মাদারীপুর সদরে রাজিব সরদার (২৬) নামে এক যুবক হত্যা মামলায় ২৩ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড দেয়া হয়েছে।
হত্যাকাণ্ডের ১১ বছর পর মঙ্গলবার বিকেলে মাদারীপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ লায়লাতুল ফেরদৌস এ রায় ঘোষণা করেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন আব্দুল হাই হাওলাদার, আব্দুল হক হাওলাদার, জহিরুল হাওলাদার, রাসেল হাওলাদার, রাজা হাওলাদার, কালু হাওলাদার, সোবহান হাওলাদার, তুষার শরীফ, ইউসুফ হাওলাদার, আজিজুল হাওলাদার, রহিম হাওলাদার, রেজাউল হাওলাদার, শামিম হাওলাদার, আহাদ হাওলাদার, দলিলউদ্দিন হাওলাদার, অলিলউদ্দিন হাওলাদার, জসিম হাওলাদার, মনির হাওলাদার, সুমন শরীফ, সাগর শরীফ, হাফিজুল কাজী, কালু কাজী ও আলাউদ্দিন কাজী।
যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তরা হলেন, সেকেন হাওলাদার, উজ্জ্বল হাওলাদার, জামাল হাওলাদার, রুবেল হাওলাদার, নুরুল আমিন হাওলাদার, বাকিবিল্লা হাওলাদার।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১২ সালের ১ সেপ্টেম্বর সকালে মামা আলী হাওলাদারের নার্সারিতে কাজ শেষে বাড়ি ফিরছিলেন রাজিব সরদার। তিনি পৌর শহরের হরিকুমারিয়া এলাকায় এলে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে অভিযুক্তরা দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে তাকে। পরে রাজিবকে উদ্ধার করে প্রথমে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হলে পথে তিনি মারা যান।
ঘটনাটির তিনদিন পর রাজিবের মামা আলী হাওলাদার বাদী হয়ে জামাল হাওলাদার, রহিম হাওলাদারসহ ৪৭ জনকে আসামি করে মাদারীপুর সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। সদর থানার তৎকালীন উপ-পরিদর্শক রাজিব হোসেন তদন্তের পর ওই বছরের ৩১ ডিসেম্বর ৩৬ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন।
এরপর আদালত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ ১৩ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন। দীর্ঘ ১১ বছর যুক্তিতর্ক শেষে উপযুক্ত সাক্ষ্যপ্রমাণের ওপর ভিত্তি করে ২৩ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ছয়জনকে যাবজ্জীবন এবং প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেন বিচারক। মামলার বাকি সাত আসামির মধ্যে তিনজন বিচার চলাকালে মারা যান। বাকি চারজনকে রায়ে খালাস দেয়া হয়েছে।
রায় ঘোষণার সময় ২২ জন আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
মাদারীপুর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মো. সিদ্দিকুর রহমান সিং দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘এটি একটি ঐতিহাসিক রায়। মামার সঙ্গে বিরোধের জেরে তার ভাগ্নেকে কুপিয়ে জখম করে প্রতিপক্ষ। আজ দীর্ঘ ১১ বছর পর আদালত এই মামলার ২৩ জনকে ফাঁসির আদেশ দেন। আমরা রাষ্ট্রপক্ষ এই রায়ে সন্তুষ্ট।’
মামলার বাদী আলী হাওলাদার বলেন, ‘দীর্ঘদিন পর হলেও রায় পেয়ে আমরা খুশি। তবে আরও বেশি খুশি হবো, যেদিন রায় কার্যকর হবে। আমার সঙ্গে বিরোধের জের ধরে আমার উঠতি বয়সী ভাগিনাকে যেভাবে নির্মমভাবে হত্যা করেছে, সেই রক্তের দাগ তখনই মুছবে যেদিন ওরা ফাঁসিতে ঝুলবে।’
তবে আসামিপক্ষের আইনজীবী বাবুল আখতার বলেন, ‘আমার মক্কেলের সঙ্গে ন্যায়বিচার করা হয়নি। যে কারণে আমরা সংক্ষুব্ধ হয়েছি। আগামীতে রায়ের কপি পেলে উচ্চ আদালতে আপিল করব। আশা রাখি সেখানে আমরা ন্যায়বিচার পাব।’
লক্ষ্মীপুর জেলার পৌরশহরের মুক্তিগঞ্জ এলাকায় গ্রীনলাইফ ফিলিং স্টেশনে গ্যাস নিতে থাকা একটি যাত্রীবাহী বাসের সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়ে তিনজন নিহত ও ২০জন আহত হয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, গতকাল রোববার দিবাগত রাত ২টার দিকে এই দুর্ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
নিহতরা হলেন, সদর উপজেলার চরমনসারের বটুমিয়ার ছেলে সুমন হোসেন (৩০), বাঞ্চানগর এলাকার সুজামিয়ার ছেলে মো. ইউসুফ মিয়া (৪৫) ও হৃদয় হোসেন (২৩)
সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. জয়নাল আবেদিন জানান, আহতদের মধ্যে ১০জনের অবস্থা আশংকাজনক। তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
নিহত তিনজন সিএনজির চালক এবং আহতরা বাস ও সিএনজির চালক বলে জানায় ফিলিং স্টেশনের ম্যানেজার আলআমিন।
ফিলিং স্টেশন ও ফায়ার সার্ভিস জানায়, রাত পৌনে দুটার দিকে লক্ষ্মীপুর-রামগতিগামী মেঘনা পরিবহণ নামে একটি বাস গ্যাস নিতে আসে গ্রীনলাইফ ফিলিং স্টেশনে। এসময় বাসে গ্যাস দেওয়ার সময় হঠাৎ বাসের সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়। এতে চারদিকে ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে গেলে স্টেশনে থাকা সিএনজি চালকরা ছুটাছুটি করে। এসময় ঘটনাস্থলে সিএনজির তিন চালক মারা যান।
পরে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ও পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে নিহত তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করে সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। আহতদের উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অন্যদের সদর হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
চালকরা জানান, দীর্ঘলাইনে দাঁড়িয়ে গ্যাস নিচ্ছিলেন সিএনজির চালকরা। হঠাৎ মেঘনা পরিবহণ নামে একটি বাস ফিলিং স্টেশনে এসে লাইনে না দাঁড়িয়ে সরাসরি গ্যাস নিতে চলে যায় এবং পাম্পের অপারেটর বাসের গ্যাস সিলিন্ডার গ্যাস দিতে শুরু করে। এক পর্যায়ে গ্যাস সিলিন্ডারটি বিস্ফোরিত হয়ে হতাহতের ঘটনা ঘটে।
লক্ষ্মীপুর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার রনজিত কুমার বলেন, গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের খবর পেয়ে দুইটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে হতাহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে তিনজন মারা যায়। বাসের গ্যাস সিলিন্ডারটি মেয়াদ উত্তীর্ণ এবং নিম্নমানের হওয়ায় এই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে।
মেডিকেল অফিসার ডা. জয়নাল আবেদিন আরও জানান, আহতদের মধ্যে কারো পা ও কারো হাত শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে এবং তাদের প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছে।
একাধিকবার গ্রেপ্তার, কারাবরণেও থেমে নেই কুখ্যাত দস্যু আসাবুর বাহিনী। দীর্ঘদিন বিরত থাকার পর গোপনে শক্তি বৃদ্ধি করে আবার তারা সুন্দরবনের গভীরে দস্যু কার্যক্রমে সক্রিয় হয়েছে।
সম্প্রতি এই বাহিনী বেশ কয়েকটি জেলেদের নৌকায় হামলা চালিয়ে অপহরণের পর মুক্তিপণও আদায় করেছে। বনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ২ মাস ধরে সুন্দরবনের পশ্চিমাংশে বিশেষ করে খুলনা রেঞ্জ সংলগ্ন এলাকায় তাদের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
৪৪ বছর বয়সি এই দস্যুর পুরো নাম আসাবুর সানা। সে দাকোপ উপজেলার সুতারখালী ইউনিয়নের কালাবগি গ্রামের আয়নাল সানার ছেলে। ওই এলাকার ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম খোকন বলেন, স্থানীয়দের কাছ থেকে শুনেছি গত ৭ আগস্ট থেকে আসাবুরের বাহিনী বনে দস্যুতা করতে নেমেছে। তারা জেলেদের জিম্মি করে অর্থ আদায় করছে।
জেলেরা জানিয়েছেন, সুন্দরবনে জেলেদের প্রবেশের জন্য আসাবুর বাহিনী টোকেন বাণিজ্য শুরু করেছে। যার প্রতি টোকেনের মূল্য ২০ হাজার টাকা। সঙ্গে ৪০০ টাকা মোবাইল ব্যাংকিং খরচও দিতে হচ্ছে। এই টোকেন প্রথম বার নিলে, মাসিক আবার ২ হাজার টাকা পরিশোধ করে নবায়ন করতে হচ্ছে।
তবে যদি কেউ টোকেন না নিয়ে বনে প্রবেশ করে তাহলে তাদের অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করা হচ্ছে। এ বিষয়ে ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম খোকন বলেন, গত কয়কেদিনে আমার এলাকার অন্তত ৪০ জন জেলে এই দস্যু বাহিনীর হাতে অপহৃত হয়েছিলেন। পরে তাদের দেওয়া একটি বিকাশ নাম্বারে খরচসহ ২০ হাজার ৪০০ টাকা পাঠাতে হয়েছে। তারপর তাদের মুক্তি মিলেছে।
কয়েকদিন আগে এই বাহিনীর হাতে আটক হয়েছিলেন কালাবগি গ্রামের অহিদুল শেখ। তিনি বলেন, আমাকে সুন্দরবনের শরবত খালীর খাল এলাকা থেকে অপহরণের পর বেদম মারপিটে রক্তাক্ত জখম করে। পরে আমার নৌকা লোহার শিকল দিয়ে তাদের ট্রলারে বেঁধে রাখে। এরপর আমার পরিবারের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপন হিসেবে দাবি করে। তবে অনেক অনুনয়-মিনতি করে ১০ হাজার ২০০ টাকা দিয়ে মুক্তি পেয়েছি।
আসাবুর জেলেদের অপহরণ করার পর তার পরিবারের সঙ্গে যে নাম্বার দিয়ে যোগাযোগ করেন, ওই নাম্বারদুটিও সংগ্রহ করেছেন এই প্রতিবেদক। আইন শঙ্খলা বাহিনীর সূত্রে পাওয়া তথ্য জানা গেছে, যার একটিতে মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশের হিসাব রয়েছে। ওই হিসাবটি মো. হবি নামের এক ব্যক্তির নামে রেজিস্ট্রেশন করা।
জেলেরা জনিয়েছেন, আসাবুর বাহিনীর বেশিরভাগ সময়ে অবস্থান করছে সুন্দরবনে কালাবগি, ভদ্রা, শরবত খালী, হড্রা, আদাচাই ও পাটকোষ্টা সংলগ্ন এলাকায়। তাই ওই এলাকায় বর্তমানে জেলেরা মাছ আহরণ করতেও কম যাচ্ছেন। কালাবগি ফরেস্ট স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, পূর্ণিমা ও অমাবস্যার সময়ে কালাবগী স্টেশন থেকে অন্তত ৪০০ থেকে ৫০০ জন জেলে বনে যাওয়ার অনুমতি নিতেন। তবে সর্বশেষ পূর্ণিমায় মাত্র ৩০ জন জেলে বনে যাওয়ার অনুমতি নিয়েছেন। তবে খুলনাঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো এই বিষয়টি নিয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
সুন্দরবন সংলগ্ন দাকোপ উপজেলার সুতারখালী ইউনিয়ন পরিষদের আওতাভুক্ত এলাকার অধিকাংশ মানুষের জীবিকা কোন না কোন ভাবে সুন্দরবনের সঙ্গে জড়িত। আর এলাকার মানুষের যেসব অঞ্চলে মাছ বা কাঁকড়া আহরণ করেন, সেইসব এলাকাতেই আসাবুরের বিচরণ বেশি রয়েছে।
সুতারখালী ইউপি চেয়ারম্যান মাসুম আলী ফকির বলেন, জঙ্গলের গহীনে বনজীবীদের নৌকা আটকে রেখে তাদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করা হচ্ছে। প্রতিদিনই নতুন নতুন ঘটনা শুনছি। বিষয়টি আমি প্রশাসনের একধিক ইউনিটকে জানিয়েছি। সরকার যদি দ্রুত পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে তো এই এলাকা আবারও দস্যুদের হাতে চলে যাবে। আসাবুর সর্বশেষ গ্রেপ্তার হয়েছিল ২০২৩ সালের ২৩ আগস্ট। ডাকাতির সময়ে অস্ত্র গোলাবারুসহ র্যাবের কাছেগ্রেপ্তারের পরে দীর্ঘদিন কারাবরণ করেন। পরে মুক্তি পেয়ে কিছুদিন এলাকায় ছিল।
আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, ২০০৩ সালে সুন্দরবনে মৃত্যুঞ্জয় বাহিনীর প্রধান আকাশ বাবু ওরফে মৃত্যুঞ্জয়ের সঙ্গে আসাবুর ডাকাতি শুরু করেন। ২০০৭ সাল পর্যন্ত তিনি ওই দলের সক্রিয় সদস্য ছিলেন। পরে মৃত্যুঞ্জয় দল ছেড়ে পার্শ্ববর্তী দেশে ভারতে চলে গেলে আসাবুর বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে বেড়াতেন ও বিভিন্ন বাহিনীর সঙ্গে মিলে দস্যুতা করতেন। এক পর্যায়ে দস্যুতা করতে গিয়ে একটি ডাবল বেরেল বন্দুকসহ কোষ্টগার্ডের কাছে আটক হন। ওই অস্ত্র মামলায় তিন বছর কারাভোগ করে ২০১৫ সালে জামিনে মুক্তি পান।
পরবর্তীতে সে ২০১৬ হতে ছোট জাহাঙ্গীর বাহিনীর উপপ্রধান হিসেবে যোগদান করেন। ২০১৬ সাল থেকে ২০১৮ সালের অক্টোবর পর্যন্ত সুন্দরবন অঞ্চলের ৩২টি দস্যু বাহিনীর ৩২৮ জন জলদস্যু, ৪৬২টি অস্ত্র ও ২২ হাজার ৫০৪ রাউন্ড গোলাবারুদসহ আত্মসমর্পণ করেছিল। পরে ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর সুন্দরবনকে ‘দস্যুমুক্ত সুন্দরবন’ ঘোষণা করা হয়। সেই সময়ে ছোট জাহাঙ্গীর আত্মসমর্পণ করেলেও আসাবুর আত্মসমর্পন করেনি। তখন থেকে নানান উপায়ে তিনি নিজ নামে বাহিনী গঠন করে জেলেদের অপহরণ, মুক্তিপণ আদায়সহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন।
এই প্রসঙ্গে দাকোপ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলাম বলেন, জেলারা যে স্থানে মাছ ধরতে যায়, তা স্থল ভাগ থেকে কমপক্ষে ৩০ কিলোমিটার দূরে। ওই এলাকাটি নৌ-পুলিশ ও কোর্স্ট গার্ডের। এছাড়া জেলেরা কেউ বিষয়টি নিয়ে থানায় অভিযোগও দিতে চাই না। ওই এলাকার আওতাভুক্ত নলিয়ান নৌ-থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তারক বিশ্বাস বলেন, জেলেদের কাছে থেকে আসাবুর বাহিনীর অপহরণের তথ্য জানতে পেরেছিলাম। পরে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানায়। তাদের অনুমতি নিয়ে গত ৫ ও ৬ অক্টোবর আমরা সুন্দরবনে অভিযান চালিয়েছি। তবে আসাবুর বাহিনীকে ধরতে পারিনি। আমাদের সোর্স ও গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত আছে, সুযোগমতো আবারও অভিযান চালানো হবে।
সিলেটের জাফলংয়ের পিয়াইন নদীতে গোসল করতে নেমে জাওয়াত আহমেদ নামের এক পর্যটকের মৃত্যু হয়েছে।
আজ শনিবার দুপুর আড়াইটার দিকে জাফলংয়ের জিরো পয়েন্টের ঝর্ণা সংলগ্ন এলাকা থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত জাওয়াদ (২৫) ময়মনসিংহ জেলা শহরের নাহার রোডের ডা. আফতাব উদ্দিনের ছেলে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ‘জাওয়াত আহমদসহ কয়েকজন মিলে জাফলংয়ের জিরো পয়েন্টের ঝর্ণা সংলগ্ন এলাকায় নদীতে গোসল করতে নামেন। এক পর্যায়ে জাওয়াদ স্রোতের টানে পানিতে তলিয়ে যায়।’
‘তার সঙ্গীরা ও স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় ক্লিনিকে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সরকার তোফায়েল জানান, পর্যটনকেন্দ্র জাফলংয়ে বেড়াতে আসা এক পর্যটকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।’
নীলফামারীর সৈয়দপুরে বিভিন্ন পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করেছেন রংপুর রেঞ্জের পুলিশের ডিআইজি আমিনুল ইসলাম, নীলফামারী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম।
সৈয়দপুর পৌর এলাকার তুলশীরাম সড়কে গতকাল শুক্রবার কেন্দ্রীয় সার্বজনীন শ্রী শ্রী পূজামণ্ডপসহ বিভিন্ন মণ্ডপগুলো তারা গভীর রাত পর্যন্ত পরিদর্শন করেন।
এ সময় তারা পূজামণ্ডপের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময় করে সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ, আইন শৃঙ্খলাসহ বিভিন্ন বিষয়ে খোঁজ-খবর নেন ও দিক নিদের্শনামূলক বক্তব্য দেন। এ ছাড়া তারা হিন্দু সম্প্রদায়ের সকলকে শারদীয় শুভেচ্ছা জানান।
মণ্ডপ পরিদর্শনকালে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নীলফামারী অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সাইদুল ইসলাম, সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুর-ই আলম সিদ্দিকী, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আমিনুল ইসলাম, থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফইম উদ্দিন, উপজেলা হিন্দু কল্যাণ সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট তুষার কান্তি রায়।
এ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সাধারণ সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি সুমিত কুমার আগারওয়ালা (নিক্কি), সাংগঠনিক সম্পাদক টিকেন্দ্রজিৎ রায় মিরু, কোষাধ্যক্ষ অনিল কুমার আগারওয়ালা, সর্বজনীন শ্রী শ্রী শারদীয় দুর্গোৎসব কেন্দ্রীয় দুর্গাপূজার সভাপতি রাজকুমার রাজ পোদ্দার রাজু।
আরও উপস্থিত ছিলেন সৈয়দপুর রাজনৈতিক জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট এস এম ওবায়দুর রহমান, সহ-সভাপতি শফিকুল ইসলাম জনি, সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন প্রমানিক, জেলা বিএনপির অন্যতম নেতা শওকত হায়াত শাহ, প্রচার সম্পাদক আবু সরকার, উপজেলা জামায়াতের আমির হাফেজ মাওলানা আবদুল মোন্তাকিম, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি হোসাইন মোহাম্মদ আরমান, সাধারণ সম্পাদক মো. মোমিনুল ইসলাম রাব্বীসহ অন্যান্য নেতারা।
টাইপমেশিন বা লেখনীযন্ত্রের সঙ্গে কে না পরিচিত। এক সময় প্রেস বলতেই মাথায় ভেসে উঠত মুদ্রাক্ষরে টাইপমেশিনের ছবি। খট্খট্ লেখনীর শব্দ সারাক্ষণ লেগেই থাকত। ৯০ এর দশকে এই পেশা দিয়ে গোটা একটা সংসারও চলে যেত। তবে কালের পরিক্রমায় বদলে যাচ্ছে গল্প।
কম্পিউটার আবিষ্কার হওয়া পরে যন্ত্রটি প্রায় বিলুপ্ত হতে চলেছে। এরপরও কীভাবে যেন বেরিয়ে এলো একজন টাইপিস্টের নাম। দেখা মিলল এ বিরল যন্ত্রটির সাথে তার পরিচালক। সে গল্পই তুলে ধরছেন দৈনিক বাংলার জেলা প্রতিনিধি মো. রুবেল আহমেদ।
তিনি মো. মজিবর রহমান। টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার হাদিরা ইউনিয়নের পানকাতা বাজারের গ্রামীণ ব্যাংকের গেইটে ২০০৭ সাল থেকে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বেলা ১০টা পর্যন্ত খোলা আকাশের নিচে বসে টাইপিং করেন।
জানা গেছে, জমি বন্ধক রাখার স্ট্যাম্প কিনে নাম ঠিকানার ঘর ফাঁকা রেখে টাইপিং করে সাইকেলে চড়ে গোপালপুর ও ধনবাড়ী উপজেলার বিভিন্ন মুদি দোকানে বিক্রি করেন তিনি। এতে তার দৈনিক আয় হয় ৮০ থেকে ১০০ টাকা।
সরেজমিনে জানা যায়, মুশুর্দী ইউনিয়নের বাগুয়া গ্রামের মৃত আব্দুস ছামাদের মেজো ছেলে মজিবর ১৯৮৬ সালে ধনবাড়ী মহাবিদ্যালয় থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। এরপর ঢাকাতে টিউশনি শুরু করেন। একপর্যায়ে নারায়ণগঞ্জ আদালত চত্বরে কলা বিক্রিও করেন তিনি। সেখানেই একজনের অনুরোধে ১৯৯৪সালে মুদ্রাক্ষরিক কাজ শেখেন। এরপর ১৯৯৭সালে নিজের মেশিন নিয়ে বসেন আদমজীতে। এসব কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকার কারণে স্থানীয়রা তাকে পাগলও বলেছে।
জানা গেছে, বিয়ের পিঁড়িতে বসনেনি মজিবর। কাজের ফাঁকে তিনি দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘বর্তমান মেশিনটি ২০১৯ সালে ১৫ হাজার টাকায় ঢাকা থেকে এনেছি। প্রতিদিন যা আয় করি তা দিয়ে চা খরচ চলে যায়। সংসার না থাকায় তেমন চিন্তা করতে হয় না। ব্যাপক চাহিদার পেশাটির গৌরব হারানোয় আফসোস করেন তিনি। এটির যন্ত্রপাতি পেতেও বেগ পেতে হয় এবং উচ্চ মূল্যে কিনে আনতে হয়।’
জনতা পেপার হাউজের মালিক আ. সালাম খান দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘৯০ দশকে মুদ্রাক্ষরের ব্যাপক চাহিদা ছিল। খাদ্য গুদামের সামনে হক সাহেবের দোকানে ৫টি মেশিন ছিল। ওখানে সবসময় ভিড় লেগেই থাকতো। কম্পিউটার প্রচলনের পর এসব গোপালপুর থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
উপজেলা সমাজসেবা অফিসার এখলাস মিয়া বলেন, তাদের সহযোগিতার জন্য এখন এরকম কোনো কিছু নেই তবে ভবিষ্যতে এরকম কিছু এলে তাকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সহযোগিতা করা হবে।
বিভিন্ন আবেদন, সরকারি অফিসের নথিপত্র, স্কুলকলেজের প্রশ্নপত্র, চিঠি লেখার কাজে ব্যবহৃত হতো মুদ্রাক্ষর মেশিন। কম্পিউটারের ব্যবহার বৃদ্ধি পেলে গুরুত্বহীন হয়ে যায় মুদ্রাক্ষর শিল্প।
নেত্রকোণার কলমাকান্দয় দুর্গাপূজার অঞ্জলি দিতে গিয়ে পানিতে ডুবে দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে।
কলমাকান্দার সদর ইউনিয়নের হরিণধরা গ্রামে আজ শুক্রবার এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে।
মৃতরা হলেন, ঋতু তালুকদার (১৮) ও অমিত তালুকদার (৮)। ঋতু কলমাকান্দা সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী ও অমিত হরিনধরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী। তারা সম্পর্কে ফুফু-ভাতিজা।
কলমাকান্দার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফিরোজ হোসেন জানান, মৃত্যুর খবর পেয়ে হাসপাতালে ও ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়া শেষে দুজনের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
স্থানীয় ও মৃতের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার সকালে কলমাকান্দা সদর ইউনিয়নের হরিণধরা গ্রামে একই পরিবারের ছজন মিলে পশ্চিমপাড়ায় দুর্গাপূজার অঞ্জলি দেওয়ার জন্য ছোট একটি নৌকায় করে বের হন। পথে কালীবাড়ি খাল পার হওয়ার সময় নৌকাটি ডুবে যায়। এ সময় চারজন সাঁতরে খালপাড়ে ওঠেন। কিন্তু ঋতু তালুকদার ও অমিত তালুকদার পাড়ে উঠতে পারেননি। পরে তাদের উদ্ধার করে কলমাকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক শামীম আরা নিপা মৃত ঘোষণা করেন।
মৃতের স্বজন স্বপন তালুকদার জানান, ঋতু তালুকদার সাঁতার জানত কিন্তু তার ভাইপো অমিত তালুকদারকে বাঁচাতে গিয়ে তারা দুজনেই পানিতে তলিয়ে যায়। স্থানীয় লোকজন তাদের উদ্ধার করে কলমাকান্দা সরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাদের মৃত ঘোষণা করা হয়।
বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরা বাংলাদেশি ট্রলার ওপর গুলি চালিয়েছে মিয়ানমারের নৌবাহিনীর সদস্যরা। এতে একজন জেলে নিহত ও তিনজন আহত হয়েছেন।
সেন্টমার্টিন দ্বীপের দক্ষিণ পশ্চিমের মৌলভীর শিল নামক বঙ্গোপসাগরের মোহনায় গতকাল বুধবার এ ঘটনা ঘটে।
এ সময় মিয়ানমারের নৌবাহিনী ৬০ জন মাঝি-মাল্লাসহ ৬টি মাছ ধরার ট্রলার অপহরণ করে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন।
জানা গেছে, নিহত হওয়া জেলের নাম মো. ওসমান। শাহপরীরদ্বীপের কোনারপাড়া এলাকার বাচু মিয়ার ছেলে তিনি।
টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের ইউপি সদস্য আবদুস সালাম বৃহস্পতিবার দুপুরে বলেন, ৬টি ট্রলার সেন্টমার্টিনের অদূরে বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকারে যায়, এ সময় মিয়ানমারের নৌবাহিনীর গুলি চালায়। এতে একজন মারা যায়। এ ছাড়া আরও দুজন গুলিবিদ্ধ হয়।
গুলির মুখে পড়া ট্রলার মালিক সাইফুল জানিয়েছেন, সাগরে মাছ ধরার সময় হঠাৎ করে মিয়ানমারের নৌবাহিনীর সদস্যরা ধাওয়া করে গুলি বর্ষণ করে। এরপর ৬টি ট্রলারসহ মাঝি-মাল্লাদের ধরে নিয়ে মিয়ানমারে নিয়ে যায়। যেখানে তার মালিকাধিন ট্রলারে গুলিবিদ্ধ ৪ জনের মধ্যে একজন মারা যায়। বৃহস্পতিবার ওই ট্রলারটি ছেড়ে দিয়েছে। নিহত এবং আহত জেলেদের নিয়ে ট্রলারটি শাহপরীরদ্বীপের উদ্দেশ্যে যাত্রা দিয়েছে। তবে এখনও ঘাটে এসে পৌঁছেনি।
আহত জেলে মোহাম্মদ রফিক বলেন, অলি আহমেদ ট্রলার নিয়ে গত চার দিন আগে ১০ জন মাঝিমাল্লা নিয়ে সাগরে মাছ ধরতে যাই। আজ (বৃহস্পতিবার) ফেরার পথে সাগরে মিয়ানমারের অংশ অবস্থান নেওয়া মিয়ানমারের নৌবাহিনীর একটি জাহাজ সংকেত দিয়ে তাদের দিকে যেতে বলে। ওটা মিয়ানমারের জলসীমা হওয়ায় তারা সেন্টমার্টিন দ্বীপের দিকে চলে আসতে থাকে। এ সময় পরপর গুলিবর্ষণ করে। এ ঘটনায় দুজন গুলিবিদ্ধ হন। আরেকজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন অন্যরা অক্ষত আছে।
এ ব্যাপারে বিজিবির টেকনাফস্থ ২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদ জানান, সেন্টমার্টিনের অদূরে বঙ্গোপসাগরের মিয়ানমারের সীমান্তে নৌবাহিনীর গুলিতে একজন নিহত এবং আরও তিনজন আহত হওয়ার খবর পেয়েছি। এ ঘটনায় বিস্তারিত খেঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে।
পিরোজপুর সদরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি প্রাইভেট কার খালে পড়ে আটজন নিহত হয়েছেন।
পিরোজপুর-নাজিরপুর মহাসড়কে উপজেলার কদমতলার নূরানী গেট এলাকায় বুধবার দিবাগত রাত ২টা ১৫ মিনিটের দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
খবর পেয়ে পিরোজপুর ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা গাড়িটির ভেতর থেকে আটজনকে উদ্ধার করে জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক এ কে এম আসিফ আহমেদ তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
পিরোজপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মামুনুর রশীদ জানান, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ও পিরোজপুর সদর থানায় ফোন করেন তিনি। তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে দ্রুত উদ্ধারের জন্য সব ধরনের চেষ্টা চালান।
নিহত আটজনের মধ্যে দুই পুরুষ, দুই নারী ও চার শিশু রয়েছে, যাদের বিস্তারিত পরিচয় জানা যায়নি।
পিরোজপুর ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক সেলিম হোসেন মিয়া বলেন, ‘রাত দুইটা ১৭ মিনিটে আমরা সংবাদ পাই কদমতলা এলাকায় নূরানী গেটে একটি প্রাইভেট কার খালে পড়ে গেছে। সাথে সাথে আমি ফায়ার সার্ভিসের দুইটি ইউনিট সেখানে পাঠাই এবং আমি নিজেই সেখানে উপস্থিত হয়ে দ্রুত লাশ উদ্ধার করে পিরোজপুর সদর হাসপাতালে প্রেরণ করি।’
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুস সোবহান বলেন, ‘গ্রাম পুলিশের মাধ্যমে সংবাদটি প্রাপ্ত হয়ে দ্রুত থানা পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসকে নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় গাড়ির ভেতরে থাকা আটটি মরদেহ উদ্ধার করি, যার মধ্যে দুইজন পুরুষ, দুইজন মহিলা এবং চারজন শিশু রয়েছে।
‘পুলিশ মরদেহগুলো সদর হাসপাতালে প্রেরণ করে ও লাশের সুরতহাল প্রস্তুত করে। উক্ত লাশগুলোর মধ্যে একই পরিবারের চারজনের পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে মৃত মোতালেব হোসেন সেনাবাহিনীর সিভিল বিভাগে কর্মরত ছিলেন। এ বিষয়ে সদর থানায় যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গৃহীত হচ্ছে।’
অপহরণ করার পর পাঁচ বাংলাদেশি জেলেকে ফেরত দিয়েছে মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরকান আর্মি। নাফ নদীতে আজ বুধবার টহলরত বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের (বিজিবি) সদস্যদের কাছে তাদের হস্তান্তর করা হয়। গত সোমবার নাফ নদীতে মাছ ধরতে গেলে আরাকান আর্মির সদস্যরা জেলেদের অপহরণ করে।
ফেরত পাঁচ জেলেকে নিয়ে এরপর টেকনাফ পৌরসভার চৌধুরী পাড়া সংলগ্ন বাংলাদেশ-মিয়ানমার ট্রানজিট জেটি ঘাটে পৌঁছায় বিজিবি। টেকনাফ-২ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মহিইদ্দীন আহমেদ এক সংবাদ সম্মেলনে জেলেদের ফেরত পাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ‘গত সোমবার নাফ নদীতে বাংলাদেশি পাঁচ জেলে মাছ শিকার করেতে গেলে তাদের নৌকার ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। এ সময় তাদের নৌকা ভেসে মিয়ানমার সীমান্তে ঢুকে পরে। এতে খাইংচং নামক জায়গায় থেকে মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্টি আরকান আর্মি অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে নৌকাসহ পাঁচ বাংলাদেশি জেলেকে আটক করে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে আমরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করি। এক পর্যায়ে আজকে দুপুরে আরকান আর্মি জেলেদের হস্তান্তর করলে তাদের ফেরত আনা হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ বলতে, সীমান্তে মিয়ানমারে যে সংগঠন থাকুক না কেন দেশের স্বার্থের কথা মাথায় রেখে আরকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। বাংলাদেশ সীমাসন্তে বিজিবি ও মিয়ানমার সীমান্তে যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাদের সঙ্গে আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে পাঁচ জেলেকে ফেরত আনা সম্ভব হয়েছে। পাশাপাশি সীমান্তে যেন কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয় সে ব্যাপারে তাদের (আরকান আর্মির) সঙ্গেও কথা হয়েছে। যার কারণে সম্প্রতি বাংলাদেশে কোনো ট্রলারের ওপর গুলি বর্ষণের ঘটনা ঘটেনি। এ ছাড়া আমরা প্রতিনিয়ত সীমান্তে অনুপ্রবেশকারীদের প্রতিহত করছি।’
জানা গেছে, ফেরত আসা জেলেরা হলেন- রাশেদ হোসেন, মো. বোরহান, সাইফুল ইসলাম, মোহাম্মদ রাশেল ও মোহাম্মদ আলম। তাদের মধ্যে নৌকার মাঝি মো. আলম বলেন, ‘আমরা নাফ নদীতে মাছ শিকার করতে গিয়েছিলাম, সেখানে স্পিড বোট নিয়ে এসে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে আমাদেরকে ধরে নিয়ে গিয়ে মংডুতে তাদের (আরকান আর্মি) একটি ক্যাম্পে রাখা হয়। এ সময় আমাদের মারধর করা হয়। পরে রাত ৩টায় জঙ্গল থেকে পায়ে হেঁটে আরেকটি ক্যাম্পে নিয়ে যায়। প্রথমবার মেরেছিলো আর মারেনি। দুই বেলায় খাবার দিয়েছিল। যেসব এলাকায় কোনো মানুষজন নেই। এলাকাগুলো নির্জন, চারদিকে খালি দেখা গেছে। অবশেষে এখন দেশে আসতে পেরে খুশি লাগছে।’
প্রায় ৪ বছর আগে মোজাম্মেলের পরিবার ছিল মধ্যবিত্ত পরিবার। কোনোমতে চলত তাদের সংসার, অল্প দিনেই হয়েছেন কোটি কোটি টাকার সম্পদের মালিক, গ্রামে গড়ে তুলেছেন বহুতল ভবন। মোজাম্মেল দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার বেলাইচন্ডী ইউনিয়নের সোনাপুকুর এলাকায় ওসমান গণীর সন্তান।
মোজ্জামেল হকের গ্রামের কয়েক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মোজ্জামেল হক মালয়েশিয়া গিয়ে নাম পরিবর্তন করে, জেমসবন নামে ক্যাসিনোসহ বিভিন্ন অনলাইন জুয়ার স্বর্গরাজ্য গড়েছেন। দেশের ক্রান্তিকালে, অন্যদিকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে অনলাইন ক্যাসিনো গেমের মাধ্যমে হাতিয়ে নিচ্ছে বাংলাদেশের কোটি কোটি টাকা। এতে সর্বস্বান্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। প্রায় ৪ বছর আগে মোজাম্মেল হকের পরিবার ছিল মধ্যবিত্ত। কোনোমতেই চলত তাদের সংসার। অল্প দিনেই হয়েছেন কোটি কোটি টাকা ও সম্পদের মালিক।
এ বিষয়ে মোজাম্মেলের বাবা ওসমান গণীর সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে ঢাকায় থাকাকালে এগুলোর বিষয়ে ডিবি থেকে নোটিশ এসেছিল। কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, অবৈধ গেম খেলার কারণে। পরে প্রশাসনের মাধ্যমে মীমাংসা করা হয়। তারপর সে মালেশিয়ায় নেটওয়ার্ক কোম্পানির চাকরির সুবাদে ৩ বছর আগে দেশ ত্যাগ করে।
পড়াশোনার ব্যাপারে মোজাম্মেলের বাবা জানান, ‘সে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার পাস করেছে।’ তবে মাধ্যমিক সার্টিফিকেট ছাড়া আর কোনো শিক্ষাগত যোগ্যতা দেখাতে পারেনি তার বাবা।
সূত্র আরও জানায়, মোজাম্মেল অনলাইন ক্যাসিনো গেম পরিচালনার জন্য ইতোমধ্যে দিনাজপুরসহ বাংলাদেশ থেকে শতাধিক কর্মী বিদেশে নিয়ে গিয়েছেন।
তাদের মাধ্যমে ক্যাসিনো গেম পরিচালনা করে হাতিয়ে নিচ্ছে বাংলাদেশের কোটি কোটি টাকা। ঢাকা, সৈয়দপুর ও গ্রামে বিভিন্ন জায়গায় নামে-বেনামে সম্পত্তিসহ রয়েছে তার অনেক সম্পদ।
এই অল্প সময়ে কিভাবে এত টাকা ও জীবন ব্যবস্থার উন্নতি করেছে- এই নিয়ে পুরো এলাকাবাসীর মধ্যে কৌতূহলের জন্ম দিয়েছে। সেই সঙ্গে ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে মোজাম্মেল ও তার পরিবার।
বিভিন্ন সূত্রে আরও জানা যায়, মোজাম্মেল নাম থেকে হয়ে যান জেমসবন। প্রশাসনের ভয়ে দেশ থেকে প্রবাসে গিয়ে গড়ে তুলেছেন বিভিন্ন অনলাইন গেমের বিশাল সিন্ডিকেট, চাকরি দেওয়ার নামে বিভিন্ন এলাকা থেকে নিয়ে গেছেন শতাধিক তরুণ যুবক। তার অধীনে কর্মরত আছে ইলিয়াস রানা মানিক, ফিরোজ মাহমুদ, রহমান, শরিফ হোসেন, রাকিব ইসলাম, মাসুদ রানা- এ রকম আরও অনেকে। তাদের সবার বাড়ি দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার বেলাইচন্ডী ইউনিয়নে, পাশাপাশি উত্তরবঙ্গের তরুণ সমাজকে অনলাইন গেমে আসক্ত করার মূল কারিগর মোজাম্মেল। এই গেমের প্রভাবে অনেক ব্যক্তি ইতোমধ্যে নিঃস্ব হয়েছে।
ওসমান গণীর ফোনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মোজাম্মেল বলেন, এলাকায় ভালো চলাফেরা, ভালো খাওয়াদাওয়া দেখতে না পারা ব্যক্তিরাই এমন অভিযোগ করছে। আমি ১৮ সাল থেকে প্রবাসে কোম্পানিতে চাকরি করি এবং বিভিন্ন দেশে আমার ব্যবসা রয়েছে। এগুলো পরিচালনার জন্য কর্মী নিয়ে এসেছি।
সংবাদকর্মীরা তথ্য নেওয়ার জন্য হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর দিলেও আর তথ্য দেননি মোজ্জামেল।
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যাত্রীবাহী বাস খাদে পড়ে নারী ও শিশুসহ অর্ধ শতাধিক যাত্রী আহত হয়েছেন।
পিরোজপুর ইউনিয়নের আগমন সিএনজি স্টেশনের পাশে গতকাল সোমবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায়।
স্থানীয়দের সহযোগিতা নিয়ে ফায়ার সার্ভিসের একটি দল আহতদের উদ্ধার করে সোনারগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ স্থানীয় ক্লিনিকসহ ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।
প্রত্যক্ষদর্শী ও যাত্রীরা জানান, সোমবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে ৬০ জন যাত্রী নিয়ে তিশা এন্টারপ্রাইজের বাসটি কুমিল্লা থেকে ঢাকায় যাচ্ছিল। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বাসটি সোনারগাঁওয়ের পিরোজপুর এলাকায় আসলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায়।
তারা আরও জানান, এ ঘটনায় কমপক্ষে অর্ধ শতাধিক যাত্রী আহত হয়েছেন। আহতদের বাসের জানালে ভেঙে উদ্ধার করা হয়। আহতদের মধ্যে মুমূর্ষু যাত্রীদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
বাসযাত্রী ফজলুল হক মোল্লা জানান, তিনি গৌরিপুর বাজারের কাপড় ব্যবসায়ী। জরুরি কাজে ঢাকা যাচ্ছিলেন। সন্ধ্যার দিকে বাসটি হঠাৎ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায়। বাসের সব যাত্রী কম-বেশি আহত হয়েছেন। তাদের অনেকেরই অবস্থা আশঙ্কাজনক।
সোনারগাঁও ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের অফিসার সুজন কুমার হালদার জানান, বাসটি খাদে পড়ে যাওয়ার পর স্থানীয়দের সহযোগিতায় যাত্রীদের উদ্ধার করা হয়। শিশুসহ বাসে থাকা যাত্রীরা মারাত্মকভাবে আহত হয়েছেন।
বর্ষার শেষে দেশে আবারও বন্যা দেখা দিয়েছে। আশ্বিন মাসের শুরু থেকেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাত লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ মাসে থেমে থেমেই ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বিশেষ করে গত কয়েক দিন ধরেই সারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভারী বর্ষণ হচ্ছে। চলতি মৌসুমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বন্যার পর এবার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে।
অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া ও ফুলপুরসহ কয়েকটি উপজেলায় গত কয়েকদিন ধরেই বন্যার দেখা দিয়েছে। আজ পর্যন্ত সেসব এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে বলে জানা যায়। নতুন করে প্লাবিত হয়েছে সেখানকার আরও অন্তত ৫০টি গ্রাম। এতে তিন উপজেলার ২৩ ইউনিয়নের দেড় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
সোমবার দুপুরে এসব তথ্য জানিয়ে জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. সানোয়ার হোসেন জানান, তিন উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে এখন নারী শিশুসহ দুই হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘এসব উপজেলায় ৬৩ মেট্রিক টন চাল ও নগদ সাত লাখ টাকা সহায়তা দেওয়া হয়েছে। দুর্গতদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম চলছে। এ ছাড়া রান্না করা খাবারও দেওয়া হচ্ছে বন্যা দুর্গতদের।’ ধোবাউড়া উপজেলা প্রকৌশলী আবু বকর ছিদ্দিক বলেন, ‘টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ১২৭ কিলোমিটার রাস্তা পানির নিচে নিমজ্জিত হয়েছে। এর মধ্যে ৫০ কিলোমিটার রাস্তা চলাচলের একেবারে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। পানি কমলে পুরো ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা নির্ণয় করে মেরামতে উদ্যোগ নেওয়া হবে।’
ধোবাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইইএনও) নিশাত শারমিন বলেন, সোমবার নতুন করে উপজেলার দুটি ইউনিয়নের ২৬টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। তবে উজানের পানি কিছুটা কমছে। আশা করা যাচ্ছে, দুই-একদিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। এদিকে বন্যায় শেরপুরে গত চারদিনে বন্যার পানিতে নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও নকলা উপজেলায় মোট ৯ জন মারা গেছেন বলে জানা গেছে।
অন্যদিকে ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার ছনধরা, রামভদ্রপুর, সিংহেশ্বরও, ফুলপুর ইউনিয়নের অধিকাংশ ও অন্যান্য ইউনিয়নের ২৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এ সব এলাকার আমন ফসল ও সবজি ক্ষেত তলিয়ে গেছে; ভেসে গেছে মাছের খামার।
খবর নিয়ে জানা গেছে, হালুয়াঘাটের প্রায় ১২টি ইউনিয়ন শুক্রবার থেকে প্লাবিত হয়েছিল। ওইসব এলাকা থেকে পানি নামতে শুরু করেছে। তবে নতুন করে আরও ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে কয়েক হাজার হেক্টর জমির ধান, সবজি ক্ষেত। সঙ্গে পুকুরের মাছও। পানিবন্দি হয়ে আছে হাজার হাজার মানুষ। ঘরের মধ্যে পানি ঢোকার কারণে রান্নার কাজও ব্যাহত হচ্ছে। অনাহারে-অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছে মানুষ।
হালুয়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এরশাদুল আহমেদ বলেন, উজানে প্লাবিত হওয়া গ্রামের পানি নামতে শুরু করেছে। উপজেলার নড়াইল, কৈচাপুর, ধুরাইল এবং আমতৈল ইউনিয়ন দিয়ে পানি ফুলপুর হয়ে ব্রহ্মপুত্র নদে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে নতুন কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হলেও সার্বিক পরিস্থিতি ভালো।
শেরপুরে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি
দৈনিক বাংলার শেরপুর প্রতিনিধির পাঠানো খবর থেকে জানা যায়, টানা ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে শেরপুরে সৃষ্ট বন্যার সার্বিক পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। সোমবার দুপুরের পর থেকে বৃষ্টি না হওয়ায় এ উন্নতি হয়েছে। জেলার চারটি পাহাড়ি নদীর পানি আরও কমেছে। এসব নদীর পানি এখন বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে ব্রহ্মপুত্র, দশানী ও মৃগী নদীতে। পানি বৃদ্ধি পেলেও এসব নদীর পানি বিপৎসীমার অনেক নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। বন্যায় গত চারদিনে বন্যার পানিতে নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও নকলা উপজেলায় মোট ৯ জন মারা গেছেন।
সোমবার সকাল ৯টায় শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, জেলার ভোগাই নদীর পানি ১৩৮ সেন্টিমিটার, চেল্লাখালী নদীর পানি ৭৭ সেন্টিমিটার ও ব্রহ্মপুত্র নদীর পানি বিপৎসীমার ৫৪০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়াও অপর দুটি পাহাড়ি নদী মহারশি ও সোমেশ্বরীর পানি বিপৎসীমার নিচে রয়েছে।
তবে জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও কমেনি দুর্ভোগ। এখনও প্রতিটি এলাকায় খাদ্য সংকট রয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। বিএনপি, জামায়াতসহ রাজনৈতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে ত্রাণ বিতরণ করলেও প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। অনেক দুর্গম এলাকায় এখন পর্যন্ত ত্রাণ পৌঁছেনি। আর বিশুদ্ধ পানির সংকট, শৌচাগারের সমস্যায় ভোগছেন।
কৃষি বিভাগ ও মৎস্য বিভাগের তথ্যমতে, জেলায় ৪৭ হাজার হেক্টর আবাদি জমির আমন ধান ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে। এ ছাড়া ১ হাজার হেক্টর জমির সবজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর মাছের ঘের তলিয়ে গেছে ৬ হাজারেরও বেশি। এতে মাথায় হাত পড়েছে আমন ও মৎস্যচাষীদের। সব হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন জেলার কৃষক ও মৎস্যচাষিরা। এ বন্যায় অনেক প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক, মাদরাসা, কারিগরি, কলেজ বন্ধ রয়েছে।
জেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৭৪১টি। এর মধ্যে বন্যাকবলিত হয়েছে ৩০১টি বিদ্যালয়। এর মধ্যে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে ২৪২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়। আর আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে ৫৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘আমরা সব জায়গায় ত্রাণ কার্যক্রম চালানোর চেষ্টা করছি। আমাদের এ কাজে সেনাবাহিনী সার্বিক সহযোগিতা করছে। পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, ব্যবসায়ীসহ সবাই এগিয়ে এসেছেন। সবাই মিলে আমরা এ দুর্ভোগ মোকাবিলা করতে সক্ষম হব।’ শেরপুর জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান জানান, ইতোমধ্যে ১০ হাজারের মতো ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে বন্যা দুর্গত এলাকায়। আরও ২৫ হাজারের চাহিদা পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে ৫ হাজার পাওয়া গেছে তা বিতরণ করা হবে।
এদিকে শেরপুরে বন্যাকবলিত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে সেনবাহিনী। জেলার পাঁচটি উপজেলাতেই সেনাপ্রধানের নির্দেশে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে উদ্ধার অভিযান এবং খাদ্যসামগ্রী বিতরণ কার্যক্রম চলছে। বন্যাকবলিতদের উদ্ধার করে আশ্রয়কেন্দ্রে রাখা হচ্ছে। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে শেরপুরে এখন পর্যন্ত চার হাজার পরিবারের কাছে ত্রাণসামগ্রী পোঁছে দেওয়া হয়েছে। যাদের বাসায় রান্না করার ব্যবস্থা নেই, তাদেরকে রান্না করা খাবার দেওয়া হচ্ছে।
সোমবার ঝিনাইগাতী উপজেলার সদর ইউনিয়নে ও নকলা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে রান্না করা খাবার এবং ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেন সেনাসদস্যরা। ঝিনাইগাতী উপজেলার সদর ইউনিয়নের সারিকালিনগর, দড়িকালিনগর ও হাতিবান্ধা ইউনিয়নের মিরপাড়া এলাকায় ২ শতাধিক দুর্গতের মধ্যে ময়মনসিংহ সেনানিবাসের ১৩ বাংলাদেশ ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্টের লেফটেন্যান্ট জোহায়ের খাবার বিতরণ কার্যক্রমের তত্ত্বাবধান করেন।
নেত্রকোনার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি, দেখা দিয়েছে বিভিন্ন দুর্ভোগ
দৈনিক বাংলার নেত্রকোনা প্রতিনিধি জানায়, জেলায় কমতে শুরু করেছে বন্যার পানি। এতে স্বস্তি ফিরছে বানভাসিদের। তবে সংকট দেখা দিয়ে সুপেয় পানির। ভেসে উঠছে ভেঙে যাওয়া রাস্তার খানাখন্দ। এতে দুর্ভোগ বেড়েছে কয়েক হাজার পরিবারের। এর আগে গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি ও ঢলের পানিতে জেলার দুর্গাপুর, কলমাকান্দা ও পূর্বধলা উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছিল। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়ে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ। শতাধিক বিদ্যালয়ে পাঠদান সমায়িক বন্ধ রাখা হয়। ১৭ হাজার ৫৩৫ হেক্টর জমির রোপা আমন ধান তলিয়ে যায়। তবে গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় বৃষ্টিপাত না হওয়ায় পরিস্থিতি উন্নতি হয়েছে। কমতে শুরু করেছে পানি।
এদিকে পূর্বধলার নাটেরকোনা এলাকায় একটি ফসলরক্ষা বাঁধ রোববার (৬ অক্টোবর) বিকেলে ভেঙে গিয়ে ৭-৮টি গ্রামের নিম্নাঞ্চল নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। তবে গতকাল সোমবার সেসব স্থান থেকেও পানি নামতে শুরু করেছে।
সোমবার পানিবন্দী এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, জেলার সবগুলো নদ-নদীতে পানি কমতে শুরু করেছে। ডুবন্ত রাস্তাগুলো ভেসে উঠছে। দৃশ্যমান হচ্ছে রাস্তার ভাঙা অংশ ও বড় বড় গর্ত। বন্যার্তদের জেলা প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো ত্রাণ সহায়তা করছে।
জেলার শিক্ষা ও কৃষি দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ১৭ হাজার ৫৩৫ হেক্টর জমির রোপা আমন ধান বন্যায় তলিয়ে গেছে। ২-৩ দিনের মধ্যে পানি কমে গেলে ধানের ক্ষতি অনেকটা কমে যাবে। এ ছাড়া পানি ওঠায় জেলায় ১৮৬টি বিদ্যালয়ে পাঠদান সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছে।
সপ্তাহজুড়ে থাকবে বৃষ্টি
রাজশাহী ছাড়া দেশের সব বিভাগেই সপ্তাহজুড়ে কম-বেশি বৃষ্টির আভাস দিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, এরপর গরম কিছুটা বাড়বে। আর বৃষ্টি-গরমের এই পর্ব শেষে নভেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে শীতের দেখা মিলতে পারে দেশে।
আজ সোমবার আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘রাজশাহীতে একটু কম বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া সব বিভাগেই আগামী ১১ অক্টোবর পর্যন্ত প্রতিদিনই এক পশলা-দুই পশলা করে বৃষ্টিপাত হবে। এরপর কিছুটা গরম পড়বে। তবে, বৃষ্টির পরপরই শীত পড়ার আভাস নেই। নভেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে দেশে শীত নামতে শুরু করবে।’
সোমবার আবহাওয়ার নিয়মিত বুলেটিনে বলা হয়, মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর মোটামুটি সক্রিয়। এর অক্ষের বর্ধিতাংশ ভারতের বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। বঙ্গোপসাগরে এটি মাঝারি অবস্থায় আছে। এর প্রভাবে ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
কক্সবাজারে সাগরে গোসলে নেমে মোহাম্মদ আসমাইন (১৩) নামে এক শিক্ষার্থী নিখোঁজ হওয়ার সাড়ে চার ঘণ্টা পর তার মরদেহ খুঁজে পাওয়া গেছে।
সৈকতের শৈবাল পয়েন্টে আজ সোমবার সকাল ৯টার দিকে গোসলে নেমে নিখোঁজ হন তিনি। এরপর আজ বেলা দেড়টার দিকে তার মরদেহ কক্সবাজারের সমিতিপাড়া সৈকত পয়েন্ট থেকে উদ্ধার করা হয়।
কক্সবাজারের দক্ষিণ রুমালিয়ারছড়ার করিমুল হকের ছেলে আসমাইন কক্সবাজার ভোকেশনাল ইন্সটিটিউটের ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার অঞ্চলের পুলিশ সুপার মো. মাসুদুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘সোমবার সকালে কক্সবাজার সৈকতের শৈবাল পয়েন্টে মোহাম্মদ আসমাইনসহ ছয় বন্ধু মিলে সাগরে গোসলে নামে। এক পর্যায়ে স্রোতের টানে তিনজন ভেসে যায়। এসময় সেখানে উপস্থিত অন্য বন্ধুদের চিৎকারে স্থানীয় লাইফগার্ড কর্মীরা তাদের উদ্ধারে নামেন।
‘এতে দুইজনকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করতে সক্ষম হলেও অপর একজন ভেসে যায়। পরে সাগরের বিভিন্ন পয়েন্টে খোঁজ নিয়েও তার সন্ধান পাওয়া যায়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘নিখোঁজ স্কুলছাত্রের সন্ধানে সাগরের বিভিন্ন পয়েন্টে বিচ কর্মী ও লাইফগার্ড কর্মীদের পাশাপাশি ট্যুরিস্ট পুলিশ সদস্যরাও উদ্ধার তৎপরতা চালায়।’ স্কুলছাত্রের মৃতদেহটি নিজের বাড়িতে রয়েছে বলেও জানান তিনি।