উড়োজাহাজ দুটির ডানার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে
নিয়ম অনুযায়ী হ্যাঙ্গারে নেয়ার সময় উড়োজাহাজে পাইলট থাকে না
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের হ্যাঙ্গারে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ২ টি উড়োজাহাজের সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষে উড়োজাহাজ দুটির ডানার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গত রোববার রাত ৯টার দিকে এ ঘটনা হয়। এ ঘটনায় বিমানের এয়ার সেফটি বিভাগের পরিচালক এনামুল হক তালুকদারকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
বিমানের জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক তাহেরা খন্দকার জানান, বিমানের একটি বোয়িং সেভেন এইট সেভেন ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজকে হ্যাঙ্গারে প্রবেশ করানো হচ্ছিল। এ সময় বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা একটি বোয়িং সেভেন থ্রি সেভেন উড়োজাহাজের একটি পাখা ও পাখার নিচের অংশে আঘাত লাগে। এতে উড়োজাহাজটির বাম ডানা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ড্রিমলাইনারটির ডান ডানাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
বিমান সূত্র জানায়, নিয়ম অনুযায়ী হ্যাঙ্গারে নেয়ার সময় উড়োজাহাজে পাইলট থাকে না। পুশকার দিয়ে প্রকৌশল বিভাগের কর্মীরা উড়োজাহাজটিকে হ্যাঙ্গারে নিয়ে যাচ্ছিল। তাদের অসতর্কতাই এ দুর্ঘটনার কারণ বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মহাব্যবস্থাপকেআরো জানান, এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে বিমানের স্বাভাবিক ফ্লাইট চলাচল কর্যক্রমে এই দুর্ঘটনার প্রভাব পড়বে না।
বিমান কর্মকর্তারা জানান, দুর্ঘটনার ফলে আপাতত এ দুই উড়োজাহাজে যাত্রী পরিবহন করা যাবে না। উড়োজাহাজ দুটির কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তা জানতে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িংকে প্রয়োজনীয় তথ্য পাঠানো হবে। তাদের মূল্যায়নের পর জানা যাবে ক্ষতির পরিমাণ।
উল্লেখ্য, এর আগে গত ১০ এপ্রিল দুপুরে বিমানের বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজ হ্যাঙ্গারে প্রবেশ করানোর সময় সেখানে থাকা বোয়িং ৭৩৭ উড়োজাহাজের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এতে ৭৭৭ উড়োজাহাজের র্যাডোম ও সামনের বাল্কহেড এবং ৭৩৭ উড়োজাহাজের বাম দিকের আনুভূমিক স্ট্যাবিলাইজার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ঘটনার পরপরই বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয় তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে গাফিলতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় পাঁচ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বরখাস্তের আদেশ দেয়া হয়। বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তারা হলেন বিমানের মুখ্য প্রকৌশলী মোহাম্মদ বদরুল ইসলাম, প্রকৌশলী মো. মাইনুল ইসলাম, সৈয়দ বাহারুল ইসলাম ও সেলিম হোসেন খান এবং জিএসই অপারেটর মো. হাফিজুর রহমান।
বাংলাদেশ রেলওয়ের অনলাইন টিকিট বিক্রির অংশীদার প্রতিষ্ঠান ‘সহজ’-এর বিরুদ্ধে গ্রাহক অবহেলার প্রমাণ পাওয়ায় প্রতিষ্ঠানটিকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করেছে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
রেলের অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদে ছয় দফা দাবিতে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে টানা ১২ দিন ধরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রনি ভোক্তা-অধিকার অধিদপ্তরে প্রতিকার চেয়ে সহজ ডটকম-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন।
তার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অধিদপ্তরের কার্যালয়ে শুনানি শেষে সহজকে জরিমানা করা হয়।
পরে এক ব্রিফিংয়ে সংস্থাটির মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান এই তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘ভোক্তা অধিকার আইন অনুযায়ী ভোক্তার প্রতি সহজ-এর অবহেলা পাওয়া গেছে। সহজের এই অবহেলা প্রমাণ হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটিকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।’
আইন অনুযায়ী জরিমানার ২৫ শতাংশ অর্থ দেয়া হবে অভিযোগকারী রনিকে। অর্থাৎ তিনি পাবেন ৫০ হাজার টাকা।
সফিকুজ্জামান বলেন, ‘সহজ যে সিস্টেমে অপারেট করে সেটা কতটা ভোক্তাবান্ধব, এক্সপার্টদের দিয়ে তা মূল্যায়ন করা হবে।
‘যে ৫০ শতাংশ টিকিট অনলাইনে বিক্রি করার কথা তা পুরোপুরি অনলাইনে বিক্রি হয় কি না সেটিও খতিয়ে দেখা হবে।
গত জুনে রেলের টিকিট কিনতে গিয়ে হয়রানির শিকার হওয়ার পর ৭ জুলাই থেকে তিনি ছয়টি দাবিতে কমলাপুর রেলস্টেশনের টিকিট কাউন্টারের সামনে অবস্থান শুরু করেন।
ঢাবি শিক্ষার্থীর আন্দোলনের কারণ এবং এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করণীয় কী তা জানতে চেয়েছে হাইকোর্ট।
বুধবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই কারণ জানতে চেয়েছে।
সকালে আদালতের কাজ শুরু হলে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খানকে উদ্দেশ করে বিচারক বলেন, ‘আপনি কি ডেইলি স্টার পত্রিকা পড়েছেন? তখন খুরশীদ আলম খান বলেন, পড়েছি।
তখন আদালত বলে, ‘তিন নম্বর পেজ দেখেছেন?’
আইনজীবী বলেন, ‘দেখেছি।’
তখন আদালত বলে, ‘তিনি (রনি) হাতকড়া অবস্থায় দুর্নীতি সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে, এটা দুদক জানে কি না? জানলে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কি না- এটা জানান।’
আদালত বলে, ‘তার হাতকড়া অবস্থায় ওখানে আন্দোলন করার দরকার কী, তিনি যদি সংক্ষুব্ধ হন, প্রয়োজনে তিনি হাইকোর্টে আসুক। হাইকোর্ট অবশ্যই বিষয়টি দেখবে।’
কী ছিল রনির অভিযোগ
মহিউদ্দিন রনি বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। গত এপ্রিলে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসাকেন্দ্রের আধুনিকায়নের দাবিতে অনশন করেন।
রনি নিউজবাংলাকে জানান, গত ১৩ জুন রেলের ওয়েবসাইট থেকে ঢাকা-রাজশাহী রুটের ট্রেনের আসন বুক করার চেষ্টা করেন। মোবাইল আর্থিক সেবাদাতা সংস্থা বিকাশ থেকে ভেরিফিকেশন কোড দিয়ে আমার পিন কোড ছাড়াই অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা কেটে নেয়া হয়।
টাকা কেটে নিলেও তিনি কোনো আসন পাননি। এমনকি টাকা নেয়ার বিষয়ে কোনো ডকুমেন্টও তারা দেয়নি।
সেদিন তিনি কমলাপুর রেলস্টেশনের সার্ভার কক্ষে অভিযোগ জানালে সেখান থেকে তাকে ‘সিস্টেম ফেইল’ করার কথা বলা হয় এবং ১৫ দিনের মধ্যে টাকা না পেলে আবার যেতে বলা হয়।
রনির অভিযোগ, ওই মুহূর্তে ওই কক্ষে থাকা কম্পিউটার অপারেটর ৬৮০ টাকার আসন ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি করেন।
রনির কী কী দাবি
রনির দাবিগুলো হলো- অনলাইনে টিকিট কেনায় সহজ ডটকমের যাত্রী হয়রানি বন্ধ করে তদন্ত করে এ হয়রানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ নিতে হবে; টিকিট কালোবাজারি বন্ধ করতে হবে; অনলাইন-অফলাইনে টিকিট কেনার ক্ষেত্রে সবার সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে; ট্রেনের সংখ্যা বাড়িয়ে রেলের অবকাঠামো উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে; ট্রেনের টিকিট পরীক্ষক ও তত্ত্বাবধায়কসহ অন্য দায়িত্বশীলদের কর্মকাণ্ড সার্বক্ষণিক মনিটর করতে হবে; শক্তিশালী তথ্য সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে রেল সেবার মান বৃদ্ধি করতে হবে এবং ট্রেনে ন্যায্য দামে খাবার, বিনা মূল্যে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ও স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
রেলের টিকিটকে কঠিন করেছে সহজ
প্রায় দুই বছর আগে রেলের আহ্বান করা দরপত্রে সিএনএসের পরিবর্তে টিকিট ব্যবস্থাপনার জন্য যোগ্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচিত হয় সহজ লিমিটেড। এরপর গত ১৫ ফেব্রুয়ারি রেলভবনে আনুষ্ঠানিক সহজ ও রেলের চুক্তি হয়। আগামী পাঁচ বছরের জন্য ট্রেনের টিকিট বিক্রি করবে সহজ।
সিএনএস বিডির বিরুদ্ধে রেলের টিকিটি বিক্রি নিয়ে নানা অনিয়ম ছিল। তবে সহজের রেলে যুক্ত হওয়া নিয়েই উঠে অনিয়মের অভিযোগ। আর শুরুতেই গোলপাল পাকিয়ে ফেলা সহজ কর্মীদের বিরুদ্ধেই কালোবাজারে টিকিট বিক্রির অভিযোগ পাওয়া যায়। এই ঘটনায় নিজেদের এক কর্মীকেই চাকরিচ্যুত করেছে সংস্থাটি।
শুরু থেকেই অনলাইনে মানুষ ট্রেনের টিকিট কাটার জন্য সার্ভারে ঢুকতে পারছিল না। পরে অবশ্য এই সমস্যার সমাধান হয়েছে। তবে নানা ভোগান্তি রয়েই গেছে, যার একটির শিকার হন রনি।
মানুষের আবেগকে কাজে লাগিয়ে নড়াইলে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা হয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
রাজধানীর হোটেল রেডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেনে বুধবার দুপুরে এক সেমিনার শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
মন্ত্রী বলেন, ‘একটি ছেলের ফেসবুকের পোস্ট দেখে ইমোশনাল হয়ে নড়াইলে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়েছে। বাংলাদেশে সব ধর্মের প্রাধান্য রয়েছে। হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান সবাইকে নিয়ে আমাদের দেশ। আমরা জাতি হিসেবে অত্যন্ত ইমোশনাল। মাঝে মাঝে যেকোনোভাবেই দুই-একটি উক্তি চলে আসে এবং এগুলো পুঁজি করে ইমোশনালভাবে কিছু ঘটনা ঘটে যায়। আর ইমোশন কাজে লাগিয়ে একটি গোষ্ঠী অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়।
‘নড়াইলসহ এর আগেও এমন কিছু ঘটনা ঘটেছে। সবগুলো ঘটনাতেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎক্ষণাৎ অ্যাপ্রোচ করেছে। নড়াইলের ঘটনা যখনই ঘটেছে, তখনই ফেসবুকে পোস্ট দেয়া ছেলেটির বাড়ি প্রটেকশনে ছিল এবং তাকে খোঁজা হচ্ছিল, কিন্তু ছেলেটির ফেসবুকের পোস্ট দেখে একটি গোষ্ঠী ইমোশনাল হয়ে নড়াইলে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি করে।’
আবেগ কাজে লাগিয়ে যারা পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়, তারা সব জায়গাতেই এই ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে বলে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘ঘটনাটি ঘটিয়েছে একটি ছেলে। এতে তার বাড়ি পুড়িয়ে দেয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাৎক্ষণিকভাবে ছেলেটির বাড়ি প্রটেকশন দেয় এবং যারা যারা ঘটনাটি ঘটিয়েছে তাদের প্রত্যেককে শনাক্ত করে। তাদের ধরা হয়েছে।
‘নড়াইলের ঘটনায় সবগুলো বিষয় সামনে রেখে ইনভেস্টিগেশন চলছে। কে কতখানি সম্পৃক্ত ছিল, তা তদন্তে বেরিয়ে আসবে। এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
প্রেক্ষাপট
মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে ফেসবুক পোস্টে এক কলেজছাত্রের আইডি থেকে বৃহস্পতিবার কটূক্তিমূলক কমেন্ট করার অভিযোগ ওঠে। এর জেরে শুক্রবার বিকেলে হামলা চালানো হয় নড়াইলের লোহাগড়ার দিঘলিয়া গ্রামের সাহাপাড়ায়।
হামলাকারীরা গোবিন্দ সাহা ও দিলীপ সাহার বাড়ি, অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর বাবার দোকানসহ ১০টির বেশি বাড়ি-দোকান ভাঙচুর করে। একটি বাড়িতে আগুনও দেয়া হয়।
বিক্ষোভকারীরা ইট-পাটকেল নিক্ষেপের পাশাপাশি সাহাপাড়া মন্দিরের প্রতিমা, চেয়ার ও সাউন্ড বক্স ভাঙচুর করে।
হামলার ঘটনায় লোহাগড়া থানার এসআই মাকরুফ রহমান রোববার রাতে মামলা করেন। তাতে ২০০ থেকে ২৫০ অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিকে আসামি করা হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মিজানুর বলেন, ‘ঘটনার দিন জনরোষ সৃষ্টি ও হামলার ঘটনায় ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রিমান্ডে তাদের কাছ থেকে আরও তথ্য পাওয়া যাবে। তখন বোঝা যাবে তাদের মূল উদ্দেশ্য কী ছিল।’
এ হামলার ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে। ১৬ জুলাই রাতে দিঘলিয়া গ্রামের সালাহউদ্দীন কচি অভিযুক্ত ছাত্রের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে মামলা করেন। এ মামলায় কলেজছাত্রকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ এর আমন্ত্রণে ভারতের সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল মনোজ পাণ্ডে গত রোববার বাংলাদেশ সফরে এসেছেন। আজ সোমবার সেনাবাহিনী সদর দপ্তরে সেনাবাহিনী প্রধানের সঙ্গে ভারতের সেনাবাহিনী প্রধান সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এসময় ভারতীয় সেনাবাহিনী প্রধানকে আমন্ত্রণের জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধানের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ অধিদপ্তরের (আইএসপিআর) সহকারী পরিচালক রাশেদুল আলম দৈনিক বাংলাকে এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
সাক্ষাতের শুরুতেই জেনারেল মনোজ পাণ্ডে জানান, তিনি ভারতীয় সেনাবাহিনী প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম বৈদেশিক সফরের গন্তব্য হিসেবে বাংলাদেশে আসার মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা এবং উভয় সেনাবাহিনীর মধ্যে বিদ্যমান ঐতিহাসিক ও পেশাদারী সম্পর্কের ভিত্তি সুপ্রকাশিত হলো। একান্ত সাক্ষাতে তাঁরা পারস্পরিক কুশলাদি বিনিময় ছাড়াও দু'দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে বিদ্যমান সুসম্পর্ক ও ভবিষ্যৎ অগ্রযাত্রায় সহযোগিতার বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন। এরপর সেনাসদরের হেলমেট কনফারেন্স রুমে প্রতিনিধি দলের জন্য বিশেষ ব্রিফিং এর আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর রণপ্রস্তুতি, উন্নত প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা, বিশ্ব শান্তিতে ভূমিকা ও সামগ্রিক প্রশাসনিক কাঠামো সম্পর্কে অবহিত হয়ে তিনি সেনাবাহিনীর বর্তমান নেতৃত্ব এবং সামগ্রিক উচ্চমান সম্পর্কে ভূয়সী প্রশংসা করেন।
সেনাসদরে আসার আগে জেনারেল মনোজ পান্ডে শিখা অনির্বাণে পুষ্পস্তবক অর্পনের মাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে সেনাকুঞ্জে সেনাবাহিনীর একটি চৌকস দল তাঁকে গার্ড অব অনার প্রদান করে এবং সেখানে তিনি একটি গাছের চারা রোপণ করেন। পরবর্তীতে জেনারেল মনোজ পান্ডে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অবঃ) তারিক আহমেদ, বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী প্রধানদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। বিকেলে প্রতিনিধি দলটি বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করেন ও জাদুঘরটি ঘুরে দেখেন।
সন্ধ্যায় আর্মি মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্সে জেনারেল মনোজ পান্ডে এর সম্মানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধানের পক্ষ থেকে নৈশভোজ (ব্যাংকোয়েট ডিনার) এবং মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। এ সময় ভারতের প্রতিনিধি দল ও বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সস্ত্রীক উপস্থিত থাকবেন।
আগামীকাল মঙ্গলবার জেনারেল মনোজ পান্ডে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। তিনি মিরপুর সেনানিবাসে ডিফেন্স সার্ভিস কমান্ড এন্ড স্টাফ কলেজে (ডিএসসিএসসি) দেশী-বিদেশী প্রশিক্ষণার্থীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখবেন। একইদিন সফরকারী দল রাজেন্দ্রপুর সেনানিবাসে অবস্থিত বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস সাপোর্ট অপারেশন ট্রেনিং (বিপসট) ও বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘর পরিদর্শন করবেন।
এ সফরের মধ্য দিয়ে ভারত ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মধ্যকার বিদ্যমান সর্ম্পক আরো গতিশীল হবে। সফর শেষে ভারতের প্রতিনিধিদল আগামী ২১ জুলাই ভারতে প্রত্যাবর্তন করবেন।
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মাধ্যমে প্রবাসী কর্মীদের বিএমইটি কার্ড দেয়া হয়
৫ থেকে ৭ লাখ টাকা করে হাতিয়ে নিয়ে ভুয়া ভিসা এবং নকল বিএমইটি কার্ড
রাজধানীর পল্টন থেকে সংঘবদ্ধ মানব পাচার চক্রের মূলহোতাকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড একশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-৩। তার নাম- আবুল কালাম (৪১) । গত রোববার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার কাছ থেকে ১৪টি পাসপোর্ট, ৬টি নকল বিএমইটি কার্ড, আর্থিক লেনদেনের বিভিন্ন লেজার, রেজিস্টার এবং ডায়েরি উদ্ধার করা হয়।
আজ সোমবার কারওয়ান বাজারের র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, গ্রেপ্তার আবুল কালাম সংঘবদ্ধ মানব পাচার চক্রের মূল হোতা। বিদেশ যেতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদেরকে প্রতারণা করে সে জাল ভিসা ও বিএমইটি কার্ড দিয়ে প্রায় ৩ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। পরে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে গোয়েন্দা তথ্যে তাকে পল্টন থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তিনি বলেন, সরকারের নিয়ম মেনে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মাধ্যমে প্রবাসী কর্মীদের বিএমইটি কার্ড দেয়া হয়। একে বিএমইটি স্মার্ট কার্ডও বলা হয়।
প্রাথমিক অনুসন্ধান ও কালামকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, কালামের জনশক্তি রপ্তানির কোনো লাইসেন্স নেই। কিন্তু দীর্ঘদিন যাবৎ সে জনশক্তি রপ্তানির নামে অবৈধভাবে ভ্রমণ ভিসার মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে লোক পাঠায়। এছাড়াও চক্রটি মধ্যপ্রাচ্য হয়ে ইউরোপে জনশক্তি পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে বিদেশ যেতে ইচ্ছুক বেকার যুবক-যুবতীদের কাছ থেকে ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা করে হাতিয়ে নিয়ে ভুয়া ভিসা এবং নকল বিএমইটি কার্ড ভুক্তভোগীদের সরবরাহ করত।
অধিনায়ক আরও বলেন, গ্রেপ্তার আবুল কালাম ২০০৪ সালে ফ্রি ভিসায় দুবাই গিয়ে দর্জি হিসেবে কাজ শুরু করে। মালিকের সাথে মনোমালিন্য হওয়ায় ২০১১ সালে সে দেশে ফিরে আসে। তারপর সে তার এলাকায় দর্জি ব্যবসা করার চেষ্টা করে সফল না হয়ে জনশক্তি বিদেশে পাঠানোর নামে প্রতারনা শুরু করে। সে প্রথমে ভুক্তভোগীদের ইউরোপে উচ্চ বেতনে চাকুরীর প্রলোভন দেখিয়ে পাসপোর্ট ও প্রাথমিক খরচ হিসেবে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা নেয়। পরে ভিসা, টিকেট, মেডিকেল, বিএমইটি ক্লিয়ারেন্সের খরচ দেখিয়ে ধাপে ধাপে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করে। এক পর্যায়ে ভিকটিমের আস্থা অর্জনের জন্য দুই একজনকে ভ্রমন ভিসায় দুবাই পাঠায়। এছাড়া, ভুক্তভোগীদের স্থায়ী ঠিকানায় সংশ্লিষ্ট জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসে ফিঙ্গার প্রিন্ট দিয়ে নিবন্ধন করতে বলে। এই নিবন্ধন বিএমইটিকার্ড পাওয়ার কোন নিশ্চয়তা বহন করে না। কিন্তু ভুক্তভোগীরা না জেনে এই নিবন্ধনকেই বিএমইটি ক্লিয়ারেন্স পাওয়ার চূড়ান্ত ধাপ মনে করে। তারপর সে ভূয়া ভিসা ও নকল বিএমইটিকার্ড ধরিয়ে দিয়ে ফ্লাইটের জন্য ভুক্তভোগীদের কাছে টাকা দাবি করে। পরে ভুক্তভোগীরা এসব ভিসা ও নকল বিএমইটিকার্ড নিয়ে বিমানবন্দরে গেলে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ তাদের ভিসা ও বিএমইটিকার্ড নকল হওয়ায় বিমানবন্দর থেকে ফিরিয়ে দেয়। এভাবে ধৃত আসামী প্রতারনার মাধ্যমে বিপুল অর্থ উপার্জন করে। এ চক্রের অন্যান্যদের গ্রেপ্তারে মাঠে কাজ করছে র্যাব।
চট্টগ্রামে রেলের টিকিট কালোবাজারির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর ২ সদস্যকে আটক করেছে র্যাপিড একশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-৭। তাদের নাম- হাবিলদার রবিউল হোসেন (৩৯) ও সিপাহী ইমরান হোসেন (২৭)। গত সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে চট্টগ্রাম জিআরপি থানার পাশ থেকে তাদের আটক করা হয়।