বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নাইকো দুর্নীতি মামলার অভিযোগ গঠন বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করা হয়েছে। বুধবার রিভিশন আবেদনটি হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় দাখিল করা হয়।
আবেদনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল।
তিনি বলেন, নাইকো মামলায় অভিযোগ গঠনের আদেশ বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করা হয়েছে। যেকোনো একটি বেঞ্চের তালিকায় এনে শুনানি করা হবে।
নাইকো দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ ৮ আসামির বিরুদ্ধে গত ১৯ মার্চ অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৯ এর বিচারক শেখ হাফিজুর রহমান।
কানাডিয় প্রতিষ্ঠান নাইকোর সঙ্গে করা চুক্তির মাধ্যমে দেশ ও রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতির সৃষ্টি করা এবং দুর্নীতির অভিযোগে ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) খালেদা জিয়াসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা করে। এরপর ২০১৮ সালের মে মাসে খালেদা জিয়াসহ আরও ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে দেশের প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির অভিযোগ আনা হয়।
মামলায় খালেদা জিয়া ছাড়াও আসামি হিসেবে আছেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সাবেক জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব সি এম ইউছুফ হোসাইন, বাপেক্সের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক, ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, ঢাকা ক্লাবের সাবেক সভাপতি সেলিম ভূঁইয়া এবং নাইকোর দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ।
আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে স্বতন্ত্র বিচার বিভাগীয় সচিবালয় গঠনের দাবিতে পঞ্চগড়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন আইনজীবীরা।
১৫ জুলাই (মঙ্গলবার) সকাল ১০টায় পঞ্চগড় জেলা জজ কোর্ট প্রাঙ্গণে এ কর্মসূচির আয়োজন করে জেলা আইনজীবী সমিতি।
মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন পঞ্চগড় জেলা আইনজীবী সমিতির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান। কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন ও বক্তব্য দেন জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাড. আদম সুফি, গভার্নমেন্ট প্লিডার (জিপি) অ্যাড. এম এ আব্দুল বারী, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের জেলা সভাপতি অ্যাড. মির্জা নাজমুল ইসলাম কাজল, আইনজীবী সমিতির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য অ্যাড. মির্জা আমিরুল ইসলাম, অ্যাড. গোলাম হাফিজ, অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাড. ইয়াসিনুল হক দুলাল, অ্যাড. মেহেদী হাসান মিলনসহ অন্যান্য সিনিয়র ও জুনিয়র আইনজীবীগণ।
বক্তারা বলেন, একটি কার্যকর, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ বিচার ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হলে বিচার বিভাগকে প্রশাসন থেকে আলাদা করে একটি স্বাধীন সচিবালয়ের অধীনে নিয়ে আসা জরুরি। তারা অভিযোগ করেন, অতীতে বিভিন্ন সরকার বিচার বিভাগকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করেছে, যা বিচার প্রক্রিয়ার নিরপেক্ষতা ও জনগণের মৌলিক অধিকারকে ক্ষুণ্ন করেছে।
তারা আরও বলেন, হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টসহ সকল বিচারিক প্রতিষ্ঠানকে প্রশাসনিকভাবে পরিচালনা করার জন্য পৃথক সচিবালয় না থাকায় বিচারকরা স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারেন না। এই পরিস্থিতিতে বিচার বিভাগের ওপর প্রশাসনের প্রভাব পড়ছে এবং এতে করে ন্যায়বিচার ব্যাহত হচ্ছে।
বক্তারা জোর দিয়ে বলেন, আইন মন্ত্রণালয়ের অধীনে বিচার বিভাগ থাকায় বিচার বিভাগ কার্যকরভাবে স্বাধীনতা পাচ্ছে না। জনগণের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে এবং বিচার বিভাগে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ রোধে দ্রুত পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় গঠন করতে হবে।
পঞ্চগড়ের আইনজীবীরা দেশের সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনার আলোকে বিচার বিভাগকে আলাদা করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান এবং তাদের দাবি আদায়ে দেশব্যাপী আইনজীবীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ টঙ্গি-ঘোড়াশাল-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের কালীগঞ্জ বাইপাস মোড় এখন এক মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। গোলচত্বর কিংবা ট্র্যাফিক ব্যবস্থাপনার ঘাটতির কারণে প্রতিনিয়ত এখানে ঘটছে প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা। ভয়াবহ যানজট আর দুর্ঘটনার এই মোড়ে মানুষের জীবনে নেমে এসেছে চরম অনিশ্চয়তা ও নিরাপত্তাহীনতা।
মহাসড়কটি দিয়ে প্রতিদিন হাজারো যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল করছে। নরসিংদী, ভৈরব, কিশোরগঞ্জ, সিলেট ও চট্টগ্রামগামী পরিবহনগুলো কালীগঞ্জ বাইপাস মোড় অতিক্রম করে। তবে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। বিশেষ করে তিন দিক থেকে আগত যানবাহনের নিয়ন্ত্রণহীন গতি এবং কোনো ট্র্যাফিক পয়েন্ট না থাকায় ভয়াবহতা বেড়েছে কয়েকগুণ।
গত ১৪ মে এই মোড়েই একটি লরির চাপায় প্রাণ হারান মোটরসাইকেল আরোহী আব্দুল হামিদ (৩৪)। এমন দুর্ঘটনা যেন এখানে নিত্যদিনের ঘটনা। পথচারী, রিকশা ও মোটরসাইকেল চালকদের চোখে বাইপাস মোড় এক আতঙ্কের নাম।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, সরু রাস্তা, যানবাহনের অতিরিক্ত চাপ, সড়কের দুই পাশে অবৈধ দোকান এবং তুমলিয়া মোড়ে অটোরিকশা স্ট্যান্ডের কারণে এই মোড়ে সবসময় যানজট লেগেই থাকে। কর্মজীবী মানুষ থেকে শুরু করে শিক্ষার্থীদেরও প্রতিদিনই পড়তে হচ্ছে ভয়াবহ ভোগান্তিতে।
স্থানীয় ষাটোর্ধ্ব আবুল হোসেন বলেন, “প্রতিদিন দুধ নিয়ে বাজারে যাই। বাইপাস মোড় পার হতে গিয়ে মনে হয়, জীবনটা আজই শেষ হয়ে যাবে। একদিকে বেপরোয়া বাস, অন্যদিকে কোনো ট্র্যাফিক নেই।”
কালীগঞ্জ সরকারি শ্রমিক কলেজের শিক্ষার্থী মুজাহিদ ইসলাম জানান, “এই মোড়েই দুইবার দুর্ঘটনায় পড়েছি। ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছি। কিন্তু প্রতিদিনই এখানে একটা ভয় নিয়ে চলাফেরা করতে হয়। আমরা চাই, দ্রুত এখানে গোলচত্বর হোক।”
বিগত কয়েক বছর ধরেই স্থানীয়রা এই মোড়ে একটি গোলচত্বর নির্মাণের জোর দাবি জানিয়ে আসছে। তাদের মতে, একটি সুপরিকল্পিত গোলচত্বর যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণে রাখবে এবং দুর্ঘটনার হার অনেকাংশে কমে আসবে।
এ বিষয়ে কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তনিমা আফ্রাদ বলেন, “চার মাস আগে আমি জেলা সমন্বয় সভায় বিষয়টি উপস্থাপন করেছি। সড়ক ও জনপথ বিভাগকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। তারা বিষয়টি নিয়ে স্টাডি করছে বলেছে।”
তবে গাজীপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার মো. শরিফুল আলমের সঙ্গে একাধিকবার ফোন ও হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
অবশেষে, সাধারণ মানুষের একটাই দাবি—আর কোনো প্রাণ ঝরার আগে সরকার যেন এই মোড়টিকে নিরাপদ করতে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করে। শুধুমাত্র একটি গোলচত্বর নয়, প্রয়োজন একটি সমন্বিত ট্র্যাফিক ব্যবস্থাপনা, যাতে এই ব্যস্ত মহাসড়ক হয়ে উঠতে পারে দুর্ঘটনামুক্ত ও জনবান্ধব।
লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে গৃহহীনদের জন্য নির্মিত আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর এখন লাখ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। যেন সরকারি ঘর বিক্রির মহোৎসব চলছে। প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ না থাকায় দালালের নিয়ন্ত্রণে এসব আশ্রয়ণ প্রকল্প। নিজের জমি ও বাড়ি আছে এমন কিছু সচ্ছল ব্যক্তি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বরাদ্দ পেয়ে ওই ঘর মোটা অঙ্কের টাকায় অন্যদের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছেন। কিছু ঘর বিক্রি হয়েছে একাধিকবার। আবার কেউ ভাড়া দিয়ে রাখছেন অন্য পরিবারের কাছে।
সম্প্রতি উপজেলার চরকাদিরা ইউনিয়নের দুই নম্বর ওয়ার্ডের ডাক্তারপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্প ঘুরে বসবাসকারীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। ডাক্তারপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পটি একজন চিহ্নিত দালালের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ওই দালালের কাছে এখনো ১০ টির মত ঘর রয়েছে। ওই ঘরগুলো তালা মেরে রাখা হয়। সময়মত ক্রেতা পেলে ধাপে ধাপে লাখ টাকায় বিক্রি করছেন ঘরগুলো। মনে হয় দালালের নির্মাণ করা এসব ঘর।
সুত্র জানায়, ডাক্তারপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৮৯ টি ঘরের মধ্যে প্রায় ৫০ টির মত ঘর বিক্রি হয়ে গেছে। বর্তমানে সবগুলো ঘরে ক্রয় করা ব্যক্তিরা বসবাস করছেন। আবার কেউ কেউ ভাড়ায় থাকেন। এখনো ১৫ টির মত ঘর তালাবন্ধ রয়েছে। টাকার প্রয়োজন হলেই লাখ টাকা বিক্রি করে দিচ্ছে সরকারি ঘর।একই চিত্র ইউনিয়নটির ফজুমিয়ারহাট বাজারের পূর্ব পাশে ভুলুয়া ব্রীজ সংলগ্ন আশ্রয়ণ প্রকল্পেও।
উপজেলা ভূমি অফিস সূত্রে জানা যায়, গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারকে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় পাঁচটি ধাপে উপজেলার চরকাদিরা, হাজিরহাট, চরলরেন্স, তোরাবগঞ্জ, চরকালকিনি ও চরমার্টিন ইউনিয়নে ৮২০টি ঘর নির্মাণ করে উপজেলা প্রশাসন। নির্মাণকাজের মধ্যেই ঘর বরাদ্দের জন্য ভূমি ও গৃহহীনদের আবেদনপত্র নেওয়া হয়। আবেদনপত্র যাচাই-বাছাই শেষে ধাপে ধাপে ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, নিজের জমি ও বাড়ি আছে এমন অনেক সচ্ছল ব্যক্তি ঘুষ দিয়ে ঘর বরাদ্দ নিয়েছেন। অন্যদিকে টাকা দিতে না পারায় অনেক গৃহহীন পরিবার ঘর বরাদ্দ পাননি। যে কারণে, এসব সচ্ছল ব্যক্তি ঘর পাওয়ার পর সেখানে বসবাস না করে বিক্রি করে দিচ্ছেন।
বসবাসের জায়গা না থাকায় গৃহহীন পরিবারগুলো ৬০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকায় স্ট্যাম্পে চুক্তির মাধ্যমে দালালের কাছ থেকে আশ্রয়ণের ঘর কিনে নিচ্ছেন। কেউ কেউ মাসে ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকায় ভাড়া নিয়ে বসবাস করছেন। ঘর বরাদ্দের সময় যথাযথ যাচাই-বাছাই এবং অবৈধ লেনদেন না হলে প্রকৃত গৃহহীনরাই আশ্রয়ণের ঘরগুলো পেতেন বলে মনে করছেন তারা।
উপজেলার চরকাদিরা ইউনিয়নের ডাক্তারপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর কিনে বসবাসকারী দু’জন ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এই আশ্রয়ণে মোট ৫০টি ঘর বিক্রি হয়ে গেছে। এখনো ১০ টি ঘরে তালা মেরে রাখেন দালাল। টাকার প্রয়োজন হলেই একটা একটা করে বিক্রি করে ঘর বুঝিয়ে দেন ওই দালাল। উপজেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ না থাকায় ডাক্তারপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বিক্রির মহোৎসব চলছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) পরিতোষ কুমার বিশ্বাস বলেন, আশ্রয়ণের ঘরগুলো নির্মাণের দায়িত্ব ছিল তাদের। কিন্তু তালিকা যাচাই-বাছাই করেছেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ইউএনও। তারাই বিষয়টি ভালো বলতে পারবেন।
উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি মুহাম্মদ আরাফাত হোসেন বলেন,সরেজমিনে গিয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কমলনগরের ইউএনও রাহাত উজ-জামান বলেন,বিভিন্ন মাধ্যমে এসব অভিযোগ শুনছেন। পরিদর্শন করে অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন।
মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে উপকূলীয় দ্বীপজেলা ভোলায় আবারও বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করছে। সমুদ্রে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত জারি করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) সকালে ভোলার মেঘনা নদীর পানির চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় ইলিশ ফেরিঘাট জোয়ার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এতে করে ফেরিতে যানবাহন ওঠানামার পথ তলিয়ে যায়। ফলে ফেরিতে যানবাহন ওঠানামা ব্যাহত হয়।
অপরদিকে, সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত জারি করায় ভোলা-লক্ষ্মীপুরসহ জেলার ১০টি নৌ-রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এতে চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন যাত্রীরা। অনেকে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রলার ও স্পিডবোটে ভোলা-লক্ষ্মীপুর নৌ-রুটে যাতায়াত করছে। এতে করে যেকোনো মুহুর্তে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ঘাট সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয়রা জানান, মঙ্গলবার সকালে অতি জোয়ারে ইলিশা ফেরিঘাটের দুটি ঘাটের মধ্যে লো ওয়াটার ঘাটটি তলিয়ে যায়। তবে হাই ওয়াটার ঘাটটি চালু রয়েছে। তখন একটি ঘাট দিয়ে যানবাহন ওঠানামা করাতে হয়। এতে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক সময় বেশি লাগছে।
বিআইডব্লিউটিএ’র ভোলা নদীবন্দরের পরিবহন পরিদর্শক মো. জসিম উদ্দিন জানিয়েছেন, সমুদ্রে ৩ নম্বর ও নদী বন্দরে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত জারি হওয়ায় ফের ভোলা জেলার ইলিশা থেকে লক্ষ্মীপুর, মনপুরা-ঢাকাসহ অভ্যন্তরীণ ১০টি নৌ-রুটে যাত্রীবাহী লঞ্চ ও সি-ট্রাক চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে ভোলা-ইলিশা রুটে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানান তিনি।
জুলাই পুনর্জাগরণ অনুষ্ঠানমালা-২০২৫ এর অংশ হিসেবে শেরপুরে ‘জুলাই শহিদ স্মৃতিস্তম্ভ’ নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করা হয়েছে। ১৪ জুলাই সোমবার শেরপুর জেলা শহরের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিস্তম্ভের পাশেই জুলাই শহিদ স্মৃতিস্তম্ভে নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান।
নির্মাণ কাজ উদ্বোধনকালে স্থানীয় সরকার বিভাগের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক ও পৌর প্রশাসক শাকিল আহমেদ, সিভিল সার্জন ডা. মুহাম্মদ শাহীন, প্রেসক্লাব সভাপতি কাকন রেজা, জেলা খামারবাড়ীর উপপরিচালক মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ভুইয়া, জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপপরিচালক লুৎফুল কবীর, জেলা গণপূর্ত বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন, জেলা জামায়াতের সাবেক সেক্রেটারি জাকারিয়া মো. আব্দুল বাতেন, জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহবায়ক মামুনুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। উদ্বোধন শেষে শহিদদের আত্মার মাগফিরাত ও শান্তি কামনায় বিশেষ মোনাজাত ও প্রার্থনা করা হয়।
জেলা গণপূর্ত বিভাগ জানায়, প্রায় ৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ওই স্মৃতিস্তম্ভটি নির্মাণ করা হচ্ছে। চলতি মাসেই নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা হবে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতাধীন একটি পুকুর নিয়ম না মেনে এবং কোনো ধরনের বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই লিজ দিয়েছেন কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. ইকবাল শাহীন খান।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কলা অনুষদের পশ্চিম পাশে অবস্থিত একটি পুকুর নিয়ম না মেনে এবং কোনো ধরনের বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই নিজের ব্যক্তিগত গাড়িচালক শহরমুল্লককে লিজ দেন অধ্যাপক ইকবাল শাহীন খান।
নিয়ম অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো পুকুর, খাল কিংবা কৃষি জমি লিজ দিতে হলে প্রথমে দাপ্তরিক বিজ্ঞপ্তি দিতে হয়। আগ্রহীরা আবেদন করলে, দরপত্র প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সর্বোচ্চ দরদাতাকে লিজ দেওয়া হয়ে থাকে।
তবে কলা অনুষদের পুকুর লিজ দেওয়ার সময় মানা হয়নি যথাযথ প্রক্রিয়া। অভিযোগ রয়েছে, গত ৫ আগস্টের পর কোনো ধরনের বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই মাত্র ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে ৫ বছরের জন্য পুকুরটি লিজ দেওয়া হয় কলা অনুষদের ডিনের গাড়ী চালক শহরমুল্লককে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, চুক্তিতে শহরমুল্লক একক লিজগ্রহীতা হলেও, পুকুরে বাস্তবে ৬ জন মিলে মাছ চাষ করছেন। তাদের মধ্যে ৪ জন বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়িচালক এবং ২ জন কর্মচারী।
এবিষয়ে জানতে চাইলে শহরমুল্লক বলেন, ‘আমি ডিন স্যারের মাধ্যমেই পুকুরটি লিজ নিয়েছি। তিনি আমাকে লিখিত চুক্তির মাধ্যমে ৩০ হাজার টাকায় দিয়েছেন।’
এবিষয়ে ডিন অধ্যাপক ড. মো. ইকবাল শাহীন খান বলেন, ‘ওখানে শহরমুল্লক আগে থেকেই কিছু গাছ লাগিয়েছিল। সে বিবেচনায় বিভাগীয় চেয়ারম্যানদের মিটিংয়ে রেজুলেশনের মাধ্যমে তাকে লিজ দেওয়া হয়েছে। আমরা ভেবেছিলাম এটি কলা অনুষদের আওতাধীন। পরে জানতে পারি এটি কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে। যেহেতু লিজ দিয়ে দিয়েছি, এখন তো আর করার কিছু নেই।’
জানতে চাইলে কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. হোসেন শহীদ সরওয়ার্দী বলেন, ‘ ডিন অফিস সরাসরি লিজ দিতে পারে না। আমি তাঁকে আবেদন করতে বলেছি। আবেদন করলে নিয়ম অনুযায়ী লিজ দেওয়া হবে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চবি উপ-উপাচার্য(প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে জানতাম না, এখনই আপনার থেকে জানলাম। এটা নিয়ে আমি কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের প্রধান এবং কলা অনুষদের ডিনের সাথে কথা বলবো। অবশ্যই আমি বিষয়টি খতিয়ে দেখবো।’
ভোলার বোরহানউদ্দিনে প্রেমিক অন্যত্র বিয়ে করায় অভিমানে গত রবিবার মধ্যরাতে নিজ ঘরে গলায় ফাঁস নিয়ে নাজমা আক্তার (১৭ ) নামে মাদ্রাসা পড়ুয়া দশম শ্রেনীর এক ছাত্রী আত্মহত্যা করেছে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে ভোলা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে।
এ ঘটনার পর থেকে প্রেমিক রাকিব ও তার পরিবারের সদস্যরা গা ঢাকা দিয়েছেন। এদিকে এ ঘটনায় আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ এনে প্রেমিক রাকিব ও তার বাবা মায়ের বিরুদ্ধে আজ বোরহানউদ্দিন থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন ওই কিশোরীর বাবা মফিজুল ইসলাম।
নাজমার পারিবারিক সূত্রে জানাযায়, নাজমার সাথে রাকিবের দীর্ঘদিন প্রেমের সম্পর্ক ছিলো। প্রেমিক রাকিব গত ১১জুলাই নাজমা কে না জানিয়ে অন্যত্র বিয়ে করে ফেলে, যা মেনে নিতে পারেনি নাজমা। এ নিয়ে নাজমার সাথে রাকিবের ঝগড়া হয়, পরে ওই ঝগড়া গড়ায় দুই পারিবারের মধ্যে। এরমধ্যে নাজমা মানষিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ায় একটি সুইসাইড নোট লিখে রবিবার মধ্যরাতের যে কোনো সময় তার শয়নকক্ষে গলায় ফাঁস নিয়ে আত্নহত্যা করে। সকালে পরিবারের সদস্যরা তার লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে।
মৃত নাজমা আক্তার (১৭) বোরহানউদ্দিন উপজেলার কাচিয়া ৪ নম্বর ওয়ার্ডের চৌমহুনী এলাকার মফিজুল ইসলামের মেয়ে। সে স্থানীয় চৌমহুনী দাখিল মাদ্রাসার দশম শ্রেণী পড়ুয়া ছাত্রী। প্রেমিক একই এলাকার জমাদ্দার বাড়ির সফিজল জমাদ্দারের পুত্র মোঃ রাকিব (২১)।
নাজমার বাবা মফিজুল ইসলাম জানায়, আমার মেয়েটাকে ওরা প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিভিন্ন সময় অনেক অত্যাচার করেছে। আমার মেয়ের প্রতি হওয়া অন্যায় অবিচারের শোক সইতে না পেরে রোববার দিবাগত রাত ১টার দিকে আমার মেয়েটা তার রুমে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্নহত্যা করেছে। আমি আমার মেয়ে হত্যার বিচার চাই।
বোরহানউদ্দিন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান জানায়, পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে সুরতহালের জন্য ভোলা পাঠায়। সুরতহাল শেষে পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। নাজমার বাবা বাদী হয়ে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ এনে থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলাটি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
গত বছরের জুলাইয়ে ঢাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে মৃত্যুবরণ করেছিলেন বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার সাগর হাওলাদার। তার মৃত্যুর প্রায় এক বছর হতে চলল। এখনো সন্তানের স্মৃতি মন থেকে মুছতে পারেননি সন্তান হারা মা আম্বিয়া বেগম। এখনো রাতে দুচোখের পাতা বুঝতেই সাগরের নানান স্মৃতি তাড়া করে বেড়ায় তাকে। রাত যতই গভীর হোক ঘুম ভেঙে ছুটে যান ছেলের কবরের পাশে। কখনো আবার ছেলের ছবি বুকে জড়িয়ে কাঁদেন নিরবে।
একমাত্র ছেলে সোহাগকে হারিয়ে শোকে পাথর হয়ে আছেন বাবা নুরুল হক হাওলাদারও। ছেলের কথা ভেবে ভেবে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তিনি। কিছুতেই তাকে স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে পারছে না তার পরিবার। বাড়িতে কেউ গেলে তাকে জড়িয়ে ধরে ফুফিয়ে ফুফিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন নুরুল হক।
স্বজনরা জানিয়েছেন, একমাত্র ছেলেকে হারানোর শোকে মা-বাবা দুজনেই ভেঙে পড়েছেন। তাদের মুখে হাসি নেই এক বছর ধরে। ছেলে বিহীন দুটি ঈদও কেটেছে তাদের আনন্দহীন। মা আম্বিয়া বেগম সারাদিন সাংসারিক কাজের মধ্যেও ছেলের স্মৃতি স্মরণ করে অনবরত কাঁদতে থাকেন।
সম্প্রতি সাগরের বাবা নুরুল হক ও মা আম্বিয়া বেগমকে ঢাকায় ছেলের গুলিবিদ্ধের ঘটনাস্থল ধানমন্ডি আবাহনী ক্লাবের কর্ণারে পুলিশ বক্সের কাছে নিয়ে যান স্বজনরা। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন যে স্থানে সাগর গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন সেখানে পিচঢালা পথে সাগরের রক্তের দাগ দুই সপ্তাহের মত ছিল। একথা শুনে সাগরের বাবা-মা আবেগ আপ্লুত হয়ে হাউমাউ করে কান্না শুরু করেন।
সাগরের চাচা মইনুল হোসেন জানান, ২০২৪ সালের মে মাসে সাগর ঢাকায় গিয়েছিল, ওর স্বপ্ন ছিল বিদেশ গিয়ে বেশি টাকা আয় করে বাড়িতে পাকা ভবন তৈরি করবে। সেই ভবনে সবার জন্য আলাদা কক্ষ থাকবে ও বোনের লেখাপড়াসহ মায়ের জন্য কাজের লোক রেখে দেবে। কিন্তু সাগরের স্বপ্ন দূঃস্বপ্নে রূপ নিলো।
তিনি বলেন, সরকারতো আর আমাদের সাগরকে এনে দিতে পারবে না। তারা যে সাহায্য সহযোগিতা করবে তাতে কি আমাদের সাগর ফিরে আসবে। আমরা চাই বিচার। যারা আমার ভাতিজাকে গুলি করে হত্যা করেছে তাদের ফাঁসি চাই।
সাগরের একমাত্র ছোট বোন মরিয়ম খানম এখন ৭ম শ্রেণির ছাত্রী। ধীরে ধীরে ভাইয়ের শূণ্যতা বুঝতে শুরু করেছে মরিয়ম। তাই ভাইয়ের কথা ভেবে বাড়ির এককোনে একা-একা চুপচাপ বসে থাকে, কারোর সঙ্গেই কথা বলছে না। কেউ ডাকলেও সাড়া দেয়না।
বাড়িতে শহীদ সাগরের বৃদ্ধ দাদা আব্দুল মজিদ হাওলাদার (৭৫)। বাড়ির উঠানে বসে বাকরুদ্ধ হয়ে নিরবে মূর্ছাযান। কান্নার ভাষাও হারিয়ে ফেলেছেন তিনি। একমাত্র নাতিকে হারিয়ে এখন নিস্তেজ হয়ে আরও অসুস্থ্য হয়ে পড়েছে তিনি।
উল্লেখ্য, বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার বাগধা ইউনিয়নের বাগধা গ্রামের নুরুল হক হাওলাদারের ছেলে সাগর হাওলাদার (১৭)। বাবা বাগধা মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একজন নৈশ প্রহরী। এক ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে সাগর ছিল বড়। বাবার রোজগারে তাদের সংসার চলতো না।
তাই ২০২৪ এর জুলাইয়ে কোটাবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরুর দুই মাস পূর্বে সংসারের সচ্ছলতা ফেরাতে জীবন-জীবিকার খোঁজে প্রবল ইচ্ছাশক্তি নিয়ে ঢাকায় গিয়েছিল কিশোর সাগর। সেসময় ধানমন্ডি লেকের পাড়ে একটি চায়ের দোকানে কাজ করতো সে।
২০২৪ এর ১৯ জুলাই আবাহনী মাঠের কর্ণারে পুলিশ বক্সের কাছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষ চলাকালে দুপায়ে গুলিবিদ্ধ হয় সাগর। ওইদিনই তাকে ভর্তি করা হয় ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৪ জুলাই মৃত্যুবরণ করে সাগর। গুলিবিদ্ধ হওয়ায় ওই সময় পতিত আওয়ামী লীগের দোসরদের নিষ্ঠুরতার কারণে সাগর যথাযথ চিকিৎসাও পায়নি বলে অভিযোগ তার পরিবারের।
নোয়াখালীতে টানা বৃষ্টি ও ফেনীর মুহুরী নদী থেকে আসা পানিতে আউশ ধান, আমনের বীজতলা এবং গ্রীষ্মকালীন ও শরৎকালীন শাকসবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষেতে পানি জমে দেখা দিয়েছে গোড়া পচাসহ বিভিন্ন রোগবালাই। কৃষকরা বলছে, এতে বাজারে আমন ধানের বীজের দাম বেড়েছে। বড় ধরণের লোকসানের মুখে পড়েছেন প্রান্তিক চাষিরা।
৭ জুলাই জেলায় মুষলধারে বৃষ্টিপাত শুরু হয়। এরপর টানা ৪দিনের বৃষ্টিতে জেলার ৬টি উপজেলার ৫৭টি ইউনিয়নে তীব্র জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এতে আউশের খেত ও আমন ধানের বীজতলা পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে। আউশের খেত ও আমনের বীজতলা তলিয়ে যাওয়ায় হুমকির মুখে পড়বে কৃষকরা। ফলে উপজেলার আউশের খেত ও আমনের বীজতলা ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সুবর্ণচরের কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, চারদিক পানির নিচে ডুবে থাকায় নতুন করে বীজতলা তৈরি করার মতো উঁচু জায়গা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। অনেকে উঁচু জায়গা আমনের বীজতলা করার জন্য ভাড়া নিচ্ছে। কিন্ত পুঁজির অভাবে নতুন করে বীজতলা তৈরি করতে হিমশিম খাচ্ছে কৃষকেরা। দ্রুত পানি না নামলে আউশ, আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।
কোম্পানীগঞ্জের কৃষক আমির হোসেন বলেন, ‘আকষ্মিক এমন দুর্যোগের মুখে পড়ে দিশেহারা কৃষক। সবজির মাঠ পানিতে শেষ হয়ে যাওয়ায় দায়দেনা পরিশোধের চিন্তায় দিশেহারা কৃষক। ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত আমাদের সহায়তা প্রয়োজন ‘
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, জেলায় মোট ৫ হাজার ১৯৯ হেক্টর জমির ফসল পানিতে আক্রান্ত আবস্থায় আছে। এরমধ্যে ৮৯১ হেক্টর আমনের বিজতলা, ২ হাজার ৫শ হেক্টর আউশের বীজতলা, ১ হাজার ২শ হেক্টর গ্রীষ্মকালীন সবজি, ৫৭৫ হেক্টর শরৎকালীন সবজি নিমজ্জিত অবস্থায় আছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, এখনো জেলার ৬টি উপজেলার ৫৭ টি ইউনিয়ন জলবদ্ধতার কবলে রয়েছে। এখনো পানিবন্দী হয়ে রয়েছে প্রায় ২৪৯৫০টি পরিবার। ক্ষতির শিকার হয়েছে প্রায় ৯০ হাজার ৪০৩ জন মানুষ। বিভিন্ন উপজেলা পায়ের ৫৮ টি বাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে জলাবদ্ধতায়। বর্তমানে ২৭ টি আশ্রয় কেন্দ্রে প্রায় ১০২৩ জন মানুষ রয়েছে। ২৯ টি মেডিকেল টিম মাঠে কাজ করছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মীরা রানী দাস বলেন, কবিরহাট, সুবর্ণচর ও সদর উপজেলায় বীজতলা ও সবজি আক্রান্তের হার অপেক্ষাকৃত বেশি। সেনবাগ এবং সুবর্ণচরের তুলনায় কবিরহাট উপজেলায় পানি ধীর গতিতে সরছে। পানি সরে গেলে ক্ষতির পরিমাণ কমে আসবে। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সার্বক্ষণিক মাঠ পর্যায়ে থেকে কৃষকদের ফসল যাতে রক্ষা করা যায় সে বিষয়ে বুদ্ধি-পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।
ফেনীর তিনটি উপজেলায় বন্যাকবলিত হাজারও মানুষ আশ্রয়ণ থেকে ফিরে নতুন করে নেমেছেন বেঁচে থাকার যুদ্ধে। বন্যার পানি নেমে গেলেও ঘরে ফিরে নতুন সংকটে পড়েছেন ফেনীর দুর্গত এলাকার মানুষ। কর্দমাক্ত ঘরবাড়ি, ভাঙাচোরা আসবাবপত্র আর পঁচে যাওয়া খাদ্যসামগ্রী নিয়ে শুরু হয়েছে বেঁচে থাকার নতুন লড়াই।
পানি নামলেও অনেক এলাকায় এখনো বিদ্যুৎ নেই । ইতোমধ্যে ৯ হাজার ৭৬ জন আশ্রয় কেন্দ্র ত্যাগ করে নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে নতুন করে বেঁচে থাকার সংগ্রাম শুরু করেছে।
গত সোমবার (৮ জুলাই) থেকে টানা বৃষ্টি এবং ভারতের ত্রিপুরা সীমান্ত হয়ে আসা পাহাড়ি ঢলে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে। এতে ফুলগাজী, পরশুরাম, ছাগলনাইয়া ও ফেনী সদর উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। এতে ১৩৭টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে, এর মধ্যে ১৩১টি গ্রাম থেকে পানি নেমে গেছে। ছয়টি গ্রামে এখনো পানি আছে।
শনিবার (১২ জুলাই) ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়ার দুর্গত এলাকা ঘুরে দেখেন ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা উপদেষ্টা ফারুক ই আজম। স্থানীয় জনগণ তাকে বলেছেন, ত্রাণ লাগবে না, শুধু বাঁধ দিন। তিনি বলেন, দুটোরই দরকার। এখন মানুষকে বাঁচাতে হবে ত্রাণ দিয়ে, পরে জীবন ও জীবিকার জন্য লাগবে টেকসই বেড়িবাঁধ।’
জেলা প্রশাসনের তথ্যানুযায়ী, বন্যায় ফেনী জেলায় কমপক্ষে দেড় লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েন এবং ১ হাজারের বেশি ঘরবাড়ি আংশিক বা সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতি হয়েছে ফসল, সড়ক, সেতু ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের।
জেলা কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ বিভাগের দেওয়া তথ্য মতে, এবারের বন্যায় মৎস্যে প্রায় ১০ কোটি টাকার মৎস্যের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কৃষিতে ৫ হাজার ৫৬৪ দশমিক ৬১ হেক্টর ফসলি জমি দুর্যোগে আক্রান্ত ও প্রাণিসম্পদে ৬৪ লাখ ৮৮ হাজার ৭৫০ টাকা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পুরোপুরি পানি নেমে যাওয়ার পরই ক্ষয়ক্ষতির চূড়ান্ত পরিমাণ তুলে ধরা হবে বলে জানান সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা।
ফেনী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও মৎস্য বিভাগ সূত্র জানায়, বন্যার ফলে ফেনীর পরশুরাম, ফুলগাজী, ছাগলনাইয়া, দাগনভূঞা, সোনাগাজী ও সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ৮৫৫ হেক্টর আউশ, ৫৫৭ হেক্টর গ্রীষ্মকালীন সবজি, ৬৯৪ হেক্টর আমনের বীজতলার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অন্যান্য ফসলসহ জেলায় ৩৬৭০ হেক্টের ফসলি জমি দুর্যোগে আক্রান্ত হয়েছে। অন্যদিকে বন্যায় ফেনীর ছয়টি উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ২ হজার ৩০০টি পুকুর, দিঘি ও মৎস্য খামারের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, এবার মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পরশুরামে ১৯টি ও ফুলগাজীতে ১৭টিসহ মোট ৩৬টি স্থানে ভেঙেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ফেনীর নির্বাহী প্রকৌশলী আক্তার হোসেন বলেন, ‘মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বাঁধে আমরা জরুরি ভিত্তিতে জিওব্যাগ ফেলে বাঁধ রক্ষার চেষ্টা করেছি। তবে টেকসই বাঁধ ও নদী খননের কাজ দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হতে হবে।
ফুলগাজী উপজেলার কমুয়া এলাকার খামারি মো. হারুন বলেন, গত বছরের বন্যায় অন্তত ২০ লাখ টাকার বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। এবারও পানিতে ডুবে মুরগি মারা গেছে। মাছের ঘের পানিতে ভেসে গেছে। প্রতিবারই বাঁধ ভাঙে, পানি আসে, তারপর সকলে আশ্বাস দেয়। এসব এ জনপদে নিয়মে পরিণত হয়েছে।
ফুলগাজী বাজারের শ্রীপুর সড়কে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে অন্তত ১৫টি দোকান। দোকান হারানো ব্যবসায়ীরা এখনো নদীপাড়ে দাঁড়িয়ে খুঁজে ফিরছেন তাদের জীবিকার স্থান। স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. আবদুল আলিম বলেন, এক দিনে দোকান গেল নদীতে। এত বছর দোকানের আয় দিয়ে সংসার চালাতাম। এখন হাওয়ার মধ্যে দাঁড়িয়ে আছি। সংসারে একমাত্র আয় ছিল দোকানটি, এখন পুরো পরিবার নিয়ে চিন্তায় আছি।
ফুলগাজী উপজেলার গজারিয়া গ্রামের গৃহবধূ রোজিনা আক্তার বলেন, পানি নেমে গেছে, কিন্তু ঘরে ঢোকা যাচ্ছে না। মাটি, কাদা, পঁচা খাবারের গন্ধে শিশুদেরও অসুস্থ লাগছে। আশ্রয়কেন্দ্রেও এখন তেমন কিছু নেই।’
ফেনীর জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, জেলায় ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সাড়ে ২৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের কাছে শুকনো খাবার, গো-খাদ্য ও শিশু খাদ্যের আরও ৪০ লাখ টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।
তিতাস গ্যাস কর্তৃক গ্যাসের অবৈধ ব্যবহার শনাক্তকরণ এবং উচ্ছেদ অভিযান কার্যক্রম চলমান রয়েছে। নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে গত ১৩ জুলাই (রবিবার) ২০২৫ তারিখে বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জনাব সৈকত রায়হান, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ বিভাগ -এর নেতৃত্বে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিসন এন্ড ডিষ্ট্রিবিউশন পিএলসি -এর আঞ্চলিক বিক্রয় বিভাগ -জয়দেবপুর, জোবিঅ -টংগী -এর আওতাধীন দাউদপুর, রুপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ এলাকার ১টি স্পটে অভিযান পরিচালিত হয়েছে। অভিযানে আনুমানিক ৪০০ টি বাড়ির ৫০০ টি আবাসিক ডাবল চুলার গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। এ সময় ২" ব্যাসের আনুমানিক ১,০০০ ফুট লাইন পাইপ ও ১/২" ব্যাসের আনুমানিক ৩০০ ফুট হোস পাইপ অপসারণ/জব্দ করা হয়েছে।
একই দিনে, জনাব হাসিবুর রহমান, সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ-এর নেতৃত্বে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিসন এন্ড ডিষ্ট্রিবিউশন পিএলসি -এর আঞ্চলিক বিক্রয় বিভাগ -সোনারগাঁও, জোবিঅ -সোনারগাঁও -এর আওতাধীন নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও উপজেলার পিরোজপুরের সোনারগাঁও ইকোনোমিক জোনের পার্শ্ববর্তী এলাকার ৩টি স্পটে অভিযান পরিচালিত হয়েছে। অভিযানে ৩ টি অবৈধ চুনা কারখানার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। এ সময় ১.৫" ব্যাসের আনুমানিক ১২০ ফুট লাইন পাইপ অপসারণ/জব্দ করা হয়েছে। এছাড়াও ১.৫" পিভিসি পাইপ উৎসস্থলে বিনষ্ট করা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের সহায়তায় পানি স্প্রে করে চুনা ভাট্টির মালামাল নষ্ট করা হয়েছে এবং এক্সকেভেটরের মাধ্যমে মালামাল গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি অবৈধ বিতরণ লাইন উৎস পয়েন্ট হতে কিলিং/ ক্যাপিং করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, সেপ্টেম্বর, ২০২৪ হতে গত ১৩ জুলাই, ২০২৫ তারিখ পর্যন্ত অভিযান পরিচালনা করে ২৭৪টি শিল্প, ২৭৩টি বাণিজ্যিক ও ৪৬,৬১৯টি আবাসিকসহ মোট ৪৭,১৬৬টি অবৈধ গ্যাস সংযোগ ও ১,০০,৬৬৭টি বার্নার বিচ্ছিন্ন সহ উক্ত অভিযানসমূহে ১৯৩ কিলোমিটার পাইপলাইন অপসারণ করা হয়েছে।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) গত জুন-২০২৫ মাসে দেশের সীমান্ত এলাকাসহ অন্যান্য স্থানে অভিযান চালিয়ে সর্বমোট ১৩৬ কোটি ৯ লক্ষ ৬২ হাজার টাকা মূল্যের বিভিন্ন প্রকারের চোরাচালান পণ্যসামগ্রী জব্দ করতে সক্ষম হয়েছে।
জব্দকৃত চোরাচালান দ্রব্যের মধ্যে রয়েছে ৪ কেজি ৩৩৮ গ্রাম স্বর্ণ, ১৩,৩৭২টি শাড়ী, ৩,৫০০টি থ্রিপিস/শার্টপিস/চাদর/কম্বল, ৫৪৮টি তৈরী পোশাক, ২,১৪৭ মিটার থান কাপড়, ২,২৫,০৯৬টি কসমেটিক্স সামগ্রী, ৪,৫৭৮টি ইমিটেশন সামগ্রী, ৬,৬৪,৫০৮টি আতশবাজি, ৬,৩৪৫ ঘনফুট কাঠ, ৪,৯০৩ কেজি চা পাতা, ৩১,৯৭৪ কেজি সুপারি, ১৭,৭৬৯ কেজি সার, ১০,৫৪০ কেজি কয়লা, ১৯,২০৪ কেজি সুতা/কারেন্ট জাল, ১,৩২৮টি মোবাইল, ১,৮৫০টি মোবাইল কভার, ৩৭,৫৪১টি মোবাইল ডিসপ্লে, ১৫,৫১৯টি চশমা, ২,১৮২ কেজি বিভিন্ন প্রকার ফল, ৫,৮৪৪ কেজি ভোজ্য তেল, ১,০০০ লিটার ডিজেল, ৩,১৮২ কেজি জিরা, ১,৩৩৬ প্যাকেট বিভিন্ন প্রকার বীজ, ৭,৪৯২ পিস চিংড়ি মাছের পোনা, ১,১৫০ কেজি কফি, ৫,৪৭,২৪৬ পিস চকোলেট, ৭৭৭টি গরু/মহিষ, ১টি কষ্টি পাথরের মূর্তি, ৩টি বাস, ১০টি ট্রাক/কাভার্ড ভ্যান, ৩টি পিকআপ/মাহেন্দ্র, ৭টি প্রাইভেটকার/মাইক্রোবাস, ১৩৮টি নৌকা, ২৭টি সিএনজি/ইজিবাইক, ৬৪টি মোটরসাইকেল এবং ৩৯টি বাইসাইকেল।
উদ্ধারকৃত অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে ২টি দেশীয় পিস্তল, ১টি বিদেশী পিস্তল, ২টি দেশীয় একনাল বন্দুক, ৩টি শটগান, ৩টি মর্টার শেল, ১৯টি গুলি এবং ৪টি হ্যান্ড গ্রেনেড।
এছাড়াও গত মাসে বিজিবি কর্তৃক বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য জব্দ করা হয়েছে। জব্দকৃত মাদক ও নেশাজাতীয় দ্রব্যের মধ্যে রয়েছে ১২,৬৮,০১৫ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, ৭ কেজি ৯২৫ গ্রাম হেরোইন, ১ কেজি ৪৩০ গ্রাম কোকেন, ৮,২৭২ বোতল ফেনসিডিল, ১০,৯৪০ বোতল বিদেশী মদ, ৩৯৩.৫ লিটার বাংলা মদ, ১,৪৩৫ বোতল ক্যান বিয়ার, ১,৬৯৮ কেজি ৭০৭ গ্রাম গাঁজা, ১,২৪,৫৮৭ প্যাকেট বিড়ি ও সিগারেট, ২,৬৪৯ কেজি তামাক পাতা, ৫৩,৯৩৫টি নেশাজাতীয় ট্যাবলেট/ইনজেকশন, ৪,৭৭০ বোতল ইস্কাফ সিরাপ, ১৭ বোতল এলএসডি, ১২,৩৭৬টি এ্যানেগ্রা/সেনেগ্রা ট্যাবলেট এবং ৯,৬১,০৩৩ টি বিভিন্ন প্রকার ঔষধ ও অন্যান্য ট্যাবলেট।
সীমান্তে বিজিবি’র অভিযানে ইয়াবাসহ বিভিন্ন প্রকার মাদক পাচার ও অন্যান্য চোরাচালানে জড়িত থাকার অভিযোগে ১৯৭ জন চোরাচালানী এবং অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রমের দায়ে ১৫৫ জন বাংলাদেশী নাগরিক ও ৭ জন ভারতীয় নাগরিককে আটকের পর তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টাকালে ৩৩৫ জন মায়ানমার নাগরিককে নিজ দেশে ফেরত প্রদান করা হয়েছে।
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে শ্যামল ছায়া বাসের চাপায় জুয়েল মিয়া (৪৫) নামের অটোরিকসার যাত্রী নিহত হয়েছেন। এই ঘটনায় চালকসহ ৩ জন আহত। নিহত ব্যক্তি উপজেলার বাশঁগাড়ি গ্রামের জালাল মিয়ার ছেলে। তিনি পেশায় একজন নির্মাণ শ্রমিক হিসাবে কাজ করতেন।
সোমবার সকাল সাড়ে ৮ টার দিকে ভৈরব-কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কের পান্নাউল্লাহচর এলাকায় দুর্ঘটনাটি ঘটেছে ।
স্থানীয় ও পুলিশ সুত্রে জানা যায়, সকালের দিকে উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের বাঁশগাড়ী এলাকা থেকে একটি ব্যাটারি চালিত অটোরিকসায় চড়ে কাজে যাচ্ছিলেন নির্মাণ জুয়েল মিয়াসহ আরো ২ জন শ্রমিক। অটোরিকসাটি যখন ভৈরব-কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কে উঠবে ঠিক সে মুহুর্তে ময়মনসিংহগামী শ্যামল ছায়া নামের ( ঢাকা মেট্রো -ব -১১৪১১৭) একটি বাস চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই একজনের মৃত্যু হয়। এসময় গুরুতর আহতদের উদ্ধারর করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিতসরা তাদেরকে ঢাকায় রেফার্ড করেন।
এ বিষয়ে ভৈরব থানার এসআই রুকনুজ্জামান বলেন, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থল থেকে জুয়েল মিয়া নামের একজন নির্মাণ শ্রমিকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ধারণা করা হচ্ছে অটোরিকসাটি আঞ্চলিক সড়কে উঠার সময়ে সামনের দিক থেকে আসা দ্রুত গতির বাসের চাপায় অটোরিকসার যাত্রী নিহত হয়েছেন। এই ঘটনায় নিহতের স্বজনের অভিযোগের ভিত্তিতে পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।