ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া আইসিপি, লাকসাম-আখাউড়া রেলওয়ে প্রকল্প এবং বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) দায়িত্বপূর্ণ সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন বাহিনীর মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল এ কে এম নাজমুল হাসান।
বুধবার তিনি বিজিবির সরাইল রিজিয়নের আওতাধীন সুলতানপুর ব্যাটালিয়নের (৬০ বিজিবি) অধীনস্থ আখাউড়া আইসিপি পরিদর্শন করেন। বিজিবি প্রধান আখাউড়া আইসিপিতে পৌঁছালে বিএসএফ ত্রিপুরা ফ্রন্টিয়ার কমান্ডার তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান। এ সময় বিএসএফের একটি চৌকস দল বিজিবি মহাপরিচালককে গার্ড অব অনার প্রদান করে। পরে তিনি উপস্থিত বিএসএফ সদস্যদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
আখাউড়া আইসিপি পরিদর্শন শেষে বিজিবি মহাপরিচালক আখাউড়া আইসিপি বিওপি পরিদর্শন করেন এবং সৈনিকদের সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন। মধ্যাহ্নভোজের পর তিনি বিজিবির সরাইল ব্যাটালিয়নের (২৫ বিজিবি) অধীনস্থ ফকিরমোড়া বিওপি পরিদর্শন করেন। এরপর বিজিবি মহাপরিচালক লাকসাম-আখাউড়া রেলওয়ে প্রকল্পের কসবা স্টেশন এলাকা পরিদর্শন করেন।
এ সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, ‘এটি আমাদের জাতীয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রকল্প। প্রকল্পটির দুটি স্থান বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে হওয়ায় বিএসএফের বাধার কারণে দীর্ঘদিন ধরে নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ও ভারত উভয় রাষ্ট্রের মধ্যে এ ব্যাপারে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। এ ব্যাপারে বিজিবি- বিএসএফের মধ্যেও কার্যকর যোগাযোগ অব্যাহত আছে। খুব শিগগির এ প্রকল্পের কাজ পুনরায় শুরু করা হবে বলে আমরা আশাবাদী।’
এর আগে বিজিবি মহাপরিচালক সরাইল রিজিয়ন সদর দপ্তর এবং এর অধীনস্থ সরাইল ব্যাটালিয়ন (২৫ বিজিবি) পরিদর্শন করেন। এসময় তিনি কোয়ার্টার গার্ডে সালাম গ্রহণ এবং বৃক্ষরোপণ করেন। পরে বিজিবি মহাপরিচালক সরাইল রিজিয়নের সব স্তরের বিজিবি সদস্যের বিশেষ দরবার গ্রহণ করেন এবং অপারেশনাল, প্রশিক্ষণ ও প্রশাসনিক বিভিন্ন বিষয়ে দিক-নির্দেশনা প্রদান করেন।
বিজিবি মহাপরিচালকের পরিদর্শনকালীন সরাইল রিজিয়ন কমান্ডার, বিজিবির ঊর্ধ্বতন অফিসার ও ব্যাটালিয়ন অধিনায়কসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) কর্তৃক বাংলাদেশে মনোনীত এনজিও ‘রাইটস্ যশোর’ মাদারীপুর শাখার উদ্যোগে জেলায় কর্মরত বিভিন্ন টিভি ও প্রিন্টিং মিডিয়ার সাংবাদিকদের নিয়ে নিরাপদ অভিবাসন বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সম্ভাব্য অভিবাসীদের ক্ষমতায়নে আই.ও.এমের ‘সিনেমা আঙিণা’ শীর্ষক সেমিনার ও কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার ওই অনুষ্ঠানটি মাদারীপুর জেলা কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। মাদারীপুর ‘সিনেমেরিনা প্রকল্পের’ ডিস্ট্রিক্ট ম্যানেজার মোখলেছুর রহমান পিন্টুর সার্বিক তত্ত্বাবধানে ও ডিরেক্টর অব প্রোগ্রাম এস,এম আজহারুল ইসলামের সঞ্চালনায় সংস্থার প্রধান কার্যালয় যশোর জেলা থেকে আগত প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন সিনিয়র প্রোগ্রাম অ্যাসোসিয়েটস অমল বিশ্বাস, সিনিয়র মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশন অফিসার তারেক মাহমুদ, ডিরেক্টর অব প্রোগ্রাম-প্রদীপ দত্ত, মাদারীপুর জেলা ম্যানেজার ‘সিনেমেরিনা’ প্রকল্পের মো. মোখলেছুর রহমান পিন্টুসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা। এ সময় সংস্থার এফ,এস,টি,আই,পি প্রকল্পের মাদারীপুরের ডিস্ট্রিক্ট প্রোগ্রাম অফিসার বায়োজিদ মিয়া উপস্থিত ছিলেন। এতে জেলার বিভিন্ন টেলিভিশন, প্রিন্টিং ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার ২৩ জন সিনিয়র সাংবাদিক অংশগ্রহণ করেন। এতে বক্তব্য রাখেন বিটিভির সাবেক সাংবাদিক মাহাবুবুর রহমান বাদল, জাতীয় দৈনিকের সাংবাদিক সুবল বিশ্বাস, দৈনিক বাংলার সাংবাদিক শরীফ মো. ফায়েজুল কবীর, সাংবাদিক বেলাল রিজভী, সাগর তামিম, রিপন চন্দ্র মল্লিক প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে সংস্থাটির জনকল্যামুখী সব কর্মকাণ্ড সাংবাদিকদের তুলে ধরার আহ্বান জানান।
কিশোরগঞ্জ জেলার অখণ্ডতা রক্ষার দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে ছাত্র-জনতা। সমাবেশ থেকে কিশোরগঞ্জ জেলা নিয়ে বিভ্রান্তিকর প্রোপাগান্ডা ছড়ানো এবং আন্দোলনের নামে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়। বুধবার কিশোরগঞ্জের গুরুদয়াল সরকারি কলেজের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। এতে ছাত্র-জনতাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন।
আয়োজকরা বলেন, সম্প্রতি বাংলাদেশের ৬৫তম জেলা গঠনের দাবিতে ভৈরব ও বাজিতপুরের কিছু ব্যক্তি আন্দোলন করছেন, যা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। বক্তারা বলেন, ‘কিশোরগঞ্জ অখণ্ড ছিল, আছে এবং থাকবে।’
তারা আরও অভিযোগ করেন, জেলার দাবিতে আন্দোলনকারীরা রেলপথ ও নৌপথ অবরোধ করে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি সৃষ্টি করছেন। এমনকি যাত্রীবাহী ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের মতো ন্যক্কারজনক ঘটনাও ঘটানো হয়েছে। এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান বিক্ষোভকারীরা।
এর আগে, গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বাজিতপুর উপজেলাকে ৬৫তম জেলা ঘোষণার দাবিতে ‘বাজিতপুর জেলা বাস্তবায়ন কমিটির ব্যানারে স্থানীয়রা মশাল মিছিল করেন। মিছিলটি বাজিতপুর পৌরশহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে আলোছায়া মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কিশোরগঞ্জের সাবেক আহ্বায়ক ইকরাম হোসেন বলেন, ‘কিশোরগঞ্জ বিএনপির দায়িত্বে রয়েছেন শরীফুল আলম। আপনারা চাইলে তার মাধ্যমে আপনাদের দাবি সচিবালয়ে, মন্ত্রণালয়ে বা উপদেষ্টাদের নিকট পৌঁছাতে পারেন। কিন্তু ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ, হামলা-ভাঙচুর কোনো আন্দোলন নয়, এটা ফ্যাসিবাদের কাজ। আমরা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের অনতিবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবি জানাই।’
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কিশোরগঞ্জের সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মামুন মিয়া, সাবেক সদস্য সচিব ফয়সাল প্রিন্স, হয়বত নগর বয়েজ ক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম জনি, কিশোরগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি নুসরাত জাহান, সদর উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক শরিফুল ইসলাম লিমন। সমাবেশ পরিচালনা করেন গুরুদয়াল সরকারি কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মোদাচ্ছির তুসি।
ইউপিডিএফের গুলিতে নিহত তিনজন পাহাড়ি যুবকের হত্যার বিচার দাবিতে রাঙামাটিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ (পিসিসিপি)। বুধবার শহরের বনরূপা আলিফ মার্কেট চত্বরে সংগঠনটির জেলা শাখার উদ্যোগে এ বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়।
বিক্ষোভ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন পিসিসিপি রাঙামাটি জেলা সভাপতি তাজুল ইসলাম তাজ এবং সঞ্চালনা করেন জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক পারভেজ মোশাররফ হোসেন।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন পিসিএনপি রাঙামাটি জেলা সহসভাপতি কাজী জালোয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক হুমায়ুন কবির, যুব পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি নূর হোসেন, পিসিসিপি জেলা সাধারণ সম্পাদক মো. আলমগীর হোসেন, সহসাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম, এবং সরকারি কলেজ শাখার নেতা নয়ন বড়ুয়া।
বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, মিথ্যা ধর্ষণ ইস্যু উসকে দিয়ে খাগড়াছড়ির গুইমারা ও আশপাশের এলাকায় অস্থিতিশীলতা তৈরির পর ইউপিডিএফের সশস্ত্র সদস্যরা গত ২৮ সেপ্টেম্বর রামসু বাজার এলাকায় সংঘর্ষ চলাকালে পাহাড় থেকে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র দিয়ে গুলি ছোড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই তিনজন সাধারণ পাহাড়ি যুবক- আখ্র মারমা, আথুইপ্রু মারমা ও থৈইচিং মারমা নিহত হন।
বক্তারা বলেন, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পাহাড়কে অশান্ত করে সেনাবাহিনী ও সরকারকে বিতর্কিত করার একটি বড় রাজনৈতিক পরিকল্পনা ছিল। তারা অভিযোগ করেন, ইউপিডিএফ স্বায়ত্তশাসন দাবিকে আন্তর্জাতিক মহলে চাপ সৃষ্টি করার সুযোগ তৈরির উদ্দেশ্যে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করার কৌশল হিসেবে সাধারণ জনগণকে সামনে ঠেলে দিয়ে সহিংসতা উসকে দেয়।
সমাবেশে বক্তারা নিহত তিন যুবকের হত্যায় জড়িত ইউপিডিএফের সশস্ত্র সদস্যদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও আইনের আওতায় আনার দাবি জানান। পাশাপাশি পাহাড়ি-বাঙালি সম্প্রীতি অটুট রাখতে সকলকে বিভ্রান্তিকর প্রচারণা থেকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান।
বক্তারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, দাবি পূরণ না হলে পিসিসিপি পর্যায়ক্রমে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবে।
বাংলাদেশে শিশু অধিকার ও সুরক্ষার বর্তমান সংকটময় পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে পটুয়াখালীতে অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘শিশু অধিকার পরিস্থিতি উপস্থাপন’ শীর্ষক আলোচনা সভা। বুধবার এ অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে আয়োজন করে লাল সবুজ সোসাইটি এবং মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন।
জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ড. মোহাম্মদ শহীদ হোসেন চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অপু সরোয়ার, স্থানীয় সরকার ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক জুয়েল রানা এবং অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মাসুদ উল আলম। লাল সবুজ সোসাইটির প্রোগ্রাম অফিসার মো. ইসরাফিল সভাপতিত্ব করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বলেন, ‘পরিবার ও বিদ্যালয় হলো- শিশুর প্রথম আশ্রয়স্থল। এই দুই স্থানেই একটি শিশুর বেড়ে ওঠার ভিত্তি গড়ে ওঠে। তাই পরিবার ও বিদ্যালয়ে শিশুদের প্রতি ভালোবাসা, যত্ন এবং নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে।
আলোচনা সভায় লাল সবুজ সোসাইটির প্রতিনিধি মোমেনা সিফা রুমকি শিশু অধিকার পরিস্থিতির সচিত্র তুলে ধরে বলেন, জানুয়ারি থেকে আগস্ট ২০২৫ পর্যন্ত দেশের ১২টি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত ১,২৮৯টি শিশুবিষয়ক সংবাদের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এর মধ্যে ১,০৬৯টি ছিল নেতিবাচক এবং মাত্র ২২০টি ইতিবাচক সংবাদ।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, স্বাস্থ্য বৈষম্য ও নিপীড়ন, শিশু ধর্ষণ ও হত্যা, এবং দুর্ঘটনায় মৃত্যু- এই তিনটি কারণই শিশু সুরক্ষার সবচেয়ে বড় হুমকি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। সর্বাধিক সংখ্যক ঘটনার তথ্য পাওয়া গেছে ঢাকা বিভাগে, যা নগর ও গ্রামের মধ্যে শিশু সুরক্ষায় বৈষম্যের ইঙ্গিত দেয়।
ফরেস্টার পদে বন বিভাগে চাকরিতে যোগদান। এক পদেই তাদের কেটেছে কারও ৩০ বছর, কারও ৩৫ বছর, কারও কর্মজীবনে কেটেছে ২৬টি বছর। পদোন্নতিহীন চাকরি জীবনে তারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তের বন ও বনজসম্পদ রক্ষায় জীবন বাজী রেখে দায়িত্ব পালন করেছে। বনভূমি, বন, বনজসম্পদ রক্ষা করতে গিয়ে পতিত হয়েছে কখনো কখনো মৃত্যুর মুখোমুখি। বনখেকো বনদস্যুদের আক্রমণে হামলা-মামলার শিকার হয়েছে। হয়রানি ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া-রাঘব বোয়ালদের কত রক্ত চক্ষুর কাল দৃষ্টির শিকার হয়েছে তার শেষ নেই। উপেক্ষা করতে হয়েছে নানা হুমকিধমকি। দেশের সম্পদ রক্ষা করতে গিয়ে অনেক মামলা রুজু করতে হয়েছে বন ভূমিদস্যু ও প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে। কতবার দেশের এক প্রান্ত অন্য প্রান্তে মামলার সাক্ষী দিতে যেতে হয়েছে। পরিবার-পরিজন রেখে কাটাতে হয়েছে বনের টিলা টাঙ্গর হাওর-বাঁওড় বন-জঙ্গলের অফিসে অফিসে। এভাবেই কেটে গেছে তাদের জীবন-যৌবনের দীর্ঘসময়। তবুও বঞ্চিত হতে হয়েছে পদোন্নতি থেকে। প্রদোন্নতি বঞ্চনা যেন তাদের কুরে কুরে খেয়েছে। কর্মজীবনের শেষ প্রান্তে এসে ধরা দেয় তাদের স্বপ্নের পদোন্নতি। ফরেস্টার থেকে এখন তারা ডেপুটি রেঞ্জার পদ প্রাপ্তিতে তারা উদ্বেলিত উচ্ছ্বসিত। তাদের নিজ নিজ কর্ম এলাকায় ফিরেছে প্রাণচাঞ্চল্য। আনন্দে ভাসছে তারা। কর্মস্পৃহা আগের থেকে বেড়েছে। আনন্দে-খুশিতে কাটছে এ প্রাপ্তি। এসব সুখ-দুঃখ আনন্দ-বেদনার কথা জানিয়েছে বন বিভাগের টাঙ্গাইলসহ দেশের পাঁচ শতাধিক ফরেস্টার থেকে ডেপুটি রেঞ্জার পদে পদোন্নতি প্রাপ্তরা।
সম্প্রতি দেশের প্রায় ৪৫৩ জন বন বিভাগের ফরেস্টার থেকে ডেপুটি রেঞ্জার হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছে।
টাঙ্গাইলের মধুপুর রেঞ্জের দায়িত্ব প্রাপ্ত রেঞ্জ কর্মকর্তা ফরেস্টা সাইফুল ইসলাম বলেন, ২০ বছর তার চাকরি জীবনে এ পদোন্নতি পেয়ে খুশি। তারমতে, মাঠ পর্যায়ে সারাদেশেই কাজের গতি আগের চেয়ে বেড়ে গেছে। আরও কয়েকজন জানান, ৪৫৩ জনের অনেকেই এখন পদোন্নতি পেয়ে এসিএফের মতো ঊর্ধ্বতন পদে যাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় সারাদেশের ৫ শতাধিক বন কর্মকর্তার মধ্যে বইছে আনন্দের বন্যা। তাদের পদোন্নতির বিষয়ে আবেদন স্মারকলিপি দৌড়ঝাঁপ করেছে বাংলাদেশ ডিপ্লোমা বনবিদ কেন্দ্রীয় কমিটির পরিশ্রমী সংগঠক আহ্বায়ক আব্দুল আহাদ।
এ ব্যাপারে মৌলবী বাজারের কুলাউড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা ও বাংলদেশ ডিপ্লোমা বনবিদ পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক আব্দুল আহাদ জানান, সারাদেশের ৪৫৩ জন তাদের পদোন্নতি পেয়েছে। তিনি ৩৬ বছর পূর্বে ফরেস্টার পদে যোগদান করেছিলেন। একই পদে ৩৬ বছর চাকরি করে আবার অনেকেই অবসর নিয়েছেন এবং অনেকের অবসরের সময় চলে আসছে। বনের ঊর্ধ্বতন পদে পদোন্নতির বিধান থাকলেও ফরেস্টার পদ থেকে অজ্ঞাত কারণে পদোন্নতি না দিয়ে বন বিভাগের মাঠ পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ এ পদের কর্মকর্তারদের বঞ্চিত করে রেখেছিল বলে তিনি মনে করেন। যথাসময়ে পদোন্নতি হলে তিনি এত দিনে সহকারী বন সংরক্ষক থাকত বলে জানান।
এ জন্য তিনি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, প্রধান বন সংরক্ষক আমির হোসেন চৌধুরীসহ সংশ্লিষ্টদের আন্তরিক ধন্যবাদ কৃতজ্ঞতা জানান।
জানা যায়, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের সাথে সাক্ষাৎ করে দাবি তুলে ধরেন ডিপ্লোমা বনবিদ পরিষদের নেতারা। পরে তাদের দাবি আমলে নিয়ে পদোন্নতির সিদ্ধান্ত গ্রহন করে এবং সম্প্রতি পদোন্নতির বিষয়ে গেজেট আকারে প্রকাশ করে বলে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে ডিপ্লোমা বনবিদ পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতা সুনামগঞ্জ সদর রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. রিয়াজ উদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, দীর্ঘদিনের আন্দোলনের ফসল হলো- ফরেস্টারদের ডেপুটি রেঞ্জার পদে প্রমোশন। তিনি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে ধন্যবাদ কৃতজ্ঞতা জানান। কিন্তু তাদের চাকরির মেয়াদও বেশিদিন নেই। তাই দ্রুত চাকরির নীতিমালা মোতাবেক ঊর্ধ্বতন পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে বলেও তিনি মনে করেন।
এ ব্যাপারে বন অধিদপ্তরের বন সংরক্ষক মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘সারাদেশের ফরেস্টারদের পদোন্নতি আটকা ছিল। বর্তমান পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মহোদয়ের ঐকান্তিক সানুগ্রহে ৩৬ বছর থেকে বঞ্চিত ফরেস্টাররা ডেপুটি রেঞ্জার হয়েছে।’ তিনি বলেন, অনেকের চাকরির মেয়াদ শেষের পথে। এরপরেও অবসরে যাওয়ার পূর্বে পদোন্নতি লাভ করায় তারা ডিপার্টমেন্টের প্রতি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
নেত্রকোনায় ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে নেত্রকোনা-২ (নেত্রকোনা সদর ও বারহাট্টা) আসনের রাজনৈতিক অঙ্গনে বইছে নতুন জাগরণের হাওয়া। জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে আসতেই আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছেন গণ অধিকার পরিষদের মুখপাত্র ও সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক, ২০১৮ সালের ঐতিহাসিক কোটা সংস্কার আন্দোলনের আহ্বায়ক এবং ছাত্র অধিকার পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক হাসান আল মামুন। রাজনৈতিক মাঠে তার উপস্থিতি এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। প্রতিদিনই তিনি ছুটে চলেছেন গ্রাম থেকে গ্রামে, করছেন গণসংযোগ, পথসভা, মতবিনিময় সভা। তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধি হিসেবে মানুষের মাঝে তৈরি করছেন আস্থার নতুন সেতু। দেশ ও গণমানুষের সেবায় আন্দোলনই আমার পথ বললেন, কোটা বাতিল আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন। তিনি বলেন, ‘গণমানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে আমি ১১ মাস কারাভোগ করেছি, ২২ বার হামলার শিকার হয়েছি তবুও থামিনি। অন্যায়, স্বৈরাচার আর বৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম এখনো চলছে।
কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে নেত্রকোনার মাঠে ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে দেশের লাখো শিক্ষার্থীর আস্থা অর্জন করেছিলেন হাসান আল মামুন।
এবার তিনি সেই পরিবর্তনের ধারা গ্রামে-গঞ্জে পৌঁছে দিতে চান নেত্রকোনায়। উন্নয়নের রূপরেখা: ‘স্বনির্ভর, আধুনিক ও মানবিক নেত্রকোনা গড়ব’ হাসান আল মামুনের নির্বাচনী অঙ্গীকারে স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে স্থানীয় উন্নয়নের বাস্তব পরিকল্পনা স্বাস্থ্যখাতে বিপ্লব: প্রতিটি ইউনিয়নে ২৪ ঘণ্টা বিনামূল্যে অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস; রোগীকে ঘর থেকে হাসপাতালে এবং প্রয়োজনে ঢাকায় স্থানান্তরের নিশ্চয়তা। আধুনিক সদর হাসপাতাল: নেত্রকোনা সদর হাসপাতালে আইসিইউ ইউনিট স্থাপন।
কৃষি পুনরুজ্জীবন: কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হিমাগার নির্মাণ, হাওড় অঞ্চলে মাছের পোনা অবমুক্তকরণ ও মাছ সংরক্ষণের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি। মানুষের কষ্ট, স্বপ্ন ও সম্ভাবনা জাতির সামনে তুলে ধরছেন। আপনাদের সহযোগিতায় নেত্রকোনাকে আমরা গড়ব উন্নয়নের অগ্রযাত্রার পথে। ‘ট্রাক’ প্রতীকে পরিবর্তনের ডাক, নেত্রকোনার সীমান্তবর্তী হাওড় অঞ্চল আজ নতুন আশায় মুখর। তরুণ নেতৃত্বের এই উত্থান স্থানীয় রাজনীতিতে তৈরি করছে নতুন ধারা। গণ অধিকার পরিষদের প্রতীক ‘ট্রাক’ নিয়ে হাসান আল মামুন এখন মানুষের দ্বারে পৌঁছে দিতে চান একটি বার্তা, গণমানুষের অধিকারই আমার রাজনীতি, আর উন্নত নেত্রকোনা গড়াই আমার স্বপ্ন।
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর জয়পুরহাট শহরের হাড়াইল থেকে রেলগেট পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার চার লেন সড়কের কাজ শেষ হয়েছে। এতে শহরে প্রধান সড়কের একাংশে যানজট কমেছে। এতে শহরবাসী ফিরে পেয়েছে স্বস্তি। তবে সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাবে নতুন সড়কেই এখন গাড়ি পার্কিং করতে হচ্ছে, যা আবারও শৃঙ্খলা নষ্টের আশঙ্কা তৈরি করেছে।
সচেতন শহরবাসীর প্রত্যাশা, পরিকল্পিত পার্কিং ও কঠোর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা গেলে জয়পুরহাট শহরের চার লেন সড়ক প্রকল্প সত্যিকারের সফল হবে।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জয়পুরহাট শহরের হাড়াইল থেকে রেলগেট পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার সড়ক চারলেনে উন্নীত করার পরিকল্পনা হয়। ভূমি অধিগ্রহণ, পানি, বিদ্যুৎ ও টেলিফোন লাইন স্থানান্তর ও রেলগেট উন্নয়ন বাবদ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষে সর্বমোট ১০৪ কোটি ২২ লাখ ১৮ হাজার ৫৮৯ টাকা পরিশোধ করা হয়। এর মধ্যে ভূমি অধিগ্রহণেই ব্যয় হয়েছে ৯০ কোটি ২০ লাখ ৮৫ হাজার ৯৮০ টাকা।
এছাড়া সড়কের দুপাশে প্রায় ৫ কিলোমিটার নালা নির্মাণে ৩০ কোটি ও সড়ক প্রশস্তকরণে ২৮ কোটি টাকা ব্যয় বরাদ্দ দেওয়া হয়। নকশা অনুযায়ী সড়কটির হবে ৬০ ফুট প্রশস্ত। এক পাশে ২৪ ফুট, আরেক পাশে ২৪ ফুট প্রশস্ত। মাঝখানে থাকবে ৪ ফুট প্রশস্ত ডিভাইডার। পুরো সড়কের দুপাশে থাকবে ড্রেনসহ ৫ থেকে ৯ ফুট প্রশস্ত ফুটপাত।
আরও জানা যায়, ২০১৮ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর চার লেন সড়ক প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দুই দফায় কাজের মেয়াদ বাড়িয়ে চুক্তি অনুযায়ী কাজ করেনি। এ কারণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাড়ে ৩ কোটি টাকা জরিমানা করে সড়ক বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। এরপর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নাভানা কনস্ট্রাকশনের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে। সড়কের দুপাশে মোট প্রায় ৫ কিলোমিটার নালা নির্মাণ ও আড়াই কিলোমিটার চার লেন সড়ক নির্মাণের জন্য পুনরায় পৃথক দরপত্রের আহ্বান করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। সড়কের দুপাশে নালা নির্মাণের কাজটি পায় নওগাঁর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আমিনুল হক লিমিটেড ও চার লেন সড়কের কাজ পায় জয়েন ভেঞ্চার রিলায়েন্স বিল্ডার্স লিমিটেড ও হাসান টেকনো। ২০২২ সালের ২০ জুলাই নালা ও সড়ক নির্মাণের জন্য কার্যাদেশ দেওয়া হয়। ২০২৪ সালে শুধু দুপাশে নালা নির্মাণের কাজ শেষ করা হয়। চলতি বছরের শুরুতেই চার লেন সড়কের নির্মাণকাজ শুরু করা হয়। নকশা জটিলতাসহ নানা কারণে চার লেন সড়কের কাজ কিছুদিন বন্ধ ছিল। পরে আবার কাজ শুরু করা হয়। এখন সড়কের কাজ শেষ হয়েছে।
শহরের আড়াই কিলোমিটার চার লেন সড়ক ঘুরে দেখা যায়, পাঁচুর মোড় থেকে আমতলী পর্যন্ত যানজট প্রবণ এলাকায় সড়কের দুপাশে নির্বিঘ্নে যানবাহন চলাচল করছে। এই এলাকায় সড়কের দুপাশে যত্রতত্র গাড়ি পাকিং করা হয়েছে। এতে সড়কে কিছুটা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে। আবার সড়ক ডিভাইডারে লোকজন যে যার ইচ্ছামতো গাছ লাগিয়েছেন। ডিভাইডারে একজন শ্রমিক ঘাস নিড়ানি দিচ্ছেন। রেলেগেটের পশ্চিম অংশে আগের মতো যানজট রয়েছে। সড়কের এই অংশ চার লেন করা হয়নি।
ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকচালক আপেল মাহমুদ শান্ত বলেন, ‘আগে এই রাস্তায় যানজট লেগেই থাকত। এখন সড়কের এক পাশে যানবাহন আসে, অন্য পাশে দিয়ে যায়। এখন আর এতটা যানজট লাগে না। তবে পার্কিংয়ের জায়গা না থাকায় অনেকে সড়কের ধারে গাড়ি রাখছে।’
শহরের ব্যবসায়ী মো. আল-আমিন বলেন, ‘শহরের প্রধান সড়কটা এখন অনেক সুন্দর হয়েছে। তবে দোকানপাটের সামনে গাড়ি রাখার কারণে আবারও যানজটের আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে। পৌরসভা যদি নির্দিষ্ট পার্কিং ব্যবস্থা করে দেয়, তাহলে এ সমস্যা থাকবে না।’
নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) জেলা শাখার সাধারণ ইসমাইল হোসেন বলেন, শহরের রেলগেট থেকে হাড়াইল পর্যন্ত চার লেন সড়ক করা হয়েছে। কিন্তু সড়কের ওপর যত্রতত্র গাড়ি পাকিং আবার যাত্রী ওঠানামা করানো হচ্ছে। তবে রেলগেটে পশ্চিম অংশের সড়ক চার লেন করা হয়নি। সেই অংশে আগের মতো যানজট হচ্ছে।’
জয়পুরহাট সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপবিভিগীয় প্রকৌশলী মেহেদী খান বলেন, ‘আমরা সড়ক ডিডাইডারে কোনো গাছ রোপণ করিনি। লোকজন যে যার মতো ডিভাইডারে গাছ লাগিয়েছেন।’
জয়পুরহাট সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাজস খান বলেন, ‘চার লেন সড়ক চালুর পর শহরে যানজট অনেকটাই কমে গেছে। এছাড়া শহরে গাড়ি পার্কিং সমস্যা সমাধানে চেষ্টা করা হচ্ছে।’
বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলায় দীর্ঘ ১০ মাস ধরে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও একাডেমিক সুপারভাইজারের পদ শূন্য রয়েছে। এতে ব্যাহত হচ্ছে উপজেলার শিক্ষা কার্যক্রম ও প্রশাসনিক কার্যক্রম।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত সারিয়াকান্দি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার দায়িত্বে ছিলেন সরোয়ার ইউসুফ জামান এবং একাডেমিক সুপারভাইজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মিলন হোসেন। শিক্ষা কর্মকর্তা অবসরে যান এবং একাডেমিক সুপারভাইজার বদলি হয়ে অন্যত্র যোগদান করেন। এরপর থেকে এ দুই পদে কেউ নিয়োগ না হওয়ায় শিক্ষা কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।
বর্তমানে গাবতলী উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে সারিয়াকান্দির কার্যক্রম দেখছেন। তবে একাধারে দুই উপজেলার দায়িত্ব পালন করায় সারিয়াকান্দিতে প্রয়োজনীয় নজরদারি ও তদারকি হচ্ছে না বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।
এ অবস্থায় বিদ্যালয়গুলোতে নানা প্রশাসনিক ও একাডেমিক সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। প্রধান শিক্ষকদের কাজের সমন্বয়, সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়ন, শিক্ষক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম, বিদ্যালয় পরিদর্শন এবং শিক্ষকদের পেশাগত উন্নয়ন কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রম বাস্তবায়নে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।
সারিয়াকান্দি পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও উপজেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি সাকী মো. জাকিউল আলম বলেন, “দীর্ঘদিন শিক্ষা কর্মকর্তা না থাকায় শিক্ষা কার্যক্রমে শৃঙ্খলা নষ্ট হচ্ছে। ফাইলপত্র জমা, প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা না পাওয়ায় শিক্ষকরা ভোগান্তিতে পড়েছেন।”
মথুরপাড়া কাজী বছির উদ্দীন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের সভাপতি মো. তোফায়েল আহম্মেদ বলেন, “নিয়মিত শিক্ষা কর্মকর্তা না থাকায় শিক্ষার মান উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। শিক্ষকদের সমস্যা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিলম্ব হচ্ছে।”
এ বিষয়ে সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. আতিকুর রহমান বলেন, “বিষয়টি শিক্ষা বিভাগের হলেও আমি ইতোমধ্যে জানার পর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছি। দ্রুত পদায়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে আশা করছি।”
বগুড়া জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রমজান আলী আকন্দ বলেন, “সারিয়াকান্দির শূন্য পদে নিয়োগের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আপাতত গাবতলীর শিক্ষা কর্মকর্তা অতিরিক্ত দায়িত্বে কাজ করছেন। দ্রুত পদ পূরণের চেষ্টা চলছে।”
স্থানীয় শিক্ষাবন্ধুরা মনে করছেন, দ্রুত মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও একাডেমিক সুপারভাইজার নিয়োগ না হলে উপজেলার শিক্ষার মান আরও পিছিয়ে পড়বে।
লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার চরকাদিরা ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের চরপাগলা গ্রামের হাওলাদারপাড়া থেকে বারঘর হয়ে কিল্লার রোড পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার সড়ক ৪০ বছরেও পাকা হয়নি। কাঁচা এই সড়কটি বর্ষা মৌসুমে কাদা ও জলাবদ্ধতায় দুঃসহ হয়ে ওঠে। বছরের পর বছর ধরে অবহেলিত রাস্তাটি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নজরবিহীনই থেকে গেছে বলে অভিযোগ করেছে এলাকাবাসী।
গ্রামের প্রায় ২০ হাজার মানুষের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা এই সড়কটি। কিন্তু দীর্ঘদিন সংস্কার বা পাকা করণের উদ্যোগ না থাকায় শিক্ষার্থী, কৃষক, রোগী ও শ্রমজীবী মানুষকে পড়তে হচ্ছে চরম ভোগান্তিতে।
স্থানীয় বাসিন্দা আকবর হোসেন আরজু হাওলাদার বলেন, “এই সড়কটি ৪০ বছর ধরে কাঁচা রয়ে গেছে। বর্ষায় বাজারে যাওয়া বা রোগী নিয়ে হাসপাতালে যাওয়া কষ্টকর হয়ে পড়ে। বহুবার দাবি জানিয়েছি, কিন্তু কোনো উন্নয়ন হয়নি।”
আরেক বাসিন্দা মাওলানা ওসমান গনি বলেন, “সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন হাজারো মানুষ যাতায়াত করে। বর্ষায় হাঁটা প্রায় অসম্ভব হয়ে যায়। স্কুল-কলেজ ও মাদরাসার শিক্ষার্থীরাও বিপাকে পড়ে। অবিলম্বে এ রাস্তা পাকা করা প্রয়োজন।”
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. নিজাম উদ্দিন জানান, “সড়কটি পাকা নির্মাণের জন্য সাবেক সংসদ সদস্যের কাছে বহুবার অনুরোধ জানানো হলেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এলাকার মানুষের দুর্ভোগ দূর করতে দ্রুত রাস্তাটি পাকা নির্মাণের ব্যবস্থা করতে হবে।”
চরকাদিরা ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. হারুন বলেন, “এটি ইউনিয়নের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর একটি। ৪০ বছরে কোনো উন্নয়ন হয়নি, বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক।”
এ বিষয়ে কমলনগর উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী আব্দুল কাদের মোজাহিদ বলেন,“সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাহাত-উজ-জামান জানান, “স্থানীয়দের ভোগান্তির বিষয়টি জানা হয়েছে। দ্রুত উদ্যোগ নিতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে জানানো হবে।”
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর জয়পুরহাট শহরের হাড়াইল থেকে রেলগেট পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার চার লেন সড়কের কাজ শেষ হয়েছে। এতে শহরে প্রধান সড়কের একাংশে যানজট কমেছে। এতে শহরবাসী ফিরে পেয়েছে স্বস্তি। তবে সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাবে নতুন সড়কেই এখন গাড়ি পার্কিং করতে হচ্ছে, যা আবারও শৃঙ্খলা নষ্টের আশঙ্কা তৈরি করেছে।
সচেতন শহরবাসীর প্রত্যাশা, পরিকল্পিত পার্কিং ও কঠোর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা গেলে জয়পুরহাট শহরের চার লেন সড়ক প্রকল্প সত্যিকারের সফল হবে।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জয়পুরহাট শহরের হাড়াইল থেকে রেলগেট পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার সড়ক চার লেনে উন্নীত করার পরিকল্পনা হয়। ভূমি অধিগ্রহণ, পানি, বিদ্যুৎ ও টেলিফোন লাইন স্থানান্তর ও রেলগেট উন্নয়ন বাবদ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষে সর্বমোট ১০৪ কোটি ২২ লাখ ১৮ হাজার ৫৮৯ টাকা পরিশোধ করা হয়। এরমধ্যে ভূমি অধিগ্রহণেই ব্যয় হয়েছে ৯০ কোটি ২০ লাখ ৮৫ হাজার ৯৮০ টাকা।
এছাড়া সড়কের দুই পাশে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার নালা নির্মাণে ৩০ কোটি ও সড়ক প্রশস্তকরণে ২৮ কোটি টাকা ব্যয় বরাদ্দ দেওয়া হয়। নকশা অনুযায়ী সড়কটির হবে ৬০ ফুট প্রশস্ত। এক পাশে ২৪ ফুট, আরেক পাশে ২৪ ফুট প্রশস্ত। মাঝখানে থাকবে ৪ ফুট প্রশস্ত ডিভাইডার । পুরো সড়কের দুই পাশে থাকবে ড্রেনসহ ৫ থেকে ৯ ফুট প্রশস্ত ফুটপাত।
আরও জানা যায়, ২০১৮ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর চার লেন সড়ক প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান দুই দফায় কাজের মেয়াদ বাড়িয়ে চুক্তি অনুযায়ী কাজ করেনি। একারণে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাড়ে ৩ কোটি টাকা জরিমানা করে সড়ক বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। এরপর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নাভানা কনস্ট্রাকশনের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে। সড়কের দুই পাশে মোট প্রায় পাঁচ কিলোমিটার নালা নির্মাণ ও আড়াই কিলোমিটার চার লেন সড়ক নির্মাণের জন্য পুনরায় পৃথক দরপত্রের আহ্বান করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। সড়কের দুই পাশে নালা নির্মাণের কাজটি পায় নওগাঁর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আমিনুল হক লিমিটেড ও চার লেন সড়কের কাজ পায় জয়েন ভেঞ্চার রিলায়েন্স বিল্ডার্স লিমিটেড ও হাসান টেকনো। ২০২২ সালের ২০ জুলাই নালা ও সড়ক নির্মাণের জন্য কার্যাদেশ দেওয়া হয়। ২০২৪ সালে শুধু দুই পাশে নালা নির্মাণের কাজ শেষ করা হয়। চলতি বছরের শুরুতেই চার লেন সড়কের নির্মাণকাজ শুরু করা হয়। নকশা জটিলতাসহ নানান কারণে চার লেন সড়কের কাজ কিছুদিন বন্ধ ছিল। পরে আবার কাজ শুরু করা হয়। এখন সড়কের কাজ শেষ হয়েছে।
শহরের আড়াই কিলোমিটার চার লেন সড়ক ঘুরে দেখা যায়, পাঁচুর মোড় থেকে আমতলী পর্যন্ত যানজট প্রবণ এলাকায় সড়কের দুই পাশে নিবিঘ্নে যানবাহন চলাচল করছে। এই এলাকায় সড়কের দুই পাশে যত্রতত্র গাড়ি পাকিং করা হয়েছে। এতে সড়কে কিছুটা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে। আবার সড়ক ডিভাইডারে লোকজন যে যার ইচ্ছামতো গাছ লাগিয়েছেন। ডিভাইডারে একজন শ্রমিক ঘাস নিড়ানি দিচ্ছেন। রেলেগেটের পশ্চিম অংশে আগের মতো যানজট রয়েছে। সড়কের এই অংশ চার লেন করা হয়নি।
ব্যাটারীচালিত ইজিবাইক চালক আপেল মাহমুদ শান্ত বলেন, আগে এই রাস্তায় যানজট লেগেই থাকতো। এখন সড়কের এক পাশে যানবাহন আসে, অন্য পাশে দিয়ে যায়। এখন আর এতটা যানজট লাগে না। তবে পার্কিংয়ের জায়গা না থাকায় অনেকে সড়কের ধারে গাড়ি রাখছে।
শহরের ব্যবসায়ী মো. আল-আমিন বলেন, শহরের প্রধান সড়কটা এখন অনেক সুন্দর হয়েছে। তবে দোকানপাটের সামনে গাড়ি রাখার কারণে আবারও যানজটের আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে। পৌরসভা যদি নির্দিষ্ট পার্কিং ব্যবস্থা করে দেয়, তাহলে এ সমস্যা থাকবে না।
নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) জেলা শাখার সাধারণ ইসমাইল হোসেন বলেন, শহরের রেলগেট থেকে হাড়াইল পর্যন্ত চার লেন সড়ক করা হয়েছে। কিন্তু সড়কের ওপর যত্রতত্র গাড়ি পাকিং আবার যাত্রী ওঠা-নামা করানো হচ্ছে। গাড়ি পাকিং ও যাত্রী ওঠা-নামা বন্ধ করা গেলে আড়াই কিলোমিটার চার লেন সড়কে কোন যানজটই থাকবে না। তবে রেলগেটে পশ্চিম অংশের সড়ক চার লেন করা হয়নি। সেই অংশে আগের মতো যানজট হচ্ছে। শহরের প্রধান সড়কের বাকি অংশ দ্রুত চার লেন করার দাবি জানাচ্ছি।
জয়পুরহাট সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-বিভিগীয় প্রকৌশলী মেহেদী খান বলেন, আমরা সড়ক ডিডাইডারে কোন গাছ রোপন করিনি। লোকজন যে যার মতো ডিভাইডারে গাছ লাগিয়েছেন।
জয়পুরহাট সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাজস খান বলেন, চার লেন সড়ক চালুর পর শহরে যানজট অনেকটাই কমে গেছে। এছাড়া শহরে গাড়ি পার্কিং সমস্যা সমাধানে চেষ্টা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) গোপনে নারী শিক্ষার্থীদের অপ্রস্তুত অবস্থার ছবি তুলে এক সিনিয়র ছাত্রের কাছে পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের ফুড ইঞ্জিনিয়ারিংটি অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের এক নারী শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে।
অভিযোগ অনুযায়ী, ওই শিক্ষার্থী নিয়মিতভাবে মেয়েদের ঘুমন্ত বা ব্যক্তিগত মুহূর্তের ছবি তুলে তার এক সিনিয়র সহপাঠীর কাছে পাঠাতেন। বিষয়টি প্রকাশ পেলে সোমবার ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং বিভাগীয় শিক্ষক ও কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের ডিনের কাছে অভিযোগ করেন।
ঘটনাটি তদন্ত ও সমাধানের জন্য ডিন অধ্যাপক ড. মো. আবদুল মজিদ ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের কয়েকজন শিক্ষককে মৌখিকভাবে দায়িত্ব দেন। পরে মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে শিক্ষার্থীরা ডিনের সঙ্গে বৈঠক করেন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্ত নারী শিক্ষার্থী দেবশ্রী দত্ত রাত্রী সদ্য ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। যিনি ছবিগুলো গ্রহণ করতেন, তিনিও একই বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী এবং বর্তমানে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে লেকচারার হিসেবে কর্মরত আছেন।
অভিযুক্ত নারী শিক্ষার্থী অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করেছেন বলে জানিয়েছেন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. আবদুল মজিদ। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা অভিযোগ নিয়ে আমার কাছে আসে। আমরা অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর মোবাইল ফোন পরীক্ষা করে ছবির আদান-প্রদানের প্রমাণ পাই। জিজ্ঞাসাবাদের সময় তিনি স্বীকার করেন যে, তিনি মেয়েদের বিভিন্ন ছবি তুলতেন এবং তা এক সিনিয়র ভাইয়ের কাছে পাঠাতেন।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে ওই মোবাইলটি সিলগালা অবস্থায় ডিন অফিসে সংরক্ষিত রয়েছে। বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ ও নিরোধ কমিটির কাছে হস্তান্তর করা হবে।
অভিযুক্ত সিনিয়র শিক্ষার্থী ও ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির লেকচারার। স্বীকারোক্তিমূলক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, আমি মেয়েটির সঙ্গে দীর্ঘদিন কথা বলেছি। সে যেসব ছবি পাঠিয়েছে, আমি তা সংরক্ষণ করিনি। আমার কোনো খারাপ উদ্দেশ্য ছিল না, তবে আমি আমার কাজের জন্য অনুতপ্ত। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যা সিদ্ধান্ত নেবে, আমি তা মেনে নেব।
অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর সহপাঠীরা জানান, ইন্টার্নশিপ চলাকালে ওই শিক্ষার্থীর সন্দেহজনক আচরণ লক্ষ্য করে তারা নজরদারিতে রাখেন। পরে নিশ্চিত হন যে, তিনি মেয়েদের ঘুমন্ত বা অপ্রস্তুত অবস্থার ছবি তুলতেন। বিষয়টি প্রমাণ হওয়ার পর তারা বিভাগীয় শিক্ষকদের অবহিত করেন এবং কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।
বাংলাদেশের সেনাবাহিনী কেবল এক সশস্ত্র বাহিনী নয়; এটি জাতির অস্তিত্ব রক্ষার শেষ প্রাচীর, জনগণের সংকটমুহূর্তের নির্ভরতার প্রতীক।
স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত প্রতিটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ, প্রতিটি সংকটে সেনাবাহিনীই ছিল জনগণের পাশে। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাজনীতির কলুষতা এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যেখানে এই বাহিনীকেও টেনে আনার চেষ্টা হয়েছে দলীয় স্বার্থের পরিখায়। কোনো সরকার বা গোষ্ঠী যদি সেনাবাহিনীকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করতে চায়, তবে সেটি কেবল বাহিনীর মর্যাদাকেই আঘাত করে না, বরং রাষ্ট্রের মেরুদণ্ডকেও ভেঙে দেয়। সেনাবাহিনীর মর্যাদা রাষ্ট্রের মর্যাদার সমার্থক। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের আন্দোলন প্রমাণ করেছে- যখন সেনাবাহিনী জনগণের পাশে দাঁড়ায়, তখন ইতিহাসের গতিপথ পাল্টে যায়। আর যখন রাজনৈতিক স্বার্থে সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করা হয়, তখন ইতিহাস রক্তাক্ত হয়। তাই আজ, নতুন বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হলো—সেনাবাহিনীকে বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখা।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্যের শপথ নেয়, কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতি নয়। তারা দেশের সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতা রক্ষার জন্য গঠিত—দলীয় কর্তৃত্বের জন্য নয়। কিন্তু গত দুই দশকে দেখা গেছে, ক্ষমতার নেশায় কিছু সরকার এই বাহিনীকে নিজেদের রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছে। পদোন্নতি, নিয়োগ, বাজেট বরাদ্দ সবক্ষেত্রে দলীয় বিবেচনার ছায়া ফেলেছে রাজনীতি। এতে করে বাহিনীর ভেতরে নৈতিক চাপ সৃষ্টি হয়েছে, যা দীর্ঘমেয়াদে বিপজ্জনক। সেনাবাহিনীকে নিরপেক্ষ রাখা মানে রাষ্ট্রকে স্থিতিশীল রাখা। কারণ এই বাহিনী যদি দলীয় হয়ে পড়ে, তাহলে তার ওপর জনগণের আস্থা ভেঙে যায়। তখন রাষ্ট্রের ভেতরে যে ভারসাম্য থাকা উচিত—তা হারিয়ে যায়। তাই রাষ্ট্রনায়কত্বের আসনে যারা আছেন, তাদের মনে রাখা উচিত সেনাবাহিনীর প্রতি শ্রদ্ধা মানে রাষ্ট্রের অস্তিত্বের প্রতি শ্রদ্ধা।
জুলাই আন্দোলন ও সেনাবাহিনীর ভূমিকা এবং এক নীরব বিপ্লব- ২০২৪ সালের জুলাই মাসে যখন জনতার আন্দোলন শুরু হয়, তখন গোটা রাষ্ট্রযন্ত্র ছিল বিপর্যস্ত। সরকার সেনাবাহিনীকে মাঠে নামায়, কিন্তু উদ্দেশ্য ছিল ভিন্ন—গণপ্রতিরোধ দমন করা। কিন্তু সেনাবাহিনী সে ফাঁদে পা দেয়নি। তারা বুঝেছিল, এটি কেবল ক্ষমতার লড়াই নয়, এটি ছিল জনগণের ন্যায়ের দাবি। অভ্যন্তরীণ বৈঠক, সাবেক সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরামর্শ, এবং ইতিহাসের দায়িত্ববোধ—সব মিলে সেনাবাহিনী এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নেয়: ‘জনগণের মুখোমুখি হবে না।’ এই সিদ্ধান্তই ছিল গণআন্দোলনের মোড় ঘোরানোর মুহূর্ত। যদি সেনারা তখন সরকারের নির্দেশে গুলি চালাত, তবে দেশ আজ গৃহযুদ্ধের আগুনে জ্বলত। সেনাবাহিনী সে আগুন নেভায় নীরব থেকে, দায়িত্বশীল থেকে। তাই একে কেবল সামরিক নীতি নয়, নৈতিক বিপ্লব বলা যায়। এই নীরবতা জাতিকে রক্ষা করেছে, আর প্রমাণ করেছে একটি পেশাদার সেনাবাহিনী কখনোই জনগণের শত্রু নয়। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ভোরবেলা থেকেই ঢাকার রাস্তায় অজস্র মানুষ। শাসকগোষ্ঠীর পতনের দাবিতে ছাত্র, শ্রমিক, সাধারণ মানুষ তখন একযোগে অগ্রসর হচ্ছিল। সেই সময় সেনাবাহিনীর সদর দপ্তর থেকে এক ঐতিহাসিক নির্দেশ আসে ‘জনগণের ওপর গুলি নয়।’ এটি কেবল একটি কৌশলগত সিদ্ধান্ত নয়, বরং এক গভীর নৈতিক অবস্থান। সেনাবাহিনী জানত, রক্তপাত মানে রাষ্ট্রের মৃত্যু। তাই তারা জনগণের পাশে দাঁড়ায়, অস্ত্র নয় বিবেক দিয়ে। এই সিদ্ধান্তের পরপরই জনতার আত্মবিশ্বাস চূড়ায় পৌঁছে যায়; আন্দোলন জয়লাভ করে। বিশ্ব মিডিয়াও স্বীকার করে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী ইতিহাসের সঠিক পাশে দাঁড়িয়েছে। সেই দিনটি তাই কেবল সরকারের পতনের দিন নয়; এটি সেনাবাহিনীর নৈতিক উত্থানের দিনও।
সেনাবাহিনী কেবল রাষ্ট্রের শক্তি নয়, জাতির মনোবলও। যখন কেউ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করে, তখন সে পুরো জাতির আত্মবিশ্বাসে আঘাত হানে। কারণ জনগণ জানে বন্যা, মহামারি, সন্ত্রাস বা সীমান্ত সংকটে যে বাহিনী প্রথম এগিয়ে আসে, তা হলো সেনাবাহিনী। রাজনৈতিক স্বার্থে এই বাহিনীর চরিত্র নিয়ে সন্দেহ তৈরি করা মানে জনগণকে বিভ্রান্ত করা। সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি আঘাতপ্রাপ্ত হলে জনগণের আস্থা হারিয়ে যায়; প্রশাসনিক কাঠামো ভেঙে পড়ে। তাই সেনাবাহিনীকে নিয়ে দলীয় বিতর্ক সৃষ্টি করা কেবল একটি রাজনৈতিক অপরাধ নয় এটি রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডও বটে। প্রত্যেক রাষ্ট্রেই সেনাবাহিনীর প্রতি একধরনের নৈতিক ভয় থাকে যেটি আসলে শ্রদ্ধারই অন্য রূপ। এটি শৃঙ্খলা ও দায়িত্ববোধের ভিত্তি তৈরি করে। কিন্তু যখন রাজনৈতিক বিতর্কে সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়, তখন সেই ভয় বা শ্রদ্ধাবোধ বিলুপ্ত হয়। ফলাফল ভয়াবহ রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব নড়বড়ে হয়ে যায়, প্রশাসনিক নির্দেশ অকার্যকর হয়ে পড়ে, এবং রাষ্ট্রের শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ে। সেনাবাহিনীকে যদি বিতর্কে জড়ানো হয়, তবে জনগণের মনে ‘শেষ আশ্রয়স্থল’-এর ধারণা হারিয়ে যায়। তাই এই নৈতিক ভয় বা শ্রদ্ধা রক্ষা করা জাতির স্থিতিশীলতার জন্য অপরিহার্য।
বিশ্বজুড়ে যেখানে সেনাবাহিনী প্রায়শই দমনযন্ত্রের প্রতীক, সেখানে বাংলাদেশ প্রমাণ করেছে—একটি বাহিনী নীতিতে অটল থাকলে সেটিই জনগণের আশ্রয় হয়ে ওঠে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, সন্ত্রাস দমন, মহামারি মোকাবিলা যে সংকটই আসুক, সেনাবাহিনী সর্বদা সামনে থেকেছে। বন্যায় ত্রাণ বিতরণ, ভূমিকম্পে উদ্ধার, করোনাকালে হাসপাতাল নির্মাণ সবক্ষেত্রেই তারা প্রমাণ করেছে, তারা কেবল সৈনিক নয়, জাতির মানবিক হাত। এই বাহিনীকে বিতর্কে টেনে নামানো মানে দুর্যোগে জনগণের আশ্রয় দুর্বল করা। তাই সেনাবাহিনীকে রাজনৈতিক দলে ভাগ করার চেষ্টা মানে দেশের দুর্দিনে কান্ডারীর হাত কেটে ফেলা।
সকলের দায়িত্ব হলো সেনাবাহিনীকে সম্পূর্ণভাবে দলীয় রাজনীতির বাইরে রাখা। সরকারের বদল হবে, মতাদর্শ পাল্টাবে, কিন্তু সেনাবাহিনীর অবস্থান অপরিবর্তনীয় থাকতে হবে—রাষ্ট্রের পক্ষে, জনগণের পক্ষে, ন্যায়ের পক্ষে। যে দেশ সেনাবাহিনীকে রাজনীতির অংশ করে, সে দেশ নিজের অস্তিত্ব হারায়। তাই সেনাবাহিনীর পেশাদারিত্ব রক্ষা করা আজ সবচেয়ে বড় জাতীয় দায়িত্ব। এটি কেবল বাহিনীর জন্য নয়, রাষ্ট্রের ভবিষ্যতের জন্যও অপরিহার্য। রাষ্ট্র যখন দুর্নীতি, দমননীতি ও অবিচারের ভারে নুয়ে পড়ে, তখন সেনাবাহিনী মানুষের মধ্যে এক ধরনের আস্থার প্রতীক হয়ে দাঁড়ায়। এই নৈতিক অবস্থান বজায় রাখা সেনাবাহিনীর সবচেয়ে বড় শক্তি। কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতি পক্ষপাত দেখানো, অথবা ক্ষমতার খাতিরে প্রশাসনিক খেলায় অংশ নেওয়া এই নৈতিক শক্তিকে ধ্বংস করে দিতে পারে। সেনাবাহিনীকে শক্তিশালী হতে হলে অস্ত্রের চেয়ে অনেক বেশি প্রয়োজন নীতির দৃঢ়তা। জনগণের বিশ্বাস হারালে একটি দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কতটা দুর্বল হয়ে পড়ে, ইতিহাসে তার উদাহরণ অজস্র। তাই সেনাবাহিনীকে দেশের শেষ নৈতিক দুর্গ হিসেবেই রক্ষা করা প্রয়োজন।
সেনাবাহিনীকে রাজনৈতিক খেলায় টেনে নামানো জাতীয় আত্মঘাত। বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি ভয়ঙ্কর প্রবণতা দেখা যায় দলের সংকটে পড়লে সেনাবাহিনীর নামে হুমকি, অথবা ‘সেনাবাহিনী আমাদের সঙ্গে’ ধরনের প্রচার। এই মানসিকতা বিপজ্জনক। সেনাবাহিনী কোনো দলের নয়, রাষ্ট্রের। রাজনৈতিক লাভের জন্য এই প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করার চেষ্টা করা মানেই জাতীয় আত্মঘাত। বিশ্বের অনেক দেশেই দেখা গেছে—রাজনীতি যদি সেনাবাহিনীতে ঢুকে পড়ে, তখন সেনাবাহিনী রাজনীতিতে ঢুকে যায়। একবার এই সীমারেখা ভেঙে গেলে পুনরুদ্ধার অসম্ভব হয়ে পড়ে। তাই রাজনীতিবিদদের এখনই এই অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে। সেনাবাহিনীকে ব্যবহার নয়, সম্মান দিতে হবে। তাহলেই রাষ্ট্র টিকে থাকবে দৃঢ় ভিত্তিতে। জনগণের সঙ্গে সম্পর্কই সেনাবাহিনীর স্থায়ী শক্তি। যে সেনাবাহিনী জনগণের ভালোবাসা পায়, সেই সেনাবাহিনী কখনো পরাজিত হয় না। বাংলাদেশের সেনারা ১৯৭১ সালে যেমন জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছিল, তেমনি ২০২৪ সালের আগস্টেও তারা জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। সেনাবাহিনীর প্রতিটি সদস্য যদি উপলব্ধি করেন যে তাদের অস্তিত্ব জনগণের নিরাপত্তা ও সম্মানের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত, তবে কোনো বাহ্যিক ষড়যন্ত্রই তাদের টলাতে পারবে না। জনগণের হৃদয়ে সেনাবাহিনীর যে আস্থা আজও অটুট, সেটাই দেশের প্রকৃত প্রতিরক্ষা ঢাল। এই আস্থা রক্ষা করাই এখন সবচেয়ে বড় দায়িত্ব।
আজকের পৃথিবীতে একটি দেশের সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি শুধু দেশের ভেতর নয়, আন্তর্জাতিক পরিসরেও মূল্যায়ন করা হয়। জাতিসংঘে শান্তিরক্ষী মিশনে বাংলাদেশের সেনারা বহু বছর ধরে যে সুনাম অর্জন করেছে, তা রাষ্ট্রের মর্যাদা বহুগুণে বৃদ্ধি করেছে। কিন্তু যদি অভ্যন্তরীণ রাজনীতির সংঘাতে সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করে তোলা হয়, তাহলে সেই আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তিও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন কিংবা আঞ্চলিক শক্তিগুলো সবসময় লক্ষ্য করে একটি দেশের সামরিক প্রতিষ্ঠান কতটা নিরপেক্ষ ও পেশাদার। সেই পেশাদারিত্বই বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর মূল সম্পদ। এই ভাবমূর্তিকে রাজনীতির অস্থিরতার আগুনে পোড়ানো চলবে না। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে সেনাবাহিনীর চিত্র যেন উজ্জ্বল থাকে। রাষ্ট্রের আগামী প্রজন্ম যদি সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত, বিভক্ত বা ভীতিকর হিসেবে দেখতে শুরু করে, তবে জাতীয় মনস্তত্ত্বে তার বিরূপ প্রভাব পড়বে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের চোখে সেনাবাহিনীকে থাকতে হবে নায়ক, রক্ষক ও নৈতিক সাহসের প্রতীক হিসেবে। এজন্য স্কুল থেকে শুরু করে মিডিয়া পর্যন্ত রাষ্ট্রকে ইতিবাচক বার্তা ছড়াতে হবে। সেনাবাহিনীকে ঘিরে ভয় নয়, আস্থা তৈরি করতে হবে। কারণ যখন এক জাতি তার সেনাবাহিনীর প্রতি বিশ্বাস হারায়, তখন সে জাতি তার নিরাপত্তার ভিত্তি হারায়। ভবিষ্যতের বাংলাদেশ যেন সেই পথে না যায়, সেটিই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
উপসংহার: রাষ্ট্র বাঁচাতে সেনাবাহিনীর মর্যাদা রক্ষা করো জরুরি। সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করার অর্থ রাষ্ট্রকে দুর্বল করা। তারা দেশের শেষ আশ্রয়, শেষ প্রাচীর, শেষ বিবেক। রাজনৈতিক দল আসবে-যাবে, কিন্তু সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি অটুট থাকলেই রাষ্ট্র টিকে থাকবে। জুলাই-আগস্টের অভিজ্ঞতা আমাদের শিক্ষা দিয়েছে যে সেনাবাহিনী জনগণের ওপর গুলি চালায় না, সেই সেনাবাহিনীই ইতিহাসের গর্ব। তাই আজ আমাদের আহ্বান সেনাবাহিনীকে দলীয় নয়, জাতীয় রাখো; বিতর্ক নয়, শ্রদ্ধা দাও।
লেখক: সাংবাদিক, সমাজ গবেষক, মহাসচিব-কলামিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ।
দেশব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে বাংলাদেশ অ্যাম্বুলেন্স মালিক কল্যাণ সমিতি, মাগুরা জেলা শাখা মঙ্গলবার সকাল ১১টায় মাগুরা সদর হাসপাতালের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে।
মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন মাগুরা জেলা অ্যাম্বুলেন্স মালিক কল্যাণ সমিতির সভাপতি মো. ফুরকানুল হামিদ ফুরকান। এ সময় বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক মো. তারেক হোসেন তারেক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. জিহাদুর রহমান জিহাদ, সহ সাধারণ সম্পাদক মো. মাহবুবুর রহমান মুকুলসহ সংগঠনের ৪২ জন সদস্য।
বক্তারা বলেন, আমাদের ন্যায্য দাবিগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন না হলে নীরব থাকবো না- ন্যায়ের তরে রাস্তায় নামব। তাদের প্রধান দাবিসমূহ হলো: ১. সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ এর পঞ্চম অধ্যায়ের ধারা ৩১(১) অনুযায়ী রুট পারমিট ছাড়াই অ্যাম্বুলেন্সকে বাণিজ্যিক নিবন্ধন দিতে হবে। ২. অ্যাম্বুলেন্সের বিরুদ্ধে ট্রাফিক আইন মামলা প্রদান কার্যক্রম অবিলম্বে স্থগিত করতে হবে। ৩. অ্যাম্বুলেন্সের ক্ষেত্রে মাইক্রোবাসের ট্যাক্স ও AIT নেওয়া বন্ধ করতে হবে।
৪. ‘ভাড়া চালিত নয়’ মর্মে নিবন্ধিত অ্যাম্বুলেন্সকে অবৈধ ঘোষণা করা যাবে না। মানববন্ধন শেষে মাগুরা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টার বরাবর একটি স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, ‘অ্যাম্বুলেন্স জনগণের জীবনরক্ষার বাহন। এটি বাণিজ্যিক যান নয়, তাই এর ওপর মাইক্রোবাসের মতো ট্যাক্স বা ট্রাফিক মামলা আরোপ অযৌক্তিক। সরকারের উচিত এই সেবাখাতকে টিকিয়ে রাখতে সহায়ক নীতি গ্রহণ করা।’
অনুলিপি প্রদান করা হয় মাগুরা জেলার পুলিশ সুপার ও সহকারী পরিচালক (বিআরটিএ)-এর নিকট। অ্যাম্বুলেন্স মালিক কল্যাণ সমিতির নেতারা জানান, সরকারের কাছে তারা শান্তিপূর্ণভাবে তাদের দাবি উপস্থাপন করেছেন। তবে দাবি পূরণ না হলে তারা বৃহত্তর কর্মসূচির ডাক দেবেন।