শনিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫
৪ পৌষ ১৪৩২

তালগাছের পর ‘দণ্ড’ প্রকল্প

তথ্য উপাত্তে বজ্রপাত।
প্রতিবেদক, দৈনিক বাংলা
প্রকাশিত
প্রতিবেদক, দৈনিক বাংলা
প্রকাশিত : ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০৭:৫৮

আহমেদ দীপ্ত

বজ্রপাতের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে সরকারের ১৩ লাখ তালগাছ লাগানোর প্রকল্পটি ব্যর্থ হওয়ার পর নতুন করে আরও দুটি প্রকল্প নেয়া হয়েছে, যেগুলোর মাধ্যমে বজ্রনিরোধক দণ্ড (লাইটনিং অ্যারেস্টার) বসানো হবে। প্রাথমিক ও পরীক্ষামূলকভাবে কয়েকটি জেলায় এই দণ্ড বসানো হয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে দেশে বজ্রপাতে হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে। চলতি সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম ১৮ দিনে দেশে বজ্রপাতে মারা গেছেন অন্তত ১৯ জন।

গত ১২ বছরে দেশে বজ্রপাতে মারা গেছেন ২ হাজার ৮৫৪ জন। আর চলতি বছরের সাড়ে ৯ মাসে মারা গেছেন ২৬৪ জন। এই প্রেক্ষাপটে বজ্রপাত ঠেকাতে সরকারের করণীয় কী, তা আবারও আলোচনায় এসেছে।

বজ্রপাতের ক্ষেত্রে একটি অস্বাভাবিক বছর ছিল ২০১৬ সাল। ওই বছর প্রায় ৪৩ লাখ বজ্রপাতে মারা যান প্রায় ২৬৩ জন মানুষ। সে বছর বজ্রপাতকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা করে সরকার।

বজ্রপাতে ক্ষয়ক্ষতি কমাতে এর এক বছর পর সারাদেশে প্রথমে ১৩ লাখ তালগাছ রোপণের উদ্যোগ নেয় সরকার। তখন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, তালগাছ ও নারকেল গাছ রোপণ করা হলে সেগুলো বজ্রনিরোধক দণ্ড হিসেবে কাজ করবে। অবশ্য এই প্রকল্প নিয়ে সরকারকে সমালোচনার মুখেও পড়তে হয় ।

চলতি বছরের ১১ মে সচিবালয়ে এক অনুষ্ঠানে তালগাছ লাগিয়ে বজ্রপাত মোকাবিলার কৌশলে ইতি টানার কথা সাংবাদিকদের জানান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান। এনামুর রহমান দৈনিক বাংলাকে বলেন, তখন তালগাছ লাগানোর পরে দেখা গেল, যত্নের অভাবে সেগুলো মারা যাচ্ছে। তাই শেষ পর্যন্ত এটি বাতিল করা হয়।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশের কোন কোন অঞ্চলে বজ্রপাত বেশি হয় (হটস্পট), তা বের করতে অধিদপ্তর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যৌথভাবে একটি সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদন তৈরি করেছে। প্রতিবেদনটির আলোকে বজ্রপাতের হটস্পটগুলোতে বজ্র নিরোধক দণ্ড বসানোর প্রকল্প নেয়া হবে। ইতিমধ্যে প্রাথমিকভাবে (পাইলট প্রকল্প) ১৫টি জেলায় ৩২০টি বজ্রনিরোধক দণ্ড বসানো হয়েছে। এ ছাড়া আবহাওয়ার পরিস্থিতি বুঝে সতর্ক সংকেত (আর্লি ওয়ার্নিং) দেয়ার কথাও ভাবছে অধিদপ্তর।

রোপণ করা তালগাছগুলো কী ভূমিকা রেখেছে জানতে চাইলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আতিকুল হক বলেন, ২০১৭ সালে রাস্তার দুই পাশে তালগাছ রোপণ করা হয়েছিল। তালগাছ বড় হতে অনেক সময় নেয়, ৩০ থেকে ৪০ বছর লাগে। তাই, এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা সম্ভব ছিল না। তাঁর মতে, বজ্রনিরোধক দণ্ড বজ্রপাতের ক্ষয়ক্ষতি এড়ানোর জন্য একটি গ্রহণযোগ্য সিদ্ধান্ত।

দুই মন্ত্রণালয়ের দুই প্রকল্প

বজ্রপাতের কারণে হতাহতের সংখ্যা কমাতে সরকারের দুই মন্ত্রণালয় দুটি আলাদা প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে। এর মধ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের হাওরাঞ্চলের বজ্রপাতপ্রবণ ২৩ জেলায় বজ্রপাত-নিরোধক কংক্রিটের ছাউনি (শেল্টার) নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রকল্পের খরচ ৩০০ কোটি টাকা। একেকটি ছাউনি নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা। এসব ছাউনিতেও বজ্র নিরোধক দণ্ড বসানো হচ্ছে।

অন্যদিকে কৃষি মন্ত্রণালয়ের ‘হাওরাঞ্চলে কৃষকদের জীবনের সুরক্ষায় বজ্রনিরোধক ব্যবস্থা স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্পে ব্যয় ২৩১ কোটি টাকা। এর আওতায় হাওরাঞ্চলের সাতটি জেলার ৫৮টি উপজেলায় ১০০ থেকে ১২০ বর্গমিটার ব্যাসার্ধের ১৬টি আর্লি স্টিমার ইমিটার (ইএসই) নামে বজ্রনিরোধক যন্ত্র বসানো হচ্ছে। পাশাপাশি ‘আর্থ নেটওয়ার্কস লাইটিং অ্যান্ড সিভিয়ার ওয়েদার আর্লি ওয়ার্নিং সল্যুশন’-এর মাধ্যমে মোবাইল অ্যাপ, ভয়েস ও খুদেবার্তার আকারে স্থানীয়দের সতর্কবার্তা দেয়া হবে।

বাংলাদেশের বজ্রপাত নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষণা করছেন অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব আর্থ অ্যান্ড প্লানেটারি সায়েন্সেসের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক আশরাফ দেওয়ান। তিনি দৈনিক বাংলাকে বলেন, বজ্রপাতের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে এখন অ্যারেস্টার, ছাউনি এবং আর্লি ওয়ার্নিং পদ্ধতির ওপর জোর দেয়া হচ্ছে। অ্যারেস্টারের গুণগত মান ও ব্যবহারের আগে কার্যকারিতার সম্ভাব্যতা যাচাই অপরিহার্য। সঠিকভাবে অনুসরণ না করলে এগুলো মৃত্যু কমানোর বিপরীতে বাড়াতে পারে।

বজ্রপাত কমলেও তা শক্তিশালী

দেশে বজ্রপাতের সংখ্যা অবশ্য কমলেও সেটা উদ্বেগ কমানোর মতো নয়। কারণ, এখনও বছরে প্রায় ২৩৮ জন মানুষের মৃত্যু হয় ভূমিতে নেমে আসা বজ্রপাতে। আর মারা যাওয়াদের প্রায় অধিকাংশই কৃষক বা মাঠে কাজ করার সময়।

ফিনল্যান্ডের বজ্রপাতবিষয়ক গবেষণা সংস্থা ভাইসালারের হিসাবে বাংলাদেশে ২০১৫ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর ৪০ লাখ বা তার বেশি বজ্রপাত হয়। ২০১৯ সালে তা প্রায় ১০ লাখ কমে যায়। ২০২০ সালে বজ্রপাতের সংখ্যাটি দাঁড়ায় ২৫ লাখের কিছু কম।

ভাইসালারের সাত বছরের তথ্য বলছে, দেশে বজ্রপাতে মৃত্যুর ৭০ শতাংশ ঘটনা ঘটে কৃষিকাজ করার সময়। এ ছাড়া বাড়ি ফেরার পথে সাড়ে ১৪ শতাংশ এবং গোসল করা ও মাছ ধরার সময় ১৩ শতাংশ মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।

এই তথ্যের মিল পাওয়া গেল দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের এক হিসাবে। অধিদপ্তর জানায়, চলতি বছরের শুরু থেকে গত ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বজ্রপাতে মারা যাওয়া ২৬৪ জনের মধ্যে ২৬০ জনই পেশায় কৃষক বা মাঠে কাজ করার সময় মারা গেছেন।

২০২১ বজ্রপাতে মৃত্যুর জেলাওয়ারী হিসাব পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বজ্রপাতে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৩৬ জন। ১৬ থেকে ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, জামালপুর, দিনাজপুর ও সিরাজগঞ্জ জেলায়। ১২ থেকে ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে ময়মনসিংহ, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, রাজশাহী ও বগুড়ায়।

গবেষকরা বলছেন, গত কয়েক বছরে সংখ্যাটা কমলেও সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোতে হতাহতের সংখ্যা বেশি হতে দেখা যাচ্ছে। গাছপালা কমে যাওয়া, মাঠে উঁচু গাছ না থাকা এবং পানির কাছাকাছি থাকার কারণে বাহক হিসেবে মানুষ বজ্রপাতের শিকার হচ্ছেন। এ ছাড়া মৌসুমী বজ্রপাতের কারণ মূলত মৌসুমী বায়ুর প্রভাব।

গবেষকদের মতে, বাংলাদেশের ভূমিরূপের কারণেও বজ্রঝড় বেশি হয়। প্রাক-মৌসুমে দেশে অন্য মৌসুমের তুলনায় বজ্রপাত বেশি হয়। যার মূল কারণ কৃষিতে সেচকাজ- যা ভূমি ও বায়ুমণ্ডলের এনার্জি এক্সচেঞ্জকে প্রভাবিত করে। গাণিতিক ও আবহাওয়ার মডেল অনুযায়ী, প্রাক-মৌসুমে বজ্রপাত ও ঝড়ের তীব্রতা বাড়ে, অন্য সময়ে কমে। আর প্রাক-মৌসুমে যে বজ্রপাত হয়, তার তীব্রতা অনেক বেশি থাকে। ফলে প্রাণহানির আশঙ্কাও বেশি।

আশরাফ দেওয়ান দৈনিক বাংলাকে বলেন, মূলত বজ্রপাতগুলো বৃহৎ শক্তি (ভোল্টেজ) নিয়ে ভূমিতে আছড়ে পড়ছে। ভূমিতে নামার সময় বজ্রপাত উঁচু বাহক খোঁজে। মাঠে উঁচু গাছ কম এবং ওই পরিবেশে গাছপালাও কমে যাচ্ছে। ফলে বজ্রপাত বাহক হিসেবে বেশি মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে, হতাহতও বাড়ছে।

উদাহরণ দিতে গিয়ে এই গবেষক বলেন, ২০২১ সালের ৪ আগস্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে পদ্মা নদীর তেলিখাড়ি ঘাটে বজ্রপাতে ১৭ জনের মৃত্যু হয়। আহত হন ৬ জন। তাঁরা সবাই ঘাটে পানির কাছাকাছি ছিলেন। আবার এ বছর ৮ সেপ্টেম্বর সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় বজ্রপাতে একই পরিবারের ৫ জনসহ ৯ জনের মৃত্যু হয়। তারা সবাই মাঠে কৃষিকাজ করছিলেন। ফলে একসঙ্গে এতগুলো বাহক পেয়ে বজ্রপাত তার পূর্ণ শক্তি নিয়ে আঘাত হানে।


টেকনাফ গহীন পাহাড় থেকে বিপুল অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার

বিজিবির বিশেষ অভিযান
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি

কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের রঙ্গীখালী পাহাড়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) বিশেষ অভিযানে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, গোলাবারুদ, মর্টারের শেল, বোমা তৈরির উপকরণ ও হ্যান্ড গ্রেনেড উদ্ধার করা হয়েছে। এ সময় ডাকাতদলটি গুলি ছোড়লে আত্মরক্ষার্থে বিজিবিও পাল্টা গুলি ছোড়ে। গত বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাত ৯টার দিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন উখিয়া (৬৪) ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন।

বিজিবি জানায়, হ্নীলা ইউনিয়নের রঙ্গীখালী পাহাড় ও বাহাড়ছড়া ইউনিয়নের মেরিন ড্রাইভ সংলগ্ন পাহাড় এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে কয়েকটি সশস্ত্র ডাকাত চক্র অস্থায়ী ঘাঁটি গড়ে তুলে স্থানীয় বাসিন্দা ও পর্যটকদের অপহরণ, গুম, খুন এবং মানবপাচারের মতো অপরাধে জড়িত ছিল। এসব চক্র সীমান্ত এলাকায় মাদক ও চোরাচালান কার্যক্রমেও সম্পৃক্ত বলে অভিযোগ রয়েছে।

উখিয়া (৬৪) ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন জানান, গত ১৭ ডিসেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে উখিয়া ব্যাটালিয়নের (৬৪ বিজিবি) একটি দল তিন স্তরের কৌশলে অভিযান শুরু করে। রাত সাড়ে ১০টার দিকে রঙ্গীখালী পাহাড়ে সন্দেহজনক গতিবিধি লক্ষ্য করা হলে এলাকা ঘিরে ফেলে বিজিবির সদস্যরা। এ সময় ডাকাত দলটি গুলি ছোড়লে আত্মরক্ষার্থে বিজিবিও পাল্টা গুলি ছোড়ে। পরে ডাকাতরা তাদের অস্থায়ী ঘাঁটি ছেড়ে পার্শ্ববর্তী পাহাড়ে পালিয়ে যায়।

অভিযান শেষে পরিত্যক্ত ঘাঁটি থেকে একটি জি-৩ রাইফেল, রাইফেলের বিভিন্ন অংশ ও ম্যাগাজিন, ওয়ান শুটার গান, এলজি শুটার গান, এমএ-১ (এমকে-২ ভ্যারিয়েন্ট), একনলা গাদা বন্দুক, সিলিং, তিনটি আরজিএস হ্যান্ড গ্রেনেড, একটি মর্টারের গোলা, ১৭ কেজি গান পাউডার, হাতবোমা তৈরির উপকরণ, দেশীয় অস্ত্রসহ মোট ৩০২ রাউন্ড গুলি ও ব্যবহৃত খালি খোসা উদ্ধার করা হয়।

বিজিবির প্রাথমিক তদন্তে ধারণা করা হচ্ছে, এসব অস্ত্র ব্যবহার করেই ডাকাত দলটি দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত ছিল।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বলেন, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও সীমান্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ৬৪ বিজিবি সর্বদা সতর্ক রয়েছে। ভবিষ্যতেও গোয়েন্দা তথ্যভিত্তিক ও সমন্বিত অভিযান অব্যাহত থাকবে।


সেন্ট্রাল পিভটের যুগে দেশ, বদলে যাচ্ছে সেচব্যবস্থা

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
লালপুর (নাটোর) প্রতিনিধি

বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো আধুনিক সেচব্যবস্থা ‘ভ্যালি ইরিগেশন সেন্ট্রাল পিভট’ স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি)। অস্ট্রিয়ার আর্থিক সহায়তায় বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে এই অত্যাধুনিক সেচ প্রকল্প। এটি স্থাপন করা হবে নাটোরের লালপুর উপজেলার নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলের কৃষি খামারে।

বিএডিসি জানায়, বিশ্বের উন্নত কৃষি ব্যবস্থায় বহুল ব্যবহৃত সেন্ট্রাল পিভট ইরিগেশন প্রযুক্তি এবার প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে স্থাপন হতে যাচ্ছে। এ প্রযুক্তির মাধ্যমে নিচ থেকে নয়, পাইপের সঙ্গে যুক্ত স্প্রিংকলারের মাধ্যমে ওপর থেকে জমিতে পানি ছিটানো হবে। বড় আকারের কৃষিজমিকে কম সময় ও কম পানি ব্যবহার করে সেচ দেওয়ার এই আধুনিক ব্যবস্থা দেশের কৃষিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলের ভবানীপুর কৃষি খামারে পরীক্ষামূলকভাবে প্রকল্পটি চালু হলে বিভিন্ন খামার ও বেসরকারি উদ্যোগেও এই প্রযুক্তি ছড়িয়ে পড়বে বলে মনে করছেন কৃষিবিদরা। এতে একই জমিতে একাধিক ফসল ফলানো, চাষের সময় কমানো এবং পানির সাশ্রয় সম্ভব হবে। ফলে খামারের আবাদযোগ্য জমির পরিমাণও বৃদ্ধি পাবে এবং আখসহ অন্যান্য ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।

বিএডিসির বড়াইগ্রাম জোনের সহকারী প্রকৌশলী জিয়াউল হক বলেন, আধুনিক কৃষিতে পানি ব্যবস্থাপনা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। সেন্ট্রাল পিভট প্রযুক্তি সেচ ব্যবস্থাকে দ্রুত, স্বয়ংক্রিয় ও সাশ্রয়ী করবে। এই প্রকল্প সফল হলে দেশের বৃহৎ কৃষিখাতে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।

নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলের মহাব্যবস্থাপক (খামার) মো. বাকি বিল্লাহ বলেন, ‘দেশে প্রথমবারের মতো এই আধুনিক সেচ ব্যবস্থা আমাদের খামারে স্থাপন হচ্ছে। এটা শুধু মিলের জন্য নয়, এ অঞ্চলের কৃষির জন্যও বড় অর্জন। আমরা আশা করছি, সেন্ট্রাল পিভট প্রযুক্তির মাধ্যমে আমরা সময়, শ্রম এবং পানি- তিনটিই সাশ্রয় করতে পারবো। আগে যেখানে সেচ দিতে দুদিন লাগত, সেন্ট্রাল পিভট সেটিতে কয়েক ঘণ্টায় কাজ শেষ করবে। এর ফলে আমরা একই জমিতে আখের সাথে একাধিক সাথী ফসল ফলাতে পারবো।’


বিদ্যুতের লাইনের নিরাপত্তায় ৫ শতাধিক তালগাছ ন্যাড়া

ক্ষোভে ফুঁসছে নওগাঁর মানুষ, প্রশ্নের মুখে বিদ্যুৎ বিভাগ
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নওগাঁ প্রতিনিধি

নওগাঁ বাইপাস সড়কের দুই পাশে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা সারি সারি প্রায় ৫শতাধিক তালগাছের ডালপালা কেটে ন্যাড়া করে দেওয়া হয়েছে। এসব তালগাছের ওপর দিয়ে বিদ্যুতের সরবরাহ লাইনের সুরক্ষা দিতে গাছগুলোর মাথা ন্যাড়া করে দিয়েছে নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের (নেসকো) অফিসের কর্মীরা। বিদ্যুৎ বিভাগের এমন কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দা ও পরিবেশকর্মীরা।

পরিবেশকর্মীরা বলছেন, সরকার যখন পরিবেশ রক্ষা ও বজ্রপাতের হাত থেকে রক্ষা পেতে তালগাছ রোপণের উদ্যোগ নিচ্ছে, সেখানে গাছগুলো এইভাবে ডালপালা কেটে ন্যাড়া করা ঠিক হয়নি। এতে হুমকির মুখে পড়বে পরিবেশের ভারসাম্য। বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করেই বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা সম্ভব ছিল। এতে গাছও বাঁচত, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা পেত। নওগাঁতে গত কয়েক বছরে সরকারি ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে সড়কের দুই ধারে হাজারো তালগাছের চারা রোপণ করা হয়েছে। এর মধ্যেই নওগাঁ পৌরশহরের বাইপাস সড়কের তালগাছের পাতা কেটে দেওয়া হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, সড়কের দুইপাশে বেড়ে ওঠা এসব তালগাছের বয়স প্রায় ২০-৩০ বছর। স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি বিভিন্ন এলাকা থেকে তালের বীজ সংগ্রহ করে সড়কের দুইপাশে রোপণ করে। এখন এসব তাল গাছগুলোর কারনে সড়কটি সৌন্দর্যবর্ধন হয়ে উঠে। গাছগুলোর ডালপালা ছেঁটে ন্যাড়া করে ফেলার কারণে ধীরে ধীরে মরে যেতে পারে গাছগুলো। এর আগেও ডাল কেটে ফেলার কারণে কিছু গাছ মরে গেছে। গাছগুলো বাঁচাতে কারও কোনো উদ্যোগ নেই। এর আগেও সড়ক সংস্কারের নামে নির্বিচারে কাটা হয় গাছ।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নওগাঁ বাইপাস সড়কের রামভদ্রপুর থেকে বটতলী বোয়ালিয়া পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটারে থাকা কয়েক হাজার তালগাছ। এসব গাছের উচ্চতা ১০-১২ ফুট। তালগাছের সামান্য দূরত্বে বিদ্যুতের খুঁটি। এরমধ্যে দুইপাশে থাকা প্রায় ৫শতাধিক তালগাছ মাথা ন্যাড়া অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা সারি সারি এসব গাছে ন্যাড়া করে ফেলায় সড়কটি সৌন্দর্য হারিয়ে গেছে।

নওগাঁ পৌরসভার বোয়ালিয়া এলাকার বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম জানান, নব্বইয়ের দশকে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নওগাঁ-সান্তাহার বাইপাস সড়কের দুই পাশে তালগাছগুলো রোপণ করা হয়। সেই তালগাছগুলো বড় হয়ে বছরের পর বছর ধরে শোভা ছড়াচ্ছে। বছরে দুবার বিদ্যুৎ অফিসের লোকজন এসে সড়কের এক পাশের তালগাছের পাতা ছেঁটে দেন। আর এবার একদম মাথা মুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা বেলাল হোসেন বলেন, ‘এভাবে তালগাছগুলোর মাথা ন্যাড়া করে দেওয়া ঠিক হয়নি বিদ্যুৎ অফিসের লোকদের। এর আগেও কিছু গাছ ন্যাড়া করে দেওয়ায় মরে গেছে। আমরা প্রতিবাদ করলেও তারা শুনে না। প্রশাসনের লোকজন সাথে নিয়ে কাটে। শুধু এখানে নয়, গ্রামের বিভিন্ন জায়গায় বিদ্যুতের লাইনের জন্য গাছ কাটা পড়ে।’

আরেক বাসিন্দা মুনছুর রহমান বলেন, ‘দিন দিন তালগাছ হারিয়ে যাচ্ছে। এই গাছগুলো একদিনে বড় হয়নি? বিদ্যুতের লাইন পরিষ্কারে নামে বিদ্যুতের লোকজন এসে সমানে ডালপালা কেটে একেবারে মাথা ন্যাড়া করে ফেলেছে। তালগাছের ওপর দিয়ে যাওয়া বিদ্যুতের খুঁটিগুলো দুই-তিন হাত সরিয়ে নেওয়া যেত। কিন্তু তারা সেটি না করে গাছগুলোর ক্ষতি করলেন। মনে হচ্ছে তালগাছগুলো পরিকল্পিতভাবে মেরে ফেলার চিন্তা করা হয়েছে। বিদ্যুৎ অফিসের লোকদের আরো ভেবেচিন্তে কাজ করা উচিত ছিল।’

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) নওগাঁ কমিটির সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এভাবে গাছ কাটা উচিত নয়। কারণ, গাছ আমাদের জীবন বাঁচায়। কিন্তু ওনারা (বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজন) কোনো কথা শোনেন না। শুধু এখানে নয়, বিভিন্ন জায়গায় বিদ্যুতের লাইনের জন্য গাছ কাটা পড়ে। গাছ না কেটে বিদ্যুতের খুঁটি একটু সরিয়ে বসালেই এই সমস্যার সমাধান হয়ে যায়।’

স্থানীয় পরিবেশ ও মানবাধিকার কর্মী নাইস পারভীন বলেন, ‘নওগাঁতে প্রতিবছর বজ্রপাতের অনেক মানুষ মারা যায়। সেখানে বজ্রপাত রোধে তালগাছ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এসব গাছ না থাকলে আমাদের বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে। যেখানে সরকার গাছ লাগানোর উদ্যোগ নিচ্ছে সেখানে গাছগুলো ন্যাড়া করে দিয়ে নেসকো পরিবেশ বিধ্বংসী আচরণ করলো। প্রাকৃতিক বিপর্যয় কখনোই আমাদের কাছে কাঙ্খিত নয়। এমন কর্মকান্ড বন্ধ না হলে আন্দোলনের হুশিঁয়ারি দেন এই পরিবেশকর্মী।’

এ সম্পর্কে নেসকোর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মোহাম্মদ কালামের তার ধারণা, তালগাছগুলো লাইন বসানোর পর লাগানো হয়েছে। তিনি বলেন, লাইন সরাতে হলে অন্যের জমির ওপর দিয়ে যাবে হয়তো, তখন আবার স্থানীয় ব্যক্তিরা বাধা দেবেন। লাইন স্থানান্তরের খরচও আছে। বিদ্যুৎ বিভাগের প্রয়োজনে লাইন সরালে বিদ্যুৎ বিভাগ খরচ বহন করে আর স্থানীয় ব্যক্তিদের প্রয়োজনে সরাতে হলে তাদের খরচ বহন করতে হয়।


ছায়ানটে হামলাকারীদের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে ব্যবস্থা : মোস্তফা সরোয়ার ফারুকী

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

ছায়ানটে হামলা করা ব্যক্তিদের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে প্রত্যেককে শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সাংস্কৃতিক বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরোয়ার ফারুকী।

শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) হামলা ও ভাঙচুর হওয়া ছায়ানট পরিদর্শনে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

‎‎ফারুকী বলেন, আমরা যে মুহূর্তে একটা গণতান্ত্রিক দেশের স্বপ্ন দেখছি ঠিক সেই মুহূর্তে এরকম একটা সাংস্কৃতিক সংগঠনে আক্রমণ করাটা কতবড় নিন্দনীয় কাজ হতে পারে তা বলার ভাষা নেই। যারা এই হামলা করেছে তাদের বিভিন্ন রকম সিসি ক্যামেরা দেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শনাক্তের কাজ করছে। তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে। এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। ছায়ানটে হামলার মধ্যে দিয়ে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ছায়ানট সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান, তারা নিজেদের তহবিল থেকে পরিচালিত হয়। তারা সরকারের কাছ থেকে কোনো তহবিল নেয় না।

‎তিনি আরও বলেন, আমরা বলেছি ছায়ানটের যা কিছু ক্ষতিসাধন হয়েছে তারা যদি আমাদেরকে জানায়, আমরা আমাদের তরফ থেকে তাদের সহায়তা করবো। এছাড়াও তাদের নিরাপত্তার বিষয়ে আমাদের কেবিনেট মিটিং ছিল সেখানে নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা যেন আমাদের মূল ফোকাসের জায়গা থেকে হারিয়ে না যাই। আমাদের মূল ফোকাসের জায়গা ছিল, আমরা একটি গণতান্ত্রিক সমাজে যেতে চাই। গণতান্ত্রিক সমাজ বলতে, যেখানে নানান রকম সমাজের মানুষ থাকবে, নানান রুচির মানুষ থাকবে। এ সব মানুষই আমরা একটা জায়গায় সহাবস্থান করবো।

‎সাংস্কৃতিক বিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, আমরা যদি সত্যিকার অর্থে একটা গণতন্ত্র চাই, তাহলে সব সমাজ, সব দলমতের, সব রুচির মানুষের সহাবস্থান করতে দিতে হবে। হয়ত আমার সঙ্গে আপনার অনেক কিছু মিলবেনা কিন্তু আমি আপনি পাশাপাশি বসে যেন এক টেবিলে খেতে পারি এ জায়গাটা আমি চাই।

ছায়ানটে হামলার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিয়ে তিনি বলেন, আমি ছায়ানটের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা তাদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দুই-তিন দিনের মধ্যে খসড়া করে বুঝতে পারবেন টোটাল ক্ষয়ক্ষতিটা কেমন হয়েছে।

‎‎এ সময় তিনি ফারুকী বলেন, এটা অবশ্যই নির্বাচন বানচাল করার জন্য এমন ঘটনা ঘটানো হয়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে প্রতিবাদের কোন সম্পর্ক নেই। আসলে যদি প্রতিবাদ হয়ে থাকে, আমরা কার সঙ্গে প্রতিবাদ করছি, কী জন্য প্রতিবাদ করছি? একটা বিষয় লক্ষ্য করে দেখেন, যে মুহূর্তে জাতি হাদিকে নিয়ে শোকাহত থাকার কথা, যে মুহূর্তে হাদিকে নিয়ে জাতি কথা বলার কথা।


কোস্ট গার্ডের অভিযানে বোট, জাল-মাছসহ আটক ৫৩ জেলে

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড পৃথক দুইটি অভিযান চালিয়ে ৩ টি আর্টিসানাল ট্রলিং বোট, ৩০টি ট্রলিং জাল ও বিপুল পরিমাণ সামুদ্রিক মাছসহ ৫৩ জন জেলেকে আটক করেছে। বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) কোস্ট গার্ড মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সিয়াম-উল-হক এ তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত মঙ্গলবার রাত ১০টায় কোস্ট গার্ড কন্টিনজেন্ট বাঁশখালী চট্টগ্রামের বাঁশখালী থানাধীন খাটখালী নদীর মোহনায় একটি বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে। লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সিয়াম-উল-হক আরও বলেন, অভিযান চলাকালে ওই এলাকা থেকে একটি অবৈধ আর্টিসানাল ট্রলিং বোট জব্দ করা হয়।

পরবর্তীতে জব্দকৃত বোটে তল্লাশি চালিয়ে প্রায় ২৮ লাখ টাকা মূল্যের পাঁচটি ট্রলিং জাল ও ২৫০০ কেজি বিভিন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক মাছসহ ১৬ জন জেলেকে আটক করা হয়। অপরদিকে, গত বুধবার মধ্যরাত ৩টায় কোস্ট গার্ড জাহাজ সবুজ বাংলা কর্তৃক সেন্টমার্টিন ছেড়াদ্বীপ সংলগ্ন উত্তর-পশ্চিম সমুদ্র এলাকায় একটি বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হয়।

এই অভিযানের সময় ওই এলাকা থেকে দুইটি আর্টিসানাল ট্রলিং বোট জব্দ করা হয়। পরবর্তীতে ওই জব্দকৃত বোটে তল্লাশি চালিয়ে প্রায় ৬ কোটি ২৮ লাখ টাকা মূল্যের ২৫টি ট্রলিং জাল ও ৩ হাজার কেজি বিভিন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক মাছসহ ৩৭ জন জেলেকে আটক করা হয়।


কমলগঞ্জে চা-বাগানে প্রাক-বড়দিনের উৎসব

৩ শতাধিক শিশুর রঙিন আনন্দ
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি

পাহাড় ঘেরা সবুজ চা-বাগানের কোলে আজ যেন আনন্দের মেলা বসেছিল। কেক কাটা, নাচ, গান আর শিশুদের উচ্ছ্বাসে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার চাম্পারায় চা-বাগানে উদযাপিত হলো প্রাক-বড়দিনের বিশেষ উৎসব। বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) সকাল ১১টায় উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের মধ্য ও দক্ষিণ বাংলাদেশ শিশু উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্যোগে ৩ শতাধিক শিশুর অংশগ্রহণে এই বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

সকাল থেকেই চাম্পারায় প্রকল্প প্রাঙ্গণ সেজেছিল রঙিন সাজে। বড়দিনের ঐতিহ্যবাহী ক্রিসমাস ট্রি, রঙিন বেলুন আর ঝালর দিয়ে সাজানো অনুষ্ঠানস্থলটি শিশুদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে। উৎসবের আনুষ্ঠানিক সূচনা হয় বড়দিনের বিশেষ কেক কাটার মধ্য দিয়ে। এরপর শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, যেখানে চা-বাগানের শিশুরা তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি ও বড়দিনের গান পরিবেশন করে। ছোট ছোট শিশুদের নাচ আর গানের সুর পুরো চা-বাগান এলাকায় এক উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি করে।

মধ্য ও দক্ষিণ বাংলাদেশ শিশু উন্নয়ন প্রকল্প, চাম্পারায় (বিডি-০৪১৮)এর আয়োজনে অনুষ্ঠিত এই সভায় প্রকল্প চেয়ারম্যান সাজু মারছিয়াং এর সভাপতিত্বে মধ্য ও দক্ষিণ বাংলাদেশ শিশু উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যাবস্থাপক (ভারপ্রাপ্ত), রনি দাস এর সঞ্চালনায় প্রাক-বড়দিনের বিশেষ উৎসবে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ‘ন্যাশনাল টি কো.’ চাম্পারায় চা-বাগানের ব্যবস্থাপক রাহেল রানা।

এ সময় শিশু উন্নয়ন প্রকল্পের পক্ষ থেকে শিশুরা প্রধান অতিথি রাহেল রানা ও বিশেষ অতিথি চ্যারিটেবল ট্রাস্ট অফ সিলেট প্রেসবিটারিয়ান সিনড, পিডিএ চেয়ারম্যান যাকব কিস্কু হাতে সম্মাননা স্বারক তুলে দেওয়া হয়।

এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইসলামপুর ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম, চাম্পারায় চা-বাগান সহকারী ব্যাবস্থাপক মো. ইউসুফ খান, বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি শংকর বোনার্জী, ইউপি সদস্য সজয় কিশোর যাদব, চাম্পারায় প্রেসবিটারিয়ান মন্ডলির ডিকন সানু বিশ্বাস এবং প্রকল্পের এলসিসি কমিটির সদস্যরা। আলোচনা সভা শেষে অতিথিরা প্রকল্পের ৩৩৬ জন শিশু ও ১৫ জন মায়েদের মাঝে বার্ষিক উপহার সামগ্রী বিতরণ করা হয়।

অনুষ্ঠানটি অর্থায়নে কম্প্যাশন ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এবং সহযোগিতায় চ্যারিটেবল ট্রাস্ট অফ সিলেট প্রেসবিটারিয়ান সিনড। অনুষ্ঠানে প্রকল্পের শিশুদের পরিবেশনায় নাচ, গান, কবিতা আবৃত্তি ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক আয়োজন। অনুষ্ঠান শেষে সকলের মঙ্গল কামনা করে এবং বড়দিনের আগাম শুভেচ্ছা জানিয়ে অনুষ্ঠানটি সমাপ্ত হয়।


পাংশার যুবকের মাথাবিহীন মরদেহ নারায়ণগঞ্জে উদ্ধার

পরিবারের দাবি পরকীয়ার জেরে হত্যাকাণ্ড
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
পাংশা (রাজবাড়ী) প্রতিনিধি

রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার এক যুবককে পরিকল্পিতভাবে ফাঁদে ফেলে নৃশংসভাবে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার উপজেলা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে তার মাথাবিহীন মরদেহ।

নিহত যুবক আব্রাহাম খান ওরফে আলিম (২৫) পাংশা পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের চরদুর্লভদিয়া এলাকার বাসিন্দা এবং ওয়াজেদ খানের ছেলে।

নিহতের পরিবার জানায়, আলিম কাতারপ্রবাসী ছিলেন। প্রায় পাঁচ থেকে ছয় মাস আগে দেশে ফেরেন তিনি। গত ১৫ ডিসেম্বর কালুখালী উপজেলার বন্ধু শাকিল শেখের সঙ্গে ঢাকায় কাজের উদ্দেশে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন আলিম। এরপর থেকেই তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায় এবং পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

পরদিন ১৬ ডিসেম্বর সকালে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার মাহমুদপুর ইউনিয়নের শ্রীনিবাসদী এলাকায় একটি রাস্তার পাশে অজ্ঞাত পরিচয়ের মাথাবিহীন মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে ফিঙ্গারপ্রিন্ট পরীক্ষার মাধ্যমে মরদেহটির পরিচয় নিশ্চিত হয়।

পুলিশ জানায়, মরদেহটি ছিল সম্পূর্ণ নগ্ন, গলা কাটা এবং পেটের নাড়িভুঁড়ি বের করা অবস্থায়। পরে মরদেহ উদ্ধারের পাশের একটি খাল থেকে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে নিহতের বিচ্ছিন্ন মাথা উদ্ধার করা হয়।

নিহতের পরিবার অভিযোগ করে বলেছে, পাংশা পৌর শহরের পারনারায়ণপুর এলাকার প্রবাসী মোবারক মন্ডলের স্ত্রী মরিয়ম খাতুনের সঙ্গে আলিমের পরকীয়া সম্পর্ক ছিল। ওই সম্পর্কের জের ধরেই তাকে নারায়ণগঞ্জে ডেকে এনে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, কিছুদিন আগে আলিম ও মরিয়মকে পরকীয়ার ঘটনায় এলাকাবাসী হাতেনাতে ধরে ফেলেন। এরপর মরিয়ম খাতুন তার বাবার বাড়ি নারায়ণগঞ্জে চলে যান। ঘটনার পর পারনারায়ণপুরে মরিয়মের শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি এবং তার সঙ্গে যোগাযোগও সম্ভব হয়নি।

পাংশা মডেল থানার ওসি শেখ মঈনুল ইসলাম জানান, আড়াইহাজার থানা পুলিশের মাধ্যমে ঘটনাটি জানতে পেরে নিহতের পরিবারকে অবহিত করি। মরদেহ গ্রহণের জন্য তারা নারায়ণগঞ্জে গেছেন।

নিহতের পরিবার এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও ফাঁসির দাবি জানিয়েছে।


গাজীপুরে শীতার্ত দুস্থদের মাঝে সেনাবাহিনীর শীতবস্ত্র বিতরণ

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
গাজীপুর প্রতিনিধি

গাজীপুরে দুই শতাধিক সুবিধাবঞ্চিত শীতার্ত ও দুস্থ পরিবারের সদস্যদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। গাজীপুর আর্মি ক্যাম্পের সার্বিক তত্ত্বাবধানে সেনাবাহিনী প্রধানের দিকনির্দেশনায় জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের দুস্থ ও শীতার্ত প্রায় দুই শতাধিক পরিবারের মাঝে শীতবস্ত্র (কম্বল ও সোয়েটার) বিতরণ করা হয়েছে। বুধবার (১৬ ডিসেম্বর) রাতে গাজীপুর আর্মি ক্যাম্প সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সেনাবাহিনীর ১৪ ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. লুৎফর রহমান পিএসসি, জি ওই ইউনিয়নের সুবিধাবঞ্চিত ২০০ টি পরিবারের সদস্যদের হাতে শীতবস্ত্র কম্বল ও সোয়েটার তুলে দেন। এ সময় শীতবস্ত্র পেয়ে শীতার্ত ও দুস্থ জনসাধারণ উচ্ছ্বসিত হন এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

গাজীপুর সেনা ক্যাম্প কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল লুৎফর রহমান বলেন, দেশের যে কোন দুর্যোগ ও সঙ্কটময় সময়ে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ানো বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অন্যতম দায়িত্ব। শীতার্ত মানুষের কষ্ট লাঘবের লক্ষ্যে এ পর্যায়ে প্রায় দুই শতাধিক পরিবারের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে ভবিষ্যতেও দেশের সুবিধাবঞ্চিত জনসাধারণের জন্য সহায়তা কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। পাশাপাশি তিনি সমাজের বিত্তবানদেরও শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।


জামালপুরের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব টিপু আর নেই

সড়ক দুর্ঘটনায় আহত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
জামালপুর প্রতিনিধি

জামালপুরের বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সংগঠক জাকিউল ইসলাম খান টিপু (৪৮) সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) ভোর রাতে তিনি ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। এর আগে তিনি গত ১৪ ডিসেম্বর রাতে সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন।

জাকিউল ইসলাম খান টিপু একাধারে সাংস্কৃতিক সংগঠক, গীতিকার, সুরকার, সঙ্গীত পরিচালকসহ বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। তিনি যুব রেড ক্রিসেন্ট ইউনিট জামালপুরের সাবেক যুব প্রধান, ব্রহ্মপুত্র সাংস্কৃতিক সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, ব্রহ্মপুত্র ব্যান্ডের কর্ণধার, কলতান কচিকাঁচার মেলা জামালপুরের সংগঠক, জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক সংস্থা (জাসাস) জামালপুর জেলা শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক, দৈনিক আজকের জামালপুরের নিজস্ব প্রতিবেদক, স্টুডিও বাজনার স্বত্বাধীকারী ছাড়াও তিনি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক, সামাজিক, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সাথে যুক্ত ছিলেন। তিনি শেরপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাউন্ড অপারেটর হিসেবে কর্মরত ছিলেন। টিপু জামালপুর পৌর শহরের কাঁচারিপাড়া এলাকার মরহুম বীর মুক্তিযোদ্ধা সামছুজ্জোহা খানের কনিষ্ঠ সন্তান। তিনি স্ত্রী ও এক ছেলে সন্তানসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

ব্রহ্মপুত্র সাংস্কৃতিক সংস্থার সাধারণ সম্পাদক তানভীর আহমেদ হীরা জানান, গত রোববার রাতে কর্মস্থল শেরপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমি থেকে মোটরসাইকেলে জামালপুরে নিজ বাড়িতে ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় বাম পা মারাত্মকভাবে জখম হলে জামালপুরে প্রাথমিকভাবে চিকিৎসা দিয়ে ওই রাতেই ঢাকায় উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়। অবশেষে বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) ভোর রাতে তিনি ঢাকায় একটি বেসরকারি হাসাপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।

জাকিউল ইসলাম খান টিপুর মৃত্যুতে শিল্পকলা একাডেমি, বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, প্রেসক্লাব ও নাগরিক সংগঠন গভীর শোক প্রকাশ করে তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেছে। তার এই অকাল মৃত্যুতে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে শোকের পাশাপাশি শূন্যতা তৈরি হয়েছে।


উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে নাফ নদী পাড়ের মানুষের

* গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের প্রভাব পড়েছে সীমান্তবর্তী জনপদে * আরাকান আর্মির সঙ্গে যুদ্ধে তিন রোহিঙ্গা সশস্ত্র দল
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
কক্সবাজার প্রতিনিধি

এক বছর ধরে যে সীমান্তে ছিল আপাত নীরবতা, সেই নীরবতা ভেঙে আবারও আগুনে পুড়ছে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং সীমান্ত। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নতুন করে শুরু হওয়া গোলাগুলি ও মর্টারশেল বিস্ফোরণের সরাসরি প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জনপদে। সীমান্তের ওপার থেকে ছোড়া গুলি এসে পড়ছে এপারের বসতবাড়িতে। আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন নারী-শিশু-বৃদ্ধসহ অন্তত আট হাজার মানুষ। ঝুঁকিতে পড়েছে নাফ নদীনির্ভর হাজারও জেলের জীবন ও জীবিকা।

স্থানীয় সূত্র ও প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী, গত শনিবার ভোর আনুমানিক ৫টা থেকে টানা ৪ ঘণ্টা ধরে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু টাউনশিপের উত্তরাংশে ব্যাপক গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। বলিবাজার, সায়েরবিল এবং নাফ নদীর তোতার দ্বীপকেন্দ্রিক এলাকায় এই সংঘর্ষ হয়। শব্দের কম্পনে কেঁপে ওঠে বাংলাদেশের হোয়াইক্যং সীমান্তের জনবসতি। ঘুম ভেঙে আতঙ্কে দৌড়ে ঘরের ভেতরে আশ্রয় নেয় শিশুরা, দরজা-জানালা বন্ধ করে পরিবারসহ এক কোণে গাদাগাদি করে বসে থাকেন মানুষ।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকাগুলো পুনর্দখলের চেষ্টা করছে মিয়ানমারের জান্তা বাহিনী। একই সঙ্গে আরাকান আর্মির সঙ্গে সশস্ত্র সংঘর্ষে জড়িয়েছে তিনটি রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠী—আরাকান স্যালভেশন আর্মি (আরসা), আরাকান রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরআরএসও) এবং নবী হোসেনের নেতৃত্বাধীন একটি সশস্ত্র দল। এসব গোষ্ঠীর সংঘর্ষের মূল কেন্দ্রবিন্দু নাফ নদীর বুকে অবস্থিত তোতার দিয়া, হাসিমের দিয়া ও হসের দিয়া নামের কয়েকটি দ্বীপ।

স্থানীয়রা বলছেন, তোতার দিয়া বর্তমানে আরাকান আর্মির দখলে। এই দ্বীপকে কেন্দ্র করে অবৈধ অস্ত্র, মাদক ও মানবপাচারের রুট সক্রিয় থাকার অভিযোগ রয়েছে। দ্বীপটির নিয়ন্ত্রণ নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে প্রতিদ্বন্দ্বী গোষ্ঠীগুলো। ফলে দিন দিন সংঘর্ষের মাত্রা বাড়ছে, যার সরাসরি অভিঘাত পড়ছে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে।

প্রসঙ্গত, টানা ১১ মাসের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর গত বছরের ৮ ডিসেম্বর মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীকে সরিয়ে রাখাইন রাজ্যের মংডু টাউনশিপের প্রায় ৮০ শতাংশ এলাকা দখলে নেয় আরাকান আর্মি। এরপর প্রায় এক বছর সীমান্তে বড় ধরনের কোনো বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়নি। সেই সময়টাতে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছিলেন সীমান্তবাসী। কিন্তু সেই স্বস্তি ছিল সাময়িক।

নতুন করে শুরু হওয়া গোলাগুলিতে আবারও দুঃস্বপ্নে ফিরেছে সীমান্তের মানুষ। গত এক মাসেই অন্তত চার থেকে পাঁচবার মিয়ানমার থেকে ছোড়া গুলি এসে পড়েছে হোয়াইক্যংয়ের বিভিন্ন গ্রামে।

হোয়াইক্যং সীমান্তের বালুখালী গ্রামের বাসিন্দা শামসুন নাহার বলেন, ‘হঠাৎ গুলির শব্দ শুরু হলে শিশুরা কান্না করতে করতে ঘরে ঢুকে পড়ে। আমিও ভয়ে দরজা বন্ধ করে দিই। পরে বাইরে গিয়ে দেখি, বাড়ি থেকে কিছু দূরে বেড়িবাঁধে দাঁড়িয়ে মিয়ানমারের দিকে গুলি ছোড়া হচ্ছে। সেই দৃশ্য দেখে শরীর কেঁপে ওঠে। গুলি থামার পর দেখি, আমার ঘরের দেওয়ালে ফাটল। এখন রাতে ঘুম আসে না।’

একই গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম জানান, একটি গুলি এসে তার ঘরের টিনের চালে আঘাত করে। চাল ছিদ্র হয়ে গুলিটি ঘরের ভেতরে পড়ে। অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচেছেন পরিবারের সদস্যরা। সরওয়ার আলম বলেন, ‘শব্দ শোনে সন্তানদের নিয়ে ঘরের এক কোণে আশ্রয় নিয়েছিলাম। হঠাৎ বিকট শব্দ—গুলিটা ছাদ ভেদ করে ভেতরে পড়ে। ওই মুহূর্তে মনে হয়েছিল, এবার শেষ।’

নাফ নদীঘেঁষা হোয়াইক্যং এলাকায় প্রায় ১,২০০ জেলে পরিবার রয়েছে। এর মধ্যে ৪০০ থেকে ৫০০ পরিবার সরাসরি সীমান্তের কাছাকাছি বসবাস করে। গোলাগুলির কারণে তারা এখন নদীতে নামতে পারছেন না। জেলে হাফিজ উল্লাহ বলেন, ‘গুলির শব্দ শুরু হলে বিজিবি আমাদের ঘর থেকে বের হতে মানা করে। নদীতে নামার সাহস নেই। পেট চালানোর পথ বন্ধ হয়ে গেছে।’

হোয়াইক্যংয়ের কলেজপড়ুয়া ছাত্র মো. জসীম উদ্দিন বলেন, ‘ওরা নিজেদের দেশের ভেতরে যুদ্ধ করুক, তাতে আমাদের কিছু বলার নেই। কিন্তু আমাদের সীমান্ত ব্যবহার করে গুলি ছুড়বে কেন? সেই গুলি এসে পড়ছে আমাদের বাড়িতে। বাংলাদেশ কি এ বিষয়ে কোনো প্রতিবাদ জানাচ্ছে না?’

তিনি আরও বলেন, ‘গোলাগুলির সময় সীমান্তে নিরাপত্তা বাহিনীর নড়াচড়া কমে গেলে সাধারণ মানুষের আতঙ্ক আরও বেড়ে যায়।

হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের ২ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সিরাজুল মোস্তফা লালু জানান, উত্তরপাড়া, কোনাপাড়া, তুলাতলী, খারাইংগা ঘোনা ও বালুখালী গ্রামে বসবাসকারী অন্তত আট হাজার মানুষ চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। ‘গুলিতে টিনের চাল ফুটো হয়ে যাচ্ছে। মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে,’ বলেন তিনি।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইমামুল হাফিজ নাদিম জানান, সীমান্ত এলাকায় অপ্রয়োজনে চলাচল না করতে স্থানীয়দের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিজিবির সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

এদিকে উখিয়াস্থ ৬৪ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জসিম উদ্দিন বলেন, ‘হোয়াইক্যং সীমান্ত পরিস্থিতি পরিদর্শন করা হয়েছে এবং নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। বিজিবি সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।

সব মিলিয়ে, মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাতের আগুন আবারও ছড়িয়ে পড়ছে বাংলাদেশের সীমান্তে। গোলার শব্দে কাঁপছে জনপদ, থমকে যাচ্ছে জীবিকা, আতঙ্কে বড় হচ্ছে শিশুদের চোখ।’


সাতক্ষীরায় পুলিশ পাহারায় অবশেষে রাস্তার কাজ শুরু

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

বিভিন্ন অজুহাতে চাঁদা দাবিসহ নানা কারণে সাতক্ষীরা উন্নয়ন কার্যক্রম হুমকির মুখে পড়েছে। দলীয় বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা পরিচয়ে এসব কার্যক্রম করছে এক শ্রেণির অসাধু ব্যক্তিরা। ঠিকাদারদের দাবি জেলার প্রায় সকল উপজেলায় কাজ করতে গেলে নিবর চাঁদাবাজির শিকার হতে হচ্ছে। ফলে জেলার উন্নয়ন কাজ ব্যহত হচ্ছে। ইতোমধ্যে চাঁদার কারণে পুলিশ পাহারায় কাজ বাস্তবায়ন করার ঘটনা ঘটেছে।

ঠিকাদাররা জানায়, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বদ্ধিপুর কলনি এলাকায় সড়ক নির্মাণকাজে নিয়োজিত ঠিকাদার মেসার্স ছয়ানী এন্টার প্রাইজের মালিক জাহিদ হাসানকে লাঞ্ছিত করা হয়।

এ ঘটনার গত বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) সকালে পুলিশ পাহারায় পুরোনো সাতক্ষীরা সওজ থেকে গোবিন্দপুর বাজার ভায়া জেয়ালা সড়কের কার্পেটিং কাজ করতে বাধ্য হয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

ঠিকাদারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীর নির্দেশক্রমে উপজেলা প্রসাশনের সহতায় পুলিশ পাহারায় কাজ শেষ করেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। ওই কাজের প্রাক্কলিত ব্যয় ছিল ১ কোটি ১২ লাখ ৮ হাজার ৬৯৩ টাকা।

ঠিকাদার জাহিদ হাসান বলেন, ‘আমরা সরকারের উন্নয়ন কাজের অংশীদার আমাদের কাজে বাধা দেওয়া মানে দেশকে পিছিয়ে নিয়ে যাওয়া। বর্তমানে সাতক্ষীরা বিভিন্ন স্থানে কাজ করতে গেলে নিরব চাঁদাবাজির শিকার হতে হচ্ছে আমাদের। আমার কাছে টাকা চেয়েছিল তাদের টাকা না দেওয়ায় রাস্তা খুড়ে দেয়। অল্প কিছু কাজ বাকি থাকতে আমাকে চরমভাবে হেনস্তা করেছে। পরে পুলিশ পাহারায় কাজটি শেষ করা হয়েছে।’

সাতক্ষীরা সদর থানার ওসি মাসুদুর রহমান জানান, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে জানতে পারি বদ্দিপুর সরকারি কাজে বাধা দিচ্ছে কিছু বখাটে, পরবর্তীতে আমার একজন সাব-ইনেন্সপেক্টর ও দুজন কনস্টেবল পাঠিয়ে কাজ শেষ করার ব্যবস্থা করি।

এ নিয়ে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা প্রকৌশলী ইয়াকুব আলী জানান, কর্পেটিং চলাকালীন সময়ে স্থানীয় কিছু বখাটে ছেলেরা ঠিকাদারের কাছে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক ওই চাঁদার টাকা না দেওয়ায় নির্মাণকৃত সড়কটি সাবল দিয়ে খুড়ে দেয়।

এ সময় বাঁধা দিতে গেলে তারা অফিস এবং ঠিকাদারের লোকজনকে নানা ধরনের হুমকি দেয়। পরবর্তীতে তাদের আক্রমণাতক্ত অবস্থা দেখে উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় সাতক্ষীরা সদর থানার পুলিশ সদস্যদের পাহারায় কাজটি শেষ করা হয়।


কুমিল্লায় বাস ধর্মঘট, চরম ভোগান্তিতে যাত্রীরা

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
কুমিল্লা প্রতিনিধি

দাবি আদায়ে কুমিল্লা নগরীর তিনটি বাসটার্মিনাল থেকে সব ধরনের বাস চলাচল বন্ধ রেখেছে কুমিল্লা বাস মালিক সমিতি। এতে নগরীর প্রায় ৪০টি সড়কে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা।

বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) সকাল থেকে নগরীর জাঙ্গালিয়া, শাসনগাছা ও চকবাজার বাসটার্মিনাল থেকে কুমিল্লা-ঢাকা, কুমিল্লা-চট্টগ্রাম, কুমিল্লা-সিলেট, কুমিল্লা-চাঁদপুরসহ অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে যায়নি।

জানা গেছে, জাঙ্গালিয়া বাসটার্মিনাল থেকে কুমিল্লা-চাঁদপুর সড়কে আইদি পরিবহনের বাস চলাচল বন্ধের দাবিতে এ ধর্মঘটের ডাক দেয় বাস মালিক সমিতি।

পরিবহন নেতারা জানান, কুমিল্লা নগরীর তিনটি বাসটার্মিনাল থেকে প্রতিদিন কয়েক হাজার বাস ও মিনিবাস প্রায় ৪০টি রুটে চলাচল করে। ২০২৩ সালে চাঁদপুর জেলা প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে আইদি পরিবহন কুমিল্লা-চাঁদপুর রুটে চলাচলের অনুমতি পায়।

আইদি পরিবহনের চেয়ারম্যান মীর পারভেজ আলম অভিযোগ করেন, চাঁদপুর জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে বাস সার্ভিস চালু করলেও শুরু থেকেই কুমিল্লা বাস মালিক গ্রুপের একটি সিন্ডিকেট তাদের চলাচলে বাধা দেয়। এ কারণে কুমিল্লা জেলা প্রশাসন থেকে রুট পারমিট না পেয়ে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে জাঙ্গালিয়া বাসটার্মিনাল ছেড়ে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড থেকে বাস সার্ভিস চালু করা হয়। আইনি কোনো বাধা না থাকলেও এখনো অনাপত্তিপত্র দেওয়া হয়নি বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

অন্যদিকে কুমিল্লা বাস মালিক সমিতির কার্যকরী সভাপতি মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আইদি পরিবহন চাঁদপুর জেলা প্রশাসন থেকে পারমিট পেলেও কুমিল্লা থেকে রুট পারমিট পায়নি। তবুও তারা বাসটার্মিনাল ব্যবহার করতে চাচ্ছে। এর আগেও কয়েক দফা বাধা দেওয়ার পর বিজয় দিবসে হঠাৎ করে কিছু বাসটার্মিনালে আনা হয়। (গত) বুধবার ও (গতকাল) বৃহস্পতিবারও বাস আনার চেষ্টা করা হলে বাধ্য হয়ে তিনটি টার্মিনাল থেকে বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়।’

এদিকে হঠাৎ বাস চলাচল বন্ধ থাকায় গন্তব্যে যেতে না পেরে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। অনেকেই বিকল্প যানবাহনে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে যাত্রা করতে বাধ্য হচ্ছেন।

এদিকে কুমিল্লায় দাপ্তরিক কাজ শেষে চট্টগ্রাম যাওয়ার জন্য জাঙালিয়া বাসস্ট্যান্ডে আসেন আবদুল হাই। তিনি বলেন, ‘পরিবহন ধর্মঘটের কারণে আজ (বৃহস্পতিবার) তার বাসায় যাওয়া প্রায় অনিশ্চিত।’


পার্কিং নেই, লাইসেন্স নবায়ন অথচ জরিমানা রোগীদের

সিরাজগঞ্জের হেল্থ এইড ও আভিসিনা হাসপাতাল ও প্যাথলজি
আপডেটেড ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১৮:৫১
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি

সিরাজগঞ্জ শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত হেল্থ এইড ও আভিসিনা হাসপাতাল ও প্যাথলজিতে নেই নিজস্ব ও কার্যকর কোন পার্কিং ব্যবস্থা। অথচ নিয়মিতভাবে লাইসেন্স নবায়ন ও প্রত্যয়ন দিয়ে যাচ্ছে সিরাজগঞ্জ পৌরসভা ও সিভিল সার্জন কার্যালয়। ফলে প্রতিদিনই চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও স্বজনরা।

বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতাল দুটির সামনে পার্কিং নিষেধের সাইনবোর্ড টানানো থাকলেও রাস্তার দুপাশে শতশত মোটরসাইকেল ও যানবাহন অবৈধভাবে পার্কিং করে রাখা হচ্ছে। এতে করে সড়ক সংকুচিত হয়ে পড়ছে এবং প্রায়ই সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট।

আভিসিনা হাসপাতালের গার্ড মুসলিম উদ্দিন জানান, আমি প্রায় দুই বছর ধরে এখানে কর্মরত। এই সময়ে হাসপাতালের ভেতরে কোন পার্কিং ব্যবস্থা চোখে পড়েনি। সবসময় গাড়ি বাহিরেই পার্কিং হয়। আমাদের এখানে পার্কিং নিষেধ লেখা সাইনবোর্ডও রয়েছে।

হেলথ এইড প্যাথলজির ম্যানেজার সংগ্রাম বলেন, অফিসের সামনে পার্কিং নিষেধের সাইনবোর্ড লাগানো আছে। পাশের পুরাতন ভবনে পার্কিংয়ের জায়গা আছে। তবে ওই ভবনে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে বর্তমানে নির্মাণকাজ চলমান থাকায় কোন ধরনের পার্কিং সুবিধা নেই।

এ অবস্থায় গত বুধবার আভিসিনা হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা একাধিক রোগীর মোটরসাইকেল অবৈধ পার্কিংয়ের দায়ে জব্দ করে সিরাজগঞ্জ পৌরসভা। পরে জরিমানা হিসেবে মোট ১০ হাজার টাকা আদায় করা হয়।

চিকিৎসা নিতে আসা আবুল হাসেম বলেন, প্রতিদিন জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে হাজার হাজার মানুষ সিরাজগঞ্জ শহরে চিকিৎসা নিতে আসে। কিন্তু বেশিরভাগ হাসপাতাল ও প্যাথলজির নিজস্ব পার্কিং নেই। গাড়ি রাস্তায় রেখে যেতে হয়, এতে চুরি হয়, জরিমানা হয়, আর শহরে যানজট লেগেই থাকে। হাসপাতালের অব্যবস্থাপনার দায়ে জরিমানা দিতে হচ্ছে রোগীদের- এটা কেমন বিচার?

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, হাসপাতাল ও প্যাথলজি পরিচালনার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, কলকারখানা ও মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রসহ নিজস্ব পার্কিং ব্যবস্থা থাকা বাধ্যতামূলক। পাশাপাশি পর্যাপ্ত খোলামেলা জায়গা, নার্স-ডাক্তার অনুপাত ও আধুনিক অপারেশন থিয়েটার থাকার কথা। এসব শর্ত পূরণ সাপেক্ষেই পৌরসভার ট্রেড লাইসেন্স এবং সিভিল সার্জনের মাধ্যমে স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স নবায়ন হওয়ার নিয়ম।

তবে বাস্তব চিত্র বলছে ভিন্ন কথা। বছরের পর বছর ধরে এসব শর্ত লঙ্ঘন করেও কীভাবে লাইসেন্স নবায়ন হচ্ছে- তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সচেতন মহল।

এ বিষয়ে আভিসিনা হাসপাতালের ম্যানেজার আতাউর রহমান বলেন, আমাদের নিজস্ব পার্কিং ব্যবস্থা রয়েছে। তবে বাইরের লোকজন ব্যবহার করায় সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছিল। গতকাল থেকে আবার চালু করা হয়েছে।

সিরাজগঞ্জ পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, ইতোপূর্বে আভিসিনা হাসপাতালকে জরিমানা করা হয়েছে। তবে রোগীদের জরিমানা কেন করা হলো- এ প্রশ্নের কোন সুনির্দিষ্ট উত্তর দিতে পারেননি তিনি।

সিরাজগঞ্জ সিভিল সার্জন ডা. নুরুল আমীন বলেন, গত সপ্তাহে আভিসিনা হাসপাতালকে লাইসেন্স নবায়ন না করার কারণে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। পার্কিংসহ অন্যান্য বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এই অভিযান সারা জেলায় চলমান থাকবে।


banner close