মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার রহিমপুর ইউনিয়নের ছয়চিরী দিঘীর পারে ঐতিহ্যবাহী চড়ক পূজা বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে আজ শুক্রবার শুরু হচ্ছে। দুই শ বছরের ঐতিহ্যবাহী চড়ক পূজাকে কেন্দ্র করে কমলগঞ্জের ছয়চিরিসহ আশপাশের এলাকার মানুষের মধ্যে বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে।
দুই দিনব্যাপী এ চড়ক পূজা ও মেলা শেষ হবে আগামীকাল শনিবার। ঐতিহ্যবাহী এই চড়ক উৎসব দেখতে দেশের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে হাজার হাজার লোকের ঢল নামবে। প্রাচীন ঐতিহ্য লালিত ছয়চিরি দিঘীর পাড়ে বাংলা পুঞ্জিকা মতে প্রতিবছরের চৈত্র সংক্রান্তিতে দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে চড়ক পূজা উৎসব। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি।
জানা যায়, চড়ক পূজা উৎসবের ১০-১২ দিন আগ থেকে বিভিন্ন এলাকার পূজারীর মধ্যে ৪০-৫০ জন সন্ন্যাস ধর্মে দীক্ষিত হয়ে গ্রামের বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিব-গৌরীসহ নৃত্যগীত সহকারে ভিক্ষাবৃত্তিতে অংশ নেন। এ কদিন তারা পবিত্রতার সহিত সন্যাস ব্রত পালন করে নিরামিষ ভোজি এবং সারাদিন উপবাস পালন করেন। চড়ক পূজার দুই দিন আগে পূজারীরা শ্মশানে গিয়ে পূজা অর্চনা করেন ও শেষে গৌরীর বিয়ে, গৌরী নাচ ও বিভিন্ন গান গেয়ে ঢাকের বাজনায় সরগরম করে গোটা এলাকা। ছয়চিরি দিঘীর পাড়ে ভক্তরা নৃত্য করার জন্য কলাগাছ ও বাঁশের খুঁটি বেষ্টিত মণ্ডলী তৈরি করে। পূজার প্রথম দিন নিশি রাতে তান্ত্রিক মন্ত্র ধারা কাচ পড়া দিয়ে জলন্ত ছাইয়ের ওপর মানুষরুপি কালী সেজে নৃত্য করে। অন্য ভক্তরা নৃত্যের তালে তালে, ছন্দে ছন্দে ঢোলক, কাশি, করতাল বাজিয়ে থাকেন।
এ সময় দর্শনার্থীরা জয়ধ্বনি এবং নারীদের কন্ঠে হুলুদ ধ্বনি দিতে থাকেন। জ্বলন্ত আগুনের মধ্যে এই ‘কালীনাচ’ অত্যন্ত আকর্ষণীয় এবং তান্ত্রিক মন্ত্র দিয়ে ৭টি বলিছেদ (লম্বা দা) এর ওপর শিব শয্যা করেন। শিবের উপর উঠে কালী ভয়ানক এক অদ্ভুত রূপ ধারণ করেন। এ সময় উপস্থিত দর্শনার্থী সবাই আতঙ্কিত হয়ে উঠেন। কালীকাঁচ শেষ হওয়ার পর সকালে পূজারীরা পূজা করে পান বাটা দিয়ে চড়ক গাছকে নিমন্ত্রণ জানানো হলে পার্শ্ববর্তী ঐতিহাসিক ছয়চিরি দিঘী থেকে ভেসে উঠে ১০০ ফুট লম্বা চড়ক গাছ। এ গাছের চূড়া থেকে মাচা পর্যন্ত চারটি পাখার মতো করে বাধা হয় চারটি মোটা বাঁশ এবং তাতে যুক্ত করা হয় মোটা লম্বা রশি। আগের বছর উৎসব শেষে এই দিঘীতে ডুবিয়ে রাখা হয়ে ছিল চড়ক গাছ। দিঘীর পাড়ে গর্ত খুঁড়ে সোজা এবং খাড়া করে পোঁতা হয় এ গাছ।
১৪ এপ্রিল শুক্রবার দুপুর থেকে নারী পুরুষ দর্শনার্থীর বিশাল সমাগম ঘটবে। বিকেলের দিকে ভক্তরা মণ্ডলীতে বিশাল দা (বলিছেদ) দিয়ে নৃত্য, শিবের নৃত্য ও কালীর নৃত্য দেখানো হয়। নৃত্য শেষে ঐতিহাসিক ছয়চিরি দিঘীতে স্নান করে ভক্তদেরকে লোহার শিকড় শরীরের বিভিন্ন অংশে পিষ্ট (গাঁথা) করা হয়। বিশেষ করে জিহ্নবা ও গলায় গেঁথে দেয়া হয়। নৃত্যের তালে তালে চড়ক গাছ ঘুরানো হয়। দেবতার পূজা-অর্চনা শেষে অপরাহ্নে মূল সন্ন্যাসী ৪ জন ভক্তের (জ্যান্ত মানুষের) পিঠে লোহার দু’টি করে বিরাট আকৃতির বড়শি গেঁথে রশিতে বেঁধে ঝুলিয়ে চড়ক গাছ ঘুরানো হয়। এ সময়ে দর্শনার্থীদের অনেকে বাতাসা আর কলা উপরের দিকে উড়িয়ে দেন আর দর্শনার্থীরা তা কুড়িয়ে নেন।
১৫ এপ্রিল শনিবার ফেরা চড়ক পূজা অনুষ্ঠিত হবে। ওই দিন দেবতার পূজা অর্চনা করা হবে। ঐতিহ্যবাহী ছয়চিরি দিঘীর চার পাড়ের মধ্যে দিঘীর পূর্বপাড়ে ১টি, উত্তর পাড়ে ১টি এবং দক্ষিণ পাড়ে ২টি চড়ক গাছ স্থাপন করে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। তান্ত্রিক মন্ত্রের ধারা বিভিন্ন অলৌকিক ধর্মীয় কর্মসূচি উপভোগ করার জন্য প্রতি বছরের মতো এবারও দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার নারী-পুরুষ, জাতি, ধর্ম, বর্ণ, নির্বিশেষে দর্শনার্থীর উপস্থিতি ঘটবে বলে আশা করছেন আয়োজকরা। চড়ক পূজা উপলক্ষে এক বিশাল মেলা বসবে। মেলায় গ্রামীণ ঐতিহ্যের বিভিন্ন রকমারী জিনিসপত্রের সয়লাব থাকবে।
চড়ক পূজা ও মেলা পরিচালনা কমিটি প্রতি বছরের মতো এবারও মেলা সুষ্ঠ ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার লক্ষে ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতি নিয়েছেন। যুগ যুগ ধরে এ চড়ক উৎসব এ অঞ্চলের হিন্দুদের বেশ নাড়া দিয়ে আসছে। বাংলা চৈত্র মাসের শেষ দুদিন ও ১লা বৈশাখ বসে মেলা। শেষ চৈত্রের গোধূলীলগ্নে চড়ক গাছ মাটিতে পুঁতে ঘোরানো হয়। এর আগে ভক্ত ও পূজারীরা চড়ক গাছে ফুল, দুধ ও চিনি দিয়ে পূজা দেয়।
চড়কপূজা উদযাপন কমিটির নেতা অনিরুদ্ধ প্রসাদ রায় চৌধুরী জানান, ইতোমধ্যে চড়কপূজা অনুষ্ঠানের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। চড়কপূজা ও মেলা সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন করার জন্য সবার সহযোগিতা কামনা করেছেন।
আনোয়ারা উপজেলার দক্ষিণ তৈলারদ্বীপ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থার সুবিধা তো দূরের কথা, মৌলিক নিরাপদ শ্রেণিকক্ষের সুযোগ থেকেও বঞ্চিত। বিগত পাঁচ বছর ধরে জরাজীর্ণ টিনশেড ঘরে চলছে এই বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম।
৫ বছর আগে পুরোনো সেমিপাকা স্কুলটি ভেঙে নতুন স্কুল ভবন তৈরির কাজ শুরু করে। সেই ভবনের কাজ শুরুর কিছুদিন পরই কাজ বন্ধ করে পালিয়ে যায় ঠিকাদার।
সরেজমিনে ভবন নির্মাণের স্থান পরিদর্শন করে দেখা যায়, বিল্ডিং এর স্তম্ভের কয়েকটি জায়গায় পাইলিং শেষ করা হয়েছে। তবে এই লোহাগুলো পরিত্যক্ত অবস্থায় রাখা হয়েছে। জম ধরেছে ফেলে রাখা এসব লোহাগুলোতে। এছাড়া আর কোনো কাজ করা হয়নি। স্কুলের পাশে জায়গা না থাকায় প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে গিয়ে বেড়িবাঁধের পাশে টিন দিয়ে কয়েকটি রুম করে চালানো হচ্ছে স্কুলের কার্যক্রম।
স্কুল পরিচালনা কমিটির সদস্য আবুল হোসেন বলেন, এই এলাকার গণজনবসতিপূর্ণ এলাকা, প্রায় ৫ হাজার বাসিন্দাদের এই একটিই স্কুল। আশেপাশে আর স্কুল নেই, বিভিন্ন রাজনৈতিক এবং স্থানীয় সমস্যার কারণে স্কুলের কাজটি সম্পন্ন হয়নি। যার কারণে এই এলাকার ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটছে।
উপজেলা প্রকৌশলী অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালে দিকে মাল্টিপারপাস ডিজাস্টার শেল্টার প্রজেক্ট (এমডিএসপি) এর আওতায় দক্ষিণ তৈলারদ্বীপ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নির্মাণকাজ শুরু করা হয়। প্রকল্পটির বরাদ্দ দেওয়া হয় ৪ কোটি ২৭ লাখ টাকা। কাজ শুরু হওয়ার পর সংশ্লিষ্টরা পাইলিং এর কাজ করে যাতে ব্যয় হয় ৯০লাখ টাকা মত। এরপর কাজটি বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে প্রকল্পটি বাতিল করা হয়েছে।
তামান্না আক্তার নামের স্কুলের ৫ম শ্রেণীর এক শিক্ষার্থী বলেন, ক্লাসে বর্ষাকালে বৃষ্টি পড়ে, গ্রীষ্মে টিনের গরমে পড়তে পারিনা। আমাদের আশেপাশের বন্ধুরা সুন্দর সুন্দর স্কুলে পড়ে আমরাও চাই টিনের স্কুলের পরিবর্তে নতুন একটা স্কুল হউক, যাতে আমরা ভালো করে পড়তে পারি।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক জয়নাব বেগম বলেন, এই স্কুলে বর্তমানে প্রায় ২শ শিক্ষার্থী এবং ৬ জন শিক্ষক রয়েছে। ১৯৯৬ সালে স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ২০১৩ সালে এটি জাতীয়করণ করা হয়। আগে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি ছিল ২০২১ সালে স্কুল স্থানান্তরের পর থেকে শিক্ষার্থী কমে যাচ্ছে। জরাজীর্ণ এই টিনের শ্রেণি কক্ষে শিক্ষার পরিবেশ না থাকায় আমাদের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এসময় তিনি দ্রুত স্কুলের নির্মাণ কাজ শুরু করার দাবি জানান।
এ নিয়ে আনোয়ারা উপজেলা প্রকৌশলী জাহেদুল আলম চৌধুরী বলেন, প্রকল্পটি বাতিল করা হয়েছে। বি স্ট্রিম প্রকল্পের আওতায় আরেকটি প্রকল্পের মাধ্যমে কাজটি সম্পন্ন করা হবে। আপাতত অস্থায়ী স্কুলটি সংস্কার করে শিক্ষার পরিবেশ তৈরি করা হবে।
আলু উৎপাদন দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম জেলা জয়পুরহাট। গত বছর আলু চাষ করে এখনো জেলার ২১টি হিমাগারে পড়ে রয়েছে লাখ লাখ বস্তা আলু। এতে ব্যাপক লোকসানে মুখে পড়েছেন জয়পুরহাটের কৃষকরা। সেই লোকসান পুষিয়ে নিতে আগাম আলু চাষ শুরু করেন তারা।
কিন্তু বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে জেলার পাঁচ উপজেলায় গত বৃহস্পতিবার থেকে লাগাতার বৃষ্টিতে ফসলি জমিতে পানি জমে। যেসব জমিতে আগাম আলু রোপণ করা হয়েছে, সেসব জমিতে পানি জমায় আলুর বীজ পচে বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। যে কারণে আলু চাষিদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। এছাড়াও রোপা আমন ধান ও আগাম শীতকালীন শাক-সবজি ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। আর কয়েকদিনের মধ্যে পাকা ধান কাটা শুরু হবে। এ অসময়ে বৃষ্টি হয়ে এখন কৃষকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে।
জানা যায়, জেলায় আমন ধান চাষ হয়েছে ৭০ হাজার ৯৫ হেক্টর জমিতে। আগাম শীতকালীন সবজি চাষ করা হয়েছে ১ হাজার ৯৯৫ হেক্টর জমিতে। আলু চাষের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৯ হাজার হেক্টর জমিতে। ইতোমধ্যে আগাম জাতের আলু ৭৭৭ হেক্টর জমিতে আলু রোপণ করা হয়েছে। গতকাল পর্যন্ত জেলার ২১টি হিমাগারে আলু মজুত রয়েছে ৮৪ হাজার ১৬৯ মেট্রিক টন।
ঘুরে দেখা যায়, আলু আবাদের জন্য কোথাও কোথাও প্রস্তুত করা হয়েছিল জমি, কোথায় সদ্য রোপণ করা হয়েছে বীজ। বৃষ্টিতে জমিতেই জমেছে পানি। ফসল বাঁচাতে পানি সরানোর চেষ্টা করছেন কৃষকরা। শুধু আলু ক্ষেত নয়, আগাম জাতের শীতকালীন ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, মরিচ, বেগুন, মুলা, চিচিঙ্গাসহ বিভিন্ন শাক-সবজির গাছও মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে। যেসব ক্ষেতের সবজি এখনো ভালো রয়েছে, তা রক্ষায় চেষ্টা চালাচ্ছেন কৃষকরা। এছাড়াও মাঠের আধা-পাকা ধান হেলে পড়েছে, গড়াগড়ি খাচ্ছে পানিতে।
জানা যায়, গেল বছর আলুর ভালো দাম না পাওযায় এবছর লাভের আশায় আগাম আলু চাষ শুরু করেন তারা। তবে কয়েক দিনের বৃষ্টি হওযায় আলুর জমিতে পানি জমে। ফলে বৃষ্টির পানিতে একদিকে রোপণকৃত বীজ পচে গেলে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বেন তারা। অনাবাদি জমি থেকে পানি নিষ্কাশনের পর বীজ রোপণ কবে করা যাবে তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। এতে আরও একমাস আলু রোপণে দেরি হবে।
অন্যদিকে অসময়ের বৃষ্টিতে জমিতে আমন ধানের গাছ মাটিতে নুয়ে পড়েছে। পানিতে ভাসছে ধানের গাছ। আবার শীতকালীন শাক-সবজির জমিতেও দেখা দিয়েছে শিকড় পচে যাওয়ার আশঙ্কা। পানি দ্রুত না সরলে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বেন কৃষকরা।
সদর উপজেলার ধারকী গ্রামের কৃষক গোলাপ হোসেন বলেন, গতবছর আলু চাষ করে অনেক লোকসান হয়েছে। এবার আগাম আলু লাগালে ভালো দাম পাওয়া যাবে। সেই আশায় দেড় বিঘা জমিতে আলু বীজ রোপণ করে এক সপ্তাহ হয়নি। এর মধ্যে কয়েকদিন থেকে থেমে থেমে লাগাতার বৃষ্টি। এখন বৃষ্টির পানি জমিতে জমে থাকায় গাছ ঠিক মতো উঠতে পারে নাও পারে। কী করবো ভেবে পাচ্ছি না।
ক্ষেতলাল উপজেলার কুসুমশহর গ্রামের আব্দুর রহিম বলেন, আগাম আলু চাষে কিছুটা ঝুঁকি থাকে। এলাকার কয়েকজন আলু লাগাইতাছে দেখে আমিও দুই বিঘা জমিতে কয়েক দিন আগে লাগালাম।
কালাই উপজেলার পুনট এলাকার কৃষক আজিজার রহমান বলেন, ধান পাকতে শুরু করেছে। কয়েকদিন পরেই ধান কাটা শুরু হবে। কিন্তু অসময়ের বৃষ্টি ও দমকা হাওয়ায় আমার আড়াই বিঘা জমির আধা-পাকা ধান হেলে পড়েছে, ধানের গাছ মাটিতে নুয়ে পড়ে গড়াগড়ি খাচ্ছে পানিতে। এই ধান আর ঘরে আসবে না। এমনিতেই গত বছর আলু চাষ করে ব্যাপক লোকসান হয়েছে।
কালাই উপজেলার ধাপ গ্রামের কৃষক শফিকুল ইসলাম বলেন, সার সিন্ডিকেটের কারণে সার পায় না। আবার বস্তাপ্রতি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা বেশি দিয়ে সার কিনে যদিও বা ফসল রোপন করি। কিছুদিন পরেই পড়ে সেচ সিন্ডিকেটের পাল্লায়। ঋণ করে সমস্ত টাকা দিয়ে ফসল ফলায় কিন্তু ফসলের ন্যায্য দাম পাই না।
জয়পুরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ এ কে এম সাদিকুল ইসলাম বলেন, জেলায় বিভিন্ন উপজেলার প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে শাকসবজি ২৭ হেক্টর জমিতে, আমন ধান ৩৩৭ হেক্টর জমিতে ও আগাম জাতের আলু ৮৫ হেক্টর জমিতে কয়েকদিনের অসময়ের বৃষ্টির পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এখনো ক্ষতির হিসাব নিরূপণ করা যায়নি। ঝড় বৃষ্টি হলেও ভারী বর্ষণ হয়নি। সবেমাত্র আলু রোপণ শুরু হয়েছে। এছাড়া শীতকালীন সবজি ও আমন ধানের খুব বেশি ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সহায়তায় দেশে ফিরেছেন সুদানের যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলে দীর্ঘ ১৯ বছর ধরে নিঃসঙ্গ জীবনযাপন করা বাংলাদেশি নাগরিক মো. ময়নুল হক।
গতকাল রোববার আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়।
আইএসপিআরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০২২ সাল থেকে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন ‘ইউনাইটেড নেশনস ইন্টারিম সিকিউরিটি ফোর্স ফর আবেই’ (UNISFA)-তে বাংলাদেশের একটি ব্যাটালিয়ন মোতায়েন রয়েছে। ২০২৫ সালের মে মাসের প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাটালিয়ন, ব্যানব্যাট-৩ এর একটি টহলদল আবেই বাজার এলাকায় হঠাৎ ময়নুল হকের সন্ধান পায়।
প্রায় ১৯ বছর আগে ঠিকাদারির কাজে সুদানের রাজধানী খার্তুমে পাড়ি জমান তিনি। কিন্তু হঠাৎ শুরু হওয়া গৃহযুদ্ধ তার জীবনকে সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত করে দেয়। বহুদিন অবরুদ্ধ অবস্থায় থাকার পর প্রাণ বাঁচাতে তিনি পলায়ন করে চলে আসেন আবেই অঞ্চলে। দুর্ভাগ্যক্রমে এ সময় তিনি হারান পাসপোর্টসহ সমস্ত বৈধ নথিপত্র, যার ফলে দেশে ফেরা তার জন্য প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যদের সাক্ষাৎ পেয়ে তিনি দেশে ফিরে আসার প্রবল আকুতির কথা জানান।
এ পরিপ্রেক্ষিতে আবেইতে অবস্থানরত সেনাবাহিনীর সদস্যরা বাংলাদেশে তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি নিশ্চিত করেন এবং তার দেশে ফেরার আবেদন সেনাসদরে পাঠান। পরবর্তীতে আবেদনটি সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের মাধ্যমে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলে গত ১৫ আগস্ট ইথিওপিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশি দূতাবাস কর্তৃক ময়নুল হককে বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তনের জন্য ‘ট্রাভেল পারমিট’ ইস্যু করা হয়।
এছাড়াও তার বর্তমান আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করে দূতাবাস বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তনের বিমান ভাড়া এবং আনুষঙ্গিক আর্থিক সহায়তা দিয়েছে। গত ২৯ অক্টোবর সেনাবাহিনীর সার্বিক তত্ত্বাবধানে আবেই থেকে বিমানযোগে জুবা, সাউথ সুদানে আগমন করেন ময়নুল হক। পরে জুবা, সাউথ সুদান থেকে তিনি ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সের একটি বিমানযোগে রোববার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন।
দীর্ঘ ১৯ বছর পর সুদানের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন এবং পরিবারের সঙ্গে মিলিত হতে পেরে ময়নুল হক খুবই আনন্দিত ও আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি তার প্রত্যাবর্তনের জন্য সহায়তা প্রদানকারী সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
আইএসপিআরের বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকায় আটকে পড়া একজন বাংলাদেশি নাগরিকের দেশে প্রত্যাবর্তনের মতো মানিবক কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হতে পেরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা আনন্দিত ও গর্বিত।
ভোলার চরফ্যাশনে শতবর্ষী চলাচলের পথসহ অন্যের জমি জবরদখল করে পাকা বসতঘর নির্মাণ করেছেন চরফ্যাশন উপজেলা মৎস্যজীবিলীগের সাবেক সভাপতি শফিউল্লাহ পালোয়ান। এতে ৩৫টি পরিবার দীর্ঘ সতেরো বছর ধরে বিপাকে রয়েছে। তৎকালীন আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে এমন অনিয়ম করেছেন মৎস্যলীগের সাবেক এই সভাপতি।
রোববার (২ নভেম্বর) চরফ্যাশন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে গণসাক্ষরিত একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী পরিবারগুলো। নির্বার্হী কর্মকর্তা সরজমিন তদন্তের জন্য চরফ্যাশন পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলীকে দায়িত্ব দিয়েছেন।
জানাগেছে, চরফ্যাশন উপজেলার পৌরসভা ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সরকারি পুকুরপাড়ে শতবছর ধরে ভূমিহীন পরিবারগুলোর বসবাস করে আসছেন। পুকুর পাড়ের চারপাশে ভূমিহীন পরিবার বাদে পালোয়ান বাড়ীর অন্যান্য পরিবারগুলোও বসবাস করেন। পুকুরপাড়ের ৩৫টি পরিবারসহ বাড়ির বাসিন্দাদের চলাচলের একমাত্র এই পথটি আওয়ামীলীগের ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে দখল করে বসত ঘর নির্মাণ করেছেন। এতে পথটি সংকুচিত হয়ে গেছে।
ভূমিহীন পরিবারগুলোর অভিযোগ, শত বছর আগে তাদের যাতায়াতের জন্য ৬ ফুট চওড়া এই পথটি রাখা হয়। এখান দিয়ে বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করতো। তাদের বাড়ীর কেউ অসুস্থ হলে অ্যাম্বুল্যান্স বাড়ীতে এসে রোগী নিয়ে যেত। এমনকি ফায়ার সার্ভিসের গাড়ী অনায়াসে প্রবেশ করতো। কিন্তু মৎস্যলীগের সভাপতি সফিউল্লাহ পালোয়ান আওয়ালীগের ক্ষমতা খাটিয়ে চলাচলের পথটি দখল করে সে এবং তার ছেলে পথজুড়ে পাকা বসতঘর নির্মাণ করেন। এতে ৬ফুট চওড়া পথটি আজকে দেড় ফুটে পরিণত হয়েছে। বসত ঘর নির্মাণের সময় ভূমিহীনরাসহ বাড়ীর অন্যান্য পরিবারগুলো সে সময়ে প্রতিবাদ করলেও বিভিন্ন ভয়ভীতি প্রদর্শন করে ও দলীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনি নির্মাণ কাজ চালিয়ে যান। এমনকি বাড়ির প্রায় ৩৫টি পরিবারের জন্য সরকারি বরাদ্দের টিউবওয়েলটি সে ক্ষমতা খাটিয়ে নিজস্ব আয়ত্তে রেখে ব্যবহার করছেন তার সৌদিপ্রবাসী ছেলের পরিবার ও তিনি। এতে অন্যান্য পরিবারগুলোর টিউবওয়েলটি ব্যবহারের থেকে বঞ্চিত রয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, একইসাথে প্রভাব খাটিয়ে পালোয়ান বাড়ির স্থায়ী বাসিন্দা মো. শাহাবুদ্দিন এর চার শতাংশ, আবদুল মুনাফ এর এক শতাংশ, মমতাজ বেগম এর দুই শতাংশ, হাবুল্লা মাঝির দুই শতাংশ জমি দখলের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। জমি দখল ছাড়াও শতাধিক অনিয়মের পাহাড় গড়েছেন তিনি। এছাড়াও মৎস্যলীগের সভাপতি থাকাকালীন জেলেদের নামের সরকারি খাদ্য সহায়তা থেকে তিনি নামে-বেনামে তালিকা করে সরকারি বিভিন্ন ত্রাণ ভোগ করতেন। এতে প্রকৃত জেলেরা খাদ্য সহায়তা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। দীর্ঘদিনের এমন অনিয়মে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের তদারকিতে গলদ থাকায় তিনি পার পেয়ে যান।
ভুক্তভোগী মালেক পালোয়ান বলেন, ‘বর্তমানে বাড়িতে প্রবেশের পথ বন্ধ করে দেয়ায় দৈনন্দিন কাজ কর্মের জন্য ঘর থেকে বের হওয়া এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় মালামাল আনা নেয়া বন্ধ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় কোন প্রকার দুর্যোগ কিংবা দুর্ঘটনা ঘটলে, কেউ অসুস্থ হলে কোন প্রকার অ্যাম্বুল্যান্স বা ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি অথবা কোন চিকিৎসক, উদ্ধারকর্মী যাতায়াত করতে পারবেন না। একজন মানুষ মারা গেলে তার লাশ নেয়ার পথটিও নেই। এমনকি কোন বৃদ্ধ ব্যক্তি মসজিদে যেতে পাঁচ মিনিটের পথ আধাঘন্টা ঘুরে যেতে হয়। তাও অন্যের বাড়ির উপর দিয়ে।’
একই বাড়ীর শাহাবুদ্দিনের স্ত্রী নাছিমা বলেন, ‘পথটি এতোটাই ছোট হয়েছে যে, যাতায়াতে কষ্ট হচ্ছে। আমাদের বসতঘরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে তা নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা গ্রহণ বা কেউ অসুস্থ হলে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য তাকে বের করে আনারও কোনো পথ নেই।’
শতবর্ষী চলাচলের পথ দখলের বিষয়ে অভিযুক্ত শফিউল্লাহ পালোয়ান এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার সম্পত্তির মধ্যে আমি ঘর নির্মাণ করেছি।
চরফ্যাশন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, গণসাক্ষরিত একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। উক্ত বিষয়টি তদন্ত করার জন্য চরফ্যাশন পৌরসভার প্রকৌশলীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
আলু উৎপাদনে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম জেলা জয়পুরহাট। এ জেলার আলুর গুণগত মান ভালো হওয়ায় দেশের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি হয় বিদেশে। তবে, এবার জেলায় আলুর উৎপাদন বেশি হওয়ায় ও আলুর দাম না থাকায় ব্যাপক লোকসান গুনছেন কৃষক ও আলু ব্যবসায়ীরা। ফলে আলু চাষি ও ব্যবসায়ীরা এবারের মৌসুমে মারাত্মক আর্থিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছেন। ভালো দামের আশায় হিমাগারে সংরক্ষিত আলু এখন তাদের জন্য দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে।
জেলার ২১টি হিমাগার থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী জানা যায়, এখন পর্যন্ত হিমাগারে ১৩ লাখ ৮০ হাজার ৬৫০ বস্তা আলু মজুত রয়েছে। প্রতি বস্তায় গড়ে ৮৫০ টাকা লোকসান ধরলে মোট ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১২০ কোটি টাকা। এছাড়া পূর্বে হিমাগার গেট থেকে আলু বিক্রি হয়েছে ২০ লাখ ৬৪ হাজার ৬১৬ বস্তা। যার ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৮০ কোটি টাকা। আলু বিক্রি বাবদ ও আলু বিক্রি না হওয়ায় মোট ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, সরকারিভাবে আলু কেনার কোনো উদ্যোগ না থাকায় তারা চরম আর্থিক সংকটে পড়েছেন। এতে তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। আবার বাজারে আলুর দাম না বাড়া ও ক্রেতা সংকটের কারণে হিমাগারে জমে থাকা আলু বিক্রি করতে না পেরে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত মৌসুমে জেলায় ৪৩ হাজার ৪৭০ হেক্টর জমিতে প্রায় ১০ লাখ ৬১ হাজার ৭৪ মেট্রিক টন আলু উৎপাদিত হয়েছিল। এরমধ্যে ২ লাখ ৬ হাজার ৭১৬ মেট্রিক টন বা ৩৪ লাখ ৪৫ হাজার ২৬৬ বস্তা আলু ২১টি হিমাগারে সংরক্ষণ করা হয়। বর্তমানে ৮২ হাজার ৮৩৯ মেট্রিক টন বা ১৩ লাখ ৮০ হাজার ৬৫০ বস্তা আলু এখনো হিমাগারে পড়ে আছে।
সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন হিমাগার ঘুরে জানা যায়, নভেম্বর-ডিসেম্বরে নতুন মৌসুমে আলু রোপণের সময় ঘনিয়ে এলেও পুরনো আলু এখনো হিমাগারে পড়ে আছে। হিমাগারের বেঁধে দেয়ার সময় ১৫ নভেম্বর মধ্যে হিমাগার খালি না করলে সংরক্ষণের মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু বর্তমান বাজারদরে আলু বিক্রি করলে প্রতিটি বস্তায় অন্তত ১০৫০-১০৭০ টাকা করে লোকসান গুনতে হচ্ছে, ফলে কেউই আলু তুলতে আগ্রহী নন।
সদর উপজেলার সোটাহার ধারকী গ্রামের কৃষক ফেরদৌস মোল্লা বলেন, সার সিন্ডিকেটের কারণে সার পায় না। আবার বস্তাপ্রতি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা বেশি দিয়ে সার কিনে যদিও বা ফসল রোপন করি। কিছুদিন পরেই পড়ে সেচ সিন্ডিকেটের পাল্লায়। ঋণ করে সমস্ত টাকা দিয়ে ফসল ফলায় কিন্তু ফসলের ন্যায্য দাম পাই না। আবার এরকম প্রাকৃতিক দুর্যোগ তো লেগেই থাকে। এদিকে সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন স্কেল বাড়ে আর ট্যাক্স বাড়ে এই দুর্ভাগা কৃষকের ওপর। কারণ কৃষকরা আন্দোলন করতে পারে না।
কালাই উপজেলার আহম্মেদাবাদ ইউনিয়নের সুড়াইল গ্রামের আলু ব্যবসায়ী আব্দুল আলিম আকন্দ বলেন, ভালো দামের আশায় আমি ৪ হাজার বস্তা আলু ৫৬ লাখ টাকায় কিনে হিমাগারে রেখেছিলাম। কিন্তু এখন দামের পতনে মাত্র ৫ লাখ ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করতে হয়েছে। প্রায় ৫১ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে, আমার সব সঞ্চয় শেষ।
জেলার প্রতিটি হিমাগারেই একই চিত্র। কালাই পৌর শহরের এম ইসরাত হিমাগারে কৃষক ও ব্যবসায়ী মিলে ৫ হাজার ২৬০ জন আলু সংরক্ষণ করেছিলেন। শুধু এই হিমাগারেই লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৮ কোটি টাকা।
কালাই পৌরশহরের শিমুলতলী এলাকার আর বি স্পেশালাইজড কোল্ড স্টোরেজের মালিক প্রদীপ কুমার প্রসাদ বলেন, আমাদের হিমাগারে দুই লাখ ৬০ হাজার বস্তা আলু সংরক্ষিত ছিল। দেড় মাস আগেই এগুলো বের করার কথা ছিল, কিন্তু ব্যবসায়ীরা তুলতে পারছেন না। আলু তুললেই বড় ক্ষতি নিশ্চিত, তাই সবাই দ্বিধায় আছেন।
ক্ষেতলাল উপজেলার কৃষ্ণনগর এলাকার আলু ব্যবসায়ী কামরুজ্জামান মিলন বলেন, উৎপাদন থেকে হিমাগারে সংরক্ষণ পর্যন্ত প্রতি কেজি খরচ পড়েছে ২৪-২৫ টাকা। এখন বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৯-১০ টাকায়। এতে প্রতি কেজিতে ১৬ টাকা পর্যন্ত লোকসান হচ্ছে।
আরেক আলু ব্যবসায়ী মিঠু ফকির বলেন, আমি ১২ হাজার বস্তা আলু রেখেছিলাম। এর মধ্যে ১০ হাজার বস্তা বিক্রি করেছি, বাকি দুই হাজার বস্তা এখনো হিমাগারে রয়েছে। প্রতি বস্তায় ৯০০ টাকা লোকসান ধরলে প্রায় ৯০ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে।
এই বিপর্যয়ের শিকার হয়েছেন জেলার হাজার হাজার কৃষক। ক্ষেতলাল উপজেলার শিশির নাজিরপাড়ার কৃষক রকিব উদ্দিন মন্ডল বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আলু চাষ করছি, কিন্তু এমন ক্ষতি কোনোদিন দেখিনি। এ বছর ১ হাজার ২০০ বস্তা আলু রেখে ১০ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে।
কালাই পৌর শহরের সড়াইল এলাকায় অবস্থিত এম ইসরাত হিমাগার লিমিটেডের ব্যবস্থাপক রায়হান আলম বলেন, সরকার আলুর ন্যূনতম দাম কেজিপ্রতি ২২ টাকা নির্ধারণ করলেও বাজারে তা কার্যকর হয়নি। প্রশাসনের তৎপরতা না থাকায় দাম কমছেই। বর্তমানে প্রায় ৪০ শতাংশ আলু হিমাগারে পড়ে আছে। এতে কৃষক, ব্যবসায়ী ও হিমাগার মালিক সবাই ক্ষতিগ্রস্ত।
জয়পুরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ এ কে এম সাদিকুল ইসলাম বলেন, গত বছর আলুর চাহিদার চেয়েও উৎপাদন হয়েছে বেশি, তাই দামও কমেছে। সরকার ২২ টাকা কেজি দরে ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ করেছে, তবে বাজারে তা এখনো কার্যকর হয়নি। কার্যকর হলে কৃষকদের লোকসানের পরিমাণ কিছুটা কমতো।
জয়পুরহাট কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মো. মেহেদী হাসান বলেন, উৎপাদন বেশি হওয়ায় বাজারে সরবরাহ বেড়েছে। সরকারিভাবে আলু কেনার বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে সিদ্ধান্ত হলেও এখনো কোনো নির্দেশনা আসেনি। রপ্তানি ও বিকল্প বাজার তৈরির চেষ্টা চলছে।
উল্লেখ্য, অন্তর্বর্তী সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন গত ৫ সেপ্টেম্বর আক্কেলপুর সফরে ঘোষণা দিয়েছিলেন, সরকারিভাবে আলু কেনা হবে এবং টিসিবির মাধ্যমে বিক্রি করা হবে। তিনি হিমাগার গেটে কেজিপ্রতি ২২ টাকা দরে আলু কেনা ও রপ্তানির আশ্বাস দিয়েছিলেন। তবে প্রায় দুই মাস পেরিয়ে গেলেও সেই আশ্বাস বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা এখন কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর সীমান্তে শূন্যরেখার নিকট থেকে এক মানসিক ভারসাম্যহীন বাংলাদেশি নাগরিককে আটক করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এর ৪৭ ব্যাটালিয়ন। পরে মানবিক বিবেচনায় তাকে পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হয়।
সোমবার (৩ নভেম্বর) সকাল ১০টার দিকে কুষ্টিয়া ৪৭ বিজিবির পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত ২ নভেম্বর দুপুর ৩টার দিকে উপজেলার পশ্চিম ধর্মদাহ বিওপির দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় টহলরত বিজিবি সদস্যরা সন্দেহ জনক অবস্থায় ঘোরাঘুরি করতে থাকা ফিরোজ আহম্মেদ সাদ্দাম (৩৩) নামে এক ব্যক্তিকে আটক করেন। তিনি কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার মির্জানগর এলাকার তোফাজ্জেল শেখের ছেলে এবং মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় ছিলেন।
পরবর্তীতে স্থানীয় ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে পরিবারের মুচলেকা নিয়ে ফিরোজ আহম্মেদকে তার পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হয়।
কুষ্টিয়া ব্যাটালিয়ন (৪৭ বিজিবি)-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মাহবুব মুর্শেদ রহমান বলেন, সীমান্ত নিরাপত্তা রক্ষা, মাদক পাচারসহ সব ধরনের অবৈধ কার্যক্রম প্রতিরোধে বিজিবি সর্বদা কঠোর অবস্থানে রয়েছে। পাশাপাশি মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকেও বিজিবি দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। এ ঘটনার মাধ্যমে তা আবারও প্রতিফলিত হয়েছে।
তিনি আরও জানান, বিজিবির এমন মানবিক উদ্যোগে স্থানীয় জনগণ প্রশংসা করেছেন এবং আটক ব্যক্তির পরিবার বিজিবির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
কুমিল্লা সেক্টরের সুলতানপুর ব্যাটালিয়ন (৬০ বিজিবি) সীমান্তবর্তী এলাকায় অভিযান চালিয়ে প্রায় ১ কোটি ৫ লাখ টাকা মূল্যের ভারতীয় অবৈধ পণ্য জব্দ করেছে।
সুলতানপুর ব্যাটালিয়ন (৬০ বিজিবি)-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. জিয়াউর রহমান জানান, আজ সোমবার ভোর থেকে সকাল পর্যন্ত পৃথক পৃথক অভিযানে কুমিল্লা জেলার আদর্শ সদর ও ব্রাহ্মণপাড়া এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলায় সীমান্তঘেঁষা এলাকা থেকে ভারতীয় পণ্য জব্দ করা হয়। জব্দকৃত পণ্যের মধ্যে রয়েছে প্রায় ৭৯ লাখ ৫২ হাজার টাকা মূল্যের ভারতীয় মোবাইল ফোনের ডিসপ্লে এবং ২৫ লাখ ৪৮ হাজার টাকা মূল্যের ভারতীয় খাদ্য সামগ্রী।
তিনি বলেন, সীমান্ত এলাকায় অবৈধ পণ্য পাচার প্রতিরোধে বিজিবি কঠোর নজরদারি বজায় রেখেছে। সীমান্তের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও অবৈধ বাণিজ্য বন্ধে নিয়মিত অভিযান অব্যাহত থাকবে। জব্দকৃত পণ্যসমূহ আইনি প্রক্রিয়া শেষে সংশ্লিষ্ট কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
জেলার কলাপাড়া উপজেলায় ঢাকাগামী ছয়টি দূরপাল্লার বাসে অভিযান চালিয়ে ১৪০০ কেজি (৩৫ মণ) জাটকা (বাচ্চা ইলিশ) জব্দ করা হয়েছে। একইসাথে বাস চালকদের প্রত্যেককে ১২,০০০ টাকা করে জরিমানা করা হয়।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও কলাপাড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. ইয়াসীন সাদেকের নেতৃত্বে পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালত গতকাল রবিবার দিবাগত রাত ১০টার দিকে কলাপাড়া চৌরাস্তা বাসস্ট্যান্ডে অভিযান চালিয়ে এ মাছ জব্দ করে। অভিযানকালে মিজান, ডলফিন, মিমসহ ছয়টি বাস তল্লাশি করা হয়।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইয়াসীন সাদেক বলেন, মহিপুর-আলীপুর রুটের বিভিন্ন বাসের ৩১টি কর্কসিটে লুকিয়ে রাখা এসব জাটকা বিভিন্ন স্থানে পাচারের চেষ্টা করা হচ্ছিল।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইয়াসীন সাদেকের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরে জব্দকৃত জাটকা বিতরণ করেন। স্থানীয় ৫০টি এতিমখানার শিক্ষার্থী এবং কলাপাড়া পৌরসভার ৩০ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মীর মধ্যে এসব মাছ বিতরণ করা হয়।
পাবনায় নামাজরত অবস্থায় বাবা নিজাম প্রামাণিককে (৬০) কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে মাদকাসক্ত ছেলে মোস্তফা প্রামাণিকের বিরুদ্ধে। রোববার (২ নভেম্বর) রাত সাড়ে ৮টার দিকে সদর উপজেলার চরতারাপুর ইউনিয়নের পুরাতন ভাদুরডাঙ্গী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত ছেলেকে আটক করা হয়েছে। তবে তাকে আটক করতে গিয়ে সদর থানার তিন উপ-পরিদর্শক (এসআই) আহত হয়েছেন।
পাবনা সদর থানার ওসি আব্দুস সালাম এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
নিহত নিজাম প্রামাণিক ওই গ্রামের মৃত ইন্তাজ প্রামাণিকের ছেলে। তিনি কৃষি কাজ করতেন। অভিযুক্ত ছেলে মোস্তফা প্রামাণিকও বাবার সঙ্গে কৃষি কাজ করতেন। তবে তিনি মাদকাসক্ত ছিলেন।
পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, নিহত নিজাম প্রামাণিক নতুন বাজারে দুধ বিক্রি করে সন্ধ্যার পর বাড়িতে ফেরেন। এরপর তিনি রাতের খাবার শেষে এশার নামাজে দাঁড়িয়েছিলেন। এ সময় আগে থেকে ঘরে ওঁৎপেতে থাকা ছেলে মোস্তফা দরজা বন্ধ করে দেন। এর পর ধারালো হাসুয়া দিয়ে বাবা নিজাম প্রামাণিককে উপর্যুপরি কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে ঘর থেকে বের হয়ে যান।
ঘাতক মোস্তফা এরপর পাশের রুমে গিয়ে দরজা আটকে বসে থাকেন। পরে বাড়ির লোকজন বিষয়টি টের পেয়ে পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ এসে নিজাম প্রামাণিকের লাশ উদ্ধার এবং ঘাতক ছেলে মোস্তফাকে আটক করে।
এদিকে অভিযুক্ত ছেলে মোস্তফাকে আটকের সময় মোস্তফার ছুরিকাঘাতে সদর থানার এসআই আবু বকর সিদ্দিক, এসআই জিয়াউর রহমান, এসআই আবু রায়হান আহত হন।
পাবনা সদর থানার ওসি আব্দুস সালাম বলেন, লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাবনা জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে এবং অভিযুক্তকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় তিনজন এসআই আহত হয়েছেন।
কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার সদর উত্তর ইউনিয়নের গোমতী নদীর ওপর নির্মাণাধীন কদমতলী-হাসনাবাদ সেতুর কাজ শুরু হয়েছে ২০২০-২১ অর্থ বছরে। ৫৭০ মিটার দীর্ঘ এ সেতুর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ৬৬ কোটি টাকা।
কাজের দায়িত্ব পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইএএম হোল্ডিং লিমিটেড। চুক্তি অনুযায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরের মে মাসে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। মাঝে ২ বছর করোনা মহামারীর কারণে বন্ধ ছিল নির্মাণ কাজ।পরে সময় বাড়িয়ে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু পাঁচ বছরেও প্রকল্পের অগ্রগতি মাত্র ৩৮ শতাংশ। সেতুর কাজে ধীরগতিতে দুর্ভোগে আছে লাখো মানুষ। এ নিয়ে ক্ষোভ আছে স্থানীয়দের মাঝে।
প্রাশাসনিক নজরদারির ঘাটতি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অবহেলা। শ্রমিক বেতন বকেয়া। সব মিলিয়ে প্রায়শই থমকে থাকে সেতুর নির্মাণ কাজ। ফলে প্রতিদিন ভোগান্তি পোহাতে হয়
দাউদকান্দি, তিতাস ও মেঘনা উপজেলার অন্তত ৩২ গ্রামের লাখো মানুষকে। তাদের নিত্যদিন পারাপারের একমাত্র বাহন নৌকা। এতে নষ্ট হচ্ছে সময়। পারাপারে আছে জীবন ঝুঁকি। গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের চরম অবহেলা ও শ্রমিকদের পারিশ্রমিক না দেওয়ার কারণে কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। গত চার মাস ধরে প্রকল্প এলাকায় কার্যত কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই।
চর কুমারিয়ার কৃষক লিয়াকত আলী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “প্রতিদিন নদী পার হয়ে মাঠে যাই। আসা-যাওয়ার পথে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয় নৌকার জন্য। ভিটিকান্দি গ্রামের নুরুল হক সরকার বলেন, আমরা হয়তো বেঁচে থাকতে এই সেতুর উদ্বোধন দেখতে পারব না। তিনি দ্রুত সেতুর কাজ শেষ করার দাবী জানান। দুধঘাটা গ্রামের গৃহবধূ রিনা আক্তার বলেন, ডাক্তারের কাছে যাওয়া বা বাজারে যাওয়া সব কিছুতেই এখন ভয় আর কষ্ট। একবার যেতে ও ফিরতে ২০০ টাকার মতো খরচ হয়।
ভিটিকান্দি গ্রামের রুমা বেগম জানান, অসুস্থ বাচ্চা নিয়ে নদী পার হওয়া যেন এক যুদ্ধের মতো। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।
সাইট সহকারী প্রকৌশলী মো. নাঈমুর রহমান বলেন, “জমি অধিগ্রহণে জটিলতা, বন্যা ও করোনা মহামারির কারণে প্রায় আড়াই বছর কাজ বন্ধ ছিল। ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়েছে কাজের মেয়াদ। তবে আরও কিছু সময় প্রয়োজন।
অন্য সহকারী প্রকৌশলী অসিত কুমার রায় জানান, শ্রমিকদের বেতন বকেয়া থাকায় অনেকে কাজ ছেড়ে চলে গেছেন। তাই আপাতত কাজ বন্ধ আছে।
দাউদকান্দি উপজেলা (এলজিইডি) প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম বলেন, গোমতী নদীর ওপর ৬৬ কোটি টাকায় ৫৭০ মিটার দীর্ঘ এই সেতুর নির্মাণকাজের দায়িত্ব পায় দুটি প্রতিষ্ঠান মঈনউদ্দিন বাশী লিমিটেড ও মেসার্স জাকির এন্টারপ্রাইজ (জেভি)। নির্ধারিত সময়েও কাজ শেষ হয়নি। প্রতিষ্ঠান সময় বাড়ানোর আবেদন করেছে। প্রয়োজনে নতুন ঠিকাদার নিয়োগের বিষয়টি বিবেচনায় রয়েছে।
কুমিল্লার লাকসামে একটি এতিমখানার গরুর খামারে ৩মাসে দুই দফায় অস্ত্র ঠেকিয়ে ১২টি গরু লুটের ঘটনা ঘটেছে। দুই দফায় ২৫ লাখ টাকার দুধের গরু নিয়ে গেছে ডাকাতদল। জেলার লাকসাম উপজেলার আজগরা ইউনিয়নের বড়বাম আল-জামিয়াতুল ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদ্রাসা ও এতিমখানায় এ ঘটনা ঘটে। সর্বশেষ ঘটনায় শিক্ষক, কেয়ারটেকার ও ছাত্রসহ আটজনকে আহত করেছে ডাকাদল। রোববার মাদ্রাসায় গিয়ে এই তথ্য জানা যায়।
জানা যায়, এই খামারের আয় দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি চলতো। ৩ মাসের ব্যবধানে দুই দফা ডাকাতি হওয়ায় শিক্ষক ও ছাত্রদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। খামারের বড় গরু গুলো লুট হয়ে গেছে। খামারের এক পাশ খালি পড়ে আছে। এখন ১১টি গরু আছে। খামারের সামনে পড়ে আছে ডাকাতদলের আনা তুষের বস্তা। যেগুলোর মাধ্যমে গরু ভ্যানে ওঠানো হয়। এলাকাবাসী গরু উদ্ধার ও ডাকাত দলের গ্রেপ্তার দাবি করেছেন।
মামলার বাদী ওই মাদ্রাসা শিক্ষক ইমরান হোসাইন জানান, ‘গত শুক্রবার ভোরে একদল ডাকাত দুইটি পিকআপ গাড়ি নিয়ে এসে অস্ত্রের মুখে মাদ্রাসার শিক্ষক- শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে। এ সময় শিক্ষকদের মারধর করে তাদের মুঠোফোনগুলো ডাকাতদের কাছে নিয়ে যায়। এরপর তারা মাদ্রাসার পাশ্ববর্তী গরুর খামারে ঢুকে কেয়ারটেকার উৎসব হোসেনকে বেঁধে একে একে ৫ টি গরু পিকআপ ভ্যানে তুলে নিয়ে যায়। এক পর্যায়ে মাদ্রাসা শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের চিৎকারে এলাকাবাসী ছুটে এলে ডাকাতেরা পালিয়ে যায়।
মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা শরীফুল আলম খন্দকার জানান, এ গরু খামারের আয়ের অর্থ দিয়ে মাদ্রাসা পরিচালনা করা হয়। এছাড়াও এ মাদ্রাসার খামারে গত তিন মাসে আগে ৭টি গরু ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে।
লাকসাম থানার ওসি নাজনীন সুলতানা জানান, লুট হওয়া গরু উদ্ধার ও ডাকাতদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে। এ ঘটনায় মাদ্রাসা শিক্ষক ইমরান হোসাইন বাদী হয়ে লাকসাম থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।
ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে রাজকীয়ভাবে বিদায় নিলেন নাটোরের বাগাতিপাড়া সরকারি পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের কারিগরি বিভাগের সহকারী শিক্ষক (টেকনিক্যাল) দিলীপ কুমার সরকার। দীর্ঘ ২৭ বছরের শিক্ষকতা জীবনের ইতি টেনে তিনি অবসরে গেলেন। এ উপলক্ষে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে আয়োজন করা হয় এক আবেগঘন সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। রোববার বিদ্যালয়ের সহকর্মী শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হয় বিদায় সংবর্ধনা। অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা প্রিয় শিক্ষককে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানায় এবং বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। পরে ফুলে সাজানো ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে বিদ্যালয় ত্যাগ করেন দিলীপ কুমার সরকার। এ সময় বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে সৃষ্টি হয় এক আবেগঘন পরিবেশের। সহকর্মী, শিক্ষার্থী ও প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীদের অনেকে অশ্রুসজল নয়নে প্রিয় শিক্ষককে বিদায় জানান।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (চলতি দায়িত্ব) অনিতা রানী বলেন, ‘দিলীপ কুমার সরকার ছিলেন অত্যন্ত পরিশ্রমী ও দায়িত্বশীল শিক্ষক। তার আন্তরিক প্রচেষ্টায় বিদ্যালয়ের টেকনিক্যাল বিভাগে এসেছে বহু সাফল্য। তাকে আমরা গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করব।’
বিদায়ী শিক্ষক দিলীপ কুমার সরকার বলেন, ‘এই বিদ্যালয় আমার দ্বিতীয় পরিবার। সহকর্মী ও শিক্ষার্থীদের ভালোবাসা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন। এই বিদায় আমার জন্য যেমন গর্বের, তেমনি খুব আবেগেরও।’
জানা গেছে, তিনি ১৯৯৮ সালের ২ মে বাগাতিপাড়া সরকারি পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে কারিগরি বিভাগের সহকারী শিক্ষক (টেকনিক্যাল) হিসেবে যোগদান করেন। দীর্ঘ কর্মজীবনে তিনি শিক্ষকতা, দায়িত্ববোধ ও শিক্ষার্থীদের প্রতি মমতায় সবার হৃদয়ে জায়গা করে নেন।
চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার আমিরাবাদ বটতলী শহরের পাশ দিয়ে বয়ে চলা একমাত্র বোয়ালিয়া খাল এখন বিলীন প্রায়। এক যুগ আগেও এই খাল কই, মাগুর, শিং, টেংরা, টাকি, শোল, বোয়াল প্রভৃতি পাঁচমিশালি মাছে ভরপুর ছিল। সহজেই দেখা মিলতো সাপ, ব্যাঙ, কুচিয়া, কচ্ছপ ইত্যাদি জলজ প্রাণীর।
জানা যায়, একসময় খালে বড়শি ও জাল ফেলে হরেক রকমের মাছ পাওয়া যেত। খালের পানি কৃষি ও গৃহস্থলির কাজে ব্যবহার করা যেত। এখন বোয়ালিয়া খালে মাছ তো দূরের কথা, ব্যাঙও দেখা যায় না। খালটি এখন মশার আস্তানা। একসময় খালের স্বচ্ছ পানিতে গোসল করা যেত। এই খাল দিয়ে অনায়াসে নৌকা চলতো। সেসব এখন সোনালি অতীত।
ভয়াবহ দূষণ, দখলসহ বিভিন্ন কারণে বোয়ালিয়া খাল থেকে মাছ ও জলজ প্রাণী প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে। দূষণের ফলে পানির রং কালো হয়ে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। পানির ওপর নানা ধরনের পোকা ভেসে বেড়াচ্ছে। দুর্গন্ধের কারণে মানুষ স্বাভাবিকভাবে চলাচলও করতে পারছে না। খালটি বর্তমানে মশার অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য বাড়ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি। আশেপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে মশাবাহী নানা রোগ। বর্তমানে তিন শতাধিক অবৈধ স্থাপনা খালটির প্রস্থ প্রায় অর্ধেকে নামিয়ে এনেছে।
জানা গেছে, বোয়ালিয়া খালের উৎপত্তিস্থল লোহাগাড়া উপজেলা সদর থেকে ৭ কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণে উত্তর কলাউজান মিশ্রী বর পাড়া এলাকার বিস্তীর্ণ কৃষি জমিতে। উৎপত্তিস্থল থেকে লোহাগাড়া উপজেলার কলাউজান ইউনিয়ন, লোহাগাড়া সদর ইউনিয়ন ও আমিরাবাদ ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে বয়ে গিয়ে প্রায় ১১ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে সাতকানিয়া-লোহাগাড়া সীমান্তে টঙ্কাবতীর মুখ এলাকায় গিয়ে টঙ্কাবতী নদীতে বোয়ালিয়া খাল মিশেছে।
বটতলী শহর এলাকায় বোয়ালিয়া খালের এক কিলোমিটার অংশে দখল ও দূষণের মাত্রা সবচেয়ে বেশি। খালের জায়গা দখল করে দুপাশে একাধিক দোকানপাট ও বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে।
উপজেলা ভূমি কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী খালটির গড় প্রস্থ প্রায় ৩০ ফুট। কিন্তু দখলের কারণে খালটির কোনো কোনো অংশ ৮ থেকে ১০ ফুট পর্যন্ত সরু হয়ে গেছে। বটতলী শহরের নালা ও স্থানীয়দের শত শত সেফটি ট্যাংকের নল খালের দিকে প্রবাহিত করায় দূষণে খালটি ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে।
এই খাল দিয়ে বৃষ্টি ও ঢলের পানি নিষ্কাশন হয়। কিন্তু দখল–দূষণে পানি নিষ্কাশনের এই পথ ক্রমাগত সরু হয়ে আসছে। এতে বাড়ছে দীর্ঘমেয়াদে বন্যার ঝুঁকি যার সাক্ষী হয়ে আছে ২০২৩ সালের ভয়াবহ বন্যা। শত শত মানুষ তাদের ঘরবাড়ি, জমির ফসল ও প্রাণহানির মতো ঘটনার ক্ষত এখনো বয়ে বেড়াচ্ছেন।
বোয়ালিয়া খাল রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ শরীফ বলেন, আগে এই খালে বিভিন্ন দেশীয় মাছ পাওয়া গেলেও এখন শুধু মশা তৈরী হয়। খালটি রক্ষার দ্বায়িত্ব আমাদের সকলের। খাল অপরিষ্কার ও দূষিত হতে থাকলে একদিন এটি বিলুপ্ত হয়ে যাবে সাথে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এর দেখা পাবে না।
বোয়ালিয়া খাল দখল ও দূষণমুক্ত করতে আগামীতে এই কমিটি সময়োপযোগী ও প্রয়োজনীয় কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করবে।