শুক্রবার, ২ মে ২০২৫
১৮ বৈশাখ ১৪৩২

সাতক্ষীরায় স্বর্ণ ডাকাতিতে স্থানীয় পুলিশ

আপডেটেড
১০ এপ্রিল, ২০২৩ ০৮:৩৩
নুরুজ্জামান লাবু
প্রকাশিত
নুরুজ্জামান লাবু
প্রকাশিত : ১০ এপ্রিল, ২০২৩ ০৮:৩১

ঢাকা থেকে প্রাইভেট কারে দুই কেজি স্বর্ণ নিয়ে সাতক্ষীরায় এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে যাচ্ছিলেন চালক সাইফুল। সাতক্ষীরার চুকনগর থেকে সেই গাড়িটি অনুসরণ করে দুর্বৃত্তরা। পাটকেলঘাটা থানার শাকদহ ব্রিজের কাছে গাড়িটি থামানো হয়। এরপর চালককে চোখ বেঁধে তোলা হয় একটি মাইক্রোবাসে। আর তার গাড়িটি পড়ে থাকে সাতক্ষীরা বাইপাসে।

২৮ ফেব্রুয়ারি ভোররাতে চালক সাইফুলকে হাত-পা বেঁধে মাইক্রোবাস থেকে নামিয়ে দেয়া হয় বাইপাসের জামতলায়। স্থানীয় এক দোকানদারের মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বিষয়টি স্বর্ণ ব্যবসায়ী ও গাড়ির মালিককে জানান চালক। মালিক ভোরে গিয়ে চালক ও গাড়ি উদ্ধার করেন।

সাধারণ দৃষ্টিতে মনে হবে পেশাদার কোনো ডাকাত দল এই স্বর্ণ লুট করেছে। কিন্তু অনুসন্ধান বলছে, স্বর্ণের বারসহ গাড়িটি নেয়া হয়েছিল সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ লাইনসের ভেতর, জেলা গোয়েন্দা কার্যালয়ে। আর স্বর্ণ লুটের সঙ্গে জড়িত খোদ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা। বিষয়টি জানতেন জেলা পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামানও। তবে তিনি গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যদের চিহ্নিত করে আইনগত কোনো ব্যবস্থা নেননি। উল্টো সেই ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধেই ডাকাতির মামলা দিয়েছে পুলিশ। তাকে গ্রেপ্তারের জন্য জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়েছে। শেখ সফিউল্লাহ মনি নামে সেই ব্যবসায়ী এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

গত ২ এপ্রিল ব্যবসায়ী শেখ সফিউল্লাহ পুলিশ সদর দপ্তরের আইজিপি কমপ্লেইন সেলে ঘটনা উল্লেখ করে লিখিত অভিযোগ করেন। পুলিশ সদর দপ্তরে দেয়া অভিযোগ এবং ব্যবসায়ীর ভাষ্য নিয়ে অনুসন্ধান করেছে দৈনিক বাংলা।

প্রাইভেট কারের চালক সাইফুল দৈনিক বাংলাকে বলেন, “শাকদহ ব্রিজের ওখানে দুইটা ট্রাক দেখে আমি গাড়িটা থামাই। হঠাৎ চোখে টর্চলাইট ধরে আমাকে কয়েকজন টেনে গাড়ি থেকে নামায়। এরপর হাতে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে ও চোখ বেঁধে কয়েকজন আমাকে একটি মাইক্রোবাসে তোলে। গাড়ির ভেতর মারধর করা হয় আর ‘মাল’ কোথায় তা জানতে চায়। আমি যতই বলি যে আমি কিছু জানি না, তারপরও তারা মারতে থাকে। দুবার গাড়ি থেকে নামিয়ে মাটিতে বসিয়ে গুলি করার ভয়ও দেখায়। প্রায় ৩ থেকে সাড়ে ৩ ঘণ্টা পর আমাকে রাস্তার পাশে নামিয়ে দেয়।”

অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা মূল্যমানের দুই কেজি স্বর্ণের বার বহনকারী টয়োটা ব্র্যান্ডের প্রাইভেট কারটি (ঢাকা মেট্রো-গ-২৫-৯৯৩৩) গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকা থেকে সাতক্ষীরার উদ্দেশে রওনা দেয়। গাড়িতে প্রহরী অ্যাপের একটি জিপিএস লাগানো ছিল। গাড়িটি ওই দিন দিবাগত রাত সোয়া ১টার দিকে খুলনা থেকে সাতক্ষীরা সড়কের শাকদহ ব্রিজ এলাকায় পৌঁছে। সেখানে বালুর ট্রাক দিয়ে ব্যারিকেড দিয়ে গাড়িটি থামানো হয়। জিপিএসের তথ্য বলছে, ১১ মিনিটের মাথায় গাড়িটি গিয়ে থামে ১১ কিলোমিটার দূরে জেলা পুলিশ লাইনসের ভেতরে। সেখানে প্রায় ২ ঘণ্টা ৪০ মিনিট গাড়িটির অবস্থানের তথ্য পাওয়া যায়। পরে রাত ৩টা ৫০ মিনিটে গাড়িটি সেখান থেকে বের করে সাতক্ষীরা বাইপাস এলাকায় ফেলে রাখা হয়।

সরেজমিন সাতক্ষীরায় দেখা গেছে, খুলনা থেকে সাতক্ষীরায় যাওয়ার পথে শাকদহ এলাকা। শাকদহের পুরোনো সেতুর পাশেই নতুন সেতুর কাজ চলছে। সেখানে বালু আনা-নেয়াসহ সেতুর কাজে অনেক গাড়ি দেখা গেছে। এই প্রতিবেদকও একটি প্রাইভেট কারে শাকদহ সেতু থেকে পুলিশ লাইনস পর্যন্ত গিয়ে প্রহরী অ্যাপের মতো সমান দূরত্বের বিষয়টির সত্যতা পেয়েছেন।

সরেজমিনে পুলিশ লাইনসে গিয়ে দেখা যায়, পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের নির্মাণকাজ চলার কারণে পুলিশ লাইনসের ভেতরেই পুনাক ভবনকে পুলিশ সুপারের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। একদিকে পুলিশ লাইনস স্কুল ও মসজিদ, আরেকদিকে জেলা গোয়েন্দা কার্যালয় (ডিবি)। ভেতরে প্রবেশে কড়াকড়ি। এই প্রতিবেদক রসুলপুরের গেট দিয়ে প্রবেশ করে প্রধান ফটক দিয়ে বের হতে চাইলে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরা বাধা দেন। রাতে সাধারণ মানুষের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষেধ বলেও জানান নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরা।

প্রহরী অ্যাপের মাধ্যমে গাড়িটি যে পুলিশ লাইনস এলাকায় নেয়ার তথ্য জানা গেছে, তার সত্যতা পাওয়া গেছে একটি সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজেও। সাতক্ষীরা-যশোর সড়কের পাশে অবস্থিত জেলা পুলিশ লাইনসের প্রধান ফটকের বিপরীতে ফেমাস ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি রড-সিমেন্টের দোকান আছে। ওই দোকানে লাগানো সিসিটিভি ক্যামেরার একটিতে সড়কের চলাচল দেখা যায়। সেই সিসি ক্যামেরায় দেখা গেছে, প্রহরী অ্যাপের সময়ের সঙ্গে মিল রেখে একই সময়ে পুলিশ লাইনসের ভেতর থেকে প্রথমে দুটি মোটরসাইকেল ও পেছনে একটি প্রাইভেট কার বেরিয়ে যাচ্ছে। পুলিশ লাইনসের ভেতর থেকে বের হয়ে সড়কে ওঠার পর প্রাইভেট কারটির হেডলাইট জ্বালানো হয়।

ধারণা করা হচ্ছে, প্রাইভেট কারের সামনের দুই মোটরসাইকেলে ছিলেন সাদা পোশাকের পুলিশ সদস্য। কিন্তু তাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে প্রাইভেট কারটি দেখে এর মালিক শেখ শফিউল্লাহ তার গাড়ি বলে নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, জিপিএস দেখে গাড়িটি তিনি সাতক্ষীরা-কলারোয়া সড়কের কদমতলা মোড় থেকে ডান দিকের একটি ছোট রাস্তার পাশ থেকে উদ্ধার করেছিলেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, চালক সাইফুলকে মাইক্রোবাস থেকে সাতক্ষীরা বাইপাসের লাপসা গোলচত্বর থেকে বড় জামতলা যাওয়ার আগে একটি ইটভাটার পাশে নামিয়ে দেয়া হয়। তিনি সেখান থেকে হেঁটে ২০০ গজ দূরে বড় জামতলার একজন চা ও মুদি দোকানদারের কাছ থেকে মোবাইল নিয়ে বিষয়টি মালিককে জানিয়েছিলেন। সাইফুল যে মুদি দোকানদারের মোবাইল থেকে কল করেছিলেন তার নাম আজিজুর রহমান। তার দোকানের নাম আমেনা ভ্যারাইটিজ স্টোর। আজিজুর রহমান দৈনিক বাংলাকে জানান, তিনি প্রতিদিন ভোর সাড়ে ৪টার দিকে দোকান খোলেন। একদিন ভোরে দোকান খোলার সময় একটি লোক খোঁড়াতে খোঁড়াতে তার দোকানে এসে শাকদহ ব্রিজের কাছ থেকে পুলিশের চেকপোস্টে তার গাড়ি ছিনিয়ে নিয়ে গেছে বলে জানায়। তাকে বেধড়ক মারধরের কথাও জানান তিনি। তিনি (চালক সাইফুল) তার মহাজনকে (গাড়ির মালিক) জানানোর জন্য মোবাইল থেকে একটা কল করতে চান।

আজিজুর রহমান দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘আমি মোবাইলটা দিই। আমি তার একটা ছবিও তুলে রাখছিলাম। তার শরীরে কাদা-মাটি ছিল। দেখে মনে হয়েছে তাকে অনেক মারধর করা হয়েছিল। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটতেছিল। ঘণ্টাখানেক পর একটা প্রাইভেট কার এলে সে ওইটাতে উঠে চলে যায়।’

অনুসন্ধানে জানা গেছে, যে মাইক্রোবাসের মাধ্যমে স্বর্ণ লুটের এই অভিযান চালানো হয় সেটির নম্বর হলো ঢাকা মেট্রো-চ-১৫-১৮০৫। গাড়িটির মালিকানা শাহ জহির উদ্দিন ফকির নামে ঢাকার এক ব্যক্তির। তবে গাড়িটি বর্তমানে ব্যবহার করেন সাতক্ষীরা শহরের চালতেতলা মোড় বাটকেখালীর বাসিন্দা জাকির হোসেন। জাকির নিজেই ওই গাড়িটি ভাড়ায় চালান।

জানা গেছে, জাকিরের মাইক্রোবাসটি মাঝেমধ্যেই জেলা গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা ভাড়ায় ব্যবহার করেন। প্রযুক্তির সহায়তায় জাকিরের সঙ্গে আলোচিত এই ঘটনার আগে ও পরে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের এসআই ইন্দ্র মল্লিকসহ অনেকের সঙ্গে যোগাযোগের তথ্য পাওয়া গেছে। জাকির নিজেও জেলা গোয়েন্দা পুলিশের কাছে তার গাড়িটি ভাড়া দেয়ার কথা এই প্রতিবেদকের কাছে স্বীকার করেন। তবে ২৮ ফেব্রুয়ারি রাতের সেই অভিযানের বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না বলে জানান।

জাকিরের মাইক্রোবাসটি যে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের অভিযানের জন্য ব্যবহার করা হয়, তা স্বীকার করেছেন জেলা গোয়েন্দা পুলিশের দ্বিতীয় কর্মকর্তা এসআই ইন্দ্র মল্লিক। তিনি দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘জাকিরের গাড়িটা আমরা ব্যবহার করি। কিন্তু ওই রাতের (২৮ ফেব্রুয়ারি রাতের কথিত অভিযান) কথা আমি জানি না। আমি কোনো অভিযানে যাইনি, অন্য কেউ গেছে কি না জানি না। কারণ সব অপারেশন সম্পর্কে তো আমার জানার কথা নয়।’

ব্যবসায়ী শেখ শফিউল্লাহ জানান, ঘটনার পরের দিন তিনি বিষয়টি জেলা পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামানের বাংলোতে গিয়ে বিস্তারিত জানান এবং স্বর্ণের বারগুলো উদ্ধার করে দেয়ার জন্য অনুরোধ করেন। পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামান তার কাছে কোনো প্রমাণ রয়েছে কি না জানতে চান। ব্যবসায়ী শফিউল্লাহ প্রমাণ দেবেন জানালে তিনি ৯ মার্চ পর্যন্ত সময় নেন। পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগের জন্য ব্যস্ত থাকবেন জানিয়ে ৯ মার্চের পর বিষয়টি দেখবেন বলে তাকে আশ্বস্ত করেন। এমনকি বিষয়টি নিয়ে থানায় কোনো অভিযোগ দেয়ার প্রয়োজন নেই বলেও জানান।

ব্যবসায়ী শেখ শফিউল্লাহ বলেন, ‘ওই দিনের পর থেকে পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামানের সঙ্গে একাধিকবার দেখা করার চেষ্টা করলেও দেখা করতে পারেননি। পুলিশ সুপারের মোবাইলের হোয়াটসঅ্যাপে একাধিক মেসেজ দিলে তিনি দেখলেও উত্তর দিতেন না।’

শেখ সফিউল্লাহ বলেন, ‘৬ মার্চ রাত আনুমানিক ৮টার দিকে হঠাৎ সাতক্ষীরা শহরে আমার বাসায় জেলা গোয়েন্দা পুলিশের কয়েকজন সদস্য আসেন। এ সময় আমি বাসায় ছিলাম না। তারা বাসার মূল ফটকে এসে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেন। এ সময় বাসার ভেতরে থাকা আমার পরিবারের সদস্যরা ভীতসন্ত্রস্ত হয়। রাত ১১টার দিকে পুলিশ সুপার নিজেই আমাকে ফোন করে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেন। আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই তিনি ফোন কেটে দেন। পরদিন আমার নামে কলারোয়া থানায় একটি মিথ্যা ডাকাতি মামলা দেয়া হয়।’

প্রমাণ মুছে ফেলার চেষ্টা

জেলা গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যদের স্বর্ণের বার ডাকাতি করার বিষয়টি পুলিশ সুপারকে জানানোর পর থেকেই এ-সংক্রান্ত প্রমাণ মুছে ফেলার চেষ্টা শুরু হয়। সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ লাইনসের প্রধান ফটকের বিপরীতে ফেমাস ইন্টারন্যাশনাল নামে যে রড-সিমেন্টের দোকানের সিসিটিভি ক্যামেরায় গাড়ি বের হওয়ার দৃশ্য ধরা পড়েছে, সেটি মুছে দিয়ে যান জেলা গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা। ১ মার্চ ব্যবসায়ী শেখ শফিউল্লাহ বিষয়টি পুলিশ সুপারকে জানানোর পরদিন (২ মার্চ) দুপুর ১২টার পর জেলা গোয়েন্দা পুলিশের এএসআই মাজেদসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য ফেমাস ইন্টারন্যাশনাল নামে ওই প্রতিষ্ঠানে যান। সেখানে গিয়ে তারা সিসিটিভির ফুটেজ মুছে দিয়ে আসেন। কিন্তু প্রযুক্তির সহায়তায় ওই দোকানের ডিলিটকৃত সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছেন এই প্রতিবেদক। দুটি ফুটেজে দেখা গেছে, রাত ৩টা ৫০ মিনিটে পুলিশ লাইনস থেকে দুটি মোটরসাইকেলের এস্কটসহ ব্যবসায়ী শেখ সফিউল্লাহর গাড়িটি বের হয়ে যাচ্ছে। মোটরসাইকেল দুটি হেডলাইট জ্বালিয়ে পুলিশ লাইনস থেকে বের হলেও গাড়িটির হেডলাইট বন্ধ ছিল। মূল সড়কে আনার পার প্রাইভেট কারের হেডলাইট জ্বালানো হয়। এ ছাড়া সিসিটিভি ফুটেজে এএসআই মাজেদের নেতৃত্বে যে সিসিটিভি ফুটেজ ডিলিটের চেষ্টা করা হচ্ছে তাও দেখা গেছে। জানতে চাইলে এএসআই মাজেদ দৈনিক বাংলার কাছে ফুটেজ ডিলিট করার বিষয়টি অস্বীকার করেন। পুলিশ লাইনসের গেটের সামনের দোকানে তিনিসহ অন্যরা এমনিতেই যাওয়ার দাবি করেন। ফেমাস ইন্টারন্যাশনালের মালিক মমিনুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কিছু জানেন না বলে এড়িয়ে যান।

মামলা দিয়ে সেই ব্যবসায়ীকে হয়রানির চেষ্টা

গত ৭ মার্চ সাতক্ষীরার কলারোয়া থানায় একটি ডাকাতির মামলা করেন এসআই অনীল মুখার্জী। মামলার এজাহারে বলা হয়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ৬ মার্চ দিবাগত রাত ১টা ১০ মিনিটে এসআই অনীল মুখার্জী জানতে পারেন, সাতক্ষীরা-যশোর হাইওয়ের ৮ নম্বর কেরালকাতা ইউনিয়নের ইলিশপুর গ্রামের কোটার মোড় এলাকায় দুটি প্রাইভেট কার নিয়ে ডাকাত দলের সদস্যরা অবস্থান করছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মীর আসাদুজ্জামানসহ রাত ১টা ৪০ মিনিটে অভিযান চালান। এ সময় ডাকাত দলের সঙ্গে তাদের গুলিবিনিময় হয়। পরে ঘটনাস্থল থেকে ছয়জন ডাকাত সদস্যকে একটি বিদেশি অস্ত্রসহ গ্রেপ্তারের দাবি করেন। ওই মামলার এজাহারে পলাতক হিসেবে ব্যবসায়ী শেখ শফিউল্লাহকেও আসামি করা হয়।

এ ছাড়া গত ৫ এপ্রিল কলারোয়া থানার এসআই ফরিদ আহমেদ জুয়েল বাদী হয়ে নাশকতার অভিযোগে একটি মামলা করেন। মামলায় স্থানীয় জামায়াতের আট নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই মামলায় পলাতক আসামিদের তালিকার সর্বশেষে শেখ শফিউল্লাহর নাম জুড়ে দেয়া হয়েছে।

ব্যবসায়ী শফিউল্লাহ বলছেন, তার স্বর্ণ লুটের পর তিনি তা ফেরত চাওয়ার কারণেই পুলিশ তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। তিনি একজন ব্যবসায়ী। তার ডাকাতি করতে যাওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না। হয়রানি করার জন্য পুলিশ তার মোটরসাইকেলের দুটি শোরুম বন্ধ করে রেখেছিল। এমনকি শোরুম থেকে নতুন তিনটি মোটরসাইকেলও নিয়ে যায় সদর থানা পুলিশ। পরে অবশ্য কাগজপত্র দেখানোর পর রাতে থানা থেকে ফেরত দেয়া হয়েছে।

শফিউল্লাহ বলেন, ‘আমি ডাকাত হলে নাশকতার মামলায় আমার নাম দিয়েছে কেন? ডাকাতরা রাজনীতি করে নাকি? একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাকে হয়রানি করা হচ্ছে।’

শেখ শফিউল্লাহর জুয়েলারি ব্যবসায়িক অংশীদার সঞ্জয় কুমার দাস জানান, ‘গত ২৯ মার্চ রাত ২টার দিকে হঠাৎ করে সদর থানা পুলিশ তাকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায়। তার নামে কোনো মামলা-মোকাদ্দমা নেই। পরদিন সারা দিন থানায় বসিয়ে রেখে রাত ১২টার দিকে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। এর আগে তার মালিকানাধীন (ঢাকা মেট্রো-গ-৩৭-৭৭৮৫) গাড়িটিও নিয়ে সদর থানায় আটকে রাখা হয়েছিল। পাঁচ দিন পর গাড়িটি ছাড়া হয়েছে।

সঞ্জয় কুমার দাস বলেন, ‘পুলিশ তার কাছে শফিউল্লাহর সন্ধান চেয়েছিল। কিন্তু শফিউল্লাহর অবস্থান তিনি জানেন না জানালেও তাকে অকারণে হেনস্তা করা হয়েছে। পুলিশ তার ক্ষতি করতে পারে বলে তিনিও ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে দিন পার করছেন।

স্বর্ণকাণ্ডে চাকরিচ্যুত হয়েছিলেন এক এসপি, তবু বন্ধ হয়নি লুট

সীমান্ত জেলা সাতক্ষীরাকে বলা হয় চোরাকারবারির স্বর্গরাজ্য। বৈধ ব্যবসার আড়ালে এখানে অনেকেই চোরাকারবারির সঙ্গে জড়িত। এই সুযোগকেই কাজে লাগান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর স্থানীয় সদস্যরা। বিশেষ করে স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে স্বর্ণ ছিনিয়ে নিয়ে অন্য মামলায় জেলে পাঠানোর তথ্য পাওয়া যায়। তবে ব্যবসায়ীরা হয়রানির ভয়ে মুখ খুলতে চান না। বেশির ভাগ ব্যবসায়ীই প্রশাসনের সঙ্গে ‘বিশেষ খাতির’ রেখে চলতে চান।

২০১৬ সালের অক্টোবরে এক ব্যক্তির কাছ থেকে ১২০ ভরি স্বর্ণ ছিনিয়ে নিয়ে তাকে ইয়াবা মামলায় ফাঁসিয়ে দিয়েছিলেন সাবেক এসপি আলতাফ হোসেন। ওই ঘটনা ফাঁস হওয়ার পর ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয় পুলিশ প্রশাসনে। ছয় বছর পর গত বছরের ১৮ মে তাকে চাকরিচ্যুত করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ২০১৬-এর জুলাই থেকে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

স্থানীয় সূত্র বলছে, এসপির চাকরিচ্যুতির পরও একই ঘটনা ঘটেই চলছে। সাতক্ষীরার স্থানীয় মানুষের মুখে মুখে এসব গল্প শোনা যায়। কিন্তু ভুক্তভোগীরা নিরাপত্তাহীনতার কারণে এসব বিষয়ে কথা বলতে চান না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাতক্ষীরার একজন ব্যবসায়ী বলেন, সাতক্ষীরায় বিভিন্ন সময়ে কর্মরত পদস্থ কর্মকর্তা থেকে বিভিন্ন থানার ওসিদের সম্পত্তির খোঁজখবর করলেই সব সত্য বেরিয়ে আসবে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামান প্রথমে তার জেলায় এমন কোনো ঘটনা নেই বলে জানান। পরবর্তী সময়ে তিনি জানান, যিনি অভিযোগ করেছেন তিনি পলাতক। তাকে গ্রেপ্তারের জন্য রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। তাকে গ্রেপ্তার করার পর বিস্তারিত জানা যাবে। শেখ শফিউল্লাহকে একজন ডাকাত ও চোরাকারবারি হিসেবে আখ্যায়িত করে পুলিশ সুপার বলেন, ‘তার সঙ্গে আমার কোনো যোগাযোগ নেই।’ এই প্রতিবেদক তার কাছে নিজস্ব অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে জিপিএস ও সিসিটিভি ফুটেজের কথা জানালে তিনি পুলিশ লাইনসের গেট বন্ধ থাকে এবং সেখানে কোনো গাড়ি ঢোকার সুযোগ নেই বলে দাবি করেন। ওই ব্যবসায়ী নিজেই ঘটনাটি সাজিয়েছে কি না তা তারা খতিয়ে দেখছেন বলেও মন্তব্য করেন। পরে এই প্রতিবেদককে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনি তদন্ত করে যদি কোনো পুলিশের জড়িত থাকার তথ্য পান, তবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’

পুলিশ সদর দপ্তরের আইজিপি কমপ্লেইন সেলের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক বেলাল উদ্দিন দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘আমাদের এখানে অসংখ্য অভিযোগ আসে। এ রকম একটি ঘটনার কথা শুনেছিলাম, কিন্তু অভিযোগটি ফাইল হিসেবে আমার টেবিলে এখনো আসেনি। অভিযোগটি আমরা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেব।’


সড়ক সুরক্ষায় কাজে আসছে না এক্সেল লোড কন্ট্রোল স্টেশন

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বেনাপোল প্রতিনিধি

যশোর-বেনাপোল মহাসড়ক সুরক্ষায় অতিরিক্ত পণ্য পরিবহন বন্ধে বেনাপোল এক্সেল লোড কন্ট্রোল স্টেশনটি পরিচালনায় বছরে সরকারের ২ কোটি ২৩ লাখ টাকা খরচ হলেও কোনো সুফল নেই। সড়কে পণ্য পরিবহনকারী বাণিজ্যিক সংগঠনগুলোর সহযোগিতা না পাওয়ায় সেবা দিতে পারছে না। এদিকে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ ভোমরা ও নওয়াপাড়া বন্দর সড়ক বাদ রেখে কেবল বেনাপোল সড়কে স্কেল চালু করলে এ রুটে বাণিজ্য কমার আশঙ্কায় স্কেল ব্যবহারে তাদের আপত্তি রয়েছে।

প্রতিবছর সড়ক উন্নয়নে সরকারি-বেসরকারি সংস্থা হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করছেন। তবে পণ্য পরিবহনকারী ট্রাকচালকরা সড়ক আইন না মানায় অল্প দিনেই সড়কগুলো ব্যবহারের অনুপোযোগী হয়ে পড়ছে। এতে সড়ক ব্যয় যেমন বাড়ছে তেমনি বাড়ছে দুর্ঘটনা। সড়ক পথে ভারতের সঙ্গে যে বাণিজ্য হয় যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় তার ৮০ শতাংশ হয় বেনাপোল স্থলবন্দর ব্যবহার করে। বাংলাদেশ-জাপান বন্ধুত্বের সম্পর্ক বাড়াতে জাপানি এনজিও সংস্থা জাইকার অর্থায়নে ১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০২২ সালে যশোর-বেনাপোল মহাসড়ক সুরক্ষায় বেনাপোল পৌর গেট এলাকায় সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) ওয়িং স্কেল স্থাপন করে। পরবর্তীতে ২০২৪ সালের ১৫ আগস্ট ওয়িংস্কেল পরিচালনায় ৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা চুক্তিতে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ইউডিসিকে টেন্ডার দেয় সরকার। গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে কর্মকর্তা প্রকৌশলী ও কর্মচারীসহ স্কেল পরিচালনায় ৪২ জন কাজ করছেন। নিরাপত্তায় রয়েছে ৭ জন আনসার সদস্য। অতিরিক্ত পণ্য পরিবহনে প্রথম টনে ৫ হাজার ও দ্বিতীয় টনপ্রতি ১০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। তবে স্কেলে অতিরিক্ত পণ্য শনাক্ত হলেও জরিমানা আদায় বা ওভার লোড বন্ধে কোনো প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নিতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। এতে সরকারের বিপুল পরিমাণে অর্থ বিফলে যাচ্ছে এবং অতিরিক্ত পণ্য বহনে সড়ক নষ্ট হচ্ছে। পরিবহন ব্যবসায়ীরা বলেন, নওয়াপাড়া ও ভোমরা বন্দর সড়ক বাদ রেখে কেবল বেনাপোলে স্কেল চালু করলে এ রুটে ব্যবসা কমে আসবে। পার্শ্ববর্তী বন্দরগুলোতে স্কেল চালু হলে বেনাপোল এক্সেল লোড কন্ট্রোল স্টেশনটি ব্যবহার করবেন ব্যবসায়ীরা।

বেনাপোল ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি মালিক সমিতির সভাপতি আতিকুজ্জমান সনি বলেন, পদ্মা নদীর এপারে বেনাপোলসহ আরও চারটি বন্দর রয়েছে। ভোমরা বন্দর, নওয়াপাড়া বন্দর ও মোংলা বন্দর। ভোমরা বন্দর, নওয়াপাড়া বন্দর ও মোংলা বন্দরে ওজন নিয়ন্ত্রণ স্কেল স্থাপন না করে বেনাপোল বন্দরসংলগ্ন সড়কে ওজন নিয়ন্ত্রণ স্কেল স্থাপন করে আমাদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, সড়ক সুরক্ষায় বেনাপোল যশোর সড়কে ওজন স্কেল স্থাপনকে সাধুবাদ জানায়। তবে অন্য তিনটি বন্দরে ওজন স্কেল স্থাপন করে একত্রে চারটি বন্দর সংলগ্ন সড়কে ওজন স্কেল চালু করার দাবি জানায়। শুধু বেনাপোলে সড়কে ওজন স্কেল চালু করা করা হলে ব্যবসায়ীরা বেনাপোল বন্দর ছেড়ে অন্য বন্দরে চলে যাবে। ক্ষতিগ্রস্ত হবে বেনাপোল বন্দর। এ জন্য এ স্কেল ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে না।

বেনাপোলের ব্যবসায়ী সাজেদুর রহমান জানান, বেনাপোল-যশোর সড়কের পৌর গেট এলাকায় ওজন নিয়ন্ত্রণ স্কেল স্থাপন করার ফলে ব্যবসায়ীদের মাঝে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিবেশী মোংলা, ভোমরা ও নওয়াপাড়া বন্দরে কোনো ওজন নিয়ন্ত্রণ স্কেল স্থাপন করা হয়নি। বেনাপোল সড়কের ওজন স্কেল চালু করা হলে এ বন্দর দিয়ে ব্যবসা করা সম্ভব নয়। অন্য বন্দর দিয়ে ট্রাকে মাল একটু কম বা বেশি হলেও কোনো সমস্যা হবে না। তাহলে কেন আমি এ বন্দর দিয়ে মাল এনে জরিমানা দিব? পার্শ্ববর্তী অন্য বন্দরগুলোয় ওজন নিয়ন্ত্রণ স্কেল চালু করা হলে আর কোনো সমস্যা থাকবে না।

নাভারন হাইওয়ে পুলিশের ওসি রোকনুজ্জামান জানান, বেনাপোল দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর। এ মহাসড়ক দিয়ে প্রতিদিন শত শত পণ্যবাহী ট্রাক যাতায়াত করে থাকে। এ বন্দরে আসা পণ্যবাহী ট্রাকগুলো বেনাপোল-যশোর সড়ক ব্যবহার করে থাকেন। ট্রাকগুলোতে অতিরিক্ত পণ্য বহন করলেও কোনো ওজন স্লিপ না থাকার কারণে আমরা তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছি না। পণ্যবাহী ট্রাকের ওজন নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বেনাপোল পৌর গেটে ওজন নিয়ন্ত্রণ স্কেল স্থাপন করা হয়েছে। তবে ব্যবসায়ীদের অসহযোগিতার কারণে কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ওজন নিয়ন্ত্রণ স্কেলটি চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। এ স্কেলটি চালু করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।


কাজের জন্য কক্সবাজার গিয়ে নিখোঁজ ৬

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
ইউএনবি

কাজের উদ্দেশ্যে কক্সবাজার গিয়ে পাঁচদিন ধরে নিখোঁজ রয়েছেন সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার একই গ্রামের পাঁচ তরুণসহ ছয়জন। তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও কারও কোনো সন্ধান পাচ্ছেন না পরিবারের সদস্যরা।

নিখোঁজরা হলেন— জকিগঞ্জ উপজেলার ৪ নম্বর খলাছড়া ইউনিয়নের পশ্চিম লোহারমহল গ্রামের মৃত লুকুছ মিয়ার ছেলে রশিদ আহমদ (২০), ফারুক আহমদের ছেলে মারুফ আহমদ (১৮), আজির উদ্দিনের ছেলে শাহিন আহমদ (২১), মৃত দুরাই মিয়ার ছেলে এমাদ উদ্দিন (২২), সফর উদ্দিনের ছেলে খালেদ হাসান (১৯) ও মৃত সরবদির ছেলে আব্দুল জলিল (৫৫)।

তারা সবাই উপজেলার ৪ নম্বর খলাছড়া ইউনিয়নের পশ্চিম লোহার মহল গ্রামের বাসিন্দা।

নিখোঁজদের পরিবারের সদস্যরা জানায়, মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) বিকালে সিলেট থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন তারা। পরদিন ১৬ এপ্রিল (বুধবার) সকালে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে পৌঁছা পর্যন্ত পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও এরপর থেকে তাদের সকলের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।

এদিকে পুলিশ বলছে, মোবাইলের লোকেশন ট্র্যাকিং করে ছয়জনের অবস্থান কক্সবাজার দেখাচ্ছে। পুলিশ এনিয়ে কাজ করছে।

নিখোঁজের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন খলাছড়া ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য সফর উদ্দিন।

নিখোঁজ এমাদ উদ্দিনের চাচাতো ভাই আব্দুল বাছিত দুলাল বলেন, ‘কক্সবাজার পৌঁছার পর জানিয়েছিল পৌঁছেছে। এরপর থেকে তাদের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরিবারের লোকজন কক্সবাজারে যাচ্ছেন। সেখানে গিয়ে থানায় জিডি করবেন। জকিগঞ্জ থানায় অভিযোগ নিচ্ছে না।’

নিখোঁজ রশিদ আহমদের ভাই আব্দুল বাছিত বলেন, ‘৪ থেকে ৫ বছর ধরে রশিদ চট্টগ্রামে কাজ করে। বিভিন্ন সময়ে বাড়িতে আসা যাওয়া ছিল। কক্সবাজার এই প্রথম গিয়েছে। ওইখানে এক ঠিকাদারের অধীনে কাজ করতো। ওইদিনও ওই ঠিকাদারের কাছে তারা যায়। এরপর থেকেই তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ। যদি তারা স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে থাকতো বা কেউ জিম্মি করত, তাহলে তো টাকা পয়সা চাইতো, এরকম কিছুই না। আমাদের ধারণা তাদের ওইখানে যে লোক নিয়েছে, ওই লোকই কিছু করেছে।’

তবে ঠিকাদারের নাম ঠিকানা কোনো কিছু জানাতে পারেননি নিখোঁজ রশিদের ভাই বাছিত।

নিখোঁজ খালেদ হাসানের বাবা ও ইউপি সদস্য সফর উদ্দিন বলেন, ‘তারা প্রায় সময়ে কাজের জন্য চট্টগ্রাম ৫ থেকে ৬ মাস থাকে। ঈদে বা ওয়াজের সময় বাড়িতে আসে। আবার সেখানে গিয়ে কাজ করত। মঙ্গলবারের পর থেকে আর কোনো যোগাযোগ নেই। গতকাল সারারাত থানায় ছিলাম।

তিনি বলেন, ‘ঠিকাদারের মোবাইল বন্ধ। তবে ঠিকাদারের নাম রশিদ ও তার সঙ্গে একজনের নাম বাবুল বলে জানিয়েছেন থানার ওসি। যে জায়গা থেকে তারা নিখোঁজ হয়েছেন সেখানে অভিযোগ দেওয়ার জন্য পুলিশ জানিয়েছে। আমাদের এলাকার আরও লোকজন সেখানে রয়েছেন তারাও তাদের মতো করে খোঁজাখুঁজি করছেন।’

জকিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহিরুল ইসলাম মুন্না বলেন, ‘নিখোঁজ ছয়জনই দীর্ঘদিন ধরে কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে কাজ করেন। এখন হঠাৎ করে পরিবারের লোকজন যোগাযোগ করতে পারছেন না। আমরা গত ১৮ এপ্রিল বিষয়টি অবগত হয়েছি। এরপর থেকে কাজ করছি। মোবাইল ফোন ট্র্যাকিং করে তাদের অবস্থান কক্সবাজার দেখাচ্ছে। এখন পর্যন্ত কারও পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ দেওয়া হয়নি।’


উপদেষ্টার নাম ভাঙিয়ে অর্ধ কোটি টাকা হাতিয়েছেন পিয়ন

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের পিওন সুমনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন ভুক্তভোগীরা।
আপডেটেড ১৭ এপ্রিল, ২০২৫ ১৫:৩০
সোনারগাঁ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি:

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে মাহবুব আলম সুমন নামে মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়ের এক পিয়নের বিরুদ্ধে প্রতারণার মাধ্যমে অর্ধ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন সরকারি অনুদানের কথা বলে ও প্রধান উপদেষ্টার নাম ভাঙিয়ে বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে তাদের কাছ থেকে এ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ করা হয়। গতকাল বুধবার দুপুরে ভুক্তভোগীরা প্রতিকার চেয়ে সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা রহমানের কাছে পৃথক তিনটি অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগকারীরা হলেন- সনমান্দি ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামের নুরউদ্দিনের মেয়ে স্বর্ণা আক্তার, একই ইউনিয়নের গিরদান গ্রামের তোফাজ্জল হোসেনের মেয়ে তাসলিমা বেগম ও নাজিরপুর গ্রামের মুকবিল হোসেনের ছেলে জনি মিয়া।

অভিযোগ থেকে জানা যায়, সোনারগাঁ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মাহমুদা আক্তারের কার্যালয়ের পিয়ন মাহবুব আলম সুমন সনমান্দি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দাদের কাছ থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস দরিদ্র অসহায়দের নগদ দুই লাখ করে টাকা অর্থ সহায়তা দেবেন বলে প্রচার করেন। সেই অর্থ পেতে দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসংস্থান ব্যাংকে ৬ হাজার টাকা করে জমা দিতে হবে বলে জানান। পিওনের কথা বিশ্বাস করে ওই ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের শতাধিক মানুষ তাকে ৬ হাজার টাকা করে ব্যাংকে দেওয়ার জন্য দিয়েছেন। তবে ওই টাকা ব্যাংকে জমা দেওয়ার নাম করে তিনি আবেদনকারীদের মোবাইল ফোনে সান্ত্বনা এসএমএস দিয়েছেন। সেখানে লেখা রয়েছে আপনার অ্যাকাউন্টে পাঁচ হাজার টাকা জমা হয়েছে। তবে বিষয়টি আবেদনকারীদের সন্দেহ হলে দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসংস্থান ব্যাংকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সেখানে তাদের নামে কোনো অ্যাকাউন্ট নেই। তাছাড়া সেখানে কোনো প্রকার টাকা-পয়সা জমা হয়নি।

অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, প্রধান উপদেষ্টার অনুদানের কথা বলে নগদ টাকা ছাড়াও সরকারি ঘর পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে প্রায় ৩২ জনের কাছ থেকে তিনি এক থেকে দেড় লাখ, গাভী দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে ২৬ জনের কাছ থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা করে হাতিয়ে নিয়েছেন। এ ছাড়া মাতৃত্বকালীন ভাতা, বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতা, খাদ্য ভাতা পাইয়ে দেওয়ার জন্যও টাকা নিয়েছেন।

ভুক্তভোগী স্বর্ণা আক্তার জানান, তারা গরিব মানুষ। মাহবুব আলম সুমন মৎস্য কর্মকর্তার পরিচয়ে প্রধান উপদেষ্টার অনুদান দেওয়ার কথা বলে তাদের কাছ থেকে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নিয়েছেন। তারা তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।

সনমান্দী ইউনিউনের আরেক ভুক্তভোগী তাছলিমা বেগম জানান, তাদের এলাকার অনেকের থেকেই বাড়ি ও গাভী দিবে বলে এক থেকে দেড় লাখ টাকা টাকা নিয়েছেন। অফিসে এসে জানতে পেরেছি তিনি আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করে টাকা নিয়েছেন।

অভিযুক্ত পিওন মাহবুব আলম সুমনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। তাকে ক্ষুদে বার্তা দেওয়া হলেও কোনো উত্তর আসেনি।

সোনারগাঁ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মাহমুদা আক্তার বলেন, এ বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। তার বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে তাকে শোকজ করা হয়েছে। তদন্তে সত্যতা পেলে বিচারের আওতায় নিয়ে আসা হবে।

সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা রহমান বলেন, ‘আমার কাছে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ দিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’


অনিয়ম-দুর্নীতিতে হাবুডুবু খাচ্ছে কৃষি অফিস

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
কমলনগর (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি

লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সরকারি বরাদ্দের প্রতিটি খাতেই অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। অফিসের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী দিয়ে কৃষি অফিসকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করছে কর্মকর্তা শাহিন রানা। কৃষকদের জন্য ধান, সয়াবিন, বাদাম ও ভুট্টা কাটার যন্ত্রপাতি বরাদ্দ এনে তা প্রকৃত কৃষকদের না দিয়ে তার পছন্দের লোক দিয়ে অন্যদের কাছে বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া ট্রেনিং, প্রশিক্ষণ ও প্রদর্শনীর নামে কৃষকদের এনে নামমাত্র নাস্তা ও সামান্য নগদ টাকা ধরিয়ে দিয়ে সাদা কাগজ স্বাক্ষর ও টিপসই নিয়ে বিদায় করা হয়। কৃষি অফিসটি এভাবে দুর্নীতি ও অনিয়মের আখড়ায় পরিণত করছেন এই কর্মকর্তা।

অভিযোগ উঠেছে, কৃষক প্রশিক্ষণ, মাঠ দিবস, প্রদর্শনী, কৃষি যন্ত্রপাতিতে ভর্তুকি ও দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের বরাদ্দসহ বিভিন্ন খাতের বরাদ্দের সিংহভাগ লুটপাট হচ্ছে। তারা কৃষকদের নিয়ে একটি ফসলের মাঠ দিবসের অনুষ্ঠান করে ব্যানার টাঙিয়ে ছবি তুলে রেখেই বরাদ্দের টাকা আত্মসাৎ করে চলেছেন। এছাড়া প্রতিটি বরাদ্দের কলাম ফাঁকা রেখেই স্টক-রেজিস্টারে নেওয়া হয় কৃষকদের স্বাক্ষর ও টিপসই।

এসব অভিযোগের সত্যতার খোঁজে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার প্রদর্শনীতে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কৃষকদের জন্য বরাদ্দের চার ভাগের তিন ভাগই চলে যাচ্ছে কৃষি কর্মকর্তা শাহিন রানার পকেটে। সরকারি বরাদ্দের এক-চতুর্থাংশও কৃষকরা পাচ্ছেন না। অফিসের যন্ত্রপাতি (মেশিন) থেকে শুরু করে প্রতিটি খাত থেকে কৃষি কর্মকর্তার বাণিজ্য এখন ওপেন সিক্রেট। বিভিন্ন ট্রেনিংয়ে অংশ গ্রহণকারী কৃষকদের মানসম্মত নাস্তা ও খাবার দেওয়া হচ্ছে না বলেও জানান অন্তত ১৫ জন কৃষক।

বেশির ভাগ কৃষকই জানেন না, তাদের জন্য সরকার কি পরিমাণ বরাদ্দ দিচ্ছে এবং কৃষকরা পাচ্ছেন কতটুকু। তারা বলছেন, আমরা তো এত কিছু জানিও না, আর বুঝিও না। কৃষি অফিসে বরাদ্দের পরিমাণ জানতে চাইলে কিছুই জানায় না। উল্টো তার নাম কেটে দেওয়ার হুমকি ধমকিও দেন এ কর্মকর্তা। এতে কৃষকরা মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না।

কৃষি অফিস বলছে, বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে সরিষা, খেসারি, মসুর, চিনাবাদামসহ বিভিন্ন ফসলের প্রদর্শনী দেওয়া হয়েছে এবং কৃষকদের সব বরাদ্দ পূর্ণভাবে বণ্টন করা হয়েছে। কিন্তু নাম-পরিচয় গোপন রাখার শর্তে একটি সূত্র বলছে, উন্নত মানের ধান, গম, পাট ও ভুট্টার বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিতরণের নামে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে ১৫ জন কৃষককে ৫ একরের একটি করে প্রদর্শনী প্লট দেওয়ার কথা। কোন গ্রুপে ১৫ হাজার আবার কোন গ্রুপে ১০ হাজার টাকা সম্মানী দেওয়ার কথা থাকলেও তা দেওয়া হয় না। হেক্টর-প্রতি কৃষকের জন্য যে পরিমাণ বীজ, সার, কীটনাশক,নগদ টাকাসহ যেসব উপকরণ দেওয়ার কথা তাও দেওয়া হয়েছে নামমাত্র।

এএসসিপি প্রকল্পের মাধ্যমে রয়েছে কৃষক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা। প্রতিটি প্রশিক্ষণে অংশ নেন ৩০ জন কৃষক। ওই প্রশিক্ষণে প্রত্যেক প্রশিক্ষণার্থী কৃষকের জন্য খাবার বাবদ বরাদ্দ ৪০০ টাকা এবং ব্যাগ বাবদ ৬৫০ টাকা বরাদ্দ থাকলেও কৃষকদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয় ১০০ টাকা দামের ১ প্যাকেট বিরিয়ানি আর ১০০ থেকে ১৫০ টাকার একটি ব্যাগ। তাদের অভিযোগ বিভিন্ন ট্রেনিংয়ে অংশ গ্রহণকারী কৃষকদের মানসম্মত নাশতা ও খাবার দেওয়া হচ্ছে না।

অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কাছে কৃষক ও যন্ত্রপাতি বরাদ্দের তালিকা চাইলে তিনি আজ নয় কাল বলে তালবাহানা করে তালিকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এ প্রতিবেদক কাগজপত্রের জন্য কৃষি অফিস অন্তত তিনবার গিয়ে তার কাছ থেকে এসব তথ্য নিতে পারেননি।

একটি বিশ্বস্ত সূত্র বলছে, গত বছর কমলনগর উপজেলায় ভুট্টা কাটার মেশিন ৮ টি,কম্বাইন হারভেস্টার ২ টি,রিপার ৪ টি,রাইস ট্রান্সপ্লান্টার ওয়াকিং টাইপ ২ টি ও পাওয়ার স্প্রয়ার ১ টি বরাদ্দ দেওয়া হয়। কমলনগর উপজেলায় ভুট্টা চাষ না হলেও এ কর্মকর্তা লুটপাটের উদ্দেশ্যে ধান কাটার মেশিন বাদ দিয়ে ভুট্টা কাটার মেশিনের চাহিদা পাঠান। এতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে ৮ টি মেইজ শেলার (ভুট্টা মাড়ার মেশিন) বরাদ্দ দেন। মেশিনগুলো প্রকৃত কৃষকদের না দিয়ে তার অনুগত লোকজনের নামে বরাদ্দ দেখিয়ে ফটোসেশান করে ওই মেশিন অন্যদের নিকট নামেমাত্র মূল্যে বিক্রি করে দেন। ৪ টি রিপার পেলেও ওইগুলো তার পছন্দের এক দালালের মাধ্যমে ভৈরব নিয়ে বিক্রি করার অভিযোগ উঠে।

উপজেলার চরকাদিরা ইউনিয়নের ফজুমিয়ারহাট এলাকার মোঃ আবুল কাশেমের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম পেয়েছেন একটি মেইজ শেলার মেশিন। ১৫ দিনের মাথায় তিনি ওই মেশিনটি অন্য এক কৃষকের নিকট বিক্রি করে দেন।

চরলরেন্স এলাকার হাছন আলীর নামে একটি মেইজ শেলার মেশিন বরাদ্দ দেখানো হয়। তার ফোন নম্বরে কল করা হলে নাম্বারটি ঢাকার এক বাসিন্দা দাবী করে বলেন, তার বাড়ী ঢাকায়, তিনি এসব বিষয়ে কিছুই জানেননা। তার ফোন নাম্বার কৃষি অফিসের তালিকায় কেন থাকবে বলে প্রশ্ন রাখেন তিনি।

পুষ্টি বাগানের জন্য বিভিন্ন গ্রুপে ১৪৫ জন কৃষককে ৩ হাজার ৭০০ টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও প্রতি কৃষককে ৫টি গাছের চারা,২৫০ টাকার বীজ, ও ৪৫০ টাকার সার দিয়ে বাকি টাকা সম্পূর্ণ তার পকেটে ঠুকান বলে অভিযোগ করেন ৫ জন কৃষক।

এসএসিপি প্রকল্পের আওতায় বাগান পরিচর্যার জন্য শতাধিক কৃষককে ট্রেনিং দেওয়া হয়। এতে প্রত্যেক কৃষকের জন্য ১০ হাজার ৫০০ টাকা ভাতা দেওয়ার কথা থাকলেও কৃষি কর্মকর্তা সাদা-কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে ২ হাজার ৫০০ টাকা করে দুইভাগ ৫ হাজার টাকা ধরিয়ে দেন। এ নিয়ে কৃষকদের সাথে কর্মকর্তার বাকবিতণ্ডাও হয়েছে বলে তিনজন কৃষক এ প্রতিবেদকে নিশ্চিত করেন।

এছাড়া এসএসিপি প্রকল্পের আওতায় কৃষক ট্রেনিংয়ের নামে ২০ টাকার নাস্তা,১২০ টাকার দুপুরের খাওয়া ও নগদে ২৫০ টাকা ধরিয়ে দেওয়া হয়। এ ভাবেই চলছে উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ এ দপ্তরটি।

এসএসিপি প্রকল্পে ট্রেনিং নেওয়া সাহেবের-হাট এলাকার কৃষক খুরশিদ আলম বলেন, একবার একটা ট্রেনিং করে তিনি ৮০০ টাকার ভাতা পেয়েছেন।

চরফলকন এলাকার কৃষক মো. ইউসুফ জানান, তার একটি পুষ্টি বাগান রয়েছে। কখনো ট্রেনিং করেননি। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে একটা আমের চারা, লেবুর চারা ও একটি সাইনবোর্ড ছাড়া তিনি কিছুই পাননি।

চরলরেন্স এলাকার কৃষক মোঃ ইউসুফ জানান, তার একটি টমেটো বাগান রয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে একটি প্রদর্শনীতে অংশ নিয়ে একবার ২ হাজার ৫০০, আবার ৩ হাজার টাকা ও কিছু বীজ পেয়েছেন তিনি।

বরাদ্দের বিষয়ে অফিসের এক সহকারী বলেন, ‘কৃষক ও কৃষি যন্ত্রপাতি বরাদ্দের কোনো কপি আমাদের দেওয়া হয় না। অফিস থেকে মৌখিকভাবে জানানো হয়, আমরা ডায়েরিতে নোট করে নিই।’

এ বিষয়ে অভিযুক্ত কমলনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহিন রানা বলেন, ভুলত্রুটি থাকতেই পারে। তবে তার আমলে কৃষকদের বরাদ্দ সঠিকভাবে দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে বলেন, ‘আপনাদের পছন্দের কেউ থাকলে নাম দিতে পারেন। আমি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আপনাদের দেওয়া নামগুলোকে বরাদ্দের আওতায় নিয়ে আসব।’


৪০০ কিলোমিটার সাঁতরে চাঁদপুরে রফিকুল, গন্তব্য বঙ্গোপসাগর

আপডেটেড ২৩ মার্চ, ২০২৫ ১৩:০৯
ইউএনবি

দীর্ঘ ৪০০ কিলোমিটার নৌপথ সাঁতরে চাঁদপুরে পৌঁছেছেন সাহসী সাঁতারু রফিকুল ইসলাম। তার লক্ষ্য বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত যাওয়া। কুড়িগ্রামের সীমান্তবর্তী এলাকা ঝুনকারচর থেকে তিনি যাত্রা শুরু করেছেন। এই যাত্রায় চাঁদপুরে পৌঁছাতে তার সময় লেগেছে ১৯ দিন।

সিরাজগঞ্জের বেলকুচির বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম একজন সাহসী উদ্যমী সাঁতারু। তার আরেকটি বিশেষ পরিচয় হলো তিনি বাংলাদেশের প্রথম নারী এভারেস্ট বিজয়ী নিশাত মজুমদারের স্বামী। তিনিও তার সঙ্গে রয়েছেন।

চাঁদপুর শহরের বড় স্টেশন মোলহেডে শনিবার (২২ মার্চ ) বিকালে সাঁতারু রফিকুল ইসলাম সাঁতার কেটে মেঘনা পাড়ে পৌঁছালে তাকে স্বাগত জানান চাঁদপুরের চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুনতাসির আহমেদ, বিশ্ব ভ্রমণকারী তানভীর অপুসহ চাঁদপুরবাসী।

সাঁতারু রফিকুল ইউএনবিকে জানান, অভিযাত্রী সংগঠনের পক্ষ থেকে কাজ করা হয় অ্যাডভেঞ্চার রোমাঞ্চকর বিষয়ে। এরই ধারাবাহিকতায়শোক থেকে শক্তিস্বাধীনতা দিবসের অর্জনের শক্তি হিসেবে গত ২১ ফেব্রুয়ারি ভোরবেলা থেকে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত প্রায় ৫৫০ কিলোমিটার নৌপথ সাঁতরিয়ে অতিক্রম করবেন বলে দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে তিনি নদীতে ঝাপ দেন, শুরু করেন সাঁতার।

তিনি আরও বলেন, শনিবার শরীয়তপুরের সুরেশ্বর চরআত্রা এলাকা থেকে সকাল ৭টায় রওনা করে বিকাল সাড়ে ৪টায় চাঁদপুর মোলহেডে এসে পৌঁছেন তিনি।

সময় তিনি ২২ কিলোমিটার নদী পথ সাঁতরে আসেন। দেখা গেলো তিনি বেশ চাঙা উদ্যমী। (মরালী বুস্ট আপ)

তিনি আরও বলেন, ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া ২২ মার্চ শনিবার দিন পর্যন্ত তিনি প্রায় ৪০০ কিলোমিটার নদী পথ সাঁতার কেটেছেন।

এর মধ্যেকুড়িগ্রামের চিলমারী, যমুনা সেতু , পদ্মা-মেঘনাসহ অনেক নদী পথ পাড়ি দিয়েছেন তিনি।

রফিকুল ইসলাম রবিবার ভোরে চাঁদপুর থেকে রওনা করবেন ১৫০ কিলোমিটার নৌ পথ পাড়ি দিয়ে বঙ্গোপসাগরের উদ্দেশে। তার সঙ্গে রয়েছেন সার্বক্ষণিক অনুপ্রেরণাদানকারী এভারেষ্ট বিজয়ী সহধর্মীনি নিশাত মজুমদার, সহযাত্রী ফারুকসহ গ্রেট ডেলটা (কুড়িগ্রাম থেকে শুরু হয়ে ব্রহ্মপুত্র নদ পাড়ি দিয়ে বঙ্গোপসাগর ) অভিযাত্রী সংগঠনের অন্যান্য সদস্যরা।

সাহসী এই সাঁতারু আরও বলেন, নদীমাতৃক আমাদের এই দেশ। এদেশে অনেক ছোট, বড় নদী রয়েছে। সাঁতার কাটতে কাটতে চেনা যায় নদীর পারের সহজ সরল মানুষদের। নিজের লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য সকলের দোয়াও কামনা করেন তিনি।


নাফ নদীতে ৩৩ জন বিজিবি সদস্য নিখোঁজের খবরটি গুজবনির্ভর অপপ্রচার: বিজিবি

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাসস

সীমান্তবর্তী নাফ নদীতে অভিযানে গিয়ে বিজিবির ৩৩ জন সদস্য নিখোঁজের বিষয়টি গুজবনির্ভর অপপ্রচার বলে জানিয়েছে বিজিবি

শনিবার রাতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে পোস্ট দিয়ে কথা জানানো হয়।

বিজিবি জানিয়েছে, বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে যে, গত দুই দিন ৩৩ জন বিজিবি সদস্য নাফ নদীতে মিশনে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের গুজবনির্ভর এই অপপ্রচারে বিজিবির দৃষ্টি আকর্ষিত হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত এই তথ্যটি ভিত্তিহীন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে ২২ মার্চ ভোররাতে টেকনাফের শাহপরীরদ্বীপের পশ্চিমপাড়া ঘাটের নিকট দিয়ে রোহিঙ্গাবোঝাই একটি নৌকা অবৈধ উপায়ে সাগরপথে বাংলাদেশে আসার সময় প্রবল স্রোতের কারণে নৌকাটি উল্টে যায়। খবর পেয়ে সৈকতের পার্শবর্তী স্থানে কর্তব্যরত বিজিবি সদস্যরা স্থানীয় জেলেদেরকে সঙ্গে নিয়ে রোহিঙ্গাদের উদ্ধারের জন্য ছুটে যায় এবং ২৪ জন রোহিঙ্গাকে জীবিত উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। উদ্ধারকাজ চলাকালে সমুদ্র উত্তাল থাকায় এবং অন্ধকার রাতের কারণে একজন বিজিবি সদস্য সম্ভাব্য পা পিছলে পড়ে সমুদ্রে নিখোঁজ হয়।

পরবর্তীতে ডুবে যাওয়া নৌকাসহ ২৪ জন রোহিঙ্গাকে জীবিত উদ্ধার করেছে বিজিবি। সম্পূর্ণ দুর্ঘটনাটি অত্যন্ত হৃদয়বিদারক এবং বর্তমানে নিখোঁজ একজন বিজিবি সদস্যসহ অন্যান্য রোহিঙ্গাদেরকে উদ্ধার সার্চ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।


গাজীপুরে একই পরিবারের ৩ জনের লাশ উদ্ধার

আপডেটেড ২৩ মার্চ, ২০২৫ ১১:৪৯
ইউএনবি

গাজীপুরের কাশিমপুরে নিজ বসত ঘর থেকে স্বামী- স্ত্রী ও এক সন্তানের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। রবিবার (২৩ মার্চ) লাশগুলো উদ্ধার করে পুলিশ।

লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কাশিমপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান জানান, রবিবার সকালে কাশিমপুরের গোবিন্দবাড়ি এলাকার একটি বাসা থেকে নাজমুলের লাশ ঘরে ঝুলন্ত অবস্থায় এবং তার স্ত্রী খাদিজা ও শিশু কন্যা নাদিয়ার লাশ বিছানা থেকে উদ্ধার করা হয়।

ধারণা করা হচ্ছে, নাজমুল নিজে ফাঁসিতে ঝুলার আগে স্ত্রী ও সন্তানকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছেন। পারিবারিক ঝগড়া-বিবাদের জেড়ে এর আগে নাজমুল ব্লেড দিয়ে তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় রক্তাক্ত করে। আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।


গাইবান্ধায় অটোচালকের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
গাইবান্ধা প্রতিনিধি

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে আইয়ুব আলী দুলা (৫২) নামে এক অটোচালকের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। পূর্বশত্রুতার জেরে ঘটনাটি ঘটে থাকতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা পুলিশের।

রোববার (১৪ এপ্রিল) দিনগত রাত ১টার টার দিকে উপজেলার সাপমারা ইউনিয়নের সিন্টাজুরি এলাকা হতে গোবিন্দগঞ্জ থানা পুলিশ ওই মরদেহ উদ্ধার করে।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন গাইবান্ধার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সি সার্কেল) উদয় কুমার সাহা।

তিনি বলেন, ‘সোমবার দিনগত রাত ১টার দিকে উপজেলার সাপমারা ইউনিয়নের সিন্টাজুরি এলাকায় এক অটোচালকের গলাকাটা মরদেহ দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেয় স্থানীয়রা। পরে গোবিন্দগঞ্জ থানার পুলিশ ওই রাতেই মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নেয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘ঘটনাটি রাত পৌনে ১২টা থেকে সোয়া ১২টার মধ্যে ঘটানো হয়েছে। মরদেহের পাশ থেকে অটোটিসহ চালকের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন এবং চালকের পরিহিত পোশাকের ভেতরে থাকা কিছু নগদ টাকাও পাওয়া গেছে। ঘটনার পারিপার্শ্বিকতা এবং প্রাথমিক পুলিশি তদন্তে মনে হচ্ছে ঘটনাটি পূর্বশত্রুতার জেরে ঘটানো হতে পারে, ছিনতাই নয়।’

এ পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা বিষয়টি অতি গুরুত্বের সাথে তদন্ত করছি। হত্যাকান্ডের প্রকৃত কারণ উদঘাটনসহ জড়িতদের শনাক্ত এবং তাদের গ্রেপ্তারে পুলিশ কাজ করছে।’

বিষয়:

বঙ্গবন্ধু সেতুতে ২৪ ঘণ্টায় ৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকা টোল আদায়

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি

ঈদের আর মাত্র বাকি দুইদিন। ঈদের আনন্দ পরিবারের সাথে ভাগাভাগি করার জন্য নাড়ির টানে বাড়ি ফিরছে মানুষ। এর ফলে ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বেড়েছে। মহাসড়কে যানজটেরও সৃষ্টি হয়েছে। মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বৃদ্ধির ফলে বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে যানবাহন পারাপার ও টোল আদায় স্বাভাবিকের তুলনায় দ্বিগুণ বেড়েছে।

বঙ্গবন্ধু সেতু সাইট অফিস সূত্রে জানা যায়, সোমবার সকাল ৬ টা থেকে মঙ্গলবার ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে ৪৩ হাজার ৪২৭টি যানবাহন পারাপার হয়েছে এবং যার মোট টোল আদায় হয়েছে তিন কোটি ৩৬ লাখ ৬ হাজার ৮৫০ টাকা।

এরমধ্যে টাঙ্গাইলের বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব অংশে ২৭ হাজার ২৩২টি যানবাহন পারাপার হয়। এতে টোল আদায় হয়েছে ১ কোটি ৭১ লাখ ৪ হাজার ৯৫০ টাকা এবং সিরাজগঞ্জের সেতু পশ্চিম অংশে ১৬ হাজার ১৯৫ টি যানবাহন পারাপার হয়। এতে টোল আদায় হয়েছে ১ কোটি ৩২ লাখ ৬১ হাজার ৯০০ টাকা।

বঙ্গবন্ধু সেতু সাইট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবীর পাভেল জানান, যানজট নিরসনে সেতুর উভয় অংশে ৯টি করে ১৮টি টোল বুথ স্থাপনসহ মোটরসাইকেলের জন্য চারটি বুথ স্থাপন করা হয়েছে। যানবাহনের চাপ বেড়েছে।

এলেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (ওসি) মীর সাজেদুর রহমান জানান, মহাসড়কে প‌রিবহনের খুব চাপ রয়েছে। এতে পরিবহনগুলো খুবই ধীরগ‌তিতে চলাচল করছে। এ ছাড়া সেতুর উপর এক‌টি বাস নষ্ট হওয়ায় পাঁচ মি‌নিট বন্ধ ছিল প‌রিবহন চলাচল। পরিবহনগুলো রাস্তায় দাঁড়িয়ে যাত্রী তোলার কারণেও অন‌্য প‌রিবহনগুলোতে ধীরগ‌তির সৃ‌ষ্টি হয়েছে। প‌রিবহন চলাচল স্বাভাবিক রাখ‌তে পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দা‌য়িত্ব পালন কর‌ছেন।

বিষয়:

বাগেরহাটে কালবৈশাখী ঝড়ে নিহত ১, আহত ৩

ছবি: দৈনিক বাংলা
আপডেটেড ৭ এপ্রিল, ২০২৪ ১৫:৪৮
বাগেরহাট প্রতিনিধি

বাগেরহাটে হঠাৎ কালবৈশাখী ঝড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ের সময় গরু আনতে গিয়ে বজ্রপাতে জেলার কচুয়া উপজেলা চরসোনাকুড় গ্রামে মো. আরিফুল ইসলাম (৩৫) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া বাগেরহাট শহরের বাসস্টান্ড এলাকায় বিলবোর্ড ভেঙ্গে যাত্রীবাহী বাসের উপর পড়ে বাসের চালকসহ ৩ জন গুরুতর আহত হয়েছেন।

রোববার সকাল সাড়ে ৯টার এ ঘূর্ণিঝড়ে জেলার শরণখোলা, মোড়েলগঞ্জ, রামপাল, কচুয়া ও বাগেরহাট সদর উপজেলার কয়েক হাজার গাছ উপড়ে পড়েছে। সেই সাথে বিধ্বস্ত কয়েক শত কাঁচা ও আধা কাঁচা বাড়িঘর। ঝড়ে গাছ পড়ে ও বিদ্যুৎতের খুটি উপড়ে পড়ায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে বিদ্যুৎ সংযোগ।

বাগেরহাট জেলা প্রশাসক মো. খালিদ হোসেন বলেন, ‘কালবৈশাখী ঝড়ে জেলা সদরসহ অন্যান্য উপজেলাগুলোতে গাছপালা উপড়ে পড়ার পাশাপাশি কিছু বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। ঝড়ে গাছ পড়ে ও বিদ্যুৎতের খুটি উপড়ে পড়ায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে পুরো জেলার বিদ্যুৎ সংযোগ।’

তিনি বলেন, ‘জেলার প্রতিটি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাদের ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৮ লাখ টাকা ও ৬শ মেট্রিকটন চাল বরাদ্ধ করা হয়েছে।’

বিষয়:

ঘরের স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে দুই শতাধিক গৃহহীন পরিবারের

গঙ্গাচড়া উপজেলার মর্ণেয়া ইউনিয়নের ভাঙ্গাগড়া এলাকায় নির্মাণ হচ্ছে দুই শতাধিক বাড়ি। ছবি: দৈনিক বাংলা
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
মীর আনোয়ার আলী, রংপুর

রংপুরের গঙ্গাচড়ায় মুজিববর্ষের ৪র্থ ধাপে ভূমি ও গৃহহীনদের জন্য ঘর নির্মাণ কাজ চলছে দ্রুত গতিতে। দেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না- প্রধানমন্ত্রীর এমন অঙ্গীকার বাস্তবায়নে দেশের সব ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষের বাসস্থান নিশ্চিত করা হচ্ছে। সারা দেশের ন্যায় গঙ্গাচড়া উপজেলার মর্ণেয়া ইউনিয়নের ভাঙ্গাগড়া এলাকায় গৃহ নির্মাণের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। অত্যন্ত দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের নির্মাণ কাজ।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ইউএনও নাহিদ তামান্না মর্ণেয়া ইউনিয়নের ভাঙ্গাগড়া এলাকায় ২১০ টি ভূমি ও গৃহহীন পরিবারের জন্য মুজিব শতবর্ষের ঘর নির্মাণ কাজ তদারকি করছেন। প্রতিটি পরিবারের জন্য ২ শতাংশ জমির ওপর ২টি সেমি পাকা ঘর, ১টি রান্না ঘর ও ১টি টয়লেট নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রতিটি পরিবারের জন্য ঘর নির্মাণ কাজে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। এতে করে ২১০টি পরিবারের ঘর নির্মাণ করতে মোট ব্যয় হবে ৫ কোটি ৯৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা। ঘরগুলোর প্রায় ৮০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন ইউএনও।

সরেজমিনে উপজেলার মর্ণেয়া ইউনিয়নের ভাঙ্গাগড়া গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, প্রবেশদ্বারে লাগানো রয়েছে প্রকল্পের তথ্য সম্বলিত সাইনবোর্ড। উঁচু জমিতে অত্যন্ত মনোরম পরিবেশে বাড়িগুলোর নির্মাণ কাজ চলছে। এরই মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশের বেশি কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

এলাকাবাসী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার প্রশংসা করে জানান, প্রকল্পের ঘরগুলো এখন মানসম্মতভাবে নির্মাণ করা হচ্ছে। ঘর তৈরিতে উপজেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সব সময় তদারকি করছেন, কাজের নির্মাণ সামগ্রী এবং নির্মাণ কাজ মানসম্মত। এক সাথে অনেকগুলো আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণ করায় প্রকল্পটির সৌন্দর্য ফুটে উঠেছে, যা দৃষ্টিনন্দন হয়েছে। ছোট ছোট ঘর নির্মাণে উন্নত সামগ্রী ব্যবহার করায় দীর্ঘস্থায়ী হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। অসহায় মানুষগুলো তাদের দুঃখ কষ্ট ভুলে গিয়ে রঙিন এ ঘরে বসবাস করার যে স্বপ্ন দেখছিলেন তা বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) নয়ন কুমার সাহা বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন ছিল দেশের কোন মানুষ গৃহহীন বা না খেয়ে থাকবে না, তাই তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নের ঘোষণা অনুযায়ী সারা দেশের ন্যায় গঙ্গাচড়া উপজেলায় ঘর নির্মাণ কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে।’

গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদ তামান্না বলেন, ‘ঘর নির্মাণ কমিটি নির্মাণ কাজ বাস্তবায়নে নিয়জিত আছেন। আমি কাজগুলো সব সময় তদারকি করছি। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির মনিটরিং অফিসার এসে নির্মাণ কাজ পরিদর্শন করে গেছেন। প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহারের ঘরগুলো খুবই কঠোরভাবে মনিটরিং করা হয় এবং সচিত্র প্রতিবেদন রাখা হয়। প্রকল্পের কাজ নিয়মানুযায়ী সুন্দরভাবে সম্পন্ন হবে।’

বিষয়:

নানার বাড়ির পাশে মিলল শিশুর লাশ, মাথায় আঘাতের চিহ্ন

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে নিখোঁজের এক দিন পর সাকিব সিকদার (১০) নামে এক শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তার মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। পুলিশ ধারণা করছে, শিশুটিকে হত্যা করা হয়েছে।

শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে উপজেলার সাতগ্রাম ইউনিয়নের পাচঁরুখী গ্রামে নানা বাড়ির পাশ থেকে শিশুটির লাশ উদ্ধার করা হয়।

নিহত সাকিব রুপগঞ্জের গোলাকান্দাইল এলাকার জিকু সিকদারের ছেলে।

আড়াইহাজার থানার ওসি মোহাম্মদ আহসান উল্লাহ জানান, ১৭-১৮ দিন আগে শিশুটি তার মায়ের সঙ্গে উপজেলার পাঁচরুখী গ্রামে নানাবাড়িতে বেড়াতে আসে। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার সকালে তার মা তাকে ব্লেড আনতে বাজারে পাঠান। এরপর থেকে সে আর বাড়ি ফিরেনি। এদিকে শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে তার নানাদের নতুন বাড়ির পাশে শিশুটির লাশ পড়ে থাকতে দেখে এলাকাবাসী পুলিশকে খবর দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করে। সে সামান্য বাকপ্রতিবন্ধী ছিল।

তিনি আরও জানান, প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। এ ছাড়া তার মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ময়নাতদন্তের পর বিস্তারিত জানা যাবে।


ফেনীতে ট্রাক-ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহত ২

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার মুহুরীগঞ্জে আজ সকালে রেলপথ পারাপারের সময় বালুবোঝাই ট্রাকে ট্রেনের ধাক্কায় ২ জন নিহত হয়েছেন। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে মুহুরীগঞ্জ ব্রিজ সংলগ্ন বালুমহাল এলাকায় চট্টগ্রামগামী মেইল ট্রেনের ধাক্কায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহতদের একজন বরিশালের উজিরপুর উপজেলার কাউয়ারাকা গ্রামের আবুল হাওলাদারের ছেলে ট্রাকচালক মো. মিজান (৩২)। অপর নিহত ট্রেনযাত্রীর নাম-পরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন পুলিশ সুপার জাকির হাসান।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ট্রেনের ধাক্কায় ট্রাকটি অন্তত ১০০ মিটার সামনে গিয়ে পড়ে। গেইটম্যান মো. সাইফুল ট্রেন অতিক্রম করার সময় সেখানে ছিলেন না।

ফেনী রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক শাহ আলম জানান, রেললাইনের উপর পড়ে থাকা দুর্ঘটনা কবলিত ট্রাক সরিয়ে নিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এরপর ছাগলনাইয়া থানা পুলিশ নিহতদের লাশ ময়না তদন্তের জন্য ফেনী জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছেন।

ছাগলনাইয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাসান ইমাম ট্রেন দুর্ঘটনায় দুইজন নিহত হওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, লাশ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

পুলিশ সুপার মো. জাকির হাসান জানান, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে এবং তদন্তসাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিষয়:

banner close