বেকার ছেলেকে বিদেশে পাঠানোর পরিকল্পনা করেছিলেন কুমিল্লার মিলন হোসেন। পূর্ব পরিচিত দক্ষিণ আফ্রিকাপ্রবাসী আল আমীনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাকে চট্টগ্রামের শফিউল আলম ও ঢাকার পল্টন এলাকার নুর আলমের সঙ্গে দেখা করতে বলেন আল আমীন। শফিউল ও নুর আলম তার ছেলেকে ৩ লাখ টাকায় দক্ষিণ আফ্রিকা পাঠানোর নিশ্চয়তা দেন। তারপর এক দিন পাসপোর্টসহ ছেলে রিয়াজ হোসেন পাটোয়ারীকে তুলে দেন শফিউল ও নুর আলমের হাতে। তারপর থেকেই যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায় ছেলের সঙ্গে। যোগাযোগ বন্ধ করে দেন শফিউল আলম, নুর আলম এবং আল আমিনও।
মাস তিনেক পর হঠাৎ ছেলে রিয়াজ তাকে ফোন করে জানান, আফ্রিকার সীমান্তবর্তী একটি জঙ্গলে তাকে আটকে রেখে নির্যাতন করছে মানব পাচার ও অপহরণকারীদের আন্তর্জাতিক একটি চক্র। এই চক্রকে ৬ হাজার ডলার না দিলে তাকে মেরে ফেলবে। ব্যবসায়ী মিলন হোসেন বুঝতে পারেন বিদেশে পাঠানোর নামে নিজেই ছেলেকে মানব পাচার ও অপহরণকারী চক্রের হাতে তুলে দিয়েছেন।
ছেলের ফোন পাওয়ার পর অপহরণকারী চক্রের কথামতো আবারও দেখা করেন সেই শফিউল আলমের সঙ্গে। হাতে তুলে দেন ৫ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। টাকা পেয়ে আবারও আত্মগোপনে চলে যান শফিউল। শেষে বাধ্য হয়ে পুলিশের কাছে যান মিলন। গত বছরের ১৩ আগস্ট রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানায় ছেলেকে পাচারের অভিযোগে একটি মামলা করেন মিলন হোসেন।
মানব পাচারের এই মামলা তদন্ত করতে গিয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) জানতে পারে, পাঁচ বার হাত বদল হয়ে রিয়াজকে পাচার করা হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকায়। পাচারকারী ও অপহরণকারী চক্র আরও টাকার জন্য দক্ষিণ আফ্রিকার সীমান্তে তাকে আটকে রেখে মুক্তিপণের টাকা নিয়েছে। পরে ডিবির ডেমরা জোনাল টিম অভিযান চালিয়ে চক্রের দুই সদস্য শফিউল আলম ও রুহুল আমীন চঞ্চলকে গ্রেপ্তার করে।
মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্টরা দৈনিক বাংলাকে জানান, জিজ্ঞাসাবাদে শফিউল ও চঞ্চল জানিয়েছে তারা রিয়াজকে প্রথমে ঢাকা থেকে দুবাই নিয়ে যান। দুবাইয়ে নিয়ে তাকে আন্তর্জাতিক পাচার ও অপহরণ চক্রের আরেক সদস্য এজাজের হাতে তুলে দেয়া হয়। এজাজ তাকে দুবাই থেকে কেনিয়ার নাইরোবি নিয়ে চক্রের আরেক সদস্যের হাতে তুলে দেয়। তারা নাইরোবি থেকে রিয়াজকে মোজাম্বিকে নিয়ে যায়। সেখান থেকে আরেক হাত বদল হয়ে রিয়াজকে নিয়ে যাওয়া হয় দক্ষিণ আফ্রিকার সীমান্তবর্তী দেশ সোয়াজিল্যান্ড বা ইসোয়াতিনিতে। সেখানে সাঈদ নামে চক্রের আরেক সদস্য তাকে দক্ষিণ আফ্রিকার সীমান্তে নিয়ে চক্রের আরেক সদস্য পাকিস্তানি নাগরিক আমীরের হাতে তুলে দেয়। আমীর তাকে নিয়ে সীমান্তবর্তী একটি এলাকায় আটকে রেখে মুক্তিপণের জন্য নির্যাতন শুরু করে। রিয়াজকে দিয়ে তার বাবাকে ফোন করিয়ে মুক্তিপণের জন্য ৬ হাজার ডলার দাবি করে। আমীরের কথামতো ৬ হাজার ডলারের সমপরিমাণ অর্থ চক্রের দেশীয় এজেন্ট শফিউলের হাতে তুলে দিতে বাধ্য হন রিয়াজের বাবা।
ঢাকা মহানগর ডিবির অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার আজহারুল ইসলাম মুকুল জানান, দক্ষিণ আফ্রিকায় মানব পাচারের ক্ষেত্রে চক্রটি সাধারণত ঢাকা-দুবাই বা ঢাকা-কাতার রুট ব্যবহার করে। ঢাকা থেকে দুবাই বা কাতার হয়ে কেনিয়া, তানজিনিয়া বা মোজাম্বিকে নেওয়া হয়। কারণ এসব দেশে বাংলাদেশের নাগরিকদের অন অ্যারাইভাল ভিসা নিয়ে প্রবেশের সুযোগ আছে। শুধুমাত্র কোনো একটি হোটেল বুকিং করতে পারলেই ওইসব দেশে প্রবেশ করা সহজ। সেখান থেকে সড়ক পথে বা নদী পার হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় নেওয়া হয়।
গোয়েন্দা পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘দক্ষিণ আফ্রিকায় আন্তর্জাতিক মানব পাচার ও অপহরণকারী চক্রে বাংলাদেশি নাগরিকেরাই বেশি সম্পৃক্ত। এ ছাড়া স্থানীয় ও পাকিস্তানি নাগরিকদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে এসব অপকর্ম করে থাকে।’
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা জানান, গত বছরের শেষের দিকে মানব পাচার ও অপহরণকারী চক্রের কবলে থাকা ২৫ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠিয়েছিল দেশটির ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তারা ফিরতি পথে ইথিওপিয়া গিয়ে আবারও চক্রের হাতে আটকা পড়ে। ইথিওপিয়াতে তাদের আটকে রেখে নির্যাতন করে অনেকের পরিবারের কাছ থেকে টাকা আদায় করে চক্রটি। চলতি বছরের জানুয়ারিতে তারা ওই চক্রের হাত থেকে মুক্তি পেয়ে দেশে ফিরে আসে।
তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা জানান, দক্ষিণ আফ্রিকায় মানব পাচারের অসংখ্য ঘটনার একটি রিয়াজ। অনেকেই এই চক্রের কবলে পড়ে আফ্রিকা যাচ্ছেন। চক্রের সদস্যরা দক্ষিণ আফ্রিকায় ভালো কাজের প্রলোভন দেখিয়ে বিদেশে যেতে ইচ্ছুকদের সেখানে পাচার করে।
চক্রটির মূল উদ্দেশ্যই থাকে আফ্রিকার সীমান্তে নিয়ে আটকে রেখে নির্যাতন করে পরিবারের কাছ থেকে বিপুল অর্থ আদায় করা। ঘটনাস্থল ভিন্ন দেশ হওয়ার কারণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও তাদের সহজেই শনাক্ত বা গ্রেপ্তার করতে পারে না।
তবে আলোচিত এই মামলার তদন্ত করতে পাঁচ সদস্যের পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেটের একটি যৌথ দল দক্ষিণ আফ্রিকায় যাচ্ছে।
তদন্তে পাঁচ সদস্যের পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেট দল
ঢাকা মহানগর ডিবি কর্মকর্তারা জানান, আলোচিত এই ঘটনায় বাংলাদেশের পাশাপাশি দক্ষিণ আফ্রিকায়ও মানব পাচার-সংক্রান্ত একটি মামলা হয়েছে। দেশে গ্রেপ্তার আসামিদের শাস্তি নিশ্চিত করতে তদন্ত দলটি দক্ষিণ আফ্রিকায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন, পাচার ও অপহরণের শিকার রিয়াজের জবানবন্দি গ্রহণ ও আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থার (ইন্টারপোল) সহায়তায় আসামিদের বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজখবর নেবে।
২২ সেপ্টেম্বর ১০ দিনের জন্য দক্ষিণ আফ্রিকা যাবেন ঢাকা মহানগর ডিবির সাবেক যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম (ডিআইজি হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নে পদায়িত), ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার মোহাম্মদ আশরাফ হোসেন, অতিরিক্ত উপকমিশনার আজহারুল ইসলাম মুকুল, তদন্ত কর্মকর্তা এসআই কামরুজ্জামান ও মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশিদ।
তদন্ত দলের একজন সদস্য দৈনিক বাংলাকে জানান, তারা এই মামলার তদন্তের পাশাপাশি সেখানে মানব পাচার ও অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় চক্রের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করবেন। এ ছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকায় মাদারীপুরের এক বাসিন্দাকে অপহরণ ও হত্যার একটি মামলাও তাদের কাছে তদন্তাধীন আছে। আদালতের অনুমতি নিয়ে ওই মামলারও তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করবেন তারা।
এ ছাড়া সরেজমিনে ভুক্তভোগী, দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রবাসী বাংলাদেশিসহ স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে তারা চক্রের সদস্যদের একটি তালিকা তৈরির চেষ্টা করবেন। এটি করা গেলে দক্ষিণ আফ্রিকায় কেউ মানব পাচার বা অপহরণের শিকার হলে তাৎক্ষণিকভাবে অপরাধীদের দেশীয় এজেন্টদের শনাক্ত করা যাবে। ইন্টারপোল তাদের এই তদন্তে সার্বক্ষণিক সহায়তা করবে।
তদন্ত তদারক দলের সদস্য ও ঢাকা মহানগর ডিবির ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার মোহাম্মদ আশরাফ হোসেন বলেন, ‘আমরা দুটি মামলার তদন্তের জন্য দক্ষিণ আফ্রিকা যাচ্ছি। সেখানে ভিকটিমের সাক্ষ্য নেয়াসহ ওই দেশে অবস্থান করা আসামিদের বিষয়ে তথ্যানুসন্ধান করব।’
ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, ‘মানব পাচার মামলায় শাস্তির হার খুবই কম। যদি আমরা ঘটনার মূলে গিয়ে অনুসন্ধান বা তদন্ত করে যথাযথভাবে অভিযোগপত্র দিতে পারি তাহলে পাচারকারীদের শাস্তি নিশ্চিত করা যাবে। এ ছাড়া বিভিন্ন দেশের পাচারকারীদের মনেও ভয় ঢুকবে যে বাংলাদেশের পুলিশ বিদেশে গিয়ে তদন্ত করছে।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি পরিসংখ্যান বলছে, মানব পাচারের ঘটনায় দেশে প্রতি মাসে গড়ে অর্ধ শত মামলা হলেও বিচার শেষে সাজা খুবই কম। ২০২১ সালে একটি মামলায় দুজনের সাজা হয়েছে। বর্তমানে মানব পাচার-বিষয়ক প্রায় সাড়ে ৫ হাজার মামলা আদালতে বিচারাধীন অবস্থায় আছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, মানব পাচারের মামলায় অনেক সময় আসামি ও বাদীপক্ষ আপস করে ফেলে। তদন্তেও দুর্বলতা থাকে। এ ছাড়া সাক্ষীরাও আদালতে সাক্ষ্য দিতে চান না। এজন্য আদালতও আসামিদের দণ্ড দিতে পারেন না। এ জন্য মানব পাচারের মামলায় অভিযুক্তদের শাস্তি নিশ্চিত করতে তদন্তে প্রয়োজনীয় ও আইনগত সব ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা দিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
পাচার-অপহরণের পাশাপাশি খুনেরও শিকার বাংলাদেশিরা
দক্ষিণ আফ্রিকায় মানব পাচার, অপহরণের পর মুক্তিপণ আদায়ের পাশাপাশি খুনের শিকারও হচ্ছেন বাংলাদেশি নাগরিকেরা। প্রবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশের অনেক পলাতক সন্ত্রাসী আত্মগোপন করে আছেন। তারা প্রবাসী বাংলাদেশি এবং স্থানীয়দের নিয়ে সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তুলেছেন। মানব পাচারের পাশাপাশি সেখানে অবস্থানরত প্রবাসীদের অপহরণ করে মুক্তিপণও আদায় করছেন।
দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের সামাজিক সংগঠন মুক্ত বাংলার প্রতিষ্ঠাতা শফিকুল ইসলাম দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘চলতি বছরই দক্ষিণ আফ্রিকায় শতাধিক মানুষ পাচার, অপহরণ ও খুনের শিকার হয়েছেন। প্রবাসী হওয়ার কারণে স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তত বেশি গুরুত্বও দেয় না। আর বাংলাদেশের দূতাবাসের এসব নিয়ে আগ্রহ অনেক কম।’
গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর মাদারীপুরের বাসিন্দা রেজাউল আমান মোল্লা নামে এক প্রবাসীকে পুমালাঙ্গা এলাকা থেকে অপহরণ করা হয়। এর ১০ দিন পর ২৬ ডিসেম্বর প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরের ফান্ডারভেল পার্ক এলাকা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার হয়। অপহরণকারী চক্র তাকে হত্যার পর মরদেহ পুড়িয়ে ফেলার চেষ্টা করেছিল। ওই ঘটনায় দক্ষিণ আফ্রিকার পুলিশ চার বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তার করেছিল।
গত ২৬ আগস্ট দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউনের মিচেলসপ্লেন এলাকায় বসবাসরত মাদারীপুরের আক্তার প্রধানকে অপহরণ করা হয়। অপহরণকারী চক্র তাকে নির্মম নির্যাতনের ভিডিও করে পরিবারের কাছে পাঠিয়ে বিপুল পরিমাণ মুক্তিপণ দাবি করে। স্থানীয় প্রবাসীরা সেখানকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় তাকে উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছেন। এর মধ্যেই ৮ সেপ্টেম্বর সকালে কুইন্সটাউনের বাসিন্দা মুন্সীগঞ্জের আলামীন নামে এক তরুণকে অপহরণ করা হয়।
প্রবাসীরা জানান, চক্রের বাংলাদেশি সদস্যরা প্রথমে সখ্য গড়ে তুলে টার্গেটের অর্থবিত্ত সম্পর্কে খোঁজ নেয়। পরে চক্রের স্থানীয় সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে অপহরণ করে।
দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রবাসী অধিকারকর্মী এস এইচ মোহাম্মদ মোশারফ বলেন, ‘দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্তমানে যে দেড় লাখ বাংলাদেশি আছেন তার অধিকাংশই অবৈধ পথে আসা। মূলত এরাই অপহরণ বা খুনের শিকার হচ্ছেন। চলতি বছর দক্ষিণ আফ্রিকায় ৯১ জন প্রবাসী বাংলাদেশি মারা গেছেন, যার অধিকাংশই ডাকাতের হাতে খুন বা অপহরণের হত্যার শিকার হয়েছেন। এসব চক্রের সঙ্গে প্রবাসী বাংলাদেশিরাই জড়িত।’
অনুমোদিত ১,২০০ মেট্রিক টন ইলিশের মধ্যে সরবরাহ সীমিত থাকায় গত দুই দিনে মোট ৫৬.২৫ মেট্রিকটন ইলিশ রপ্তানি হয়েছে। এর মধ্যে গত মঙ্গলবার রাতে ৩৭.৪৬ মেট্রিক টন এবং বৃহস্পতিবার ১৮.৭৯ মেট্রিক টন ইলিশ ভারতে পাঠানো হয়েছে।
বেনাপোল মৎস্য কোয়ারেন্টিন অফিসার সজীব সাহা, মাছের স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে তাদের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আমরা নিশ্চিত করেছি যে রপ্তানির জন্য নির্বাচিত প্রতিটি ইলিশ স্বাস্থ্যসম্মত, রোগমুক্ত এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী যোগ্য। এই পরীক্ষা ও মান নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আমরা নিশ্চিত করতে চাই, যে প্রতিটি চালান নিরাপদ ও উচ্চমানের। এছাড়া সরবরাহ সীমিত থাকায় দুই দিনের রপ্তানি অনুমোদিত পরিমাণের তুলনায় কম হলেও আমাদের মূল লক্ষ্য মানসম্পন্ন ইলিশ রপ্তানি বজায় রাখা।
এর আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত বছর ৭৯টি প্রতিষ্ঠানকে ৩,৯৫০ টনের অনুমতি দিয়েছিল। কিন্তু বেনাপোল ও আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে সব মিলিয়ে ইলিশ রপ্তানি হয়েছে প্রায় ৮০২ টন। এর মধ্যে বেনাপোল বন্দর দিয়ে একাই রপ্তানি হয়েছে ৫৩২.৩ মেট্রিক টন।
স্থানীয় ইলিশ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান সততা ফিশের ব্যবস্থাপক রেজাউল করিম বলেন, দুর্গাপূজা ও আসন্ন উৎসবের কারণে ইলিশের চাহিদা বেশি। আমরা চেষ্টা করছি বাজার চাহিদা অনুযায়ী ইলিশ সরবরাহ বজায় রাখতে। তবে মাছের সীমিত পরিমাণ রপ্তানিতে কিছুটা বাধা থাকলেও আমাদের কার্যক্রম সচল রয়েছে।
"একজন শিক্ষার্থী অন্য শিক্ষকের কাছে পড়লে আপনি তাকে কম মার্কস দিবেন, আপনার কাছে পড়লে প্র্যাক্টিক্যালে ভালো মার্কস দিবেন, তার সাথে ভালো আচরণ করবেন এটাও কিন্তু এক ধরণের দুর্নীতি। দুর্নীতি কিন্তু শুধু টাকা খাওয়া না, শুধু অন্যায় করা না। শিক্ষার্থী যে শিক্ষকের কাছেই পড়ুক না কেন তার খাতাটি আপনি নিরপেক্ষভাবে দেখবেন। আপনারা কখনোই শিক্ষার্থীদের সাথে পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণ করবেন না। দুর্নীতি করে কিন্তু কেউই বেশি দূর এগোতে পারে না। পরকালের কথা বাদ দিয়ে ইহকালেও কিন্তু দুর্নীতি করে কেউ সফল হতে পারেনি। কাজেই আপনার শিক্ষার্থীদের সাথে ন্যায়সঙ্গত আচরণ করুন।"
এসময় পরীক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “ভালো ফলাফল পেতে হলে তোমাদেরকে পরিশ্রম করতে হবে। পরীক্ষা ভয় পাওয়ার বিষয় নয়, এটি জীবনের একটি ধাপ মাত্র। নিয়মিত পড়াশোনা, সঠিক সময় ব্যবস্থাপনা ও আত্মবিশ্বাসই সাফল্যের মূল চাবিকাঠি। তোমাদের পরিশ্রম, সততা ও অধ্যবসায় একদিন পরিবার, সমাজ ও দেশের জন্য গর্বের কারণ হবে।”
অভিভাবকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, "আপনারা আপনাদের বাচ্চাদেরকে সময় দিন। অফিস থেকে এসে রিলাক্স মুডে মোবাইল দেখবেন না, ঘণ্টার পর ঘণ্টা আত্মীয়-স্বজনের সাথে কথা বলবেন না। আপনি সন্তানের সামনে মোবাইল ব্যবহার করলে ও কিন্তু ভালো কিছু শিখবে না।"
বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১১ টায় রাজবাড়ীর পাংশায় এস.এস.সি-২০২৬ পরীক্ষার প্রস্তুতি, শিক্ষার মান উন্নয়ন, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ এবং মাদকাসক্তির কুফল সম্পর্কে সচেতনতার লক্ষ্যে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষক মন্ডলীর উপস্থিতিতে অভিভাবক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক ও বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সুলতানা আক্তার এসব কথা বলেন।
পাংশা পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে অংশগ্রহণ করেন পাংশা পৌরসভার পাংশা পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, কাজী আব্দুল মাজেদ একাডেমি ও এয়াকুব আলী চৌধুরী বিদ্যাপীঠের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকবৃন্দ।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস.এম. আবু দারদা'র সভাপতিত্বে সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, পাংশা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সালাউদ্দিন ও পাংশা পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের অভিভাবক সদস্য মো. বাহারাম হোসেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবুল কালাম আজাদ।
সঞ্চালনায় ছিলেন উদয়পুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সামসুল আলম (সোহরাব)। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির উদ্দেশে মানপত্র পাঠ করেন পাংশা পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সান্ত্বনা দাস।
শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকেও পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের প্রস্তুতি, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ ও মাদকমুক্ত সমাজ গঠনের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখা হয়।
অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন তেলওয়াত ও পবিত্র গীতা পাঠ করা হয়। আলোচনা শেষে জেলা প্রশাসক ৩টি বিদ্যালয়ের মাঝে বিভিন্ন ক্রীড়া সামগ্রী বিতরণ করেন।
ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলায় আধুনিক পৌর পার্ক নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নান্দাইল মডেল থানার সংলগ্ন এ পার্কের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন পৌর প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সারমিনা সাত্তার।
এ সময় পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারী, উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা বৃন্দ, জনপ্রতিনিধি, ব্যবসায়ী, সাংবাদিকসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের পরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সারমিনা সাত্তারকে ঘিরে শুরু হয় প্রশংসার ঢল। স্থানীয়রা মন্তব্য করছেন, তাঁর দূরদর্শী উদ্যোগ ও সাহসী পদক্ষেপের কারণেই অবশেষে নান্দাইলবাসীর দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণ হতে যাচ্ছে।
অনুষ্ঠানে ইউএনও সারমিনা সাত্তার বলেন, “এ পার্ক হবে নান্দাইলবাসীর জন্য একটি উন্মুক্ত বিনোদনকেন্দ্র। শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে সব বয়সী মানুষ এখানে সময় কাটাতে পারবেন। একইসঙ্গে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, খেলাধুলা এবং সামাজিক আড্ডার একটি নিরাপদ স্থান হিসেবে এটি ব্যবহৃত হবে।”
তিনি আরও জানান, পার্কে বসার স্থান, ফুলের বাগান, হাঁটার ট্র্যাকসহ আধুনিক সুযোগ-সুবিধা রাখা হবে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, নান্দাইলে দীর্ঘদিন ধরে একটি মানসম্মত বিনোদনকেন্দ্রের অভাব ছিল। পরিবার নিয়ে বেড়ানো কিংবা শিশুদের খেলাধুলার জন্য উপযুক্ত জায়গার অভাবে অনেক সময় ভোগান্তি পোহাতে হতো। নতুন এ পৌর পার্ক সেই শূন্যতা পূরণ করবে বলেই মনে করছেন তারা।
ফেসবুকে অনেকেই মন্তব্য করেছেন, নান্দাইলের সৌন্দর্যবর্ধনে ইউএনও সারমিনা সাত্তারের এই উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়। কেউ কেউ লিখেছেন, “এ পার্ক শুধু বিনোদনের জন্য নয়, বরং তরুণ প্রজন্মকে ইতিবাচক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করার অন্যতম প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠবে।”
উপস্থিত বক্তারাও একে নান্দাইলের জন্য যুগান্তকারী উদ্যোগ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তারা বলেন, এ পার্ক উদ্বোধনের পর থেকে পুরো এলাকা প্রাণবন্ত হয়ে উঠবে।
উল্লেখ্য, নান্দাইল পৌরসভার নিজস্ব অর্থায়নে এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। কাজ শেষ হলে এটি শুধু বিনোদন কেন্দ্র নয়, বরং নান্দাইল পৌরসভার সৌন্দর্যবর্ধনেও নতুন মাত্রা যোগ করবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
চারটি সংসদীয় আসন বহালের দাবিতে বাগেরহাটে টানা তৃতীয় দিনের মতো জেলা ও ৯টি উপজেলা নির্বাচন অফিসের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটি। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত চলা এ কর্মসূচিতে বিএনপি-জামায়াতসহ সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটির শত শত নেতা-কর্মী অংশ নেন। কর্মসূচি চলাকলীন নির্বাচন অফিসের সকল কার্যক্রম বন্ধ থাকে। তবে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
কর্মসূচি শেষে কমিটির কোকনভেনার এম এ সালাম জানান, (আজ) শুক্রবার ও (কাল) শনিবার কোনো কর্মসূচি না থাকলেও আগামী রোববার ও সোমবার দুই দিন আবারও ঘেরাও কর্মসূচি চলবে। এবং সোমবারের কর্মসূচি চলাকালীন পরবর্তী আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
এ প্রসঙ্গে জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা রেজাউল করীম বলেন, আপনারা ইতোমধ্যেই দেখেছেন বাগেরহাটবাসী তাদের দাবি আদায়ে একত্র হয়েছে এবং রাজপথে নেমেছে। তবুও নির্বাচন কমিশন আমাদের দাবিকে আমলে নিচ্ছে না। কমিশন যদি আমাদের দাবি মেনে না নেয়, তাহলে যেভাবে আন্দোলন করলে দাবি আদায় সম্ভব, বাগেরহাটবাসী সেভাবেই আন্দোলন চালাবে।
সর্বদলীয় কমিটির সদস্য সচিব ও জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি শেখ মুহাম্মাদ ইউনুস জানিয়েছেন, গত ১৭ বছর আমরা আন্দোলন সংগ্রাম করে এসেছি। যার কারণে মামলা-হামলাকে আমরা ভয় পাই না। যতদিন পর্যন্ত আমাদের দাবি আদায় না হবে ততদিন আমরা রাজপথ ছাড়ব না।
এদিকে চারটি আসন বহালের দাবিতে দায়ের করা রিটে হাইকোর্ট রুল জারি করেছে, যেখানে নির্বাচন কমিশনকে ১০ দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে।
কিশোরগঞ্জের ভৈরব বিসিক শিল্পনগরীর প্লট বরাদ্দের তিন বছরে উৎপাদনে গেছে মাত্র একটি কারখানা। অথচ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২৩৪টি প্লট। বরাদ্দপ্রাপ্ত প্লটগুলোর বেশিরভাগই পড়ে আছে ফাঁকা। সেখানে গজিয়ে উঠেছে কাঁশবন। দ্রুত বাকি সব কারখানা চালুর দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ভৈরব-কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কের পাশে বিশাল এলাকাজুড়ে গড়ে উঠেছে বিসিক শিল্পনগরী। প্রধান ফটক পেরিয়ে চোখে পড়ে কয়েকটি নির্মাণাধীন কারখানা। তাদের মধ্যে মেসার্স জিলানী ফ্লাওয়ার মিলস অ্যান্ড ফুড প্রোডাক্টস নামের একটি কারখানা উৎপাদন কার্যক্রম চালাচ্ছে। বাকি কয়েকটি কারখানার নির্মাণকাজ চলছে। একটু সামনে এগোতেই দেখা মিলছে সারি সারি কাঁশবন। প্রতিটি প্লটেই ফুটেছে ফুল। নেই কোনো কর্মচাঞ্চল্য।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৩ সালে কিশোরগঞ্জের ভৈরবে কালিকাপ্রসাদ এলাকায় ৪০ একর ভূমিতে বিসিক শিল্পনগরী গড়ে তোলার জন্য সরকার অনুমোদন দেয়। কিন্তু নানা জটিলতার কারণে নির্মাণকাজ শুরু করতে কিছুটা বিলম্ব হয়। ২০২১ সালে সেপ্টেম্বরে ৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণকাজ কাজ শুরু হয়ে ২০২২ সালের জুনে প্রকল্পের কাজ শেষ হয়। তবে শিল্পের বিকাশ ও কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে কাজ শুরু হলেও আশানুরূপভাবে এগোচ্ছে না ভৈরব বিসিক শিল্পনগরীর কার্যক্রম।
প্লট বরাদ্দের পর তিন বছরে মাত্র একটি কারখানা উৎপাদন শুরু করেছে। উৎপাদনের অপেক্ষায় রয়েছে আটটি কারখানা, নির্মাণাধীন সাতটি এবং নির্মাণের অপেক্ষায় রয়েছে ১৮টি। বাকি ২২টি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তবে তারা এখনো কোনো দৃশ্যমান কার্যক্রম শুরু করেননি।
ভৈরব বিসিক শিল্পনগরীতে ১২৪ শিল্প ইউনিটে ২৩৪ প্লট বিভিন্ন খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্য খাদ্য উৎপাদন খাতে ৪০টি, বস্ত্র উৎপাদন খাতে তিনটি, রসায়ন খাতে ৪০টি, চামড়া ও রাবার শিল্প উৎপাদন খাতে ২২টি, প্রকৌশলী উৎপাদন খাতে ১৪টি এবং প্যাকেজিং উৎপাদন খাতে পাঁচটি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যদি শিল্পনগরীর সব কারখানা চালু হয়, তাহলে প্রায় ১০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। এলাকার আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতি হবে। বদলে যাবে ভৈরবের মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। এ অঞ্চলের মানুষের প্রধান পেশা পাদুকা শিল্পের ক্লাস্টারের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এতে এ শিল্পে জড়িতরা সহজ শর্তে ঋণসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।
স্থানীয় বাসিন্দা মিলাত মিয়া বলেন, ‘বিসিকের কার্যক্রম পুরোপুরি শুরু না হওয়ায় এখানে রাত হলেই অপরাধ চক্রের দৌরাত্ম বেড়ে যায়। ফলে বিসিক সংলগ্ন এলাকায় ছিনতাইসহ নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঘটছে।’
কালিকা প্রসাদ ইউপি চেয়ারম্যান লিটন মিয়া বলেন, ‘প্রশাসনের কাছে দাবি, যেন দ্রুত বিসিকের সব কার্যক্রম শুরু করা হয়। এটা হলে এলাকার হাজারও মানুষের কর্মসংস্থানসহ বিভিন্ন সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।
ভৈরব চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রি সভাপতি জাহিদুল হক জাবেদ বলেন, বিসিক শিল্পে তিন বছরে মাত্র একটি কারখানা উৎপাদনে যেতে পেরেছে। বাকিগুলো এখনো উৎপাদনে যেতে পারেনি। তাদের মধ্য বরাদ্দ পাওয়া বেশিরভাগই এখনো স্থাপনার কাজ শুরু করেনি। যারা বিসিক শিল্পে এখনো তাদের বরাদ্দকৃত প্লটে কোনো কাজ শুরু করেননি, সেসব প্লটের মালিকানা বাতিল করে নতুনভাবে বরাদ্দের দাবি জানান তিনি।
এ বিষয়ে ভৈরব শিল্পনগরীর কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবিদুর রহমান খান জানান, শিল্পনগরীর কার্যক্রম শুরু হয়েছে, তবে পুরোপুরি কার্যক্রম শুরু হতে কিছু সময় লাগবে। তবে বিসিক শিল্পের পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় অফিসিয়াল কার্যক্রমসহ শিল্পের নিরাপত্তা রক্ষায় বিঘ্ন ঘটছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছি। আশা করছি, খুব শিগগির বিসিক শিল্পের কার্যক্রম পুরোপুরিভাবে শুরু হবে।
এদিকে, গত ১৭ আগস্ট এক আনন্দঘন ও প্রেরণাদায়ক পরিবেশের মধ্য দিয়ে বিসিক জেলা কার্যালয়, কিশোরগঞ্জ-এর উদ্যোগে আয়োজিত 'শিল্পোদ্যোক্তা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কোর্স (১ম ব্যাচ)'-এর উদ্বোধন করা হয়। হাওরপাড়ের সম্ভাবনাময় তরুণ-তরুণীদের আত্মনির্ভরশীল উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে এই প্রশিক্ষণ কোর্সের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিসিকের চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) মোঃ সাইফুল ইসলাম। সেদিন তিনি তাঁর দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্যে বলেন, বিসিক সৃষ্টি লগ্ন থেকেই সারা দেশে নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি এবং তাদের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি প্রশিক্ষণার্থীদের দৃঢ় মনোবল, উদ্ভাবনী চিন্তা ও প্রশিক্ষণে অর্জিত জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে সফল উদ্যোক্তা হওয়ার আহ্বান জানান। তাঁর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের মাধ্যমে একদল স্বপ্নবাজ তরুণের নতুন পথচলা শুরু হয়।
দিনব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে, বিসিকের চেয়ারম্যান বিসিক শিল্পনগরী, কিশোরগঞ্জ এবং শিল্পনগরী, ভৈরব পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি শিল্পনগরী দুটির সার্বিক কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেন, উদ্যোক্তাদের সাথে মতবিনিময় করেন এবং বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান করেন।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও পবিত্র রমজানের কারণে ২০২৬ সালের অমর একুশে বইমেলা চলতি বছর ১৭ ডিসেম্বর শুরু হবে। মাসব্যাপী এই মেলা শেষ হবে ১৭ জানুয়ারি।
আজ বিকেলে বাংলা একাডেমির শহীদ মুনীর চৌধুরী সভাকক্ষে অমর একুশে বইমেলা সংক্রান্ত এক সভায় এ তারিখ নির্ধারণ করা হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন, সংস্কৃতি সচিব মো. মফিদুর রহমান।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম, একাডেমির সচিব, পরিচালকবৃন্দ এবং বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির প্রতিনিধিবৃন্দ।
সোনালী আঁশ পাটের আবাদে কয়েক বছর ধরে চাষিরা লোকসানে পড়লেও এ বছর দাম কিছুটা বেড়েছে। তবে উৎপাদন খরচের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ মূল্য না পাওয়া, মানসম্মত আঁশ সংগ্রহের প্রতিবন্ধকতা এবং রপ্তানি বাজার সংকটের কারণে কৃষক ও ব্যবসায়ী উভয়ই দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।
মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে জেলায় ১৭ হাজার ৬৫৫ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কৃষকেরা বাম্পার ফলনের আশা করছেন। কিন্তু উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় ও আঁশের মানহানি নিয়ে তাদের দুশ্চিন্তা থামছে না।
কৃষকেরা জানান, মুক্ত জলাশয়ের অভাবে পাট জাগ দিতে হচ্ছে ডোবা বা পুকুরের মতো বদ্ধ জলাশয়ে। এতে আঁশের মান কমে যাচ্ছে। রঙের পার্থক্য ও আঁশের তারতম্যের কারণে বাজারে সবসময় কম দাম পান তারা। ফলে ভালো ফলনের আশার মধ্যেও শংকা রয়েছে ন্যায্যমূল্য নিয়ে।
সদর উপজেলার ফতেপুর গ্রামের কৃষক নিজাম উদ্দীন তিন বিঘা জমিতে পাটচাষ করেছেন। তিনি বলেন, ‘এখনও এক বিঘার পাটও কাটতে পারিনি। শ্রমিক মজুরি জনপ্রতি ৬০০ টাকা। বাজারে এক মন শুকনো পাটের দাম ৩ হাজার ২০০ থেকে ৩ হাজার পাঁচশ টাকা। কৃত্রিম উপায়ে জাগ দিতে গেলে জমিতে পলিথিন বিছাতে হয়, শ্যালো ইঞ্জিন দিয়ে পানি তুলতে হয়। এত খরচ করলে বিক্রির টাকা দিয়ে খরচই ওঠে না। তাই নদীতে জাগ দেওয়ার অনুমতি চাই।’
তেতুলবাড়িয়া গ্রামের কৃষক জিয়াউল হকও একই সঙ্কটে আছেন। চার বিঘা জমিতে পাট করেছেন, পাশে চার কাটা জমিতে আমন ধানের চারা রয়েছে। তিনি জানান, ‘সময়মতো পাট কেটে জাগ দিতে না পারলে ধান রোপণ সম্ভব হবে না। আশপাশের পুকুরে পর্যাপ্ত পানি নেই। তাই আমরা নদীতে জাগ দেওয়ার অনুমতি চাই।’
কৃষকেরা অভিযোগ করেছেন, মানসম্মত পাট উৎপাদনে কৃষি বিভাগের তেমন কোনো কার্যকর ভূমিকা নেই। মাঠ পর্যায়ে পরামর্শ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা না পাওয়ায় তারা সমস্যার সমাধান খুঁজে পাচ্ছেন না। কৃষকের পাশাপাশি ব্যবসায়ীরাও লোকসানের শঙ্কায়।
মেহেরপুরের পাট ব্যবসায়ী কাউছার আলী জানান, ‘গত বছরের পাট বিক্রি করতে না পেরে গোডাউনে ভর্তি করে রেখেছি। ভারত কাঁচাপাট আমদানি বন্ধ করায় রপ্তানির পথ বন্ধ হয়ে গেছে। নতুন বাজার তৈরি না হলে আমাদের বড় ক্ষতি হবে।
আরেক ব্যবসায়ী ইউসুফ আলী বলেন, ‘কৃষকেরা এবছর তুলনামূলক ভালো দাম পাচ্ছেন। তবে আমরা গত বছরের তুলনায় বেশি দামে পাট কিনতে বাধ্য হচ্ছি। যদি নতুন বাজার তৈরি না হয়, কৃষকেরা এ চাষ থেকে নিরুৎসাহিত হয়ে পড়বেন।’
জেলা পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা আ ক ম হারুন কৃষকদের অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে বলেন, ‘নদী ব্যবহারে কোনো বাধা নেই। কৃষকদের মানসম্মত পাট উৎপাদনে আমরা সহযোগিতা করছি এবং বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।’
শত বছরের ঐতিহ্য ধরে রেখেছে পঞ্চগড় সদর উপজেলার মীরগড়ের রসাল মিষ্টান্ন টোপা। খেতে যতটা সুস্বাদু তেমনি স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদ হওয়ায় বেড়েই চলেছে এর চাহিদা। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় টোপা ক্রেতাদের উপচে পড়া ভীড়। রংপুর বিভাগের উত্তরের জেলা হিমালয় কণ্যা পঞ্চগড়। সদর উপজেলার ৮নং ধাক্কামারা ইউনিয়নের মিরগড় বাজার এই জেলার ঐতিহ্যবাহী টোপা তৈরি করে বিক্রি করেন ব্যবসায়ীরা। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ভোজন রসিকরা ভীড় জমান। বিশেষ করে শুক্রবার ও সন্ধার পরে জেলার অন্যান্য জায়গা থেকে খাওয়ার জন্য আসেন অনেকেই। ঐতিহ্যবাহী টোপা প্রতি পিচ মূল্য ১০ টাকা করে। সেখানে চিনি ও গুড়ের তৈরি দুই ধরনের টোপা পাওয়া যায়। টোপা ব্যবসায়ী এনামুল সাথে কথা বললে তিনি জানান, ‘আমি এই ব্যবসার সাথে জড়িত রয়েছি দীর্ঘদিন থেকে। অন্য কোথাও টোপা তৈরি হয় না শুধু আমাদের এই মীরগড় বাজারের তৈরি হয়, তাই বিভিন্ন জায়গা থেকে এই টোপা খেতে আসেন ভোজন রসিকরা।’
পর্যটক সুকন্যা দে পুজা তিনি জানান, ‘আমি ঠাকুরগাঁও থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে এসেছি এরপর জানতে পারলাম মীরগড় বাজারে এই জেলার ঐতিহ্যবাহী টোপা খেতে সুস্বাদু তাই টোপা খেতে এসেছি আমিসহ আমার পরিবারের সদস্যরা।’ ক্রেতা মো. ওমর ফারুক বাপ্পির সাথে কথা বললে তিনি জানান, পৌর শহর থেকে টোপা খেতে এসেছি, সময় পেলেই টোপা খেতে এই বাজারে আসি।’
ময়মনসিংহে স্বাস্থ্যসেবাকে আরও সহজলভ্য করার লক্ষ্যে স্বাস্থ্যসেবা খাতে নিয়োজিত চিকিৎসক, ক্লিনিক ও ডায়গনস্টিক মালিকদের নিয়ে ‘স্বাস্থ্য ইউনিটি’ নামের সংগঠন করা হয়েছে। গত বুধবার রাতে নগরীর চরপাড়া এলাকায় সংগঠনটির প্রথম মিলনমেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সংগঠনের সভাপতি শামীম আহম্মেদের সভাপতিত্বে জমকালো এই আয়োজনের শুরুতেই অতিথিদের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়। পরে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির উপদেষ্টা মনসুর আলম চন্দন। এছাড়া ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবের সাবেক বিভাগীয় সম্পাদক এম.এ মোতালেবসহ সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা বক্তব্য রাখেন। নেতারা বলেন, ‘স্বাস্থ্য ইউনিটি’ শুধু একটি সংগঠন নয়, বরং এটি হবে স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়ন এবং অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর একটি বৃহত্তর প্ল্যাটফর্ম। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সংগঠনটি ময়মনসিংহ স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আরও বলা হয়, সংগঠনটির লক্ষ্য একত্রে কাজ করা এবং সমাজের প্রতিটি মানুষের কাছে স্বাস্থ্যসেবাকে আরও সহজলভ্য করা। এ জন্য সাংবাদিক, চিকিৎসক, ব্যবসায়ীসহ সবাইকে সাথে নিয়ে সংগঠনের নেতারা তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে চায়।
এ সময় সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা ও স্থানীয় বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অনুষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ও যুক্তরাষ্ট্রের প্যাসিফিক এয়ার ফোর্সের যৌথ মহড়া ‘অপারেশন প্যাসিফিক এঞ্জেল ২৫–৩থ-এর অংশ হিসেবে ইনক্যাপ সিরিমনি। বৃহস্পতিবার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তাদের ওই কর্মসূচী অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় প্রধান অতিথি ছিলেন বিমান বাহিনী ঘাঁটি জহুরুল হক-এর এয়ার অধিনায়ক এয়ার ভাইস মার্শাল হায়দার আব্দুল্লাহ। তিনি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাংলাদেশ বিমান বাহিনী প্রতিবছর দেশের ভেতরে ও বাইরে বিভিন্ন মহড়ায় অংশগ্রহণ করে। এ বছর বিদেশে বেশ কয়েকটি মহড়া সম্পন্ন হয়েছে, আর এটাই ছিল চলতি বছরের শেষ মহড়া। এ মহড়ার মূল উদ্দেশ্য হলো দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুতি অর্জন করা। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় স্বাস্থ্যসেবা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
আমেরিকান বিমান বাহিনীর দেওয়া অত্যাধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জামের মধ্যে রয়েছে অপারেশন থিয়েটারের টেবিল, অপারেশন লাইট, এয়ার কন্ডিশন, জেনারেটর, বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার যন্ত্র এবং অপারেশন থিয়েটারের অন্যান্য আনুষঙ্গিক সামগ্রী।
এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনীর মিশন কমান্ডার মেজর জুদাহ বলেন, ‘আমরা এ কার্যক্রমে বিশেষভাবে নারী ও শিশুস্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দিয়েছি। এ অঞ্চলের মাতৃস্বাস্থ্য ও শিশুসেবা আরও উন্নত করতে এসব সরঞ্জাম গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, এ ধরনের মানবিক উদ্যোগের মাধ্যমে শুধু স্বাস্থ্যসেবা নয়, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক আরো দৃঢ় হবে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশের মধ্যে আনোয়ারার মতো একটি প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে বেছে নেওয়া নিঃসন্দেহে স্থানীয় মানুষের জন্য সৌভাগ্যের বিষয়। এখানে স্বাস্থ্য অবকাঠামো উন্নয়ন ও আধুনিক সরঞ্জাম সংযোজনের মাধ্যমে চিকিৎসাসেবার মান উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে সাধারণ মানুষ দ্রুত ও কার্যকর চিকিৎসা সুবিধা পাবেন।
অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্র টিমের সিনিয়র সদস্য কার্নেল অ্যান্ড্রু ব্রি, যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের প্রতিনিধি মেজর গ্রিন, বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক, সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রতিনিধি ও স্থানীয় প্রশাসনের সদস্যসহ দুদেশের বিমান বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
জন্মনিবন্ধে ইচ্ছাকৃত ভুল, ভুল সংশোধনের নামে বারবার অর্থ গ্রহণ, প্রতিবন্ধী ও বয়স্ক ভাতার টাকা নিজের পরিবারের নাম্বার দিয়ে আত্মসাৎ করে, বিভিন্ন অনলাইন সার্ভিসে সরকারি ধার্যকৃত ফিসের অতিরিক্ত টাকা আদায় করা, পরিষদের অনৈতিক অর্থনৈতিক সুবিধা আদায়, প্রতাপনগর ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোক্তা মহিলা লীগ ইউনিয়নের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক আসমা খাতুনের অপসারণ ও বিচারের মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। দুপুরে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার প্রতাবনগর সর্বস্তরের জনগণের আয়োজনে ফুলতলা বাজারে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। ‘আসমা হঠাও প্রতাপনগর বাচাও’ এই স্লোগানে মানববন্ধন কর্মসূচিতে বিএনপির সাবেক সভাপতি স.ম আখতারুজ্জামান সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, বিশিষ্ট সমাজসেবক নূরি আলম সিদ্দিকী, ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সংগঠনিক সম্পাদক আতিয়ার রহমান, বিএনপি নেতা কারিমুজ্জামান, প্রতিবন্ধী ভুক্তভোগী স্বামী আব্দুল সালাম, আর এক ভুক্তভোগী মুক্তার হোসেন স্থানীয় সাংবাদিক মাসুম বিল্লাহ, প্রমুখ।
মানববন্ধনে বলেন, প্রতাপনগর ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোক্তা আসমা খাতুন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় বয়স্ক বিধবা প্রতিবন্ধীসহ ভাতা প্রাপ্তদের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ করে আসছেন। এমনকি বয়স্ক ভাতা প্রাপ্তদের নাম্বার পরিবর্তন করে নিজের পরিবারের সদস্যদের নাম্বার দিয়ে টাকা উত্তোলন করেন। বিষয়টি জানাজানি পরেও চেয়ারম্যান কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।
তিনি আওয়ামী মহিলা লীগের ইউনিয়নের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক আসমা খাতুনের অপসারণ ও বিচার করতে হবে, তা না হলে এরপরে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বৃহত্তর কর্মসূচি করা হবে।
তবে অভিযুক্ত তথ্য উদ্যোক্তা আসমা খাতুন বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে সকল অভিযোগ তোলা হচ্ছে তার সম্পূর্ণ মিথ্যা। কারণ আমার মায়ের একটি সিম হারিয়ে গিয়েছিল। ভুলক্রমে সেই সিম নাম্বারে একটি বয়স্ক ভাতার টাকা চলে আসে। আমি জানতে পেরে সমাজসেবা কর্মকর্তার অবহিত করি। আমি কোনো টাকা উত্তোলন করিনি।
প্রতাপনগর ইউপি চেয়ারম্যান হাজি দাউদ ঢালী বলেন, আসমা খাতুনের বিরুদ্ধে অভিযোগের কথা শুনেছি। আমি আজ তাকে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার কাছে পাঠিয়েছি। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ সত্য তাহলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কুমিল্লার মুরাদনগরে নিখোঁজের ৩৮ দিন পর মেহেদী হাসান (১৮) নামে এক অটো রিকশা চালকের কঙ্কাল উদ্ধার করেছে পুলিশ। গত বুধবার বিকেলে নবীপুর পশ্চিম ইউনিয়নের উত্তর ত্রিশ এলাকার গোমতী নদীর বেড়িবাঁধের ভেতরের একটি ঝোপ থেকে মাথার খুলি ও হাড়গোড় উদ্ধার করা হয়। নিহত মেহেদী হাসান উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানার দীঘিরপাড় গ্রামের মৃত মোস্তফার ছেলে। তিনি পেশায় অটো রিকশা চালক ছিলেন।
পুলিশ জানায়, এ ঘটনায় প্রধান আসামি খাইরুল ইসলামকে (২১) নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর থানার সালা পাগলার মাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী এবং দেখানো স্থানে কঙ্কালটি উদ্ধার করা হয়। গত ১১ আগস্ট রাতে অটো রিকশা নিয়ে বের হয়ে নিখোঁজ হন মেহেদী। পরদিন তার পরিবার থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন। পরে ২০ আগস্ট নিহতের মা জোসনা বেগম বাদী হয়ে খাইরুলকে আসামি করে হত্যার উদ্দেশে অপহরণের মামলা দায়ের করেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই নাহিদ হাসান জানান, তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় প্রথমে খাইরুলের বাবা আইনুল হককে রাঙামাটির কাউখালি থেকে এবং তার ভাই ফুল মিয়াকে কুমিল্লার অশোকতলা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের তথ্যের ভিত্তিতে অটোরিকশাটি কুমিল্লার একটি গ্যারেজ থেকে উদ্ধার করা হয়। অবশেষে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মূল ঘাতক খাইরুলকে নারায়ণগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে গত বুধবার বিকেলে তার দেখানো স্থানে মেহেদীর কঙ্কাল উদ্ধার হয়।
বাঙ্গরা বাজার থানার ওসি মাহফুজুর রহমান জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে খাইরুল হত্যার দায় স্বীকার করেছে। তার দেখানো স্থান থেকেই কঙ্কাল উদ্ধার করা হয়। মরদেহের পাশে থাকা পোশাক দেখে পরিবারের সদস্যরা নিহতকে শনাক্ত করেন।
তিনি আরও বলেন, ওই ঘটনায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং অটো রিকশা উদ্ধার করা হয়েছে। আসামিকে রিমান্ডে এনে হত্যাকাণ্ডে অন্য কেউ জড়িত আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ঝরে পড়া তরুণদের কর্মমুখী দক্ষতা অর্জনে পটুয়াখালীতে শুরু হয়েছে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর বিশেষ কার্যক্রম ‘কার্যকর সাক্ষরতা ও ব্যবহারিক কর্মদক্ষতা প্রশিক্ষণ (প্রাক-বৃত্তিমূলক পর্যায়)’। বৃহস্পতিবার পটুয়াখালী কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (টিটিসি) সম্মেলন কক্ষে এ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মহসিন উদ্দীন। এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় পটুয়াখালী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের হল রুমে একই কোর্সের উদ্বোধন করা হয়। সেখানে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। প্রশিক্ষণে ১৪ থেকে ২৪ বছর বয়সী তরুণ-তরুণীদের চারটি ট্রেডে দক্ষ করে তোলা হবে; ইলেকট্রিক্যাল ইনস্টলেশন অ্যান্ড মেইনটেনেন্স, প্লাম্বিং অ্যান্ড পাইপ ফিটিং, টেইলারিং অ্যান্ড ড্রেস মেকিং এবং মোবাইল ফোন সার্ভিসিং। কোর্সের মেয়াদ ছয় মাস, মোট ৪৬০ ঘণ্টা। সহকারী পরিচালক, উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো, মো. মফিজুল ইসলাম জানান, প্রশিক্ষণার্থীরা কোর্স শেষে টিভিইটি সোপানের এনএসসি-১ (NSC-1)-এ ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাবেন, কর্মসংস্থানে যুক্ত হতে পারবেন এবং জীবনব্যাপী শিক্ষার পথ উন্মুক্ত হবে। তাদের বিনামূল্যে শিক্ষা উপকরণ ও নিরাপত্তা সামগ্রী দেওয়া হবে, পাশাপাশি নির্ধারিত যাতায়াত ভাতা ব্যাংক হিসাবে প্রদান করা হবে।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, এ প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের মাধ্যমে ঝরে পড়া তরুণ-তরুণীরা শুধু সাক্ষরতা অর্জন করবে না, বরং কর্মসংস্থানের যোগ্যতাও অর্জন করবে, যা তাদের জীবনমান উন্নয়নে সহায়ক হবে। প্রশিক্ষণার্থী রহিম খান বলেন, ‘এখান থেকে আমরা বিনা খরচে পড়াশোনা ও প্রশিক্ষণ নিয়ে ভবিষ্যতে কাজ করার আত্মবিশ্বাস পাচ্ছি।’
একজন অভিভাবক মোসা. সাবিকুন নাহার বলেন, আমার ছেলে পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিল। ওই প্রশিক্ষণে যুক্ত হওয়ার পর তাকে নতুনভাবে উদ্যমী দেখছি। এখন তার জীবনের জন্য একটি ভালো ভিত্তি তৈরি হবে বলে বিশ্বাস করি।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মহসিন উদ্দীন বলেন, ‘সরকার তরুণ প্রজন্মকে দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছে। ওই কার্যক্রম তারই অংশ। এর মাধ্যমে ঝরে পড়া তরুণরা শুধু কর্মমুখী জ্ঞান অর্জন করবে না, বরং আত্মনির্ভরশীল হয়ে দেশের উন্নয়নে অবদান রাখতে পারবে।
এ সময় বক্তব্য রাখেন সহকারী পরিচালক, উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো মফিজুল ইসলাম। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন মো. আনিসুর রহমান, জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর (টেক/ ইলেকট্রিক্যাল), এবং জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর (টেক/ সিভিল), মো. জুয়েল রানা। অনুষ্ঠান শেষে অতিথিরা প্রশিক্ষণার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন এবং প্রশিক্ষণের সফলতা কামনা করেন।