সিলেটে মা ও ছেলে হত্যা মামলায় দুইজনের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার দুপুরে সিলেটের অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক নুরে আলম ভূঁইয়া এ রায় দেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালে সিলেট নগরীর মীরাবাজার এলাকায় মা রোকেয়া বেগম ও তার ছেলে রবিউল ইসলামকে হত্যা করে বাড়ির গৃহকর্মী তানিয়া ও তার কথিত প্রেমিক মামুন। কুপিয়ে জখম করে রোকেয়া বেগমের ছোট মেয়ে রাইসাকেও। খুন করার আগে রাতে খাবারের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন করে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করে, পরে সকালে দুজনের মরদেহ ও রাইসাকে আহতাবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। দীর্ঘ বিচারিক-প্রক্রিয়া শেষে বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণা করা হয়।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জোবায়ের বখত জুবের বলেন, রায়ে তানিয়া ও তার প্রেমিক মামুনকে ফাঁসির আদেশ দেন বিচারক। এ ছাড়া মামুনকে দশ হাজার টাকা ও অনাদায়ে এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়।
গৃহকর্ত্রী রোকেয়া বেগমের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে দ্বন্দ্ব থেকেই গৃহকর্মী তানিয়া তাকে হত্যা করে বলে জানান বাদীপক্ষের আইনজীবী মিসবাউর রহমান আলম।
এদিকে এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিলের কথা জানিয়েছেন আসামিপক্ষের আইনজীবী দিদার আহমেদ।
তিন জেলায় পলিথিনবিরোধী অভিযান চালিয়ে ৮১০ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে পরিবেশ অধিদপ্তরের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এসময় কয়েকটি কারখান বন্ধও করে দেওয়া হয়।
সোমবার (২১ জুলাই)পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা দীপংকর বরের পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা যায়।
এতে বলা হয়, বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ (সংশোধিত-২০১০) এর ৬(ক) ধারা লঙ্ঘনের দায়ে পিরোজপুর, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ জেলায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে নিষিদ্ধ ঘোষিত পলিথিন উৎপাদন, বিক্রয়, সরবরাহ ও বাজারজাতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অভিযানে তিন জেলায় ৩টি ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ২টি মামলায় সর্বমোট ৩৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। পাশাপাশি ৮১০ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন, ২টি ওজন মাপার যন্ত্র, ৩টি পলিথিন উৎপাদন মেশিন এবং ১টি বৈদ্যুতিক মিটার জব্দ করা হয়।
এতে আরও বলা হয়, গাজীপুরে অভিযানে একটি অবৈধ পলিথিন কারখানার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করাসহ তা বন্ধ করে দেওয়া হয়।
অভিযানের অংশ হিসেবে কয়েকটি সুপারশপসহ স্থানীয় দোকানমালিক ও সাধারণ জনগণকে নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যবহারের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সচেতন করা হয় এবং ভবিষ্যতে আইন লঙ্ঘন না করার জন্য সতর্ক করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে পলিথিন দূষণ রোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং পরিবেশবান্ধব বিকল্প ব্যবহারে উৎসাহ দেওয়া হয়।
রাজধানীর উত্তরায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তে বহু হতাহতের ঘটনায় ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরের পূর্বনির্ধারিত সমাবেশ স্থগিত করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।
সোমবার (২১ জুলাই) বিকাল ৫টার দিকে এনসিপি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ইহসানুল মাহবুব জোবায়ের এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, ‘উত্তরায় মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনার পর পুরো জাতি শোকাহত। আমাদের কেন্দ্রীয় নেতারা খাগড়াছড়ির কর্মসূচি শেষে ফেনীর উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন। ইতোমধ্যে অনেক নেতাকর্মী ফেনীর সমাবেশস্থলে পৌঁছেও গিয়েছিলেন। তবে এমন পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করা সমীচীন নয়।’
তিনি আরও জানান, কেন্দ্রীয় নেতারা এরমধ্যে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন। আগামীকাল নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরে অনুষ্ঠিতব্য কর্মসূচিও স্থগিত করা হয়েছে।
আন্তঃবাহিনীর জনসংযোগ দপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে এখন পর্যন্ত অন্তত ১৯ জন নিহত ও ১৬৪ জন আহত হয়েছেন। বিমানটির পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলাম মারা গেছেন।
রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় এখন পর্যন্ত জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে সত্তরের অধিক আহত ভর্তি আছেন। ক্রমাগত অ্যাম্বুলেন্সে করে রোগী আসছে। হাসপাতালের সামনে ভিড় করেছেন দগ্ধদের স্বজনেরা। পাশাপাশি উৎসুক জনতার ভিড় রয়েছে চোখে পড়ার মতো।
এ ছাড়া, হাসপাতালে চলছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কার্যক্রম। বর্তমানে, হাসপাতালে পর্যাপ্ত পজিটিভ ডোনার থাকলেও নেগেটিভ ব্লাডের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হাসপাতালে ক্রমাগত রোগী আসছেন। এজন্য অনেক রক্ত প্রয়োজন।
তানভীর হাসান সিক্ত নামের একজন স্বেচ্ছাসেবক বলেন, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে বিভিন্ন জায়গা থেকে রক্তদাতারা ছুটে আসছেন। পর্যাপ্ত ডোনার মজুত থাকায় আপাতত পজিটিভ রক্ত প্রয়োজন নেই। তবে, নেগেটিভ রক্ত সংকট। তাই, আমরা নেগেটিভ ব্লাড ডোনারদের রক্ত দিতে আহ্বান জানাই। এছাড়াও, অনেক ডোনার নাম্বার দিয়ে গেছেন বলে জানান তিনি।
ইনস্টিটিউটের ভর্তি তালিকায় এই ৭০ জনের মধ্যে কয়েকজনের নাম হাতে এসেছে। তারা হলেন—শামীম ইউসুফ (১৪), মাহিন (১৫), আবিদ (১৭), রফি বড়ুয়া (২১), সায়েম (১২), সায়েম ইউসুফ (১৪), মুনতাহা (১১), নাফি (১০), মেহেরিন (১২), আয়মান (১০), জায়েনা (১৩), ইমন (১৭), রোহান (১৪), আবিদ (৯), আশরাফ (৩৭), ইউশা (১১), পায়েল (১২), আলবেরা (১০), তাসমিয়া (১৫), মাহিয়া, অয়ন (১৪), ফয়াজ (১৪), মাসুমা (৩৮), মাহাতা (১৪), শামীম, জাকির (৫৫), নিলয় (১৪), সামিয়া।
সরেজমিনে হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, জরুরি বিভাগে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে রোগীদের ওয়ার্ডে পাঠানো হচ্ছে। সেখানেও অনেক ভিড়। ভিড়ের কারণে সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকেরা।
দগ্ধদের দেখতে হাসপাতালে ছুটে আসেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। এ ছাড়া জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমানও দগ্ধদের দেখতে হাসপাতালে আসেন।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বার্ন ইনস্টিটিউটের জরুরি বিভাগের সামনে পুলিশ, র্যাব, আনসার ও ফায়ার সার্ভিসের অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
এর আগে, এই হাসপাতাল পরিদর্শনে এসে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান বলেছেন, এখন পর্যন্ত এখানে ৬০ জনের মতো ভর্তি করা হয়েছে, আরও ১০–১৫ জন ভর্তি করার মতো সক্ষমতা এখানে আছে। এরপর ঢাকা মেডিকেল প্রস্তুত আছে। এরপর যারা আসবেন, সেসব রোগীদের ঢাকা মেডিকেল কলেজে নেওয়া হবে।
আইএসপিআর-এর তথ্য অনুযায়ী, বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৯ জন নিহত এবং ১৬৪ জন বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
রাজধানীর উত্তরায় বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমানের দুর্ঘটনায় ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলাম মারা গেছেন। এই দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত অন্তত ১৯ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়াও অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন।
সোমবার (২১ জুলাই) বিকালে ফায়ার সার্ভিসের ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর শাহজাহান শিকদার এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, উদ্ধার কাজে ফায়ার সার্ভিসের ৯টি ইউনিট ও ৬টি অ্যাম্বুলেন্স কাজ করছে।
ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলামের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে আন্তঃবাহিনীর জনসংযোগ দপ্তর (আইএসপিআর)। তার গ্রামের বাড়ি রাজশাহীতে।
ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির বিমানটিকে ঘনবসতি থেকে জনবিরল এলাকায় নেওয়ার চেষ্টা করেছেন বলে জানিয়েছে আইএসপিআর।
আইএসপিআর বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি এফটি-৭ বিজিআই যুদ্ধবিমান নিয়মিত প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে আজ সোমবার (২১ জুলাই) বেলা ১টা ৬ মিনিটে ঢাকার কুর্মিটোলাস্থ বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ঘাঁটি এ কে খন্দকার থেকে উড্ডয়নের পর যান্ত্রিক ত্রুটির সম্মুখীন হয়। দুর্ঘটনা মোকাবিলায় এবং বড় ধরণের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে ওই বিমানের পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলাম বিমানটিকে ঘনবসতি এলাকা থেকে জনবিরল এলাকায় নিয়ে যাবার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত বিমানটি ঢাকার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল এবং কলেজের দোতালা একটি ভবনে অনাকাঙ্খিত দুর্ঘটনায় বিধ্বস্ত হয়েছে।
এই আকস্মিক দুর্ঘটনায় তৌকিরসহ ১৯ জন নিহত এবং ১৬৪ জন আহত হয়েছেন। আহত সকলকে বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টারসহ অ্যাম্বুলেন্সের সহায়তায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) এবং নিকটস্থ হাসপাতালে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার জন্য দ্রুত স্থানান্তর করা হচ্ছে।
অনাকাঙ্খিত দুর্ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে হতাহতদের সর্বাত্মক চিকিৎসাসহ সার্বিক সহযোগিতায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনী তৎপর রয়েছে বলে জানানো হয়।
এতে আরও বলা হয়, বিমান বাহিনীপ্রধান সরকারি সফরে দেশের বাইরে থাকায়, সহকারী বিমান বাহিনী প্রধান (প্রশাসন), বিমান বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ও উদ্ধারকারী দল দুর্ঘটনাস্থলে উপস্থিত রয়েছেন।
সেনাবাহিনী প্রধান, প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগসহ সামরিক বাহিনীর এবং ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন ।
সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, পুলিশ, র্যাব এবং ফায়ার সার্ভিস দুর্ঘটনাস্থলে উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে এবং পরিস্থিতি উত্তরণের সর্বাত্মক চেষ্টা করছে।
দুর্ঘটনার কারণ উদঘাটনে ইতোমধ্যে বিমান বাহিনীর একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ির মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিধ্বস্ত হয়ে হতাহতদের সহযোগিতায় জামায়াতে ইসলামী ২৪ ঘণ্টা প্রস্তত আছে বলে জানিয়েছেন দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান।
সোমবার (২১ জুলাই) বিকালে জাতীয় বার্ণ ইন্সটিটিউটে আহতদের দেখতে গিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
পরিদর্শনে গিয়ে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমরা এখানে এসে আহত পেয়েছি ৫১ জনকে। এর মধ্যে সাত-আটজন বাদে বাকি সবার অবস্থা গুরুতর।
তিনি বলেন, আমরা আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে এখানকার কর্তৃপক্ষকে আশ্বস্ত করেছি- যা কিছু লাগে আমরা আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে দেওয়ার জন্য ২৪ ঘণ্টা দু পায়ে দাঁড়িয়ে প্রস্তুত আছি।
তিনি বলেন, কর্তৃপক্ষ তাদের জানিয়েছেন আপাতত যা প্রয়োজন- তা পর্যাপ্ত আছে। পরবর্তীতে প্রয়োজন হলে যোগাযোগ করবেন।
তিনি দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়ে বলেন, আল্লাহ যেন জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা সন্তানদের সুস্থ করে দেন। আহত ও নিহতদের অভিভাবকদের ধৈর্যধারণের জন্য দোয়া করেন জামায়াত আমির।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমরা দুর্ঘটনায় নিহত প্রত্যেকটি পরিবারে যাওয়ার চেষ্টা করব।
তিনি বলেন, চিকিৎসক ও অভিভাবকদের সহযোগিতা করার জন্য তাদের সঙ্গে আমরা গায়ে গায়ে লেগে থাকব। ছাত্রশিবিরও পাশে আছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
জামায়াত আমির বলেন, চিকিৎসা অঙ্গনের দলের সমস্ত জনশক্তিকে সেখানে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আমাদের যা দরকার সবকিছুর জন্য আমরা প্রস্তুত। এর বিনিময়ে আল্লাহ যেন আহত ও পুড়ে যাওয়া আমাদের কলিজার সন্তানগুলোকে আমাদের বুকে আবার সুস্থ হালতে ফিরিয়ে দেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সভাপতি নুরুল ইসলাম বুলবুল, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ ও সহকারী সেক্রেটারি দেলাওয়ার হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি এস এম ফরহাদ প্রমুখ।
ঢাকার উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুলে বিমান দুর্ঘটনার পর নিখোঁজ শিক্ষার্থীদের খোঁজে জরুরি যোগাযোগ নম্বর প্রদান করেছে সরকার।
নম্বরগুলো হলো- মিলিটারি রেসকিউ ব্রিগেড- ০১৭৬৯০২৪২০২, সিএমএইচ বার্ন ইউনিট- ০১৭৬৯০১৬০১৯, সিএমএইচ জরুরি- ০১৭৬৯০১৩৩১১, মাইলস্টোন স্কুলের অ্যাডমিন অফিসার- ০১৮১৪৭৭৪১৩২, এর ভাইস প্রিন্সিপাল- ০১৭৭১১১১৭৬৬।
এছাড়াও, জাতীয় জরুরি নম্বর- ৯৯৯ বাংলাদেশ পুলিশের জরুরি সেল থেকে কলকারীদের বার্ন ইউনিটগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেবে।
রাজধানীর উত্তরায় মাইলষ্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে আগুনে দগ্ধ হয়ে অসংখ্য অনেক শিক্ষার্থীর হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সোমবার (২১ জুলাই) এক শোক বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘রাজধানীর উত্তরায় বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে মাইলষ্টোন স্কুলের শিক্ষার্থীদের হতাহতের ঘটনা অত্যন্ত মর্মান্তিক ও বেদনাদায়ক। মর্মস্পর্শী ও হৃদয়বিদারক এই দুর্ঘটনায় শোক জানানোর ভাষা আমার জানা নেই। আমি নিহত ও আহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সহমর্মিতা জ্ঞাপন করছি, আল্লাহ যেন তাদেরকে এই বিশাল শোক সহ্য করার ক্ষমতা দান করেন।
তিনি বলেন, ‘আমি বিমান দুর্ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করছি। আমি বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণকারী শিক্ষার্থীদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত এবং যে সমস্ত শিক্ষার্থী আগুনে দগ্ধ হয়ে গুরুতর আহতাবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে তাদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি।’
তিতাস গ্যাস কর্তৃক গ্যাসের অবৈধ ব্যবহার শনাক্তকরণ এবং উচ্ছেদ অভিযান কার্যক্রম চলমান রয়েছে। নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে গত ২০ জুলাই (রবিবার) ২০২৫ তারিখে জনাব মো.ওমর ফারুক, বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়-এর নেতৃত্বে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিসন এন্ড ডিষ্ট্রিবিউশন পিএলসি -এর জোবিঅ-মেঘনাঘাট -এর আওতাধীন চর বাউশিয়া ফরাজিকান্দি (পাখির মোড়, ইন্জিনিয়ারিং স্টাফ কলেজের বিপরীতে), চর বাউশিয়া পশ্চিমকান্দি (দাউদকান্দি ফিলিং ষ্টেশনের বিপরীতে), ভাটেরচর নতুন রাস্তা, গজারিয়া, মুন্সিগঞ্জ এলাকার ৩টি স্পটে অভিযান পরিচালিত হয়েছে। অভিযানে ৩টি চুন কারখানা (১২ টি ভাট্টি বিশিষ্ট)ও এয়ার মিক্স বার্ণার ২০টি এবং ৪০০ ফুট হোজ পাইপ উৎস স্থলে কেটে টুকরো করে বিনষ্ট করা হয়েছে । এতে মাসিক ৩,৯১,৪৫০/- টাকার গ্যাস চুরি রোধ করা সম্ভব হয়েছে। চুন কারখানার মালিকদের স্পটে না পাওয়ায় জেল/জরিমানা আরোপ করা সম্ভব হয়নি। তবে কারখানার মালিক/ কারখানার পরিচালকদের নামে গজারিয়া থানায় এজাহার দাখিল করা হয়েছে।
একই দিনে, জনাব মিল্টন রায়, সিনিয়র সহকারী সচিব ও বিজ্ঞ এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ বিভাগ -এর নেতৃত্বে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিসন এন্ড ডিষ্ট্রিবিউশন পিএলসি -এর জোবিঅ-টঙ্গী, আবিবি জয়দেবপুর -এর আওতাধীন দত্তপাড়া, টঙ্গী, গাজীপুর এলাকার ৩০টি আবাসিক গ্রাহক আঙ্গিনা পরিদর্শন করে ২টি বাড়িতে বুষ্টার ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়। একটি গ্রাহক অনুমোদন অতিরিক্ত চুলা ব্যবহারের কারনে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এ সময় ২টি আবাসিক গ্রাহককে বুষ্টার ব্যবহারের কারনে ২৫,০০০/- (পঁচিশ হাজার) টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে ।
এছাড়া, জনাব সৈকত রায়হান, সিনিয়র সহকারী সচিব ও বিজ্ঞ এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ বিভাগ -এর নেতৃত্বে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিসন এন্ড ডিষ্ট্রিবিউশন পিএলসি -এর মেট্রো ঢাকা বিক্রয় বিভাগ-৩ এর নন্দীপাড়া, খিলগাও, ঢাকা এলাকার ২টি স্পটে অভিযান পরিচালিত হয়েছে। অভিযানে ১০৩ টি অবৈধ ডাবল চুলা সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। মোট ৮০,০০০/- (আশি হাজার) টাকা অর্থদন্ড আরোপ করা হয়েছে।
এছাড়া, একই দিনে ফতুল্লা, নারায়ণগঞ্জ, এবং সাভার গাজীপুর-এ যথাক্রমে মেসার্স সান টেক্স ডাইং ও মেসার্স ডার্ড কম্পোজিট এ অভিযান পরিচালনা করে অবৈধ বাইপাস লাইন সনাক্ত করত: সংযোগ কিলিং করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, সেপ্টেম্বর, ২০২৪ হতে গত ২০ জুলাই, ২০২৫ তারিখ পর্যন্ত অভিযান পরিচালনা করে ২৮০টি শিল্প, ২৯০টি বাণিজ্যিক ও ৪৯,৫১১টি আবাসিকসহ মোট ৫০,০৮১টি অবৈধ গ্যাস সংযোগ ও ১,০৬,৮১৪টি বার্নার বিচ্ছিন্ন সহ উক্ত অভিযানসমূহে ১৯৮ কিলোমিটার পাইপলাইন অপসারণ করা হয়েছে।
ভারতে ভারী বৃষ্টিপাত এবং সেই পানির ঢলে লালমনিরহাটের তিস্তা নদীসংলগ্ন নিম্নাঞ্চলে পানি বেড়ে যাওয়ায় বন্যা হতে পারে বলে আভাস দিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
ধারণা করা হচ্ছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় তিস্তা নদীসংলগ্ন লালমনিরহাট জেলার পাঁচটি উপজেলায় পানির মাত্রা বেড়ে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।
রবিবার (২০ জুলাই) বিকাল ৩টায় লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় অবস্থিত দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। রাতের মধ্যেই পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে বলে আশঙ্কা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বরাতে পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতের কিছু প্রদেশে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর ফলে রংপুর বিভাগের তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদ-নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। এসব নদ-নদীর পানি আগামী ২৪ ঘণ্টায় বাড়তে পারে এবং পরবর্তী দুই দিন স্থিতিশীল থাকতে পারে।
এছাড়া আগামী তিন দিনে রংপুর বিভাগ ও তৎসংলগ্ন উজানে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। ফলে তিস্তা নদীর পানি সমতল আগামী ২৪ ঘণ্টায় লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় অবস্থিত তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে।
এর ফলে লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও কুড়িগ্রাম জেলার তিস্তা নদীসংলগ্ন নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার জানিয়েছেন, তিস্তা তীরবর্তী এলাকার জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের মাধ্যমে নিয়মিত খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি পানি উন্নয়ন বোর্ডও মাঠে কাজ করছে। বন্যা দেখা দিলে পরিস্থিতি মোকাবেলায় জেলা প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে।
নীলফামারীতে সেনাবাহিনী ও পুলিশের যৌথ অভিযানে মো. সেলিম মিয়া (২৭) নামের এক ভিসা প্রতারককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শুক্রবার (১৯ জুলাই) বিকেল ৫টার দিকে কিশোরগঞ্জ থানার বেলতলী বাজার এলাকায় এ অভিযান চালানো হয়। গ্রেপ্তার সেলিম মিয়া কিশোরগঞ্জ উপজেলার নিতাই কাছারিপাড়া গ্রামের মৃত ফকির উদ্দিনের ছেলে।
সেনাবাহিনী সূত্রে জানা যায়, ‘ সেনাবাহিনী হত্যা, ধর্ষণ, মাদক ও রাহাজানিসহ নানা সামাজিক অপরাধ দমনে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় নীলফামারী সেনাবাহিনী ক্যাম্পের ৩ ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারির মেজর সালমানের নেতৃত্বে চৌকস একটি দল যৌথভাবে এ অভিযান চালায়। এতে সেলিম মিয়া বিদেশে পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে অসহায় মানুষের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। পুলিশের একাধিক অভিযানের পরও সে ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিল।'
বিষয়টি নিশ্চিত করে কিশোরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম বলেন, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযানে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর তাকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
দেশের দক্ষিণাঞ্চল দ্বীপ জেলা ভোলার চরফ্যাশনে এই প্রথম বস্তাতে আদা চাষাবাদ করছেন কৃষকরা। এই উপজেলায় কৃষিতে বৈচিত্র আনার প্রয়াসে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বস্তায় আদা চাষ। মাটি ও জমির সীমাবদ্ধতা, বন্যা বা লোনা পানির ঝুঁকি, এবং কৃষি জমির উচ্চমূল্যের কারণে অনেক কৃষক যখন বিপাকে পড়ছেন, তখন বস্তায় আদা চাষ তাদের জন্য হয়ে উঠছে এক সম্ভাবনাময় বিকল্প।
চরফ্যাশন মূলত নদীবেষ্টিত। এখানে মৌসুমি বন্যা ও জোয়ারের পানিতে অনেক সময় ফসলের ক্ষতি হয়। তবে বস্তায় চাষ পদ্ধতিতে মাটি সহজে সরানো যায়, উঁচু জায়গায় রাখা যায়, বন্যার পানি থেকে সুরক্ষিত রাখা যায়। কৃষকরা পুরোনো চালের বস্তা, প্লাস্টিকের বস্তা, এমনকি পরিত্যক্ত বালুর বস্তাও ব্যবহার করছেন। এই পদ্ধতিতে প্রাথমিক খরচ কম। একটি বস্তা, কিছু জৈব সার, বেলে দোআঁশ মাটি ও বীজ আদা এগুলোই মূল উপকরণ।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, আসলামপুর, হাজারীগঞ্জ, জাহানপুর, আব্দুল্লাহপুর, চর মাদ্রাজ ও চরফ্যাশন পৌরসভা সহ আরো কিছু এলাকার কৃষকরা বস্তাতে আদা চাষাবাদ করছে। চলতি বছরে বস্তাতে আদা চাষের লক্ষমাত্রা ছিল ১২ হাজার ৮০০হেক্টর জমি। তবে লক্ষমাত্রা ছাড়িয়ে ১৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আদা চাষাবাদ হচ্ছে।
চরফ্যাশনের আসলামপুর ইউনিয়নের কৃষক মো. বারেক বলেন, ‘আমরা আগে বর্ষায় জমিতে কিছু করতে পারতাম না। এখন বারো মাস বস্তাতে আদা চাষ করতে পারবো। তবে এই প্রথম চরফ্যাশনে বস্তাতে আদা চাষ করা হচ্ছে। এই পদ্ধতিতে আদা চাষে উপজেলা কৃষি অফিস সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। আমি ৩০০ বস্তা আদা চাষ করছি। খুব সহজে সার পানি দেই, আর কোনো কষ্ট নেই।’
পৌরসভা ৭নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মাওলানা ইউসুফ বলেন, পার্বত্য জেলাগুলোসহ দেশের কয়েকটি জেলায় আদা চাষ করা হয়। তবে উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতায় এই প্রথম চরফ্যাশনে বস্তাতে আদা চাষাবাদ করা হচ্ছে। বাড়ির উঠান বা রাস্তার পাশে পতিত জমিতেও আদা চাষ করা সম্ভব হচ্ছে। তিনি বলেন, আমি এই বছরে প্রাথমিকভাবে ২০০ বস্তায় আদা চাষাবাদ করছি। একটি বস্তাতে ২টি করে আদা রোপন করেছি। বৈশাখ থেকে আদা চাষ শুরু হয়েছে। ২টি আদা রোপনের ফলে ১০/১২ মাস পর একটি বস্তাতে প্রায় ৩ কেজি আদা উৎপাদন হবে।
স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অফিস বলছে, বস্তায় আদা চাষে রোগবালাইও তুলনামূলক কম হয়। পোকামাকড়ের আক্রমণ হলে আলাদা বস্তা সরিয়ে আলাদা করা যায়। রোগ ছড়ানোর ভয় কম থাকে। এতে রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহারও কমে যায়, যা স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য ভালো। বিশেষ করে যুবসমাজ ও নারী উদ্যোক্তারা স্বল্প পুঁজি ও জায়গায় এই চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। কেউ কেউ নিজেদের উঠোন বা বারান্দায়ই বস্তা রেখে চাষ করছেন। তবে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। ভালো ফলনের জন্য বস্তার মাটি ও জৈব সার ভালোভাবে মিশিয়ে তৈরি করতে হয়। নিয়মিত পানি দিতে হয়, কিন্তু অতিরিক্ত পানি যাতে না জমে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হয়। বস্তার নিচে ছিদ্র রাখতে হয় যাতে পানি বের হয়ে যায়।
কৃষি অফিস জানিয়েছে, তারা স্থানীয় পর্যায়ে প্রশিক্ষণ কর্মশালা করছে। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠপর্যায়ে কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছেন। আদা একটি মুনাফাযোগ্য মসলা ফসল। বাজারে চাহিদা সারা বছর থাকে। বস্তায় উৎপাদিত আদা আকারে মাঝারি হলেও গুণে ভালো। দামও ভালো পাওয়া যায়। অনেকে বীজ উৎপাদনের জন্যও বস্তায় আদা চাষ করছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাজমুল হুদা বলেন, ‘এখানে অনেক জমি বর্ষায় ডুবে যায়। বস্তায় আদা চাষ এ অঞ্চলের জন্য বড় সম্ভাবনা। আমরা কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছি। তারা যদি শিখে নেয়, এভাবে শুধু আদা নয়, হলুদ, আলু, মিষ্টি আলু, কচু – অনেক কিছু চাষ করা যাবে।’
তিনি আরো বলেন, 'চরফ্যাশনের কৃষির স্বরূপ বদলাচ্ছে। বস্তায় আদা চাষ শুধু জমি সাশ্রয়ী বা বন্যা-সহনশীল পদ্ধতি নয়, এটি স্থানীয় অর্থনীতিতে নতুন প্রাণসঞ্চার করছে। কৃষকদের আয় বাড়াতে ও স্বনির্ভর হতে এই উদ্যোগ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়।'
সম্প্রতি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শাহ আজিজুর রহমান হল সংলগ্ন পুকুর থেকে আল-কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের সাজিদ আব্দুল্লাহর মরদেহ উদ্ধারের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে সংবাদ সম্মেলন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ- সাজিদের রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গাফিলতি। এদিকে সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দাবি তারা এবিষয়ে কোন প্রকার গাফিলতি করেননি/করছে না।
রবিবার (২০ জুলাই) বেলা ১১ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কনফারেন্স রুমে এ সংবাদ সম্মেলন সভা অনুষ্ঠিত হয়। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (রুটিন উপাচার্য) অধ্যাপক ড. এম. এয়াকুব আলী, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম, ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওবায়দুল ইসলাম, প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামান-সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন সাংবাদিক সংগঠন- ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি, প্রেস ক্লাব ও রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক-সহ অন্যান্য সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এসময় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে ইবি প্রশাসন সম্মতি জানিয়ে বলেন, তদন্ত কমিটিতে দুইজন শিক্ষার্থীকে অবজারভার হিসেবে রাখা হবে এবং সম্পূর্ণ ক্যাম্পাস সিসিটিভি ও লাইটিং এর আওতায় আনার কাজ চলমান রয়েছে এবং খুব দ্রুত শেষ হবে। সাজিদের মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত যেন হয় সে বিষয়ে ইবি প্রশাসন সব সময় তৎপর থাকবে।
সম্মেলনে কোষাধ্যক্ষ ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এতো দিন বিগত প্রশাসনের জবাবদিহিতা না থাকার কারণে আমাদের ওপর দোষ চাপানো হচ্ছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক বক্তৃতা-সহ নানা মাধ্যমে জিজ্ঞেসা করা হয়- ‘প্রশাসন এতো এতো টাকা কী করে?’ আমরা জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতার মধ্যে থাকার চেষ্টা করি। দুঃখের বিষয় হলো- হল প্রশাসন থেকে জানানো হয় না তাদের কী প্রয়োজন। প্রশাসনের কোথাও আর্থিক দৈন্যতা নেই। দৈন্যতা আছে ইউজারের, জিনিসগুলো প্রপারলি ইউজ করলে আর কোন ঝামেলা থাকবে না।
উপ-উপাচার্য (রুটিন ভিসি) অধ্যাপক ড. এম. এয়াকুব আলী বলেন, ৫ আগস্টের পর সরকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সীমিত আকারে বাজেট দেয়। কিন্তু বিশেষ দিবসসমূহে আমাদের আলাদা বাজেট রাখতে হয়। যেহেতু আমাদের বাজেট কম, বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক বিষয়ে চাহিদা মেটাতে হিমসিম খেতে হয়। তবুও আমরা গতকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করছি।
ড. এয়াকুব আরো বলেন, আমাদের ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটির সর্বোচ্চ ক্ষমতা- ঘটনা প্রবাহের তথ্য উদঘাটন করা। তবে কাউকে বিচার করা, ফাঁসি দেওয়া ও বহিষ্কার করা এটা আমাদের ক্ষমতা নেই। এটা সম্পূর্ণ পুলিশবাদী কেস। আমরা সর্বোচ্চ পুলিশকে তথ্য দিয়ে সহায়তা করতে পারি।
তিনি সাজিদের ব্যাপারে বলেন, আমাদের কোনো গাফিলতি নেই। তবে শিক্ষার্থীরা যেটা বলছেন- প্রক্টর আসতে দেরি হয়েছে এবং প্রশাসনের কেউ ছিল না। সাজিদ মারা যাবে বা তার লাশ ভেসে উঠবে এইটা তো আমরা জানতাম না। যদি কোনো ইঙ্গিত পাইতাম তাইলে যাইতাম না। কাকতালীয় ভাবে ঘটনাটা ঘটেছে। সাজিদের লাশ যে ভেসে উঠবে এমন কোনো লক্ষণও তো আগের রাতে দেখি নাই। আমি তো রাত আড়াইটা থেকে তিনটা পর্যন্ত ঘুরছি। রাতে কই কোনো লক্ষণ দেখিনাই তো? একটা মানুষ কে যখন মারে বা মরে ক্যাম্পাসে একটা ভাব থাকে গুমগুমে ভাব, সেরকম কিছু দেখিনি।
তিনি আরও বলেন, অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে আমাদের দুর্ভাগ্য যে আমরা সাজিদকে হারিয়েছি, এটার সাথে কোনো কিছু আছে কি-না আমরা বিহিত করতে নামছি এবং খুব আন্তরিকভাবে কাজ করছি। যদি কোনো ভাবে সঠিক তদন্তের মাধ্যমে দোষী সাব্যস্ত হয়, তা যদি ব্যক্তিগতভাবে আমি নিজেও হই, তাহলে আমি আমার শাস্তি চাইবো। ধৈর্য্য ধারণ করুন, আমরা শক্তভাবে এইটা হাতে নিয়েছি। কারণ সাজিদের বিচারটা যদি না হয় তাহলে প্রত্যেক ছাত্ররা কিন্তু হলে থাকতে ভয়ভীতি ও দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়ে যাবে।
এর আগে গত ১৭ জুলাই বিকেলে শাহ আজিজুর রহমান হল সংলগ্ন পুকুর থেকে আল-কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের সাজিদ আব্দুল্লাহর ভাসমান মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এটা নিছক দুর্ঘটনা না-কি হত্যাকাণ্ড তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সাজিদ শহিদ জিয়াউর রহমান হলের ১০৯ নং কক্ষে থাকতেন। তার বাড়ি টাঙ্গাইল জেলায়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র পরদিন ১৮ জুলাই জরুরি ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. এমতাজ হোসেনকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের একটি ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি করে প্রশাসন। অন্যদিকে একইদিনে শহিদ জিয়াউর রহমান হল প্রভোস্ট ড. আব্দুল গফুর গাজীকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করে হল প্রশাসন। উভয় কমিটিই ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে। মৃত্যুর কারণ ও পেছনের সম্ভাব্য রহস্য উন্মোচনের লক্ষ্যে দ্রুততম সময়ের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা।
সংঘর্ষে নিহতদের লাশ ইচ্ছাকৃতভাবে ময়নাতদন্ত ছাড়াই হস্তান্তরের বিষয়টি ভিত্তিহীন ও অসত্য বলে জানিয়েছে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
রবিবার (২০ জুলাই) হাসপাতালের সংবাদ বিজ্ঞপ্তির বরাতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এ তথ্য জানিয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ‘গত ১৬ জুলাই, গোপালগঞ্জ জেলায় অপ্রত্যাশিত ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের লাশ ময়নাতদন্ত না করার বিষয়ে কিছু সংবাদমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও নিহত ব্যক্তিদের আত্মীয়স্বজনদের বক্তব্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নজরে এসেছে। এ বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও অসত্য।’
বিবৃতি অনুযায়ী, প্রকৃত ঘটনা হলো— সংঘর্ষ চলাকালে প্রথম মৃতদেহটি হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এরপর রোগীর স্বজনদের লাশ ময়নাতদন্তের কার্যক্রম শেষ করে লাশ নেওয়ার কথা বললে স্বজনরা উত্তেজিত হয়ে ওঠে এবং একপর্যায়ে জোর করে লাশ নিয়ে যায়।
পরবর্তীতে বাকি মৃতদেহগুলোর স্বজনরাও ময়নাতদন্ত করাতে রাজি হয়নি। তারা হাসপাতালে কর্মরত কর্মচারীদের সঙ্গে ‘অসৌজন্যমূলক’ আচরণ করে জোর করে মৃতদেহ নিয়ে যায়।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এমন পরিস্থিতি ও চারদিকে সংঘর্ষের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন উপস্থিত না থাকায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অসহায় বোধ করেন। এছাড়া, ডাক্তার, নার্স, ওয়ার্ডবয় ও অন্যান্য কর্মচারীরা সংঘর্ষে আহতদের চিকিৎসাকাজে নিয়োজিত থাকায় এবং হাসপাতালের বাইরে পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকায় তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।’
তবে, পরবর্তীতে এই ঘটনা পুলিশকে মোবাইল ফোনে এবং লিখিতভাবে জানানো হয়েছে বলে বিবৃতিতে দাবি করা হয়। এই বিবৃতির মাধ্যমে জনমনে সৃষ্ট ভুল বোঝাবুঝির অবসান হবে বলেও আশাপ্রকাশ করা হয়।