বেশি দামে পণ্য বিক্রির অভিযোগে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী স্কয়ার, প্রাণ, এসিআই, বসুন্ধরা, এস আলম, সিটি, আকিজ, মেঘনাসহ আরও ৩৬ কোম্পানি ও ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন।
চাল, ডাল, আটাসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার কারসাজি করে অস্থিরতার অভিযোগে এই প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রতিযোগিতা কমিশন।
গতকাল সোমবার কমিশনের পক্ষ থেকে এ মামলা করা হয় বলে কমিশনের চেয়ারম্যান মফিজুর রহমান দৈনিক বাংলাকে জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব আইনে মামলা হয়েছে। এখন প্রত্যেককে শুনানির জন্য ডাকা হবে। শুনানিতে অপরাধ প্রমাণিত হলে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে জরিমানা করা হবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে মফিজুর রহমান বলেন, ‘জরিমানার পরিমাণ হবে কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান বছরে যে পরিমাণ টার্নওভার, তার সর্বনিম্ম ১ থেকে ১০ শতাংশ।
সোমবার যাদের নামে মামলা করা হয় তাদের মধ্যে রয়েছে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী এস আলম, স্কয়ার, প্রাণ, এসিআই, বসুন্ধরা গ্রুপ সিটি, আকিজ ও মেঘনার মতো প্রতিষ্ঠান।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার একই অভিযোগে ১১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল কমিশন। এ নিয়ে দুই দফায় সব মিলিয়ে ৪৪ মামলায় ৩৬ ব্যবসায়ী ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করেছে কমিশন।
এসব কোম্পানি ও ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কমিশনের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ, তারা বাজারে চাল, আটা, ময়দা, ডিম, ব্রয়লার মুরগি ও টয়লেট্রিজ পণ্যের ‘অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ও কৃত্রিম সংকটের মাধ্যমে অস্থিরতা’ তৈরি করেছে।
কমিশনের দেয়া তথ্যানুযায়ী, চালের বাজারে ‘অস্থিরতার জন্য’ স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজের চেয়ারম্যান, এসিআইয়ের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ এডিবল অয়েলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি), ব্র্যাক সিড অ্যান্ড অ্যাগ্রো এন্টারপ্রাইজের চেয়ারম্যান অথবা এমডি, প্রাণ ফুডসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) অথবা এমডি, সিটি গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের এমডির বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে- কুষ্টিয়ার রশিদ অ্যাগ্রো ফুড প্রোডাক্টের স্বত্বাধিকারী মো. আবদুর রশিদ, দিনাজপুরের জহুরা অটো রাইস মিলের স্বত্বাধিকারী মো. আবদুল হান্নান, নওগাঁর বেলকন গ্রুপের স্বত্বাধিকারী মো. বেলাল হোসেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের এরফান গ্রুপের স্বত্বাধিকারী মো. এরফান আলী, বগুড়ার কিবরিয়া অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক মো. গোলাম কিবরিয়া, নওগাঁর মফিজ উদ্দীন অটোমেটিক রাইস মিলের স্বত্বাধিকারী তৌফিকুল ইসলাম, বগুড়ার আলাল অ্যাগ্রো ফুড প্রোডাক্টের আলাল আহমেদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নুরজাহান অ্যাগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রিজের স্বত্বাধিকারী মো. জহিরুল ইসলাম, বগুড়ার খান অটো রাইস মিলের স্বত্বাধিকারী পুটু মিয়া, কুষ্টিয়ার মেসার্স দাদা রাইচ মিলের মো. আরশাদ আলী, নওগাঁর মজুমদার অটো রাইস মিলের স্বত্বাধিকারী ব্রজেন মজুমদার, নারায়ণগঞ্জের সিটি অটো রাইস অ্যান্ড ডাল মিলস এবং নওগাঁর ম্যাবকো হাইটেক রাইস ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান অথবা এমডির বিরুদ্ধে মামলা করেছে প্রতিযোগিতা কমিশন।
এ ছাড়া আটা-ময়দার বাজারে অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির জন্য মেঘনা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, আকিজ গ্রুপের চেয়ারম্যান, বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি, এসিআই, টি কে গ্রুপের এমডি, নুরজাহান গ্রুপের চেয়ারম্যান ও এমডি, এস আলম রিফাইন্ড ইন্ডাস্ট্রির এমডি এবং সিটি গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের এমডির বিরুদ্ধে মামলা করেছে কমিশন।
ডিমের বাজারে কারসাজির জন্য সিপি বাংলাদেশ কোম্পানির এমডি বা সিইও, প্যারাগন পোলট্রির ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ডায়মন্ড এগ লিমিটেডের এমডি, পিপলস ফিডের স্বত্বাধিকারী, কাজী ফার্মস গ্রুপের এমডি কাজী জাহেদুল হাসান, ডিম ব্যবসায়ী আড়তদার বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি আমানত উল্লাহর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
ফার্মের মুরগির বাজারে অস্থিরতার জন্য কাজী ফার্মস গ্রুপের এমডি কাজী জাহেদুল হাসান, সাগুনা ফুড অ্যান্ড ফিডসের পরিচালক, আলাল পোলট্রি অ্যান্ড ফিশ ফিডের এমডি বা সিইও, নারিশ পোলট্রি ও হ্যাচারির পরিচালক, প্যারাগন পোলট্রির এমডি এবং সিপি বাংলাদেশের প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
টয়লেট্রিজের (সাবান, সুগন্ধী সাবান ও গুঁড়া সাবান) অস্বাভাবিক দাম বাড়ানোর জন্যও কয়েকটি কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে আছে এসিআইয়ের চেয়ারম্যান, ইউনিলিভার বাংলাদেশের এমডি, স্কয়ার গ্রুপের চেয়ারম্যান বা এমডি, কোহিনুর কেমিক্যাল কোম্পানি (তিব্বত) ও কেয়া গ্রুপের চেয়ারম্যান অথবা এমডি।
৩৬ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা প্রসঙ্গে মামলার বিষয়ে ভোক্তাদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘শুধু মামলা হলে বা শুনানিতে ডাকলেই হবে না। কী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে, সেটাই বড় কথা। আমরা চাই যারা মানুষের পকেট থেকে বাড়তি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে, তাদের যথাযথ শাস্তি হোক। আর যেন কেউ কারসাজি করে বেশি দামে পণ্য বিক্রি করতে সাহস না পায়।
গোলাম রহমান বলেন, ‘ভোক্তাদের স্বার্থে প্রতিযোগিতা কমিশন তো এত দিন কিছুই করেনি। এই প্রথম বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করল। এখন দেখতে হবে, কত দ্রুততার সঙ্গে মামলাগুলোর নিষ্পত্তি হয়। আইন অনুযায়ী কাদের বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়। এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান অন্যায়ভাবে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে মানুষের পকেট থেকে বাড়তি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। সেই অপরাধে যদি সত্যিই এদের উপযুক্ত শাস্তি হয়, তাহলে বাজারে একটা ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। অন্যরা ভয় পাবে, অযৌক্তিকভাবে ইচ্ছামতো আর পণ্যের দাম বাড়াবে না। দেশের মানুষ স্বস্তি পাবে।’
তিনি বলেন, ‘আমি প্রতিযোগিতা কমিশনের এই মামলা করাকে ইতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখছি। যদি সত্যিই এদের উপযুক্ত শাস্তি হয়, তাহলে আমি কমিশনকে সাধুবাদ জানাব।’
মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে স্কয়ার টয়লেট্রিজের পরিচালক মালিক মোহাম্মদ সাঈদ বলেন, ‘আমরা মামলার বিষয়ে এখনো কিছু জানি না। তবে কমিশনের পক্ষ থেকে আমাদের একটি নোটিশ দেয়া হয়েছে। সেখানে কিছু তথ্য-উপাত্তসহ ২৮ সেপ্টেম্বর কমিশনে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। আমরা তথ্য-উপাত্তসহ উপস্থিত থাকব।’
প্রাণ-আরএফএল গ্রপের বিপণন পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘আমরা এখনো এ ধরনের কোনো চিঠি পাইনি। চিঠি পেলে আমরা এ বিষয়ে উত্তর দেব। তবে আমি এটুকু বলতে পারি যে, আমরা অ্যারোম্যাটিক চাল বিক্রি করি। সেগুলোর কাঁচামালের দাম বেড়েছে, তাই আমরা আমাদের পণ্যের দাম বাড়িয়েছি। আমাদের এখানে কোনো কারসাজি ছিল না।’
কমিশন সূত্রে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার যে প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল, তার মধ্যে তিনটি প্রতিষ্ঠানের মামলার শুনানি গতকাল সোমবার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার শ্রীপুর গ্রামের মেধাবী ছাত্র মো. তুহিন হত্যার বিচারের দাবিতে কুমিল্লা প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান অনুষ্ঠিত হয়েছে। নিহত তুহিন (১৭) বুড়িচং এরশাদ ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র এবং শ্রীপুর গ্রামের মোসলেম উদ্দিনের পুত্র। গত ২০ অক্টোবর পাশের গ্রাম গোবিন্দপুরের বখাটে সন্ত্রাসী সাইফুল ইসলাম বাবু ও তার সহযোগীরা তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তুহিনকে জোরপূর্বক ধরে নিয়ে যায়। পরে গরুর খামারে বেঁধে নির্মমভাবে নির্যাতন করে হত্যা করে।
স্থানীয়রা খবর পেয়ে তুহিনকে গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে বুড়িচং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মৃত্যুবরণ করে।
ঘটনার পর নিহতের পিতা মোসলেম উদ্দিন ২৩ অক্টোবর বুড়িচং থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। কিন্তু প্রধান আসামি সাইফুল ইসলাম বাবু এখনো গ্রেফতার হয়নি।
এই পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার কুমিল্লা প্রেসক্লাবের সামনে বুড়িচং এরশাদ কলেজের শিক্ষার্থী, নিহত তুহিনের পরিবার ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ মানববন্ধন করেন। পরে তারা কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপারের বরাবর একটি স্মারকলিপি প্রদান করেন।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ‘ঘাতক সাইফুল ইসলাম বাবু ও তার সহযোগীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। অন্যথায় কুমিল্লা থেকে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।এসময় উপস্থিত ছিলেন ইষ্টার্ণ ইয়াকুব প্লাজার সভাপতি মঞ্জুর আলম, সমাজসেবক ইকবাল হোসেন, রাসেদ, তানজিনা, সাব্বির, ফারুকসহ শতাধিক শিক্ষার্থী ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। ভিডিও ও তথ্য চিত্রে কুমিল্লা থেকে তরিকুল ইসলাম তরুন।
হবিগঞ্জের মাধবপুরে একটি গুরুত্বপূর্ণ এলজিইডি রাস্তা দীর্ঘ এক বছর ধরে পানির নিচে ডুবে আছে। পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ থাকা ও সরকারি উদ্যোগে ভরাট কাজ না হওয়ায় এলাকাবাসী চরম ভোগান্তিতে থমকে গেছে তাদের পথ চলাচল।
উপজেলার চৌমুহনী ইউনিয়নের কমলপুর গ্রামের কমলপুর হযরত শাহজালাল আলিয়া মাদ্রাসা থেকে গোপীনাথপুর পর্যন্ত প্রায় ১.৭৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই রাস্তাটি বর্তমানে রজব আলী টেইলারের বাড়ির অংশে সম্পূর্ণ ডুবে আছে। ওই এলজিইডি রাস্তার আইডি নং ৬৩৬৭৩৫০২৩।
এই রাস্তাটি দিয়ে স্থানীয় ৮টি গ্রামের (কমলপুর, নয়নপুর, দেবীপুর, কালিকাপুর, রামনগর, চৈতন্যপুর, গোপীনাথপুর ও হরিণখোলা) প্রায় ৫ থেকে ১০ হাজার মানুষ প্রতিদিন চলাচল করেন। বিশেষ করে হযরত শাহজালাল আলিয়া মাদ্রাসা, আজিজুর রহমান স্কলার একাডেমি ও গোপীনাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শত শত শিক্ষার্থী প্রতিদিন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। এটি তাদের একমাত্র যাতায়াতের রাস্তা।
সরেজমিনে দেখা যায়, স্থানীয় কিছু ব্যক্তি রাস্তার পাশের পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ করে দিয়েছেন। স্থানীয় সালিশের মাধ্যমে একাধিকবার অনুরোধ করা হলেও তারা মানেননি। ফলে বর্ষাকালে এলাকাটি তীব্র জলাবদ্ধতায় ডুবে যায় এবং কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারে না।
ইউপি সদস্য আব্দুস শহীদ বলেন, রাস্তাটি সংস্কারে বিভিন্ন সময়ে আমরা আবেদন করেছি, কিন্তু এখনো কোনো কাজ হয়নি।
স্থানীয় বাসিন্দা রজব আলী টেইলার বলেন, আগের চেয়ারম্যান কিংবা বর্তমান চেয়ারম্যান কেউই এ বিষয়ে উদ্যোগ নিচ্ছেন না। আমরা চাই জরুরি ভিত্তিতে এটি মেরামত করা হোক।
মাধবপুর উপজেলা প্রকৌশলী রেজাউন্নবী বলেন, বিষয়টি আপনাদের মাধ্যমে অবগত হলাম। এই রাস্তা পাকা করার জন্য স্থানীয় মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল আনিসুর রহমান আবেদনের ভিত্তিতে আমরা ইতোমধ্যে প্রস্তাব পাঠিয়েছি। জলাবদ্ধতা নিরসনেরও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালে ওই রাস্তা জরুরি ভিত্তিতে পাকা করার জন্য প্রধান প্রকৌশলী, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি), আগারগাঁও, ঢাকা-এর কাছে সুপারিশ করা হলেও এখনো কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
হাটহাজারীতে জেলা প্রশাসনের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানে প্রায় দশ কোটি টাকার সরকারী সম্পদ পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (ট্রেজারি শাখা, ফ্রন্ট ডেস্ক ও ই-সেবা কেন্দ্র) মো. ইসরাফিল জাহান এর নেতৃত্বে হাটহাজারী পৌরসভার কাচারি সড়কে পৌরসভা কার্যালয়ের সামনে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়।
অভিযান সূত্রে জানা যায়,দীর্ঘ বছর ধরে একটি ভূমিদস্যু চক্র চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের (ছয় শতক) এসব সম্পদ অবৈধভাবে দখল করে দাপটের সাথে স্থাপনা নির্মাণ করে তাতে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিলো। ঘটনারদিন সকালে এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে জেলা পরিষদের লোকজন পর্যাপ্ত পরিমাণ জেলা ও হাটহাজারী মডেল থানা পুলিশ নিয়ে সংশ্লিষ্টরা ঘটনাস্থলে আসলে প্রথমে কয়েকজন দোকানদারের বাঁধার মুখে পড়েন। পরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে আসার পর উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়। এসময় অভিযান পরিচালনা করে অবৈধভাবে নির্মিতব্য স্থাপনা ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিয়ে টিনের ঘেরা তৈরি করে তাতে জেরা পরিষদের সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেয়া হয়। এ অভিযানের সরকারী প্রায় দশ কোটি টাকার সম্পদ পুনরুদ্ধার হয়েছে বলেও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। তবে কিছু ব্যবসায়ীরা প্রশাসন তাদের গায়ের জোরে আইন বহির্ভুতভাবে তাদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন।
অভিযান পরিচালনার সময় চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের সহকারী ইঞ্জিনিয়ার, হাটহাজারী উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শাহেদ আরমান, মডেল থানার ওসি মনজুর কাদের ভুঁইয়া, সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যগণ এবং সরকারি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
অভিযানে নেতৃত্বদানকারী চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (ট্রেজারী শাখা, ফ্রন্ট ডেস্ক ও ই-সেবা কেন্দ্র) মো. ইসরাফিল জাহান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে এ প্রতিবেদককে জানান, ‘সরকারি জায়গা কেউ দখল করে রাখতে পারবেনা, অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।
দুইশ বছর আগের কথা। ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় তখন মহারাজ সূর্যকান্ত আচার্য চৌধুরীর ‘মহাদাপট’। ওই সময় মুক্তাগাছায় মণ্ডা নামের এক ধরণের মিষ্টান্ন তৈরি করতেন গোঁপাল পাল নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি। ছানা ও চিনি দিয়ে তৈরি হত এ সুস্বাদু খাবার। একদিন মণ্ডা গেল জমিদার সূর্যকান্ত আচার্য চৌধুরীর বাড়িতে। মণ্ডার স্বাদ নিলেন স্বয়ং মহারাজ। মহারাজের খুব পছন্দ হয় সে মিষ্টান্ন। এরপর থেকে নিয়মিতই জমিদার বাডিতে নেওয়া হতো মণ্ডা। জমিদার বাড়িতে বিশেষ কোন অতিথির আগমন ঘটলেও তাকে মণ্ডা দিয়ে আপ্যায়ন করা হতো বলে জানা যায়।
দুইশ বছর পরও মুক্তাগাছায় তৈরি হয় সেই মণ্ডা। মণ্ডার কারিগর গোঁপাল পাল নেই। তবে গোঁপাল পালের বংশধরেরাই এখনো তৈরি ও বিক্রি করে আসছেন মণ্ডা। দুইশ বছরের পথ চলায় মণ্ডার পরিচয় ঘটেছে যেন বিশ্বব্যপী। ২০২৪ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি মণ্ডা পেয়েছে জিওগ্র্যাফিক্যাল আইডেন্টিফিকেশন (জিআই)। হয়ে ওঠেছে গৌরবময় ঐতিহ্য। বর্তমান প্রজন্ম মণ্ডা খেতে যেমন পছন্দ করে, তেমনি মণ্ডার দোকানে গেলে ছবি তুলে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করতে ভুলে না।
সম্প্রতি মণ্ডার খোঁজ নিতে যাওয়া হয় মহারাজ সূর্যকান্তের ছোঁয়া লেগে থাকা মুক্তাগাছায়। সেখানে জগৎ কিশোর রায় সড়কে এখনো গোঁপাল পালের প্রসিদ্ধ মণ্ডার দোকানটি রয়েছে। কিছুক্ষণ পর পর আসছেন ক্রেতা। প্যাকেটে করে নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি দোকানে বসেও খাচ্ছেন অনেকেই। দূর-দূরান্ত থেকে মোটরসাইকেলে করে আসছেন তরুণ ক্রেতারা। তরুণ ক্রেতারা মণ্ডা খাওয়ার পাশাপাশি মোবাইল ফোনে নানা ধরণের ছবি তুলছেন সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ করবেন বলে।
মণ্ডার দোকানের ম্যানেজার লিটন মিয়া জানান, প্রতিদিনই এরকম তরুণেরা আসেন। তারা মণ্ডা খাওয়ার পাশাপাশি ছবি তুলেন। মণ্ডার ইতিহাস জানতে চান।
কথা হয় মণ্ডার দোকানের পাশের বাড়ির বাসিন্দা পরিতোষ করের সঙ্গে। তার বয়স সত্তর ছাড়িয়েছে। পরিতোষ কর স্মৃতির জাবর কেটে ষাটের দশকের মণ্ডার বর্ণানা দেন। তিনি বলেন, ওই সময় আট আনা দিয়ে একটা বড় আকারের মণ্ডা কিনে খেতাম। মনে আছে একবার ৫ টাকায় এক সের মণ্ডাও কিনেছিলাম। দুপুর বেলায় প্রায়ই শিশুরা দল বেধে মণ্ডার দোকানের সামনে দাঁড়ালে পয়সা ছাড়াও মণ্ডা খাওয়াতো।
জানা যায়, মণ্ডার রয়েছে একটি গোপন রহস্য। দুইশ বছর ধরে কেবল গোঁপাল পালের বংশধররাই নিজেদের হাতে তৈরি করছেন এ মণ্ডা। দোকানে অনেক কর্মচারি থাকলেও যে ঘরে মণ্ডা তৈরি করা হয় সেখানে বংশধরদের বাইরে কেউ যেতে পারেন না। বর্তমানে গোঁপাল পালের পঞ্চম পুরুষেরা পরিচালনা করছেন মণ্ডার ব্যবসা। এ পরিবারে যারা উচ্চশিক্ষিত হয়ে বাইরে চাকরি করছেন, তারাও ছুটিতে মুক্তাগাছায় গেলে মণ্ডার তৈরিতে হাত লাগান।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, গোঁপাল পাল ১৮২৪ সালে এ প্রসিদ্ধ মণ্ডার দোকান প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯০৭ সালে গোঁপাল পাল মারা যান। এরপর তার উত্তরসূরি রাঁধানাথ পাল, কৈঁদারনাথ পাল, দ্বাঁরিকানাথ পাল এ মণ্ডার দোকান চালান। বর্তমানে গোঁপাল পালের পঞ্চম প্রজন্মের হাত ধরে চলছে মণ্ডার ব্যবসা।
ইউকিপিডিয়াতে আরও উল্লেখ করা রয়েছে, উপমহাদেশের প্রখ্যাত ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ, নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু, মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর মত ব্যক্তিরা ময়মনসিংহ অঞ্চলে গেলে এ মণ্ডার স্বাদ নিতেন। মাওলানা আব্দুল হাামিদ খান ভাসানী চীনের মাও সে তুংয়ের জন্যও মুক্তাগাছার মণ্ডা নিয়ে গিয়েছিলেন।
বরিশাল নগরীতে দুর্ভোগের পাহাড়, তবুও শতকোটি টাকার রিসোর্ট প্রকল্প করছে সিটি করপোরেশন। টাকা আছে, তবে তা নগরীর দুর্ভোগ মোচনে নয়, বিলাসবহুল রিসোর্ট বানানোর জন্য। নাগরিক সুযোগ-সুবিধা ও জরুরি জনদুর্ভোগ রেখে প্রায় শতকোটি টাকা ব্যয়ে পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটায় জমি কিনে রিসোর্ট তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছে বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি)।
নগরজুড়ে অচল বর্জ্য ও পানি শোধনাগার, ভাঙাচোরা রাস্তা এবং যানজটের মতো অসংখ্য সমস্যা বিদ্যমান, ঠিক তখনই বিসিসির ‘উচ্চাভিলাষী’ এমন সিদ্ধান্ত নেয়। যা নিয়ে নগরবাসীর মধ্যে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। তবে বিসিসি কর্তৃপক্ষের দাবি এতে সিটি করপোরেশনের আয় বাড়বে।
এদিকে জমি কিনতে এরই মধ্যে ১৯ অক্টোবর দরপত্র আহ্বান করে বিসিসি। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সৈকতের কাছাকাছি সড়কের পাশে কমপক্ষে ৩ একর জমি কেনা হবে। আগ্রহী জমি মালিকদের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ৭ দিনের মধ্যে আবেদন করার আহ্বান জানানো হয়।
বিসিসির সম্পত্তি কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান শাকিল জানিয়েছেন, দরপত্র অনুযায়ী, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ৩টি আবেদন জমা পড়েছে। তার মধ্যে একটিতে ৮ একর এবং অন্য দুটিতে ৬ একর করে জমি রয়েছে। বিসিসি ৮ একরের জমিটির প্রতি আগ্রহী। মাসিক সভায় রিসোর্ট করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুয়াকাটা সৈকত থেকে আধা কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে সড়কের পাশে প্রতি শতাংশ জমি গড়ে ১৫ লাখ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সে হিসাবে ১ একরের দাম হবে ১৫ কোটি টাকা। বিসিসি ৮ একর কিনলে দাম পড়বে ১২০ কোটি টাকা। আধা কিলোমিটারের বাইরে পৌর এলাকার মধ্যে প্রতি শতাংশ বিক্রি হয় ১০ লাখ টাকায়। সে ক্ষেত্রে ১ একরের দাম ১০ কোটি এবং ৮ একরের দাম ৮০ কোটি টাকা। কুয়াকাটায় জমি কেনাবেচার সঙ্গে সম্পৃক্ত স্থানীয় বাসিন্দা আবুল কালাম আজাদ জমির দামের এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
এদিকে কুয়াকাটায় জমি কিনে রিসোর্ট করার বিসিসির সিদ্ধান্তে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন নগরবাসী।
বরিশাল জেলা বাম গণতান্ত্রিক জোটের এক বিবৃতিতে বলা হয়, সিটি করপোরেশন পানি শোধনাগার চালুর উদ্যোগসহ সার্বিক জনবান্ধব উন্নয়নের উদ্যোগ না নিয়ে কুয়াকাটায় জমি কিনছে, অথচ বরিশালে কোনো আধুনিক বর্জ্যব্যবস্থাপনা নেই। শহরের মধ্যে ৫৮ বর্গকিলোমিটার জায়গাজুড়ে খোলা জায়গায় বর্জ্য ফেলা হয়। অচল হয়ে থাকা দুটি পানি শোধনাগার আজ পর্যন্ত চালু হয়নি। বহু রাস্তাঘাট-ড্রেন সংস্কার করা হয়নি। এসব বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া অতি জরুরি হলেও বাজেট ঘাটতির কথা বলে কোনো কাজ করা হচ্ছে না।
স্থানীয় বাসিন্দা কাজী মিজানুর রহমান বলেন, নগরীতেই বহুমুখী সংকট। তার মধ্যে কী করে তারা কুয়াকাটায় রিসোর্ট স্থাপনের মতো উচ্চাভিলাষী প্রকল্পের কথা চিন্তা করে। নগরী থেকে যানজট দূর করতে বাস টার্মিনাল অপসারণ করতে পারছে না, যথাযথ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নেই, পর্যাপ্ত রাস্তাঘাট নেই। নাগরিক সুযোগ- সুবিধার কথা চিন্তা না করে বিলাসিতার জন্য রিসোর্ট করতে চাইছে। আশা করি, তারা এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবে।
জেলা বাসদের সদস্যসচিব মনীষা চক্রবর্তী বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সময় একজন প্রশাসক এভাবে বিপুল অর্থ খরচ করে কুয়াকাটায় রিসোর্ট করতে পারেন না। দেশের এত আর্থিক সংকটের মধ্যে সরকার এ ধরনের বিলাসী প্রকল্প হাতে নিতে বিসিসিকে অনুমতি দিয়েছে কি না, তাও স্পষ্ট করেনি কর্তৃপক্ষ।
নিজেদের সীমানার বাইরে জমি কিনতে চাইলে সরকারের পূর্বানুমোদনের প্রয়োজন হয়। অথচ এটি নেওয়া হয়েছে কিনা, তা বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়নি। আমরা এ ধরনের প্রকল্প চাই না।
এ ব্যাপারে বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রেজাউল বারী বলেন, কুয়াকাটায় রিসোর্ট করা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দীর্ঘদিনের দাবি। গত ২০ মার্চ পরিষদের মাসিক সাধারণ সভায় সেখানে জমি কেনার সিদ্ধান্ত অনুমোদন হয়। তাই কমপক্ষে ৩ একর জমি কেনার জন্য বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। রিসোর্ট ভাড়া দিলে বিসিসির আয় বাড়বে।
জলবায়ু অর্থায়নে জাতীয় তহবিলের (বিসিসিটি) অর্ধেকেরও বেশি বরাদ্দে দুর্নীতি হয়েছে বলে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। তাদের হিসাব অনুযায়ী, ২০১০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ৮৯১টি প্রকল্পে সংঘটিত দুর্নীতির প্রাক্কলিত পরিমাণ ২৪৮ মিলিয়ন ডলার বা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২ হাজার ১১০ কোটি টাকা।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর টিআইবি কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ‘বাংলাদেশে জলবায়ু অর্থায়নে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে এসব তথ্য জানানো হয়।
গবেষণায় বলা হয়, ২০১০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বিসিসিটি থেকে মোট ৪৫৮ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ অনুমোদিত হয়। এর মধ্যে ৫৪ শতাংশ বরাদ্দ দুর্নীতিগ্রস্ত হয়েছে বলে প্রাক্কলন করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ট্রাস্টি বোর্ড ও কারিগরি কমিটির সদস্যদের যোগসাজশে এবং রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রকল্প অনুমোদনের প্রবণতা দেখা গেছে। অথচ তহবিল ব্যবস্থাপক হিসেবে বিসিসিটির কর্মকর্তারা দুর্নীতি প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেননি।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, জলবায়ু অভিঘাত মোকাবিলায় প্রতিবছর বাংলাদেশের প্রয়োজন ১২ হাজার ৫০০ মিলিয়ন ডলার। কিন্তু ২০১৫ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক তহবিল মিলিয়ে বছরে গড়ে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে মাত্র ৮৬.২ মিলিয়ন ডলার—যা প্রয়োজনের মাত্র ০.৭ শতাংশ।
জাতীয় তহবিলের প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতা ও ব্যর্থতার কথাও প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। ৮৯১টি প্রকল্পের মধ্যে ৫৪৯টির (৬১.৬ শতাংশ) মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। গড়ে প্রকল্পের মেয়াদ ৬৪৮ দিন থেকে বেড়ে ১,৫১৫ দিনে পৌঁছেছে; অর্থাৎ ১৩৩.৮ শতাংশ বৃদ্ধি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৪ বছরের প্রকল্প বাস্তবায়নে সময় লেগেছে ১৪ বছর।
একইভাবে আন্তর্জাতিক তহবিলের প্রকল্পেও বিলম্বের চিত্র পাওয়া গেছে। ৫১টি প্রকল্পের মধ্যে ২১টির (৪১.২ শতাংশ) মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। গড়ে মেয়াদ ১,৯৫৮ দিন থেকে বেড়ে ২,৯৭৮ দিনে দাঁড়িয়েছে; ৫২.১ শতাংশ বৃদ্ধি।
সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘দুর্নীতির কারণে জাতীয় তহবিলের ৫৪ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ অর্থের সুবিধা পাওয়ার কথা থাকলেও তা দুর্নীতির কারণে পাওয়া যায়নি। রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ ও প্রভাবশালীরা এ অর্থ লুটপাট করেছে।’
যাবজ্জীবন বা ৩০ বছরের বেশি সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে যারা রেয়াতসহ ২০ বছর বা তার বেশি সাজা ভোগ করেছেন, এমন ৩৭ জন বন্দিকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
গতকাল মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন (নং-১৪৩) জারি করেছে। আগামী দুয়েক দিনের মধ্যে তা কার্যকর হবে বলে জানা গেছে।
কারা অধিদপ্তরের তথ্যমতে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি বন্দিদের তালিকা চূড়ান্ত করেছে। জেলা কারাগারগুলোর সুপারিশের ভিত্তিতে এ তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। কারাবিধির ৫৬৯ ধারা অনুযায়ী এই ৩৭ জন বন্দির অবশিষ্ট সাজা মওকুফ করে মুক্তির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তারা সবাই রেয়াতসহ ২০ বছর বা তার বেশি সময় সাজা ভোগ করেছেন।
কারা অধিদপ্তরের সহকারী কারা মহাপরিদর্শক (উন্নয়ন) মো. জান্নাত-উল ফরহাদ বলেন, ‘যাদের সাজা ৩০ বছর বা যাবজ্জীবন ছিল, তাদের মধ্যে যেসব বন্দি রেয়াতসহ ২০ বছর অতিক্রম করেছে, তাদের মামলা বিচারিকভাবে পর্যালোচনা করা হয়েছে। বয়স, আচরণ ও অন্যান্য বিষয় বিবেচনা করে সরকার তাদের অবশিষ্ট সাজা মওকুফের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এই আদেশ অনুযায়ী, সর্বশেষ সিদ্ধান্তে ৩৭ জন বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হচ্ছে। কারও অবশিষ্ট সাজা ছিল ১০ বছর, কারও ৭ বছর বা ৬ বছর। সবগুলোই মওকুফ করাতে এবার তারা মুক্তি পাবেন। এদের মধ্যে কোনো নারী বন্দি নেই, যদিও প্রস্তাবে নারী-পুরুষ উভয়কেই অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে ২০২৪ সালের ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সংঘটিত সহিংসতা ও বেআইনি কর্মকাণ্ডে জড়িত নিষিদ্ধ সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৩৮৫ জন কর্মীর তালিকা প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
গতকাল মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমদ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়। একই সঙ্গে জুলাই আন্দোলনের সময় সংঘটিত ঘটনাগুলোর তদন্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে স্থায়ী বহিষ্কার প্রক্রিয়া শুরু করার ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ২০২৪ সালের ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সংঘটিত বেআইনি ও সহিংস ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করতে গঠিত তথ্যানুসন্ধান কমিটি ১২৮ জন শিক্ষার্থীকে অভিযুক্ত করে রিপোর্ট জমা দেয়। গত ১৭ মার্চ ২০২৫ তারিখে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় তাদের সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়।
পরবর্তীতে অধিকতর তদন্তের জন্য পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটির দ্বিতীয় সভায় আরও ৩৮৫ জন শিক্ষার্থীর সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়, যার মধ্যে আগের ১২৮ জনও অন্তর্ভুক্ত।
তালিকায় নাম রয়েছে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন, সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতসহ মোট ৩৮৫ জনের।
প্রক্টর অফিসের বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, কৃত অপরাধের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেন স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে না- তার কারণ দর্শিয়ে লিখিত জবাব বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ৭ (সাত) কার্য দিবসের মধ্যে প্রক্টর অফিসে লিখিত জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হলো। অন্যথায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি মোতাবেক আপনাদের বিরুদ্ধে একতরফা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের হায়দারাবাদ এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিক্রি নিষিদ্ধ বিপুল পরিমাণ ঘোড়ার মাংস জব্দ করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ সময় ৩৭টি জীবিত ও ৮টি জবাইকৃতসহ মোট ৪৫টি ঘোড়া উদ্ধার করে।
মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) রাত সাড়ে ১০টায় গাজীপুর জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইশতিয়াক আহম্মেদের নেতৃত্বে স্থানীয় কসাইখানায় গাজীপুর জেলার প্রশাসন, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, র্যাব-১ ও পুলিশ যৌথভাবে এ অভিযান চালায়।
এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিত টের পেয়ে কারখানার মালিক শফিকুল ইসলাম (৪৫) ও তার সহযোগীরা পালিয়ে যায়।
স্থানীয়রা জানায়, শফিকুল ইসলামের বাবা জয়নাল আবেদীন হায়দারাবাদ (রথখলা) মৌলভী বাড়ির পাশেই একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে এক বছর ধরে নিয়মিতভাবে ঘোড়া কিনে জবাই করতেন। এরপর নিষিদ্ধ এই ঘোড়ার মাংস বিভিন্ন উপায়ে রাজধানী উত্তরাসহ দেশের নানা জেলায় সরবরাহ করতেন।
প্রতিদিন রাতে ৩০ থেকে ৪০টি ঘোড়া জবাই করত শফিকুল। সেই মাংস সারাদেশে পাঠাত। রাতে নিয়মিত ঘোড়া জবাইয়ের শব্দ, দুর্গন্ধ ও পরিবেশ দূষণে তারা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিলেন। রাতভর জবাইয়ের শব্দে ছোট বাচ্চারা লেখাপড়া করতে পারে না। দুর্গন্ধে ঘরেও থাকা যায় না। আমরা বহুবার প্রতিবাদ করেছি, কিন্তু কিছু হয়নি। পুরো পরিবেশ বিষাক্ত হয়ে যাচ্ছিল। এ ধরনের নিষিদ্ধ কাজ আর যেন না হয়। আমরা এর স্থায়ী সমাধান চাই।
গাজীপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইশতিয়াক আহম্মেদ জানায়, ‘এটি সম্পূর্ণ অবৈধ ও দণ্ডনীয় কার্যক্রম। এর আগে বিভিন্ন সময়ে তাকে ৩বার জরিমানা করা হয়েছিল। তবুও সে থামেনি। এবার বড় আকারে অভিযান চালানো হয়েছে। ভবিষ্যতেও অভিযান চলবে। নিষিদ্ধ প্রাণী জবাইয়ের অভিযোগে মামলা রুজু করা হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘জবাই করে মাংস বিক্রির উদ্দেশ্যেই ঘোড়াগুলো এখানে আনা হয়েছিল। যেহেতু ঘটনাস্থল থেকে কাউকে আটক করা যায়নি তাই উদ্ধারকৃত ৩৭টি জীবিত ও ৮টি জবাইকৃতসহ মোট ৪৫টি জব্দকৃত ঘোড়ার ৫ মন মাংস স্থানীয় একজনের জিম্মায় রাখা হয়েছে।’
তিনি আরো জানায়, বুধবার (৫ নভেম্বর) সকালে সেগুলোকে গাজীপুর প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কাছে হস্তান্তর করা হবে। উদ্ধার হওয়া ঘোড়াগুলোর অধিকাংশ রুগ্ন এবং মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর।
র্যাব-১ এর পুলিশ সুপার (এসপি) শহিদুল ইসলাম জানায়, ‘গোপন সংবাদের ভিত্তিতে হায়দারাবাদ (রথখলা) এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় গোপনে ঘোড়া জবাইয়ের কার্যক্রম চলছিল বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছিল। অভিযানে বিপুলসংখ্যক জীবিত ঘোড়া, জবাইয়ের সরঞ্জাম ও মাংস সংরক্ষণের নানা প্রমাণ পেয়েছি।’
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের শুরুর দিকে গাজীপুরের হায়দারাবাদ (রথখলা) এলাকায় শুরু হয় ঘোড়ার মাংস বিক্রি। ধীরে ধীরে বিষয়টি চারপাশে ব্যাপক সাড়া ফেলে। পরে জেলা প্রশাসন ভ্রাম্যমাণ আদালত মাধ্যমে ঘোড়ার মাংস বিক্রি নিষিদ্ধ করেন। এরপর কয়েকদিন বন্ধ থাকলেও ফের গোপনে কসাইখানায় আবার শুরু হয় ঘোড়ার মাংস বিক্রি।
সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার সীমান্ত থেকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এর অভিযাবেন জব্ধ করা হয়েছে ১৪ ভারতীয় গরু। বুধবার দুপুরে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায় সুনামগঞ্জ ব্যাটালিয়ন ২৮ বিজিবি।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) সকাল ১১টা ৩০ মিনিটের দিকে দোয়ারাবাজার উপজেলার বাঁশতলা বিওপির টহল দল সীমান্ত পিলার ১২৩৪/এমপি থেকে প্রায় ১৫০ গজ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে মৌলারপাড় এলাকা থেকে গরুগুলো আটক করে। আটককৃত ১৪টি ভারতীয় গরুর আনুমানিক বাজারমূল্য ১০ লাখ ৮ হাজার টাকা।
সুনামগঞ্জ ব্যাটালিয়ন (২৮ বিজিবি)-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল একে এম জাকারিয়া কাদির জানান, ঊর্ধ্বতন সদর দপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী সীমান্তে নিরাপত্তা রক্ষা, চোরাচালান ও অবৈধ অনুপ্রবেশ প্রতিরোধে বিজিবির অভিযান ও গোয়েন্দা তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। গরুগুলো শুল্ক কার্যালয়, সুনামগঞ্জে জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
চট্টগ্রাম বোয়ালখালীতে মাছ ধরার জালে আটকা পড়া প্রায় ৮ ফুট লম্বা অজগর সাপ উদ্ধার করা হয়েছে।
বুধবার (৫ নভেম্বর) দুপুরে উপজেলার করলডেঙ্গা ইউনিয়নের তালুকদার পাড়ার একটি বিলে অজগরটি আটকে পড়ে।
খবর পেয়ে ওয়াইল্ড লাইফ অ্যান্ড স্নেক রেসকিউ টিমের সদস্য আমির হোসাইন শাওন জাল থেকে অজগরটি উদ্ধার করে।
শাওন বলেন, বার্মিজ প্রজাতির অজগরটি বিলে বসানো ভাসা জালে আটকে পড়েছিলো। প্রায় ৮ ফুট লম্বা অজগরটি ওজন ৯ কেজি হবে। বন বিভাগের সাথে কথা বলে অজগরটি অবমুক্তির জন্য হস্তান্তর করা হবে।
ভুয়া পরিচয়পত্র (এনআইডি) দিয়ে পাসপোর্ট করতে এসে হাতেনাতে ধরা পড়েছেন দুই রোহিঙ্গা নারী। তাদের দুইজনকে চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
চাঁদপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, নতুন পাসপোর্টের জন্য এসবি ক্লিয়ারেন্স বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকেই রোহিঙ্গা আতঙ্কে রয়েছেন চাঁদপুরের আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তারা। বর্তমানে সর্বোচ্চ সতর্কতা নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। এমন কঠোরতার মধ্যেও গতকাল মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) দুপুরে ভুয়া এনআইডি দিয়ে পাসপোর্ট করতে এসে এক কর্মকর্তার হাতে ধরা পড়েন দুই রোহিঙ্গা নারী।
আটক রোহিঙ্গা নারীরা হলেন, কক্সবাজার কুতুপালংয়ের ২ নম্বর ক্যাম্পেরই-১১ ব্লকের বাসিন্দা সহিদুল আলমের মেয়ে সুরাইয়া (১৮) ও সোনা আলীর মেয়ে জুহুরা বেগম (৩৫)।
চাঁদপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস থেকে তাদের আটক করে থানায় নিয়ে আসেন উপ-পরিদর্শক (এসআই) আওলাদ হোসেন। তিনি বলেন, ওই দুই নারীর সাথে আমি কথা বলেছি। তাদের ভাষা বোঝা যায় না। যতটুকু জানতে পেরেছি, তাদের ক্যাম্প এলাকার যুবক দালাল সোহাগের মাধ্যমে তারা চাঁদপুরে পাসপোর্ট করতে আসেন। কিন্তু তারা চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার ঠিকানায় ভুয়া আইডি কার্ড ব্যবহার করায় ধরা পড়েন।
চাঁদপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তারা জানান, গতকাল মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে দুই নারী পাসপোর্ট করার জন্য পাসপোর্ট অফিসে প্রবেশ করেন। এরমধ্যে সুরাইয়া পাসপোর্টের জন্য ব্যাংক ড্রাফট, আবেদনসহ অন্যান্য কাগজপত্র নিয়ে আসেন। ভোটার আইডির ভেরিফায়েড ও ফটোকপি একই সাথে সংযুক্ত করেন। তবে দেখা যায়, সরবরাহকৃত ওই এনআইডিটি শাহরাস্তি উপজেলার বাসিন্দা রুমা আক্তারের। তারা কর্মকর্তাদের কাছে এসব জালিয়াতির কথা স্বীকার করেন।
জানা যায়, সুরাইয়া ও জহুরাকে সৌদি আরবে নেওয়ার কথা বলে এক লোক যোগাযোগ করে। সেই লোকের মাধ্যমেই পাসপোর্ট করার জন্য তারা এসব কাগজপত্র জোগাড় করেন। তারা দাবি করেন, ওই লোককে তারা চেনেন না।
চাঁদপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা উত্তম সাহা বলেন, আসলে আবেদনের মাধ্যমে এ ধরনের রোহিঙ্গাদের চিহ্নিত করা কষ্টকর। যদিও চেহারা ও ভাষার মাধ্যমে অনুমান করে আমরা পাসপোর্ট গ্রহীতাদের প্রশ্ন করি। এমন প্রশ্নের মাধ্যমেই রোহিঙ্গাদের চিহ্নিত করা সম্ভব হয়।
চাঁদপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপপরিচালক মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, এসবি ক্লিয়ারেন্স বন্ধ হওয়ায় আমরা আরো সাবধান হয়েছি। তারপরেও আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হয়। কারণ ফাঁকফোকর দিয়ে রোহিঙ্গারা পাসপোর্ট নিয়ে যেতে পারে। আমরা এক্ষেত্রে আরো সতর্ক হওয়ার চেষ্টা করছি।
চাঁদপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. বাহার মিয়া বলেন, যেহেতু আটক দুই নারী বৈধভাবে ওই ক্যাম্পে থাকেন। তাই তাদের আজ ভোরে থানার কর্মকর্তা ও ফোর্সসহ ওই ক্যাম্পে পাঠানো হয়েছে। ক্যাম্পে পৌঁছানোর পর ক্যাম্প প্রধান তাদের বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
কক্সবাজারের চকরিয়ায় বাস ও মাইক্রোবাসের সংঘর্ষে পাঁচজন নিহত হয়েছেন।
বুধবার (৫ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার ফাঁসিয়াখালীতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে এ ঘটনা ঘটে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তৌহিদুল আনোয়ার।তিনি বলেন, ঘটনাস্থলেই দুইজনের মৃত্যু হয় এবং হাসপাতালে নেওয়ার পর তিনজনকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
তাৎক্ষণিকভাবে নিহতদের নামপরিচয় পাওয়া যায়নি বলে জানান তিনি।