নুরুজ্জামান লাবু
পেশায় চক্ষু চিকিৎসক হলেও বিভিন্ন বয়সী তরুণ-তরুণীদের নিয়মিতভাবে ইসলামিক সাইকোলজিক্যাল কাউন্সিলিং বা ইসলামি মনস্তাত্ত্বিক পরামর্শ দিতেন ডা. শাকির বিন ওয়ালী। রিসার্স অ্যাকাডেমি ফর মেডিকেল ফিকাহ অ্যান্ড ইসলামিক ট্রিটমেন্ট (র্যামফিট) নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কাউন্সিলিংয়ের আড়ালে তিনি ওইসব তরুণ-তরুণীকে লক্ষ্যবস্তু করে উদ্বুদ্ধ করতেন জঙ্গিবাদের ভাষায় ‘জিহাদে’।
সাম্প্রতিক সময়ে কুমিল্লা থেকে নিখোঁজ হওয়া সাত তরুণের মধ্যে তিনজন শাকিরের মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ হয়ে ঘর ছেড়েছেন। আরেকজন ঘর ছাড়ার প্রস্তুতি নিলেও তার আগেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি ইউনিট আটক করে তাকে। এভাবেই অন্তত ১০ থেকে ১২ জনকে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করে নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সদস্য বানিয়েছেন।
পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমানে এই নতুন কৌশলে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম। তারা প্রকাশ্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ইসলামি আলোচনার নামে তরুণদের জঙ্গিবাদে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছে।
এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে র্যামফিট অন্যতম। প্রতিষ্ঠানটি রীতিমতো শুরা বোর্ডের মাধ্যমে পরিচালনা করা হয়। ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ে দক্ষতাসম্পন্ন চিকিৎসকদের নিয়ে স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা হলেও এর মাধ্যমে হতাশাগ্রস্ত তরুণদের ইসলামিক সাইকোলজিক্যাল কাউন্সিলিং করানো হয়।
রাজধানীর মগবাজারের বিশাল সেন্টারের পাশেই ডমইনো ভবনের চতুর্থ তলায় র্যামফিটের কার্যালয়। রিসার্স অ্যাকাডেমি ফর মেডিকেল ফিকাহ অ্যান্ড ইসলামিক ট্রিটমেন্ট নামের এই প্রতিষ্ঠান যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তর থেকে গত বছর নিবন্ধন নিয়েছে। প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতির বাইরে শরিয়াহ হসপিটাল, মেডিকেল ফিকাহর পাশাপাশি অথেনটিক ইসলামিক নলেজ প্রচারসহ বিভিন্ন ফতোয়া কোলাবরেশন করার বিষয়টি উল্লেখ আছে প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে। শায়খ আবুল হাসনাত কাশিম নামে একজন এই প্রতিষ্ঠানটির শরিয়াহ বোর্ডের প্রধান। এর শুরা সদস্যদের প্রায় সবাই মুফতি। প্রতিষ্ঠানটি ইসলামি প্রচারণার জন্য দেশ-বিদেশ থেকে অনুদান সংগ্রহের জন্যও আহ্বান জানিয়ে থাকে।
সিটিটিসির একজন কর্মকর্তা দৈনিক বাংলাকে জানান, ইতোমধ্যে র্যামফিটের বিষয়ে তারা খোঁজখবর নেয়া শুরু করেছেন। শাকির এবং র্যামফিটের সঙ্গে আন্তর্জাতিক একটি সংগঠনের যোগসূত্র পাওয়া গেছে। তারা জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি দেশ-বিদেশ থেকে অনুদানের নামে যে অর্থ সংগ্রহ করে তা জঙ্গিবাদে অর্থায়ন করছে কি না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
অবশ্য গত শনিবার র্যামফিটের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ডা. শরীফুল ইসলাম শিশির এই প্রতিবেদকের কাছে দাবি করেন, তারা কোনো রাজনীতি বা জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত নন। শাকির বিন ওয়ালী তাদের প্রতিষ্ঠানে স্বেচ্ছসেবী হিসেবে কাজ করতেন। শাকিরের মতাদর্শকে তারা বিশ্বাস করেন না বলেও দাবি করেন শরীফুল।
তবে সুনির্দিষ্ট বিষয়ে দক্ষতা বা বৈজ্ঞানিক ভিত্তি ছাড়া ইসলামিক সাইকোলজিক্যাল কাউন্সিলিং করানোর বিষয়ে র্যামফিটের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক এই প্রতিবেদককে বলেন, তাদের একজন মনোরোগ চিকিৎসক আছেন। ওই চিকিৎসক ছাড়াও আরও কয়েকজন এই বিষয়ে লন্ডনের আল-বালাঘ একাডেমি থেকে অনলাইনে ডিপ্লোমা করেছেন।
তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আল-বালাঘ বিশ্বব্যাপী আল-কায়েদার প্রোপাগান্ডা প্রচারের একটি প্ল্যাটফর্ম। বাংলাদেশের আনসার আল ইসলামের মিডিয়া শাখা নিয়মিত আল-বালাঘ ম্যাগাজিনের বিভিন্ন কন্টেন্ট বাংলায় অনুবাদের পর নিজেদের ওয়েবসাইটসহ বিভিন্ন টেলিগ্রাম চ্যানেলে প্রকাশ করে। আনসার আল ইসলাম (এএআই) মূলত আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার অনুসারী। তারা নিজেদের আল-কায়েদা ইন ইন্ডিয়ান সাব-কন্টিনেন্ট বা একিউআইএস-এর সদস্য হিসেবে মনে করে। এএআই আগে এবিটি বা আনসারুল্লাহ বাংলা টিম নামে তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়েছে। ২০১৫ সালের মে মাসে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম ও ২০১৭ সালের মার্চে আনসার আল ইসলামকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে বাংলাদেশ সরকার।
হঠাৎ হিজরত, আশঙ্কা বাড়ছে
পুলিশের কাউন্টার টেররিজম শাখার কর্মকর্তারা বলছেন, ২০১৩ সালে ব্লগার রাজীবকে হত্যার মাধ্যমে আলোচনায় আসা আনসার আল ইসলাম গত কয়েক বছরে শুধু দাওয়াতি কার্যক্রম বা কর্মী সংগ্রহের দিকে মনোযোগী ছিল। ২০১৭ সালের এপ্রিলের পর তারা আর কোনো হত্যা মিশনে অংশ নেয়া বা হামলায় অংশ নেয়নি। গত কয়েক বছরে তারা সদস্যদের হিজরত করতেও পাঠিয়েছে বলে তথ্য পাওয়া যায়নি। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে তারা আবার নতুন কৌশলে তৎপরতা শুরু করেছে। আগের মতো টার্গেটেড কিলিং বা হামলার জন্য সদস্যদের প্রস্তুত করা হচ্ছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, হঠাৎ করেই কুমিল্লা থেকে একযোগে সাতজনের কথিত হিজরতের নামে ঘরছাড়ার বিষয়টি তাদের ভাবিয়ে তুলেছে। ওই ঘটনার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করতে গিয়ে জানতে পেরেছে, সাম্প্রাতিক সময়ে আরও অন্তত ২০ জন কথিত হিজরতের নামে ঘর ছাড়ে। এদের মধ্যে কয়েকজন নিজেরাই ফিরে আসার পর তাদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে পুরো নেটওয়ার্কটি জানার চেষ্টা করছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
সিটিটিসির প্রধান ও ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘আনসার আল ইসলাম একটু মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে এটা সত্যি। সাম্প্রতিক সময়ে যারা হিজরত করেছে তারা সবাই অনলাইনের মাধ্যমে জঙ্গিবাদে র্যাডিক্যালাইজড হয়েছে। সাইবার স্পেসে তারা তৎপর আছে। সাম্প্রতিক সময়ে হিজরতের কারণে বড় ধরনের হুমকি আসার আশঙ্কা আছে বলে আমরা মনে করি না, তবে এটি অবশ্যই আমাদের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ। আমরা তাদের খুঁজে বের করা এবং আস্তানাসহ পুরো নেটওয়ার্ক সম্পর্কে জানার চেষ্টা করছি ।’
‘এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট হামলার আশঙ্কা নেই। তবে এই আশঙ্কা আমরা উড়িয়েও দিই না।’- বলেন পুলিশের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
সম্প্রতি অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে পুলিশের মহাপরিদর্শক ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, জঙ্গি সংগঠনগুলো যেকোনো সময় আমাদের ‘সারপ্রাইজ’ দিতে পারে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশিদ বলেন, ‘হঠাৎ করেই তরুণদের ঘরছাড়ার মানে হলো জঙ্গিরা ভেতরে ভেতরে সংগঠিত হচ্ছে। এটাকে হালকা করে দেখার সুযোগ নেই। তারা কেন এবং কাদের মাধ্যমে ঘর ছেড়েছে তা গভীর তদন্তের মাধ্যমে বের করে আনতে হবে। একই সঙ্গে সামনে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তৃতীয় কোনো পক্ষ তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করছে কি না তাও খতিয়ে দেখতে হবে।’
যেভাবে কার্যক্রম চালাচ্ছে এএআই
জঙ্গিবাদী সংগঠনের কার্যক্রম অনুসরণ করেন এমন বেশ কয়েকজন গবেষক ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হোলি আর্টিজানে হামলার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধারাবাহিক অভিযানে নব্য জেএমবির প্রায় সব শীর্ষ নেতারা হয় গ্রেপ্তার হয়েছে অথবা অভিযানে মারা গেছে। কিন্তু আনসার আল ইসলামের শীর্ষ নেতাদের বেশির ভাগই এখনো অধরা।
২০১১ সাল থেকে পালিয়ে থাকা সেনাবাহিনীর বহিষ্কৃত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক ওরফে মেজর জিয়া আনসার আল ইসলামের অন্যতম একজন শুরা সদস্য হিসেবে সামরিক শাখার দায়িত্বে আছেন। তথ্য-প্রযুক্তি সম্পর্কে বিশদ জ্ঞান থাকা সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়া আনসার আল ইসলামের সদস্যদের জন্য একটি নিরাপত্তা কৌশল তৈরি করেছেন। কাট আউট ও সিপ্লার সেল পদ্ধতি অনুসরণ করার কারণে এই সংগঠনের কোনো সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হলেও তার কাছ থেকে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা যায় না।
সিটিটিসির একজন কর্মকর্তা জানান, বহিষ্কৃত মেজর জিয়ার নিরাপত্তা কৌশল অনুযায়ী সংগঠনের একটি তৈয়ফা বা সেলের সদস্যরা একে অন্যকেও চেনে না। প্রাথমিক প্রশিক্ষণেই তাদের কারও ব্যক্তিগত বিষয়ে প্রশ্ন না করা বা জানতে না চাওয়ার কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়। জিয়ার তৈরি করা কৌশলের কারণেই কুমিল্লায় নিখোঁজ হওয়া তরুণদের একজন ফিরে এলেও তার মাধ্যমে অন্যদের অবস্থান শনাক্ত করা যাচ্ছে না। এমনকি বিচ্ছিন্নভাবে আনসার আল ইসলামের মাশসুল পর্যায়ের কিছু সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হলেও শীর্ষনেতাদের শনাক্ত বা গ্রেপ্তার করা যাচ্ছে না। আনসার আল ইসলামের সদস্যরা প্রত্যেকেই ‘কোড ল্যাঙ্গুয়েজ’ ব্যবহার করে। কাউকে গ্রেপ্তারের পর তার পিটি আইডি বা অ্যাপস আইডিতে ঢুকে যোগাযোগ করলেও প্রথম কথপোকথনেই শীর্ষ নেতারা গ্রেপ্তারের বিষয়টি বুঝে যায়।
সম্প্রতি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, ড্যাফোডিল ও বিইউবিটির কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের তিন শিক্ষার্থী সাজিদুল ইসলাম সাজিদ, সাজ্জাদুর রহমান শাওন ও ইফাজ আহমেদ চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করে সিটিটিসি। এই সংস্থার কর্মকর্তারা বলছেন, গ্রেপ্তার তিনজনই আনসার আল ইসলামের মাসুল পর্যায়ের সদস্য। কিন্তু তাদের কাছ থেকে সহযোগী বা সংগঠন সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্যই পাওয়া যায়নি। তবে গ্রেপ্তারকৃতদের ইলেকট্রনিক ডিভাইস ফরেনসিক পরীক্ষার পর কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে।
আনসার আল ইসলামের এই তিন সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদকারী সিটিটিসির অতিরিক্ত উপকমিশনার আহমেদুল ইসলাম জানান, তারা তাদের মোবাইলে যোগাযোগের অ্যাপসগুলো অন্য নামে রেখেছিল। কারও কারও মোবাইলের সিস্টেম থেকে যোগাযোগের অ্যাপস খুঁজে বের করে কিছু তথ্য বের করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ ওইসব তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, আনসার আল ইসলামের সদস্য সংগ্রহে নিয়োজিত আছে সংগঠনটির দাওয়াহ বিভাগ। তারা দুই ভাবে সদস্য সংগ্রহ করে। এর মধ্যে ইদরাতুল দাওয়াহ ওয়াল নুসরাহ বা আইডিএনের দায়িত্ব হলো সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত মেধাবী শিক্ষার্থীদের টার্গেট করা। আর কিসমাতুল দাওয়াহ নেটওয়ার্কের কাজ হলো মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের নিজেদের মতাদর্শের দিকে আকৃষ্ট করা।
এখন শীর্ষ নেতৃত্বে কারা?
বাংলাদেশে আল-কায়েদার অনুসারী আনসার আল ইসলাম বা আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের আধ্যাত্মিক গুরু ছিলেন শায়খ জসিম উদ্দীন রাহমানী। ২০১৩ সালে গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে তিনি কারাগারে আছেন। এরপর থেকেই এই জঙ্গি সংগঠনটির শীর্ষ নেতা হিসেবে বহিষ্কৃত মেজর জিয়াকে গণ্য করা হয়।
তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, জসিম উদ্দীন রাহমানীর পর এই সংগঠনের আধ্যাত্মিক নেতা হিসেবে গণ্য করা হতো নরসিংদীর একটি মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা ওসমান গণিকে। ২০১৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত তার আর কোনো খবর পাওয়া যায়নি। জনশ্রুতি আছে, তিনি আত্মগোপনে আছেন। গত কয়েক বছর ধরে সংগঠনটির দাওয়াহ শাখার শুরা সদস্য হিসেবে আছেন শাইখ তামিম আল আদনানী, যদিও তার চেহারা সংগঠনের সদস্যরাই দেখেনি। অবশ্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি সংস্থা তার সম্পর্কে কিছু তথ্য পেয়েছে।
সিটিটিসির একজন কর্মকর্তা দৈনিক বাংলাকে বলেন, এই সংগঠনের শুরা পর্যায়ে আছেন এমন অন্তত তিনজনের বিষয়ে তথ্য পাওয়া গেছে। এরা দেশের নামকরা একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থী ছিলেন। এ ছাড়াও আরেকজন গত চার বছর ধরে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সীমান্তবর্তী ওয়াজারিস্তানে অবস্থান করছে।
জিয়াকে ধরাটাই চ্যালেঞ্জ
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের সহজে ধরতে পারলেও বহিষ্কৃত মেজর জিয়াকে ধরাই তাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। তাকে না ধরা পর্যন্ত আনসার আল ইসলামকে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে না। আত্মগোপনে থাকা জিয়াকে ধরতে ২০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হলেও জিয়া নিজের নিরাপত্তা নিয়ে এতটাই সচেতন যে, তার অবস্থান সম্পর্কেই জানা যাচ্ছে না।
অবশ্য জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে নিয়োজিত একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তারা অন্তত তিন বার জিয়ার অবস্থান শনাক্তের পর অভিযান চালিয়েছিলেন। এর মধ্যে রাজধানীর বাড্ডায় ১০ মিনিটের জন্য জিয়া তাদের হাতছাড়া হয়ে যায়। ২০১৮ সালের পর থেকে তার অবস্থান সম্পর্কে কোনো তথ্য পাচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা। তবে তাদের ধারণা, জিয়া এখনো দেশেই আছেন এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় থাকার সম্ভাবনা বেশি।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, ‘আনসার আল ইসলাম মূলত আল-কায়েদার অনুসারী। আল-কায়েদায় নতুন নেতৃত্ব এসেছে। এজন্য তারা কিছুটা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সতর্ক থেকে এসব মোকাবিলা করতে হবে।’
প্রকৃতিতে এসেছে হেমন্ত। আলতো রোদ গায়ে মাখতেই পালায় দুপুর। এরপর বিকেল আর সন্ধ্যা তড়িঘড়ি করেই জানান দেয় নিজেদের অবস্থান। অবশ্য কর্মব্যস্ত জীবনে দুপুর কিংবা সন্ধ্যার হদিস রাখার অবসর মেলে না আমাদের। এখন হেমন্তকাল, এই সময়ে জানান দেয় ছাতিম ফুলের তীব্র সুবাস। সকালে পুবের নরম রোদে ফুলগুলো চিকচিক করে আর হেমন্তের সন্ধ্যার বিবরণ পূর্ণাঙ্গ হয় না ছাতিম ফুলের এই তীব্র ঘ্রাণ ছাড়া। ছাতিম যেন হেমন্তেরই গায়ের ঘ্রাণ।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের শ্রীমঙ্গল-শমশেরনগর সড়কেরে ভানুগাছ বাজারের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ১টি ছাতিম গাছ ও তার ফুলের তীব্র ঘ্রাণই জানিয়ে দেয় হেমন্তের সরব উপস্থিতি। বিশেষ করে সন্ধ্যা থেকে শুরু করে রাতের পুরো সময়টায় এ ঘ্রাণ ছড়ায়। সারা দিনের পরিশ্রম শেষে সন্ধ্যায় প্রকৃতিতে বয়ে বেড়ানো হালকা বাতাসের সঙ্গে থেকে থেকে ভেসে আসে ছাতিম ফুলের এই মিষ্টি ঘ্রাণ। ফুলের সেই সুবাসে মুগ্ধ পথচারীরা।
হেমন্তকালে প্রকৃতিতে সাধারণত তেমন কোনো ফুল ফুটতে দেখা যায় না। প্রকৃতি যখন কিছুটা ফুলশূন্য হয়ে পরে তখন ফোটে ছাতিম। হেমন্তের গোধুলি লগ্ন থেকে রাত অবধি মিষ্টি গন্ধ ছড়িয়ে প্রকৃতিকে মাতিয়ে রাখে এই ছাতিম। বাতাসে ছাতিমের সুবাস অন্য ধরনের মাদকতা ছড়ায় হৃদয়ে।
এক সময় গ্রাম কিংবা শহরে সব জায়গায় দেখা মিলতো ছাতিম গাছের, কিন্তু এখন এটি অবাধ নিধনের শিকার। এখন আর সেভাবে দেখা মেলে না এ গাছের। সন্ধ্যার পর পথ চলতে চলতে হঠাৎ নাকে এসে লাগা বুনো সৌরভের ঝাপটা জানান দেয় এই গাছ ও তার ফুলের অস্তিত্ব। তবে দৃষ্টিসীমার চেয়ে খানিকটা উঁচু বলে সাধারণ অবস্থান থেকে গন্ধ বিলানো ছাতিমের ফুল সহজে চোখে পড়ে না। কিছুটা উঁচু জায়গায় উঠলে দেখা যায় গাছ জুড়ে গুচ্ছ গুচ্ছ হালকা ঘিয়ে রঙের ফুল। মনে হবে যেন কেউ অসংখ্য ফুলের স্তবক তৈরি করে রেখেছে।
শুধু ফুলের সুবাসই নয়, ছাতিম গাছ দেখতেও সুন্দর। এর ওপরের দিকটা ছাতার মতো ছড়ানো। এই গাছ প্রায় ৪০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। একাধিক শাখা-প্রশাখা বিশিষ্ট গাছটির ছাল অসমতল ও ধূসর। এর পাতার ওপরের দিক চকচকে আর তলার দিক ধূসর। ১০ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা পাতা হয়। একই মূলাবর্তে চার থেকে সাতটি পর্যন্ত পাতা থাকে। বছরের এ সময়টায় সারা গাছ ভরে গুচ্ছবদ্ধ, তীব্রগন্ধি ছোট ছোট ফুল ফোটে।
গাছটির সংস্কৃত নাম সপ্তপর্ণী। অঞ্চলভেদে একে ছাতিয়ান, ছাইত্যান, ছাতইনসহ নানা নামে ডাকা হয়। ইংরেজিতে একে ডাকা হয় ডেভিলস ট্রি (Devils tree) নামে। ছাতিমের বৈজ্ঞানিক নাম অ্যালস্টনিয়া স্কলারিস (Alstonia scholaris)। স্কলারিস শব্দটির সঙ্গে বিদ্যা অর্থাৎ লেখাপড়ার যোগ আছে। এ ধরনের নামকরণের কারণ, ছাতিমের নরম কাঠ থেকে ব্লাকবোর্ড ও পেনসিল তৈরি হয় বলে। এ ছাড়া ছাতিম কাঠ দিয়ে কোথাও কোথাও কফিন বানানো হয়ে থাকে। গাছটি একসময় খুব দেখা গেলেও এখন তেমন একটা দেখা যায় না এটি পরিবেশের জন্য বেশ উপকারী, তাই আমাদের এই গাছকে সংরক্ষণ করা উচিত।
কলেজ ছাত্র প্রান্ত জানায়, বাড়ি যেতে-আসতে দুইবার ছাতিম গাছটি আমাকে বিমোহিত করে। ছাতিম ফুলের তীব্র ঘ্রাণ আমার বেশ ভালো লাগে। প্রাকৃতিক সুগন্ধে ভরপুর ছাতিম গাছ যাতে এলাকা থেকে বিলীন হয়ে না যায় সে ব্যাপারে সবাই সচেষ্ট হবে এমন প্রত্যাশা করেন এলাকাবাসী।
লেখক নির্মল এস পলাশ বলেন, আমাদের বাড়িতে যেতে-আসতে দুইবার ছাতিম গাছ দুটি আমাকে বিমোহিত করে। আমরা সিলেটিরা ছাতনি গাছ বলি। ছাতিম ফুলের তীব্র ঘ্রাণ আমার বেশ ভালো লাগে বিধায় এর একটি গাছের চারা আমার বাড়িতে রোপণ করতে চেয়েছিলাম কিন্তু শহরের কোনো নার্সারিতে এ গাছের চারা খুঁজে পাইনি। যেহেতু এ গাছটি এখন তেমন একটা খুঁজে পাওয়া যায় না এবং প্রকৃতিতে এর বেশ উপকারিতা আছে তাই এ গাছটির কিছু চারা বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা উচিত। প্রাকৃতিক সুগন্ধে ভরপুর ছাতিম গাছ যাতে এলাকা থেকে বিলীন হয়ে না যায়।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার আল্লারদর্গা বাজারে অবস্থিত সততা ক্লিনিক এ ক্লিনিক ব্যবসার আড়ালে দীর্ঘদিন ধরে দেহ ব্যবসা পরিচালনার অভিযোগে এলাকাবাসী এক অভিযুক্তকে হাতেনাতে আটক করেছে। সোমবার (২০ অক্টোবর) রাত ৮টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। পরে দৌলতপুর থানার পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সততা ক্লিনিকের মালিক আব্দুল মোমিন দীর্ঘদিন ধরে পার্শ্ববর্তী জেলা থেকে নারীদের এনে ক্লিনিকের আড়ালে দেহ ব্যবসা চালিয়ে আসছিলেন। বিষয়টি নিয়ে এলাকাবাসী একাধিকবার সাবেক এমপি রেজাউল হক চৌধুরীর কাছে অভিযোগ করলেও কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। মাঝেমধ্যে সন্দেহজনক নারীদের সেখানে দেখা যায় বলেও অভিযোগ করেন তারা। সোমবার রাত আটটার দিকে এলাকাবাসীর সন্দেহজনক অবস্থায় সাতক্ষীরার এক নারী ও ওই এলাকার এক পুরুষকে হাতেনাতে ধরে। পরে পুলিশে খবর দিলে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে।
এ বিষয়ে ক্লিনিকের মালিক মমিন মোল্লাকে ফোন দিলে তিনি তার ফুপাতো ভাইকে দিয়ে ফোন রিসিব করান এবং পরে কথা বলতে চান।
এ বিষয়ে ক্লিনিক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আতিয়ার রহমান বলেন, ক্লিনিক ব্যবসার আড়ালে দেহ ব্যবসা অভিযোগে এলাকাবাসী হাতেনাতে আটক করেছে এমন খবর শুনেছি। তিনি আরও বলেন, এর আগেও এ ধরনের কথা শুনেছি। সে আমাদের সমিতির সদস্য না হওয়ায় আমরা সরাসরি কোনো ব্যবস্থা নিতে পারিনি। তবে পুলিশ তদন্ত করছেন। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন।
ঘটনার বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. তৌহিদুল হাসান তুহিনের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
দৌলতপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আখতারুজ্জামান লিটন বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। বতর্মানে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে। ক্লিনিকের আড়ালে দেহ ব্যবসার অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে সত্যতা পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
অভাব-অনটনের মধ্যেও হার মানেননি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর পৌর এলাকার সুহাতা গ্রামের সুমাইয়া আক্তার। সংসারের ভার সামলে, মায়ের সঙ্গে নকশিকাঁথা সেলাই ও টিউশনি করে নিজের পড়াশোনার খরচ জোগাড় করে ২০২৫ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় নবীনগর মহিলা কলেজের মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ অর্জন করেছেন তিনি।
যেখানে এ বছর এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের হতাশ করেছে, সেখানে সুমাইয়ার এ সাফল্য এলাকাজুড়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এর আগে এসএসসি পরীক্ষাতেও একই কৃতিত্ব দেখিয়েছিলেন তিনি।
সুমাইয়ার পিতা মো. জীবন মিয়া পেশায় ইজি বাইকচালক। সীমিত আয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় তাদের। তাই মা পারভীন আক্তার বাড়িতে মানুষের অর্ডার অনুযায়ী ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকায় কাঁথা সেলাইয়ের কাজ করেন। মা-মেয়ের এই আয়ে চলে সংসার ও সুমাইয়ার পড়াশোনা। পাশাপাশি তিনি কয়েকজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট পড়ান। চাচা স্বপন মিয়ার অনুপ্রেরণায় নিয়মিত গুঞ্জন পাঠাগারে পড়াশোনা করেন সুমাইয়া।
সুমাইয়া বলেন, “আমার বাবা ঋণগ্রস্ত, অটোরিকশা চালিয়ে কিস্তি শোধ করতে হয়। ভবিষ্যতের পড়াশোনা নিয়ে চিন্তায় আছি, তবে আমি পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চাই — প্রয়োজনে আরও পরিশ্রম করব।”
বইমজুর হিসেবে পরিচিত তার চাচা হাবিবুর রহমান স্বপন বলেন, “সুমাইয়া অত্যন্ত মেধাবী ও পরিশ্রমী। দর্জি কাজ, কাঁথা সেলাই এবং টিউশনি করে এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ-৫ অর্জন করেছে। যারা তার পাশে ছিলেন, বিশেষ করে শিক্ষকমণ্ডলী, তাদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। মেয়েটি যেন উচ্চশিক্ষা নিতে পারে, সে জন্য সমাজের দয়ালু মানুষের সহযোগিতা প্রয়োজন।”
সাতক্ষীরার কলারোয়ায় দুই কন্যার পর আবারও কন্যা শিশু জন্ম হওয়ায় পাঁচ দিনের নবজাতককে খালে ফেলে হত্যার অভিযোগ উঠেছে এক মায়ের বিরুদ্ধে। পুলিশ অভিযুক্ত মা শারমিন আক্তারকে (৩২) গ্রেপ্তার করেছে।
সোমবার (২০ অক্টোবর) রাত পৌনে ১২টার দিকে উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামে ঘটনাটি ঘটেছে। মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ সাইফুল ইসলাম।
তিনি জানান, সোমবার রাত ৮টার দিকে শিশুটির বাবা ইব্রাহিম খলিল (৪২) থানায় এসে নবজাতক নিখোঁজের বিষয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে চান। তবে তার বক্তব্য সন্দেহজনক মনে হলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শিশুর মা শারমিনের সঙ্গে কথা বলে।
জিজ্ঞাসাবাদে শারমিন আক্তার জানান, তাদের আগেই পাঁচ বছর ও দেড় বছরের দুটি কন্যাসন্তান রয়েছে। পর পর কন্যা সন্তান জন্ম হওয়ায় তিনি ক্ষোভের বশে নবজাতক শিশুটিকে বাড়ির পাশের খালে ফেলে দেন।
পরে তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী পুলিশ খালের কচুরিপনার ভেতর থেকে নবজাতকের মরদেহ উদ্ধার করে। ওই অবস্থায় নবজাতককে হাসপাতলে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃতের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ সাইফুল ইসলাম বলেন, মৃত শিশুর দাদি খাদিজা খাতুন বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। মামলার পর গ্রেপ্তার শারমিন আক্তারকে মঙ্গলবার আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। শিশুর ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন সাতক্ষীরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিঠুন সরকার, ডিবি ও পিবিআই কর্মকর্তাসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
খননের ৩ বছর পেরোতেই আবারও ভরাট হয়ে যাচ্ছে জয়পুরহাটের চিরি নদী। প্রায় ২২ কিলোমিটার এ নদীর কোথাও কোথাও ভরে গেছে কচুরিপানায়। নদীর কোন কোন স্থানে পানি থাকলেও অনেক স্থানে নেই। এতে নদী খননের পর যে সুফল পাওয়ার আশা ছিল তা পাচ্ছেন না নদীর দুইপাড়ের মানুষরা।
স্থানীয় বাসিন্দা ও নদী আন্দোলনের নেতারা জানান, অপরিকল্পিত খননে বালু ও মাটি আবারও নদীতে মিশে যাওয়া, বর্জ্য ফেলা ও যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে আবারও ভরাট হচ্ছে এই নদী। তাই নদীর নাব্য টিকিয়ে রাখতে শুধু খনন করলেই হবে না, প্রয়োজন এর রক্ষণাবেক্ষণ।
জানা যায়, জয়পুরহাট জেলার ওপর দিয়ে বয়ে চলেছে ৪টি নদী। এর মধ্যে আক্কেলপুর থেকে সদর পর্যন্ত প্রায় ২২ কিলোমিটার রয়েছে চিরি নদী। এটি শাখা নদী হিসেবে পরিচিতি। ২০১৯ সালের মার্চ মাসে প্রায় ১২১ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪টি নদীর খননকাজ শুরু হয়, যা শেষ হয় ২০২২ সালের জুন মাসে। নদী খননের প্রকল্পের উদ্দেশ্যে ছিল জমিতে সেচ সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি, নদীর পানি ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সারা বছর সেচ সুবিধা নিশ্চিত করা, পানি নিষ্কাশন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে বন্যার ঝুঁকি কমিয়ে আনা, পুনর্খননের মাধ্যমে পুনরুজ্জীবিত করা, নৌচলাচলের মাধ্যমে সহজ যোগাযোগ নিশ্চিত করা, পরিবেশ ও আর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন সাধন করা। কিন্তু চিরি নদীতে এসব বেশিরভাগ উদ্দেশ্যে বাস্তবায়ন হয়নি।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, নদী খননের ফলে সারা বছর পানি থাকার আশা থাকলেও শুকনো মৌসুমে কোথাও পানি থাকছে, কোথাও থাকছে না। নদী খনন করার সময় বাঁধের ওপর রাখা মাটি আবারও নদীতে মিশে নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাচ্ছে। কোথাও কোথাও নদী ভরে আছে কচুরিপানায়। কোথাও পানি থাকলেও ময়লার কারণে হয়ে পড়েছে ব্যবহার অযোগ্য। এতে দিন দিন নদীটি নাব্য হারিয়ে ফেলছে। নদীরক্ষায় দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি সচেতন মহলের।
সদর উপজেলার খঞ্জনপুর এলাকার বাসিন্দা আরিফুর রহমান বলেন, নদী খনন করার আগে আমাদের বাড়ির কাছে চিরি নদীতে কিছু পানি থাকত। আমরা প্রতিদিনের কাজে পানি ব্যবহার করতাম। কিন্তু খননের পর আর পানি থাকছে না। নদী সংস্কার করেই আমাদের অসুবিধা হয়ে গেছে। পানি পাচ্ছি না, আবার কচুরিপানায় ভরে গেছে।
একই এলাকার রমজান আলী বলেন, ছোটবেলায় নদীতে অনেক মাছ ধরা হতো। মনে হয়েছিল নদী খনন করার পর নাব্য ফিরে আসবে। কিন্তু এখন তা দেখা যাচ্ছে না। বৃষ্টি হলেও বেশিরভাগ জায়গায় পানি নেই। আগে মাছ ধরা হতো। এখন পানি না থাকার কারণে মাছ ধরা যায় না। গোসল করা যায় না। নদী আমাদের কোনো উপকারে আসছে না।
সদরের কুঠিবাড়ী ব্রিজ এলাকার দেলোয়ার হোসেন বলেন, কোটি কোটি টাকা খরচ করে নদী খনন করা হলো, পানি থাকবে বলে। কিন্তু নদীতে কোনো পানি নেই। উপকারের জন্য খনন করা হলো এখন উপকারের চেয়ে অপকারই হচ্ছে বেশি।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের জয়পুরহাট জেলার সমন্বয়ক লুৎফুল্লাহিল কবির আরমান বলেন, চিরি নদী খনন করা হয়েছে পুরোপুরি অপরিকল্পিতভাবে। নদী খননের সময় মাটি ও বালু নদীর পাড়ের ওপর রাখা হয়েছিল। পরে বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে আবার নদীতে পড়ে নদী ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এতে করে কোনো সুফল পাচ্ছেন না সাধারণ মানুষ। জনগণের কোটি কোটি টাকা খরচ করে নদী খনন করে কোনো লাভই হয়নি। নদী রক্ষাসহ পরিবেশ রক্ষা করতে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও আমাদের সবার সচেতন হতে হবে।
জয়পুরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রিয়াদুল ইসলাম বলেন, ১২০ কোটি ৬৯ লাখ ৯৩ হাজার টাকা ব্যয়ে জয়পুরহাটের ৪টি নদীর খননকাজ করা হয়েছে। এ থেকে সাধারণ মানুষ উপকৃত হচ্ছে। নদীগুলো খনন করায় বন্যার ঝুঁকি একেবারে কমে গেছে। তবে নদীগুলো বড় কোনো নদীর সঙ্গে সংযুক্ত না থাকার কারণে পানি কম থাকে। আর চিরি নদী ভরাট হয়ে যাচ্ছে বা কচুরিপানা জমে গেছে এ বিষয়ে আমাদের কেউ জানায়নি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বরাদ্দপ্রাপ্তি সাপেক্ষে কচুরিপানা সরানো বা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কাজ করা হবে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য জোবায়েদ হোসাইনকে এক মাস আগে হত্যার পরিকল্পনা করেন অভিযুক্ত বর্ষা ও তার প্রেমিক মাহির। অভিযুক্ত দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে মঙ্গলবার রাজধানীর বংশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রফিকুল ইসলাম এ তথ্য জানান। তার দাবি, প্রাথমিকভাবে হত্যার দায় স্বীকার করেছেন বর্ষা ও মাহির।
ওসি বলেন, ‘প্রায় ৯ বছর ধরে মেয়েটির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে ছিলেন মাহির রহমান। সম্প্রতি মেয়েটি তার টিউশন শিক্ষক জোবায়েদ হোসেনের প্রতি আকৃষ্ট হন। বিষয়টি মাহিরকে জানালে সম্পর্কের টানাপোড়েন শুরু হয়। পরে মেয়েটি জোবায়েদের প্রতিও আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন এবং মাহিরকে সঙ্গে নিয়ে তাকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেন।’
তিনি আরো জানান, গত ২৫ সেপ্টেম্বর দুজনে মিলে হত্যার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেন। সেদিনই দুটি সুইচগিয়ার কেনা হয়। পরিকল্পনা ছিল, দুই দিক থেকে আক্রমণ করে জোবায়েদকে হত্যা করা।
পরিকল্পনা অনুযায়ী গত রোববার সন্ধ্যার আগে টিউশনিতে যাওয়ার পথে আরমানিটোলার নূরবক্স রোডের রৌশান ভিলার নিচে জোবায়েদকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেন মাহির রহমান। এ সময় তার সঙ্গে ছিল বন্ধু ফারদিন আহম্মেদ আয়লান। আর পুরো ঘটনাটি সমন্বয় করেন ওই ছাত্রী।
ওসি রফিকুল বলেন, ‘প্রথমে মেয়েটি হত্যার কথা অস্বীকার করলেও মাহিরের মুখোমুখি করলে সত্য প্রকাশ পায়। তারা দুজনই স্বীকার করেছেন, ২৫ সেপ্টেম্বর থেকেই পরিকল্পনা শুরু করেন এবং ১৯ অক্টোবর তা বাস্তবায়ন করেন।’
ঘটনার দিন বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ঢাকা মহানগর মহিলা কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ওই শিক্ষার্থীর বাসায় পড়াতে গিয়েছিলেন জোবায়েদ। বাসার গেট দিয়ে ঢুকে সিঁড়িতে ওঠার সময় সুইচগিয়ার দিয়ে গলার ডান পাশে আঘাত করা হয়। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
পরে রাতেই পুলিশ মেয়েটিকে হেফাজতে নেয়। পরদিন প্রধান আসামি মাহির রহমান ও তার সহযোগী ফারদিন আহম্মেদ আয়লানকেও গ্রেপ্তার করা হয়। এখন পর্যন্ত চারজনকে আটক করেছে পুলিশ।
মেহেরপুরে মায়ের সাথে ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় বিষধর সাপের কামড়ে আলিফ নামের ৯ বছর বয়সী এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
গতকাল সোমবার দিবাগত রাত ১০টার দিকে সাপে কাটলে প্রথমে ওঝা ও পরে হাসপাতালে নিলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভোরে তার মৃত্যু হয়।
আলিফ সদর উপজেলার খোকসা গ্রামের মালয়েশিয়া প্রবাসী মানিক হোসেনের ছেলে।
স্থানীয়রা জানিয়েছে খোকসা গ্রামের আলিফ অন্যান্য দিনের মত সোমবার দিবাগত রাতে মায়ের সাথে বিছানায় ঘুমিয়ে ছিল। রাত ১০টার দিকে ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় তার কানে সাপে কামড়ে দেয়। এসময় শিশু আলিফের চিৎকারে তা মা জেগে উঠে এবং সাপটি দেখতে পায়। দ্রুত পরিবারের সদস্যরা আলিফকে উদ্ধার করে প্রথমে ওঝার স্বরনাপন্ন হয়ে ঝাড়ফুক দেওয়া শেষে রাতেই আবার নেওয়া হয় ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট্য জেনারেল হাসপাতাল মেহেরপুরে। হাসতাপালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ মঙ্গলবার ভোরে আলিফের মৃত্যু হয়। রাতেই সাপটিকে মেরে ফেলে হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ শহরে এক শিশুকে (১১) ধর্ষণের অভিযোগে আবু হানিফ (৩০) নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। সোমবার (২০ অক্টোবর) রাতে খানপুর এলাকার ৩শ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।
নিহত আবু হানিফ খুলনার বাগেরহাটের খন্তাকাটা গ্রামের আবুল কালামের ছেলে ও খানপুর এলাকার ইতু ভিলার বাড়ির দারোয়ান। গ্রামের বাড়িতে তার তার দুই মেয়ে, এক ছেলে ও স্ত্রী বসবাস করে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শহরের খানপুর এলাকার ইতু ভিলা ভবনের ভাড়াটিয়া ও গার্মেন্ট কর্মীর ১১ বছর বয়সী শিশুকে ভয় দেখিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করার অভিযোগ উঠে ভবনের দারোয়ান (নিরাপত্তাকর্মী) আবু হানিফের বিরুদ্ধে। রবিবার রাতে শিশুটি তার মাকে এ বিষয়ে জানালে তিনি সোমবার দুপুরে স্থানীয়দের জানান। এ ঘটনায় ধর্ষণের অভিযোগে কয়েকজন স্থানীয় যুবক তাকে খানপুর জোড়া ট্যাঙ্কি এলাকায় নিয়ে পিটুনি দেয়। এতে সে গুরুতর আহত হলে তাকে খানপুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
নিহতের ভগ্নিপতি মোহাম্মদ ইব্রাহিম অভিযোগ করেন, দুপুরে এলাকার স্থানীয় যুবক অভি সহ আরও কয়েকজন বাসায় এসে আমার স্ত্রী রাবেয়া বেগমকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন। পরে আমাকে ধরে নিয়ে খানপুর জোড়া ট্যাংকির নিচে নিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে আমার শ্যালক আবু হানিফকে আটকে মারধর করার দৃশ্য দেখতে পাই। এ সময় অভির লোকজন আমাকেও চড়-থাপ্পড় মারে এবং আমার লুঙ্গি খুলে উলঙ্গ করার চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে তারা আমার শ্যালক হানিফকে অটোরিকশায় করে অন্যত্র নিয়ে যায়। পরে রাতে খবর পেয়ে খানপুর হাসপাতালে গিয়ে আমার শ্যালকের লাশ দেখতে পাই।
এ বিষয়ে খানপুর ৩শ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক শাহাদাৎ হোসেন বলেন, সোমবার বিকেল ৩টার দিকে মুমূর্ষু অবস্থায় কয়েকজন যুবক হানিফকে হাসপাতালে নিয়ে আসে। তবে তার হাতে-পায়ে ক্ষত থাকায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা বলায় তারা হানিফকে রেখে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। রাত ৮ টার দিকে হানিফের মৃত্যু হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নাছির আহমদ বলেন, “ধর্ষণের অভিযোগ তুলে এলাকার কয়েকজন যুবক হানিফকে মারধর করেছে বলে জানতে পেরেছি। পরে তার মৃত্যু হলে আমরা লাশ হাসপাতালে পেয়েছি। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ওই শিশুকে ধর্ষণ বা ধর্ষণের চেষ্টার কোন অভিযোগ আমরা এখনো পাইনি। তাছাড়া এটা তদন্তের বিষয়। তদন্ত শেষে নিশ্চিত করে এ বিষয়ে বলা সম্ভব হবে।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেছেন, নাশকতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীরা দেশ ও জনগণের শত্রু, কেউ যদি ভেবে থাকেন, এসব করে নির্বাচন বিলম্বিত বা ঠেকানো যাবে বা ফ্যাসিবাদকে ফিরিয়ে আনা যাবে, তবে তারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন। জনগণের ঐক্যবদ্ধ শক্তির কাছে ওরা খড়কুটোর মতো ভেসে যাবে।
তিনি সোমবার বিকেলে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট পৌর শহরের জয়িতা মহিলা মার্কেট চত্বরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিভিন্ন ইউনিটের হালুয়াঘাট নিবাসী অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মীদের জাতীয়তাবাদী ছাত্র দলে যোগদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখছিলেন। ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা যোগদানকারী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের স্বাগত জানান। যোগদানকারীরা এমরান সালেহ প্রিন্সকে ফুলের তোড়া দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।
অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অবশ্যম্ভাবী, হতেই হবে। অন্যথায় দেশ মহা বিপর্যয়ের মধ্যে পড়বে। নির্বাচনকে সফল, সার্থক ও অর্থবহ করতে সকলকে যার যার অবস্থান থেকে প্রস্তুতি নিতে হবে। নির্বাচনবিরোধী শক্তির মুখোশ উন্মোচন করে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। যারা কোনো কিছু ঘটা মাত্রই বলে, ‘নির্বাচনের পরিবেশ নোই’, তাদের ভিন্ন মতলব আছে। আসলেও তারা নির্বাচন চায় না। আওয়ামী লীগের মতো তারা নিরপেক্ষ নির্বাচনকে ভয় পায়। নিজেদের ভরাডুবির আশঙ্কায় এবং বিএনপির অবশ্যম্ভাবী বিজয় ঠেকাতে কিছু দল অপতৎপরতা চালাচ্ছে। তিনি বলেন, জনগণের মালিক মোকতার সেজে রেজিস্ট্রেশন ও মার্কা বিহীন দলের নেতারা যখন জিয়া পরিবারকে কটাক্ষ করে বক্তব্য দেয় , তখন পাগলও হাসে। জিয়া পরিবারের সাথে বিএনপি ও জাতির আবেগ জড়িত। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে জিয়া পরিবারের কয়েকজন ক্ষমতায় যাবে, একথা বলে বিএনপি ও জাতির আবেগে আঘাত করা হয়েছে। তিনি বলেন, জিয়া পরিবার এই দেশ ও জাতিকে যা দিয়েছে, ইতিহাসে তা স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। ক্ষমতার জন্য জিয়া পরিবার লালায়িত নয়। নিজেরা লাভবান নয়, জিয়া পরিবার দেশ ও জনগণ লাভবান, ক্ষমতাবান করার রাজনীতি করে। স্বাধীনতার পর যা কিছু ভালো, কল্যাণকর, তার অধিকাংশই জিয়া পরিবারের হাত ধরে এসেছে। জিয়া পরিবার বহুদলীয় গণতন্ত্র, আইনের শাসন, ভোটের অধিকার, জনগণের সার্বভৌমত্ব ও অর্থনৈতিক মুক্তির সোপান তৈরি করেছে, স্বাধীনতার মূলমন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে।
তিনি দলে যোগদানকারীদের স্বাগত জানিয়ে বলেন, কোটাবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আওয়ামি ফ্যাসিবাদের নির্মম ও চরম দমন নিপিড়নের মুখে আন্দোলন যখন স্থবির হয়ে পড়ছিল, তখন তারেক রহমান ও বিএনপি গণঅভ্যুত্থানে নিয়ামক শক্তি হিসেবে কাজ করেছে।
সকল শ্রেণি পেশার ও রাজনৈতিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করে আন্দোলনকে গণঅভ্যুত্থানে পরিণত করা বিএনপির প্রায় সাড়ে চার শতাধিক নেতা-কর্মী শহীদ হয়েছে। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের একক দাবিদার সেজে আওয়ামী লীগ যেমন নিজেদের মতো মুক্তিযুদ্ধের বয়ান তৈরি করত, এখন গণঅভ্যুত্থানের একক দাবিদার সেজে অভ্যুত্থানে নেতৃত্বের একাংশ নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করে অভ্যুত্থান নিয়ে নিজস্ব বয়ান দেওয়া শুরু করেছে। বিএনপিকে অভ্যুত্থানের বিপক্ষে দাঁড় করানোর অপচেষ্টা করছে। তিনি বলেন, এসব কারণে ছাত্র অভ্যুত্থানের প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে নেতা-কর্মীরা পদত্যাগ করছেন, কিংবা বিএনপিতে যোগ দিচ্ছেন।
উপজেলা ছাত্র দলের আহ্বায়ক ও জেলা ছাত্র দলের সিনিয়র সহসভাপতি নাঈমুর আরেফিন পাপনের সভাপতিত্বে ও পৌর ছাত্রদলের আহ্বায়ক নূরে আলম জনির সঞ্চালনায় অন্যান্যের মধ্যে ময়মনসিংহ উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক এনায়েত উল্লাহ কালাম, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আসলাম মিয়া বাবুল, পৌর বিএনপির আহ্বায়ক হানিফ মোহাম্মদ শাকের উল্লাহ, সাবেক ছাত্র নেতা আসাদুজ্জামান আসিফ, সদস্য সচিব তাজবীর হোসেন অন্তর, উপজেলা ছাত্র দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এম আর আল আমিন, যোগদানকারীদের পক্ষে ময়মনসিংহ জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন রতন, সোহাগ মিয়া, রাকিব খান, হালুয়াঘাট উপজেলা এনসিপির সদস্য নাসির উদ্দিন বাপ্পী উপস্থিত ছিলেন।
দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের সকল চক্রান্ত ব্যর্থ করে দিয়েছে জনগণ। এমন মন্তব্য করেছেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ একটি অসাম্প্রদায়িক চেতনার দেশ। এই দেশের মানুষ ধর্ম, বর্ণ, নির্বিশেষে একে অপরের সুখ-দুঃখে পাশে থাকে। কিন্তু কিছু কুচক্রী মহল দেশের ঐতিহ্যবাহী সম্প্রীতি বিনষ্টের পাঁয়তারা চালিয়ে যাচ্ছে। জনগণ এখন অনেক সচেতন, তারা এসব ষড়যন্ত্র সফল হতে দেবে না।’
গত রোববার সন্ধ্যায় বরিশাল মহানগরীর কাউনিয়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের সর্ববৃহৎ দীপাবলি উৎসবে অংশগ্রহণ করে উপস্থিত সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।
উৎসবমুখর পরিবেশে হাজারও ভক্তের অংশগ্রহণে দীপাবলি উৎসবটি পরিণত হয় সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির মিলনমেলায়।
এ সময় রহমাতুল্লাহ বলেন, ‘৫ আগস্টের পরে দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের জন্য একটি মহল পরিকল্পিতভাবে অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা করেছিল। কিন্তু বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে বিএনপি নেতা-কর্মী ও দেশপ্রেমিক গণতান্ত্রিক শক্তি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পাশে দাঁড়িয়েছে। প্রতিটি মন্দিরে পাহারার মধ্য দিয়ে উৎসবের সময় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিতে ভ্যানগার্ডের ভূমিকা পালন করেছে। জনগণই অপকৌশলকারীদের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দিয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখনো একটি কুচক্রী মহল সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের পাঁয়তারা করছে। যারা এসব অপকর্মে জড়িত, তারা শুধু একটি ধর্মের নয়- তারা পুরো জাতির শত্রু, গণতন্ত্রের শত্রু। বিএনপি সব ধর্ম-বর্ণের মানুষের নিরাপত্তা ও মর্যাদা রক্ষায় অঙ্গীকারবদ্ধ।’
রহমাতুল্লাহ বলেন, ‘আগামী দিনে তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপির ঘোষিত ৩১ দফা বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে আমরা এমন একটি বাংলাদেশ গড়ব, যেখানে সব ধর্ম-বর্ণ সম্প্রদায়ের মানুষ সমান অধিকার ও মর্যাদার সঙ্গে বসবাস করবে। একটি সুখী, সমৃদ্ধ, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশই হবে আমাদের লক্ষ্য।’
দীপাবলি উৎসবে হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা, ধর্মীয়, সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধি, মহানগর বিএনপির সদস্য জাহিদুর রহমান রিপন, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক তারিক সুলাইমান, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন টিটু, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক মিলন চৌধুরী, নগর স্বাধীনতা ফোরামের সদস্য সচিব নাজমুস সাকিব, নগর ছাত্রদলের সহসভাপতি ওবায়দুল ইসলাম উজ্জ্বলসহ বিএনপির স্থানীয় নেতা-কর্মী ছাড়াও বিভিন্ন পর্যায়ের সাধারণ মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
উৎসব শেষে আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে মন্দির প্রাঙ্গণে আলো প্রজ্জ্বলন করেন এবং শান্তি, সম্প্রীতি ও ঐক্যের আহ্বান জানান।
বরগুনার আমতলী উপজেলার চাওড়া ইউনিয়নের জেলেদের চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। জেলেদের অভিযোগ তাদের নাম তালিকায় থাকলেও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হারুন বয়াতি চাল না দিয়ে আত্মসাৎ করেছেন। ভুক্তভোগী শতাধিক জেলে সোমবার দুপুরে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ দিয়েছেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রোকনুজ্জামান খাঁন তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
জানা গেছে, আমতলী উপজেলায় ৬ হাজার ৯৬৯ জন নিবন্ধিত জেলে রয়েছে। গত ৪ অক্টোবর মধ্য রাত থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন ইলিশ মাছ শিকার নিষিদ্ধ করেছে সরকার। এই সময়ে জেলেদের জন্য ২৫ কেজি করে বিশেষ ভিজিএফ চাল বরাদ্ধ দিয়েছেন সরকার। ওই চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যরা চাল বিতরণে নিবন্ধিত জেলেদের চাল না দিয়ে আত্মসাৎ করেছেন। উপজেলার ৬ হাজার ৯৬৯ জন জেলেদের মধ্যে চাওড়া ইউনিয়নে ৬৪২ জন তালিকাভুক্ত জেলে রয়েছেন। গত রোববার ওই জেলের মধ্যে ৩০০ জেলেকে চাল দিয়ে অবশিষ্ট চাল ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হারুন বয়াতি আত্মসাৎ করেছেন এমন অভিযোগ জেলে ফরিদা বেগম. আম্বিয়া বেগম ও মামুন শরীফের। চাল না পেয়ে সোমবার দুপুরে অন্তত শতাধিক জেলে আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে অভিযোগ দিয়েছেন। এ ঘটনায় উপজেলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রোকনুজ্জামান খাঁন উপজেলা কৃষি অফিসারকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। ১৫ দিনের মধ্যে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন, উপজেলা মেরিন ফিসারিজ কর্মকর্তা অলিউর রহমান ও উপজেলা ফ্যাসিলেটেটর মাইনুল ইসলাম। জেলে মোতালেব, নুর মোহাম্মদ, জুয়েল, আনোয়ার, সুনিল চন্দ্র ও কেরামত আলী আকন বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হারুন বয়াতি তালিকাভুক্ত অর্ধেক জেলেদের চাল দিয়েছে। অবশিষ্ট জেলেদের চাল দেয়নি। তারা আরও বলেন, আমরা চাল আনতে গিয়ে ফেরত এসেছি। চেয়ারম্যান আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন আমরা চাল পাব না। তারা আরও বলেন, চেয়ারম্যানের লোকজন ডান হাত-বাম হাত দিয়ে টিপসহি দিয়ে চাল বিতরণের তালিকা প্রস্তুত করেছেন।
চাওড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) হারুন বয়াতি বলেন, ‘মাস্টার রোল তৈরি করেই চাল বিতরণ করা হয়েছে। এখানে কোনো অনিয়ম করা হয়নি। তিনি আরও বলেন, যে জেলেরা অভিযোগ করেছেন তারা তালিকাভুক্ত জেলে নয়।
আমতলী উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ রাসেল বলেন, ‘কমিটির গঠনের চিঠি পাইনি। চিঠির মর্মানুসারে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।’
আমতলী উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা তন্ময় কুমার বলেন, ‘জেলেরা চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে আমার দপ্তরে এসেছিল। পরে তারা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে অভিযোগ দিয়েছেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রোকনুজ্জামান খাঁন উপজেলা কৃষি অফিসারকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। কমিটি ১৫ কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবেন। তিনি আরও বলেন, উপজেলার নিবন্ধিত ৬ হাজার ৯৬৯ জন জেলের জন্যই চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
ঘুষ-দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) রাজবাড়ী কার্যালয়। সেখানে দালাল ছাড়া কোনো কাজ হয় না। এ অভিযোগ দীর্ঘদিনের। দুদক অভিযান চালিয়ে রাজবাড়ী বিআরটিএর কতিপয় অসাধু কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করলেও জামিনে মুক্তি পেয়ে একই চক্র ফের তাদের কার্যক্রম আগের মতই চালিয়ে যাচ্ছে। চাহিদামতো অর্থ ছাড়া এখানকার কোনো ফাইল নড়ে না। সেবাগ্রহিতাদের দুর্ভোগের শেষ নেই। টাকা নেওয়ার পরও কাজ না হলেও ফেরত দেওয়া হয় না কোনো অর্থ। প্রতিবাদ করলেই দালালদের হাতে লাঞ্ছিত হতে হয় । এ যেন নিত্যদিনের ঘটনা। তবে প্রশাসনের চোখে পড়ে না এসব অনিয়ম-দুর্নীতি।
সোমবার সকাল সাড়ে ১০ টার সময় রাজবাড়ী বিআরটিএ অফিসের সিল কন্ট্রাক্টর মো. আক্রামুজ্জামান কাছে টাকা দিয়ে কাজ না হওয়ায় টাকা ফেরত চেয়ে মারধরের শিকার হয়েছেন রাজবাড়ী সদর উপজেলার গোয়ালন্দ মোড় এলাকার মো. সুমন শেখ।
মো. সুমন শেখ অভিযোগ করে বলেন, এক বছর আগে কাগজের জন্য সাড়ে আট হাজার টাকা জমা দেই আকরাম হোসেনের নিকট। সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার কাগজ নিতে বিআরটিএতে আসলে আক্রামুজ্জামান আমার কাছে ব্যাংক স্লিপ চায়। এ সময় এক বছর আগের স্লিপ, আপনার কাছে জমা দিয়েছি, এখন কোথায় পাব, বললে থাপ্পর মারে। এ সময় প্রতিবাদ করলে আকরাম হোসেনসহ তার সাথে থাকা ৪-৫ জন এলোপাথারীভাবে মারধর শুরু করে। টাকা দিয়ে কাজ না হওয়ায় টাকা ফেরত চাইলে এভাবে মারতে পারে না। আমি এর বিচার চাই।
মো. বিল্লাল হোসেন নামে এক ব্যক্তি বলেন, আমার ড্রাইভিং লাইসেন্সের ভারী থেকে হালকা করার জন্য আকরাম হোসেন ৮ হাজার টাকা দাবি করে। তাকে ৬ হাজার টাকা প্রদান করার পরও আজ ২ বছর ধরে আজ-কাল করে ঘোরাচ্ছে।
জানা গেছে, ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে মানুষের ভোগান্তি সৃষ্টি করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে রাজবাড়ী বিআরটিএ অফিসে গত ৭ মে অভিযান পরিচালনা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ অভিযানে দালাল চক্রের মূলহোতা রাজবাড়ী বিআরটিএ অফিসের সিল কন্ট্রাক্টর ও রাজবাড়ী সদর উপজেলার কাজীবাঁধা বেথুলিয়া গ্রামের বেলায়েত হোসেনের ছেলে আক্রামুজ্জামান, দালাল চরলক্ষীপুর
গ্রামের আব্বাস আলী খানের ছেলে আশিক খান, গোপিনাথদিয়া গ্রামের রহমত আলীর ছেলে লিয়াকত আলী, কাজীকান্দা গ্রামের আব্দুল মতিনের ছেলে মুনছুর আহমেদকে গ্রেপ্তার করে। এ অভিযান পরিচালনা করে দুর্নীতি দমন কমিশন ফরিদপুর আঞ্চলিক কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো, মোস্তাফিজ। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ফরিদপুর আঞ্চলিক কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. মোস্তাফিজ বলেন, রাজবাড়ী বিআরটিএতে ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে ভোগান্তি ও নানা অনিয়মের অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুদক প্রধান কার্যালয়ের নির্দেশে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযান পরিচালনাকালে বিআরটিএ অফিসের সিল কন্ট্রাক্টর আকরামুজ্জামানের কাছ থেকে ২৫ হাজার ৮০ টাকা, দালাল আশিক খানের কাছ থেকে ৩৩ হাজার ১শত টাকা, দালাল লিয়াকত আলীর কাছ থেকে ১৪ হাজার ২শত ৪০ টাকাসহ মোট ৭২ হাজার ৪শত ২০ টাকা উদ্ধার করা হয়। এ বিষয়ে বিআরটিএ অফিসের কর্মকর্তাকে নিয়মিত মামলা দায়ের করার নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
স্থানীয় ও ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, রাজবাড়ী বিআরটিএ অফিসের কতিপয়
দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজসে ড্রাইভিং লাইসেন্সসেবা
নিতে আসা গ্রহিতাদেরকে নানাভাবে জিম্মি করে অর্থ হাতিয়ে নিয়ে আসছে। টাকা ছাড়া কেউ লাইসেন্স করতে পারে না। আর সিল কন্ট্রাক্টর আক্রামুজ্জামানের নেতৃত্বে লিয়াকত আলী জেলার প্রতিটি এলাকায় দালাল সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। এ সিন্ডিকেটের বাইরে কেউ ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে আসলেও তাদেরকে ফেল করানো হয়। ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নেয়।
একজন লাইসেন্স সেবাগ্রহিতা বলেন, ৩বার ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য পরীক্ষা দেই। তিনবারই ফেল করানো হয়। পরে একজন দালাল আমার নিকট থেকে ১৯ হাজার টাকা নিয়েছে। এখন প্রায় দেড় বছর যাবৎ ঘুরছি। আমার কাজও করে না, আবার টাকাও ফেরত দেয় না। টাকা চাইলে উল্টো হুমকি দেয়।
এদিকে, সিল কন্ট্রাক্টর আক্রামুজ্জামান রাজবাড়ী শহরের ২নং বেড়াডাঙ্গা এলাকায় গড়ে তুলেছেন দ্বিতীয় তলা জমিসহ আলিশান বাড়ি। জাপানি টয়োটা প্রাইভেটকার, সজ্জনকান্দায় ১ কোটি ২৬ লাখ টাকায় কেনা দ্বিতল ভবনসহ কয়েক কোটি টাকার সম্পদ গড়ে তুলেছেন। অভিযুক্ত রাজবাড়ী বিআরটিএর সিল কন্ট্রাক্টর আক্রামুজ্জামানের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
রাজবাড়ী বিআরটিএ সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিন) মো. নাসির উদ্দিন বলেন, আক্রামুজ্জামান বিআরটিএর কেউ নয়, তিনি একজন বহিরাগত।
সেবাগ্রহিতাকে মারধরের বিষয়টি এডিএম স্যার আমাকে অবগত করেছেন। আমি বাইরে আছি, পরে কথা বলবো।
রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলায় এক প্রতিবন্ধী মারমা নারীকে স্বজাতি তিন যুবকের হাতে গণধর্ষণের অভিযোগে বিচারের দাবিতে ও স্থানীয় প্রথাগত বিচারের মাধ্যমে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ (পিসিসিপি) রাঙামাটি জেলা শাখা।
সোমবার বিকেলে রাঙামাটি শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে অনুষ্ঠিত এ বিক্ষোভ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের জেলা সভাপতি তাজুল ইসলাম এবং সঞ্চালনা করেন জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক পারভেজ মোশাররফ হোসেন।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন পিসিসিপি জেলা সাধারণ সম্পাদক মো. আলমগীর হোসেন, ৩৫ কাঠুরিয়া স্মৃতি সংসদের আহ্বায়ক শাখাওয়াত হোসেন, পিসিএনপি জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবিরসহ বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দ।
সভায় বক্তারা বলেন, কাপ্তাই উপজেলার চিৎমরম ইউনিয়নের চংড়াছড়ি মুখ এলাকায় এক প্রতিবন্ধী মারমা নারীকে স্বজাতি তিন যুবক— অনুচিং মারমা (৫০), কালা মারমা (৫৫) ও মং উ মারমা (৩৫)—মিলে ধর্ষণ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ধারাবাহিক যৌন নির্যাতনের ফলে ওই নারী বর্তমানে অন্তঃসত্ত্বা।
বক্তারা অভিযোগ করেন, গত ১৭ অক্টোবর স্থানীয় প্রথাগত রীতিতে অনুষ্ঠিত সামাজিক বিচারে অভিযুক্তদের ভিকটিমের জন্য ৩ লাখ টাকা ও সমাজের নামে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। আশ্চর্যের বিষয়, একই বিচারে ভিকটিমকেও ‘সমাজের নিয়ম ভঙ্গের’ দায়ে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়, যা সম্পূর্ণ অবিচার।
পিসিসিপি সভাপতি তাজুল ইসলাম বলেন,
‘এই বাচ্চার দায় কে নেবে? এই বাচ্চার অভিভাবক কে হবে? প্রভাবশালী একটি আঞ্চলিক দলের নিয়ন্ত্রণে ওই এলাকা থাকায় ভিকটিম পরিবার ভয় ও আতঙ্কে আইনের আশ্রয় নিতে পারছে না।’
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. আলমগীর হোসেন বলেন,
‘এটি পাহাড়ে সামাজিক বিচারের নামে নারীর প্রতি সহিংসতার ভয়াবহ উদাহরণ। অপরাধীদের অর্থদণ্ড দিয়ে দায়মুক্তি দেওয়া কোনো বিচার নয়, এটি অবিচার।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই ঘটনায় পাহাড়ের প্রভাবশালী সংগঠনগুলো—জেএসএস, ইউপিডিএফ, কেএনএফ—কেউই কোনো নিন্দা জানায়নি। অথচ, কোনো বাঙালির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে এসব সংগঠন সঙ্গে সঙ্গে আন্দোলন ও প্রচারে নামে। এই দ্বিমুখী নীরবতা প্রমাণ করে, পাহাড়ে মানবাধিকারের প্রশ্নটি অনেক সময় রাজনীতির ছায়াতলে চাপা পড়ে যায়।’
বিক্ষোভ থেকে দ্রুত সময়ের মধ্যে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার ও প্রতিবন্ধী নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি করা হয়।