নানা হিসেব-নিকেশ ও জল্পনা-কল্পনার পর গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে জিতে বিজয়ের হাসি হেসেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন। এই পদে হেভিওয়েট প্রার্থী ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে পরাজিত করে নগর ভবনের চাবি পেলেন তিনি। ছেলে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের ব্যক্তি ইমেজ ও সাধারণ মানুষের অকুণ্ঠ সমর্থনের কারণেই জায়েদার বিজয় সম্ভব হয়েছে বলে মনে করছেন তার অনুসারীরা।
বিপরীতে আলোচনা চলছে নৌকার প্রার্থীর পরাজয় নিয়ে। নানা বিচার-বিশ্লেষণ আর আলাপ-আলোচনার মধ্যে মোটাদাগে উঠে আসছে আওয়ামী লীগের অন্তঃকোন্দল, দলীয় বিভাজন, অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী মনোভাবের পাশাপাশি বিএনপি সমর্থক ভোটারদের বড় ভূমিকার কথা। শুক্রবার নগরীর বিভিন্ন এলাকার সাধারণ মানুষ, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও বিরোধী দলগুলোর নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আলাপে উঠে এসেছে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লার পরাজয়ের নেপথ্যের নানা কারণ।
অন্তঃকোন্দল ও বিভাজন
আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মতে, গাজীপুর মহানগরে আওয়ামী লীগের দলীয় বিভাজন শুরু হয়েছে এক যুগ আগে। দীর্ঘদিনেও এর রেশ টানা যায়নি। উল্টো এক পক্ষ অপরপক্ষকে ঘায়েল করতেই ব্যস্ত থাকতো অধিকাংশ সময়। এর রেশ পড়েছে এবার সিটি করপোরেশন নির্বাচনে।
গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় দল থেকে বহিষ্কার হন মেয়র পদে থাকা জাহাঙ্গীর আলম। এক পর্যায়ে তাকে মেয়র পদ থেকেও বরখাস্ত করা হয়। এসময় বিপুলসংখ্যক কর্মী-সমর্থক ছিলেন জাহাঙ্গীরের সঙ্গে। বহিষ্কারের পর জাহাঙ্গীরের সঙ্গে তাদের ওপরও খড়গ নেমে আসে। শোকজ করা হয় পদধারী দুই শতাধিক নেতাকে। পরে জাহাঙ্গীরের অনুসারী কারও আর স্থান হয়নি দলের কোথাও। দলের বহু ত্যাগী নেতা-কর্মীও রয়েছেন এমন তালিকায়। দলীয় কোন্দল আঘাত করে তৃণমূল পর্যন্ত।
এমন অবস্থায় নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর আওয়ামী লীগের তৃণমূলের একটি অংশ জাহাঙ্গীরের পক্ষে চলে আসে। তারা ছদ্মবেশ ধারণ করে নৌকার ‘ব্যাজ’ পড়লেও গোপনে জাহাঙ্গীরের মা জায়েদা খাতুনের পক্ষে কাজ করেন। এমন অভিযোগে নির্বাচনের প্রচারণার সময়ও দলের তিনজন নেতা-কর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। শোকজ করা হয়েছে আটজন নেতা-কর্মীকে। এছাড়া পুলিশ দিয়ে আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মীকে হয়রানি ও গ্রেপ্তার করার অভিযোগও পাওয়া যায়।
দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পরাজয়ের অন্যতম কারণ ছিল এই দলীয় কোন্দল ও বিভাজন।
ব্যাজ নৌকার, ভোট ঘড়িতে
স্থানীয় বাসিন্দা ও পর্যবেক্ষকদের ভাষ্যে, নির্বাচনের দিন কেন্দ্রগুলোতে নৌকার কর্মীদের আধিক্য থাকলেও দিনশেষে সেখানে জয়ী হয় সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুনের ঘড়ি প্রতীক। মূলত আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মীই নৌকার লোক বেশে ভোট দেন জায়েদা খাতুনকে। ভোটের আগে অভিযোগ ওঠে, সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের অনুসারীরা যেন ভোটকেন্দ্রে যেতে না পারেন, সেজন্য ভোটের এক সপ্তাহ আগে থেকেই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার ও ঘরছাড়া করা হয় অনেককে। তবে ভোটের দিন ভোটকেন্দ্রে আসার জন্য জায়েদা খাতুনের ভোটার ও কর্মী সমর্থকরা কৌশল হিসেবে গলায় নৌকার ব্যাজ ও হাতে নৌকার ভোটার স্লিপ নিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ করেন। আর এই কৌশলের কাছে হেরে যান আজমত উল্লা খান।
অতি আত্মবিশ্বাস
জাহাঙ্গীর আলমের পক্ষের কতিপয় আওয়ামী লীগ নেতার মতে, নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা অতি আত্মবিশ্বাসী হয়ে পড়েন। তারা নিশ্চিত ছিলেন চাপের মুখে জাহাঙ্গীর নির্বাচনী মাঠ ছেড়ে যাবেন, তবে শেষ পর্যন্ত নানা চাপ থাকা সত্ত্বেও মাঠ ছাড়েননি জাহাঙ্গীর। এছাড়া ভোটারদের ওপরও নৌকার বাইরে ভোট না দিতে হুমকির অভিযোগ পাওয়া যায়। এতে সাধারণ ভোটারদের মধ্যেও ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়। দলীয় মনোনয়নন পেলেই জয় নিশ্চিত—এমন ধারণায় আত্মতুষ্টিতে ভুগতে থাকেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও কর্মী-সমর্থকরা। যার প্রভাব পড়ে ব্যালট বাক্সে।
প্রচারণায় পরিকল্পনার অভাব
নগরের বাসিন্দাদের মতে, আওয়ামী লীগ প্রার্থী আজমত উল্লা খানের নির্বাচনী প্রচারণায় কোনো পরিকল্পনার ছাপ ছিল না। মহানগরের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের কাজে না লাগিয়ে কেন্দ্র ও বিভিন্ন জেলা-উপজেলার নেতা-কর্মীদের নিয়ে আসা হয় নির্বাচনী প্রচারণার কাজে। বিচ্ছিন্নভাবে তারা প্রচার-প্রচারণা চালান। রাস্তা-ঘাটে দায়সারা প্রচারণা চালালেও ভোটারদের ঘরে পৌঁছায়নি নৌকার বার্তা। এতে স্থানীয় ভোটারদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়। ৫৭টি ওয়ার্ডে দলের একাধিক কাউন্সিলর প্রার্থী থাকায় তারা নিজেদের প্রচারণা নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। অনেকেই বিএনপির ভোট পেতে নৌকার পক্ষে সরাসরি ভোট চাওয়া থেকে বিরত ছিলেন। এসব কর্মকাণ্ডও আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পরাজয়ের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
কয়েকজন পর্যবেক্ষক বলছিলেন, একাই নানা পথসভায় বক্তব্য দিয়ে গেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লা খান। তিনি জাহাঙ্গীর আলমের দুর্নীতি, নগর ভবনের দুর্নীতি নিয়ে একই ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন। এ নগরে সরকারের নেয়া নানা উন্নয়ন প্রকল্প তিনি ভোটারদের সামনে তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছেন। নগরীর উন্নয়ন নিয়ে তার ভাবনায় ছিল না কোনো পরিকল্পনার ছাপ, শুধু বিরোধী দল ও মতের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারণা চালিয়েছেন। তার একই ধরনের বক্তব্যে নাখোশ ছিলেন নগরীর অনেক মানুষ। প্রচারণায় ডিজিটাল পদ্ধতির ব্যবহারেও তিনি পিছিয়ে ছিলেন। তরুণ প্রজন্ম ও নারীদের আকৃষ্ট করতেও কোনো ভূমিকা নিতে পারেননি আজমত উল্লা খান।
আবেগী ভোট জায়েদার পক্ষে
নারী প্রার্থী জায়েদা খাতুন প্রচারণায় নেমে আজমত উল্লা খানের এলাকা টঙ্গীতে প্রবেশে বারবার বাধার শিকার হয়েছেন। তার গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে, কর্মীদের রক্তাক্ত করা হয়েছে। এভাবে প্রচারণায় বাধা ভোটারদের মধ্যে নেতিবাচক মনোভাব তৈরি করে। নন্দিত বাংলা সিনেমা ‘আম্মাজান’র শিরোনাম গান চালিয়ে বিভিন্ন এলাকায় প্রচারণা চালান জাহাঙ্গীর আলম ও তার মা জায়েদা খাতুন। অনেকেই মনে করেন, এই গানে আবেগতাড়িত হয়েছেন অনেক ভোটার, বিশেষ করে নারীরা। তাই আবেগী ভোটাররা রায় দেন জায়েদা খাতুনের পক্ষে।
নারীদের ভোট জায়েদার ভোট বাক্সে
নগরের ভোটারদের মতে, সিটি করপোরেশনের মোট ভোটার প্রায় ১২ লাখ। এর অর্ধেক ভোটারই নারী। প্রথমবারের মতো এই সিটিতে একজন বয়স্ক নারী মেয়র পদে প্রার্থী হওয়ায় এবং ছেলের জন্য মায়ের সংগ্রামে আকৃষ্ট হন নারী ভোটাররা। বিভিন্ন স্থানে প্রচারণায় গিয়ে নারী ভোটারদের আকৃষ্ট করতে সক্ষম হন জায়েদা খাতুন। এছাড়া নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারণায় নারী ভোটারদের আকৃষ্ট করতে তেমন কোনো ব্যতিক্রম কার্যক্রম চোখে পড়েনি। ফলে অধিকাংশ নারী ভোটার রায় দিয়েছেন জায়েদা খাতুনের পক্ষে।
আওয়ামীবিরোধী ও বিএনপির ভোট
দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট এবার গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থী দেয়নি। দলীয় সরকারের ওপর অনাস্থা জানিয়ে তারা ভোট বর্জনের ঘোষণা দেয়। যদিও বিএনপি ঘরানার স্বতন্ত্র প্রার্থী সরকার শাহনূর ইসলাম রনি নির্বাচনে অংশ নেন, তবে বিএনপির নেতা-কর্মীরা তাকে মেনে নেয়নি। ভোটের আগে রনির চাচা গত নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার ভোটারদের ভোট বর্জনের ডাক দিয়ে খোলা চিঠি দেন।
পর্যবেক্ষকদের মতে, বিএনপির সমর্থকরা ভোট কেন্দ্রে গিয়েছেন। বিভিন্ন ওয়ার্ডেও কাউন্সিলর প্রার্থীরা তাদের ভোট বাড়াতে কেন্দ্র পর্যন্ত নিয়েছেন এসব ভোটারকে। বিভিন্ন সময় বিএনপির নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীরের কাছ থেকে সুযোগ-সুবিধা পাওয়ায় ওই দলের সমর্থক ভোটাররাও রায় দিয়েছেন নৌকার বিপক্ষে, জায়েদার ব্যালটে।
এছাড়া আওয়ামী লীগবিরোধী বিচ্ছিন্ন ভোটও পড়েছে নৌকার বিপক্ষে।
কেন্দ্র কমিটি নিয়ে তৃণমূলের অসন্তোষ
নির্বাচনে পরাজয়ের পেছনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্র কমিটি নিয়ে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের অসন্তোষ বড় ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করছেন দায়িত্বশীল অনেকে। বিভিন্ন ওয়ার্ডে ও কেন্দ্রগুলোর কমিটিতে যাদের রাখা হয়েছে তাদের অধিকাংশই গত ২০১৮ সালের নির্বাচনে জাহাঙ্গীর আলমের নির্বাচনী কেন্দ্র কমিটিতে ছিলেন। এ নিয়ে কমিটি গঠনের পরই অনেক নেতা-কর্মী অভিযোগ করেন। অনেকেই অভিযোগ করেন, তৃণমূলের পরীক্ষিত নেতা-কর্মীদের কেন্দ্র কমিটিতে রাখা হয়নি। এছাড়া কেন্দ্র কমিটির জন্য বরাদ্দ খরচের টাকারও সুষম বণ্টন হয়নি। লিফলেট, ব্যানার, পোস্টার এনে না টানিয়ে ফেলে রাখারও প্রমাণ পাওয়া যায়। পরিশ্রমী তরুণদেরও মূল্যায়ন করা হয়নি। কমিটির আহ্বায়ক-যুগ্ম আহ্বায়করা অন্য সদস্যদের সঙ্গে সমন্বয় করেননি। এসব বিষয়ে গত ১৯ মে দৈনিক বাংলায় ‘আওয়ামী লীগের কেন্দ্র কমিটি নিয়ে তৃণমূলে অসন্তোষ’ শিরোনামে সংবাদও প্রকাশিত হয়। ওই সংবাদের পর কেন্দ্র কমিটি নিয়ে অসন্তোষ কাটাতে তোড়জোড় চলে। তবু হার এড়াতে পারেননি আজমত উল্লা খান।
যা বলছেন প্রার্থী ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক
গাজীপুর সিটিতে পরাজয়ের বিষয়ে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউল্লাহ মন্ডল দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘দলের অনেকেই প্রকাশ্যে নৌকার পক্ষে কাজ করেছে, গোপনে অবস্থান নিয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে। এছাড়া বিরোধী দলের ভোটও গিয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থীর বাক্সে। নানা কারণে এখানে আমাদের পরাজয় হয়েছে। তবে পরাজয়ের পেছনে মূল কারণ কী, তা আমরা তদন্ত করে বের করবো।’
শুক্রবার সকালে টঙ্গীর নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে নৌকার প্রার্থী আজমত উল্লা খান বলেন, ‘আমি যেহেতু দলীয় প্রার্থী ছিলাম, দলের সবাই বসে পর্যালোচনা করে নির্বাচনে পরাজয়ের কারণ খুঁজে বের করা হবে। দলীয় নেতা-কর্মীরা আমার সঙ্গে গাদ্দারি করেছেন। নিশ্চয়ই দল এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে।’
সারাদেশে জেঁকে বসেছে শীত। তাপমাত্রা কমে যাওয়ার পাশাপাশি ঘন কুয়াশা ও হিমেল বাতাসে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে কিশোরগঞ্জের নিকলীতে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। একই সময়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ঘন কুয়াশা ও শুষ্ক আবহাওয়া বিরাজ করছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত;
ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি জানান: ঠাকুরগাঁওয়ে জেঁকে বসেছে শীত। দুদিন ধরে সূর্যের দেখা মিলছে না। ঘন কুয়াশা ও হিমেল হাওয়ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে স্বাভাবিক জনজীবন। গতকাল সোমবার সকালে জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।
টানা শীতে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ। দিনমজুর ও নিম্ন আয়ের শ্রমজীবীরা। শীতের কারণে কাজের সুযোগ কমে যাওয়ায় অনেকে পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে। শীত থেকে বাঁচতে আগুন জ্বালিয়ে কিংবা মোটা কাপড় পরে কোনোরকমে দিন কাটাচ্ছেন তারা। এদিকে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। চিকিৎসকরা শিশু ও বয়স্কদের বিশেষ সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) মো. আলমগীর কবীর জানান, আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী ঠাকুরগাঁওয়ে ভোরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে মাত্র ১০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বোচ্চ ২৪ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
তিনি জানান, এ অবস্থায় শীতজনিত ক্ষতি এড়াতে কৃষকদের প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে বোরো বীজতলা, শাক-সবজি ও আলু খেত কুয়াশা ও ঠাণ্ডা বাতাস থেকে রক্ষায় নিয়মিত সেচ, খেত পরিষ্কার রাখা এবং প্রয়োজনে খড় বা পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি জানান: গতকাল সোমবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে কিশোরগঞ্জে। গতকাল সোমবার সকালে জেলার হাওর উপজেলা নিকলীতে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসে। এর আগের দিন রোববার এখানে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
নিকলী প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জাহেদুল ইসলাম মাসুদ বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, গতকাল সোমবার সকাল ৯টায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয় নিকলীতে। তিনি আরও জানান, গত বছরও শীত মৌসুমে দুদিন দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নিকলীতে রেকর্ড হয়েছিল। চলতি বছরও টানা দুদিন ধরে এখানেই দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হচ্ছে।
তাপমাত্রা কমে যাওয়ার পাশাপাশি কিশোরগঞ্জ জেলায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। কয়েকদিন ধরে সূর্যের দেখা মিলছে না। টানা শৈত্যপ্রবাহে জনজীবন কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে। অতিরিক্ত ঠাণ্ডায় সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। দৈনন্দিন কাজে বের হতে না পেরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা।
এদিকে শৈত্যপ্রবাহের প্রভাব পড়েছে কৃষি খাতেও। বোরো মৌসুমের শুরুতেই অতিরিক্ত ঠাণ্ডায় ধানের চারা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় দুশ্চিন্তায় রয়েছেন কৃষকরা।
তিনি বলেন, ‘শীত যদি আরও বাড়তে থাকে, তাহলে আমাদের জন্য রোগীদের সেবা দেওয়া চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠবে।’
ইউসুফ হোসেন অনিক, ভোলা থেকে জানান: ভোলায় জেঁকে বসেছে তীব্র শীত। গত কয়েকদিন ধরে জেলাজুড়ে হাড়কাঁপানো শীত ও ঘন কুয়াশা বিরাজ করছে। বিশেষ করে মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীবেষ্টিত এই জেলায় উত্তরীয় হিমেল হাওয়ার কারণে কনকনে শীত অনুভূত হচ্ছে।
ঘন কুয়াশার চাদরে আকাশ ঢাকা থাকায় গত দুদিন ধরে দিনের অধিকাংশ সময় সূর্যের দেখা মিলছে না। ফলে দিনের তাপমাত্রাও উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। দুদিন ধরে সূর্যের দেখা না মেলায় স্থবির হয়ে পড়েছে স্বাভাবিক জনজীবন। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন নিম্নআয়ের মানুষ, যারা জীবিকার তাগিদে শীত উপেক্ষা করেই বাইরে বের হতে বাধ্য হচ্ছেন। তীব্র শীতে সাধারণ মানুষ অনেকটা গৃহবন্দি হয়ে পড়েছেন। বিশেষ করে ভোলা সদর, দৌলতখান, বোরহানউদ্দিন, তজুমদ্দিন, মনপুরা ও চরফ্যাশনসহ উপকূলীয় এলাকার খেটে খাওয়া মানুষ, জেলে এবং দিনমজুররা চরম বিপাকে পড়েছেন। প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া কেউ ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন না।
ঘন কুয়াশার কারণে ভোলা-লক্ষ্মীপুর ও ভোলা-বরিশাল রুটে ফেরি ও লঞ্চ চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। মহাসড়কে হেডলাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল করতে দেখা যাচ্ছে। শীত থেকে বাঁচতে ফুটপাত ও মার্কেটে গরম পোশাকের দোকানে ভিড় বাড়লেও সুযোগ বুঝে দাম বাড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে।
আবহাওয়া অফিস সূত্র জানায়, গতকাল সোমবার সকাল থেকে জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। যা গত রোববার ছিল ১৪ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
স্থানীয়রা জানান, তিন থেকে চার দিন ধরে জেলায় শীতের দাপট বেড়েছে। সকালে কুয়াশা কিছুটা কমলেও বেড়েছে ঠাণ্ডা। তাপমাত্রা কমার চেয়েও বেশি অসুবিধা হচ্ছে হিমশীতল বাতাসে। হিমেল বাতাসে দিনভর অনুভূত হয় হাড় কাঁপানো শীত।
এদিকে কয়েকদিন ধরে শীতের তীব্রতা হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় রাস্তাঘাটে শ্রমজীবী মানুষের দেখা মিললেও সংখ্যায় ছিল স্বাভাবিক। সময়ের চেয়ে ছিল অনেক কম। হঠাৎ করেই জেলায় শীতের প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেন না কেউ। শীতের তীব্রতা বাড়ায় হাসপাতালেও বেড়েছে রোগীর চাপ। ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন শিশু ও বয়স্করা।
সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকায় বরিশালে সব ধরনের সবজির দাম কমলেও বেড়েছে কাঁচামরিচ ও শসার দাম। গত সপ্তাহের তুলনায় পাইকারি বাজারে অন্যান্য সবজির দাম স্থিতিশীল থাকলেও ২০-৩০ টাকা বেড়েছে কাঁচামরিচ ও শসার দাম। সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) সকালে বরিশাল নগরীর একমাত্র পাইকারি সবজির বাজার বহুমুখী সিটি মার্কেট ও কয়েকটি খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।
পাইকারি সবজির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ফুলকপি গত সপ্তাহের দামে ১০-১২ টাকা, বাঁধাকপি ১০ টাকা, শিম গত সপ্তাহে ২৫ টাকা, এ ছাড়া কাঁচামরিচ গত সপ্তাহে ৪০-৪৫ টাকা বিক্রি হলেও এ সপ্তাহে বেড়ে ৬৫ টাকা, ও শসা গত সপ্তাহে ৪০-৪৫ টাকা বিক্রি হলেও এ সপ্তাহে ৬০ টাকা বিক্রি হচ্ছে, বেগুন ৩০ টাকা, করলা ৩০ টাকা, বরবটি ৩৫ টাকা, পেঁপে গত সপ্তাহে ১৫ টাকা, লাউ ২০-২৫ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ২৫ টাকা, টমেটো ৬০ টাকা, গাজর ৩০-৩৫ টাকা, কাঁচকলা ২০ টাকা ও লেবু ১৫ টাকা হালি বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে পোর্ট রোড বাজার, বাংলাবাজার, সাগরদী বাজারসহ বেশ কিছু খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ফুলকপি ১৫-২০ টাকা, বাঁধাকপি ১৫-২০ টাকা, শিম ৪০-৪৫ টাকা, কাঁচামরিচ ৮০ টাকা, শসা ৮০ টাকা, বেগুন ৩৫-৪০ টাকা, করলা ৩৫ টাকা, বরবটি ৪০ টাকা, পেঁপে ২০ টাকা, লাউ ৩০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৩০ টাকা, টমেটো ৮০ টাকা, গাজর ৪০ টাকা, কাঁচকলা ২৫ টাকা ও লেবু ২০ টাকা হালি বিক্রি হচ্ছে।
এ ছাড়া মাংসের বাজারে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে কেজি ১৫০-১৬০ টাকা, সোনালি মুরগি ২৬০-২৭০ টাকা, লেয়ার মুরগি ২৫০-২৭০ টাকা দরে। গরুর মাংস ৭৫০ টাকা ও খাসির মাংস ১,১৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
অপরদিকে বিভিন্ন মাছ গত সপ্তাহের দামেই বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে রুই মাছ ৩০০-৪৫০ টাকা, টেংরা মাছ ৫০০-৬০০ টাকা, ঘেরের তেলাপিয়া ১২০-১৪০ টাকা, পাঙাশ মাছ ১৮০-২২০ টাকা, চিংড়ি প্রকারভেদে ৫৫০-৮৫০ টাকা, পাবদা ২৫০-৪০০ টাকা, মাঝারি ভেটকি ৪০০ টাকা।
নগরীর বাংলাবাজারের খুচরা সবজি বিক্রেতা তৌহিদ জানান, এখন সব সবজির সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে তাই দামও নাগালের মধ্যে। তবে পাইকারি বাজারের তুলনায় খুচরা সবজির দাম কিছুটা বেশি হবে। কারণ পাইকারি বাজার থেকে সবজি কিনে লেবার খরচ, ভ্যান ভাড়া দিয়ে সবজি আনতে হয়। পরে বাজারে বিক্রি করতে হলে ইজারা, বিদ্যুৎ বিল দিতে হয়।
নতুন বছরের আগম উপলক্ষে গত দুই সপ্তাহ ধরে পর্যটককে মুখরিত মৌলভীবাজারের পর্যটনকেন্দ্রগুলো। পৌষের কনকনে শীতে সবুজের সান্নিধ্য নিতে প্রতি বছর এমন সময় পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত থাকে চায়ের রাজ্য মৌলভীবাজার। এ বছরেও জেলার বিশেষ পর্যটনকেন্দ্রেগুলোতে দেশের নানা প্রান্ত থেকে ভিড় জমান পর্যটকরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, জেলার উল্লেখযোগ্য পর্যটনকেন্দ্র কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, নয়নাভিরাম মাধবপুর লেক, মাধবকুণ্ড জল প্রভাত, হামহাম জল প্রভাত, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস-ঐতিহ্যের বাহক বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ-সিপাহী হামিদুর রহমান স্মৃতিসৌধ, শ্রীমঙ্গলের চা-বাগান, বধ্যভূমি, মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত ও শমশেরনগর গল্ফ মাঠে পর্যটকরা ভিড় করছেন। দেশি পর্যটকের পাশাপাশি বিদেশি পর্যটক রয়েছেন। শীত মৌসুমের ডিসেম্বর মাসে সবচেয়ে বেশি পর্যটক আসেন এই জেলায়। পর্যটকরা জিপ গাড়ি যা স্থানীয়ভাবে নাম দেওয়া হয়েছে চান্দের গাড়ি দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের টিকিট কাউন্টার থেকে জানা গেছে, গত দুই সপ্তাহে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে প্রায় ১০ হাজার পর্যটক প্রবেশ করেছেন এর মধ্যে বিদেশি পর্যটক রয়েছেন। জানুয়ারি ২০২৬ সালের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত পর্যটকদের চাপ থাকবে।
এদিকে পর্যটকদের নিরাপত্তায় পর্যটক পুলিশের পাশাপাশি জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা। গত দুই সপ্তাহ ধরে ট্যুরিস্ট পুলিশ পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য ব্যাপক কাজ করে যাচ্ছে। প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটনকেন্দ্রে পুলিশের বিশেষ টহল টিম রয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই পর্যটকরা ভ্রমণ করে যাচ্ছেন এ জেলা।
পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, বিশেষ করে শীতের এই সময়ে সব ধরনের পর্যটন ব্যবসা আশানোরূপ ভালো হয়েছে। প্রতি বছর ডিসেম্বর ও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে প্রচুর পর্যটক আসেন এই অঞ্চলে।
চট্টগ্রাম থেকে নিজ পরিবারে আগত পর্যটক নজমুল ইসলাম বলেন, ‘আমি মৌলভীবাজার কয়েকবার এসেছি। এ বছর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এসেছি। এখানকার সবুজ পরিবেশ মনোমুগ্ধকর। এ জেলায় একসাথে অনেকগুলো পর্যটনকেন্দ্র দেখা যায়। তবে সরকারিভাবে পর্যটনশিল্পের উন্নতির জন্য ব্যাপক উন্নয়ন প্রয়োজন। বিশেষ করে স্থানীয়ভাবে একটি পর্যটনকেন্দ্র থেকে অন্য পর্যটনকেন্দ্রে যাওয়ার জন্য ট্যুরিস্ট যাতায়াত ব্যবস্থার প্রয়োজন।’
শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ জোনের ট্যুরিস্ট পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুল হাসান চৌধুরী বলেন, ‘নিরাপদে পর্যটকরা যাতে চলাচল করতে পারেন এ জন্য সারা জেলায় ট্যুরিস্ট পুলিশ কাজ করছে। বিশেষ করে জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি পর্যটক আসেন শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জে। পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য সব পর্যটন স্পটগুলোতে নজরদারি বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।’
স্বাস্থ্যসেবায় অবদান রাখায় সেরা স্বাস্থ্য কর্মকতা নির্বাচিত হয়েছেন নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকতা ডা ইশরাত জাহান। সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) দুপুরে নোয়াখালী জেলা স্বাস্থ্য বিভাগী সম্মেলনে সিভিল সার্জন ডা মরিয়ম সিমি সেরাদের মাঝে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন।
২০২৫ সালে নোয়াখালী জেলা সেরা মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ইপিআই) ইলিয়াছ মামুন এ বিভাগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় তাকেও সেরা নির্বাচিত করা হয়। সে সোনাইমুড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্মরত রয়েছেন।
জানা গেছে, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা ইশরাত জাহান যোগদানের পর থেকে হাসপাতালটিকে দালালমুক্ত করাসহ সেবার মান বেড়েছে। তার প্রচেষ্টায় এ হাসপাতালে অত্যাধুনিক এক্স-রে মেশিন সংযোজন করা হয়।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা ইশরাত জাহান বলেন, ‘আমি এখানে যোগদানের পর থেকে হাসপাতালকে দালাল মুক্ত রাখতে চেষ্টা করছি। পরীক্ষা-নিরীক্ষার মেশিনগুলো সচল করেছি।’
কবিতা আবৃতি, সাহিত্য আলোচনা, মেধাবী শিক্ষার্থীদের সম্মাননা, প্রবন্ধ ও মানপত্র পাঠসহ নানা আয়োজনে নড়াইলের কৃতিসন্তান কবি বিপুল বিশ্বাসের ৫৬তম জন্মদিন পালন করা হয়েছে। সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) বিকেলে সদর উপজেলার নলদীরচর গ্রামের চন্দ্রাকুঞ্জ রিসোর্টে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
গায়ের কবি নামে খ্যাত বিপুল বিশ্বাসের বাড়ি নড়াইল সদর উপজেলার কলোড়া ইউনিয়নের শিমুলিয়া গামে। বিপুল বিশ্বাস ১৯৬৯ সালের ৫ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তার এ পর্যন্ত তিনটি কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে।
জন্মদিন উপলক্ষে কবি বিপুল বিশ্বাসকে নিয়ে প্রবন্ধ রচনা ও পাঠ করেন, মাগুরা বেরইল নাজির আহম্মেদ ডিগ্রি কলেজের সহকারি অধ্যাপক ধ্রুব কুমার দাম। মানপত্র পাঠ করেন মাবিয়া খানম।
জানা যায়, কবির জন্মদিনকে স্মরণীয় করে রাখতে এলাকার আটটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নবম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকারী মেধাবী শিক্ষার্থীদের সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়। এ ছাড়া বেসরকারি সংস্থা সেতুবন্ধন ফাউন্ডেশন কবিকে সম্মাননা স্মারক প্রদান করে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন, নড়াইল জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (উপসচিব) মো. আছাদুজ্জামান। বিশেষ অতিথি ছিলেন, জেলা কালচারাল কর্মকর্তা আবদুল রাকিবিল বারী, চিত্রশিল্পী বলদেব অধিকারী, অ্যাডভোকেট রমা রানী রায়, এস,এম সুলতান স্মৃতি সংগ্রহশালার কিউরেটর চিত্রশিল্পী তন্দ্রা মুখার্জি, জেলা শিক্ষা অফিসের গবেষণা কর্মকর্তা বিকাশ কুসুম চক্রবর্তী, গোবরা মিত্র মহাবিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রবীন্দ্রনাথ অধিকারী, নড়াইল কালেক্টরেট স্কুলের প্রধান শিক্ষক কবিউজির আলী।
সভাপতিত্ব করেন, খুলনা সরকারি ব্রজলাল কলেজের (বিএল) ইংরেজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান (অব) অধ্যাপক ইকবাল হোসেন। নড়াইল কবিতা আসরের প্রচার সম্পাদক এসকে সরকারের সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য দেন, আগদিয়া-শিমুলিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আহাদ আলী মোল্যা। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন কবি বিপুল বিশ্বাস।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি নড়াইল জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (উপসচিব) আছাদুজ্জামান বলেন, ‘অপরকে দেখে হিংসা নয়, বরং প্রতিযোগীর জায়গা থেকে নিজেকে ভাবতে হবে। নিজেকে তৈরি করতে হবে।’ তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘বর্তমানে ছেলে-মেয়েরা বই থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা তারা মুঠোফোনে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকে। খাওয়া-দাওয়ার কথাও ভুলে যায়।’
বরগুনার উপকূলীয় শুঁটকি পল্লীগুলোতে কর্মচাঞ্চল্য ফিরলেও টানা শৈত্যপ্রবাহ ও দীর্ঘদিন সূর্যের দেখা না মেলায় শুঁটকি উৎপাদনে মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটছে। তালতলী উপজেলার আশারচর, নিদ্রারচরসহ বিভিন্ন চরাঞ্চলে হাজারো জেলে, শ্রমিক ও ব্যবসায়ী মৌসুমের শুরুতেই কাজে নেমেছেন; তবে আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাবে কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে না।
বরগুনা জেলায় শুঁটকি উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ১২ থেকে ১৫ হাজার নারী-পুরুষ। নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চার মাসই শুঁটকির প্রধান মৌসুম। সাধারণত তিন থেকে চার দিনের টানা রোদে মাছ ভালোভাবে শুকিয়ে ওঠে। কিন্তু চলতি মৌসুমে একাধিক দফা শৈত্যপ্রবাহ ও ঘন কুয়াশার কারণে সূর্যের দেখা না মেলায় শুকানোর প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে।
মিঠাপানির দেশি মাছের শুঁটকির জন্য পরিচিত আশারচর ও নিদ্রারচরে এ মৌসুমে সহস্রাধিক শ্রমিক কাজ করছেন। প্রতিদিন বিভিন্ন প্রজাতির মাছ শুকানোর চেষ্টা করা হলেও রোদ না থাকায় মাছ ঠিকমতো শক্ত হচ্ছে না। এতে নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে, পাশাপাশি উৎপাদন খরচও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
শুঁটকিপল্লীতে কাজ করা শ্রমিক হালিম মিয়া বলেন, ‘নদীতে মাছ ধরা পড়লেও রোদ না থাকায় ঠিকমতো শুঁটকি করা যাচ্ছে না। অনেক সময় মাছ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এতে আমাদের আয় কমে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।’
সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রায় ৫০টি অস্থায়ী টংঘরে জেলে ও শ্রমিকরা বসবাস করছেন। নারী ও শিশু শ্রমিকরা নদী থেকে আনা কাঁচা মাছ পরিষ্কার করে মাচায় সাজাচ্ছেন। কিন্তু দিনের পর দিন সূর্য না ওঠায় শুকানোর সময় দ্বিগুণেরও বেশি লাগছে।
শুঁটকি ব্যবসায়ী আশরাফ আলী জানান, ‘এ বছর আমরা কোনো রাসায়নিক বা অতিরিক্ত লবণ ছাড়াই শুঁটকি উৎপাদনের চেষ্টা করছি। কিন্তু রোদ না থাকলে ভালো মানের শুঁটকি করা কঠিন হয়ে পড়ে। স্থায়ী শুকানোর অবকাঠামো থাকলে এই সমস্যার অনেকটাই সমাধান হতো।’
ব্যবসায়ীদের তথ্য অনুযায়ী, এসব পল্লীতে ২৫ থেকে ৩০ প্রজাতির মাছের শুঁটকি তৈরি হয়। বর্তমানে ছুরি মাছের শুঁটকি প্রতি কেজি ৭০০–৮০০ টাকা, রূপচাঁদা ১,০০০–১,৫০০ টাকা এবং লইট্টা ৬০০–১,০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় বাজারে সরবরাহ অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে।
শুঁটকি পল্লীর আরেক বড় সংকট যোগাযোগ ব্যবস্থা। প্রধান সড়ক থেকে প্রায় এক কিলোমিটার ভাঙাচোরা রাস্তার কারণে ট্রাক প্রবেশ করতে পারে না। এতে পরিবহন ব্যয় বাড়ছে এবং ক্ষতির পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
শুঁটকি ব্যবসায়ী হানিফ হাওলাদার বলেন, ‘আমরা নিয়মিত রাজস্ব দিচ্ছি, কিন্তু অবকাঠামোগত কোনো উন্নয়ন নেই। টানা শীত আর রাস্তাঘাটের সমস্যায় ব্যবসা টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে যাচ্ছে।’
নারী শ্রমিকদের দুর্ভোগও কম নয়। দুই যুগ ধরে শুঁটকি পল্লীতে কাজ করা পিয়ারা বেগম বলেন, ‘নারীদের জন্য কোনো স্থায়ী টয়লেট বা স্যানিটেশন ব্যবস্থা নেই। শীতের মধ্যে এসব কষ্ট আরও বেড়ে যায়।’
তালতলীর সোনাকাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফরাজি মো. ইউনুছ বলেন, ‘শুঁটকি শিল্প এক সময় এই অঞ্চলের অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি ছিল। কিন্তু অবকাঠামো সংকট, পরিবেশ দূষণ ও প্রাকৃতিক প্রতিকূলতায় শিল্পটি হুমকির মুখে পড়েছে।’
বরগুনার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ জিয়া উদ্দিন বলেন, ‘শুঁটকি শিল্প একটি সম্ভাবনাময় খাত। আবহাওয়া জনিত সমস্যা ও অবকাঠামোগত সংকট নিরসনে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে।
তালতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.জাহিদুল ইসলাম জানান, ‘শুঁটকি পল্লীর সমস্যাগুলো গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। শিল্পটিকে টিকিয়ে রাখতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সম্ভাব্য সব উদ্যোগ নেওয়া হবে।’
সংশ্লিষ্টদের মতে, টানা শৈত্যপ্রবাহে সূর্যের অভাবে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় দ্রুত বিকল্প শুকানোর ব্যবস্থা, উন্নত যোগাযোগ অবকাঠামো, শ্রমিকদের মানবিক সুযোগ-সুবিধা এবং সরকারি ব্যবস্থাপনায় রপ্তানির সুযোগ নিশ্চিত না হলে উপকূলের এই ঐতিহ্যবাহী শিল্প অচিরেই অস্তিত্ব সংকটে পড়বে।
কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ৫০টি বসতঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এতে শতাধিক রোহিঙ্গা পরিবার নিঃস্ব হয়ে পড়েছে।
সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) ১৬ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মুহাম্মদ কাউছার সিকদার বলেন, ‘গত রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে লেদা ২৪ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। প্রায় ২ ঘণ্টার চেষ্টায় রাত ১টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।’
১৬ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মুহাম্মদ কাউছার সিকদার আগুনের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে গ্যাস সিলিন্ডার থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। তবে ঘটনাটি দুর্ঘটনা নাকি পরিকল্পিত- তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
ক্যাম্পের বাসিন্দা ছৈয়দ আলম জানান, অগ্নিকাণ্ডে ৫০টির বেশি ঘর পুড়ে গেছে। অসহায় রোহিঙ্গারা সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। তাদের দ্রুত মানবিক সহায়তা প্রয়োজন।
আগুন লাগার পর প্রাণ বাঁচাতে পরিবার-পরিজন নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটে যান ক্যাম্পের বাসিন্দারা। বসতঘরের সঙ্গে পুড়ে গেছে কাপড়চোপড়, আসবাবপত্র ও খাদ্যসামগ্রী। আগুনে সব হারিয়ে অনেকের পুড়ে যাওয়া ঘরের ভস্মস্তূপে কিছু পাওয়ার আশায় খুঁজতে দেখা গেছে। তবে দাঁড়িয়ে আছে শুধু বসতঘরের পিলারগুলো।
রোহিঙ্গা নারী আলমরজান বলেন, ‘হঠাৎ ঘরের ছাউনিতে আগুন দেখে দিশাহারা হয়ে পড়ি। আগে পরিবারের লোকজনকে সরিয়ে নেই। এরপর আগুন নেভানোর চেষ্টা করি। কিন্তু আগুন দ্রুত চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। পরে ফায়ার সার্ভিস এসে আগুন নেভায়।’
টেকনাফ মডেল থানার ওসি মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, খবর পেয়ে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় প্রায় ২ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। এতে ৫০ থেকে ৬০টি ঘর পুড়ে গেছে।
সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) সকালে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন এনজিও প্রতিনিধি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাতাবরণ ছাড়া দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়।
সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) সকালে রংপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে ‘টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জন এবং নৈতিক শিক্ষার প্রসারে মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় আয়োজিত রংপুর জেলা কর্মশালা-২০২৫-এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম ৬ষ্ঠ পর্যায় প্রকল্পের অধীনে হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট এ কর্মশালা আয়োজন করে।
ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সহিষ্ণুতা একটি রাষ্ট্রের উন্নয়নের পূর্বশর্ত। সামাজিক স্থিতিশীলতা নির্ভর করে সাম্প্রদায়িক সৌহার্দ্যের ওপর। এ দেশে নানা ধর্মের মানুষের বসবাস। সবাইকে নিয়েই আমাদের উন্নয়নের পথে এগিয়ে যেতে হবে। এখানে যদি অস্থিরতা কিংবা অসন্তোষ থাকে তাহলে বৈদেশিক বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে। তিনি সকলের মনকে উদার ও দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রসারিত করার অনুরোধ জানান।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক মেহেদী হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ কর্মশালায় হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান শ্রী তপন চন্দ্র মজুমদার, উপদেষ্টার একান্ত সচিব (যুগ্ম সচিব) ছাদেক আহমদ, প্রকল্প পরিচালক নিত্য প্রকাশ বিশ্বাস, হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের সচিব দেবেন্দ্র নাথ উরাঁও, পুলিশ সুপার মো. মারুফাত হোসেন ও হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টি পরিতোষ চক্রবর্তী বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন।
এ প্রকল্পের অধীনে দেশের ৭,৪০০টি মন্দিরভিত্তিক শিক্ষাকেন্দ্র পরিচালিত হচ্ছে। এর মধ্যে ৫ হাজার প্রাক-প্রাথমিক, ১ হাজার ৪০০ ধর্মীয় বয়স্ক ও ১ হাজার ধর্মীয় শিশুশিক্ষাকেন্দ্র রয়েছে। এ সকল শিক্ষাকেন্দ্রের মাধ্যমে প্রতি বছর ২ লাখ ২২ হাজার শিক্ষার্থী প্রাক-প্রাথমিক ও ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাচ্ছে। এ প্রকল্পের আওতায় রংপুর জেলায় ১৪৯টি শিক্ষাকেন্দ্র রয়েছে। এ প্রকল্প শিক্ষা প্রসারের পাশাপাশি নারীর ক্ষমতায়ন ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি তথা দেশের বেকারত্ব দূরীকরণে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।
দিনব্যাপী এ কর্মশালায় রংপুর জেলার প্রকল্পের অধীনে পরিচালিত শিক্ষাকেন্দ্রগুলোর শিক্ষক, প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং জেলা প্রশাসন, জেলা ও উপজেলা মনিটরিং কমিটির সদস্য, শিক্ষার্থী অভিভাবক, শিক্ষাকেন্দ্র রয়েছে এরূপ মন্দিরের সভাপতি বা সম্পাদক, সনাতন ধর্মীয় প্রতিনিধি, ট্রাস্টি ও সাংবাদিকদের অংশগ্রহণ করেন।
পিরোজপুর জেলা সরকারি চাকুরীজীবী কল্যাণ পরিষদ (১১–২০ গ্রেড) এর নবনির্বাচিত কার্যনির্বাহী পরিষদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবিবার (২৮ ডিসেম্বর) সকালে জেলা প্রশাসকের শহীদ আব্দুর রাজ্জাক-সাইফ মিজান স্মৃতি সভাকক্ষে এ শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. আলাউদ্দীন ভূঞা জনী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. ইকবাল কবির। অনুষ্ঠানে নবনির্বাচিত কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্যদের শপথ বাক্য পাঠ করান জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. ইকবাল কবির।
শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে সভাপতি মোঃ শামসুদ্দোহা বলেন, নবনির্বাচিত কার্যনির্বাহী পরিষদ সরকারি চাকুরীজীবীদের যৌক্তিক দাবি আদায়, পেশাগত মর্যাদা রক্ষা এবং কল্যাণমূলক কার্যক্রম জোরদারে কাজ করবে। সংগঠনের সকল সদস্যকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
সাধারণ সম্পাদক মোঃ সাদ্দাম হোসেন বলেন, পরিষদের কার্যক্রমকে আরও গতিশীল ও আধুনিক করতে পরিকল্পিত উদ্যোগ নেওয়া হবে। সদস্যদের বিভিন্ন সমস্যা নিরসনে প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করার অঙ্গীকার করেন তিনি। পাশাপাশি সকল সদস্যের সহযোগিতা কামনা করেন।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে আসন সমঝোতা করতে গিয়ে গভীর সংকটে পড়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলে দেখা দিয়েছে অস্থিরতা। পদত্যাগের মিছিলও বড় হচ্ছে। এতে বড় ধরনের ভাঙনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে দলটিতে। ইতোমধ্যে জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতার বিরোধিতা করে দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের কাছে ৩০ জন নেতা স্মারকলিপি দিয়েছেন।
এনসিপি সূত্র জানায়, জামায়াতের সঙ্গে জোট গঠনের বিরোধিতা করে গত শনিবার ৩০ নেতার চিঠি দেওয়ার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর জোটের সমর্থনে প্রচারণা শুরু হয়। এরপর থেকেই একের পর এনসিপিতে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। ইতোমধ্যে দলটি থেকে পদত্যাগ করেছেন বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা। গতকাল রোববার পদত্যাগ করেন দলটির যুগ্ম আহ্বায়ক তাজনূভা জাবীন। তাকে ঢাকা-১৭ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছিল এনসিপি। একইদিন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন। রোববার সন্ধ্যায় ফেসবুকে এ ঘোষণা দেন তিনি।
মনিরা শারমিন লিখেছেন, ‘নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের আকাঙ্ক্ষায় গড়া দল জাতীয় নাগরিক পার্টি গণ অভ্যুত্থান পরবর্তী একমাত্র মধ্যপন্থি রাজনীতির ভরসাস্থল ছিল। এই দল থেকে ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনে নওগাঁ ৫ থেকে আমি মনোনীত প্রার্থী। তবে মনোনয়ন পাওয়ার আগে আমি জানতাম না, এই দল জামায়াতের সাথে ৩০ সিটের আসন সমঝোতা করবে। আমি জানতাম, ৩০০ আসনে প্রার্থী দিয়ে একক নির্বাচনের সিদ্ধান্ত ছিল। যেহেতু এখন দলের পজিশন পরিবর্তন হয়েছে, তাই আমি নিজেকে নির্বাচন থেকে প্রত্যাহার করছি। নির্বাচনে আমি অংশগ্রহণ করছি না। আমি এনসিপির স্বতন্ত্র শক্তিতে বিশ্বাসী। দলের প্রতি আমার কমিটমেন্ট আমি ভাঙি নাই। কিন্তু এই মুহূর্তে দলের প্রতি কমিটমেন্ট এর চেয়ে আমার গণ অভ্যুত্থানের প্রতি কমিটমেন্ট ও দেশের মানুষের প্রতি কমিটমেন্ট বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
এর আগে শনিবার সন্ধ্যায় দল থেকে সরে দাঁড়ান তাসনিম জারা। তিনি দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব ও রাজনৈতিক পর্ষদের সদস্য ছিলেন। এরও আগে বৃহস্পতিবার পদত্যাগ করেন দলটিতে জামায়াতবিরোধী অংশের নেতা হিসেবে পরিচিত মীর আরশাদুল হক।
গত বৃহস্পতিবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক আবদুল কাদের ফেসবুক পোস্টে লেখেন, তারুণ্যের রাজনীতির কবর রচিত হতে যাচ্ছে। এনসিপি অবশেষে জামায়াতের সঙ্গেই সরাসরি জোট বাঁধছে। সারাদেশে মানুষের, নেতাকর্মীদের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে জলাঞ্জলি দিয়ে গুটিকয়েক নেতার স্বার্থ হাসিল করতেই এমন আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। আর এর মধ্য দিয়ে কার্যত এনসিপি জামায়াতের গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।
এনসিপির শীর্ষ এ নেতা আরও বলেন, যখনই জামায়াতের সঙ্গে এনসিপির জোটের ঘোষণা আসবে, সঙ্গে সঙ্গেই প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে পদত্যাগ করব। পদত্যাগ করেই সবার জন্য সব কিছু ওপেনভাবেই বলব। এখন চুপ করে আছি। আমরা শেষ পর্যন্ত আশা করছিলাম পার্টির (এনসিপি) টনক নড়বে। তারা সঠিক পথে ফেরত আসবে। যেদিন জোটের ঘোষণা হবে-সেদিন থেকে মিডিয়াও আমাদের নিয়মিত পাবে।
এ প্রসঙ্গে এনসিপির এক শীর্ষ নেতা বলেন, জামায়াত-এনসিপি জোট হবে এমনটা দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনায় ছিল। কিন্তু গত ১ সপ্তাহে দল দুটির মধ্যে আলোচনা-বৈঠক, এক প্রকার দিন-রাতই চলছিল। দুই দলের শীর্ষ নেতাদের সমন্বয়ে আসন ভাগাভাগির বিষয়টি ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। শুক্রবার রাতেই আসন ভাগাভাগির বিষয়টি এক প্রকার চূড়ান্ত হয়।
এদিকে ফেসবুক পোস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি রিফাত রশিদ লেখেন, ৩০ আসনে এনসিপি জামায়াতের সঙ্গে জোটে গেলে ব্যাপারটা ‘আত্মঘাতী’ হবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, গণঅভ্যুত্থানের স্টেকহোল্ডার হিসেবে এনসিপিকে জোটে নিলে জামায়াত কৌশলগতভাবে লাভবান হতে পারে। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে এনসিপির ভেতরে আরও বড় বিভাজন তৈরি হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. শামিম রেজা বলেন, ‘জামায়াতের অতীত ভূমিকা নিয়ে যে রাজনৈতিক বিতর্ক আছে, এনসিপিকে সঙ্গে নিয়ে তারা সেটি আড়াল করার চেষ্টা করবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো—এনসিপি আদর্শিকভাবে কোথায়? তারা যে মধ্যপন্থার দল হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিল, এমন জোটের পর সেই ভাবমূর্তি বজায় রাখা নিকট ভবিষ্যতে কঠিন হয়ে পড়বে।’
জামায়াতের সঙ্গে জোট এনসিপির জন্য নির্বাচনী কৌশল নাকি রাজনৈতিক আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত—সেই প্রশ্নে এখন তোলপাড় চলছে রাজনীতির মাঠে।
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে সীমান্ত দিয়ে আসছে অস্ত্র। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় অবস্থানরত কয়েকজন পলাতক রাজনৈতিক নেতা ও সন্ত্রাসী এই অস্ত্র পাচারচক্রের নেপথ্য নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করছে। তাদের নির্দেশনায় দেশের বিভিন্ন সীমান্তে সক্রিয় রয়েছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। খবর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং একাধিক গোয়েন্দা সূত্রের।
সূত্রের খবর, এসব অস্ত্র প্রথমে পশ্চিমবঙ্গের মালদা ও মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন এলাকায় মজুত করে পরে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে পাঠানো হয়। পাচারকাজে সবজি ও ফলের চালান ব্যবহার করা হয়, আর বহনকারীদের বেশিরভাগই কিশোর ও যুবক।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, পদ্মা নদী ও রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত ঘিরে গড়ে ওঠা এই অস্ত্র চোরাচালান নেটওয়ার্কের সঙ্গে অতীতে রাজশাহী অঞ্চলের আওয়ামী লীগের কয়েকজন প্রভাবশালী নেতার সংশ্লিষ্টতা ছিল। মামলা ও তদন্তের চাপে তারা ভারতে পালিয়ে গেছেন। সেখান থেকেই তারা বাংলাদেশে থাকা অনুসারী ও সহযোগীদের মাধ্যমে অস্ত্র পাচার কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, পূর্ববর্তী সরকারের সময় স্থানীয় এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যানদের ছত্রছায়ায় যারা অস্ত্র কারবারে যুক্ত ছিল, তাদের কেউ দেশে ফিরে সক্রিয় হয়েছে, কেউ বিদেশে থেকেই নেটওয়ার্ক পরিচালনা করছে, আবার কেউ কারাগারে থেকেও সিন্ডিকেটের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে।
সাম্প্রতিক উদ্ধার ও অভিযান: গত শুক্রবার হবিগঞ্জ জেলার সীমান্ত এলাকায় অভিযান চালিয়ে গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ওয়াকিটকি সেট ও অস্ত্র উদ্ধার করেছে।
হবিগঞ্জ ব্যাটালিয়নের (৫৫ বিজিবি) অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. তানজিলুর রহমান বলেন, সীমান্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, চোরাচালান ও মাদক পাচার প্রতিরোধ করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব। চোরাচালান একটি জাতীয় সমস্যা। এ অপরাধ দমনে সীমান্তবর্তী জনগণের সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এদিকে একইদিন খাগড়াছড়ির মাটিরাঙা সীমান্তে বিশেষ অভিযান চালিয়ে একটি ভারতীয় পিস্তল, তাজা গুলি ও দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করেছে বিজিবি।
এ বিষয়ে খেদাছড়া ব্যাটালিয়ন (৪০ বিজিবি) এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুহা. শাহীনূল ইসলাম বলেন, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। সীমান্ত এলাকায় অবৈধ অস্ত্র পাচার ও অনুপ্রবেশ রোধে বিজিবির সদস্যরা সর্বদা সতর্ক অবস্থায় দায়িত্ব পালন করছেন এবং ভবিষ্যতেও এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
এর আগে গত মঙ্গলবার চাঁপাইনবাবগঞ্জের সীমান্ত এলাকা থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল, চারটি ম্যাগাজিন ও পাঁচ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করেছে বিজিবি। গত মঙ্গলবার সকালে শিবগঞ্জ উপজেলার রাঘববাটি এলাকা থেকে ৫৩ বিজিবির মনাকষা বিওপির সদস্যরা এগুলো জব্দ করেন। অভিযানের বিষয়টি বুঝতে পেরে সন্দেহভাজন অস্ত্রের ব্যাগটি ফেলে পালিয়ে যাওয়ায় তাকে আটক করতে পারেনি বিজিবি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল কাজী মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ সীমান্ত নিরাপত্তা ও চোরাচালান দমনে কঠোর অবস্থানে রয়েছে। এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে। এর আগে ১৫ ডিসেম্বর জেলার মনোহরপুর সীমান্ত থেকে বিজিবি চারটি বিদেশি পিস্তল, ৯টি ম্যাগাজিন ও ২৪ রাউন্ড গুলি জব্দ করে। বিজিবির চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৫৩ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল কাজী মুস্তাফিজুর রহমান জানান, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রে প্রস্তুত এসব অস্ত্র জব্দ করা হয়।
এর আগে ২৬ অক্টোবর বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেন থেকে আটটি বিদেশি পিস্তল, ১৬টি ম্যাগাজিন, গুলি, গানপাউডার ও প্লাস্টিক বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়। গোয়েন্দা সূত্রের দাবি, চালানটি ভারতীয় সীমান্ত পেরিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ দিয়ে দেশে প্রবেশ করেছিল।
এছাড়া ১৬ আগস্ট রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানায় সেনাবাহিনীর বিশেষ অভিযানে সাবেক মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা খায়রুজ্জামান লিটনের চাচাতো ভাই মোন্তাসেরুল আলম অনিন্দ্যকে আটক করা হয়। অভিযানে উদ্ধার করা হয় দুটি বিদেশি এয়ারগান, একটি রিভলবার, ছয়টি দেশি অস্ত্র, একটি টেজারগান, চারটি ওয়াকিটকি ও একটি বাইনোকুলার। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে রাজশাহী ও নওগাঁ এলাকায় সেনাবাহিনী, র্যাব ও পুলিশের অভিযানে একাধিক বিদেশি ও দেশি অস্ত্র জব্দ এবং সংশ্লিষ্টদের আটক করা হয়েছে।
রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, রাজনৈতিক ছত্রছায়া ও সীমান্তের আন্তর্জাতিক রুট ব্যবহারের কারণে এই অপরাধচক্র ভাঙা কঠিন হয়ে পড়েছে। অবৈধ অস্ত্রের মজুত আসন্ন নির্বাচনি পরিবেশকে বড় ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. তারেক মো. তৌফিকুর রহমান বলেন, অবৈধ অস্ত্রের মজুত নির্বাচনি পরিবেশকে ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে। এ জন্য নির্বাহী বিভাগ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। একইসঙ্গে গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতায় অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও পাচার রোধে কঠোর ব্যবস্থা প্রয়োজন।
বিজিবি রাজশাহী ব্যাটালিয়ন-১-এর পরিচালক লে. কর্নেল রিয়াজ শাহরিয়ার বলেন, অস্ত্র ও বিস্ফোরকসহ যেকোনো অবৈধ সামগ্রী অনুপ্রবেশ রোধে বিজিবি সর্বদা সজাগ রয়েছে। র্যাব-৫-এর একটি সূত্র জানায়, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সহিংসতার লক্ষ্যে অস্ত্র মজুতের তথ্য পাওয়া গেছে। আমরা এ ব্যাপারে সতর্ক রয়েছি।
কিশোরগঞ্জ-করিমগঞ্জ-চামটাঘাট সংযোগ সড়ক নির্মাণ প্রকল্পে অধিগ্রহণ করা জমির ক্ষতিপূরণ ছয় বছরেও না পাওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন প্রায় ৫০০ জমির মালিক। বসতভিটা ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভেঙে দিলেও এখনো তাঁদের প্রাপ্য প্রায় ১২৩ কোটি টাকা পরিশোধ হয়নি।
রবিবার (২৮ ডিসেম্বর) দুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে ক্ষতিপূরণের টাকা দ্রুত পরিশোধের দাবিতে মানববন্ধন করেন ভুক্তভোগী জমির মালিকরা। মানববন্ধন শেষে জেলা প্রশাসকের কাছে একটি স্মারকলিপিও দেন তাঁরা।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন করিমগঞ্জ উপজেলার সুতারপাড়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য মো. রেনু মিয়া, ভুক্তভোগী কবির উদ্দিন ভূইয়া, চামটাঘাট বণিক সমিতির সভাপতি আজহারুল ইসলাম আরজু, মো. নাজমুল মিয়া, মো. জুয়েল মিয়া ও হেলিম মিয়াসহ আরও অনেকে। মানববন্ধনে শত শত ভুক্তভোগী অংশ নেন।
ভুক্তভোগী মো. রেনু মিয়া বলেন, ‘আমার ছয় শতাংশ জমি আর ২০০ ফিটের একটা ঘর গেছে। ছয় বছর হয়ে গেল, এখনো এক টাকাও পাই নাই। রাস্তা ক্লিয়ার করে দিয়েছি। টাকা না দিয়েই রাস্তা করতে চায়।’
চামটাঘাট বণিক সমিতির সভাপতি আজহারুল ইসলাম আরজু বলেন, ‘টাকার আশায় আমরা ঘরবাড়ি ভেঙে দিয়েছি। ১৫ শতাংশ জমি গেছে আমার। ৭ ধারা নোটিশ দিয়েছে, কিন্তু টাকা দেয় না।’
আরেক ভুক্তভোগী কবির উদ্দিন ভূইয়া বলেন, ‘আমরা ঘরবাড়ি ভেঙে রাস্তা করে দিয়েছি। এখনো ক্ষতিপূরণের টাকা পাইনি। দ্রুত টাকা পরিশোধ আমাদের দাবি।’
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, কিশোরগঞ্জ-করিমগঞ্জ-চামটাঘাট সংযোগ সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০২০ সালে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে কিশোরগঞ্জ সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ। এর আগে ২০১৯ সালে সাকুয়া বাজার থেকে চামটাঘাট পর্যন্ত প্রায় ৪ কিলোমিটার সড়কের দুই পাশের উত্তর গণেশপুর, বয়রা, সাকুয়া ও রৌহা মৌজার জমি অধিগ্রহণ করা হয়।
তবে এলএ কেস নম্বর ০৯/২০১৯-২০২০–এর আওতাধীন এসব মৌজার অধিগ্রহণ কার্যক্রম এখনো সম্পন্ন হয়নি। অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া ৭ ধারা নোটিশ পর্যন্ত এসে থমকে রয়েছে। ফলে ক্ষতিপূরণের টাকা না পেয়ে জমির মালিকরা অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছেন।
এ অবস্থায় চামটাঘাট বন্দর এলাকার ব্যবসায়ীরা তাঁদের দোকানঘর সংস্কার বা মেরামত করতে পারছেন না। গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যকেন্দ্র ও বহু জেলার যোগাযোগের একমাত্র সড়ক হওয়ায় এখানে প্রতিদিন সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট ও জনদুর্ভোগ। কোথাও রাস্তা সম্প্রসারিত হলেও কোথাও খানাখন্দ ও ভাঙাচোরা অবস্থা রয়ে গেছে। এতে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ নাহিদ হাসান খান বলেন, অধিগ্রহণের একটি নির্ধারিত প্রক্রিয়া রয়েছে। প্রাক্কলন তৈরি করে গত মে মাসে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। তবে এখনো অর্থ ছাড় হয়নি। অর্থ পাওয়া গেলে দ্রুত ক্ষতিপূরণের টাকা পরিশোধ করা হবে।
কিশোরগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাকিল মোহাম্মদ ফয়সাল বলেন, প্রকল্পের পাঁচটি এলএ মামলার মধ্যে চারটির ক্ষতিপূরণ ইতিমধ্যে দেওয়া হয়েছে। বাকি একটি মামলার প্রাক্কলিত মূল্য ১২৩ কোটি টাকা। বর্তমানে ডিপিপিতে প্রায় ৬০ কোটি টাকা ঘাটতি রয়েছে। অতিরিক্ত ৬৩ কোটি টাকার প্রয়োজন হওয়ায় সংশোধিত ডিপিপি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন ও অর্থ ছাড় পেলেই জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ পরিশোধ করা হবে।
মেঘনা নদীতে নিষিদ্ধ জাল ও চাই (ফাঁদ) ব্যবহার করে পাঙ্গাসের পোনা নির্বিচারে শিকার করা হচ্ছে, যা ভবিষ্যৎ মাছের উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত করছে। এই অবৈধ কর্মকাণ্ডে স্থানীয় প্রভাবশালী গোষ্ঠী জড়িত থাকলেও মৎস্য বিভাগ ও প্রশাসনের উদাসীনতা বা নীরবতা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে, যদিও মাঝে মাঝে অভিযান হলেও তা যথেষ্ট নয় এবং অসাধু জেলেরা প্রভাব খাটিয়ে আবার জাল ফেলছে। ডিসেম্বরের শেষদিকে ভোলার বোরহানউদ্দিন, তজুমদ্দিন, দৌলতখান, মনপুরাসহ মেঘনা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে নিষিদ্ধ জাল ও ‘চাই’ ব্যবহার করে ব্যাপকহারে পাঙ্গাসের পোনা শিকারের খবর পাওয়া গেছে। অসাধু আড়তদাড়রা জেলেদের দিয়ে প্রতিদিন লাখলাখ পোনা নিধন করাচ্ছে, যা ভবিষ্যতে মৎস্য উৎপাদনের জন্য বড় হুমকি হিসেবে দেখা দিচ্ছে।
রবিবার সরেজমিন বোরহানউদ্দিন উপজেলার হাসাননগর ইউনিয়নের মির্জকালু ও হাকিমুদ্দিন মাছঘাট ঘুরে এমনি দৃশ্য দেখা যায়।২০২৫ সালের নভেম্বর মাসে মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে ইলিশের আকাল থাকলেও বড় আকারের পাঙ্গাস মাছ প্রচুর পরিমাণে ধরা পড়ার কথা থাকলেও নিষিদ্ধ চাই ব্যাবহার করে প্রতিদিন লাখলাখ পাঙ্গাসের পোনা শিকার করে অসাধু জেলেরা নিয়ে আসছে আড়ৎদারদের কাছে। আড়তদারদের কাছ থেকে কিনে খুচরা ব্যাবসায়ীরা অবাধে গ্রাম ও শহরের বাজারে বিক্রি করছে এসব পোনা।
পোনা নিধনের ফলে পাঙ্গাসসহ অন্যান্য মাছের বংশবিস্তার বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, যা জেলেদের জীবিকা ও সামগ্রিক মৎস্যসম্পদের জন্য হুমকিস্বরূপ।
মৎস্য আইন অনুযায়ী ১২ ইঞ্চির (৩০ সেন্টিমিটার) নিচে পাঙ্গাস ধরা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। সাধারণত ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত ভোলার উপকূলীয় এলাকায় পাঙ্গাসের পোনার আধিক্য বেশি দেখা যায়।
কালাম মাঝি নামে একজন জেলে জানান, স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এই অবৈধ কাজে জড়িত ফলে সাধারণ জেলেরা প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না। নদী থেকে অবৈধ চাই ও জাল ধ্বংস করতে পারলে ভবিষ্যতে নদীতে বড় পাঙ্গাস পাওয়া যেতো। জাল ও চাইয়ের ফাদ ব্যাবহার করে প্রতিদিন যে পরিমান পাঙ্গাসের পোনা শিকার করা হচ্ছে এতে ভবিষ্যতে পাঙ্গাস উৎপাদনে বড় বাধা হতে পারে। এতে বড় পাঙ্গাসের বাজার সংকটে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। কিছু বড় পাঙ্গাস পাওয়া গেলেও তা সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাহিরে থাকবে।
গনমাধ্যমকর্মী রিয়াজ ফরাজী জানান, মেঘনার বুক থেকে নিষিদ্ধ উপায়ে পাঙ্গাসের পোনা নিধনের উৎসব চললেও, প্রশাসন ও মৎস্য অফিসের নীরবতা এবং প্রভাবশালী চক্রের দাপটে তা বন্ধ হচ্ছে না, যা এই মূল্যবান মৎস্যসম্পদকে বিপন্ন করে তুলছে। পোনা নিধনের ফলে পাঙ্গাসসহ অন্যান্য মাছের বংশবিস্তার বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, যা জেলেদের জীবিকা ও সামগ্রিক মৎস্যসম্পদের জন্য হুমকিস্বরূপ। একদিকে যেমন পোনা ধরা পড়ছে, অন্যদিকে বড় মাছের অভাব দেখা দিচ্ছে, যা সাধারণ জেলে ও ভোক্তাদের বিপাকে ফেলছে।
এদিকে পোনা নিধন বন্ধে মৎস্য অফিসের কার্যকর পদক্ষেপের অভাব রয়েছে মৎস্য অফিসের বিরুদ্ধে নীরব থাকার বা দেখেও না দেখার ভান করার অভিযোগ উঠেছে। তবে মৎস্য বিভাগ দাবি করেছে যে, তারা পাঙ্গাসের পোনা রক্ষায় অভিযান পরিচালনা করছে। নভেম্বরে মেঘনা নদীতে পোনা শিকারের দায়ে একজন জেলেকে দণ্ডিত করা হয়েছে। এছাড়া গত ২৪ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে তজুমদ্দিন উপজেলায় মৎস্য অফিস ও কোষ্টগার্ড যৌথ অভিযান পরিচালনা করে সোনারচর নামক এলাকা থেকে অবৈধ চাই ব্যাবহার করে পাঙ্গাসের পোনা শিকারের সময় ৮টি চাই, ২টি নৌকা এবং ১ হাজার কেজি পাঙ্গাসের পোনাসহ ১৩ জন জেলেকে হাতেনাতে আটক করে।
উপকূলীয় সচেতন মহলের দাবী, মাঝে মাঝে অভিযান চালিয়ে কিছু চাই ও জাল জব্দ ও ধ্বংস এবং কিছু পোনা নদী বা এতিমখানায় অবমুক্ত করে নয়, বড়ং অসাধু জেলে অসাধু ব্যাবসায়ী, এবং মৎস্য বিভাগের অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারিদের চিহ্নিত করে কঠিন নজরদারি ও আইনের সঠিক প্রয়োগ করতে পারলে মেঘনার বুক থেকে এই পোনা শিকারের মহোৎসব বন্ধ করা সম্ভব।