মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫
১৫ পৌষ ১৪৩২

পর্যটন খাতের উন্নয়নে মহাপরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছি : প্রতিমন্ত্রী

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী।
প্রতিবেদক,
প্রকাশিত
প্রতিবেদক,
প্রকাশিত : ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ১৫:৫০

দেশের পর্যটন খাতকে টার্গেট নিয়ে এগিয়ে নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী। তিনি বলেন, আমরা যথাসম্ভব আমাদের টার্গেটে পৌঁছাব। এ জন্য একটা মহাপরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছি।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের পর্যটন ভবনে এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী। বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ক্রিকেট খেলায় দেখা যায়, পাঁচটা বল ভালোভাবে ব্যাটিং করতে পারে না। কিন্তু শেষ বলে ছয় মারে। অনেক সময় মেডেনওভার যায়, যেখানে কোন রানই করতে পারে না। আবার এমনও পরিস্থিতি দাঁড়ায়, ছয় বলে ৩৬ রান করা যায়। সুতরাং আমাদের সামনে সেই সুযোগটা রয়েছে, ছয় বলে ৩৬ রান করার। আমাদের সমস্ত উপকরণ আছে, আমাদের ইচ্ছা আছে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, বিশ্বের অনেক দেশ পর্যটনকে কেন্দ্র করে অনেক দূর এগিয়েছে। আমাদের দেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলায় অনেক ইতিহাস-ঐতিহ্যের আছে। সেগুলো তুলে ধরতে হবে।

পর্যটন দিবসের এই আয়োজন প্রতিটি শহরে ছড়িয়ে দিতে হবে জানিয়ে মাহবুব আলী বলেন, আমার মধ্যে প্রতিভা আছে, সেটাতো সবাইকে জানাতে হবে। নিজের মধ্যে রাখলে তো হবে না। আমাদের দেশে যে সম্পদ আছে, প্রতিভা আছে, এখন সবাইকে তা জানাতে হবে।

আলোচনা সভায় অনেকের বক্তব্যের সূত্র ধরে পর্যটন প্রতিমন্ত্রী বলেন, অনেকেই বলেছেন পর্যটন করপোরেশনে একজন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে দায়িত্ব দেওয়ার জন্য। বিষয়টি আমরা ক্যাবিনেট সেক্রেটারি সঙ্গে কথা বলব। একজন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে পর্যটনে দায়িত্ব দিতে প্রস্তাব দেব।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পর্যটন স্পটে বিক্ষিপ্ত ঘটনা ঘটে, এটা সংশ্লিষ্ট দেশের সংবাদমাধ্যম নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করে না জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি একটা ঘটনা (কক্সবাজার) পর্যটন সেক্টরে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। সাংবাদিকদের কাছে অনুরোধ একটা ঘটনায় যেন পুরো সেক্টরের ক্ষতি না হয়। আমরাও চাই একটি আপরাধও যেন দেশে না হয়।

এ সময় পর্যটন নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে জানিয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোকাম্মেল হোসেন বলেন, আমরা কোভিড পূর্ববর্তী যে অবস্থায় ছিলাম, সেখানে যেতে চাই না। তার চেয়ে অনেক এগিয়ে যেতে চাই। পর্যটনের উন্নয়নে মিডিয়া কিন্তু সরকার ও বেসরকারি খাতের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বেশি।

গণমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণ করে সচিব বলেন, আমি অনুরোধ করব, দেশের স্বার্থে যেন পজিটিভলি খবর প্রকাশ হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী সবার সঙ্গে আলোচনা করে পর্যটন নিয়ে চূড়ান্ত পরিকল্পনা করা হয়েছে। ডিসেম্বরে সেই মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নে যাব।

আলোচনায় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারম্যান আলি কদর, বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহের মো. জাবের প্রমুখ।


দখল হওয়া খাল উদ্ধারের আশ্বাস সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকের

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

খালকে বেহাল না করার প্রতিজ্ঞা করলে পুনরুদ্ধার করে প্রকল্পের মাধ্যমে পরিকল্পনা করে উন্নয়ন সম্ভব বলে জানিয়েছেন সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া। মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) সার্কিট হাউজ মিলনায়তনে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) আয়োজনে কামারখাল সহ সুনামগঞ্জ পৌরসভার খালসমূহ পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নে করণীয় শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এই কথা বলেন। এ সময় আলোচনা সভায় উপস্থিত সকলেই খাল উদ্ধারে প্রশাসনকে সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

বেলার সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়ক শাহ সাহেদার সঞ্চালনায় সংশ্লিষ্টদের পাশাপাশি আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন শিক্ষক, সাংবাদিক, এনজিও প্রতিনিধি, নারী প্রতিনিধি, বিশিষ্টজন সহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। আলোচনা শেষে খাল উদ্ধার ও সংরক্ষণে বক্তারা তাদের সুপারিশ তুলে ধরেন। উল্লেখযোগ্য সুপারিশগুলো হলো, ‘শুধু হুটহাট উচ্ছেদ নয়, উচ্ছেদের পর করণীয় ও বাস্তবায়নের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ। সকল দখলদারদের শাস্তির আওতায় এনে নজির স্থাপন করা। সবকয়টি খালের সীমানা চিহ্নিত করা। পান্ডারখাল বন্ধ করার কারণে সুরমা নদীর পানির চাপ শহরের খালগুলোর ওপর দিয়ে যেত। তাই খালগুলোর উৎসমুখ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। সেগুলো খুলে দেওয়া। দখলকৃত জায়গায় নিম্নবিত্ত পরিবারগুলোকে খাস জমিতে স্থানান্তর করে পুনর্বাসন করা। পৌরসভা কর্তৃক স্থাপনা নির্মাণ অনুমতি দেওয়ার সময় আরও ভালোভাবে যাছাই করা কোথাও খালের জায়গায় কিছু করা হচ্ছে কি না, গুরুত্ব দিয়ে যাচাই করা। উচ্ছেদ করে দুপাশে ব্লক দিয়ে তীর সংরক্ষণ করে ওয়াকওয়ে নির্মাণের মাধ্যমে সৌন্দর্য্যবর্ধন করা সহ নানা সুপারিশ তুলে ধরা হয়।

সুজন সভাপতি নুরুল হক আফিন্দীর সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন, পৌর প্রশাসক ও ডিডিএলজি অসীম কুমার বণিক, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সৃজন সরকার, পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মোহাইমিনুল হক সহ অন্যান্যরা।

আলোচনা সভায় বেলার পক্ষ থেকে ৯টি দাবি উত্থাপিত হয়।

দাবিগুলো হলো, উত্তরা আরপিননগর থেকে জাওয়ার হওয়ার পর্যন্ত কামারখাল সীমানা পুননির্ধারণ ও পুনরুদ্ধার করা। অবৈধ দখলদারদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা করে অবিলম্বে উচ্ছেদ করা। খালের দুই তীর সংরক্ষণের জন্য ব্যবস্থা করা। জলাশয় সম্মুখে সংরক্ষণ ও দূষণমুক্ত রাখতে নির্দিষ্ট স্থানে ময়লা আবর্জনা ফেলার ব্যবস্থা করা। খালের ওপর থেকে গণ-শৌচাগার অপসারণ করা। পৌরসভার অভ্যন্তরে ধোপাখালি খাল, বলাইখালি খাল, তেঘরিয়া খাল, বড়পাড়া খাল ও পুকুর সহ অন্যান্য জলাশয় সংস্কার-সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধার করা। আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করে পৌরসভার জন্য একটি মাস্টার প্ল্যান তৈরি করা।

জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া আরো বলেন, ৩ দিন বৃষ্টি হলে ডিসির বাড়িসহ পানি ওঠে। এই সমস্যা সবার সমস্যা তাই এই সমস্যা সমাধানে সবার উদ্যোগী হতে হবে। মাননীয় পরিবেশ উপদেষ্টাও সুনামগঞ্জে এসে ফসল রক্ষা বাঁধের পর সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়েছেন ৫টি খালের ওপর। আমরা পৌর প্রশাসককে নিয়ে দ্রুতই একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করব এবং যেখানে যেখানে যাওয়া প্রয়োজন আমরা যাব।


খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে দেশজুড়ে শোকের ছায়া, দোয়া-মোনাজাত

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক ও দোয়ার আয়োজন করেছেন দলের নেতাকর্মীরা। বিভিন্ন জেলা থেকে পাঠানো শোকবার্তায় তারা গভীর উদ্বেগ ও শোক প্রকাশ করেছেন। সেই সাথে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করেন তারা। বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে পাঠানো তথ্য অনুযায়ী;

ফেনী প্রতিনিধি জানান : বিএনপি চেয়ারপার্সন ও তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোকে স্তব্ধ তার পৈতৃক ভিটা ফেনীর জনপদ। মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) সকাল ৬টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। দলীয় নেতাকর্মীরা বলেন, ফেনীর সঙ্গে বেগম খালেদা জিয়ার আত্মার সম্পর্ক ছিল। দলীয় যেকোনো কর্মসূচিতে ফেনীতে এলেই তিনি ফুলগাজী সদর ইউনিয়নের দক্ষিণ শ্রীপুরের মজুমদার বাড়ির পৈতৃক বাড়িতে যেতেন। অভিভাবক হারানোর বেদনায় শোকে কাঁদছে সর্বস্তরের মানুষ।

স্থানীয় বিএনপি নেতা বেলাল আহমদ বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে আমরা ফেনীবাসী সবসময় গর্ব করতাম। এ জেলায় ‘ফেনীর মেয়ে খালেদা, গর্ব মোদের আলাদা’ স্লোগানটি রাজনৈতিক অঙ্গনে এক অনন্য মাত্রায় ছিল। তাঁর মৃত্যুতে সবকিছু আজ অবসান ঘটেছে।

ফেনী জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলাল বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে এ পর্যায়ে আর কেউ পৌঁছাতে পারেনি। ফেনীর ট্রাংক রোডে বেগম খালেদা জিয়ার প্রথম কর্মসূচিতে আসার দিনে আমাদের বাড়িতে অবস্থান করেছিল। পরবর্তী একাধিকবার আমাদের বাড়িতে যান তিনি। এ শোক ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে সকলে ঐক্যবদ্ধ থেকে আমরা যেন দেশনেত্রীর অসমাপ্ত কাজগুলো শেষ করতে পারি সেই প্রত্যাশা থাকবে।

এদিকে সকাল থেকেই ফুলগাজীতে তার পৈতৃক বাড়িতে আসতে শুরু করেন স্বজন ও স্থানীয় মানুষ। সেখানে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার আত্মার মাগফেরাত কামনায় কোরআন খতমের আয়োজন করা হয়েছে।

খালেদা জিয়ার চাচাতো ভাই শামীম মজুমদার বলেন, এ বাড়ির সঙ্গে তার অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে। তার মৃত্যুর খবরে সকলে ভেঙে পড়েছে। আমাদের আশা ছিল এবারও তিনি সুস্থ হয়ে আবারও এই বাড়ির আঙিনায় পা রাখবেন। কিন্তু সকালের একটি সংবাদে সবকিছু চিরদিনের জন্য ম্লান হয়ে গেছে।

প্রসঙ্গত, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ফেনী-১ আসন থেকে পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিল। সর্বশেষ ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও এ আসনের প্রার্থী হিসেবে মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) তার পক্ষে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন নেতাকর্মী।

নোয়াখালী প্রতিনিধি জানান : বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল।

এক বার্তায় নোবিপ্রবি উপাচার্য বলেন, 'আপোষহীন দেশনেত্রী, বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। আমি মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। অন্যায়ের বিরুদ্ধে তার সাহসী ও আপোষহীন ভূমিকা এ দেশের মানুষ চিরকাল মনে রাখবে। তাঁর মৃত্যুতে দেশ একজন অকুতোভয় আপোষহীন নেত্রীকে হারালো। দেশের এ ক্রান্তিলগ্নে তার রাজনৈতিক দূরদর্শিতা ও সঠিক দিক নির্দেশনা জাতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিলো। মহান আল্লাহ তাকে জান্নাতের সর্বোচ্চ মর্যাদা দান করুন।’

মাগুরা প্রতিনিধি জানান : সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে মাগুরা জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে দোয়া মাহফিল এবং দরিদ্রদের মধ্যে খাবার বিতরণ করেছে।

দুপুরে মাগুরা ভায়না মোড়ে বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন ও কালো ব্যাজ ধারণ, মহাসড়কের পাশে দাঁড়িয়ে দোয়া এবং দরিদ্রদের মাঝে খাবার বিতরণ করা হয়েছে।

এসব কর্মসূচিতে অংশ নেন মাগুরা জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ও মাগুরা এক আসনের বিএনপি মনোনীত এমপি পদপ্রার্থী আলহাজ মনোয়ার হোসেন খান।

এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন মাগুরা জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহব্বায়ক আকতার হোসেন, যুগ্ম আহব্বায়ক আলমগীর হোসেন, মাগুরা পৌর বিএনপির সভাপতি মাসুদ হাসান খান কিজিল, মাগুরা সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক আহব্বায়ক কুতুবউদ্দিনসহ বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মী।

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি জানান: সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ঠাকুরগাঁওয়ে স্থানে স্থানে দোয়ার আয়োজন করেছে জেলাবাসী। দল-মত নির্বিশেষে রাজনৈতিক নেতা-কর্মী থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে দেখা গেছে শোক ও আবেগঘন পরিবেশ। মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) ভোর থেকে বেগম জিয়ার মৃত্যু সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার পরপরই ঠাকুরগাঁও শহরের বিভিন্ন রাজনৈতিক কার্যালয়ে নেমে আসে নীরবতা। বিএনপির জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কার্যালয়গুলোতে কালো ব্যানার টানানো হয় এবং নেতাকর্মীরা কালো ব্যাজ ধারণ করে শোক প্রকাশ করেন।

নেতাকর্মীরা বলছেন, বেগম খালেদা জিয়া ছিলেন আপসহীন নেতৃত্বের প্রতীক। গণতন্ত্র, ভোটাধিকার ও মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে তিনি আজীবন অটল ছিলেন। তার মৃত্যু জাতির জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।

শুধু রাজনৈতিক অঙ্গনেই নয়, সাধারণ মানুষের মাঝেও দেখা গেছে গভীর শোক। অনেকেই তাকে স্মরণ করছেন একজন সাহসী, দৃঢ়চেতা ও দেশপ্রেমিক নেত্রী হিসেবে।

শহরেরবিভিন্ন এলাকায় সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে বেগম খালেদা জিয়ার অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

ঠাকুরগাঁওয়ের সিনিয়র আইনজীবী মো. বদিউজ্জামান বাদল চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়নি। পর্যাপ্ত চিকিৎসা না পাওয়ায় তিনি আজ চিরবিদায় নিয়েছেন। এতে আমরা গভীরভাবে মর্মাহত ও শোকাহত। মহান আল্লাহর কাছে তার রুহের মাগফিরাত কামনা করছি এবং তাকে জান্নাত নসিব করার পাশাপাশি শোকাহত পরিবারকে ধৈর্য ধারণের শক্তি দান করুক।

এদিকে বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে দলীয়ভাবে ৭ দিনের শোক কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। এ সময় দলের সকল কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন, দোয়া মাহফিল এবং বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. পয়গাম আলী বলেন, বেগম খালেদা জিয়া ছিলেন গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারের প্রতীক। তার মৃত্যুতে আজ বাংলাদেশ একজন অভিভাবককে হারিয়েছে। এতে আমরা গভীরভাবে মর্মাহত ও শোকাহত। মহান আল্লাহর কাছে তার রুহের মাগফিরাত কামনা করছি এবং জান্নাতের উচ্চ মাকাম দান করার জন্য দোয়া করছি।

নড়াইল প্রতিনিধি জানান : বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী, জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে নড়াইল জেলা বিএনপি ও সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীরা গভীর খোকাহত। দলের নড়াইল জেলা কার্যালয়ে মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) কোরআন খানি, দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুরূপ লোহাগড়া ও কালিয়া উপজেলায় দলীয় কার্যালয়ে কোরআনখানি, দোয়ার অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

জেলা বিএনপির সভাপতি ও নড়াইল-১ আসনের বিএনপির মনোনীত প্রার্থী বিশ্বাস জাহাঙ্গীর আলম, দলের সাধারণ সম্পাদক ও নড়াইল-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো.মনিরুল ইসলাম,এই আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী ড.ফরিদুজ্জামান ফরহাদসহ সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

বাকৃবি প্রতিনিধি জানান : বাংলাদেশের তিন বারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ইন্তেকালে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া। মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) দুপুরে বাকৃবির জনসংযোগ ও প্রকাশনা দফতর প্রকাশিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ওই শোকবার্তা জানানো হয়েছে। এসময় তিনি মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

শোক বার্তায় উপাচার্য বলেন, আজ আমরা একজন সৎ, দৃঢ়চেতা ও দেশের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ আপোষহীন নেত্রীকে হারালাম। বেগম খালেদা জিয়া দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তিনি দেশের রাজনীতি ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ইতিহাসে একজন আপসহীন নেতা হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে গেছেন, যা জাতি চিরদিন শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে। মহান আল্লাহ তাআলা তার অশেষ রহমতে মরহুমার সকল ভুলত্রুটি ও বিচ্যুতি ক্ষমা করে দিয়ে তাকে জান্নাতুল ফেরদৌসের অনন্ত শান্তির আশ্রয় দান করুন-আমীন।

ইবি প্রতিনিধি জানান : আপসহীন নেত্রী, বাংলাদেশের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পরবর্তীতে দুপুরে কেন্দ্রীয় মসজিদে তার রুহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া মাহফিল করা হয়। মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ, উপউপাচার্য অধ্যাপক ড. এম. এয়াকুব আলী, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম এবং রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. মো. মনজুরুল হক যৌথ বিবৃতিতে এ শোক জ্ঞাপন জানান। প্রশাসনের পক্ষ থেকে শোকবার্তায় মরহুমার রূহের মাগফিরাত কামনা করে এবং শোকসন্তপ্ত পরিবার ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানিয়ে তারা বলেন, মহান আল্লাহ তাআলা বেগম জিয়াকে তার অশেষ রহমাতে ঢেকে দিন, সকল নেক আমল কবুল করে তাকে জান্নাতুল ফেরদৌসের অনন্ত শান্তির আশ্রয় দান করুন। আল্লাহ তাকে তার প্রিয় বান্দাদের কাতারে স্থান দিন এবং চিরস্থায়ী মর্যাদা দান করুন।

তারা বলেন, আজ আমরা হারালাম স্বৈরতন্ত্র ও ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের ঐক্যের প্রতীক, গণতন্ত্র রক্ষা এবং সাধারণ মানুষের অধিকার আদায়ে আপসহীন, দৃঢ়চেতা ও দেশের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ নেত্রীকে। তাঁর মৃত্যুতে বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসের এক বিশাল অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটল। বারবার কারাবরণ আর নানা প্রতিকূলতার মাঝেও এই মহিয়সী নারী যেভাবে নিজের আদর্শে অবিচল ছিলেন, তা এক বিরল দৃষ্টান্ত। বাংলাদেশের ইতিহাসে এবং দেশপ্রেমিক প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে তিনি চিরকাল বেঁচে থাকবেন।

বাসাইল(টাঙ্গাইল)প্রতিনিধি জানান : বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যতে টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলায় গভীর শোক ও সমবেদনা জানিয়েছে উপজেলা বিএনপি এবং এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনসমূহ। মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) বিকেলে উপজেলা বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে মরহুমার আত্মার মাগফিরাত কামনায় এক বিশেষ দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।

মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) ভোর ৬টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে বাসাইল উপজেলাজুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে। সংবাদ শোনার পর থেকেই দলীয় নেতাকর্মীরা কালো ব্যাজ ধারণ করেন।

দোয়া মাহফিলে উপস্থিত বক্তারা বেগম খালেদা জিয়া'র বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন ও দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে তার আপসহীন সংগ্রামের কথা স্মরণ করেন। তারা বলেন, ‘দেশনেত্রীর মৃত্যুতে জাতি আজ এক মহান অভিভাবককে হারালো। তার এই শূন্যতা পূরণ হবার নয়।’

মাহফিলে বাসাইল উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মামুন আল জাহাঙ্গীর, সাবেক সভাপতি এনামুল করিম অটল, সাধারণ সম্পাদক নূরনবী আবু হায়াত খান নবু, পৌর বিএনপির সভাপতি আক্তারুজ্জামান তুহিন, সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ পিন্টু সহ উপজেলা বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, সেচ্ছাসেবক দল এবং স্থানীয় বিভিন্ন ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও মাহফিলে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা অংশ নেন।

মিলাদ মাহফিল শেষে বেগম খালেদা জিয়া'র রুহের মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত পরিচালনা করা হয়। মোনাজাতে মহান আল্লাহর দরবারে তাঁর জান্নাতুল ফেরদৌস নসিবের জন্য প্রার্থনা করা হয়। একই সঙ্গে তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানানো হয়।

মাধবপুর (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান: বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপার্সন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও দেশবরেণ্য রাজনীতিবিদ বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এবং হবিগঞ্জ-৪ (মাধবপুর-চুনারুঘাট) আসনের বিএনপি মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী সৈয়দ মোঃ ফয়সল।

এক শোকবার্তায় সৈয়দ মোঃ ফয়সল বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে জাতি এক মহীয়সী নারী নেত্রীকে হারাল। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আপসহীন সংগ্রামী নেত্রী। তার রাজনৈতিক জীবন, ত্যাগ ও নেতৃত্ব জাতির ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া শুধু বিএনপির চেয়ারপার্সন নন, তিনি ছিলেন দেশের স্বাধীনতা-উত্তর রাজনৈতিক ইতিহাসের এক অবিচ্ছেদ্য অধ্যায়। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় তার অবদান অবিস্মরণীয়। তার সাহসী নেতৃত্ব ও দৃঢ় অবস্থান ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অনুকরণীয় হয়ে থাকবে।’

শোকবার্তায় সৈয়দ মো. ফয়সল বলেন, ‘একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে তিনি তিনবার দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার শাসনামলে দেশের অবকাঠামো উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও নারীর ক্ষমতায়নে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। বিশেষ করে গ্রামীণ অর্থনীতি ও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে তার অবদান আজও মানুষ স্মরণ করে।’

তিনি আরও উল্লেখ করেন, দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে বেগম খালেদা জিয়া বহু প্রতিকূলতা ও ষড়যন্ত্রের মুখোমুখি হয়েছেন। তবুও তিনি কখনো আপস করেননি। জনগণের অধিকার আদায়ের প্রশ্নে তিনি ছিলেন দৃঢ় ও অবিচল। তার এই আপসহীন নেতৃত্বই তাকে দেশের কোটি মানুষের হৃদয়ে স্থান করে দিয়েছে।’

সৈয়দ মো. ফয়সল জানান, বিএনপি চেয়ারপার্সনের জানাজায় অংশগ্রহণের জন্য তার নির্বাচনী এলাকা হবিগঞ্জ-৪ (মাধবপুর-চুনারুঘাট) থেকে প্রায় দেড় হাজার নেতাকর্মী ঢাকায় যাবেন। তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই সম্মিলিতভাবে আমাদের প্রিয় নেত্রীকে শেষ বিদায় জানাতে ঢাকায় জানাজায় অংশ নেব। এটি শুধু শোক নয়, এটি তার আদর্শের প্রতি আমাদের অঙ্গীকার।’

বগুড়া প্রতিনিধি জানান: সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বগুড়ার গাবতলী উপজেলার বাগবাড়িতে স্বামী শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের বাড়িতে দোয়ার আয়োজন চলছে। কোরান খতম দেওয়া হচ্ছে। বগুড়ার বউ খালেদা জিয়ার তার মৃত্যুতে শোকে স্তব্ধ হয়ে গেছেন সেখানকার মানুষ৷ শুধু বাগবাড়ি এলাকা নয়, পুরো জেলাজুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। তিনবারের সাবেক সফল প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জন্য ওই অঞ্চলের মানুষের আবেগ ও অনুভূতি একান্তই ঘরোয়া৷ তাদের ভোটে নির্বাচিত খালেদা জিয়া দেশে তিনবার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন।

নিজেদের গর্বের ‘ব্যাটার বউ’য়ের মৃত্যুতে স্বজন হারানোর মতোই সমব্যথী বগুড়ার সাধারণ মানুষ।

১৯৬০ সালে দিনাজপুরের মেয়ে খালেদা খানম পুতুল বউ হয়ে আসেন বগুড়ার গাবতলী উপজেলার বাগবাড়ি গ্রামে। স্বামী জিয়াউর রহমান তখন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলোতে জিয়াউর রহমান যখন যুদ্ধের ময়দানে কিংবা পরে তিনি যখন দেশের প্রেসিডেন্ট হন, তখন খালেদা জিয়া সব সময়ই থেকেছেন এমন বাঙালি বাড়ির ঘর-সংসার আর সন্তানদের সামলানো গৃহবধূ হিসেবেই।

স্বামী যখন দেশ আর দেশের মানুষ নিয়ে ব্যস্ততায়, তার ব্যস্ততার কেন্দ্রবিন্দু তখন কেবলই দুই ছেলে আর তাদের সংসার।

১৯৮১ সালে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের শিকার হলে গৃহবধূ খালেদা জিয়াকে দেশ ও দলের ক্রান্তিলগ্নে হাল ধরতে হয় বিএনপির। দলীয় প্রধানের মৃত্যুর পর এক হাতে দলকে সামলে, আরেক হাতে স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলন সংগঠিত করে আশি ও নব্বই দশকের সন্ধিক্ষণে আস্থাশীল জাতীয় নেতায় রূপ নেন খালেদা জিয়া।

১৯৯১ সালে বগুড়া থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর দেশের প্রথম এবং মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন খালেদা জিয়া।

পরে আরও দুই মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বগুড়ার পুত্রবধূ খালেদা জিয়া। ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো বগুড়ার দুটি সংসদীয় আসন থেকে প্রার্থী হন খালেদা জিয়া। ওই নির্বাচন থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত তিনি বগুড়া থেকে যতগুলো নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন, প্রতিবারই পুত্রবধূ খালেদা জিয়াকে আঞ্চলিক ভাষায় ‘ব্যাটার বউ’ ভোটে দাঁড়িয়েছে, তাকে জেতাতে হবে- এমন প্রত্যয় নিয়ে বাক্সভর্তি ভোট দিয়েছেন বগুড়ার মানুষ।

এদিকে খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বগুড়া শহরের নবাববাড়ি সড়কে জেলা বিএনপির কার্যালয়ে নেতাকর্মীদের জরুরিভাবে আসার আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি৷

৪৩ বছর ধরে দল, দেশ এবং দেশের মানুষের স্বার্থে অবিচল-আপসহীন থাকা নেত্রীর ওপর বিগত দেড় দশক ধরে চলা অবর্ণনীয় নিপীড়নের কথা বলতে গিয়ে অশ্রুসজল হয়ে পড়েছেন স্থানীয় বিএনপি নেতারা।

বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশাহ জানান, নেতাকর্মীরা আসার পর পরবর্তী কর্মসূচির সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

খুলনা সংবাদদাতা জানান: সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন খুলনার মহানগর ও জেলা বিএনপির নেতারা। মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) সকাল থেকেই নগর ও জেলা বিএনপি কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে। কালো ব্যাচ ধারন করেছেন দলীয় নেতা-কর্মীরা। এছাড়াও বিএনপি কার্যালয়ে কোরআন তেলাওয়াত, দোয়া ও শোক সভার আয়োজন করা হয়। মহানগর বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট শফিকুল আলম মনা বলেন, আজ জাতি এক অভিভাবক হারিয়েছে। জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে বেগম খালেদা জিয়াকে প্রয়োজন ছিলো। বিগত সরকার তাকে নির্যাতন করে জেলে দিয়েছিলো। সেখানে বিষ দিয়ে তাকে ধিরে ধিরে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।

খুলনা-২ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ও সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, ৪৩ বছর আগে শহীদ জিয়ার শাহাদাত বরণের পর একজন বিধবা নারী বেগম খালেদা জিয়া দুই সন্তানের হাত ধরে ঘর থেকে বের হয়েছিলেন। বিএনপির হাল ধরে ছিলেন। তিনবারের সরকার পরিচালনায় তার দক্ষতা তাকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। তার মৃত্যুতে দেশের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল।

এদিকে, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ৭ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে খুলনা নগর ও জেলা বিএনপি। এ কর্মসূচি উপলক্ষে ৭ দিন জেলা সংঠনের সকল নেতাকর্মীরা কালোব্যাজ ধারন করবেন। দলীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। এছাড়াও কালো পতাকা উত্তোলন করা হবে।

গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলনের আপসহীন নেত্রীর মৃত্যুতে গভীর শোক, শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা ও মরহুমার রুহের মাগফেরাত কামনা করেছেন খুলনা-২ আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু।

এছাড়াও শোক জানিয়েছেন খুলনা মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারন সম্পাদক ও সাবেক মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মনিরুজ্জামান মনি, মীর কায়সেদ আলী, শেখ মোশাররফ হোসেন, জাফরউল্লাহ খান সাচ্চু, জলিল খান কালাম, অ্যাডভোকেট ফজলে হালিম লিটন, অধ্যক্ষ তারিকুল ইসলাম, অধ্যাপক আরিফুজ্জামান অপু, মাহবুব কায়সার, নজরুল ইসলাম বাবু, আসাদুজ্জামান মুরাদ, ইকবাল হোসেন খোকন প্রমুখ। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন খুলনা প্রেসক্লাব ও মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন খুলনার নেতৃবৃন্দ।

দিনাজপুর প্রতিনিধি জানান : দিনাজপুরের কন্যা, দিনাজপুরেই বেড়ে ওঠা। এই জেলার মানুষের প্রতি ছিল অপরিসীম ভালোবাসা। সেই প্রিয় নেত্রীকে হারিয়ে শোকে কাতর জেলার মানুষ। এই জনপদে কেটেছে বিএনপি চেয়ারপারসন ও তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার শৈশব-কৈশোর। পড়াশোনাও এই জেলাতে। উত্তরের জেলা দিনাজপুরের মানুষ ‘খালেদা জিয়া’ হিসেবে নয়, তাকে ‘খালেদা খানম পুতুল’ নামেই বেশি চেনেন। সেই পুতুলকে হারিয়ে শোকে কাতর দিনাজপুরবাসী স্মৃতিচারণ করে চোখের জল মুছছে বারবার। শোকে কাতর হয়ে পড়েছেন দিনাজপুরের সব শ্রেণির মানুষ ও দলীয় নেতাকর্মীরা। তারা বলছেন, খালেদা জিয়ার মহাপ্রয়াণে দেশের তো বটেই, দিনাজপুরেরও অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল।

মৃত্যুর পরপরই সকাল থেকেই দলীয় কার্যালয়ে কোরআন তিলাওয়াতের আয়োজন করা হয়। তার বিদেহি আত্মার মাগফিরাত কামনা করে, নেতারা তার যে স্বপ্ন তা পূরণ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। খালেদা জিয়া দিনাজপুর-৩ আসন থেকে এবার প্রার্থী হয়েছিলেন। এ নিয়ে ছিল নেতাকর্মীদের মধ্যে ছিল উচ্ছ্বাস। তবে তার মৃত্যুর সংবাদে তা নিমিষেই ম্লান হয়ে গেছে।

জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট মোফাজ্জল হোসেন দুলাল বলেন, ‘খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে দিনাজপুরের তথা বাংলাদেশের যে ক্ষতি হলো তা কখনোই পূরণ হওয়ার নয়। তিনি এই আসন থেকে নির্বাচন করবেন এবং ব্যাপক উন্নয়ন করবেন এমন আশা ছিল আমাদের। কিন্তু তার মৃত্যুতে আমাদের শোকের অন্ত নেই। আল্লাহ তাকে জান্নাতবাসী করুন।’

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্রগ্রাম : খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ও মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন। এক শোকবার্তায় চসিক মেয়র বলেন, বেগম খালেদা জিয়া ছিলেন গণতান্ত্রিক রাজনীতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। তিনি আজীবন দেশের মানুষের ভোটের অধিকার, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য আপসহীন সংগ্রাম করে গেছেন। দীর্ঘদিন দেশ ও জাতির জন্য নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং গণতন্ত্র, সার্বভৌমত্ব ও জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। শুধু বিএনপির নেত্রীই ছিলেন না, ছিলেন ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। তার মৃত্যুতে দেশ একজন মহান অভিভাবক ও অভিজ্ঞ রাষ্ট্রনায়ককে হারালো। আমি গভীরভাবে শোকাহত ও মর্মাহত।

চাঁদপুর প্রতিনিধি জানান : খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন চাঁদপুরের সব পর্যায়ের বিএনপি নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। জেলা বিএনপি কার্যালয়সহ জেলার বিভিন্ন স্থানে কোরআন তিলাওয়াত, দোয়া-মাহফিল ও শোক বইয়ে স্বাক্ষরসহ অন্যান্য কর্মসূচি পালন করা হয়।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সভাপতি ও চাঁদপুর-৩ আসনের বিএনপি প্রার্থী শেখ ফরিদ আহমেদ মানিকসহ জেলা বিএনপি ও অঙ্গ, সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তারা বলেন, আপসহীন নেত্রী খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে দেশ একজন অভিভাবককে হারিয়েছে। দেশের এই সংকটময় মুহূর্তে খালেদা জিয়ার প্রয়োজন ছিল অত্যন্ত বেশি।

শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক বলেন, ‘আপসহীন, নির্ভীক রাজনীতিক ও দেশপ্রেমিক নেতা ছিলেন তিনি। দেশ একজন অভিভাবককে হারিয়েছে। এই শূন্যতা সহজে পূরণ হবে না।’

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান : খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছে সিরাজগঞ্জ প্রেসক্লাবের কার্যনির্বাহী কমিটি। সকালে প্রেসক্লাবের দফতর সম্পাদক এনামুল হক স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে শোক জানানো হয়।

সিরাজগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি হারুন আর রশিদ খান হাসান ও সাধারণ সম্পাদক শরীফুল ইসলাম ইন্না জানান, খালেদা জিয়ার মতো নেত্রী এই দেশে আর আসবে না। তিনি দেশ ও দেশের মানুষের কথা চিন্তা করে কাজ করে গেছেন। বাংলাদেশ যতদিন থাকবে মানুষ খালেদা জিয়াকে মনে রাখবে। আজ একজন নক্ষত্রের বিদায় হলো। তার মৃত্যুতে আমরা গভীর শোক প্রকাশ করছি। মহান আল্লাহ যেন তাকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করেন এই দোয়া করি।

রাঙামাটি প্রতিনিধি জানান : খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোকে স্তব্ধ রাঙামাটি বিএনপি পরিবার। সকালে মৃত্যুর খরব ছড়িয়ে পড়তেই শত শত নেতাকর্মী ভিড় করেন কাঠালতলীর দলীয় কার্যালয়ে। দলীয় কার্যালয়ে উত্তোলন করা হয়েছে কালো পতাকা। নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষকেও কালো ব্যাচ ধারণ করতে দেখা গেছে। সাত দিনের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির পাশাপাশি জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে সব মসজিদে বাদ আসর দোয়া ও অন্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশিদ।

জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও সাবেক মেয়র সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘দলের প্রয়োজনে রাজনীতি শুরু করেছিলেন খালেদা জিয়া। হয়ে উঠেছে দেশের নেত্রী। বিভিন্ন সময়ে গণতন্ত্রের জন্য লড়ে গেছেন। রাজনীতিতে যে শূন্যতা তৈরি হয়েছে তার কখনও পূরণ হবে না।’

বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির ধর্ম বিষয়ক সহ-সম্পাদক ও রাঙামাটি আসেনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী দীপেন দেওয়ান বলেন, ‘আমি তার হাত ধরে বিএনপির রাজনীতি প্রবেশ করি। রাজনীতির কঠিন সময়ে দেশ ও দলের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। গণতন্ত্রের আন্দোলনের জন্য জীবনের কঠিন সময় পার করেছিলেন। কিন্তু ভালো সময় দেখে যেতে পারলেন না।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি জানান: খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির উদ্যাগে আলোচনা সভা, কোরআন খতম ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। বেলা ১১টায় শহরের পুনিয়াউট এলাকায় জেলা বিএনপির সভাপতির কার্যালয়ে এ কর্মসূচি পালিত হয়।

বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সভাপতি খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামল বলেন, ‘বেগম জিয়া গণতন্ত্রের সংকটকালে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। সংগ্রামী নেত্রীর চলে যাওয়া দেশের রাজনৈতিক অধ্যায়ের এক অপূরণীয় ক্ষতি।’

যশোর প্রতিনিধি জানান : মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টা। যশোর শহরের লালদিঘীর পাড় জেলা বিএনপির কার্যালয় এলাকাজুড়ে শত শত মানুষ। তবে আর দশটা দিনের মতো এদিন স্লোগানে স্লোগানে উত্তাল কিংবা মঞ্চে কেউ বক্তৃতায় রাজনীতিক উত্তাপ ছড়াচ্ছিলেন না। দাঁড়িয়ে থাকা মানুষদের চোখেমুখে ছিল গভীর শোকের ছায়া। কেউ চুপচাপ দাঁড়িয়ে, কেউ চোখ মুছছিলেন। এই শোক, এই চুপচাপ খালেদা জিয়ার মৃত্যুর খবরে। যশোরের বিএনপির পার্টি অফিসে নেতাকর্মী, সবাই মিলিয়ে জায়গাটি পরিণত হয় শোক, নীরবতা ও আবেগের এক প্রাঙ্গণে।

দলের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক নার্গিস বেগমসহ দলীয় নেতাকর্মীরা কালো ব্যাচ ধারণ করেন। এর আগে জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাড. সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু এবং সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খোকন দলীয় এবং কালো পতাকা উত্তোলন করেন। সেখানে শোক বই রাখা হয়েছে। অধ্যাপক নার্গিস বেগম নিজে শোক বইয়ে স্বাক্ষর করেন। এছাড়া জেলা বিএনপি অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ শোক বইয়ে স্বাক্ষর করেন।

জেলা শহরের পাশাপাশি উপজেলার বিভিন্ন পাড়া-মহল্লা ও গ্রামে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে দোয়া ও বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে। মসজিদে মিলাদ মাহফিল ও দোয়া অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে নেতাকর্মীরা প্রয়াত নেত্রীর রুহের মাগফিরাত কামনা করেন। তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত।

জেলা বিএনপির সভাপতি সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু বলেন, ‘আজ আমরা আমাদের রাজনৈতিক অভিভাবককে হারিয়েছি। তিনি কখনও অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেননি। তার শূন্যতা কোনোভাবেই পূরণ হওয়ার নয়। এটি দলের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। এই নেত্রীকে যারা দীর্ঘদিন কষ্ট দিয়েছে, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার করা হয়েছে তাদের বিচার আল্লাহ করবেন। ইতিহাস তাদের কখনোই ক্ষমা করবে না।’

জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খোকন বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া শুধু বিএনপির নেত্রী নন, ছিলেন গণতন্ত্রের প্রতীক। আজ আমরা গভীরভাবে শোকাহত।’

জামালপুর প্রতিনিধি জানান : খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে জামালপুরে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিকালে শহরের স্টেশন রোডে জেলা বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে এ দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়।

জামালপুর-৫ আসনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. ওয়ারেছ আলী মামুন বলেন, ‘খালেদা জিয়া কখনও আপস করেননি। তার মৃত্যু বাংলাদেশ ও রাজনীতির জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। আজ দলীয় নেতাকর্মীসহ দেশের সাধারণ মানুষ গভীরভাবে শোকাহত।’


নিস্তব্ধ এভারকেয়ার, অশ্রুসজল নেতা-কর্মী আপসহীন নেত্রীর জন্য প্রার্থনা

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপির চেয়ারপারসন ও তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) সকাল ৬টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তার চিরবিদায়ের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে হাসপাতালের সামনে জড়ো হতে থাকেন দলের হাজার হাজার শোকাহত নেতা-কর্মী। তাদের সবার চোখে-মুখে প্রিয় নেত্রীকে হারানোর বেদনা। গোটা হাসপাতাল প্রাঙ্গণে এক ধরনের নিস্তব্ধতা ও শূন্যতা বিরাজ করছে।

মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) দেখা যায়, হাসপাতালের প্রধান ফটকে পুলিশ, বিজিবি ও র‍্যাব সদস্যরা মোতায়েন রয়েছেন। অন্য রোগীদের যাতায়াতে যেন বিঘ্ন না ঘটে, সে জন্য নির্দিষ্ট দূরত্বে নেতা-কর্মীদের অবস্থান নিশ্চিত করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সকালের দিকে শোকাহত মানুষের ভিড় বেশি থাকলেও দুপুরের পর উপস্থিতির সংখ্যা কিছুটা কমে আসে।

আজ বুধবার বেলা ১১টার দিকে বেগম খালেদা জিয়ার মরদেহ জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে নেওয়া হবে, এর আগে হাসপাতালের সামনে তাকে দেখার সুযোগ নেই- এমন খবর জানার পরও দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন সাধারণ মানুষ ও নেতা-কর্মীরা। বিশেষ করে প্রবীণ নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। অশ্রুসিক্ত চোখে সবাই তাদের প্রিয় নেত্রীর আত্মার মাগফিরাত কামনায় প্রার্থনা করছেন।

ঢাকার পার্শ্ববর্তী রূপগঞ্জ থেকে আসা বিএনপি সমর্থক সৈয়দ মোহাম্মদ আলী শোকার্ত কণ্ঠে বলেন, ‘খালেদা জিয়া আমাদের আপসহীন নেত্রী, গণতন্ত্রের মা। রাজনীতির এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। আল্লাহ তাকে জান্নাত নসিব করুন। বাংলাদেশের জন্য তাকে আরও দীর্ঘ সময় প্রয়োজন ছিল।’

বাড্ডার বেরাইদের মোড়লপাড়া থেকে আসা মোহাম্মদ নাসির বলেন, ‘সকালে নেত্রীর ইন্তেকালের খবর শুনেই এখানে ছুটে এসেছি। মনটা খুব ভারাক্রান্ত। দীর্ঘ সময় নেত্রী গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছেন, কারাবরণ করেছেন। অথচ যখন তিনি সবকিছু থেকে মুক্ত হলেন, তখনই না ফেরার দেশে চলে গেলেন। তার জন্য মন থেকে দোয়া করি।’

গত ২৩ নভেম্বর থেকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন খালেদা জিয়া। তার অবস্থা ছিল অত্যন্ত জটিল এবং তিনি সংকটময় মুহূর্ত পার করছিলেন বলে জানিয়েছিলেন তার চিকিৎসকরা।


শিক্ষক সংকটে পদ্মার চরের ২৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়

দৌলতপুরে দীর্ঘদিন ধরে ৬৫টি শিক্ষকের পদ শূন্য
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি

নতুন বছর মানেই নতুন বইয়ের উচ্ছ্বাস। আর মাত্র কয়েক দিনের মধ্যেই বছরের প্রথম দিনে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার পদ্মার চরের ২৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাড়ে পাঁচ হাজারের বেশি শিক্ষার্থীর হাতে পৌঁছাবে নতুন বই। ঝকঝকে বইয়ের গন্ধে মুখর হবে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ। তবে সেই আনন্দের মাঝেই দীর্ঘদিনের তীব্র শিক্ষক সংকট চরের শিশুদের শিক্ষাজীবনে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, দৌলতপুর উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ও চিলমারী ইউনিয়নের পদ্মার চরের ২৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনুমোদিত শিক্ষক পদ ১৫০টি। বর্তমানে সেখানে কর্মরত আছেন মাত্র ৮৫ জন। ফলে দীর্ঘদিন ধরে ৬৫টি শিক্ষক পদ শূন্য রয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা ও বিদ্যালয় সূত্র জানায়, দুর্গম চরাঞ্চলে নতুন শিক্ষক নিয়োগ পেলেও যাতায়াত ও আবাসন সমস্যা দেখিয়ে অনেকেই বেশি দিন সেখানে থাকতে চান না। অল্প সময়ের মধ্যেই নানা সুপারিশে তারা সুবিধাজনক এলাকায় বদলি হয়ে যান। প্রতি বছর শিক্ষক নিয়োগ হলেও দুর্গম চরাঞ্চলে শিক্ষক ধরে রাখার জন্য কার্যকর নীতিমালা বা প্রণোদনা না থাকায় সংকটটি বছরের পর বছর রয়ে যাচ্ছে।

সরেজমিন চরাঞ্চলের বিদ্যালয়গুলো ঘুরে দেখা গেছে, অনেক স্কুলে প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ছয়টি শ্রেণির বিপরীতে মাত্র দুই থেকে তিনজন শিক্ষক রয়েছেন। কোথাও আবার একজন শিক্ষকই পুরো বিদ্যালয়ের পাঠদান সামলাচ্ছেন। এক শিক্ষকের পক্ষে একসঙ্গে একাধিক শ্রেণিতে পাঠদান কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এর পাশাপাশি কর্মরত শিক্ষকদের একটি বড় অংশ ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করায় দাপ্তরিক কাজেই তাদের বেশির ভাগ সময় ব্যয় হচ্ছে।

চিলমারী ইউনিয়নের খারিজাথাক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জসিম উদ্দিন বলেন, ‘ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকদের প্রায়ই উপজেলা শিক্ষা অফিসে যেতে হয়। দুর্গম চরাঞ্চল পাড়ি দিয়ে যাওয়া-আসাতেই পুরো দিন শেষ হয়ে যায়। ফলে ওই দিনগুলোতে অনেক বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যত বন্ধ থাকে।’

চর থেকে উপজেলা সদরে একজন শিক্ষকের যাতায়াতে গড়ে ৪ ঘণ্টার বেশি সময় লাগে। এতে খরচ হয় প্রায় ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। বর্ষা মৌসুমে নৌকাই একমাত্র ভরসা, আর শুষ্ক মৌসুমে মোটরসাইকেলে চলাচল করতে হয়। নারী শিক্ষকদের জন্য এই যাতায়াত আরও কষ্টসাধ্য হয়ে ওঠে।

পূর্ব খারিজাথাক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পারভিনা আক্তার জানান, তিনি ১৮ বছর ধরে চরাঞ্চলে শিক্ষকতা করছেন। বর্তমানে তার বিদ্যালয়ে ৩৬৫ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে পাঠদান করছেন মাত্র তিনজন শিক্ষক। প্রতিটি শ্রেণিতে গড়ে ৬০ থেকে ৬৫ জন শিক্ষার্থী। তিনি দাপ্তরিক কাজে বাইরে থাকলে মাত্র দুজন শিক্ষক দিয়ে পুরো বিদ্যালয়ের পাঠদান চালাতে হয়। আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ‘এই অবস্থায় শিক্ষার্থীদের কী শিক্ষা দিচ্ছি—সেটাই বড় প্রশ্ন। বহুবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি, কিন্তু কোনো স্থায়ী সমাধান আসেনি।

রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের সোনাতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির এক শিক্ষার্থী জানায়, শিক্ষক কম থাকায় অনেক সময় ক্লাস হয় না। তার ভাষ্য, ‘আমরা স্কুলে গিয়ে বসে থাকি। আবার অন্য ক্লাসের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একসঙ্গে বসানো হয়। অভিভাবকদের অভিযোগ আরও তীব্র। আব্দুর রাজ্জাক নামের এক অভিভাবক বলেন, ‘আমাদের সন্তানের হাতে নতুন বই আছে, কিন্তু মাথার ওপর শিক্ষক নেই। শহরের স্কুলে যেখানে শিক্ষক ভরপুর, সেখানে চরের শিশুদের জন্য কেন স্থায়ী ব্যবস্থা নেই।’

চরের অভিভাবকদের অভিযোগ, শিক্ষক সংকটের কারণে তাদের সন্তানরা শহরের শিক্ষার্থীদের তুলনায় পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়ছে। নিয়মিত পাঠদান না হওয়ায় শিক্ষার মান দুর্বল হচ্ছে। তবুও অনেক শিক্ষার্থী একের পর এক শ্রেণি পেরিয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে গিয়ে পড়ালেখাই ছেড়ে দিচ্ছে।

দৌলতপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মুস্তাক আহম্মেদ বলেন, ‘নতুন শিক্ষক এলেও তারা নানা অজুহাতে চরাঞ্চলে থাকতে চান না। বিভিন্ন সুপারিশে সুবিধাজনক এলাকায় চলে যান। জানুয়ারিতে নতুন শিক্ষক নিয়োগের কথা রয়েছে। আমরা চাহিদা পাঠিয়েছি। নতুন শিক্ষক পেলে কিছুটা হলেও সংকট কাটবে বলে আশা করছি।’

তবে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, চরের দায়িত্বে থাকা অনেক শিক্ষক স্বেচ্ছায় সুবিধাজনক স্থানে বদলির আবেদন করেছেন। নতুন শিক্ষক নিয়োগের পর তারা সেখান থেকে চলে আসবেন। ফলে সংকট দ্রুত কাটার কোনো সম্ভাবনা দেখছেন না সংশ্লিষ্টরা।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের তথ্যানুযায়ী, দৌলতপুর উপজেলায় মোট ২১৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৮২টিতে প্রধান শিক্ষক নেই। এ ছাড়া ১ হাজার ১৬৬টি সহকারী শিক্ষক পদের বিপরীতে ১৩২টি পদ শূন্য রয়েছে, যার সিংহভাগই পদ্মার চরাঞ্চলে। নতুন বছরে উপজেলায় প্রায় ৪০ হাজার প্রাথমিক শিক্ষার্থী নতুন বই পাবে।

নতুন বইয়ের আনন্দের মাঝেই শিক্ষক সংকটের এই দীর্ঘশ্বাস পদ্মার চরের হাজারও শিশুর শিক্ষা ভবিষ্যৎকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে-এমনটাই মনে করছেন সচেতন মহল।


মান্দায় স্কুলের অদূরে ইটভাটা, স্বাস্থ্যঝুঁকিতে শিক্ষার্থীরা

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
মান্দা (নওগাঁ) প্রতিনিধি

নওগাঁর মান্দায় দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অদূরে গড়ে তোলা হয়েছে ইটভাটা। ইতোমধ্যে ভাটায় নতুন ইট পোড়ানোর জন্য দেওয়া হয়েছে আগুন। কয়লার সাথে ভাটায় মজুত করা হচ্ছে কাঠের খড়ি। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়বে দুটি বিদ্যালয়ের প্রায় ৫ শতাধিক শিক্ষার্থী। প্রভাবখাটিয়ে ও প্রশাসনের কিছু কর্তাদের ম্যানেজ করে চলেছে এই ইটভাটা এমন অভিযোগ উঠেছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই ফিক্সট চিমনির সাহায্যে দীর্ঘদিন ধরে এ ভাটায় ইট পোড়ানো হলেও কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। গত রোববার স্কুলের পাশেই ভাটায় ইট পোড়াতে দেখা গেছে।

সরেজমিনে গেলে দেখা গেছে, নওগাঁ-রাজশাহী মহাসড়কের পাশে মান্দা উপজেলার সাবাইহাট এলাকায় ঝাঁঝরের মোড়ে ভাটাটি স্থাপন করেছেন গোসাইপুর গ্রামের কার্তিক চন্দ্র মণ্ডল নামে প্রভাবশালী এক ব্যক্তি। ভাটাটির নাম দেওয়া হয়েছে যমুনা ব্রিকস। এ ভাটার মাত্র ২৫০ মিটার দূরে রয়েছে একরুখী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একরুখী উচ্চবিদ্যালয়। রয়েছে দুটি আম বাগান ও আবাসিক এলাকা। ভাটায় ইট পোড়ানো শুরু হলেই এ দুটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা মাঝে মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়ে। এবারও স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে শিক্ষার্থীরা।

একরুখী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম প্রকাশ না শর্তে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী জানায়, ‘গত বছর ইটভাটা চালু হওয়ার পর হঠাৎ একদিন আমার বন্ধু অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে তাকে ডাক্তারের নিকট গিয়ে চিকিৎসা নিতে হয়েছে।

একরুখী উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানায়, ইট পোড়ানো শুরু হলে শ্বাসকষ্টের সমস্যায় ভুগতে থাকে তাদের অনেক বন্ধু। ভাটা চললে আমাদের ক্লাস করতে সমস্যা হয়। মাথা ব্যথা করে। এ ছাড়া স্কুল মাঠের আমগাছগুলোর ফল নষ্ট হয়ে যায়। পরিপক্ব হওয়ার আগেই পচন ধরে গাছ থেকে ঝরে পড়ে আম।

ইট প্রস্তুত ও পোড়ানো পরিবেশ অধিদপ্তর আইনে (২০১৩-এর সংশোধনী) উল্লেখ রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বাগান ও আবাসিক এলাকার ১ কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। এ আইনের তোয়াক্কা না করেই দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাত্র ২৫০ মিটার দূরে ভাটাটি স্থাপন ও দীর্ঘ ২০ বছর ধরে ইটপোড়ানোর কাজ করে আসছেন কার্তিক চন্দ্র। কোন খুঁটির জোরে ভাটা মালিক আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে ইটপোড়ানোর কাজ করে আসছেন এনিয়ে স্থানীয়দের মাঝে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।

তেঁতুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুল ইসলাম বলেন, ‘ইটভাটার বিষয়ে তেমন কোনো অভিযোগ পাইনি । কিছুদিন আগে যমুনা ব্রিকস নামের ইটভাটার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে গেছে।’

ভাটামালিক কার্তিক চন্দ্র মণ্ডল জানান, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিয়েই ভাটার কার্যক্রম পরিচালনা করছি। এ ছাড়া সবাই যেভাবে অফিস ম্যানেজ করে চলছে সেভাবেই আমিও ভাটা চালাচ্ছি। তিনি বলেন, ‘থুতু উপরে ফেললে নিজের গায়ে পড়বে। সামনে বছর থেকে আর ব্যবসা করব না।’ এ বছর নিউজ না করার জন্য বলেন তিনি।

একরুখী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেজাউল ইসলাম জানান, ৭ বছর হয়েছে আমি এ প্রতিষ্ঠানে যোগদান করেছি। এর অনেক আগে থেকেই বিদ্যালয়ের পাশে ইটভাটাটি রয়েছে। ইটভাটা থেকে যে কালো ধোঁয়া নির্গত হয় তা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক। এতে বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা মাঝে মধ্যেই শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়।

মান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আখতার জাহান সাথী বলেন, ‘যমুনা ব্রিকসের মালিক কার্তিক চন্দ্রের ইটপ্রস্তুত ও পোড়ানোসহ পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র রয়েছে কি না সেটি আমার জানা নেই। এ বিষয়ে তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ ছাড়া লাইসেন্সবিহীন প্রত্যেকটি ইটভাটার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’


বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে অপূরণীয় ক্ষতি: দুলু

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নাটোর প্রতিনিধি

শত বছরেও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মতো ব্যক্তিত্ববান নারীর জন্ম হবে না। তার মৃত্যুতে দেশের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল। আপসহীন নেত্রী খালেদা জিয়া বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও ঐক্যের প্রতীক বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু।

মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) সকালে দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মৃত্যু সংবাদ শুনে নাটোরের আলাইপুরে জেলা বিএনপি কার্যালয়ের সামনে জমায়েত হন নেতা-কর্মীরা। এ সময় বিএনপির কেন্দ্রীয় এই নেতা আরও বলেন, খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বিএনপি নেতা-কর্মীরা শুধু তাদের অভিভাবককেই হারায়নি। দেশের মানুষ তাদের ঐক্য আর ভরসার প্রতীককে হারিয়েছেন। শত বছরেরও তার এই শূন্যস্থান পূরণ সম্ভব নয়।

তিনি বলেন, যারা বিনাচিকিৎসায় খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে তাদের নামও ইতিহাসে ঘৃণাভরে লেখা থাকবে। খালেদা জিয়ার আত্মার মাগফিরাত কামনায় দেশবাসীর কাছে দোয়া চান বিএনপির এই নেতা।


জকসু নির্বাচন স্থগিতের প্রতিবাদে উত্তাল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়: উপাচার্য ভবন ঘেরাও

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচন স্থগিতের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আজ মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) সকাল থেকেই উত্তাল হয়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। প্রশাসনের আকস্মিক এই ঘোষণার প্রতিবাদে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন এবং সকাল নয়টার দিকে উপাচার্য ভবন ঘেরাও করেন। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা নির্বাচনের দাবিতে বিভিন্ন প্রতিবাদী স্লোগান দিতে থাকেন এবং প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তকে ‘অবৈধ’ আখ্যা দিয়ে তা দ্রুত প্রত্যাহারের দাবি জানান।

জানা গেছে, আজ সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জরুরি সিন্ডিকেট সভায় জকসু নির্বাচন স্থগিত করার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম সিন্ডিকেটের এই সিদ্ধান্তের কথা নিশ্চিত করার পরপরই ক্যাম্পাসে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা উপাচার্য ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় তাঁরা ‘প্রশাসনের কালো হাত, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’ এবং ‘অবৈধ সিদ্ধান্ত মানি না, মানবো না’—এমন সব স্লোগান দিয়ে পুরো এলাকা প্রকম্পিত করে তোলেন।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর নির্বাচনের প্রস্তুতি যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে ছিল, ঠিক সেই মুহূর্তে কোনো স্পষ্ট কারণ ছাড়াই নির্বাচন স্থগিত করা সাধারণ শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক অধিকার ক্ষুণ্ন করার শামিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ক্যাম্পাস ও এর আশপাশের এলাকায় অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তবে শিক্ষার্থীরা তাঁদের দাবিতে অনড় রয়েছেন এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে গ্রহণযোগ্য কোনো ব্যাখ্যা বা আশ্বাস না পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসজুড়ে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে।


তীব্র শীতে গৃহবন্দি দেশের মানুষ, ঠাকুরগাঁওয়ে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড

* ঠাকুরগাঁওয়ে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০.৪ রেকর্ড * নিকলীতে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

সারাদেশে জেঁকে বসেছে শীত। তাপমাত্রা কমে যাওয়ার পাশাপাশি ঘন কুয়াশা ও হিমেল বাতাসে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে কিশোরগঞ্জের নিকলীতে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। একই সময়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ঘন কুয়াশা ও শুষ্ক আবহাওয়া বিরাজ করছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত;

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি জানান: ঠাকুরগাঁওয়ে জেঁকে বসেছে শীত। দুদিন ধরে সূর্যের দেখা মিলছে না। ঘন কুয়াশা ও হিমেল হাওয়ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে স্বাভাবিক জনজীবন। গতকাল সোমবার সকালে জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।

টানা শীতে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ। দিনমজুর ও নিম্ন আয়ের শ্রমজীবীরা। শীতের কারণে কাজের সুযোগ কমে যাওয়ায় অনেকে পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে। শীত থেকে বাঁচতে আগুন জ্বালিয়ে কিংবা মোটা কাপড় পরে কোনোরকমে দিন কাটাচ্ছেন তারা। এদিকে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। চিকিৎসকরা শিশু ও বয়স্কদের বিশেষ সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) মো. আলমগীর কবীর জানান, আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী ঠাকুরগাঁওয়ে ভোরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে মাত্র ১০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বোচ্চ ২৪ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

তিনি জানান, এ অবস্থায় শীতজনিত ক্ষতি এড়াতে কৃষকদের প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে বোরো বীজতলা, শাক-সবজি ও আলু খেত কুয়াশা ও ঠাণ্ডা বাতাস থেকে রক্ষায় নিয়মিত সেচ, খেত পরিষ্কার রাখা এবং প্রয়োজনে খড় বা পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি জানান: গতকাল সোমবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে কিশোরগঞ্জে। গতকাল সোমবার সকালে জেলার হাওর উপজেলা নিকলীতে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসে। এর আগের দিন রোববার এখানে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

নিকলী প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জাহেদুল ইসলাম মাসুদ বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, গতকাল সোমবার সকাল ৯টায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয় নিকলীতে। তিনি আরও জানান, গত বছরও শীত মৌসুমে দুদিন দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নিকলীতে রেকর্ড হয়েছিল। চলতি বছরও টানা দুদিন ধরে এখানেই দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হচ্ছে।

তাপমাত্রা কমে যাওয়ার পাশাপাশি কিশোরগঞ্জ জেলায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। কয়েকদিন ধরে সূর্যের দেখা মিলছে না। টানা শৈত্যপ্রবাহে জনজীবন কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে। অতিরিক্ত ঠাণ্ডায় সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। দৈনন্দিন কাজে বের হতে না পেরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা।

এদিকে শৈত্যপ্রবাহের প্রভাব পড়েছে কৃষি খাতেও। বোরো মৌসুমের শুরুতেই অতিরিক্ত ঠাণ্ডায় ধানের চারা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় দুশ্চিন্তায় রয়েছেন কৃষকরা।

তিনি বলেন, ‘শীত যদি আরও বাড়তে থাকে, তাহলে আমাদের জন্য রোগীদের সেবা দেওয়া চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠবে।’

ইউসুফ হোসেন অনিক, ভোলা থেকে জানান: ভোলায় জেঁকে বসেছে তীব্র শীত। গত কয়েকদিন ধরে জেলাজুড়ে হাড়কাঁপানো শীত ও ঘন কুয়াশা বিরাজ করছে। বিশেষ করে মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীবেষ্টিত এই জেলায় উত্তরীয় হিমেল হাওয়ার কারণে কনকনে শীত অনুভূত হচ্ছে।

ঘন কুয়াশার চাদরে আকাশ ঢাকা থাকায় গত দুদিন ধরে দিনের অধিকাংশ সময় সূর্যের দেখা মিলছে না। ফলে দিনের তাপমাত্রাও উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। দুদিন ধরে সূর্যের দেখা না মেলায় স্থবির হয়ে পড়েছে স্বাভাবিক জনজীবন। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন নিম্নআয়ের মানুষ, যারা জীবিকার তাগিদে শীত উপেক্ষা করেই বাইরে বের হতে বাধ্য হচ্ছেন। তীব্র শীতে সাধারণ মানুষ অনেকটা গৃহবন্দি হয়ে পড়েছেন। বিশেষ করে ভোলা সদর, দৌলতখান, বোরহানউদ্দিন, তজুমদ্দিন, মনপুরা ও চরফ্যাশনসহ উপকূলীয় এলাকার খেটে খাওয়া মানুষ, জেলে এবং দিনমজুররা চরম বিপাকে পড়েছেন। প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া কেউ ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন না।

ঘন কুয়াশার কারণে ভোলা-লক্ষ্মীপুর ও ভোলা-বরিশাল রুটে ফেরি ও লঞ্চ চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। মহাসড়কে হেডলাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল করতে দেখা যাচ্ছে। শীত থেকে বাঁচতে ফুটপাত ও মার্কেটে গরম পোশাকের দোকানে ভিড় বাড়লেও সুযোগ বুঝে দাম বাড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে।

আবহাওয়া অফিস সূত্র জানায়, গতকাল সোমবার সকাল থেকে জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। যা গত রোববার ছিল ১৪ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

স্থানীয়রা জানান, তিন থেকে চার দিন ধরে জেলায় শীতের দাপট বেড়েছে। সকালে কুয়াশা কিছুটা কমলেও বেড়েছে ঠাণ্ডা। তাপমাত্রা কমার চেয়েও বেশি অসুবিধা হচ্ছে হিমশীতল বাতাসে। হিমেল বাতাসে দিনভর অনুভূত হয় হাড় কাঁপানো শীত।

এদিকে কয়েকদিন ধরে শীতের তীব্রতা হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় রাস্তাঘাটে শ্রমজীবী মানুষের দেখা মিললেও সংখ্যায় ছিল স্বাভাবিক। সময়ের চেয়ে ছিল অনেক কম। হঠাৎ করেই জেলায় শীতের প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেন না কেউ। শীতের তীব্রতা বাড়ায় হাসপাতালেও বেড়েছে রোগীর চাপ। ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন শিশু ও বয়স্করা।


বরিশালে সবজির দাম কমলেও বেড়েছে কাঁচামরিচ-শসার

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বরিশাল প্রতিনিধি

সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকায় বরিশালে সব ধরনের সবজির দাম কমলেও বেড়েছে কাঁচামরিচ ও শসার দাম। গত সপ্তাহের তুলনায় পাইকারি বাজারে অন্যান্য সবজির দাম স্থিতিশীল থাকলেও ২০-৩০ টাকা বেড়েছে কাঁচামরিচ ও শসার দাম। সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) সকালে বরিশাল নগরীর একমাত্র পাইকারি সবজির বাজার বহুমুখী সিটি মার্কেট ও কয়েকটি খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।

পাইকারি সবজির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ফুলকপি গত সপ্তাহের দামে ১০-১২ টাকা, বাঁধাকপি ১০ টাকা, শিম গত সপ্তাহে ২৫ টাকা, এ ছাড়া কাঁচামরিচ গত সপ্তাহে ৪০-৪৫ টাকা বিক্রি হলেও এ সপ্তাহে বেড়ে ৬৫ টাকা, ও শসা গত সপ্তাহে ৪০-৪৫ টাকা বিক্রি হলেও এ সপ্তাহে ৬০ টাকা বিক্রি হচ্ছে, বেগুন ৩০ টাকা, করলা ৩০ টাকা, বরবটি ৩৫ টাকা, পেঁপে গত সপ্তাহে ১৫ টাকা, লাউ ২০-২৫ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ২৫ টাকা, টমেটো ৬০ টাকা, গাজর ৩০-৩৫ টাকা, কাঁচকলা ২০ টাকা ও লেবু ১৫ টাকা হালি বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে পোর্ট রোড বাজার, বাংলাবাজার, সাগরদী বাজারসহ বেশ কিছু খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ফুলকপি ১৫-২০ টাকা, বাঁধাকপি ১৫-২০ টাকা, শিম ৪০-৪৫ টাকা, কাঁচামরিচ ৮০ টাকা, শসা ৮০ টাকা, বেগুন ৩৫-৪০ টাকা, করলা ৩৫ টাকা, বরবটি ৪০ টাকা, পেঁপে ২০ টাকা, লাউ ৩০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৩০ টাকা, টমেটো ৮০ টাকা, গাজর ৪০ টাকা, কাঁচকলা ২৫ টাকা ও লেবু ২০ টাকা হালি বিক্রি হচ্ছে।

এ ছাড়া মাংসের বাজারে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে কেজি ১৫০-১৬০ টাকা, সোনালি মুরগি ২৬০-২৭০ টাকা, লেয়ার মুরগি ২৫০-২৭০ টাকা দরে। গরুর মাংস ৭৫০ টাকা ও খাসির মাংস ১,১৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

অপরদিকে বিভিন্ন মাছ গত সপ্তাহের দামেই বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে রুই মাছ ৩০০-৪৫০ টাকা, টেংরা মাছ ৫০০-৬০০ টাকা, ঘেরের তেলাপিয়া ১২০-১৪০ টাকা, পাঙাশ মাছ ১৮০-২২০ টাকা, চিংড়ি প্রকারভেদে ৫৫০-৮৫০ টাকা, পাবদা ২৫০-৪০০ টাকা, মাঝারি ভেটকি ৪০০ টাকা।

নগরীর বাংলাবাজারের খুচরা সবজি বিক্রেতা তৌহিদ জানান, এখন সব সবজির সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে তাই দামও নাগালের মধ্যে। তবে পাইকারি বাজারের তুলনায় খুচরা সবজির দাম কিছুটা বেশি হবে। কারণ পাইকারি বাজার থেকে সবজি কিনে লেবার খরচ, ভ্যান ভাড়া দিয়ে সবজি আনতে হয়। পরে বাজারে বিক্রি করতে হলে ইজারা, বিদ্যুৎ বিল দিতে হয়।


বছরের শেষে পর্যটকের পদচারণায় মুখরিত মৌলভীবাজার

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
মৌলভীবাজার প্রতিনিধি

নতুন বছরের আগম উপলক্ষে গত দুই সপ্তাহ ধরে পর্যটককে মুখরিত মৌলভীবাজারের পর্যটনকেন্দ্রগুলো। পৌষের কনকনে শীতে সবুজের সান্নিধ্য নিতে প্রতি বছর এমন সময় পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত থাকে চায়ের রাজ্য মৌলভীবাজার। এ বছরেও জেলার বিশেষ পর্যটনকেন্দ্রেগুলোতে দেশের নানা প্রান্ত থেকে ভিড় জমান পর্যটকরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, জেলার উল্লেখযোগ্য পর্যটনকেন্দ্র কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, নয়নাভিরাম মাধবপুর লেক, মাধবকুণ্ড জল প্রভাত, হামহাম জল প্রভাত, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস-ঐতিহ্যের বাহক বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ-সিপাহী হামিদুর রহমান স্মৃতিসৌধ, শ্রীমঙ্গলের চা-বাগান, বধ্যভূমি, মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত ও শমশেরনগর গল্ফ মাঠে পর্যটকরা ভিড় করছেন। দেশি পর্যটকের পাশাপাশি বিদেশি পর্যটক রয়েছেন। শীত মৌসুমের ডিসেম্বর মাসে সবচেয়ে বেশি পর্যটক আসেন এই জেলায়। পর্যটকরা জিপ গাড়ি যা স্থানীয়ভাবে নাম দেওয়া হয়েছে চান্দের গাড়ি দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের টিকিট কাউন্টার থেকে জানা গেছে, গত দুই সপ্তাহে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে প্রায় ১০ হাজার পর্যটক প্রবেশ করেছেন এর মধ্যে বিদেশি পর্যটক রয়েছেন। জানুয়ারি ২০২৬ সালের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত পর্যটকদের চাপ থাকবে।

এদিকে পর্যটকদের নিরাপত্তায় পর্যটক পুলিশের পাশাপাশি জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা। গত দুই সপ্তাহ ধরে ট্যুরিস্ট পুলিশ পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য ব্যাপক কাজ করে যাচ্ছে। প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটনকেন্দ্রে পুলিশের বিশেষ টহল টিম রয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই পর্যটকরা ভ্রমণ করে যাচ্ছেন এ জেলা।

পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, বিশেষ করে শীতের এই সময়ে সব ধরনের পর্যটন ব্যবসা আশানোরূপ ভালো হয়েছে। প্রতি বছর ডিসেম্বর ও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে প্রচুর পর্যটক আসেন এই অঞ্চলে।

চট্টগ্রাম থেকে নিজ পরিবারে আগত পর্যটক নজমুল ইসলাম বলেন, ‘আমি মৌলভীবাজার কয়েকবার এসেছি। এ বছর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এসেছি। এখানকার সবুজ পরিবেশ মনোমুগ্ধকর। এ জেলায় একসাথে অনেকগুলো পর্যটনকেন্দ্র দেখা যায়। তবে সরকারিভাবে পর্যটনশিল্পের উন্নতির জন্য ব্যাপক উন্নয়ন প্রয়োজন। বিশেষ করে স্থানীয়ভাবে একটি পর্যটনকেন্দ্র থেকে অন্য পর্যটনকেন্দ্রে যাওয়ার জন্য ট্যুরিস্ট যাতায়াত ব্যবস্থার প্রয়োজন।’

শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ জোনের ট্যুরিস্ট পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুল হাসান চৌধুরী বলেন, ‘নিরাপদে পর্যটকরা যাতে চলাচল করতে পারেন এ জন্য সারা জেলায় ট্যুরিস্ট পুলিশ কাজ করছে। বিশেষ করে জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি পর্যটক আসেন শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জে। পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য সব পর্যটন স্পটগুলোতে নজরদারি বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।’


নোয়াখালী জেলার সেরা স্বাস্থ্য কর্মকতা ইশরাত জাহান, ইপিআই মামুন

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নোয়াখালী উত্তর প্রতিনিধি

স্বাস্থ্যসেবায় অবদান রাখায় সেরা স্বাস্থ্য কর্মকতা নির্বাচিত হয়েছেন নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকতা ডা ইশরাত জাহান। সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) দুপুরে নোয়াখালী জেলা স্বাস্থ্য বিভাগী সম্মেলনে সিভিল সার্জন ডা মরিয়ম সিমি সেরাদের মাঝে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন।

২০২৫ সালে নোয়াখালী জেলা সেরা মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ইপিআই) ইলিয়াছ মামুন এ বিভাগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় তাকেও সেরা নির্বাচিত করা হয়। সে সোনাইমুড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্মরত রয়েছেন।

জানা গেছে, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা ইশরাত জাহান যোগদানের পর থেকে হাসপাতালটিকে দালালমুক্ত করাসহ সেবার মান বেড়েছে। তার প্রচেষ্টায় এ হাসপাতালে অত্যাধুনিক এক্স-রে মেশিন সংযোজন করা হয়।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা ইশরাত জাহান বলেন, ‘আমি এখানে যোগদানের পর থেকে হাসপাতালকে দালাল মুক্ত রাখতে চেষ্টা করছি। পরীক্ষা-নিরীক্ষার মেশিনগুলো সচল করেছি।’


নড়াইলে কবির জন্মদিনে মেধাবী শিক্ষার্থীদের সম্মাননা প্রদান

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নড়াইল প্রতিনিধি

কবিতা আবৃতি, সাহিত্য আলোচনা, মেধাবী শিক্ষার্থীদের সম্মাননা, প্রবন্ধ ও মানপত্র পাঠসহ নানা আয়োজনে নড়াইলের কৃতিসন্তান কবি বিপুল বিশ্বাসের ৫৬তম জন্মদিন পালন করা হয়েছে। সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) বিকেলে সদর উপজেলার নলদীরচর গ্রামের চন্দ্রাকুঞ্জ রিসোর্টে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

গায়ের কবি নামে খ্যাত বিপুল বিশ্বাসের বাড়ি নড়াইল সদর উপজেলার কলোড়া ইউনিয়নের শিমুলিয়া গামে। বিপুল বিশ্বাস ১৯৬৯ সালের ৫ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তার এ পর্যন্ত তিনটি কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে।

জন্মদিন উপলক্ষে কবি বিপুল বিশ্বাসকে নিয়ে প্রবন্ধ রচনা ও পাঠ করেন, মাগুরা বেরইল নাজির আহম্মেদ ডিগ্রি কলেজের সহকারি অধ্যাপক ধ্রুব কুমার দাম। মানপত্র পাঠ করেন মাবিয়া খানম।

জানা যায়, কবির জন্মদিনকে স্মরণীয় করে রাখতে এলাকার আটটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নবম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকারী মেধাবী শিক্ষার্থীদের সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়। এ ছাড়া বেসরকারি সংস্থা সেতুবন্ধন ফাউন্ডেশন কবিকে সম্মাননা স্মারক প্রদান করে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন, নড়াইল জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (উপসচিব) মো. আছাদুজ্জামান। বিশেষ অতিথি ছিলেন, জেলা কালচারাল কর্মকর্তা আবদুল রাকিবিল বারী, চিত্রশিল্পী বলদেব অধিকারী, অ্যাডভোকেট রমা রানী রায়, এস,এম সুলতান স্মৃতি সংগ্রহশালার কিউরেটর চিত্রশিল্পী তন্দ্রা মুখার্জি, জেলা শিক্ষা অফিসের গবেষণা কর্মকর্তা বিকাশ কুসুম চক্রবর্তী, গোবরা মিত্র মহাবিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রবীন্দ্রনাথ অধিকারী, নড়াইল কালেক্টরেট স্কুলের প্রধান শিক্ষক কবিউজির আলী।

সভাপতিত্ব করেন, খুলনা সরকারি ব্রজলাল কলেজের (বিএল) ইংরেজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান (অব) অধ্যাপক ইকবাল হোসেন। নড়াইল কবিতা আসরের প্রচার সম্পাদক এসকে সরকারের সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য দেন, আগদিয়া-শিমুলিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আহাদ আলী মোল্যা। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন কবি বিপুল বিশ্বাস।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি নড়াইল জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (উপসচিব) আছাদুজ্জামান বলেন, ‘অপরকে দেখে হিংসা নয়, বরং প্রতিযোগীর জায়গা থেকে নিজেকে ভাবতে হবে। নিজেকে তৈরি করতে হবে।’ তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘বর্তমানে ছেলে-মেয়েরা বই থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা তারা মুঠোফোনে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকে। খাওয়া-দাওয়ার কথাও ভুলে যায়।’


টানা শৈত্যপ্রবাহে এবার উপকূলীয় শুঁটকি পল্লীতে উৎপাদন ব্যাহত

* বরগুনায় শুঁটকি উৎপাদনে ১২-১৫ হাজার নারী-পুরুষ জড়িত * শুঁটকির প্রধান মৌসুম নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি
বরগুনার উপকূলীয় শুঁটকি পল্লীতে মাছ শুকানোর কাজে ব্যস্ত শ্রমিকরা। ছবি : দৈনিক বাংলা।
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বরগুনা প্রতিনিধি

বরগুনার উপকূলীয় শুঁটকি পল্লীগুলোতে কর্মচাঞ্চল্য ফিরলেও টানা শৈত্যপ্রবাহ ও দীর্ঘদিন সূর্যের দেখা না মেলায় শুঁটকি উৎপাদনে মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটছে। তালতলী উপজেলার আশারচর, নিদ্রারচরসহ বিভিন্ন চরাঞ্চলে হাজারো জেলে, শ্রমিক ও ব্যবসায়ী মৌসুমের শুরুতেই কাজে নেমেছেন; তবে আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাবে কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে না।

বরগুনা জেলায় শুঁটকি উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ১২ থেকে ১৫ হাজার নারী-পুরুষ। নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চার মাসই শুঁটকির প্রধান মৌসুম। সাধারণত তিন থেকে চার দিনের টানা রোদে মাছ ভালোভাবে শুকিয়ে ওঠে। কিন্তু চলতি মৌসুমে একাধিক দফা শৈত্যপ্রবাহ ও ঘন কুয়াশার কারণে সূর্যের দেখা না মেলায় শুকানোর প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে।

মিঠাপানির দেশি মাছের শুঁটকির জন্য পরিচিত আশারচর ও নিদ্রারচরে এ মৌসুমে সহস্রাধিক শ্রমিক কাজ করছেন। প্রতিদিন বিভিন্ন প্রজাতির মাছ শুকানোর চেষ্টা করা হলেও রোদ না থাকায় মাছ ঠিকমতো শক্ত হচ্ছে না। এতে নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে, পাশাপাশি উৎপাদন খরচও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

শুঁটকিপল্লীতে কাজ করা শ্রমিক হালিম মিয়া বলেন, ‘নদীতে মাছ ধরা পড়লেও রোদ না থাকায় ঠিকমতো শুঁটকি করা যাচ্ছে না। অনেক সময় মাছ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এতে আমাদের আয় কমে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।’

সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রায় ৫০টি অস্থায়ী টংঘরে জেলে ও শ্রমিকরা বসবাস করছেন। নারী ও শিশু শ্রমিকরা নদী থেকে আনা কাঁচা মাছ পরিষ্কার করে মাচায় সাজাচ্ছেন। কিন্তু দিনের পর দিন সূর্য না ওঠায় শুকানোর সময় দ্বিগুণেরও বেশি লাগছে।

শুঁটকি ব্যবসায়ী আশরাফ আলী জানান, ‘এ বছর আমরা কোনো রাসায়নিক বা অতিরিক্ত লবণ ছাড়াই শুঁটকি উৎপাদনের চেষ্টা করছি। কিন্তু রোদ না থাকলে ভালো মানের শুঁটকি করা কঠিন হয়ে পড়ে। স্থায়ী শুকানোর অবকাঠামো থাকলে এই সমস্যার অনেকটাই সমাধান হতো।’

ব্যবসায়ীদের তথ্য অনুযায়ী, এসব পল্লীতে ২৫ থেকে ৩০ প্রজাতির মাছের শুঁটকি তৈরি হয়। বর্তমানে ছুরি মাছের শুঁটকি প্রতি কেজি ৭০০–৮০০ টাকা, রূপচাঁদা ১,০০০–১,৫০০ টাকা এবং লইট্টা ৬০০–১,০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় বাজারে সরবরাহ অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে।

শুঁটকি পল্লীর আরেক বড় সংকট যোগাযোগ ব্যবস্থা। প্রধান সড়ক থেকে প্রায় এক কিলোমিটার ভাঙাচোরা রাস্তার কারণে ট্রাক প্রবেশ করতে পারে না। এতে পরিবহন ব্যয় বাড়ছে এবং ক্ষতির পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

শুঁটকি ব্যবসায়ী হানিফ হাওলাদার বলেন, ‘আমরা নিয়মিত রাজস্ব দিচ্ছি, কিন্তু অবকাঠামোগত কোনো উন্নয়ন নেই। টানা শীত আর রাস্তাঘাটের সমস্যায় ব্যবসা টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে যাচ্ছে।’

নারী শ্রমিকদের দুর্ভোগও কম নয়। দুই যুগ ধরে শুঁটকি পল্লীতে কাজ করা পিয়ারা বেগম বলেন, ‘নারীদের জন্য কোনো স্থায়ী টয়লেট বা স্যানিটেশন ব্যবস্থা নেই। শীতের মধ্যে এসব কষ্ট আরও বেড়ে যায়।’

তালতলীর সোনাকাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফরাজি মো. ইউনুছ বলেন, ‘শুঁটকি শিল্প এক সময় এই অঞ্চলের অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি ছিল। কিন্তু অবকাঠামো সংকট, পরিবেশ দূষণ ও প্রাকৃতিক প্রতিকূলতায় শিল্পটি হুমকির মুখে পড়েছে।’

বরগুনার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ জিয়া উদ্দিন বলেন, ‘শুঁটকি শিল্প একটি সম্ভাবনাময় খাত। আবহাওয়া জনিত সমস্যা ও অবকাঠামোগত সংকট নিরসনে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে।

তালতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.জাহিদুল ইসলাম জানান, ‘শুঁটকি পল্লীর সমস্যাগুলো গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। শিল্পটিকে টিকিয়ে রাখতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সম্ভাব্য সব উদ্যোগ নেওয়া হবে।’

সংশ্লিষ্টদের মতে, টানা শৈত্যপ্রবাহে সূর্যের অভাবে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় দ্রুত বিকল্প শুকানোর ব্যবস্থা, উন্নত যোগাযোগ অবকাঠামো, শ্রমিকদের মানবিক সুযোগ-সুবিধা এবং সরকারি ব্যবস্থাপনায় রপ্তানির সুযোগ নিশ্চিত না হলে উপকূলের এই ঐতিহ্যবাহী শিল্প অচিরেই অস্তিত্ব সংকটে পড়বে।


banner close