মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫
৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

পথ হারিয়ে ফেলা রেশম স্বপ্ন দেখাচ্ছে আবার

ছবি: সংগৃহীত
রাজশাহী ব্যুরো
প্রকাশিত
রাজশাহী ব্যুরো
প্রকাশিত : ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০৮:৩৭

এনায়েত করিম, রাজশাহী ব্যুরো

প্রাচীনকাল থেকেই রেশমের জন্য সুপরিচিত রাজশাহী। সেই সুখ্যাতি থেকেই রাজশাহীর প্রধান পরিচয় হয়ে ওঠে ‘সিল্কসিটি’। তবে মাঝে খেই হারিয়ে ফেলেছিল রেশমশিল্প। বাংলাদেশ রেশম গবেষণা ইনস্টিটিউটের হাত ধরে সেই রেশম আবার স্বপ্ন দেখাচ্ছে সুদিন ফেরানোর। রেশম নিয়ে গবেষণায় নিয়োজিত এই প্রতিষ্ঠানটি সম্প্রতি রেশমের ৩৫টি নতুন জাত উদ্ভাবন করেছে। এর মধ্যে ১৫টি মালবেরি (তুঁত) গাছ ও ২০টি রেশম কীট। নতুন এসব জাত রেশমশিল্পে সাড়া ফেলবে বলে মনে করছেন গবেষকরা। তারা বলছেন, আগের জাতের চেয়ে নতুন জাতে অন্তত ১২ থেকে ১৫ শতাংশ বেশি উৎপাদন আসবে। এতে চাষিদেরও সাশ্রয় হবে।

বাংলাদেশ রেশম গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট রাজশাহীর তথ্য অনুযায়ী, রেশমশিল্পের উন্নয়নে পাঁচ বছর আগে ‘রেশম প্রযুক্তি উন্নয়ন বিস্তার ও দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টির মাধ্যমে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিকরণ’ নামে একটি প্রকল্প হাতে নেয় রেশম বোর্ড। চলতি বছরের জুনে শেষ হয়েছে প্রকল্পটি। ৩৫ কোটি ৬৬ লাখ টাকার এই প্রকল্পের মাধ্যমে নতুন করে রেশমে যুক্ত হয়েছে ১৫টি মালবেরি (তুঁত) জাতের গাছ ও ২০টি নতুন জাতের কীট। ফলে বর্তমানে মালবেরি জাতের গাছের সংখ্যা ৩৮টি ও রেশম কীটের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১৪টিতে।

বাংলাদেশ রেশম গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের ঊর্ধ্বতন গবেষণা কর্মকর্তা ফারুক আহম্মেদ ও রুমানা ফেরদৌস বিনত-এ রহমানের যৌথ গবেষণায় নতুন এসব জাত উদ্ভাবন হয়। নতুন ৩৫টি জাত (১৫টি তুঁত ও ২০টি কীট) উদ্ভাবনের ফলে বর্তমানে বাংলাদেশ রেশম গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট রাজশাহীতে জার্মপ্লাজম ব্যাংকে তুঁত জাতের গাছের সংখ্যা ৬০ থেকে ৮৪ ও রেশম কীট জাতের সংখ্যা ৮৫ থেকে ১১৪টিতে উন্নীত হয়েছে। এর মধ্যে ২৭টি উচ্চফলনশীল রেশম কীটের জাত রয়েছে।

নতুন ২০টি রেশম কীট উদ্ভাবনের ফলে প্রতি ১০০টি রোগমুক্ত ডিমে ৭০ থেকে ৭৫ কেজি রেশমগুটি উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে। আগে এর পরিমাণ ছিল ৬০ থেকে ৬৫ কেজি। এ ছাড়া উচ্চফলনশীল ১৫টি তুঁতজাত উদ্ভাবনের ফলে বছরে হেক্টরপ্রতি তুঁতপাতার উৎপাদন ৪০ থেকে ৪৭ মেট্রিক টনে উন্নীত করা সম্ভব হয়েছে। এর আগে প্রতি হেক্টরে রেশমের সর্বোচ্চ উৎপাদন ছিল ৩০ থেকে ৩৭ মেট্রিক টন। ফলে স্বল্প সময়ে ও অল্প ব্যয়ে মানসম্পন্ন কাঁচা রেশম সুতা উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে।

গবেষণা কর্মকর্তা ফারুক আহম্মেদ দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘একটি নতুন জাত তৈরি করতে অন্তত ১০ বছর সময় লেগে যায়। এই গবেষণার কাজ আগেই কিছুটা এগিয়ে রাখায় পাঁচ বছরের মধ্যেই শেষ করা সম্ভব হয়েছে। রাজশাহী রেশম গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে জার্মপ্লাজম থেকে গবেষণার মাধ্যমে নতুন এই ১৫টি জাতের মালবেরি (তুঁত) জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে বিএসআরএম-৬৪, বিএসআরএম-৬৫ ও বিএসআরএম ৭৪ জাতের ট্রায়াল শেষ হয়েছে। এগুলো রেশম সম্প্রসারণের মাধ্যমে চাষিদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়া হবে। বাকি জাতগুলো ট্রায়ালের জন্য রাখা হয়েছে।’

এই গবেষক আরও বলেন, ‘প্রকল্পটি দ্বিতীয় পর্যায়ের জন্য আবেদন করা হয়েছে। অনুমোদন পেলে দ্বিতীয় পর্যায়ে এগুলোর ট্রায়াল শেষ করা হবে। এগুলো থেকে হেক্টরপ্রতি তুঁতপাতার উৎপাদন ৪০ থেকে ৪৭ মেট্রিক টনে উন্নীত করা সম্ভব হবে। তবে ট্রায়াল শেষ না হওয়া পর্যন্ত এগুলোর নামসহ বিস্তারিত বলা যাচ্ছে না।’

ঊর্ধ্বতন গবেষণা কর্মকর্তা রুমানা ফেরদৌস বিনত-এ রহমান বলেন, এই প্রকল্পের মাধ্যমে উদ্ভাবিত ২০টি নতুন রেশম কীটের জাতের সবগুলোই এখন ট্রায়াল পর্যায়ে আছে। এগুলো চাহিদা অনুযায়ী রেশম সম্প্রসারণের মাধ্যমে ক্রস হাইব্রিড জাত উৎপাদন করে সরবরাহ করা হবে।

বাংলাদেশ রেশম গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট রাজশাহীর পরিচালক কাজী রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রধান ফসল হিসেবে চাষিদের তুঁত চাষ করতে উৎসাহিত করা হচ্ছে। এখন বাড়ির আনাচকানাচে, রাস্তার ধারে পরিত্যক্ত জায়গায় বেশির ভাগ তুঁত চাষ হয়। রেশম গবেষণা ইনস্টিটিউটের পক্ষ থেকেও তুঁত চাষকে জনপ্রিয় করতে সাথি ফসল প্রবর্তন করা হয়েছে। চাষিরা এভাবে চাষাবাদ করলে লাভবান হবেন।

তিনি আরও বলেন, নতুন এসব জাত উদ্ভাবনের পর সেগুলো দিয়ে বিভিন্ন এলাকার কৃষক নিয়ে এখানে প্রশিক্ষণও দেয়া হয়েছে। এখন এগুলো ট্রায়ালে আছে। কিছু কিছু জাত রেশম সম্প্রসারণকে দেয়া হয়েছে। আর কিছু জাতের কাজ এখনো চলছে। সামান্য কিছু উন্নয়ন করতে হবে। এগুলো শেষ হলেই এই ৩৫টি নতুন জাত রেশম সম্প্রসারণ শাখার মাধ্যমে চাষিদের হাতে পৌঁছে দেয়া হবে।

উল্লেখ্য, রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী রেশম কারখানা ২০০২ সালে বন্ধ করে দেয় তৎকালীন জোট সরকার। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ফের সচলের উদ্যোগ নিয়ে ২০১৮ সালে কারখানাটি চালু হয়। সে সময় রেশমের সুদিন ফেরাতে ১৫৩ কোটি টাকার চারটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এরপর ২০২১ সালে আন্তর্জাতিক ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) স্বীকৃতি পায় রাজশাহীর ঐতিহ্য রেশম। স্বীকৃতি পাওয়ার পর রেশম কাপড়ের চাহিদা বেড়েছে। বর্তমানে রেশমচাষিদের উৎপাদিত রেশমগুটি থেকে কারখানার সামনের রেশম ডিসপ্লেতে মিলছে প্রিন্টেড শাড়ি, টু-পিস, থান কাপড়, ওড়না, স্কার্ফ, টাই ইত্যাদি খাঁটি রেশমপণ্য।


তালার মুসলিমা খাতুন গৃহিণী থেকে মাছ চাষ করে সফল

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
তালা (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি

মুসলিমা খাতুন (৩৫) গৃহিণী। এক সময় সংসারের আর্থিক সংকটে তাকে অন্যের বাড়িতে কাজ করতে হতো। তার স্বামী ছিলেন একজন প্রান্তিক জেলে ও সনাতনী পদ্ধতির ক্ষুদ্র মাছচাষি। নিয়মিত আয় না থাকায় পরিবার চালানো ছিল খুবই কঠিন। স্বামীর অনুপস্থিতিতে অনেক সময় মুসলিমাকেই ঘের দেখাশোনা করতে হতো। কিন্তু সঠিকপ্রযুক্তি ও পদ্ধতি না জানার কারণে উৎপাদন ও লাভ উভয়ই ছিল খুবই সামান্য। সে খুলনার কয়রা উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের মাদারবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা।

এই পরিস্থিতির পরিবর্তন হতে শুরু করে যখন তিনি সাতক্ষীরা উন্নয়ন সংস্থা (সাস) তালা কর্তৃক বাস্তবায়িত এবং পিকেএসএফ, ইফাদ ও ড্যানিডা-এর সহযোগিতায় আরএমটিপি প্রকল্পের ‘নিরাপদ মৎস্য ও মৎস্য পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ’ ভ্যালু চেইন উপ-প্রকল্পের আওতায় অন্তর্ভুক্ত হন। এই প্রকল্পের মাধ্যমে তিনি হাতে-কলমে, আধা-নিবিড় পদ্ধতিতে মাছচাষ, ঘের ব্যবস্থাপনা, সঠিক খাদ্য প্রয়োগ, পানি-মাটি পরীক্ষা, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রশিক্ষণ লাভ করেন।

প্রশিক্ষণ শেষে মুসলিমা খাতুন তার ৬৬ শতকের ঘেরে রুই, কাতলা, গলদা ও বাগদা চিংড়ি চাষ শুরু করেন। তিনি প্রকল্পের মৎস্যসেবা ও পরামর্শ কেন্দ্র থেকে এ্যারেটর স্থাপন, ব্লু নেট ব্যবহার, নিয়মিত চুন প্রয়োগ এবং ঘেরের পানি-মাটির পরীক্ষার সুবিধা নেন। এসব প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও নিয়মিত মনিটরিংয়ের ফলে তার ঘেরে রোগবালাই কমে যায় এবং উৎপাদন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়।

মুসলিমা খাতুন বলেন, তার মোট খরচ হয়েছে ১,১৭,০০০ টাকা আর মোট হয়েছে প্রায় ৩,৮০,০০০ টাকা। প্রচলিত পদ্ধতির তুলনায় তার আয় ও লাভ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

মুসলিমা খাতুন বলেন, ‘আধুনিক প্রযুক্তি, ব্লু নেট ও এ্যারেটর ব্যবহারের ফলেই তার ঘেরের উৎপাদন বেড়েছে। এখন তিনি শুধু নিজেই স্বাবলম্বী হননি, বরং এলাকার অন্যান্য মাছচাষিরাও তার সাফল্য দেখে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। সামনে তিনি আরও বড় পরিসরে মাছচাষ সম্প্রসারণের পরিকল্পনা করছেন।’

স্বল্প শিক্ষিত একজন গৃহিণী থেকে আজ একজন সফল নারী উদ্যোক্তা মুসলিমা খাতুন এখন স্থানীয়ভাবে অনুকরণীয় এক দৃষ্টান্ত।

সাতক্ষীরা উন্নয়ন সংস্থা (সাস) নির্বাহী পরিচালক শেখ ইমান আলী বলেন, ‘মুসলিমা খাতুনের গল্পটা দেখলে পরিষ্কার বোঝা যায় সুযোগ, সঠিক দিকনির্দেশনা আর নিজের পরিশ্রম একসাথে কাজ করলে পরিবর্তন হবেই। তিনি শুরু করেছিলেন শূন্য থেকে।

আরএমটিপি প্রকল্পের প্রশিক্ষণ, ব্লু নেট, এ্যারেটর, পানি-মাটির পরীক্ষা- এসব জিনিস তিনি শুধু ব্যবহারই করেননি, নিজের বাস্তব অভিজ্ঞতার সঙ্গে মিলিয়ে প্রতিদিন আরও ভালো করার চেষ্টা করেছেন। এই মনোভাবটাই তাকে এগিয়ে দিয়েছে।

মহারাজপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, মুসলিমা খাতুনের সাফল্য আমাদের ইউনিয়নের জন্য সত্যিই গর্বের বিষয়। একসময় যিনি সংসারের টানাপোড়েন সামলাতে হিমশিম খেতেন, আজ তিনি আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ঘেরে নিয়মিত উৎপাদন বাড়াচ্ছেন এটা আমাদের উপকূলীয় এলাকার বাস্তব পরিবর্তনেরই উদাহরণ।’

সাতক্ষীরা উন্নয়ন সংস্থা (সাস) ও আরএমটিপি প্রকল্পের সহায়তা এখানে বড় ভূমিকা রেখেছে। প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি, নিয়মিত পরামর্শ এসব সুবিধা কাজে লাগিয়ে মুসলিমা নিজের ঘেরকে যেমন উন্নত করেছেন, তেমনই আশপাশের মানুষকেও নতুনভাবে ভাবতে শিখিয়েছেন।


পাবনায় অবাধে শামুক নিধন বিপর্যয়ের মুখে জীববৈচিত্র্য

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
পাবনা সংবাদদাতা

বর্ষার পানি নামতে শুরু করেছে। এ অবস্থায় পাবনার বিভিন্ন খাল ও বিল থেকে নির্বিচারে শামুক শিকার বা নিধনের ধুম পড়েছে। শুধু হাঁস বা মাছের খামারের চাহিদা মেটানোর জন্য নয়, বাণিজ্যিক বা অতিরিক্ত অর্থ আয়ের উৎস হিসেবে নির্বিচারে নিধন করা হচ্ছে শামুক। এতে পরিবেশের জীববৈচিত্র্য বিপর্যয়ের শঙ্কা বাড়ছে বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

হাঁস বা মাছের খামারে শামুকের চাহিদা ব্যাপক। ফলে বিল পাড়ের বাসিন্দারা নিজেদের হাঁস বা মাছের খামারে চাহিদা মেটানোর জন্য শুরুতে শামুক শিকার করলেও এখন সেটি ব্যবসা বা আয়ের উৎসে পরিণত হয়েছে। সংগ্রহকারীদের বড় অংশ জানেন না শামুক শিকার, বেচাকেনা বা বিপণন সংক্রান্ত কোনো আইন। অবাধে শামুক শিকার করে বেচাকেনা চলছে পুরোদমে।

জানা যায়, বর্ষা মৌসুমের মাঝামাঝি সময় থেকে পানি নেমে যাওয়া (পানি নিচু জায়গায় যাওয়া) পর্যন্ত শামুক শিকার হয়। পাবনার চাটমোহর উপজেলার চলনবিল, সাঁথিয়া উপজেলার মুক্তার বিল, সোনই বিল, বিল গাংভাঙ্গা, গজারিয়া, আড়িয়াদাহ বিল, বাসটিয়াখালি, বেড়া উপজেলার জোরদহ বিল, কাজলকুড়া, ধলাই, ট্যাংরাগাড়ি, বক্কারের বিলসহ অন্তত ১০-১৫টি খাল ও বিল থেকে হাজার হাজার মণ শামুক শিকার করেন শিকারিরা। পরে সেগুলো সরবরাহ করা হয় বিভিন্ন হাঁস ও মাছের খামারে। এমনকী পাইকারি ব্যবসায়ীরা এসব শামুক কিনে ট্রাকে করে খুলনাসহ বেশকিছু অঞ্চলে সরবরাহ করেন। এতে করে খাল-বিলে কমেছে শামুকের পরিমাণ। ফলে বিগত বছরের তুলনায় শামুক কম পাচ্ছেন শিকারিরা।

শামুক শিকারিরা জানান, বর্ষা মৌসুমে বিলপাড়ের অনেক বাসিন্দাদের হাতে কাজ কম থাকে। ফলে বাড়তি আয়ের জন্য তারা এ কাজ করেন। এ কাজে নিজেদের ব্যাপকভাবে নিয়োগ করেছেন নারীরাও। প্রতিদিন নৌকা নিয়ে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত মই জাল, হেসি জাল ও হাত দিয়ে শামুক সংগ্রহ করেন তারা। পরে এসব শামুক পাইকারদের কাছে ৫-৭ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হয়।

সাঁথিয়া উপজেলার করমজা ইউনিয়নের শামুকজানি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন বিল থেকে নারী ও পুরুষরা শামুক সংগ্রহ করে এনে প্রতি কেজি ৫-৭ টাকা দরে বিক্রি করছেন। আর পাইকারি ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন হাঁস ও মাছের খামারিদের কাছে বিক্রি করছেন ৮-১০ টাকা কেজি দরে।

শামুকজানি গ্রামের আলতাফ হোসেন বলেন, ‘পানি কম থাকলে হাত দিয়ে শামুক ধরা যায়। বিভিন্ন জাল দিয়ে ধরতে হয়। প্রতিকেজি শামুক ৫-৭ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হয়।

সাঁথিয়ার আফড়া গ্রামের রশিদ ও নাহিদা বলেন, ‘আইন কানুন কী আছে জানি না। কেউ কখনো বলেও নাই। এই সময় কাজ-কাম কম থাকে। এ কারণে সংসারে টানাটানি থাকে। তাই নৌকা নিয়ে আবার কখনো নৌকা ছাড়াই শামুক ধরি। পরে সেগুলো বস্তায় ভরে পাইকারি ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করি। গড়ে ৪০০-৫০০ টাকা ইনকাম করা যায়।’

শামুক ব্যবসায়ী আজমত শেখ জানান, বর্ষাকালে এসব এলাকায় প্রচুর শামুক পাওয়া যায়। প্রতিদিন গড়ে ৩০০ বস্তা শামুক বেচাকেনা হয়। তবে সাঁথিয়ার অন্যান্য জায়গায় আরও বেশি বেচাকেনা হয়। বিলপাড়ের মানুষেরা বিভিন্ন আকারের শামুক শিকার করে আমাদের কাছে আনেন। আমরা এগুলো ক্রয় করে অল্প লাভে খুলনায় সরবরাহ করি। এগুলো বেচাকেনা অপরাধ। আইনে এসব নিষিদ্ধ কি-না কিছুই জানি না।’

এদিকে অপরিকল্পিতভাবে এসব খাল-বিলের জীববৈচিত্র্যের অন্যতম অনুষঙ্গ নিধনের ফলে প্রকৃতির ভারসাম্য হারানোর শঙ্কা দেখা দিয়েছে। পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম প্রামাণিক বলেন, ‘শামুক মাটিতে অক্সিজেন সরবরাহ বাড়ায়। কৃষি উৎপাদন বাড়াতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নির্বিচারে অতিরিক্ত হারে শামুক নিধন উচিত নয়। এটি সরাসরি ফসলে প্রভাব না ফেললেও জীববৈচিত্র্যের ওপর একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলে।’

পাবনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা দীপক কুমার পাল বলেন, জীববৈচিত্র্যের প্রত্যেকটি বিভাগের সাথে অন্য বিভাগের সম্পর্ক রয়েছে। এক্ষেত্রে শামুকের সঙ্গে অন্যন্য জলজ প্রাণীর পাশাপাশি মৎস্য বা মাছেরও সম্পর্ক রয়েছে। শামুকের ছোট ডিম ও বাচ্চাগুলো খেয়ে কিছু মাছ বেঁচে থাকে। এছাড়া শামুক নিচের ময়লা খেয়ে পানি পরিষ্কার রাখে। এটি শুধু মাছ নয় অন্যান্য জলজ প্রাণীর জন্যও ইতিবাচক বিষয়।

রাজশাহী বিভাগীয় বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ, বন্যপ্রাণী পরিদর্শক মো. জাহাঙ্গীর কবীর জানান, শামুককে বলা হয় ‘প্রাকৃতিক জলশোধন ব্যবস্থা’ (ফিল্টার)। শামুক ময়লাযুক্ত পানি পান করে জীবনধারণ করে। ফলে পানি পরিষ্কার থাকে। পানিতে শামুক না থাকলে পানির প্রাকৃতিক শোধন ক্ষমতা হ্রাস পায়।

তিনি বলেন, সরকারের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন-২০১২ অনুযায়ী শামুক সংগ্রহ, ধ্বংস, ভক্ষণ, পরিবহন, ক্রয়-বিক্রয়, আমদানি-রপ্তানি করা দণ্ডনীয় অপরাধ। যার সর্বোচ্চ শাস্তি দুই বছর কারাদণ্ড এবং এক লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা। তবে এ বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি অতি জরুরি বলেও তিনি জানান।


মাগুরায় গ্রামীণ ব্যাংকে পেট্রোল দিয়ে আগুন লাগিয়েছে দুর্বৃত্তরা 

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
মাগুরা প্রতিনিধি

মাগুরা মহম্মদপুর উপজেলা সদরের গ্রামীণ ব্যাংক শাখায় দুর্বৃত্তরা অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটিয়েছে।

মঙ্গলবার রাত তিনটার দিকে মহম্মদপুর সদরের আমিনুর রহমান ডিগ্রী কলেজের পাশে অবস্থিত গ্রামীণ ব্যাংক শাখার জানালা দিয়ে পেট্রোল দিয়ে কে বা কাহারা আগুন লাগিয়ে পালিয়েছে।

আগুনের সূত্রপাত দেখে প্রতিবেশীরা ফায়ার সার্ভিসে খবর দিলে দ্রুত তারা আগুন নিয়ন্ত্রণ করে। বেশ কিছু কাগজপত্র চেয়ার-টেবিল পুড়ে গেছে।

মহম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুর রহমান জানান, রাতের অন্ধকারে কোন দুর্বৃত্তরা গ্রামীণ ব্যাংকের জানালা দিয়ে পেট্রোল ফেলে আগুন লাগিয়ে পালিয়েছে। বিষয়টি তদন্ত চলছে।

মহম্মদপুর গ্রামীণ ব্যাংকের সেকেন্ড ম্যানেজার সিরাজুল ইসলাম জানান, রাত তিনটার দিকে দুর্বৃত্তরা জানালার লক ভেঙে ভিতর দিয়ে আগুন লাগিয়ে পালিয়েছে। কিছু কাগজপত্র চেয়ার টেবিল আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।


জয়পুরহাটের কালাইয়ে নবান্ন উৎসব উপলক্ষে মাছের মেলা, জমজমাট কেনাবেচা

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
রাব্বিউল হাসান, জয়পুরহাট 

নবান্ন উৎসব উপলক্ষে জয়পুরহাটের কালাই পৌরশহরের পাঁচশিরা বাজারে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও বসেছে মাছের মেলা। থরে থরে সাজানো রুই, কাতলা, চিতল, সিলভার কার্প, বিগহেড কার্প, বোয়াল ও সামুদ্রিক মাছসহ নানা প্রজাতির দেশি মাছ।

মেলায় এবার প্রচুর মাছের আমদানি হলেও এবার মাছের দাম বেশি বলে জানিয়েছেন ক্রেতারা। মেলাকে ঘিরে সকাল থেকেই সৃষ্টি হয়েছে উৎসবমুখর পরিবেশ। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষজন ভিড় করছেন মেলাপ্রাঙ্গণে। মেলার দিনে এই এলাকার সকলেই জামাইদের আমন্ত্রণ করেন। এ কারণে এই মেলাটি জামাই মেলা নামেও পরিচিত।

মাছের মেলায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রঙিন কাপড়ের বিশাল প্যান্ডেল বেলুন দিয়ে সাজানো হয়েছে। সেই প্যান্ডেলের নিচে থরে-থরে দেশীয় প্রজাতির বড়-বড় মাছ সাজিয়ে রাখা হয়েছে। মাছের মেলায় ক্রেতা-বিক্রেতাদের প্রচুর ভিড়। মেলায় সারি সারি দোকানে চলছে হাঁকডাক, দরদাম। মিলছে তিন কেজি থেকে শুরু করে ৩৫ কেজি গ্রাস কার্প ওজনের মাছ। লোকজনও উৎসাহ নিয়ে দেখছেন। কেউ কেউ মাছ কিনে বাড়িতে ফিরছেন।

স্থানীয়রা জানান, ক্যালেন্ডার নয় পঞ্জিকা অনুসারে অগ্রহায়ণ মাসে প্রথম দিনে নবান্ন উৎসব উপলক্ষে প্রতি বছর এখানে মাছের মেলা বসে। মাছ ব্যবসায়ীরা মূলত এই মাছের মেলা বসিয়ে থাকেন। আর এই মাছের মেলাকে কেন্দ্র করে অংশ নেন কালাই পৌর শহরে মূলগ্রাম, দুরঞ্জ, আঁওড়া, সড়াইলসহ উপজেলার পুনট, মাদাই, পাঁচগ্রাম, মাদারপুর, বেগুনগ্রাম, হতিয়ার, ঝামুটপুর, হাতিয়র, মাত্রাইসহ আশপাশের ২৫-৩০ গ্রামের মানুষ। এ উৎসবকে কেন্দ্র করে প্রতি বাড়িতে জামাইসহ স্বজনদের আগে থেকে দাওয়াত করা হয়। এছাড়া দূর-দূরান্ত থেকেও লোকজন আসেন মেলায় মাছ কিনতে।

মেলায় এবার প্রচুর মাছের আমদানি হয়েছে। মাছের সারি সারি দোকানে আকৃতি অনুযায়ী বিক্রি করছে মাছ ব্যবসায়ীরা। সিলভার কার্প প্রতি কেজি ৩০০ থেকে ৯০০ টাকা, বিগহেড কার্প প্রতি কেজি ৪০০ থেকে ৮০০ টাকা, রুই মাছ প্রতি কেজি ৪০০ থেকে ১২০০ টাকা ও কাতলা মাছ প্রতি কেজি ৪৫০ থেকে ১৩০০ টাকা।

মেলায় বিশালাকৃতির একটি মাছ মাথায় তুলে ক্রেতা আকর্ষণের চেষ্টা করছিলেন কালাইয়ের মাছ বিক্রেতা আব্দুল লতিফ। সাড়ে ১৮ কেজি ওজনের রুই মাছটির দাম হাঁকেন ২৫ হাজার টাকা। সেই মাছ ক্ষেতলাল উপজেলার পাঠানপাড়া এলাকার মনোয়ার হোসেন ২২ হাজার ২০০ টাকায় কিনে নেন।

মেলায় মাছ কিনতে এসেছেন কালাই পৌরশহরের মূলগ্রামের সুরেষ চন্দ্র। তিনি বলেন, প্রতি বছর এ মেলায় আসি। আর মেলা থেকে পছন্দসই মাছ কিনে বাড়িতে ফিরি। এবার মেলায় মাছের দাম বেশি। ১৯ কেজি ওজনের কাতলা মাছ কিনলাম ২৪ হাজার ৭০০ টাকায়।

মেলায় উপজেলার আহম্মেদাবাদের হাতিয়র গ্রাম থেকে বেড়াতে এসেছেন নার্গিস বেগম। তিনি বলেন, স্বামীকে নিয়ে মাছের মেলায় ঘুরতে এসেছি। পাঁচশিরা বাজারে মাছের মেলার নাম আগে থেকেই জানি। কিন্তু কখনো আসা হয়নি। মেলায় এসে বড় বড় মাছ দেখছি। অনেক ভালো লাগছে। ঘুরেফিরে মেলা থেকে স্বাদ ও সাধ্যের কথা মাথায় রেখে পছন্দের একটি বড় মাছ ৭ হাজার ৩০০ টাকায় কিনলাম।

মেলায় মাছ কিনতে আসা শফিকুল ইসলাম নামে এক জামাই বলেন, অন্য বছরের চেয়ে এবার মেলায় বড় মাছের আমদানি অনেক বেশি। মেলা থেকে ৬ কেজি ওজনের একটি কাতলা মাছ কিনলাম। এখন শ্বশুর বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছি।

স্থানীয় কালাই পৌর শহরের পূর্বপাড়ার তাইফুল ইসলাম বাবু বলেন, এই মাছের মেলাটি এক যুগ ধরে চলে আসছে। মাছের মেলাকে কেন্দ্র করে এই মেলায় বড় পুকুর, দিঘি ও নদী থেকে নানান জাতের বড় বড় মাছ সংগ্রহ করে নিয়ে আসেন মাছ ব্যবসায়ীরা।

মৎস্য খামারি মকবুল হোসেন বলেন, মেলা সামনে রেখে এক বছর ধরে পুকুরে বড় বড় মাছ বাছাই করে চাষ করেছেন। তাই এবার পাঁচশিরা বাজারের মাছের মেলায় বড় বড় মাছ বিক্রি করতে পারছেন। এবার সকাল থেকে ক্রেতারা আসছেন মাছ কিনতে। তারা তাদের পছন্দ মতো মাছ কিনে বাড়িতে ফিরছেন।

মাছ ব্যবসায়ী রেজাউল ইসলাম বলেন, মাছের মেলায় প্রচুর লোক সমাগম হলেও বিক্রি সেই তুলনায় কম। তারপরও যেটুকু হয়েছে, সব খরচ বাদে তাতে লাভ সামান্যই টিকবে। তবে এবার অন্য বছরের তুলনায় ক্রেতা বেশি। তাই মাছও বিক্রি হচ্ছে বেশি।

মেলার আরেক মাছ ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা ব্যবসায়ীরা মিলে প্রতি বছর এ মাছের মেলা আয়োজন করে থাকি। এবার মেলায় ছোট-বড় মিলে ৫০টি মাছের দোকান বসেছে। মাছের মেলাতে বড় পুকুর, দিঘি ও নদী থেকে নানান জাতের বড় বড় মাছ সংগ্রহ করা হয়েছে। রুই, কাতলা, মৃগেল, কালবাউশ, বিগহেড কার্প, সিলভার কার্পসহ বড় আকারের মাছ প্রতি কেজি ৭০০ থেকে ১হাজার ১০০টাকায়। এছাড়া মাঝারি আকারের মাছ প্রতি কেজি ৪৫০ থেকে ৬৫০টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ছোট আকারের প্রতি কেজি ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

কালাই পৌর শহরের পাঁচশিরা বাজার ইজারাদার প্রতিনিধি উজ্জ্বল হোসেন বলেন, এ মেলার কোন আয়োজক নেই, মাছ ব্যবসায়ীরা নিজ উদ্যাগে প্রতি বছর এ মেলার আয়োজন করে থাকে। মাছ ব্যবসায়ীরা মেলার আগে এক সপ্তাহ ধরে এলাকায় মাইকে প্রচার প্রচারণা করে থাকেন। এই দিনে মেলায় যেমন প্রচুর মাছ আমদানি হয় তেমনি বিক্রিও হয়।

কালাই উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তৌহিদা মোহতামিম বলেন, মেলায় ছোট বড় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ওঠেছে। এই মেলাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় বড় মাছ ব্যবসায়ীরা ও মাছ চাষিরা বিভিন্ন এলাকা থেকে বড় বড় মাছ নিয়ে আসেন। বড় বড় মাছ দেখে এ এলাকার চাষীদের আগ্রহ বাড়ছে। মেলায় কমপক্ষে এক কোটি টাকার মাছ ক্রয়-বিক্রয় হবে। মৎস্য বিভাগ চাষীদের সবসময় মাছ চাষে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া মেলায় যেনো কেউ বিষযুক্ত মাছ বিক্রি করতে না পারেন, সেদিকে আমাদের কঠোর নজরদারি রয়েছে।


টঙ্গীতে আগুনে পুড়ল ৬ গুদাম

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

গাজীপুরের টঙ্গীতে বস্তার গুদামে ভয়াবহ আগুনের ঘটনা ঘটেছে। এতে ছয়টি বস্তার গুদাম পুড়ে গেছে।

মঙ্গলবার (১৮) নভেম্বর ভোরে টঙ্গী পূর্ব থানাধীন বউ বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিস সদস্যদের আড়াই ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসে।

টঙ্গী ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মোহাম্মদ শাহিন আলম বলেন, মঙ্গলবার ভোরে টঙ্গীর বউবাজার গরুর হাট এলাকায় একটি বস্তার গুদামে আগুনের সূত্রপাত হয়। ভোরবেলায় স্থানীয় বাসিন্দারা আগুন দেখে ফায়ার সার্ভিসের হট লাইনে কল করেন। খবর পেয়ে আমাদের চারটি ইউনিট ঘটনাস্থলে যায়। ততক্ষণে পাশে থাকা অন্যান্য গুদামেও আগুন ছড়িয়ে পড়ে। পরে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের চেষ্টায় সকাল পৌনে ৯টার দিকে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসে।

তিনি আরও বলেন, তাৎক্ষণিক আগুনের সূত্রপাত জানা যায়নি। আগুনে ছয়টি গুদাম পুড়ে গেছে। এ ঘটনায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।


উপহার না আনার অনুরোধ পঞ্চগড়ের নতুন ডিসির

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
পঞ্চগড় প্রতিনিধি

পঞ্চগড়ের নতুন জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন কাজী সায়েমুজ্জামান। যোগদানের আগে সোমবার ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি পঞ্চগড়বাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে দায়িত্ব পালনে নিজের অঙ্গীকার তুলে ধরেন।

৯ নভেম্বর পঞ্চগড়ে পদায়ন হওয়ার পর সামাজিক মাধ্যমে স্থানীয় মানুষের উচ্ছ্বাস, শুভেচ্ছা ও অভিনন্দনে তিনি অভিভূত হয়েছেন বলে জানান। তিনি লেখেন, অভিনন্দনের জোয়ারে যোগ দিতে গিয়ে অনেকটা প্রত্যাশার চাপ অনুভব করছি। কাজ দিয়ে এই চাপ কমানোর চেষ্টা করব।

দীর্ঘদিন সরকারি কর্মকর্তা প্রশিক্ষণদানে যুক্ত থাকা এই কর্মকর্তা বলেন, হয়রানিমুক্ত ও স্বল্প খরচে সরকারি সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়াই তার মূল লক্ষ্য। চাকরি জীবনের শুরু থেকেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে আছেন জানিয়ে তিনি বলেন, নিজে দুর্নীতি করি না, অন্যকে করতে দিই না। একটি লাগেজ আর আপনাদের ভালোবাসা নিয়েই ফিরব।

আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব পালন তার কাছে এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তিনি লেখেন, ভোটরক্ষা মানে দেশরক্ষা। ভোটরক্ষা আমার ওপর অর্পিত পবিত্র আমানত। রাগ–অনুরাগ বা লোভের বশবর্তী হয়ে আমি নীতির বাইরে যাব না।

নিজের ব্যক্তিজীবন সম্পর্কে ডিসি আরও লেখেন, জীবনে কারও কাছ থেকে ধার নেননি, নেই কোন ঋণ। হারাম আয় থেকে সর্বদা দূরে থেকেছেন। চাকরিতে কখনও বদলি বা পোস্টিংয়ের জন্য তদবিরও করেননি।

পঞ্চগড়ের বাসিন্দাদের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আগমনের আমন্ত্রণ জানিয়ে তিনি অনুরোধ করেন, কেউ যেন ফুল বা উপহার না আনেন। তিনি জানান, গিফট গ্রহণ না করার নীতি তিনি বহু বছর ধরে অনুসরণ করছেন। দোয়াই আমার জন্য যথেষ্ট। সবার সহযোগিতা ও দোয়া চাই।


আমন উৎসব: সোনালি ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত কৃষক

এবার ১২ হাজার ২০ হেক্টর জমি থেকে ৬০ হাজার ২০০ টন শুকনো ধান উৎপাদনের আশা
রাউজান উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডে আমন ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত কৃষক।
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
এম. রমজান আলী রাউজান (চট্টগ্রাম) 

রাউজানে সোনালি ধানের শীষে ভরে উঠেছে বিস্তীর্ণ মাঠ। সেই সোনালি আমন ধান ঘরে তুলতে এখন ব্যস্ত কৃষক-কৃষাণি। কেউ মাঠ থেকে পাকা আমন ধান কাটছেন, কেউবা কাটা ধান আঁটি বাঁধছেন। আবার কেউ কেউ বাঁধা আঁটিগুলো কাঁধে তুলে স্তূপ করে রাখছেন বাড়ির উঠানে কিংবা রাস্তার পাশে। সেখানে কৃষক-কৃষাণিরা মেশিনের মাধ্যমে ধান মাড়াই করে নতুন ধান ঘরে তুলছে। সব মিলিয়ে নতুন ধান ঘরে আশায় কৃষকের মনে দোলা দিচ্ছে এক ভিন্ন আমেজ।

আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় রাউজানে আমন ধানের ফলন ভালো হওয়ায় কৃষক-কৃষাণিও খুশি। তবে ফলন ভালো হলেও নানা কারণে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি নেই। ভালো দাম পাওয়া নিয়েও শঙ্কা আছে। কৃষকরা বলছেন, দাম ভালো পেলে আগামী মৌসুমে ধানের আবাদ বাড়বে। সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, কুয়াশাভেজা মাঠ থেকে সবুজ থেকে সোনালি হয়ে ওঠা সেই পাকা ধান কেটে আনার মহোৎসব চলছে। সে সাথে চলছে নবান্ন উৎসব। কার্তিক ও অগ্রহায়ণ নিয়ে হেমন্ত ঋতু। কৃষাণিরা নতুন ধানের চাল দিয়ে তৈরি করে পিঠা-পুলি, পায়েস, ক্ষীর, মুড়ি ও মুড়ির নাড়ুসহ নানা খাবার।

হলদিয়া ইউনিয়নের বৃক্ষভানপুর এলাকার কৃষক মন্টু ঘোষ বলেন, ‘এ বছর আমি ১৬০ শতক জমিতে আমন ধান চাষাবাদ করেছি। খরচ হয়েছে ৬০ হাজার টাকা। ফলনও হয়েছে ভালো। তবে মাঠ থেকে পাকা ধান ঘরে তুলতে প্রতিজন শ্রমিককে দুবেলা খাওয়াসহ ৬০০ টাকা বেতন দিতে হচ্ছে।’ তিনি অভিযোগ করে আরও বলেন, ‘কৃষি অফিস থেকে বিনামূল্যে বীজ সার কোনো সময় পাইনি।’

বৃন্দাবন এলাকার কৃষক নুরুল আলম বলেন, ‘৮০ শতক জমিতে আমন ধান আবাদ করেছি। এখন পাকা ধান ঘরে তুলতে চারজন শ্রমিক দিয়ে কাটা শুরু করেছি। আশা করি ফলন ভালো হবে।’

শ্রমিকরা জানান, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় তারা বেকায়দায় পড়েছেন। তাই এবার দুই বেলা খেয়ে ৫০০-৬০০ টাকা দরে পারিশ্রমিক নিচ্ছেন। রাউজান উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সনজীব কুমার সুশীল বলেন, ‘রাউজানে প্রান্তিক কৃষকরা পুরোদমে আমন ধান কাটা শুরু করেছেন। নতুন ধান ঘরে তোলার পর তাদের উৎসব শুরু হবে।

কৃষকরা ধান কেটে বাড়ি আনার পর মাড়াই-মলন শেষে কৃষাণিরা সেটা পরিষ্কার করে রোদে শুকিয়ে ঘরে তুলা নিয়েও ব্যস্ত সময় পার করছেন।’

রাউজান উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মাসুম কবির জানান, এবার রাউজানে আমনের চাষ হয়েছে ১২ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে হাইব্রিড জাতের আমন ধানের চাষ হয়েছে ৫৬০ হেক্টর জমিতে। উফসী জাতের আমন হয়েছে ১১ হাজার ২৬০ হেক্টর জমিতে। স্থানীয় জাতের আমন হয়েছে ২১০ হেক্টর জমিতে। এই ১২ হাজার ২০ হেক্টর জমি থেকে ৬০ হাজার ২০০ মেট্রিক টন শুকনো ধান উৎপাদন হবে। এবার আমনের ভালো ফলন হয়েছে। কৃষকরা পুরোদমে পাকা আমন ধান কাটা ও মাড়াইয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। নতুন ধান ঘরে তুলে কৃষক পরিবারের সদস্যরা নবান্ন উৎসবের আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।


কম খরচে দীর্ঘমেয়াদি আয় সুপারি চাষে বাড়ছে আগ্রহ

*ঝালকাঠিতে সুপারির বাম্পার ফলন *চার উপজেলা ও ৩২ ইউনিয়নের ৪৭১ গ্রামের ৭৫০ হেক্টর জমিতে চাষ সুপারির *স্থানীয় হাটে কোটি টাকার লেনদেন
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
ঝালকাঠি প্রতিনিধি

পান-সুপারি বাংলাদেশের ঐতিহ্যের অংশ। গল্পে, আড্ডায়, অতিথি আপ্যায়নে কিংবা বিয়েবাড়িতে সুপারি যুগ যুগ ধরে বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তবে এখন এই ঐতিহ্যবাহী ফল শুধু সংস্কৃতির নয়, গ্রামীণ অর্থনীতিরও শক্ত ভিত্তি হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলের ঝালকাঠিতে প্রায় প্রতিটি গ্রামেই দেখা যায় সুপারির বাগান।

ঝালকাঠির চারটি উপজেলা ও ৩২টি ইউনিয়নের ৪৭১টি গ্রামজুড়ে ছড়িয়ে আছে সুপারি গাছ। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে জেলায় প্রায় ৭০০ থেকে ৭৫০ হেক্টর জমিতে সুপারির চাষ হয়েছে। গত কয়েক বছরের তুলনায় এবারের ফলন অনেক ভালো। অনুকূল আবহাওয়া ও রোগ-বালাই কম থাকায় কৃষকরা পেয়েছেন বাম্পার ফলন।

তবে ফলন ভালো হলেও বাজারদর কিছুটা কম থাকায় অনেক চাষি হতাশা প্রকাশ করেছেন। বর্তমানে সুপারির আকার অনুযায়ী প্রতি কুড়ি (২১০টি) বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৫০ টাকায়। আবার কোনো কোনো বাজারে প্রতি পণ পাকা সুপারি ১৬০-১৮০ টাকা এবং প্রতি কুড়ি ৪০০-৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ঝালকাঠির প্রায় সব হাটেই সুপারির জন্য আলাদা জায়গা নির্ধারিত থাকে। হাটের দিনে এসব বাজারে পাইকার ও কৃষকের উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়।

ছত্রকান্দা, সারেঙ্গল, কৃত্তিপাশা, সিঅ্যান্ডবি বাজার, রাজাপুরের বাগড়ি, লেবুবুনিয়া, বাদুরতলা, নাপিতেরহাট, নলছিটির ভৈরবপাশা, চাকলার বাজার, কাঠালিয়ার কৈখালী ও সাতানি বাজারসহ জেলার ৮৯টি সাপ্তাহিক হাটে মোট প্রায় ৫ কোটি টাকার সুপারি বেচাকেনা হয়।

এর মধ্যে সবচেয়ে জমজমাট হাট রাজাপুর উপজেলার সাতুরিয়া সুপারি হাট। প্রতি মঙ্গলবার এখানে ৬০ থেকে ৭০ লাখ টাকার সুপারি বেচাকেনা হয়। রাজাপুর, পিরোজপুর ও কাউখালী অঞ্চলের মাঝামাঝি অবস্থান হওয়ায় সাতুরিয়া দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম বৃহত্তম সুপারি বাজারে পরিণত হয়েছে।

জেলার প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই রয়েছে সুপারি গাছ। অনেকেই বাড়ির পাশেই গাছ লাগিয়ে ভালো ফলন পাচ্ছেন। কৃষকের মতে, একবার গাছ লাগালে ৪-৫ বছরের মধ্যে ফল দিতে শুরু করে এবং টানা ৩০-৩৫ বছর ফল দেয়। খুব বেশি পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় স্থানীয়রা দিন দিন সুপারি চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।

জানা গেছে, একসময় ফিলিপাইন ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ থেকে আমদানি করা এরিকা ক্যাটচু প্রজাতির এই গাছ এখন দেশে সফলভাবে চাষ হচ্ছে। একবার রোপণের পর এটি ৩০-৩৫ বছর ফল দেয়। উৎপাদন খরচ কম, আয় ধানের তুলনায় তিন থেকে চার গুণ বেশি তাই এখন অনেক কৃষক ধানের বদলে সুপারি চাষে ঝুঁকছেন।

কৃষি বিভাগ জানায়, সুপারি এখন ঝালকাঠির গ্রামীণ অর্থনীতির অন্যতম ভিত্তি। কম পরিচর্যা, কম খরচে দীর্ঘমেয়াদি ফলন এবং বাজারে স্থায়ী চাহিদা সব মিলিয়ে এটি কৃষকের কাছে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ফসলে পরিণত হয়েছে।

জেলার বিভিন্ন হাটে প্রতিদিন কোটি টাকার লেনদেন হচ্ছে সুপারি ঘিরে। স্থানীয়ভাবে বিক্রি হওয়া সুপারির মাধ্যমে কৃষক, পাইকার, ব্যবসায়ী ও পরিবহন শ্রমিক সবাই অর্থনৈতিকভাবে উপকৃত হচ্ছেন। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ঝালকাঠির সুপারি এখন রপ্তানি হচ্ছে বিদেশেও। পাইকাররা সুপারি কিনে সড়ক ও নৌপথে চট্টগ্রাম, খুলনা ও যশোরের আড়তে পাঠান। সেখান থেকে এগুলো রপ্তানি হয় ভারত, চীন, থাইল্যান্ডসহ মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে।

ঝালকাঠি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমরা চাই সুপারি শুধু কৃষিপণ্য নয়, বরং একটি রপ্তানিযোগ্য ব্র্যান্ডে পরিণত হোক। এ জন্য কৃষকের প্রশিক্ষণ ও বাজার সংযোগে কাজ করছি। একবার গাছ লাগালে বছরের পর বছর ফল দেয়, বছরে দুবার সার-পানি দিলেই চলে। তাই এখন সুপারি চাষই আমাদের প্রধান ভরসা। ঝালকাঠির সুপারির মান অত্যন্ত উন্নত। এখানকার সুপারি ইউরোপ, আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের বাজারেও যাচ্ছে। কৃষককে আমরা পরিকল্পিত চাষে উৎসাহিত করছি, যেন এ ফসল আরও রপ্তানিযোগ্য হয়।

সুপারি চাষ এখন আর শুধু পান-বিলাসের উপকরণ নয়, বরং সম্ভাবনাময় এক কৃষিশিল্পে পরিণত হয়েছে। ঝালকাঠির মাঠে-মাঠে দুলছে সুপারির থোকা, হাটে জমে উঠছে বেচাকেনা, আর দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও ছড়াচ্ছে ঝালকাঠির সুপারি। ভালো দাম পেলে কৃষকের মুখে হাসি আরও চওড়া হবে এমনটাই আশা ঝালকাঠির সুপারি চাষিদের।


ঝিনাইদহে প্রবাসী হত্যায় প্রধান আসামি রবি গ্রেপ্তার

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি

ঝিনাইদহে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে প্রবাসী মাহাবুব হত্যা মামলার প্রধান আসামি রবিউল ইসলাম ওরফে রবিকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। গত রোববার রাতে শহরের আদর্শপাড়া এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি সদর উপজেলার কালা গ্রামের মৃত আব্দুস সাত্তারের ছেলে।

র‌্যাব-২ ঝিনাইদহ ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার মেহেদী ইমরান সিদ্দিকী জানান, প্রবাসী মাহাবুব হত্যা মামলার প্রধান আসামি শহরের আদর্শপাড়া এলাকায় অবস্থান করছে এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সেখানে অভিযান চালানো হয়। পরে আসামি পালিয়ে যাওয়ার সময় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সোমবার সকালে সদর থানায় সোপর্দ করা হয়।

গত শনিবার সকালে সদর উপজেলার কালা গ্রামে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের হামলায় কম্বোডিয়া প্রবাসী মাহাবুবকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে প্রতিপক্ষরা। সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। এ ঘটনায় গত রোববার রাতে নিহতের ভাই রুবেল হোসেন বাদী হয়ে ১৩ জনের নাম উল্লেখসহ ১০-১২ জনকে আসামি করে সদর থানায় হত্যা মামলা করে।


নীলফামারীতে ৯৫ হাজার টন আলু নিয়ে সংকট

হিমাগারে ঠাসা আলু বাজারে নেই দাম
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নীলফামারী প্রতিনিধি

নীলফামারীতে সংরক্ষিত আলুর বাজারদর তলানিতে নেমে যাওয়ায় কৃষক, ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে হিমাগার মালিক সবাই মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছে। উৎপাদন ও সংরক্ষণ ব্যয়ের তুলনায় দাম কমে যাওয়ায় জেলার ১১টি হিমাগারের প্রায় ৯৫ হাজার টন আলু নিয়ে সংকট তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৩৫ হাজার টন আলু কৃষকের। কৃষকের অভিযোগ, জমিতে উৎপাদন থেকে সংরক্ষণ পর্যন্ত প্রতি কেজি আলুর খরচ পড়েছে ২৮ থেকে ২৯ টাকা। অথচ বাজারে ভালো মানের আলুর দাম ৭-১০ টাকার বেশি নয়।

কৃষক মোস্তফা ইসলাম বলেন, ‘২২ টাকা খরচ করে আলু তুলেছি, এখন ৮-১০ টাকায় বিক্রি করছি। লোকসানে ডুবে আছি।’

কৃষক জিয়ারুল হকের বলেন, ‘দাম এভাবে কমই থাকলে আগামী মৌসুমে অনেকেই আলু চাষ বন্ধ করতে বাধ্য হবেন।’

সংরক্ষণ ব্যয়ের বাড়তি চাপ সামলাতে হিমাগারনির্ভর ব্যবসায়ীরাও বিপাকে। প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) আলু রাখতে খরচ হয়েছে ১,২০০ থেকে ১,৪০০ টাকা। কিন্তু এখন বাজারে একই বস্তা বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৪৫০ থেকে ৬৫০ টাকায়।

উত্তরা হিমাগারের ব্যবস্থাপক নিরদ চন্দ্র রায় জানান, ১ লাখ ১৫ হাজার বস্তার মধ্যে এখনো ৭৫ হাজার বস্তা বের হয়নি। জায়গা খালি না হওয়ায় খরচ আরও বাড়ছে।

বাজার মন্দার মধ্যেই হিমাগারগুলোতে নতুন বিতর্ক দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যানুযায়ী, চুক্তির মেয়াদ ১৫ নভেম্বর শেষ হওয়ার আগেই কয়েকজন হিমাগার মালিক কৃষকের আলু গোপনে বিক্রি করেছেন। বিষয়টি জানতে পেরে অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী চুক্তি ভঙ্গের অভিযোগে হিমাগার মালিকদের কঠোর সতর্কবার্তা দিয়েছেন। চিঠিতে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে কোনো আলু বিক্রি না করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মনজুর রহমান বলেন, খুব শিগগিরই নতুন আলু বাজারে আসবে। দাম কিছুটা সমন্বিত হলে কৃষকরা লোকসান কাটিয়ে উঠতে পারবেন।


সিংগাইরে ইসলামী ব্যাংকে আগুন, পুড়ল ক্ষুদ্রঋণ বিভাগ

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
সিংগাইর (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি

মানিকগঞ্জের সিংগাইরে ইসলামী ব্যাংক সিংগাইর শাখার ক্ষুদ্রঋণদান বিভাগ পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এতে ব্যাংকের আসবাবপত্র, কম্পিউটার, এসি, ডেকারেশনসহ প্রায় ২৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

গত রোববার রাত আড়াইটার দিকে উপজেলার শহিদ রফিক সড়কের দেওয়ান প্লাজায় ইসলামী ব্যাংকে এ ঘটনা ঘটে।

স্থানীয়রা ও ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, গত রোববার রাত আড়াইটার দিকে বিদ্যুতের শর্ক-সার্কিট হয়ে হঠাৎ ব্যাংকের ক্ষুদ্র ঋণদান বিভাগে আগুন লাগে। এ সময় ব্যাংকের সিকিউরিটি গার্ড আগুন দেখে সঙ্গে সঙ্গে ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়। ততক্ষণে আগুনের লেলিহান শিখায় ব্যাংকের আসবাবপত্রসহ ও মূল্যবান জিনিসপত্র পুড়ে ছাই হয়ে যায়। পরে উপজেলা ফায়ার স্টেশনের টিম এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

এ ব্যাপারে উপজেলা ফায়ার স্টেশনের ইনচার্জ মো. মহিবুর রহমান জানান, বিদ্যুতের শর্ক-শার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।


জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল নৃ-গোষ্ঠীর মাঝে ছাগল ও গৃহনির্মাণ সামগ্রী বিতরণ

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
জয়পুরহাট প্রতিনিধি

জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলায় সমতল ভূমিতে বসবাসরত অতি দরিদ্র্য নৃ-গোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে ১১১ জন উপকারভোগীর মাঝে বিনামূল্যে ছাগল ও ছাগলের গৃহনির্মাণ উপকরণ বিতরণ করা হয়েছে।

সোমবার বেলা ১১টায় উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর সমন্বিত প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় প্রাণিসম্পদ হাসপাতাল প্রাঙ্গণে এ বিতরণ কার্যক্রম হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসিফ আল জিনাত। এছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. পলাশ চন্দ্র রায়, উপজেলা অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা মাসউদ পারভেজ প্রমুখ।

জানা যায়, ক্ষেতলাল উপজেলায় সমতল ভূমিতে অতি দরিদ্র্য ৯৩৬ জন নৃ-গোষ্ঠীর বসবাস করে। এদের মধ্যে পর্যায়ক্রমে তাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে ১১১ জন উপকারভোগীর মাঝে বিনামূল্যে ছাগল ও ছাগলের গৃহনির্মাণ উপকরণ বিতরণ করা হয়েছে।

উপকারভোগীদের মধ্যে বিশেষ ক্যাটাগরি তৃতীয় লিঙ্গের উপজেলার রোয়ার গ্রামের আব্দুল হামিদ ছাগল বলেন, ছাগল পেয়ে আমি খুব খুশি। এগুলো লালন-পালন করে পরিবারের আর্থিক অবস্থার উন্নতি করতে পারব।


লেপ-তোশকের ব্যবসা চাঙা

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
হারুনার রশীদ বুলবুল,কেশবপুর (যশোর)

শীতের আগমনী বার্তায় কেশবপুরজুড়ে শুরু হয়েছে লেপ–তোশক মৌসুমের উৎসব। দিনের বেলা রোদ ঝলমলে থাকলেও ভোরের কুয়াশা আর সন্ধ্যার হিমেল হাওয়া জানান দিচ্ছে- শীত আর দরজার বাইরে নয়। আর ঠিক সেই মুহূর্তেই কেশবপুরের লেপ–তোশক কারিগর বা ধুনকদের ব্যস্ততা আকাশছোঁয়া হয়ে উঠেছে। উপজেলার শতাধিক দোকানে এখন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত একটানা কাজ- তুলা ধোয়া, ধুনন, সেলাই, ডিজাইন তৈরি- সব জায়গাতেই কর্মচাঞ্চল্য।

বাজারে ক্রেতার ঢল, অর্ডারের চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে কারিগররা। শীত পুরোপুরি নামার আগেই বেডিং দোকানগুলোতে ভিড় জমাতে শুরু করেছে সাধারণ মানুষ। পাতলা কম্বলে আর শীত মানছে না বলে নতুন লেপ বানাতে অনেকে অর্ডার দিচ্ছেন। কেউ আবার পুরনো লেপ–তোশকে নতুন তুলা ভরছেন বা মেরামত করাচ্ছেন।

দোকানিদের দাবি- এই মৌসুমের শুরুতেই বিক্রি গত বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। শীত আরও বাড়লে অর্ডারের চাপ দ্বিগুণ হবে বলে প্রত্যাশা তাদের। কাপড়-তুলার চড়া দাম কারিগরদের চিন্তায় ফেলেছে। তুলা ও কাপড়ের দাম গত বছরের তুলনায় বেড়েছে ২০–৩০ শতাংশ। বর্তমান বাজারদর শিমুল তুলা: ৬০০–৯০০ টাকা কেজি, কার্পাস তুলা: ৩০০–৩৫০ টাকা কেজি, কালো তুলা: ৭৫–৮০ টাকা কেজি, রাবিশ তুলা: ৬০–৮০ টাকা কেজি, সাদা তুলা: ১০০–১২০ টাকা কেজি প্রতি গজ কাপড়েও বেড়েছে ১০–১৫ টাকা। ফলে একটি মাঝারি লেপ তৈরি করতে খরচ পড়ছে ১,২০০–২,০০০ টাকা, যা গত বছর থেকে প্রায় ৩০০–৪০০ টাকা বেশি। কারিগরদের ভাষায় দাম বাড়ায় লাভ কম, কিন্তু অর্ডার বেশি বলে দিন-রাত পরিশ্রম করতে হচ্ছে। শীতের আমেজে হাট-বাজারে চাঙা লেপতোশকের

কেশবপুরের বিভিন্ন হাট–বাজারে দেখা গেছে কারিগরদের কদর এখন সবচেয়ে বেশি। মানুষ শীতের প্রস্তুতি নিতে দোকানে দোকানে ঘুরছেন। কেউ রোদে পুরনো লেপ দিচ্ছেন, কেউ ধুনন করাচ্ছেন। দোকানিরা বলছেন শীতটা যদি ভালো থাকে, এক মৌসুমের আয়েই সারাবছর সংসার চলে যায়।


banner close