কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালীতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অগ্নিকাণ্ড নাশকতা কি না, তা তদন্তে সাত সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু সুফিয়ানের নেতৃত্বে গঠিত কমিটিকে তিন কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
উখিয়ার বালুখালী ১১ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রোববার বিকেলে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। প্রাথমিকভাবে বলা হচ্ছে, ১১ নম্বর ক্যাম্পের একটি বাড়ির রান্নাঘর থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়ে দ্রুত পাশের ৯ এবং ১০ নম্বর ক্যাম্পে ছড়িয়ে পড়ে। তিন ঘণ্টা পর সন্ধ্যা ৬টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।
নেভানোর আগেই এই আগুন পুড়িয়ে দেয় ক্যাম্পের দুই হাজার ঘর। এতে আশ্রয়হীন হয়ে পড়ে ১২ হাজার রোহিঙ্গা। বর্তমানে তাদের অনেকেই খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন। সোমবার সকাল থেকে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন কার্যক্রম শুরু করেছে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)।
রোহিঙ্গাদের অনেকের ধারণা, এটি পরিকল্পিত অগ্নিকাণ্ড হতে পারে। বারবার আগুনের ঘটনায় এই অঞ্চলে নিরাপত্তার সংকট দেখা দিতে পারে বলে শঙ্কিত অনেকে।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাশন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানান, ক্যাম্পের অগ্নিকাণ্ডে দুই হাজার শেল্টার (ঘর) পুরোপুরি ভস্মীভূত হয়ে গেছে। এতে প্রায় ১২ হাজার রোহিঙ্গা ঘর হারিয়েছেন। সকাল থেকে তাদের পুনর্বাসনের কাজ শুরু হয়েছে। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইওএম আশ্রয়হীন রোহিঙ্গাদের অস্থায়ী ঘর তৈরি করবে। জাতিসংঘের খাদ্য সংস্থা ডব্লিউএফপি রোহিঙ্গাদের জরুরি খাদ্য সহায়তা দিচ্ছে।
তিনি জানান, অগ্নিকাণ্ডে প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করা হচ্ছে। পরে ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গাদের স্থায়ী শেল্টার করে দেয়া হবে। তবে অগ্নিকাণ্ডে নিখোঁজ কিংবা হতাহতের কোনো ঘটনা নেই।
শরণার্থী কমিশনার জানান, ক্যাম্পের অগ্নিকাণ্ড তদন্তে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসন সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু সুফিয়ানের নেতৃত্বে এই কমিটিতে শরণার্থী কমিশন, এপিবিএন পুলিশ, জেলা পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসের প্রতিনিধি রয়েছেন। অগ্নিকাণ্ডের প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান ছাড়াও এটি কোনো নাশকতা কি না তা খতিয়ে দেখবে কমিটি। তিন কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত করে তারা রিপোর্ট জমা দেবে। কেউ যদি পরিকল্পিতভাবে এটি করে থাকে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ঘন ঘন অগ্নিকাণ্ডে উদ্বিগ্ন বিশেষজ্ঞরা। তারা জানিয়েছেন, ক্যাম্পে অগ্নিসংযোগ, গোলাগুলি ও মারামারি কক্সবাজারের জন্য অশনিসংকেত। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বিভিন্ন ঘটনা এই অঞ্চলের জন্য নিরাপত্তার সংকট ডেকে আনতে পারে।
রোহিঙ্গাদের অনেকের বক্তব্য, ক্যাম্পে হঠাৎ করে আগুন লাগার কারণে অনেকে এক কাপড়েই ঘর ফেলে চলে আসে। ঘর হারিয়ে এখন অনেকেই নিঃস্ব হয়ে গেছে। অনেকেই জানিয়েছে, একটি গ্রুপ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। ক্যাম্পে পরিকল্পিতভাবে আগুন লাগার একটা ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরালও হয়েছে। যদিও তা যাচাই করা যায়নি।
আইওএমের কমিউনিকেশন অফিসার তারেক মাহমুদ জানিয়েছেন, সোমবার সকাল থেকে আশ্রয়হীন রোহিঙ্গাদের অস্থায়ী শেল্টার কিট ও অন্যান্য সরঞ্জাম দিয়ে পুনর্বাসন কার্যক্রম শুরু করেছে। এছাড়া পাঁচটি মেডিকেল টিম রোহিঙ্গাদের চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে। অগ্নিকাণ্ডে প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করার কাজও চলছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ আলোচনায় থাকেন ঢাকাই সিনেমার নায়িকা পরীমনি। এক সময় তার জন্মদিন নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। এবার সন্তানদের জন্মদিন পালন নিয়ে কন্টেন্ট ক্রিয়েটরদের ওপর ক্ষেপেছেন অভিনেত্রী।
সন্তান জন্মের পর অভিনেত্রী জানিয়েছিলেন, ধুমধাম করে আর নিজের জন্মদিন পালন করবেন না। সন্তানের জন্মদিন ভালোভাবে পালন করবেন। ঠিক এমনটাই করে আসছিলেন। কথামতো গত ১০ আগস্ট ছেলের তৃতীয় জন্মদিন নিজের মতো করেই উদযাপন করেছেন পরীমনি। তবে এ অনুষ্ঠান নিয়ে বেজায় চটেছেন নায়িকা।
সবকিছু ঠিকমতোই ছিল। সন্তানের জন্মদিনের ছয় দিন পর অভিনেত্রী লক্ষ্য করলেন, ব্যক্তিগত ওই অনুষ্ঠানের ফুটেজ সামাজিক মাধ্যমে ঘুরে বেড়াচ্ছে। অতিথিদের অনেকে অনুষ্ঠানটি ব্যবসা বানিয়ে সামাজিক মাধ্যম ছড়িয়েছে। এত ক্ষুব্ধ পরীমনি।
গত শনিবার অভিনেত্রী লিখেছেন, ‘আমার সব রকম আনন্দে যাদের আমি কাছে চাইছি কিন্তু তারা প্রত্যেকেই প্রমাণ করছে তারা আমার জীবনে মলমুত্র মাত্র। খেয়াল করে দেখবেন, গত ১০ তারিখ থেকে ব্যক্তিগত কারণে আমি ফেসবুকে অ্যাকটিভ নই। আজ ফেসবুকে ঢুকতেই দেখি আমার জীবনের আনন্দ নিয়ে টানাটানি করা শুরু করেছে। আমার বাচ্চাদের নিয়ে ১০ তারিখ একটা ইভেন্ট ছিল- আমার একান্ত নিজস্ব কাছের মানুষদের নিয়ে যেটা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কিছু উল্লুক বেহায়ার মতো আমার ইভেন্টে এসে রিলস আর ব্যবসায়িক ব্লগে সামাজিক মাধ্যম ভরে ফেলছে! যেখানে আমি এখন পর্যন্ত একটা ছবিও পোস্ট করিনি। এমনকি আমার পরিবারের এবং সত্যি যাদের কাছে পরিবারের মানুষের গুরুত্ব আছে তারা কিন্তু কেউ এরকম করে নাই।’
এদিকে গত মাসে অভিনেত্রী স্পষ্ট জানিয়েছিলেন, তার সন্তানরা ব্যবসায়িক উপাদান নয়। তাদের নিয়ে যেন কনটেন্ট ব্যবসা বন্ধ করা হয়। কিন্তু নিজের ব্যক্তিগত অনুষ্ঠানে সেটি ঠেকাতে পারেননি তিনি।
এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে পরীমনি লিখেছেন- ‘যারা অনুষ্ঠানে এসে মানুষের জীবনের অতি মূল্যবান সময়টা পাবলিক করে তারা আমার গালি খাবা, যা তোমরা ডিজার্ভ করো- তোমরা ভিখারির মতো মাসভরে কিছু ডলার কামাও। এ ধরনের মানুষ বা কনটেন্ট ক্রিয়েটর যদি সামনে পড়ে তাহলে তিন মিনিট থাপড়িয়ে দেব। কারণ আগেই বলেছিলাম আমার বাচ্চারা কোনো ব্যবসায়িক উপাদান না। ভালো লাগেনি তখন?’
জয়পুরহাটের কালাইয়ে পরীক্ষার ফি দিতে না পারায় দ্বিতীয় শ্রেণির এক ছাত্রীকে মূল্যায়ন পরীক্ষার কক্ষ থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। আর এ বিষয়ে সোমবার দুপুরে শিক্ষার্থীর বাবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
সোমবার সকালে (১৮ আগস্ট) উপজেলার পুনটে অবস্থিত মঞ্জুর আইডিয়াল স্কুল নামে একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলে ঘটনাটি ঘটেছে।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সুরাইয়া মনি (৮) উপজেলার জালাইগাড়ী গ্রামে সাইফুল ইসলামের মেয়ে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্কুলটিতে জাতীয় পতাকার স্ট্যান্ড থাকলেও স্ট্যান্ডে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয় নাই। কোমলমতি শিশুদের উত্তপ্ত গরমে টিনের কক্ষে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। আবার স্কুলে খোলা মাঠে গাছের নিচে ক্লাস করানো হচ্ছে। আবার স্কুলে কোচিং করানো নিষেধ থাকলেও করানো হচ্ছে শিক্ষার্থীদের কোচিং।
স্কুলের পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী রাকিব হাসান বলে, সুরাইয়া মনি ক্লাসের মূল্যায়ন পরীক্ষা দিতে আসলে প্রধান শিক্ষক পরীক্ষা দিতে না দেওয়ায় তখন স্কুলের মাঠে দাঁড়িয়ে কাঁদতে থাকে।
চতুর্থ শ্রেণির আরেক শিক্ষার্থী নাহিদা আক্তার বলে, এ স্কুলে পড়ার জন্য প্রতিমাসে বেতন ৩০০ টাকা, কোচিং করার জন্য ৩০০ টাকা দিতে হয়। আর পরীক্ষা সময়ে পরীক্ষার ফি ১৮০ টাকা দিতে হয়।
শিক্ষার্থী সুরাইয়া মনি বলে, আমাকে হেড স্যার টাকার জন্য পরীক্ষা দিতে দেননি। তিনি বলেন, তোর বাবা টাকা দিতে পারেনা, তোর পরীক্ষা দিতে হবে না। তুই বাড়ি যা বলে ঘাড় ধরে বের করে দেয়। এজন্য আমি স্কুলের মূল্যায়ন পরীক্ষা দিতে পারিনি। আমার সহপাঠীরা সবাই পরীক্ষা দিচ্ছিল। আমি পরীক্ষা না দিতে পারায় বের করলে দিলে বাহির দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাঁদছিলাম।
সুরাইয়া মনির বাবা সাইফুল ইসলাম বলেন, আমরা গরীব মানুষ। দিনমজুর দিয়ে সংসার চালাই। প্রতি মাসেই স্কুলে বেতন দেই। হয়তো এক-দুই দিন দেরি হয়। আমার মেয়ের কোন মাসের বেতন বকেয়া নেই। শুধু পরীক্ষার ফি বাকি ছিল। যেটা আমি আজকে দিতে গিয়ে দেখি আমার বাচ্চাকে রুম থেকে বের করে রুমের বাহিরে দাঁড়িয়ে রেখেছে। আর বাচ্চা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাঁদছে। এ দৃশ্য দেখার চেয়ে আমার মরণ ভালো ছিল।
এ বিষয়ে মঞ্জুর আইডিয়াল স্কুলের প্রধান শিক্ষিক এমিলি ইয়াসমিন রিনা বলেন, আমি কোন কথা বলতে পারবো না। কি করতে পারেন, করেন।
কালাই উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) রাশেদুল ইসলাম বলেন, কিন্ডারগার্টেন স্কুলের বিষয়ে আমাদের কিছু করার নেই। এসব প্রতিষ্ঠান ব্যক্তি মালিকানাধীন। শুধু আমরা এসব প্রতিষ্ঠানে সরকারি বই বিতরণ করা হয়ে থাকে।
কালাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামিমা আক্তার জাহান বলেন, এবিষয়ে মঞ্জুর আইডিয়াল স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীর বাবা একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর সীমান্তে পৃথক অভিযানে ৩৯ বোতল মদ, ২ কেজি গাঁজা, ১১৩৬ পিস সিলডিনাফিল ট্যাবলেট এবং ৪টি মহিষ আটক করেছে বাংলাদেশ বর্ডারগার্ড (বিজিবি)। সোমবার (১৮ আগস্ট) বিকাল ৪টার দিকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান ব্যাটালিয়ন ৪৭ (বিজিবি)।
বিজিবি সূত্র জানান, সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সোমবার (১৮ আগস্ট) ভোর ৪ টার দিকে চরচিলমারী বিওপির দায়িত্বপূর্ণ চিলমারী সুগারঘাট নামক এলাকায় ভারতীয় ৪টি মহিষ আটক করা হয়। যার মূল্য-৪,৫০,০০০ টাকা। একই দিন ভোর ৫টার দিকে ঠোটারপাড়া বিওপির দায়িত্বপূর্ণ সীমান্তের শকুনতলা মাঠে ভারতীয় ২ কেজি গাঁজা এবং ৫০০ পিস সিলডিনাফিল ট্যাবলেট আটক করেন তারা। যার মূল্য ১,৫৭,০০০ টাকা।
এর আগে একই দিন রাত ৩টার দিকে চল্লিশপাড়া বিওপির দায়িত্বপূর্ণ চল্লিশপাড়া মাঠে ভারতীয় ৩৯ বোতল মদ ও গত রবিবার (১৭ আগস্ট) রাত ১১টার দিকে নিচপাড়া মাঠ থেকে ভারতীয় ৬৩৬ পিস সিলডিনাফিল ট্যাবলেট আটক করেন ব্যাটালিয়ন ৪৭ (বিজিবি)। যার মূল্য ২,৪৯,৩০০ টাকা।
আটককৃত মহিষ কাস্টমে জমা করার কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে এবং মাদকদ্রব্য ধ্বংসের জন্য ব্যাটালিয়ন মাদক ষ্টোরে জমা করার কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে বিজিবি সূত্রে জানানো হয়। এসকল আটককৃত মহিষ ও মাদকদ্রব্যের সর্বমোট মূল্য ৮,৫৬,৩০০ টাকা।
কুষ্টিয়া ব্যাটালিয়ন (৪৭ বিজিবি) এর অধিনায়ক লেঃ কর্নেল মোঃ মাহবুব মুর্শেদ রহমান পিএসসি বলেন, সীমান্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং মাদক পাচারসহ সব ধরনের অবৈধ কার্যক্রম প্রতিরোধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে ৪৭ বিজিবি। ভবিষ্যতেও চোরাকারবারীসহ মাদক আটকে বিজিবি কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।
আলফ্রেড সরেন হত্যাকাণ্ডের পর ২৫ বছর পার হয়ে গেল। ২০০০ সালের ১৮ আগস্ট নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার ভীমপুর আদিবাসী পল্লিতে ভূমিদস্যুদের হামলায় নিহত হন এই আদিবাসী নেতা। এই দীর্ঘ সময়েও বিচার হয়নি সেই হত্যাকাণ্ডের। আলফ্রেড সরেন হত্যা মামলার বিচারকাজ কবে শেষ হবে, শেষ পর্যন্ত তা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে এ নিয়ে আদিবাসীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে সংশয়। এর ওপর অব্যাহত রয়েছে হুমকি-ধমকি। ওদিকে আদিবাসীদের অনেকেই ইতোমধ্যে ভীমপুর আদিবাসী পল্লি ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন।
আদিবাসী নেতা আলফ্রেড সরেন এর মৃত্যুবার্ষিকীতে তার স্মরণে সোমবার দুপুরে ভীমপুর আদিবাসী পল্লিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি,শোক র্যালি আলোচনা সভার মাধ্যমে তার হত্যার বিচার দ্রুত সম্পন্ন করার দাবি জানানো হয়।
সেদিন যা ঘটেছিল
২০০০ সালের ১৮ আগস্ট ভীমপুর আদিবাসী পল্লিতে ভূমিদস্যু হাতেম-গদাই গংদের সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়। তারা পল্লির ১১টি পরিবারের বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট এবং অগ্নিসংযোগ করে। হামলায় আদিবাসী নারী-শিশুসহ প্রায় ৩০ জন গুরুতর আহত হন। এ সময় আদীবাসীদের কয়েকটি শিশুকে সন্ত্রাসীরা পার্শ্ববর্তী পুকুরেও ছুড়ে ফেলে।
সন্ত্রসীরা যখন আদিবাসী পল্লিতে হামলা চালায় তখন দুপুর ১২টা। দিনটি ছিল শুক্রবার। হামলার প্রতিবাদে ওই দিন জুমার নামাজের পর নওগাঁ-মহাদেবপুর সড়কের চৌমাসিয়ার মোড়ে প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে আদিবাসীরা।
আদিবাসী নেতা আলফ্রেড সরেন কর্মসূচির সব আয়োজন শেষ করে দুপুর ১২টার দিকে খাবার খেতে বাড়িতে যান। পল্লির অধিকাংশ পুরুষ তখন চৌমাসিয়ার মোড়ে সমাবেশস্থলেই ছিল। আলফ্রেড বাড়িতে যেতেই সন্ত্রাসী বাহিনী হামলা চালায়। আলফ্রেড বুঝতে পেরে নিজের ঘর ছেড়ে অন্য ঘরে আশ্রয় নেন। আলফ্রেড যে ঘরটিতে আশ্রয় নিয়েছিলেন সন্ত্রাসীরা সেটিতে আগুন ধরিয়ে দিয়ে তাকে ঘর থেকে বেরিয়ে আসতে বাধ্য করে। তিনি ঘরের বাইরে আসামাত্র সন্ত্রাসীরা তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে।
বর্বরোচিত এই ঘটনা পর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের আদিবাসী জনগোষ্ঠী, প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলসহ সচেতন মহলে ব্যাপক আলোড়ন ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। আদিবাসীরা রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানান।
আলফ্রেড সরেন হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ওপর বিভিন্ন সময়ে পরিচালিত অত্যাচার ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে দেশি-বিদেশি মিডিয়াসহ সর্বস্তরের মানুষ সোচ্চার হয়ে রাস্তায় নেমে আসে। আদিবাসীদের পক্ষে দেশব্যাপী ব্যাপক জনমত গঠিত হয়।
হত্যাকাণ্ডের আগের দিনের চিঠি
২০০০ সালের ৯ আগস্ট নওগাঁর মুক্তির মোড় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশে আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবসে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সেদিন আলফ্রেড সরেন নওগাঁর সিপিবি নেতা ময়নুল হক মুকুল, মহসীন রেজাসহ আরও কয়েকজনের কাছে আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে তাকে হত্যা করা হতে পারে। সবাই তাকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছিলেন বলে জানান তৎকালীন নওগাঁ জেলা সিপিবির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা ময়নুল হক মকুল।
মহসীন রেজা জানান, হত্যাকাণ্ডের আগের দিন ১৭ আগস্ট আলফ্রেড মহাদেবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা দেওয়ান আমজাদ হোসেন তারাকে একটি চিঠি লিখেছিলেন। চিঠিতে তাকে হত্যা করতে পারে এমন সন্দেহভাজন ১০ জনের নাম উল্লেখ করা ছিল।
সভাস্থলে যে খবর আসে
আদিবাসীদের ডাকা চৌমাসিয়ার মোড়ে সেই সভায় সেদিন বক্তব্য দেয়ার জন্য উপস্থিত ছিলেন নওগাঁ সিপিবির তৎকালীন সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা ময়নুল হক মুকুল। এ সময় তার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘তখন দুপুর সাড়ে ১২টা হবে। হঠাৎ আমার নজর চলে যায় ভীমপুর গ্রামের দিকে। ভালো করে তাকিয়ে দেখি কুণ্ডলী পাকিয়ে ধোঁয়া উঠছে। আমি সবাইকে সেটা দেখতে বলি। ইতোমধ্যে মাঠের মধ্য দিয়ে গ্রামের উদ্দেশে দৌড় দেন আদিবাসীরা। আমিও আদিবাসীদের পিছু পিছু গ্রামে গিয়ে উপস্থিত হই। ততক্ষণে সব শেষ। আমি, মহসীন রেজা, শহীদ হাসান সিদ্দিকী স্বপনসহ আরও কয়েকজনকে খবরটা জানিয়ে দেই। তবে আমার কাছে অবাক লেগেছে সেদিন পুলিশের তৎপরতা দেখে। অতি দ্রুত পুলিশ কীভাবে খবর পেয়ে সেখানে উপস্থিত হলো সেটা একটা প্রশ্ন। তখনই আমার ধারণা হয়েছিল পুলিশকে ম্যানেজ করেই ঘটনাটি ঘটিয়েছিল হাতেম-গদাই গং। পুলিশ সেখান থেকে তড়িঘড়ি করে আলফ্রেডের লাশ নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে আমি আদিবাসীদের সঙ্গে নিয়ে বাধা দেই। পুলিশকে বাধ্য করি লাশের ময়নাতদন্তের জন্য।
মামলার বর্তমান অবস্থা
আলফ্রেড সরেন হত্যার ঘটনায় তার ছোট বোন রেবেকা সরেন বাদী হয়ে হত্যা ও জননিরাপত্তা আইনে পৃথক দুটি মামলা করেন। মামলায় পুলিশ ৯১ আসামির নামে আদালতে চার্জশিট দেয়। এর মধ্যে পুলিশ কয়েকজন আসামিকে গ্রেপ্তার করে। ওই সময় নওগাঁ দায়রা জজ আদালতে মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয় এবং ৪১ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৩ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছিল। জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর জননিরাপত্তা আইন বাতিল করে। ওই সময় পলাতক শীতেষ চন্দ্র ভট্টাচার্য ওরফে গদাই (বর্তমানে প্রয়াত) ও হাতেম আলীসহ ৬০ জনের বেশি আসামি জননিরাপত্তা আইনের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট পিটিশন করলে মামলাটি হাইকোর্ট ৩ মাসের জন্য স্থগিত করে। এরপর আসামিরা জামিনে বেরিয়ে আসে।
মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী মহসীন রেজা বলেন, ‘আলফ্রেড সরেনকে হত্যার পর তার বোন রেবেকা সরেন মহাদেবপুর থানায় হত্যা মামলা করেন। ওই মামলার তদন্ত চলাকালে আলফ্রেডের বড় ভাই জননিরাপত্তা আইনে আরেকটি মামলা করেন। পরবর্তীতে দুটি মামলা একসঙ্গে তদন্ত করে একটি অভিযোগপত্র দেয়া হয়।
‘নওগাঁ জেলা জজ আদালতে মামলার বিচার কার্যক্রম শুরু হলে আসামিরা জননিরাপত্তা আইনের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করে। পরবর্তীতে এই রিটগুলো খারিজ হয়ে গেলে আলফ্রেড হত্যার বিচার কার্যক্রম চলতে থাকে। আসামিরা হাইকোর্টে রিটের খারিজের আদেশের বিরুদ্ধে আপিলেট ডিভিশনে মোকদ্দমা আনে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আপিলেট ডিভিশনে সে মোকদ্দমা শুনানি শেষে আপিল ডিভিশনের বিচারক পুনরায় সেই রিটগুলো শুনানির জন্য হাইকোর্টে পাঠান। রিটগুলো হাইকোর্টে শুনানির জন্য অপেক্ষমাণ রয়েছে। আর আলফ্রেড হত্যার বিচার কার্যক্রম বর্তমানে নওগাঁর দায়রা জজ আদালতে স্থগিত অবস্থায় রয়েছে।
রেবেকা সরেন যা বললেন
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় আলফ্রেড সরেন হত্যা মামলার বাদী ও আলফ্রেডের ছোট বোন রেবেকা সরেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘২০০০ সালের ১৮ আগস্ট আমার ভাইকে ভূমিদস্যুরা নির্মমভাবে চাইনিজ কুড়াল ও রামদা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে ছিলেন হাতেম ও গদাই। ‘এই হত্যার পর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করি ও আমার বড় দাদা জননিরাপত্তা আইনে আরেকটি মামলা করেন। এই ঘটনার সময় যে পরিবারগুলো বসবাস করত তারা মামলার সাক্ষী হওয়ায় তাদেরকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়া হতো। জীবনের ভয়ে তারা পল্লি ছেড়ে বিভিন্ন জায়গায় চলে গেছে।’
রেবেকা বলেন, ‘২০১২ সালে আমার ছোট ভাইকেও একইভাবে মেরে ফেলার চেষ্টা করা হয়। তারা এখনও আমাদের ওপর বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। আর মাথা উঁচু করে ঘুরে বেড়াচ্ছে। যে জমির জন্য আমার ভাইকে হত্যা করা হয়েছে সে জমিগুলোও তারা দখল করে খাচ্ছে।’
কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আমার ভাইকে হত্যার পর মা-বাবা পাগলের মতো হয়ে যান। সেভাবেই তারা মারা গেছেন। হত্যাকাণ্ডের ২২ বছর পরও আমরা বিচার পাইনি। বিচার পাব কি না তা নিয়েও আমরা সংশয়ে আছি। একটি স্বাধীন দেশে আমরা কখনও এমনটা ভাবতে পারিনি। যারা আমার ভাইকে হত্যা করেছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি জানাচ্ছি।’
কথা হলে আদিবাসী অধিকার কর্মী আজাদ হোসেন মুরাদ বলেন, আলফ্রেড সরেন আদিবাসী সম্প্রদায়ের অধিকার আদায়ের জন্য কাজ করতেন। ভূমিদস্যুদের হামলায় তিনি নিহত হন। এই হত্যাকাণ্ডের বিচার আজও সম্পন্ন হয়নি, যা নিয়ে আদিবাসী সংগঠন ও স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা রয়েছে। অবিলম্ব আলফ্রেড হত্যার বিচার দাবি করছি।
বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের থাবা দিন দিন গভীর হচ্ছে। লবণাক্ততা, ঘূর্ণিঝড়, এবং মৎস্য সম্পদের হ্রাসের মুখে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জীবিকা আজ হুমকির সম্মুখীন। কিন্তু এই সংকটের মাঝেই জেগে উঠেছে এক অনন্য সম্ভাবনা—সামুদ্রিক শৈবাল চাষ। পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ফিশারিজ বায়োলজি অ্যান্ড জেনেটিক্স ডিপার্টমেন্ট এবং AIRD-এর যৌথ উদ্যোগে (পাইলটিং স্মল স্কেল ম্যাক্রোঅ্যালগি কালচার ফর আমেলিওরেটিং লিভলিহুড অফ কোস্টাল কমিউনিটিস অ্যান্ড এড্রেসিং কার্বন ডাই অক্সাইড রেমিডেশন ”) প্রকল্প শুধু অর্থনৈতিক মুক্তিই আনবে না, জলবায়ু সংকট মোকাবেলায়ও রাখতে পারে অনন্য অবদান।
বাংলাদেশের ৭১০ কিলোমিটার দীর্ঘ উপকূলীয় এলাকা এবং ২৫,০০০ বর্গকিলোমিটার উপকূলীয় জলরাশি সীউইড চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। বর্তমানে দেশে প্রায় ২০০ প্রজাতির সীউইড পাওয়া যায়, যার মধ্যে ১৯টি বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে উলভা ইনটেসটিনালিস (Ulva intestinalis) (স্থানীয়ভাবে “ডেললা”) অন্যতম, যা সহজে চাষযোগ্য এবং পুষ্টিগুণে ভরপুর। এটি দ্রুত বৃদ্ধি পায়, লবণাক্ত পানিতে টিকে থাকে এবং পরিবেশ থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে।
প্রধান গবেষক ড. মো. রাজীব সরকারের মতে, " সামুদ্রিক শৈবাল কে আমি সামুদ্রিক সবজি বলে থাকি কারণ এটি উচ্চ মানের প্রোটিন, ভিটামিন , মিনারেলস থাকে। এখানে থাকা এন্টি অক্সিডেন্ট এর কারণে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। সীউইড থেকে বায়োপ্লাস্টিক, বায়োডিসেল তৈরি করা যায় , এই লক্ষে আমরা প্রকল্পে সীউইড থেকে কিছু ভ্যালু এডেড প্রোডাক্ট তৈরি করি। যার পুষ্টিগুণ অনেক বেশি বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে আয়রন এর অভাব পূরণ করে এবং মানুষের মানসিক হতাশা দূর করে, এছাড়াও প্রতি কেজি শুকনো শৈবাল ০.৫ কেজি কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে।”
প্রকল্পের সাইট হিসেবে বরগুনার কুয়াকাটা, লেবুরচর, গঙ্গামতি ও চোরপাড়া অঞ্চলে রশি ও জালের মাধ্যমে শৈবাল চাষ করা হয়, যেখানে স্থানীয় জেলেরা সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। তার মধ্যে গঙ্গামতি ও লেবুরচরে শৈবালের ফলন সবচেয়ে বেশি ।এই শৈবাল চাষের পদ্ধতি অনেক সহজ কারণ এতে জমি বা রাসায়নিক সারের প্রয়োজন নেই।
এই উলভা শৈবালের গুঁড়া থেকে তৈরি হচ্ছে নানা রকম মূল্য সংযোজিত পণ্য, যা স্থানীয় অর্থনীতিকে নতুন গতি দিতে পারে। তারই পরিপেক্ষিতে তারা তৈরি করেছে নানা রকম পুষ্টি গুণ সমৃদ্ধ খাবার সহ ব্যবহারিক জিনিস পত্র যেমন নরি শিট; এটি জাপানি সুশিতে ব্যবহৃত হয় ও প্রোটিনসমৃদ্ধ । সেই সাথে রপ্তানির বিশাল সুযোগ রয়েছে। সীউইড ট্যাবলেট; আয়োডিন, আয়রন, ভিটামিন 12 ও খনিজ সমৃদ্ধ এই ট্যাবলেট হজম ও থাইরয়েড হরমোন ব্যালান্স করতে সাহায্য করে।
সীউইড আইসক্রিম; ২৫% দুধের পরিবর্তে উলভা ব্যবহার করে খনিজ সমৃদ্ধ ও স্বাস্থ্যকর এই খাবার টি শহুরে স্বাস্থ্যসচেতন দের কাছে এটি জনপ্রিয় হতে পারে। এছাড়া আরো তৈরি করা হয়েছে সীউইড দিয়ে বিস্কুট, জিলাপি, মিষ্টি, রোল সহ সাবান ও ফেসপ্যাক; যা স্থানীয় বাজার ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মে এসব পণ্যের ব্যপক চাহিদা হতে পারে। পরীক্ষামূলক ভাবে এসব পণ্য ব্যবহার করে সুফল ও পাওয়া গেছে। ফেসপ্যাক ব্যবহার করে এক শিক্ষার্থী মাহজাবিন বলেন, "এটি ব্যবহারে ত্বক নরম ও মসৃণ থাকে, সেই সাথে ত্বক ঠান্ডা থাকে" ।
বিভিন্ন খাবারের টেস্ট পর্যবেক্ষণ করে শিক্ষার্থীরা এই পণ্যগুলোর ব্যাপারে অনেক সম্ভাবনার কথা ব্যক্ত করেন। আশিকুর রহমান নামে এক শিক্ষার্থী জানান, "আমি সীউইড সম্পর্কে আগে শুনেছি, এখন খেয়ে দেখলাম আসলেই এগুলোর স্বাদ অতুলনীয়, এগুলো বাজারে আসলে ভালো মার্কেট চাহিদা পাবে বলে আমি আশাবাদী, সেই সাথে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে বলে আমি মনে করি .."।।
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সীউইড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সীউইড চাষের মাধ্যমে প্রতি কেজিতে প্রায় ০.৭ কেজি কার্বন ডাই অক্সাইড শোষিত হয়। এটি “ব্লু কার্বন ” ধারণার অন্তর্ভুক্ত, যেখানে সামুদ্রিক উদ্ভিদ কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে জলবায়ু পরিবর্তন রোধে সহায়তা করে। সীউইড চাষে যুক্ত হয়ে লাভবান হতে পারবে স্থানীয় জেলে, নারী ও বেকার যুবকরা। UNDP, ILO, এবং Innovision Consulting-এর মতো সংস্থাগুলোর সহায়তায় প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি সরবরাহ করা হচ্ছে। কক্সবাজারে একটি ৪৫–৬০ দিনের চাষচক্রে একজন চাষি গড়ে ১২,০০০–১৫,০০০ টাকা আয় করছেন।এটি রপ্তানি করে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। বিশ্বে সীউইডের বাজার ২০২৮ সালের মধ্যে ২৬ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রকল্পটি এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে থাকলেও, এর সম্ভাবনা অফুরন্ত। AIRD-এর সহকারি গবেষক ড. মো. আরিফুল আলমের ভাষায়, "এই সীউইড গুলো উপকূলীয় এলাকায় বিশেষ করে কুয়াকাটা ও কক্সবাজারে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায় ও চাষের ব্যপক সম্ভাবনা আছে। সীউইডে থাকা ওমেগা 3 এবং ওমেগা 6 ফ্যাটি এসিড শিশুর মেধা বিকশিত করে,গ্যাস দূর করে, কোলেস্টেরল এর মাত্রা কমিয়ে দেয়। তাই এই সম্ভবনা সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে পারলে উপকূলীয় অঞ্চল হবে টেকসই উন্নয়নের রোল মডেল।”
সর্বোপরি উলভা শৈবাল শুধু একটি সবুজ উদ্ভিদ নয়—এটি উপকূলবাসীর জন্য আশার বার্তা বয়ে এনেছে। জলবায়ু সংকটের এই যুগে, প্রকৃতির সহজ সমাধানই হয়তো আমাদের রক্ষার শেষ অবলম্বন। সমুদ্র আজ শুধু মাছের ভাণ্ডার নয়, এটি হয়ে উঠতে পারে সবুজ অর্থনীতির নতুন চাবিকাঠি।
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ শরীফ আতিয়ার রহমান স্মৃতি পরিষদ গতকাল সোমবার (১৮ আগষ্ট) নড়াইলে দেড় হাজার রোগীকে বিনামূল্যে চক্ষুচিকিৎসাসেবা ও ৫০ জন রোগীর চোখে লেন্স সংযোজন করা হয়েছে ।
দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠান নড়াইল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের বিপরীতে আতিয়ার রহমানের নিজ বাসভভনে আয়োজন করা হয় । খুলনা বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতালের সহযোগিতায় প্রতি মাসের শেষ সোমবারে এই আয়োজন করা হয়ে থাকে ।
আয়োজকরা জানান, শরীফ আতিয়ার রহমান স্মৃতি পরিষদের উদ্যোগে প্রতিমাসের শেষ শুক্রবার বিনামূল্যে পারিবারিক চিকিৎসা, ওষুধ প্রদান, আইনি পরামর্শ, প্রেসার, রক্ত ও ডায়াবেটিস পরীক্ষার আয়োজন করা হয়। এছাড়া জেলার বিভিন্ন এলাকায় মেডিকেল ক্যাম্প ও চক্ষুশিবিরের আয়োজন করা হয়ে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় এবার বড় পরিসরে সোমবার বিনামূল্যে দেড় হাজার রোগির চক্ষুচিকিৎসা অনুষ্ঠিত হলো। এর মধ্যে বাছাই শেষে প্রথম পর্যায়ে ৫০ জনের চোখে লেন্স সংযোজন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বাকিদের ধাপে ধাপে চিকিৎসা দেয়া হবে।
এ চক্ষুক্যাম্পে উপস্থিত ছিলেন-জেলা প্রশাসক শারমিন আক্তার জাহান, সিভিল সার্জন ডাক্তার আব্দুর রশিদ, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম, জেলা জামায়াতে ইসলামীর কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা আলমগীর হুসাইন, সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বীরমুক্তিযোদ্ধা শরীফ হুমায়ুন কবীর, বিএনপি নেতা তবিবুর রহমান মনু জমাদ্দার, শরীফ আতিয়ার রহমান স্মৃতি পরিষদের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা এস এ মতিন, শরীফ আতিয়ার রহমানের বড় ছেলে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ডাক্তার শরীফ জাহাঙ্গীর আতীক প্রিন্স, ছোট ছেলে ডাক্তার শরীফ শামীম আতীক, খুলনা বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতালের চিকিৎসক ডাক্তার আসিফ হাসান ও ডাক্তার জোবায়ের রিয়াল, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি নড়াইল ইউনিটের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী ইসমাইল হোসেন লিটনসহ অনেকে।
দুলাল হোসেন বয়স (৫০)। বিয়ের পাঁচ মাসের মাথায় স্ত্রী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। এরপর হত্যা মামলায় ২৩ বছর সাজা ভোগ করে চলতি বছরের গত ২ জুলাই মুক্তি পেয়েছেন দুলাল হোসেন। ঐ মামলায় ২৫ বছর বয়সে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছিলেন দুলাল।
সোমবার (১৮ আগষ্ট) দুপুরে জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল আউয়াল দুলাল হোসেন কে নতুন একটি মুদি দোকান উপহার হিসাবে দেয়।
দীর্ঘ সময় তার জীবন থেকে হারিয়ে গেছে অনেক কিছু। তবে জেলের ভেতরেই গড়ে তোলেন আরেক পৃথিবী। কারাগারের শৃঙ্খলা মেনে চলা এবং দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করায় মুক্তির পর নিজ গ্রামে নতুন মুদি দোকান পেয়েছেন দুলাল।
দুলালকে পুনর্বাসন করতে নওগাঁ জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল আউয়ালের উদ্যোগে একটি মুদি দোকান উপহার দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে মূলধন হিসেবে নগদ টাকা ও বসবাসের জন্য একটি বাড়িও দেওয়া হবে তাকে।
দুলাল হোসেন নওগাঁ জেলার বদলগাছী উপজেলার বালুভরা ইউনিয়নের বারাতৈল গ্রামের মৃত ইয়াকুব হোসেনের ছেলে।
দুলাল হোসেন বলেন, “পারিবারিক কলহের জেরে স্ত্রী আত্মহত্যা করে। পরে শ্বশুরের দেওয়া হত্যা মামলায় ২০০২ সালে জেল হয় তার। সেই মামলায় ২৫ বছর বয়সে যাবজ্জীবন জেল হয় তার। এরপর ১৪ বছর রাজশাহী জেলা কারাগারে বন্দীদের (সিআইডি) হিসাবে কাজ করেন। বন্দীরা গোপনে কি পরিকল্পনা করছে তা দেখাশুনা করতেন তিনি। পরে নওগাঁ জেলা কারাগারে আসেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, মামলা চলাকালে আদালতে তাকে অনেক হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। উকিল খরচ ও মামলার অন্যান্য ব্যয় মেটাতে গিয়ে পরিবারের শেষ সম্বল জমিও বিক্রি করে দিতে হয়েছে। খরচ চালাতে ব্যর্থ হয়ে একসময় বিচারের আশা ছেড়ে দেন স্বজনরা।
একটা সময় জেলখানায় তাকে আর কেউ দেখতেও আসত না। মাঝে মাঝে মা আয়েশা কিছু টাকা দিয়ে আসলেও, তিনি তা খরচ করতেন না। এসব কথা বলতে গিয়ে বারবার কান্নায় ভেঙে পরেন দুলাল”।
তবে দায়িত্বশীল আচরণ ও শৃঙ্খলা মেনে চলার কারণে কারাগারে সুনাম ছিল দুলালের। কারাগারে বন্দীদের দেখাশুনা করতেন তিনি। এভাবেই কারাগারে ২৩ বছর অতিবাহিত হয় তার।
জেল থেকে মুক্ত হয়ে আগামী জীবনে কি করে চলবেন, তা নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় পরেন দুলাল। জীবনের এ পর্যায়ে এসে সহযোগিতা ছাড়া সমাজে আর প্রতিষ্ঠিত হওয়া সম্ভব নয়। তাই জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার আগে বিকল্প কর্মসংস্থান হিসেবে মুদি দোকান করবেন বলে ঠিক করেন তিনি। এরপর সেই আবদার তুলে ধরেন নওগাঁ জেলা প্রশাসক আব্দুল আউয়ালের কাছে।
স্থানীয় গ্রামবাসিরা বলেন, “দুলাল তার জীবনের ২৩ বছর জেল খানাতে ব্যয় করেছে। তার ভিটেমাটি কিছুই নাই। সে কোথায় থাকবে। যদি তাকে বসবাসের জন্য ডিসি সাহেব একটি ঘর দেয়,তাহলে দুলাল বসবাস করে থাকতে পারবে”।
দুলালের মা আয়েশা বলেন, “আমি ছেলেকে ফিরে পেয়ে আমি খুবই খুশি। আমার ছেলেকে একটি বাড়ি তৈরী করে দিলে মাথা গোঁজার ঠাই হবে”।
নওগাঁ জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল আউয়াল বলেন, “সমাজে প্রতিটি মানুষের সুন্দরভাবে বাঁচার অধিকার ও প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্ন থাকে। দুলালের জীবন থেকে ২৩টি বছর ঝড়ে গেছে। দুলাল হোসেন আগামীতে যাতে কোনো অপরাধে জড়িয়ে না পড়েন, সে জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তা দেওয়া হয়েছে। আজকে দুলাল কে মুদি দোকান উপহার হিসাবে দেওয়া হয়েছে”।
বরগুনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংশ্লিষ্ট তিন শতাধিক বই পুড়িয়ে দিয়েছে শিক্ষার্থীরা।
সোমবার (১৮ আগস্ট) দুপুরে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এর মুল ফটকের সামনে শিক্ষার্থীরা বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনাকে নিয়ে লেখা জীবনী, গবেষণা ও রাজনৈতিক ইতিহাস ভিত্তিক বইগুলো একত্র করে আগুন ধরিয়ে দেয়।
শিক্ষার্থীদের দাবি, ৫ আগস্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর সারাদেশ থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ও শেখ হাসিনাসহ স্বৈরাচারের সকল স্মৃতি চিহ্ন মুছে ফেলা হয়েছে। শিক্ষকরা আমাদেরকে বলেছিলো তারা আমাদের লাইব্রেরি থেকে তাদের সকল বই ফেলে দিয়েছে কিন্তু আজ আমরা দেখলাম সেই বইগুলো এখনো বিদ্যমান রয়েছে। তাই ক্ষুব্দ শিক্ষার্থীরা লাইব্রেরি থেকে বই গুলো এনে পুড়িয়ে ফেলেছে।
তারা আরো বলেন, প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের অবহেলা এবং লাইব্রেরিতে পাঠ্যবইয়ের সংকটের মধ্যেও রাজনৈতিক বই দিয়ে তাক ভরে রাখা হয়েছে। এসব বই তাদের কোনো কাজে আসে না।
এ বিষয়ে বরগুনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত অনিল চন্দ্র কির্ত্তনীয়া বলেন, আমি স্টেশনে নাই তবে শুনতে পেয়েছি শিক্ষার্থী বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনা সংশ্লিষ্ট কিছু বই পুড়িয়ে দিয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ৫ আগস্ট পরবর্তী সময় সকল বই সরিয়ে ফেলা হয়েছে বলে আমি জানতাম। লাইব্রেরিয়ান দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ থাকায় লাইব্রেরিতে কোন বই ছিলো কিনা সেটা আমার জানা ছিলো না।
চুরি করে ধরা পড়া, গ্রামে সাব্যস্ত হওয়া এবং ৬০ হাজার টাকা জরিমানা গুনতে হওয়া—এসবের প্রতিশোধ নিতে গিয়ে আপন খালুকেই গলা কেটে হত্যা করল ভাতিজা! এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ডে জড়িত ১০ম শ্রেণির ছাত্র রিফাত মন্ডল সিফাতকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
সোমবার (১৮ আগস্ট) বিকেল ৩ টায় মোবাইল ফোনে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গোবিন্দগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বুলবুল আহমেদ।
এরআগে একইদিন ভোররাতে গাইবান্ধা শহরের মাষ্টার পাড়ার নিউ মেরিট কোচিং সেন্টারের মেস থেকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাকে গ্রেফতার করে গোবিন্দগঞ্জ থানা পুলিশ।
গ্রেফতারকৃত সিফাত (১৬) একই উপজেলার একই গ্রামের ছামিউল ইসলাম ছানার ছেলে এবং নাকইহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
হত্যার শিকার নজরুল ইসলাম (নজির) ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী অঙ্গসংগঠন শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের শীতলগ্রাম ওয়ার্ড সভাপতি। তিনি নগদ-বিকাশ সেবার পাশাপাশি পান ব্যবসার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, প্রায় দেড় মাস আগে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার শীতলগ্রামের জামায়াত নেতা নজরুল ইসলামের বিকাশ দোকানে চুরি হয়। স্থানীয় সালিশে প্রমাণিত হয় চুরির সঙ্গে জড়িত ছিলেন নজরুল ইসলামের আপন শালীর ছেলে সিফাত (১৬)।তখন সিফাতের পরিবারকে ৬০ হাজার টাকা জরিমানা গুনতে হয়।
গোবিন্দগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বুলবুল আহমেদ বলেন, আজ ভোর রাতে গাইবান্ধা শহরের একটি কোচিং সেন্টারের ম্যাস থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে সিফাতকে।
পরে তার দেওয়া তথ্যে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত চুরি ও লুট করা নজরুল ইসলামেরুটি ফোন উদ্ধার করা হয়েছে।
এসময় অভিযুক্তের স্বীকারোক্তির বরাতে ওসি বলেন, চোর সনাক্তের ঘটনাতেই ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিশোধ নেওয়ার পরিকল্পনা করে সিফাত। অবশেষে গত ১৬ আগস্ট রাতে খালু নজরুল ইসলামকে (নজির) গলা কেটে নির্মমভাবে হত্যা করে রাস্তায় ফেলে যায়। নজরুল ইসলাম সিফাতের আপন খালু হয়।
ওসি আরো বলেন, ঘটনার সাথে আরো কেউ জড়িত আছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত ১৬ আগস্ট শনিবার রাতে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার নাকাই ইউনিয়নের শীতলগ্রাম এলাকায় জামায়াত নেতা নজরুল ইসলামকে গলা কেটে রাস্তায় ফেলে রাখা হয়। পরদিন ১৭ আগস্ট সকালে নজরুল ইসলামের গলাকাটা মরদেহ দেখে পুলিশে খবর দেয় স্থানীয়রা। পরে পুলিশ গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় একইদিন গোবিন্দগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা করে জামায়াত নেতার পরিবার।
“অভয়াশ্রম গড়ে তুলি,দেশি মাছে দেশ ভরি” প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে সারাদেশের মতো পিরোজপুরেও পালিত হয়েছে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ। সোমবার (১৮ আগস্ট) সকাল ১১টায় জেলা প্রশাসক ও মৎস্য অধিদপ্তরের আয়োজনে রিজার্ভ পুকুরে মাছ অবমুক্তকরণের মাধ্যমে কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়।
পরে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে শোভাযাত্রা বের হয়ে শিল্পকলা একাডেমিতে গিয়ে শেষ হয়।এরপরে জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
উক্ত কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন - পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফুল আলম খান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন - পুলিশ সুপার খান মোহাম্মদ আবু নাসের, জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা.মোঃ রানা মিয়া,জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যক্ষ আলমগীর হোসেন,সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মামুনুর রশীদ।
এছাড়া উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও মৎস্যজীবীরা।
সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা সঞ্জীব সন্নামত।
অনুষ্ঠানে বক্তারা সরকারী নির্দেশনা মেনে চলার আহ্বান জানান এবং অবৈধ জাল ব্যবহার না করা, নিষিদ্ধ সময়ে মাছ ধরা থেকে বিরত থাকা ও মৎস্যজীবীদের উন্নয়নে বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনার উপর আলোকপাত করেন।
সবশেষে পিরোজপুর জেলার তিনজন সফল মৎস্যচাষীকে সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করেন।
নোয়াখালী সোনাইমুড়ীতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসরিন আক্তারের নির্দেশে ভন্ড কবিরাজ মানিক খোনারের আস্তানায় অভিযান চালিয়ে সিলগালা করে দিয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার ইসরাত জাহান।
সোমবার ১৮ আগস্ট বেলা ১২টার দিকে উপজেলার হাটগাঁও গ্রামে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়।
জানা যায়, উপজেলার হাটগাঁও গ্রামের মৃত মোজাফফর হোসেনের পুত্র আব্দুল মালেক ওরফে মানিক মানিক খোনার বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা দেওয়ার নামে প্রতারণা করে আসছে। বিগত ৯ বছর হতে ক্যান্সার ডায়াবেটিক পলিপাস, সংসারে অমিল, বিয়ে না হওয়া, আপস, সহ বিভিন্ন ধরনের জটিল ও কঠিন রোগে সারিয়ে দেয়ার আশ্বাসে দিয়ে নিরীহ জনসাধারণ থেকে বিপুল অংকের টাকা হাতিয়ে নেন।
এর পূর্বেও তার আস্তানায় অভিযান চালিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার টিনা পাল, ডক্টর রহিমা খাতুন ও রবিউল ফয়সাল নগদ অর্থ জরিমানা ও মোসলেকা নেন।
উপজেলার হাটগাঁও গ্রামের মৃত আনোয়ার হোসেনের পুত্র ভুক্তভোগী নুরুন্নবী নোয়াখালী জেলা সিভিল সার্জনের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন।এর ভিত্তিতে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
জুলাই অভ্যুত্থানবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯ শিক্ষক, ১১ কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ৩১ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটি।
সোমবার (১৮ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মনজুরুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, অভিযুক্ত ১৯ জন শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দেওয়া হয়েছে। কেন তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তা আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে জানাতে বলা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মনজুরুল ইসলাম বলেন, ‘জুলাই-আগস্টে সংঘটিত অভ্যুত্থানের সময় যেসব শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা বিরোধী ভূমিকায় ছিলেন, তাদের চিহ্নিত করতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। ওই কমিটির প্রতিবেদনে ১৯ জন শিক্ষকের নাম উঠে এসেছে। সেজন্য শোকজ নোটিশ দিয়ে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে তাদের।’
জানা গেছে ১৯ শিক্ষকের নাম, তাদের মধ্যে— অধ্যাপক ড. মিয়া মো. রাসিদুজ্জামান (ইংরেজি), অধ্যাপক ড. এ এইচ এম আক্তারুল ইসলাম (ইংরেজি), সহযোগী অধ্যাপক ড. আফরোজা বানু (ইংরেজি), অধ্যাপক ড. মো. বাকী বিল্লাহ (বাংলা), অধ্যাপক ড. রবিউল হোসেন (বাংলা), সহকারী অধ্যাপক মো. মাজেদুল হক (মার্কেটিং), সহকারী অধ্যাপক শহিদুল ইসলাম (হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট), অধ্যাপক ড. মাহবুবুল আরফিন (ব্যবস্থাপনা), অধ্যাপক ড. কাজী আখতার হোসেন (হিসাব বিজ্ঞান ও তথ্যপদ্ধতি), অধ্যাপক ড. শেলীনা নাসরীন (হিসাব বিজ্ঞান ও তথ্যপদ্ধতি), অধ্যাপক ড. দেবাশীষ শর্মা (অর্থনীতি), সহযোগী অধ্যাপক জয়শ্রী সেন (কম্পিউটার সাইন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং), অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমান (ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং), অধ্যাপক ড. তপন কুমার জোদ্দার (ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি), অধ্যাপক ড. পরেশ চন্দ্র বর্মন (ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি), অধ্যাপক ড. মো. আমজাদ হোসেন (আল ফিকাহ এন্ড ল), আইন অধ্যাপক ড. বেরা মণ্ডল (আইন), অধ্যাপক ড. শাহজাহান মণ্ডল (আইন), সহকারী অধ্যাপক মো. মেহেদী হাসান (ল এন্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট)।
উল্লেখ্য, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিপক্ষে ভূমিকা রাখা শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের চিহ্নিত করতে গত ১৬ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ৫ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি করে। কমিটিকে ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার কথা থাকলেও সময় বাড়িয়ে গত ১৩ আগস্ট উপাচার্যের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদনে মোট ৬১ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জে রূপগঞ্জের পূর্বাচল উপশহরের অবৈধ বালুর গদিতে উচ্ছেদে অভিযান চালিয়ে উপজেলা প্রশাসন। সোমবার বেলা ১১ টা থেকে দুপুর ৩ টা পর্যন্ত পূর্বাচল নতুন শহরের ৪ নং সেক্টরে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেড ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জয়’র নেতৃত্বে এ অভিযান চালানো হয়।
অভিযানে ৪ নং সেক্টরে রাজউকের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে গড়ে তোলা বালুর গদির অফিস ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। এছাড়া ৯ টি বালুর গদিতে থাকা বালু খোলা বাজারে নিলামে দেড় লাখ টাকা বিক্রি করা হয়।
এ সময় একই সেক্টরে অবৈধভাবে বসানো শিমুলিয়া গরুর হাট অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাছবীর হোসেন, রূপগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ তরিকুল ইসলাম, রাউজউকের কর্মকর্তাসহ বিপুল সংখ্যক আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্য।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জয় বলেন, গত কয়েকমাস ধরে একটি মহল পূর্বাচল ৪, ১৩ ও ১৪ নম্বর সেক্টরে রাজউকের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জোরপুর্বক অবৈধ বালুগদি তৈরী করে ব্যবসা করে আসছে। এতে এসব সেক্টরের সড়ক গুলোর বিভিন্নস্থানে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিনিয়ত ঘটছে দূর্ঘটনা। এমনকি এসব বালুর গদির পানি ও বালু পানি নিস্কাশনের ড্রেন ভরাট করে ফেলায় স্কুলে পানি ডুকে লেখাপড়ার বিঘ্ন সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ আসে। এ ছাড়া রাজউক থেকে এসব বালুর গদি অপসারনের জন্য উপজেলা প্রশাসনের বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। আজকে ৪ নম্বর সেক্টরের বালুর গদি গুলোর অফিস ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। ৯ টি বালুর গদির বালু নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। আগামী ১৫ সপ্তাহের মধ্যে এসব বালু সেখান থেকে সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ অভিযান অব্যাহতভাবে চলবে।