শহীদুল ইসলাম
ফেসবুকে ‘কুরুচিপূর্ণ ভাষায়’ কবিতা লিখে চাকরি থেকে বরখাস্ত হয়েছেন একজন সিনিয়র সহকারী সচিব। অথচ সরকারি প্রকল্পের ৪৩ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে ওই টাকা ফেরত দেয়ার ‘শাস্তি’ পেয়েছেন একজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, এর সঙ্গে দুই বছর নিচের পদের বেতন পাবেন তিনি।
ক্ষমতার অপব্যবহার, সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, নৈতিক স্খলন, দায়িত্বে অবহেলা, ছুটি শেষে কর্মস্থলে যোগ না দেয়া, ঠিকমতো অফিসে উপস্থিত না থাকা, অনুমতি না নিয়ে বিদেশ ভ্রমণ, পত্রিকা ও ফেসবুকে নিবন্ধ-কবিতা লিখে এবং অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে শাস্তি পাচ্ছেন জনপ্রশাসনের কর্মকর্তারা। এদের কেউ কেউ গুরুদণ্ডের অপরাধ করেও পাচ্ছেন লঘুদণ্ড। কেউবা লঘু পাপ করেও পেয়েছেন বড় সাজা।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ২০২১ সাল থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত অনিয়ম-দুর্নীতি ও দায়িত্বে অবহেলার জন্য শাস্তি পেয়েছেন ৩৬ জন কর্মকর্তা। তাদের একজন অতিরিক্ত সচিব, দুইজন যুগ্মসচিব, ১৮ জন উপসচিব, ৯ জন সিনিয়র সহকারী সচিব, পাঁচজন সহকারী সচিব এবং একজন ইউএনও সাজা পেয়েছেন। অভিযোগ ওঠার পর তদন্ত করে কয়েকজনকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতিও দেয়া হয়েছে।
সিনিয়র সহকারী সচিব সাইদুর রহমান ২০২০ সালের ৮ অক্টোবর নিজের ফেসবুকে রহমান ‘হেনরী’ ছদ্মনামে একটি কবিতা পোস্ট করেন। এই কর্মকর্তাকে সাজা দিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, তিনি কুরুচিপূর্ণ, অশোভন ও আপত্তিকর কবিতা প্রকাশ করেন, যা একদিকে একজন সরকারি কর্মচারীর অশোভন আচরণ এবং অন্যদিকে এর মাধ্যমে প্রশাসনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। সরকারপ্রধানকে ইঙ্গিত করে কুরুচিপূর্ণ ভাষায় কবিতাটি প্রকাশ করেছেন বলেও তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়। এ জন্য পিএসসির অনুমোদন নিয়ে ওই কর্মকর্তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়।
গাইবান্ধা সদরের ইউএনও থাকাকালে মোহাম্মদ শফিকুর রহমানের বিরুদ্ধে গুচ্ছগ্রাম দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রকল্প থেকে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ তদন্তে প্রমাণ হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে আত্মসাৎ করা ৪৩ লাখ ৩৩ হাজার ৩৮০ টাকা তার বেতনভাতা থেকে পরিশোধ এবং দুই বছর নিম্নপদে অবনমনের দণ্ড দেয়া হয় তাকে।
এর আগে ২০১৯ সালের ১৩ মার্চ মধ্যরাতে এক সাংবাদিককে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে কারাদণ্ড দেন কুড়িগ্রামের তৎকালীন ডিসি মোছা. সুলতানা পারভীন। আলোচিত এই ঘটনা তদন্ত করে সুলতানাকে গুরুদণ্ড দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। পরে দুই বছরের জন্য তার বেতন বৃদ্ধি স্থগিত রাখার লঘুদণ্ড দেয়া হয়। তিনি শাস্তি পুনর্বিবেচনার আবেদন করলে রাষ্ট্রপতি দণ্ড বাতিল করে অভিযোগ থেকে তাকে অব্যাহতি দেন।
অফিসের নারী সহকারীর সঙ্গে জামালপুরের তৎকালীন ডিসি আহমেদ কবীরের আপত্তিকর ভিডিও প্রকাশের পর তদন্তে নৈতিক স্খলনজনিত অভিযোগ প্রমাণ হয়। এরপর কবীরের বেতন তিন বছরের জন্য নিম্নতম গ্রেডে নামিয়ে দেয়ার দণ্ড দেয়া হয়।
নাটোরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক থাকাকালে জয়কালী দিঘি বন্দোবস্ত দেন ইফতেখারুল ইসলাম খান। বেআইনিভাবে এই বন্দোবস্ত দেয়ায় সহায়তা করায় সরকারের এক কোটি ২৬ লাখ ৯ হাজার ৫১২ টাকার রাজস্ব ক্ষতি হয় বলে তদন্তে প্রমাণ হয়। এরপর ওই কর্মকর্তাকে এক বছরের জন্য বেতন গ্রেডের নিম্নতম ধাপে নামিয়ে দেয়ার দণ্ড দেয়া হয়।
স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য তথ্য গোপন করে নিজের বাবার নাম প্রস্তাব করায় খুলনা জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আছাদুজ্জামানকে তিরস্কারের লঘুদণ্ড দেয়া হয়েছে। অথচ হত্যা মামলায় নিজের বাবার জেল খাটার তথ্য গোপন করে সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছিলেন তিনি। এই কর্মকর্তার বাবাকে এবারের স্বাধীনতা পদকের জন্য মনোনীত করেও সমালোচনার মুখে তা বাতিল করা হয়।
আগের বিধিমালা অনুযায়ী দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণ হলে কাউকে চাকরিতে রাখার সুযোগ ছিল না। কিন্তু ২০১৮ সালে প্রণিত নতুন বিধিমালায় দুর্নীতিগ্রস্তদেরও লঘুদণ্ড দেয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। এর ফলে তদন্ত কর্মকর্তা চাইলে যেকোনো অপরাধের জন্য যে কাউকে লঘুদণ্ড দিতে পারেন। কোন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত হচ্ছে, সেটি মাথায় রেখে অনেক সময় দণ্ডের মাত্রায় হেরফের হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে এসব ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাবও কিছুটা কাজ করে বলে মনে করেন অনেক সরকারি কর্মকর্তা।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, অভিযোগ ওঠার পর প্রথমে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়। জবাব সন্তোষজনক না হলে করা হয় বিভাগীয় মামলা। পরে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়ে অভিযোগ খতিয়ে দেখা হয়। দণ্ড দেয়ার আগে ফের শুনানি করা হয়। অনেক সময় সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) অনুমোদন নেয়া হয়। বিসিএস ক্যাডারের কর্মকর্তাদের দণ্ড দেয়ার আগে রাষ্ট্রপতিরও অনুমোদন নিতে হয়।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, অপরাধ প্রমাণ হওয়ার পরও বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে তিরস্কারের সাজা দেয়া হয়েছে। গুরুদণ্ড দেয়ার মতো অপরাধ করেছেন বলে তদন্তে প্রমাণ হলেও দেয়া হয়েছে লঘুদণ্ড। এ ছাড়া বেতন স্কেলের নিম্নতর ধাপে নামিয়ে দেয়া এবং নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বেতন বৃদ্ধি স্থগিত রাখার দণ্ড দেয়া হয়েছে। ২০২১ সাল থেকে গত আগস্ট পর্যন্ত একজনকে চাকরি থেকে বরখাস্ত এবং ছুটির মেয়াদ শেষেও চাকরিতে যোগ না দেয়ায় দুইজনকে বাধ্যতামূলক অবসর দেয়া হয়েছে। গুরু পাপে কয়েকজনকে লঘুদণ্ড দেয়া হলেও দণ্ড পুনর্বিচেনার আবেদন করার পর রাষ্ট্রপতি তাদের সাজা মওকুফ করে দিয়েছেন।
সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা অনুযায়ী কর্মকর্তাদের তিরস্কার, নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য পদোন্নতি না দেয়া ও বেতন বৃদ্ধি স্থগিত রাখা এবং বেতন গ্রেডের নিম্নতম ধাপে নামিয়ে দেয়ার মতো লঘুদণ্ড দেয়া যায়। আর গুরুদণ্ড হিসেবে নিম্নপদ বা বেতন গ্রেডে নামিয়ে দেয়া, বাধ্যতামূলক অবসর, চাকরি থেকে অপসারণ এবং চাকরি থেকে বরখাস্ত করা যায়।
শুধু বিভাগীয় ব্যবস্থার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকায় সরকারি কর্মকর্তাদের অনিয়মে জড়ানোর হার কমছে না বলে মনে করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। দৈনিক বাংলাকে তিনি বলেন, সরকারি কর্মকর্তাদের একাংশ যে সরকারের বিধিবিধান লঙ্ঘন করেন, তা তাদের কর্তৃপক্ষও জানে। এটা অব্যাহতভাবে চলছে। বিভাগীয় মামলার পাশাপাশি প্রচলিত আইনেও তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নেয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।
তার মতে, যখন কোনো অপরাধের বিচার হয় না, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয় না, তখন সেসব অপরাধ বাড়তেই থাকে। কেউ যেহেতু আইনের ঊর্ধ্বে নন, তাই এ ধরনের অপরাধে জড়িতদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলার পাশাপাশি আইনি প্রক্রিয়ায় যাওয়া উচিত।
ইফতেখারুজ্জামান মনে করেন, দুর্নীতি দমন কমিশনকে পদক্ষেপ নেয়ার মতো সুযোগ করে দিতে হবে। দুর্নীতি দমন কমিশনও কখনো কখনো স্বপ্রণোদিতভাবে ব্যবস্থা নিতে পারে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের শৃঙ্খলা ও তদন্ত অনুবিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, কাউকে লঘু দণ্ড দেয়া হলেও ওই দণ্ড যত দিন না কার্যকর হচ্ছে ততদিন তিনি পদোন্নতির জন্য বিবেচনায় আসবেন না। কেউ তিরস্কারের দণ্ড পেলেও চাকরিতে তার প্রভাব পড়বে।
ওই কর্মকর্তা জানান, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় দণ্ড আরোপ করে প্রজ্ঞাপন জারির পর কেউ সংক্ষুব্ধ হলে প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল এবং রাষ্ট্রপতির কাছে আপিল করতে পারেন। সেখানে সাড়া না পেলে প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনাল এবং সুপ্রিম কোর্টে আপিল করার সুযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন দৈনিক বাংলাকে বলেন, তদন্ত কর্মকর্তাকে অভিযোগগুলো প্রমাণ করতে হয়। লোকমুখে অনেক সময় অনেক কথা শোনা যায়, কিন্তু সে সবের প্রমাণ থাকে না। যে অভিযোগের ভিত্তিতে শাস্তি দেয়া হবে, আদালতে গেলেও কিন্তু সেটা প্রমাণ করতে হবে। অনেক সময় তদন্ত কমিটি স্পটে গিয়ে তদন্ত করে। অপরাধ প্রমাণের পর গুরু ও লঘু দণ্ড দেয়া হয়। অনেকের চাকরিও চলে যায়।
কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হলে ছাড় দেয়া হয় না দাবি করে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এখানে জিরো টলারেন্স, অপরাধী অপরাধীই। আমাদের তদন্ত কারো পছন্দ না হলে দুদকে ও কোর্টে যেতে পারে। আমাদের কাছে যতটুকু তথ্য থাকে তার আলোকেই আমরা তদন্ত করে শাস্তি দিয়ে থাকি।’
মায়ানমার থেকে পণ্যের বিনিময়ে মাদক পাচারের সময় বিপুল পরিমাণ পণ্যসামগ্রীসহ তিনজন পাচারকারীকে আটক করেছে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড।
রবিবার (২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫) দুপুরে কোস্ট গার্ড মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সিয়াম-উল-হক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১টায় কোস্ট গার্ড আউটপোস্ট শাহপরী কর্তৃক মায়ানমারের নাইক্ষ্যনদিয়া সংলগ্ন সমুদ্র এলাকায় একটি বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় একটি সন্দেহজনক কাঠের বোটে তল্লাশি চালিয়ে অবৈধভাবে শুল্ক-কর ফাঁকি দিয়ে মায়ানমারে পাচারের সময় প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা মূল্যের পণ্যসামগ্রী জব্দ করা হয়।
জব্দকৃত পণ্যসামগ্রীর মধ্যে রয়েছে— ৮৩ বস্তা সিমেন্ট, ৮৫ বস্তা সার ও ৩৪০ লিটার সয়াবিন তেল। এ সময় পাচার কাজে ব্যবহৃত কাঠের বোটসহ তিনজন পাচারকারীকে আটক করা হয়।
কোস্ট গার্ড জানায়, জব্দকৃত মালামাল, আটককৃত পাচারকারী ও বোটের বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সিয়াম-উল-হক আরও বলেন, “চোরাচালান রোধকল্পে কোস্ট গার্ড ভবিষ্যতেও এ ধরনের অভিযান অব্যাহত রাখবে।”
জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। রবিবার ২১ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে পৌরসভার তাড়িয়াপাড়া এলাকার একটি মন্দিরে এ ঘটনা ঘটে।
মন্দির কমিটি জানায়, আসন্ন দুর্গাপূজার জন্য সাতটি প্রতিমা নির্মাণ করা হয়েছিল। পূজার সব আয়োজন শেষ করে প্রতিমা শিল্পীদের বিদায় দেওয়া হয় শনিবার রাতে। কিন্তু রাতের অন্ধকারে দুর্বৃত্তরা মন্দিরে ঢুকে প্রতিমা গুলোর মাথা সহ বিভিন্ন অংশ ভেঙে ফেলে পালিয়ে যায়।
আজ রবিবার সকালে মন্দির কমিটির সদস্যরা এসে প্রতিমাগুলো ভাঙা অবস্থায় দেখতে পান। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এবং সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে অভিযুক্ত হাবিবুর রহমান (৩৫) নামে এক ব্যক্তিকে আটক করেন। তিনি পৌরসভার শিমলা পল্লী গ্রামের সোহরাব মিস্ত্রির ছেলে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইয়াহিয়া আল মামুন জানান, দুর্গাপূজা শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপন নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।
ঘটনাটি এলাকায় ব্যাপক ক্ষোভ ও আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। স্থানীয়রা দ্রুত দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জে শোভাযাত্রা, আলোচনাসভা ও তথ্যচিত্র উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে উদযাপন করা হয়েছে আন্তর্জাতিক শান্তি দিবস। রবিবার সকালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে থেকে বের হয় শোভাযাত্রা। এতে নেতৃত্ব দেন জেলা প্রশাসক ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা স্কাউটস এর সভাপতি মো. আব্দুস সামাদ।
শোভাযাত্রায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা স্কাউটস এর কমিশনার ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো: নকিব হাসান তরফদার, জেলা স্কাউটসের সহকারী কমিশনার আসরাফুল আম্বিয়া সাগর, যুগ্ন সম্পাদক মারুফুল হক, জেলা স্কাউটস লিডার খসরু পারভেজ, সহকারী লিডার ট্রেনার কে এ এম মাহফুজুর রহমান, জেলা কাব লিডার রাকিব উদ্দিন আহমেদসহ বিভিন্ন ইউনিট লিডাররা স্কাউট ও গার্ল ইন স্কাউট সদস্যদের সাথে অংশ নেন।
শোভাযাত্রা শেষে জেলা স্কাউটস ভবনে দিবসটির উপর তথ্যচিত্র উপস্থাপন করা হয়। পরে আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে শেষ হয় আয়োজন।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে যোগ দিতে আজ দিবাগত রাতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন।
সফর সূচি অনুযায়ী, তিনি ২২ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে পৌঁছবেন এবং ২৬ সেপ্টেম্বর সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভাষণ দেবেন। প্রধান উপদেষ্টা ২ অক্টোবর দেশে ফেরার কথা রয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মদ বাসসকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সফরে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে চারজন রাজনৈতিক নেতা থাকছে—বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির।
এর আগে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, প্রধান উপদেষ্টা বিগত এক বছরে দেশে সংঘটিত সংস্কার এবং আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে একটি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার বিশ্ব নেতাদের সামনে তুলে ধরবেন।
এ ছাড়া তিনি আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতির সভাপতিত্বে ‘হাই লেভেল কনফারেন্স অন দ্য সিচুয়েশন অব রোহিঙ্গা মুসলিমস অ্যান্ড আদার মাইনোরিটিস ইন মিয়ানমার’ শীর্ষক এক উচ্চপর্যায়ের সভায়ও অংশ নেবেন।
চট্টগ্রামে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের সম্পত্তির নথিপত্রের সন্ধানে তার স্ত্রী রুকমিলা জামানের ব্যক্তিগত গাড়িচালক ইলিয়াস তালুকদারের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে প্রায় ২৩ বস্তা নথিপত্র উদ্ধার করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
শনিবার রাত সাড়ে তিনটা থেকে রোববার ভোর পাঁচটা পর্যন্ত চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার শিকলবাহা ইউনিয়নে এই অভিযান পরিচালনা করেন দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. মশিউর রহমান।
উপ-পরিচালক মশিউর রহমান বলেন, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের স্ত্রীর ব্যক্তিগত গাড়িচালকের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে প্রায় ২৩ বস্তা কাগজপত্র সহ বিভিন্ন নথিপত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
দুদকের এই কর্মকর্তা আরো জানান, সাবেক ভূমিমন্ত্রীর মালিকানাধীন আরামিট গ্রুপসহ তার বিভিন্ন সম্পত্তি সংক্রান্ত মোট ২৩ বস্তা ডকুমেন্টস গত ১৬ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম নগরীর কালুরঘাট আরামিট গ্রুপের শিল্প প্রতিষ্ঠান থেকে রুকমিলা জামানের ব্যক্তিগত গাড়িচালক ইলিয়াস তালুকদারের বাড়িতে এনে রাখা হয়েছিল।
দুদক কর্মকর্তারা জানান, অর্থ পাঁচার, অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং ঘুষ লেনদেনের অভিযোগে সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ১২৪ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ছয়টি মামলা দায়ের করেছে।
মামলার সূত্র ধরে গত বুধবার রাতে চট্টগ্রাম নগরের ডবলমুরিং এলাকায় অভিযান চালিয়ে সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের দুই সহযোগী মো. আব্দুল আজিজ ও উৎপল পালকে আটকের পর রিমান্ডে নিলে জিজ্ঞাসাবাদে দুদক জানতে পারে সাইফুজ্জামানের স্ত্রী রুকমিলা জামানের ব্যক্তিগত গাড়িচালক ইলিয়াস তালুকদারের বাড়িতে অসংখ্যা নথিপত্র লুকিয়ে রাখা হয়েছে। নথিপত্র উদ্ধারে প্রথম দফায় গত শুক্রবার সন্ধ্যায় বাড়িতে অভিযান চালিয়েছিল দুদক। তবে অভিযানের পূর্বেই নথিপত্র সরিয়ে নেওয়ায় শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছিল দুদককে। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ উদ্ধার করে দেখা যায়, নথিপত্র সরিয়ে ফেলতে। পরবর্তীতে রোববার রাত সাড়ে তিনটায় ফের অভিযানে নেমে ২৩ বস্তা নথিপত্র উদ্ধার করা হয়।
দুদকের উপপরিচালক মো. মশিউর রহমান বলেন, ঘটনাস্থল থেকে কাউকে আটক করা যায়নি। ড্রাইভার ইলিয়াস পলাতক রয়েছেন। এছাড়া ওসমান নামে যে প্রতিবেশীর ঘরে নথিগুলো সরানো হয়েছিল তিনিও পলাতক। সাবেক ভূমিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে চলমান তদন্তের অংশ হিসেবে এই অভিযান। উদ্ধার হওয়া নথিপত্র বিশ্লেষণ করে এবিষয়ে বিস্তারিতপরে জানানো হবে।
এদিকে, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এবং তার স্ত্রী রুকমিলা জামানের বিরুদ্ধে গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের জ্যেষ্ঠ মহানগর বিশেষ জজ মো. আবদুর রহমানের আদালতে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারি করতে আবেদন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এই বিষয়ে রোববার আদালত আদেশ দেওয়ার কথা রয়েছে। গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরপর গোপনে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান তৎকালীন আওয়ামী সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ।
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার বামন্দী ইউনিয়নে ১৯৯১-৯২ সালে নির্মিত উপকেন্দ্র পশু হাসপাতালটি দীর্ঘ ৩১ বছর ধরে বন্ধ পড়ে আছে। খুলনা বিভাগের ঐতিহ্যবাহী বামন্দী পশুহাটের পাশে অবস্থিত এই হাসপাতাল একসময় খামারি ও ব্যবসায়ীদের বড় ভরসা হলেও নির্মাণের কয়েক বছর পরই তা বন্ধ হয়ে যায়।
এখন হাসপাতাল চত্বর পরিণত হয়েছে বালুর ঘাট ও মাদকসেবীদের আড্ডাখানায়। খামারিদের দাবি, জেলার সর্বোচ্চ ভ্যাট প্রদানকারী বামন্দী পশুহাটের স্বার্থেই পশু হাসপাতালটি দ্রুত চালু করা জরুরি।
স্থানীয় ব্যবসায়ী নেতা ও পশুপালনকারীরা জানিয়েছেন, হাটে প্রতি সপ্তাহে ৮ থেকে ১০ হাজার গরু-ছাগল কেনাবেচা হয়। কিন্তু পশু অসুস্থ হলে চিকিৎসার জন্য খামারিদের ১০ কিলোমিটার দূরে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসে যেতে হয়, যা কষ্টসাধ্য ও ব্যয়বহুল।
গাংনী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. মোত্তালেব আলী বলেন, “দীর্ঘদিন অব্যবহৃত থাকার কারণে হাসপাতালটি এখন পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। তবে আমরা ইতিমধ্যে কাগজপত্র প্রস্তুত করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছি।”
স্থানীয়দের একটাই দাবি— দ্রুত সংস্কার করে বামন্দী পশু হাসপাতাল চালু করা হোক, যাতে খামারি ও ব্যবসায়ীরা উপকৃত হয়।
পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে দুই দেশের সিমান্তরক্ষী বাহিনীর যৌথ সম্মতিতে বিভিন্ন সময়ে অবৈধ পথে ভারতে গিয়ে কারাভোগ শেষে ১৮ জন বাংলাদেশি নাগরিককে ফেরত দিয়েছে বিএসএফ। গত শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার কাজিপুর সিমান্তের ১৪৭ নম্বর আন্তর্জাতিক মেইন পিলার কাছে বিজিবি সদস্যদের হাতে তাদের হস্তান্তর করা হয়। সকলেই বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার বাসিন্দা।
কুষ্টিয়া বিজিবি ৪৭ ব্যাটালিয়নের অধিন কাজিপুর বিওপির কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার শাহাব উদ্দিন জানান, দেশের বিভিন্ন সিমান্ত দিয়ে বাংলাদশি নাগরিকরা অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের সময় ভারতীয় সিমান্তরক্ষী বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে।
পরে তাদের বিভিন্ন মেয়াদে দেওয়া সাজা ভোগ শেষে গত শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে বিএসএফ সদস্যরা বিজিবিকে হস্তান্তর করে।
ফেরত আসা ১৮ জনের তথ্য যাচাই-বাছাই শেষে গাংনী থানায় সৌপর্দ করা হবে।
ভারতের গান্দিনা বিএসএফ ১১ ব্যাটালিয়ন ক্যাম্পের এসি সুনিল কুমার যাদবসহ অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিল।
ভারত থেকে কারাভোগ শেষে বাংলাদেশে ফেরত আসারা হলো, পটুয়াাখালী জেলার মেহেদী, চুয়াডাঙ্গার নুরজাহান, নড়াইলের ফরিদ শেখ, ঝিনাইদহের জিসান মণ্ডল, সাইদুল ইসলাম, চাঁদপুরের খোকন বেপারী, সাতক্ষীরার মাজেদা ঢালী, শামিম হোসেন, মিঠুন ঘোষ, খালিদা সরদার, মিলন কুমার, রাজশাহীর আব্দুল কুদ্দুস, যশোরের আহমেদ আলী, মৌলভীবাজারের লিটন দেব, চট্টগ্রামের শুভ মজুমদার, ঢাকার স্বাধীন রাজবংশী, মাদারিপুরের মহিউদ্দিন ফকির, নাসিমা শেখ কুষ্টিয়া।
ঝিনাইদহে রোপা আমন মৌসুমের শুরুতেই ধানের জমিতে দেখা দিয়েছে মাজরা পোকার আক্রমণ। সদ্য রোপণ করা চারাগুলো নষ্ট হয়ে যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। নানা কীটনাশক ব্যবহার করেও নিয়ন্ত্রণে আসছে না এ পোকা। এতে উৎপাদন খরচ যেমন বেড়ে যাচ্ছে, তেমনি ফলন নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। কৃষকদের আশঙ্কা, এভাবে চলতে থাকলে তারা মারাত্মক লোকসানের মুখে পড়বেন।
জানা গেছে, জেলার শৈলকুপা, সদর, কালীগঞ্জ, হরিণাকুন্ডু, মহেশপুর ও কোটচাঁদপুরসহ সব উপজেলাতেই একই পরিস্থিতি। ধান গাছের গোড়ায় আক্রমণ করছে মাজরা পোকা। এতে অনেক গাছ শুকিয়ে সাদা হয়ে যাচ্ছে। ফলে ব্যাহত হচ্ছে ধানের স্বাভাবিক বৃদ্ধি। কৃষকরা বলছেন, বারবার কীটনাশক স্প্রে করেও কোনো কার্যকর ফল পাওয়া যাচ্ছে না।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে ঝিনাইদহ জেলার ৬ উপজেলায় ১ লাখ ৪ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ হয়েছে। নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৬৪ হাজার ১৩৯ মেট্রিক টন। তবে মৌসুমের শুরুতেই পোকার এমন আক্রমণ কৃষি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রাকে ঝুঁকির মুখে ফেলেছে।
কালীগঞ্জ উপজেলার কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের কৃষির প্রধান ভরসা হচ্ছে আমন ধান। কিন্তু মৌসুমের শুরুতেই যদি পোকা আক্রমণ করে, তাহলে আমরা কীভাবে বাঁচব? সরকারি দিকনির্দেশনা আর সহযোগিতা ছাড়া আমাদের সামনে অন্ধকার ছাড়া কিছু নেই।’
শৈলকুপা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আরিফুজ্জামান বলেন, ‘এখনো আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। কৃষকরা যদি আমাদের নির্দেশনা মেনে চলেন, তাহলে পোকার আক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা ইতোমধ্যে মাঠ পর্যায়ে কাজ করছেন। আমরা কৃষকদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি।’
শ্যামনগরে অবৈধভাবে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে ভারত থেকে আসা ১ কোটি ২০ লাখ টাকা মূল্যের ওষুধ জব্দ করেছে বাংলাদেশ কোস্ট কার্ড কৈখালী। কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোনের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মুনতাসীর ইবনে মহসিন বলেন, একটি অসাধু চক্র ভারত থেকে বিপুল পরিমাণ ওষুধ বাংলাদেশে নিয়ে আসবে এমন প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে গত শুক্রবার দুপুরে কোস্ট গার্ড স্টেশন কৈখালী কর্তৃক সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর থানাধীন মীরগ্যাং ও তৎসংলগ্ন এলাকায় একটি বিশেষ অভিযানে শুল্ক কর ফাঁকি দিয়ে আসা প্রায় ১ কোটি ২০ লাক টাকা মূল্যের বিপুল পরিমাণ ভারতীয় ওষুধ জব্দ করা হয়।
চুয়াডাঙ্গায় একটি আবাসিক হোটেল থেকে মামুনুর রহমান মাসুম (৩৫) নামে এক প্রকৌশলীর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শনিবার দুপুরে মামুনের কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়। পরে ঘটনাস্থলে এসে নিহতের মরদেহ দেখতে পায় পুলিশ। নিহত মামুনুর রহমান মাসুম চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার কেদারগঞ্জ সবুজপাড়ার মুজিবর রহমানের ছেলে। তিনি পেশায় একজন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। অতিরিক্ত নেশা করার কারণে তার মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, মামুনুর রহমান পরিবারের সঙ্গে ঢাকায় বসবাস করতেন। গত বৃহস্পতিবার মামুন তিন বন্ধুর সঙ্গে চুয়াডাঙ্গায় ঘুরতে এসে আবাসিক হোটেলে ওঠেন। তারা তিনজনই নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ছিলেন। পরে মামুনের দুই বন্ধু চলে গেলেও তিনি হোটেলেই থেকে যান।
হোটেলের ম্যানেজার সাগর আলী জানান, সকালে হোটেলে এসে মামুনের মুখ দিয়ে ফেনা বের হতে দেখেন স্বজনরা। তখন জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল করে পুলিশকে খবর দেন তারা।
চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ওসি খালেদুর রহমান জানান, প্রাথমিক তদন্তে মরদেহে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। বিষয়টি সিআইডি ও পিআইবির টিম তদন্ত করবে।
চীনে উৎপাদনকারী মার্কিন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে দুটি জাহাজ কিনছে সরকার। আজ রোববার নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) সঙ্গে জাহাজ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান হেলেনিক ড্রাই বাল্ক ভেঞ্চারস এলএলসির চুক্তি স্বাক্ষর হবে। দেশের ইতিহাসে এবারই প্রথম বিএসসির নিজস্ব অর্থায়নে জাহাজ কেনা হচ্ছে। গত ১৭ আগস্ট দুটি বাল্ক ক্যারিয়ার জাহাজ ক্রয় সম্পর্কিত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সুপারিশ অনুমোদন করে। গত ৩ জুন এক হাজার ১৬২ কোটি ৯৬ লাখ টাকায় জাহাজ কেনার উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) অনুমোদন হয়। পরদিন অর্থাৎ ৪ জুন আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করে বিএসসি। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের এই প্রকল্পটি ২০২৭ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের কথা ছিল। সব কিছু ঠিক থাকলে চলতি বছরেই বাংলাদেশের বন্দরে ভিড়বে।
চাইলে বিএসসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমডোর মাহমুদুল মালেক বলেন, আগামী ৫ বছরে আমাদের মোট ২২টি জাহাজ সংগ্রহের লক্ষ্য রয়েছে। দুটি জাহাজ সংগ্রহের মধ্যদিয়ে এই কাজে গতি বাড়ছে। এরই মধ্যে অনেকেই আগ্রহ দেখাচ্ছে। নতুন দুই জাহাজ বিএসসিতে যুক্ত হলে বছরে ১৫০ কোটি টাকা ফরেন কারেন্সি (বৈদেশিক মুদ্রা) আয় বাড়বে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আমরা দক্ষ শিপিং সেবা দিতে পারব। একই বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ পরিবেশবান্ধব গ্রিন শিপিংয়ের সম্মান অর্জন করবে।
বিএসসি সূত্র বলছে, প্রস্তাবে আসা জাহাজগুলোর বিভিন্ন কারিগরি বিষয়াদি যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। সেই সঙ্গে মূল্যায়ন কমিটি সরেজমিনে জাহাজের নির্মাণ অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে। জাহাজের স্পেসিফিকেশন প্রস্তুত এবং জাহাজের কারিগরি মূল্যায়নে বিশেষজ্ঞ সেবা গ্রহণ করা হয়। তারপর কারিগরি ও আর্থিক মূল্যায়ন পরবর্তীতে হেলেনিক ড্রাই বাল্ক ভেঞ্চারসের প্রস্তাবিত দুটি জাহাজের মোট দাম ৭৬.৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে। এটি দাপ্তরিক প্রাক্কলিত মূল্য ৮০.৪০ মিলিয়নের চেয়ে ৪.৬০ শতাংশ কম।
বিএসসির বহরে যুক্ত হতে যাওয়া জাহাজগুলোতে- জ্বালানি খরচ হ্রাস ও পরিচালন দক্ষতা বেশি; বাতাসের বাধা কমিয়ে গতি ও জ্বালানি সাশ্রয় নিশ্চিত করে; হাইড্রোডাইনামিক ড্র্যাগ কমিয়ে জাহাজের গতি বৃদ্ধি ও জ্বালানি সাশ্রয় করে; প্রধান ইঞ্জিন থেকে নাইট্রোজেন অক্সাইড নির্গমন কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ করে, যা পরিবেশ দূষণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমায়; নকশা ও প্রযুক্তিগত সমাধানগুলো জ্বালানি সাশ্রয়ী, পরিবেশবান্ধব এবং আন্তর্জাতিক পরিবেশগত মানদণ্ডসম্মত এবং আন্তর্জাতিক মেরিটাইম সংস্থার নির্ধারিত সর্বশেষ পরিবেশগত মানদণ্ড পূরণ করে। জাহাজে উচ্চমানের ইউরোপীয় ও জাপানি যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়েছে। জার্মান লাইসেন্সে জাহাজগুলো চীনে উৎপাদন করা হয়েছে। স্পেনের পাম্প ও নরওয়ের কম্প্রেসার ব্যবহার করা হয়েছে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, চুক্তি স্বাক্ষরের পর আগামী অক্টোবরে প্রথম জাহাজ এবং আগামী ডিসেম্বরে দ্বিতীয় জাহাজ বিএসসিকে হস্তান্তর করা হবে। আধুনিক কারিগরি বৈশিষ্ট্য ও পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি সমৃদ্ধ এই দুটি জাহাজ বহরে যুক্ত হলে বিএসসির নিজস্ব পরিবহন সক্ষমতা প্রায় এক লাখ ২০ হাজার ডিডব্লিউটি বৃদ্ধি পাবে, যা দেশের সমুদ্র বাণিজ্যে একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন হবে।
৫৩ বছর আগে যাত্রা করা বিএসসির বহরে শুরুর দিকে মাত্র দুটি জাহাজ ছিল। এরপর বিভিন্ন সময়ে ৪৪টি যুক্ত হয়। তবে আয়ুষ্কাল ফুরিয়ে যাওয়ায় নব্বইয়ের দশকের শেষে ৩৬টিকেই পাঠানো হয় অবসরে। কমতে কমতে জাহাজের সংখ্যা আবারও দুটিতে নেমে আসে। ২০১৮ সালে চীনের কাছ থেকে কেনা ছয়টি যুক্ত হলে বিএসসির বহরে জাহাজের সংখ্যা দাঁড়ায় আটটিতে।
তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সময় ইউক্রেনে ‘বাংলার সমৃদ্ধি’ জাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গত বছরের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে অগ্নিকাণ্ডের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ‘এমটি বাংলার জ্যোতি’ ও ‘এমটি বাংলার সৌরভ’। পরে এ দুটি জাহাজ স্ক্র্যাপ হিসেবে বিক্রি করে দেওয়া হয়। ফলে বর্তমানে বিএসসির বহরে জাহাজের সংখ্যা কমে পাঁচটিতে নেমে এসেছে, যা সংস্থাটির নতুন জাহাজ সংগ্রহের প্রয়োজনীয়তা আরও বাড়িয়ে তুলে। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে বিএসসির জন্য আরেও তিনটি জাহাজ কেনার বিষয় প্রক্রিয়াধীন। সব মিলিয়ে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে বিএসসির জন্য পাঁচটি জাহাজ কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া দক্ষিণ কোরিয়ার কাছ থেকে আরও ছয়টি জাহাজ কেনার বিষয়েও প্রাথমিক অনুমোদন দিয়েছে বিএসসির পর্ষদ।
ময়মনসিংহের ভালুকা পৌরসভার ২নং ওয়ার্ড ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক সংলগ্ন এলাকায় কয়েক বছর ধরে সামান্য বৃষ্টিতেই দেখা দিচ্ছে জলাবদ্ধতা। ঘর-বাড়িতে পানি ঢুকে পড়ায় এলাকাবাসী নানামুখী দুর্ভোগে পড়ছেন প্রতিনিয়তই ।
ভুক্তভোগীরা জানান, পৌর এলাকার ২ নং ওয়ার্ডের তাহমিনা হাসপাতাল থেকে বাংলালিংক টাওয়ার পর্যন্ত রাস্তাজুড়ে বৃষ্টির পানি জমে থাকে দীর্ঘ সময়। অনেক বাসার নিচতলায়ও পানি প্রবেশ করছে। জলাশয় ভরাট, পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকা এবং ড্রেনেজ সমস্যার কারণে এ দুর্ভোগ দিন দিন বাড়ছে। এ অবস্থায় স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে বলেও জানান তারা। অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক নুরুল ইসলাম বলেন, আগে এই এলাকায় এমন সমস্যা ছিল না। কিন্তু এখন চারপাশের জলাশয় ভরাট হয়ে গেছে, ড্রেন নেই, পানি বের হওয়ার রাস্তা নেই। সামান্য বৃষ্টিতেই রাস্তা ঘাট ডুবে যায়। ঘরে পর্যন্ত পানি উঠে যায়।
গৃহিণী সালমা আক্তার জানান, রান্নাঘরে পানি ঢুকে গেলে চুলা জ্বালানোই যায় না। কখনো কখনো আমাদের বাইরে থেকে খাবার কিনে খেতে হয়। খরচও বাড়ে, কষ্টও হয়।
স্কুল শিক্ষার্থী মরিয়ম আক্তার জানান, পানি জমলে রাস্তায় হাঁটা যায় না। স্কুলে যেতে জামা-জুতো ভিজে যায়। অনেকে তাই স্কুলেই যায় না।
ভালুকা পৌর প্রশাসক ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. ইকবাল হোসাইন জানান, এই সমস্যার সমাধানে আমরা কাজ করার পরিকল্পনা নিয়েছি। তবে কিছু জমি সংক্রান্ত জটিলতা থাকায় আগে পদক্ষেপ নেওয়া যায়নি। এডিপির বরাদ্দ এলে আগামী অর্থবছরে রাস্তা ও ড্রেন নির্মাণসহ জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ শুরু করা হবে।
আসন্ন শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে কুমিল্লা মহানগরীর ১৩১টি পূজামণ্ডপে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে উপহার হিসেবে নগদ বিতরণ করা হয়েছে। শনিবার দুপুরে নগরীর ধর্মসাগর পাড়স্থ কুমিল্লা মহানগর বিএনপির কার্যালয়ে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই উপহার প্রদান করা হয়। প্রধান অতিথি হিসেবে উপহার বিতরণ করেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাজী আমিন উর রশিদ ইয়াসিন।
অনুষ্ঠানে মহানগরীর বিভিন্ন পূজামণ্ডপের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থেকে উপহার গ্রহণ করেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন কুমিল্লা মহানগর বিএনপির সভাপতি উদবাতুল বারি আবু, সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ মোল্লা টিপু, সাংগঠনিক সম্পাদক রাজিউর রাজিব, যুগ্ম সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শফিকসহ মহানগর ও ওয়ার্ড বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা।
বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) সবসময় দেশের মানুষের পাশে থেকেছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। ধর্ম যার যার, উৎসব সবার—এই মন্ত্রে বিশ্বাস করে বিএনপি। শারদীয় দুর্গাপূজা হচ্ছে বাঙালি সংস্কৃতির একটি বড় অংশ। এখানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে দলের পক্ষ থেকে প্রতিবারই বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা করা হয়ে থাকে।
হাজী আমিনুর রশিদ ইয়াসিন বলেন, “তারেক রহমান সব ধর্ম-বর্ণের মানুষের প্রতি সমান সহানুভূতি ও শ্রদ্ধা পোষণ করেন। কুমিল্লার ১৩১টি পূজামণ্ডপে আজকের এই উপহার প্রদান তারেক রহমানের আন্তরিক ভালোবাসারই বহিঃপ্রকাশ। বিএনপি বিশ্বাস করে—একটি সুস্থ ও সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে হলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করতেই হবে।”
অনুষ্ঠান শেষে পূজামণ্ডপ প্রতিনিধিরা বিএনপি ও তারেক রহমানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং বলেন, এ ধরনের উদ্যোগ উৎসবকে আরও আনন্দঘন করে তোলে।