শেরপুরের নকলায় বিরোধপূর্ণ জমিতে ধান কাটাকে কেন্দ্র করে দুপক্ষের সংঘর্ষে আলী হোসেন (৫০) নামে এক বর্গাচাষির মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার সকালে উপজেলার চরবশন্তী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আলী হোসেন ওই গ্রামের মৃত নবাব আলীর ছেলে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, চরবসন্তী গ্রামের সেলিম মিয়ার এক খণ্ড জমি নিয়ে পাশের ইদ্রিস আলী ও শওকত হোসেনের সঙ্গে বিরোধ চলছিল। জমিটি বর্গায় চাষ করতেন আলী হোসেন।
শুক্রবার সকালে ওই জমিতে ধান কাটতে গেলে বর্গচাষি আলী হোসেনকে বাধা দেন ইদ্রিস, শওকত ও তাদের লোকজন। এ নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হলে ঘটনাস্থলেই আলী হোসেন মারা যান। এ সময় উভয় পক্ষের আরও অন্তত পাঁচ জন আহত হয়।
আহতদের মধ্যে দুজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শেরপুর জেলা সদর হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ।
নকলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রিয়াদ মাহমুদ বলেন, ‘এ ব্যপারে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।’
শেরপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. সাইদুর রহমান বলেন, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে এসেছি। এখান থেকে দুপক্ষের আহত লোকদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠিয়েছি। এদের মধ্যে আলী হোসেন নামে এক কৃষক হাসপাতালে নেয়ার আগেই মারা যান।’
এ পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে খোঁজ খবর নেয়া শুরু করেছি। খুব স্বল্প সময়ের মধ্যেই এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হবো।’
পাবনার বেড়া পৌর শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত তিন তলাবিশিষ্ট বেড়া পৌর মার্কেটের প্রধান ফটকে টাঙানো রয়েছে ‘একটি জরুরি বিজ্ঞপ্তি’ শিরোনামে বিশালাকৃতির এক ডিজিটাল নোটিশ। কিন্তু ব্যবসায়ীরা ওই নোটিশের কোনো গুরুত্ব দেয়নি। কর্তৃপক্ষও কেবল নোটিশ টাঙিয়েই দায় সেরেছে।
পৌর কর্তৃপক্ষের টাঙানো ওই নোটিশে বলা হয়েছে, ইতোপূর্বেও এই ভবনটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ও ব্যবহার অনুপযোগী হিসেবে চিহ্নিত করে ভবনের ব্যবসায়ীদের মালামাল সরিয়ে নিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও ব্যবসায়ীরা ঝুঁকিপূর্ণ এ ভবনেই ব্যবসা চালিয়ে আসছেন। পুনরায় ব্যবসায়ীদের মালামাল স্থানান্তরের অনুরোধ করা হলো। অন্যথায় জানমালের কোনো ক্ষতি হলে পৌর কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। গত দশ বছর ধরেই চলছে এ অনুরোধের আসর।
বেড়া পৌর মার্কেটটিকে ২০১৩ সালে প্রথম ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এরপর একাধিকবার মার্কেটের অর্ধশতাধিক ব্যবসায়ীকে পৌর কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে মালামালসহ সরে যাওয়ার জন্য নোটিশ দেয়া হয়। কিন্তু বিকল্প যাওয়ার জায়গা না থাকায় ঝুঁকি জেনেও ব্যবসায়ীরা এই ভবনেই ব্যবসা চালিয়ে আসছেন।
তবে এই ভবনে ব্যবসা চালাতে গিয়ে মার্কেটের ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা সব সময়ই ভবনটি ধসে যাওয়ার আতঙ্কে থাকেন। এর ওপর ভূমিকম্প হলে তো কথাই নেই। আতঙ্ক এমন চরমে ওঠে যে, তখন অনেকেই এদিক-সেদিক ছোটাছুটি করতে থাকেন। গত শনিবার সকালে সংঘটিত ভূমিকম্পের সময়েও প্রাণভয়ে অনেককে ছোটাছুটি করতে দেখা যায়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৯৯২ সালে ১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত জায়গায় সাবেক পৌর কর্তৃপক্ষ একটি তিন তলা ভবন গড়ে তোলে। অথচ বিধি মোতাবেক ১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত জায়গায় পাকা স্থাপনা নির্মাণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। স্থানীয় অনেকের অভিযোগ, ওই সময় নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে দুর্বল অবকাঠামোর ওপর ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছিল। এর ফলে নির্মাণের ১০ থেকে ১২ বছরের মধ্যেই ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে।
এদিকে ভবনটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ও পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হলেও ব্যবসায়ীদের বিকল্প কোনো স্থানে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেয়নি পৌর কর্তৃপক্ষ। এমনকি ভবনটির কোনো রকম সংস্কারের উদ্যোগও নেয়া হয়নি। ফলে এটি দিন দিন আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ইতোমধ্যেই এই ভবনের বিম ও ছাদের পলেস্তারা খুলে পড়েছে। এতে করে কখনো ভবনের ব্যবসায়ী আবার কখনো ক্রেতা কিংবা পথচারীরা আহত হচ্ছেন।
পৌর সুপার মার্কেটের উত্তর-পশ্চিম দিকের ১৭ নম্বর দোকান ভাড়া নিয়ে হার্ডওয়্যারের ব্যবসা চালাতেন মো. মনিরুজ্জামান। দশ দিন আগে তিনি মার্কেট থেকে তার দোকানটি অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘দোকানের সামনের অংশ ও ভেতরের ছাদ থেকে প্রায়ই ইটের টুকরা ও প্লাস্টার খুলে পড়ে। মাস-তিনেক আগে দোকানের ভেতরে ছাদ থেকে বড় একটি অংশ আমার সামনে খুলে পড়েছিল। সেদিন অল্পের জন্য বেঁচে গেছি।’
পৌর মার্কেটে থাকা মুদি দোকানি লিটন চৌধুরী, কাঁসা-পিতল ব্যবসায়ী আব্দুল মোমিনসহ চার-পাঁচজন ব্যবসায়ী জানান, দোকান ছেড়ে দিলে আয়ের পথ একেবারে বন্ধ হয়ে যাবে। তাই মারাত্মক ঝুঁকি জেনেও তারা এই মার্কেটে ব্যবসা চালিয়ে আসছেন।
পৌর মার্কেটের সঙ্গে একেবারে লাগোয়া আব্দুল জলিল সুপার মার্কেটের মালিক ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, ‘পৌর মার্কেট ভবনটি ১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত সম্পত্তির ওপর অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণ করা হয়েছে। এতে দক্ষিণ দিকের ১০ থেকে ১২টি দোকান পুরোপুরি আড়ালে পড়ে গেছে। এসব দোকানে প্রবেশের রাস্তা একেবারেই সরু হয়ে গেছে। সবচেয়ে বড় কথা হলো- পৌর মার্কেটের ভবনটি এতটাই ঝুঁকিপূর্ণ যে আমাদের সব সময় আতঙ্কে থাকতে হয়।’
বেড়া পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী ফিরোজুল আলম বলেন, ‘সম্প্রতি ভবনটির অবস্থা-সংক্রান্ত একটি ডিজিটাল নোটিশ বিজ্ঞপ্তি আকারে ভবনে টাঙিয়ে দেয়া হয়েছে। পৌরসভার পক্ষ থেকে মার্কেটটি ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়ে ব্যবসায়ীদের মাসিক ভাড়া স্থগিত করা হয়েছে। তৃতীয় তলায় থাকা পাবলিক লাইব্রেরিটিও সরিয়ে নেয়া হয়েছে।’
বেড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোরশেদুল ইসলাম বলেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটটি ভেঙে ফেলার ব্যাপারে পৌর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে অতিদ্রুত আমি কথা বলব।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে ট্রাকচাপায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার দুই যাত্রী নিহত হয়েছেন। শনিবার সকাল ৮টার দিকে উপজেলার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে বেড়তলা মুজাহিদ পেট্রোল পাম্পের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন, সদর উপজেলার তালশহর পূর্ব ইউনিয়নে সোনাসার গ্রামের আ. খালেকের ছেলে মো. আ. রহমান (৫৫) ও হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার সুবিদপুর গ্রামের আনসার আলীর ছেলে ইকবাল হোসেন (৩২)।
খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকুল চন্দ্র বিশ্বাস বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ওসি বলেন, ‘বেড়তলা মুজাহিদ পেট্রোল পাম্পের সামনেই দাঁড়ানো ছিল অটোরিকশাটি। এসময় ব্রাহ্মণবাড়িয়াগামী একটি ডাম্প ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে অটোরিকশাটির ওপরে উঠে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই অটোরিকশাযাত্রী আ. রহমান এবং হাসপাতালে নেয়ার পরে ইকবাল হোসেন মারা যান।’
ওসি আরও বলেন, ‘নিহতদের পরিবারের সিদ্ধান্তে ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহ হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলেছে। ঘাতক ট্রাকটি জব্দ করা হয়েছে। তবে চালক পালিয়ে গিয়েছে।’
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় ঘূর্ণিঝড় ‘মিগজাউম’-এর প্রভাব পড়েছে। টানা দুই দিন আকাশ মেঘলা থাকার পর গত বৃহস্পতিবার ভোর থেকে অব্যাহত গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে আমন ধানের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত কৃষকরা। বৃষ্টির কারণে অনেক কৃষক জমি থেকে আমন ধান কাটা, মাড়াই করতে না পারায় লোকসানের ভয় পাচ্ছেন। এ ছাড়া শীতকালীন সবজিও নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
উপজেলার কৃষকরা জানান, এর আগে ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে আমন ধান ও শীতকালীন সবজির। এখন আমন ধান ঘরে তোলার ধুম পড়েছ। কিন্তু বৃষ্টির কারণে ধান কাটা, মাড়াই ও ধান শুকাতে অনেক সমস্যা হচ্ছে। বৃষ্টির কারণে খেতের পাকা ধান মাটিতে শুয়ে পড়েছে। শুধু আমন ধান নয়, রবি ফসলও নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরে ১৭ হাজার ৩০৮ হেক্টর জমিতে আমন চাষ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে কৃষকরা ৫২ শতাংশ আমন ধান ঘরে তুলেছেন। এ ছাড়া ১ হাজার ৫৯৫ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি ও ৫৫৫ হেক্টর জমিতে আলু, ২৭৯ হেক্টরে টমেটো ও ৪৬৬ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ করা হয়েছে।
কমলগঞ্জ উপজেলার পতনঊষার ইউনিয়নের কৃষক আনোয়ার মিয়া বলেন, ‘আমি ৫ একর জমিতে আমন ধান চাষ করেছি। আমার ধান পুরোপুরি পেকে গেছে। কিছুদিন আগে বৃষ্টির কারণে আমন ধানের অনেক ক্ষতি হয়েছে। এখন আবার বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টির কারণে ধান কাটা, মাড়াই ও শুকানো যাচ্ছে না। ধান ঘরে তোলার সময়ে দুইবারের বৃষ্টিতে অনেক ক্ষতির মুখে পড়লাম।’
রহিমপুর ইউনিয়নের কৃষক বেলাল মিয়া বলেন, ‘কিছুদিন আগে ঘূর্ণিঝড় মিধিলির কারণে আমার আলু ও সরিষা খেত নষ্ট হয়েছে। এখন আবার রোপণ করেছি, আবার বৃষ্টি হচ্ছে। পাকা আমন ধানেরও অনেক ক্ষতি হয়েছে।’
কমলগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার রায় বলেন, মিধিলির বৃষ্টির কারণে আগে পাকা আমন ধান ও শীতকালীন সবজির কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। এখনকার বৃষ্টিতে আবারও পাকা আমন ধান, সরিষাসহ কিছু সবজির ক্ষতি হতে পারে। পাকা ধান দ্রুত কাটার জন্য কৃষকের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
বিশাল এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এ বট-পাকুড় বৃক্ষের দৃষ্টিনন্দন, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মুগ্ধ করে সবাইকে। সবুজ গাছের ডালে ডালে অজস্র পাখির নিবাস। সেসব পাখির কল-কাকলি মুখরিত করে রাখে চারদিক। প্রকৃতির এই অবাক শিল্প উপভোগ করার পাশাপাশি এর গল্প শুনেও আনন্দ পায় অনেকে।
বগুড়ার শেরপুর উপজেলার কুসুম্বী ইউনিয়নের চন্ডেশ্বর গ্রামের ছায়াঘেরা শীতল পরিবেশ। ডানে-বাঁয়ে, সামনে-পেছনে যেদিকে তাকানো যাবে বট-পাকুড়ের বিস্তার ছাড়া কিছুই নেই। শত শত মানুষ হাজার বছরের এই দম্পতি বৃক্ষের নিচে বসে বিশ্রাম নেয়। এলাকার বয়োবৃদ্ধদের কাছ থেকে শোনা যায় এর ইতিহাস। এই বট-পাকুড় বৃক্ষকে ঘিরে রয়েছে নানা উপকথা, তৈরি হয়েছে নানা কল্পকাহিনি। তা কখনো আনন্দের, কখনো ভয়ের, আবার কখনো রোগমুক্তির ভরসাস্থল। এসব কিছুই কল্পনানির্ভর। সব ধর্মের মানুষ রোগমুক্তিসহ অন্য কিছু লাভের আশায় এই দম্পতি বৃক্ষের তলায় মানত করে।
ঢাকা-বগুড়া মহাসড়ক ধরে বগুড়ার শেরপুর কলেজগেট এলাকা থেকে সিএনজিতে ২০ টাকা ভাড়ায় কুসুম্বী ইউনিয়নের চণ্ডেশ্বর গ্রামে পৌঁছলেই দেখা মিলবে হাজার বছরের রহস্যঘেরা এই দম্পতি বৃক্ষের। বট-পাকুড় বৃক্ষ একের পর এক ঝুরি নামিয়ে বিরাট আকার ধারণ করেছে। ঝুরিমূল থেকে সৃষ্ট প্রতিটি ডাল সন্তানের মতো জড়িয়ে আছে। মূলবৃক্ষ থেকে নেমে আসা প্রতিটি ঝুরিমূল কালের পরিক্রমায় নতুন একেকটি বট-পাকুড় বৃক্ষে পরিণত হয়েছে।
বয়স হাজার বছর হলেও এখনো যেন তাজা তরুণ আর চিরসবুজ। বার্ধক্যের ছাপ লাগেনি গায়ে। বৃক্ষটির বেড় প্রায় ১০০ ফুট। সনাতন ধর্ম বিশ্বাস অনুসারে, পাকুড় বৃক্ষকে পুরুষ আর বট বৃক্ষকে নারী মনে করা হয়। সেই বিশ্বাস থেকে পূর্বপুরুষরা ঢাকঢোল বাজিয়ে, শাঁখা-সিঁদুর পরিয়ে দুই বৃক্ষের বিয়ের সব কাজ সম্পন্ন করে। এখনো হিন্দু সম্প্রদায়ের অনেকে বিভিন্ন তিথিতে এখানে এসে পূজা দিয়ে যায়।
ওই গ্রামের ৭০ বছরের বৃদ্ধ কাদা উল্লাহ নামে এক ব্যক্তি জানান, তিনি জন্মের পর থেকে গাছগুলোকে একই অবস্থায় দেখছেন। তার বাবা-দাদারও দেখেছে একই। দম্পতি বট-পাকুড় বৃক্ষ ৫ বিঘা জমিজুড়ে রয়েছে। ঘিরে রেখেছে ১০ থেকে ১২ ফুট আয়তনের মোগল আমলের সুরকি ও ইটের তৈরি একটি ঘরকে। আর এখান থেকেই শুরু হয় রহস্য। কেউ বলছে এটা জিনদের আস্তানা, কেউবা বলেন সন্যাসীদের ঘর। অনেকে বলেন জাগ্রত মন্দির। এখনো অজানা, কী আছে ওই ঘরে। নানা অসুখে মানত করেন বিভিন্ন ধর্মের মানুষ। এ থেকে সুস্থতা ফিরে পেয়েছেন মনে করে এর ওপর আস্থা রাখার ঘটনাও প্রচুর।
অনেকে বলেন, মাঝে মধ্যে রাতে বৃক্ষ তলায় বেশ কয়েকটি আলো জ্বলে, আবার বাতাস হয়। নিয়ম মেনে চললে কোনো ক্ষতি হয় না। তবে যে বিশ্বাস করেনি তার ক্ষতি হয়েছে। যার দ্বারা এ বৃক্ষের আঠা বের হয়, তার শরীর দিয়ে রক্ত পড়ে এখনো। ক্ষমা চাইলে সুস্থ হয়, নতুবা নয়।
পঁচাত্তর বছর বয়সি আলহাজ মজিবর রহমান তার পৈতৃক সীমানায় বেড়ে ওঠা দম্পতি বৃক্ষ প্রসঙ্গে বলেন, ‘১৯৬২ সালে ঝড়ে বৃক্ষের একটি ডাল ভেঙে পড়ে। ভাঙা ওই বৃক্ষের ডাল বিক্রির জন্য চেষ্টা করেছি; কিন্তু রাতে স্বপ্নে দেখার পর আর বিক্রি করিনি। কোনোদিন আর করবও না।’
বরগুনার আমতলী উপজেলার মধ্য চন্দ্রা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী আছে হাতেগোনা কয়েকজন। অথচ বেতনভাতা ঠিকই নিচ্ছেন আট শিক্ষক-কর্মচারী। উপরন্তু নিয়োগ দিয়েছেন নৈশপ্রহরী ও পরিছন্নকর্মীসহ আরও চারজন। শিক্ষার্থী না থাকলে কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে লাভ কি? এমন প্রশ্ন এলাকাবাসীর।
১৯৯৩ সালে স্থাপিত হয় মধ্য চন্দ্রা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়। ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্ত হয়। বছরের বেশির ভাগ সময়ই হয় না ক্লাস, নেই সাইনবোর্ডও। বিভিন্ন অনিয়মের কারণে বহু বছর আগেই ভেঙে পড়েছে শিক্ষাব্যবস্থা। নামমাত্র চলছে শিক্ষা কার্যক্রম। স্কুলে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি ১০/১৫ জন। অথচ এ প্রতিষ্ঠানে আটজন শিক্ষক কর্মচারীর পেছনে সরকার প্রতি মাসে খরচ বহন করছে ১ লাখ ৩২ হাজার ৯৫০ টাকা।
এ অবস্থায় শিক্ষার্থী শূন্য প্রতিষ্ঠানে গত ০৪ নভেম্বর নিয়োগ দেওয়া হয়েছে চারজন তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী। শিক্ষার্থীশূন্য প্রতিষ্ঠানে কীভাবে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনভাতা প্রদান ও নতুন করে কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে স্থানীয়দের।
অভিযোগ উঠেছে, চেক জালিয়াতি মামলায় এক বছরের সাজাপ্রাপ্ত পলাতক সহকারী শিক্ষক দীর্ঘ ১৮ মাস বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থেকেও প্রধান শিক্ষকের সহযোগিতায় নিয়মিত বেতনভাতা তুলছেন। চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী, কোনো শিক্ষক কিংবা কর্মচারী মামলায় কারাভোগ করলে সাময়িক বরখাস্ত ও সাজাপ্রাপ্ত হলে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি বরখাস্ত করে আবেদন বোর্ডে পাঠাবে; কিন্তু বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ওই শিক্ষককে বরখাস্ত না করে নিয়মিত বেতনভাতা দিয়ে যাচ্ছেন। সংশ্লিষ্ট সোনালী ব্যাংক সূত্রে এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত হওয়া গেছে।
গত ৩০ নভেম্বর সরেজমিনে বিদ্যালয়টিতে গিয়ে দেখা যায়, অধিকাংশ শ্রেণিকক্ষে চেয়ার-টেবিল থাকলেও শিক্ষার্থীর উপস্থিতি হাতেগোনা। একজন শিক্ষক তৃতীয় প্রান্তিক মূল্যায়ন পরীক্ষা নিচ্ছেন। শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে চারজন, সপ্তম শ্রেণিতে কোনো শিক্ষার্থী নেই ও অষ্টম শ্রেণিতে তিনজনসহ মোট সাতজন শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিচ্ছে।
প্রধান শিক্ষক মো. সুলতান বিশ্বাসের কাছে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর হাজিরা খাতা দেখতে চাইলে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘ভুলবশত আলমারির চাবি বাসায় ফেলে রেখে এসেছি। সাজাপ্রাপ্ত শিক্ষক মো. শামীমের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় স্কুলে আসছেন না তিনি। ম্যানেজিং কমিটির সব সদস্যের সিদ্ধান্ত মোতাবেক তিনি চিকিৎসাধীন রয়েছেন।’
সাজাপ্রাপ্ত পলাতক শিক্ষক মো. শামীমের মুঠোফোনে ফোন দিলে তার নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি চাওড়া ইউপি চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামান বাদল খানকে ফোন দিলে দৈনিক বাংলার প্রতিনিধির পরিচয় পাওয়ার পরে বলেন, ‘আপনি এর আগেও আমার বিরুদ্ধে অনেক কথা বলেছেন, নিউজ করেছেন। আজ আবার এ বিষয়ে আমাকে প্রশ্ন করছেন। আমি আপনার কোনো কথার উত্তর দেব না।’
পরবর্তীতে তথ্য নেওয়ার জন্য প্রধান শিক্ষক সুলতান বিশ্বাসের মুঠোফোনে ফোন দিলে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘কত টাকা লাগবে বলেন পাঠাইয়া দিই। নিউজ করার দরকার কি? সভাপতির আদেশ, স্কুলের কোনো তথ্য সাংবাদিককে দেওয়া যাবে না।’
এলাকার বাসিন্দা মো. সোহরাব হোসেন মাস্টার বলেন, ‘আমিও একজন শিক্ষক। আমি যতটুকু জানি যে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মোট শিক্ষার্থীর ৬০ ভাগ শিক্ষার্থী উপস্থিত না থাকলে শিক্ষকরা কোনোভাবেই সরকারি অংশের বেতনভাতা উত্তোলন করতে পারবেন না; কিন্তু এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দিনের পর দিন কোনো শিক্ষার্থী উপস্থিত না থাকলেও শিক্ষকরা ঠিকই বেতন পাচ্ছেন।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক অভিভাবক জানান, বিদ্যালয় চলাকালীন ১০-১২ জনের বেশি ছাত্র-ছাত্রী আসে না। সবাই পরীক্ষাও দিচ্ছে না। কারণ এখানে শিক্ষার মান একেবারে ভালো না।
উপজেলা শিক্ষা অফিসের ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বে থাকা একাডেমি সুপারভাইজার সেলিম মাহমুদ বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, আমার বক্তব্য না নিয়ে জেলা শিক্ষা অফিসারের বক্তব্য নিন। তিনি বর্তমানে উপজেলার দায়িত্বে আছেন।
জেলা শিক্ষা অফিসার মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘আমার জানামতে ছাত্রসংখ্যা ১০/১৫ জন, এরকম কোনো স্কুল আমতলীতে নেই।’
এদিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, বেসরকারি স্কুলের তদারকি করা প্রশাসনের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না। তাই স্কুলের এ বেহালদশা। তবে কেউ যদি লিখিত অভিযোগ করেন তাহলে তিনি বিভাগীয়ভাবে ব্যবস্থা নেবেন।
চট্টগ্রাম-২ ফটিকছড়ি আসন থেকে তিনটি রাজনৈতিক দলের প্রধান তিন নেতা এমপি পদে লড়তে চান। এ জন্য তারা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। যাচাই-বাছাইয়ে বৈধও হয়েছে তাদের মনোনয়নপত্র। এ তিন প্রার্থী হলেন, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান আলহাজ সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের চেয়ারম্যান মাওলানা এম এ মতিন এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির (বিএসপি) চেয়ারম্যান শাহজাদা সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ আলহাসানী আল মাইজভাণ্ডারী। এদের মধ্যে সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী ও সৈয়দ সাইফুদ্দিন মাইজভাণ্ডারী সম্পর্কে চাচা-ভাতিজা। এ তিন প্রার্থীই সুন্নী মতাদর্শী।
জানা যায়, মাইজভাণ্ডার দরবার শরিফের কারণে ফটিকছড়ির আলাদা পরিচিতি রয়েছে। ফটিকছড়ির ভোটারদের মধ্যে একটি বড় অংশ মাইজভাণ্ডার দরবারের অনুসারী হলেও ভোটাররা জাতীয় রাজনীতির মতোই দুই ধারা আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে বিভক্ত।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক। শরিক দল হিসেবে সৈয়দ নজিবুল বশর ভাণ্ডারী গেল দুবার নৌকা মার্কায় নির্বাচন করে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। এবারও তিনি নৌকা পাওয়ার আশায় রয়েছেন। অন্য দুই দল বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টিও (বিএসপি) সরকারের সঙ্গে সমঝোতায় রয়েছে।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ১৯ নম্বরে নিবন্ধন পায় তরিকত ফেডারেশন। ২০০৮ সালের ৯ নভেম্বর নির্বাচন কমিশন থেকে নিবন্ধন পায় দলটি। দলটির নির্বাচনী প্রতীক ‘ফুলের মালা’। কেন্দ্রীয় কার্যালয় ঢাকার ধানমন্ডিতে। দলটির চেয়ারম্যান আলহাজ সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী।
নির্বাচন কমিশনে ৩৫ নম্বর রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন পায় বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট। ২০০৮ সালের ২০ নভেম্বর নিবন্ধন পায় দলটি। দলটির নির্বাচনী প্রতীক ‘মোমবাতি’। কেন্দ্রীয় কার্যালয় ঢাকার ধানমন্ডিতে। দলটির চেয়ারম্যান মাওলানা এম এ মতিন। নির্বাচন কমিশনে সবশেষ নিবন্ধিত দল বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি)। দলটির নিবন্ধন নম্বর ৪৯। দলটির নির্বাচনী প্রতীক ‘একতারা’। কেন্দ্রীয় কার্যালয় ঢাকার মিরপুরে। দলটির চেয়ারম্যান শাহজাদা সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ।
২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় নির্বাচনেও এ তিনজনই প্রার্থী হয়েছিলেন। তার মধ্যে ফটিকছড়ি আসনে মহাজোটের সমর্থন নিয়ে নৌকা প্রতীকে ২ লাখ ৩৮ হাজার ৪৩০ ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী। একই আসনে মোমবাতি প্রতীক নিয়ে ইসলামী ফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ১০ হাজার ১৭৪ ভোট পান শাহজাদা সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ।
এ প্রসঙ্গে মাওলানা এম এ মতিন বলেন, ‘আমরা এককভাবে নির্বাচন করছি। ফটিকছড়ি ও পটিয়া আসন থেকে এককভাবে নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘ফটিকছড়িতে আমাদের বিশাল ভোট ব্যাংক রয়েছে। ইসলামী ফ্রন্টের বিশাল কর্মীবাহিনী রয়েছে। আমাদের ভোট ব্যাংক রয়েছে এখানে।’
বিএসপি চেয়ারম্যান শাহজাদা সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ আলহাসানী আল মাইজভাণ্ডারী বলেন, ‘আমরা এককভাবে নির্বাচন করছি। জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী।’
অন্যদিকে আসনটিতে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী দেওয়া হলেও এবার ১৪ দলীয় জোটের সমর্থন প্রত্যাশা করছেন বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী।
তিনি বলেন, ‘আমরা জোটে আছি। জোটের বাইরে কোনো হিসাব নেই। জোট আগেও ছিল, এখনো আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। জোটের বাইরে কোনো কথা নেই।’
সূত্র জানায়, নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী ও সৈয়দ সাইফুদ্দিন মাইজভাণ্ডারী সম্পর্কে চাচা-ভাতিজা।
রাজনৈতিক মহলে আলোচনা রয়েছে, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোট থেকে চাচা-ভাতিজা দুজনের একজনকে এ আসন থেকে সমর্থন জানানো হতে পারে। যদিও আওয়ামী লীগ থেকে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন প্রয়াত সংসদ সদস্য রফিকুল আনোয়ারের মেয়ে সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি খাদিজাতুল আনোয়ার সনি। তিনি গতবারও মনোনয়ন পেয়েছিলেন; কিন্তু জোটের কারণে সরে দাঁড়ান। এবারও তাকে সরে দাঁড়াতে হতে পারে।
তবে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারাও দীর্ঘ দিন থেকে দাবি জানিয়ে আসছেন দল থেকে প্রার্থী দেওয়ার জন্য। বাইরের কাউকে যাতে এ আসনটি ছাড়া না হয়। এ ক্ষেত্রে জোটের শরিক হিসেবে কাউকে দেওয়া হলেও দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকায় বেকায়দায় পড়তে পারেন শরিকরা। পদত্যাগী উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা এইচ এম আবু তৈয়ব এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী।
আজ ৯ ডিসেম্বর, নেত্রকোনা মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাক-হানাদার বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ সমরে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তাজা রক্তে রঞ্জিত হয়ে শত্রুমুক্ত হয় নেত্রকোনার পবিত্র ভূমি।
এই দিনে জেলা শহরের চতুর্দিক থেকে ভোররাতে বীর মুক্তিযোদ্ধারা সম্মুখযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন, সেদিন শহরের উত্তর দিক থেকে হানা দিলে দক্ষিণে নেত্রকোনা শহরের কৃষি ফার্মে (বিএডিসি) এক ভয়াবহ যুদ্ধের মাধ্যমে মুক্ত হয় নেত্রকোনা, উত্তোলিত হয় স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা। পূর্ণাঙ্গ বিজয়ের পূর্ব মুহূর্তে পাক-হানাদার বাহিনীর গুলিতে শহীদ হন বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জব্বার (আবু খাঁ), বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশীদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু সিদ্দিক আহম্মেদ (সাত্তার) নামে তিনজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। জেলার বধ্যভূমিগুলোতে স্মৃতিফলক নির্মাণের দাবি বীর মুক্তিযোদ্ধা ও স্থানীয় বাসিন্দাদের।
৯ মাস যুদ্ধে নেত্রকোনায় ৫৯ জনের অধিক বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ শত শত নিরস্ত্র মানুষ পাক বাহিনীর হাতে নিহত হন। সম্ভ্রম হারান কয়েক শত মা-বোন। ২৫ এপ্রিল পাক বাহিনী নেত্রকোনা শহরে প্রবেশ করে ধরে নিয়ে গিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে ডা. মিহির সেন, তার ভাই সিদ্ধার্থ সেন ও বাড়ির কাজের লোক করুণাকে। পরে রাজাকাররা ধরে নিয়ে হত্যা করে মিহির সেনের বাবা হেম সেন এবং কাকা অখিল সেনকে। তারপর চলতে থাকে নির্মম হত্যাকাণ্ড। পাক-হানাদার ও তাদের এ দেশীয় দোসর রাজাকাররা জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে দেয় গ্রামের পর গ্রাম। সাতপাই এলাকায় অবস্থিত নেত্রকোনা সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজটিতে (পূর্বনাম-ভোকেশনাল) পাক বাহিনী তাদের ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করত।
পাক-হানাদারদের অত্যাচার, নির্যাতন ও নিপীড়নের সাক্ষী হয়ে আছে এ কলেজটি। তবে আজ পর্যন্ত এ কলেজে কোনো বধ্যভূমি বা স্মৃতিফলক নির্মাণ হয়নি। মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রামের সঠিক ইতিহাসসহ মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত স্থান সম্পর্কে জানার জন্য তরুণ প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করতে জেলার বদ্ধভূমিগুলোতে স্মৃতিফলক নির্মাণের দাবি বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ও বর্তমান প্রজন্মের।
বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান শাহীন উদ্দীন আহমেদ (ভিপি শাহীন) বলেন, নেত্রকোনায় ১৭টি বধ্যভূমি রয়েছে। সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি, প্রত্যেকটি বধ্যভূমিতে স্মৃতিফলক নির্মাণ করার।
বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ জেলা শাখার সভাপতি, ভাষাসৈনিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা সন্তান অধ্যাপক ওমর ফারুক বলেন, মুক্ত দিবসে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত এবং চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের চূড়ান্ত বিচারের দাবিসহ আল-বদর, আল-শামস, রাজাকার, দালাল-শান্তি কমিটির উত্তরসূরিদের বিতাড়িত করা হোক।
এবার সুনামগঞ্জের ৫টি আসনের মধ্যে তিনটিতে নতুন প্রার্থী দিয়েছে আওয়ামী লীগ। সুনামগঞ্জ-৪ আসনে গেল দুবার প্রার্থী না দিলেও এবার পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিককে নৌকার মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ব্যারিষ্টার এম এনামুল কবীর ইমন। সুনামগঞ্জ-৫ আসনে পাঁচবারের সংসদ সদস্য মহিবুর রহমান মানিক এবারও নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন। তার সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমদ চৌধুরী। সুনামগঞ্জ-১ ও ২ আসনের নৌকার প্রার্থীর সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপিরা।
সুনামগঞ্জের-৫টি আসনের মধ্যে এক ও দুই আসনের নৌকার প্রার্থী সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাড. রনজিৎ সরকারের সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন এবং ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সদস্য সেলিম আহমদ। রনজিৎ সরকারের কাছে দলীয় নেতা-কর্মীরা নিরাপদ নয় বলে মন্তব্য করে নতুন আলোচনার জন্ম দেন এমপি রতন। অন্যদিকে এমন বক্তব্যে কর্ণপাত না করে দলের ঐক্য ধরে রাখতে মরিয়া হয়ে কাজ করছেন রনজিৎ সরকার। সুনামগঞ্জ-২ আসনে পুলিশ প্রধানের ভাই, শাল্লা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের পদ থেকে সদ্য পদত্যাগ করা আওয়ামী লীগ নেতা চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ (আল আমিন চৌধুরী) দলীয় মনোনয়ন পাওয়ায় বিশিষ্ট পার্লামেন্টারিয়ান, সাবেক সংসদ সদস্য সুরঞ্জিৎ সেনগুপ্তের সহধর্মিণী বর্তমান সংসদ সদস্য ড. জয়া সেনগুপ্ত স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এতে এ দুটি আসনেও ভোটের মাঠে আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগই।
এদিকে দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শরিক জাতীয় পার্টির প্রার্থী অ্যাড. পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ ছিলেন সুনামগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য। এবার এ আসনে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক। অন্যদিকে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে আছেন সুনামগঞ্জ আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, জাতীয় কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার এম এনামুল কবির ইমন।
সুনামগঞ্জ-৫ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী পাঁচবারের এমপি মুহিবুর রহমান মানিকের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য মনোনয়ন জমা দিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শামীম চৌধুরী। তাদের মধ্যে পারিবারিক ও ব্যক্তি বিরোধ দীর্ঘ দিনের। তাই ভোটের রাজনীতিতে একে অন্যকে বিষোদগার করে বক্তব্য রাখছেন বিভিন্ন সভা-সমাবেশে। এ দুই রাজনীতিকের দ্বন্দ্বের কারণে কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে ভোটের মাঠে উত্তাপ ছড়াচ্ছে প্রতিনিয়ত। ভোটাররা বলছেন আসনটিতে আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগই।
সুনামগঞ্জের ৫টি আসনের মধ্যে কেবল সুনামগঞ্জ-৩ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী এমএ মান্নানের আসনে দলের অন্য কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দেননি।
কিশোরগঞ্জের আলোচিত পাগলা মসজিদের ৯টি দানবাক্স খুলে এবার ২৩ বস্তা টাকা পাওয়া গেছে। জেলা শহরের ঐতিহাসিক এ মসজিদটির দানবাক্সগুলো সাধারণত তিন মাস পর পর খোলা হয়। এবার খোলা হয়েছে ৩ মাস ২০ দিন পর।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্টেট ও দানবাক্স খোলা কমিটির আহ্বায়ক কাজী মহুয়া মমতাজের তত্ত্বাবধানে জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ ও পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ রাসেল শেখের উপস্তিতিতে শনিবার সকাল পৌনে ৮টার দিকে দানবাক্সগুলো খোলা হয়েছে। এখন চলছে গণনার কাজ। গণনা শেষে টাকার পরিমাণ জানা যাবে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘টাকা গণনা কাজে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এ.টি.এম ফরহাদ চৌধুরী, রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর শেখ জাবের আহমেদ, সহকারী কমিশনার রওশন কবীর, মাহমুদুল হাসান, সামিউল ইসলাম, আজিজা বেগম, মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি খলিলুর রহমান ও রূপালী ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) রফিকুল ইসলাম, মাদ্রাসার ১১২ জন ছাত্র, ব্যাংকের ৫০ জন স্টাফ, মসজিদ কমিটির ৩৪ জন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১০ জন সদস্য অংশ নিয়েছেন।’
এদিকে দানবাক্সগুলো খোলার পর গণনা দেখতে মসজিদের আশপাশে ভিড় করছেন উৎসুক মানুষ। তাদের মধ্যে অনেকে এসেছেন দূর-দূরান্ত থেকে।
এর আগে ১৯ আগস্ট তিনমাস পর দানবাক্সগুলো খোলা হয়েছিল। তখন ২৩টি বস্তায় ৫ কোটি ৭৮ লাখ ৯ হাজার ৩২৫ টাকা পাওয়া যায়। ঐতিহাসিক এ মসজিদের দানবাক্সে একসঙ্গে এত টাকা পাওয়াটা তখন ছিল নতুন রেকর্ড।
এছাড়াও মসজিদে নিয়মিত হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগলসহ বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র দান করেন বিভিন্ন জেলা থেকে আসা অসংখ্য মানুষ।
মসজিদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা বীর মুক্তিযোদ্ধা শওকত উদ্দিন ভূইয়া জানান, করোনা সংক্রমণের শুরুতে মসজিদে মুসল্লিদের চলাচল এবং নারীদের প্রবেশাধিকার বন্ধ থাকলেও দান অব্যাহত ছিল।
তিনি আরও জানান, পাগলা মসজিদ ও ইসলামী কমপ্লেক্সের খরচ চালিয়ে দানের বাকি টাকা ব্যাংকে জমা রাখা হয়। এ থেকে জেলার বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমখানায় অনুদান দেয়া হয়। অসহায় ও জটিল রোগে আক্রান্তদের সহায়তাও করা হয়।
তাছাড়া সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের করোনা ইউনিটে নিয়োজিত স্বেচ্ছাসেবকদেরও এই দানের টাকা থেকে সহায়তা করা হয়েছে।
মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি খলিলুর রহমান বলেন, “প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ এসে দান করছে এই মসজিদে। যারা দান করতে আসেন তারা বলে থাকেন, ‘এখানে দান করার পরে নাকি তাদের আশা পূরণ হয়েছে। তাই এখানে দান করেন তারা।’”
জেলা শহরের হারুয়া এলাকায় নরসুন্দার তীরে প্রায় ১০ শতাংশ জমিতে পাগলা মসজিদ গড়ে ওঠে। বর্তমানে সেটি সম্প্রসারিত হয়ে ৩ একর ৮৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
মুন্সীগঞ্জে একটি আবাসিক ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনায় নারী ও শিশুসহ একই পরিবারের ৪ জন দগ্ধ হয়েছেন।
শনিবার সকাল ৭টার দিকে জেলা শহরের ইদ্রাকপুর এলাকায় একটি পাঁচতলা ভবনের পঞ্চমতলায় ভাড়া বাসায় ওই দুর্ঘটনা ঘটে। তবে কী কারণে বিস্ফোরণ ঘটেছে তা এখনো জানা যায়নি।
অগ্নিদগ্ধরা হলেন, রিজভি আহমেদ রাসেল (৪২), তার স্ত্রী রোজিনা বেগম (৩৫), তাদের সন্তান রাইয়ান আহমেদ (৩) এবং রিজভির মা সাহিদা খাতুন (৬৫)। তাদের বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলায়।
ওই এলাকার বাসিন্দা মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র মু. সোহেল রানা রানু জানান, সকালে বিস্ফোরণের সংবাদ পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে স্থানীয়দের সহযোগিতায় দ্রুত আহতদের উদ্ধার করে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে এদের মধ্যে গুরুতর দগ্ধ রিজভি, রোজিনা বেগম ও তাদের সন্তান রাইয়ান আহমেদকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
মুন্সীগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-সহকারী পরিচালক মো. মোস্তফা মোহিসন জানান, খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে তারা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। তবে বিস্ফোরণের কারণ এখনো নিশ্চিত হতে পারেননি তারা।
আসন্ন জাতীয় দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া হলফনামা অনুযায়ী দেখা গেছে মেহেরপুর-১ (৭৩) আসনের সংসদ সদস্য জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন দোদুল এবং মেহেরপুর ২ (৭৪ গাংনী) আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ সাহিদুজ্জামান খোকনের আয় ও সম্পদ বেড়েছে কয়েকগুণ। এতে জনসাধারণের মধ্যে দেখা দিয়েছে নানা প্রতিক্রিয়া।
গত পাঁচ বছরে প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন দোদুলের সম্পদ বেড়েছে কয়েকগুণ। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেওয়া হলফ নামার তথ্য বলছে, বাৎসরিক কৃষি থেকে তার আয় হয় ২৫ লাখ ১৮ হাজার টাকা। ব্যবসা থেকে ১৭ লাখ ৭৯ হাজার ৩৪৭ টাকা, শেয়ারবাজার ও ব্যাংক আমানত থেকে ৪ লাখ ২৮ হাজার ২০১ টাকা। এ ছাড়া পারিশ্রমিক, ভাতা, সম্মানী হিসেবে ২৯ লাখ ৭৬ হাজার ২৭৫ টাকা আয় করেন। নগদ রয়েছে ১ কোটি ৩৬ লাখ ৬০ হাজার ৬৯৬ টাকা।
অথচ পাঁচ বছর আগে একাদশ সংসদ নির্বাচনের সময় কৃষি খাত থেকে তার আয় ছিল ৪ লাখ টাকা। শেয়ার/সঞ্চয়পত্র ছিল ১৫ হাজার ৩৫৩ টাকা। জমির পরিমাণ ছিল ৫১ শতক।
বর্তমানে তার ব্যাংকে আছে ২৯ লাখ ১ হাজার ৯১৫ টাকা এবং পোস্টাল সেভিংস রয়েছে ৪০ লাখ টাকার, যার অর্ধেক তার স্ত্রীর নামে। তিনি যে গাড়িটি ব্যবহার করছেন তার দাম ৭৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা। তার স্ত্রীর নামে একটি মাইক্রোবাস রয়েছে, যার দাম ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। তার স্ত্রী মোনালিসার নগদ টাকা রয়েছে ৪৭ লাখ, ব্যাংকে জমা আছে দেড় লাখ, সঞ্চয়পত্র কেনা আছে ২০ লাখ, ব্যবসায় বিনিয়োগ রয়েছে ৪০ লাখ টাকা।
ফরহাদ হোসেনের নিজের ২৫ ভরি ও স্ত্রীর ১৩০ ভরি স্বর্ণ রয়েছে। যার প্রতিভরি স্বর্ণের মূল্যে দেখানো হয়েছে ১২ হাজার ৮০০ টাকা।
কৃষিজমি রয়েছে ২৭৪ শতক। রাজধানীর উত্তরায় ১ হাজার ৬০০ স্কয়ার ফুটের একটি ফ্ল্যাট তার নামে রয়েছে, তবে তা বুঝে পাননি। এ ছাড়া একটি দোতলা পাকা বাড়ি রয়েছে তার।
অন্যদিকে মেহেরপুর দুই গাংনী আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ সাহিদুজ্জামান খোকন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না পেলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্রের সঙ্গে দেওয়া হলফনামা অনুযায়ী তার অস্থাবর সম্পদের মূল্য ৫১ লাখ ৬৪ হাজার টাকা, ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় দেওয়া হলফনামার তুলনায় প্রায় তিনগুণ বেশি। একইসঙ্গে তার বার্ষিক আয় বেড়েছে চারগুণ।
২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে তার বার্ষিক আয় ছিল ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ লাখ ৫০ হাজার টাকায়।
বর্তমানে মোহাম্মদ সাহিদুজ্জামানের বার্ষিক আয় ৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এর মধ্যে কৃষিজমি থেকে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা, ব্যবসা থেকে ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা এবং মৎস্য খাত থেকে ৫ লাখ টাকা।
২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে তার বার্ষিক আয় ছিল ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা। আয়ের খাত ছিল কৃষিজমি থেকে ৭০ হাজার টাকা এবং ব্যবসা থেকে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা।
মোহাম্মদ সাহিদুজ্জামানের বর্তমান অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৫২ লাখ টাকার এবং ২৫ ভরি স্বর্ণ। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নগদ টাকা ২ লাখ, ব্যাংকে জমা ৪২ লাখ, একটি গাড়ি যার মূল্য ৫ লাখ টাকা, গৃহস্থালির ইলেকট্রনিক্স ও আসবাবপত্র ২ লাখ টাকার।
২০১৮ সালের নির্বাচনী হলফনামায় অস্থাবর সম্পদ ১৭ লাখ ৭০ হাজার টাকার মধ্যে নগদ ছিল ২ লাখ, ব্যাংকে জমা ১৪ লাখ, গৃহস্থালির ইলেকট্রনিক্স ও আসবাবপত্র ১ লাখ ২০ হাজার টাকার এবং ১৫ ভরি স্বর্ণ ৫০ হাজার টাকার।
আবার সংসদ সদস্য মোহাম্মদ সাহিদুজ্জামানের স্ত্রীর সম্পদও বেড়েছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার স্ত্রীর অস্থাবর সম্পদের মূল্য ৩৭ লাখ টাকা এবং স্বর্ণ ২৫ ভরি উল্লেখ করা হয়েছে, তবে ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে তার অস্থাবর সম্পদ ছিল ১০ লাখ ৫০ হাজার টাকার। সে হিসেবে এমপি পত্নীর সম্পদ বেড়েছে প্রায় চারগুণ।
তার স্ত্রীর নামে জমির পরিমাণও বেড়েছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে জমির পরিমাণ ছিল ৭ কাঠা। এখন তার পরিমাণ কৃষিজমি ২.২৯। তবে এ ক্ষেত্রে জমির পরিমাণ শতাংশ না একরে তা হিসাব উল্লেখ করা হয়নি।
আওয়ামী লীগ সমর্থককর্মী সৌরভ হোসেন বলেন, ‘আমি প্রায় বিশ বছর ধরে স’মিলের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত আছি। গত ৫ বছরে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে যা আয় করি তা দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে। সম্পদ বাড়ানো দূরের কথা, সঞ্চয় ফুরিয়ে গেছে। অথচ আমাদের জেলার এমপি-মন্ত্রীদের সম্পদ বেড়েই চলেছে। করোনা বলেন আর প্রাকৃতিক দুর্যোগ কোনো কিছুতেই এদের সম্পদ কমে না। তার মানে, এরা জনগণের টাকা মারে, তাই এদের সম্পদ বাড়ে বই কমে না।’
তৃণমূলে রাজনীতি করা সম্রাট আলী বলেন, হলফনামায় দেখছি একজন এমপি প্রতি ভরি স্বর্ণের মূল্য ধরেছেন ১২ হাজার ৮০০ টাকা। অথচ বর্তমান বাজারে স্বর্ণ বিক্রি হচ্ছে ১ লাখ ৯ হাজার টাকা করে। এভাবে হলফনামায় আসলে প্রকৃত চিত্র বোঝা যায় না।
মেহেরপুর সরকারি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল আমিন হোসেন বলেন, তারা সম্মানীয় ও শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি। সবাই চায়, তাদের সম্পদের বিবরণীটা সঠিকভাবে হলফনামায় উপস্থাপন করা হোক। নইলে পুরো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাটাই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি পড়বে এবং জনপ্রতিনিধি সম্পর্কেও মানুষের বিরূপ ধারণা হতে পারে।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ-২০২৩ এর প্রথম গ্রুপের জেলা পর্যায়ের লিখিত পরীক্ষা চলাকালে ঝালকাঠিতে আটক হয়েছে এক পরীক্ষার্থী।
আটক অভি চন্দ্র দাস (২২)এর বাড়ি ঝালকাঠি সদর উপজেলায় কির্তিপাশা ইউনিয়নে গোবিন্দ ধবল গ্রামে। সে রাজাপুর উপজেলায় গালুয়া ইউনিয়নের কানুদাসকাঠি গ্রামের ইব্রাহীমের পক্ষে ঝালকাঠি সরকারী টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে আসে।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নাসির উদ্দিন সরকার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
শুক্রবার সকাল ১০টায় শুরু হওয়া এক ঘন্টার পরীক্ষা চলাকালে ৩০ মিনিট পর বিষয়টি হল পরিদর্শকের নজরে আসে। তিনি অভিকে কেন্দ্র পরিদর্শক মো. আব্দুল করিমের কাছে নিয়ে যায়।
সেখানে থাকা নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট হাসান মোহাম্মদ সোয়াইব এবং কেন্দ্রটির সুপারেন্টেন্ট অধ্যক্ষ জিন্নাত রেহানা ফেসদৌসী, ঐ পরীক্ষার্থীর কাগজপত্র যাচাই করে তার প্রক্সির বিষয়টি নিশ্চিত করে।
নাসির উদ্দিন বলেন ‘দুপুরে অভি চন্দ্রকে সদর থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হলে তার বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া চলমান। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জড়িতদের তথ্য বের করা হবে।’
ঠাকুরগাঁওয়ে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় কেন্দ্রে ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করার অভিযোগে চার যুবককে আটক করেছ পুলিশ।
শুক্রবার পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে আটক হন তারা।
আটকরা হলেন, রাণীশংকৈল উপজেলার বাজে বকশা গ্রামের শ্রী টংকনাথ বর্মণ। তিনি পুলিশ লাইন স্কুল এন্ড কলেজ থেকে আটক হন। একই উপজেলার আলশিয়া গ্রামের সোহানুর রহমান। তিনি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে আটক হন। বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার আলোকসিপি আনোয়ার খালিদ সরকারি কলেজ কেন্দ্র থেকে আটক হন। পীরগঞ্জ উপজেলার পাটুয়া পাড়া গ্রামের ওমর ফারুক কালেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজ থেকে আটক হন।
এছাড়াও পরীক্ষা কেন্দ্রে অবৈধভাবে ও এমআর সিট নিয়ে প্রবেশ করায় তিন নারী পরীক্ষার্থীকে আটক করেছে পুলিশ।
ঠাকুরগাঁও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ কবির এসব তথ্য নিশ্চিৎ করেছেন।
তারা হলেন, পীরগঞ্জ উপজেলার নারায়ণপুর গ্রামের মোছা: আর্জিনা। বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার হরিণমারি গ্রামের হাসনা হেনা ও সদর উপজেলার রুহিয়া মধুপুর গ্রামের একজন একই কেন্দ্র থেকে আটক হন।
ওসি জানান, প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় চারজন ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার ও অবৈধভাবে ওএমআর সিট নিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ ও ব্যবহার করার অভিযোগে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ তাদের পুলিশে সোপর্দ করে। বিষয়টি নিয়ে আইনগত প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।