইকে আটক করেছে র্যাব। আটক দুজন হলেন কুমিল্লা নগরীর ধর্মসাগরপাড় এলাকার মো. শামসুল হকের ছেলে মো. এহতেশামুল হক নোমান (৩৪) এবং তার শ্যালক বুড়িচং উপজেলার বাহেরচর এলাকার জাহিদ হাসান ভূঁইয়া (২১)।
সোমবার বেলা ১১টার দিকে কুমিল্লা র্যাব-১১-এর কোম্পানি কমান্ডার মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন।
মেজর সাকিব বলেন, মার্চ মাসের শুরুর দিকে র্যাব অফিসে একটা অভিযোগ আসে। তাতে উল্লেখ করা হয়, কয়েক শিক্ষানবিশ আইনজীবীকে পরীক্ষায় পাস করিয়ে দেয়ার নাম করে অ্যাডভোকেট পরিচয় দেয়া নোমান ও তার শ্যালক জাহিদ কয়েক ধাপে অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নেন। প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে শিক্ষানবিশ আইনজীবীরা তাকে খোঁজা শুরু করেন। খুঁজে না পেয়ে র্যাব অফিসে অভিযোগ দেন তারা।
পরে প্রযুক্তির সহায়তায় ওই দুজনকে শনাক্ত করে গত রোববার রাতে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করে র্যাব।
র্যাব কর্মকর্তা মেজর সাকিব বলেন, ‘আটকের সময় ওই দুজনের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ ভুয়া ভিজিটিং কার্ড, বার কাউন্সিলের এমসিকিউ পরীক্ষার উত্তরপত্র, আইন সম্পর্কিত প্রশ্নপত্র ও উত্তরপত্র, ভুয়া আইডি কার্ড, ভুয়া সার্টিফিকেট, হলফনামা, ১টি এটিএম কার্ড, ১টি চেকবই, স্ট্যাম্প, কথোপকথনের স্ক্রিনশট, ২টি পেনড্রাইভ, ২টি আইনজীবী সম্বলিত মনোগ্রাম, ১টি কম্পিউটার ও অন্যান্য সরঞ্জাম, ৫টি মোবাইল ফোন ও নগদ ১৮ হাজার টাকা জব্দ করা হয়। তাদের দুজনকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হবে।
গত শনিবার সন্ধ্যার পর থেকে নিখোঁজ ছিলেন নওগাঁর মান্দা উপজেলার আজিজুল হক মন্ডল (৫০)। তার ব্যবহৃত মুঠোফোনটিও বন্ধ ছিল। বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করে সন্ধান না পেয়ে এ বিষয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে যান তার ছেলে বেলাল হোসেন। পরে সেখান থেকেই অজ্ঞাতপরিচয় মরদেহ উদ্ধারের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন সেটি তার বাবার।
গত রোববার রাতে উপজেলার কুসুম্বা ইউনিয়নের আন্দারশুরা বিল সংলগ্ন বাঁধ থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। আজিজুল হক উপজেলার কুসুম্বা হাজীপাড়া গ্রামের মৃত পরশতুল্যাহ মন্ডলের ছেলে। তিনি পেশায় একজন ভ্যানচালক।
তার ছেলে বেলাল বলেন, ‘প্রতিদিন সকালে বের হয়ে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে আসতেন বাবা। গত শনিবার সন্ধ্যার পর থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন এবং তার ব্যবহৃত মুঠোফোনটি বন্ধ ছিল। সব জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেও তার সন্ধান পায়নি পরিবারের লোকজন। গতকাল আমি ঢাকায় ছিলাম। বিষয়টি জানার পর রোববার ঢাকা থেকে বাড়ি এসে থানা পুলিশের শরণাপন্ন হয়ে রাত সাড়ে ৯টার দিকে জিডি লিখছিলাম। পরে ডিউটি অফিসারের রুমে তার স্বাক্ষর নিতে গিয়ে জানতে পারি, রাত ৮টার দিকে উপজেলার ভারশোঁ ইউনিয়নের চৌবাড়িয়া বাজারের পূর্ব পার্শ্ব দিয়ে প্রবাহিত শিব নদী এবং আন্দারশুরা বিল সংলগ্ন বাঁধের পাশে একটি মরদেহ পাওয়া গেছে। পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখতে পাই কে বা কারা আমার বাবাকে হত্যা করে মরদেহ বস্তাবন্দি করে সেখানে ফেলে রেখে গেছে।’
বেলাল বলেন, ‘যারা এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত আমরা তাদের বিচার চাই।’
মান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) মেহেদী মাসুদ জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়েছে। রাতে এ ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। সোমবার বেলা ১১টার দিকে নওগাঁ সদর হাসপাতালে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হবে।
নাটোরের লালপুরে জমি নিয়ে শ্বশুর ও জামাইয়ের বিরোধে দেশীয় অস্ত্রের আঘাতে সাতজন আহত হয়েছেন। গত রোববার রাত ৯টার দিকে উপজেলার আড়বাব ইউনিয়ন সালামপুর শেরপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, জমি-জমা ভাগাভাগিকে কেন্দ্র করে দীর্ঘ দিন ধরেই স্থানীয় আমিরুল ইসলাম নামে ব্যক্তি ও তার মেয়ে জামাই তাশেম সরকারের মধ্যে বিরোধ চলছিল। এ নিয়ে তাদের মধ্যে একাধিকবার হাতাহাতির ঘটনাও ঘটেছে। রোববার রাতে আমিরুল, জাহাঙ্গীর, জিয়া, জিল্লুরসহ আরও কয়েকজন বিরোধপূর্ণ জমিতে গম কাটতে যান। এ সময় তাশেম সরকার ও তার স্বজনরা তাদের বাধা দেয়। তখন দুপক্ষের মধ্যে কথাকাটাকাটি শুরু হয়। এক পর্যায়ে তাশেমের লোকজন ধারাল হাসুয়াসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আমিরুলদের ওপর হামলা চালায়।
লালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) জালাল উদ্দিন জানান, হামলায় অন্তত সাতজন আহত হয়েছেন। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য আমিরুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর ও জিয়াসহ পাঁচজনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে পাঠিয়েছে। এ ঘটনায় এখনো কোনো পক্ষ অভিযোগ দেয়নি।