নিজের ভিটেমাটি-জমিজমা সবকিছু লিখে দিয়েও সন্তানদের সঙ্গে থাকা হয়নি বৃদ্ধ লিয়াকত আলীর (৭০)। ফলে জরাজীর্ণ একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন তিনি। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে বাড়িওয়ালা বৃদ্ধের সন্তানদের বলেন তাকে নিজেদের সঙ্গে রাখতে। আর এতেই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন ছেলেরা।
বৃদ্ধ লিয়াকত আলীকে ওই ভাড়া বাসা থেকে এনে নগরীর তালাইমারী এলাকার একটি গণশৌচাগারে রেখে আসেন সন্তানরা। শুক্রবার বিকেলে এ ঘটনা ঘটে। পরে খবর পেয়ে নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহরাওয়ার্দী হোসেন ঘটনাস্থলে গিয়ে সন্তানদের ডেকে বৃদ্ধ লিয়াকতকে তাদের বাড়ি নিয়ে যেতে বলেন। বর্তমানে ওই বৃদ্ধ তার বড় ছেলের বাড়িতে রয়েছেন।
স্থানীয়রা জানান, বৃদ্ধ লিয়াকত আলীর তিন ছেলে ও এক মেয়ে। তিন ছেলেই সচ্ছল। তাদের একজনের নগরীর কাজলা এলাকায় দোতলা বাড়ি রয়েছে। কিন্তু কোনো সন্তানের বাসাতেই স্থান হয়নি তার। বিষয়টি খুবই কষ্টদায়ক।
এ বিষয়ে নগরীর ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তরিকুল আলম পল্টু বলেন, ‘স্ত্রী মারা যাওয়ার পর দ্বিতীয় বিয়ে করেন লিয়াকত আলী। এরপর এই স্ত্রীকে নিয়ে এক বাড়িতে ভাড়া থাকতেন তিনি। বার্ধক্যজনিত কারণে লিয়াকত অচল হওয়ায় দ্বিতীয় স্ত্রী মানুষের বাড়িতে গিয়ে কাজ শুরু করেন।’
জানতে চাইলে বোয়ালিয়া মডেল থানা ওসি সোহরাওয়ার্দী হোসেন বলেন, ‘বিষয়টি এতটাই কষ্ট দিয়েছে যে ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। আমি নিজে তার ছেলের বাড়িতে গিয়ে তাকে রেখে আসি। শনিবার সকালেও আমি তার খোঁজখবর নিয়েছি। এখন বৃদ্ধ ভালো আছেন।’
বাগেরহাটের রামপালে শেখ আব্দুল্লাহ (২৫) নামের এক যুবককে প্রায় ২২ ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। ফাঁকা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর রেখে নির্যাতনের বিষয়টি কাউকে না জানানোর শর্তে পরে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। গত ২৩ মার্চ উপজেলার ব্রী-চাকশ্রি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, গত ২৩ মার্চ দুপুরে ইজিবাইকযোগে বাগেরহাট আসার পথে রামপাল উপজেলার চাকশ্রি নামক স্থান থেকে জোরপূর্বক শেখ আব্দুল্লাহকে তুলে নিয়ে যায় ব্রি চাকশ্রী এলাকার শেখ হাসান আলী ও ইউপি চেয়ারম্যান ফকির আব্দুল্লাহর ভাগনে আবু সালেহসহ কয়েকজন। পরে প্রায় ২২ ঘণ্টা নির্যাতনের পরে পরদিন শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে ছেড়ে দেয়া হয়।
নির্যাতনের শিকার আব্দুল্লাহ বাগেরহাটে সদর উপজেলার মুনিগঞ্জ এলাকার শেখ গফুরের ছেলে। সে বর্তমানে বাগেরহাট জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
নির্যাতনের শিকার আব্দুল্লাহ বলেন, পূর্ব পরিচিত হওয়ায় ব্রি চাকশ্রী এলাকার শেখ হাসান আলীকে এক লাখ ২৭ হাজার টাকা ধার দেই করি। কিন্তু সে আমাকে টাকা না দিয়ে নানা টালবাহানা করতে থাকে। এক পর্যায়ে টাকা পরিশোধ বাবদ শেখ হাসান আলী তার ইজিবাইকটি আমার কাছে বিক্রি করে দেয়। এরপর প্রতিদিন দুই শ টাকা ভাড়ায় ইজিবাইকটি চালাতে থাকে হাসান আলী। কয়েকদিন ভাড়া দিলেও পরে আর দেয়নি। যে কারণে ইজিবাইকটি বিক্রি করে দেই।
পরে এ বিষয় নিয়ে আর কথা হয়নি। কিন্তু হঠাৎ করে গত ২৩ মার্চ দুপুরে শেখ হাসান আলী ও চেয়ারম্যানের ভাগনে আবু সালেহসহ কয়েকজন মিলে জোরপূর্বক আমাকে ধরে নিয়ে যায়। ব্রি চাকশ্রী এলাকায় শেখ হাসান আলী বাড়িতে নিয়ে আমাকে নির্যাতন করে। সন্ধ্যার দিকে আমার বন্ধু প্রাইভেট কার চালক আল আমিনকে চাকশ্রী আসার জন্য আমাকে দিয়ে ফোন করায়। পরে আল আমিন গেলে তাকেও বেঁধে রাখে হাসান ও আবু সালেহরা। সারা রাত আমাকে নির্যাতন করেছে আবুল সালেহ ও হাসানসহ কয়েকজন। বেধড়ক মারধরের পাশাপাশি শরীরে সিগারেটের সেকা ও আঙ্গুলের মধ্যে খেজুরের কাটা ঢুকিয়ে দেয়। এ ছাড়া চোখ উঠিয়ে ফেলার হুমকি দেয়।
আব্দুল্লাহ আরও বলেন, সারা রাত এভাবে নির্যাতনের পর দুপুরে বাইনতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফকির আব্দুল্লাহর কাছে নিয়ে যায় আমাদের। তিনি কোনো কথা না শুনে আমাদের চোখ তুলে ফেলতে বলেন। পরে ফাঁকা স্ট্যাম্পে আমার এবং আমার মায়ের স্বাক্ষর রেখে এবং তিন লাখ টাকার দেয়ার স্বীকারোক্তি রেখে ছেড়ে দেয়।
শেখ আব্দুল্লাহর মা খালেদা বেগম বলেন, আমার ছেলেকে যেভাবে নির্যাতন করেছে, তা মানুষে করে না। চেয়ারম্যানের কাছে যেয়েও কোনো প্রতিকার পাইনি। আমি আমার ছেলেকে নির্যাতনের বিচার চাই।
শেখ আব্দুল্লাহর বন্ধু প্রাইভেটকার চালক আল আমিন বলেন, আল আমিনের ফোন পেয়ে চাকশ্রী বাজারে গেলে, হাসান ও আবু সালেহ আমাকে বেঁধে রাখে। সারা রাত আব্দুল্লাহকে নির্যাতন করে। শুক্রবার দুপুরে আমাদের ছেড়ে দেয়।
অভিযোগ অস্বীকার করে বাইনতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফকির আব্দুল্লাহ বলেন, আমার সামনে কোনো নির্যাতন হয়নি। আবু সালেহ আমার ভাগনে নয়।
বাগেরহাট জেলা হাসপাতালের তত্ত্ববাবধায়ক ডা. অসীম কুমার সমাদ্দার বলেন, আব্দুল্লাহর শরীরের বিভিন্ন স্থানে ফুলা-জখম রয়েছে। গুরুতর কোনো জখম হয়েছে কিনা, সে বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানা যাবে।
এদিকে নির্যাতনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ভাইরাল হওয়া ২ মিনিট ৪৭ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, একটি ঘরের পেছনে আম গাছের সঙ্গে বেঁধে এক যুবককে মারধর করছে কয়েকজন যুবক। পরে ওই যুবককে মাটিতে ফেলে এক পায়ের ওপর দাঁড়িয়ে অন্য পা উপরে উঠিয়ে গালিগালাজ করা হচ্ছে। এক পর্যায়ে দুই পায়ের তলায় মোটা লাঠি দিয়ে পেটাতে দেখা যায় আবু সালেহকে। ওই সময় যুবক মাগো মাগো বলে চিৎকার করতে শোনা যায়।
পুলিশ সুপার কেএম আরিফুল হক বলেন, ভিডিওটি আমরা দেখেছি। বিষয়টি তদন্ত চলছে। অপরাধীদের শনাক্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
‘আমার ছেলের লাশটা আইন্না দাও, আমি দেখমু। আমার পোলাডা ১২ দিনের ছুটি পাইয়া চির ছুটিতে চইলা গেলো।’ এভাবেই আহাজারি করছিলেন সৌদি আরবে ওমরা করতে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত মামুন মিয়ার (২২) বাবা আবদুল আওয়াল।
নিহত মামুন কুমিল্লা মুরাদনগর উপজেলার মোস্তাপুর গ্রামের বাসিন্দা। বুধবার সকাল থেকে প্রতিবেশী ও স্বজনরা ভিড় করতে থাকেন মামুনের বাড়িতে।
বুধবার সকালে মোস্তাপুর গিয়ে দেখা যায়, মামুনের বাবা আবদুল আওয়াল নির্বাক হয়ে বসে আছেন। মা মমতাজ বেগম ছেলের জন্য হাউমাউ করে কাঁদছেন। মোবাইলে ছবি দেখে বুক চাপড়ে কাঁদছেন। আবদুল আওয়ালের ৩ মেয়ে ২ ছেলের মধ্যে মামুন মিয়া চার নম্বর সন্তান। ৬ মাস আগে মামুন তার মামা ইয়ার হোসেনের মাধ্যমে সৌদিতে যান। সেখানে হোটেল বয়ের চাকরি নেন।
নিহত মামুনের মামী তাসলিমা বেগম বলেন, ‘ঘটনার আগে মামুন, তার মামা ইয়ার হোসেন ও মামুনের ভাগিনা জাহিদুল ইসলাম গাড়িতে করে ওমরা করার জন্য মক্কার উদ্দেশে রওনা করে। পথিমধ্যে তারা সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। তাদের বহন করা গাড়িটি ব্রেকফেল করে একটি ব্রিজের সঙ্গে ধাক্কা খায়। পরে গাড়িতে আগুন ধরে যায়। মামুন গাড়ি থেকে বের হতে পারে নাই। আগুনে পুড়ে মারা যায় সে। দুর্ঘটনায় ইয়ার হোসেন ও জাহিদ গুরুতর আহত হন। তারা এখন মক্কার একটি হাসাপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।’
নিহত মামুনের বাবা আবদুল আওয়াল বলেন, ‘অন্তত ৯ মাস আগে মামুন ভিসার জন্য আবেদন করে। বয়স কম হওয়ায় সে আবেদন বাদ দেয়া হয়। পরে ৬ মাস আগে পুনরায় আবেদন করে মামুন। ৫ লাখ টাকা খরচ করে তাকে সৌদিতে আরবে পাঠাই। পুরোটা টাকা ঋণ করেছি আত্মীয় স্বজন ও প্রতিবেশীদের কাছ থেকে।’
মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আলাউদ্দিন ভুইয়া জনি বলেন, ‘আমি নিহতের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি। প্রশাসনিকভাবে পরিবারটির জন্য যা করার দরকার আমরা তাই করবো।’
কুমিল্লা জনশক্তি ও কর্মসংস্থান দফতরের কর্মকর্তা দেব্রবত ঘোষ বলেন, ‘আমরা ঘটনা শুনেছি। মরদেহ দেশে নিয়ে আসার জন্য যা যা করতে হয়, তা সবই করবো।’
উল্লেখ্য, সোমবার বিকেলে সৌদি আরবের মক্কায় ওমরা করতে যাওয়ার সময় সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়ে একটি বাস। সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ওই দুর্ঘটনায় ১২ জন বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আরও অন্তত ১৪ জন বাংলাদেশি আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বগুড়ার সরকারি মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের ওয়ার্ড-মাস্টারের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেছিলেন এক নার্স। গত বছর এ অভিযোগের পর তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সে কমিটিকে তদন্তের জন্য সময় দেয়া হয় পাঁচ কার্যদিবস। এরপর তিন মাস কেটে গেলেও সে তদন্তকাজ শেষ হয়নি। বরং হয়রানির প্রতিবাদের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেয়ার অপরাধে শোকজ করা হয়েছে সেই নার্সকে।
যৌন হয়রানির অভিযোগের সে ঘটনায় অভিযুক্ত ওয়ার্ড মাস্টারের নাম শহিদুল ইসলাম সুইট। গত বছরের ১০ ডিসেম্বর তার বিরুদ্ধে অভিযোগটি করা হয়। এক দিন পর ১২ ডিসেম্বর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. নুরুজ্জামান সঞ্চয় পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন সুইটকে। তারও এক দিন পর ১৪ ডিসেম্বর পাঁচ সদস্যের বোর্ড গঠন করে দেন হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক। বোর্ডকে পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে অভিযোগ তদন্তের সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়।
বোর্ডের সদস্যরা হলেন হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট রফিকুল ইসলাম, আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আরএমও) শফিক আমিন কাজল, আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আরএমও) এ কে এম খায়রুল বাসার, সেবা তত্ত্বাবধায়ক আফরোজা আখতার ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা একরাম হোসেন।
অভিযোগ যাচাই-বাছাইয়ে এই বোর্ড গঠনের তিন মাস পার হলেও কোনো তদন্তই হয়নি। এ নিয়ে একাধিকবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেও প্রতিকার পাননি অভিযোগকারী নার্স। এর মধ্যে চলতি ২৪ মার্চ একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এতে শহিদুল ইসলামের যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করে বক্তব্য দেন ওই নার্স।
এ পরিপ্রেক্ষিতে ২৫ মার্চ নার্সের বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করেন তত্ত্বাবধায়ক ডা. নুরুজ্জামান সঞ্চয়। এতে বলা হয়, তদন্তাধীন বিষয়ে ওই নার্স কর্তৃপক্ষের বিনা অনুমতিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় কথা বলেছেন এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিষোদগার ও ভিত্তিহীন অভিযোগ করেছেন, যা সরকারি চাকরিবিধি-২০১৮ সালের পরিপন্থি ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
যৌন হয়রানির ঘটনায় প্রতিবাদ জানানোর জন্য অভিযোগকারীর বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হলেও মূল অভিযোগ নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক নুরুজ্জামান সঞ্চয় বলেন, নার্সের করা যৌন হয়রানির অভিযোগটি তদন্তে কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু সময়ের অভাবে তদন্তকাজ এগোয়নি। এর মধ্যে ওই নার্সের একটি ভিডিও প্রচার হওয়ায় তদন্ত কর্মকর্তারা কমিটিতে থাকতে চাচ্ছেন না। তারা নাম প্রত্যাহার করে নিতে চাচ্ছেন।
তদন্ত কমিটির সদস্য তত্ত্বাবধায়ক সেবা আফরোজা আখতার সম্প্রতি অবসরে চলে গেছেন। তিনি বলেন, ওই তদন্তে কয়েক জনের সাক্ষ্য নেয়া হয়। শহিদুল ইসলামের সাক্ষ্য নেয়া বাকি ছিল। এরপর ২৭ ফেব্রুয়ারি অবসরে চলে আসি। এখন আমার ওই পদে যিনি আছেন তিনিই তদন্তের দায়িত্বে থাকবেন।
তদন্ত কমিটির প্রধান মেডিসিন বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট রফিকুল ইসলামের দাবি, অভিযোগকারী নার্সের সাক্ষ্য তারা নিয়েছেন। তদন্তের সময়সীমা বাড়িয়ে নিয়েছেন বলেও দাবি করেন তিনি। নার্সের সাক্ষ্য কবে নেয়া হয়েছে, জানতে চাইলে ডা. রফিকুল বলেন, ‘সেটা (সাক্ষ্য) তাকেই (নার্স) জিজ্ঞাসা করুন। আমার এখন মনে নেই।’ তদন্তের সময়সীমা কতটা বাড়ানো হয়েছে, সে প্রশ্নের জবাবও দেননি তিনি।
তবে অভিযোগকারী নার্স বলছেন, তিনি তদন্ত কমিটির কাছে কোনো সাক্ষ্য দেননি। তিনি বলেন, তিন মাসের বেশি হয়ে গেছে আমার অভিযোগের। এখন পর্যন্ত আমার সাক্ষ্য নেয়া হয়নি। হাসপাতালে চাকরি করতে অনিরাপদ বোধ করি। আবার আমার পাশে যারা দাঁড়িয়েছেন তাদেরও হুমকি-ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে।
এদিকে চলতি মাসেই অভিযুক্ত শহিদুল ইসলাম কক্সবাজার ও বান্দরবানে বেড়াতে যান। ভ্রমণে তার সঙ্গী ছিলেন তদন্ত কমিটির এক সদস্য ডা. শফিক আমিন কাজল। শহিদুল ইসলাম নিজের ফেসবুক থেকে তাদের ভ্রমণের ছবি পোস্ট করেন। ঘটনা এমন হলে এই কমিটির কাছ থেকে কীভাবে সঠিক রিপোর্ট পাওয়া যাবে- এমন প্রশ্নও রাখেন অভিযোগকারী সেই নার্স।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেয়া ভিডিওর বিষয়ে অভিযোগকারী বলেন, ‘আমার সঙ্গে যা ঘটেছে তাই বলেছি। আর সুইট তো হাসপাতাল থেকে বিভিন্নভাবে আয় করেন। এটা সবাই জানেন। তার অ্যাম্বুলেন্স আছে। ইমপালস হাসপাতালের অংশীদার তিনি।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শহিদুল ইসলামের সুইটের বাবা মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সচালক ছিলেন। বাবার পরে তিনি হাসপাতালে চাকরি নেন। তার নামে মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল এলাকায় দুটি অ্যাম্বুলেন্স চলে। ঠনঠনিয়া এলাকায় সম্প্রতি চালু হওয়া ইমপালস নামে একটি বেসরকারি হাসপাতালেও মালিকানা আছে তার।
শহিদুল ইসলাম সুইটের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রসঙ্গে ১২৮ জন নার্স সই করে একটি চিঠি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে দিয়েছেন। ওই চিঠিতে সই করা কয়েকজন জানান, সুইট হাসপাতালের সব কিছুতেই প্রভাব খাটান। তিনি নার্স ও মেডিকেল টেকনিশিয়ানদের ইন্টার্ন করার সুযোগ দিয়ে টাকা আদায় করেন।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে অভিযুক্ত শহিদুল ইসলাম সুইট বলেন, ‘তিনি অভিযোগ করেছিলেন। সেটি একটা আপসের মধ্যে চলে এসেছিল প্রায়। কিন্তু এর মধ্যে তিনি একটি ভিডিও দেন ফেসবুকে। তিনি যেসব অভিযোগ করছেন সেগুলো সত্য নয়। আমি শুধু চাকরি করি, আমার অ্যাম্বুলেন্স নেই। অন্য কোনো ব্যবসাও নেই।’
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি মৌখিকভাবে শুনে জেলা সিভিল সার্জনকে বলেছি, যেহেতু বিষয়টি তাদের বিভাগের, সে জন্য সুষ্ঠু ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছি।’
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলায় একটি বিদেশি পিস্তলসহ দুই যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে পুলিশের একটি বিশেষ দল অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার শিমুলবাড়ী ইউনিয়নের সোনাইকাজী এলাকায় শেখ হাসিনা ধরলা সেতুর পূর্ব পাড়ের বাঁশঝাড় থেকে বিদেশি পিস্তলসহ দুই যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তাররা হলেন, সোনাইকাজী গ্রামের বল্টু মিয়ার ছেলে আল-আমিন (২০) এবং ফুলবাড়ী সদর ইউনিয়নের কবির মামুদ গ্রামের শাহিন মিয়ার ছেলে সজিব মিয়া (২০)।
কুড়িগ্রামের ভারপ্রাপ্ত এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রুহুল আমিন গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা নদীর অভয়াশ্রম এলাকায় নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জাটকা শিকারের অপরাধে ২৬ জেলেকে আটক করেছে জেলা টাস্কফোর্স। আটক জেলেদের মধ্যে ১৬ জনকে এক মাস করে কারাদণ্ড, আটজনকে ৩২ হাজার টাকা জরিমানা এবং দুইজন অপ্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ায় তাদের অভিভাবকের জিম্মায় দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
গত মঙ্গলবার রাতে কোস্টগার্ড চাঁদপুর স্টেশনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাকারিয়া হোসেন।
চাঁদপুর সদর উপজেলা সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান জানান, জাটকা রক্ষায় চাঁদপুর পদ্মা-মেঘনায় বেলা ২টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় ২৬ জন জেলে আটক এবং এক লাখ মিটার কারেন্ট জাল জব্দ করা হয়। জব্দকৃত কারেন্টজাল আগুনে পুড়িয়ে বিনষ্ট করা হয়।
ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত দুই মাস জাটকা রক্ষায় পদ্মা-মেঘনার অভয়াশ্রম এলাকায় ইলিশসহ সব ধরনের মাছ আহরণ, ক্রয়-বিক্রয়, মজুত ও পরিবহন নিষিদ্ধ করেছে সরকার। আইন অমান্যকারীর বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড বা পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। গত মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-সোনামসজিদ সড়কের বারোঘরিয়া চামাগ্রাম এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত নিহত ওই নারীর পরিচয় নিশ্চিত করতে পারেনি পুলিশ।
এদিকে এ ঘটনায় ঘাতক যানবহনটি শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ ও স্থানীয়রা। তাদের ভাষ্য, রাস্তা পার হওয়ার সময় এ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ফরহাদ আকিদ রেহমান জানান, আহত অবস্থায় ওই নারীকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। তবে হাসপাতালে আনার আগেই মারা যান। মরদেহ হাসপাতালে রাখা হয়েছে। পুলিশ পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) জালাল উদ্দীন জানান, নিহত ওই নারীর পরিচয় শনাক্তে পুলিশ কাজ করছে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হবে।
চট্টগ্রামে নিখোঁজের ৮ দিন পর চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী আবিদা সুলতানা আয়নীর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় জড়িত সবজি ব্যবসায়ী রুবেলকেও আটক করা হয়েছে। বুধবার ভোরে পাহাড়তলী থানার পুকুরপাড়া মুরগি ফার্ম এলাকা থেকে ওই শিশুর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
নিহত আবিদা সুলতানা আয়নী নগরীর পাহাড়তলী থানার কাজীর দিঘি এলাকার আব্দুল হাদী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী। আটক সবজি ব্যবসায়ী রুবেলও একই এলাকার বাসিন্দা।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর পরিদর্শক ইলিয়াস খান।
তিনি বলেন, ‘১০ বছর বয়সী স্কুলছাত্রী আবিদা সুলতানা আয়নী নিখোঁজের পর পিবিআই ছায়া তদন্ত শুরু করে ঘটনার রহস্য উন্মোচন করে একজনকে আটক করে। তার দেখানো মতে পাহাড়তলী থানার আলমতারা পুকুরপাড়া মুরগি ফার্ম এলাকা থেকে আয়নীর মরদেহ পাওয়া যায়।’
পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর পুলিশ সুপার (এসপি) নাঈমা সুলতানা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘শিশুটিকে অপহরণের পর ধর্ষণ করে রুবেল। এ সময় আয়নী চিৎকার করায় শ্বাসরোধে হত্যা করে সে। পরবর্তীতে মরদেহটি বস্তাবন্দির পর সবজির ঝুড়িতে করে রাতেই পুকুর পাড়া মুরগির ফার্ম এলাকায় ফেলে দিয়ে যায়।’
ঘটনার পর দাঁড়ি কেটে বেশ-ভূষা পরিবর্তন করলেও এলাকায় থেকে সবজি বিক্রি করে যাচ্ছিল অভিযুক্ত রুবেল। তাই তার আচরণে সন্দেহজনক কিছু না পাওয়ায় ঘটনার রহস্য উন্মোচনে সময় লেগেছে বলেও জানান তিনি।
২১ মার্চ আরবি পড়তে বের হয়ে নিখোঁজ হয় আয়নী। অনেক খোঁজাখুঁজির পরও কোথাও না পেয়ে থানায় মামলা করতে যান স্বজনরা। কিন্তু থানায় মামলা না নেয়ায় গত মঙ্গলবার সকালে চট্টগ্রামের নারী শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-২ এ মামলার আবেদন করেন শিশুটির মা বিবি ফাতেমা।
মামলায় মো. রুবেল নামের এক সবজি বিক্রেতাকে আসামি করা হয়। আবেদনের শুনানি শেষে আদালতের বিচারক শরমিন জাহান পাহাড়তলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) সরাসরি এজাহার গ্রহণের নির্দেশ দেন।
মামলার আবেদনে বলা হয়, ওই শিশুর মা চট্টগ্রামে ও বাবা ঢাকায় পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। মা চাকরিতে গেলে শিশুটি তার দাদির কাছে থাকত। কয়েক দিন আগে শিশুটি তার মাকে জানায়, স্কুলের এক বান্ধবী বিড়ালছানা কিনেছে, সেও কিনবে। পাশাপাশি জানায়, রাস্তায় বসা এক সবজি বিক্রেতা তাকে আরেকজনের কাছ থেকে বিড়ালের বাচ্চা এনে দেবে বলেছে। তবে শিশুটির মা তাকে জানিয়ে দেয়, কারও কাছে যেতে হবে না, বেতন পাওয়ার পর তিনিই কিনে দেবেন। এর কয়েক দিনের মাথায় (২১ মার্চ) শিশুটি বিকেলে আরবি পড়তে যাওয়ার পর আর ফিরে না এলে তার দাদি ফোনে কর্মস্থলে মাকে বিষয়টি জানান। এরপর শিশুটির মা দ্রুত এসে সম্ভাব্য সব স্থানে খুঁজেও তার মেয়েকে পাননি।
পরে শিশুটির মা আশপাশের ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করেন। সেখানে দেখতে পান, ঘটনার আগের দিন ১২টা ৫০ মিনিটের দিকে স্কুল বিরতির সময় রুবেল (৩৫) নামে এক সবজি বিক্রেতা কৌশলে শিশুটিকে তার বাসায় নিয়ে যান। আর ঘটনার দিনের ভিডিও ফুটেজে দেখতে পান, বিকেল ৪টা ২৫ মিনিটের দিকে শিশুটি বোরকা পরে আরবি পড়তে যাচ্ছিল। এ সময় রুবেলের সঙ্গে সে কথা বলছিল। এক পর্যায়ে রুবেল বাজারের থলেতে একটি বিড়ালছানা শিশুটির হাতে তুলে দেয়। এরপর রুবেল ও শিশুটিকে আর দেখা যায়নি। শিশুটির পরিবারের ধারণা, বিড়াল ছানার নাম করেই বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তাকে।
সিসিটিভি ফুটেজ দেখে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের সহযোগিতায় রুবেল আয়নীকে অপহরণ করেছে বলে অভিযোগ করে আসছিলেন বিবি ফাতেমা।
এর আগে ২৪ অক্টোবর চিপস কিনতে বের হয়ে নগরীর জামালখান এলাকায় নিখোঁজ হন ৭ বছর বয়সী মার্জনা হক বর্ষা। এর তিনদিন পর একই এলাকার একটি নালা থেকে বর্ষার বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যার দায়ে লক্ষণ দাশ নামের এক দোকান কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
এরপর ১৫ নভেম্বর নগরীর ইপিজেড থানার বন্দরটিলা নয়ারহাট বিদ্যুৎ অফিস এলাকার বাসা থেকে পার্শ্ববর্তী মসজিদে আরবি পড়তে যাওয়ার সময় নিখোঁজ হয় আলিনা ইসলাম আয়াত। পরদিন এই ঘটনায় ইপিজেড থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন তার বাবা সোহেল রানা।
নিখোঁজের ৯ দিন পর সিসিটিভি ফুটেজ দেখে জড়িত সন্দেহে আয়াতের পরিবারের ভাড়াটিয়া আবির আলীকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই। মুক্তিপণ আদায়ের উদ্দেশ্যে আয়াতকে অপহরণের পর শ্বাসরোধে হত্যা করেছিল বলে আদালতে জবানবন্দি দেয় আবির। এরপর পিবিআইয়ের কয়েক দফা চেষ্টায় নগরীর আকমল আলী সড়কের আশেপাশে বিভিন্ন জলাশয় থেকে আয়াতের খণ্ডিত পা ও মাথা উদ্ধার করা হয়।
আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং তেমন বৃষ্টি না হওয়ায় এবার পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে তরমুজের ভালো ফলন হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও তরমুজচাষিরা। কৃষকরাও ভালো দাম পাচ্ছেন। তাতে হাসি ফুটেছে তরমুজচাষিদের মুখে।
রাঙামাটিতে বেশির ভাগ তরমুজ উৎপাদন হয় কাপ্তাই হ্রদের জলে ভাসা জমিতে। এর মধ্যে রাঙামাটির লংগদু, নানিয়ারচর, বরকল ও রাঙামাটি সদর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি তরমুজের চাষ হয়েছে। টসটসে রসালো তরমুজে ছেয়ে গেছে রাঙামাটি শহরের প্রতিটি বাজারে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে তরমুজ পাঠানো হচ্ছে ঢাকা-চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়।
রাঙামাটি পার্বত্য জেলায় এবার প্রায় ৭২০০ মেট্রিক টন তরমুজ উৎপাদন হবে বলে আশা করছে স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। স্থানীয় চাষিরা বলছেন, চলতি মৌসুমে রাঙামাটির প্রত্যন্ত পাহাড়ি এলাকায় তরমুজের প্রচুর উৎপাদন হয়েছে। এসেছে বাম্পার ফলনও। তাতে মিলবে কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন।
মৌসুমি ফল তরমুজ চাষ করে ফলন ভালো হওয়ায় খুশি শহরের বনরূপা সমতা ঘাটের চাষিরা। তারা বলছেন, গত বছরের তুলনায় এবার তরমুজের ভালো ফলন হয়েছে। তরমুজ আবাদে ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে অনেক চাষির।
রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলার তরমুজচাষি আমির হোসেন বলেন, ‘আমি এবার ৬০ একর জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। এ বছর বৃষ্টি না হওয়ায় তরমুজের ফলন ভালো হয়েছে। এ পর্যন্ত ১৮ লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করেছি। প্রতি পিস তরমুজে ৮০ থেকে ১৩০ টাকা পর্যন্ত দাম পেয়েছি।’
তরমুজ বিক্রেতা দীপংকর চাকমা বলেন, ‘আমি রাঙামাটির লংগদু উপজেলার মাইনী থেকে প্রতি ১০০ তরমুজ কিনেছি ৫ থেকে সাড়ে ৫ হাজার টাকায়। এখানে সমতা ঘাটে প্রতি ১০০ তরমুজ বিক্রি করছি ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা করে।
পাইকারি তরমুজ ক্রেতা আব্দুল মান্নান বলেন, ‘আমরা এখান থেকে তরমুজ নিয়ে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যাই। দেশের বিভিন্ন জায়গায় রাঙামাটির তরমুজের চাহিদা আছে।’
রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) আপ্রু মারমা বলেন, রাঙামাটিতে এ বছর আবহাওয়া ভালো হওয়ায় তরমুজের ফলন ভালো হয়েছে। বাজারে তরমুজ আসতে শুরু করেছে। আগাম জাতের তরমুজে বাজারে দামও ভালো মিলছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলায় মানুষের আমিষের চাহিদা মেটাচ্ছে মাংস, দুধ ও ডিম। আর সেই আমিষের চাহিদা মেটাতে উপজেলাটিতে বছরে ১৭৭ কোটি টাকার প্রাণিজ আমিষ উৎপাদন হচ্ছে। এতে স্থানীয়দের চাহিদা মিটিয়েও বাণিজ্যিকভাবে অন্য জায়গায় সরবরাহ করে স্থানীয় অর্থনীতি সচল রাখতে ভূমিকা পালন করছে। সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ও দপ্তর সার্বিকভাবে অর্থনৈতিক সহযোগী করলে স্থানীয় তরুণদের মাধ্যমে প্রাণিজ আমিষ উৎপাদনে আখাউড়া উপজেলা গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে গড়ে উঠবে বলে মনে করছেন উৎপাদনকারীরা।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছর শেষে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী এ উপজেলায় মোট গরুর সংখ্যা প্রায় ২৬ হাজার। এর মধ্যে দেশীয় গরু প্রায় ২১ হাজার, বাকি পাঁচ হাজার শংকর জাতের গরু। এ ছাড়া রয়েছে ৭০০ মহিষ, প্রায় ৫ হাজার ৩০০ ছাগল ও ভেড়া। দেশি মুরগির সংখ্যা প্রায় ১ লাখ ৩৫ হাজার, ব্রয়লার মুরগি ১ লাখ ১২ হাজার, লেয়ার মুরগি ১০ হাজার, সোনালি মুরগি ৪৫ হাজার, দেশি-উন্নত জাতের হাঁস প্রায় ৫০ হাজার এবং কবুতর রয়েছে প্রায় ১০ হাজার।
গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ও হাঁস-মুরগি থেকে বাৎসরিক মাংস উৎপাদন হচ্ছে প্রায় দেড় হাজার টন। এর মূল্য প্রায় ৯১ কোটি ৬০ লাখ টাকা। দুধ উৎপাদন হচ্ছে প্রায় ৯ হাজার ৩০০ টন, যার আর্থিক মূল্য প্রায় ৫৬ কোটি সাড়ে ১৩ লাখ টাকা। এর বাইরে ডিম উৎপাদন হচ্ছে প্রায় ২ কোটি ২১ লাখ পিস, যার আর্থিক মূল্য প্রায় ৩০ কোটি টাকা। সার্বিকভাবে উপজেলার প্রাণিসম্পদ খাত থেকে বার্ষিক প্রাপ্তি ১৭৭ কোটি টাকার বেশি। প্রাণিসম্পদ খাতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত মানবসম্পদ উপজেলার মোট জনসংখ্যার প্রায় ৬৭ শতাংশ।
এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, পাঁচটির বেশি গরু রয়েছে, উপজেলায় এমন খামারের সংখ্যা ৭১৫টি। এ ছাড়া রয়েছে ১৩০টি পোলট্রি খামার, ৩৯টি ছাগলের খামার, ২৫টি ভেড়ার খামার। কয়েক দশক আগেও হাট-বাজারে মাংস, ডিম ও মুরগি তেমন সহজলভ্য ছিল না। নব্বইয়ের দশকের পরে বাণিজ্যিকভাবে গরু ও মুরগির লালন-পালন শুরু হয়। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকতে এর পরিধি। অল্প সময়েই ব্রয়লার, লেয়ার মুরগি, হাঁস, গরু, দুধ ও ডিম মানুষের অন্যতম প্রধান খাবারের জায়গা করে নিয়েছে। স্থানীয়রা পারিবারিক ও বাণিজ্যিকভাবে খামার গড়ে তুলে তা থেকে আর্থিকভাবেও স্বাবলম্বী হয়েছেন।
পৌর শহরের তারাগন এলাকার খামারি মো. ইব্রাহিম ভূঁইয়া বলেন, ‘গত পাঁচ বছর ধরে দেশীয় পদ্ধতিতে গরু লালন-পালন করছি। খামারের আটটি গাভি থেকে দৈনিক দুধ পাচ্ছি প্রায় ৩০ কেজি। নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে দৈনিক ২৫ কেজি দুধ বিক্রি করছি। এ থেকে পরিবারের খরচ মিটছে।’
খামারি মো. রফিকুল ইসলাম জানান, আট বছর ধরে তিনি খামারে গরু লালন-পালন করছেন। বর্তমানে তার খামারে ছোট বড় মিলে গরুর সংখ্যা ৩০টি, এর মধ্যে গাভি ১০টি। প্রতিদিন তিনি খামার থেকে ৬০ কেজি দুধ বিক্রি করছেন। দেশীয় পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজাকরণের মাধ্যমে দুধ ও মাংসের স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে আসছেন।
তবে খামারের পেছনের খরচ দিন দিন বাড়ছে বলে অভিযোগ খামারিদের। রফিকুল ইসলাম বলেন, যেভাবে সয়াবিনের খৈল, গমের ভুসি, মসুর ভুসি, ফিড ভুট্টাসহ গো-খাদ্যের দাম বাড়ছে, তাতে গরু পালন করা খুবই কঠিন হয়ে পড়ছে।
আজমপুর এলাকার মো. মহরম আলী বলেন, খামার থেকে প্রতিদিন ৩০ কেজি দুধ বিক্রি করতে পারি। বাজারে দুধের চাহিদা ভালো। কিন্তু গো-খাদ্যের দাম যেভাবে বাড়ছে, এই দাম না কমলে ছোট খামারিদের অনেক লোকসান গুনতে হবে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাক্তার জুয়েল মজুমদার বলেন, উপজেলায় গত এক দশকে দুধ, ডিম ও মাংসের উৎপাদন কয়েক গুণ বেড়েছে। সরকারি সহযোগিতায় বাণিজ্যিকভাবে এ উপজেলায় ছোট বড় অসংখ্য গবাদিপশু, হাঁস-মুরগির খামার গড়ে উঠেছে। অনেকে পারিবারিকভাবেও পশু লালন-পালন করছেন। এতে স্থানীয়দের আমিষের চাহিদা মিটছে, অন্য এলাকাতেও সরবরাহ করা হচ্ছে। সরকারও এ খাতকে এগিয়ে নিতে সহায়তা করছে।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অষ্টমী স্নানের কারণে মহাসড়কে যানবাহনের অব্যাহত চাপে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া অংশে ঢাকামুখী লেন তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘ সময় যানজটে আটকে থেকে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন মানুষ।
গজারিয়া ভবেরচর হাইওয়ে পুলিশ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এ এস এম রাশেদুল ইসলাম বলেন, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অষ্টমী স্নানের কারণে মহাসড়কে যানবাহনের চাপ স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেড়ে গেছে। যানবাহনের অবাহত চাপে প্রথমে নারায়ণগঞ্জ সোনারগাঁও অংশ সৃষ্টি হয় যানজট। মঙ্গলবার দিবাগত রাত একটার দিকে গজারিয়া অংশে যানজট শুরু হয়, যা পরবর্তীতে দাউদকান্দির টোল প্লাজা পেরিয়ে দাউদকান্দি মোহন সিএনজি পাম্পের সামনে পর্যন্ত পৌঁছে যায়।
যানজটে আটকে থাকা আসলাম হোসেন বলেন, তার বাসা গজারিয়ায়। তিনি বাড়ি থেকে আসা-যাওয়া করে ঢাকাতে চাকরি করেন। প্রতিদিনই পৌনে সাতটার দিকে বাড়ি থেকে বের হন এবং যথাসময়ে অফিসে পৌঁছে যান। তবে আজকে মহাসড়কে তীব্র যানজটের কারণে ৮টা বাজলেও তিনি মেঘনা টোল প্লাজা পার হতে পারেননি। সেজন্য বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব মহাতীর্থ লাঙ্গলবন্দের অষ্টমী স্নান শুরু হয় গত মঙ্গলবার। এদিন সন্ধ্যা ৭টা ৫ মিনিটে লগ্ন শুরু হয়। এবারের অষ্টমী স্নান উৎসব দেশ-বিদেশ মিলিয়ে ১০ লাখের বেশি পুণ্যার্থীর আগমন ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
হিন্দু শাস্ত্র মতে, দেবতা পরশুরাম হিমালয়ের মানস সরোবরে স্নান করে পাপমুক্ত হন। হিমালয়ের মানস সরবরের পানি ব্রহ্মপুত্র নদে মিশেছে। প্রতি বছর চৈত্র মাসে পূণ্য লাভের আশায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা জড়ো হন নারায়ণগঞ্জের লাঙ্গলবন্দের ব্রহ্মপুত্র নদে। সেখানে স্নান করে নিজেদের পাপমোচন করেন। দেশের বাইরে থেকেও অনেকে আসেন এই অষ্টমী স্নানে।
হঠাৎ করেই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার মোগড়া উচ্চ বিদ্যালয় পরিদর্শনে যান জেলার ডিসি মো. শাহগীর আলম। এ সময় তিনি বিদ্যালয়টির শরীরচর্চা বিভাগের শিক্ষক সোহরাব হোসেনকে জাতীয় সংগীত গাইতে বলেন। তবে শুদ্ধ ও সঠিক জাতীয় সংগীত গাইতে না পারায় বিদ্যালয়ের এই শিক্ষককে শোকজ করেন জেলা প্রশাসক।
পরে সোহরাব হোসেনের উদ্দেশে জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম বলেন, ‘আপনি সঠিকভাবে জাতীয় সংগীত গাইতে না পারলে শিক্ষার্থীদের কীভাবে শেখাবেন?’
মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার প্রাচীনতম এই বিদ্যাপীঠে ঘটনাটি ঘটে। শুধু সোহরাব হোসেন নন, বিদ্যালয়ের ব্যাপারে উদাসীনতা ও জেলা প্রশাসকের পরিদর্শনকালে উপস্থিত না থাকায় উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবুল হোসেনকেও শোকজ করা হয়।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম বলেন, ‘‘কোমলমতি শিক্ষার্থীরা কী শিখছে? তারা আদৌ দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে কি না সেই বিষয়টি জানার জন্যই আমি বিদ্যালয় পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। এ সময় মোগড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শরীর চর্চা বিভাগের শিক্ষক সোহরাব হোসেনকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘আপনি তো শিক্ষার্থীদের শরীর চর্চা করান। বিদ্যালয়ে অ্যাসেম্বলির সময় জাতীয় সংগীতও গাইতে সহযোগিতা করেন। আপনি কি জাতীয় সংগীতের কয়েক লাইন গেয়ে শুনাবেন?’ কিন্তু তিনি শুদ্ধ ও সঠিকভাবে জাতীয় সংগীত গাইতে পারছিলেন না। তখন আমি তাকে প্রশ্ন করলাম, ‘আপনি নিজেই সঠিকভাবে জাতীয় সংগীত গাইতে পারলেন না, শিক্ষার্থীদের কী শেখাবেন?’’
মোগড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শশাঙ্ক রায় চৌধুরী জানান, জেলা প্রশাসক স্যার হঠাৎ করেই বিদ্যালয়ে প্রবেশ করেন। এ সময় তিনি বিদ্যালয়ের মাঠে শরীরচর্চা বিভাগের শিক্ষক সোহরাব হোসেন স্যারকে পেয়ে তার নাম-পরিচয় জিজ্ঞাসা করেন। এক পর্যায়ে তাকে শুদ্ধভাবে জাতীয় সংগীত গাইতে বলেন। সম্ভবত তিনি অপ্রস্তুত হয়ে যাওয়ার কারণে সঠিকভাবে জাতীয় সংগীত গাইতে পারছিলেন না। এ সময় ডিসি স্যার তাকে প্রশ্ন করেন, ‘আপনি সঠিকভাবে জাতীয় সংগীত গাইতে না পারলে শিক্ষার্থীদের কীভাবে শেখাবেন?’
এদিকে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবুল হোসেন বলেন, ‘জেলা প্রশাসক স্যার পরিদর্শনে আসবেন এ বিষয়টি কেউ আমাকে আগে থেকে অবগত করেননি। তিনি আসবেন জানলে অবশ্যই আমি ওই বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকতাম।’
রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার মৌগাছি বাজারে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের এজেন্ট মেসার্স সরকার ফার্মেসী গ্রাহকদের প্রায় অর্ধ কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার সকালে ভুক্তভোগী গ্রাহকেরা টাকার দাবিতে শাখাটির সামনে অবস্থান করেন এবং একপর্যায়ে শাখাটিতে তালা ঝুলিয়ে দেন। পরে পুলিশ উপস্থিত হয়ে পরিবেশ শান্ত করে।
এদিকে অভিযুক্ত মেসার্স সরকার ফার্মেসীর মালিক উপজেলার বাটুপাড়া গ্রামের ইদ্রিস সরকারের ছেলে আরজেদ সরকার ও তার শ্যালক শাহিনের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
ভুক্তভোগী গ্রাহক সূত্রে জানা গেছে, টাকা জমা দেয়ার রসিদ ও বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের রসিদ দিলেও সেই অর্থ জমা না হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন তারা। আর সেই টাকা জমা নিলেও তা অ্যাকাউন্টে জমা করেননি এজেন্ট মালিক।
ভুক্তভোগীরা জানান, নুড়িয়াক্ষেত্র গ্রামের মোজাহার আলী গত ১৬ মার্চ মোহনপুর কৃষি ব্যাংক থেকে টাকা তুলে মৌগাছি বাজারে ডাচ্-বাংলা এজেন্ট শাখায় ৫০ হাজার টাকা জমা দেন। পরদিন সেই টাকা তুলতে গেলে তিনি জানতে পারেন, তার অ্যাকাউন্টে কোনো টাকা জমা নেই। অন্যদিকে হরিফলা গ্রামের মোস্তফা টাকা জমা রেখেছিলেন ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা। এর মধ্যে ৮০ হাজার টাকা তিনি তুলে নেন। পরে বাকি ৯০ হাজার টাকা তুলতে গেলে তার অ্যাকাউন্টে মাত্র ১০ হাজার টাকা পান। বাকি টাকা নিয়ে তালবাহানা করতে থাকেন শাখার মালিক। আরেক ভুক্তভোগী কালিগ্রামের মেহের আলী আট লাখ টাকা অ্যাকাউন্টে জমা রাখলেও সেই টাকা জমার রসিদের বিপরীত অ্যাকাউন্টে জমা হয় মাত্র ৫৬ হাজার টাকা।
বাটুপাড়া গ্রামের শিউলি বেগম, মৌগাছি গ্রামের রেজিয়া বিবি, বাটুপাড়া গ্রামের যাদু বেগম, হরিহরপাড়ার মিনারুলসহ অনেকেই এই শাখায় টাকা জমা রেখে পরে আর টাকার সন্ধান পাননি। এ ছাড়া নুড়িয়াক্ষেত্র গ্রামের অনেকে বিদ্যুৎ বিলের টাকা জমা দিলেও পরে জানতে পারেন, তাদের বিলের কোনো টাকা জমা হয়নি। বিল বকেয়া থাকায় তাদের অনেকের সংযোগ কেটে দেয়া হয়।
মোহনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেলিম বাদশাহ বলেন, ‘মৌগাছি বাজারে ডাচ্-বাংলা এজেন্ট শাখায় প্রতারণার শিকার গ্রাহকদের জড়ো হওয়ার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শাখাটি তালাবদ্ধ পায়। তবে মালিক পক্ষের কাউকে পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
বাগেরহাটে রমজানে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে বাজার পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান। মঙ্গলবার বিকেলে বাগেরহাট শহরের প্রধান মাছ, মাংস, সবজি, চাল ও ফলের বাজার পরিদর্শন করেন তিনি।
পরিদর্শনের সময় তিনি বিভিন্ন পণ্যের ক্রয় ভাউচার ও বিক্রয়মূল্য পরীক্ষা করেন। সেই সঙ্গে খেজুর, তরমুজ, আঙ্গুর, লেবুসহ বিভিন্ন ফল ও নানা ধরনের মাছের ভালো-মন্দ যাচাই করেন। পরে ৭২০ টাকা কেজি মূল্যে গরুর মাংস, ২২০ টাকায় ব্রয়লার মুরগি ও ৩৩০ টাকা কেজি দরে সোনালি মুরগি বিক্রির নির্দেশ দেন। এ ছাড়া বেগুন, কুমড়া, লাউ, করলা, পুঁই শাকসহ বিভিন্ন সবজির সর্বনিম্ন মূল্যে বিক্রির আহ্বান জানান ব্যবসায়ীদের।
বাজার পরিদর্শনে জেলা প্রশাস সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হাফিজ আল আসাদ, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আরিফুল ইসলাম, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবাইয়া তাছনিম, জেলা বাজার কর্মকর্তা সুজাত খান, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল ইমরান, বাগেরহাট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি লিয়াকত হোসেন লিটনসহ ব্যবসায়ী নেতারা।
এদিকে জেলা প্রশাসকের বাজার পরিদর্শনের খবর পেয়ে বেশ কিছু মুদি দোকানদার ও মাংস ব্যবসায়ী দোকান ফেলে গা ঢাকা দেন। ভবিষ্যতে এসব ব্যবসায়ীদের বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে জেলা প্রশাসক ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশন দেন।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান বলেন, রমজান এলেই কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অতিরিক্ত মুনাফা লাভের জন্য নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। এটি অপরাধ।
জেলা প্রশাসক আরও বলেন, অসাধু ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য রোধ করতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিয়মিত বাজার মনিটরিং ও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। আজ (গতকাল) বাজার পরিদর্শন করে অসঙ্গতিপূর্ণ দামের পণ্যগুলো নির্ধারিত দামে বিক্রির নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের সতর্ক করা হয়েছে। ভবিষ্যতেও এ ধরনের বাজার মনিটরিং ও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা অব্যাহত থাকবে।