মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার বড়লেখা রেঞ্জের দায়িত্বে থাকা সমনভাগ বিটের (ভারপ্রাপ্ত) বিট কর্মকর্তা নুরুল ইসলামকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
বন বিভাগের বড়লেখা রেঞ্জ কর্মকর্তা শেখর রঞ্জন দাস বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ শুক্রবার রাতে সমনভাগ বিটের কর্মকর্তা নুরুল ইসলামকে প্রত্যাহার করেছে। তাকে বন বিভাগের সিলেট বিভাগীয় অফিসে সংযুক্ত করা হয়েছে।
গত ১ মার্চ পাথারিয়া হিলস রিজার্ভ ফরেস্টের সমনভাগ বিটের মাখালজোরা, আলমবাড়ী ও ধলছড়া এলাকার বনাঞ্চলে আগুন দেখতে পান স্থানীয়রা। বিষয়টি বিট কর্মকর্তা নুরুল ইসলামকে জানালে তিনি ৭ মার্চ আগুন নেভাতে যান।
এ ঘটনা তদন্তে গঠিত তিন সদস্যের কমিটি এখনো তদন্তকাজ করছে। আজ রোববার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
স্থানীয় লোকজন ও পরিবেশবাদীদের অভিযোগ, বনায়নের জন্য পরিকল্পিতভাবে সংরক্ষিত বনে আগুন লাগানো হয়েছে। এর আগে এমন ঘটনা একাধিকবার হয়েছে। বন বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে উপকারভোগীরা বনে আগুন দিয়েছেন। আগুনে বনের ছোট-বড় ১০-১২টি টিলাসহ প্রায় ৪০ একর বনভূমির বাঁশগাছ ও বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ পুড়ে গেছে। এতে মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে পরিবেশের। হুমকির মুখে পড়েছে জীববৈচিত্র্য।
তবে বন বিভাগ বলছে, সিগারেটের অবশিষ্ট অংশ থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে। আগুনে বনের প্রায় ১ দশমিক ৮৫ হেক্টর বনভূমি পুড়ে গেছে।
পাথারিয়া হিলস রিজার্ভ ফরেস্টের আওতাধীন সমনভাগ বিটের সমনভাগ সংরক্ষিত বনের আয়তন ১ হাজার ৮৫০ একর। সমনভাগ বনাঞ্চলটি দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে মিশ্র চিরসবুজ একটি সংরক্ষিত বন এবং উদ্ভিদ ও প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষায় বাংলাদেশের মধ্যে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের অবস্থান উল্লেখযোগ্য। আগুনে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে বনভূমির প্রাকৃতিক পরিবেশ, ধ্বংস হয়েছে বন্য প্রাণীর আবাসভূমি। বনে আগুন লাগার ঘটনায় ১১ দিন পর গত ১১ মার্চ বড়লেখা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন বন বিভাগের সমনভাগ বিটের কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম।
স্থানীয়রা জানান, আগুনে বনের ভেতর প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো বিভিন্ন প্রজাতির বাঁশগাছ ও লতাগুল্ম পুড়ে গেছে। প্রাণের ভয়ে বনে থাকা কয়েকটি হাতি ভারতের দিকে পালিয়েছে। ১১ দিন বন আগুনে পুড়েছে। বন বিভাগের লোকজনকে জানানোর পরও তারা গুরুত্ব দেননি। শুরুতে গুরুত্ব দিলে এতদিন বন পুড়ত না।
পাথারিয়া বন্য প্রাণী সংরক্ষণ টিমের সদস্য ও পরিবেশকর্মী দেলাওয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা সমনভাগ বিটের মাখালজুড়া আলামবাড়ী ও ধলছড়া এলাকার বনাঞ্চল ঘুরে দেখেছি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, আনুমানিক প্রায় ৪০ একর এলাকা আগুনে পুড়ে গেছে। একদিকে আগুনে বন পুড়ছে, অন্যদিকে কিছু লোক সেখান থেকে গাছ ও বাঁশ অবাধে কেটে ফেলছে। আমরা জেনেছি যে বনায়নের জন্য পরিকল্পিতভাবে আগুন দিয়ে সংরক্ষিত বন পোড়ানো হয়েছে। এতে বন বিভাগের লোকজন জড়িত রয়েছেন।’
ঘুষ-দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) রাজবাড়ী কার্যালয়। সেখানে দালাল ছাড়া কোনো কাজ হয় না। এ অভিযোগ দীর্ঘদিনের। দুদক অভিযান চালিয়ে রাজবাড়ী বিআরটিএর কতিপয় অসাধু কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করলেও জামিনে মুক্তি পেয়ে একই চক্র ফের তাদের কার্যক্রম আগের মতই চালিয়ে যাচ্ছে। চাহিদামতো অর্থ ছাড়া এখানকার কোনো ফাইল নড়ে না। সেবাগ্রহিতাদের দুর্ভোগের শেষ নেই। টাকা নেওয়ার পরও কাজ না হলেও ফেরত দেওয়া হয় না কোনো অর্থ। প্রতিবাদ করলেই দালালদের হাতে লাঞ্ছিত হতে হয় । এ যেন নিত্যদিনের ঘটনা। তবে প্রশাসনের চোখে পড়ে না এসব অনিয়ম-দুর্নীতি।
সোমবার সকাল সাড়ে ১০ টার সময় রাজবাড়ী বিআরটিএ অফিসের সিল কন্ট্রাক্টর মো. আক্রামুজ্জামান কাছে টাকা দিয়ে কাজ না হওয়ায় টাকা ফেরত চেয়ে মারধরের শিকার হয়েছেন রাজবাড়ী সদর উপজেলার গোয়ালন্দ মোড় এলাকার মো. সুমন শেখ।
মো. সুমন শেখ অভিযোগ করে বলেন, এক বছর আগে কাগজের জন্য সাড়ে আট হাজার টাকা জমা দেই আকরাম হোসেনের নিকট। সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার কাগজ নিতে বিআরটিএতে আসলে আক্রামুজ্জামান আমার কাছে ব্যাংক স্লিপ চায়। এ সময় এক বছর আগের স্লিপ, আপনার কাছে জমা দিয়েছি, এখন কোথায় পাব, বললে থাপ্পর মারে। এ সময় প্রতিবাদ করলে আকরাম হোসেনসহ তার সাথে থাকা ৪-৫ জন এলোপাথারীভাবে মারধর শুরু করে। টাকা দিয়ে কাজ না হওয়ায় টাকা ফেরত চাইলে এভাবে মারতে পারে না। আমি এর বিচার চাই।
মো. বিল্লাল হোসেন নামে এক ব্যক্তি বলেন, আমার ড্রাইভিং লাইসেন্সের ভারী থেকে হালকা করার জন্য আকরাম হোসেন ৮ হাজার টাকা দাবি করে। তাকে ৬ হাজার টাকা প্রদান করার পরও আজ ২ বছর ধরে আজ-কাল করে ঘোরাচ্ছে।
জানা গেছে, ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে মানুষের ভোগান্তি সৃষ্টি করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে রাজবাড়ী বিআরটিএ অফিসে গত ৭ মে অভিযান পরিচালনা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ অভিযানে দালাল চক্রের মূলহোতা রাজবাড়ী বিআরটিএ অফিসের সিল কন্ট্রাক্টর ও রাজবাড়ী সদর উপজেলার কাজীবাঁধা বেথুলিয়া গ্রামের বেলায়েত হোসেনের ছেলে আক্রামুজ্জামান, দালাল চরলক্ষীপুর
গ্রামের আব্বাস আলী খানের ছেলে আশিক খান, গোপিনাথদিয়া গ্রামের রহমত আলীর ছেলে লিয়াকত আলী, কাজীকান্দা গ্রামের আব্দুল মতিনের ছেলে মুনছুর আহমেদকে গ্রেপ্তার করে। এ অভিযান পরিচালনা করে দুর্নীতি দমন কমিশন ফরিদপুর আঞ্চলিক কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো, মোস্তাফিজ। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ফরিদপুর আঞ্চলিক কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. মোস্তাফিজ বলেন, রাজবাড়ী বিআরটিএতে ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে ভোগান্তি ও নানা অনিয়মের অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুদক প্রধান কার্যালয়ের নির্দেশে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযান পরিচালনাকালে বিআরটিএ অফিসের সিল কন্ট্রাক্টর আকরামুজ্জামানের কাছ থেকে ২৫ হাজার ৮০ টাকা, দালাল আশিক খানের কাছ থেকে ৩৩ হাজার ১শত টাকা, দালাল লিয়াকত আলীর কাছ থেকে ১৪ হাজার ২শত ৪০ টাকাসহ মোট ৭২ হাজার ৪শত ২০ টাকা উদ্ধার করা হয়। এ বিষয়ে বিআরটিএ অফিসের কর্মকর্তাকে নিয়মিত মামলা দায়ের করার নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
স্থানীয় ও ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, রাজবাড়ী বিআরটিএ অফিসের কতিপয়
দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজসে ড্রাইভিং লাইসেন্সসেবা
নিতে আসা গ্রহিতাদেরকে নানাভাবে জিম্মি করে অর্থ হাতিয়ে নিয়ে আসছে। টাকা ছাড়া কেউ লাইসেন্স করতে পারে না। আর সিল কন্ট্রাক্টর আক্রামুজ্জামানের নেতৃত্বে লিয়াকত আলী জেলার প্রতিটি এলাকায় দালাল সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। এ সিন্ডিকেটের বাইরে কেউ ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে আসলেও তাদেরকে ফেল করানো হয়। ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নেয়।
একজন লাইসেন্স সেবাগ্রহিতা বলেন, ৩বার ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য পরীক্ষা দেই। তিনবারই ফেল করানো হয়। পরে একজন দালাল আমার নিকট থেকে ১৯ হাজার টাকা নিয়েছে। এখন প্রায় দেড় বছর যাবৎ ঘুরছি। আমার কাজও করে না, আবার টাকাও ফেরত দেয় না। টাকা চাইলে উল্টো হুমকি দেয়।
এদিকে, সিল কন্ট্রাক্টর আক্রামুজ্জামান রাজবাড়ী শহরের ২নং বেড়াডাঙ্গা এলাকায় গড়ে তুলেছেন দ্বিতীয় তলা জমিসহ আলিশান বাড়ি। জাপানি টয়োটা প্রাইভেটকার, সজ্জনকান্দায় ১ কোটি ২৬ লাখ টাকায় কেনা দ্বিতল ভবনসহ কয়েক কোটি টাকার সম্পদ গড়ে তুলেছেন। অভিযুক্ত রাজবাড়ী বিআরটিএর সিল কন্ট্রাক্টর আক্রামুজ্জামানের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
রাজবাড়ী বিআরটিএ সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিন) মো. নাসির উদ্দিন বলেন, আক্রামুজ্জামান বিআরটিএর কেউ নয়, তিনি একজন বহিরাগত।
সেবাগ্রহিতাকে মারধরের বিষয়টি এডিএম স্যার আমাকে অবগত করেছেন। আমি বাইরে আছি, পরে কথা বলবো।
রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলায় এক প্রতিবন্ধী মারমা নারীকে স্বজাতি তিন যুবকের হাতে গণধর্ষণের অভিযোগে বিচারের দাবিতে ও স্থানীয় প্রথাগত বিচারের মাধ্যমে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ (পিসিসিপি) রাঙামাটি জেলা শাখা।
সোমবার বিকেলে রাঙামাটি শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে অনুষ্ঠিত এ বিক্ষোভ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের জেলা সভাপতি তাজুল ইসলাম এবং সঞ্চালনা করেন জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক পারভেজ মোশাররফ হোসেন।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন পিসিসিপি জেলা সাধারণ সম্পাদক মো. আলমগীর হোসেন, ৩৫ কাঠুরিয়া স্মৃতি সংসদের আহ্বায়ক শাখাওয়াত হোসেন, পিসিএনপি জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবিরসহ বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দ।
সভায় বক্তারা বলেন, কাপ্তাই উপজেলার চিৎমরম ইউনিয়নের চংড়াছড়ি মুখ এলাকায় এক প্রতিবন্ধী মারমা নারীকে স্বজাতি তিন যুবক— অনুচিং মারমা (৫০), কালা মারমা (৫৫) ও মং উ মারমা (৩৫)—মিলে ধর্ষণ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ধারাবাহিক যৌন নির্যাতনের ফলে ওই নারী বর্তমানে অন্তঃসত্ত্বা।
বক্তারা অভিযোগ করেন, গত ১৭ অক্টোবর স্থানীয় প্রথাগত রীতিতে অনুষ্ঠিত সামাজিক বিচারে অভিযুক্তদের ভিকটিমের জন্য ৩ লাখ টাকা ও সমাজের নামে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। আশ্চর্যের বিষয়, একই বিচারে ভিকটিমকেও ‘সমাজের নিয়ম ভঙ্গের’ দায়ে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়, যা সম্পূর্ণ অবিচার।
পিসিসিপি সভাপতি তাজুল ইসলাম বলেন,
‘এই বাচ্চার দায় কে নেবে? এই বাচ্চার অভিভাবক কে হবে? প্রভাবশালী একটি আঞ্চলিক দলের নিয়ন্ত্রণে ওই এলাকা থাকায় ভিকটিম পরিবার ভয় ও আতঙ্কে আইনের আশ্রয় নিতে পারছে না।’
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. আলমগীর হোসেন বলেন,
‘এটি পাহাড়ে সামাজিক বিচারের নামে নারীর প্রতি সহিংসতার ভয়াবহ উদাহরণ। অপরাধীদের অর্থদণ্ড দিয়ে দায়মুক্তি দেওয়া কোনো বিচার নয়, এটি অবিচার।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই ঘটনায় পাহাড়ের প্রভাবশালী সংগঠনগুলো—জেএসএস, ইউপিডিএফ, কেএনএফ—কেউই কোনো নিন্দা জানায়নি। অথচ, কোনো বাঙালির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে এসব সংগঠন সঙ্গে সঙ্গে আন্দোলন ও প্রচারে নামে। এই দ্বিমুখী নীরবতা প্রমাণ করে, পাহাড়ে মানবাধিকারের প্রশ্নটি অনেক সময় রাজনীতির ছায়াতলে চাপা পড়ে যায়।’
বিক্ষোভ থেকে দ্রুত সময়ের মধ্যে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার ও প্রতিবন্ধী নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি করা হয়।
বান্দরবানের বিভিন্ন উপজেলায় সেতুর অভাবে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন অন্তত দুই লাখ মানুষ। দীর্ঘদিন ধরে এই সমস্যা চললেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় প্রতিদিনই শিক্ষা, চিকিৎসা, কৃষি ও ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডে বাড়ছে ভোগান্তি।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জেলার সদর, রোয়াংছড়ি, রুমা, থানচি, লামা-আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রামীণ জনপদে স্থায়ী সেতুর অভাব সবচেয়ে বেশি প্রকট। বান্দরবান পাহাড়ি জেলা হওয়ায় ঝিরি ও ছোট ছোট খালের সংখ্যা অধিক। শুকনো মৌসুমে চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ি ঢল বা হরকা বাণের কারনে এসময় ঝুকিপূর্ণ হয়ে উঠে চলাচল। এর মধ্যে কয়েকটি স্থানে বাঁশের সাঁকো থাকলেও অধিকাংশে তা-ও নেই। বর্ষা মৌসুমে এসব এলাকার শিক্ষার্থীরা ঝুঁকি নিয়ে বিদ্যালয়ে যেতে গিয়ে খাল পারাপারের সময় ঢলের পানিতে তলিয়ে মৃত্যুর সংখ্যাও কম নয়।
এসব এলাকার অসুস্থ রোগী ও প্রসুতি মায়েদের সময়মতো চিকিৎসা সেবা পেতেও বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে।
এছাড়াও অন্তত অর্ধলক্ষ হেক্টর জমির উৎপাদিত ফসল বাজারে পৌঁছাতে গিয়ে মারাত্মক সমস্যায় পড়তে হচ্ছে কৃষকদের। এতে স্থানীয় অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।
বারবার সেতু নির্মাণের আবেদন জানানো হলেও এখনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। দ্রুত স্থায়ী সেতু নির্মাণ করে ভোগান্তি দূর করার জোর দাবি তুলেছেন তারা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বান্দরবান-লামা সড়ক দিয়ে তিনটি উপজেলার কয়েক লাখ মানুষের সহজ যাতায়াতের একমাত্র অবলম্বন এটি। অতি বৃষ্টিতে সড়কটির বেশ কিছু এলাকায় ভাঙন সৃষ্টি হলেও ২২০০ মিটার চেইনেজ এলাকায় বেশ ঝুকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। মঞ্জয় পাড়া-নাচালং সড়কের ১৪৩৭০ চেইনেজ এলাকা, আলীকদমের ওবাইদুলহাকিম পাড়া সড়কের বাসস্টেন্ড হিন্দু পাড়া এলাকা, কলারঝিড়ি সড়ক, লামার গাইন্ধ্যা-চিন্তাবা পাড়া সড়কের বমু খাল এলাকা, ফাইতং চিউবতলী পোলাও পাড়া খাল এলাকা, নাইক্ষ্যংছড়ি সাপের গাড়া এলাকার কাগজি খোলা খাল এলাকা, কম্বনিয়া পাড়া, মিরঝিরিপাড়া এলাকা, রোয়াংছড়ির ব্যাংছড়ি খাল, থানচি বলিপাড়ার সোনাইছড়ি খান, তিন্দু খাল, রুমার হানারাম পাড়া, রুমার গ্যালেংগা খালসহ বেশ কিছু এলাকায় কোথাও সেতু নেই আবার কোথাও ৩০-৫০ বছরের ছোট আকারের ভাঙা পুরোনো সেতু। যা চলাচলের সম্পূর্ণ অনুপযোগী হয়ে গেছেন। ভাঙা সেতু দিয়ে কোন রকমে কিছু এলাকার মানুষ পারাপার হতে পারলেও সাপেরগাড়া, চিন্তাবা পাড়া, ব্যংছড়িসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ ঝিরি বা খাল পার হয় পায়ে হেঁটে। এছাড়া বর্ষা মৌসুমে স্বাস্থ্যসেবা, কৃষি পন্য পরিবহনসহ শিক্ষা গ্রহনও ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।
সাপের গাড়া এলাকার বাসিন্দা জেবুল হক, জসীম উদ্দীন বলেন, সাপের গাড়া- কাগজিখোলা এলাকায় অন্তত ২৫- ৩০ হাজার লোকের বসবাস।গত ২০ বছর ধরে এই এলাকায় বসবাস গড়ে উঠলেও একটি সেতুর অভাবে বর্ষাকালে শিক্ষার্থীদের স্কুলে যাতায়ত স্বাস্থ্যসেবা, কৃষি পণ্য পরিবহনসহ ব্যহত হয় স্থানীয় ব্যাবসা বানিজ্য। এছাড়া বর্ষাকালে স্কুলে যেতে গিয়ে ঢলের পানিতে ভেসে গিয়ে কয়েক জন শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। ফলে এই এলাকায় অতি দ্রুত সেতু নির্মাণের দাবি জানান তারা।
গজালিয়া ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান বাথোয়াই চিং মারমা বলেন, চিন্তাবর, বাইশফারি, ঢেকিছড়া, তুলাতলি, বটতলি, হামায় চর পাড়া এলাকায় ৮-৯ হাজার মানুষের বসবাস। বমু খালের উপর একটি সেতুর অভাবে কয়েক দশক ধরে যাতায়াতে ভোগান্তি হচ্ছে তাদের। এই এলাকায় স্কুল, কলেজ থাকলেও বর্ষা মৌসুমে অধিকাংশ ছাত্র-ছাত্রীরা স্কুলে যেতে পারেনা খালের পানিতে প্রবল স্রোতের কারনে। এছাড়া অন্যান্য অসুবিধাতো আছেই।ফলে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে সেতুটি অতিদ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানান তিনি।
বান্দরবান স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ তাসাউর বলেন, জেলার ৭টি উপজেলায় জনগণের চাহিদা ও প্রয়োজনীয়তা স্বাপেক্ষে অতি প্রয়োজনীয় আন্ডার হানড্রেড মিটারের ৪১টি সেতু নির্মাণের জন্য ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষের নিকট আবেদন পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন সাপেক্ষে সেতুগুলো নির্মাণকাজ চালু করা হবে বলে জানান তিনি।
আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংক সম্প্রতি সংস্কার উদ্যোগের আওতায় নিজস্ব বিশেষ অডিট কার্যক্রমের মাধ্যমে ২০২০-২৫ সালের নোয়াখালী ও সেনবাগ শাখার কিছু আর্থিক অনিয়মের প্রাথমিক তথ্য উদঘাটন করেছে। প্রায় ১১ কোটি টাকার অনিয়মের এই তথ্যের ভিত্তিতে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে দুটি বিশেষ অডিট টিম গঠন করেছে, যারা ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তে কাজ করছে।
আজ সোমবার বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদর দপ্তরে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় বাহিনীর মহাপরিচালক ও আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান, মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ এই বিষয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। তিনি বলেন, “আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংকের সাথে বাহিনীর নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। পরিতাপের বিষয়, আনসার ভিডিপি’র তৃণমূল সদস্যদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত ব্যাংকটি অতীতে কাঙ্ক্ষিতভাবে সে লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি। তবে, আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি—সুশাসন, স্বচ্ছতা ও প্রযুক্তিনির্ভর ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ব্যাংকটিকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব।” মহাপরিচালক আরও বলেন, “অতীতে ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনায় ডিজিটাল মনিটরিং, অডিট তদারকি ও ঋণ প্রদানে কিছু ঘাটতি ছিল। বর্তমানে এসব ঘাটতি চিহ্নিত করে আমরা কোর ব্যাংকিং সিস্টেম (CBS) প্রবর্তনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল রূপান্তরের উদ্যোগ নিয়েছি। এতে ভবিষ্যতে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী অনৈতিকভাবে ব্যাংকের সুবিধা গ্রহণ করতে পারবে না।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, “কর্মকর্তা পদোন্নতির ক্ষেত্রে এখন সততা, দক্ষতা ও ব্যাংকের আর্থিক স্বচ্ছতা রক্ষায় অবদানকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আমরা ব্যাংক ব্যবস্থাপনাকে আরও শক্তিশালী করছি।”
বাহিনীর মহাপরিচালক বলেন, “দুষ্টের দমন ও শিষ্টের লালনের মাধ্যমে আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংক একটি সুশাসনভিত্তিক, জনগণের আস্থাভাজন আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে বাহিনীর অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে যুক্ত করার ফলে ব্যবস্থাপনায় ইতিবাচক পরিবর্তন দৃশ্যমান।” ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, অডিট টিমের তদন্ত শেষে অনিয়মের পূর্ণাঙ্গ চিত্র ও দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। একইসঙ্গে ব্যাংকের পক্ষ থেকে দুর্নীতি দমন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে যাতে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের দ্রুত আইনী শাস্তিমুলক ব্যবস্হার মুখোমুখি করা যায়।
১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠিত আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংক বর্তমানে ২৫৯টি শাখার মাধ্যমে দেশের আনসার ও ভিডিপি সদস্যদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও সুশাসনের সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ব্যাংকটি আরও সক্ষম ও আধুনিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হওয়ার পথে অগ্রসর হচ্ছে।
আজকের এই মতবিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব মীর মোফাজ্জল হোসেনসনহ বাহিনীর ও এই ব্যাংকের অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ।
গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার ২২ ফুট প্রস্থের ছোট এক খালে নির্মিত হচ্ছে ৭৪ ফুট গার্ডার ব্রিজ। এদিকে ব্রিজ নির্মাণে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট দরখাস্ত দিয়েছে এলাকাবাসী।
অভিযোকারীরা জানান, পবনার পাড় গ্রামে গ্রামীণ সড়কে ব্রিজ নির্মাণের জন্য পাইল তৈরিতে রিং কম দেওয়াসহ নানা অনিয়ম হয়েছে ও পাইলের অর্ধেক মাটিতে পুঁতে বাকি অর্ধেকে পাইলের রড কেটে বিক্রি করে দেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে গোপালগঞ্জ জেলার গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্প (২য় সংশোধিত) এর আওতায় উপজেলার মান্দ্রা খেয়াঘাট থেকে বাপার্ড জাঠিয়া সড়কের ৬ হাজার ৫০ মিটার চেইনেজে ২ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ২২ ফুট প্রস্থের পবনাড় পাড় খালে ৭৪ ফুট (২২ মিটার) আরসিসি গার্ডার ব্রিজ নির্মাণের কার্যাদেশ পায় মেসার্স সৌরভ ট্রেডার্স।
নির্মীয়মাণ ব্রিজের শুরুতেই ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় এলাকাবাসী বারবার উপজেলা প্রকৌশল দপ্তরে অভিযোগ জানানোর পরও কোন প্রতিকার না পাওয়ায় অভিযোগ দিয়েছে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট।
স্থানীয়রা জানান, ব্রিজ নির্মাণে কার্যাদেশ অনুযায়ী কাজ করা হচ্ছে না। ঠিকাদারের লোকজন নির্মীয়মাণ পাইলিং থেকে রড খুলে বিক্রি করে দিচ্ছে। পাইল তৈরিতে নেওয়া হয়েছে দুর্নীতির আশ্রয়। পাইলে নিম্নমানের পাথর, অর্ধেক পরিমাণ রিং ও পরিমাণের চেয়ে কম সিমেন্ট দিয়ে তৈরি করা হয়েছে পাইল। যে কারণে মাটির নিচে অর্ধেক পাইল ঢুকতেই পাইলের বাকি অংশ ভেঙে পড়ছে। পরবর্তীতে ঠিকাদারের লোকজন বাকি অর্ধেক পাইলের রড কেটে বিক্রি করে দিচ্ছে।
দুর্নীতির নির্মাণাধীন ব্রিজসংলগ্ন বাসিন্দা মফিজুল বলেন, মানুষের হাঁটা-চলাচলের জন্য জাঠিয়া থেকে রাধাগঞ্জ গ্রামীণ এলাকায় শৈলদা নদীর পাড়ে মাটির রাস্তা হচ্ছে। সেই রাস্তাটিতে ৬টি সরু খালে ব্রিজ নির্মাণ করছে এলজিইডি। পবনার পাড়ের ২২ ফুট খালটিতে এলজিইডি ২২ মিটার (৭৪ ফুট) ব্রিজ নির্মাণ করছে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে। ছোট এই খালে ৩০ থেকে ৪০ লক্ষ টাকার এক একটি কালভার্ট দিলেই হতো সেখানে ৩ কোটি টাকার বিশাল গার্ডার ব্রিজ নির্মাণ করা হচ্ছে। এই রাস্তা দিয়ে কখনও বাস গাড়ি চলাচলের সুযোগ নেই। তাহলে এত বড়ো ব্রিজ কাদের স্বার্থে? অন্যদিকে এই ব্রিজ নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি হচ্ছে। এলজিইডি অফিসের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে কাজে ব্যাপক অনিয়ম করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
ব্রিজটির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী মো. মুরসালিন সৌরভের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি ব্যস্ত রয়েছেন বলে জানান।
এদিকে কাজের ধীরগতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করে পবনার গ্রামের মামুন শেখ বলেন, গত বছরের ১৬ অক্টোবর এই ব্রিজের কাজ শুরু হয়। শেষ হওয়ার কথা ছিল সেপ্টেম্বরের ৬ তারিখে। অথচ নির্মাণ কাজের ১০ ভাগ এখনও সম্পন্ন হয়নি।
কাজের অনিয়মেয়র বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী শফিউল আজম বলেন, ব্রিজের পাইল থেকে রড কেটে নেওয়ার বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবগত করা হয়েছে। তারা এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিবে। ব্রিজের নির্মাণ মেয়াদ শেষ হলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করেছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাগুফতা হক বলেন, ব্রিজের অনিয়মের অভিযোগটি উপজেলা প্রকৌশলীকে দেওয়া হয়েছে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য।
এলজিইডি গোপালগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. এহসানুল হক বলেন, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।
পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার কেশবপুর থেকে বালুঘাটা পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার সড়কের নির্মাণকাজ করছে একটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। গত বছর কাজটি শুরু হলেও কাজে অনিয়মের কারণে পুরো এক বছর কাজ বন্ধ ছিল। সম্প্রতি পুনরায় কাজ শুরু হলেও বন্ধ হয়নি অনিয়ম- বরং পুরোনো অনিয়মই এখন নতুন রূপে ফিরে এসেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা তোফাজ্জল হোসেন বলেন, গত এক বছর কাজ বন্ধ ছিল কাজে অনিয়মের কারণে। এখন আবার সেই একই রকম অনিয়ম হচ্ছে। আমরা চাই আমাদের এলাকার রাস্তার কাজ যেন ঠিকভাবে হয়।
আরেক স্থানীয় বাসিন্দা সিদ্দিক হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘রাবিশ দিয়ে রাস্তার কাজ করা হচ্ছে। পুরোনো ভাঙা ইট দেওয়া হয়েছে। এমন ইট ব্যবহার হচ্ছে যা দিতেই ভেঙে যাচ্ছে। দুর্নীতি এখানে চরমে পৌঁছেছে। প্রতিবাদ করতে গেলেও উপর মহলের ভয় দেখিয়ে স্থানীয়দের মুখ বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।’
মাওলানা মাসুদুর রহমান বলেন, ‘আগেও রাবিশ দিয়ে কাজ চলছিল। এবারও দুই নম্বর মালপত্র দিয়ে কাজ করছে। আমরা তখনই বলেছিলাম- এইভাবে কাজ করলে সমস্যা হবে। তারা তখন কোনো উত্তর দেয়নি।’
তিনি অভিযোগ করে আরও বলেন, উপজেলা প্রকৌশলী ঠিকাদারের সাথে টাকার বিনিময়ে হাত মিলিয়ে এই ধরনের দুর্নীতির কাজ করাচ্ছেন। টাকা না খেলে কেউ এমন পচা খোয়া, রাবিশ আর পোড়া মবিল দিয়ে কাজ করার সাহস পেত না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঠিকাদার সিরাজুল ইসলাম শুধু ঠিকাদারি ব্যবসাই করছেন না তিনি আইডিয়াল নামক একটি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক এবং একই সঙ্গে সংবাদপত্রেও কাজ করেন। এক ব্যক্তি একাধিক প্রতিষ্ঠানে জড়িত থেকে প্রভাব খাটিয়ে সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলছেন এবং সেই সুযোগে সরকারি কাজ নিয়ে নানা নয়-ছয় করছেন, এর ভুক্তভোগী এখন সাধারণ জনগণ।
উপজেলা প্রকৌশলী বাকি বিল্লাহ কে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি সংক্ষেপে বলেন, আমি মিটিংয়ে আছি, পরে আপনাকে কল দেব।
নেত্রকোনা জেলায় ষষ্ঠবারের মতো শ্রেষ্ঠ অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন নেত্রকোনা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ কাজী শাহ নেওয়াজ। গত রোববার জেলা পুলিশ লাইন্সে সেপ্টেম্বর মাসের মাসিক অপরাধ সভায় মাদক উদ্ধার, মামলা নিষ্পত্তি, চোরাচালান নিরোধ, ওয়ারেন্ট তামিল, বিট পুলিশিং, সর্বোপরি অপরাধ পর্যালোচনা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বিশেষ অবদান রাখায় এ শ্রেষ্ঠ অফিসার হিসেবে নির্বাচিত হন তিনি। নেত্রকোনা পুলিশ লাইন্সে আনুষ্ঠানিকভাবে আবারও শ্রেষ্ঠ অফিসার ইনচার্জ- (ওসি) হিসেবে শাহ নেওয়াজের হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট, সনদ ও আর্থিক পুরস্কার তুলে দেন, পুলিশ সুপার মির্জা সায়েম মাহমুদ (পিপিএম)। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) হাফিজুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সজল কুমার সরকারসহ জেলা পুলিশের অন্যান্য কর্মকর্তারা। মডেল থানার ষষ্ঠবারের মতো শ্রেষ্ঠ অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হওয়ার প্রতিক্রিয়ায় কাজী শাহ নেওয়াজ জানান, পুলিশ সুপার স্যারের দিকনির্দেশনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় এবং জনগণের সেবায় আমি সবসময়ই অবিচল। আমি কাজ ও দায়িত্বকে ভালোবাসি বিধায় পুরস্কারপ্রাপ্তিতে কাজের প্রতি আমাকে অনুপ্রেরণা জোগায়। আর ভালো কাজের সবসময়ই মূল্যায়ন আছে। তাই এবার আমি আবারও শ্রেষ্ঠ অফিসার ইনচার্জ হিসেবে নির্বাচিত হয়েছি। আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও আমার মডেল থানার সকল সহকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজে নবীন বরণ অনুষ্ঠানে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। রক্তক্ষয়ী এ ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে মূলহোতা সিফাত ও আবরারসহ ২২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
রোববার (১৯ অক্টোবর) দুপুরে সংঘর্ষের পর পুলিশ ও র্যাব নগরীর বিভিন্ন স্থানে যৌথ অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে।
সোমবার বেলা ১২ টায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন র্যাব-১১ এর কুমিল্লা কোম্পানি কমান্ডার মেজর সাদমান ইবনে আলম, জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আব্দুল্লাহ ও কোতোয়ালী মডেল থানার ওসি মহিনুল ইসলাম।
পুলিশ জানায়, দুপুরে কলেজ ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে তর্কাতর্কির একপর্যায়ে সংঘর্ষে রূপ নেয়। এসময় আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালানো হয়। ঘটনাস্থলে চারজন গুরুতর আহত হন মোস্তাফিজুর রহমান, অনয় দেবনাথ, মাহিন ও রিজভী। তারা কুমিল্লার বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থী।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সকালে উচ্চ মাধ্যমিকের ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থী জিসান ও তাহফিদের সঙ্গে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী তানভীন সিফাতের কথা কাটাকাটি হয়। পরে সিফাত তার বাহিরের বন্ধুদের নিয়ে কলেজে আসে এবং ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। সংঘর্ষের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে কলেজজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, এক তরুণ হাতে রামদা নিয়ে দৌড়াচ্ছে এবং আরেকজনের হাতে পিস্তল। তদন্তে জানা গেছে, ভিডিওতে অস্ত্রধারী ওই তরুণ সিফাত।
ওসি মহিনুল ইসলাম জানান, “ঘটনার পর পুলিশ বাদী হয়ে কোতোয়ালী মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে। এতে ৬৩ জনকে আসামি করা হয়েছে।”
জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আব্দুল্লাহ বলেন, “সংঘর্ষের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পরপরই অভিযান শুরু হয়। রাতভর অভিযান চালিয়ে মূলহোতাসহ ১৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি আসামিদেরও ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।”
র্যাব-১১ এর অধিনায়ক মেজর সাদমান ইবনে আলম বলেন, “ঘটনার ভিডিও প্রকাশের পর দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। র্যাব তাৎক্ষণিক অভিযান চালিয়ে ৮ জনকে গ্রেফতার করেছে। তাদের আদালতে পাঠানো হবে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে পারিবারিক কলহের জেরে পারুল বেগম (৬০) নামে এক বৃদ্ধাকে হাতুড়িপেটা করে হত্যা করেছে তার পুত্রবধূ ৩ সন্তানের জননী মাকসুদা আক্তার লিলি (২৮)।
প্রথমে পুলিশ ও স্থানীয়দের মাঝে লিলি শাশুড়িকে কে বা কারা হত্যা করে লাশ বাড়ির উঠানে ফেলে যায় বলে মিথ্যা নাটক সাজায়। কিন্তু পরবর্তীতে রাত ১১ টার দিকে পুলিশের ব্যাপক জেরারমুখে নিজেই হত্যার কথা স্বীকার করে।
রোববার (১৯ অক্টোবর) সন্ধ্যায় উপজেলা সদরের আসাদনগর মধ্যপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত পারুল বেগম ওই এলাকার আব্দুল ওয়াহিদের স্ত্রী। এ ঘটনায় পুত্রবধূ লিলি আক্তারকে আটক করেছে পুলিশ।
বাঞ্ছারামপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান জামিল খান জানান, পারুল আক্তার ও আব্দুল ওয়াহিদ মিয়া দম্পতির একমাত্র ছেলে বিল্লাল প্রবাসে থাকেন। বাড়িতে তারা দুজন ছাড়াও পুত্রবধূ লিলি আক্তারও থাকেন। লিলির তিন সন্তান রয়েছে। শাশুড়ির সঙ্গে তার পারিবারিক কলহ লেগেই থাকতো। প্রায় সময়ই বাকবিতণ্ডা হতো।
প্রতিবেশীরা জানান, রোববার সকালে আব্দুল ওয়াহিদ মিয়া কুমিল্লায় চিকিৎসার জন্য যান। সন্ধ্যায় শাশুড়ির সঙ্গে লিলির ঝগড়া বাঁধে। একপর্যায়ে ঘরে থাকা হাতুড়ি দিয়ে শাশুড়ির মাথায় আঘাত করে এবং মাথা ও মুখে এলোপাথাড়ি পিটিয়ে রক্তাক্ত করে। এতে ঘটনাস্থলেই পারুল বেগম মারা যান।
এর আগেও পুত্রবধূ লিলি নিহত শাশুড়ি পারুল বেগমকে শারিরীক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করতো বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ওসি হাসান জামিল খান জানান, হত্যার পর বাড়ির উঠানে মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা ভেবে পাচ্ছিলেন না কীভাবে এ ঘটনা ঘটেছে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তৎক্ষণিক তদন্ত শুরু করে। ঘরের পারিপার্শ্বিক অবস্থা দেখে লিলিকে সন্দেহ হলে জিজ্ঞাসাবাদের মুখে সে হত্যার বিষয়টি স্বীকার করে। এ ঘটনায় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
উল্লেখ্য, পুত্রবধূ কর্তৃক বৃদ্ধা শাশুড়িকে হত্যার ঘটনাটি পুরো এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।
বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার সৈয়দকাঠী ইউনিয়নে সবচেয়ে বৃহত্তম শিমুল গাছটি ঘিরে রয়েছে নানা কল্পকাহিনী। বহন করছে নানা ঐতিহ্য। ঐতিহাসিক বিভিন্ন ঘটনার স্বাক্ষী এই শিমুল গাছটি।
স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, গাছটির বয়স পাঁচ থেকে ছয়শ বছর। এর ছায়ায় প্রশান্তি পান ক্লান্ত পথিক। তবে বৃহদাকৃতির এ গাছটি ধীরে ধীরে অস্তিত্ব হারাচ্ছে। তাই এটি বৈজ্ঞানিক উপায়ে রক্ষণাবেক্ষণের দাবি স্থানীয়দের। গাছটি ঘিরে পর্যটনেরও বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে বলে মত এলাকাবাসীর।
বানারীপাড়া উপজেলা শহর থেকে ৫ কিলোমিটার দূরত্বে সৈয়দকাঠী ইউনিয়নের ব্রাহ্মণবাড়িয়া নামক স্থানে গাছটির অবস্থান। এই গাছটির নিচে অনেকেই মনের বাসনা পূরণের জন্য মানত হিসাবে গরু খাসি, মোরগ, জবাই করে রান্নাবান্না করে। গাছ দেখার জন্য আগত ভক্তদের উদ্দেশ্য একটাই যেন তাদের মনের বাসনা পূর্ণ হয়। অনেকে মনের বাসনা পূরণের জন্য মোমবাতি, আগরবাতি জ্বালিয়ে পূজা-অর্চনা করেন। আবার অনেকে দেখার জন্য এসে গাছটিতে প্রিয়জনের নামও লিখে যায়। আগত ভক্তদের একটাই উদ্দেশ্য যেনো সৃষ্টিকর্তা তাদের মনের বাসনা পূর্ণ করে।
প্রায় ৫০ শতাংশ জমির ওপর দাঁড়িয়ে থাকা প্রায় ১৫০ ফুট লম্বা শিমুল গাছটির গোড়ার পরিধি প্রায় ৫৫ গজ। গাছটির গোড়ায় দাঁড়িয়ে কখনো মনে হয় পাহাড়ের পাদদেশে দাঁড়িয়ে থাকার অনুভূতি। এর বিশালতায় ভরে যায় মন। এখানে এলে মুগ্ধতার আবেশে জড়িয়ে যায় দর্শনার্থীর হৃদয়। আলোচিত এই গাছটি দেখতে তাই দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন অনেক দর্শনার্থী।
স্থানীয় বাড়ির বাসিন্দা ও গাছের মালিক উত্তম সরকার বলেন, আমি বাপ-দাদার কাছ থেকে শুনে আসছি এই শিমুল গাছটির বয়স কমপক্ষে পাঁচশ বছর হবে। আবার গ্রামের অনেকেই বলেছে, গাছটির বয়স ছয়শ বছর বা তারও বেশি হবে।
প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো গাছটি বেড়ে উঠেছেও প্রাকৃতিকভাবেই। একসময় বৃহৎ আকৃতির এই শিমুল গাছটি পত্র-পল্লবে এতটাই ঘন ছিল যে এর নীচে রোদ, বৃষ্টি, কুয়াশাও পড়ত না। প্রচন্ড গরমের সময়ও গাছের নীচে পাওয়া যেত হিমেল শান্তির পরশ। পথিক, কৃষক থেকে শুরু করে নানা পেশা ও শ্রেণির লোকজন গাছের তলায় শুয়ে-বসে বিশ্রাম নিত। দুপুর ও বিকালে দেখা যেত ডালে ডালে শুয়ে বিশ্রাম নিচ্ছেন অনেকে।
গাছটি যার জমিতে আছে তিনি (উত্তম সরকার) তার বাবার পৈতৃক সম্পত্তি হিসেবে পেয়েছেন, তিনি আবার তার বাবার কাছ থেকে এভাবেই চলে আসছে শতাব্দী থেকে শতাব্দী ধরে। কিন্তু কেউ বলতে পারে না এর জন্মলগ্নের সঠিক ইতিহাস।
গাছটিকে ঘিরে প্রচলিত রয়েছে নানান কল্পকাহিনী। স্থানীয়রা অনেকেই জানান, প্রায় সময় এখানে বিভিন্ন এলাকার লোকজন গাছটি একনজর দেখার জন্য এসে ভিড় করে থাকে। তারা মানত করে স্থানীয়দের মাঝে মোরগ-পোলাও মিষ্টি বিতরণ করেন। তারা মনে করে এ গাছে অলৌকিক কোন কিছু আছে। তাই মনের বাসনা পুরন করার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসে।
স্থানীয় বাসিন্দা অসীম সরকার জানান, এই পুরাতন শিমুল গাছটি কাটার জন্য অনেকেই চেষ্টা করেছে কিন্তু কোন অবস্থাতেই কাটা যায় না। যে গাছটি কাটতে যায় সে অসুস্থ হয়ে যায়। শুনেছি অনেক আগে এ গাছ কাটতে এসে নাক, মুখ দিয়ে রক্ত এসেও মারা গিয়েছে। এটি আমাদের এলাকার পুরাতন একটি গাছ। এটি আমাদের ঐতিহ্য।
এলাকাবাসী মহানন্দ মন্ডল দোকানদার বলেন, রক্ষণাবেক্ষণের অভাব ও নানামুখী অত্যাচারের কারণে ঐতিহ্যবাহী শিমুল গাছটি অস্তিত্ব হুমকিতে পড়েছে। ভেঙে পড়ছে বড় বড় ডালগুলো। সকলের সহযোগিতায় আমরা এই গাছটিকে সংরক্ষণের চেষ্টা করছি। দর্শনার্থী টানতে এলাকাবাসী বিশালাকৃতির দৃষ্টিনন্দন এ গাছটি সম্পর্কে প্রচারণা ও মূল রাস্তা থেকে গাছের গোড়া পর্যন্ত পাকা সংযোগ সড়ক তৈরিসহ বৈজ্ঞানিক উপায়ে রক্ষণাবেক্ষণের দাবি জানিয়েছেন।
খুলনাসহ দক্ষিণাঞ্চলের চার জেলায় হত্যার পর মরদেহ নদীতে ফেলে দেওয়ার ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। এক বছরের ব্যবধানে বেড়েছে মরদেহ উদ্ধারের সংখ্যা। যার এক তৃতীয়াংশ অশনাক্ত। মিলছে দুর্ঘটনা, আত্মহত্যা ও হত্যাকাণ্ড—এই তিন ধরনের মৃতদেহ। এরমধ্যে অধিকাংশ ঘটনায়ই হত্যাকাণ্ড। বেশিরভাগই স্থলভাগে হত্যার পর মরদেহ নদীতে ফেলে দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে নৌপুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
খুলনা নৌপুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গেল ২২ মাসে খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও পিরোজপুর জেলার বিভিন্ন নদ-নদী থেকে উদ্ধার হয়েছে ৭৩টিরও বেশি মরদেহ। তার মধ্যে ২৭ জনের পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। ২০২৪ সালে ৩৪ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সেখানে গেল ১০ মাসে মধ্যে অক্টোবর পর্যন্ত নদ-নদী থেকে ৩৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
নৌপুলিশের তথ্য মতে, ২০২৪ সাল থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৭০ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তবে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শুধু খুলনায় মধ্য অক্টোবর পর্যন্ত আরও অন্তত ৩ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এরমধ্যে গত ১৭ অক্টোবর নিখোঁজের তিন দিন পর দাকোপের বাজুয়ার চুনকুড়ি নদী থেকে আশিষ সরকারের বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার করা হয়। একই দিনে পাইকগাছা উপজেলার সোনাদানা ইউনিয়নের শিবসা নদীর চর থেকে ইকরাম হোসেন নামের এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করে নৌপুলিশ। এর আগের দিন ১৬ অক্টোবর পাইকগাছার জিরবুনিয়া খাল থেকে অজ্ঞাত (৪০) যুবকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা খুলনার সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট মোমিনুল ইসলাম বলেন, খুলনাসহ আশপাশের জেলার নদ-নদীগুলোতে প্রায় প্রতিদিনই মানুষের মরদেহ ভেসে উঠছে। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে ৫ আগস্টের পর পুলিশের ভূমিকাটা যেভাবে হওয়া উচিত ছিল, সেভাবে নেই। পুলিশের নজরদারি সেইভাবে নেই এবং খুলনাসহ আশপাশের জেলায় র্যাবের একটা বড় ভূমিকা থাকতো, কিন্তু সেইভাবে ভূমিকা পালন করতে পারছে না। যেভাবে বুক ফুলিয়ে দেশের জন্য পুলিশ কাজ করতো, সেভাবে করতে পারছে না। পুলিশকে ঢেলে সাজাতে হবে। এ জন্য সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ৫ আগস্টের পর দেশের আইনশৃঙ্খলা অবনতিতে চলে গেছে। এই সুযোগে বিভিন্ন স্থানে যেসব সন্ত্রাসী আত্মগোপনে ছিল, তারা এলাকায় ফিরে আসছে। তারাই এই ধরনের কর্মকাণ্ড করে বেড়াচ্ছে। এ ছাড়া, বিচার প্রক্রিয়া যদি দ্রুত নিষ্পত্তি করা যায়, দ্রুত অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা যায় তাহলে অন্যান্য অপরাধীরা ভয় পাবে।
তিনি বলেন, হত্যার পর যেসব মরদেহ ফেলে দেওয়া হচ্ছে তার অধিকাংশই অজ্ঞাত থাকছে। এসব মরদেহ শনাক্তের জন্য আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির প্রয়োজন। তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে মরদেহগুলো শনাক্ত করা হলে অধরাধীদের সহজেই খুঁজে বের করা সম্ভব হতো।
খুলনা নৌপুলিশ সুপার ড. মঞ্জুর মোর্শেদ বলেন, নদীতে যে মৃতদেহগুলো পাই সেগুলো নিয়ে কাজ করি। আমরা তিন ধরনের মৃতদেহ পাচ্ছি। এরমধ্যে একটি দুর্ঘটনাজনিত। গোসল করতে গিয়ে, নৌকা থেকে পড়ে, পরস্পর নৌকা-ফেরিতে ধাক্কা লেগে পড়ে যাচ্ছে এমন। দ্বিতীয়ত কিছু আত্মহত্যার ঘটনায় পাওয়া যায়। আর তৃতীয়ত আমরা কিছু পাচ্ছি হত্যাজনিত। হত্যার মধ্যেও আবার দুই ক্যাটাগরি রয়েছে। একটি নবজাতক। এক-দুই দিন বয়সী নবজাতককে তার বাবা-মা ফেলে দিয়ে যাচ্ছে। আর পাচ্ছি বয়স্ক হত্যাজনিত। এসব ঘটনায় মামলা নিয়ে তদন্ত করছি। তিন ধরনের মধ্যে হত্যাকাণ্ড-সংক্রান্ত মৃতদেহ বেশি পাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, নদ-নদী থেকে গত বছরের তুলনায় মৃতদেহ উদ্ধার চলতি বছরে বেড়েছে। গত বছর যে পরিমাণ মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছিল, এ বছরের আগস্ট পর্যন্ত সেই পরিমাণ উদ্ধার করা হয়েছে। সেপ্টেম্বরে সেটি বেড়েছে।
নৌপুলিশ সুপার বলেন, নবজাতক বাদ দিয়ে পূর্ণ বয়স্ক মৃতদেহ যেগুলো পাই তার মধ্যে অর্ধগলিত মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করা কঠিন কাজ। আর যেগুলোর ফিঙ্গার প্রিন্ট পাই এবং নিখোঁজ জিডি আছে কিনা খোঁজ করে পরিচয় পাওয়া গেলে তদন্তের অগ্রগতি ভালোভাবে সম্পন্ন করা যায়। যতোগুলো হত্যাকাণ্ডজনিত মামলা রয়েছে এর কোনোটিই আসলে নদীর ওপরে নয়। স্থলভাগে যেই সমস্ত ঘটনায় হত্যাকাণ্ড হয়ে থাকে, সেটা পারস্পারিক দন্দ্ব বা সম্পত্তির বিষয়ে থাকতে পারে, মাদক-সংক্রান্ত হতে পারে। যেগুলো স্বাভাবিক ঘটনা, সেগুলো ওখানে (স্থলভাগে) ঘটে কিন্তু মৃতদেহটি নদীতে ফেলে দেয় তথ্যপ্রমাণ লুকানোর জন্য। আমাদের নদীকেন্দ্রীক চলাফেরাই বেশি। এই ঘটনাগুলোতে আমরা বেশি মনোযোগ দিই। স্থলভাগের ঘটনাগুলোতে আমাদের পদচারণা কম। নদীকেন্দ্রীক ঘটনাগুলোতে আমাদের গোয়েন্দারা থাকে।
তিনি বলেন, স্থলভাগের হত্যাকাণ্ডে কারা জড়িত, কোনো র্যাকেট আছে কিনা? কোনো চক্র আছে কিনা? সেটার তথ্য নতুন করে নিতে অনেক সময় আমাদের বিলম্ব হয়ে যায়। তার পরও দুই জায়গাতেই মনোযোগ দিয়ে কাজ করার চেষ্টা করি। তবে লোকবলের কিছুটা সংকট রয়েছে। সবমিলিয়ে যদি আমাদের সাপোর্ট বেশি থাকতো তাহলে আরও কম সময় নিয়ে হয়ত ব্যাপারটা সমাধান করতাম বা তদন্ত কাজ সম্পন্ন করতে পারতাম।”
শতভাগ পদোন্নতি যোগ্য দ্বিতীয় শ্রেণির পদে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তাকে প্রেষণে নিয়োগের প্রতিবাদে দিনাজপুর শিক্ষাবোর্ডের স্থায়ী কর্মচারীরা বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে। শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যান কার্যালয়ে এই কর্মসূচি পালন করা হয়।
বিক্ষোভকালে কর্মচারীরা বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাদের মূল দাবি হলো, অবিলম্বে প্রেষণে দেওয়া ওই কর্মকর্তার নিয়োগ বাতিল করে শতভাগ পদোন্নতি যোগ্য এই পদে যোগ্য দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মচারীকে পদোন্নতির মাধ্যমে নিয়োগ দিতে হবে। বিক্ষোভে বক্তব্য রাখেন দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ড কর্মচারী ইউনিয়ন-এর সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মো. মওদুদুল করিম (বাবু), মুজাহিদুল ইসলামসহ অন্যান্য কর্মচারীরা। তারা বলেন, যে পদটি সম্পূর্ণভাবে বোর্ডের দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মচারীদের পদোন্নতির জন্য নির্ধারিত, সেখানে প্রেষণে প্রথম শ্রেণির একজন কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাদের দাবি, এটি দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মচারীদের ন্যায্য অধিকার ক্ষুণ্ন করছে এবং পদোন্নতির সুযোগকে সীমিত করে দিচ্ছে।
অন্যদিকে, বিক্ষোভ চলাকালীন মো. আহসান হাবিবের সমর্থকেরা শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যানকে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত অবরুদ্ধ করে মব সৃষ্টি করার চেষ্টা করেন। তবে ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এ নিয়ে দিনাজপুর শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মহা. তৌহিদুল ইসলাম জানান, মো. আহসান হাবীব তিনি আজ সহকারী কলেজ পরিদর্শক পদে যোগদান করতে এসেছিলেন, সেটি ১০ম গ্রেডের পদ, তিনি ৯ম গ্রেডে চাকরি করেন। তিনি স্পষ্ট করেন যে পদটি প্রথম শ্রেণির পদ নয়। তিনি বলেন, এই ইস্যুতে আমাদের কর্মচারীরা বাঁধা সৃষ্টি করে। আমরা প্রশাসনের সাথে কথা বলি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি।
চেয়ারম্যান আরও জানান, আপাতত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। আমরা আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছি। ঘটনার জেরে শিক্ষাবোর্ডে সাময়িক উত্তেজনা সৃষ্টি হলেও বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।
ঝালকাঠির পৌর শ্মশানঘাটে রোববার সন্ধ্যায় সনাতন ধর্মালম্বীদের মৃত স্বজনদের আত্মার শান্তি কামনায় মোমবাতি ও প্রদীপ প্রজ্বালন করেছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। এ সময় মৃত স্বজনদের পছন্দের খাবার তাদের সমাধিতে উৎসর্গ করা হয়।
ঝালকাঠি পৌর শ্মশান কমিটির সভাপতি নির্মল চন্দ্র দে তরনী জানান, কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষের তিথিকে ভূতচতুর্দশী তিথি বলা হয়ে থাকে। রোববার সন্ধ্যায় তিথি শুরু হয়েছে এবং আজ সোমবার বিকেল পর্যন্ত চলবে।
তিনি আরো বলেন, ‘বিকেল থেকেই সনাতনসহ অন্য ধর্মাবলম্বীরাও শ্মশানঘাট প্রাঙ্গণে জমায়েত হতে থাকে। দিপাবলী উপলক্ষে প্রতি বছর এই দিনে হাজারো মানুষের পদচারণ থাকে এখানে।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক অলোক সাহা জানিয়েছেন, ‘দীপালি উৎসবকে কেন্দ্র করে কয়েক হাজার সমাধির এই শ্মশানে নিরাপত্তা নিশ্চিতে এলাকায় সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে সদর থানা পুলিশ, র্যাবসহ সাদাপোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করেছে। পাশাপাশি আছেন শ্মশান রক্ষা কমিটির স্বেচ্ছাসেবকরা।'
বিধান রায় নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘বাবার সমাধিতে মোমবাতি, আগরবাতি ও প্রদীপ জ্বালিয়ে তাকে স্মরণ করতে এসেছি। তিনি মিষ্টি খুব পছন্দ করতেন, তার সমাধিতে নানা ধরনের মিষ্টি সাজিয়ে উৎসর্গ করেছি।’
শ্মশান এলাকায় অনেককে কীর্তন করতে দেখা গেছে। কেউবা অশ্রুসজল চোখে স্মরণ করেন হারানো প্রিয় মানুষটিকে।
বিকেলে অল্প সংখ্যাক লোকজন থাকলেও রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সুগন্ধা নদীর তীরে পৌর শ্মশানঘাটে হিন্দু ধর্মালম্বীদের সমাগম বাড়তে থাকে।
রাতে দিপালী উৎসব পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসক আশরাফুর রহমান এবং পুলিশ সুপার উজ্জল কুমার রায়। উৎসব চলাকালে নিরাপত্তা ব্যবস্থার খোঁজ নেন পুলিশ সুপার।
এছাড়াও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সৈয়দ হোসেন, সদস্য সচীব অ্যাডভোকেট শাহাদাত হোসেন, সদস্য অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান মুবিনসহ তারেক রহমানের পক্ষ থেকে জেলা বিএনপিরএকটি প্রতিনিধি দল দীপালি উৎসবে এসে উপস্থিত সকলের সাথে কুশল বিনিময় করেন।