রোহিঙ্গা শিবিরে আলোচিত দুটি নাম; সলিম মাস্টার ওরফে রায়েত ও মো. মুসা। মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মির (আরসা) বড় বড় সব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে আসছে তাদের নাম।
সলিম (৩১) জেলে থাকলেও থেমে নেই তার অপরাধ কর্মকাণ্ড। আর মুসা (৩৫) নামের স্থানীয় যুবক আড়ালে-আবডালে থেকে বাস্তবায়ন করছেন মিয়ানমারে অবস্থান করা আরসা প্রধান আতাউল্লাহ আবু আম্মার ওরফে জুনুনির সব অপকর্ম।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কাজ করা একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন ও থানা পুলিশ থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। এ ছাড়া আগস্টের শেষ সপ্তাহে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করে জানা যায়, সেখানকার সব খুন, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, গুম, ধর্ষণসহ নানা অপরাধের সঙ্গেই আরসা কর্মীদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ হাত রয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য বলছে, গত ৫ বছরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে খুনের ঘটনা ঘটেছে ১২১টি, এগুলোর বেশিরভাগের সঙ্গে আরসার সংশ্লিষ্টতা ছিল। যদিও এতদিন সরকারের পক্ষ থেকে আরসার উপস্থিতি স্বীকার করা হয়নি।
এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গত ২৮ আগস্ট দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘আসলে কে আরসা আর কে আরাকান আর্মি, সেটা কোনো বিষয় নয়। সেখানে যারাই অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়াবে তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র বলছে, মুহিব উল্লাহ খুনের পর বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে ৪১৪ জন আরসা সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন-এপিবিএন। তাদের মধ্যে আরসার প্রধান নেতা আতাউল্লাহর আপন ভাই শাহ আলীও রয়েছেন। যদিও পুলিশের ভাষ্য, এরা আরসা নাম ব্যবহার করে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালায়।
তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে গ্রেপ্তারের চেয়ে এই সংগঠনের সদস্যসংখ্যা আরও অনেক বেশি। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা থেকে পাওয়া তথ্য তালিকায় দেখা যায়, ওই সংখ্যা কয়েক হাজার ছাড়িয়ে যাবে। অবশ্য আরসা প্রধান বিভিন্ন সময় দাবি করতেন, অন্তত ১৬ হাজার সদস্য আছে তাদের এই সশস্ত্র সংগঠনে।
দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে মাস কয়েক আগ পর্যন্ত বলা হয়েছে যে, রোহিঙ্গা শিবিরে আরসার অস্তিত্ব নেই। তবে রোহিঙ্গা নেতা মুহিব উল্লাহ খুন হওয়ায় পর আরসার অপতৎপরতা নিয়ে তেমন প্রশ্ন কারো মধ্যে নেই। বরং এদের দমন করার উপায় খুঁজছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তাদের তথ্য বলছে, সংগঠনটির প্রধান আতাউল্লাহ আবু আম্মার ওরফে জুনুনি মাসোহারা ভিত্তিতে ক্যাম্পগুলোতে এজেন্ট নিয়োগ করেছেন। তাদের হাতে ভারী অস্ত্র দিয়ে নানা অপকর্ম বাস্তবায়ন করিয়ে নিচ্ছেন । তার ও সংগঠনের অন্য নেতাদের নির্দেশনা এজেন্টদের সঙ্গে সমন্বয় করছেন মুসা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ক্যাম্প এজেন্টদের প্রধান ও নিয়ন্ত্রক ৩১ নম্বর ক্যাম্পের মাস্টার সলিম। সর্বশেষ ৯ আগস্ট সলিমের করা ছকেই উখিয়ার জামতলী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে জোড়া খুনের ঘটনা ঘটে। এতে ১৫ নম্বর শিবিরের হেড মাঝি আবু তালেব ও সাব মাঝি সৈয়দ হোসেনকে গুলি করে হত্যা করে আরসা সদস্যরা।
প্রথম দিকে আরসাকে নিয়ে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ভিন্ন মত থাকলেও সম্প্রতি দুই নেতা, তিন মাঝি, ছয় মুসল্লিসহ অনন্ত দুই ডজন খুনে সরাসরি আরসা সদস্যরা জড়িত ছিল বলে প্রমাণ মিলেছে। এমনকি রোহিঙ্গা নেতা মুহিব উল্লাহ হত্যা মামলার অভিযোগপত্রেও খুনের সঙ্গে আরসার যুক্ত থাকার কথা বলা হয়েছে। যদিও সংগঠনটির প্রধান আতাউল্লাহসহ শীর্ষ নেতাদের নাম না থাকা নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা আছে।
রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের সময় এপিবিএনের কর্মকর্তারা এই প্রতিবেদককে বলছেন, চার মামলায় গ্রেপ্তার সলিম জেলে থাকলেও মুসার সঠিক অবস্থান নিশ্চিত করা যাচ্ছে না।
তবে এপিবিএন-৮ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কামরান হোসেন দৈনিক বাংলাকে বলেছেন, গত ১৭ জুন উখিয়া বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে আমেরিকার তৈরি একটি অত্যাধুনিক এম-১৬ রাইফেল ও ৪৯২ পিস বুলেট উদ্ধার করা হয়। প্রথমবারের মতো উদ্ধার হওয়া এই ভারী অস্ত্রের সরবরাহকারী ছিলেন মুসা। সম্ভবত তিনি ক্যাম্প ১৯ অথবা ২০-এ অবস্থান করছেন।
নাম প্রকাশ করতে না চাওয়া একাধিক ক্যাম্পের হেড মাঝি বলেছেন, ক্যাম্পে নিয়মিত ভারী ও আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে রাতে মহড়া দেয় একটি গ্রুপ। তারা প্রত্যেক ব্লকে ব্লকে গিয়ে যুবকদের সন্ত্রাসী সংগঠনে যোগ দিতে আহ্বান জানায়। কারো কারো ক্ষেত্রে আবার বাধ্য করা হয়।
এপিবিএন বলছে, ক্যাম্পে এসব অস্ত্রের জোগানদাতা মুসা। তথ্য আছে, কক্সবাজার জেলার উত্তর দিকে এক উপজেলার স্থায়ী বাসিন্দা তিনি। শুরুর দিকে একবার গ্রেপ্তার হলেও দীর্ঘদিন ধরে আরসা প্রধানের গানম্যান হিসেবে কাজ করছেন। তবে তিনি বেশির ভাগ সময়ই থাকেন ক্যাম্পে। যাতায়াত করেন পাহাড়ে পাহাড়ে। তবে আরসা এজেন্টদের নিয়ে নিয়মিত বৈঠক করেন তুমব্রু সীমান্তে।
সন্ত্রাসী এই সংগঠনের হুমকিতে দিন পার করছেন খুন হওয়া মুহিব উল্লাহর সংগঠন এআরএসপিএইচের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মেদ জুবায়ের। লম্বাশিয়া শিবিরে এই বাসিন্দা দৈনিক বাংলাকে বলেন, প্রতিনিয়তই প্রকাশ্যে আরসার নাম করে তাকে হুমকি দেয়া হচ্ছে। বলা হচ্ছে তার পরিণতিও মুহিবুল্লার মতোই হবে। পরিবারসহ খুন করা হবে তাকে। এ ছাড়াও মাঝে মাঝেই মালয়েশিয়ার একটি মোবাইল নম্বর থেকে ফোনে হুমকি দেয়া হয় তাকে। বিষয়গুলো জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থাকেও (ইউএনএইচসিআর) লিখিতভাবে জানিয়েছেন।
মোহাম্মেদ জুবায়ের বলেন, ‘প্রত্যাবাসন নিয়ে কাজ করা ও অধিক জনপ্রিয়তার কারণেই ক্যাম্পে থাকা আরসার এজেন্টরা তাকে প্রতি মুহূর্তে হত্যার হুমকি দিচ্ছে।’
আরসার বিরুদ্ধে যত অভিযোগ
গত ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গাদের এদেশে আসার পাঁচ বছর পূর্ণ হয়েছে। দিনটিকে ঘিরে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী নানা ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন করে। সবগুলো আয়োজন থেকে দাবি তোলা হয় প্রত্যাবাসনের। তারা বলেছেন, সম্মানের সঙ্গে নিজ আদি ভূমিতে ফিরতে চাওয়ার আকুতি ছিল তাদের মধ্যে। রোহিঙ্গারা ২৫ আগস্টকে ‘কালো দিন’ বলেন। কিন্তু কথিত আরসা সদস্যরা এই প্রত্যাবাসনবিরোধী। কোনো আয়োজন না করা আর করলেও প্রত্যাবাসন নিয়ে কথা না বলতে ক্যাম্পে ক্যাম্পে হুমকি দিয়ে বেড়ান তারা। সহিংসতা ঘটতে পারে বলে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অনেকে আশঙ্কা প্রকাশ করে থানায় অভিযোগ করেন।
উখিয়া-টেকনাফ থানা পুলিশ সূত্র বলছে, ২৫ আগস্ট নিয়ে আরসার নেতারা ক্যাম্পে থাকা বিভিন্ন মাঝিদের হুমকি দিয়েছেন বলে তারা অভিযোগ পেয়েছেন। জানা গেছে, গত এক মাসে আরসার হুমকি নিয়ে টেকনাফ ও উখিয়া থানায় ৫টি অভিযোগ পড়েছে।
উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ মোহাম্মাদ আলী দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘আরসার হুমকির বিষয়ে আমরা অবগত। সাধারণত ক্যাম্প থেকে যারা অভিযোগ করেন তারা ক্যাম্পের সিআইসির সুপারিশ নিয়ে অভিযোগ থানায় জমা দেন। ঘটনার তদন্তে থানা পুলিশ অধিকাংশ সময় ক্যাম্পে দায়িত্বে থাকা এপিবিএনের সাহায্য নিয়ে থাকেন।’
আরসা ও তার নেতৃত্ব
২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারের রাখাইনে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর ৩০টি চৌকিতে হামলা চালানোর জন্য দেশটির কর্তৃপক্ষ আরসাকে দায়ী করেছিল। সেই প্রেক্ষাপটে সেনাবাহিনী ব্যাপক আক্রমণ শুরু করে, আর সেই হত্যা, ধর্ষণ এবং নিপীড়ন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে প্রায় ৭ লাখের মতো রোহিঙ্গা।
মিয়ানমার সরকার আরসাকে একটি সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী বলে ঘোষণা করে, কারণ এই সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্যদের গেরিলা প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।
সংগঠনটি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসনের ঘোর বিরোধী। তাদের নেতারা কখনও মিয়ানমারে ফিরে যেতে চান না। কারণ বর্মী সেনাবাহিনী তাদের খুঁজছে। গেলে তাদের দণ্ড ভোগ করতে হবে। এ জন্য তারা চান না যে রোহিঙ্গারাও তাদের দেশে ফিরে যাক।
বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, আরসার নেতৃত্বে রয়েছেন ‘আতাউল্লাহ’ নামে একজন রোহিঙ্গা, যার জন্ম করাচিতে, বেড়ে উঠেছেন সৌদি আরবে। গোপনে অবস্থান করছেন মিয়ানমারে।
এপিবিএন সূত্র বলছে, কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের মোট ৩৪টি ক্যাম্প আছে। প্রতিটি ক্যাম্পেই আরসা সদস্যরা সক্রিয়। তাদের সদস্য সংখা কমপক্ষে পাঁচ হাজার। এখন পর্যন্ত তাদের ১০ জন কমান্ডারের বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পেরেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তারা হলেন, আলি জোহর, হোসেন জোহর, জয়নাল, মো. সেলিম, আয়াত উল্লাহ, বশির উল্লাহ এবং ওবাইদ উল্লাহ। এ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় আছেন আলমগীর, মৌলভী মোস্তাক, ওস্তাদ খালেদ ওরফে খালিদ, ইব্রাহিম।
তুমব্রু সীমান্তে আরসার গোপন বৈঠক
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুমের তুমব্রু, থোয়াইংগা ঝিরি সীমান্তের ক্যাম্পে থাকা আরসার এজেন্টদের নিয়ে নিয়মিত বৈঠক হয়। বৈঠকগুলো সমন্বয় করেন আরসা প্রধানের গানম্যান হিসেবে পরিচিত মুসা। কারাগার থেকে ফোনে যুক্ত হয় মাস্টার সলিম। বৈঠকে যোগ দেন ৩৪ ক্যাম্পে আরসার জিম্মাদারদের প্রধানরা।
বৈঠকে উপস্থিত থাকা একাধিক জিম্মাদারের সঙ্গে কথা হয় দৈনিক বাংলার। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এসব জিম্মাদার জানান, ওই বৈঠকে মূলত ক্যাম্পে আরসার তৎপরতা সামনের ৩ মাসে কেমন হবে তার দিকনির্দেশনা দেয়া হয়। যা বাস্তবায়ন করেন তারা। কোনো মাঝি যদি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় তাহলে তাকে নিয়েই বৈঠকে বেশি আলোচনা হয়। কারণ সাধারণ রোহিঙ্গাদের কবজায় আনতে হলে মাঝিদের আগে নিয়ন্ত্রণে আনতে হয়। আর নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারলে হত্যার পরিকল্পনা বা নির্দেশনা আসে।
সম্প্রতি সরেজমিনে তুমব্রু ও থোয়াইংগা ঝিরি সীমান্তে গিয়ে দেখা যায়, মিয়ানমার-বাংলাদেশ মৈত্রী সড়কের পাশ ঘেঁষে বয়ে গেছে সরু খাল। যা মিশেছে নাফ নদীতে গিয়ে। দুই দেশের সীমানাপ্রাচীরকে ভাগ করেছে এ খাল। দুই পাড়েই আছে অসংখ্য পাহাড়। যেখানে বাংলাদেশিদের চলাচলে কঠোরতা থাকলেও রোহিঙ্গাদের অবাধ বিচরণ রয়েছে। তবে গণমাধ্যমকর্মীর পরিচয় গোপন রেখে সেখানে পৌঁছায় দৈনিক বাংলার এই প্রতিবেদক। কথা হয় নো-ম্যান্সল্যান্ডে বসবাসরত রোহিঙ্গা নেতাদের সঙ্গে। তারাও অবগত আরসার বৈঠক সম্পর্কে। এর বেশি বলতে চাননি জিরো পয়েন্টে থাকা এসব রোহিঙ্গারা।
আরসার অনুসারীদের জামিনের জন্য আছে আলাদা চক্র
আরসার সদস্যরা অস্ত্রশস্ত্রসহ গ্রেপ্তারের অল্প কিছুদিন পরই জামিনে বেরিয়ে আসেন। তাদের এই দ্রুত জামিন পাওয়া নিয়ে বেশ বিভ্রান্তি দেখা গেছে স্থানীয় প্রশাসনের মাঝে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আরসা অনুসারী বা রোহিঙ্গাদের কেউ গ্রেপ্তার হলে তাদের জামিনে কাজ করে একটি সিন্ডিকেট। মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে তাদের জামিন করানোর ব্যবস্থা করা। এই সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করেন কক্সবাজার শহরের মৌলভী ইলিয়াছ নামের এক ব্যক্তিসহ কয়েকজন। ইলিয়াস ৯০ দশকের মাঝামাঝি মিয়ানমার থেকে এদেশে এসে বসতি স্থাপন করেন।
সিন্ডিকেটের সদস্যরা তাদের নিয়োগ করা আইনজীবীর মাধ্যমে আটক করা আসামিকে আদালত থেকে দ্রুত ছাড়িয়ে নেন।
কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম গতকাল বৃহস্পতিবার দৈনিক বাংলাকে বলেন, রোহিঙ্গা বা আরসা অনুসারীদের জামিনের ব্যাপারে একটা গোষ্ঠী কাজ করে, যাদের কাজ হচ্ছে মামলাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করা। আমরা আইনের মধ্যে থেকে এটা প্রতিহত করার চেষ্টা করছি।
অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে বিভক্ত আরসা
রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর হেড মাঝি ও আরসার মধ্যে দ্বন্দ্ব নতুন কিছু নয়। এ দ্বন্দ্বের অন্যতম কারণ আরসার ছায়াতল থেকে সরে আসা চেষ্টা অথবা মাঝির একক আধিপত্য বিস্তার। তা ছাড়া অবৈধ আয়ের ভাগবাঁটোয়ারা নিয়েও দ্বন্দ্ব তো আছেই। এসব কারণে আরসা অনুসারী মাঝিরা সংগঠন থেকে বিভক্ত হয়ে পড়েন। কিন্তু সংগঠনের মূল শক্তি জানান দেয়া ও অন্যদের কাছে এই বার্তা পৌঁছানোর জন্য হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়। সর্বশেষ হত্যার শিকার জামতলি এফডিএমএন ক্যাম্প-১৫ এর সি ব্লকের হেড মাঝি আবু তালেবও ছিলেন আরসার সাবেক সদস্য।
১৫ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পুলিশ পরিদর্শক মনিরুল ইসলাম দৈনিক বাংলাকে বলেন, সম্প্রতি ক্যাম্পে খুনগুলো সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণে।
জানতে চাইলে অভিবাসন ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক আসিফ মুনীর দৈনিক বাংলাকে বলেন, আরসা আছে কী আরসা নেই এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ক্যাম্পে এত রক্তপাত কারা ঘাটাচ্ছে? যদি আরসাই করে থাকে তাহলে গত ৪ বছরে এটা না জানা আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য চরম ব্যর্থতা। আর জেনেও চুপ করে থাকলে তাদের প্রশ্রয় দেয়া হচ্ছে।
সর্বশেষ গত মাসের শেষ সপ্তাহে আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত জাতীয় কমিটির সভা শেষে কমিটির সভাপতি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিনা কারণে রক্তপাত হচ্ছে। হানাহানি হচ্ছে। মাদক ও সন্ত্রাস বেড়ে যাচ্ছে। এগুলো বন্ধে গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানো হবে। প্রয়োজনে নিয়মিত বাহিনীর পাশাপাশি সেনাবাহিনীও যেকোনো সময় অভিযান করতে পারবে, এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’
(প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন দৈনিক বাংলার কক্সবাজার প্রতিনিধি মুহিবুল্লাহ মুহিব)
দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বলেছেন, জুলাই বিপ্লবীরা রাষ্ট্রীয় নৈরাজ্যকে মোকাবেলা করেছে এবং পরাজিত করেছে। এভাবে ফ্যাসিবাদ মুক্ত করেছে তারা। বিশ্বের ইতিহাসে এটি নজিরবিহীন বিপ্লব বলে আমি মনে করি। এই বিপ্লবটি বাংলাদেশের জনগনের ওপরে যে ফ্যাসিবাদ চেপে বসেছিল শুধু তাদের বিরুদ্ধে নয় বরং স্বাধীনতার সার্বভৌমত্ব লুন্ঠনকারী ভারতের আধিপত্যের বিরুদ্ধেও ছিল।
মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) দুপুর দেড় টার দিকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান মিলনায়তনে জুলাই বিপ্লব বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত জুলাই বিপ্লব প্রথম বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি'র বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জুলাই ‘বিপ্লব নাকি অভ্যুত্থান’ এই প্রশ্নের উত্তরে মাহমুদুর রহমান বলেন, জুলাই বিপ্লব শুধু শাসক পরিবর্তনের আন্দোলন ছিল না। বরং শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তনের আন্দোলন ছিল। তাই শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তনের আন্দোলনকে বিপ্লব বলে অবিহিত করি। বিপ্লব মাত্র ৩৬ দিনে শেষ হয় না বরং একটা পর্যায় অবস্থান করে। রাষ্ট্র শাসন ব্যবস্থা সংশ্লিষ্টসহ অভ্যন্তরীন ও বর্হিবিশ্বের হুমকি থেকে মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত বিপ্লব চলমান থাকবে।
সভায় জুলাই বিপ্লবের বিপদের আশংকা করে মাহমুদুর রহমান বলেন, জুলাই বিপ্লবের জন্য দেশের দুইটি থ্রেট বা বিপদের কথা বলবো যা দুই দিক থেকে আসবে। প্রথমত, অভ্যন্তরীণ বিপদ বলতে আমাদের দেশের সকল রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার মধ্যে দীর্ঘ ১৬ বছর ফ্যাসিবাদের দালাল ও ভারতের আধিপত্য দালালদের অনুপ্রবেশ ঘটেছে। অনুপ্রবেশকারীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই বিপ্লবকে ব্যর্থ করতে চাইবে। এ ব্যাপারে আমাদের সজাগ থাকতে হবে। গতকাল সামরিক বাহিনীর মধ্যে ভারতীয় দালাল 'র' এর এজেন্টদের অনুপ্রবেশ ঘটেছিল আমরা তাদের নিয়ে পত্রিকায় ক্রমাগতভাবে খবর প্রকাশ করেছি। এমন একটা সময় ছিল সামরিক বাহিনী নিয়ে খবর প্রকাশ করতে দ্বিধাবোধ করত। এই দ্বিধাগ্রস্ত হওয়ার যুগটা পার করে এসেছি। এই ‘র’ কিংবা ভারতের দালালদের মুখোশ উন্মোচন না করলে বিপ্লব দীর্ঘজীবী হবে না।
মাহমুদুর রহমান বলেন, আরেকটা বিপদ হচ্ছে এক্সটার্নাল থ্রেট— যা আমার দেশের রাষ্ট্রীয় সীমানা নিয়ে। যেহেতু আমাদের দেশের চারপাশে প্রতিবেশী দেশ হিসেবে হিন্দু বা বৌদ্ধিস্ট রাষ্ট্র। সুতরাং মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে সজাগ থাকতে হবে।
আসন্ন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে মাহমুদুর রহমান বলেন, অন্যদিকে ভারত আমাদের থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী কারণ তাদের পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে। তবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যদি রক্ষা করতে হয় তাহলে তরুণদের বাধ্যতামূলক সামরিক প্রশিক্ষণ দিতে হবে। বর্হিবিশ্বের হুমকি মোকাবিলার জন্য প্রশিক্ষিত তরুণরাই যথেষ্ট।
সর্বশেষ তিনি জুলাই বিপ্লবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান এবং তরুণদের প্রশংসা করে বলেন, জুলাই বিপ্লবীদের সাথে ভালো আচরণ করুন। তাদের সম্মান করতে শিখুন। ভারতীয় এজেন্ডার বিরুদ্ধে ও ইসলামের প্রশ্নে বাংলাদেশের তরুণদের দৃঢ়তা আমাকে মুগ্ধ করে।
উল্লেখ্য, বর্ষপূর্তি উদযাপনে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ'র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম এয়াকুব আলী, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম এবং অন্যান্য অতিথিবৃন্দ। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মী এবং শিক্ষার্থীরা। ৩৬ জুলাইয়ের কর্মসূচির অংশ হিসেবে আনন্দ র্যালি-সহ জুলাই স্মৃতিকথা মোড়ক উন্মোচন ও জুলাই স্মৃতি সংগ্রহশালা উদ্বোধন করা হয়।
জুলাই গণ-অভ্যূত্থান দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে আহত জুলাই যোদ্ধাদের সম্মাননা, জুলাই শহীদ পরিবারের সম্মিলন ও স্মৃতিচারণ এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মঙ্গলবার (৫ আগষ্ট) সকাল সাড়ে নয়টায় সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসনের আয়োজনে জুলাই স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে থেকে শোভাযাত্রা শুরু করে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে জেলা শিল্পকলা একাডেমির হাসন রাজা মিলনায়তনে এসে অনুষ্ঠানে মিলিত হয়।
জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়ার সভাপতিত্ব আলোচনা পর্বে বক্তব্য রাখেন সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. তোফায়েল আহাম্মেদ, সিভিল সার্জন ডা. জসিম উদ্দিন। স্মৃতিচারণ তুলে ধরেন আহত জুলাই যোদ্ধা জহুর আলী, ফয়সল আহমেদ এবং শহীদ পরিবারের সদস্যরা। এসময় ছাত্র সংসদ সুনামগঞ্জ জেলা শাখার আহবায়ক ওসমান গনি, জুলাই যোদ্ধা আব্দুল বারী, তাসনিয়া হক তাজিন, ইকরাম আলী সায়েম, মাহফুজুর রহমান মেহিত বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সম্মুখ সারি যোদ্ধাদের সমাগম অনুষ্ঠান, প্রধান উপদেষ্টার আহতদের প্রতি ভিডিও বার্তার মাধ্যমে সম্মান প্রদর্শন, জুলাই যোদ্ধাদের সম্মাননা প্রদান, শহীদ পরিবারের সম্মিলন ও স্মৃতিচারণ করা হয়।
পরে ফ্যাসিস্ট পলায়নের ক্ষণ উদযাপন এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
নেত্রকোনা ও ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনে গড়ে উঠেছে এক শক্তিশালী অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেট, যার জেরে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ রোগী ও তাদের স্বজনদের। অভিযোগ উঠেছে, এই সিন্ডিকেট অবৈধভাবে চাঁদা আদায় করছে এবং রোগী পরিবহনে বাধা দিচ্ছে। সরকারি অ্যাম্বুলেন্স নষ্ট থাকার কারণে এই সিন্ডিকেট আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। গত ৩১শে জুলাই, নেত্রকোনা সদর হাসপাতাল থেকে রেফার করা ৬৫ বছর বয়সী রোগী অনিল চন্দ্রকে ভাড়া করা একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। যে অ্যাম্বুলেন্সটি তাকে ময়মনসিংহ নিয়ে গিয়েছিল, সেই একই অ্যাম্বুলেন্সে করে তার মৃতদেহ ফিরিয়ে আনার কথা ছিল। কিন্তু ময়মনসিংহ হাসপাতালের সামনে থাকা অ্যাম্বুলেন্স চালকরা তাতে বাধা দেয়। ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ, মৃতদেহ নিয়ে ফিরতে হলে তাদের ময়মনসিংহ সিন্ডিকেটকে ১৫০০ টাকা ‘সেলামি’ দিতে হবে অথবা তাদের নিজস্ব অ্যাম্বুলেন্সে করে মৃতদেহ নিয়ে যেতে হবে। এটি তাদের নীরব চাঁদাবাজির একটি কৌশল। তারা জানায়, মৃতদেহ পরিবহনে বাধা দেওয়ার এমন অমানবিক ও বেআইনি নিয়ম তাদের কায়দা করে টাকা আদায়ের লিপ্সা মাত্র। একইভাবে, নেত্রকোনা সদর হাসপাতালের সামনেও একই ধরনের নিয়ম চালু আছে বলে জানা যায়। বাইরের কোনো অ্যাম্বুলেন্স যদি রোগী নিয়ে নেত্রকোনা আসে, তবে তাদেরও ১৫০০ টাকা জরিমানা দিতে হয়। অন্যথায় তারা হাসপাতাল থেকে কোনো রোগী নিতে পারে না। এই ধরনের নীরব চাঁদাবাজির কারণে গরিব ও সাধারণ রোগীরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। ভুক্তভোগীদের দাবি, সরকারি অ্যাম্বুলেন্সের সংকট এবং সেগুলোর অব্যবস্থার কারণেই এই অসাধু চক্র এমন সুযোগ পাচ্ছে। তারা এই অবৈধ প্রতারক ও অমানুষ অ্যাম্বুলেন্স চালকদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। তাদের মতে, জরুরি স্বাস্থ্যসেবার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে এমন অনৈতিক ও অমানবিক কর্মকাণ্ড কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। অবিলম্বে এই সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়ে সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
বিএনপির ভাইস চেয়াম্যান এবং সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী এডভোকেট আব্দুস সালাম পিন্টু বলেছেন,' জুলাই বিপ্লবের শহিদদের রক্তের সাথে বেঈমানী করে বাংলাদেশে কেউ রাজনীতি করতে পারবেনা। জুলাই বিপ্লব শুধু ফ্যাসিষ্ট সরকারের পতন ঘটায়নি, বাংলাদেশকে গনতন্ত্রের পথ দেখিয়েছে। বিএনপির এ বর্ষীয়ান নেতা আজ মঙ্গলবার গোপালপুর উপজেলার বিআরডিবি মাঠে 'ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশ, ছাত্র জনতার গনঅভ্যুত্থান বিজয়ের বর্ষ পূর্তি পালন' উপলক্ষে গনজমায়েতে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন গোপালপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি এবং সাবেক মেয়র অধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর আলম রুবেল। বক্তব্য রাখেন উপেজলা বিএনপির সম্পাদক কাজী লিয়াকত, উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি আবু ঈশা মুনিম, সাবেক সহসভাপতি এবং ব্যবসায়ী খোরশেদুজ্জামান মন্টু, উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এহসানুল হক ওপেল, শহর বিএনপির সভাপতি খালিদ হাসান উথান, সম্পাদক চানঁ মিয়া, যুবদলের সভাপতি সাইফুল ইসলাম তালুকদার লেলিন, শহর যুবদলের আহ্বায়ক আবদুল্লাহ আল মামুন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি জাকির হোসেন প্রিন্স, কৃষক দলের সভাপতি অধ্যাপক হাতেম আলী, শ্রমিক দলের সভাপতি আমিনুল ইসলাম, মহিলা দলের সভানেত্রী নাজমা পারভীন, ছাত্র দলের সভাপতি রোমান আহমেদ প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি মোঃ আমিনুল ইসলাম।
আব্দুস সালাম পিন্টু আরো বলেন,' চাঁদাবাজ, মাদকবাজ এবং সন্ত্রাসীদের দলে ঠাঁই হবেনা। বিএনপিকে পরিশুদ্ধ রাজনৈতিক দলে পরিনত করা হবে। বিগত ১৬ বছরে গোপালপুর- ভূঞাপুরে কোন উন্নমূলক কাজ হয়নি। সামনের নিঅবাচনে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে তারেক রহমানের নেতৃত্বে গোপালপুর-ভূঞাপুরসহ সারা দেশে সুষম উন্নয়ন করা হবে।
জুলাই আহতের সুচিকিৎসার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, প্রয়োজনে তাদেরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে হবে। তিনি বিএনপির নেতাকর্মীর দলীয় শৃঙ্খলা এবং শহিদ জিয়ার আদর্শ বাস্তবায়নে ঐক্যবদ্ধ রাজনীতিতে সামিল হওয়ার আহ্বান জানান।
ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার বাঘাইহাট–সাজেক সড়কের মাচালং বাজার অংশ পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে সাজেক-খাগড়াছড়ি সড়কে যান চলাচল সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে পড়েছে। এতে সাজেক পর্যটন কেন্দ্র ও মাচালং বাজার এলাকায় ২ শতাধিক পর্যটক আটকে পড়েছেন।
পরিস্থিতি মোকাবেলায় বাঘাইহাট জোনের সেনাবাহিনী ও উপজেলা প্রশাসন উদ্ধার কাজে সহায়তা করছে।
মঙ্গলবার সকাল থেকে সড়কে পানি ওঠায় সাজেকের সঙ্গে সরাসরি যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তবে বিকল্প উপায়ে বাঁশের ভেলা ও নৌকার মাধ্যমে পর্যটকদের পারাপার করা হচ্ছে।
এদিকে সাজেক-খাগড়াছড়ি সড়কে চলাচলকারী মাহিন্দ্রচালক মো. জসিম উদ্দিন বলেন, “ভারী বৃষ্টির কারণে মাচালং এলাকায় সড়কে পানি উঠে গেছে। এই কারণে পুরো সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। সাজেকে অন্তত দুই শতাধিক পর্যটক আটকে পড়েছেন। বিকেলে যেসব পর্যটক খাগড়াছড়ি থেকে সাজেকের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলেন, তাদের বাঘাইহাট থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে।”
সাজেক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অতুলাল চাকমা বলেন, “সড়কের উপর এখন আনুমানিক ৫ থেকে ৬ ফুট পানি। এই অবস্থায় কোনোভাবেই যান চলাচল সম্ভব নয়।”
বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিরিন আকতার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, “অনেক পর্যটক বাঁশের ভেলা ও নৌকার মাধ্যমে ডুবে যাওয়া অংশ পার হচ্ছেন। যারা ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে এসেছিলেন, তারা আবার সাজেকে ফিরে গেছেন। সড়ক থেকে পানি নামলেই যান চলাচল স্বাভাবিক হবে।”
প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আবহাওয়া ও পানির পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে এবং পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
জুলাই গণ–অভ্যুত্থান দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) কর্তৃক আজ জুলাই র্যালি, বৃক্ষরোপন, বইয়ের মোড়ক উন্মোচন ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। ডিএসসিসির মাননীয় প্রশাসক জনাব মো. শাহজাহান মিয়া উপর্যুক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
ডিএসসিসির সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অংশগ্রহণে জুুলাই র্যালিটি নগর ভবন থেকে আরম্ভ করে বঙ্গবাজার মোড় প্রদক্ষিণ করে নগর ভবনে এসে শেষ হয়। র্যালি শেষে ৩টি কাঠবাদাম গাছের চারা রোপণ করা হয়। আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে মাননীয় প্রশাসক বলেন, "৩৬শে জুলাই বিশ্বের অন্য কোনো ক্যালেন্ডারে নেই, কেবল আমাদের আছে; এই অর্জনকে ধরে রাখতে হবে।" তিনি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর সৃষ্ট নাগরিক প্রত্যাশা পূরণে জুলাইয়ের চেতনা ধারণ করে নাগরিক সেবা প্রদানের জন্য ডিএসসিসিতে কর্মরত সকলকে আহ্বান জানান।
এ সময় প্রশাসক জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহিদের স্মরণে ডিএসসিসি কর্তৃক প্রকাশিত "অগ্নিঝরা জুলাই, অতঃপর... নাগরিক প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির ১ বছর" শীর্ষক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন।
জুলাই গণ–অভ্যুত্থান দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব মো: জহিরুল ইসলাম, সচিব মুহাম্মদ শফিকুল ইসলামসহ বিভাগীয় প্রধানগণ উপস্থিত ছিলেন।
পাকিস্তানের ইসলামাবাদের বাংলাদেশ হাইকমিশনে আজ জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস, ২০২৫ যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়েছে।
মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) সকাল পৌনে ৯টায় ইসলামাবাদের ডিপ্লোমেটিক এনক্লেভে নবনির্মিত বাংলাদেশ চ্যান্সেরি কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে পাকিস্তানে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. ইকবাল হোসেন খান মিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন।
এ সময় মিশনের অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারী, বাংলাদেশি কমিউনিটির সদস্য ও স্থানীয় পাকিস্তানি নাগরিকসহ চার শতাধিক অতিথি উপস্থিত ছিলেন।
পরে দূতালয়ের সম্মেলনকক্ষে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এ সময় জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের স্মরণে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার প্রদত্ত বাণী পাঠ করা হয়। জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে উপজীব্য করে নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
পরে মিশনের কর্মকর্তা ও প্রবাসী বাংলাদেশিরা আলোচনায় অংশ নেন। আলোচকগণ জুলাই পুনর্জাগরণে ছাত্র-জনতার সাহসী ভূমিকার স্মৃতিচারণ করেন। আলোচকরা বৈষম্যহীন ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গঠনের আহ্বান জানান।
হাইকমিশনার রাষ্ট্রীয় সকল প্রতিষ্ঠানকে বৈষম্যমুক্ত করে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সকলকে একযোগে কাজ করার আহবান জানান। গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সুসংহত করার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
আলোচনা শেষে ২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে শীদ ছাত্র-জনতার আত্মার মাগফেরাত এবং দেশের অব্যাহত শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।
হাইকমিশনার অতিথিদের সাথে নিয়ে দূতালয়ে স্থাপিত আলোকচিত্র প্রদর্শনী ঘুরে ঘুরে দেখেন।
'জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস ২০২৫' উদযাপন উপলক্ষ্যে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ এবং সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের আয়োজনে মঙ্গলবার (৫ আগষ্ট) বাদ যোহর ঢাকার তেজগাঁওস্থ সড়ক ভবন সংলগ্ন মসজিদে সকল শহিদের আত্মার মাগফেরাত এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করে বিশেষ দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এসময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড. শেখ মইনউদ্দিন, মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। পরবর্তীতে সড়ক ভবনের সামনে প্রধান অতিথি বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন। এসময় সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব মো: এহছানুল হক সহ মন্ত্রণালয় ও সওজ অধিদপ্তরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. শেখ মইনউদ্দিন ও সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব মো: এহছানুল হক জুলাই পুনর্জাগরণ অনুষ্ঠানমালা-২০২৫ এর অংশ হিসেবে ঢাকার তেজগাঁওস্থ ডিটিসিএ ভবনে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) কর্তৃক আয়োজিত রক্তদান কর্মসূচি পরিদর্শন করেন। এসময় ডিটিসিএ’র নির্বাহী পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) নীলিমা আখতার উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও বরিশাল-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এম. জহির উদ্দিন স্বপন বলেছেন, ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে হামলা চালিয়ে যারা আন্দোলনকারী ও সাধারন মানুষকে হত্যা করেছে তাদেরকে কোন ছাড় দেয়া হবে না। হত্যাকারীদের রক্ষা করতে যারা চেষ্টা চালাবে তাদেরকেও আমরা ছাড়বো না। বিচার বিভাগ যদি আমাদের কাছে রশি চায় তাহলে আমরা বিচার বিভাগকে রশি সরবরাহ করব। কেননা স্লোগান উঠেছে, রশি লাগলে রশি নে, জুলাই হত্যাকারীদের ফাঁসি দে।
মঙ্গলবার দুপুর ১২ টায় বরিশালের গৌরনদী উপজেলা সদরের কেন্দ্রীয় ঈদগা মাঠে গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া উপজেলা বিএনপি আয়োজিত ফ্যাসিবাদ মুক্তির বছর পূর্তির আনন্দ র্যালি পূর্ব জনসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতা কালে তিনি এ কথা বলেন।
হাজার হাজার জনতা ও দলীয় নেতাকর্মীদের মূহু মূহু স্লোগানে মুখর ওই জনসমাবেশে জহির উদ্দিন স্বপন আরো বলেন, জাতিকে আমরা একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের পথ দেখাতে পারছি তারেক রহমানের নেতৃত্বে রাষ্ট্র মেরামত করে।
এখন জাতির মুক্তির জন্য একটাই কাজ, পলাতক শেখ হাসিনা এবং সমস্ত খুনিদেরকে বিচার করা আর অবাধ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা।
আমরা বড় বড় কথা বলি কিন্তু যদি দেখা যায় আমাদের দলের মধ্যেই মাদক ব্যবসায়ী, যদি দেখা যায় আমাদের দলের মধ্যেই গডফাদার। আমাদের দলের মধ্যেই নতুন নতুন হারিছ, আপনারা কি তার মানবেন।
সময় হাজার হাজার জনতা সমস্বরে উত্তর দেন না।
এ পর্যায়ে স্বপন বলেন, কিন্তু গডফাদাররা যদি বিরাট শক্তি নিয়ে ১০-১২-২০ জনের বাহিনী নিয়ে আক্রমণ করে আপনারা কি করবেন, ৫ আগস্ট যেভাবে গডফাদারের রানী শেখ হাসিনাকে মোকাবেলা করেছি গৌরনদী আগৈলঝাড়ায় যে কোন গডফাদার, সে বিএনপি হোক আর আওয়ামী লীগ হোক তার বিরুদ্ধে আমরা গণ প্রতিরোধ গড়ে তুলবো।
গৌরনদী উপজেলা বিএনপির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ সরোয়ার আলম বিপ্লবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জনসমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বরিশাল উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা দেওয়ান মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ, উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মোঃ মিজানুর রহমান খান মুকুল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন, নিউ ইংল্যান্ড বিএনপি’র সভাপতি সৈয়দ বদরে আলম।
বক্তব্য রাখেন, আগৈলঝাড়া উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক সিকদার হাফিজুর রহমান, গৌরনদী উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব শরীর জহির সাজ্জাদ হান্নান, আগৈলঝাড়া উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব মোল্লা বশির আহমেদ পান্না, গৌরনদী পৌর বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক শরীফ শফিকুর রহমান স্বপন, বরিশাল উত্তর জেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ন আহবায়ক মোঃ সাইয়েদুল আলম খান সেন্টুসহ ফ্যাসিবাদ বিরোধী ১৭ বছরের আন্দোলন সংগ্রাম ও জুলাই বিপ্লবে নিহত শহীদের স্বজনরা।
সমাবেশ ও র্যালিতে গৌরনদী আগৈলঝাড়ার উপজেলা ও পৌর বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দল, ছাত্রদলসহ দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা আলাদা আলাদা মিছিল নিয়ে অংশগ্রহণ করেন।
জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের আয়োজনে আজ ২৪-এর ছাত্রজনতার অভূতপূর্ব অভ্যুত্থানের বর্ষ পূর্তি উপলক্ষে 'জুলাই গণ অভ্যুত্থান দিবস’ যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপন করা হয়। স্বৈরাচারী শাসন থেকে মুক্তি এবং গণতান্ত্রিক অধিকার পুনরুদ্ধারের জন্য ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক আন্দোলনকে স্মরণ করতে এই কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
দিবসটি উপলক্ষে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর অংশগ্রহণে ঢাকার শাহবাগে অবস্থিত ‘জুলাই স্মৃতিস্তম্ভে’ পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। শ্রদ্ধা নিবেদনের পর, বিকেলে সেগুনবাগিচায় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের সম্মলেন কক্ষে এক আলোচনা সভা ও স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জনাব মো: আব্দুর রহমান তরফদার। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোসা: ফেরদৌসী বেগম। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রশাসন) জনাব আলমগীর হুছাইন। আলোচনা সভায় বক্তারা জুলাই গণ অভ্যুত্থানের তাৎপর্য, এর প্রেক্ষাপট এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে এর গুরুত্ব তুলে ধরেন।
জুলাই গণঅভ্যুত্থান ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে এক নতুন দিগন্ত, যা স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়ে দেশে জনগণের শাসন ফিরিয়ে এনেছে। এই আন্দোলনের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্ম তাদের সাহসিকতা ও দৃঢ়তার প্রমাণ দিয়েছে।
আলোচনা ও স্মৃতিচারণের পাশাপাশি ‘জুলাই ৩৬’ নিয়ে কবিতা আবৃত্তি ও একটি ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠানে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত ও জুলাই আহতদের সুস্থতা কামনা করে একটি বিশেষ দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে মাগুরায় পালিত হয়েছে ঐতিহাসিক জুলাই -আগস্ট গণঅভ্যুত্থান দিবস। জেলা প্রশাসনের আয়োজনে মঙ্গলবার শহীদদের কবরে ফুল দিয়ে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। এ সময় শহীদদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে দোয়া করা হয়।
মাগুরা সদর উপজেলার বরুনাতৈল গ্রামে শহীদ ছাত্রনেতা মেহেদী হাসান রাব্বি'র কবর জিয়ারত ও অন্যান্য শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
দোয়া মাহফিল শেষে বিশেষ অতিথি হিসেবে জেলা প্রশাসক মোঃ ওহিদুল ইসলাম বক্তব্য রাখেন। এ সময় আরো ছিলেন, পুলিশ সুপার মিনা মাহমুদা, সিভিল সার্জন ডা. মোঃ শামীম কবির,গণপূর্ত নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ নাহিদ পারভেজসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তারা। এছাড়াও দোয়া মাহফিলে অংশ নেয়, শহীদ রাব্বির পরিবারের সদস্য, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও বরুনাতৈল এলাকার শত শত মানুষ ।
এর পর জেলা অডিটোরিয়ামের সামনে জুলাই -আগস্ট গণঅভ্যুত্থান দেয়ালিকা উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধন শেষে জেলা অডিটোরিয়ামে শহীদ পরিবারের সদস্যদের সাথে একটি মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভাই শহীদদের স্বজনরা তাঁদের বেদনা, ত্যাগ ও আবেগঘন অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন। তারা অবিলম্বে ‘জুলাই সনদ’ ঘোষণার দাবি জানান এবং শহীদদের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
জামালপুরে জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে জুলাই আন্দোলনে শহীদ পরিবারের সদস্য, আহত এবং জুলাই যোদ্ধা সম্মিলন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মঙ্গলবার (৫ আগষ্ট) সকাল থেকে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি পালিত হয়। সকাল ১১ টায় জেলা শিল্পকলা একাডেমির বীর মুক্তিযোদ্ধা গীতিকার নজরুল ইসলাম বাবু মিলনায়তনে শহীদদের স্মরণে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। জেলা প্রশাসক হাছিনা বেগমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার সৈয়দ রফিকুল ইসলাম, সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর হারুন অর রশিদ, সিভিল সার্জন ডাঃ আজিজুল হক, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শাহ মো: ওয়ারেছ আলী মামুন, শহীদ পরিবারের সদস্যগণ ও আহত জুলাই যোদ্ধাবৃন্দ। এর আগে সকালে সদর উপজেলার শরিফপুর ইউনিয়নের শ্রীরামপুর গ্রামে শহীদ সাফওয়ান আক্তার সদ্য এর কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে জেলার সকল শহীদদের শ্রদ্ধা জানানো হয়। এ ছাড়াও সকল মসজিদ, মন্দির, গীর্জায় বিশেষ প্রার্থনা করা হয়।
মাদারীপুরে জুলাই গনঅভ্যুত্থান দিবস ২০২৫ উপলক্ষ্যে মাদারীপুর জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন, মানবাধিকার সংগঠন ও সুশীল সমাজের পক্ষ থেকে ব্যাপক কর্মসূচী নেয়া হয়। ৫ আগষ্ট মঙ্গলবার সকাল ৯ টায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে স্বৈরাচারী ফ্যাসিষ্টদের হাতে নিহত মাদারীপুরের সুচিয়ারভাঙ্গা গ্রামের তাওহীদ সান্ন্যামতের বাড়ীর কবরে পুষ্পমাল্য অর্পন ও তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন জেলা প্রশাসক মোছাম্মৎ ইয়াসমিন আক্তার, মাদারীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাঈম হাসান সহ প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তা। এসময় শহীদ তাওহীদ সান্ন্যামতের পিতা, মাতা ও বড় ভাই, মানবাধিকার সংস্থা, আসক ফাউন্ডেশনের জেলার সভাপতি সাংবাদিক ফায়েজুল শরীফ, জাতীয় সাংবাদিক সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, এনটিভির সাংবাদিক এম,আর মর্তুজা ও সময় টিভির সাংবাদিক সঞ্জয় চক্রবর্তী অভিজিৎ সহ উক্ত এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া, সেদিনগুলোর ঘটনায় আরো যারা মাদারীপুরের ছাত্র-জনতা নিহত হয়েছেন প্রশাসন থেকে তাদের জন্য ভিন্ন-ভিন্নভাবে উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতাদের সমন্বয়ে তাদের কবরেও পুষ্পমাল্য অর্পণ ও দোয়া করা হয় ।
উক্ত কর্মসূচীর পরে সকাল ১১ টায় জেলা সমন্বিত সরকারী অফিস ভবনের হলরুমে জুলাই গনঅভ্যুত্থান দিবস-২০২৫ এর আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক মোছাম্মৎ ইয়াসমিন আক্তার, বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-সচিব মোঃ হাবিবুল আলম, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাঈম হাসান, জেলা বিএনপি'র সাবেক সভাপতি ও বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কাজী হুমায়ুন কবির (কবির কাজী), জামায়াতের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও জেলার সাবেক আমীর মাওলানা আবদুস ছোবহান, সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ শরিফুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে এসময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলা ভোক্তা অধিকারের সহকারী পরিচালক সুচন্দন মন্ডল, তথ্য অফিসার মোঃ দেলোয়ার হোসেন, মাদারীপুর সদর উপজেলার ইউএনও ওয়াদিয়া শাবাব সহ জেলার অন্যান্য ৪ টি উপজেলা- কালকিনি, শিবচর, রাজৈর ও ডাসার উপজেলার ইউএনও বৃন্দ, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, টিভি, ইলেকট্রনিক্স মিডিয়া, পত্র-পত্রিকার সাংবাদিকবৃন্দ ও প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তাগণ।
এছাড়াও মাদারীপুরে শহীদ হওয়া পরিবারগুলো পক্ষে বক্তব্য রাখেন ছাত্রবৈষম্য আন্দোলনের জেলার আহবায়ক মোঃ নেয়ামতুল্লাহ, যুগ্ম আহবায়ক আশিক আহম্মেদ সহ নিহত ও আহতের পরিবারের অভিভাবকগণ। নিহত ও আহত পরিবারের অনেকেই তাদের বক্তব্যে বলেন, জুলাই-আগস্ট/২০২৪ এ পতিত স্বৈরাচারী ফ্যাসিষ্ট সরকার কর্তৃক ছাত্র-জনতার উপর সেদিনগুলোর ভয়াবহ নির্মম গণহত্যা, গুম, খুন ও আহত করার স্মৃতিগুলো আমাদের এখনো ভীতসন্তস্ত্র করে তোলে। তারা বর্তমান অন্তবর্তী সরকারের কাছে প্রশ্ন রেখে বলেন, আজ ৫ ই আগষ্ট/'২৫ তারিখ ১টি বছর অতিবাহিত হলো, অথচ একটি হত্যাকান্ডের বিচার এখনো আলোর মুখ দেখেনি, বিচারের রায় হয় নি। তারা মাদারীপুর জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে অনতিবিলম্বে সেদিনের সকল হত্যাকান্ডের দ্রুত দৃশ্যমান বিচারের রায় ঘোষণা, সর্বোচ্চ সাজা এবং তা কার্যকর করে শহীদের বিদেহী আত্মাগুলোর, শান্তি দেয়ার আহবান জানান। নইলে তারা আবারো রাজপথে নেমে জীবন দেয়ার ঘোষনা দেন। তারা এদেশ থেকে সকল স্বৈরাচারী, মব জাষ্টিস, ঘুষ-দূর্ণীতি বন্ধ সহ নিহত ও আহত পরিবারকে সম্পূর্ণরূপে সরকারী সুযোগ-সুবিধা, হ ক্ষতিপূরণ সহ ভাতার আওতায় নেয়ার আহবান জানান।