গাজীপুরের টঙ্গীতে বহুতল ভবন থেকে পড়ে কামরুন নাহার (৪১) নামে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় তার স্বামী নাজিমুদ্দিনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ।
শনিবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে টঙ্গী ভরান এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। টঙ্গী পূর্ব থানার উপপুলিশ পরিদর্শক (এসআই) তাপস কুমার মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছেন।
কামরুন নাহার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছোট হরণ গ্রামের মৃত হাজি আব্দুল গনি মিয়ার মেয়ে। সপ্তাহখানেক আগে তিনি গ্রামের বাড়ি থেকে টঙ্গীর ভরান এলাকায় স্বামী নাজিমুদ্দিনের চিলেকোঠার বাসায় বেড়াতে আসেন।
টঙ্গী পূর্ব থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মহিউদ্দিন ফারুক জানান, টঙ্গীর ভরান এলাকার ওই আটতলা ভবনের চিলেকোঠায় বাস করতেন নাজিমুদ্দিন। তিনি কেয়ারটেকার হিসেবে বাড়িটি দেখাশোনা করতেন। সপ্তাহখানেক আগে গ্রাম থেকে বেড়াতে আসেন স্ত্রী কামরুন নাহার। শনিবার দিবাগত রাতে ওই ভবনের অষ্টম তলা থেকে নিচে পড়ে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে, সেই সঙ্গে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে স্বামী নাজিমুদ্দিনকে আটক করে।
মহিউদ্দিন ফারুক আরও জানান, ভবনের মালিক জাহাঙ্গীর মৃত কামরুন নাহারের বড় ভাই। জাহাঙ্গীর প্রবাসে থাকায় কামরুন নাহারের স্বামী নাজিমুদ্দিন ওই বাড়িটি দেখভাল করতেন। আটতলার চিলেকোঠার বারান্দায় কোনো রেলিং নেই। পাশের একটি সিসিটিভি ক্যামেরায় ভবন থেকে কামরুন নাহারের পড়ে যাওয়ার দৃশ্য পাওয়া গেছে। তবে তিনি দুর্ঘটনাবশত পড়ে গেছেন না কি, কেউ ফেলে দিয়েছে সেটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনায় আইনিব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া সীমান্তে মাছ শিকারের সময় চোরাকারবারি সন্দেহে ৩ বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ।
বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) মধ্য রাতে উপজেলার শরীফপুর ইউনিয়নের লালারচক বিওপির হরিপুর এলাকা থেকে তাদেরকে আটক করে বিএসএফ।
আটককৃতরা হলেন, সোহাগ মিয়া (২৩), মাসুক আলী মন্টুরি (২০) ও সিপার আহমদ (২২। তারা সবাই উপজেলার শরীফপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা।
আটককৃতদের পরিবার সুত্রে জানা যায়, গতকাল রাতে সোহাগ, মাসুক ও সিপার মাছ শিকার করছিলো বাংলাদেশ সীমান্তের ভেতর শরীফপুর ইউনিয়নের হরিপুর এলাকায় এসময় বিএসএফ এসে তাদেরকে চোরাকারবারি সন্দেহে আটক করে নিয়ে যায়।
বিএসএফের হাতে আটক মাসুক আলীর ভাই ময়নুল মিয়া বলেন, রাতে তারা বাংলাদেশ সীমান্তের ভেতরে মাছ শিকার করার সময় ১৫-২০ জন বিএসএফ এসে তাদেরকে আটক করে নিয়ে যায়। পরে ভারত থেকে আমার ভাই জানায় যে, তাদের সেখানের থানায় রাখা হয়েছে। আমরা বিষয়টি বিজিবির শরিফপুর ক্যাম্পকে জানিয়েছি তারা বলেছেন, বিষয়টি দেখতেছেন।
এ বিষয়ে শরীফপুর ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য হারুন মিয়া বলেন, আমি শুনেছি রাতে তারা মাছ শিকার করতে গিয়েছিলো। পরে তাদেরকে বিএসএফ এসে ধরে নিয়ে গেছে।
৪৬ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এ এস এম জাকারিয়া বলেন, এই ধরণের ঘটনা শুনেছি তবে আজ সারাদিন ধরে এখন পর্যন্ত কোন অভিযোগ পাইনি। পরিবারের কেউই আসেনি বা ভারতের বিএসএফও কোন কিছু জানায়নি।
জুলাই আগস্ট এর গণঅভ্যুত্থানে নিহত ছাত্র জনতার স্মরণে নীলফামারীতে মৌন মিছিল ও দোয়া মাহফিল করেছে বিএনপি । শুক্রবার (১৮ জুলাই) বিকেলে জেলা বিএনপির উদ্যোগে দলীয় কার্যালয় থেকে মিছিলটি শহর প্রদক্ষিণ করে। এরপর দলীয় কার্যালয়ে ফিরে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
এতে জেলা বিএনপির নবাগত আহ্বায়ক মীর সেলিম ফারুকের সভাপতিত্বে বক্তৃতা দেন যুগ্ম আহবায়ক মোস্তফা প্রধান হক বাচ্চু, সদস্য সচিব এ এইচ এম সাইফুল্লাহ রুবেল, সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী আখতারুজ্জামান জুয়েল, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন চৌধুরী প্রমুখ।
এসময় বক্তারা বলেন, জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে প্রাণ দেওয়া ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগ এ দেশের গণতন্ত্রের আন্দোলনে অনন্য দৃষ্টান্ত। শহীদদের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান বক্তারা।
এসময় জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সেফাউল জাহাঙ্গীর শেপু, সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক রেদওয়ানুল হক বাবু, জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের আহ্বায়ক আসাদুজ্জামান খান রিনো, জেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক মগনি মাসুদুল আলম দুলাল, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মোরশেদ আযম, সদস্য সচিব শিহাবুজ্জামান শিহাব চৌধুরী, সদর উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব রাশেদ রেজাউদ্দৌলা রাশেদ, জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি নুর আলম, জামিয়ার রহমান সহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কাপ্তাই হ্রদের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে—এমন আহ্বান জানিয়ে রাঙামাটিতে মতবিনিময় করেছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোঃ তৌহিদ হোসেন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা।
শুক্রবার বিকেলে বার্গী লেক ভ্যালী থেকে শুভলং ঝর্ণা, শুভলং বাজার ঘুরে স্পিডবোটযোগে স্টেডিয়াম ঘাট পর্যন্ত কাপ্তাই হ্রদের সৌন্দর্য ঘুরে দেখেন তাঁরা। এসময় দুই উপদেষ্টার সহধর্মিণী, রাঙামাটি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কৃষিবিদ কাজল তালুকদার, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব কংকন চাকমা, রাঙামাটি জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ সরকারি কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোঃ তৌহিদ হোসেন বলেন, “পার্বত্য চট্টগ্রামের সৌন্দর্যের মূল উৎস কাপ্তাই হ্রদ ও পাহাড়। এই লেককে পরিকল্পিতভাবে ব্যবহার করে মৎস্য উৎপাদনের কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা গেলে স্থানীয় জনগণ সরাসরি উপকৃত হবে।”
অন্যদিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা বলেন, “১৯৬০ সালে কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণে এ অঞ্চলের মানুষ ক্ষতির মুখে পড়েছিল, কিন্তু এখন সময় এসেছে এই লেকের অপার সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে ভাগ্য পরিবর্তনের। এটি এক ধরনের স্বর্ণখনি—যা সঠিকভাবে ব্যবহারে পাহাড়ের উন্নয়ন সম্ভব।”
তিনি আরও বলেন, “সরকার সকল সম্প্রদায়ের অধিকার রক্ষা এবং অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে কাজ করে যাচ্ছে । পাহাড়ি-বাঙালি সব সম্প্রদায়ের অধিকার নিশ্চিত করেই উন্নয়নের অগ্রযাত্রা এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে।”
উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা আরও জানান, “কৃষি খাতসহ নানা দিক দিয়ে পাহাড়ি জনগণ এখনও পিছিয়ে। বর্তমান সরকার এই পিছিয়ে পড়া জনগণের জন্য সকল পথ উন্মুক্ত করে দিয়েছে। আমরা আর পিছিয়ে থাকতে চাই না, মূলধারার সঙ্গে যুক্ত হতে চাই।” এই মতবিনিময় কাপ্তাই হ্রদকে ঘিরে
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে অপহৃত এক স্কুলছাত্রীকে উদ্ধার করতে গিয়ে হামলার মুখে পড়ে র্যাবের একটি দল। এতে আহতও হয় র্যাবের ৫-৭ জন সদস্য। এসময় র্যাব পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ফাঁকা গুলি ও রাবার বুলেট ছুড়ে এবং অভিযান শেষে প্রধান অপহরণকারী লিয়ন বাবুসহ তিনজনকে আটক করা হয়।
শুক্রবার (১৮ জুলাই) দুপুরে মোবাইল ফোনে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গোবিন্দগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বুলবুল ইসলাম।
এরআগে বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) রাত পৌনে ১০টার দিকে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কামারদহ ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামে এই উত্তেজনাকর ঘটনা ঘটে।
অপহরণকারী লিয়ন বাবু (২২) উপজেলার চাঁদপুর (পূর্বপাড়া) গ্রামের মো. নান্নু মিয়ার ছেলে।
পুলিশ, র্যাব ও স্থানীয় সূত্র জানায়, গত শুক্রবার (১১ জুলাই) দুপুরে লিয়ন উপজেলার গুমানিগঞ্জ ইউনিয়নের কুড়ি পাইকা গ্রামের শাহীন মিয়ার স্কুল পড়ুয়া ১৩ বছরের কিশোরী মেয়ে শারিয়া মোসতারিনকে অপহরণ করে সে। এ ঘটনায় মোসতারিনের পরিবারের পক্ষ থেকে ওইদিন রাতেই গোবিন্দগঞ্জ থানায় একটি অপহরণ মামলা দায়ের করা হয়।
ওই মামলায় গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে অপহৃতত কিশোরীকে উদ্ধারে যায়
র্যাব। এসময় অপহরণকারীর স্বজন ও সহযোগীরা হামলা চালিয়ে অপহরণকারীকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে র্যাব সদস্যদের ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। হামলায় র্যাবের অন্তত ৫-৭ জন শারীরিকভাবে সদস্য আহত হয়। একপর্যায়ে র্যাব পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ফাঁকা গুলি ও রাবার বুলেট ছুড়ে। অভিযান শেষে প্রধান অপহরণকারী লিয়ন বাবু ও তার প্রতিবেশী ওই গ্রামের জাহাঙীর আলমের ছেলে মুন্না মিয়া (২১) ও মৃত তোয়াফেলের ছেলে তাজুল ইসলামসহ তিনজনকে আটক করা হয়েছে।
র্যাব-১৩ গাইবান্ধা ক্যাম্পের নায়েব সুবেদার মো. নওশের আলী জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তারা নয়াপাড়া গ্রামের একটি বাড়িতে অভিযান চালান। অভিযানে ১৩ বছর বয়সী স্কুলছাত্রী শারিয়া মোসতারিনকে উদ্ধার করা হয়, যাকে গত ১১ জুলাই অপহরণ করে লিয়ন বাবু (২২) নামের এক যুবক। র্যাবের অভিযানের সময় লিয়নের স্বজন ও স্থানীয় সহযোগীরা একযোগে হামলা চালায়। তারা লিয়নকে ছিনিয়ে নিতে মরিয়া হয়ে র্যাব সদস্যদের ওপর ইট-পাটকেল ছোঁড়ে ও সংঘবদ্ধভাবে আক্রমণ চালায়। এতে বেশ কয়েকজন র্যাব সদস্য আহত হন। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে র্যাব সদস্যরা ফাঁকা গুলি ও রাবার বুলেট ব্যবহার করে এবং ঘটনাস্থল থেকে লিয়নের দুই সহযোগীকেও গ্রেফতার করে।
তিনি আরও বলেন, আহত র্যাব সদস্যদের তাৎক্ষণিকভাবে উদ্ধার করে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
গোবিন্দগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বুলবুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, “র্যাব অভিযান চালিয়ে ভিকটিম ও অভিযুক্তদের থানায় হস্তান্তর করেছে। আজ (শুক্রবার) সকালে তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে, আজ শুক্রবার র্যার তাদের ওপর হামলা সরকারি কাজে বাধা প্রদানের অভিযোগে ওই এলাকার ২৮ জন নামীয়য় এবং ৫০-৬০ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন। র্য্যাবের মামলায় ওই দুই আসামীকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
সুনামগঞ্জের মধ্যনগরে ২৫-৩০ জন যাত্রী নিয়ে নৌকা ডুবির ঘটনা ঘটেছে। এতে শামছুন্নাহার (৭০) নামের এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে। নিহত বৃদ্ধা নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার বড়খাপন ইউনিয়নের দুর্লভপুর গ্রামের মৃত আজিজ মিয়ার স্ত্রী।
মধ্যনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুজিবুর রহমান জানান, আজ (শুক্রবার) সকালে স্বরসতীপুর থেকে ছাদযুক্ত একটি নৌকায় ২৫-৩০ জন যাত্রী নিয়ে মধ্যনগরের উদ্দেশ্যে রওনা হন। নৌকাটি পিপড়াকান্দা ব্রিজের নিচে পৌঁছালে প্রবল স্রোতে নৌকাটি হঠাৎ করে ডুবে যায়। অধিকাংশ যাত্রী সাঁতরে তীরে উঠতে সক্ষম হলেও শামছুন্নাহারকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না।
পরবর্তীতে স্থানীয়রা তল্লাশি চালিয়ে নৌকার ছাদের ভেতর থেকে তাকে উদ্ধার করে দ্রুত স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
পরবর্তী আইনানুগ প্রক্রিয়া শেষে বৃদ্ধার মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানিছে পুলিশ।
মেহেরপুর জেলায় মাদ্রাসা শিক্ষা মান বেহাল অবস্থায় পরিণত হচ্ছে। দাখিল পরীক্ষায় গত বছরের তুলনায় এ বছর পাশের হার কমেছে ৪২ শতাংশ। ৩৩ পেয়ে পাশ করার মত ফলাফলও হয়নি ২০২৫ সালের দাখিল পরীক্ষায়।
জেলায় ২৫টি মাদ্রাসা থেকে ৬৯০ জন পরীক্ষা দিয়ে পাশ করেছে ২২৭ জন। পাশের হার মাত্র ৩২.৮৯ শতাংশ। যেখানে পাশ মার্ক নির্ধারণ হয় ৩৩ এ।
এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১১টি মাদ্রাসা থেকে ৩২৬ জন পরীক্ষা দিয়ে পাশ করেছে ১০৫ জন। জিপিএ ৫ পায়নি কেউ। এ উপজেলায় পাশের হার ৩২ শতাংশ।
গাংনী উপজেলার ১০ টি মাদ্রাসা থেকে ২৮০ জন পরীক্ষা দিয়ে পাশ করেছে ৮৮ জন। এ উপজেলায় জিপিএ ৫ পেয়েছে ১ জন। পাশের হার আর কম ৩১.৪২ শতাংশ। এ উপজেলায় শতভাগ ফেল করেছে এমন মাদ্রাসাও আছে একটি।
সে হিসেবে তুলনামূলক ভালো অবস্থানে মুজিবনগর উপজেলা। এ উপজেলায় ৪টি মাদ্রাসা থেকে ৮৪ জন পরীক্ষা দিয়ে পাশ করেছে ৩৪ জন। জিপিএ ৫ না পেলে পাশের হার ৪০.৪৭ শতাংশ।
গত বছর ২০২৪ সালের দাখিল পরীক্ষায় জেলা থেকে পরীক্ষা দিয়েছিলো ৬৫৩ জন। পাশ করেছিলো ৪৮৫ জন। পাশের হার ছিলো ৭৪.২৩ শতাংশ। জিপিএ ৫ পেয়েছিলো ১১ জন।
মেহেরপুর জেলার ২০২৪ ও ২০২৫ সালের দাখিল পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণ করে এ চিত্র পাওয়া গেছে। ফলাফল বিপর্যয় ঠেকাতে শিক্ষার অনুকুল পরিবেশ, অভিভাবকদের সচেতনতা ও শিক্ষকদের আরও দায়িত্বশীল হওয়ার তাগিদ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
মাদ্রাসা ভিত্তিক ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০২৫ সালে সদর উপজেলার মেহেরপুর দারুল উলুম আহম্মদিয়া কালিম মাদ্রাসায় ৪৩ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১৯ জন পাশ করেছে। পাশ এর হার ৪৪ শতাংশ। আমঝুপি ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসায় ৪৫ জন পরীক্ষা দিয়ে পাশ করেছে ২৭ জন। পাশের হার ৬০ শতাংশ। গোভীপুর দাখিল মাদ্রাসা থেকে ২৮ জন পরীক্ষা দিয়ে পাশ করেছে ৮ জন। পাশের হার মাত্র ২৯ শতাংশ।
নতুন দরবেশপুর দাখিল মাদ্রাসায় ৩৮ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে পাশ করেছে ৫ জন। পাশের হার মাত্র ১৩ শতাংশ। রাজনগর দাখিল মাদ্রাসা থেকে ৩৫ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে পাশ করেছে ৬ জন।
পাশের হার ১৭ শতাংশ। তাঁতীপাড়া মহিলা দাখিল মাদ্রাসা থেকে ২৪ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ৩ জন। পাশের হার ১৩ শতাংশ। ইসলামনগর হোসাইনিয়া দাখিল মাদ্রাসা ২০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ১৩ জন। পাশের হার ৬৫ শতাংশ। কুলবাড়িয়া দাখিল মাদ্রাসায় ২১ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে পাশ করেছে ৩ জন। পাশের হার ১৪.২৯ শতাংশ।
কোলা দাখিল মাদ্রাসা থেকে ১৮ জনের মধ্যে পাস করেছে ২ জন। পাশের হার ১১ শতাংশ। পিরোজপুর দাখিল মাদ্রাসা থেকে ৩৩ জনের মধ্যে পাস করছে ১৪ জন। পাশের হার ৪২ শতাংশ। আশরাফপুর দারুল সুন্নাহ দাখিল মাদ্রাসা থেকে ২১ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাশ করেছে ৫ জন। পাশের হার ২৪ শতাংশ।
মুজিবনগরের মানিকনগর ডিএসএ আলিম মাদ্রাসা থেকে ২৯ জন পরীক্ষা দিয়ে পাশ করেছে ১৩ জন। পাশের হার ৪৪.৮২ শতাংশ। দারিয়াপুর গাওছিয়া দাখিল মাদ্রাসা থেকে ২৭ জন পরীক্ষা দিয়ে পাশ করেছে ১৪ জন। পাশের হার ৫১.৮৫ শতাংশ। শিবপুর দারুল কুরআন দাখিল মাদ্রাসা থেকে ৯ জনের মধ্যে পাশ করেছে ৩ জন। পাশের হার ৩৩.৩৩ শতাংশ।
আয়েশা নগর দাখিল মাদ্রাসা থেকে ১৯ জন পরীক্ষা দিয়ে পাশ করেছে ৪ জন। পাশের হার ২১.০৫ শতাংশ।
গাংনী উপজেলার কাজীপুর দাখিল মাদ্রাসায় ৩০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে পাশ করেছে ৬ জন। পাশের হার ২০ শতাংশ । সাহারবাটি কলোনিপাড়া আল মারকাজুল মাদ্রাসায় ৩৭ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে পাশ করেছে ২১ জন। পাশের হার ৫৬.৭৫ শতাংশ ।
গাংনী সিনিয়র আলিম মাদ্রাসায় ৪০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে পাশ করেছে ১৫ জন। পাশের হার ৩৭.৫ শতাংশ । হাড়াভাংগা দারুল হাদি ফাজিল মাদ্রাসায় ৩১ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ৬ জন। এ প্লাস প্রাপ্ত শিক্ষার্থী ১ জন। পাসের হার ১৯.৩৫ শতাংশ। করমদি দারুস সুন্নাত নেছারিয়া দাখিল মাদ্রাসায় ২১ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে পাশ করেছে ১০ জন। পাশের হার ৪৭.৬১ শতাংশ। বাদিয়াপাড়া মহসিনা দাখিল মাদ্রাসায় ২১ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ৬ জন। পাশের হার ২৮.৫৭ শতাংশ। মানিকদিয়া আগারপাড়া আলিম মাদ্রাসায় ৩২ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ১৫ জন। পাশের হার ৪৬.৮৭ শতাংশ । পীরতলা দাখিল মাদ্রাসায় ১৮ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে কেউ পাশ করে নি। আইদা কলিম দাখিল মাদ্রাসায় ৩০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ৮ জন। পাশের হার ২৬.৬৬ শতাংশ। বামুন্দী দাখিল মাদ্রাসায় ২০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ১ জন। পাশের হার ৫ শতাংশ।
শতভাগ ফেল করা গাংনীর পীরতলা দাখিল মাদ্রাসার সহকারী মৌলভী শরিফুল ইসলাম বলেন, কেন যে কেউ পাশ করলো না বুঝতে পারছি না। গতবছর ১৮ জন পরীক্ষা দিয়ে ৭ জন পাশ করেছিলো। আমাদের আশা ছিলো এবারও ৬/৭ জন পাশ করবে।
সদর উপজেলা মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও আমঝুপি দাখিল মাদ্রাসার সহকারী মৌলভী মোহাম্মদ আলী লাল্টু বলেন, “সমাজের সবচেয়ে অবহেলিত, দুর্বল সন্তানকে অভিভবাবকরা মাদ্রাসায় ভর্তি করেন। মাদ্রাসা শিক্ষার বিষয়ে অভিভাবকরা অসচেতন। এছাড়া সাধারণ শিক্ষার থেকে মাদ্রাসার শিক্ষার সিলেবাস বেশি।
ফলে একেতো দুর্বল শিক্ষার্থী তার উপরে সিলেবাসের চাপ যে কারণেই মাদ্রাসার দাখিল পরীক্ষার ফলাফল খারাপ হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এর মধ্যে থেকেও শিক্ষকরা দুর্বল শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিয়ে চেষ্টা করছেন তাদের লেখাপড়ার মান উন্নয়ন করার। তবে কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর রেজাল্ট বেশি খারাপ বলেও তিনি স্বীকার করেন।
মেহেরপুর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো: হযরত আলী বলেন,“শুধু মাদ্রাসা না জেলাতেই এবার এসএসসি ও দাখিল পরীক্ষার ফলাফল খারাপ হয়েছে। আমি সকল মাদ্রাসা ও স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও সুপারদের ডাকবো। কিভাবে আগামী বছর থেকে ভালো ফলাফল করা যায় সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।
পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার সাড়া এবং পার্শ্ববর্তী নাটোরের লালপুরে পদ্মা নদীর সন্ত্রাসী বাহিনী আলোচিত আওয়ামী লীগ নেতা কাকন বাহিনীর আস্তানায় অভিযান চালিয়ে ৩ জনকে আটক করেছে সেনাবাহিনী। এসময় তিনটি বিদেশি অস্ত্র, গোলাবারুদ, মাদকদ্রব্য, একটি মাথার খুলি, ১২ লক্ষাধিক নগদ টাকা সহ সন্ত্রাসী কার্যক্রমের নানা সরঞ্জামাদী উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়াও চাঁদাবাজি ও অবৈধ বালু মহলের টাকার ভাগবাটোয়ারার তালিকা উদ্ধার করা হয়।
বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত ঈশ্বরদীর সাড়া ঘাট, লালপুরের দিয়ার বাহাদুরপুর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। সেনাবাহিনীর পাবনা ও নাটোর ক্যাম্পের সদস্যরা এই অভিযান পরিচালনা করেন।
আটককৃতরা হলেন- কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার সাতবাড়িয়ার দক্ষিন ভবানীপুরের মৃত আজিজুল হকের ছেলে ও আওয়ামী লীগ নেতা কাকনের ভায়রা ভাই মেহেফুজ সোহাগ (৪০), ঈশ্বরদীর আরমবাড়িয়ার মঞ্জুরুল ইসলামের ছেলে আশরাফুল ইসলাম বাপ্পি (৩০), লালপুরের কাইগি মারির চর এলাকার ভাষানের স্ত্রী রোকেয়া খাতুন (৫৫)। আটকৃতরা আওয়ামী লীগ নেতা কাকনের লোক বলে জানা গেছে।
বালু ব্যবসায়ী ও স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, পাবনার ঈম্বরদী, কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা, দৌলতপুর, নাটোরের লালপুর সহ বিভিন্ন এলাকার বালু মহলের নিয়ন্ত্রণ করছেন লালপুরের সন্ত্রাসী বাহিনীখ্যাত ‘কাকন বাহিনী’। অধিকাংশ ঘাট নিয়ন্ত্রণে নিলেও সাড়া ঘাটের বৈধ ইজারাদার থাকায় সেই ঘাট নিয়ন্ত্রণ নিতে ব্যর্থ হয়। এই ঘাটে গত ৫ জুন ফিল্মি স্টাইলে গুলি চালায় কাকন বাহিনী, যারা সারা দেশে ভাইরাল হয় এবং গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর কয়েকদিন থেমে ছিল। সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই গত শনিবার সকালে আবারও ফিল্মি স্টাইলে গুলি চালায় কাকন বাহিনী। স্পিডবোর্ড ও নৌকার মাধ্যমে এসে এলোপাথারি গুলি চালায়। এসময় ঘাস কাটতে গিয়ে গরুর রাখাল সোহান হোসেন গুলিবিদ্ধ হোন। এমন বিষয়টি গণমাধ্যমে উঠে আসলে সেনাবাহিনী আজকে বড় ধরেনর অভিযান চালায়।
অভিযানে বিদেশি তিনটি আগ্নেয়াস্ত্র, দেশী রাম দা, চাইনিজ কুড়াল, নির্যাতনের স্টিমরোলার, গোলাবারুদ, পেন্সিডিল, ইয়াবা, গাজার গাছ, মোবাইল, সিমকার্ড, মাথার খুলি, ১২ লাখ ৩৬ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। এছাড়াও নাটোরে ডিসি, সার্কেল এসপি, নৌ পুলিশ, থানার ওসি, টহল পুলিশ ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের মাশোয়ারার টাকা কে কত পার্সেন্ট, প্রতিদিন, সপ্তাহে ও মাসে পান সেসবের দুটি ভলিউম বই ও উদ্ধার করা হয়।
আটককৃতদের দেয়া তথ্য এবং উদ্ধার হওয়া তালিকায় দেখা গেছে, লক্ষীকুন্ডা নৌ পুলিশকে মাসে ৪ লাখ টাকা, নাটোরের ডিসিকে মাসে এক লাখ টাকা, সার্কেল এসপিকে ৫০ হাজার টাকা ও বাগাতিপাড়া থানার ওসিকে ২৫ হাজার টাকা, নাটোরের এখন টেলিভিশনের সাংবাদিককে ২৫ হাজার টাকা, এশিয়ান টেলিভিশনের পায়েল হোসেন রিন্টুকে সপ্তাহে ৫ হাজার করে দেওয়া হয়।
অভিযানের সময় সেনাবাহিনীর পাশাপাশি পুলিশ সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ঈশ্বরদী এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় এবং সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি-অপতৎপরতা নির্মূলে এই ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
আটক মেহেফুজ সোহাগ ও বাপ্পি বলেন, আমরা এখানে নৌকা চালাই ও ক্যাশিয়ারের কাজ করি। কাকনবাহিনী এই অঞ্চলে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। এখানে রাতে মাদক সেবন ও বিক্রি, অস্ত্র কারবারি ও নারীদের নিয়ে এসে আনন্দ ফূর্তি করা হয়। কাকন বাহিনীর লোকজনের বাড়ি থেকে বিদেশি অস্ত্র, দেশী অস্ত্র, মাদকদ্রব্য, নগদ টাকা সহ বিপুল পরিমাণ সরঞ্জামাদি পেয়েছে। এগোলো দিয়ে কাকন বাহিনী সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করে।
রাজশাহীর বাঘার বালু মহলের বৈধ ইজারাদার মিজানুর রহমান সরকার বলেন, আমরা সরকারের থেকে ইজারা নিয়ে বৈধভাবে বালুর ব্যবসা করে আসছি। কয়েক বছর ধরেই কাকনবাহিনী সন্ত্রাসী কার্যক্রম ও প্রতিটি নৌকা থেকে জোরপুর্বক চাঁদা আদায় করে আসছে। টাকা দিতে না চাইলে নৌকা যেতে দেয় না। আজকে সেনাবাহিনীর অভিযান ঐতিহাসিক অভিযান বলে মনে করছি। সেনাবাহিনীকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানান তিনি।
নাটোরের লালপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মমিমুনজ্জান বলেন, লক্ষীকুন্ডা নৌ পুলিশ এজাহার দিলে মামলার মাধ্যমে গ্রেফতার দেখিয়ে নাটোরের কারাগারে পাঠানো হবে।
রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) খন্দকার আজিম হোসেন বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। খোঁজ নেওয়া হবে বলে ফোন কেটে দেন।
নাটোরের পুলিশ সুপার আমজাদ হোসাইন বলেন, আপনার থেকেই প্রথম শুনলাম। আমার সার্কেল অফিসার ও দুই ওসির ব্যাপারে যেটি বললেন ডকুমেন্টসগুলে দেন, এখনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি।
জুলাই গণঅভ্যুন্থান দিবস উদযাপন উপলক্ষে ১৮ জুলাই শুক্রবার সকালে শেরপুরে প্রতীকী ম্যারাথন হয়েছে। জেলা প্রশাসনের আয়োজনে শহরের তিনআনি বাজার কলেজ মোড় শহীদ মাহবুব চত্বর থেকে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে প্রতীকী ম্যারাথনটি শুরু হয়ে প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে মাধবপুর পৌরপার্ক সংলগ্ন নির্মাণাধীন জুলাই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে গিয়ে শেষ হয়। প্রতীকী ম্যারাথনের উদ্বোধন করেন জেলাপ্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান। এসময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মো.মিজানুর রহমান ভুঁইঞা, প্রেসক্লাব সভাপতি কাকন রেজা, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব এবিএম. মামানুর রশীদ পলাশ, জেলা জামায়াতের আমীর মো. হাফিজুর রহমান, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা সমন্বয়ক মামুনুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। পরে অতিথিরাসহ জুলাই আন্দোলনে শহীদ পরিবারের
সদস্য, আহত যোদ্ধা, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, রাজনীতিক, সাংবাদিক, শিক্ষক, ক্রীড়াবিদ ও সুধীবৃন্দ সহউপস্থিত সকলের অংশ গ্রহণে প্রতিকী ম্যারাথনটি অনুষ্ঠিত হয়।
গোপালগঞ্জে সংঘর্ষের ঘটনায় গোটা জেলায় কারফিউ জারির আজ তৃতীয় দিন। সর্বত্র বিরাজ করছে থমথমে অবস্থা। জনমনে বাড়ছে আতঙ্ক। শুক্রবার (১৮ জুলাই) সকাল থেকেই দেখা যায়, জেলা শহরের প্রধান সড়কগুলো প্রায় ফাঁকা। দু-একটি ছোট যানবাহন ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়েনি।
বুধবারের সংঘর্ষের ঘটনায় গোপালগঞ্জ সদর থানায় পুলিশের কাজে বাধা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ ঘটনায় মামলা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। আজ গোপালগঞ্জ থানার মামলাটি দায়ের করা হয়।
সূত্র জানায়, এ মামলায় ৭৫ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৪০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে এ পর্যন্ত ৪৫ জনকে আটক করা হয়েছে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে। পুলিশ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের কাউকে ছাড় না দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে।
কারফিউ চলায় শহরের ছোট-বড় সব ধরনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এখনও বন্ধ রয়েছে। এর ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ ক্রেতা এবং সেবাপ্রত্যাশীরা। ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। গোটা গোপালগঞ্জে এখনও থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে।
আজ সকাল থেকে বিভিন্ন সড়কে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের তৎপরতা লক্ষ করা যায়নি। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের তৎপরতা বাড়তে শুরু করে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ এলাকায়।
কারফিউ আজ সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। তবে ১১টা থেকে ২টা পর্যন্ত শিথিল থাকবে। এরপর সন্ধ্যায় পরিস্থিতি বিবেচনা করে কারফিউ শিথিল অথবা বাড়ানো হতে পারে।
এর আগে, বুধবার (১৬ জুলাই) রাত ৮টা থেকে ২২ ঘণ্টার কারফিউ শুরু হয়। চলে বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। এরপর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন করে কারফিউর সময় আরও ২৪ ঘণ্টা বাড়িয়ে শুক্রবার (১৮ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত করা হয়। পরিস্থিতি বিবেচনা করে কারফিউয়ের বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী।
এ সময় ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিক বলেন, গোপালগঞ্জে বুধবারের (১৬ জুলাই) সহিংসতায় চারজন নিহত এবং ৪৫ জন পুলিশ সদস্য ও সাংবাদিকসহ প্রায় অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন। উচ্ছৃঙ্খল জনতা নিহত ৪ জনের লাশ পোস্ট মর্টেম করতে না দিয়ে জেলা হাসপাতাল থেকে জোরপূর্বক নিয়ে যায় বলে জানান।
শুক্রবার (১৮ জুলাই) গভীর রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজে চিকিৎসাধীন যত অবস্থায় রমজান নামের আরও একজনের মৃত্যু হয় এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫ জনে দাঁড়িয়েছে।
উল্লেখ্য, সারা দেশে মাসব্যাপী পদযাত্রার অংশ হিসেবে বুধবার গোপালগঞ্জে যান জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় নেতারা। এর আগে মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) রাতে তারা এটিকে ‘লং মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ হিসেবে নামকরণ করেন। এরপর উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। গোপালগঞ্জের স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা এটি প্রতিহতের ঘোষণা দেন।
এনসিপির নেতাদের গাড়িবহর গোপালগঞ্জে যাওয়ার পথে পথে বাধা পায়। সকালে পুলিশ এবং ইএনওর গাড়িতে হামলা চালানো হয়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাদের দায়ী করা হয়।
দুপুরে গোপালগঞ্জের পৌর পার্কে এনসিপির সমাবেশস্থলে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়। হামলার কিছুক্ষণ পর সেখানে পৌঁছান এনসিপির নেতারা। তারা সেখানে স্লোগান ও বক্তব্য দেন। সমাবেশ শেষে তারা মাদারীপুরের উদ্দেশে রওনা দিলে তাদের গাড়িবহর ঘিরে হামলা করা হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এনসিপি নেতাদের পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে নিয়ে যায়। এরপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ বাঁধে। এতে এখন পর্যন্ত ৫ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে।
'আমের বাণিজ্যিক রাজধানী সাপাহার' স্লোগানে আম চাষে প্রসিদ্ধ নওগাঁর সাপাহারে শুরু হয়েছে দুই দিনব্যাপী ম্যাংগো ফেস্টিভ্যাল (উৎসব)।
শুক্রবার (১৮ জুলাই) বেলা ১১টার দিকে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে এবং সাপাহার উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় সাপাহার পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এ মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
প্রধান অতিথি হিসেবে মেলার উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর নওগাঁর উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ, সাপাহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম আহমেদ, সাপাহার আল হেলাল ইসলামী একাডেমির অধ্যক্ষ মাহবুবুল আলম, সাপাহার উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও আমচাষী রফিকুল ইসলাম, তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা সোহেল রানা, নওগাঁ জেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি রায়হান আলম প্রমুখ।
ম্যাংগো ফেস্টিভ্যালে রয়েছে দেশি-বিদেশি বাজারে আম সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের স্টল, আমজাত খাদ্যদ্রব্য, প্রক্রিয়াজাত পণ্য, চাষিদের প্রোফাইল এবং আমের নানা জাতের প্রদর্শনী। মেলায় মোট ৪০টি স্টল রয়েছে।
এ উৎসবকে কেন্দ্র করে আম বাণিজ্যে নতুন দিগন্তের সম্ভাবনা দেখছেন স্থানীয়রা আমচাষী ও ব্যবসায়ীরা। এ উৎসবের মাধ্যমে নওগাঁর আমকে আরও সুপরিচিত করে তোলা যাবে। সাপাহারকে আমের বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সহায়তা করবে।
আম চাষিদের দাবি, নওগাঁর অধিকাংশ বাগানে উত্তম কৃষি চর্চা (গ্যাপ) অনুসরণ করে আম উৎপাদন হয়ে থাকে। কিন্তু উৎপাদনের তুলনায় রপ্তানি হয় খুবই সামান্য। রপ্তানি বাড়াতে না পারলে আমের কাঙ্খিত দাম পাবেন না আমচাষিরা। তাতে ভালো আম উৎপাদনে আগ্রহ ধরে রাখা সম্ভব হবে।
আমচাষি সোহেল রানা বলেন, 'রপ্তানির আম দূষণমুক্ত করতে হয়। না হলে আম ফেরত আসার ঝুঁকি থাকে। এর জন্য দরকার ভ্যাপার হিট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (VHT)। আবার আম বাছাইয়ের জন্য প্যাকিং হাউস ও সহজে সঙ্গনিরোধ (কোয়ারেন্টিন) সনদ পেতে নওগাঁতে কৃষি বিভাগের সঙ্গনিরোধ শাখা স্থাপন করা দরকার। সরকারিভাবে এই সুবিধাগুলো যেন করা হয় সেই দাবি জানাতে চাই প্রশাসন ও সরকারের আছে।'
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সেলিম আহমেদ বলেন, আম উৎপাদনে সাপাহার দেশের শীর্ষস্থানে থাকলেও চাষিরা এখনও বঞ্চিত। এখানে অধিকাংশ বাগানে রপ্তানিযোগ্য আম চাষ হয়ে থাকে। এখানকার চাষিরা আমকে একটি শিল্পে পরিণত করেছে। বর্তমানে সাপাহারে ২০ হাজারের বেশি আমচাষি রয়েছেন এবং ১০ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে আম চাষ হয়। গত বছর এই অঞ্চলে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার আম লেনদেন হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, 'রপ্তানিকারকদের উদ্দেশ্য আমি বলতে চাই, সাপাহারের আম অত্যন্ত সুস্বাদু ও ভালো মানের। আপনারা সাপাহারের আম বিদেশে রপ্তানি করুন।'
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল বলেন, 'আমের চাষকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেছে নওগাঁর। এ অঞ্চলে এখন সারা বছর আম উৎপাদিত হয়। সারা বছর আম খেতে চাইলে সাপাহারে আসতে হবে। আম চাষের চালেঞ্জ হলো রপ্তানির অভাব। বর্তমানে বিদেশে প্রায় দুই কোটি বাংলাদেশি আছে তাদের চাহিদাই পূরণ করতে পারি না। এমনকি বিদেশিদের মাঝেও বাংলাদেশের আমের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এর জন্য আম রপ্তানির যে বাধাগুলো আছে সেগুলো দূর করতে হবে। নওগাঁতে ভিএইচটি প্ল্যান্ট ও প্যাকিং হাউজ স্থাপনের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
ঝালকাঠি পৌরসভাটি কাগজে প্রথম শ্রেনীর তালিকায় থাকলেও বাস্তবে তৃতীয় শ্রেনীর মতই। পৌর কর দেয়া বাসিন্দারা বৃষ্টির জলে খাচ্ছে হাবুডুবু। সপ্তাহজুড়ে টানা বৃষ্টিপাতে প্লাবিত হয়েছে ঝালকাঠির বিভিন্ন এলাকা।
ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় পৌর এলাকার ৩নং ওয়ার্ডের কৃষ্ণকাঠিতে পানিবন্ধী হয়ে আছে প্রায় ২০০ পরিবার। এখানকার ঘরবাড়ি মাসব্যাপী পানিতে তলিয়ে আছে। জলাবদ্ধতার কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন জেলা পরিষদ সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দারা। তাদের এমন ভোগান্তি দশ বছর ধরে পোহাতে হচ্ছে।
সেলিম তালুকদার, আলম হাওলাদার, মিল্টন তালুকদার, সাইদুল ইসলাম, এডভোকেট শাহাদাৎ হোসেনের বাড়ির বাসিন্দারা দুর্ভোগের কথা সার্চ বিডি নিউজকে জানিয়েছেন।
পানিবন্দি বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন, দীর্ঘদিন ধরে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন না হওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতেই রাস্তাঘাট ও বসতবাড়ি ডুবে যায়। বিশেষ করে ৩ নম্বর ওয়ার্ডে জেলা পরিষদ ভবনের আশপাশ এলাকার পরিস্থিতি সবচেয়ে ভয়াবহ।
"বাচ্চাদের স্কুলে পাঠানো যাচ্ছেনা। রান্নাঘরেও পানি উঠে গেছে। প্রাইভেট টিচার পানি পেরিয়ে ঘরে আসতে চায়না। পৌরসভাকে বারবার বলেও কোনো কাজ হয়নি। এমনটাই জানালেন স্থানীয় বাসিন্দা রাশেদা বেগম, সেলিম তালুকদার, সাইদুল ইসলামসহ অনেকে।
এলাকাবাসীর দাবি, পৌর কর্তৃপক্ষ যদি ড্রেন তৈরি বা পাইপ দিয়ে নদীতে পানি নামিয়ে দিতো অথবা সঠিক পরিকল্পনায় কাজ করতো, তাহলে এমন পরিস্থিতি হতো না। সাবেক মেয়রদের গাফিলতির কারনেই আজ পানিবন্দি থাকতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পৌরসভার এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, 'ড্রেনেজ সমস্যা আমরা জানি। তবে সাবেক মেয়রদের আমলে বাজেট ও জনবলের সংকটের কারনে সময়মতো কাজ করা হয়নি না।'
ভুক্তভুগিদের মতে, পৌরসভা যদি দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন না করে, তবে ভবিষ্যতে এই সমস্যা আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে জনদুর্ভোগ বাড়তেই থাকবে।
এদিকে বরিশাল-ঝালকাঠি মহাসড়কে বিক্ষোভ করেছে পানিবন্দি এলাকার বাসিন্দারা। তাদের দাবি দ্রুত সময়য়ের মধ্যে জলাবদ্ধতার টেকসই সমাধান করে দিতে হবে। অন্যথায় তারা পৌর কর দেয়া বন্ধ করা এবং পৌরসভা ঘেরাও সহ কঠোর কর্মসুচি দিবেন।
তবে অনেকটা আশার বানী শোনালের পৌর প্রশাসক কাওছার হোসেন। তিনি জানান, 'শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে ইতিমধ্যে রেকর্ডিও খালগুলো পুণ:খনন করা হচ্ছে। কৃষ্ণকাঠি এলাকার জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধানের বিষয়টি আমাদের পরিকল্পনায় রয়েছে।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জুলাই পদযাত্রা কর্মসূচি সময় গোপালগঞ্জে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলার ঘটনায় প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছেন দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭ জন শিক্ষক।
শিক্ষকরা যৌথ বিবৃতিতে জানান, এই বর্বরতা শুধু রাজনৈতিক সমাবেশে হামলা নয় বরং জুলাই বিপ্লবের শীর্ষ নেতৃত্বকে হত্যার উদ্দেশ্যে ঘটানো হয়েছে। গোপালগঞ্জে এনসিপির পূর্বঘোষিত কর্মসূচির ওপর বর্বরোচিত হামলা, ককটেল বিস্ফোরণ, ইউএনওসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও পুলিশ সদস্যদের আহত করা অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশের জন্য অশনি সংকেত।
তারা মনে করেন, এই হামলা শুধু নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে নয়। বরং দেশের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, বাকস্বাধীনতা ও নাগরিক অধিকারের ওপর সরাসরি আঘাত। শিক্ষকরা দোষীদের আইনের আওতায় এনে দ্রুত বিচার কার্যক্রম শুরুরও দাবি জানান।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, এনসিপির পূর্বঘোষিত কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা পরিকল্পিতভাবে সারা দেশ থেকে সন্ত্রাসীদের গোপালগঞ্জে জড়ো করেছে।
শিক্ষকরা বলেন, অবিলম্বে জড়িতদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীকে নিরপেক্ষ ও পেশাদার সদস্যদের সমন্বয়ে ঢেলে সাজানোর দাবি জানান।
বিবৃতি দেওয়া শিক্ষকরা হলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. সিরাজুল ইসলাম ও অধ্যাপক ড. শহিদুল ইসলাম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মুহিব্বুল্লাহ ও অধ্যাপক ড. কাজী মো. বরকত আলী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. খোন্দকার লুৎফুল এলাহী ও অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক, হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. শামসুজোহা, অধ্যাপক ড. মো. সোহাইবুর রহমান ও অধ্যাপক ড. আবু খায়ের মোকতাদিউল বারী চৌধুরী, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মো. কবীর উদ্দিন; জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. এএফজি মাসুদ রেজা, ডুয়েট-এর শেখ মো. রোকনুল ইসলাম, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. সুজাহাঙ্গীর কবির সরকারসহ মোট ৪৭ জন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক।
গত বছরের পাঁচ আগস্টের আগে বাংলাদেশে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া কিংবা মব জাস্টিসের সংস্কৃতি ছিল না বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহ্বায়ক ও বিএনপি-ঘনিষ্ঠ পেশাজীবী জোটের সমন্বয়ক এ জেড এম জাহিদ হোসেন।
শুক্রবার (১৮ জুলাই) সকাল ১০টার দিকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ আয়োজিত দেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশ ধ্বংসের বিরুদ্ধে এক প্রতিবাদ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
জাহিদ হোসেন বলেন, গত বছরের ৫ আগস্টের আগে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া বা মব জাস্টিসের সংস্কৃতির সঙ্গে আমাদের পরিচয় ছিল না। এখন শিশুদের কাছেও এই শব্দগুলো পরিচিত। অনেকেই ২৮ অক্টোবর পল্টনের সেই মর্মান্তিক ঘটনার কথা বলবেন, কিন্তু মানুষ অতীত থেকে শিক্ষা নেয়।
২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর রাজধানীর পল্টন-বায়তুল মোকাররম এলাকায় লগি-বৈঠার তাণ্ডব চালিয়ে আওয়ামী লীগের কর্মীরা জামায়াত-শিবিরের ৬ নেতাকর্মীকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। ২৮ অক্টোবর ছিল বিএনপির নেতৃত্বে চারদলীয় জোট সরকারের শেষ দিন। সেদিন ঢাকার রাস্তায় প্রকাশ্যে অস্ত্র তুলে গুলি এবং মানুষ পিটিয়ে মারার ঘটনা গভীর আলোড়ন তুলেছিল। ২৮ অক্টোবরের আগের দিন এবং পরের দিনও দেশের বিভিন্ন জায়গায় রক্তক্ষয়ী রাজনৈতিক সংঘাত হয়েছিল।
তিনি বলেন, গত ১৭ বছর ধরে চলা ভোট ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে চূড়ান্ত রূপ নেয়। যেটি ফ্যাসিস্টদের পালাতে বাধ্য করে। জনগণকে দাবি আদায়ে আর রাস্তায় নামতে হবে না বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহ্বায়ক বলেন, আমরা লক্ষ করছি, ১১ মাস পার হয়ে গেলেও অনেকেই আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধা না দেখিয়ে কর্তৃত্ববাদী মানসিকতা লালন করছেন। সুপরিকল্পিতভাবে নানা ষড়যন্ত্র চলছে।
এ কারণে জনগণ ন্যায্য বিচার নিশ্চিতে বিগত সরকাররে আমলে ধ্বংসপ্রাপ্ত নির্বাচন কমিশন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও বিচার বিভাগকে দ্রুত পুনর্গঠন করার আহ্বান জানান তিনি।
তিনি বলেন, বিএনপি কেবল একটি রাজনৈতিক দল নয়, এটি গণতন্ত্রও বটে। আমরা বারবার বলেছি ৫ আগস্টের ঐক্য নষ্ট কোরো না। পালিয়ে যাওয়া পতিত ফ্যাসিস্টরা তোমাদের ব্যর্থ করতে ষড়যন্ত্র করছে। কিন্তু তোমরা শুনলে না। তাই অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে।
তিনি বলেন, হঠাৎ করে একদল মানুষ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে কুৎসিত ভাষায় কথা বলছে। এমনকি শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও গণতন্ত্রের জন্য জীবন উৎসর্গকারী আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়াকে নিয়েও সামাজিকমাধ্যমে বিদ্রুপ করেছে। এটা কোনো রাজনৈতিক ভাষা নয়, এটা ফ্যাসিস্টদের ভাষা।
গোপালগঞ্জে এনসিপি নেতাদের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, ফ্যাসিস্টদের হাতে প্রচুর লুটের টাকা আর অবৈধ অস্ত্র আছে। তাই তারা প্রকাশ্যে হামলা চালাচ্ছে।
আগামী নির্বাচনের তারিখ ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে জাহিদ হোসেন বলেন, গণতন্ত্র নিয়ে লুকোচুরি খেলা বন্ধ করুন। জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিন। জনগণ যাকে উপযুক্ত মনে করবে, তার হাতেই রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব দেবে।