ফেনীতে সড়ক দুর্ঘটনায় মজনু মজুমদার (৩৫) নামে এক কলেজশিক্ষকের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ছাগলনাইয়া উপজেলার কালাপুল এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
মজনু ফেনী কম্পিউটার ইনস্টিটিউটের ইন্সট্রাক্টর হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার বাড়ি চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার শান্তির হাট এলাকায়।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে পুলিশ জানায়, মজনু মোটরসাইকেলে ফেনীর দিকে আসার সময় তার বাহনটি কালাপুল নামক স্থানে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশার সঙ্গে ধাক্কা খায়। এতে তিনি ছিটকে পড়েন। তাৎক্ষণিক তাকে উদ্ধার করে ছাগলনাইয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে এলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
মজনুর সহকর্মীরা জানান, রোববার কলেজ কার্যক্রম শেষ করে মজনু তার অসুস্থ স্ত্রীকে দেখতে মোটরসাইকেলযোগে ফটিকছড়িতে যান। সেখান থেকে ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় তার মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুর খবরে ফেনী কম্পিউটার ইনস্টিটিউটে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
ছাগলনাইয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (আরএমও) সোয়াইব ইমতিয়াজ বলেন, হাসপাতালে আনার আগেই মজনুর মৃত্যু হয়েছে।
ছাগলনাইয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুদ্বীপ রায় পলাশ বলেন, ‘হাসপাতালে নেয়ার পর স্বজনরা কাউকে কিছু না বলে মরদেহ নিয়ে চলে গেছেন। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
দেড় বছর আগে মাঘের শীতে রংপুর বিনোদন উদ্যান ও চিড়িয়াখানার একমাত্র খাঁচায় বন্দি বাঘিনী ‘শাওন’ মারা যায়। এর প্রভাব পড়ে দর্শনার্থীদের ওপর। বাঘশূন্য উদ্যানে একসময় কমতে থাকে বিনোদনপ্রেমী দর্শনার্থীর ভিড়। তবে দর্শনার্থীর সেই খরা কাটিয়ে তুলছে সম্প্রতি চট্টগ্রাম থেকে আনা হয়েছে বাঘজুটি রোমিও-জুলিয়েটকে। ১৯ সেপ্টেম্বর তাদের রংপুরে আনার খরব ছড়িয়ে পড়ার পর বিনোদন উদ্যান ও চিড়িয়াখানায় এখন শিশু-কিশোরসহ নানা মানুষের উপচে পড়া ভিড়। চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ বলছে, রোমিও-জুলিয়েট নামে বাঘ দুটি আসার পর এখানকার আয়ও বেড়েছে।
চার বছরের শিশুকন্যাকে নিয়ে বাঘ দেখতে আসা নগরীর মুন্সিপাড়া এলাকার বাসিন্দা রজত আলী বলেন, ‘মেয়ের বাঘ দেখার বায়না বহু দিনের। রংপুর চিড়িয়াখানায় তিন মাস আগেও এসেছিলাম কিন্তু তখন বাঘের খাঁচা শূন্য ছিল। এবার একসঙ্গে দুটি বাঘ আসার খবর পেয়ে স্ত্রী-কন্যাকে নিয়ে ঘুরতে এলাম।’
সবুজ রঙের খাঁচার গ্রিল নেড়ে দুই সন্তানকে বাঘের বিবরণ দিচ্ছিলেন ব্যাংক কর্মকর্তা আসলাম উদ্দিন। কথা হলে তিনি বলেন, ‘করপোরেট চাকরি। পরিবারকে বাইরে নিয়ে ঘোরার তেমন সময় পাই না। আগে নিয়মিত স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে রংপুর চিড়িয়াখানায় আসতাম। কিন্তু এখানে বাঘসহ অন্যান্য প্রাণীর সংখ্যা কমে যাওয়ায় দেড় বছর ধরে আসা হয় না। একসঙ্গে দুটি বাঘ আনার খবর পেয়ে আমরা এসেছি।’
শুধু রজত আলী ও আসলাম উদ্দিনই নয়, তাদের মতো নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ এখন রংপুর বিনোদন উদ্যান ও চিড়িয়াখানার একমাত্র খাঁচায় বন্দি বাঘজুটি রোমিও-জুলিয়েটকে দেখতে ভিড় করছেন।
চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সরকারি এই চিড়িয়াখানায় একটি মাত্র বাঘিনী ছিল। যার নাম ছিল শাওন। ২০০৩ সালের ৩০ জুন শাওন নামের এই বাঘিনীর জন্ম হয়েছিল ঢাকার মিরপুরের জাতীয় চিড়িয়াখানায়। সে হিসাবে মৃত্যুর আগে তার বয়স হয়েছিল প্রায় ১৮ বছর ৭ মাস। বার্ধক্যের কারণে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে শাওনের মৃত্যু হয়। বাঘ সাধারণত ১৫ থেকে ১৬ বছর পর্যন্ত বাঁচে।
১৯ সেপ্টেম্বর লাল কাপড়ে মোড়ানো লোহার দুটি খাঁচা চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা থেকে রংপুরে আনা হয় রোমিও-জুলিয়েটকে। ঢাকঢোল পিটিয়ে বরণ করা হয় রোমিও-জুলিয়েট নামের বাঘ দুটিকে। সাড়ে ৩টার সময় রংপুর চিড়িয়াখানায় রোমিও-জুলিয়েটের শুভাগমন ও জন্মদিন উপলক্ষে খাঁচার সামনে সেদিন কেক কাটাও হয়। এর পরই বহু দিনের শূন্য খাঁচা পূর্ণ করে দুই বছর বয়সী এ টাইগারজুটি।
চিড়িয়াখানার ডেপুটি কিউরেটর আম্বার আলী তালুকদার বলেন, ‘চিড়িয়াখানার দর্শনার্থীদের প্রধান দৃষ্টি থাকে বাঘের প্রতি। কিন্তু র্দীঘদিন চিড়িয়াখানায় বাঘ না থাকায় একসময় কমতে থাকে দর্শনার্থীর সংখ্যা। ১৯ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা থেকে বাঘ দুটি নিয়ে আসা হয়। বাঘ দুটির নাম রোমিও-জুলিয়েট হওয়ায় দর্শনার্থীদের বেশি টানছে। এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি মানুষ এই বাঘজুটিকে দেখতে চিড়িয়াখানায় ভিড় করছেন।’
উল্লেখ্য, দেশে দুটি সরকারি চিড়িয়াখানার মধ্যে রংপুরে একটি। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামলে রংপুর নগরীর হনুমানতলা এলাকায় ১৯৮৯ সালে রংপুর চিড়িয়াখানাটি গড়ে ওঠে। এটি দর্শনার্থীদের জন্য ১৯৯২ সালে খুলে দেয়া হয়। প্রায় ২২ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত এই চিড়িয়াখানাটিতে ৩৩ প্রজাতির ২৬০টি প্রাণী রয়েছে। এর মধ্যে সিংহ, বাঘ, জলহস্তী, হরিণ, অজগর সাপ, ইমু পাখি, উটপাখি, বানর, কেশওয়ারি, গাধা, ঘোড়া, ভাল্লুক উল্লেখযোগ্য।
গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে চুরি ঠেকাতে নিয়োগ করা প্রহরীদের সঙ্গে বিতণ্ডার জেরে মধ্যরাতে এক আওয়ামী লীগ নেতাকে খুন করা হয়েছে। সোমবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে উপজেলার বেতকাপা ইউনিয়নের নয়নপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত বাদশা মিয়া ওই গ্রামের মৃত আমির উদ্দিনের ছেলে ও বেতকাপা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি ছিলেন। এ ছাড়া তিনি বেতকাপা ইউনিয়ন পরিষদের ৮ ওয়ার্ডের নির্বাচিত ইউপি সদস্য (মেম্বার) ছিলেন।
অভিযোগ উঠেছে, পাপুল নামে এক যুবক এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে খুন করেছে তাকে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন ওই নেতার আরও দুই ভাই।
পলাশবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-তদন্ত) দীবাকর অধিকারী এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, সম্প্রতি ওই এলাকায় রাতে আশঙ্কাজনক হারে চুরি বৃদ্ধি পাওয়ায় স্থানীয় কয়েকজন যুবককে প্রহরী (পাহারাদার) নিয়োগ করা হয়। সিদ্ধান্ত হয়, জরুরি কারণ ছাড়া রাত ১০টার পর অযাথা ঘোরাফেরা করা যাবে না। কেউ অযাথা ঘোরাফেরা করলে তাকে জবাবদিহিতার আওতায় নেয়া হবে।
স্থানীয়ভাবে এমন সিদ্ধান্তের পর সোমবার রাত ১২টার পর নয়নপুর গ্রামের মোসলেম আকন্দের (ভোলা) ছেলে পাপুল আকন্দকে পেয়ে খায়রুল নামে এক প্রহরী (পাহারাদার) পথরোধ করেন এবং এত রাতে বাইরে থাকার কারণ জানতে চায়। এ সময় আটকানোর বিষয় নিয়ে উভয়ের মধ্যে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়।
পুলিশ জানায়, খবর পেয়ে ওয়ার্ড সদস্য বাদশা মিয়াসহ অন্যরা বিষয়টি মীমাংসার জন্য সেখানে উপস্থিত হন। এতে বাদশা মিয়ার সঙ্গে পাপুলের তর্ক বাধে। পরে উভয়পক্ষের কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে পাপুল তার কাছে থাকা ছুরি দিয়ে বাদশা মিয়ার বুকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করতে থাকে। বাদশা মিয়ার ভাই স্বপন ও সবুজ এগুতে গেলে তাদেরকেও ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায় পাপুল।
পরে স্থানীয়রা গুরত্বর আহত বাদশা মিয়াসহ তিনজনকেই উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য পলাশবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক বাদশা মিয়াকে মৃত ঘোষণা করেন।
খবর পেয়ে পলাশবাড়ী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এ কে এম মোকছেদ চৌধুরী বিদ্যুৎ, সহকারী পুলিশ সুপার (সি-সার্কেল) উদয় কুমার সাহা, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুল মণ্ডল ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুল হাসান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
ওসি (তদন্ত) দীবাকর অধিকারী বলেন, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এক ইউপি সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা খুন হয়েছেন। এ ঘটনায় জড়িত পাপুল আকন্দকে গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান চলছে। আশা করছি দ্রুতই তাকে গ্রেপ্তার করা হবে। মামলা করা হবে।
মাটির নিচে চাপা পড়া ইতিহাস অনুসন্ধানের তাগিদ কেউ কেউ অনুভব করে বলেই প্রায় ৮০০ বছর পর নতুন আলোর মুখ দেখল হারিয়ে যাওয়া স্থাপত্য। চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার বড় উঠান ইউনিয়নের বিশ্বমুড়া নামক স্থানে দেয়াঙ পাহাড়ে ঝোপঝাড় পরিষ্কার করে খননকাজ পরিচালনা করতেই একে একে বেরিয়ে আসতে লাগল পুরোনো দেয়াল, মেঝে।
গত ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে দেয়াঙ পাহাড়ে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন ও অনুসন্ধানকাজ শুরু করে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগীয় ঞ্চল। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মামুনুর রশীদের সভাপতিত্বে আনুষ্ঠানিকভাবে খননকাজের উদ্বোধন করেন কর্ণফুলী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক চৌধুরী। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক চন্দন কুমার দে। প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত খননকাজ ও বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গবেষণা চলে এখানে।
জনশ্রুতি আছে, দেয়াঙ পাহাড়ের বিশ্বমুড়া নামক স্থানে আরাকান রাজা বিক্রমের বাড়ি ছিল। গবেষণায় উঠে এসেছে- আনোয়ারা উপজেলার ঝিওরি, হাজীগাঁও, বটতলী ও কর্ণফুলী উপজেলার বড় উঠান, জুলধা এলাকাজুড়ে সপ্তম-অষ্টম শতকে পণ্ডিত বিহার নামে একটি জ্ঞানচর্চা কেন্দ্রও গড়ে ওঠে। ষোড়শ শতকের দিকে সেটি বিলুপ্ত হয়ে যায়। বর্তমানে সেখানে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন ও অনুসন্ধানকাজ শুরু হয়েছে।
গত রোববার সরেজমিনে দেখা যায়, প্রত্নতাত্ত্বিক নিয়মনীতি অনুসরণ করে খননকাজ চলছে। নির্দেশনা অনুযায়ী সতর্কতার সঙ্গে খননকাজ চালিয়ে নিচ্ছেন খনন শ্রমিকরা। মধ্য বয়সী এক খনন শ্রমিককে দেখা গেল হাতে ছোট খুন্তি নিয়ে আস্তে আস্তে মাটি সরাচ্ছেন আর ইট পেলে তা সতর্কতার সঙ্গে নির্দিষ্ট জায়গায় রাখছেন। আর কেউ শাবল-গাইতি দিয়ে মাটি সরাচ্ছেন। আবার একদল ইটের টুকরোগুলো নিয়ে এক জায়গায় স্তূপ করে রাখছেন। ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়ে উঠছে ধ্বংসপ্রাপ্ত স্থাপনার ক্ষয়িষ্ণু অবয়ব। অনুমান করা হচ্ছে, এসব স্থাপনা কম পক্ষে হাজার বছর আগের কিংবা তারও বেশি।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক এ কে এম সাইফুর রহমান জানান, প্রথম সপ্তাহের খননকাজে ইতোমধ্যে তিনটি চওড়া দেয়াল ও তিনটি মেঝের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। দুজন কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে মহাস্থানগড় থেকে আসা ১০ জন অভিজ্ঞ শ্রমিক খননকাজ করছেন। আগামী দুই মাস এ কার্যক্রম চলবে।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক চৌধুরী বলেন, ‘দেয়াঙ পাহাড়ের নিচে চাপা পড়া সময়ের ইতিহাস অনুসন্ধান করছে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ। একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে এ কাজে আমার জায়গা থেকে সহযোগিতা করে যাচ্ছি।’
উল্লেখ্য, চট্টগ্রামের আনোয়ারা ও কর্ণফুলী উপজেলার দেয়াঙ অঞ্চলে বিলুপ্ত পণ্ডিত বিহার বিশ্ববিদ্যালয় পুনরায় স্থাপনের প্রক্রিয়া চলমান। এই প্রত্নতাত্ত্বিক খনন কাজে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক নিদর্শন মিলবে এমনটা আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
নওগাঁর আত্রাইয়ে স্কুল থেকে ফেরার পথে আবুল হোসেন (৫২) নামে এক স্কুল শিক্ষকের দুই পায়ের রগ কেটে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে প্রথমে আত্রাই এবং পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
সোমবার বিকেল ৪টার দিকে উপজেলার পাঁচপুর মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আবুল হোসেন আত্রাই উপজেলার বিহারীপুর গ্রামের বাসিন্দা এবং জগদাস উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষক আবুল হোসেন বিকেলে উপজেলার জগদাস উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ছুটির পর মোটরসাইকেলযোগে বাড়ি ফিরছিলেন। পথিমধ্যে পাঁচপুর মোড় এলাকায় পৌঁছলে দুর্বৃত্তরা তার পথরোধ করে মারপিটের পর দুই পায়ের গোড়ালির রগ কেটে দিয়ে পালিয়ে যায়। পরে লোকজন তাকে উদ্ধার করে আত্রাই হাসপাতালে ভর্তি করালে সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
শিক্ষক আবুল হোসেনের শ্বশুর সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘স্কুল থেকে মোটরসাইকেলযোগে বাড়ি ফেরার সময় পথিমধ্যে এ ঘটনা ঘটেছে। অ্যাম্বুলেন্সে আছি জানিয়ে এর বেশি বলতে পারেননি তিনি।’
আত্রাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক দোলন আক্তার বলেন, শিক্ষক আবুল হোসেনের দুই পায়ের গোড়ালি শুধু একটু চামড়ার সাথে লেগে আছে। তা ছাড়া প্রায় পুরো গোড়ালিই কাটা। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
এ বিষয়ে আত্রাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তারেকুর রহমান সরকার ঘটনার খবর পেয়েছি জানিয়ে বলেন, ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের অফিস সহায়ক ও নিরাপত্তা প্রহরী পদে নিয়োগের লিখিত পরীক্ষায় অন্যকে দিয়ে অংশ নিয়ে পার পেলেও মৌখিক পরীক্ষায় এসে ধরা পড়েছেন ৭ পরীক্ষার্থী।
গত রোববার মৌখিক পরীক্ষা দিতে এলে ওই সাতজনকে আটক করা হয়। পরে তাদের পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে কর্তৃপক্ষ। এর আগে গত শনিবার তাদের লিখিত পরীক্ষা হয়। এতে প্রক্সি দেন অন্য শিক্ষার্থীরা।
এ ঘটনায় নিয়োগ কমিটির (সদস্য-সচিব) শিমুল আক্তার বাদী হয়ে সোমবার সকালে সদর থানায় একটি মামলা করেন।
আটক ব্যক্তিরা হলেন সদর উপজেলার বহুলী ইউনিয়নের ফিরোজ উদ্দিন (রোল নম্বর- ৩২০০০২৯৮), তাড়াশ উপজেলার নিমগাছীর বিষমডাঙ্গা গ্রামের লোকমান হোসেন (রোল নম্বর- ৩২০০২৯০৩), কামারখন্দ উপজেলার বাজার ভদ্রঘাট গ্রামের রাশিদুল ইসলাম সুজন (রোল নম্বর-৩২০০২৩৯৮), শাহজাদপুর উপজেলার মুরুটিয়া গ্রামের আশরাফুল ইসলাম (রোল নম্বর- ৩২০০১১৬৮), উল্লাপাড়া উপজেলার বাখুয়া গ্রামের মজিবর রহমান (রোল নম্বর- ৩২০০৪১২৫), কামারখন্দ উপজেলার চর-দোগাছি গ্রামের হাবিবুল্লা বেলালী (রোল নম্বর- ৩২০০৪৬০৫) ও উল্লাপাড়া উপজেলার গোয়ালজানী পূর্বপাড়া গ্রামের এনামুল হক (রোল নম্বর- ৩২০০৪৩৩৯)।
সোমবার দুপুরে সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক মীর মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, গত ২২ সেপ্টেম্বর সিরাজগঞ্জের ১০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা হয়। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের রোববার সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) অফিস কক্ষে নিয়োগ বাছাই কমিটির মাধ্যমে মৌখিক পরীক্ষা হয়। পরে তাদের কাগজপত্র যাচাই-বাছাইয়ের সময় তাদের হাতের লেখার সঙ্গে লিখিত পরীক্ষার মিল পাওয়া যায়নি। পরীক্ষার্থীরা স্বীকার করেন তাদের লিখিত পরীক্ষায় অন্যদের দ্বারা পরীক্ষার উত্তরপত্র লিখিয়েছেন।
পরে পুলিশে খবর দেয়া হলে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে সাতজন পরীক্ষার্থীকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘প্রক্সি নিয়েও ধরা পড়ার মধ্য দিয়ে এটা প্রমাণিত হলো যে, এই নিয়োগ শতভাগ স্বচ্ছতার সঙ্গে সম্পন্ন হয়েছে। এই ৭ জনের লিখিত পরীক্ষা যারা দিয়েছিলেন, তাদের সম্পর্কে খোঁজ নেয়া হচ্ছে।’
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলাম জানান, মামলাসহ আটকদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারের ছয় বছরের শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যার দায়ে নাইমুর রহমান নাঈম (৩৫) নামে এক যুবককে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। সোমবার দুপুরে জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক নাজমুল হক শ্যামল আসামির উপস্থিততে এ রায় দেন। একই সঙ্গে তাকে ৫ বছরের কারাদণ্ড এবং ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
দণ্ডপ্রাপ্ত নাঈম বরগুনা জেলার লতাবাড়িয়া এলাকার আব্দুল জাব্বারের ছেলে।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী রকিব উদ্দিন আহমেদ জানান, ২০২১ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারের পুরিন্দা গ্রামে ছয় বছরের এক শিশুকে আইসক্রিম ও চকলেটের প্রলোভন দেখিয়ে নিজ ঘরে নিয়ে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্যা করেন নাইম। এ ঘটনার একদিন পর পুলিশ নাইমের ঘর থেকে কাঁথায় মোড়ানো অবস্থায় শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করে।
পরে ওইদিন শিশুটির বাবা হরূপগঞ্জ থানায় মামলা করেন। পুলিশ তদন্ত শেষে পরের বছর ২৮ সেপ্টেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়। এই ঘটনা নাইম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এ মামলায় ১০ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আসামি নাঈমকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন।
আদালত পুলিশের পরির্দশক আসাদুজ্জামান জানান, রায় ঘোষণার পর আসামি নাঈমকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন শিশুটির পরিবার।
মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে গাঁজা ও ইয়াবাসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রোববার দিবাগত রাতে উপজেলার মালখানগর রথবাড়ি এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তাররা হলেন, মালখানগর এলাকা মজিবুর রহমান, তার স্ত্রী জাহানার বেগম, ছেলে জাহিদ হাসান, নাহিদ হাসান, নাহিদের স্ত্রী জাহানারা বেগম ও উপজেলার কাজীরভাগ এলাকার স্বপন হাওলাদারের ছেলে মো. আশিক হাওলাদার।
সোমবার বেলা ১১টায় এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সিরাজদিখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুজাহিদুল ইসলাম সুমন এসব তথ্য জানান।
ওসি বলেন, মালখানগর রথবাড়ি এলাকায় এক পরিবারের সবাই মাদক ব্যবসায় চালিয়ে যাচ্ছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে রাতে অভিযান চালানো হয়। অভিযানে একই পরিবারের পাঁচ সদস্যসহ মোট ছয় জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৫১ পিস ইয়াবা ও ৩৮০ গ্রাম গাঁজা উদ্ধার করা হয়।
ওসি বলেন, ‘পরিবারটির সদস্যরা এলাকার যুবক স্কুলছাত্রসহ উঠতি বয়সীদের কাছে মাদক বিক্রি করত বলে স্বীকার করেছে। তাদের বিরুদ্ধে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।’
বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলায় মদ পান করে কথা কাটাকাটির জেরে বন্ধুর হাতে প্রাণ গেল অপর বন্ধুর। গতকাল রোববার দিবাগত রাতে উপজেলার ২ নম্বর তারাছা ইউপির নোয়াপাড়ার লতাঝিড়ি (বই খ্যং) এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত ক্যথুইপ্রু মারমা (৩৫) ওই এলাকার ক্যবাইচিং মারমার ছেলে। এই ঘটনায় অভিযুক্ত মংরে মারমা (৩৭) একই এলাকার মেদোশে মারমার ছেলে।
স্থানীয়রা জানায়, নিহত ক্যথুইপ্রু মারমা ও মংরে মারমা দুজনেই একে অপরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল। গতকাল বিকালে মংরে মারমা ও ক্যথুইপ্রু মারমা মদপানের জন্য পার্শ্ববর্তী পাহাড়ের জুম ঘরে যায়। রাতে ক্যথুইপ্রু ঘরে না ফেরায় পরিবারের লোকজন তাকে খোঁজাখুঁজি করে। পরে সোমবার সকালে জুম ঘরে বস্তাবন্দি অবস্থায় ক্যথুইপ্রুর মরদেহ দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেয় স্থানীয়রা। এ ঘটনার পর থেকে মংরে মারমাকে খুঁজে না পাওয়ায় তাদের মধ্যে কথা-কাটাকাটির জেরে মংরে মারমা ক্যথুইপ্রু মারমাকে হত্যা করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
২ নম্বর তারাছা ইউপি চেয়ারম্যান উনুমং মারমা জানান, এক যুবক তার বন্ধুকে কুপিয়ে হত্যা করেছে বলে শুনেছি, বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়েছে।
রোয়াংছড়ি থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল মান্নান জানান, মরদেহ উদ্ধারের জন্য ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।
নোয়াখালীর সুবর্ণচরে মসজিদের ছাদে পাতা কুড়াতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। সোমবার সকালে উপজেলার পূর্ব চরবাটা ইউনিয়ন হাজীপুর গ্রামে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
মারা যাওয়া শিশুরা হলো, উপজেলার পূর্ব চরবাটা ইউনিয়নের হাজীপুর গ্রামের মোহাম্মদ ফারুক হোসেনের ছেলে মো. জিসান (৯) এবং একই গ্রামের আবু তাহেরের ছেলে রাহাত হোসেন (১২)।
পুলিশ জানায়, সোমবার সকালে শিশু জিসান ও রাহাত মক্তবে পড়তে যাওয়ার উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হয়। কিন্তু তারা মক্তবে না গিয়ে কয়েকজন মিলে গাছের পাতা কুড়াতে গাছ বেয়ে হাজীপুর গ্রামের আস্তানা মসজিদের ছাদে উঠে। এ সময় মসজিদের পাশ ঘেঁষে যাওয়া ১১ হাজার ভোল্টেজের বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে শিশু গুরুতর আহত হয়। একপর্যায়ে তারা নিচে পড়ে যায়। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে সুবর্ণচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করে।
চরজব্বর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ুন কবির ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘স্বজনরা ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহ দাফনের অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছেন।’
নরসিংদী জেলায় অপরিকল্পিতভাবে শিল্পকারখানা গড়ে ওঠায় পরিবেশ দূষণ ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। শিল্পকারখানার বর্জ্যে শীতলক্ষ্যা ও মেঘনাসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পানি দূষিত হয়ে জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সরকারি হিসাব অনুযায়ী, এই জেলায় ১০ হাজার ৫০০টি ছোট-বড় বিভিন্ন শিল্পকারখানা রয়েছে। এর মধ্যে বেশির ভাগ হচ্ছে পাওয়ারলুম ও ছাপা কারখানা। তবে বেসরকারি এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বৈধ ও অবৈধভাবে জেলার ৬টি উপজেলায় প্রায় ১২ সহস্রাধিক শিল্পকারখানা গড়ে উঠেছে। কিছুসংখ্যক শিল্পকারখানা ছাড়া অধিকাংশ শিল্পকারখানাই অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে।
এর মধ্যে অনুমোদনপ্রাপ্ত শিল্পকারখানার বর্জ্য নিষ্কাশন পদ্ধতির ব্যাখ্যা সরকারি কাগজপত্রে উল্লেখ থাকলেও তা বাস্তবায়িত হচ্ছে না। অনেক কারখানাই ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (ইটিপি) বন্ধ রাখা হয়েছে। এ ছাড়া অধিকাংশ শিল্পকারখানায় ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (ইটিপি) নেই।
ফলে কেমিক্যালযুক্ত বর্জ্য নদীতে গিয়ে পানি দূষিত করছে। মরছে মাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির জলজ প্রাণী। অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা হাজার হাজার শিল্পকারখানার বিকট শব্দে ও নির্গত দুর্গন্ধময় বিষাক্ত ধোঁয়া ও বর্জ্যে আবাসিক এলাকার ভারসাম্য মারাত্মকভাবে বিনষ্ট হচ্ছে। এতে নরসিংদী জেলার প্রায় ১৮ লক্ষাধিক মানুষের জীবন হুমকির মুখে রয়েছে।
অপরিকল্পিতভাবে শিল্পকারখানা গড়ে ওঠায় এখানকার শিল্প বা আবাসিক এলাকা চিহ্নিত হচ্ছে না। ফলে আবাসিক এলাকায় শিল্পকারখানা গড়ে ওঠায় একদিকে এখানকার ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়ায় বিঘ্ন ঘটছে, অন্যদিকে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছে।
এসব শিল্পকারখানা থেকে নির্গত দুর্গন্ধময় বর্জ্যের কারণে নরসিংদী ও মাধবদী পৌরসভাসহ বিভিন্ন এলাকার নদ-নদী, খাল-বিল, ডোবা-নালার পানি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে পলাশ উপজেলার ঘোড়াশালে প্রতিষ্ঠিত দেশের সর্ববৃহৎ প্রাণ ফুট ফ্যাক্টরির নির্গত বর্জ্যে শীতলক্ষ্যা নদীর পানি মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে। পাশাপাশি শিল্পকারখানার বর্জ্যের দুর্গন্ধে এলাকার পরিবেশ দূষিত হচ্ছে।
এসব শিল্পকারখানার বিষাক্ত বর্জ্যের কারণে এ অঞ্চলের মানুষের বিভিন্ন রোগ দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে নদী ও খাল-বিলে এবং বিভিন্ন জলাশয়ে দূষিত পানি ছড়িয়ে পড়ায় নদীর মাছ, জমির ফসল, এমনকি গাছপালা পর্যন্ত মরে যাচ্ছে।
বিষয়টি নিয়ে ফ্যাক্টরির প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমানের সঙ্গে আলাপ করলে তিনি বলেন, ‘তাদের ফ্যাক্টরির ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টটি (ইটিপি) যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে আপাতত বন্ধ রয়েছে। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই এটি চালু করার কাজ চলছে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নরসিংদীর চিনিশপুর ইউনিয়নের সোনাতলা গ্রামের বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী বলেন, ‘এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে শিল্পকারখানার মালিককে বারবার বলা সত্ত্বেও তিনি এ ব্যাপারে কোনো কর্ণপাত করেনি। দ্রুত এসব শিল্পকারখানার বিষাক্ত বর্জ্য বন্ধ করা না গেলে এলাকায় বসবাস করা দুষ্কর হয়ে পড়বে।’
মাধবদীর টাটাপাড়ায় প্রতিষ্ঠিত মেসার্স ডিএন টেক্সটাইলে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, মিলের অভ্যন্তরে ইটিপি থাকা সত্ত্বেও তা দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রাখা হয়েছে। বিকল্পভাবে কারখানার বর্জ্য নির্গত হচ্ছে। ফলে এলাকার পরিবেশ মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে কারখানার মালিক মো. মিজানুর রহমান দুলালের সঙ্গে আলাপ করলে তিনি জানান, ইটিপিতে কিছু কাজ বাকি রয়েছে। কাজগুলো শেষ করার পর তা চালু করা হবে।
এ ব্যাপারে নরসিংদী পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. নাজমুল হুদা বলেন, ‘অধিকাংশ শিল্পকারখানাই ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের। ফলে তাদের শিল্পকারখানায় অভিযান চালাতে গেলে অনেক ক্ষেত্রে বাধার সম্মুখীন হতে হয়। যতটুকু সম্ভব আমরা এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। অধিকাংশ শিল্পকারখানার বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি মামলাও দেয়া হয়েছে। তবে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। আমরা নিরূপায়।’
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে ট্রাকচাপায় ইমরান আলী (৪২) নামে এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন।
সোমবার সকাল ১০টার দিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-সোনামসজিদ মহাসড়কের মোবারকপুর ইউনিয়নের খড়কপুর এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
ইমরান উপজেলার মোবারকপুর ইউনিয়নের লক্ষীপুর গ্রামের আলামিন মেম্বারের ছেলে।
শিবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) চৌধুরী জুবায়ের আহমেদ জানান, সোনামসজিদ স্থলবন্দর থেকে ছেড়ে আসা একটি ট্রাক মোটরসাইকেল আরোহী ইমরানকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করেছে, ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হচ্ছে।
ওসি জানান, ট্রাকচালক পালিয়ে গেছে। এ বিষয়ে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিসের (বিজেএস) ১৬তম পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফলে সহকারী জজ হিসেবে মেধাতালিকায় প্রথম স্থান অর্জন করেছেন গাইবান্ধার নুসরাত জেরিন জেনি। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আইন বিভাগের শিক্ষার্থী।
রোবববার বিকেলে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন সচিবালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক শরীফ এ. এম. রেজা জাকের স্বাক্ষরিত চূড়ান্ত ফলাফলে এ তথ্য জানা গেছে। এদিন ১৬তম বিজেএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ও সহকারী জজ হিসেবে মনোনীত ১০৪ জনের তালিকা প্রকাশ করা হয়।
নুসরাত গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার ফুলবাড়ী ইউনিয়নে বড় দূর্গাপুর গ্রামের এ কে এম আব্দুর নুর ও শিরিন্তাজ বেগম দম্পতির প্রথম কন্যা। বাবা আব্দুর নুর বাসুদেবপুর চন্দ্র কিশোর স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ এবং মা শিরিন্তাজ বেগম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষিকা।
তিনি বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন উপজেলা শাখার সভাপতি ও গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক।
বগুড়া বিয়াম মডেল স্কুল থেকে মাধ্যমিক এবং বগুড়া আজিজুল হক সরকারি কলেজ থেকে বিজ্ঞানে উচ্চ মাধ্যমিকের পড়া-লেখা শেষ করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিভাগে বিএ (অনার্স) পাস করেন নুসরাত।
বাবা একেএম আব্দুর নুর বলেন, ‘এই মূহুর্তে পৃথিবীর সবচেয়ে খুশি ব্যক্তিটিই মনে হয় আমি। আমার তিন সন্তানের মধ্যে নুসরাতই বড়। আরও এক ছেলে এক মেয়ে রয়েছে আমার। আমার প্রত্যাশা ছিল নুসরাত অনেক ভাল কিছু করবে। সেটাই করেছে।’
গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার ফুলছড়ি ইউনিয়নের টেংরাকান্দি গ্রামের খালের (নালা) ওপর পাঁচ বছর আগে নির্মাণ করা হয় সেতুটি। চরাঞ্চলের দুই ইউনিয়নের প্রায় ৩০ হাজার মানুষের জন্য নির্মিত সেতুটি কোনো কাজেই আসছে না তাদের। উপরন্তু তাদের ভোগান্তি বাড়িয়েছে অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত সেতুটি।
আর এখন কেউই সেতুটি নির্মাণের দায় নিচ্ছে না। ফলে যোগাযোগে সুবিধাবঞ্চিত রয়ে যাচ্ছেন এলাকাবাসী।
ফুলছড়ি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় (পিআইও) বলছে, সেতুটি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি)। আর এলজিইডি বলছে সেতুটি পিআইও অফিসের হতে পারে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, টেংরাকান্দি বাজারের দক্ষিণ-পূর্ব পাশে সেতুটির অবস্থান, যার পশ্চিম দিকে শহীদের বাড়ি ও পূর্বে সুরমান আলীর বাড়ি।
শহীদের বাড়ির সামনের পাকা রাস্তা থেকে সুরমান আলীর বাড়ি পর্যন্ত ক্যানেলটি প্রায় ১০০ মিটার। এই ১০০ মিটার প্রস্থের নালার মাঝামাঝিতে আনুমানিক ১২০ ফুট মেইন ক্যানেলের (মূল নালা) মাঝখানে নির্মাণ করা হয়েছে ৪০ থেকে ৫০ ফুট দৈর্ঘ্যের এই সেতুটি, যার উভয় পাশেই নেই অন্তত ৩৫ ফুট করে সংযোগ সড়ক (অ্যাপ্রোচ রোড)। এর পরের বাকি অংশে রয়েছে হেঁটে চলার সরু রাস্তা।
এ ছাড়া সেতুটিতে নেই অ্যাপার্টমেন্ট ওয়াল ও উইং ওয়াল। কেবল দুই প্রান্তের স্প্যানের ওপর দাঁড়িয়ে আছে এটি।
সংযোগ সড়কস্থলের দুই পাশেই তৈরি করা হয়েছে বাঁশের মই (সাঁকো)। এর ওপর দিয়ে স্থানীয়রা ঝুঁকি নিয়ে সেতুতে ওঠানামা করছেন রোজ।
অথচ শত শত শিক্ষার্থী এই সেতুর ওপর দিয়েই চলাচল করে প্রতিনিয়ত। এ ছাড়া ফুলছড়ি ইউনিয়নের টেংরাকান্দি, পারুল, খোলাবাড়ি, খঞ্চাপাড়া এবং ফজলুপুর ইউনিয়নসহ চরাঞ্চলের ৩০ হাজার মানুষের সহজে চলাচলের একমাত্র পথ এটি। খালের ওপর ১০০ মিটার ব্রিজ নির্মাণে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সুদৃষ্টি কামনা করেন তারা।
জেলার প্রকৌশল বিভাগের সংশ্লিষ্টরা জানান, এ ধরনের সেতুগুলো সাধারণত ৪০ থেকে ৫০ ফুট দৈর্ঘ্যের হয়ে থাকে। এতে ৪০ লাখ থেকে অর্ধকোটি পর্যন্ত টাকার বরাদ্দ ধরা হয়। কোনো কোনো সময় এর ব্যয় বরাদ্দ আরও বেশিও ধরা হয়ে থাকে। এসব সেতুর কাজ বেশির ভাগই করে থাকে এলজিইডি। আর কিছু ত্রাণের ব্রিজ পিআইওয়ের দপ্তর করে থাকে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক প্রকৌশলী বলেন, ‘সেতুটি তো হাওয়ায় হয়নি, কেউ না কেউ তো করেছে। আজ হয়তো দায় নিচ্ছে না, তবে যে ডিপার্টমেন্টই করে থাকুক, তারা কাজটি অপরিকল্পিতভাবে করেছে। কেননা সেতুটি মেইন ক্যানেলের পুরোটা অর্থাৎ, ১২০ ফুটেই করা উচিত ছিল। এতে সঠিকভাবে পানি প্রবাহ হতো এবং ঝুঁকি অনেকটাই কমে যেত।’
তিনি আরও বলেন, ‘সেতুটির উচ্চতাও সঠিকভাবে করা হয়নি, যার কারণে বন্যার সময় সেতুর নিচের অংশে পানি স্পর্শ করার উপক্রম হয় বা স্পর্শ করে। ফলে সেতুর নিচ দিয়ে কোনো নৌযানও চলাচল করতে পারে না।’
টেংরাকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা তাহমিনা বেগম বলেন, ‘সেতুর উভয় পাশেই এ এলাকায় বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। বৃদ্ধ মানুষ ও শিক্ষার্থীরা অনেক ঝুঁকি নিয়ে, বাধ্য হয়ে এ পথে চলাচল করে। অনেক সময় তারা দুর্ঘটনার শিকারও হয়।’
পরিস্থিতি বিবেচনায় নতুন ব্রিজ নির্মাণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।
ফুলছড়ি উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) শহীদুজ্জামান বলেন, ‘ওইসব ফুটওভার ব্রিজ আমরা করি না, ব্রিজটা আমাদের নয়। ব্রিজটি এলজিইডির হতে পারে। তারপরও আমার সহকারী প্রকৌশলী মিজান এখানে দীর্ঘদিন ছিলেন। তিনিই ভালো বলতে পারবেন।’
মোবাইল ফোনে সহকারী ইঞ্জিনিয়ার মিজানের (বর্তমান পিআইও) সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, সেতুটি তারা করেননি।
এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে না চেয়ে এলজিইডির ফুলছড়ি উপজেলা প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, ‘আমি চিকিৎসাজনিত কারণে ছুটিতে আছি।’
একই দপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী এস্তামুল হক বলেন, ‘ওই সেতুটা আমরা করিনি। উপজেলা চেয়ারম্যান স্যার বলার পর আমি ব্রিজটি দেখতে গিয়েছিলাম। দেখে মনে হয়েছে আমাদের কোনো প্রকল্পে করা নয় সেটা। হয়তো অন্য কোনো ফান্ড থেকে কেউ করতে পারে। সেটা পিআইও অফিসও করতে পারে, আবার এলজিইডিও করতে পারে।’
সেতুটির জরুরি মেরামত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ওখানে নাকি পানির স্রোতের বেগ অনেক। ওখানে অ্যাপ্রোচ (সংযোগ সড়ক) দিলে সেটা থাকবে না। অযথা ইনভেস্ট করে লাভ হবে না। ব্রিজটি দেখে মনে হয়নি পরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে।’