নওগাঁয় সড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে চালবোঝাই ট্রাকে ডাকাতির সঙ্গে জড়িত আন্তজেলা ডাকাত দলের ১২ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় উদ্ধার করা হয় ডাকাতি হওয়া চাল, ট্রাক, নগদ টাকা, ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত দেশীয় অস্ত্র। শুক্রবার দুপুরে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রাশিদুল হক।
গ্রেপ্তাররা হলেন সোহাগ, শাজির উদ্দিন, মো. জিয়া, শাজাহান, মেহেদী, ইউসুফ, মাহফুজ, রাজু পালোয়ান, রতন ও শরিফসহ আরও দুজন।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার বলেন, গত ২২ মার্চ গাইবান্ধা থেকে একটি ট্রাকে করে ৪০০ বস্তা আতপ চাল নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল চাঁপাইনবাবগঞ্জের দিকে। এ সময় নওগাঁ সদর উপজেলার বাইপাস সড়কের ইকরতারা স্থানে রাত ১টার দিকে ডাকাত দল সড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে ট্রাক থামিয়ে চালক ও হেলপারকে মারপিট করে হাত-পা বেঁধে রেখে ডাকাতরা ট্রাক নিয়ে চলে যান। ভোরে চালক ও হেলপার কৌশলে তাদের হাতের বাঁধন খুলে আশপাশের মানুষকে জানালে সকালে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। পরবর্তী সময় এ বিষয়ে সদর থানায় মামলা করা হলে পুলিশের কয়েকটি টিম তদন্ত শুরু করে।
তিনি বলেন, তদন্তের একপর্যায়ে বগুড়ার শেরপুরের রানিরহাটে পরিত্যক্ত অবস্থায় ট্রাকটি উদ্ধার করে পুলিশ। এরপর প্রযুক্তি এবং সোর্সকে কাজে লাগিয়ে জানা যায় ডাকাতি হওয়া চাল শেরপুর উপজেলার একটি গোডাউনে আনলোড করা হয়েছে। পরে ২৮ মার্চ সেখানে অভিযান চালিয়ে ডাকাতি করা চালের দুই ক্রেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারদের তথ্যমতে ডাকাতির সঙ্গে জড়িত সোহাগকে গ্রেপ্তারের পর তার বাড়ি থেকে ৯০ বস্তা চাল ও সদরের নিশিন্দারা থেকে ২০ বস্তা চাল উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া ২৯ মার্চ একই জেলার কাহালু থেকে শাজির উদ্দিন মণ্ডলকে গ্রেপ্তার করে ১১১ বস্তা চাল উদ্ধার করা হয়। এরপর গ্রেপ্তার ডাকাত জিয়াকে নিয়ে কাহালু ও জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুর ও নওগাঁর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে শাজাহান, মেহেদী ও ইউসুফকে গ্রেপ্তারের পর আদালতে তোলা হলে তারা ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।
পুলিশ সুপার রাশিদুল হক বলেন, গত বৃহস্পতিবার রাতে আবার বগুড়া সদরে অভিযান চালিয়ে ডাকাত মাহফুজ, রাজু পালোয়ান এবং রতনকে গ্রেপ্তার করা হয়। রাজুকে নিয়ে সিরাজগঞ্জে অভিযান চালিয়ে ডাকাতি হওয়া চাল ক্রয়-বিক্রয়ের সঙ্গে জড়িত হাটিকুমরুল এলাকার শরিফকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পরে তার দেয়া তথ্যমতে ১১১ বস্তা চাল বিক্রির ১ লাখ ১৬ হাজার ৪৫০ টাকা তার কিাছ থেকে জব্দ করা হয়। এ ছাড়া ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত দেশীয় অস্ত্রও উদ্ধার করা হয়।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা নওগাঁ, জয়পুরহাট, বগুড়া ও সিরাজগঞ্জ জেলায় এ ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। এদের মধ্যে জিয়া, মেহেদী, রতন ও রাজু পালোয়ানের বিরুদ্ধে একাধিক ডাকাতি ও খুনের মামলা রয়েছে। ডাকাতির সঙ্গে আরও কেউ জড়িত আছে কি না, সেই বিষয়টিও ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে বলেও জানান পুলিশ সুপার।
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গাজিউর রহমান, সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফৌজিয়া হাবিব খান, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফয়সাল বিন আহসানসহ পুলিশের অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপি দেশের মানুষের জন্য রাজনীতি করে না বলে মন্তব্য করেছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। তিনি বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি এদেশের জন্য লজ্জার হলেও বিএনপি তাতে খুশি। বিএনপি দেশের মানুষের জন্য রাজনীতি করে না। তারা শুধু জ্বালাও পোড়াও পছন্দ করে।’
রোববার দুপুরে নওগাঁর পোরশা উপজেলা পরিষদে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘জুলিও কুরি শান্তি পদক’ প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন উপলক্ষে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, ‘কৃষকবান্ধব সরকারের সময়োপযোগী পদক্ষেপের কারণে দেশে বাম্পার ফলন হয়েছে। এদেশে খাদ্য সংকট হবে না। কৃষকের জন্য সরকার ভর্তূকি মূল্যে সার দিচ্ছে। বিনামূল্যে বীজ ও কৃষি উপকরণ দিচ্ছে। অথচ বিএনপির আমলে সার চেয়ে কৃষক গুলি খেয়েছিল। প্রাণ গিয়েছিল ১৯ জন কৃষকের।’
সরকারের উন্নয়নচিত্র তুলে ধরে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এমন কোনো খাত নেই যেখানে প্রধানমন্ত্রীর সাহায্য পৌঁছায়নি। কমিউনিটি ক্লিনিক গরীব মানুষের চিকিৎসা সেবার জন্য তৈরি করে শেখ হাসিনার সরকার। বিএনপি ২০০১ ক্ষমতায় এসে সেই কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ করেছিল। অথচ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কমিউনিটি ক্লিনিক এখন বিশ্বে মডেল বিবেচিত হচ্ছে।’
বঙ্গবন্ধুর আদর্শ তরুণ প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের সকল পর্যায়েই শোষিত ও বঞ্চিত মানুষের পক্ষে থেকেছেন। বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক, মানবিক ও শান্তির দর্শন নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে।’
অনুষ্ঠানে খাদ্যমন্ত্রী বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। এর আগে তিনি কৃষিপ্রযুক্তি মেলার উদ্বোধন করেন এবং মেলার বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন। পরে তিনি উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর আয়োজিত সমতলে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সদস্যদের মাঝে ভেড়া বিতরণ, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের বিভিন্ন প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারীদের সহায়তা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের হাতে ল্যাপটপ তুলে দেন।
পোরশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা আক্তারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন পোরশা উপেজলা চেয়ারম্যান শাহ মঞ্জুর মোর্শেদ চৌধুরী, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার সরকারসহ অন্যরা।
লালমনিরহাটের তিস্তা টোল প্লাজায় যাত্রীবাহী একটি বাসে তল্লাশি চালিয়ে বাসের লকারে থাকা একটি বস্তা থেকে ৩৮ লাখ টাকা উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় মমিনুল ইসলাম নামের এক যাত্রীকে আটক করা হয়।
রোববার দুপুর ১২টার দিকে লালমনিরহাট-রংপুর মহাসড়কের তিস্তা টোল প্লাজা এলাকায় নাবিল পরিবহন থেকে এ টাকা উদ্ধার করে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, নিয়মিত ডিউটির অংশ হিসেবে কুড়িগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী নাবিল পরিবহনের একটি বাসে তল্লাশি চালানোর সময় একটি চালের বস্তায় রাখা ৩৮ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয় এবং মমিনুল ইসলাম নামে এক যাত্রীকে আটক করা হয়।
আটক মমিনুল কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর থানার কিশামত তবকপুর গ্রামের ছাবেদ আলীর ছেলে।
লালমনিরহাট সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এরশাদুল আলম দৈনিক বাংলাকে বলেন, এটি আমাদের নিয়মিত তল্লাশি। তল্লাশি করতে গিয়ে চালের বস্তাটি সন্দেহজনক হওয়ায় চেক করা হয়। সেখানে ৩৮ লাখ টাকা পাওয়া যায়। এ সময় মমিনুল ইসলাম নামে একজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। তবে আটক ব্যক্তি টাকার কথা স্বীকার করে জানিয়েছেন, তার মামার কনস্ট্রাকশন কাজের লেনদেনের টাকা নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছিলেন।
কিশোরগঞ্জে মাদকের টাকা না পেয়ে ছেলেকে ছুরিকাঘাতের অভিযোগ উঠেছে এক বাবার বিরুদ্ধে। রোববার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে সদর উপজেলার কোট শোলাকিয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
অভিযুক্তের নাম দানেশ মিয়া (৫০) এবং ছেলের নাম মো. রাব্বি মিয়া (২২)। ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত রাব্বিকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। দানেশ মিয়াকে আটক করে পুলিশে দিয়েছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয়রা জানান, দানেশ দীর্ঘদিন ধরে যাবত মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত। এক পর্যায়ে তিনি নিজেও মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন। একাধিকবার বিয়ে করেছেন তিনি। সাত মাস আগে তার ছেলে রাব্বি বিয়ে করেন। দানেশ তার পুত্রবধূকে একাধিকবার ধর্ষণের চেষ্টা করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে বাবা-ছেলের মধ্যে বেশ কয়েকবার হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। তবে লজ্জায় বিষয়টি গোপন রাখেন তারা।
সম্প্রতি মাদকের টাকার জন্য ছেলে রাব্বিকে চাপ দিতে শুরু করেন দানেশ। এ নিয়ে রোববার সকালে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে ছুরি দিয়ে ছেলের গলায় আঘাত করেন দানেশ। এতে রাব্বির গলা কেটে যায়। এ সময় দৌড়ে পালাতে চাইলে আবারও তার পিঠে আঘাত করেন। এক পর্যায়ে প্রতিবেশীরা এসে রাব্বিকে উদ্ধার করেন আর দানেশকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেন।
কিশোরগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ দাউদ বলেন, পারিবারিক কলহের জেরে এ ঘটনা ঘটেছে। গুরুতর আহত রাব্বিকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় তার বাবা দানেশ মিয়াকে আটক করে পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সিরাজগঞ্জে এক যুবকের পেট থেকে সার্জারির মাধ্যমে ১৫টি কলম বের করা হয়েছে। জেলার শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এন্ডোসকপিক সার্জারি করে মোতালেব হোসেন (৪২) নামে ওই যুবকের পেট থেকে বের করা হয় কলমগুলো। তার পেটে এখনো চার-পাঁচটি কলম রয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।
মোতালেব হোসেন সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার খুকনী ইউনিয়নের আটারদাগ গ্রামের মৃত আবদুর রহমানের ছেলে। পেটব্যথা ও অসুস্থতা নিয়ে একের পর এক চিকিৎসকের কাছে যাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু কোনো সমাধান মিলছিল না। শেষে সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসে বিষয়টি ধরা পড়ে।
মোতালেবের চাচাত ভাই আব্দুর রহমান জানান, এর আগে ২০০৬ সালেও মোতালেব হোসেনের পেটব্যথা হয়েছিল। সে সময় অস্ত্রোপচার করে তার পেট থেকে দুটি লোহার টুকরা বের করা হয়।
হাসপাতালের সার্জারি বিভাগ সূত্র জানায়, মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক দুই সপ্তাহ ধরে মোতালেব হোসেনের পেটব্যথার চিকিৎসা দিয়েছেন। কোনো ফল না পেয়ে পেটে এক্স-রে ও আলট্রাসনোগ্রাম করে বুঝতে পারেন, তার পাকস্থলিতে কলমজাতীয় বস্তু রয়েছে। এরপর গত বৃহস্পতিবার তিন ঘণ্টায় (বেলা ১১টা থেকে পৌনে ২টা পর্যন্ত) এন্ডোসকপি করে ১৫টি কলম বের করা হয়। তার পেটে এখনো চার-পাঁচটি কলম রয়েছে।
মোতালেব হোসেনের মা লাইলী বেগম বলেন, আমার ছেলে ভালো ছাত্র ছিল। এসএসসি পাসের পর সে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। এরপর কখন কলমগুলো গিলেছে আমরা বলতে পারব না। দীর্ঘদিন সুস্থ স্বাভাবিকভাবেই কাজ করেছে সে। এক বছর হলো পেটব্যথায় অসুস্থ হয়ে পড়ে।
শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের কনসালট্যান্ট জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আগামী সোমবার আবার এন্ডোস্কপির মাধ্যমে বাকি কলমগুলো বের করা হবে। স্বাভাবিক অবস্থায় তিনি কীভাবে কলমগুলো গিললেন, বুঝতে পারছি না। এটি আসলেই চিন্তার বিষয়। আমাদের মনে হচ্ছে, তার স্নায়ুতন্ত্রের কোনো সমস্যা থাকতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মোতালেব হোসেন এখন অনেকটাই সুস্থ। সব কলম অপসারণের পর তাকে স্নায়ুতন্ত্র বিভাগে চিকিৎসা দেয়া হবে।’
জানতে চাইলে মোতালেব হোসেন বলেন, ‘আগে একদম সুস্থ–স্বাভাবিক ছিলাম। এক বছর ধরে পেট ব্যথায় কোনো কাজ করতে পারছিলাম না। তবে কখন, কীভাবে কলমগুলো গিলে ফেলেছি, কিছুই বলতে পারছি না।’
তার পরিবার জানায়, তাঁতের শাড়িতে ব্যবহার করা নকশা এঁকে সেটি তাঁতযন্ত্রে বসানোর কাজ করতেন মোতালেব। তিনি ১৯৯৯ সালে প্রথম বিভাগে এসএসসি পাস করেন।
ছুরিকাঘাতে তলপেট দিয়ে অঝোরে রক্ত ঝরছে। কথা বলার শক্তিও ধীরে ধীরে কমে আসছে। এর মধ্যেই কাঁপা কাঁপা স্বরে বললেন, ‘রাজু এবং ওসমানসহ আরও দুজন আমাকে ছুরিকাঘাত করেছে।’ খুনিদের নাম বলার কিছুক্ষণের মধ্যেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন আজাদ (৩০)।
রোববার ভোরে চট্টগ্রাম নগরীর হালিশহর বিশ্ব রোডে এ ঘটনা ঘটে। পূর্ব শত্রুতার জেরে রাজু এবং ওসমানসহ অন্যরা তাকে ছুরিকাঘাত করে। এতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মৃত্যু হয় আজাদের। আজাদ নগরীর নতুন বাজার এলাকার লাডু ইব্রাহিমের ছেলে।
আজাদের পরিবার জানায়, একটি কারখানায় নৈশপ্রহরী হিসেবে চাকরি করতেন আজাদ। রাতে দায়িত্ব পালন শেষে কর্মস্থল থেকে বাসায় ফিরছিলেন তিনি। এ সময় বাসার সামনেই তাকে চারজন ছুরিকাঘাত করেন। ছুরিকাঘাতের ঘটনাটি তার বোন দেখে চিৎকার শুরু করলে আশপাশের লোকজন আসতে শুরু করেন। এ সময় পালিয়ে যান হামলাকারীরা।
এদিকে এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা গেছে, গুরুতর আহতাবস্থায় আজাদকে উদ্ধার করে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কাপড় দিয়ে তার ক্ষতস্থানে ঢেকে দেয়া হলেও অঝোরে রক্ত ঝরছে। এ সময় তার কাছ থেকে খুনিদের নাম জানতে চান একজন। তখন আজাদ রাজু ও ওসমানসহ আরও দুজন তাকে ছুরিকাঘাত করে বলে জানান। এরপর আর কথা বাড়াতে পারেননি তিনি, ঢলে পড়েন মৃত্যুর কোলে।
অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে আজাদের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ নুরুল আলম আশেক। তিনি বলেন, ভোর ৫টার দিকে আহতাবস্থায় আজাদ নামের ওই যুবককে হাসপাতালে নিয়ে আসেন স্বজনরা। পরে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
পুলিশ জানিয়েছে, এ ঘটনায় হালিশহর থানায় মামলা প্রক্রিয়াধীন। খুনিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে মোটরসাইকেলের ধাক্কায় আলাউদ্দিন (৫৫) নামে এক বাইসাইকেলচালক নিহত হয়েছেন। রোববার সকাল ১০টার দিকে পৌর এলাকার লক্ষ্মীপুর ব্রিজের কাছে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
আলাউদ্দিন একই উপজেলার আলীপুর গ্রামের মৃত আফসার আলীর ছেলে। ওই ঘটনায় আহত হয়েছেন মোটরসাইকেলচালক রাজ্জাক হোসেন (৪০)। তিনি ওই উপজেলার হাসাদহ গ্রামের সুজা হোসেনের ছেলে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে জীবননগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাসির উদ্দিন মৃধা স্থানীয়দের বরাতে জানান, সকালে বাইসাইকেল নিয়ে মাঠের দিকে যাচ্ছিলেন আলাউদ্দিন। এ সময় বিপরীত দিক থেকে আসা রাজ্জাক হোসেনের মোটরসাইকেলের সঙ্গে তার সাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে সড়কের উপর ছিটকে পড়ে মাথায় গুরুতর আঘাত পান আলাউদ্দিন।
পরে মাথা থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি। আহত মোটরসাইকেলচালক রাজ্জাককে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে যশোর সদর হাসপাতালে রেফার্ড করেন জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্মের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক।
ওসি আরও জানান, মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। ওই ঘটনায় আইনানুগ বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
চট্টগ্রামে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের পর অগ্নিকাণ্ডে দুই শিশুসহ একই পরিবারের চারজন দগ্ধ হয়েছেন। রোববার ভোরে নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানার পূর্ব শহীদ নগরের একটি বসতঘরে এ ঘটনা ঘটে। দগ্ধদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে।
তারা হলেন নূর নাহার বেগম (৩০), মারুফ (১) ফারিয়া (৩) ও মো. ঈমাম উদ্দিন (২৩)।
সিলিন্ডার বিস্ফোরণের বিষয়টি নিশ্চিত করে আগ্রাবাদ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের চিফ লিডার চিত্তরঞ্জন বৈদ্য বলেন, ‘ভোরে খবর পেয়ে আমাদের দুটি টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে যাওয়ার আগেই দগ্ধ চারজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান স্থানীয়রা।’
চমেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ নুরুল আলম আশেক জানান, পৌনে ৬টায় দগ্ধ অবস্থায় চারজনকে হাসপাতালে আনা হয়। পরে তাদের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। তবে তারা কতটা দগ্ধ হয়েছেন, তা এখনো জানা যায়নি।
সাতক্ষীরার কালীগঞ্জে মাটিবোঝাই আলমসাধুর চাপায় জীম হোসেন (১০) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। রোববার সকাল ৯টার দিকে উপজেলার জিরণগাছা মোড়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
জীম উপজেলার বন্ধকাটি গ্রামের জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে এবং বন্ধকাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র।
স্থানীয়রা জানান, সকাল ৯টার দিকে শিশু জীম পায়ে হেঁটে উপজেলার কালীগঞ্জ-তালতলা সড়কের জিরণগাছা মোড়ের দিকে যাচ্ছিল। এ সময় পেছন দিক থেকে আসা মাটিবোঝাই একটি আলমসাধু চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। স্থানীয়রা আলমসাধুটি আটক করতে পারলেও চালক কৌশলে পালিয়ে যান।
কালীগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) ইবাদ হোসেন দুর্ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, স্থানীয়দের সহযোগিতায় আলমসাধু জব্দ করা হয়েছে। চালক পলাতক রয়েছেন। পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠিয়েছে।
কুড়িগ্রামের রৌমারীতে নিয়ম-বহির্ভূতভাবে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা ও ফসলি জমিতে ইটভাটা গড়ে তোলার অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়নের কাউনিয়ারচর (শালুরমোড়) এলাকায় ফসলি জমির মাটি কেটে ইট তৈরি করছে এস ব্রিকস (এসবি) নামের একটি প্রতিষ্ঠান। স্থানীয়দের অভিযোগ, ইটভাটার কালো ধোঁয়া ও ধুলাবালিতে আশপাশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও গ্রামবাসীর মধ্যে সর্দি, কাশি ও ফুসফুসজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। এ নিয়ে জেলা প্রশাসক ও পরিবেশ অধিদপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিলেও কোনো প্রতিকার মেলেনি।
স্থানীয়রা জানান, ওই ইটভাটার মালিক সফিয়ার রহমানের বিরুদ্ধে সরকারি সম্পত্তি জবরদখল, সরকারি গাছ কর্তন, অবৈধ সুদ ব্যবসা, চোরাচালানসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। এরপর প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা ও তিন ফসলি জমিতে ইটভাটা গড়ে তুলেছেন তিনি। এতে পরিবেশ দূষণ বাড়ছে, কমছে জমির ফলন।
এলাকাবাসী বলছেন, আইন অনুযায়ী জনবহুল এলাকায় ইটভাটার জন্য পরিবেশ ছাড়পত্র পাওয়ার সুযোগ নেই। তবু বহাল তবিয়তে চলছে এস ব্রিকস। বিষয়টি নিয়ে কয়েক দিন আগে জেলা প্রশাসক ও জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন স্থানীয় সালমান কায়সার। এরপর এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এ নিয়ে প্রশাসনের কোনো তৎপরতা চোখে পড়েনি। এর আগে অন্যরা অভিযোগ করেও প্রতিকার পাননি।
সরেজমিনে রৌমারীর দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়নের কাউনিয়ারচর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, তিন ফসলি জমির মাটি কেটে নেয়া হচ্ছে এসবি ইটভাটায়। সেই মাটি দিয়ে কাঁচা ইট বানিয়ে পোড়ানোর জন্য মজুত করে রাখা হয়েছে। এর ২০ মিটারেরও কম দূরত্বে অবস্থান কাউনিয়াচর গ্রাম জামে মসজিদের। ভাটাসংলগ্ন ১০০ মিটারের মধ্যে রয়েছে অন্তত ছয়টি গ্রাম। ৩০০ থেকে ৪০০ মিটার দূরত্বে রয়েছে চারটি সরকারি ও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি মাদ্রাসা ও দুটি বাজার। একই দূরত্বে রয়েছে দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ও বিজিবি ক্যাম্প।
এ ছাড়া ইটভাটা থেকে মাত্র আধা কিলোমিটার দূরেই রয়েছে আরও দুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি করে মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজ, দুটি গ্রাম এবং দাঁতভাঙ্গা ভূমি অফিসসহ বিভিন্ন এজেন্ট ব্যাংক ও এনজিও অফিস। অর্থাৎ সম্পূর্ণ ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় চলছে এসবি ইটভাটার কার্যক্রম।
শিক্ষার্থীরা বলছে, ভাটায় ইট পোড়ানোর সময় ধোঁয়া তাদের শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করে। শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। এ বিষয়ে প্রশাসন ও সরকারের হস্তক্ষেপ চাইছে তারা।
স্থানীয় সেলিম মিয়া বলেন, ‘ইটভাটার ধোঁয়ার কারণে আমার বোরো ধান ও ভুট্টার ফলন অন্য বছরের তুলনায় অনেক কম হয়েছে। এভাবে ভাটা চলতে থাকলে এলাকার মানুষের অনেক ক্ষতি হবে।’
স্থানীয় মক্কার হোসেন বলেন, ‘আমার বাড়ির সঙ্গেই ইটভাটা। এর ধোঁয়ায় বাড়ির আসবাবপত্রসহ কাঁঠাল, আমগাছ নষ্ট হচ্ছে।’
কাউনিয়ারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল খালেক বলেন, ‘ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ার কারণে স্কুলের বাচ্চারা শ্বাসকষ্ট রোগের ঝুঁকিতে রয়েছে। আমি এর প্রতিকার চাই।’
দাঁতভাঙ্গা বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ইটভাটার কারণে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছে শিক্ষার্থীরা। সেই সঙ্গে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। তাই দ্রুত এটি বন্ধ করার জোর দাবি করছি।’
দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান এস এম রেজাউল করিম বলেন, নিয়ম ভেঙে ইটভাটাটি গড়ার ফলে ফসল ও মানুষ ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসনের সঠিক তদন্ত করে এর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।
রৌমারী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আসাদুজ্জামান খান বলেন, ইটভাটার কালো ধোঁয়ার কারণে শ্বসনতন্ত্রে মারাত্মক অসুস্থতা তৈরি হতে পারে। ওই ইটভাটা পরিদর্শনে শিগগিরই স্যানিটারি কর্মকর্তাকে পাঠানো হবে। জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিবেচনায় বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও জানানো হবে।
জানতে চাইলে ইটভাটার মালিক মো. সফিয়ার রহমান বলেন, ‘আমি নিয়মনীতি মেনেই ইটভাটা করেছি। পরিবেশ অধিদপ্তর গত বছরের ৮ আগস্ট এটি চালুর জন্য ছাড়পত্র দেয়। এখন স্কুলের শিক্ষার্থী ও জনসাধারণ অসুস্থ হলে কী করার আছে? ইট না থাকলে তো আর ঘরবাড়ি-স্কুল-কলেজ পাকা হতো না।’ তবে বন্ধ করার নির্দেশ পেলে ভাটা বন্ধ করে দেবেন বলে জানান তিনি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী অবশ্য বলছেন ইটভাটাটিকে প্রত্যয়নপত্র না দেয়ার কথা। তিনি বলেন, ‘আমার কাছে ইটভাটার প্রত্যয়নপত্র চেয়ে আবেদন করেছিল। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ইটভাটাটি হবে কৃষিজমিতে। তাই পরে আর প্রত্যয়নপত্র দেয়া হয়নি।’
জানতে চাইলে জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. রেজাউল করিম বলেন, সরেজমিনে গিয়ে তদন্ত করে অনিয়মের সত্যতা পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে ছাড়পত্র দেয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য না করেই ফোনের সংযোগ কেটে দেন।
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগের আলোকে তদন্ত করা হবে।
কুমিল্লার দাউদকান্দিতে মাইক্রোবাসে ট্রাকের ধাক্কায় দুজন নিহত হয়েছেন। রোববার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে উপজেলার শহীদনগর এম এ জলিল হাইস্কুলের দক্ষিণ পাশে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
এ সময় আরও অন্তত ৩ জন আহত হয়েছেন। তবে হতাহতদের নাম পরিচয় এখনো জানা যায়নি।
পুলিশ জানায়, চট্টগ্রামমুখী একটি মাইক্রোবাসকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয় ট্রাকটি। এ সময় দুটি গড়িই সড়কের পাশে উল্টে গিয়ে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে।
দাউদকান্দি হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আমরা উদ্ধার কাজ নিয়ে ব্যস্ত আছি। নিহতদের পরিচয় এখনো নিশ্চিত হতে পারিনি। কিছুক্ষণ পর বিস্তারিত জানাতে পারব।’
কক্সবাজার টেকনাফে অপহরণের শিকার হওয়ার ২৫ দিন পর তিন বন্ধুর মরদেহ উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ওই তিন বন্ধুর পরিবারের অভিযোগ, তারা অপহরণের অভিযোগ জানিয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে গেলেও পুলিশ ব্যবস্থা নিতে গড়িমসি করেছে। পুলিশ সময়মতো ব্যবস্থা নিলে হয়তো তাদের জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হতো।
এদিকে তিন বন্ধুকে অপহরণের পর হত্যার ঘটনায় দুই রোহিঙ্গা নারীর জড়িত থাকার তথ্য উঠে এসেছে। মিনা ও কোহিনুর আক্তার নামে ওই দুই নারীকে খুঁজছে পুলিশ। এর মধ্যে কোহিনুরকে পাত্রী হিসেবে দেখতে যাওয়ার কথা ছিল ওই তিন বন্ধুর।
কক্সবাজারের টেকনাফে বেড়াতে গিয়ে অপহরণের শিকার হন কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলার জালালাবাদ সওদাগরপাড়া এলাকার মোহাম্মদ ইউসুফ, চৌফলদণ্ডী এলাকার রুবেল ও কক্সবাজার শহরের নুনিয়াছড়া এলাকার ইমরান। গত বুধবার তাদের মরদেহ উদ্ধার হয়।
পরিবার ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক রোহিঙ্গা নারীর আমন্ত্রণে গিয়ে গত ২৮ এপ্রিল অস্ত্রের মুখে অপহরণের শিকার হন তারা। পরদিন রুবেলের মোবাইল ফোন থেকে অপহরণকারীরা তিনজনকে নির্যাতন করার ভিডিও পাঠিয়ে তাদের পরিবারের কাছে ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে।
ইউসুফের ভাই মো. ইউনুছ বলেন, ‘২৮ এপ্রিল বিকেল ৪টার দিকে বাড়ি থেকে বের হয় ইউসুফ। তিন দিন পর আমার মোবাইলে একটা কল আসে, ৫০ হাজার টাকা পাঠাতে বলে। সর্বশেষ গত ১৫ মে ফোন করে বলে, পাঁচ লাখ টাকা না দিলে আমার ভাইকে মেরে ফেলবে।’
নিহত তিনজনের পরিবারের সদস্যদেরই অভিযোগ, ২৯ এপ্রিল তারা জিডি করতে গেলে কক্সবাজার সদর ও টেকনাফ কোনো থানা জিডি নেয়নি। পুলিশ যথাসময়ে জিডি নিলে তিনজনকে উদ্ধার করা সম্ভব হতো বলে মনে করছেন তারা।
ইমরানের বাবা মুহাম্মদ ইব্রাহিম দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘ইমরানের সন্ধান চেয়ে থানায় জিডি করতে গেলে কক্সবাজার সদর ও টেকনাফ দুই থানার ওসি ও অফিসাররা আমাদের গুরুত্ব দেননি। নির্যাতনের ফুটেজ দেখিয়ে জিডি করতে গিয়ে হয়রানির শিকার হয়েছি। দুই থানায় ঘুরতে ঘুরতে পাঁচ দিন চলে গেছে। তারা দ্রুত জিডি নিয়ে অভিযান চালালে হয়তো ছেলেকে ফিরে পেতাম।’
ইমরানের মা হামিদা বেগম বলেন, ‘২৯ এপ্রিল অপহরণকারীরা ইমরানের মোবাইল ফোন থেকে কল করে তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। আমরা ধার করে ইমরান ও রুবেলের নম্বরে বিকাশের মাধ্যমে এক লাখ এক হাজার টাকা দিয়েছিলাম। বাকি টাকা দিতে না পারায় তাদের খুন করেছে অপহরণকারীরা।’
পুলিশের গাফিলতির অভিযোগ তুলে হামিদা বেগম বলেন, ‘টেকনাফ থানায় আমার স্বামী অন্তত সাতবার গেছেন। কিন্তু পুলিশ জিডি বা মামলা নেয়নি। কক্সবাজার সদর থানাও জিডি বা মামলা রেকর্ড করেনি। এটাই কষ্ট আমাদের।’
জানতে চাইলে কক্সবাজার সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘ওই তিনজন এখান থেকে নিখোঁজ হননি। তারা যেখান থেকে নিখোঁজ হয়েছেন, সেই থানায় আমরা যেতে বলেছিলাম স্বজনদের। সর্বশেষ আমার থানায় জিডি হয়েছে। কাউকে হয়রানি করা হয়নি।’
অভিযোগ অস্বীকার করে টেকনাফ থানার ওসি আবদুল হালিম বলেন, ‘তারা সদর থানায় জিডি করায় আমরা জিডি না নিয়ে স্বজনদের অভিযোগের পরপরই তাদের উদ্ধারে কাজ শুরু করি। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত হওয়ার পরপরই স্বজনদের অভিযোগটি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়।’
এদিকে তিন বন্ধুর অপহরণের পেছনে দুই রোহিঙ্গা নারীর জড়িত থাকার তথ্য উঠে এসেছে। রুবেলের ভাগনি রুপা আক্তার বলেন, ‘রুবেল মামা বিয়ের জন্য পাত্রী খুঁজছিলেন। এর মধ্যে কোহিনুর নামে এক রোহিঙ্গা নারীর ফাঁদে পড়েন তিনি। সেই কোহিনুর ও মিনা নামের দুই নারী কৌশলে মামা ও তার বন্ধুদের টেকনাফ নিয়ে অপহরণকারীদের হাতে তুলে দেয়।’
পুলিশও কোহিনুরসহ তার সহযোগীদের খুঁজছে বলে জানিয়েছে।
কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার রাজেশপুর ইকো পার্ক। এখানে শালবাগানের সঙ্গে গড়ে তোলা হয়েছে বিশাল কাজুবাদামের বাগান। বছরের এ সময়টায় দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে কাজুবাদাম বিক্রি হয়।
বাগানে গিয়ে দেখা যায়, অসংখ্য কাজুবাদাম ঝুলছে গাছে। কোনোটির বাদাম এখনো কাঁচা, কোনটি পেকে গেছে। ঠিকাদার তার ফল সংগ্রহ করছেন। পাকা রঙিন ফলের গা থেকে ভেসে আসে মিষ্টি ঘ্রাণ। ফলের ওপরের অংশ থেকে বাদাম পাওয়া যায়, নিচের অংশ থেকে জুস, ভিনেগার ও মসলা তৈরি করা হয়।
বাংলাদেশের মাটিতে চীনাবাদাম খুব ভালো উৎপন্ন হলেও কাজুবাদামের চাষ খুব একটা দেখা যায় না। তবে বর্তমানে রাঙামাটি, কুমিল্লাসহ বেশ কিছু পাহাড়ি এলাকায় এর চাষ হচ্ছে।
রাজেশপুর ইকোপার্কের বনকর্মীরা জানান, পার্কের বিশাল এলাকাজুড়ে চাষ হচ্ছে কাজুবাদাম। মানব শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি জোগান দেয়া এই কাজুবাদাম আসন্ন বছরগুলোতে রপ্তানিও করা যাবে। সঠিকভাবে পরিচর্যা হলে কাজুবাদাম বাগান থেকে বাড়বে সরকারের রাজস্ব আয়।
কুমিল্লা গাডের্নার্স সোসাইটির পরিচালক ডা. আবু মোহাম্মদ নাঈম বলেন, ‘কাজুবাদাম হৃৎপিণ্ডের শক্তি বৃদ্ধি করে। হাড় ও দাঁতের গঠনে সাহায্যে করে। ক্যানসার প্রতিরোধ ও হজমে সাহায্যে করে। ডায়াবেটিস রোগীর জন্য উপকারী ও অবসাদ দূর করে।’
সদর দক্ষিণ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শুভাশিস ঘোষ বলেন, ‘শালবনের মধ্যে কাজুবাদাম বাগানটি গড়ে উঠেছে। আমি যতটুকু জানি ৩৫ বছর ধরে এই বাগানটি থেকে ফল সংগ্রহ করা হয়। বাগানটির রক্ষণাবেক্ষণসহ ফল উৎপাদন বাড়াতে উপজেলা প্রশাসনের সর্বোচ্চ সহযোগিতা থাকবে।’
রাজেশপুর ইকোপার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির বলেন, ‘এখানে সীমানাপ্রাচীর নেই। অনেকে কাজুবাদামের গুরুত্ব বোঝেন না। গাছের ডাল, ফল ছিঁড়ে নষ্ট করে ফেলেন। বনকর্মীদের অক্লান্ত পরিশ্রমে বাগানটি ফল দিয়ে যাচ্ছে। বনকর্মীরা প্রণোদনা পেলে বাগানটিতে ফলের পরিমাণ বাড়বে। এর থেকে সরকারের রাজস্ব আয় আরও বাড়বে।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুমিল্লার উপপরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমরা দুই বছর ধরে সদর, সদর দক্ষিণ ও লালমাই উপজেলার বিভিন্ন স্থানে কাজুবাদামের চাষ করেছি। কম্বোডিয়া, ভারত ও ভিয়েতনামের বীজ লাগিয়েছি। এতে ভালো ফল আসবে। তা রপ্তানিও করা যাবে। আমাদের কিছু গাছে ফুল এসেছে। আশা করছি এক-দুই বছরের মধ্যে ভালো ফল পাব।’
সুনামগঞ্জে বসত বাড়ির জায়গা নিয়ে বিরোধের জেরে চাচাত ভাইয়ের দায়ের কোপে বোনের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার সকালে জামালগঞ্জ উপজেলার ভীমখালী ইউনিয়নের মল্লিকপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত জেসমিন বেগম (৩৫) ওই গ্রামের মৃত আনেয়ার হোসেনের স্ত্রী। এ ঘটনায় একজনকে আটক করেছে পুলিশ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শনিবার সকালে জামালগঞ্জ উপজেলার মল্লিকপুর গ্রামের গুঞ্জর আলীর ছেলে রেজাউল করিম (৩০) ও তার বোন নিহত জেসমিন বেগম তাদের জায়গায় পাকা ঘর নির্মাণ করতে যান। কিন্তু তাদের কাজে বাধা দেয় চাচা মাহমুদ আলী (৬০) ও তার ছেলে মো. আশিকুল (৩০)। এক পর্যায়ে সেখানে উভয় পক্ষের মধ্যে মারামারি শুরু হলে মো. আশিকুল জেসমিন বেগমকে দা দিয়ে গলায় কোপ দেয়। তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থল থেকে গুরুতর আহত জেসমিনকে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ব্যাপারে জামালগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর মোহাম্মদ আব্দুন নাসের বলেন, ঘটনাস্থল থেকে মৃত আব্দুল মন্নাফের ছেলে মাহমুদ আলীকে (৬০) আটক করা হয়েছে। এ ব্যাপারে মামলার প্রস্তুতি চলছে।