শাহরিয়ার হাসান, টেকনাফ থেকে ফিরে
‘আমরা জলদাস, নোনা জল খেয়েই বেঁচে থাকি। কিন্তু সে বেঁচে থাকা আমাদের জন্য দিনকে দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। একবেলা খাবার পাই তো অন্য বেলায় উপোস থাকি। ক্ষুধার জ্বালায় স্কুলপড়ুয়া মেয়েকে অল্প বয়সে বিয়ে দিয়ে দিয়েছি। কিস্তির টাকা শোধ করতে ভিটামাটিও বিক্রি করেছি। তার পরও আমাদের দিকে কারো চোখ পড়ছে না। এক ইয়াবার বিষে গোটা জেলেপাড়া আক্রান্ত।’
কথাগুলো নিজের ভাষায় বলেছিলেন টেকনাফের নাফ নদীর তীরে জেলেপাড়ার নন্দলালের স্ত্রী কাজলী দাশ। তিনি বলেন, দুই ছেলে আর তিন মেয়ের পরিবার নিয়ে তাদের মরে যাওয়া আর বেঁচে থাকা একই হয়ে গেছে।
সম্প্রতি নাফ নদীর পাড়ে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় কাজলী দাশের। তার গল্পে শুধু তার পরিবারের কথা না ফুটে ওঠে আরও ১০ হাজার জেলে পরিবারের কথা। যাদের কেউই ভালো নেই। দু’বেলা দু’মুঠো ভাত তাদের জুটছে না।
বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ও ইয়াবা পাচার বন্ধে ২০১৭ সালে নাফ নদীতে মাছ শিকারসহ সব ধরনের যাতায়াত বন্ধ করে দেয় সরকার। নিষেধাজ্ঞায় নাফ নদীকেন্দ্রিক জীবন-জীবিকা নির্বাহ করা টেকনাফ উপজেলার ছয় ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার তিনটি ইউনিয়ন এবং এক পৌরসভার ১০ হাজার জেলে পরিবারে নেমে এসেছে অন্ধকার। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময় থেকে এ নদীতে মাছ শিকার করে নিজেদের জীবন-জীবিকা, সংসার, ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচ চালিয়ে আসছিলেন নদী পারের মানুষেরা। যদিও এই নিষেধাজ্ঞার ৫ বছর পরও থেমে নেই নাফ দিয়ে ইয়াবা পাচার। উল্টো বেড়েছে কয়েক গুণ। প্রশাসনের এই ব্যর্থতার দায় গুনতে হচ্ছে সেখানকার জেলেদের।
যাদের সুপারিশে জেলেদের জন্য এই নাফ নদী বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল, সেই বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) পরিচালক (অপারেশন) লে. কর্নেল ফয়জুল রহমান বলেছেন ভিন্ন কথা। তিনি দৈনিক বাংলাকে বলেন, নাফ নদীতে মাছ ধরা নিয়ে আগের মতো তেমন কঠোরতা নেই। চাইলে জেলেরা নাফ নদীতে নামতে পারে। তবে সীমান্ত দিয়ে ইয়াবা বা অন্য যেকোনো মাদক চালান পাচার বন্ধে যা যা করার প্রয়োজন তা বিজিবি করে আসছে। কিন্তু টেকনাফের জেলেপাড়ায় গিয়ে বিজিবি পরিচালকের কথার মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি।
টেকনাফে বেশ কয়েকটি জেলেপাড়া আছে। এর মধ্যে হোয়াইক্যংয়ের উত্তরপাড়া, খারাইংগ্যাঘোনা, বালুখালী লম্বাবিল, হ্নীলার হোয়াব্রাং, নাটমুড়ার জেলেপাড়া, জাদীমুরা, খারাংখালী, টেকনাফের জাইল্যাপাড়া, কায়ুকখালীপাড়া, নাজিরপাড়া, সাবরাংয়ের চৌধুরীপাড়া, নয়াপাড়া, শাহপরীর দ্বীপের জাইল্যাপাড়া, খারিয়াখালী এবং মাঝেরপাড়া অন্যতম।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, দীর্ঘদিন নাফ নদীর তীরে নোঙর করে রাখা মাছ ধরার কয়েক হাজার নৌকা ও জাল নষ্ট হয়ে গেছে। এতে ক্ষতি কোটি কোটি টাকা। বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে জীবন চালাতে যারা নৌকা ও জাল কিনেছিলেন, নদীতে যেতে না পেরে সময়মতো ঋণ পরিশোধ করতে পারেননি। ঋণের টাকার জন্য বাড়ি পাড়িয়ে নামাচ্ছেন ব্যাংক কর্মকর্তারা। আবার অসহায়ত্বের কারণে অনেক জেলে নিজেদের ভিটেমাটি বিক্রি করে পথে বসেছেন। চাপ সামলাতে না পেরে কয়েকটি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে বলেও জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
জীবিকার একমাত্র পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেকে আবার বিকল্প আয়ের উৎস খুঁজেছেন। কিন্তু স্থানীয় বিভিন্ন প্রকল্পে রোহিঙ্গারা শ্রমিক হিসাবে কাজ করায় সে কাজ পেতেও জেলেদের অনেক বেগ পেতে হচ্ছে। ভুক্তভোগীদের অনেকেই বলছেন, যদি জেলেদের মাধ্যমে ইয়াবা পাচার হয়ে থাকে, তাহলে রাতের বেলায় না হলেও অন্তত দিনের বেলায় নাফ নদীতে মাছ শিকারের অনুমতি দেয়া হলে জেলেরা খেয়ে-পরে বাঁচতে পারত।
টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ জেলে সমিতির সভাপতি আব্দুল গনি মাঝি বলেন, ‘নাফ নদী আমাদের একমাত্র জীবন-জীবিকার ঠিকানা। সেখানে জাল ফেলতে পারছি না আমরা। নদী বন্ধের পাঁচ বছরে জেলেপল্লির হাজার হাজার মানুষ কী কষ্ট করে সংসার চালাচ্ছে তা একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেন না।’
হ্নীলার জেলেপল্লির বগির দাশ বলেন, ব্রিটিশ আমল থেকে এ নদীতে মাছ আহরণ করে চলছে আমাদের সংসার। কিন্তু এ রকম সংকট কখনো দেখিনি। শুকনো খাবার খেয়ে দিন যাচ্ছে আমাদের। কিন্তু সেটা কত দিন। শরীরের ভারে এখন আর কষ্ট করেও খেতে পারি না।
শামপদ দাসের বসবাস শাহপরীর দ্বীপ বেড়িবাঁধ সংলগ্ন এলাকায়। তিনি বলেন, প্রায় পাঁচ বছর সময় ধরে নাফ নদীতে মাছ শিকার করতে পারছি না। হাজার হাজার টাকা ঋণ নিয়ে নৌকা ও জাল তৈরি করেছিলাম। ওই টাকাও শোধ করতে পারছি না। নৌকা ও জাল অর্ধেক নষ্ট হয়ে গেছে। রুজি-রোজগারের উপকরণ নষ্ট হলে আত্মহত্যা ছাড়া কোনো পথ থাকবে না।
হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী দৈনিক বাংলাকে জানান, রোহিঙ্গা আসাকে কেন্দ্র করে নাফ নদী বন্ধ হওয়ায় আমার এলাকার হাজার হাজার জেলে পরিবার সীমাহীন দুর্ভোগে দিন পার করছে। অন্যদিকে রোহিঙ্গাদের কারণে পাহাড়েও যেতে পারছে তারা না। তাই প্রয়োজনবোধে বিজিবির সহায়তায় নির্দিষ্ট একটি পয়েন্টে চেকিংয়ের মাধ্যমে নাফ নদীতে মাছ শিকারের অনুমতি দিয়ে নদীকেন্দ্রিক জীবিকা হারানো জেলেদের বাঁচাতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ প্রত্যাশা করছি।
স্থানীয় এই জনপ্রতিনিধি আরও বলেন, এই জেলেদের যে সরকার খুব সহায়তা করতে পারছে সেটাও না। মাছ ধরা বন্ধ থাকার মৌসুমে তাদের বছরে ৩০ কেজি চাল দিতে পারি। এর বাইরে আমারও কিছু করার থাকে না।
নাফ নদীতে যেভাবে ইয়াবা
১৯৯৭ সালে নাফ নদী দিয়ে বাংলাদেশে প্রথম ইয়াবার চালান ঢোকে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সূত্রের বরাতে জানা যায়। সেই চালানটি আনেন ইয়াবা সাম্রাজ্যের অন্যতম গডফাদার হিসেবে পরিচিত সাইফুল করিম। তার তৈরি ইয়াবা নেটওয়ার্কটি নাটকীয়ভাবে বাড়তে থাকে। তিনি বনে যান ইয়াবা সাম্রাজ্যের অধিপতিদের দলে। যদিও ২০১৯ সালে কথিত এক বন্দুকযুদ্ধে মারা যান সাইফুল।
সরকারি বিভিন্ন বাহিনী ও সংস্থার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসা শুরুর পর থেকে তাদের সঙ্গে অবাধে আসতে শুরু করে ইয়াবা। পরিস্থিতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। অভিযান ছাড়াই চেকপোস্ট বসিয়ে ২০১৭ সালে কক্সবাজারে প্রায় ৮৬ লাখ ইয়াবা উদ্ধার করা হয়, যার সবগুলো প্রবেশ করেছিল নাফ নদী দিয়ে। মাদকের দেশীয় গডফাদাররা বহনকারী হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন রোহিঙ্গাদের। এরপর সরকার মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে নাফ নদীতে চলাচল বন্ধ কেরে দেয়।
তারপরও ইয়াবার চালান আসা কমেনি। উল্টো বছর বছর বেড়েছে। ইয়াবা উদ্ধারের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বিশেষ অভিযান শুরুর পরে ২০১৮ সালে উদ্ধার করা হয় ১ কোটি ২৮ লাখ ইয়াবা বড়ি। সর্বশেষ গত বছর উদ্ধার হয় আড়াই কোটির বেশি ইয়াবা। সব মিলিয়ে পাঁচ বছরে ৭ কোটি ৮৫ লাখের বেশি ইয়াবা উদ্ধার হয়েছে। পাঁচ বছরে মাদক উদ্ধারের ঘটনায় মামলা হয়েছে ১০ হাজার ৪৭৮টি। গ্রেপ্তার ১৪ হাজার ১৭৩ জন।
মাদকবিরোধী বিভিন্ন কার্যক্রমে যুক্ত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন নোঙরের কক্সবাজার জেলার নির্বাহী পরিচালক দিদারুল আলম বলেন, মাদকের ব্যবসার শিকড়ে হাত না দেয়া এবং শীর্ষ কারবারিরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকায় মাদক চোরাচালান কমছে না, বরং বেড়েছে।
যে কারণে ইয়াবা ব্যবসায় ঝুঁকেছেন কারবারিরা
কক্সবাজার জেলা পুলিশ ও র্যাবে দেয়া তথ্য বলছে, মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে বেশির ভাগ ইয়াবা আসে টেকনাফ হয়ে। টেকনাফে মাদক ঢোকার অন্যতম পথ হিসেবে পরিচিত নাফ নদীর তীরবর্তী হ্নীলা, দমদমিয়া, জাদিমোড়া এবং বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন টেকনাফ সদরের মহেশখালিয়া পাড়া, তুলাতলী, হাবিবছড়া ও নোয়াখালী পাড়া।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তালিকাভু্ক্ত এক মাদক ব্যবসায়ী দৈনিক বাংলাকে বলেন, ইয়াবা ব্যবসায় কাঁচা টাকা। লাভও অনেক। শুরুর দিকে শুধু টাকার জন্যই এই কারবারে নেমেছিলাম। তারপর ফিরতে চাইলেও পরিনি এ কারবার থেকে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মিয়ানমার থেকে গড়ে ২৫ থেকে ৪০ টাকায় কিনে প্রতিটি ইয়াবা ১৫০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হয় টেকনাফে। যা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গিয়ে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়।
পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন দৈনিক বাংলাকে বলেন, ব্যাপক নজরদারির মধ্যেও টেকনাফ দিয়ে দেশের ভেতরে মাদক ঢুকছে। আমরা মাদকের চালান ঠেকাতে চেকপোস্ট বাড়াচ্ছি।
যেভাবে সমাধানের পথ দেখছে সরকার
নাফ নদী জেলেদের জন্য খুলে দেয়ার জন্য স্থানীয় চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসক বরাবর একাধিকবার আবেদন করেছিলেন স্থানীয় জেলেরা। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো এ প্রস্তাবে রাজি হয়নি। সম্প্রতি বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের (রোহিঙ্গা) সমন্বয়, ব্যবস্থাপনা ও আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত জাতীয় কমিটির পঞ্চম সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, বাংলাদেশে মাদক আনা-নেয়ার রুট হিসেবে নাফ নদী ব্যবহৃত হওয়ায় এই নদীতে মাছ ধরার ট্রলারের নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এতে অন্য দেশের নৌযান বাংলাদেশের জলসীমায় এসে মাছ আহরণ করলে সহজেই তাদের শনাক্ত করা যাবে।
সম্প্রতি মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর এক সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, সমুদ্রে যত নৌযান মাছ ধরে, সেগুলোকে শিগগিরই নিবন্ধনের আওতায় আনা কঠিন হবে। তাই নৌযানগুলোকে রং করে নম্বর দিয়ে দেয়া হবে, যাতে নৌযানগুলো চিহ্নিত করা যায়। এটা দ্রুত করতে বলা হয়েছে, না হলে মিয়ানমারের কিছু নৌকা আমাদের মধ্যে ঢুকে মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সমুদ্রে মাছ ধরার নৌযানে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এসব প্রযুক্তির মাধ্যমে জানা যাবে নৌযানের সার্বিক তথ্য। এমনকি কোনো নৌযান দুর্ঘটনায় পড়লে তার অবস্থান শনাক্ত করে দ্রুত উদ্ধার করা যাবে জেলেদের। প্রথম পর্যায়ে ১০ হাজার নৌযানে বসানো হবে এসব প্রযুক্তি। চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে শুরু হবে এসব ডিভাইসের কার্যকারিতা।
মানবাধিকারকর্মী আইন সালিশ কেন্দ্রের (আসক) পরিচালক নীনা গোস্বামী দৈনিক বাংলাকে বলেন, কয়েক পুরুষ ধরে এই পেশায় আছেন ওই সব জেলেরা। ওনারা এই কাজ ছাড়া আর কিছুই জানেন না। দীর্ঘদিন নদী বন্ধ করে রাখলে তাদের জন্যও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করা উচিত ছিল। এত দিনেও সেটা হয়নি, আর ইয়াবা আসাও বন্ধ করা যায়নি। সরকারের উচিত তাদের জন্য কিছু ভাবা। স্বাধীন দেশে তারা নিজেদের যেন পরাধীন মনে না করেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খ. মাহবুবুল হক বুধবার দৈনিক বাংলাকে বলেন, আমরা এর আগেও অনেকবার চেষ্টা করেছি আমাদের জেলেদের জন্য নাফ নদী সম্পূর্ণভাবে খুলে দিতে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো থেকে কোনো সাড়া মেলেনি। গত ৫ বছরে জেলা প্রশাসন থেকেও মনে হয় সেভাবে সুপারিশ করা হয়নি। তবে সম্প্রতি আমরা এটা নিয়ে কাজ করছি। আশা করছি আগামীতে যেকোনো মিটিংয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বসে এই বিষয়টি সমাধান করা হবে।
সারাদেশের অধস্তন আদালত ও ট্রাইব্যুনালের সহায়ক কর্মচারীগণ নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে ০৫ মে সকাল সাড়ে নয়টা থেকে দুই ঘণ্টা সর্বাত্মক শান্তিপূর্ণভাবে কর্মবিরতি পালন করেছেন।
ফেনীতেও বাংলাদেশ বিচার বিভাগীয় কর্মচারী এসোসিয়েশন, ফেনী শাখার সদস্যগণ দুই দফা দাবিতে আদালতে আঙ্গিনায় সর্বাত্মক শান্তিপূর্ণ কর্মবিরতি পালন করেছেন ।
বিচার বিভাগের জন্য সুপ্রীম কোর্টের অধীন পৃথক সচিবালয় করণ, অধস্তন আদালত ও ট্রাইব্যুনালের সহায়ক কর্মচারীগণকে বিচার বিভাগের সহায়ক কর্মচারী হিসেবে বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস বেতন স্কেলের আলোকে বেতন ভাতা প্রদানসহ বিদ্যমান জুডিসিয়াল সার্ভিস বেতন স্কেলের ১ম-৬ষ্ঠ গ্রেডের পরবর্তী ৭ম-১২তম গ্রেডভুক্ত করা এবং বিদ্যমান ব্লকপদ বিলুপ্ত করে যুগোপযোগী পদ সৃজনপূর্বক যোগ্যতা ও জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে পদোন্নতির সুযোগ রেখে স্বতন্ত্র নিয়োগবিধি প্রণয়নের দাবিতে তারা এই কর্মবিরতি পালন করেছেন।
সোমবার (৫ মে) সকাল সাড়ে ৯ টায় ফেনীতে আদালতের নিচ তলায় আয়োজিত দুই ঘণ্টাব্যাপি কর্মবিরতিতে সভাপতিত্ব করেন যুগ্ম জেলা জজ দ্বিতীয় আদালতের সিনিয়র স্ট্রোনোগ্রাফার ও অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোঃ মহসিন।
বেঞ্চ সহকারি মোঃ জসিম উদ্দিনের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন যুগ্ম জেলা জজ প্রথম কোর্টের সেরেসতাদার ও অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি আলতাফ হোসেন, জেলা ও দায়রা জজ ফেনী এর নাজির শাহনাজ বেগম,
স্টোনোগ্রাফার মো: দিদারুল ইসলাম, রেকর্ড কিপার সামছুল কিবরিয়া, স্টোনোগ্রাফার মো: শামছু উদ্দীন,
বেঞ্চ সহকারী আশিকুর রহমান ভূঁইয়া, তুলনা সরকারি মোঃ ইকবাল হোসেন, খোরশেদ আলম ভূঁইয়া, ইসমাইল ভূঁইয়া, আনোয়ারুল আজিম, ইউনুস শরীফ, মোঃ: জহির উদ্দিন মজুমদার, হারিস মাহমুদ প্রমুখ।
বাংলাদেশ বিচার বিভাগীয় কর্মচারী এসোসিয়েশন, ফেনী শাখা কর্মকর্তারা জানায়, এসব দাবী উপস্থাপন করে গত ০৪ মে তারিখের মধ্যে উক্ত দাবী বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচরে আনা সত্বেও এসোসিয়েশনের ন্যায্য দাবী বাস্তবায়নে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচী হিসেবে এই কর্মবিরতি পালন করছেন।
বাংলাদেশ বিচার বিভাগীয় কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশন ফেনী শাখার কর্মকর্তারা আরো বলেন, ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথক হয়। বিচার বিভাগ পৃথক হওয়ার পর শুধুমাত্র মাননীয় বিচারকগণের জন্য ৬টি গ্রেড রেখে পৃথক পে-স্কেলসহ নিয়োগ বিধিমালা প্রণয়ন করা হলেও সহায়ক কর্মচারীগণকে উক্ত পে-স্কেলের আওতাভুক্ত করা হয়নি। মাননীয় বিচারকগণের সাথে আদালতের সহায়ক কর্মচারীগণ একই দপ্তরে কাজ করা সত্বেও জুডিসিয়াল সার্ভিস পে-স্কেলের আলোকে মাননীয় বিচারকগণের বেতন-ভাতাদি প্রদেয় হলেও সহায়ক কর্মচারীগণ জনপ্রশাসনের আলোকে বেতন-ভাতাদি পেয়ে থাকেন। মাননীয় বিচারকগণের জন্য বিচারিক ভাতা, চৌকি ভাতা, ডিসেম্বর মাসে দেওয়ানি আদালতের অবকাশকালীন (ডিসেম্বর মাস) দায়িত্ব ভাতা'সহ ফৌজদারি আদালতে দায়িত্ব পালনের জন্য এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অবকাশ ভাতা প্রদানের বিধান থাকলেও বিচার সহায়ক কর্মচারীগণকে অনুরূপ কোনো ভাতা প্রদান করা হয়না। এক কথায় বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের পর মাননীয় বিচারকগণের জন্য কিছু সুযোগ সুবিধা প্রদান করা হলেও সম্পূর্ণরূপে বঞ্চিত করা হয়েছে সহায়ক কর্মচারীগণকে।
চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় অভিযান চালিয়ে ৬ জন আন্তঃজেলা ডাকাত সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সোমবার (৫ মে) ভোর সাড়ে ৩টার দিকে উপজেলার লক্ষ্মীপুর বাজার এলাকায় এ অভিযান চালানো হয়।
আটক হওয়া ডাকাতদের কাছে পাওয়া আগ্নেয়াস্ত্র, গুলি, পুলিশি পোশাক, ওয়াকিটকি, ইয়াবা ট্যাবলেট ও ডাকাতির অন্যান্য সরঞ্জাম জব্দ করা হয়।
আটককৃতরা হলেন—রুবেল রানা (২৯), আজিজুর মন্ডল (৩৬), শিলন মোল্লা (২১), সবুজ আলী মিঠু (৩০), মনিরুল ইসলাম (৪০) ও মারুফ শেখ (২০)। তারা কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ জেলার বাসিন্দা।
পুলিশ জানিয়েছে, লক্ষ্মীপুর বাজার থেকে খাসকররা যাওয়ার পাকা সড়কে একটি ডিজেলের দোকানের সামনে মাইক্রোবাসে একদল অস্ত্রধারী ডাকাতির প্রস্তুতি নিচ্ছিল। খবর পেয়ে আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ মাইক্রোবাসটি ঘিরে ফেলে এবং তাদের গ্রেপ্তার করেছে।
তাদের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, ১টি রিভলবার, ১টি ওয়ান শুটার গান, ২ রাউন্ড গুলি, ২টি চাইনিজ কুড়াল, ২টি তালা কাটার যন্ত্র, ৫টি মাস্টার চাবি, ১টি পুলিশের জ্যাকেট, ১টি ওয়াকিটকি সদৃশ্য মোবাইল সেট, ৫০ পিস ইয়াবা, ১টি মোবাইল ফোন ও ঢাকা মেট্রো-গ-১২-৩০৯৭ নম্বরের একটি মাইক্রোবাস জব্দ করা হয়েছে।
সাংবাদিকদের এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন আলমডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুদুর রহমান। ঘটনার পর আলমডাঙ্গা থানায় অস্ত্র, ডাকাতি ও মাদক আইনে তিনটি পৃথক মামলা দায়ের করা হয়েছে।
গত মার্চের ১৯ তারিখে চাল না দেওয়া ও চাল সংগ্রহে চুক্তি না করায় রাজশাহী বিভাগে ৯১৩টি চালকলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করে খাদ্য বিভাগ। রাজশাহী আঞ্চলিক খাদ্য বিভাগ থেকে চাল সংগ্রহ মৌসুম শেষ হওয়ার পর সম্প্রতি খাদ্য মন্ত্রণালয়ে এই সুপারিশ পাঠানো হয়। সরকারের সঙ্গে চুক্তি করেও চাল সরবরাহ না দেওয়ায় রাজশাহী বিভাগের ৬১টি চালকলের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। চুক্তিবদ্ধ হয়েও কোনো চাল সরবরাহ করেনি এসব চালকল মালিকরা। এছাড়া চাল সংগ্রহ কার্যক্রমে অসহযোগিতাকারী ৯১৩টি চালকলকেও সাবধান করা হয়েছে।
খাদ্য বিভাগের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সরকারের সাথে চুক্তি করেও ঠিকভাবে চাল সরবরাহ দেয়নি এমন চালকলের সংখ্যা ১৬২টি। এর মধ্যে চুক্তির ৮০ ভাগ চাল দিয়েছে এমন চালকলের সংখ্যা ৩০টি। ৫০ ভাগ চাল দিয়েছে- এমন চালকলের সংখ্যা ৭১টি। আর চুক্তিবদ্ধ হয়েও কোনো চালই দেয়নি এমন চালকলের সংখ্যা ৬১টি। এছাড়া, ব্যবসা করলেও চাল সরবরাহের চুক্তি না করা চালকলগুলোরও লাইসেন্স বাতিল করেছে খাদ্য বিভাগ।
রাজশাহী খাদ্য অফিসের তথ্যমতে, রাজশাহী বিভাগে আমন সংগ্রহ ২০২৪-২০২৫ মৌসুমে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ৫৬,৩৫৯ টন, সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ৩৯৫ টন (লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৭%), সিদ্ধ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ১১ হাজার ২৬৩ মেট্রিক টন। এর মধ্যে সংগ্রহ হয়েছে ৯৪ হাজার ৭০৭ মেট্রিক টন। আর আতপ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২১ হাজার ৮৯১ মেট্রিক টন। সংগ্রহ হয়েছে ১৯ হাজার ৫২৯ মেট্রিক টন।
৬১টি চালকলের মধ্যে যারা সিদ্ধচালের কোনো চালই প্রদান করেনি- এমন চালকল রাজশাহীর একটি, নওগাঁয় ৮টি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ তিনটি, পাবনায় ১১টি, বগুড়ায় ৩৪টি ও জয়পুরহাটে তিনটি। আর আতব চাল দেয়নি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার একটি মিল। এর আগে এসব চালকল মালিকদের ব্যাখ্যা তলব করা হয়। ব্যাখ্যা সন্তোষজনক না হওয়ায় এসব চালকলের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে।
রাজশাহী খাদ্য অধিদপ্তরের বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারি উপপরিচালক ওমর ফারুক বলেন, সরকারি যেকোনো কাজে চুক্তিবদ্ধ হলে তা বাস্তবায়ন না করতে পারলে অপরাধ বলে গণ্য হবে। যেসব মিল চুক্তি করেও ৫০ থেকে ৮০ শতাংশ চাল সরবরাহ করেছে, তাদের জামানত থেকে জরিমানা কেটে নেওয়ার আর যারা কোনো চাল সরবরাহ করেনি, তাদের লাইসেন্স বাতিলের সুপারিশ করেছিলাম। রাজশাহী বিভাগের যে সব মিল চাল দেয়নি বা চুক্তিযোগ্য ছিল কিন্তু চুক্তি করেনি- এমন মিল ৯১৩টি মিলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ মন্ত্রণালয়ে দিয়েছিলাম। এদের মধ্যে ৬১টি চালকলের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। বাকিদের শোকজ করা হয়েছে। পরে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। যারা চাল সরবরাহে ব্যর্থ হয়েছে, তাদের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে।
নীলফামারীর জলঢাকায় ইজারাবিহীন খাসে যাওয়া মীরগঞ্জ হাট-বাজারে গরু-ছাগল ক্রেতা বিক্রেতাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টোল আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। গত শনিবার সরেজমিনে গিয়ে অতিরিক্ত টোল আদায়ের বিষয়ে সত্যতা পাওয়া যায়। সেখানে দেখা যায়, সরকারি খাস খতিয়ানে যাওয়া মীরগঞ্জ হাট-বাজারের পশুরহাটে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে গরু ক্রেতার কাছ থেকে রশীদ ফি ৬০০ টাকা ও বিক্রেতার কাছ থেকে অতিরিক্ত ২০০ টাকা চাঁদাসহ গরু প্রতি মোট ৮০০ টাকা আদায় করছেন হাট-বাজারের দায়িত্বে থাকা কর্তৃপক্ষ। এ হাট-বাজারে প্রশাসনের কাউকে দেখা না গেলেও সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে দুইজন ইউনিয়ন উপসহকারী ভূমি কর্মকর্তা তাৎক্ষণিক হাট বাজারের অফিসে উপস্থিত হতে দেখা যায়। তারা হলেন গোলনা ইউনিয়ন উপসহকারী ভূমি কর্মকর্তা জহুরুল ইসলাম ও কাঁঠালী ইউনিয়ন উপসহকারী ভূমি কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম। মীরগঞ্জ হাট-বাজারের টোল আদায়ের মুল দায়িত্বে ছিলেন ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা জহুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমরা সঠিক সময়ে হাটে এসেছি। তারা আমাদের চাপে ফেলে হাটের টোল আদায় করছেন। আমরা তাদেরকে সহযোগিতা করেছি।
তারা কারা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওরা বিএনপি-জামায়াতের লোকজন। সংবাদকর্মীদের দেখে হাট-বাজারের থাকা ক্রেতা বিক্রেতা এগিয়ে এসে বলেন, গত ৩টা হাটে শুধু গরু ক্রেতার কাছে রশীদের ফি বাবদ ৬০০ টাকা নিয়েছেন। আর যারা গরু বিক্রেতা ছিলাম আমাদের কাছ তেকে কোন প্রকার চাঁদা নেয়নি। কিন্তু আজকের হাটে গরু ক্রেতার কাছে রশীদের মাধ্যমে ৬০০ টাকা এবং বিক্রেতার কাছে বিধি পরিপন্থি অতিরিক্ত ২০০ টাকা চাঁদা নেয়। হাটের লোকজন আমাদের কাছে জোরপূর্বক ভয়ভীতি দেখিয়ে অতিরিক্ত ২০০ টাকা চাঁদা নিচ্ছেন। একপর্যায়ে একদল লোক দৌড়ে এসে সংবাদকর্মীদের ওপর চড়াও হয় এবং আক্রোশমুলক গালমন্দ করতে থাকেন। এছাড়া বিভিন্ন হয়রানিমূলক মামলা এবং হত্যার হুমকি প্রদর্শন করেন।
লোকমুখে জানা যায়, তারা উপজেলা বিএনপির একাংশ একটি গ্রুপের বাহিনী। উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, চলতি অর্থ বছরের বাংলা ১৪৩২ সালে উপজেলার ২৬টি হাট ইজারা দেওয়ার দরপত্র আহ্বান করা হয়। এরমধ্যে ১৭টি হাটের দরপত্র জমা হলে বিধিমোতাবেক দরপত্র দর দাতাদের মধ্যে হাট-বাজার গুলো বুঝিয়ে দেওয়া হয়। এদিকে ৯টি হাটের কোন দরপত্র জমা না হওয়ায় হাট-বাজার গুলো খাস খতিয়ানে চলে যায়। খাস খতিয়ানে যাওয়া হাট-বাজার গুলো হলো, মীরগঞ্জ হাট-বাজার, পাঠানপাড়া হাট-বাজার, হলদিবাড়ী নালারপাড় হাট-বাজার, হলদিবাড়ী জয়বাংলা হাট-বাজার, নবাবগঞ্জ হাট-বাজার, ডিয়াবাড়ী হাট-বাজার, বালারপুকুর চৌধুরীর হাট-বাজার, হরিশ্চন্দ্রপাঠ হাট-বাজর, খুটামারা রহমানিয়া হাট-বাজার ইত্যাদি। এই হাটগুলো বর্তমানে উপজেলা প্রশাসন তাদের নিজেদের নিয়োগকৃত জনবল দিয়ে হাট-বাজারের টোল আদায় করছেন। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. জায়িদ ইমরুল মোজাক্কিন বলেন, লিখিতভাবে কাউকে হাট-বাজার দেওয়া হয়নি। কিন্তু খাস খতিয়ানের হাট-বাজারে কিছু লোকের সহযোগিতা নিয়ে টোল আদায় করা হচ্ছে। অতিরিক্ত ২০০ টাকা টোল আদায়ের কোন এখতিয়ার নেই। যদি এরকম কোনো প্রমাণ আপনারা দিতে পারেন তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দুর্নীতির অভিযোগে, টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার সেনেরচর শাহসুফি সিনিয়র আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মনিরুজ্জামানকে অবরুদ্ধ করেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা। এরপর মাদ্রাসার প্যাডে ও স্ট্যাম্পে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করিলাম লিখে স্বাক্ষর দেন অধ্যক্ষ মনিরুজ্জামান।
রবিবার (৪মে) বেলা ১২টায়, মাদ্রাসা অফিস কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। পদত্যাগ পত্রে তিনি উল্লেখ করেন, আজকের মধ্যে নগদ ২০লাখ টাকা বুঝিয়ে দিয়ে অফিস ত্যাগ করবেন। এর মধ্যেই গোপালপুর থানা থেকে পুলিশ এসে অধ্যক্ষকে উদ্ধার করে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে নিয়ে যান।
অত্র মাদরাসার ইবতেদায়ী সহকারী শিক্ষক মৌলভী আব্দুল খালেক বলেন, অধ্যক্ষের নামে অনেক দুর্নীতির অভিযোগ আছে। দুর্নীতির টাকায় বিভিন্ন স্থানে টাইলস করা বাড়ি বানিয়েছে। অধ্যক্ষ কাউকে কোন হিসাব দেয় না। হিসাব চাওয়ার কারনে সে সকল শিক্ষকদের নামে মামলা করেছে।
মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা দাবি করেন, প্রিন্সিপাল স্যার অনেক টাকা আত্মসাৎ করেছে, অন্য স্যারদের নামে মামলা করেছে এবং নিয়মিত প্রতিষ্ঠানে আসে না। আমরা আত্মসাৎকৃত টাকা ফেরৎ ও প্রিন্সিপালের পদত্যাগ চাই।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জুলফিকার হায়দার বলেন, বিষয়টি আমিও শুনেছি, অধ্যক্ষকে ইউএনও অফিসে আনা হয়েছে। এখনো বসা হয়নি, কিছুক্ষণ পর বসা হবে তারপর বিস্তারিত বলতে পারবো।
অধ্যক্ষ মনিরুজ্জামান মুঠোফোনে বলেন, ঠিকমতো ক্লাস হচ্ছেনা বলে ছাত্ররা আমাকে মাদরাসায় ডেকে নিয়ে যায়, আজকে মাদরাসায় যাওয়ার পর পদত্যাগপত্র ও টাকা দিতে হবে। পদত্যাগপত্রে এসব লিখে নিয়েছে।
ইউএনও মো. তুহিন হোসেন মুঠোফোনে জানান, বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে, তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গাজীপুরে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহর গাড়িতে হামলার ঘটনায় দুজনকে আটক করেছে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি)।
রবিবার (৪ মে) রাতে তাদের আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জিএমপির অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) রবিউল হাসান।
ডিসি রবিউল ইসলাম জানান, হামলার সঙ্গে জড়িত দুইজনকে আটক করা হয়েছে এবং অন্যান্য দোষীদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।
তবে তিনি আটক হওয়া ওই দুই ব্যক্তির নাম প্রকাশ করেননি।
এছাড়া, জিএমপি কমিশনারের নির্দেশে হামলাকারীদের খুঁজে বের করতে সবাই একসঙ্গে কাজ করছেন বলেও জানান ডিসি রবিউল।
তিনি বলেন ‘হামলাকারী যেই হোন না কেন, আমরা তাদের খুঁজে বের করব এবং আইনের আওতায় নিয়ে আসব।’
তিনি জানান, হাসনাতের সঙ্গে কথা বলার জন্য ঘটনাস্থলে গিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। এ সময় তার শারীরিক অবস্থার খোঁজ নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে হাসনাত শারীরিকভাবে সুস্থ আছেন।
এছাড়া তার (হাসনাত) থেকে অভিযোগ পেলে এ ঘটনায় মামলা করা হবে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।
এর আগে রবিবার সন্ধ্যার দিকে গাজীপুর থেকে ঢাকার দিকে ফেরার পথে চন্দনা চৌরাস্তা এলাকায় পৌঁছালে হাসনাতের গাড়িতে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। নিজের ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে এ তথ্য জানান এনসিপির আরেক নেতা আব্দুল হান্নান মাসউদ।
হামলায় গাড়ির কাচ ভেঙে আঘাত পান হাসনাত, তবে গুরুতর আহত হননি বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এই হামলার প্রতিবাদে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাকর্মীরা গাজীপুরে মশাল মিছিল করেন। মিছিলে তারা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দেন।
ইউনিসেফ-বাংলাদেশের স্টাফ এসোসিয়েশন সহযোগিতায় ও জেলা প্রশাসনের আয়োজনে বিগত বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ফেনীর একশত পরিবারের মাঝে ২০ লক্ষ টাকা অর্থ সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।
রবিবার (৪ মে ) সকাল সাড়ে ১১টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এই উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক গোলাম মো. বাতেন, ইউনিসেফ চট্টগ্রামের রিজিওনাল হেড মাধুরী ব্যানার্জি।
ফেনী সদর উপজেলার ৪০টি, ছাগলনাইয়া উপজেলার ২৫টি, ফুলগাজী উপজেলার ২০টি ও পরশুরাম উপজেলার ১৫টি সর্বমোট ১০০টি পরিবারকে এই আর্থিক অনুদান প্রদান করা হয়। ১০০টি পরিবারের প্রত্যেকটি পরিবারকে ২০ হাজার টাকা মোট ২০ লক্ষ টাকা প্রদান করা হয়।
উপকারভোগী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে -যেসব পরিবারে গোল্ডেন সিটিজেন কার্ড (সুবর্ণ কার্ড) সহ প্রতিবন্ধী শিশু রয়েছে; যেসব পরিবারে এসএএম শিশু, চরম-দারিদ্রসীমার নিচে বসবাসকারী পরিবার, বন্যার কারণে বসত বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। যেসব পরিবারের মহিলা প্রধান এবং যারা ইতোপূর্বে সরকারি সহায়তা পাননি তাদেরকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।
রাজবাড়ীর জালদিয়া গ্রামের দুই ভাই সোহেল মোল্লা ও ইকবল মোল্লা দালালের মাধ্যমে এক বছর আগে ১০ লাখ টাকা খরচ করে সৌদি গিয়ে কাজ না পেয়ে উল্টো নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
তিন মাস ধরে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ নেই বলে দাবি করেছে পরিবার। এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে আদালতে মামলা করেছেন ভুক্তভোগীদের পরিবার। মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ফরিদপুর কার্যালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
ভুক্তভোগীরা হলেন— উপজেলার সুলতানপুর ইউনিয়নের জালদিয়া গ্রামের কামাল মোল্লার ছেলে সোহেল মোল্লা ও মৃত ইয়াছিন মোল্লার ছেলে ইকবাল মোল্লা। তারা সম্পর্কে আপন চাচাতো ভাই।
কামাল মোল্লা বলেন, ‘গ্রামের প্রতিবেশী মনিরদ্দিন মোল্লা ও তার শ্যালক মামুন মোল্লা ভালো চাকরি দেওয়ার কথা বলে প্রথম দফায় গত বছরের ৫ মার্চ নগদ ছয় লাখ ও ২৬ মে ব্যাংকের মাধ্যমে আরও চার লাখসহ মোট ১০ লাখ টাকা নিয়ে ছেলে সোহেল ও ভাতিজা ইকবলকে সৌদি আরব পাঠান। সেখানে কাজ না পেয়ে উল্টো তারা দালাল চক্রের নির্যাতনের শিকার হন।’
‘কাজ দেওয়ার আশ্বাসে চলতি বছর ৭ ফেব্রুয়ারি মনিরদ্দিন ও মামুন তাদের কাছ থেকে আরও দুই লাখ টাকা নেন। এরপর থেকেই পরিবারের সঙ্গে সোহেল ও ইকবলের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তিন মাস ধরে তাদের খোঁজ না মেলায় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে পরিবার দুটির।’
এমতাবস্থায় ২৭ এপ্রিল রাজবাড়ীর মানবপাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে দুই দালালের বিরুদ্ধে মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে মামলা করেন সোহেল মোল্লার স্ত্রী রিনা আক্তার।
রিনা আক্তার বলেন, ‘তিন মাস ধরে স্বামী ও দেবরের খোঁজ নেই। মনিরউদ্দিন ও মামুন আবার আমাদের কাছে আরও ১০ লাখ টাকা দাবি করছেন। টাকা দিলে স্বামী ও দেবরকে এনে দেবেন। আমরা তাদের মোট ১২ লাখ টাকা দিয়েছি। নতুন করে ১০ লাখ টাকা কোথায় পাব।’
ইকবাল মোল্লার স্ত্রী সেলিনা খাতুন বলেন, ‘আমার স্বামী ও ভাসুর বেঁচে আছে নাকি মারা গেছেন জানি না। তিন মাস ধরে যোগাযোগ নেই। আমার দুই মেয়ে ও ভাসুরের ছোট এক মেয়ে রয়েছে।’
‘বাচ্চারা সবসময় কান্নাকাটি করে, তাদের বাবাদের সঙ্গে কথা বলতে চায়। আমরা অনেক খুব কষ্টে দিন পার করছি। সরকারের কাছে দাবি, আমার স্বামী ও ভাসুরকে দেশে ফেরত এনে দিক।’
সোহেলের মা সুফিয়া বেগম বলেন, ‘আমরা ছেলে দুটিকে ফেরত চাই। আর দালালদের কঠিন শাস্তি চাই। যাতে দালালদের খপ্পড়ে পড়ে আমাদের মতো অন্য কোনো পরিবার সর্বশান্ত না হয়।’
অভিযুক্ত মামুন মোল্লা সাংবাদিকদের বলেন, ‘সোহেল ও ইকবলকে যে কোম্পানিতে কাজ দিয়েছিলাম তারা সেখানে কাজ না করে পাসপোর্ট ফেরত চায়। এজেন্সির মাধ্যমে কোম্পানির কাছ থেকে তাদের পাসপোর্ট ফেরত দিয়েছি। এখন আর তাদের বিষয়ে আমার কোনো দায়ভার নেই।’
মামলার ব্যাপারে পিবিআই ফরিদপুর কার্যালয়ের পুলিশ সুপার মো. রবিউল ইসলাম বলেন, ‘আদালত এ সংক্রান্ত মামলার তদন্তভার পিবিআইকে দিয়েছে বলে জানতে পেরেছি। তবে এখন পর্যন্ত কোনো কাগজ হাতে পায়নি। পাওয়া মাত্র অফিসার নিয়োগ দিয়ে তদন্ত কাজ শুরু করব।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সব সময় তদন্ত করে প্রকৃত সত্যকে সামনে আনা ও অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করে থাকি। তবে কর্মসংস্থানের জন্য যারা বিদেশে যাবেন, তাদের দালালদের মাধ্যমে না গিয়ে জনশক্তি রপ্তানি ব্যুরো ও বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে প্রচলিত নিয়ম মেনে বিদেশে যাওয়ার পরামর্শ দেব।’
যশোরের শার্শা উপজেলায় ১০টি সোনার বারসহ শুভ ঘোষ (৩৫) নামে যুবককে আটক করেছে পুলিশ। রবিবার (৪ মে) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার বাগআচড়া ইউনিয়ন পরিষদ এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়।
আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শার্শা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রবিউল ইসলাম।
আটক শুভ ঘোষ মনিকগঞ্জের সুনীল ঘোষের ছেলে।
পুলিশ জানায়, পুলিশের একটি দল বাঁগআচড়া ইউনিয়ন পরিষদের সামনে থেকে শুভ ঘোষ নামে এক যুবককে আটক করে। পরে তার দেহ তল্লাশি করে প্যান্টের পকেট থেকে স্কচটেপ দিয়ে মোড়ানো অবস্থায় ১০টি স্বর্ণের বার পাওয়া যায়। স্বর্ণের বারগুলো সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাচারের উদ্দেশ্যে শুভ ঘোষ মনিকগঞ্জ থেকে বাঁগআচড়ায় আসে।
এছাড়া জব্দ করা স্বর্ণের ওজন এক কেজি ১৯২ গ্রাম। যার আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় এক কোটি ২০ লাখ টাকা বলে জানায় পুলিশ।
শার্শা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রবিউল ইসলাম বলেন, ‘যুবকের বিরুদ্ধে মামলা প্রক্রিয়াধীন এবং আদালতে সোর্পদ করা হবে। স্বর্ণের বারগুলো ট্রেজারি শাখায় জমা দেওয়া হবে।’
বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষ্যে বাংলাদেশি জার্নালিস্টস ইন ইন্টারন্যাশনাল মিডিয়া (বিজেআইএম) শনিবার (৩ মে) বিকেলে আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দ্য ঢাকায় একটি সিম্পোজিয়ামের আয়োজন করেছে।
অনুষ্ঠানের প্রথমার্ধে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম উপস্থিত দর্শকদের সাথে গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে গণমাধ্যমের অবস্থা নিয়ে একটি প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাংবাদিক শরীফ খিয়াম আহমেদ।
দ্বিতীয়ার্ধে দিবসটি উপলক্ষে ছয়জন বিশিষ্ট সাংবাদিক একটি প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন যেখানে উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক সেলিম সামাদ, সাংবাদিক আয়শা কবীর, সাংবাদিক এবং গবেষক এম আবুল কালাম আজাদ, সাংবাদিক ওমর ফারুক, সাংবাদিক মুক্তাদির রশীদ ও সাংবাদিক জায়মা ইসলাম। তাঁদের আলোচনায় উঠে আসে বাংলাদেশী সাংবাদিকতার জগতের পরিবর্তন এবং অভিযোজন সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য।
বিজেআইএমের আহ্বায়ক স্যাম জাহানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির সদস্য সচিব মুহাম্মদ আলী মাজেদ।
প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষে শফিকুল আলম নবীন সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, “আপনারা মন খুলে লিখতে থাকেন। যত লিখবেন, সাংবাদিকতা তত শক্তিশালী হবে। সরকার তত ভুল থেকে শিক্ষা গ্রহণ করবে এবং গণতন্ত্র তত শক্তিশালী হবে।"
স্যাম জাহান তার বক্তব্যে বলেন, “সম্ভবত অনেক অনেক বছরের মধ্যে এবারই প্রথম কিংবা হয়তো একেবারেই প্রথমবারের মতন বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস যথেষ্ট ঘটা করে বাংলাদেশে উদযাপিত হচ্ছে। এবং এর উদযাপনের আয়োজক হতে পেরে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত।”
অনুষ্ঠানে বিজেআইএম সদস্য তাসনীম খলিল ও তাঁর সংবাদমাধ্যম নেত্রনিউজের পাওয়া সাম্প্রতিক স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক প্রদত্ত শোরেনস্টাইন এওয়ার্ড করতালির সাথে উদযাপন করা হয়।
মুহাম্মদ আলী মাজেদ বলেন, “আজকের দিনে আমাদের লক্ষ্য হলো বিগত বছরগুলোতে আমরা এদেশে সাংবাদিকতায় কি সমস্যা মোকাবেলা করেছি সেগুলোর উপর আলোকপাত করা, সেই সাথে সাংবাদিক হিসেবে পেশাগত নীতি পালনে আমরা কোথায় কোথায় আরো ভালো মোকাবেলা করতে পারতাম। কারণ মুক্ত গণমাধ্যম বলতে শুধু বহিঃশক্তি থেকে প্রভাবমুক্ত থাকা না, একই সাথে নিজেদের ভেতরের পক্ষপাত থেকে মুক্ত থাকা।”
কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে) এর এশিয়া বিষয়ক সমন্বয়ক বেহ লিহ য়ি বিজেআইএম এবং বাংলাদেশের সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, "গত বছর দেশের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সময় আপনাদের প্রতিবেদন বিশ্বকে অবহিত রেখেছিল… আমি আশা করি এই নতুন যুগ আপনার কাজ করার জন্য আরও স্বাধীনতা এবং সুযোগ নিয়ে আসবে এবং সিপিজে এই যাত্রায় আপনার পাশে থাকবে।"
সিম্পোজিয়ামে উপস্থিত ছিলেন প্রমুখ গণমাধ্যম ও অধিকারকর্মী, রাজনীতিবিদ, কলামিস্ট, ছাত্রছাত্রী এবং সাধারণ জনগণ। স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানটি সম্পন্ন হয়।
চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সাগরতীরবর্তী খেজুরতলা বেড়িবাঁধ এলাকা থেকে নারী ও শিশুসহ ৩৫ রোহিঙ্গাকে আটক করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
আজ শনিবার দুপুরের দিকে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।
আটককৃতরা সবাই নোয়াখালীর ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা এবং অবৈধভাবে সেখান থেকে পালিয়ে চট্টগ্রামে আসে বলে জানিয়েছে র্যাব।
র্যাবের সিনিয়র সহকারী পরিচালক এ আর এম মুজাফফর হোসেন জানান, আটকদের মধ্যে ১৯ জন শিশু রয়েছে। তারা শুক্রবার রাতে দালালের সহায়তায় ক্যাম্প থেকে পালিয়ে চট্টগ্রাম শহরে প্রবেশ করে এবং পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এলাকায় অবস্থান নেয়। পরে র্যাব তাদের পতেঙ্গা থানায় হস্তান্তর করে।
পালিয়ে আসা এক রোহিঙ্গা পুরুষ জানান, ভাসানচরের স্থানীয় দুই দালাল প্রত্যেকের কাছ থেকে দুই হাজার টাকা নিয়ে তাদের ক্যাম্প থেকে বের করে। এরপর রাত ১টার দিকে একটি নৌকায় করে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা দেয় তারা।
ভোরে পতেঙ্গায় পৌঁছানোর পর দালালরা তাদের ফেলে পালিয়ে যায়। তাদের পরিকল্পনা ছিল সড়কপথে কক্সবাজারের উখিয়ায় পৌঁছানো, তবে তার আগেই তারা ধরা পড়ে।
সিলেট থেকে সরাসরি হজ ফ্লাইট আগামী ১৪ মে থেকে শুরু হচ্ছে। এ দিন ৪১৯ জন যাত্রী নিয়ে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সৌদি আরবের মদিনার উদ্দেশে উড়াল দিবে জাতীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইট।
বাংলাদেশ বিমানের সিলেটের ম্যানেজার শাহনেওয়াজ তালুকদার এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, সিলেটের হজযাত্রীদের সুবিধার কথা চিন্তা করে এ বছর পাঁচটি ফ্লাইট সরাসরি সিলেট থেকে পরিচালনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম ফ্লাইট যাবে সরাসরি মদিনায়। বাকি চারটি ফ্লাইট ২৩, ২৫, ২৬ ও ২৯ মে সিলেট-জেদ্দা রুটে পরিচালিত হবে।
রোড টু মক্কা কর্মসূচির অধীনে হজ্জ যাত্রীদের জন্য দুই দেশের ইমিগ্রেশন ঢাকায় সম্পন্নের সুযোগ থাকলেও সিলেট থেকে পরিচালিত ফ্লাইটের যাত্রীদের সৌদি ইমিগ্রেশন সংশ্লিষ্ট বিমানবন্দরে করা হবে।
অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশের (আটাব) সিলেট জোনের সভাপতি মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান খান রেজওয়ান জানান, সিলেট থেকে এ বছর ২৭ শ মুসল্লী হজে যাচ্ছেন। এর মধ্যে ২ হাজার ৯৫ জন সিলেট থেকে বিমানের ফ্লাইটে এবং অন্যরা যাবেন ঢাকা থেকে।
এ অঞ্চলের হজযাত্রীদের নিবন্ধনসহ যাবতীয় কার্যক্রম সিলেটের তিনটি শীর্ষ এজেন্সির মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছে বলে জানা গেছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক আজ শনিবার (০৩ মে) খিঁলগাও উত্তর শাহজাহানপুর এলাকায় মশক নিধন ও বিশেষ পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা করা হয়। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মাননীয় প্রশাসক জনাব মো. শাহজাহান মিয়া এর উপস্থিতিতে বর্জ্য ব্যবস্থানা বিভাগ, স্বাস্থ্য বিভাগ এবং স্থানীয় সোসাইটির জনগন এই বিশেষ পরিচ্ছন্নতা অভিযানে অংশগ্রহণ করেন।
সকাল ০৬:০০ ঘটিকায় শুরু হওয়া এ পরিচ্ছন্নতা অভিযানে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিচ্ছন্নতা কর্মী, স্বাস্থ্য বিভাগের মশক কর্মীদের দ্বারা উত্তর শাহজাহানপুর আবাসিক এলাকা, ঝিল ও সংলগ্ন এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও মশার ঔষধ প্রয়োগ করা হয়।
পরিচ্ছন্নতা প্রোগ্রাম চলাকালীন সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রশাসক জনাব মো. শাহজাহান মিয়া বলেন, বর্ষার মৌসুমকে মাথায় রেখে ডেঙ্গু প্রতিরোধে আমরা দুটি স্তরে কার্যক্রম শুরু করেছি, প্রথমটি হলো নিয়মিত মশক নিধন ও পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম। দ্বিতীয়টি হল বিশেষ মশক নিধন ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম এবং জনগনকে সম্পৃক্তকরণ জনসচেতনতামূলক র্যালি যা পর্যায়ক্রমে ডিএসসিসির দশটি অঞ্চলে পরিচালনা করা হবে। ইতোমধ্যে যাত্রাবাড়ী ও ধানমন্ডিতে বিশেষ অভিযান পরিচালিত হয়েছে।
প্রশাসক আরো বলেন, নগরবাসীকে সচেতনত হতে হবে এবং বাসার ভেতরে, ফুলের টব, চৌবাচ্চা ও বারান্দায় জমে থাকা পানি তিনদিনের ভেতরে নিজ উদ্যোগে ফেলে দিতে হবে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে সিটি করপোরেশন এবং নগরবাসীকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।
এ ছাড়াও অভিযান কার্যক্রমের অংশ হিসেবে স্থানীয় বাসিন্দাদের অংশগ্রহণে জনসচেতনতামূলক একটি র্যালি হয়।
পরিচ্ছন্নতা অভিযানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. মো: জিল্লুর রহমান, সচিব মোহাম্মদ বশিরুল হক ভূঁঞা সহ সকল বিভাগীয় প্রধান এবং স্থানীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।