নাটোরে ট্রেনে কাটা পড়ে সমীর কুন্ডু (৪৫) নামে এক স্বাস্থ্যকর্মীর মৃত্যু হয়েছে। আজ শনিবার সকাল ৮টার দিকে নাটোর রেলওয়ে স্টেশনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। ছেলেকে কোচিং ক্লাস করাতে নিয়ে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হন সমীর।
নিহত সমীর কুন্ডু শহরের কাপুড়িয়াপট্টি মহল্লার মৃত তারকেশ্বর কুন্ডুর ছেলে। তিনি পরিবার পরিকল্পনা বিভাগে হালসা কেন্দ্রে স্বাস্থ্য পরিদর্শক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সমীর কুন্ডু সাবেক ফুটবলারও ছিলেন।
স্টেশন মাস্টার রেজাউল মল্লিক বলেন, রাজশাহী থেকে চিলাহাটিগামী আন্তঃনগর তিতুমীর এক্সপ্রেস ট্রেনটি সকাল ৭টা ৫৮ মিনিটে নাটোর স্টেশনে পৌঁছায়। এরপর ৮টার দিকে ট্রেনটি স্টেশন থেকে ছেড়ে যায়। পরে স্থানীয়রা ১নং প্ল্যাটফর্মের লাইনে শরীর থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন অবস্থায় সমীর কুন্ডুর মরদেহ দেখতে পান।
খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ও রেলওয়ের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল থেকে মরদেহটি উদ্ধার করেন। বিষয়টি সান্তাহার জিআরপি পুলিশকে জানানো হয়েছে। তারা এসে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
নিহতের পরিবারের বরাত দিয়ে স্টেশন মাষ্টার আরও বলেন, সকালে ছেলেকে কোচিং ক্লাস করাতে নিয়ে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হন সমীর কুন্ডু। এরপর পুলিশের মাধ্যমে পরিবারের লোকজন জানতে পারেন ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে মারা গেছেন তিনি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, সমীর কুন্ডু আত্মহত্যা করেছেন।
বাংলাদেশের সেনাবাহিনী কেবল এক সশস্ত্র বাহিনী নয়; এটি জাতির অস্তিত্ব রক্ষার শেষ প্রাচীর, জনগণের সংকটমুহূর্তের নির্ভরতার প্রতীক।
স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত প্রতিটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ, প্রতিটি সংকটে সেনাবাহিনীই ছিল জনগণের পাশে। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাজনীতির কলুষতা এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যেখানে এই বাহিনীকেও টেনে আনার চেষ্টা হয়েছে দলীয় স্বার্থের পরিখায়। কোনো সরকার বা গোষ্ঠী যদি সেনাবাহিনীকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করতে চায়, তবে সেটি কেবল বাহিনীর মর্যাদাকেই আঘাত করে না, বরং রাষ্ট্রের মেরুদণ্ডকেও ভেঙে দেয়। সেনাবাহিনীর মর্যাদা রাষ্ট্রের মর্যাদার সমার্থক। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের আন্দোলন প্রমাণ করেছে- যখন সেনাবাহিনী জনগণের পাশে দাঁড়ায়, তখন ইতিহাসের গতিপথ পাল্টে যায়। আর যখন রাজনৈতিক স্বার্থে সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করা হয়, তখন ইতিহাস রক্তাক্ত হয়। তাই আজ, নতুন বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হলো—সেনাবাহিনীকে বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখা।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্যের শপথ নেয়, কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতি নয়। তারা দেশের সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতা রক্ষার জন্য গঠিত—দলীয় কর্তৃত্বের জন্য নয়। কিন্তু গত দুই দশকে দেখা গেছে, ক্ষমতার নেশায় কিছু সরকার এই বাহিনীকে নিজেদের রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছে। পদোন্নতি, নিয়োগ, বাজেট বরাদ্দ সবক্ষেত্রে দলীয় বিবেচনার ছায়া ফেলেছে রাজনীতি। এতে করে বাহিনীর ভেতরে নৈতিক চাপ সৃষ্টি হয়েছে, যা দীর্ঘমেয়াদে বিপজ্জনক। সেনাবাহিনীকে নিরপেক্ষ রাখা মানে রাষ্ট্রকে স্থিতিশীল রাখা। কারণ এই বাহিনী যদি দলীয় হয়ে পড়ে, তাহলে তার ওপর জনগণের আস্থা ভেঙে যায়। তখন রাষ্ট্রের ভেতরে যে ভারসাম্য থাকা উচিত—তা হারিয়ে যায়। তাই রাষ্ট্রনায়কত্বের আসনে যারা আছেন, তাদের মনে রাখা উচিত সেনাবাহিনীর প্রতি শ্রদ্ধা মানে রাষ্ট্রের অস্তিত্বের প্রতি শ্রদ্ধা।
জুলাই আন্দোলন ও সেনাবাহিনীর ভূমিকা এবং এক নীরব বিপ্লব- ২০২৪ সালের জুলাই মাসে যখন জনতার আন্দোলন শুরু হয়, তখন গোটা রাষ্ট্রযন্ত্র ছিল বিপর্যস্ত। সরকার সেনাবাহিনীকে মাঠে নামায়, কিন্তু উদ্দেশ্য ছিল ভিন্ন—গণপ্রতিরোধ দমন করা। কিন্তু সেনাবাহিনী সে ফাঁদে পা দেয়নি। তারা বুঝেছিল, এটি কেবল ক্ষমতার লড়াই নয়, এটি ছিল জনগণের ন্যায়ের দাবি। অভ্যন্তরীণ বৈঠক, সাবেক সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরামর্শ, এবং ইতিহাসের দায়িত্ববোধ—সব মিলে সেনাবাহিনী এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নেয়: ‘জনগণের মুখোমুখি হবে না।’ এই সিদ্ধান্তই ছিল গণআন্দোলনের মোড় ঘোরানোর মুহূর্ত। যদি সেনারা তখন সরকারের নির্দেশে গুলি চালাত, তবে দেশ আজ গৃহযুদ্ধের আগুনে জ্বলত। সেনাবাহিনী সে আগুন নেভায় নীরব থেকে, দায়িত্বশীল থেকে। তাই একে কেবল সামরিক নীতি নয়, নৈতিক বিপ্লব বলা যায়। এই নীরবতা জাতিকে রক্ষা করেছে, আর প্রমাণ করেছে একটি পেশাদার সেনাবাহিনী কখনোই জনগণের শত্রু নয়। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ভোরবেলা থেকেই ঢাকার রাস্তায় অজস্র মানুষ। শাসকগোষ্ঠীর পতনের দাবিতে ছাত্র, শ্রমিক, সাধারণ মানুষ তখন একযোগে অগ্রসর হচ্ছিল। সেই সময় সেনাবাহিনীর সদর দপ্তর থেকে এক ঐতিহাসিক নির্দেশ আসে ‘জনগণের ওপর গুলি নয়।’ এটি কেবল একটি কৌশলগত সিদ্ধান্ত নয়, বরং এক গভীর নৈতিক অবস্থান। সেনাবাহিনী জানত, রক্তপাত মানে রাষ্ট্রের মৃত্যু। তাই তারা জনগণের পাশে দাঁড়ায়, অস্ত্র নয় বিবেক দিয়ে। এই সিদ্ধান্তের পরপরই জনতার আত্মবিশ্বাস চূড়ায় পৌঁছে যায়; আন্দোলন জয়লাভ করে। বিশ্ব মিডিয়াও স্বীকার করে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী ইতিহাসের সঠিক পাশে দাঁড়িয়েছে। সেই দিনটি তাই কেবল সরকারের পতনের দিন নয়; এটি সেনাবাহিনীর নৈতিক উত্থানের দিনও।
সেনাবাহিনী কেবল রাষ্ট্রের শক্তি নয়, জাতির মনোবলও। যখন কেউ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করে, তখন সে পুরো জাতির আত্মবিশ্বাসে আঘাত হানে। কারণ জনগণ জানে বন্যা, মহামারি, সন্ত্রাস বা সীমান্ত সংকটে যে বাহিনী প্রথম এগিয়ে আসে, তা হলো সেনাবাহিনী। রাজনৈতিক স্বার্থে এই বাহিনীর চরিত্র নিয়ে সন্দেহ তৈরি করা মানে জনগণকে বিভ্রান্ত করা। সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি আঘাতপ্রাপ্ত হলে জনগণের আস্থা হারিয়ে যায়; প্রশাসনিক কাঠামো ভেঙে পড়ে। তাই সেনাবাহিনীকে নিয়ে দলীয় বিতর্ক সৃষ্টি করা কেবল একটি রাজনৈতিক অপরাধ নয় এটি রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডও বটে। প্রত্যেক রাষ্ট্রেই সেনাবাহিনীর প্রতি একধরনের নৈতিক ভয় থাকে যেটি আসলে শ্রদ্ধারই অন্য রূপ। এটি শৃঙ্খলা ও দায়িত্ববোধের ভিত্তি তৈরি করে। কিন্তু যখন রাজনৈতিক বিতর্কে সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়, তখন সেই ভয় বা শ্রদ্ধাবোধ বিলুপ্ত হয়। ফলাফল ভয়াবহ রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব নড়বড়ে হয়ে যায়, প্রশাসনিক নির্দেশ অকার্যকর হয়ে পড়ে, এবং রাষ্ট্রের শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ে। সেনাবাহিনীকে যদি বিতর্কে জড়ানো হয়, তবে জনগণের মনে ‘শেষ আশ্রয়স্থল’-এর ধারণা হারিয়ে যায়। তাই এই নৈতিক ভয় বা শ্রদ্ধা রক্ষা করা জাতির স্থিতিশীলতার জন্য অপরিহার্য।
বিশ্বজুড়ে যেখানে সেনাবাহিনী প্রায়শই দমনযন্ত্রের প্রতীক, সেখানে বাংলাদেশ প্রমাণ করেছে—একটি বাহিনী নীতিতে অটল থাকলে সেটিই জনগণের আশ্রয় হয়ে ওঠে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, সন্ত্রাস দমন, মহামারি মোকাবিলা যে সংকটই আসুক, সেনাবাহিনী সর্বদা সামনে থেকেছে। বন্যায় ত্রাণ বিতরণ, ভূমিকম্পে উদ্ধার, করোনাকালে হাসপাতাল নির্মাণ সবক্ষেত্রেই তারা প্রমাণ করেছে, তারা কেবল সৈনিক নয়, জাতির মানবিক হাত। এই বাহিনীকে বিতর্কে টেনে নামানো মানে দুর্যোগে জনগণের আশ্রয় দুর্বল করা। তাই সেনাবাহিনীকে রাজনৈতিক দলে ভাগ করার চেষ্টা মানে দেশের দুর্দিনে কান্ডারীর হাত কেটে ফেলা।
সকলের দায়িত্ব হলো সেনাবাহিনীকে সম্পূর্ণভাবে দলীয় রাজনীতির বাইরে রাখা। সরকারের বদল হবে, মতাদর্শ পাল্টাবে, কিন্তু সেনাবাহিনীর অবস্থান অপরিবর্তনীয় থাকতে হবে—রাষ্ট্রের পক্ষে, জনগণের পক্ষে, ন্যায়ের পক্ষে। যে দেশ সেনাবাহিনীকে রাজনীতির অংশ করে, সে দেশ নিজের অস্তিত্ব হারায়। তাই সেনাবাহিনীর পেশাদারিত্ব রক্ষা করা আজ সবচেয়ে বড় জাতীয় দায়িত্ব। এটি কেবল বাহিনীর জন্য নয়, রাষ্ট্রের ভবিষ্যতের জন্যও অপরিহার্য। রাষ্ট্র যখন দুর্নীতি, দমননীতি ও অবিচারের ভারে নুয়ে পড়ে, তখন সেনাবাহিনী মানুষের মধ্যে এক ধরনের আস্থার প্রতীক হয়ে দাঁড়ায়। এই নৈতিক অবস্থান বজায় রাখা সেনাবাহিনীর সবচেয়ে বড় শক্তি। কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতি পক্ষপাত দেখানো, অথবা ক্ষমতার খাতিরে প্রশাসনিক খেলায় অংশ নেওয়া এই নৈতিক শক্তিকে ধ্বংস করে দিতে পারে। সেনাবাহিনীকে শক্তিশালী হতে হলে অস্ত্রের চেয়ে অনেক বেশি প্রয়োজন নীতির দৃঢ়তা। জনগণের বিশ্বাস হারালে একটি দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কতটা দুর্বল হয়ে পড়ে, ইতিহাসে তার উদাহরণ অজস্র। তাই সেনাবাহিনীকে দেশের শেষ নৈতিক দুর্গ হিসেবেই রক্ষা করা প্রয়োজন।
সেনাবাহিনীকে রাজনৈতিক খেলায় টেনে নামানো জাতীয় আত্মঘাত। বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি ভয়ঙ্কর প্রবণতা দেখা যায় দলের সংকটে পড়লে সেনাবাহিনীর নামে হুমকি, অথবা ‘সেনাবাহিনী আমাদের সঙ্গে’ ধরনের প্রচার। এই মানসিকতা বিপজ্জনক। সেনাবাহিনী কোনো দলের নয়, রাষ্ট্রের। রাজনৈতিক লাভের জন্য এই প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করার চেষ্টা করা মানেই জাতীয় আত্মঘাত। বিশ্বের অনেক দেশেই দেখা গেছে—রাজনীতি যদি সেনাবাহিনীতে ঢুকে পড়ে, তখন সেনাবাহিনী রাজনীতিতে ঢুকে যায়। একবার এই সীমারেখা ভেঙে গেলে পুনরুদ্ধার অসম্ভব হয়ে পড়ে। তাই রাজনীতিবিদদের এখনই এই অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে। সেনাবাহিনীকে ব্যবহার নয়, সম্মান দিতে হবে। তাহলেই রাষ্ট্র টিকে থাকবে দৃঢ় ভিত্তিতে। জনগণের সঙ্গে সম্পর্কই সেনাবাহিনীর স্থায়ী শক্তি। যে সেনাবাহিনী জনগণের ভালোবাসা পায়, সেই সেনাবাহিনী কখনো পরাজিত হয় না। বাংলাদেশের সেনারা ১৯৭১ সালে যেমন জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছিল, তেমনি ২০২৪ সালের আগস্টেও তারা জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। সেনাবাহিনীর প্রতিটি সদস্য যদি উপলব্ধি করেন যে তাদের অস্তিত্ব জনগণের নিরাপত্তা ও সম্মানের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত, তবে কোনো বাহ্যিক ষড়যন্ত্রই তাদের টলাতে পারবে না। জনগণের হৃদয়ে সেনাবাহিনীর যে আস্থা আজও অটুট, সেটাই দেশের প্রকৃত প্রতিরক্ষা ঢাল। এই আস্থা রক্ষা করাই এখন সবচেয়ে বড় দায়িত্ব।
আজকের পৃথিবীতে একটি দেশের সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি শুধু দেশের ভেতর নয়, আন্তর্জাতিক পরিসরেও মূল্যায়ন করা হয়। জাতিসংঘে শান্তিরক্ষী মিশনে বাংলাদেশের সেনারা বহু বছর ধরে যে সুনাম অর্জন করেছে, তা রাষ্ট্রের মর্যাদা বহুগুণে বৃদ্ধি করেছে। কিন্তু যদি অভ্যন্তরীণ রাজনীতির সংঘাতে সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করে তোলা হয়, তাহলে সেই আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তিও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন কিংবা আঞ্চলিক শক্তিগুলো সবসময় লক্ষ্য করে একটি দেশের সামরিক প্রতিষ্ঠান কতটা নিরপেক্ষ ও পেশাদার। সেই পেশাদারিত্বই বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর মূল সম্পদ। এই ভাবমূর্তিকে রাজনীতির অস্থিরতার আগুনে পোড়ানো চলবে না। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে সেনাবাহিনীর চিত্র যেন উজ্জ্বল থাকে। রাষ্ট্রের আগামী প্রজন্ম যদি সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত, বিভক্ত বা ভীতিকর হিসেবে দেখতে শুরু করে, তবে জাতীয় মনস্তত্ত্বে তার বিরূপ প্রভাব পড়বে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের চোখে সেনাবাহিনীকে থাকতে হবে নায়ক, রক্ষক ও নৈতিক সাহসের প্রতীক হিসেবে। এজন্য স্কুল থেকে শুরু করে মিডিয়া পর্যন্ত রাষ্ট্রকে ইতিবাচক বার্তা ছড়াতে হবে। সেনাবাহিনীকে ঘিরে ভয় নয়, আস্থা তৈরি করতে হবে। কারণ যখন এক জাতি তার সেনাবাহিনীর প্রতি বিশ্বাস হারায়, তখন সে জাতি তার নিরাপত্তার ভিত্তি হারায়। ভবিষ্যতের বাংলাদেশ যেন সেই পথে না যায়, সেটিই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
উপসংহার: রাষ্ট্র বাঁচাতে সেনাবাহিনীর মর্যাদা রক্ষা করো জরুরি। সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করার অর্থ রাষ্ট্রকে দুর্বল করা। তারা দেশের শেষ আশ্রয়, শেষ প্রাচীর, শেষ বিবেক। রাজনৈতিক দল আসবে-যাবে, কিন্তু সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি অটুট থাকলেই রাষ্ট্র টিকে থাকবে। জুলাই-আগস্টের অভিজ্ঞতা আমাদের শিক্ষা দিয়েছে যে সেনাবাহিনী জনগণের ওপর গুলি চালায় না, সেই সেনাবাহিনীই ইতিহাসের গর্ব। তাই আজ আমাদের আহ্বান সেনাবাহিনীকে দলীয় নয়, জাতীয় রাখো; বিতর্ক নয়, শ্রদ্ধা দাও।
লেখক: সাংবাদিক, সমাজ গবেষক, মহাসচিব-কলামিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ।
দেশব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে বাংলাদেশ অ্যাম্বুলেন্স মালিক কল্যাণ সমিতি, মাগুরা জেলা শাখা মঙ্গলবার সকাল ১১টায় মাগুরা সদর হাসপাতালের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে।
মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন মাগুরা জেলা অ্যাম্বুলেন্স মালিক কল্যাণ সমিতির সভাপতি মো. ফুরকানুল হামিদ ফুরকান। এ সময় বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক মো. তারেক হোসেন তারেক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. জিহাদুর রহমান জিহাদ, সহ সাধারণ সম্পাদক মো. মাহবুবুর রহমান মুকুলসহ সংগঠনের ৪২ জন সদস্য।
বক্তারা বলেন, আমাদের ন্যায্য দাবিগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন না হলে নীরব থাকবো না- ন্যায়ের তরে রাস্তায় নামব। তাদের প্রধান দাবিসমূহ হলো: ১. সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ এর পঞ্চম অধ্যায়ের ধারা ৩১(১) অনুযায়ী রুট পারমিট ছাড়াই অ্যাম্বুলেন্সকে বাণিজ্যিক নিবন্ধন দিতে হবে। ২. অ্যাম্বুলেন্সের বিরুদ্ধে ট্রাফিক আইন মামলা প্রদান কার্যক্রম অবিলম্বে স্থগিত করতে হবে। ৩. অ্যাম্বুলেন্সের ক্ষেত্রে মাইক্রোবাসের ট্যাক্স ও AIT নেওয়া বন্ধ করতে হবে।
৪. ‘ভাড়া চালিত নয়’ মর্মে নিবন্ধিত অ্যাম্বুলেন্সকে অবৈধ ঘোষণা করা যাবে না। মানববন্ধন শেষে মাগুরা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টার বরাবর একটি স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, ‘অ্যাম্বুলেন্স জনগণের জীবনরক্ষার বাহন। এটি বাণিজ্যিক যান নয়, তাই এর ওপর মাইক্রোবাসের মতো ট্যাক্স বা ট্রাফিক মামলা আরোপ অযৌক্তিক। সরকারের উচিত এই সেবাখাতকে টিকিয়ে রাখতে সহায়ক নীতি গ্রহণ করা।’
অনুলিপি প্রদান করা হয় মাগুরা জেলার পুলিশ সুপার ও সহকারী পরিচালক (বিআরটিএ)-এর নিকট। অ্যাম্বুলেন্স মালিক কল্যাণ সমিতির নেতারা জানান, সরকারের কাছে তারা শান্তিপূর্ণভাবে তাদের দাবি উপস্থাপন করেছেন। তবে দাবি পূরণ না হলে তারা বৃহত্তর কর্মসূচির ডাক দেবেন।
পঞ্চগড়ে উদ্ধার গাজীপুরের একটি মসজিদের খতিব মুফতি মোহাম্মদ মোহেববুল্লাহ মিয়াজী (৬০) স্বেচ্ছায় নিখোঁজ হওয়ার কথা আদালতে স্বীকার করেছেন। মঙ্গলবার দুপুরে গাজীপুর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৪-এর বিচারক যুবায়ের রশীদের কাছে তিনি জবানবন্দি দেন। পরে বিচারক তাকে পুলিশের মাধ্যমে পরিবারের জিম্মায় দেওয়ার নির্দেশ দেন। মোহেববুল্লাহ গাজীপুরের টঙ্গীর টিঅ্যান্ডটি কলোনি জামে মসজিদের খতিব।
টঙ্গী পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ওয়াহেদুজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেন, মোহেববুল্লাহ আদালতের কাছে প্রকৃত ঘটনা উল্লেখ করে স্বেচ্ছায় নিখোঁজ হওয়ার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। পরে তাকে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এর আগে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ সংবাদ সম্মেলন করে জানায়, মুফতি মোহেববুল্লাহ পায়ে শিকল লাগিয়ে নিজেই অপহরণের নাটক সাজিয়েছিলেন। নিজেদের সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানান গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) মোহাম্মদ তাহেরুল হক চৌহান।
মোহাম্মদ তাহেরুল হক চৌহান বলেন, মোহেববুল্লাহ অপহরণের যে বর্ণনা দিয়েছেন এবং যে সময় ও স্থান থেকে তাকে তুলে নেওয়ার কথা বলেছেন, সেই সময়ের ওই সব এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে পুলিশ অপহরণের কোনো প্রমাণ পায়নি। তিনি নিজেই নিজের পায়ে শিকল লাগিয়ে শুয়ে ছিলেন। তাকে উদ্ধারের পর মামলায় যা বলেছেন, তার পুরোটাই সাজানো গল্প।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মুফতি মোহেববুল্লাহ তাকে অপহরণ করা হয়েছিল—এমন অভিযোগে ২৪ অক্টোবর টঙ্গী পূর্ব থানায় একটি মামলা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, মামলার তদন্তকারী দল বাদীর বাসা থেকে ঘটনাস্থল পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তা নেয়। তদন্তকালে দেখা যায়, এজাহারে চার থেকে পাঁচজন বাদীকে জোর করে অ্যাম্বুলেন্স তোলার কথা বলা হলেও তিন ঘণ্টার মধ্যে যেখানে কোনো অ্যাম্বুলেন্সের চলাচলের দৃশ্য সিসি ক্যামেরায় দেখা যায়নি। আর যেসব স্থানের কথা বাদী উল্লেখ করেছেন, সেগুলোও যাচাই-বাছাই করা হয়।
মামলার এজাহারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, গত ২২ অক্টোবর সকালে টঙ্গীর টিঅ্যান্ডটি কলোনি এলাকা থেকে হাঁটতে বেরিয়ে খতিব মোহেববুল্লাহ (৬০) অপহৃত হন বলে অভিযোগ করা হয়। এজাহারে বলা হয়, একটি অ্যাম্বুলেন্সে ৪-৫ জন লোক তাকে জোর করে তুলে নিয়ে যায়। এরপর প্রায় একদিন ও একরাত নির্যাতনের পর তার দাড়ি কেটে দেওয়া হয় এবং কাঁচের বোতল দিয়ে শরীরে আঘাত করা হয়। শেষে পঞ্চগড়ে একটি গাছের সঙ্গে শিকল দিয়ে পা বেঁধে তাকে বিবস্ত্র অবস্থায় ফেলে রেখে যাওয়া হয়। তার মোবাইল ফোন ও সিম কার্ডও ছিনিয়ে নেওয়া হয় বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়। পরে স্থানীয়রা ‘৯৯৯’-এ ফোন দিলে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে।
গত ২৪ অক্টোবর মুফতি মোহেববুল্লাহ নিজেই টঙ্গী পূর্ব থানায় এই এজাহার দায়ের করেন।
তবে মামলাটির তদন্তে নেমে পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্লেষণ করে সম্পূর্ণ ভিন্ন তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ। জিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার তাহেরুল হক চৌহান জানান, তদন্তে দেখা যায়, ভুক্তভোগী তার বাসা থেকে একা হেঁটে বের হন এবং কোথাও কোনো অ্যাম্বুলেন্সের চলাচল দেখা যায়নি। বাদী তার এজাহারে ৪-৫ জন ব্যক্তি তাকে অ্যাম্বুলেন্স তুলে নিয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করলেও ওই সময়ের তিন ঘণ্টার মধ্যে সেখানে সিসি ক্যামেরায় কোনো অ্যাম্বুলেন্স চলাচল করতে দেখা যায়নি। প্রযুক্তির সহায়তায় ২২ অক্টোবর সকাল ১১টা ৩৬ মিনিটে তার অবস্থান ঢাকার সোবহানবাগ এলাকায় শনাক্ত করা হয়।
পুলিশ জানায়, মোহেববুল্লাহ মিয়াজী এরপর গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে শ্যামলী পরিবহনের একটি বাসের টিকিট কেটে দুপুর ২টায় পঞ্চগড়ের উদ্দেশে রওনা হন। যাত্রাপথে বগুড়ার শেরপুরে পেন্টাগন হোটেলে বাস বিরতি দিলে তিনি নেমে নামাজ পড়ে আবার বাসে ওঠেন, যার সিসিটিভি ফুটেজ পুলিশের হাতে এসেছে।
পুলিশের ভাষ্যমতে, সিসিটিভি ফুটেজ ও অন্যান্য তথ্যপ্রমাণ মোহেববুল্লাহর সামনে উপস্থাপন করা হলে তিনি জানান, ঘটনার দিন সকালে বাসা থেকে বেরিয়ে হাঁটার সময় তার আরও সামনে এগিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা হয়। এরপর তিনি অটোরিকশা ও সিএনজি পরিবর্তন করে ঢাকার গাবতলীতে পৌঁছান এবং সেখান থেকে পঞ্চগড় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, পঞ্চগড়ে বাস থেকে নেমে গভীর রাতে অন্ধকারে প্রস্রাব করার সময় ‘প্রস্টেট গ্রন্থির রোগের কারণে’ তার পায়জামা ও পাঞ্জাবি ভিজে যায়, ফলে তিনি সেগুলো খুলে ফেলেন। এরপর ঠাণ্ডা ও ক্লান্তির কারণে তিনি আর পোশাক পরতে পারেননি। এ সময় রাস্তায় পড়ে থাকা একটি ছোট তালাসহ শিকল তিনি নিজের পায়ে জড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। ঘুম থেকে উঠে নিজেকে তিনি পঞ্চগড় সদর হাসপাতালে দেখতে পান।
তার ভাষ্য, ‘আশেপাশের উলামায়ে কেরামগণ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে অবচেতন মনে তিনি বিভিন্ন ধরনের কথাবার্তা বলেন।’
এই ঘটনায় অন্য কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর সম্পৃক্ততা আছে কি না, কিংবা কী উদ্দেশে বা কার প্ররোচনায় তিনি এমন কাজ করেছেন, তা এখনো স্পষ্ট নয় বলে জানিয়েছে পুলিশ। বিষয়টি আরও গভীরভাবে তদন্ত করে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে টঙ্গী পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, মোহেববুল্লাহর স্বীকারোক্তির কোনো ভিডিও ভাইরালের বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। আজ জিএমপির প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে যা বলা হয়েছে, সেটাই আনুষ্ঠানিক বক্তব্য।
নোয়াখালী সোনাইমুড়ী স্টেশন জামে মসজিদের জায়গা উদ্ধার ও ভুয়া দলিল বাতিলের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে মসজিদ কমিটি ও মুসল্লিগণ। মঙ্গলবার মসজিদ প্রাঙ্গণে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, সোনাইমুড়ী পৌরসভার সাবেক মেয়র মোতাহের হোসেন মানিক, উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও সোনাইমুড়ী বাজার বণিক সমিতির সভাপতি সাহাব উদ্দিন, মসজিদ কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শামসুল আরেফিন জাফর, সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান, সহ-সভাপতি লাতু ভূঁইয়াসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ ও মুসল্লিগন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান জানান, সোনাইমুড়ীর নাওতোলা মৌজার ২৮৮ নং দাগে ৬১ শতাংশ ও একই দাগে ৩০ শতাংশ সম্পত্তি মসজিদের। ১৯৫৬ সনে স্থানীয় দানবীর মাওলানা মোখলেসুর রহমান এ সম্পত্তি মসজিদের নামে দান করেন। স্থানীয় ভূমি খেকো একটি চক্র মসজিদের সম্পত্তির উপর কুদৃষ্টি পড়ে। বিভিন্ন নামে বেনামে দলিল সৃজন করে মসজিদের ৩০ শতাংশ সম্পত্তি দখল করে রেখেছে। মসজিদটি দীর্ঘ বছর ধরে জরাজীর্ণ হওয়ায় সংস্কার করা যাচ্ছে না। মুসল্লিদের ওজু খানা ও পুকুরের ঘাটলা বন্ধ করে দেয় দখলদাররা। সম্প্রতি মসজিদের পুকুর থেকে এই চক্রটি জোরপূর্বক ৭০ হাজার টাকার মাছ লুটে নেয়। এ সময় বাধা দিলে মসজিদের কয়েকজন কমিটির সদস্যকে মারধর করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে মসজিদের দখলকৃত জায়গা উদ্ধারের দাবি জানান কমিটি ও মুসল্লিগণ।
বাংলাদেশ সরকার ও সুইজারল্যান্ডের যৌথ অর্থায়নে বাস্তবায়িত প্রবৃদ্ধি প্রকল্পের সহায়তায় স্থানীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে কুষ্টিয়া পৌরসভায় ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার চালু করা হয়েছে। মঙ্গলবার কুষ্টিয়া পৌরসভার প্রশাসক মো. মিজানুর রহমান পৌরসভা কার্যালয়ে এই ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টারের কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। নির্ধারিত সময়সীমা অনুযায়ী সকল পৌরসেবা এক জায়গা থেকে প্রদানের লক্ষ্যে চালুকৃত এই ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার স্থাপনে কারিগরি সহায়তা প্রদান করেছে সুইজারল্যান্ড ভিত্তিক আইটি সংস্থা সেলিস ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মস।
স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে পৌরসেবা সমূহের ডিজিটাইজেশনের মাধ্যমে সুশাসন ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে নাগরিকদের কাছে এক জায়গা থেকে সহজে সেবা পৌঁছে দেওয়াই এই ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টারের মূল উদ্দেশ্য। দ্রুত ও সহজে সেবা প্রাপ্তির ফলে ব্যবসা-বানিজ্যের পরিবেশ উন্নয়ন ও নাগরিক জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধিকরণের মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তিমূলক স্থানীয় আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। স্থানীয় সরকার বিভাগ (এলজিডি) ও সুইসকন্টাক্ট-এর যৌথ উদ্যোগে বাস্তবায়নাধীন প্রবৃদ্ধি প্রকল্পটি কুষ্টিয়াসহ বর্তমানে দেশের একাধিক পৌরসভার সাথে স্থানীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন বিষয়ে কাজ করছে।
কুষ্টিয়া পৌরসভার প্রশাসক মো. মিজানুর রহমান বলেন, ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টারের উদ্বোধন কুষ্টিয়া পৌরসভায় অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন প্রক্রিয়া এবং নাগরিক সেবা-কেন্দ্রিক শাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। সমন্বিতভাবে সুবিন্যন্ত প্রক্রিয়ায় পৌরসেবা প্রদানের মাধ্যমে নাগরিকদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করে সার্বিক অর্থনৈতিক সম্বৃদ্ধি অর্জন করাই এখন আমাদের মূল প্রচেষ্টা।
প্রবৃদ্ধি প্রকল্পের কর্মকর্তারা বলেন, ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে অত্যাবশ্যকীয় পৌরসেবা সমূহের কেন্দ্রীকরণ ও ডিজিটাইজেশন করার ফলে স্থানীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার পাশাপাশি স্থানীয় নাগরিকদেরও ক্ষমতায়ন করা হয়েছে। বাংলাদেশ ও সুইজারল্যান্ড সরকার, স্থানীয় সরকার বিভাগ ও সুইসকন্টাক্ট-এর এই যৌথ সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টা, ডিজিটাইজেশন ও নতুন নতুন উদ্ভাবনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সকলে মিলে তৃণমূল পর্যায়ে টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন অর্জন করতে পারবো বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ওয়াহিদুর রহমান, পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মেহেদি হাসান, সমাজ উন্নয়ন কর্মকর্তা এ কে এম মঞ্জুরুল ইসলাম, সহকারী প্রকৌশলী (পূর্ত) এ কে সামসুজ্জামান সহ প্রবৃদ্ধি প্রকল্পের কর্মকর্তাবৃন্দ, এবং পৌরসভার অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ।
কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার ৬নং ফতেহাবাদ ইউনিয়নের এক প্রত্যন্ত জনপদ চান্দপুর। গ্রামটির দক্ষিণ দিক ঘেঁষে বয়ে চলেছে স্রোতস্বিনী গোমতী নদী, তার ঠিক পাশেই সমান্তরালভাবে চলে গেছে গোমতী বেড়িবাঁধ। বাঁধের দুই পাশে সবুজ গাছের সারি, অধিকাংশই কাঁঠালগাছ, যেন সবুজ রেখা এঁকে বেঁকে চলে গেছে দূর অজানায়। বাঁধের উত্তরে বিস্তৃত এলাকা জুড়ে গড়ে উঠেছে এই শান্ত, ছায়া-সুনিবিড় চান্দপুর গ্রাম। কৃষি এখানকার মানুষের প্রধান পেশা। তবে, কেউ বিদেশে কর্মরত, আবার কেউ সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবী। গ্রামের ছেলে-মেয়েরা শিক্ষা নিচ্ছে চান্দপুর মডেল টেকনিক্যাল স্কুল, গঙ্গামণ্ডল মডেল কলেজ, দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুল ও একটি এবতেদায়ী মাদ্রাসায়। ছায়া-সুনিবিড় গ্রামটিতে প্রবেশ করলে অন্য ১০টি গ্রাম থেকে এটিকে আলাদা মনে হয়। একটি অজগ্রাম অথচ, প্রধান সড়কে জ্বলে সড়কবাতি, শহুরে ধাঁচে বাড়ি, সড়ক, প্রতিষ্ঠানের জন্য নির্দেশক সাইনবোর্ড- যেন কোনো পৌর এলাকা।
স্থানীয়রা জানান, একসময় এই গ্রামটিতে সন্ধ্যা নামলেই ডুবে যেত অন্ধকারে। গৃহস্থ বাড়ির কেরোসিন বাতির ক্ষীণ আলো, জোনাকির ঝিকিমিকি কিছুটা আলো ছড়াত। নব্বইয়ের দশকে ঘরবাড়িতে বিদ্যুতের আলো এলেও গ্রামের রাস্তা, বাঁধ আর প্রান্তর রয়ে গিয়েছিল নিকষ কালো অন্ধকারে। নারীরা সন্ধ্যার পর বাইরে বের হতে ভয় পেতেন, শিশুরা উঠানে পা ফেলত না। রাতের নিস্তব্ধতায় চুরি-চামারির ঘটনাও ঘটত মাঝেমধ্যে।
কথা হয় চান্দপুর আদর্শ সমাজসেবা সংগঠনের হান্নান সরকার, দুনিয়া ও আখেরাত কল্যাণ ফাউন্ডেশনের সাদেকুর রহমান এবং চান্দপুর মানবকল্যাণ সংগঠনের মোজাম্মেল হোসেনের সঙ্গে। তারা জানান, এই অন্ধকার দূর করতে এগিয়ে আসে গ্রামের যুব সমাজ। আমরা ঠিক করি নিজেদের গ্রাম নিজেদেরই আলোকিত করব। একাধিক বৈঠকে আলোচনা করি কীভাবে গ্রামের পথঘাটে আলো পৌঁছানো যায়। এরপর গ্রামের প্রবীণ ও গণ্যমান্যদের সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত হয় সৌরবিদ্যুৎচালিত সড়কবাতি বসানো হবে গ্রামের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে। সেই সঙ্গে উন্নত দেশের আদলে প্রতিটি রাস্তা, পাড়া ও বাড়ির নামফলক লাগানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। গ্রামের সৌন্দর্য বাড়াতে লাগানো হয় সারি সারি সুপারি গাছ।
গ্রামের ক্রিয়াশীল সামাজিক সংগঠনগুলোর নেতৃত্বে শুরু হয় আলোর অভিযাত্রা। প্রবাসী, চাকরিজীবী ও সাধারণ মানুষ সবাই যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী সহযোগিতার হাত বাড়ান। প্রথমে গ্রামের প্রবেশমুখ থেকে শুরু করে গোমতী বাঁধের প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকায় সৌরবাতি স্থাপন করা হয়। পরে গ্রামজুড়ে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৫০-এ। গ্রামের প্রতিটি বাড়ি, সড়ক ও প্রতিষ্ঠানের নামে বসানো হয় নির্দেশক বোর্ড। সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য কলেজের সড়কের দুপাশে লাগানো হয় সুপারি ও ফুলগাছ।
এখন সন্ধ্যা নামলেই পুরো চান্দপুর জ্বলে ওঠে আলোয়। বাঁধের পথ, স্কুলের সামনে, প্রতিটি মোড় ও পাড়ায় জ্বলে ওঠে উজ্জ্বল সড়কবাতি। গ্রাম যেন আলোর মালায় গাঁথা এক অপূর্ব সৌন্দর্যে রূপ নেয়। রাতের আঁধারে এখন আর ভয় নেই; নিশ্চিন্তে চলাচল করেন নারী-পুরুষ, খেলাধুলা করে শিশুরা, বসে গল্পে মাতে বৃদ্ধরা।
গ্রামের বিশিষ্টজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য মো. জামাল হোসেন তরুণদের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘সোলার লাইট বসিয়ে গ্রামের আনাচে-কানাচে আলো ছড়িয়েছে যুব সমাজ। রাতে গ্রামের পথে বের হলেই মনটা অন্যরকম ভালো হয়ে যায়। এখন গ্রামে চোর-ডাকাতের ভয় নেই, পথ চলা যায় নির্বিঘ্নে। যুব সমাজ চাইলে যে একটা গ্রাম বদলে দিতে পারে, তার উদাহরণ হচ্ছে চান্দপুর।’
চান্দপুর মানবকল্যাণ সংগঠনের সভাপতি মোজাম্মেল হোসেন বলেন, এসব কাজ মূলত গ্রামের সকলের অংশগ্রহণেই হচ্ছে। আমি ও আমার সংগঠন তাদের সঙ্গে থেকে সহযোগিতার চেষ্টা করছি। আগামীতে গ্রামে সিসি ক্যামেরা লাগানোসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নেওয়ার চেষ্টা করবে বলে জানান চান্দপুর আদর্শ সমাজসেবা সংগঠনের সভাপতি হান্নান সরকার।
স্থানীয় গঙ্গামণ্ডল মডেল কলেজের শিক্ষক আব্দুল কাদের জিলানী বলেন, “সৌরশক্তি ব্যবহার করে গ্রামকে আলোকিত করার এই উদ্যোগ কেবল প্রযুক্তির নয়, এটি সামাজিক জাগরণের প্রতীক। অংশগ্রহণমূলক উন্নয়নের এমন দৃষ্টান্ত বাংলাদেশে বিরল। চাইলে এই মডেল অন্য জেলাতেও ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব।
দেবিদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাকিবুল ইসলাম বলেন, “চান্দপুর গ্রামের তরুণরা নিজেদের উদ্যোগে সৌরশক্তি ব্যবহার করে গ্রামকে যেভাবে আলোকিত করেছে, তা সত্যিই প্রশংসনীয় ও অনুকরণীয়। সরকারি কোনো সহায়তা ছাড়াই তারা গ্রামীণ উন্নয়নের যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, তা অন্যদের জন্য প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে। তরুণ প্রজন্মের এই ইতিবাচক চিন্তা ও ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টাই টেকসই উন্নয়নের ভিত্তি তৈরি করতে পারে। উপজেলা প্রশাসন সব সময় এমন উদ্যোগের পাশে থাকবে।
দেবিদ্বার থানার ওসি সামসুদ্দিন মোহাম্মদ ইলিয়াস জানান, ‘আলো থাকায় গ্রামের নিরাপত্তা বেড়েছে, অপরাধ কমেছে। এ উদ্যোগ অন্য গ্রামেও ছড়িয়ে দেওয়া উচিত।’
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের কক্সবাজার ব্যাটালিয়ন (৩৪ বিজিবি) দায়িত্বপূর্ণ বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্তে অভিযান পরিচালনা করে ৪ লাখ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট জব্দ করতে সক্ষম হয়েছে।
আজ কক্সবাজার ব্যাটালিয়ন (৩৪ বিজিবি) এর অধীনস্থ ঘুমধুম বিওপি’র একটি বিশেষ টহলদল বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্তবর্তী পশ্চিম দরগাহ বিল কবরস্থান এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে আসামীবিহীন ৪,০০,০০০ পিস বার্মিজ ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। এটি সাম্প্রতিক সময়ে কক্সবাজার ব্যাটালিয়নের অন্যতম বৃহৎ ইয়াবা উদ্ধার অভিযান।
উল্লেখ্য, কক্সবাজার ব্যাটালিয়ন (৩৪ বিজিবি) গত ৬ মাসে ১৩,৪১,১৩৫ পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য জব্দ করেছে, যার বাজারমূল্য প্রায় ৪০ কোটি ২৪ লক্ষ টাকা। এছাড়াও অন্যান্য চোরাচালানী মালামালসহ সর্বমোট ৫০ কোটি ৭৯ লক্ষ টাকার পণ্য জব্দ এবং মাদক পাচার ও চোরাচালানের সাথে জড়িত ৯৫ জনকে আটক করেছে।
এছাড়াও কক্সবাজার ব্যাটালিয়ন সীমান্তে জনসচেতনতা বৃদ্ধি, অবৈধ পারাপার ও মাইন বিস্ফোরণ প্রতিরোধে ব্যাটালিয়ন নিয়মিত জনসচেতনতামূলক সভা ও প্রচার কার্যক্রম পরিচালনা করছে। পাশাপাশি স্থানীয় স্কুল-মাদ্রাসার মেধাবী শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তা, খেলাধুলার সামগ্রী, দুঃস্থ নারীদের সেলাই মেশিন এবং বৌদ্ধ বিহারে অনুদান প্রদানসহ বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রমও পরিচালিত হচ্ছে।
কক্সবাজার ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেঃ কর্নেল এস এম খায়রুল আলম বলেন—“বিজিবি শুধু সীমান্ত পাহারায় নয়, বরং মাদক ও চোরাচালান প্রতিরোধেও সমানভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ভবিষ্যতেও এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।”
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদলের ৪৭ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ফরিদপুর জেলা ও মহানগর যুবদলের যৌথ উদ্যোগে বর্ণাঢ্য র্যালি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত সোমবার বিকেলে ফরিদপুর জেলা ও মহানগর যুবদলের দুটি বিশাল র্যালি শহরের ঝিলটুলি অম্বিকা ময়দান থেকে বের হয়। র্যালি দুটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে আলিপুর নওয়াব আলী টাওয়ারের সামনে গিয়ে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। সমাবেশে মহানগর যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এম ইউসুফ এর সভাপতিত্বে এবং জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেনের পরিচালনায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন ফরিদপুর জেলা যুবদলের সভাপতি রাজিব হোসেন রাজিব।
এ সময় ফরিদপুর সদর উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান বেনজির আহমেদ তাবরীজ, মহানগর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আলী রেজওয়ান বিশ্বাস তরুণ, জেলা যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি কে এম জাফর, সহ-সভাপতি দিদারুল মাহমুদ খান টিটু, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক শামীম তালুকদার, সহ-সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম জিহাদ, অম্বিকাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো: নুরুল আলম, মহানগর যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম নাহিদ, যুবদল নেতা মো. কামাল, মো. আশফাক মিয়াসহ নেতৃবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় বক্তারা জাতীয়তাবাদী যুবদলের সুদীর্ঘ ইতিহাস তুলে ধরে আলোচনা করেন। তারা বলেন, ফরিদপুরে জাতীয়তাবাদী যুবদল বিএনপি'র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধভাবে গড়ে তোলা হবে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত করতে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। কোন অবস্থাতেই ঐক্য নষ্ট হতে দেয়া হবে না। বক্তারা বলেন, স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে আমরা গত ১৭ বছর লড়াই সংগ্রাম করেছি। ষড়যন্ত্রকারীরা এখনো বিদেশে বসে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। তারা দেশের বিরুদ্ধে যেন কোন ষড়যন্ত্র করতে না পারে সে বিষয়ে সবাইকে সচেতন থেকে সকল ষড়যন্ত্রকে রুখে দিতে হবে।
এর আগে বিভিন্ন স্থান থেকে যুবদলের নেতাকর্মীরা ব্যানার ফেস্টুন বাদ্যযন্ত্রসহ মিছিলে যোগ দেন।
ভৈরবে জেলার দাবিতে এবার নৌপথ অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন ছাত্র জনতা। এসময় মেঘনা নদীর ঘাটে ১ ঘন্টা নৌচলাচল বন্ধ থাকে। এরপর আগামী বৃহস্পতিবার সড়ক, রেল, নৌপথ অবরোধের ঘোষণা দেন আন্দোলনকারীরা। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় থেকে শুরু বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ভৈরব বাজার লঞ্চঘাট ও কার্গোঘাটে এই কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।
এসময় আন্দোলনকারীরা তাদের বক্তব্যের বলেন, সোমবার শান্তিপূর্ণ রেল অবরোধের সময় কর্মসূচির শেষের দিকে হঠাৎ ট্রেন চালক জোরে ট্রেনের হুইশাল বাজানোর কারণে রেললাইনে অবস্থান থাকা ছাত্র জনতা এসময় নিজেদের সেভ করতে কয়েকটি পাথর নিক্ষেপ করে। তবে এই ঘটনার সম্পূর্ণ দায়ী স্টেশন মাস্টার ও রেলওয়ে থানার ওসি। আমরা ভৈরবকে জেলা ঘোষণার দাবিতে পূর্বেও ছিলাম ভবিষ্যতেও থাকবো। আমাদের মামলা হামলা দিয়ে দমিয়ে রাখা যাবে না।
এসময় বক্তব্য রাখেন, জেলা আন্দোলনের অন্যতম মাওলানা সাইফুল ইসলাম শাহারিয়া, গণঅধিকার পরিষদ নেতা ইমতিয়াজ আহমেদ কাজল, ছাত্র নেতা জুনাইদ প্রমুখ।
ভৈরব বাজার লঞ্চঘাটে নৌপথ অবরোধ চলাকালীন সময়ে যেন কোন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেজন্যই ভৈরব উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) এএইচএম আজিমুল হক, ভৈরব নৌপুলিশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রাশেদুজ্জামানসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
এ বিষয়ে ভৈরব নৌপুলিশ থানার ওসি রাশেদুজ্জামান জানান, ভৈরবকে জেলার দাবিতে নৌপথ অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে। তারা আগামী বৃহস্পতিবার সড়ক, রেল, নৌপথ এক যোগে অবরোধের ঘোষণা দিয়ে শেষ করেন আজকের কর্মসূচি।
দিগন্তজোড়া ঘন সবুজ ধানের খেত। মৃদু বাতাসে ধানের সবুজ পাতা আর শীষ যেন ঢেউ খেলছে। ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠজুড়ে এখন এমন নয়নাভিরাম দৃশ্য। সবুজ ধানগাছগুলোতে এখন কেবল শীষ আসা শুরু হয়েছে বা শীষের মধ্যে দুধ-দানা বাঁধছে। প্রকৃতির এমন শান্ত ও মনোরম পরিবেশে সোনালি ফসলের স্বপ্ন নিয়ে অপেক্ষার প্রহর গুণছেন কৃষক-কৃষাণীরা। মাঠে কাজ করা কৃষকদের চোখে-মুখে এখন আনন্দের ছাপ। তারা বলছেন, আর কিছুদিন পরেই এই সবুজ ধান হলুদ বর্ণ ধারণ করবে এবং সোনালি ধান তারা ঘরে তুলতে পারবে।
স্থানীয় কৃষক আব্দুল হালিম (৫৫) জানান, ‘এ বছর যদি বড় কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না আসে, তবে এবার বাম্পার ফলন পাব। গোলাভরা ধান ঘরে তোলার স্বপ্ন দেখছি।’
আরেকজন কৃষাণী, মোসাম্মৎ আলেয়া খাতুন (৪৫) বলেন, ‘জমিতে ধানের শীষ দেখে মনটা ভরে যায়। শুধু পরিশ্রমের দামটা যেন ঠিকমতো পাই, সেটাই এখন একমাত্র চাওয়া।’
কৃষক আব্দুস সালাম, ফোকপাল গ্রামের ইব্রাহিম আলী জানান, এ বছরও ধানের বাম্পার ফলনের আশা করছেন তারা। কোনো ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে বিগত বছরের তুলনায় ভালো ফলন ঘরে তুলতে পারবেন।
কৃষক রাজু আহমেদ বলেন, ‘ধানখেতে সার-কীটনাশক প্রয়োগ করা হয়েছে। ধানগাছের চেহারা দেখে বোঝা যাচ্ছে এবারে ভালো ফলন পাওয়া যেতে পারে। তবে সরকার যদি ন্যায্য দাম দেয়, তাহলে লাভবান হবেন কৃষক। তখন পূরণ হবে আমাদের স্বপ্ন।’
কৃষকরা আরও জানান, এক বিঘা জমিতে ধান উৎপাদনে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়, যে পরিশ্রম করা হয়, সে তুলনায় ধানের মূল্য পাচ্ছেন না কৃষকরা। ফলে অনেক চাষি তাদের জমিতে ধান চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। সরকারের কাছে তাদের দাবি, যেমন করে সার, বীজ ও কীটনাশকের ঘাটতি মেটানো হয়েছে, তেমনি করে তাদের উৎপাদিত ধানের সঠিক মূল্য নির্ধারণ করলে প্রান্তিক চাষিদের দুঃখ-দুর্দশা মুছে যাবে।
‘উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি আমন মৌসুমে ১৯ হাজার ২ শত ৪০ হেক্টর জমিতে আমন ফসলের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ধানের জমিতে রোগবালাই নিয়ন্ত্রণে রাখতে কৃষি কর্মকর্তারা নিয়মিত মাঠ পরিদর্শন করছেন এবং কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে।
ত্রিশাল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তানিয়া রহমান বলেন, ধানের জমিতে কারেন্ট পোকার আক্রমণ দেখা দিলে কৃষকরা সময়মত সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করেছেন। এবং আমরাও নিয়মিত মনিটরিং করেছি। আশা করছি, এই বছর ত্রিশালে ধানের ফলন ভাল হবে এবং কৃষকরা ন্যায্যমূল্য পাবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘রোপা আমন ধানের বাম্পার ফলন ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্য নিয়ে আমরা মাঠ পর্যায়ে কাজ করছি। ফলনও বেশ ভালো হয়েছে। তাই আমন ধানের বাম্পার ফলনের আশা করছি।’
অনলাইনে জুয়া খেলা ও মাদক সেবনে ধ্বংস হচ্ছে যুবসমাজ। কিন্তু এ বিষয়ে পুলিশের নীরব ভূমিকায় সচেতন মহলের তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। রূপগঞ্জের সর্বত্র এখন আতঙ্কের নাম অনলাইন জুয়া আর মাদক। সাথে রয়েছে নারীর ফাঁদ। মদ মেয়ে তাস এ তিনের সমন্বয়ে রূপগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চলে নেমে আসছে বিষাদের ছায়া। এদের ফাঁদে পড়ে নিঃস্ব হচ্ছে তরুণ যুবা বৃদ্ধরাসহ সর্বস্তরের মানুষ। এ নিয়ে আতঙ্কে রয়েছে সাধারন মানুষ। এত কিছু ঘটলেও স্থানীয় প্রশাসন অদৃশ্য কারনে একেবারেই নীরব।রূপগঞ্জের মানুষ প্রশাসনের সহযোগিতায় এ অভিশাপ থেকে মুক্তি চায়।
এক ক্লিকে লাখ লাখ টাকা উড়ে যাচ্ছে। কলেজছাত্র থেকে মধ্যবয়স্ক ব্যবসায়ী বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ এতে জড়িয়ে পড়ছেন। ফুটপাতের চা দোকানি, সেলুনকর্মী, হকার, বাড়ির নিরাপত্তা প্রহরী, বিক্রয়কর্মী, ভবঘুরে, বাস-ট্রাক চালক, সিএনজি চালক, নির্মাণশ্রমিক, গৃহপরিচারিকা, রিকশাচালক ও দিনমজুর অনেকেই দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় অনলাইনে বাজি ধরায় ব্যস্ত থাকেন। অনেকেরই শুরু হয় এক হাজার টাকা বা আরও বেশি টাকা দিয়ে। পরবর্তী পর্যায়ে তা ১০ হাজার কিংবা তারও বেশি হয়ে গিয়ে শেষ পর্যন্ত তাদের সব সম্পদ শেষ হয়ে যায়।
অনলাইনে হারানো টাকা জোগাড় করতে না পেরে অনেক তরুণ চুরি-ছিনতাইয়ের পথে নামছে। কায়েতপাড়া ইউনিয়নের খামার পাড়া, নগর পাড়া, উত্তর পাড়া, কায়েতপাড়া, কামসাইর, বাগবাড়ী , দেইল পাড়া, নয়ামাটি, দক্ষিণ পাড়া এলাকায় চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা বাড়ছে। কিশোররা জোটবদ্ধ হয়ে গ্যাং গঠন করে রাতে চেতনানাশক স্প্রে প্রয়োগ করে সর্বস্ব লুট করছে এই ধরনের ঘটনায় এলাকাবাসী আতঙ্কে আছে।
ভুক্তভোগী পথচারী আকরাম হোসেন বলেন, দক্ষিনপাড়া এলাকায় পথে কিশোর গ্যাং চেতনানাশক স্প্রে ব্যবহার করে আমার কাছে থাকা সব টাকা ছিনিয়ে নেয়। অচেতন অবস্থায় আমাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, ৫নং ওয়ার্ডের খামার পাড়া গ্রামে ১৫ থেকে ৩৫ বছরের যুবক ও কিশোর দল বেধে বিছানা বিছিয়ে ১৫/২০ জনের দলে বিভক্ত হয়ে বাজি ধরে তাস ও নানা রকম গেমস খেলছে সঙ্গে চলছে মাদক সেবন। আবার এদের মধ্যে কেউ কেউ মাদক ব্যবসার সঙ্গেও জড়িত বলে জানা যায়।
জানা যায়, বিভিন্ন গ্রামে গোপনে গড়ে উঠেছে মাদক ও অনলাইন জুয়ার আসর। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর থেকে বিভিন্ন স্থানে ইয়াবা, গাঁজা, ফেনসিডিলসহ নেশাজাতীয় দ্রব্য বিক্রি হচ্ছে প্রকাশ্যে। পাশাপাশি, স্মার্টফোনের সহজলভ্যতার সুযোগে অনলাইন জুয়ার মাধ্যমে তরুণ প্রজন্ম আসক্ত হয়ে পড়ছে অর্থলিপ্সা ও বিনোদনের নামে ধ্বংসের খেলায়।
অভিযোগ রয়েছে, কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির ছত্রছায়ায় এই চক্রগুলো দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় রয়েছে। প্রশাসনক কঠোর অবস্থান নিলে সমাজে পুনরায় শান্তি ও নিরাপত্তা ফিরিয়ে আনা সম্ভব বলে মনে করেন সচেতন নাগরিকেরা।
অপরদিকে নিঃস্ব হওয়া এক ভুক্তভোগীরা জানান, লোভে ও নেশায় পড়ে লাখ লাখ টাকা হারিয়েছি। ধার করে খেলেছি এখন দেনার দায়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়েছি। কেউ টাকা দিতে চায় না। আমরা এখন সব হারিয়ে দিশেহারা। স্থানীয়রা বলছেন, এ সমস্যা কেবল আর্থিক নয়। সামাজিক নিরাপত্তা, গণপরিবেশ আর ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ওপরের প্রভাব নিয়েও বড় প্রশ্ন দাঁড়াচ্ছে। জনগণ ও প্রশাসনকে মিলে সচেতনতা বৃদ্ধি, আইন প্রয়োগ ও পূনর্বাসনমূলক উদ্যোগ দ্রুত গ্রহণ করতে হবে এটাই এলাকার মানুষের দাবি।
রূপগঞ্জ থানার ওসি তরিকুল ইসলাম জানান, মাদক, অবৈধ নারী ব্যবসা, অনলাইন জুয়ার ব্যাপারে থানায় কেউ কখনো অভিযোগ করেনি। নানা কারণে সর্বশান্তরা থানায় আসতে ভয় পায়। মোবাইলে জুয়ার বিরুদ্ধে আমরা তৎপর আছি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ নিয়ে রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জয় জানান, মাদক, অনলাইন জুয়াসহ ধরনের অপরাধ ঠেকাতে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আমরা ইতোমধ্যে বিশেষ অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছি, যাতে অনলাইন জুয়ার সাথে জড়িতদের দ্রুত চিহ্নিত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া যায়। একইসঙ্গে, জনগণকে সচেতন করতে প্রশাসন সভা-সেমিনার, বিদ্যালয়-মাদ্রাসায় সচেতনতামূলক কার্যক্রম ও গণমাধ্যমে প্রচারণা চালাচ্ছে। আমাদের লক্ষ্য শুধু অপরাধ দমন নয়, বরং মানুষকে বোঝানো যে মদ, অবৈধ মেয়ে, অনলাইন জুয়া তাদের পরিবার, শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ ধ্বংস করছে।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের সম্মেলন কক্ষে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নিচে অব্যবহৃত জায়গাগুলোর কার্যকর ও নান্দনিক ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সবুজায়ন ও ঢাকা মহানগরীর নাগরিকদের জন্য গণপরিসর উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করার জন্য বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ এবং ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে একটি দ্বিপাক্ষিক সমঝোতা স্মারক আজ স্বাক্ষরিত হয়েছে।
উক্ত সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক জনাব মোহাম্মদ এজাজ এবং সভাপতিত্ব করেন জনাব মোহাম্মদ আবদুর রউফ, সচিব, সেতু বিভাগ ও নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ।
চুক্তিতে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের পক্ষে পরিচালক (প্রশাসন) ও যুগ্মসচিব জনাব আলতাফ হোসেন সেখ এবং ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের-এর পক্ষে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ও (উপসচিব) জনাব মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান স্বাক্ষর করেন। এছাড়া, চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে সেতু বিভাগ, বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ, প্রকল্প পরিচালক এবং ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক জনাব মোহাম্মদ এজাজ বলেন, এই চুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা ঢাকার নাগরিকদের জন্য নতুন প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টি করতে পারব। অব্যবহৃত জায়গাগুলো এখন নাগরিকদের বিনোদন ও বিশ্রামের আধুনিক পরিসরে রূপ নেবে। এই চুক্তির মাধ্যমে ২টি সরকারি প্রতিষ্ঠান সমন্বয়ের মাধ্যমে কার্যক্রম গ্রহণ করেছে, যা নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে একটি যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করবে।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে সচিব সেতু বিভাগ বলেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শহিদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত যুগপোযুগী পরিবর্তনে সবাইকে একসাথে কাজ করে যেতে হবে। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে শুধু যানবাহন চলাচলের জন্যই নয়, বরং এর নিচের স্থানগুলোকে নাগরিক কল্যাণমূলক কাজে ব্যবহার করার মাধ্যমে নগরজীবনকে আরও প্রাণবন্ত ও সুসংগঠিত করা আমাদের লক্ষ্য।
অনুষ্ঠানে সেতু সচিব মহোদয় বলেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের পিলারের মধ্যবর্তী এবং আশপাশের উন্মুক্ত স্থানে দেশীয় ও পরিবেশবান্ধব বৃক্ষরোপণ এবং নান্দনিক বাগান তৈরি করা, নাগরিকদের হাঁটার পথ (ওয়াকওয়ে), সাইকেলের জন্য পৃথক লেন (যেখানে সম্ভব), বসার বেঞ্চসহ প্রয়োজনীয় নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করা এবং এলাকার পরিবেশগত মান উন্নয়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় কার্বন নিঃসরণ হ্রাসে ভূমিকা রাখবে।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের পরিচালক (প্রশাসন) ও যুগ্মসচিব জনাব আলতাফ হোসেন সেখ বলেন, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নিচে অব্যবহৃত জায়গা সৃজনশীল কাজে ব্যবহার হবে।
এই চুক্তির মাধ্যমে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নিচের অব্যবহৃত জায়গাগুলোকে পরিকল্পিতভাবে সাজিয়ে সবুজায়ন, পথচারী-বান্ধব এলাকা, বিনোদন স্পট, খেলার মাঠ, সাইকেল ট্র্যাক, আর্ট ও কালচার কর্ণার, বসার স্থান এবং উন্মুক্ত গণপরিসরে রূপান্তরিত করা হবে। এর ফলে নগরবাসীর জীবনমান উন্নয়ন, বায়ুদূষণ হ্রাস এবং নগরীর পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ ও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের এই সমন্বিত উদ্যোগ, ঢাকা মহানগরীর পরিবেশবান্ধব ও টেকসই নগরায়ণ প্রক্রিয়ায় একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হবে।
নিলাম অযোগ্য Dangerous Goods ও অন্যান্য ধ্বংসযোগ্য পণ্য বিনষ্টকরণের লক্ষ্যে গঠিত আন্ত:সংস্থা কমিটির আহ্বায়ক জনাব মোহাম্মদ নূরুল্লাহ নূরী, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক), চট্রগ্রাম বিভাগ মহোদয়ের নেতৃত্বে পরিবেশ অধিদপ্তর, বিস্ফোরক অধিদপ্তর, ডিজিএফআই, এনএসআই, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ এবং চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস এর প্রতিনিধিবৃন্দের উপস্থিতিতে গত ২৫-১০-২০২৫ এবং ২৬-১০-২০২৫ তারিখে চট্টগ্রাম বন্দরে দীর্ঘদিন পড়ে থাকা ১৯টি Dangerous Goods এর কন্টেইনার পরিবেশসম্মত উপায়ে ধ্বংস করা হয়েছে।
উক্ত ধ্বংসের কাজ গত ২৫-১০-২০২৫ খ্রি. রোজ শনিবার সকাল ৯:০০ ঘটিকা থেকে শুরু করে ২৬-১০-২০২৫ খ্রি. রোজ রবিবার রাত ৯:৩০ টা পর্যন্ত নিরবিচ্ছিন্নভাবে চালু রেখে ধ্বংস কাজ সম্পন্ন করা হয়। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, আনসার সদস্য ও স্থানীয় বন্দর থানার পুলিশ সদস্যগণ উপস্থিত থেকে উক্ত ধ্বংসকাজের নিরাপত্তা প্রদানসহ সার্বিক সহায়তা প্রদান করেন।
ধ্বংসকৃত পণ্যসমূহের মধ্যে রয়েছে Uncoated Calcium Carbonate (১৬ কন্টেইনার), Orange Emulsion (১ কন্টেইনার), Sweet Whey Powder (১ কন্টেইনার) এবং Skimmed Milk Powder (১ কন্টেইনার), যা দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম বন্দরে জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে ছিল বিধায় বন্দরের নিরাপত্তা জনিত ঝুঁকির সৃষ্টি করে।
গত বছর অক্টোবর মাসে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস এবং চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ যৌথভাবে উদ্যোগ নিয়ে ১৪ বছর ধরে বন্দর প্রাঙ্গণে পড়ে থাকা অতিমাত্রায় দাহ্য ৪ টি Hazardous Cargo Containers সফলভাবে বন্দর এলাকা থেকে অপসারণ করে পরিবেশ সম্মত উপায়ে ধ্বংস করতে সমর্থ হয়েছে।
উল্লেখ্য যে, চট্টগ্রাম বন্দরের কন্টেইনার জট কমানোর লক্ষ্যে বন্দরে দীর্ঘদিন পড়ে থাকা প্রায় ৬০৬৯ কন্টেইনার (প্রায় ১০,০০০ TEUs) এর ইনভেন্টরি সম্পন্ন করে তা দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিলামে বিক্রয় করার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড একটি বিশেষ আদেশ জারী করেছে। ইতোমধ্যে উক্ত কন্টেইনারসমুহের মালামালসমূহের ইনভেন্টরি কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন করা হয়েছে এবং উল্লেখযোগ্য পরিমান কন্টেইনারের নিলাম প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস দ্রুততার সাথে চলমান নিলাম সম্পন্ন করে চট্টগ্রাম বন্দরের কন্টেইনার জট কমাতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারবে মর্মে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আশাবাদী।
চট্টগ্রাম বন্দরের সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থার সার্বিক সহযোগীতায় বন্দরে দীর্ঘদিন পড়ে থাকা বিপজ্জনক পণ্যগুলো জরুরী ভিত্তিতে পর্যায়ক্রমে ধ্বংস করার কাজ অব্যাহত থাকবে।