দেশের বিভিন্ন স্থানে কালবৈশাখী তাণ্ডব চালিয়েছে। মঙ্গলবার বিভিন্ন জেলায় ঝড়-বৃষ্টির সময় বজ্রপাতও হয়েছে। এতে এখন পর্যন্ত ছয় জেলায় ১০ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। এর মধ্যে নরসিংদীতে তিনজন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও পাবনায় দুজন করে এবং সুনামগঞ্জ, নওগাঁ ও কিশোরগঞ্জে একজন করে প্রাণ হারিয়েছেন। দৈনিক বাংলার প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর তুলে ধরা হলো।
নরসিংদী
নরসিংদী জেলার পৃথক স্থানে বজ্রপাতে এক নারীসহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এদিন পৃথক সময়ে জেলার রায়পুরা ও মনোহরদী উপজেলায় এ প্রাণহানি ঘটে।
নিহতরা হলেন- মনোহরদী উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের পাতরদিয়া গ্রামের মৃত বাদল মিয়ার ছেলে প্রবাসফেরত রায়হান মিয়া (৩০), রায়পুরা উপজেলার শ্রীনগর ইউনিয়নের ফকিরের চর গ্রামের মোমরাজ মিয়ার স্ত্রী সামসুন নাহার (৪৫) ও নিলক্ষা ইউনিয়নের গোপীনাথপুর গ্রামের ইসমাইল মিয়ার ছেলে জাবেদ মিয়া (১২)।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে বজ্রপাতে মোজাম্মেল হক (৩২) নামে একজন ইটভাটা শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। সকাল ১১টার দিকে উপজেলার গোয়ালনগর ইউনিয়নের এ ঘটনা ঘটে। নিহতের বাড়ি নাসিরনগর উপজেলার গোয়ালনগর ইউনিয়নের সোনাতলা গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের মতি মিয়ার ছেলে। এ সময় কাইয়ুম মিয়া (৩০) নামের আরেক শ্রমিক আহত হন।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে নাসিরনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফখরুল ইসলাম জানান, মোজাম্মেল ও কাইয়ুম হাওর এলাকায় কাজ করছিলেন। এ সময় বজ্রপাতে মোজাম্মেলের মৃত্যু হয় এবং কাইয়ুম আহত হন।
অপরদিকে একই সময়ে বজ্রপাতের শব্দে আতঙ্কিত হয়ে অলি মিয়া নামের এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। তিনি উপজেলার বুড়িশ্বর ইউনিয়নের আশুরাইল গ্রামের নমিজ উদ্দিনের ছেলে।
বুড়িশ্বর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইকবাল চৌধুরী বলেন, বজ্রপাতে আতঙ্কিত হয়ে এক শ্রমিক মারা গেছেন বলে আমি শুনেছি। তবে তার শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই।
পাবনা
পাবনার ভাঙ্গুড়ায় মাঠে ধান কাটার সময় বজ্রপাতে দুই শ্রমিক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছে ১৩ জন। বিকেলে ও সন্ধ্যায় ভাঙ্গুড়া উপজেলার বেতুয়ান, ছোট বিষাকোল ও পার্শ্ববর্তী ফরিদপুর উপজেলার আল্লাহবাদ গ্রামে এ হতাতের ঘটনা ঘটে।
নিহত দুজন হলেন জেলার চাটমোহর উপজেলার ছাইকোলা গ্রামের বাসিন্দা শাকিল হোসেন (১৯) ও রমিজ উদ্দিন (৩০)। আহতদের ভাঙ্গুড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত শ্রমিকরা জানান, দিলপাশার ইউনিয়নের বেতুয়ান গ্রামের বাওনজান এলাকায় বোরো ধান কাটছিলেন শ্রমিকরা। বিকেলে ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে প্রচণ্ড বৃষ্টিপাত শুরু হয়। এতে শ্রমিকরা পাশের একটি উন্মুক্ত জায়গায় ঘরে আশ্রয় নেন।
কিছুক্ষণ পরে বজ্রপাত হলে ওই ঘরে অবস্থান করা শ্রমিকদের মধ্যে পাঁচ শ্রমিক মারাত্মক আহত হন। পরে তাদের উদ্ধার করে ভাঙ্গুড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানে চিকিৎসক দুই শ্রমিককে মৃত ঘোষণা করেন।
কিশোরগঞ্জ
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে বজ্রপাতে কাজী জিল্লুর রহমান (৫০) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। দুপুরে উপজেলার আগানগর ইউনিয়নের লুন্দিয়া খলাপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। তিনি ভৈরব পৌর শহরের কমলপুর কাজীবাড়ির মৃত কাজী গোলাপ মিয়ার ছেলে।
স্থানীয়রা জানান, জিল্লুর রহমান মাক্কু মোল্লা নামের একটি ফুড কারখানায় কাজ করতেন। কারখানার কাজে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তিনি ওই এলাকায় যান। হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হলে তিনি পায়ে হেঁটে ফেরার সময় বজ্রপাতের শিকার হন। ঘটনার পর স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. সোহরাব হোসাইন। ভৈরব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাকছুদুল আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
সুনামগঞ্জ
সুনামগঞ্জে ট্রলারে ধান পরিবহনের সময় বজ্রপাতে এক স্কুলছাত্র নিহত হয়েছে। নিহত ওমর মিয়া (১৬) ধর্মপাশা উপজেলার বাদে হরিপুর গ্রামের মৃত আলিম উদ্দিনের ছেলে। ওমর মিয়া ধর্মপাশার জয়শ্রী উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র। এ সময় তার সঙ্গে থাকা বাদে হরিপুর গ্রামের শাহীন, কালাচান ও আবুল কাশেম আহত হয়েছেন।
মঙ্গলবার সকালে ধর্মপাশা উপজেলার ৪নং জয়শ্রী ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামের সীমেরখাল (বরাইয়া) নদীতে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
ধর্মপাশা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নওগাঁ
নওগাঁর রানীনগরে বজ্রপাতে জামিল প্রামাণিক (২০) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। এদিন বিকেল ৪টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। নিহত জামিল উপজেলার গোনা ইউনিয়নের ভবানীপুর এলাকার মৃত আজাদ প্রামাণিকের ছেলে।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে রানীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ বলেন, বিকেলের দিকে জামিলসহ কয়েকজন একটি ভুট্টাখেত থেকে ভুট্টা তোলার কাজ করছিলেন। এ সময় বিকট শব্দে বজ্রপাত হলে তিনি আহত হন। পরে তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জামিলকে মৃত ঘোষণা করেন।