কূটনৈতিক প্রতিবেদক
সীমান্তে মিয়ামারের দফায় দফায় উসকানিমূলক কর্মকাণ্ডের পরও পরিস্থিতির শান্তিপূর্ণ সমাধানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। গত শুক্রবার মিয়ানমারের ছোড়া মর্টার শেলের আঘাতে বাংলাদেশ সীমায় একজন রোহিঙ্গা নাগরিকের মৃত্যুর পর রোববার দেশটির রাষ্ট্রদূত অং কিউ মোয়েকে ফের তলব করে কঠোর প্রতিবাদ জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
একই সঙ্গে সীমান্তে নজরদারি বাড়িয়েছে। বিষয়টি নিয়ে জাতিসংঘে যাওয়ার চিন্তার পাশাপাশি সীমান্ত এলাকায় বেসামরিক মানুষের নিরাপত্তার কথা ভেবে তাদের সরিয়ে নেয়ার প্রস্তুতিও নিচ্ছে ঢাকা।
তবে বাংলাদেশের প্রতিবাদের মুখে ভিন্ন কৌশল নিয়েছে নেপিডো। তারা বান্দরবান সীমান্তে গোলাবর্ষণের দায় ঠেলে দিয়েছে রাখাইন রাজ্যের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির দিকে। মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতের দাবি, আরাকান আর্মি সে দেশের সেনাবাহিনীর গোলাবারুদ চুরি করে বাংলাদেশে গুলি করছে, যাতে করে দুই দেশের সম্পর্কের অবনতি হয়। আর এই সন্ত্রাসী সংগঠনের সদস্যরা বাংলাদেশ থেকেই মিয়ানমার সীমান্তে প্রবেশ করছেন বলেও দাবি করেন রাষ্ট্রদূত।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত এলাকার ওপারে বেশ কিছুদিন ধরে বিদ্রোহী আরাকান আর্মির সঙ্গে লড়াই চলছে মিয়ানমার সেনাদের। এরই মধ্যে বেশ কিছু মর্টার শেল বাংলাদেশের ভেতরে এসে পড়ে। সবশেষ শুক্রবার রাতে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু কোনারপাড়া সীমান্তে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ছোড়া চারটি মর্টার শেল এসে পড়ে। এতে শূন্যরেখায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এক যুবক নিহত হন। আহত হন পাঁচজন। ওই দিন সকালেই ঘুমধুম সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণে এক বাংলাদেশি যুবকের পা উড়ে যায়।
এর আগে প্রথমে ২০ আগস্ট, এরপর ২৮ আগস্ট মিয়ানমার থেকে মর্টারের গোলা এসে পড়ে বাংলাদেশের সীমানায়। প্রতিবারই দেশটির রাষ্ট্রদূতকে ডেকে কড়া প্রতিবাদ জানায় বাংলাদেশ। দেয়া হয় কূটনৈতিক পত্রও। গত ৩ সেপ্টেম্বর মিয়ানমারের দুটি যুদ্ধবিমান ও দুটি হেলিকপ্টার থেকে বান্দরবানে বাংলাদেশের সীমানায় গোলাবর্ষণ করা হয়। তারপর আবারও রাষ্ট্রদূতকে ডেকে পাঠায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
সবশেষ শুক্রবারের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রোববার সকালে ঢাকায় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে এক মাসের মধ্যে চতুর্থবারের মতো তলব করা হয়। এ সময় তার কাছে প্রতিবাদলিপি হস্তান্তর করা হয়।
মিয়ানমারের রাষ্ট্ররের রাধ্যেের দুর্ শূন্যরেখারদূতকে করণীয় নির্ধারণে এদিন সশস্ত্র বাহিনী বিভাগসহ নিরাপত্তা বাহিনীর উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় অনুষ্ঠিত উচ্চপর্যায়ের ওই বৈঠকে পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ছাড়াও সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, বিজিবি, কোস্টগার্ডসহ প্রায় সব বাহিনীর প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব অবসরপ্রাপ্ত রিয়ার অ্যাডমিরাল খুরশেদ আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাংলাদেশ একটি দায়িত্বশীল এবং শান্তিকামী রাষ্ট্র। আমরা ধৈর্য ধরে এটি সহ্য করে যাচ্ছি। আমরা তাদের বলেছি বিষয়টি সমাধান করুন, আমাদের এখানে যেন রক্তারক্তি না হয়, কোনো প্রাণহানি না হয়।’
বারবার প্রতিবাদলিপি দেয়ার পরও মিয়ানমার কোনো গুরুত্ব দিচ্ছে না- এমন প্রশ্নে খুরশেদ আলম বলেন, ‘একটি দায়িত্বশীল রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিবেশীকে যতটুকু সম্মান করা সম্ভব, ততটুকু আমরা করছি। আমাদের বক্তব্যে কোনো ধরনের দুর্বলতা নেই। শক্তভাবেই প্রতিবাদ জানিয়েছি।’
উল্টো বাংলাদেশকে দুষছে মিয়ানমার
মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে প্রতিবাদলিপি দেয়ার পর তার কাছ থেকে কোনো জবাব পাওয়া গেছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব বলেন, মিয়ানমারের কিছু গতানুগতিক বক্তব্য আছে। তারা সীমান্তে গোলাগুলির বিয়য়টি অস্বীকার করেনি। তবে দাবি করেছে, তাদের সেনারা গুলি করেনি। উনি বলেছেন, এগুলো হয়তো আরাকান আর্মির গুলি হতে পারে।
এর জবাবে বাংলাদেশের বক্তব্য ছিল, ‘মিয়ানমারের ভেতর থেকে বাংলাদেশে যা-ই আসুক না কেন, সেটা মিয়ানমারের দায়িত্ব। সেটা মিয়ানমারকেই দেখতে হবে। আমাদের এপারে যাতে কিছু না আসে, সেটা মিয়ানমারকে নিশ্চিত করতে হবে। এর জন্য যা যা করা দরকার মিয়ানমারকে করতে হবে।’
তাহলে বাংলাদেশে হতাহতের ঘটনায় দায় কার- এমন প্রশ্নের জবাবে খুরশেদ আলম বলেন, ‘গুলির গায়ে লেখা আছে মিয়ানমার আর্মি। কিন্তু মিয়ানমার বলছে, এগুলো চুরি করে নিয়ে গেছে আরাকান আর্মি। তারা বলছে আরাকান আর্মি গুলি করেছে, যাতে বাংলাদেশের সঙ্গে একটা দূরত্ব তৈরি হয়। এ রকম একটা জায়গায় অ্যাকচুয়ালি কে দায়িত্ব নেবে, সেটা নিরূপণ করা খুবই কঠিন কাজ। তবে আমরা চেষ্টা করছি।’
গোলা খারাপ উদ্দেশ্যে পাঠালেও নিশ্চিত করার উপায় নেই মন্তব্য করে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘সমাধানের জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। দ্বিপক্ষীয় ইস্যুর সমাধানে সময় লাগবে। ধৈর্য ধরতে হবে। তবে আমরা যদি নিজেরা শক্ত থাকি সমাধান আসবে।’
সৌজন্যতাও দেখানো হয়নি মিয়ানমার রাষ্ট্রদূতকে
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, তলবের পরিপ্রেক্ষিতে রোববার বেলা ১১টা ২০ মিনিটে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আসেন মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত উ অং কিয়াউ মোয়েকেসহ দুজন। তাদের অন্তত ১৫ থেকে ১৭ মিনিট অপেক্ষা করতে হয় অভ্যর্থনা কেন্দ্রে। এরপর মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অনুবিভাগের মহাপরিচালক মো. নাজমুল হুদার দপ্তরে ডেকে নেয়া হয়। তিনি তাদের সঙ্গে আধা ঘণ্টার মতো কথা বলেন।
এই পুরোটা সময়ে রাষ্ট্রদূতকে এক কাপ চাও দেয়া হয়নি।
মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, যেকোনো কূটনীতিককে আপ্যায়ন করা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাধারণ একটি প্রথা বা রেওয়াজ। আপ্যায়নের মাধ্যমে কূটনৈতিক হৃদ্যতার বিষয়টিও বোঝা যায়। কিন্তু মিয়ানমার সীমান্তে চলমান ঘটনায় ক্ষুব্ধ বাংলাদেশ। তারই বহিঃপ্রকাশ হিসেবে এটা হয়েছে।
এ বিষয়ে একজন কর্মকর্তা বলেন, কূটনীতিককে নানাভাবে প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়। আপ্যায়ন না করার অর্থ হচ্ছে, বাংলাদেশ এ বিষয়ে চরম অখুশি।
এখনই সেনা মোতায়েন নয়
আরেক প্রশ্নের জবাবে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব খুরশেদ আলম জানান, বাংলাদেশ এখনই সীমান্তে সেনা মোতায়েন করতে চায় না। তিনি বলেন, ‘আমরা উচ্চপর্যায়ে একটি বৈঠক করেছি বাংলাদেশের সব এজেন্সিকে নিয়ে। বিজিবি ও কোস্টগার্ডকে বলেছি সীমান্তে সজাগ থাকতে। সাগর দিয়ে রোহিঙ্গারা যেন ঢুকতে না পারে, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। মিয়ানমার থেকে যেকোনো ধরনের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নিরাপত্তা বাহিনীর প্রয়োজনীয় সদস্য মোতায়েনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’
আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোকে জানাবে বাংলাদেশ
মিয়ানমারের এই আচরণ নিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট আসিয়ানেও যাবে বাংলাদেশ।
ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘আসিয়ানের যে রাষ্ট্রদূতরা ঢাকায় আছেন, তাদের ডেকে এ ঘটনার ব্রিফ করারও সিদ্ধান্ত হয়েছে। বারবার প্রতিবাদে মিয়ানমার গা করছে না- এ বিষয়টি সবার কাছে তুলে ধরা হবে। মিয়ানমার কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না, এটা প্রতিবেশী হিসেবে আমাদের জন্য খুব দুঃখজনক। এর আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বেশ কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রদূতকে বিষয়টি নিয়ে অবহিত করে বাংলাদেশ।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তলবের পর দুপুরে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আমরা মনে করি, এভাবে যদি এটা চলতেই থাকে, তাহলে জাতিসংঘে গিয়ে আমাদের বিষয়টি তুলব যে আমাদের মানুষদের ওপর গোলাবারুদ পড়ছে, যেখানে আমাদের কোনো ভূমিকা নেই। আমরা আমাদের কাজ করছি। তারা যদি না মানে, তাহলে দ্বিতীয় ধাপে সেখানে যাব। আমরা শান্তিপূর্ণ সমাধান চাই। আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপের কথা যদি না শোনে, তাহলে আমরা সেখানে যাব।’
জাতিসংঘকে কবে জানানো হবে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘কবে জানানো হবে তা প্রধানমন্ত্রী জানেন।’
সীমান্ত থেকে ৩০০ পরিবারকে সরিয়ে নেবে বাংলাদেশ
এদিকে মিয়ানমার থেকে ছোড়া গুলি বাংলাদেশ সীমানায় পড়ে হতাহতের ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করায় সীমান্ত এলাকা থেকে অন্তত ৩০০ বাংলাদেশি পরিবারকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার চিন্তাভাবনা করছে প্রশাসন। ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেন।
গতকাল বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে উপজেলা প্রশাসনের এক জরুরি বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
এ বিষয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা ফেরদৌস দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘স্থানীয়দের সরিয়ে নেয়াসহ বিভিন্ন ধরনের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে, এ বিষয়ে চিন্তাভাবনা চলছে। আমরা বিষয়গুলো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব।’
গতকালও দিনভর মিয়ানমার থেকে গোলাগুলির শব্দ পাওয়ায় যায়। তারই প্রেক্ষিতে সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়াসংলগ্ন ঘুমধুম, তুমব্রু, হেডম্যানপাড়া, ফাতরা ঝিরি, রেজু আমতলী এলাকায় বসবাসকারী ৩০০ পরিবারের প্রায় দেড় হাজার স্থানীয় মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়ার প্রস্তাব দেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার শফিকুল ইসলাম দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘আমাদের প্রস্তাব বিবেচনা করা হবে বলে প্রশাসন জানিয়েছে। তবে ঘুমধুম ইউনিয়নে কোনো আশ্রয়কেন্দ্র না থাকায় সীমান্তবর্তী পরিবারগুলোকে সরিয়ে নেয়ার বিষয়টি কঠিন হবে।’
সীমান্ত থেকে স্থানীয়দের সরিয়ে নেয়ার বিষয়ে বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘আমরা স্থানীয়দের নিরাপত্তার বিষয়টি দেখছি। তাদের নিরাপদ রাখতে, যা যা করণীয় সব করা হবে।’
বাংলাদেশের টেকনাফ সীমান্তের অদূরে আবারও মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আরাকান আর্মির সঙ্গে দেশটির সেনাবাহিনীর তুমুল সংঘর্ষ শুরু হয়েছে। রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মি ও সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ টিকিয়ে রাখতে দুই পক্ষই বোমা ও মর্টার শেল হামলা চালাচ্ছে।
আজ সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ও সাবরাং সীমান্তসহ পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় রাখাইন থেকে বোমা বিস্ফোরণ ও মর্টার শেলের বিকট শব্দ শোনা গেছে। গোলার শব্দে স্থানীয় লোকজন আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে।
টেকনাফ পৌরসভার বাসিন্দা রুহুল আমিন বলেন, সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারে গোলার শব্দে এপার কেঁপে উঠছে। বেশ কিছু দিন গোলার শব্দ শোনা না গেলেও ভোর থেকে বিকট গোলার শব্দ পাচ্ছি। মনে হচ্ছে, বোমা এসে এপারে পড়ছে। সকাল থেকে ভারী গোলার শব্দ পাওয়া যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন টেকনাফের পৌরভার কাউন্সিলর মো. মনিরুজ্জামান। তিনি বলেন, রাখাইনে চলমান যুদ্ধে এ পারে অনেক ভারী গোলার বিকট শব্দ শোনা যাচ্ছে। এ ধরনের গোলার আওয়াজ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বাড়াচ্ছে।
হ্নীলা সীমান্তের আব্দুর গফুর জানান, সকালে ওপার থেকে আসা ভয়ঙ্কর কয়েকটি শব্দ শুনেছি। মনে হয়েছে বোমা বিস্ফোরণের শব্দ। দিনের বিভিন্ন সময় বড় ধরনের কয়েকটি বিকট শব্দ শোনা গেছে। টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আব্দুস সালাম বলেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে গোলাগুলির শব্দ এপারে শোনা যাচ্ছে বলে স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন। নাফ নদীর সীমান্তে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। হ্নীলা সীমান্তের বাসিন্দা হুমায়ুন রশিদ বলেন, সকাল থেকে সীমান্তে ভারী গোলার শব্দ পাওয়া গেছে। অন্যদিনের তুলনায় গোলার শব্দ বিকট।
এদিকে আরকান আর্মি মংডু টাউনশিপ দখল করে নিয়েছে বলে অসমর্থিত তথ্য পাওয়া গেছে। দেশটির সরকারি সংস্থা বিজিপির সদস্যদের কেউ কেউ বাংলাদেশে পালিয়ে এসে আশ্রয় নিচ্ছে। গত দুই দিনে টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমারের ১০০ জনের মতো বিজিপি সদস্য এ পারে আত্মসমর্পণ করেছে বিজিবি ও কোস্ট গার্ডের কাছে।
এ বিষয়ে কোস্ট গার্ড চট্টগ্রাম পূর্ব জোনের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট তাহসিন রহমান বলেন, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা ৮৮ জন বিজিপি সদস্যকে আমরা বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবির) কাছে হস্তান্তর করেছি। সীমান্তে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমরা প্রস্তুত আছি। স্থানীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত দুই দিনে নাফ নদী পেরিয়ে টেকনাফের সাবরাং সীমান্তে নৌকায় করে ১০০ বিজিপি সদস্য অস্ত্রসহ টেকনাফ কোস্ট গার্ড সদস্যদের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। পরে তাদের নিরস্ত্র করে হেফাজতে নেওয়া হয়। টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং থেকে শাহপরীর দ্বীপ পর্যন্ত ৫৪ কিলোমিটার নাফ নদী এলাকা এবং সীমান্ত সড়কে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বিজিবি ও বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের সদস্যরা টহল বাড়িয়েছে।
এ বিষয়ে টেকনাফ ব্যাটালিয়ন (বিজিবি-২) অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, রাখাইনের সংঘাত মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তবে সংঘাতের জের ধরে যাতে রোহিঙ্গা বা অন্য কোনো গোষ্ঠী বাংলাদেশে ঢুকতে না পারে সেজন্য নাফ নদী ও সীমান্তে অতিরিক্ত বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
জাতীয় সংসদের ঝিনাইদহ-১ আসনের উপনির্বাচন স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। আজ সোমবার বিচারপতি মো. জাকির হোসেনের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল হাইয়ের মৃত্যুতে আসনটি শূন্য হয়।
আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী সৈয়দ মামুন মাহবুব। তিনি বলেন, ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার দেওয়া একটি শিটে ৪৯ শতাংশ ভোট গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। এতে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি স্বতন্ত্র প্রার্থী নজরুল ইসলাম দুলাল সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছেন, দেখা যায়। কিন্তু পরে নৌকার প্রার্থী আব্দুল হাইকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। এর বিরুদ্ধে নজরুল ইসলাম হাইকোর্টে ইলেকশন পিটিশন দায়ের করেন। গত ১ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট বিবাদীদের নোটিশ ইস্যু করে গেজেট স্থগিত করেন। পরে অবশ্য আপিল বিভাগ গেজেট স্থগিতের আদেশ স্থগিত করেন। এর মধ্যে আব্দুল হাই মৃত্যুবরণ করেন। এখন নিয়ম হচ্ছে বিজয়ী প্রার্থী মারা গেলে আবেদনকারীকে বিজয়ী ঘোষণা করা। সেটা না করে নতুন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়। এখন হাইকোর্ট ২১ দিনের জন্য এ নির্বাচন স্থগিত করেছেন। আগামী রোববার থেকে নির্বাচনী পিটিশনের ওপর শুনানির জন্য সময় নির্ধারণ করেছেন।
গত ২৩ এপ্রিল নির্বাচন ভবনে ৩২তম কমিশন সভায় আগামী ৫ জুন ঝিনাইদহ-১ শূন্য আসনে উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে সে সিদ্ধান্তের কথা গণমাধ্যমকে জানান নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম। সে হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ৭ মে, মনোনয়নপত্র বাছাই ৯ মে, বাছাইয়ের বিরুদ্ধে আপিল ১০ থেকে ১৪ মে, আপিল নিষ্পত্তি ১৫ মে। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৬ মে এবং প্রতীক বরাদ্দ ১৭ মে। রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন খুলনা অঞ্চলের আঞ্চলিক কর্মকর্তা।
এই আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই। অসুস্থ হয়ে থাইল্যান্ডে চিকিৎসা নিতে গিয়েছিলেন তিনি। গত ১৬ মার্চ সেখানেই তার মৃত্যু হয়। এতে ঝিনাইদহ-১ শূন্য হয়।
উপ-নির্বাচনে আসনটিতে আওয়ামী লীগ প্রার্থী হিসেবে নায়েব আলীর নাম ঘোষণা করেছে।
বাগেরহাটে পূর্ব সুন্দরবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে এনেছে ফায়ার সার্ভিস। বাহিনীর মিডিয়া সেল জানায়, আজ সোমবার সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটে নিয়ন্ত্রণে আসে আগুন।
এর আগে শনিবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের আমুরবুনিয়া টহল ফাঁড়ি সংলগ্ন লতিফের ছিলা নামক এলাকায় আগুন ধরে।
এ আগুনের বিষয়ে রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের খুলনা কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন প্রধান বন সংরক্ষক (সিসিএফ) মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী।
তিনি জানিয়েছিলেন, দেশের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনের আগুন পুরোপুরি নেভাতে লাগবে আরও দুই থেকে তিন দিন।
সিসিএফ বলেন, ‘সাত সদস্যবিশিষ্ট ওই কমিটির প্রধান থাকবেন খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো। এ ছাড়া খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি অ্যান্ড উড ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক, বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃত সংরক্ষণ বিভাগের কর্মকর্তাসহ অন্যান্যরা থাকবেন। আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে তারা ওই প্রতিবেদন সুপারিশসহ জমা দেবেন। তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে পরবর্তী সময়ে কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়া হবে, তবে প্রাথমিকভাবে অগ্নিকাণ্ডের কারণ জানতে চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষককে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। ওই কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।’
তিনি জানান, প্রাথমিকভাবে বনভূমির পাঁচ একর জায়গা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
অবশেষে চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গায় বে-টার্মিনাল নির্মাণে জমির সুরাহা হয়ে গেল। প্রতীকী মূল্যে ৫০১ একর খাসজমি পাচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর। ৩ কোটি ৩ টাকার বিনিময়ে এ জমি দিচ্ছে সরকার।
টাকা জমা দিতে বন্দর কর্তৃপক্ষকে তিনটি পৃথক চিঠি দিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। গত ৩০ এপ্রিল জেলা প্রশাসন থেকে পাঠানো এই চিঠি বৃহস্পতিবার বন্দর কর্তৃপক্ষ বুঝে পেয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক চিঠি পাওয়ার সত্যতা স্বীকার করেছেন।
জানা গেছে, সাগর উপকূলে বে-টার্মিনাল প্রকল্পের জন্য মোট ৮৭০ একর জমি অধিগ্রহণের প্রশাসনিক অনুমোদন ছিল। বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজস্ব অর্থায়নে ৬৭ একর ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি অধিগ্রহণ করে। আরও ৮০৩ একর ভূমি বরাদ্দ পেতে ২০১৪ সাল থেকে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল বন্দর কর্তৃপক্ষ। জেলা প্রশাসন তাদের অধিগ্রহণ করা এই জমির মূল্য নির্ধারণ করে ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। কিন্তু বন্দর ভূমির জন্য বিপুল টাকা ব্যয় না করে প্রতীকী মূলে সেটি পাওয়ার চেষ্টা করছিল। এ নিয়ে মতৈক্য না হওয়ায় জেলা প্রশাসন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দ্বারস্থ হয়েছিল।
অবশেষে প্রায় ১০ বছর পর এখন আরও প্রায় ৫০১ একর জমি বুঝে পাচ্ছে বন্দর। এখন পর্যন্ত ৫৬৭ একর জমি হাতে পাচ্ছে বন্দর। তবে আরও প্রায় ৩০০ একরের মতো জমি এখনো বুঝে পায়নি বন্দর কর্তৃপক্ষ।
জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, বন্দর কর্তৃপক্ষকে টাকা জমা দিতে এরই মধ্যে চিঠি দেওয়া হয়েছে। টাকা জমা দেওয়ার পর ভূমি মন্ত্রণালয়ের পক্ষে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বন্দোবস্ত দলিল স্বাক্ষর হবে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক জানান, জমি বন্দোবস্তের জন্য টাকা জমা দেওয়া হবে। এ ছাড়া প্রায় ৩০০ একর জমি বরাদ্দ পেতে প্রক্রিয়া চলছে।
সম্প্রতি সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (চবক) চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহেল জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম বন্দরের সবচেয়ে বড় বে-টার্মিনাল প্রকল্পে সরাসরি ৮০০ কোটি ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) আসতে পারে। বে-টার্মিনাল প্রকল্পের দুটি কনটেইনার টার্মিনাল, একটি মাল্টিপারপাস টার্মিনাল এবং একটি তেল ও গ্যাস টার্মিনাল সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হবে।
এক দশক ধরে ব্যবসায়িরা বে-টার্মিনাল প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। নতুন এই প্রকল্পে বন্দরের সেবা বর্তমানের তুলনায় অনেক বাড়বে। সেখানে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা বড় জাহাজ ভিড়ানো যাবে। কনটেইনার ও পণ্য খালাস করে শহরে না ঢুকেই দেশের নানা স্থানে নেওয়া যাবে। বন্দর ব্যবহারের খরচ কমবে এই আশায় ব্যবসায়িরা বে-টার্মিনাল প্রকল্পকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন।
প্রকল্প প্রস্তাবনা অনুযায়ী, বে-টার্মিনালে প্রাথমিকভাবে তিনটি টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে একটি ১ হাজার ২২৫ মিটার দীর্ঘ কনটেইনার টার্মিনাল, একটি ৮৩০ মিটার দীর্ঘ কনটেইনার টার্মিনাল এবং একটি দেড় হাজার মিটার দীর্ঘ মাল্টিপারপাস টার্মিনাল। তিনটি টার্মিনালের মোট দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৫৫ কিলোমিটার। মাল্টিপারপাস টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্বে থাকবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। এ টার্মিনালে জেটি থাকবে ছয়টি।
বাকি দুটি টার্মিনাল সিঙ্গাপুরে পিএসএ ইন্টারন্যাশনাল ও আমিরাতের ডিপি ওয়ার্ল্ড নির্মাণ ও পরিচালনা করবে। এ জন্য প্রতিষ্ঠান দুটি ১৫০ কোটি ডলার করে ৩০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে। আবুধাবি পোর্টস আরেকটি টার্মিনাল নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছে, যেখানে ১০০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ হতে পারে। এ ছাড়া নৌপথ তৈরিতে ৫৯ কোটি ডলার বিনিয়োগের পাওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এ ছাড়া বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে ইস্ট কোস্ট গ্রুপ ৩৫০ কোটি ডলার বিনিয়োগে তেল ও গ্যাসের টার্মিনাল নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছে। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত এ প্রকল্পে ৮০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব রয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, জমি নিয়ে যে জটিলতা ছিল তা কেটে গেছে। জেলা প্রশাসন প্রতীকী মূল্যে জমি দিতে রাজি হওয়ায় সে জটিলতা কেটে গেছে। শিগগিরই চাহিদা মোতাবেক টাকা পরিশোধ করা হবে।
ছবি: সংগৃহীত
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে আবার স্থল মাইন বিস্ফোরণে তিনজন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে একজনের দুই পা বিস্ফোরণে বিচ্ছিন্ন হওয়ার খবর জানা গেছে। গতকাল রোববার সকালে উপজেলার ফুলতলী সীমান্তের ৪৭ নম্বর পিলার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আহতদের উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতরা হলেন- কক্সবাজারের রামু উপজেলার মো. রফিক, গর্জনিয়া এলাকার মো. আব্দুল্লাহ ও কচ্ছপিয়া এলাকার রশিদ আহমেদ। এদের মধ্যে মোহাম্মদ আব্দুল্লাহর দুই পা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
জানা গেছে, শনিবার রাতে একই এলাকায় মাইন বিস্ফোরণে দুই বাংলাদেশি আহত হন। এরা সবাই অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করে সীমান্তর ওপার থেকে গরু আনতে গিয়েছিল। সেখানে আরাকান আর্মি ও সে দেশের সেনাবাহিনীর পুতে রাখা মাইন বিস্ফোরণে তারা আহত হন। নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আফসার ইমন জানান, খবর পেয়ে আহতদের উদ্ধার করে কক্সবাজার হাসপাতালে ভর্তি করেছেন স্থানীয়রা। সীমান্তে বিজিবি নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
অপরিপক্ব আম বাজারজাতকরণ প্রতিরোধে ক্যালেন্ডার ঘোষণা করা হয়েছে সাতক্ষীরায়। ঘোষণা অনুযায়ী, ৯ মে থেকে মুম্বাই ও গোলাপখাস, ১১ মে থেকে গোবিন্দ ভোগ, ২২ মে হিমসাগর, ২৯ মে ন্যাংড়া ও ১০ জুন আম্রপলি সংগ্রহ ও বাজারজাত করা যাবে। আজ রোববার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে নিরাপদ আম বাজারজাতকরণবিষয়ক মতবিনিময় সভায় এ ক্যালেন্ডার ঘোষণা করা হয়।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবিরের সভাপতিত্বে এ সময় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সাইফুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সরোয়ার হোসেন, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শোয়াইব আহমাদ, সাতক্ষীরা শহর কাঁচা ও পাকা আম ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক রজব আলী প্রমুখ।
সভায় আম চাষি ও ব্যবসায়ীদের প্রতি ঘোষিত সময়সূচি অনুযায়ী আম সংগ্রহ ও বাজারজাতকরণের আহ্বান জানানো হয়। একই সঙ্গে ক্রেতাদের প্রতি উল্লিখিত সময়সূচি মেনে সতর্কভাবে সাতক্ষীরার আম কেনার পরামর্শ দেওয়া হয়। প্রতিদিনই সাতক্ষীরার কোথাও না কোথাও অপরিপক্ব আম পেড়ে রাসায়নিক দিয়ে পাকানোর অভিযোগে বিপুল পরিমাণ আম জব্দ ও বিনষ্ট করা হচ্ছে। গত এক সপ্তাহে জেলায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে ৩৮ হাজার কেজি অপরিপক্ব আম বিনষ্ট করা হয়েছে।
দেশে পাইপলাইনের গ্যাসে নতুন সংযোগ না দেওয়ার কঠোর অবস্থানের মধ্যেই হঠাৎ করে গোপালগঞ্জের শিল্পাঞ্চলের জন্য নমনীয় হয়েছে সরকার। পায়রা বন্দরের গভীর সমুদ্র থেকে এসে কুয়াকাটা দিয়ে বরগুনা, ঝালকাঠি, বরিশাল, গোপালগঞ্জ, বাগেরহাট হয়ে খুলনা পর্যন্ত যাবে এ গ্যাস পাইপলাইন। তবে এ গ্যাস বাসাবাড়িতে ব্যবহার করা যাবে না। গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার রাধাগঞ্জে প্রস্তাবিত ২০০ একর জমির ওপরে নির্মিত ইকোনমিক জোনে শিল্প-কারখানায় ব্যবহার করা হবে এ গ্যাস।
জেলার অন্যান্য স্থানে গড়ে ওঠা কলকারখানাগুলোও এ গ্যাস চাহিদামাফিক ব্যবহার করে স্বল্পমূল্যে পণ্য উৎপাদন করতে পারবে। আর তাতে এ অঞ্চলের মানুষের বেকারত্ব দূর হয়ে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ঘটবে। এলাকার আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ঘটবে।
আজ রোববার অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসক (ডিসি) কাজী মাহবুবুল আলম।
মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. গোলাম কবির। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহবুব আলী খান, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মুন্সী আতিয়ার রহমান। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ফারহানা জাহান উপমা, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জি এম সিহাব উদ্দিন আজমসহ বিভিন্ন দপ্তরের প্রধান ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিস এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে। সংগঠনের পরিচালক মোক্তারুজ্জামান, পরিবেশ বিশেষজ্ঞ আবু সাঈদ মো. ফয়সাল, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার ইয়ার উদ্দিন মো. আওরঙ্গজেব প্রকল্প বিষয়ে অবহিত করেন।
গোপালগঞ্জে গ্যাস আসার খবরে খুশি জেলার সর্বস্তরের মানুষ। জেলা শিল্প ও বণিক সমিতির সহ-সভাপতি মোশারেফ হোসেন শেখ, টুঙ্গিপাড়া মেয়র শেখ তোজাম্মেল হক টুটুল, কোটালীপাড়া মেয়র মতিয়ার রহমান হাজরা উচ্ছ্বসিত মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে বলেন, গ্যাস এলে নতুন নতুন কল-কারখানা চালু হবে। এতে এ অঞ্চলের মানুষের কাজের সুযোগ তৈরি হবে। বেকারত্ব কমবে। এলাকার মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ঘটবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গোপালগঞ্জ অতিক্রমকারী পাইপলাইনের দৈর্ঘ্য ৩১ দশমিক ২৫ কিলোমিটার। পাইপলাইনটি জেলার তিন উপজেলা দিয়ে অতিক্রম করবে। উপজেলাগুলো হলো গোপালগঞ্জ সদর, কোটালীপাড়া ও টুঙ্গিপাড়া। যেসব ইউনিয়ন ও মৌজা দিয়ে গ্যাস পাইপলাইন অতিক্রম করবে সেগুলো হলো গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের খাটরা মৌজা, ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের বোড়াশী ও তেঘরিয়া মৌজা, ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের গোবরা মৌজা, গোবরা ইউনিয়নের পোদ্দারের চর মৌজা এবং রঘুনাথপুর ইউনিয়নের সিলনা ও দীঘারকুল মৌজা।
কোটালীপাড়া উপজেলার কান্দি ইউনিয়নের গজালিয়া, হিজলবাড়ি ও তালপুকুরিয়া মৌজা। টুঙ্গিপাড়া উপজেলার পাটগাতি ইউনিয়নের বালাডাঙা, বড় সিঙ্গিরপাড়া ও টুঙ্গিপাড়া মৌজা, বর্নি ইউনিয়নের বর্নি মৌজা, ডুমুরিয়া ইউনিয়নের ভৈরব নগর ও সালুখা মৌজা এবং গোপালপুর ইউনিয়নের গুয়াধানা মৌজা। এসব মৌজা থেকে জমি অধিগ্রহণ ও অধিযাচনের মোট পরিমাণ যথাক্রমে ৬২.৬৩৪ একর ও ১১৭.৪৮৬ একর।
পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের আমরবুনিয়ার ছিলা এলাকায় লাগা আগুন নেভাতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ফায়ার সার্ভিসহ কয়েকটি বাহিনীর কর্মীরা। আজ রোববার সকাল ৯টা থেকে বনরক্ষী-ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি এ কাজে যোগ দিয়েছে নৌবাহিনী, কোস্ট গার্ড এবং বিমান বাহিনীর একটি হেলিকপ্টার।
আগুন নেভাতে নৌ বাহিনীর মোংলা ঘাঁটির লেফটেন্যান্ট কমান্ডার আরফাতুল আরেফিনের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের একটি ফায়ার ফাইটিং টিম আগুন নেভানোর কাজে নামেন। এরপর ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা পাশের ভোলা নদী থেকে পানি উঠানোর জন্য পাইপ সংযোগ দেন। তবে নদীতে জোয়ার না থাকায় পানি সরবরাহে বিলম্ব হচ্ছে।
ফয়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স বাগেরহাটের উপপরিচালক মামুন আহমেদ জানান, বনের পাশে ভোলা নদীতে এখন ভাটা থাকায় আগুন নেভানোর কাজে পাইপসহ অন্যান্য সরঞ্জাম নেওয়া যাচ্ছে না। জোয়ার হলে এগুলো পার করা হবে। তবে আগুন অল্প অল্প করে জ্বলছে।
এদিকে সুন্দরবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) রানা দেবকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ।
কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন- চাঁদপাই রেঞ্জের জিউধার স্টেশন অফিসার ওবায়দুর রহমান এবং ধানসাগর স্টেশন অফিসার রবিউল ইসলাম। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মোহাম্মদ নুরুল কবির।
শনিবার বেলা ৩টার দিকে চাঁদপাই রেঞ্জের আমরবুনিয়া টহল ফাঁড়ির ড্রেনের ছিলা এলাকায় এ আগুনের সূত্রপাত। এরই মধ্যে আগুনে কয়েক কিলোমিটার বনাঞ্চল পুড়ে গেছে। এখনও থেমে থেমে জ্বলছে সুন্দরবনের আগুন।
আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ঘটনাস্থলে গেলেও শনিবার সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসায় এবং কাছাকাছি কোনো পানির উৎস না থাকায় আগুন নেভানোর কাজ শুরু করতে পারেননি তারা। রোববার সকালে আগুন নেভানোর কাজ শুরু হয়।
বাগেরহাটের সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের আমরবুনিয়া এলাকায় আগুন নির্বাপণের কাজ শুরু হয়েছে। আজ রোববার সকাল ৮টা থেকে ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিট আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে। এতে পুলিশ, উপজেলা প্রশাসন, বনরক্ষী ও স্থানীয় বাসিন্দারা অংশ নিয়েছেন।
এর আগে গতকাল শনিবার বিকেলে সাড়ে ৩টার দিকে সুন্দরবনে আমরবুনিয়া এলাকায় আগুনের খবর পায় বন বিভাগ। বন বিভাগ, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। তবে সন্ধ্যা হওয়ায় তারা অভিযান সমাপ্ত করে চলে যায়। পরে আজ রোববার সকাল থেকে ফায়ার সার্ভিস, নৌবাহিনী, বন বিভাগ, পুলিশ স্থানীয় প্রাশন ও বাসিন্দারা আগুন নির্বাপণের কাজ শুরু করেছে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স খুলনা বিভাগের উপ-পরিচালক মামুন মাহমুদ বলেন, সুন্দরবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা শোনার পর বন বিভাগ ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয়রা সেখানে ছুটে যান। শনিবার সন্ধ্যা হওয়ায় আমরা কার্যক্রম শুরু করতে পারি নাই।
তিনি বলেন, সকাল থেকে ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিটে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করেছে। আমাদের সাথে নৌবাহিনী, বন বিভাগ, পুলিশ, স্থানীয় প্রাশসন ও সাধারণ মানুষ আগুন নির্বাপণের কাজ করছে।
দেশের অন্য এলাকা যখন দাবদাহে পুড়ছে সিলেটে তখন ঠিক উলটো পরিস্থিতি। পাহাড়ি ঢল আর বৃষ্টিতে সিলেটে গ্রীষ্মেই বন্যার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ঢলে বেড়ে চলছে নদ-নদীর পানি। ইতোমধ্যে সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। আরও কয়েকটি পয়েন্টে বিপৎসীমা ছুঁইছুঁই করছে।
এরমধ্যে আজ রোববার থেকে সিলেটে বৃষ্টিপাত আরও বাড়বে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। বৃষ্টি আর ঢলে নদ-নদীর পানি বেড়ে সিলেটের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া কর্মকর্তারা।
আবওয়া অধিদপ্তর সিলেট কার্যালয়ের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজিব বলেন, রোববার থেকে সিলেটে বৃষ্টিপাত বাড়তে পারে। এই সময়ে মেঘালয়েও প্রচুর বৃষ্টিপাত হবে। ফলে ঢল নেমে সিলেটে অকাল বন্যা দেখা দিতে পারে। বিশেষত সিলেটের নিম্নাচল তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেট কার্যালয়ের তথ্যমতে, ভারতের মেঘালয় রাজ্যে কয়েক দিন ধরে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। এতে ঢল নেমে সিলেটের নদ-নদীগুলোয় পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। বৃহস্পতিবারই দুটি পয়েন্টে নদীর পানি শুষ্ক মৌসুমের বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে।
সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে শুষ্ক মৌসুমের বিপৎসীমা ১০ দশমিক ৮০ মিটার। শনিবার দুপুরে সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে পানি ১১.০৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সারি নদের জৈন্তাপুরের সারিঘাট পয়েন্ট শুষ্ক মৌসুমে বিপৎসীমা ১০ দশমিক ৭০ মিটার। নদের ওই পয়েন্ট পানি শনিবার দুপুরে ১১ দশমিক ৮৯ মিটার দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া সুরমা নদীর সিলেট পয়েন্ট এবং কুশিয়ারা নদীর শেওলা পয়েন্টেও পানি বিপৎসীমা ছুঁইছুঁই করছে।
এদিকে কয়েক দিনের বৃষ্টি এবং পাহাড়ি ঢলে জৈন্তাপুর উপজেলার কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। বৃদ্ধি পেয়েছে উপজেলার নদ-নদীর পানি। এর মধ্যে ডিবির হাওর ও কেন্দ্রী হাওরে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। দুই হাওরে পানির নিচে তলিয়ে গেছে বোরো ফসল।
জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উম্মে সালিক রুমাইয়া বলেন, উপজেলার প্রায় ৯৮ শতাংশ ফসল কাটা শেষ হয়েছে। ফলে পানি বৃদ্ধি পেলেও ফসল ক্ষতি হওয়ার তেমন কোনো শঙ্কা নেই।
তিনি বলেন, উপজেলা প্রশাসন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রেখেছে। পাশাপাশি জনসাধারণকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
সিলেট পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, ভারতে বৃষ্টির ফলে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারতে বৃষ্টি কমে গেলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে। তবে ভারতে বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে আগাম বন্যা দেখা দিতে পারে।
সিলেটে হাওরের ধান কাটা শেষপর্যায়ে জানিয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সিলেটের উপপরিচালক মোহাম্মদ খয়ের উদ্দিন মোল্লা বলেন, ‘যেটুকু ধান কাটা এখনো বাকি রয়েছে সেগুলো দ্রুত কাটতে কৃষকদের বলা হয়েছে। আশা করছি বন্যা হলেও ফসলের কোনো ক্ষতি হবে না।’
রূপগঞ্জে দেশি-বিদেশি অবৈধ অস্ত্রের ভয়ানক বিস্তার ঘটেছে। সর্বত্রই আগ্নেয়াস্ত্রের ছড়াছড়ি। র্যাব-পুলিশের অভিযানে যে পরিমাণ অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার হচ্ছে তার কয়েকগুণ নিরাপদে চলে যাচ্ছে অপরাধীদের গোপন ডেরায়। আর এতে করে আন্ডারওয়ার্ল্ডে অস্ত্রভাণ্ডার দিনে দিনে সমৃদ্ধ হচ্ছে। ছোটখাটো ঘটনাতেও অস্ত্রের ব্যবহার হচ্ছে। রাজনৈতিক দলের ক্যাডার মাস্তানরা প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে আধিপত্য বিস্তারের লড়াইয়ে নামছে। মিডিয়ায় অস্ত্রধারীদের ছবি প্রকাশ হওয়ার পরও এসব অস্ত্র উদ্ধার হচ্ছে না।
এতে করে সাধারণ মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা বাড়ছে। র্যাব-পুলিশের অভিযানে দেশি-বিদেশি অস্ত্র উদ্ধার হলেও গত কয়েক বছরে অস্ত্র উদ্ধারে বিশেষ কোনো অভিযান পরিচালনা করা হয়নি। তদন্তের দুর্বলতার কারণে পার পেয়ে যায় গডফাদাররা। ফলে অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের নেটওয়ার্কও অক্ষত থেকে যাচ্ছে। রূপগঞ্জে কথায় কথায় অস্ত্র প্রদর্শন, গুলি করে মানুষ হত্যা, বুলেটের ভয় দেখিয়ে ত্রাস সৃষ্টি যেন অহরহ ঘটনা। উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভায় ৪৭টি সন্ত্রাসী বাহিনীর পাশাপাশি ব্যক্তিগতভাবেও অনেকের কাছে রয়েছে অবৈধ অস্ত্র। দেশীয় অস্ত্রের পাশাপাশি অত্যাধুনিক অস্ত্রও রয়েছে তাদের হাতে। গত এক যুগে অস্ত্রধারীদের গুলিতে ১৬ জন নিহত হয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন পর্যায়ে সন্ত্রাসীদের হাতে প্রায় সাড়ে ৪০০ আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে। আর বৈধ অস্ত্র রয়েছে ১১০ জনের কাছে। এর মধ্যে ৬০ জনের অস্ত্র থানার অস্ত্রগারে জমা রয়েছে। বৈধ অস্ত্রের মধ্যে একটির লাইসেন্স বাতিল হয়েছে।
অনুসন্ধান ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রূপগঞ্জের সন্ত্রাসীরা সাধারণত যেসব অস্ত্র ব্যবহার করে, সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ওয়ান শুটার গান, পাইপ গান, এলজি, একে-২২, আমেরিকান নাইন এমএম পিস্তল, সেভেন পয়েন্ট সিক্স ফাইভ, নাইন এমএম, পয়েন্ট টু টু ও রিভলবার। এ ছাড়া বিপুলসংখ্যক ম্যাগাজিন, ককটেল, বারুদসহ বিভিন্ন বিস্ফোরকও রয়েছে তাদের কাছে। এসব অস্ত্রের মূল চালান আসে মিয়ানমার থেকে চট্টগ্রাম এলাকা হয়ে এবং ভারত থেকে কুমিল্লা ও সিলেট হয়ে। অধিকাংশ সময় অস্ত্র পরিবহনে ব্যবহার করা হয় ‘কিশোর গ্যাং’ সদস্য ও শিশুদের। সন্ত্রাসীদের কাছে অত্যাধুনিক অস্ত্রের আদলে বানানো বেশ কিছু খেলনা পিস্তলও রয়েছে। অস্ত্রের আধিক্য দেখাতে তারা খেলনা পিস্তল ব্যবহার করে থাকে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র বলছে, রূপগঞ্জে গত এক যুগে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীর হাতে খুন হয়েছেন ১৬ জন। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও থানা পুলিশের তথ্যমতে, উপজেলার বিভিন্ন পর্যায়ে সন্ত্রাসীদের হাতে প্রায় সাড়ে ৪০০ আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে। এছাড়াও বিপুল পরিমাণ আরো অস্ত্র বিভিন্ন অঞ্চলে গোঁপন স্থানে রয়েছে। অস্ত্রগুলো নির্বাচনকালীন, হাউজিং কোম্পানির জমি দখল, ইটের ভাটা দখলসহ নানা দখল বাণিজ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে। কোথাও এসব অস্ত্র ভাড়া দেওয়া হচ্ছে বলে জানা যায়। একটি ছিনতাইকারীচক্র, ডাকাত সদস্যরাও এসব অস্ত্র ভাড়ায় নিচ্ছে । সূত্র আরও জানায়, মিলকারখানায় জুট ব্যবসায়ী, হাউসিং কোম্পানির দালাল, বালু ব্যবসায়ী, ইটা ব্যবসায়ী, স্থানীয় শ্রমিক নেতাদের নিয়ন্ত্রণে চলে এসব অস্ত্রের ব্যবহার। এসব অস্ত্রের বেশিরভাগই রিভলভার জাতীয়। মাঝে মাঝে শর্টগান, এসএমজিসহ নানা হাতবোমাও পাওয়া যাচ্ছে। র্যাব, পুলিশের অভিযানে গত এক বছরে ১১ টি অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। এর মধ্যে বেশির ভাগই আগ্নেয়াস্ত্র। এক পরিসংখ্যানে প্রতি মাসে গড়ে পাঁচজন করে গুলিবিদ্ধ হওয়ার তথ্য মিলছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রূপগঞ্জের দীর্ঘদিনের আলোচিত হত্যাকাণ্ড শিল্পপতি রাসেল ভূঁইয়া, তারেক বিন জামাল, খালেদ বিন জামাল, ছাত্রদল নেতা শফিকুল ইসলাম, যুবলীগ নেতা হাজী বেলায়াতসহ বিভিন্ন হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধার না হওয়ায় ক্রমেই অবৈধ অস্ত্রের মজুতের সংখ্যা আশংকাজনক হারে বাড়ছে। উপজেলার গোলাকান্দাইল ৫ নং ক্যানেল, মুড়াপাড়ার মাছিমপুর এলাকা, কায়েতপাড়া ইউনিয়ন, চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্র, পূর্বাচল উপশহর, কাঞ্চন পৌরসভা, তারাব পৌরসভা, সদর ইউনিয়নের ইছাপুরা ও ভোলানাথপুর এলাকার বাসিন্দাদের মাঝে রয়েছে চরম আতঙ্ক। অন্যদিকে পূর্বাচল উপশহরকে ঘিরে গড়ে ওঠা বিভিন্ন আবাসিক কোম্পানির ছত্রছায়ায়ও গড়ে ওঠেছে একটি শক্তিশালী সন্ত্রাসী বাহিনী।
রূপগঞ্জ থানা পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে পুলিশ ১১ টি আগ্নেয়াস্ত্র, ২২টি গুলি উদ্ধার করেছে। এ সময় অস্ত্র ও গোলাবারুদ সংক্রান্ত মামলায় ৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশের বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থা (এসবি) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত গুলির ঘটনা ২৫টি ছাড়িয়ে গেছে। এই হিসাবে মাসে গড়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছে পাঁচজনেরও বেশি।
থানা পুলিশ ও গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, রূপগঞ্জে রাজনৈতিক শক্তি প্রদর্শন ও আধিপত্য বিস্তারসহ বিভিন্ন মারামারিতে গত ২০২৩ সালে অস্ত্রবাজির অন্তত ১৩টি ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। এসব ঘটনায় অস্ত্র হাতে থাকা ৭ জনের ছবি ও ভিডিও চিত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তাদের মধ্যে পেশাদার সন্ত্রাসীর পাশাপাশি যুবলীগ ও ছাত্রলীগের পদধারী নেতাও রয়েছেন।
দৈনিক বাংলার অনুসন্ধানে দেখা যায়, এসব অস্ত্রধারীর কেউই ধরা পড়েনি। দুর্বৃত্তদের প্রদর্শিত অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে পিস্তল, শটগান, এলজি ও বন্দুক। অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহারে উদ্বিগ্ন নাগরিক সমাজ। তারা এসব ঘটনার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গাফিলতি ও রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নকে দায়ী করেছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১১ সালে মাছিমপুর এলাকায় নজরুল ইসলামকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ২০২১ সালের ৭ নভেম্বর মিরকুটিরছেও এলাকায় আব্দুর রশিদ মোল্লাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ২০২৩ সালের ৩১ মে বরপা এলাকায় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সংঘর্ষে বিল্লাল নামে একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। ২০২৩ সালের ১০ মে চনপাড়া পুনর্বাসন এলাকায় সৈয়দ মিয়া গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। ২০২২ সালের ১১ নভেম্বর সিটি শাহীন নিহত হন। ২০১৮ সালের ২০ অক্টোবর ডাকাতদলের গোলাগুলিতে আবুল হোসেন নামে একজন নিহত হয়। ২০১৮ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর পূর্বাচলের ১১ নম্বর ব্রিজের নিচ থেকে সোহাগ, নুর হোসেন ও শিমুল নামে তিন যুবকের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
রূপগঞ্জ থানা বিএনপির সভাপতি মাহফুজুর রহমান হুমায়ুন বলেন, রূপগঞ্জে অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি অনেক বেশি। বর্তমানে রূপগঞ্জে অস্ত্রের ব্যবহার বেড়েছে। আমরা চাই রূপগঞ্জে অস্ত্রের ঝনঝনানি বন্ধ হউক।
রূপগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ দীপক সরকার বলেন, ‘রূপগঞ্জে বিভিন্ন সময় অভিযান পরিচালনা করা হয়। বেশকিছু অস্ত্রধারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যারা অস্ত্র নিয়ে ছবি প্রদর্শন করেছে কিংবা যেসব এলাকায় গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে সেসব অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান পরিচালনা করা হবে।’
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে চরাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ একটি রাস্তার কাজ প্রায় এক বছর ধরে ফেলে রেখেছে ঠিকাদার। এতে করে প্রচণ্ড ধুলাবালুর মধ্যে ও ইট-পাথরের ওপর দিয়ে চলাচল করতে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও যানবাহন চালকরা। গোয়ালন্দ উপজেলা শহর ও দৌলতদিয়া ঘাটের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষাকারী ৮ দশমিক ৬৬ কিলোমিটার দৈর্ঘের গুরুত্বপূর্ণ ওই রাস্তাটির কাজ দ্রুত শেষ করতে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে গত এক বছরে এলজিইডি হতে অন্তত ৬/৭ টি চিঠি দিয়ে তাগিদ দেওয়া হয়েছে; কিন্তু তাতে কোনোই গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। এ অবস্থায় চরমভাবে ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেছে এলাকার জনসাধারণ।
গোয়ালন্দ উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্রে জানা গেছে, উত্তর দৌলতদিয়া এন এইচ ডব্লিউ উজানচর জিসি ভায়া চর দৌলতদিয়া রাস্তাটির দৈর্ঘ ৮ দশমিক ৬৬ কিলোমিটার। ১৩ কোটি ৪৮ লাখ ৩৬ হাজার ৯৮৬ টাকা ব্যয়ে ১৮ ফুট চওড়া করে রাস্তাটি নির্মানের জন্য নিযুক্ত হয় ইমতিয়াজ আছিফ এম এ ইঞ্জিনিয়ারিং (জাভা) নামে ফরিদপুরের একটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। ২০২১ সালের ৬ অক্টোবর শুরু হওয়া কাজটি, শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২৩ সালের ৩০ মার্চ। ইতোমধ্যে রাস্তার বিভিন্ন স্থানে ৯টি ছোট সেতু ও কালভার্ট তৈরি করা হয়েছে। অধিকাংশ এলাকাজুড়ে ডব্লিউএমএম এর কাজ হয়েছে। তাবে দুই পাশে মাটির কাজ ও গাইডওয়ালের কাজ এখনো শেষ হয়নি। শুরু করা হয়নি কার্পেটিংয়ের কাজ। ভাঙ্গাই হয়নি রাস্তার অনেক জায়গার পুরোনো পিচ।
এ অবস্থায় প্রচণ্ড খরা ও রোদে ওই রাস্তাজুড়ে প্রচণ্ড ধুলাবালুর সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে রাস্তার দু’পাশের শত শত পরিবার, সাধারণ যাত্রী ও চালকরা স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নিতেও পারছে না। রাস্তাজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বড় বড় ইট ও পাথরের কারণে স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে পারছে না যানবাহন। ঘনঘন নষ্ট হচ্ছে হালকা যানবাহনের যন্ত্রাংশ। উজানচর ইউনিয়ন পরিষদের ৯নং ওয়ার্ডের সদস্য শেখ রাসেল মাহমুদ বলেন, ‘রাস্তাটির কাজ প্রায় ১ বছর ধরে বন্ধ হয়ে আছে। এতে করে চরের হাজার হাজার মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। রাস্তার ধুলোবালির মধ্য দিয়ে চলতে চলতে মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। বিভিন্ন স্থানে বহুবার সমস্যার কথা জানিয়ে আসছি। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হচ্ছে না। নিরুপায় হয়ে আমরা এলাকায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের কথা চিন্তা করছি।’
গোয়ালন্দ শহরের বাসিন্দা হাবিবুর শেখ বলেন, ‘কিছুদিন আগে তার অন্তঃসত্ত্বা পুত্রবধূ চর দৌলতদিয়া বাবার বাড়ি হতে এই রাস্তা দিয়ে অটোরিকশায় চড়ে শহরে আসছিল। কিন্তু অতিরিক্ত ঝাঁকুনিতে তার গর্ভের বাচ্চা নষ্ট হয়ে গেছে।’ স্থানীয় বাসিন্দা ছিদ্দিক শেখ বলেন, রাস্তার পাশে তার বাড়ি হওয়ায় ধুলোবালিতে ঘরবাড়ির ওপর আস্তরন পড়ে গেছে। রাস্তার ধুলোয় বাড়ির খাবার-দাবার বিছানাপত্র দ্রুত নোংরা হয়ে যায়। একটা অসহনীয় অবস্থার মধ্যে আছি আমরা। দ্রুত রাস্তার কাজ শেষ হওয়া দরকার।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী বিদ্যুৎ কুমার দাস বলেন, ‘রাস্তাটির কাজ গড়ে ৬৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। বিল পরিশোধ করা হয়েছে প্রায় ৬০ শতাংশ। কার্পেটিংসহ অবশিষ্ট কাজ দ্রুত শেষ করতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে গত এক বছরে ৬/৭টি চিঠি দিয়ে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। প্রতিবারই তারা দ্রুত কাজ শেষ করার কথা বলে। আশা করি, চলতি মাসেই তারা অবশিষ্ট কাজ শুরু করবে।’ এ বিষয়ে কথা বলতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি সিদ্দিকুর রহমান সিদ্দিকের মুঠোফেনে বেশ কয়েকবার ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এ কারণে তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
পূর্ব সুন্দরবনের গহিনে ভয়াবহ আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। শনিবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে চাঁদপাই রেঞ্জের আমরবুনিয়া ও গুলিশাখালীর মাঝামাঝি এলাকায় ওই আগুন লাগে। এ ঘটনায় পুড়ে গেছে কয়েক কিলোমিটার বনাঞ্চল। তবে আগুন এখনো ছড়িয়ে পড়ছে এবং রাত ৯টায় পাওয়া সর্বশেষ খবরে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসেনি বলে জানা গেছে। বনে আগুন লাগার খবর পেয়ে বনবিভাগ, স্থানীয় গ্রামবাসী এবং জেলার মোরেলগঞ্জ, শরণখোলা ও মোংলা ফায়ার সার্ভিসের ৩টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে গহিন বনে রাত নেমে আসায় আগুন নেভাতে তাদের বেগ পেতে হচ্ছে। এ ছাড়া বাগেরহাট পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মোহাম্মদ নুরুল কবির ও মোরেলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. তারেক সুলতান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
চাঁদপাই রেঞ্জের স্টেশন কর্মকর্তা (এসও) আনিসুর রহমান ধারণা করছেন, বনের ভেতর মধু সংগ্রহে মৌয়ালদের দেওয়া আগুন ছড়িয়ে গিয়ে এ ঘটনার সূত্রপাত হতে পারে।
সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) রানা দেব জানান, বিকালে বনরক্ষী ও বনের ভেতরে কাজ করতে আসা স্থানীয় গ্রামবাসী আগুন দেখতে পায়। এ সময় বনবিভাগের কর্মী ও স্থানীয়রা আগুন নেভানোর চেষ্টা চালায়। এদিকে খবর পেয়ে সন্ধ্যার দিকে মোরেলগঞ্জ, শরণখোলা ও মোংলা ফায়ার সার্ভিসের ৩টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে পৌঁছায়।
বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মো. আবু তাহের জানান, আমুরবুনিয়া ফাঁড়ির কাছেই আগুন লেগেছে। বেশ বড় এলাকা। অন্তত দুই থেকে তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে আগুন ছড়িয়েছে।
বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. আবু তাহের মিয়া জানান, আমুরবুনিয়া ফাঁড়ির কাছেই আগুন লেগেছে। বেশ বড় এলাকা। অন্তত দুই কিলোমিটারজুড়ে আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। সবাই নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। যেভাবে আগুন ছড়িয়েছে, সেটি নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিনই হবে।
বাগেরহাট ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক মো. সাইদুল আলম চৌধুরী জানান, আগুনের খবর পেয়ে প্রথমে মোরেলগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস ও পরে শরণখোলা ও মোংলা ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিটসহ মোট ৩টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে রয়েছে। তবে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা রাতে কাজ শুরু করতে না পারলেও, সকাল থেকে কাজ শুরু করবে।
আগুনের এই ঘটনায় কি পরিমাণ বনাঞ্চল পুড়ে গেছে বনের পশু হতাহত হয়েছে কি না তা আগুন নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত বলা যাচ্ছে না বলেও তিনি উল্লেখ করেন। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি করা হবে বলেও জানিয়েছেন বনবিভাগের কর্মকর্তারা।