দুয়ারে কড়া নাড়ছে খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) নির্বাচন। নিজেদের বাক্সে ভোট টানতে ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে ছুটছেন প্রার্থীরা। একদিকে যেমন উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি ও নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধির আশ্বাস দিচ্ছেন, অন্যদিকে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে রটাচ্ছেন নানা রকমের কথা।
শনিবার সকালে ভোটের মাঠে প্রচারের সময়ে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেকের বিরুদ্ধে কালোটাকা ছড়ানোর অভিযোগ তুলেছেন জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী শফিকুল ইসলাম মধু। তবে এ অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে পাল্টা মধুর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন খালেক।
নগরীর সোনাডাঙ্গা এলাকায় গণসংযোগকালে সাংবাদিকদের ব্রিফ করার সময় মধু বলেন, ‘আগে তালুকদার খালেকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোঁজ করুন, তার কোথায় কী আছে? আমার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট শূন্য। আমার কোনো টাকা নেই। অনেক দলের (আওয়ামী লীগের) লোক দেখছি প্রতিটি ওয়ার্ডে ২০০-৩০০ লোক নির্বাচনী কাজ করছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন যে টাকা বাজেট করে দিয়েছে, তাতে করে এত লোক কাজ করানো সম্ভব না। তাহলে এই টাকার উৎস কোথায়, নাকি তারা আলাদিনের চেরাগ খুঁজে পেয়েছে। কালোটাকার ছড়াছড়ি হচ্ছে খুলনা সিটিতে। এটার সঠিক তদন্ত করা উচিত।’
নগরবাসীর কাছে ভোট চেয়ে তিনি বলেন, ‘আমার বড় ভাই তালুকদার ভাই। সে তো গত তিনবার কেসিসি নির্বাচন করেন এবং দুবার মেয়র হিসেবে জয়ী হন। তাইলে এবার আমার হাতে মেয়রের সিট ছেড়ে দিক, আমি খুলনাবাসীকে দেখিয়ে দেব যে উন্নয়ন কাকে বলে। আমিও অনেক কিছু জানি এবং বুঝি। খুলনা সিটিকে একটি আধুনিক সিটি হিসেবে গড়ে তুলব ইনশাআল্লাহ।’
এদিকে এই অভিযোগের প্রমাণ দাবি করে তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, ‘কালোটাকা ছড়ানো মধুর মতো প্রার্থীর পক্ষে সম্ভব। খুলনায় আমাদের কোনো কালোটাকা ছড়াছড়ি হচ্ছে না। তারা পারলে এটার প্রমাণ দেখাক। তাদের টাকা থাকলে তারা ছড়াতে পারে।’
খুলনা শহরের উন্নয়ন নিয়ে প্রশ্ন তুলে খালেক বলেন, ‘তাদের এরশাদ তো ৮-১০ বছর ক্ষমতায় ছিল। তারা এই শহরে কী উন্নয়ন করেছে, আমরা আমি কী করেছি, তা মানুষ জানে।’
উল্লেখ্য, আগামী ১২ জুন খুলনা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৫২৯ ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।
অবশেষে বিয়ের পিঁড়িতে বসছেন টাঙ্গাইলের গোপালপুরের সাজানপুর উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রনি প্রতাপ পাল। কনে কালিহাতী উপজেলার মগড়া গ্রামের সত্যপালের মেয়ে স্বর্ণা পাল, তিনি অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। তবে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম এই বিয়ের বিষয়ে কিছুই জানে না বলে জানিয়েছেন।
জানা গেছে, গোপালপুর পালপাড়ার বাসিন্দা রতন লাল পালের ছেলে রনি প্রতাপ পাল গত শুক্রবার আশীর্বাদ অনুষ্ঠান সম্পন্ন করেন। আগামী ১৫ ডিসেম্বর তার বিয়ের বাকি কাজ সম্পন্ন হবে।
বিদ্যালয়ে সহশিক্ষা চালু থাকায়, গত জুলাই মাসে ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে বিয়ে করতে রনি প্রতাপ পালকে নোটিশ ধরিয়ে দিয়েছিলেন প্রধান শিক্ষক। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
রনি প্রতাপ পাল বলেন, ‘কোনো চাপে নয়, পরিবারের পছন্দেই বিয়ে করতে যাচ্ছি, সবার দোয়া চাই। এখন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ছোটখাটো অনুষ্ঠান করায় কাউকে বলা হয়নি, বিয়ের অনুষ্ঠানে অবশ্যই প্রধান শিক্ষককে দাওয়াত দেয়া হবে।’
বিয়ের বিষয়ে অবগত না থাকায়, প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।
নিয়মবহির্ভূত বিয়ের নোটিশ দেয়ায় ও আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে একাধিক সরকারি তদন্ত চলমান রয়েছে। প্রধান শিক্ষকের বহিষ্কার চেয়ে ছাত্রছাত্রী, অভিভাবক, সাবেক শিক্ষকরা ও স্থানীয়রা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে সহকারী শিক্ষক পদে ওই বিদ্যালয়ে যোগ দেন রনি প্রতাপ পাল। গত ২৬ জুলাই তাকে নোটিশ দিয়েছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।
নোটিশে বলা হয়, ‘বিদ্যালয়ে যোগদানের পর আপনাকে বারবার মৌখিকভাবে তাগিদ দিয়েছি বিবাহ করার জন্য। কিন্তু অতীব দুঃখের বিষয়, কয়েক বছর অতিবাহিত হওয়ার পরও আপনি বিবাহ করেননি। বিদ্যালয়টিতে সহশিক্ষা চালু রয়েছে। অভিভাবকরা অবিবাহিত শিক্ষক নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেন। সুতরাং বিদ্যালয়ের বৃহত্তর স্বার্থে নোটিশপ্রাপ্তির ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে বিবাহের কার্য সম্পন্ন করে কর্তৃপক্ষকে অবহিত করার জন্য আপনাকে বিশেষভাবে নির্দেশ দেয়া হলো।
নোটিশটি পাওয়ার দুই দিন পর সহকারী শিক্ষক রনি প্রতাপ প্রধান শিক্ষককে লিখিত জবাব দেন। জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার অভিভাবকরা আমার বিয়ের চেষ্টা করছেন। কিন্তু বাংলাদেশের হিন্দুদের বিয়ের পাত্রপাত্রী বাছাইয়ে গোত্র বা বর্ণের বিষয় রয়েছে। এ ছাড়া হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা শ্রাবণ থেকে কার্তিক পর্যন্ত বিয়ে করাটা শুভ মনে করেন না। সুতরাং পারিবারিক ও ধর্মীয় রীতির কারণে আগামী অগ্রহায়ণ মাসে আমার অভিভাবকরা আমাকে বিবাহ করাবেন।
রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য কয়লা নিয়ে মোংলা বন্দরে ভিড়েছে এমভি বসুন্ধরা ইমপ্রেস। ইন্দোনেশিয়া থেকে ৩১ হাজার ৩০০ মেট্টিক টন কয়লা নিয়ে শনিবার দুপুরে বন্দরের পশুর চ্যানেলের হারবাড়িয়ার-১২ নম্বর অ্যাংকোরেজে ভিড়েছে জাহাজটি।
জাহাজটির স্থানীয় শিপিং এজেন্ট মেসার্স টগি শিপিং অ্যান্ড লজিস্টিক লিমিটেডের খুলনার সহকারী ব্যবস্থাপক খন্দকার রিয়াজুল হক জানান, ইন্দোনেশিয়ার ‘মোয়ারা পান্তাই’ বন্দর থেকে ৪৯ হাজার ৭০০ টন কয়লা নিয়ে গত ৪ সেপ্টেম্বর এ দেশের (বাংলাদেশ) উদ্দেশে ছেড়ে আসে এমভি বসুন্ধরা ইমপ্রেস। এরপর জাহাজটি ১৭ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম বন্দরে ভিড়ে। সেখানে ১৮ হাজার ৪০০ টন কয়লা খালাস করে। সেখানে খালাসকৃত কয়লা লাইটারেজ করে আনা হচ্ছে রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রে। জাহাজটি বাকি কয়লা নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে মোংলা বন্দরে আসে শনিবার। দুপুরে কয়লাবাহী এ জাহাজটি মোংলা বন্দরের পশুর চ্যানেলের হাড়বাড়িয়ার-১২ নম্বর অ্যাংকোরেজে ভিড়ে।
তিনি আরও জানান, বিকেল থেকেই এ জাহাজটি হতে কয়লা খালাস করে লাইটারেজ করে রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রে নেয়া শুরু হয়েছে।
নওগাঁয় মাঠে কাজ করার সময় ও নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে দুই নারীসহ বজ্রপাতে তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার বিকেলে মহাদেবপুর ও পোরশা উপজেলায় পৃথক বজ্রপাতে তাদের মৃত্যু হয়।
নিহতরা হলেন- মহাদেবপুর উপজেলার রাইগাঁ ইউনিয়নের সিলিমপুর গ্রামের নেপাল পাহানের স্ত্রী শ্রীমতি পাহান (২৭) ও একই গ্রামের মৃত সুবেন্দ্রনাথ পাহানের স্বামী সবানী পাহান (৬৫) এবং পোরশা উপজেলার চকবিষ্ণপুর গ্রামের মৃত আবুল হোসেনের ছেলে রফিকুল ইসলাম (৫০)।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে মহাদেবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাফফর হোসেন বলেন, নিহত শ্রীমতি পাহান ও সবানী পাহান বাড়ির পাশেই মাঠে কাজ করছিলেন। এসময় বৃষ্টি শুরু হওয়ার পর বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে হঠাৎ সেখানে বজ্রপাত ঘটে। এতে ঘটনাস্থলেই তারা দুজন মারা যান। নিহতের পরিবারের কোনো অভিযোগ নেই।
অন্যদিকে পোরশা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহুরুল ইসলাম বলেন, নিহত রফিকুল ইসলাম দুপুরে বাড়ি থেকে বের হয়ে পুনর্ভবা নদীতে মাছ ধরতে যান। মাছ ধরার সময় বৃষ্টি শুরু হলে বিকেল ৪টার দিকে হঠাৎ সেখানে বজ্রপাত ঘটে। এতে ঘটনাস্থলেই রফিকুল ইসলাম মারা যান। পরে খবর পেয়ে নিহতের পরিবারের লোকজন ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ বাড়িতে নিয়ে আসেন। নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ নেই। পারিবারিকভাবে মরদেহ দাফনের প্রস্ততি নিয়েছেন।
চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পরিত্যাক্ত অবস্থায় অবৈধভাবে নিয়ে আসা প্রায় দুই কেজি স্বর্ণ উদ্ধার করেছে কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর।
শনিবার দুপুরে বিমানবন্দরে মালিকবিহীন দুটি লাগেজ স্ক্যানের মাধ্যমে এসব স্বর্ণ উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার স্বর্ণের আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় দেড় কোটি টাকা।
কাস্টমস গোয়েন্দারা জানান, শুক্রবার রাতে মধ্যপ্রচ্যের দেশ ওমানের রাজধানী মাস্কট থেকে ওমান এয়ারের ডব্লিউওয়াই৩১৩ ফ্লাইটে মালিকবিহীন ব্যাগ দুটি চট্টগ্রামে আসে। কিন্তু শনিবার দুপুর পর্যন্ত কোনো যাত্রী এই ব্যাগগুলো নিতে না আসায় স্ক্যান করে কর্তৃপক্ষ।
চট্টগ্রামের কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক বশির আহমেদ বলেন, ‘ব্যাগগুলো স্ক্যান করার পর সেখানে অবৈধভাবে নিয়ে আসা পণ্যের সন্ধান পাওয়া যায়। পরবর্তীতে একটা লাগেজের ভেতর থাকা রাইচ কুকারে লুকানো অবস্থায় বিশেষভাবে লোহার আস্তরণ দিয়ে মোড়ানো তিনটি স্বর্ণের বার পাওয়া যায়। উদ্ধার এসব স্বর্ণের ওজন ১ কেজি ৮৫৬ গ্রাম। যার বাজারমূল্য ১ কোটি ৪৮ লাখ ১৮ হাজার ৫০০ টাকা।’
এই ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
এর আগে শুক্রবার সকালে ১ কেজি ৭০০ গ্রাম ২৪ ক্যারেটের কাঁচা সোনা ও ২২ ক্যারেটের ১০০ গ্রাম স্বর্ণালংকারসহ মোহাম্মাদ আলী নামের এক ব্যক্তিকে আটক করে বিমানবন্দর কাস্টমসের কর্মকর্তারা।
নওগাঁর রানীনগরে একটি বাড়িতে ডাকাতির ঘটনায় ডাকাত চক্রের ৯ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র, নগদ টাকা ও লুণ্ঠিত মালামাল উদ্ধার করা হয়।
শনিবার দুপুরে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রাশিদুল হক।
এর আগে শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে উপজেলার বড়গাছা ইউনিয়নের গহেলাপুর (হিন্দুপাড়া) গ্রামের প্রণব সাহার বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ রাতভর অভিযান চালিয়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তাররা হলেন— উপজেলার গহেলাপুর (মধ্যপাড়া) গ্রামের মোজাম্মেলের ছেলে মমিন মন্ডল (২৬), গহেলাপুর কবিরাজপাড়া গ্রামের জলিলের ছেলে মাসুদ রানা (২৮), পশ্চিম গোবিন্দপুর গ্রামের জনাব আলীর ছেলে জাকির হোসেন জেমস (৩৫), বিষ্ণুপুর গ্রামের শামটানের ছেলে ইমদাদুল স্বপন (৩২), একই গ্রামের জামালের ছেলে মুনচুর মন্ডল (৩২), পশ্চিম চকবলরাম গ্রামের রাজ্জাকের ছেলে ইমদাদুল হক বুলেট (২৭), পূর্ব বালুভরা গ্রামের মিলনের ছেলে হাফিজুল হ্যাপি (২৬), গহেলাপুর নিশ্চিন্দাকুড়ি গ্রামের সিরাজুল ইসলামের ছেলে মাসুদ রানা (৩২) ও হিন্দুপাড়া গ্রামের সিরাজুলের ছেলে সরন আলী (২২)।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার বলেন, গ্রেপ্তার ডাকাত দলের সদস্য মাসুদ রানার নেতৃত্বে শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে উপজেলার গলোপুর (হিন্দুপাড়া) গ্রামের প্রণব সাহার বাড়িতে ডাকাতি হয়। ডাকাত সদস্যরা ঘরে ঢুকে তার স্ত্রীর হাত-পা বেঁধে দেশীয় অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে নগদ ২৬ হাজার টাকা, ৬ আনা স্বর্ণের গহনা, পিতলের তৈরি ছোট একটি মূর্তিসহ বাড়ির বিভিন্ন মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।
তিনি বলেন, এ ঘটনায় বাড়ির মালিক প্রণব সাহা থাকায় একটি মামলা দায়ের করেন। পরে পুলিশ রাতভর অভিযান চালিয়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আসামিদের গ্রেপ্তার করে। লুট হওয়া নগদ টাকাসহ মালামাল উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় আরও কেউ জড়িত আছে কিনা তা তদন্ত করা হচ্ছে বলেও জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গাজিউর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) ফৌজিয়া হাবিব খান, রানীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদসহ পুলিশের অন্যান্য কর্মকর্তারা।
কুমিল্লায় অভিযান চালিয়ে ১০৮ বস্তা আলু জব্দ করে সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি করেছে ভোক্তা অধিদপ্তর। এ সময় অনিয়মের অভিযোগে দুটি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়।
শনিবার দুপুরে শহরের চকবাজারে অভিযান পরিচালনা করেন ভোক্তা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. আছাদুল ইসলাম।
তিনি বলেন, কুমিল্লা জেলা কার্যালয়ের উদ্যোগে চকবাজারে পাইকারদের বেচাকেনা মনিটরিং কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এ সময় তাদের মজুদ, বিক্রয় রশিদ যাচাই করা হয়। অভিযানে মেসার্স অরবিন্দ এন্টারপ্রাইজে বসে বগুড়া ও চাপাইনবাবগঞ্জ এলাকার রশিদ নকল করা হচ্ছে। সেখানে তারা নিজেদের মতো দর নির্ধারণ করছিলেন। এ সময় অভিযান দেখে একজন পালিয়ে যায়। পরে গোডাউন তল্লাশি করে ১০৮ বস্তা আলু জব্দ করা হয়। জব্দ করা আলু ৩৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হয়।
এদিকে অভিযানে মূল্য তালিকা প্রদর্শন না করা এবং ক্রয়ের ভাউচার সংরক্ষণ না করায় অন্য দুটি প্রতিষ্ঠানকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
অভিযানে স্যানিটারি ইন্সপেক্টর ইসরাইল হোসেন, চকবাজার ব্যবসায়ী সমিতি এবং জেলা পুলিশের একটি প্রতিনিধিদল উপস্থিত ছিল।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়ার বিষয়ে আমার কাছে কোনো আবেদন আসেনি। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে হবে। এরপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ের কাছে মতামত চাইবে।
শনিবার সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া রেলওয়ে জংশনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
আনিসুল হক বলেন, ‘খালেদা জিয়া দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বদন্যতা ও মহানুভবতায় তিনি এখন মুক্ত হয়ে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভালো চিকিৎসা পাচ্ছেন।’
বিএনপির হরতাল কর্মসূচির বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘কেউ আইন ভঙ্গ করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবার একাধিক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে তার নির্বাচনী এলাকা আখাউড়ায় যান আইনমন্ত্রী। পরে তিনি সড়কপথে কসবায় পৌঁছান। সেখানে তিনি একাধিক অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
ভিসানীতি নিয়ে সরকার নয়, বরং বিএনপি চাপে আছে বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। রোববার দুপুরে রাজশাহীর মাদিনাতুল উলুম কামিল মাদরাসায় ‘শিক্ষার উন্নয়নে বর্তমান সরকারের ভূমিকা ও শিক্ষকদের প্রত্যাশা’ শীর্ষক সমাবেশ শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।
ভিসানীতি নিয়ে সরকার কোনো চাপ অনুভব করছে না জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ভিসা নীতি নিয়ে বিরোধী দলেরই চাপ অনুভব করার কথা। এটি তাদের ভাবার কথা। সরকার ও নির্বাচন কমিশন স্বচ্ছতার সঙ্গে ভোটগ্রহণ করতে চায়। তাই বর্তমান সরকার ভিসানীতি নিয়ে কোনো চাপ অনুভব করছে না।
তিনি বলেন, যারা স্বচ্ছতা চায় না তারা হাওয়া ভবন; খোয়াব ভবন তৈরি করে। আমরা উন্নয়ন চাই। হাওয়া ভবন চাই না।
মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের মহাপরিচালক হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব কামাল হোসেন, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আব্দুর রশীদ, মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর কায়সার আহমেদসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
শেরপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মানিক মিয়া (৩০) নামে এক সাজাপ্রাপ্ত আসামির মৃত্যু হয়েছে। শনিবার সকালে জেলা সদর হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে মারা যান তিনি।
মানিক মিয়া সদর উপজেলার কামারেরচর ইউনিয়নের ডোবারচর গ্রামের মৃত হায়দর আলীর ছেলে ও স্থানীয় একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ ও পর্ণোগ্রাফি মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত হয়ে জেলা কারাগারে ছিলেন তিনি।
জেলা কারাগার ও হাসপাতাল থেকে জানা যায়, মানিক মিয়া দীর্ঘদিন ধরে শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। শুক্রবার বিকেলে তার শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে কারাগারের সহকারী সার্জনের পরামর্শে তাকে জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে মারা যান তিনি।
শেরপুর জেলা কারাগারের সুপার মোহাম্মদ হুমায়ুন কবীর খান বলেন, ‘সুরতহাল রিপোর্ট ও জেলা সদর হাসপাতালের ময়নাতদন্ত শেষে মানিক মিয়ার লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বিষয়টি আমাদের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিশ্রুতি দেওয়ার একযুগ পরও চালু হয়নি খুলনার দাদা ম্যাচ কারখানা। বর্তমানে অরক্ষিত থাকায় কারখানাটির প্রায় সব যন্ত্রাংশ ও দামি মালামাল চুরি হয়ে গেছে। অধিকাংশ শ্রমিকরা পাওনা না পেয়ে ওই কলোনি ছেড়ে নতুন কর্মের জন্য অন্যত্র পাড়ি জমিয়েছেন।
২০১০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি টারমিনেশন পদ্ধতিতে (বাংলাদেশ শ্রম আইনের ২৬ ধারা মোতাবেক বিনা কারণে চাকরি থেকে অব্যাহতি) সব স্থায়ী ও অস্থায়ী কর্মীকে ছাঁটাই করে দেয় পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ভাইয়া গ্রুপ।
ওই মিলের শ্রমিক কলোনিতে এখনো বসবাস করছেন তৈয়ব খা। তিনি বলেন, ‘কারখানাটি মূলত বন্ধ হয়েছিল মালিক ও সরকারের মধ্যে বিরোধের জের থেকে। মালিকপক্ষ কারখানাটি সরকারের কাছ থেকে লিজ নিয়েছিল। পরে ধারাবাহিকভাবে ঋণ নেয়া শুরু করে। একপর্যায়ে কারখানার লোকসানের কথা বলে ঋণের সুদ মাপের জন্য আবেদন করে। তখন বিরোধ বেধে কারখানাটি সরকারের দায়িত্বে নিয়ে যাওয়ার জন্য বন্ধ করা হয়।’
দাদা ম্যাচ কারখানাটি ঢাকা ম্যাচ ইন্ডাস্ট্রিজ কোম্পানি লিমিটেডের একটি ইউনিট প্রতিষ্ঠান। যার ৩০ শতাংশের মালিকানা ছিল শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) এবং বাকি ৭০ শতাংশ ছিল ভাইয়া গ্রুপের।
খুলনা মহানগরীর রূপসা এলাকায় রূপসা নদীতীরে ১৯৫৫ সালে ১৭ দশমিক ৭৯ একর জায়গার ওপর বেসরকারি উদ্যোগে এই কারখানাটি চালু হয়। সুন্দরবন থেকে মৃত গেওয়া গাছ কিনে এনে তা দিয়ে তৈরি করা হতো বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ম্যাচ। দেশ স্বাধীনের পর কারখানাটি জাতীয়করণ করা হয়। তখন থেকে কারখানাটি পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয় বিসিআইসিকে। ১৯৮২ সালের মার্চে চালু হয় বিরাষ্ট্রীয়করণনীতি (সরকারি মালিকানায় পরিচালিত শিল্পপ্রতিষ্ঠান ব্যক্তিমালিকানায় স্থানান্তর)। ওই নীতির আওতায় ১৯৮৪ সালে ঢাকা ম্যাচ ইন্ডাস্ট্রিজ কোম্পানি লিমিটেড গঠন হয়। তাতে যুক্ত হয় খুলনার দাদা ম্যাচ ও রাজধানীর ঢাকা ম্যাচ কারখানার দুটি ইউনিট করা হয়। ওই বছরই বিসিআইসির কাছে ৩০ শতাংশ মালিকানা রেখে ৭০ শতাংশ বিক্রি করা হয় সুইডেনের একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে।
শ্রমিক তৈয়ব খা বলেন, ‘সুইডেনের প্রতিষ্ঠানটি যত দিন দাদা ম্যাচ পরিচালনার দায়িত্বে ছিল, ততদিন শ্রমিকদের অগ্রাধিকার দেয়া হতো। তবে মাত্র কয়েক বছর পরেই তারা পরিচালনার দায়িত্ব ছেড়ে দেয়।’
১৯৮৯ সালে সুইডেনের প্রতিষ্ঠানটি এই দুই কারখানার মালিকানা বিক্রি করে দেয় ভাইয়া গ্রুপের কাছে। ১৯৯৩ সালে তারা কারখানা দুটি আবার চালু করেছিল। তবে ২০০৫ সালে ঢাকা ম্যাচ ও ২০১০ সালে খুলনার দাদা ম্যাচ বন্ধ করে দেয়া হয়।
শ্রমিকদের দীর্ঘ দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১১ সালে খুলনার এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দাদা ম্যাচ কারখানা চালুর ঘোষণা দেন। এর কিছু দিন পরেই ওই বছরের ২৩ মার্চ শিল্প মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে খুলনা জেলা প্রশাসক কারখানাটির স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বুঝে নেন।
খুলনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে জানা গেছে, সেখানে পুলিশ ও আনসার সদস্যদের সমন্বয়ে একটি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। তবে ২০২০ সালের করোনার প্রকোপ শুরু হলে তাদের সরিয়ে নেওয়া হয়। সেই থেকে অরক্ষিত রয়েছে কারখানাটি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, কারখানার পরিত্যক্ত মালামাল পড়ে আছে একাধিক গুদামে। অর্ধশতাধিক শ্রমিকের পরিবার এখনো মিলের শ্রমিক কলোনিতে বসবাস করছে।
সেখানকার শ্রমিক রহমত মিঞা বলেন, ‘বন্ধ করার সময়ে আমাদের বলা হয়েছিল তিন মাসের মধ্যে আবার সরকারিভাবে কারখানাটি চালু করা হবে। আমি এখানে প্রায় ১০ বছর ধরে কাজ করেছি। এর আগে আমার বাবাও কাজ করেছেন। কখনো কারখানাটিতে লোকসান ছিল না।’
শ্রমিক সৈকত আলি বলেন, ‘সরকার যদি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে কারখানাটি হস্তান্তর না করত, তাহলে ঋণের জালে পড়ে এটা বন্ধ হতো না। শুধু ব্যবস্থাপনার অভাবে একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানকে এভাবে একযুগ ধরে বন্ধ রাখা হয়েছে।’
খুলনা জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফিন বলেন, ‘কয়েক দিন আগে কারখানার একটি পরিত্যক্ত গুদামে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছিল। তখন জেলা প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিস মিলে গুদামের রাসায়নিক অপসারণ করেছিল। মিলটি চালুর ব্যাপারে যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেবে বিসিআইসি।’
শেরপুরের মৃগী নদীর ওপর কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত দুটি সেতু বেহাল অবস্থায় পড়ে থাকলেও দেখার যেন কেউ নেই। সেতু দুটির একটি সদর উপজেলার চরশেরপুর ইউনিয়নের যোগনীমুরা গ্রামে আরেকটি শ্রীবরদী উপজেলার কাজিরচরের খড়িয়া গ্রামে অবস্থিত। সেতু সংস্কার না করায় বছরের পর বছর ভোগান্তি পোহাচ্ছেন দুই উপজেলার কয়েক হাজার মানুষ।
সদরের সেতুটি অনেক আগেই অর্ধেক নদীতে ভেঙে পড়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয় চরশেরপুরের যোগনীমুরা গ্রামের সঙ্গে শ্রীবরদী উপজেলার খড়িয়া গ্রামের। শ্রীবরদী উপজেলার কাজিরচরের খড়িয়ার পিলার দেবে যাওয়ায় ঝুঁকি নিয়েই চলাচল করছেন ওই এলাকার মানুষ।
শ্রীবরদী উপজেলার কাজিরচরে মৃগী নদীর ওপর নির্মিত সেতুটির ১০ বছর আগে দুটি পিলার দেবে গেছে। এতে সেতুর বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে ফাটল। কাজিরচর, খড়িয়াপাড়া, পশ্চিম ঝিনিয়াসহ চারটি গ্রামের লোকজন উপজেলা সদর, পার্শ্ববর্তী হাইস্কুলসহ বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করে এ সেতু দিয়ে। ফলে ঝুঁকি নিয়েই চলাচল করছে অটোরিকশা, ভ্যানগাড়ি, মোটরসাইকেল, সাইকেলসহ হালকা যানবাহন। ট্রাক, ট্রলিসহ পণ্য পরিবহনের কোনো গাড়ি এ সেতুর ওপর দিয়ে যেতে না পারায় এলাকার উৎপাদিত পণ্য বিভিন্ন এলাকায় আনা-নেয়া করতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এ এলাকার জনগণকে। এতে কৃষিপণ্য উৎপাদন করেও প্রকৃত দাম পাচ্ছে না এ এলাকার কৃষকরা। স্থানীয়দের অভিযোগ নানা সময় মাপজোক নিয়ে গেলেও এ সেতুটি করা হচ্ছে না।
স্থানীয় রিপন মিয়া বলেন, ‘এ সেতু দিয়ে আসতে অনেক ভয় লাগে। গাড়ি চলাচল করতে সমস্যা হয়। গাড়ির যাত্রী নামিয়ে দিয়ে তারপর গাড়ি তুলতে হয়। আসলে ব্রিজটি সাপের মতো হয়ে গেছে।’
কৃষক করিম মিয়া বলেন, ‘আমরা এই নদীর পাড়ো মেলা রহমের সবজি ও ধানের আবাদ করি। কিন্তু ঠিকমতো গাড়ি আসবার পায় না বলে আমাগো জিনিসের দামও পাই না। বাজারেও ঠিকমতো তুলতে পারি না। আমরা সরকারের কাছে এ ব্রিজটা চাই।’
আরেক বাসিন্দা জয়নাল বলেন, ‘আমরা কত কষ্ট করে যে এ ব্রিজটা পার হই এডা শুধু আল্লাহ জানে। এডা সাইকেল চালায়াও ব্রিজ পার হওন যায় না। সাইকেল থাইক্কা নাইম্মা পার করতে হয়। মেলাদিন থাইক্কা ব্রিজটা নষ্ট। কবে যে মানুষজন নিয়া ভাইঙ্গা পরব আল্লাহ জানে।’
রহমান মিয়া বলেন, ‘এডার তো খালি মাপ নিয়া যায়। কোনো কাম হয় না। আমরা খুব আতঙ্কে ব্রিজটি পার হই। সরকারের কাছে দাবি ব্রিজটি যেন নতুন করে তৈরি করা হয়।’
এর চেয়েও খারাপ অবস্থা একই নদীর ওপর শেরপুর সদর উপজেলার যোগিনীমুরার ব্রিজটির। এক যুগ আগে পানির স্রোতে সেতুর ৫টি স্প্যানের মধ্যে দুটি নদীতে বিলীন হয়ে যায়। কিন্তু পরে এ ব্রিজটি আর সংস্কার করা হয়নি। এর ফলে জনগণ পোহাচ্ছে চরম দুর্ভোগ। নদীর ওপারে চরশেরপুর ইউনিয়নের যোগিনীমারা খড়িয়াপাড়া গ্রামের ৪ শতাধিক মানুষ বিভিন্ন নির্বাচনের সময় যোগিনীমুরা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে এসে ভোট দেন। নদীতে ব্রিজ না থাকায় তাদের ৩ কিলোমিটার ঘুরে এসে ভোট দিতে হয়।
তা ছাড়া এ এলাকার অনেক শিক্ষার্থী ফসিহ্ উল্ উলুম দাখিল মাদ্রাসা ও যোগিনীমুড়া উচ্চবিদ্যালয়ে লেখাপড়া করতে আসতে পারছে না। শুধু তাই নয় যোগিনীমুড়া, নামাপাড়াসহ চারটি গ্রামের মানুষের নদী পার হয়ে কৃষি কাজ করা দুরূহ হয়ে পড়েছে। তাই তাদের দাবি, দ্রুত এই ব্রিজটি সংস্কার করার।
স্থানীয় বাসিন্দা হারুন অর রশিদ বলেন, ‘আমরা এ সেতুর জন্য অনেক কষ্টে আছি। নদীর ওপারে আমাদের ৪০০ ভোটার আছে, তারা ভোটও দিতে পারে না সময়মতো। অনেক কৃষিপণ্য আছে, এগুলো উৎপাদন হলেও বাজারে তুলতে পারি না আমরা।’
আরেক বাসিন্দা নাহিদ মিয়া বলেন, ‘আমাদের ছেলেমেয়েরা নদীর ওপারের দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করে। খুব কষ্ট করে নদী পার হয়ে স্কুলে যেতে হয় তাদের। এ সেতুটি করার পরেই নদীতে অর্ধেক ভেঙে পড়ে। আমরা সরকারের কাছে সেতুর সংস্কার চাই।’
শেরপুরের স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান জানান, কাজিরচরের ব্রিজটি নির্মাণের জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। শুকনো মওসুমে কাজ শুরু করা হবে। শেরপুর প্রকল্প নামে একটি নতুন প্রকল্পে যোগিনীমুরা ব্রিজটি নির্মাণের জন্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অনুমোদন পেলেই কাজ সম্পন্ন করা হবে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রাস্তার কাজের ইট বাড়িতে নেয়ার অভিযোগে এক ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে গ্রামবাসী। বিজয়নগর উপজেলার চান্দুরা ইউনিয়নের সরকারি বরাদ্দের অর্থ দিয়ে সংস্কারকৃত রাস্তার সলিং দেয়া ইট উঠিয়ে নিজ বাড়িতে নেয়ার অভিযোগে ইউপি চেয়ারম্যান এ এম শামিউল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে ইউএনওর কাছে গ্রামবাসী এ অভিযোগ দেন।
ইউএনও ইরফান উদ্দিন আহমেদ লিখিত অভিযোগ প্রাপ্তির বিষয়টি স্বীকার করেন।
অভিযোগ থেকে জানা যায়, উপজেলার সাতগাঁও এলাকায় চেয়ারম্যানের বাড়ি থেকে সাতগাঁও গুচ্ছগ্রাম পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের রাস্তাটি ইটের সলিং ছিল। এরই মধ্যে ১৩০০ মিটার রাস্তা এলজিইডির মাধ্যমে কার্পেটিং করা হয়েছে। রাস্তার বাকি ৭০০ মিটার সলিংয়ের ইটগুলো উঠিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান এ এম শামিউল হক চৌধুরী নিজ বাড়িতে নিয়ে রেখেছেন।
স্থানীয়রা অভিযোগে উল্লেখ করেন, ২০২১ সালে রাস্তা কার্পেটিং করার সময় পুরোনো লক্ষাধিক ইটও তারই (চেয়ারম্যান) বাড়িতে মেশিনের মাধ্যমে কংক্রিট করে বিভিন্ন ঠিকাদারের কাছে বিক্রি করেন।
চেয়ারম্যানের কাছ থেকে পুরোনো ইটের সেই খোয়াগুলো কিনে স্থানীয় ঠিকাদাররা গ্রামের ভেতরে সরু রাস্তার ঢালাইয়ের কাজে ব্যবহার করেছেন, তবে চেয়ারম্যান এ এম শামিউল হক চৌধুরী প্রভাবশালী হওয়ায় স্থানীয়রা এ ব্যাপারে ভয়ে কিছুই করতে পারেননি।
চেয়ারম্যানের দাবি, ইটগুলোকে রক্ষণাবেক্ষণ করতে বাড়িতে এনেছেন। তিনি স্থানীয় এক সাংবাদিককে দোষারোপ করে বলেন, ‘এক সাংবাদিক ইচ্ছাকৃত আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। সাতগাঁও গুচ্ছগ্রামটি হাওরবেষ্টিত। ২০২০ সালের বন্যায় রাস্তাটি ডুবে গিয়েছিল। তখন বন্যার পানিতে ইটগুলো ভেসে গিয়েছিল। বাকি ছিল ৭ হাজার ইট। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অনুমতিক্রমে ইটগুলোকে রক্ষণাবেক্ষণ করতে বাড়িতে নিয়ে আসি, তবে এগুলো বিক্রি বা নিজ স্বার্থে কাজে লাগানোর জন্য আনা হয়নি।’
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইরফান উদ্দিন বলেন, ‘বিষয়টি প্রাথমিক পর্যায়ে দেখার জন্য উপজেলা প্রকৌশলীকে বলা হয়েছে। তদন্তসাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ আশিকুর রহমান ভূঁইয়া ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘চেয়ারম্যানের বাড়িতে ইটগুলো আমরা পেয়েছি। ইটগুলো যথাস্থানে রাখার জন্য জানিয়ে দেয়া হয়েছে।’
চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গা এলাকা থেকে ব্যাগ থেকে উদ্ধার হওয়া খণ্ড বিখণ্ড লাশের পরিচয় মিলেছে। লাশটি জেলার বাঁশখালী উপজেলার মো. হাসানের (৬২)। হত্যার রহস্যও উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
জানা গেছে, সম্পত্তি লিখে না দেয়ায় স্ত্রী ও সন্তানরা হাসানকে খুন করে। এ ঘটনায় তার স্ত্রী ছেনোয়ারা বেগম ও বড় ছেলে মোস্তাফিজুর রহমানকে আটক করেছে পিবিআই। হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছোট ছেলে এবং তার স্ত্রী পলাতক রয়েছে।
আটকরা খুনের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তবে লাশের আরও কিছু অংশ পাওয়া গেলেও মাথা এখনো পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে পিবিআই।
গত ২১ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে নগরীর পতেঙ্গা বোট ক্লাবের কাছাকাছি ১২ নম্বর গেইটে একটি ট্রলিব্যাগ ভর্তি হাসানের মস্তকবিহীন খণ্ড বিখণ্ড করা লাশ পাওয়া যায়। কফি রঙের ট্রলিব্যাগে ছিল মানব শরীরের ২ হাত, ২ পা, কনুই থেকে কাঁধ এবং হাঁটু থেকে উরু পর্যন্ত অংশ। এ ঘটনায় পতেঙ্গা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল কাদির বাদী হয়ে এক বা একাধিক অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
হত্যাকাণ্ডটি পিবিআই ছায়া তদন্ত শুরু করে। সংস্থাটি আঙুলের ছাপ নিয়ে নিহত ব্যক্তির পরিচয় শনাক্ত করে। পরে তার স্ত্রী ছেনোয়ারা ও ছেলে মোস্তাফিজুরকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
পিবিআই জানিয়েছে, ওই ব্যক্তি প্রায় ২৭ বছর ধরে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কার্যত নিখোঁজ অবস্থায় ছিলেন। সম্প্রতি পরিবারের কাছে ফিরে আসার পর সম্পত্তির জন্য তাকে চাপ দেয়া হয়। তাতে রাজি না হওয়ায় স্ত্রী-সন্তানেরা ঠাণ্ডা মাথায় তাকে খুন করে লাশ টুকরো টুকরো করে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দেয়, যাতে হত্যাকাণ্ডের তথ্যপ্রমাণ গোপন থাকে।
পিবিআই চট্টগ্রাম মহানগর ইউনিটের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) একেএম মহিউদ্দিন সেলিম দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘গত ১৯ সেপ্টেম্বর রাতে চট্টগ্রাম নগরীর ইপিজেড থানার আকমল আলী সড়কের পকেট গেইট এলাকার জমির ভিলার ৭ নম্বর বাসায় হাসানকে খুন করা হয়েছে। ওই বাসায় হাসানের ছোট ছেলে তার স্ত্রী-সন্তানসহ থাকেন। ওই বাসার আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহর পর পুরো বিষয়টি আমাদের কাছে পরিষ্কার হয়েছে। হত্যার পর শরীরের অংশবিশেষ বস্তায় ভরে বের করার বিষয়টি ফুটেজে স্পষ্ট হয়েছে। আর এটা বের করছিলেন হাসানের ছোট ছেলে। তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে আমরা জানতে পারি, গত ১৯ সেপ্টেম্বর রাতে ওই বাসায় হাসানের স্ত্রী ও বড় ছেলে ছিলেন। হাসানের অবস্থানও রাতে সেখানে ছিল।’
পিবিআই পুলিশ সুপার (এসপি) নাইমা সুলতানা বলেন, ‘আটক স্ত্রী ও সন্তান হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে।
তারা জানান, হাসান দীর্ঘদিন ধরে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলেন। কোথায় ছিলেন, সেটা তার স্ত্রী-সন্তানরা জানতেন না। এ কারণে তারা হাসানকে মৃত দেখিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নেন। সম্প্রতি তিনি ফিরে আসেন। এতে তারা বিপাকে পড়ে যান। এজন্য তাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। স্ত্রী, দুই ছেলে এবং ছোট ছেলের স্ত্রী মিলে পরিকল্পিতভাবে তাকে খুন করা হয়। ঠাণ্ডা মাথায় লাশ কেটে টুকরো করে ট্রলিব্যাগে আট টুকরো রাখা হয়। মাথা এবং বুকসহ শরীরের আরও কিছু অংশ বিভিন্নস্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলা হয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি।’
এসপি নাইমা বলেন, ‘ছোট ছেলেই তার বাবার শরীরের টুকরোগুলো বিভিন্ন স্থানে ফেলেন।’